Tuesday, June 30, 2020

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিত বর্গের ইতিহাস

আত্রেয় পুনর্বসুঃ

প্রাচীন যুগের গান্ধার প্রদেশেরৎ তক্ষশিলার অধ্যাপকরা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। খ্যাতনামা চিকিৎসক আত্রেয় এখানেই চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যাপনা করতেন। ঐতিহাসিকরা আত্রেয়কে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পথিকৃৎ বলে থাকেন।

খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠশতকের চিকিৎসাবিদ্যার এই অধ্যাপকের আসল নাম ছিল আত্রেয় পুনর্বসু। ঋষি অত্রির পুত্র ছিলেন তিনি। ঋষি ভরদ্বাজের শিষ্যদের মধ্যে আত্রেয় ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি চিকিৎসাবিদ্যার বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এর মধ্যে ‘আত্রেয় সংহিতার’ নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই গ্রন্থটি পাঁচটি খন্ডের।
আত্রেয় রোগকে দুভাবে ভাগ করেছিলেন। একভাগে আছে আরোগ্য করা যায় এমন সব রোগ আর আরেকভাগে আছে আরোগ্যের অতীত বিভিন্ন ধরণের রোগ।
আরোগ্য সম্ভব এমন সব রোগকেও তিনি দুভাগে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে প্রথমভাগে আছে সেইসব রোগ যা সহজেই যাদুর মত নিরাময় করা সম্ভব।
অন্যভাগে আছে সেইসব রোগ যা অত্যন্ত জটিল এবং কদাচিৎ সারানো সম্ভব। রোগীদেরও তিনি রোগের জটিলতা অনুসারে ভাগ করে তাদের চিকিৎসা আদৌ সম্ভব কিনা তা নির্ধারণ করতেন।

তিনিই প্রথম মানুষের বয়স ও স্বভাবের উপর বাতাস, মাটি এবং ঋতুর প্রভাব বর্ণনা করেন এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন রোগের সম্পর্কের কথা বলেন যা পরবর্তীকালে মহামারী সম্বন্ধীয় রোগের কারণ হিসাবে অনেক চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন।

আত্রেয়র আরেকটি বড় কৃতিত্ব হল স্বাদকে মিষ্টি, তেতো, টক, নোন্‌তা, ঝাল ও সংকোচক (astringent) এই ছয় ভাগে বিভক্ত করা এবং মানুষের শরীরের উপর এই স্বাদগুলির প্রত্যেকটির প্রভাব সম্বন্ধে তাঁর গবেষনা ও পর্যবেক্ষণকে প্রতিষ্ঠিত করা।
গরম ও ঠান্ডা পানি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রকারের দুধ, আখের রস, ভাতের ফ্যান, বার্লি, তেল, ফল, গুড়, মধু প্রভৃতি জিনিষের ভৌত ও ওষধি ধর্মের বর্ণনা পাওয়া যায় তাঁর লেখায়।

বিভিন্ন ধরণের প্রাণী, পাখি, মাছ ও সাপের মাংসের গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে এগুলি খাওয়ার ব্যাপারে একটি নিয়মনীতি তৈরি করেন তিনি। জ্বর, পেটখারাপ, রক্তআমাশা, রক্তস্রাব প্রভৃতি রোগের কারণ ও চিকিৎসা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া গিয়েছে তাঁর লেখায়। বিভিন্ন ধরণের বিষের প্রতিষেধক সম্বন্ধেও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে তাঁর রচনায়।

এইসব কারণে অনেক বিজ্ঞানের আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূলভিত্তি ‘ত্রিদোষ ভাবনা’ বৈদিকযুগ থেকে চালু থাকলেও, আত্রেয়ই প্রথম এই ভাবনাকে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেন ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় তার প্রয়োগ করেন। চরক সংহিতায় উল্লিখিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ও তার চিকিৎসায় বিভিন্ন ঔষধের ব্যবহারের একটি বড় অংশের দান আত্রেয়র।

আত্রেয়র চিকিৎসা পদ্ধতির কথা তাঁর শিষ্যরা বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর শিষ্য অগ্নিবেশ রচিত ‘অগ্নিবেশ তন্ত্র’ কে অবলম্বন করেই চরক ও দৃঢ়বল ‘চরক সংহিতা’ রচনা করেন। আত্রেয়র আরও দুই শিষ্য ভেল ও হারীত রচিত ‘ভেল সংহিতা’ ও ‘হারীত সংহিতা’ অতি মূল্যবান প্রাচীন চিকিৎসা গ্রন্থ। ঐ সময়ের বিশিষ্ট চিকিৎসক জতুকর্ণ, পরাশর ও ক্ষরপাণিও ছিলেন আত্রেয়র শিষ্য।


জীবকঃ গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসক

জীবক এমনই এক মহামানব যিনি ছিলেন গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসক। তার নাম – জীবক কোমার ভচ্চ (খ্রীঃ পূঃ ৫৬৬ – ৪৮৬) । বুদ্ধকে কয়েকবার তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে সারিয়ে তোলেন। কথিত আছে, একবার গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসায় জীবক তাঁকে কোন ওষুধ সেবন করতে না দিয়ে, শ্বেত পদ্মের মধ্যে ওষুধ রেখে তার ঘ্রাণের সাহায্যে তাঁকে সারিয়ে তোলেন।

জীবক মগধের রাজা বিম্বিসারের সভায় রাজবৈদ্য নিযুক্ত হন। তাঁর চিকিৎসায় রাজা বিম্বিসার অনেক সময় অনেক কঠিন ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করেন। অবন্তীর রাজা প্রসেনজিৎ ও জীবকের চিকিৎসায় রোগমুক্ত হয়েছিলেন।

জীবককে বুদ্ধ এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে তিনি তাঁর অনুগামীদের মধ্যে জীবককে প্রধান অনুগামী বলে ঘোষনা করেছিলেন। এছাড়া জীবকের কথা শুনে বুদ্ধ তাঁর অনুগামী সন্ন্যাসীদের রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যায়াম করার নির্দ্দেশ দিয়েছিলেন।

জীবকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিয়ে একটি গল্প আছে। তখনকার মগধের রাজধানী রাজগৃহের সভাসদ ছিলেন শালাবতি। জীবক ছিলেন এই শালাবতির পুত্র। জন্মের পর তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এক আবর্জনার স্তুপে। কিন্তু তাঁকে জীবিত দেখে পথচারীরা মগধের রাজা বিম্বিসারের পুত্র রাজকুমার অভয়কে খবর দেন। তিনিই এই শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে মানুষ করেন এবং ‘জীবক’ নাম দেন।

বড় হলে চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জনের জন্য জীবক সেই সময়ের আয়ুর্বেদ শিক্ষার পীঠস্থান তক্ষশিলায় যান। সেখানে তিনি ছিলেন সাত বছর। তক্ষশিলায় জীবক গুরু হিসাবে পেয়েছিলেন আত্রেয়কে। ভেষজ বিদ্যায় জীবকের গভীর ও ব্যাপক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় জাতকের একটি গল্পে।

শিক্ষা শেষ করার পর তক্ষশীলার এক বিখ্যাত আচার্য জীবক ও অন্যান্য শিষ্যদের প্রত্যেককে তক্ষশীলার চারিদিকে এক যোজনের (১২ মাইল) মধ্যে নির্গুন কোন উদ্ভিদ বা গুল্ম পাওয়া যায় কি না তা অনুসন্ধান করতে বলেন। অন্যান্য শিষ্যরা প্রত্যেকেই একাধিক নির্গুণ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে আনলেও, অনেক চেষ্টার পরেও খালি হাতে ফেরেন জীবক। এর থেকে ভেষজের প্রয়োগ ও ভেষজের গুণ সম্পর্কে জীবকের জ্ঞানের গভীরতা আচার্য বুঝতে পারেন এবং জীবকের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে বলে ঘোষণা করেন।

তক্ষশিলার চিকিৎসা বিদ্যার অধ্যাপক আত্রেয় যে চিকিৎসা পদ্ধতির পত্তন করেন তা হল কায় চিকিৎসা (সাধারণ চিকিৎসাবিদ্যা)জীবক আত্রেয়র শিষ্য হওয়া সত্ত্বেও কায় চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে শল্য চিকিৎসাতেও অসাধারণ কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। কথিত আছে বহুবার তিনি মাথার করোটি কেটে ক্ষতস্থান থেকে ক্রিমি বের করে রোগীর শিরঃপীড়া দূর করেন।

রাজগৃহে একবার এক ধনীর স্ত্রীর উদরে অস্ত্রোপচার করে অন্ত্রগুলি তিনি বের করেন এবং তার মধ্যে যে গ্রন্থিগুলি জড়িয়ে গিয়েছিল সেগুলিকে ছাড়িয়ে আবার সঠিক স্থানে সংস্থাপন করেন।
তক্ষশিলা থেকে ফেরার পথে তিনি শুনতে পান যে এক ধনী ব্যক্তির স্ত্রী সাত বছর ধরে এক কঠিন মাথা ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছেন। জীবক কয়েক ধরণের গাছের মূল ও পাতা ঘিয়ের মধ্যে ফুটিয়ে সেও ওষুষ রোগিনীর নাকের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করিয়ে তাঁর মাথা ব্যাথার উপশম করেন।খুশী হয়ে তাঁর স্বামী জীবককে ১৬০০০ স্বর্ণমুদ্রা দান করেন।

তক্ষশিলা থেকে ফিরে মগধে অবস্থানকালে জীবকের চিকিৎসার খ্যাতি সে সময়ে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বৈশালী, বারাণসী, সাকেত, উজ্জয়িণী থেকেও রোগীরা মগধে আসতো জীবকের কাছে চিকিৎসার জন্য।
মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারে জীবক ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ভোজরাজার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে তাঁকে রোগমুক্ত করেছিলেন জীবক। স্নায়ুতন্ত্রের উপর শল্য চিকিৎসায় যে সব চিকিৎসকরা পথিকৃৎ ছিলেন, জীবক ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

শিশুরোগের চিকিৎসায় জীবক ছিলেন সে সময়ে অদ্বিতীয়। তাঁর রচিত ‘কাশ্যপ সংহিতা’য় বিবিধ শিশুরোগ ও তার প্রতিকারের বিধান উল্লেখ করা আছে। রচিত ‘কাশ্যপ সংহিতা’ চিকিৎসাবিদ্যার এক বিরাট গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ন-টি অধ্যায় আছে। (১) সূত্রস্থান, (২) নিদানস্থান, (৩) বিমানস্থান, (৪) শারীরস্থান, (৫) ইন্দ্রিয়স্থান, (৬) চিকিৎসাস্থান, (৭) সিদ্ধিস্থান, (৮) কল্পস্থান ও (৯) খিলস্থান।


চরক( কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের ব্যক্তিগত চিকিৎসক)

২০০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করা চরক চিকিৎসা শাস্ত্রে তক্ষশীলার আরেক বিস্ময়কর অবদান। যোগ সাধনা চর্চার জন্য অনেকে আবার তাকে চরক মুনি বা ঋষি হিসাবে ডেকে থাকেন। তাঁর অনেক অনুসারী ছিল। ছিলেন তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্র “চরক সংহিতা” রচনা করে।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে এই বই এনে দিয়েছে বৈপ্লবিক ছোঁয়া। প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে প্রথম প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয় এই “চরক সংহিতা”এই গ্রন্থে তিনি ৫০০ ঔষধের বর্ননা লিপি বদ্ধ করেছেন।চরক-সংহিতায় মতে “তাকেই বলে ভেষজ যাতে হয় আরোগ্য”।

চরক ও সুশ্রম্নত সংহিতায় উল্লেখ আছে কাঁচা আমলকির রসের সাথে ২/১ কোয়া রসুন বাটা খেলে যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়। কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনাও একেবারে শুন্যের কোঠায়।
আধুনা বিশ্বে চিকিৎসা শাস্ত্রে যে অংগপ্রতিস্থাপন বা প্লাস্টিক সার্জারি হচ্ছে তার জনক এই মহান চরক।




চাণক্য (অর্থনীতিবিদ)।

চাণক্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০- খ্রিস্টপূর্ব ২৮৩ ) প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রাচীন তক্ষশীলা বিহারের অর্থনীতি ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যক্ষ ছিলেন। মৌর্য রাজবংশের প্রথম রাজা চন্দ্র গুপ্তের মৌর্য তার সাহায্য নিয়ে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৯৮ সাল পর্যন্ত চন্দ্র গুপ্ত রাজ্য শাসন করেন তিনি চন্দ্র গুপ্ত ও পরবর্তীতে তার ছেলে বিন্দুসারের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ উপদেষ্টা ছিলেন।

চাণক্য সম্বন্ধে খুব সামান্যই ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়, অধিকাংশ উৎসে ঐতিহাসিকতার তুলনায় কল্প কথা স্থান করে নিয়েছে। থমাস ট্রটমান চাণক্য ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের সম্পর্ক নিয়ে চারটি উৎস চিহ্নিত করেছেন।এগুলি হল সিংহলী বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশ ও তার পালি টীকা বংসট্ঠপ্পকাসিনি, হেমচন্দ্র রচিত জৈন গ্রন্থ পরিশিষ্টপর্ব, সোমদেব রচিত কথাসরিৎসাগর ও ক্ষেমেন্দ্র রচিত বৃহৎকথামঞ্জরী নামক দুইটি কাশ্মীরি গ্রন্থ এবং বিশাখদত্ত রচিত সংস্কৃত নাটক মুদ্রারাক্ষস।

এই বিজ্ঞ ও প্রতিভাধর ব্রাহ্মণের জন্ম সেকালের তক্ষশীলার ‘চানকা’ গ্রামে খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে , যা থেকে তার অপর নাম ‘চানক্য এর উদ্ভব । বিষ্ণু গুপ্ত নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। কারণ এ নামটিই দিয়েছিলেন তার বাবা মা। এছাড়া তার ছদ্মনাম ‘কৌটিল্য’, যা তিনি তার বিখ্যাত সংস্কৃত গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্র’ এ গ্রহণ করেছেন।তিনি ‘কূটিলা গোত্র’ থেকে উদ্ভূত ছিলেন, অতএব তা টিকিয়ে রাখার জন্যে তিনি ‘কৌটিল্য’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন।

প্রথম জীবনঃ
প্রাচীন ভারতীয় পন্ডিত, দার্শনিক, ও রাজউপদেষ্টা কৌটিল্য বা বিষ্ণু গুপ্ত ( খ্রি: ৩৭১-২৮৩)। তিনি চানক্য নামে অধিক পরিচিত। তার জন্ম নিয়ে রয়েছে মতান্তর। কারো মতে তার জন্ম পাকিস্তানের পান্জাব প্রদেশপর তক্ষষশীলায়। আবার কারো মতে কৌটিল্য বা চাণক্যের জন্ম চনক নামে একটি গ্রামে, ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার জন্মস্থান সম্বন্ধে বেশ কয়েকটি মতবাদ প্রচলিত রয়েছে।বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশটীকা অনুসারে, তক্ষশীলায় তার জন্ম হয়।জৈন পুঁথি অদ্বিধন চিন্তামণি চানোক্যকে দ্রমিলা নামে অভিহিত করা হয়েছে, যার অর্থ তিনি দক্ষিণ ভারতের অধিবাসী ছিলেন।হেমচন্দ্র রচিত পরিশিষ্টপর্ব গ্রন্থানুসারে, চাণক্য চণক নামক গ্রামে চণিন নামক এক ব্রাহ্মণ ও তার পত্নী চণেশ্বরীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেন।অন্য উৎস মতে, চণক তার পিতার নাম ছিল।

চন্দ্র গুপ্তের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতিঃ
তার অসাধারণ কৃতিত্ব ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী নন্দ বংশের শাসন উৎখাত করে সম্রাট অশোকের পিতামহ চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যকে ভারতের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা।চন্দ্র গুপ্ত মগধের পাটালিপুত্রকে তার রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন। পাটালিপুত্র বর্তমান বিহারে অবস্থিত।।চন্দ্র গুপ্তের দরবারে গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস তার ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে লিখেছেন তার সময়কালে সমগ্র রাজ্য জুড়ে শান্তি বিরাজমান ছিল, প্রজাদের প্রতি তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ এবং রাজ্য বিকশিত হয়েছিল সমৃদ্ধিতে।কথিত আছে নন্দ বংশের সর্বশেষ রাজা চাণক্যকে অপমান করেছিলেন। চাণক্য এই অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিজ্ঞা করেন। এদিকে তরুণ চন্দ্র গুপ্ত, যিনি নন্দ রাজার সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন, তিনিও ষড়যন্ত্র করছিলেন সিংহাসন দখলের। তার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় এবং জীবন বাঁচাতে তাকে পালাতে হয়। চন্দ্র গুপ্ত যখন বিন্ধানের জঙ্গলে পলাতক ও নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন তখন ঘটনাচক্রে চাণক্যের সাথে তার সাক্ষাত হয়। চন্দ্র গুপ্ত তার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য চাণক্যকে তার গুরু, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণাদাতা হিসেবে মেনে নেন। পরবর্তীতে তিনি চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী হন।আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যুতে গ্রিক শাসনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে বিদ্রোহের সূচনা হয় এবং এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চন্দ্র গুপ্ত গ্রিক বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে পরাজিত করেন ও পাঞ্জাবকে নিজ শাসনাধীনে আনেন। পরে চন্দ্র গুপ্ত একে একে পশ্চিম ভারতের সকল রাজ্য বিজয় করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

বিশাখদত্ত রচিত মুদ্রারাক্ষস নাম্মক সংস্কৃত নাটকে নন্দ সাম্রাজ্য পতনে চাণক্যের ভূমিকা বর্ণিত রয়েছে। এই গ্রন্থানুসারে, হিমালয়ের একটি পার্বত্য রাজ্যের অধীশ্বর পর্বতেশ্বরের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা চাণক্য কূটনৈতিক মিত্রতা স্থাপন করে নন্দ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। কিন্তু এই সময়, পর্বতেশ্বরকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হলে মলয়কেতু তার স্থানে সিংহাসনে আরোহণ করেন। নন্দ সাম্রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাক্ষসের সঙ্গে মিলিত ভাবে মলয়কেতু নন্দ সাম্রাজ্যের অধিকৃত এলাকা দাবি করেন। শেষ নন্দ সম্রাট ধননন্দের হত্যার প্রতিশোধ নিতে মলয়কেতুর সহায়তায় রাক্ষস রাজধানী আক্রমণ করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিস্থিতিতে চাণক্য যেন তেন প্রকারে রাক্ষসকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করাতে চেয়েছিলেন। রাক্ষসের প্রতীক মুদ্রাটি হস্তগত করে চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে উদ্দেশ্য করে একটি নকল চিঠি প্রস্তুত করেন। এই চিঠিতে রাক্ষসের মুদ্রার ছাপ (সীলমোহর) দিয়ে লেখা হয় যে তিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের শিবিরে যোগ দিতে ইচ্ছুক। চাণক্য প্রথমেই মলয়কেতুর নিকট এই চিঠির বিষয়ে বার্তা পাঠালে তাতে বিশ্বাস করে মলয়কেতু রাক্ষসের সঙ্গত্যাগ করেন। এই ভাবে চাণক্য রাক্ষসকে তার সঙ্গীদের থেকে দূরে সরিয়ে দেন। পরবর্তী কৌশল হিসেবে তিনি রাক্ষসের বন্ধু চন্দনদাসের মৃত্যুদণ্ড দিলে রাক্ষস তাকে বাঁচাতে, আত্মসমর্পণে ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধ্য হন।

বিন্দুসারের সঙ্গে সম্পর্কঃ
জৈন প্রবাদানুসারে, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের উপদেষ্টা চাণক্য শত্রু দ্বারা বিষপ্রয়োগে হত্যা করার চেষ্টার বিরুদ্ধে শারীরিক প্রতিষেধক তৈরী করার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে তার অজান্তে অল্প মাত্রায় বিষ পান করাতেন। একদিন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য তার বিষযুক্ত খাবার অন্তঃসত্ত্বা দুর্ধরার সঙ্গে ভাগ করে খেলে, দুর্ধরার মৃত্যু হয়। তার সন্তানকে বাঁচাতে চাণক্য সদ্যমৃত দুর্ধরার পেট কেটে তাকে বের করে আনলে বিন্দুসারের জন্ম হয়। পরবর্তীকালে বিন্দুসার মৌর্য্য সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করলে চাণক্য তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হেমচন্দ্রের পরিশিষ্টপর্ব অনুসারে, বিন্দুসারের একজন মন্ত্রী সুবন্ধু চাণক্যকে অপছন্দ করতেন। তিনি বিন্দুসারকে জানান যে তার মাতা দুর্ধরার মৃত্যুর জন্য চাণক্য দায়ী ছিলেন। এই ঘটনার কথা জানতে পেরে বিন্দুসার প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলে বৃদ্ধ চাণক্য জৈন আচার সল্লেখনা বা স্বেচ্ছা-উপবাস করে দেহত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই সময় চাণক্য যে তার মাতার মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী ছিলেন না, তা অনুসন্ধান করে বিন্দুসার জানতে পেরে নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং সুবন্ধুকে চাণক্যের নিকট পাঠান যাতে, চাণক্য তার মৃত্যু সঙ্কল্প ত্যাগ করেন। কিন্তু সুযোগসন্ধানী সুবন্ধু এই সময় চাণক্যকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন।




চাণক্যের অর্থশাস্ত্রঃ
চাণক্যের বিরাট সাহিত্য কর্ম ‘অর্থশাস্ত্র’, যার শব্দগত অর্থ ‘পৃথিবীতে সাধারণ কল্যাণ বিষয়ক বিবরণী।’ এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে কিভাবে একজন শাসককে তার প্রজাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও জীবন মান উন্নত করার জন্যে কাজ করবেন এবং কিভাবে আরও ভূখণ্ড ও মূল্যবান সম্পদ নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করতে হবে। চাণক্য উপমহাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম প্রবক্তা এবং তার কিছু নীতি বিশ্বজনীনভাবে প্রযোজ্য।হাজার বছরের অধিক সময়ের ব্যবধানেও সেগুলো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেনি।

চাণক্য তার কালোত্তীর্ণ গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্রে’ রাজাকে পরামর্শ দিয়েছেন, “যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না এবং শুধু অভিযোগ করে যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত।”
অর্থনৈতিক দুর্নীতি সর্বকালেই ছিল এবং চাণক্যের যুগেও তা নতুন কোন বিষয় ছিল না। সে কারণে তিনি লিখেছেন, “সকল উদ্যোগ নির্ভর করে অর্থের ওপর। সেজন্যে সবচেয়ে অধিক মনোযোগ দেয়া উচিত খাজাঞ্চিখানার দিকে। তহবিল তসরুপ বা অর্থ আত্মসাতের চল্লিশটি পদ্ধতি আছে।

চাণক্য তার নীতিকথায় বলেছেন, “বিষ থেকে সুধা, নোংরা স্থান থেকে সোনা, নিচ কারো থেকে জ্ঞান এবং নিচু পরিবার থেকে শুভলক্ষণা স্ত্রী – এসব গ্রহণ করা সঙ্গত।”
“মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।”
“যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্যে কোনকিছু হাসিল করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়। মিষ্টভাষীদের কোন শত্রু নেই।”
“মন খাঁটি হলে পবিত্র স্থানে গমন অর্থহীন।”

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের মতোই চাণক্যের চেহারাও সুন্দর বা আকর্ষণীয় ছিলনা এবং দৈহিক গড়নও ছিল আকর্ষণহীন। দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন তিনি, যদিও সক্রেটিসের মতোই পণ্ডিত ও দার্শনিক ছিলেন। সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন যে, “দেহের সৌন্দর্যের চাইতে চিন্তার সৌন্দর্য অধিকতর মোহময় ও এর প্রভাব যাদুতুল্য।” অন্যদিকে চাণক্য ছিলেন দক্ষ পরিকল্পনাবিদ। সিদ্ধান্তে তিনি ছিলেন অটল এবং অর্থহীন আবেগের কোন মূল্য ছিল না তার কাছে। নিজস্ব পরিকল্পনা উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন কঠোর।


পাণিনিঃ

পাণিনি প্রখ্যাত সংস্কৃত ব্যাকরণ রচয়িতা। তিনি তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।পানিনি সম্পর্কে বলতে গেলে সাধারন ভাবে বলা যায় – আমরা আজকে যে বাংলা ভাষায় কথা বলছি তার উতস সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরনবিদ এই বিদ্যান ।

পাণিনির জন্মকাল সম্পর্কে মতভেদ আছে। এই সকল মতভেদ অনুসারে ধরা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০-৪০০ অব্দের মধ্যে পাণিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গান্ধার রাজ্যের শালাতুর (বর্তমান লাহোরের নিকটবর্তী একটি স্থান) নামক পল্লীকে তাঁর জন্মগ্রহণ জন্মস্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জন্মস্থানের নামে তাঁকে অনেক সময় ‘শালতুরীয়’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

পণি বা পাণিন্‌ একটি গোত্র নাম। সংস্কৃত সাহিত্যে পণি নামে একটি গোষ্ঠীর নাম পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, তিনি ফিনিসীয় জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা একসময় ভারত মহাসাগরের উপকূলে বসতি স্থাপন করেছিল। এদেরকে পণি, ফিনিকিয়, পিউনিক ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হতো।

পাণিনির পিতা ছিলেন ফিনিকিয় বা পণি গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁর নাম ছিল শলঙ্ক। এই কারণে অনেক সময় তাঁকে শলাঙ্কি বলা হয়। পাণিনির মা ইলেন দক্ষ জাতির কন্যা। অনেকের মতে পাণিনির মায়ের নাম ছিল দাক্ষী। এই সূত্রে অনেকে ক্ষেত্রে তাঁকে দাক্ষীপুত্র বা দাক্ষেয় নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পাণিনি পারিবারিক সূত্রে বেদোত্তর সনাতন পৌরাণিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন অহিগলমালার (শিব) উপাসক। সেইজন্য তাঁকে আহিক বলা হয়েছে।




তাঁর শিক্ষকের নাম ছিল উপবৎস। তাঁর রচিত ব্যাকরণের নাম– অষ্টাধ্যায়ী। কথিত আছে, মহাদেবের ঢাকের শব্দে চৌদ্দটি ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই ধ্বনি অনুসারে তিনি শব্দসূত্র তৈরি করেন। একে বলা হয়েছে শিবসূত্রজাল অথবা মাহেশ্বর সূত্র। মূলত এই সূত্রগুলি পাণিনির ব্যাকরণের চাবিকাঠি। শিবসূত্রের প্রত্যেকটির নাম সংজ্ঞা বা সংজ্ঞাসূত্র। এই ১৪টি শিবসূত্র হলো—
১. অ ই উ ণ্
২. ঋ ৯ ক্
৩. এ ও ঙ্
৪. ঐ ঔ চ্
৫. হ য ৱ র ট্
৬. ল ণ্
৭. ঞ্ ম ঙ্ ণ ন ম্ ৮. ঝ ভ ঞ
৯. ঘ ঢ ধ ষ্
১০. জ ব গ ড দ শ্
১১. খ র্ফ ছ ঠ থ চ ট ত ৱ্
১২. ক প য্
১৩. শ ষ স র্
১৪. হ ল্ ।
মনে রাখার সুবিধার জন্য পাণিনি এই সূত্রগুলোকে আরও সংক্ষিপ্ত করে নাম দিয়েছিলেন প্রত্যাহার (সংক্ষেপিত) সূত্র। এক্ষেত্রে প্রতিটি সূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ যুক্ত করে সংক্ষিপ্ত বা প্রত্যাহার সূত্র হয়েছিল।
প্রত্যহার সূত্র তৈরির বিধি
১. শিবসূত্রের বিচারে প্রত্যাহার সূত্র তৈরি হয়েছে।
২. প্রতিটি প্রত্যাহারের নামকরণ করা হয়েছে শিবসূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ দ্বারা। যেমন— প্রথম শিবসূত্রটি হলো — অ ই উ ণ্ । এক্ষেত্রে প্রত্যাহরটির নাম হবে অণ্।
৩. ব্যবহারিক ক্ষেত্রে শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি ইৎ হবে, অর্থাৎ অগ্রাহ্য হবে। যেমন প্রথম চারটি শিবসূত্র হলো—
১. অ ই উ ণ্
২. ঋ ৯ ক্
৩. এ ও ঙ্
৪. ঐ ঔ চ্
এই চারটি শিবসূত্রের মিলিত সূত্র প্রত্যাহর হবে অচ্ । এর শেষ বর্ণ চ্ বাদ দিলে পাওয়া যাবে— অ ই উ ণ্ ঋ ৯ এ ও ঐ ঔ। এই বর্ণগুলোই হবে সংস্কৃত ভাষার স্বরধ্বনি। অর্থাৎ অচ্ প্রত্যাহর সূত্র দ্বারা স্বরধ্বনির সংখ্যা পাওয়া গেল। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে এই সূত্রে দীর্ঘ, হ্রস্ব, প্লুত স্বরধ্বনির উল্লেখ নাই।

একই ভাবে ৫ম শিবসূত্র থেকে ১৪শ শিবসূত্র থেকে পাওয়া যায় প্রত্যাহার সূত্র হল্। এর অর্থ হলো সমস্ত ব্যঞ্জনবর্ণ। পাণিনি ব্যাকরণে প্রত্যাহার সূত্র মোট ৪৩টি। তাঁর সমগ্র রচনাটি আটটি অধ্যায়ে বিভাজিত এই সূত্রে এই গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে- অষ্টাধ্যয়ী। এই ব্যাকরণের অন্যতম ভাষ্যকার ছিলেন পতঞ্জলি।

পাণিণি সংস্কৃত ভাষার সমন্বিত ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। সংস্কৃত ছিল তৎকালীন সময়ে ভারতীয় আর্যদের ধর্ম ও সাহিত্যের ধ্রুপদী ভাষা । পাণিণিকে একাধারে সংস্কৃত ভাষার জনক ও প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা দেওয়া হয়। অনেকেই আধুনিক ইউরোপীয় ভাষাবিজ্ঞানের জনক ফার্দিনান্দ সাসুরের ওপর পাণিণির প্রভাব লক্ষ করেছেন । আরেক কীর্তিমান ভাষাবিদ নোয়াম চমস্কি তাঁর গবেষণায় পাণিণির ঋন সরাসরি স্বীকার করেছেন।

পঞ্চতন্ত্র মতে, তিনি সিংহের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।



কাশ্মীরে প্রাপ্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ধর্মকীর্তি কর্তৃক ১৬৬৩ সালে প্রতিলিপিকৃত পাণিনির সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে বার্চ গাছের ছালে লিখিত পাণ্ডুলিপি।
কাশ্মীরে প্রাপ্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ধর্মকীর্তি কর্তৃক ১৬৬৩ সালে প্রতিলিপিকৃত পাণিনির সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে বার্চ গাছের ছালে লিখিত পাণ্ডুলিপি।


সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts