Friday, March 6, 2020

আলেকজান্ডার আর নাগা সন্ন্যাসী গোষ্ঠীর এক রহস্যাবৃত কাহিনী-প্রথম পর্ব

লেখাটির জন্য প্রচুর খোঁজাখুঁজি করতে হয়েছে।নানান জায়গা থেকে মণি মুক্তো আহরণ করে আমার এই একত্রিত করার প্রয়াস।অনেক জায়গায় অপ্রাসঙ্গিক মনে হওয়ার কারণে অনেক তথ্য বাদ দিয়েছি।কোনো পাঠকের ইচ্ছা হলে মূল সূত্রগুলো থেকে দেখে নিতে পারেন।কোথাও অসঙ্গতি মনে হলে ধরিয়ে দেবেন,আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে সংশোধন করবো।
আলেকজান্ডার লোকটি বেশ রহস্যময়।আরো রহস্যময় হয়েছে বেশ কিছু মিথ এবং লোকগাথার সমাহারে। বস্তুত: সেই সময়ে প্রাচ্যের আর পাশ্চাত্যের নতুন করে এক যোগাযোগের সূত্র হয়ে উঠেছিল এই লোকটি। আগেও যোগাযোগ সূত্র থাকলেও তা কোনো বর্ননা নিয়ে ছিল না ফলে আজকের পৃথিবী সেই সময়ের তার সহযাত্রী গ্রিক লিপিকার বা পরবর্তীতে অন্যদের সূত্রে এই সংযোগ আর নানান কাহিনীর বর্ণনা পেয়েছে।আজ বলবো অবিভক্ত ভারতে আলেকজান্ডারের সাথে একদল সর্বত্যাগী নাগা মানে বস্ত্রহীন এক দল সন্ন্যাসীর আলাপ বা সেই সম্পর্কিত কিছু কাহিনী।আমরা কেউ জানি না তা কতটা সত্য তবে বিষয়টা একটু অন্য কিছু জানার মতো করে পড়লে খুশি হবো।
পৃথিবীতে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য অনেক মানুষ তাদের নিজেদের কীর্তি রাখার কাজ করে গেলেও এখনো এই লোকটিকে একটা আলাদা স্থান দেওয়া হয় এই বিষয়ে।পররাজ্য গ্রাসের এই কুকীর্তি যুগে যুগে মানুষ করেছে তাই মহান না হলেও লোকটি এই অল্প বয়েসে যে কাজ করেছে সেই হিসেবে বিস্ময়ের প্রকাশ করা যায় বৈকি।এই লোকটি তার বাবার স্বপ্ন বা এক অর্থে গ্রিকদের জাতীয় অভিমান এবং প্রতিশোধের কামনায় এই জয় যাত্রায় বেরিয়েছিল পারস্য সাম্রাজ্য কে পরাজিত আর এদের চূড়ান্ত শিক্ষা দেওয়ার বাসনায়।অতঃপর স্বপ্ন সাকার হয়।আলেকজান্ডার পারস্য সাম্রাজ্যের দখল আর এই অঞ্চলের প্রাচীন নানান ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উপাদান বা লিখিত সব ইতিহাসের সর্বনাশ করে এক পর্যায়ে ঢুকেছিল আজকের বিভক্ত ভারতের পশ্চিমে মানে আফগানিস্তান দখল করে বর্তমান পাকিস্তানের মুলতানের দিকে।আলেকজান্ডার ছিল তৎকালীন গ্রিসের এক বিখ্যাত দার্শনিক এবং চিন্তাবিদ এরিস্টটল এর শিষ্য।অনেক ক্ষেত্রেই এই মানুষটির ভাবনা বা মনোন আলেকজান্ডার কে প্রভাবিত করেছিল।এই কারণেই আলেকজান্ডার নানান জায়গায় সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছে ওই অঞ্চলের নানান চিন্তাবিদ বা এই ধরণের পন্ডিত বা একটু আলাদা মানুষদের সাথে।এই পর্যায়ে সেই সময়ের আলেকজান্ডার আজকের পাকিস্তানের টাকসিলা বা প্রাচীন তক্ষশীলায় ভারতের এক অসামান্য জ্ঞানার্জনের তীর্থস্থলের বিষয়ে জানতে পারে।এইখানেই তার সাথে কিছু উপরের বলা সেই একদল নগ্ন সন্ন্যাসীর স্বাক্ষাৎ হয়।প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো এই তক্ষশিলা নগরীর কাছেই রাজা পুরু সর্বশক্তি দিয়ে বাঁধা দিয়েছিল,এই বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই সন্নাসীদের সাথে স্বাক্ষাতের সময়ে ,একটি প্রশ্নের উত্তরের উপরে।
আলেকজান্ডারের আক্রমনের সময় মানে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে পরবর্তী ছয়টি শতকে বহু পাশ্চাত্যের বিশেষত গ্রিক পর্যটক এবং পন্ডিত এই দিকে এসেছে।এই বিবরণ নানান লেখকের ভাষ্যে লিখিত হয়েছে।এর মধ্যে সব থেকে বেশি স্বীকৃত তিনটি হলো ১. ওনিসিক্রিটাস(Onesicritus) মানে আলেকজান্ডারের সহযাত্রী যথারীতি তার মূল লেখা হারিয়ে গেলেও পরবর্তিতে একই লেখার সুত্রে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য আরো এক লিপিকার স্ট্যার্বো ২.মেগাস্থিনিস ,বিখ্যাত গ্রিক পর্যটক যে সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সময়ে সেলুকাসের(পারস্যের দিকের ছেড়ে যাওয়া গ্রিক দখলের অংশের রাজা বা আলেকজান্ডারের প্রতিনিধি সেনাপতি)সময়ে তার পাঠানো রাজ্ প্রতিনিধি হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছিলেন আর ৩. বার্ডেসান বলে প্রথম খ্রিস্টাব্দের খ্রিস্টান পন্ডিত এবং শিক্ষক যিনি সিরিয়াতে ভারতীয় প্রতিনিধির কোনো একজনের সাথে স্বাক্ষাতের ভিত্তিতে এই বিষয়ে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছিলেন।সব থেকে প্রাচীন বা সব থেকে স্বীকৃত যা কিছুই হয়ে থাক, তা কতটা সত্যি বা সঠিক ছিল তার সন্দেহ থেকেই যায়।নানান লেখায় বিশেষত এই ওনিসিক্রিটাস এর নিজের ভাষ্যমতে তার তিন জন অনুবাদক লেগেছিল এই ভারতীয় সাধুদের সাথে আলাপ করতে সুতরাং বিকৃতি শুরুতেই হতে পারে এবং হওয়াটা যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য।এরপরেও নানান পরিবর্ধন বা পরিবর্তন হয়েছে যেমন হয় অন্য সব ক্ষেত্রে।যাই হয়ে থাক ,মূল বিষয়ে এই তিনজনের বক্তব্য মোটামুটি একই হওয়ায় একটা স্বদর্থক বিষয় পাওয়া যায় ,তা হলো, এই স্বাক্ষাৎ বা মত বিনিময়ের মূল বিষয়গুলো একই থাকায় বিষয়ের কোনো নিদারুন পরিবর্তন হয় নি।
গ্রিক বর্ণনায় উঠে এসেছে কৃচ্ছ সাধন করা একদল বনবাসী সন্ন্যাসীর কথা যাদের কাছে জাগতিক কোনো কিছুই কাম্য ছিল না।এই সন্ন্যাসী গোষ্ঠীর দুটি নাম উঠে এসেছে যার একটি ডানডামিস(এর ভারতীয় মূল নাম উদ্ধার করতে পারি নি)আর অন্যজন কালানুস(যা অধিকাংশ বলেছেন কল্যাণ বলে , তবে এটি তার নাম না এটি ও জানতে পারছি ,এই মানুষটি আসলে যেই তার কাছে আসতো তাকে ওই বাক্য বলতেন ,নিজের ধারণায় মনে হয় তিনি বলতেন 'কল্যাণমস্তু ' বা কল্যাণ হোক , এটিই এদের কাছে এর নাম হয়ে যায়)যাইহোক ,এই প্রথমজন মানে ডানডামিস ছিলেন এই দলটির প্রধান।এই স্বাক্ষাৎ আলেকজান্ডারের সাথেই হয়েছিল না তার প্রতিনিধি এই নিয়ে নানান মত আছে।অনেকেই আবার অনেসিক্রিটাস আসলে এই স্বাক্ষাতের সময় ছিল বলে মত প্রকাশ করেছেন আবার অনেকেই খোদ আলেকজান্ডার এতে ছিল এবং এই ধরণের এক দার্শনিক তর্কযুদ্ধে এদের কাছে পরাজিত হয়েছে এই মতামত ও রেখেছেন।সে যাই হোক , এই লোকগুলো আলেকজান্ডারের কৌতূহলের কারণ হয়েছিল তা ভাবাই যেতে পারে।



সব থেকে গ্রহণযোগ্য মনে হয় এই অনেসিক্রিটাস কে আলেকজান্ডার পাঠিয়েছিল এই সাধুদের তার কাছে নিয়ে আসার জন্য।বলা হয়,এই সাধুর দল বিশেষত এদের প্রধান ডানডামিস আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে বলেন যে প্রয়োজন হলে আলেকজান্ডার যেন নিজে আসে যদি সে তাঁদের কথা বা মতবাদ শুনতে আগ্রহী হয়।এই প্রেক্ষিতে দুটো ধারণা প্রচলিত ,একটি হলো অনেসিক্রিটাস নিজেই অতঃপর আলাপ চালায় আর দ্বিতীয় হলো আলেকজান্ডার এদের কথা মেনে নিজেই দেখা করতে আসে।
এই বর্ণনার অক্ষত অংশ পাই পরবর্তীর ভৌগোলিক বিদ্যার পন্ডিত স্ট্রাবোর(Strabo) বর্ণনায়।এই মানুষটি অনেসিক্রিটাস এর আড়াইশো বছর পরে মানে প্রথম খ্রিস্টপূর্ব শতকে তাঁকে সূত্র করে এই কথা গুলো তুলে ধরেন।স্ট্রাবো তাঁর বর্ণনায় এই সন্ন্যাসীদের সমন্ধে অনেসিক্রিটাস এর সূত্র ধরে বলেন যে এই মানুষগুলো নগ্ন থাকতো এবং স্ব-আরোপিত একটি কৃচ্ছ সাধনের পথে নিজেদের জীবন যাপন করতো।একই সাথে এদের জ্ঞানী এবং এই অতি সরল জীবন যাপন যে আলেকজান্ডারের কৌতুহলের কারণ হয়েছিল তাও উঠে আসে তার বর্ণনায়।গ্রিক ভাষায় এদের বর্ণনা করা হয়েছে জিমনোসোফিস্ট(Gymnosophists) যার অর্থ নগ্ন দার্শনিক। খেয়াল করবেন,নগ্নতা কে তাচ্ছিল্য করে না বরং একটা শ্রদ্ধাবোধ জড়িয়ে রয়েছে এই দার্শনিক বা জ্ঞানী কথাটির সাথে।একই সাথে এদের বর্ণনায় বলা হয়েছে এই মানুষগুলো একই জায়গায় দীর্ধ সময় সটান দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো নানান ভঙ্গিমায় ,অতি স্বল্পাহারী ,উন্মুক্ত প্রান্তরে বসবাস করতো আর রোগ ব্যাধি হলে আত্মাহুতি দিয়ে জীবনাবসান করতো।এই প্রাণত্যাগ প্রসঙ্গ আসছে একটু পরে ,যাই হোক আলোচ্য এই অনেসিক্রিটাস এর বর্ণনায় জানতে পারা যায় যে প্রথম যখন এদের সাথে দেখা হয় ,তখন ১৫জনের এই দলটি সেই সময়ের মূল শহরের থেকে বেশি কিছু দূরে নানান ভঙ্গিমায় অবস্থান করছিল।নগ্ন এই মানুষগুলো নানান ভঙ্গিতে কেউ দাঁড়িয়ে ,কেউ শুয়ে আবার কেউ বসে ছিল উন্মুক্ত ওই প্রান্তরে।এই বর্ণনায় বলা হয় ওই সময়ে এতটাই সূর্যের তাপ থাকে যে খালি পায়েও চলাচল করার অবস্থা থাকে না আর সেই অবস্থায় এই মানুষগুলো ঠায় একই অবস্থানে ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত।প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো আলাপের জায়গা আবার অনেকের মতে তক্ষশীলার কাছের কোনো বনাঞ্চলে হয়েছেও বলা হয়।
এক পর্যায়ে অনেসিক্রিটাস আলাপ করতে যান কালানাস বা ওই কল্যাণের সাথে।এক্ষেত্রে তাঁকে সটান প্রত্যাখ্যান করে কালানাস বলেন যে আগে তাঁর মতো নগ্ন হয়ে এসে আলাপ করুক।একই সাথে অনেসিক্রিটাস এর জাঁকজমক বা ঐশ্বর্যের কারণে তাকে তাচ্ছিল্য ও করে এবং এই গুলো মানুষের অধঃপতনের কারণ বলে তার সাথে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়।এই পর্যায়ে সব থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ বা এদের প্রধান দন্ডমিস তার সাথে আলাপ করতে রাজি হয়।অনেসিক্রিটাস এর মতে এই প্রধান সাধু তাকে বলে আত্মার থেকে সকল সুখ আর দুঃখ কে দূরে সরিয়ে রাখার কথা।আরো বলেন তিনি গ্রিক গোষ্ঠীকে সবল মননের একটি গোষ্ঠী ভাবলেও তাদের প্রকৃতির থেকে উপাচার বা আনুষ্ঠানিকতা কে বেশি প্রাধান্য দেওয়াকে সমর্থন করেন না।আরো বলেন যে যদি গ্রিক গোষ্ঠী প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিতো তবে তাঁরা ও একই ভাবে এই কৃচ্ছসাধন আর সরল জীবনের পথে চলে যেতো।অনেসিক্রিটাস এর মতে এই মানুষগুলো এই কষ্টকর জীবন বেছে নিয়ে পরিধানের কাপড় ত্যাগ করে ,সৌখিন বা দামি খাওয়ার ফেলে ,কোনো প্রচলিত বসবাসের জায়গাতে না থেকে স্রেফ প্রকৃতির মধ্যে প্রকৃতিকে অধ্যয়ন করতেন।প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ওষধি ও নির্নয় করতেন এই গোষ্ঠী।এরা শহরে বা জনপদে এসে মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য ভিক্ষা করতো যা অধিবাসীরা সাগ্রহে দিয়ে দিতো। এই পর্যায়ে এই মানুষগুলো ধনী নির্ধন সবার সাথেই আলাপ বা কথা বলতো নানান বিষয়ে।একই ভাবে আরো এক জায়গায় দেখতে পাই ,আলেকজান্ডার নিজেই এই দণ্ডমিস এর সাথে স্বাক্ষাৎ করে তাঁকে তার সহযাত্রী হতে অনুরোধ করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।তিনি আলেকজান্ডার কে বলেন যে এই ইহজগতের কোনো কিছুই আলেকজান্ডার তাঁকে দিয়ে প্রলুব্ধ করতে পারবে না।এই পর্যায়ে আলেকজান্ডার উপলব্ধি করে যে এই মানুষটি সত্যিই একজন মুক্ত মানুষ।
যাই হোক, এই ক্ষেত্রে আলেকজান্ডার নিজেই হোক বা তার প্রতিনিধি , প্রথম ওই লোকটি মানে কালানুস বা কল্যাণ কে রাজি করাতে পারে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য।এই রাজি হওয়ার জন্য তাঁর গোষ্ঠীর মধ্যে যথেষ্ট নিন্দিত হয় এই কালানুস।সে যাই হোক,এই লোকগুলো বা সন্ন্যাসী গোষ্ঠী জঙ্গলের নানান ফল মূল ইত্যাদি প্রাকৃতিক বস্তুতে ক্ষিধে মিটাতো আর পান করতো স্রেফ জল।এইভাবেই ঘুরে বেড়ানো এই গোষ্ঠী রাতে গাছের তলায় রাত কাটাতো।একই সাথে ,ওনিসিক্রিটাস বা আলেকজান্ডারকে এই দণ্ডানিস্ এও বলে যে আলেকজান্ডার নাকি ঈশ্বরের সন্তান ,তবে কেন সে এই রাজ্ ঐশর্যে রয়েছে? তাঁর এই কথা সরাসরি বা ওনিসিক্রিটাস এর মাধ্যমে আলেকজান্ডারের কাছে গেলেও তাতে সে রেগে যায় নি।বোধকরি আগের গ্রিক দার্শনিক গুরুদের সাহচর্যে বিষয়টি আত্মস্থ করতে পারে এই আলেকজান্ডার।আরো একটি মজার কাহিনীর বর্ণনা হয়েছে প্রাসঙ্গিক সব লেখকের লেখায়।বলা হয় আলেকজান্ডার এই দশজন নগ্ন সন্ন্যাসীকে ডেকে নিয়েছিল বা বন্দি করে নয়টি প্রশ্নর উত্তর দিতে বলে।খারাপ উত্তর হলে সেই সন্ন্যাসীকে হত্যা করা হবে এই শর্ত ও আরোপ করা হয়।এই উত্তরের যাচাই করতে আবার নাকি এদেরই মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটিকে বিচারক করেছিল সে।একই এই ভাষ্য বর্ণনা হয়েছে স্ট্রাবো বা পরবর্তীতে খ্রিস্টান ওই পন্ডিতের ভাষ্যে তবে মৃত্যুদণ্ডের বিষয় বাদে।যাই হোক, এই প্রশ্নগুলো মোটামুটি প্রায় একই দেখে পাঠকের কাছে এইগুলো তুলে ধরলাম উত্তর সমেত।
১. কার সংখ্যা বেশি জীবিতের না মৃতের ?
- জীবিতের কারণ মৃতের কোনো অস্তিত্ব নেই।
২. সমুদ্র না স্থল কোন জায়গায় সব থেকে বড় জন্তু আছে ?
- এই পৃথিবীতে,কারণ সমুদ্র এর একটি অংশ
৩. সব থেকে ধূর্ত জন্তু /প্রাণী কি ?
-সেটি যাকে মানুষ খুঁজে পায় নি
৪. তাঁরা (সন্ন্যাসীরা) কি ভাবে তাদের অঞ্চলের রাজাকে বুঝাতে স্বক্ষম হন আলেকজান্ডার কে প্রতিরোধ করতে ?
-এই বলে যে রাজা এতে জীবিত বা মৃত যাই হোক পরিণতি হবে মহান
৫. বড় কোনটি , দিন না রাত ?
- দিন ,অন্ততঃ একটি কারণ শুরু হয়েছে(এই সৃষ্টি)দিন দিয়েই
৬. একজন মানুষ কি ভাবে শ্রদ্ধা/ভালোবাসার জন হতে পারে ?
-ভীতি প্রদর্শনের ছাড়া শক্তিশালী হলে
৭. একজন মানুষ কি করে ঈশ্বর/দেবতা হতে পারে ?
-মানুষের অসাধ্য যা তা করে
৮. কে শক্তিশালী , জীবন না মৃত্যু ?
-জীবন কারণ এটি অনেক বেশি দুঃখ কষ্ট কে ধারণ করে।
আরো একটি লিপিকার অবশ্য এর উত্তরের বাখ্যায় ওই সন্নাসীরা সূর্যের ওঠা আর ডুবে যাওয়ার উদাহরণের রূপক কে ব্যবহারের কথা বলেছে বলে,ওই ভাষ্যে বলা হয় সূর্য ওঠার সময়ে তার প্রখর তেজ আর ডুবে যাওয়ার সময় স্তিমিত অবস্থা প্রমান করে যে জীবন অনেক বেশি শক্তিশালী।
৯. একজন মানুষের কতদিন জীবিত থাকা উচিৎ ?
-যতদিন তার জন্য মৃত্যু অধিকতর ভালো পথ না মনে হয়
শেষের এই উত্তরের পরে আলেকজান্ডার নাকি ওই বিচারক বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি কে জিজ্ঞাসা করে সব থেকে বাজে উত্তর কোনটি। এতে ওই বিচারক মানুষটি অতীব জটিল ভাবে উত্তর দিয়েছিল প্রত্যেকটি উত্তর অন্যটির থেকে খারাপ ফলে কোনো নির্দিষ্ট একটি সব থেকে খারাপ না। এতে আলেকজান্ডার বা তার প্রতিনিধি আর কোনো উচ্চবাচ্চ্য করে নি। এক লিপিকারের মতে উল্টে উপহার ইত্যাদি দিয়ে এদের ফেরৎ পাঠায় আলেকজান্ডার।
এই নয়টি প্রশ্ন আর উত্তরের সমাহারের মধ্যে চার নম্বরেরটি একটু খেয়াল করে।রাজা পুরুর একজন সামান্য জনপদের রাজা হয়েও আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে যাওয়া মনে আসছে কি ? নির্মোহ ভাবে ভাবলে,এই নগ্ন সন্ন্যাসীদের রাজকীয় কাজ কর্মে বা সিদ্ধান্তে একটা ভূমিকার প্রকাশ কিন্তু পাওয়া যায় এর থেকে!
এই পর্যায়ে শেষ ধাপে আমরা যা পাই তা হলো একদম আগে বলা ওই কালানুস বা কল্যাণ এর কথা। এই মানুষটি রাজি হয়েছিল আলেকজান্ডারের সাথে আবার পারস্য দিয়ে ফেরার পথে সহযাত্রী হতে।
এর পরের পর্বে থাকবে পারস্যে এই কালানাস এর কি গতি হলো এবং এই নগ্ন সন্নাসীর বা এই গোষ্ঠির মানুষেরা ঠিক কোন পথের অনুসারী ছিল তাই নিয়ে একটি আলোচনা।নানান বিশেষজ্ঞরা কেউ এদের হিন্দু ব্রাহ্মন গোষ্ঠীর ,কেউ বৌদ্ধ ধর্মের আবার কেউ জৈন ধর্মের মতাবলম্বী ভেবেছেন।নানান সূত্রে পাওয়া কাহিনী ধরে খোঁজার চেষ্টা করবো এই মানুষগুলো ঠিক কারা ছিলেন।ততক্ষন একটু বিরতি।

তথ্যসূত্র (এক প্রস্থ)
১. নিরস , একদম বিষয়ের উপরে
https://grbs.library.duke.edu/article/viewFile/1451/1541;The?fbclid=IwAR1TJH2Vrzl-pkc-vCijJ7NQ1BAY0is959qULuFlAA8Xd32WwnrTX1MqWSQ

৩. গল্পর ছলে বলা,অনেকটাই সত্য তবে কল্পনার আশ্রয়ের অংশ অনেকটাই বেশি ,পড়ে দেখতে পারেন

৪. একটি সোনার খনি তবে আহরণ করার কায়দা জানা চাই ,এতে ব্যবহৃত তথ্যসূত্র গুলো ও এক একটি রত্নের আকর

৫ যারা সহজ পাচ্য কিছু চাইছেন তারা এটি দেখতে পারেন,আংশিক অসত্য থাকলেও সুখপাঠ্য


সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts