Friday, January 19, 2018

রাবণের প্রতিভা

রামচন্দ্র ছিলেন ক্ষত্ৰিয়কুলোদ্ভব, চার বর্ণের দ্বিতীয় বর্ণের মানুষ। সেকালের ক্ষত্রিয়রা ছিলো বংশগত যোদ্ধা, অর্থাৎ নরঘাতক। আর রাবণ ছিলেন ব্রাহ্মণ বংশীয়। এ কথাটা শুনে রামভক্ত হিন্দু ভাইয়েরা হয়তো আঁতকে উঠতে পারেন। ব্রাহ্মণ-এর সাধারণ সংজ্ঞা হলো – ব্রহ্মাংশে জন্ম যার, অথবা বেদ জানে যে, কিংবা বেদ অধ্যয়ন করে যে, নতুবা ব্রহ্মের উপাসনা করে যে — সে-ই ব্রাহ্মণ। ঋষিগণ সর্বত্রই উক্ত গুণের অধিকারী। তাই ঋষি মাত্রেই ব্রাহ্মণ। রাবণের দাদা পুলস্ত্য ছিলেন ব্ৰহ্মার মানসপুত্র এবং স্বনামধন্য ঋষি। কাজেই তিনি ছিলেন বংশে ও গুণে উভয়ত ব্রাহ্মণ। পুলস্ত্য ঋষির পুত্র অর্থাৎ রাবণের পিতা বিশ্ৰবাও ছিলেন একজন বিশিষ্ট ঋষি। কাজেই তিনিও ছিলেন বংশগত ও গুণগত ব্রাহ্মণ। তাই ব্রাহ্মণ ঋষি বিশ্ববার পুত্র রাবণ গুণগত না হলেও কুলগত ব্ৰাহ্মণ ছিলেন নিশ্চয়ই। এতদ্ভিন্ন নিম্নলিখিত আলোচনাসমূহে রাম ও রাবণের ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভার তুলনামূলক কিঞ্চিৎ পরিচয় পাওয়া যাবে।
১. রাবণের রাজমহলকে (কখনো লঙ্কাকেও) বলা হয়েছে ‘স্বর্ণপুরী। এতে রাবণের ঐশ্বর্য, শিল্প-নিপুণতা, সৌন্দর্যপ্রিয়তা, রুচিবোধ ইত্যাদি বহু গুণের পরিচয় মেলে। কিন্তু রামচন্দ্রের বাড়িতে এমন কিছুর উল্লেখ দেখা যায় না, যার দ্বারা তার ওসব গুণের পরিচয় পাওয়া যায়।


২ লঙ্কায় সীতাদেবী বন্দি হয়েছিলেন রাবণের তৈরী অশোক কাননে। তা ছিলো রাবণের প্রমোদ উদ্যান, যেমন আধুনিক কালের ইডেন গার্ডেন। সে বাগানটিতে প্রবেশ করলে কারো শোকতাপ থাকতো না। তাই তার নাম ছিলো অশোক কানন। সে বাগানটির দ্বারা রাবণের সুরুচি ও সৌন্দর্যপ্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায়। অধিকন্তু তিনি যে একজন উদ্ভিদবিদ্যা বিশারদ ছিলেন তা-ও জানা যায়। আর তার প্রমাণ মেলে একালের সুপ্রসিদ্ধ খনার বচনে। খনা বলেছেন –

“ডেকে কয় রাবণ, কলা-কচু না লাগাও শ্রবণ।”




শত শত জাতের ফল-ফুল ও লতাগুলেমর বৃক্ষরাজির একস্থানে সমাবেশ ঘটিয়ে তা লালনপালন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে রাখা চাট্টিখানি কথা নয়।

 
৩. রামচন্দ্র লঙ্কায় গিয়েছিলেন কপিকুলের (বানরের) সাহায্যে মাটি-পাথর কেটে বাঁধ নির্মাণ করে, দীর্ঘ সময়ের চেষ্টায়। কিন্তু লঙ্কা থেকে ভারতের দণ্ডকারণ্য তথা পঞ্চবটী বনে রাবণ যাতায়াত করেছিলেন ‘পুষ্পক’ নামক বিমানে আরোহণ করে অতি অল্প সময়ে। রাবণ যে একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বা বৈমানিক এবং কারিগরিবিদ্যা-বিশারদ ছিলেন, তা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।


৪. রাবণ আবিষ্কার করেছিলেন এক অভিনব যুদ্ধাস্ত্র, যার নাম ‘শক্তিশেল। তা শক্তিতে ছিলো যেনো বন্দুকের যুগের ডিনামাইট। নিঃসন্দেহে এতে রাবণের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় মেলে।



৫. রামচন্দ্রের নিক্ষিপ্ত শরাঘাতে রাবণের মুমুধু সময়ে তার কাছে গিয়ে রামচন্দ্র রাজনীতি সম্বন্ধে তার উপদেশপ্রার্থ হয়েছিলেন এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও তিনি রামচন্দ্রের সে প্রার্থনা পূর্ণ করেছিলেন ধীর ও শান্তভাবে, সরল মনে। এতে প্রমাণিত হয় যে, রাবণ সে যুগের একজন রাজনীতি-বিশারদ ছিলেন। অধিকন্তু ছিলেন ধৈর্য, সহন ও ক্ষমাশীল এবং প্রতিহিংসাবিমুখ এক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী।


৬. রামায়ণ মহাকাব্যে রাবণকে বলা হয়েছে দশানন। কিন্তু বাস্তবে রাবণের দশটি মুণ্ড নিশ্চয়ই ছিলো না। তবে তার মাথার মজ্জা অর্থাৎ জ্ঞান ছিলো দশটা মুণ্ডের সমান।তিনি ১০টি মহা বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি এতটাই মেধাবী ছিলেন যে ১০ জন মানুষের বুদ্ধি আর জ্ঞান একসাথে উনার মাথায় ধরতে পারতেন। উনার ১০টি আলাদা মাথা ছিল এটা কাল্পনিক তত্ত্ব। 


৭. রাক্ষস বা নরখাদক বলা হয়েছে রাবণকে। উপরোক্ত আলোচনাসমূহের পরে এ বীভৎস বিশেষণটি সম্বন্ধে আর কিছু সমালোচনা আবশ্যক আছে বলে মনে হয় না। তবুও প্রিয় পাঠকবৃন্দের কাছে একটি প্রশ্ন না রেখে পারছি না। রাবণের দাদা হচ্ছেন পুলস্ত্য, পিতা বিশ্ৰবা, ভ্রাতা কুম্ভকৰ্ণ ও বিভীষণ, বৈমাত্রেয় ভ্রাতা কুবের এবং পুত্র ইন্দ্রজিৎ (প্রসিদ্ধ বৈমানিক) ; এরা সকলেই ছিলেন সভ্য, ভব্য, সুশিক্ষিত, গুণী ও জ্ঞানী ব্যক্তি। এঁরা কেউই রাক্ষস বা কাচামাংসভোজী মানুষ ছিলেন না। রাবণও তার শৈশবকালাবধি মাতা-পিতার রান্না করা খাবারই খেয়েছেন নিশ্চয়। অতঃপর যৌবনে হঠাৎ করে একদিন তিনি খেতে শুরু করলেন জীবের কাচামাংস ৷ বিমান বিহার, শক্তিশেল নির্মাণ ও অশোক কানন তৈরী করতে জানলেও তিনি রান্নার পাকপাত্র গড়তে বা রান্না করতে জানেন নি। বেশ ভাল। কিন্তু তিনি কোথায় বসে, কোন দিন, কাকে খেয়েছেন – তার একটিরও নামোল্লেখ নাই কেন?


৮. সীতা রাবনের কাছে বন্দিনী হিসাবে থাকলেও রাবন সীতার সতীত্ব নষ্ট বা উনাকে অপমান করেন নাই। উপ্রন্তু উনার সুরক্ষার জন্য মহিলা পাহারাদার নিযুক্ত করেন। এবং সর্ব আহারাদির ব্যাবস্থা তথা সুযোগ সিবিধা নিশ্চিত করেন। এতে বোঝা যায় উনি নারীর প্রতি সম্মানশীল ছিলেন।


৯. রাবন ছিলেন পরমেশ্বর ভগবান দেবাদিদেব মহাদেব শিবের পরম ভক্ত। উনার মাধ্যমেই শিবতান্ডব স্তোত্র রচনা হয়। উনি সঙ্গীত ও জ্যতির্বিদ্যায় মহা পারদর্শী ছিলেন।





এবার আসি রামায়নের বানর প্রজাতি কি আসলেই বানর ছিলেন?
ভালো করে পড়ুন এই অংশটি। 

প্রথমত হনুমান — পবনদেবের ঔরসে মানবী অঞ্জনার গর্ভে এর জন্ম। কাজেই হনুমান দেব-মানবের বংশজাত একজন বীর্যবন্ত মানব।
দ্বিতীয়ত জাম্ববান – এ হচ্ছে দেবতা ব্ৰহ্মার পুত্র। জাম্ববানের কন্যার নাম জাম্ববতী এবং তাকে বিয়ে করেন হিন্দুদের পরম পূজনীয় শ্ৰীকৃষ্ণ। সুতরাং জাম্ববান হচ্ছে শ্ৰীকৃষ্ণের শ্বশুর। কাজেই সে ভালুক বা পশু হতে পারে না, সে ব্রহ্ম বংশের মানুষ ; সুতরাং ব্রাহ্মণ।
তৃতীয়ত বালী ও সুগ্ৰীব – দেবরাজ ইন্দ্রের (মতান্তরে সূর্যের) ঔরসে ও ব্রহ্মার মানসকন্যা রক্ষরজার গর্ভে বালী ও সুগ্ৰীবের জন্ম হয়। সুতরাং বালী ও সুগ্ৰীব হচ্ছে ইন্দ্রের বা সূর্যের পুত্র এবং ব্রহ্মার দৌহিত্র (নাতি)। বিশেষত ব্ৰহ্মার বংশজাত বলে তারা ব্রাহ্মণত্বের দাবীদার।
উপরোক্ত আলোচনাসমূহের দ্বারা অনুমান হয় যে, রামায়ণোক্ত বানররা পশু ছিলো না, তারা ছিলো ভারতের ‘কিঙ্কিন্ধ্যা’ নামক অঞ্চলের আদিম অধিবাসী এবং আলোচ্য ব্যক্তিরা ছিলো সেকালের বিশিষ্ট ব্যক্তি। কেননা রামায়ণ মহাকাব্যে অজস্র বানরের আভাস থাকলেও প্রাধান্য পেয়েছে এরাই।
এ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী মর্গানের মতবাদ অনুধাবনযোগ্য। মর্গানের মতে – বেচে থাকার তাগিদেই মানুষকে জোট বাধতে হয়েছে। জোট মানে দল। কিন্তু কোন সম্পর্কের ভিত্তিতে দল বাধবে? মৰ্গানের গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, সে সময় মানুষ দল বেঁধেছিলো জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিত্তিতে। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জ্ঞাতি, একই পূর্বপুরুষ থেকে তাদের জন্ম। মর্গান এমনি এক একটি দলের নাম দিয়েছিলেন গেনস (Gens)। মর্গানের পরের যুগের নৃবিদরা গেনস্ শব্দের বদলে ক্লান (Clan) শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং ক্লান শব্দটিই চলছে।
কয়েকটি ক্লান একসঙ্গে জোট বাধলে যে বড়ো দলটি গড়ে ওঠে, তার নাম দেয়া হয়েছে ট্রাইব (Tribe)। আবার অনেকগুলো ট্রাইব মিলে আরো বড়ো একটি সংগঠন, তার নাম কনফেডারেসি অব ট্রাইবস।
সাধারণত জন্তু-জানোয়ারের নাম থেকেই ক্লানের নাম হতো। যেমন – ভালুক, নেকড়ে বাঘ, হরিণ, কাছিম ইত্যাদি। আবার ফুল, ফল, লতাপাতার নাম থেকেও ক্লানের নামকরণ হতো। এধরণের নামকরণের মূলে যে বিশ্বাসটি রয়েছে, তাকে বলা হয় টোটেম বিশ্বাস।
পাক-ভারত উপমহাদেশের সাওতাল উপজাতির শতাধিক গোত্র বা টোটেম আছে, হো উপজাতির আছে ৫০টিরও বেশী। এরূপ মুণ্ডা উপজাতির প্রায় ৬৪টি, ভীল উপজাতির ২৪টি, ছোটাে নাগপুরের খারিয়া উপজাতির ৮টি এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার দৌড়ি উপজাতির মধ্যে ৪টি গোত্র বা টোটেম রয়েছে। এদের প্রত্যেক গোত্রই — পশু, পাখী, গাছপালা অথবা কোনো বস্তুর নামে পরিচিত। আমাদের দেশেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐরূপ বহু গোত্রের নাম দৃষ্ট হয়, যদিও এগুলোকে ঠিক টােটেম বলা যায় না। যেমন – সেন (শ্যেন = বাজপাখী), নাগ (সপ), সিংহ (পশুরাজ) ইত্যাদি। গোত্রের প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেকে তার গোত্রের টোটেমের নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। যেমন – সিংহ গোত্রের সবাই সিংহ, বাঘ গোত্রের সবাই বাঘ, হরিণ গোত্রের সবাই হরিণ ইত্যাদি।
মর্গানের মতে বিশেষত আধুনিক বহু নৃতত্ত্ববিদের মতে – রামায়ণোক্ত ) জাম্ববান ও হনুমানাদি ভালুক ও বানররা পশু ছিলো না, তারা ছিলো সেকালের কিষ্কিন্ধ্যার (ভারতের দণ্ডকারণ্যের অংশবিশেষ, আধুনিক নাম নাশিক) অনার্য অধিবাসী (মানুষ)। বানরাদি ছিলো তাদের টােটেম বা বংশগত উপাধি মাত্র। অধিকন্তু এ-ও অনুমান হয় যে, হয়তো হনুমান ও সুগ্ৰীব ছিলো কোনো ক্লান ও ট্রাইব-এর অধিকর্তা এবং বালী ছিলো কোনো ‘কনফেডারেসী অব ট্রাইবস-এর অধিপতি, অর্থাৎ রাজা।
আমরা যারা সনাতন ধর্মের আছি এরা অনেকেই মধ্যযুগের মুসলিম শাসন, ব্রিটিশ কলনিয়াল এরা এবং উগ্র বৈষ্ণবদের দ্বারা বানানো কাল্পনিক তত্ত্বতে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছি। অবশ্য এতে আমাদের দোষ নেই। কারন ধর্ম বা স্বীয় কালচার সম্পর্কে জানার আগ্রহ কম। তথাপি আমরা নিজেদের অর্থ, শিক্ষা আর আল্ট্রা মর্ডানিজমের দিকে নজর দেই। আর যারা অল্প বিস্তর ধর্ম করতে চাই তারা মনে করেন স্থানীয় গৌড়ীয় আখড়াতে গিয়ে তিলক দিয়ে বগল তুলে নাচানাচি করলেই হল। কিন্তু আসলে সনাতন ধর্মে যে কি আকর রয়েছে আর আমাদের গৌরবজ্জল ইতিহাস রয়েছে তা জানি না। জানার চেষ্টাও করি না। স্রতের বিপরীতে ভাবতে আমরা বড্ড লজ্জা পাই বা ভয় পাই। কেন এমন ভীতু আর কাপুরুষতা?
যেখানে রাবন একজন ভিলেন হয়েও এতো গুনের অধিকারী আর শৌর্যের অধিকারী ছিলেন সেখানে আমরা কেন হীন-দ্বীন হয়ে শাকপাতা খেয়ে নিজেদের দুর্বল বানাচ্ছি? আসুন আমরা সনাতন নামধারী কিছু অসুরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই। সঠিক ইতিহাস জানি। দর্শনের নামে আমাদের যা গেলানো হচ্ছে তা আর যাইহোক ধর্ম হতে পারে না। 
হর হর মহাদেব !  



Monday, January 15, 2018

বেদসারশিবস্তোত্রম্‌- আদি শঙ্করাচার্য - Vedsar shib stotram by Adi Shankar




পশূনাং পতিং পাপনাশং পরেশং
          গজেন্দ্রস্য কৃত্তিং বসানং বরেণ্যম্‌।  
জটাজূটমধ্যে স্ফূরদগাঙ্গ্যবারিং
          মহাদেবমেকং স্মরামি স্মরারিম্‌।।
মহেশং সুরেশং সুরারাতিনাশং
          বিভূম বিশ্বনাথং বিভুত্যঙ্গভূষম্‌।
বিরূপাক্ষমিন্দ্বর্কবহ্নিত্রিনেত্রং
          সদানন্দমীড়ে প্রভুং পঞ্চবক্ত্রম্‌ ।।২
গিরীশং গণেশং গলে নীলবর্ণং
          গবেন্দ্রাধিরূঢ়ং গুণাতীতরূপম্‌।
ভবং ভাস্বরং ভস্মনা ভূষিতাঙ্গং
          ভবানিকলত্রং ভজে পঞ্চবক্ত্রম্‌।।৩
শিবাকান্ত শম্ভো শশার্ধমৌলে
          মহেশান শূলিন্‌ জটাজূটধারিন্‌।
তমেকো জগদ্‌ব্যাপকো বিশ্বরূপঃ
          প্রসীদ প্রসীদ প্রভো পূর্ণরূপ।।৪
পরমাত্মানমেকং জগদ্‌বীজমাদ্যং
          নিরীহং নিরাকারমোঙ্কারবেদ্যম্‌।
যতো জায়তে পাল্যতে যেন বিশ্বং
          তমিশং ভজে লীয়তে যত্র বিশ্বম্‌।।৫
ন ভূমির্ন চাপো ন বহ্নির্ন ন বায়ু-
          র্ন চাকাশমাস্তে ন তন্দ্রা ন নিদ্রা।
ন গ্রীষ্মো ন শীতং ন দেশ ন বেশো
          ন যস্যাস্তি মূর্তিস্ত্রিমূর্তিং তমীড়ে।।৬
অজং শাশ্বতং কারণং কারাণানাং
          শিবং কেবলং ভাসকং ভাসকানম্‌।
তুরীয়ং তমঃপারমাদ্যন্তহীনং
          প্রপদ্যে পরং পাবনং দ্বৈতহীনম্‌।।৭
নমস্তে নমস্তে বিভো বিশ্বমূর্তে
          নমস্তে নমস্তে চিদানন্দমূর্তে।
নমস্তে নমস্তে তপোযোগগম্য
          নমস্তে নমস্তে শ্রুতিজ্ঞানগম্য।।৮
প্রভো শুলপাণে বিভো বিশ্বনাথ
          মহাদেব শম্ভো মহেশ ত্রিনেত্র।
শিবাকান্ত শান্ত স্মরারে পুরারে
          তেদেন্যো বরেণ্যো ন মান্যো ন গণ্যঃ।।
শম্ভো মহেশ করুণাময় শূলপাণে
          গৌরীপতে পশুপতে পশুপাশনাশিন্‌।
কাশীপতে করুণয়া জগদেতদেক-
          স্ত্বং হংসি পাসি বিদধাসি মহেশ্বরোহসি।।১০
তত্ত্বো জগদ্ভবতি দেব ভব স্মরারে
          ত্বযেব তিষ্ঠতি জগন্মৃড় বিশ্বনাথ।
ত্বযেব গচ্ছতি লয়ং জগদেতদীশ
          লিঙ্গাত্মক হর চরাচরবিশ্বরূপিন্‌।।১১


সরলার্থঃ
যিনি পশুগণের পতি ও পাপনাশকারী পরমেশ্বর, যিনি বরেণ্য ও গজচর্ম পরিধান করিয়া থাকেন, যাঁহার জটাসমূহমধ্যে গঙ্গাবারি তরঙ্গায়িত, সেই অদ্বিতীয় মদনভস্মকারী মহাদেবকে স্মরণ করি ।১
যিনি মহেশ্বর, দেবগণের ঈশ্বর এবং দেবগণের শত্রনাশক, যিনি বিভূ, বিশ্বনাথ এবং ভস্ম যাঁহার অঙ্গের ভূষণ, যিনি বিরূপাক্ষ এবং চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি যাঁহার ত্রিনেত্র, সেই পঞ্চমুখ সাদানন্দ প্রভুকে স্তুতি করি ।২
যিনি গিরীশ ও প্রমথগণের পতি, যাঁহার কন্ঠ নীলবর্ণ, যিনি বৃষভ্রাজে আরূঢ় ও গুণাতিত, যিনি ভব ভাস্বর ভস্মভূষিতাঙ্গ এবং ভবানীপতি, সেই পঞ্চবদনকে ভজনা করি।৩
হে উমাপতি, হে শম্ভু, হে অর্ধচন্দ্রমৌলি, হে মহেশ্বর, হে শূলি, হে জটাজূটধারি তুমি একমাত্র জগদ্ব্যাপী এবং বিশ্বরূপ; হে পূর্ণসরূপ, হে প্রভু তুমি প্রসন্ন হও।৪
যিনি পরমাত্মা, অদ্বিতীয়, জগদ্বীজ, আদ্য, নিরীহ , নিরাকার এবং ওঙ্কার বেদ; যাঁহা হইতে জগৎ জাত হয়; যাঁহার দ্বারা পালিত হয় এবং যাঁহাতে লীন হয়; সেই ঈশ্বরকে ভজনা করি।৫
যিনি ভূমি নহেন, জল নেহেন, অগ্নি নহেন, বায়ু নহেন, এবং আকাশ নহেন; যাঁহার তন্দ্রা নাই, নিদ্রা নাই,গ্রীষ্ম নাই, শীত নাই, দেশ নাই, গৃহ নাই এবং যাঁহার কোনও মূর্তি নাই; সেই ত্রিমূর্তিধারীকে পূজা করি।৬
যিনি জন্মরহিত, শ্বাশত কারণসমূহেরও কারণ; যিনি শিব(মঙ্গলস্বরূপ), স্ব-স্বরূপে বর্তমান সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি; যিনি তুরীয়; যিনি অন্ধকারের অতীত এবং আদি, অন্তহীন, আমি সেই দ্বৈতবিহীন পরম পাবনের শরণ লই।৭
হে বিশ্বরূপধারী বিভু, তোমাকে বারংবার নমস্কার কর; চিদানন্দরূপী তোমাকে বারংবার নমস্কার, তপস্যা ও যোগের অধিগম্য তোমাকে বারংবার নমস্কার;
বেদজ্ঞানের দ্বারা জ্ঞেয় তোমাকে বারংবার নমস্কার।৮
হে প্রভু,হে শূলপাণি, হে বিভু, হে বিশ্বনাথ, হে মহাদেব, হে শম্ভু, হে মহেশ, হে ত্রিনেত্র, হে শিবাকান্ত, হে শান্ত, হে মদনারি, হে ত্রিপুরারি, তোমা অপেক্ষা কেহ বরেণ্য, মাণ্য বা গণ্য নাই।৯
হে শম্ভু, হে মহেশ, হে করুণাময়, হে শূলপাণি, হে গৌরিপতি, হে পশুপতি, হে জীববন্ধননাশি,হে কাশীনাথ, একমাত্র তুমিই করুণাবশত; এই জগতের ধ্বংস, পালন ও সৃজন করিতেছ। তুমিই মহেশ্বর।১০
হে দেব, হে ভব, হে স্মরারি,তমা হইতেই জগৎ হইয়া থাকে; হে মৃ্ড়, হে বিশ্বনাথ , তোমাতেই জগৎ অবস্থান করে; হে ঈশ, হে হর, হে চরাচর-বিশ্বরূপী, -লিঙ্গরূপী তমাতেই এই জগৎ লয়প্রাপ্ত হয়।১১

Sunday, January 7, 2018

প্লাস্টিক সার্জারীর জনক মহর্ষী শুশ্রত

পৃথিবীর সর্বপ্রথম সার্জন,প্লাস্টিক সার্জারীর জনক মহর্ষি সুশ্রুত এবং তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ সুশ্রুত সংহিতার কথা সবাই জানেন।গ্রন্থটি এতই জনপ্রিয় ছিল যে সেইসময় আরবেও এটি অনুবাদিত হয়েছিল কিতাব-ই-সুশ্রুত নামে।এই গ্রন্থের মূল আলোচ্য বিষয় ই হচ্ছে চিকিত্সাসবিজ্ঞানের বিভিন্ন জটিল ও সুক্ষ্ম বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা।
আজ আপনাদের সামনে আমরা উপস্থিত করব ত্বকীয় তন্ত্রের অংশ বর্ননাকারী সুশ্রুতসংহিতার একটি অংশ যা পড়ে আপনারা হয়তো ধারনা পাবেন যে কি নিখুঁত একটি চিকিত্সা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন এই আর্যবিজ্ঞানীরা। 
আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানমতে ত্বকের সাতটি স্তর- 
১)এপিডার্মিস 
-স্ট্র্যটাম কর্নিয়াম 
-স্ট্র্যটাম লুসিডাম 
-স্ট্র্যটাম গ্র্যনুলোসাম 
-স্ট্র্যটাম স্পাইনোসাম 
-স্ট্র্যটাম জার্মিনেটিভাম 
২)ডার্মিস 
৩)হাইপোডার্মিস 
সুশ্রুতসংহিতার পূর্বতন্ত্রের শরীর স্থান খন্ডের চতুর্থ অধ্যয়ের চতুর্থ অনুচ্ছেদটি দেখে নেয়া যাক- 
অথ সপ্ত ত্বকর্ননম 
প্রথমস্ববভাসিনি নামা যা সর্বা... 
অর্থাত্ এই হল ত্বকের সাতটি স্তর,প্রথমটি হল অবভাসিনি যার পুরুত্ব একটি চালের দানার ১৮ভাগের এক ভাগ। 
দ্বিতীয় লোহিত নামা ব্রিহিসোদসভগপ্রমানা... অর্থাত্ দ্বিতীয়টির নাম লোহিত যার পুরুত্ব একটি চালের দানার ১৬ভাগের এক ভাগ।এর নাম লোহিতা এবং অনুবীক্ষন যন্ত্রের নিচে দেখলে দেখা যায় এর রঙ লাল বর্নের! 
তৃতীয়া শ্বেতা নামা বৃহিদ্বাদশাভাগ... অর্থাত্ তৃতীয়টির নাম শ্বেত যার পুরুত্ব চালের দানার ১২ভাগের এক ভাগ।এর নাম শ্বেত এবং অনুবীক্ষনযন্ত্রে এটি দেখতে সাদা রঙের! 
চতুর্থি তাম্র নামা বৃহেরষ্টভাগপ্রমানা... অর্থাত্ চতুর্থটির নাম তাম্র যা থেকে বিভিন্ন খস পাঁচড়ার উদ্ভব হয় এবং এর পুরুত্ব চালের দানার ১৮ভাগের এক ভাগ।এর নাম তাম্র এবং অনুবীক্ষনযন্ত্রে দেখা যায় এই স্তরটি তাম্র রঙের! 
পঞ্চমি বেদিনি নামা বৃহিপঞ্চভাগা... অর্থাত্ পঞ্চমটির নাম বেদিনি যা হতে কুষ্ঠরোগের উদ্ভব হয় এবং এর পুরুত্ব চালের দানার পাঁচ ভাগের একভাগ।বেদিনি শব্দের অর্থ হল ভিত্তি আর আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে ত্বকের পঞ্চম স্তরটির অপর নাম স্ট্র্যটাম বেসেল অর্থাত্ যে স্তরটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করে! 
ষষ্ঠি রোহিনি নামা বৃহিপ্রমানা... ষষ্ঠ স্তরের নাম রোহিনী যা থেকে টিউমার,এলিফেন্থিয়াসিস ইত্যাদির উদ্ভব হয়।এটির পুরুত্ব চালের দানার পুরুত্বের সমান।রোহিনী শব্দের অর্থ হল নিরাময়কারী এবং আধুনিক বিজ্ঞানমতে ষষ্ঠ স্তর থেকেই ত্বকীয় ক্ষতের নিরাময় শুরু হয়! 
সপ্তমি মংসধর নামা বৃহিদ্বয়া... অর্থাত্ সপ্তমটির নাম মংসধর যা থেকে ফিস্টুলা,এবসেস এর উত্পনত্তি এবং যার পুরুত্ব চালের দানার দ্বিগুন।এই নামের কারন হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানমতে এই স্তরটিই মাংস ধরে রাখে অর্থাত্ নিচে অবস্থিত মাংসপেশীকে আঁটকে রাখে! 
প্রাচীন আর্যভারতের অসাধারন বিজ্ঞানচর্চা মানবসভ্যতার জন্য এক অনন্য নিদর্শন ছিল আর পরবর্তীতে পৌরানিক কুসংস্কারে নিমগ্ন হয়ে আমরা ডুবে গেলাম অন্ধকারে আবর্তে। 

[মহর্ষি শুশ্রুতার (জন্ম :-১২০০ খ্রীস্টপূর্ব) পৌত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের বিক্রমপুরে।লেখাপড়া করেন বারাণসীতে,উত্তর প্রদেশ।তাকে বলা হয় শল্য (Surgery) চিকিত্সার জনক।পৃথিবীর প্রথম চোখের ছানির অপারেশন তিনি করেছিলেন। তিনি রচনা করেছেন “শুশ্রুত সংহিতা”।তিনি এ বইতে অস্ত্রোপচারের অনেক পদ্ধতির সঙ্গে ভারতে প্লাস্টিক সার্জারি চালু করেন।এ বইয়ে ৩০০টি শল্য চিকিত্সার কলাকৌশল এবং ১২০টি শল্য চিকিত্সার যন্ত্রপাতির কথা বর্ননা করেছেন। 
তিনি মানব শল্য চিকিত্সাকে আট ক্যাটাগরিতে ভাগ করেন। তিনি যে বই লেখেন, তা অনেক পরে অনূদিত হয় আরবিতে। ভাষান্তরিত হয়ে এটি ইতালিতে যাওয়ার পর প্লাস্টিক সার্জারির সঙ্গে পরিচিত হয় ইউরোপীয়রা।উল্লেখযোগ্য ব্যপার এই যে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকেই বৃটিশরা Rhinoplasty operation শিখেছিল]

Maharishi Sushruta : father of surgery






সুশ্রুতর প্রাচিন ভারতে এবং সম্ভবত মানব ইতিহাসের প্রথম সার্জন বা শল্যচিকিৎসক। তাঁর জন্ম সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৬ শতকে এবং জন্মস্থান কাশীর নিকটে অবস্থিত। এই মহাঋষি ‘সুশ্রুত সংহিতা’ একটি সংস্কৃত বই লেখেন যা সার্জারি আদি পুস্তক।এই বইটিতে ১৮৪ টি অধ্যায় আছে, যেখানে ১১২০ টি রোগের বর্ণনা,৭০০ ভেষজ উদ্ভিদের কথা,৬৪ টি রাসায়নিক মিশ্রনের বর্ণনা যা বিভিন্ন খনিজ থেকে তৈরি হয় এবং আরও ৫৭ টি মিশ্রন যা প্রানিজ উপাদান থেকে প্রস্তুত করা হত । প্রাচীন ভারতে বিশেষ করে বাংলা অঞ্চলে শল্য চিকিৎসারও ব্যাপক প্রসারের খোঁজ পাওয়া যায়। চরকের মতো সুশ্রুত নামে একজন শল্য চিকিৎসক ‘সশ্রত সংহিতা‘ রচনা করেন, যিনি কাশীর অধিবাসী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তাকে ভারতবর্ষের সার্জারির জনক বলে বিবেচনা করা হয়। তার বইটিও আরবি, ফার্সিসহ জার্মান ভাষাতেও অনূদিত হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সুশ্রত তার বইয়ে শতাধিক সার্জারির প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে গেছেন, সেই সঙ্গে দিয়েছেন অসংখ্য সার্জিকাল যন্ত্রপাতির বিবরণ। কামারদের কাছ থেকে কী করে অতি সূক্ষ সেসব যন্ত্র বানিয়ে নিতে হবে, তারও উপদেশ রয়েছে তার বইয়ে। প্রাচীনকালে শাস্তিস্বরূপ অনেকের নাক কেটে দেয়া হতো। সশ্রত দেহের অন্য অংশ থেকে চামড়া এনে সেই নাক মেরামতেরবর্ণনা দিয়েছেন। একে আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির আদি রূপ বলা যেতেপারে।
চিকিৎসাশাস্ত্র ও রসায়নের এমন রচনা বিশ্বে বিরল।তালপাতার ওপর সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছে এ পাণ্ডুলিপিটি। ১২০ রকমের সার্জারির যন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে, তার ৫৬টির বিশদ বর্ণনা। ব্যবহারের আগে যন্ত্রগুলি জলে ফুটিয়ে নেওয়া হত, রোগীকে অজ্ঞান করা হত নানা মদিরা দিয়ে। ১৪ রকম পদ্ধতিতে ১৫ রকম ফ্র্যাকচার সারানোর কথা বলা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান এ সব পদ্ধতির পুনরাবিষ্কার করেছিল উনিশ শতকে। প্রাচীন এ পাণ্ডুলিপির ঐতিহাসিক মূল্য ও গুরুত্ব বিবেচনায় এনে গত জুনে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রাচীন ভারতের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল আয়ুর্বেদ। সেই সূত্রে, বলাইবাহুল্য, প্রাচীন বাংলাতেও আয়ুর্বেদই ছিল চিকিৎসার মূলধারা। আগেই উল্লেখ করেছি সে সময় চিকিৎসাচর্চা ছিল ধর্মচর্চারই অংশ। আয়ুর্বেদও এর ব্যতিক্রম নয়। আয়ুর্বেদও বস্তুত একটি ধর্মগ্রন্থই। বেদশাস্ত্রেরই একটি শাখা এটি। আয়ু বৃদ্ধির বেদ।
‘সুশ্রুত সংহিতা’ তে সার্জারির যে সব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে সে গুলো হলঃ making incisions, probing, extraction of foreign bodies, alkali and thermal cauterization, tooth extraction, excisions, and trocars for draining abscess draining hydrocele and ascitic fluid, the removal of the prostate gland, urethral stricture dilatation, vesiculolithotomy, hernia surgery, caesarian section, management of haemorrhoids, fistulae, laparotomy and management of intestinal obstruction, perforated intestines, and accidental perforation of the abdomen with protrusion of omentum and the principles of fracture management, viz., traction, manipulation, appositions and stabilization including some measures of rehabilitation and fitting of prosthetics.
এছাড়া বইটিতে ৬ ধরনের ডীযলোকেশন, ১২ ধরনের হাড় ভাঙ্গা, অস্থির প্রকারভেদ, ছানি পরা সহ বিভিন্ন চোখের রোগের প্রকারভেদ আলোচনা করা হয়েছে।
এই বইটি ২ ভাগে বিভক্ত। পূর্বতন্ত্র এবং উত্তরতন্ত্র। যেখানে মেডিসিন,শিশুরোগ, নাক কান গলা, চক্ষুর বিভিন্ন রোগ এবং টক্সিকোলজি এবং মনরোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ৮ম শতকে এই বইটি আরবি ভাষায় আনুদিত হয় যার নাম কিতাব ই সুশ্রুতর।
এই মহান ঋষিকে প্রান থেকে জানাই প্রনাম।
বিজ্ঞান বিশ্বে সভ্যতার আদি হতে অবদান রেখে চলেছে বৈদিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী গন।যখন ইউরোপে ভালভাবে কাপড় বোনার প্রযুক্তিও ভালভাবে রপ্ত হয়নি তখন প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানীরা পাই এর মান বের করেছেন,পৃথিবী সূর্যের দূরত্ব বের করেছেন,ত্রিকোণমিতির সুত্র বের করেছেন,ক্যালকুলাসের মৌলিক বিষয় নিয়ে চর্চা করেছেন,জ্যামিতির সুত্রপাত করেছেন,জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করেছেন।কিন্তু যখনই ভারত বিদেশি শাসনের অন্তরালে বন্দী হয়েছে তখন থেকেই শুরু হয়েছে অন্ধকার যুগের যার রেশ এখনও বয়ে চলেছে এই ভারতীয় উপমহাদেশ।কারণ বিদেশি শাসকেরা জ্ঞানবিজ্ঞান দর্শন চর্চার কেন্দ্র গুলোকে ধ্বংস করে ফেলে,হত্যা করে ফেলে যারা এগুলো চর্চা করত। 

পবিত্র বেদে ঔষধ বিজ্ঞান





ঋগ্বেদ।১০/৯৭/১থেকে ১০/৯৭/২৩ পর্যন্ত
নিচে প্রধান কয়েকটি উল্লেখপুর্বক বিশ্লেষন করা হলো।
ঔষধি দেবতা। ভিষ্ক ঋষি।অনুষ্টুপ ছন্দ।
১০/৯৭/১
যা ওষধীঃ পূর্কা জাতা দেবেভ্যস্ত্রিযুগং পুরা।
মনৈ নু বভ্রুনামহং শতং ধামানি সপ্ত চ।।
অনুবাদঃ হে মনুষ্যজাতী যুগযুগ ধরে এই ঔষধি প্রকৃতির নিয়মে আমি ঈশ্বর জগতে সৃস্টি করেছি সে সকল পিঙ্গল বর্নের ওষধি একশত সপ্ত স্থান বিদ্যমান। তোমরা এরুপ জ্ঞান করো,এবং অন্বেষণ করো।
১০/৯৭/২
শতং বো অম্ব ধামানি সহস্রমুত বো রুহঃ
অধা শতক্রত্বো যুয়মিমং মে অগদং কৃত।
অনুবাদ: ঔষধ হলো জননী সরুপা।তোমরা( মনুষ্যরা) মৃত্তিকাতে রোহন করো( উৎপন্ন করো)। ঔষধ শত বা সহস্র প্রকার বা স্থান রয়েছে।ঔষধের ক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন শত সহস্র প্রকার।তোমরা আরোগ্য বিধান করো।
১০/৯৭/৬
যত্রৌষধিঃ সমগ্মত রাজানঃ সমিতাবিব
বিপ্রঃ স উচ্যতে ভিষগ্রক্ষোহামীবচাতন।।
যেমন রাজাগন যুদ্বে একত্র হয় তেমনি যে ব্যাক্তি বিভিন্ন প্রকার ঔষধি এক জায়গায় যুক্ত করেন এবং নতুন নতুন ঔষধ তৈরী করেন,সে বুদ্বিমান তাকে ভিষক বা ঔষধবিজ্ঞানী বা চিকিৎসক বলে। তারা দ্বারা রোগের বিনাশ হয়।
১০/৯৭/১০
অতি বিশ্বাঃ পরিস্ঠাস্তনঃ ইব ব্রজমক্রমুঃ
ওষধী প্রাচুচ্যবুর্যৎ কিন্চ তন্বরোপ।।
অনুবাদঃ যে রুপ চোর যেমন গোস্ঠ অতিক্রম করে তেমনি বিশ্বব্যাপি সর্বত্রগামী ঔষধি গন রোগ অতিক্রম করে। শরীরে যা কস্ট বা পীড়া থাকে তা ঔষদিগন দুরিভুত করে।
১০/৯৭/১২
যস্যেষধীঃ প্রসর্পথাঙ্গমঙ্গং পুরুচপর
ততো যক্ষাং বি বাধব্ব উগ্রো মধ্যমশীরিব।।
অনুবাদঃ যে রুপ বলবান ও মধ্যার্তী ব্যাক্তি সকলকে আয়ত্ত করেন সেরুপ হে ঔষধি তোমাদের সেবনের পর তোমরা ( ঔষধীরা) অংগ প্রত্যঙ্গ ও গ্রন্থিতে গ্রন্ন্থিতে বিচরন করে ঐ বাক্তির যে সকল স্থাননে রোগ তা নির্মুল করো।
১০/৯৭/১৫
যাঃ ফালিনীর্যা অফলা অপুস্পং যাশ্চ পুস্পিনীঃ
বৃহস্পতিপ্রসূতাস্তা নো মুন্চনত্বংহসঃ।।
অনুবাদঃ হে মনুষ্যজাতী,, যে সকল বৃক্ষ ফলবতী বা ফলবাতী নয়,যে সকল বৃক্ষ পুস্পবতী বা পুস্পবতী নয় ( অপুস্পক বা সপুস্পক) সকল প্রকার বৃক্ষে কিছুনা কিছু ঔষধিগুন রয়েছে।উহা তোমাদের রক্ষা করবে।
১০/৯৭/ ১৯
যা ওষধীঃ সোমরাজ্ঞীবির্স্ঠিতাঃ পৃথিবীমনু
বৃহস্পতিপ্রসুতা অস্যৈ সং দত্ত বীর্য়ম।।
অনুবাদঃ সোম সকল ঔষধির রাজা। ঔষধি পৃথীবির সকল স্থানে বিস্তৃত করা হয়েছে।এ সকল ঔষধি রোগীকে রোগমুক্ত করে বলবান করবে।এবং চিকিৎসক ঐ রোগের জন্য ঔষধি ব্যাবহার করবেন।
১০/৯৭/২০
মা বো রিষৎখনিতা যস্মৈ চাহং খনামি বঃ
দ্বিপচ্চতুস্পদস্মাকং সর্বমনস্ত্বনাতুরম্।।
অনুবাদঃ এই ঔষধি তোমরা রক্ষা করো যেনো নস্ট না হয়। তোমাদের যা কিছু আছে যেমন দ্বিপদ বা চতুস্পদ সকলে যেনো নিরোগ থাকে। তাদের জন্যও এ ঔষধি ব্যাবহার করো।
মন্ত্রগুলোর তাৎপর্যঃ
বেদ হলো সম্পুর্ন সংবিধান। পৃথীবিতে প্রথম একমাত্র বেদই ঔষধ বিজ্ঞানের ধারনা দেয়। আমরা কোথায় ঔষধ পাবো কিভাবে সংগ্রহ করবো, কিভাবে ঔষধ তৈরী করবো, কে তৈরী করবে, তার নাম কি হবে, কিভাবে ব্যাবহার করবো, ঔষধ শরীরে কিভাবে কাজ করবে ইত্যাদি সম্পুর্ন ভাবে বেদে বর্ননা করা হয়েছে।এমনকি শুধু মানুষের জন্য নয় ঔষধ দ্বিপদ প্রানী চতুস্পদ প্রানীদের ও ঔষধ ব্যাবহার করাতে বলা হয়েছে। ঔষধ সংরক্ষন করতে বলা হয়েছে। সকল ধরনের উদ্ভিদে যে না না রকম ঔষধি গুন রয়েছে তাও বর্ননা করা হয়েছে।
একমাত্র বেদই হলো আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎস।ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই।

Wednesday, January 3, 2018

চৈতন্য মহাপ্রভুকে নিয়ে কিছু কথা

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পাণ্ডাদের মধ্যে একটা ভীষণ প্রবাদ চালু আছে, মালীবুড়োর শ্রীচৈতন্যের অন্তর্ধান রহস্য বইটা আমাদের জানাচ্ছে। এই পাণ্ডারা অনেকেই গর্ব করে বলে যে চৈতন্যকে তাদের পূর্বপুরুষেরা হত্যা করেছিল।
কেন করেছিল? এরা বলে, এর কারণ চৈতন্য নাকি বাংলার মুসলমান শাসকের চর ছিলেন! আর তাই চৈতন্যর উড়িষ্যায় আগমনের পরেই প্রথমবারের জন্য গৌড়ের মুসলমান শাসক উড়িষ্যায় সফলভাবে হামলা করতে পেরেছিল। সাহসীজন এ ব্যাপারে পুরীতে গিয়ে উড়িয়া পাণ্ডাদের মধ্যে খোঁজখবর করে দেখতে পারেন এরকম একটা কথা চালু আছে কি না ।
অনেককেই বলতে শুনি মহাপ্রভু নাকি হরে কৃষ্ণ নাম প্রচার করে বলেছেন এই নাম ছাড়া নাকি কলিতে মুক্তি নাই। উনার রচিত চৈতন্য চরিতামৃততেও একি কথা লেখা। কিন্তু বাস্তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়,  উনি কখনো ধর্মকে সেক্টেরিয়ান করতে চান নাই। আর তাই এই অশাস্ত্রীয় হরে কৃষ্ণ নাম প্রচার করার প্রশ্নই আসে না। আরও জানা যায় মহাপ্রভু মারা যাবার অনেক বছর পর চৈতন্য চরিতামৃত রচনা হয়! আরও অবাক বিষয় হল এই চরিতামৃতের শেষ ভাগ খুজে পাওয়া যায় না। বাঙ্গালী হিন্দু তাঁর ইতিহাস আর গোঁড়া নিয়ে উদাসীন। আর তাই এসব ঘাটে না আর ঘাটতে গেলেও ভয়ে প্রকাশ করে না কিনা লোকে কি বলবে??
যাইহোক , মহাপ্রভু নিয়ে আমার কিছু বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরবো। বিচক্ষণ চক্ষু বিবেচনা করবেন। একটা আগ্রাসনকে বুঝতে গেলে তার ইতিহাসকে বুঝতে হয়।
চৈতন্য আন্দোলনের ফলে উড়িষ্যায় মুসলমান হামলা হয়েছিল, এই বক্তব্য এমনই জোরালো হয়ে ওঠে ক্রমে, যে প্রভাত মুখার্জি তার মেডায়েভাল বৈষ্ণবিজম ইন ওড়িশা গ্রন্থে এটিকে রীতিমত তথ্য ও যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করেছেন, অর্থাৎ এটি উড়িয়ে দেওয়ার মত অকিঞ্চিতকর প্রলাপ নয়, অনেক উড়িষ্যাবাসী এতে বিশ্বাস করেন। ইন ফ্যাক্ট খোঁজ নিলে দেখবেন, অনুরূপ চাপা চৈতন্যবিদ্বেষ বাংলাভাষী হিন্দুত্ববাদীদের অনেকের আছে, এরাও একইরকম মনে করে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে চৈতন্যর সাম্যময় ভক্তি আন্দোলনের ফলে পাণ্ডাদের মৌরসীপাট্টায় খুবই বাধা পড়ছিল। তাছাড়াও সে যুগেও এক শ্রেণীর উড়েদের ভেতরে বাঙালিবিদ্বেষ পুরোমাত্রায় ছিল। এজন্য চৈতন্যের নামে এই অপবাদটি ছড়ানো হয়েছিল এবং তাকে হত্যা করা হয় মন্দিরের ভেতরেই। অনেকে আবার এও ধারনা করেন যে উনার কাছের পার্ষদ শ্রী নিত্যানন্দ মহাপ্রভু নিজেই ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতার লোভে উনাকে হত্যা করার সাথে জড়িত ছিলেন। 

সেযুগের উৎকল বৈষ্ণবেরা প্রেম ও ভক্তির উৎস হিসেবে রাধা-কৃষ্ণকে মানতেন না। বলতেন রাধা ও কৃষ্ণের সম্পর্ক ভাই বোনের। সেটাও আরেকটা বড় পার্থক্য ঘটায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের সঙ্গে। একসময় মনান্তর এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে গৌড়ীয় ভক্তরা সবাই পুরী ত্যাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান, চৈতন্যের জীবদ্দশাতেই। 

চৈতন্যর পূর্বপুরুষ সিলেট থেকে এসেছিলেন, সমসাময়িক সমস্ত জীবনীকার তাই বলছেন। উড়িষ্যার যাজপুর থেকে তারা সিলেটে গেছিলেন, এরকম কোনও কথা চৈতন্যের সমসাময়িক কোনও বাঙালি জীবনীকার বলেন নি। মধ্যযুগের উড়িষ্যার কবি মাধব পট্টনায়ক প্রথম বললেন, যে চৈতন্যদেবের পূর্বপুরুষ উড়িষ্যার যাজপুর থেকে সিলেট গেছিলেন। এই মাধব পট্টনায়কই কবি জয়দেবকে উড়িয়া বলে দাবী করেছিলেন প্রথম। দু-দুটো বৃহৎ মিথ্যার প্রথম জন্মদাতা এই মাধবের বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানা না গেলেও, এই লোকটি চৈতন্যের সময়ে উড়িষ্যার পঞ্চসখা বৈষ্ণবদের দলেরই একজন অনুগামী ছিলেন, সেটা জানা যায়।এরপর বাঙালি কবিদের মধ্যে প্রথম জয়ানন্দই "চৈতন্যের পূর্বপুরুষ উড়িয়া ছিলেন" মাধবের এই বক্তব্যটি রিপিট করেন, তারপর থেকে ওই যাজপুরের কথাটা চলেছে। প্রসঙ্গত, এই জয়ানন্দই বলেছিলেন যে চৈতন্যর মৃত্যু ইঁটের খোঁচায় হয়েছিল, আর কোথাও সে বক্তব্য পাওয়া যায় না।
চৈতন্য যে শ্রেণীর ব্রাহ্মণ ছিলেন, অর্থাৎ পাশ্চাত্য বৈদিক, সে শ্রেণীর ব্রাহ্মণ উড়িষ্যায় মেলে না, যদিও মিশ্র পদবী দেখা যায়, সেখান থেকেই জালসাজির সূত্রপাত।

শ্রী চৈতন্য কি সত্যই পুরীর সমুদ্রে অথবা জগন্নাথের দারু অঙ্গেই লীন হয়ে গিয়েছিলেন ...??

সালটা ছিল ২০০০...। পুরীর বিখ্যাত শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সংস্কার কার্য্য চলার সময় হঠাৎ-ই গর্ভগৃহ থেকে উদ্ধার হল একটি আস্ত নরকঙ্কাল! দৈর্ঘ্য’তে যা ছিল প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি।

গর্ভগৃহে কঙ্কাল...!! চারিদিকে হৈ-হৈ পড়ে গেল। কিন্তু কার দেহাস্থি এটি? চারিদিক জুড়ে মাসাধিক কাল ধরে চলল প্রবল বিতর্ক। পরীক্ষা করে জানা গেল মৃত ব্যক্তি ছিলেন অত্যান্ত দীর্ঘাঙ্গী এবং যার মৃত্যু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে।

পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিচার করে বেশিরভাগ মানুষ তখন এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হলেন যে কঙ্কালটি আর যার-তার কারও নয়, এই বাংলার ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ... স্বয়ং শ্রী চৈতন্য দেবের!! একই সঙ্গে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শ্রীচৈতন্যের সমুদ্রে লীন হবার তত্ত্বও খারিজ হবার পাশাপাশি পুরীর মন্দিরে তাঁকে হত্যা করবার বিষয়’টিও আরও একবার জনসমক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়।

সে যাই হোক, জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যে শ্ৰীচৈতন্যকে ‘গুমখুন’ করা হয়েছিল, এই অভিমত সর্বপ্রথম প্রচার করেন, ঐতিহাসিক ড. নীহাররঞ্জন রায়। ৫-৮-১৯৭৬ , তারিখে, পুরীর আনন্দময়ী আশ্রমের ড. জয়দেব মুখোপাধ্যায়কে লেখা একটি চিঠিতে ড. রায় লিখলেন, শ্ৰীমহাপ্ৰভু চৈতন্যদেবকে গুমখুন করা হয়েছিল পুরীতেই এবং চৈতন্যদেবের দেহের কোন অবশেষের চিহ্নও রাখা হয়নি কোথাও। এবং তা হয়নি বলেই তিনটি কিংবদন্তী প্রচারের প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি আরও লিখেছেন ‘ওই গুমখুনের সমস্ত ব্যাপারটাই একটা বহুদিনের চিন্তিত, বহুজন সমৰ্থিত চক্রান্তের ফল। কে বা কারা ওই চক্রান্ত করেছিলেন, সে সম্পর্কে আমার একটা অনুমান আছে, কিন্তু তা বলতে পারব না। কারণ এখনও আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতে চাই। চৈতন্যদেব, গান্ধী martyr হতে পারেন, কিন্তু আমার martyr হওয়ার বিন্দুমাত্র বাসনা নেই”।






দীনেশচন্দ্ৰ সেন তাঁর ‘চৈতন্য অ্যান্ড হিজ এজ' - গ্রন্থে লিখেছেন, “শ্ৰীচৈতন্য যদি বিকেল ৪’টের সময় মন্দিরের মধ্যে দেহত্যাগ করে থাকেন, আমরা জানি, ওই দিন রাত ১১টা পর্যন্ত মন্দিরের দরজা খোলেনি। এই সময়টা লেগেছিল তাঁর দেহ (মন্দিরের মধ্যে) পুঁতে ফেলে মন্দিরের মেঝে আবার আগের মত করতে। রাত ১১’টায় দরজা খুলে বলা হল, প্ৰভু জগন্নাথের দেহে চৈতন্য লীন হয়ে গেছেন।” 
শুধু ডঃ রায় বা ডঃ সেনই নন, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরি, ডঃ অমূল্যচন্দ্র সেন, ড. জয়দেব মুখোপাধ্যায়, মালীবুড়ো, ঔপন্যাসিক সমরেশ বসু - এঁদের সবার ধারণা, চৈতন্যদেবকে গুমখুন করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, চৈতন্যদেবের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করতে গেলে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। খগেন্দ্রনাথ মিত্র ও ডঃ দীনেশ সেন নিন্দিত হয়েছিলেন। ড. অমূল্য সেনের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছিল। তবুও শত বিপদ ও মৃত্যুভয়ের মাঝেও ওঁরা চৈতন্যের মৃত্যুর ঘটনাটিকে ‘হোমিসাইড’ বলেছিলেন।

ড. দীনেশচন্দ্ৰ সেনের ধারণা ছিল, জগন্নাথ মন্দিরের পাণ্ডারা চৈতন্যকে পিটিয়ে মেরেছে। কিন্তু কেন ? – কী এমন মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ তিনি করেছিলেন?

ঐতিহাসিক মতপার্থক্য অনুযায়ী, সংসার করবেন না প্রচার করেও দুই বিবাহের অধিকারী চৈতন্য ঠিক ততদিন-ই ঠিকঠাক “শ্রী চৈতন্য” হতে পারেননি, যত দিন না ... কাজীর বাড়ি ঘেরাওয়ের সফল আন্দোলন করতে সক্ষম হন। তাঁর সেদিনের সেই সাংগঠনিক শক্তির পরিচয় পেয়ে প্রমাদ গোনেন তৎকালীন বাংলার মুসলমান শাসনকর্তা হুসেন শাহ।

প্রতিপক্ষের মাথা কিনে নেবার ব্যাপারে ইসলামের সমকক্ষ এই বিশ্বে যেমন আজও কেউ নেই, তেমনি আগেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। মনে করা হয়, ছলে বলে কৌশলে বা ভীতি প্রদর্শন করে যেমন ভাবেই হোক হুসেন শাহও তেমনি সেদিন শ্রী চৈতন্যকে বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। খুব সম্ভবত তারই অঙ্গ হিসেবে পরবর্তীকালে একদিকে যেমন হুসেন শাহ তাঁর তীব্র হিন্দু বিরোধিতা ত্যাগ করেন, অন্যদিকে চৈতন্যও প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্ধী’তায় সারা বাংলা জুড়ে প্রবলভাবে হরিনাম প্রচার চালাতে থাকেন। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সে’কালে যা ছিল একান্তই অসম্ভব।

অস্ত্রধারী ভগবান শ্রীবিষ্ণু’কে শ্রীচৈতন্য সম্পূর্ন নিরস্ত্র রূপে এই বাংলা’র সামনে নবভাবে উপস্থাপিত করেন। তাঁরই প্রভাবে রাধা-তত্ত্ব ও প্রেমরসে নতুন ভাবে শ্রীকৃষ্ণ’কে গ্রহন করে মন্ত্রমুগ্ধ বাঙ্গালী হিন্দু সমাজ। শ্রী চৈতন্যের আহ্বানে তারা দলে দলে অস্ত্র পরিত্যাগ করে; ত্যাগ করে আমিষ খাদ্যদ্রব্য! পরিবর্তিত হয় এক সম্পূর্ন যুদ্ধ-বিমুখ আত্মরক্ষার কৌশল বিবর্জিত ভগবৎ-মুখাপেক্ষী এক আত্মঘাতী জাতীসত্ত্বায়।

বাংলার হিন্দুদের উপর তাঁর নৈতিক বিজয়ের পর, হুসেন শাহের দৃষ্টি পড়ে উড়িষ্যার উপর। খুব সম্ভবত তাঁরই নির্দেশে শ্রী চৈতন্য উড়িষ্যায় গমন করেন এবং সেখানে অষ্টাদশ বছর অবস্থানকালে সেখানকার রাজা প্রতাপ রুদ্রদেব’কে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহনে সমর্থ্য হন। শুধু কি তাই? উড়িষ্যার রাজাকে নিরস্ত্র করতেও তিনি সক্ষম হন। এমনকি হুসেন শাহের উড়িষ্যা আক্রমণকালেও তাঁর নির্দেশ ছিল, প্রতাপ রুদ্র যেন হুসেন শাহের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ না করেন! বরং অদ্ভুত ভাবে তাঁর কারনেই নাকি সে-সময় দক্ষিণের একমাত্র হিন্দু রাজ্য বিজয়নগরের সাথে উড়িষ্যার সম্পর্কের অবনতি’র সূত্রপাত ঘটে!!

ফলস্বরূপ উড়িষ্যার হিন্দুরা, চৈতন্যের এই ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে, তাঁকে সেখান থেকে অতিস্বত্বর সরিয়ে দেবার চক্রান্ত করে। চৈতন্যের নিরুদ্দেশ হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতাপ রুদ্র কটকে পলায়ন করেন এবং সেখানে তাঁর প্রধান সেনাপতি ভারু কতৃক পদচ্যুত ও নিহত হন। ইসলামিক আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা পায় উড়িষ্যা। বেঁচে যান সেখানকার হিন্দুরা।

মানুষ মরণশীল। শ্ৰীচৈতন্যও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তারও মৃত্যু ঘটেছিল। কিন্তু কী বঙ্গীয়, কী ওড়িয়া- সব চরিত্কারই তাঁর মৃত্যুর ধরন, স্থান, সময় ও তারিখ সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। অবশ্য মনে রাখতে হবে, স্বরূপ দামোদর, রায় রামানন্দ, গোদাধর পণ্ডিত ও অচ্যুতানন্দ এবং শিখী মাহাতি ছাড়া বাকিরা কেউই মহাপ্রভুর শেষলীলার প্রত্যক্ষদর্শী নন। অন্যরা কেউ কেউ আবার ১০০-১৫০ বছর পরের লোক। কৃষ্ণদাস কবিরাজ বলেছেন, ‘চৈতন্যের শেষলীলা রহিল অবশেষ'। অপর স্থানে বলেছেন, ‘প্রভুর যে শেষলীলা স্বরূপ দামোদর/সূত্র করি গাঁথিলেন গ্রন্থের ভিতর।’ আশ্চর্যের ব্যাপার, স্বরূপ দামোদরের সেই পুঁথি বেমালুম বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল পুরী থেকে। আজ পর্যন্ত তার কোনও খোঁজ মেলেনি। ঐতিহাসিকদের মতে, এই পুঁথিতে নিশ্চয়ই এমন কিছু স্বরূপ দামোদর লিখেছিলেন, যেটা ‘চৈতন্য-বিরোধী’রা মেনে নিতে পারেন নি। সে জন্যই তারা সেই পুঁথি লোপাট করে দিয়েছিলেন। যাই হোক, চরিতকারগণ একই চৈতন্যদেবকে নিয়ে লিখেছেন, অথচ এই মৃত্যুর ব্যাপারে এদের গরমিল চোখে পড়ার মত। পুরীতে চৈতন্যের কোনও সমাধি মন্দির নেই। যত গোলমাল এখানেই!




- এখন দেখা যাক, তার চরিত্কারগণ তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে কে কী বলেছেন।
১। অচ্যুতানন্দ, দিবাকর দাস, ঈশ্বর দাস, ঈশান নাগর, লোচন দাস – এঁদের মতে শ্ৰীচৈতন্য জগন্নাথের কালো অঙ্গে ‘লীন’ হয়ে গেছেন।
২। জয়ানন্দ, নরহরি, সদানন্দ, - এঁদের মতে, বাঁ পায়ে ইটের আঘাত পেয়ে চৈতন্য তোটা গোপীনাথের মন্দিরে আশ্রয় নেন, পরে সেখানেই তিনি ‘অন্তর্হিত' হন। কিন্তু, তাঁর মায়াশারীর পড়েছিল।
৩। বৃন্দাবন দাস এ সম্পর্কে সম্পূৰ্ণ নীরব। কৃষ্ণদাস কবিরাজ, খালি ‘অন্তর্ধান' কথাটি বলেছেন। সম্প্রতি বৃন্দাবন দাসের পুঁথির সেনের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে তিনিও ‘অন্তর্ধান' কথাটিই বলেছেন ।
৪। সমূদ্রতীরে বিদ্যুতের মত ‘অন্তর্হিত’ হওয়ার কথা বলেছেন গোবিন্দ।
৫। আদি চরিতকার মুরারী গুপ্ত, কবি কর্ণপুর এ সম্পর্কে কিছুই বলেননি। আবার, এঁদের কেউ কেউ বলেছেন, মহাপ্ৰভু দেহত্যাগ করেছেন বৈশাখ মাসের সন্ধ্যায়, কেউ বলেছেন আষাঢ় মাসের শুক্লা সপ্তমীতে, কেউ বলেছেন , আষাঢ় শুক্লা সপ্তমীতে রবিবার তৃতীয় প্রহরে, কেউ বলেছেন ফাল্গুনী পূর্ণিমায়। লোচনদাস তাঁর চৈতন্যমঙ্গলে বলেছেন, “একদিন প্ৰভু, একমাত্র গোদাধর’কে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন। কিন্তু প্ৰভু একাই মন্দিরে প্রবেশ করার পর ‘কপাট’ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। পিছনে ভক্তরা এসে কান্নাকাটি শুরু করতে একজন পান্ডা ভেতর থেকে এসে খবর দিল যে প্ৰভু জগন্নাথে লীন হয়ে গেছেন।” তাঁর ডক্তরা কেউ এ ঘটনার সাক্ষী হতে পারল না। সাক্ষী হলেন তাঁরই বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী পান্ডাদের একজন।

এ সম্পর্কে বর্তমান ঐতিহাসিকদের মতে, সে দিন কী ঘটেছিল দেখা যাক। তা হলে পরিস্কার একটা আভাস পাওয়া যাবে যে চৈতন্যের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়নি। ঐতিহাসিকদের প্রশ্ন, কেন তিনি একাকী জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করলেন, যখন বিগ্রহগুলি গুণ্ডিচা মন্দিরে অবস্থান করছে? তা হলে কি তাঁরই কোনও ঘনিষ্ঠ পার্ষদ ‘জুডাস’-এর ভূমিকা নিয়েছিল? লোচন বলেছেন, প্ৰভু যখন একাকী মন্দিরে প্রবেশ করলেন তখন ‘দুয়ারে নিজ লাগিল কপট’। জগন্নাথ মন্দিরের ওই বিশাল বিশাল দরজাগুলি কীভাবে নিজেই লেগে গেল তা একমাত্র জগন্নাথদেবেই বলতে পারবেন। ঐতিহাসিকদের মতে, সে সময় মন্দিরের ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই চট করে দরজা বন্ধ করেন। তা যদি না থাকত, তা হলে পিছনে পিছনে তাঁর ভক্তরা যখন ‘ঘুচাহ কপাট প্ৰভু দেখি বড় ইচ্ছা' বলে দরজা ধাক্কাধাক্কি করছেন, তখন নিজে লেগে যাওয়া কপাট' খুলে গেল না কেন? কিন্তু শ্ৰীচৈতন্যের সঙ্গে ছিলেন গোদাধর। বৃন্দাবনদাস ঠাকুর তাঁর অপ্রকাশিত চৈতন্য ভাগবতের অবশিষ্ট অংশে বলেছেন, “আচম্বিতে গোদাধর হইল অন্তর্ধান”। কীভাবে গোদাধর আচমকা ‘অন্তর্হিত’ হলেন? তাঁর তো অন্তৰ্হিত হওয়ার কথা ছিল না। তা ছাড়া তিনিও কি জগন্নাথের অঙ্গে লীন হলেন ? কে জানে? তা হলে কি অন্ধকার মন্দিরে লুকিয়ে থাকা শত্রুর দল তাঁকেও গুম করে দিয়েছিল? সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত ওড়িয়া কবি বৈষ্ণব দাসের পুঁথিতে আছে, রাত্রি দশ দন্ডের সময় চৈতন্যের মৃতদেহ গরুড় স্তম্ভের পিছনে পড়েছিল, এটা নাকি তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। এই যে প্রায় সমস্ত পন্ডিত বলছেন, শ্রীচৈতন্যকে হত্যা করা হয়েছিল, স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে কে হত্যা করেছিল চৈতন্য’কে? পণ্ডিতদের মতে, এই ঘৃণ্য কাজের দায়িত্ব ছিল জগন্নাথ মন্দিরের দ্বাররক্ষী বাহিনীর তৎকালীন প্রধান দলপতির ওপর। তার নাম ছিল, ‘দীনবন্ধু প্রতিহারী’। সে নাকি, ‘বুকের ওপর বসে, গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরেছিল প্রভুকে’।

এখন প্রশ্ন হল, চৈতন্যের শবদেহটা কীভাবে ও কোথায় হত্যাকারীরা পাচার করল? পুরীর ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রাক্তন কর্মসচিব স্বামী অভিনবানন্দজির মতে, মহাপ্রভুর দেহটিকে মণিকোঠার রত্নবেদীর নিচেই ‘সমাধিস্থ’ করা হয়েছিল। ড. দীনেশ সেনের ধারণাও তাই। ড. জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের মতে 'কইলি বৈকুণ্ঠ’ অথবা , ‘তোটা গোপীনাথে’র মন্দিরে সমাধী দেওয়া হয়েছিল। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও চৈতন্য বিশেষজ্ঞ পদ্মশ্ৰী সদাশিব রথ শর্মার মতে, তোটা গোপীনাথের বাঁধানো উঠানের বাম পাশ ঘেঁষে যে দুটি ছোট তুলসী মন্দির আছে, তার অপেক্ষাকৃত পুরনোটি হল চৈতন্যের সমাধি মন্দির।

শেষে কয়েকটি ঘটনার পর্যালোচনা করলে দেখতে পাব, চৈতন্যের মৃত্যু আদৌ স্বাভাবিকভাবে হয়নি। 
১। চৈতন্যের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে চৈতন্যশিষ্য পুরীর রাজা প্ৰতাপ রুদ্র রথযাত্রা ফেলে প্রাণভয়ে কটকে পালিয়ে গেলেন কেন?
২। চৈতন্যের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাবৎ চৈতন্যপন্থী ও গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা উৎকল ছেড়ে চলে গেলেন কেন? 
৩। চৈতন্যের অন্তর্ধানের পর তাঁর অন্যতম পার্ষদ স্বরূপ দামোদরকে আর জীবিত অবস্থায় দেখা গেল না কেন? দেখা গেল দামোদরের ‘হৃদয় ফেটে প্রাণ বাহির হইয়া গিয়াছে’। প্রকৃত অর্থে শত্রুর অস্ত্রের আঘাতে তো হৃদয় বিদীর্ণ হওয়ারই কথা। 
৪। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যে উৎকলের সিংহাসনে বসলেন ষড়যন্ত্রকারী গোবিন্দ বিদ্যাধর ভোই। 
৫। ড. দীনেশচন্দ্র সেনের ‘চৈতন্য অ্যান্ড হিজ এজ’ গ্ৰন্থ থেকে জানা যাচ্ছে, চৈতন্যের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ ৫০ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে ও উৎকলে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সমস্ত রকম প্রচার, এমনকি নূন্যতম ‘কীর্তন গান’ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল!

চৈতন্য যদি জগন্নাথের দারু অঙ্গেই লীন হয়ে গিয়েছিলেন, তা হলে তো সেই ঘটনা মানুষের মনে চৈতন্য এবং বৈষ্ণবপন্থার প্ৰস্ফুরণ ঘটাবার কথা। কিন্তু কাৰ্যত তা দেখা গেল না। উপরন্তু এক নিদারুণ আতঙ্কে| উৎকল ও বঙ্গের বৈষ্ণবমণ্ডলী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ড. জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের মতে, সেই কারণেই চৈতন্যদেবের ওপর লেখা সমস্ত বৈষ্ণব গ্রন্থ ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছে চৈতন্যের তিরোধানের শেষ মুহূর্তের বর্ণনাতীত, “অসহ্য বর্ণনাকে” ।

তবে হ্যাঁ,... এই কঙ্কাল যে শ্ৰীচৈতন্যের, তা না-ও হতে পারে। হতে পারে – তা গোদাধর পণ্ডিত বা অন্য কোন ব্যক্তির। একমাত্র সঠিক পদ্ধতিতে ও নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই এর যথার্থ সত্য উদ্ঘাটিত হওয়া সম্ভব। মন্দির কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ঐতিহাসিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ভারত সরকারকেও এই কাজে এগিয়ে আসতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

কৃতজ্ঞতাঃ শ্রী ভুবন গায়েন...
শ্রী Kaushik Bhattacharya
প্রয়াত শ্রী Radhasyam Brahmachari

শ্রী Tapan Ghosh





Monday, January 1, 2018

Is Bollywood spread anti Hindu ideology ?

Bollywood would do well to introspect on the reasons behind the serious loss of goodwill from significant sections of the population. We do remember their contribution to the farcical Intolerance Drama and how they had attempted to portray the entire country as intolerant. The appalling remarks they had made shall not be forgotten soon. And it is quite amazing how Freedom of Expression is always directed against Hindus and to hurt Hindu sentiments. AIB had in fact rendered an unconditional apology after being threatened by the Church after their roast. Unfortunately, the entire industry seems to suffer from an anti-Hindu bias and derives a perverse form of pleasure from hurting Hindu sentiments.
Yes. Bollywood is anti-Hindu and is systematically destroying Hinduism. Look at the pictures here. There are many I have selected few for representation


1.) Wearing Tilak on the forehead is the norm for Bollywood villains and gangsters. See big banner films like Vastav (1999), Singham (2011), Sarkar 3 (2017)




2.) Hindu priests are always shown in poor light: OMG (2012), Mother India (1957), Toilet Ek Prem Katha (2017)



3.) Hindu Baniya is a Cheat, Hindu Thakur is an oppressor



4.) Church Padres are always good people: Amar Akbar Anthony (1977), Kabhi Haan Kabhi Na (1994)




5.) A tilak is the symbol of a villain but a bearded man with skull cap has to be a helpless A K Hangal type of a character






6.) Muslims are patriotic and good Human beings but are victimized in India and abroad: Chak de (2007), My name is Khan (2010)





7.) Indian army kills innocent Pakistanis: Main Hoon Na (2004)





8.) Pakistani People are angels: PK (2014)

9.) The face of Pakistan ISI is quite beautiful: Tiger Zinda Hai (2012, 2017)



10.) Face of China is simply too innocent Tubelight (2016)





11.) Hindu Terrorist in Main Hoon Na (2004)




12.) Name of 3 terrorists in Baazi – Raghu, Shiva , Kishan (Three main Hindu Gods Rama, Shiva and Krishna)



13.) Ram Leela (2013)




14.) Sexy Durga (2017)




15.) Sexy Radha (2012)



16.) Record number of films on Gujarat riots always showing Hindus as aggressors and Muslims as victims





17.) Rang de Basanti (2005) : Aamir kills defense minister of the Saffron Government. Justifies terrorism and overlaps it with revolutionists.



18.) Hare Rama Hare Krishna (1971)
Dum Maro Dum… Bolo Subhaah Sham

19.) The answer is incomplete without Shiva Chased by Aamir Khan in toilet (PK)


Now you decide if Bollywood in anti-Hindu or not?

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts