Monday, June 1, 2020

মহাভারত ও রামায়ণের বিষয়ে কিছু অজানা ও চিত্তাকর্ষক তথ্য কী?

রাম-সীতা সঙ্গী লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন , হনুমান ও অঙ্গদ

রামায়নের কিছু অজানা তথ্যঃ

  • রাজা দশরথ ও রানি কৌশল্যার এক কন্যা সন্তান ছিলেন । নাম শান্তা। তিনি রাম-লক্ষ্মণ-ভরত-শত্রুঘ্নের চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। কৌশল্যার বোন তাঁকে দত্তক নেন।
  • চোদ্দো বছরের বনবাসে লক্ষ্মণ একদিনও ঘুমোননি। বনবাসে যাওয়ার আগে তিনি নিদ্রাদেবীর কাছে বর চেয়েছিলেন যাতে এই ১৪ বছরে তাঁর ঘুম না আসে। নিদ্রাদেবী বর মঞ্জুর করেন কিন্তু এর পরিবর্তে লক্ষ্ণণের স্ত্রী উর্মিলাকে ১৪ বছর ঘুমোতে হয়। এই কারণে, লক্ষ্মণের নাম হয় ‘গুড়াকেশ’, যার অর্থ ‘যিনি ঘুমকে জয় করতে সক্ষম’।
  • রামায়ন ও মহাভারতের সময়কাল পৃথক হলেও এদের মধ্যে কিছু যোগ সাদৃশ্য দেখা যায়।
    • বলা হয় রামায়ণের লক্ষ্মণই হলেন মহাভারতের বলরাম। রামায়ণে ছোট ভাই হিসেবে সারাজীবনই তাঁকে আদেশ পালন করে যেতে হয়। তাই পরবর্তী দ্বাপর যুগে বিষ্ণু অবতার কৃষ্ণের বড়ভাই হিসেবে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর অগ্রজ হওয়ার ইচ্ছেপূরণ হয়। রামের আগেই মারা গিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। যমরাজকে দেওয়া রামের একটি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই তিনি নিজে সরযূনদীর তীরে গিয়ে প্রাণত্যাগ করেন।
    • রামায়ণের বালি পুত্র অঙ্গদ মহাভারতের জরা নামক ব্যাধ যিনি দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলেন।
    • রামের এক বোন ছিল -

      আমরা জানি , রামেরা চার ভাই। কিন্তু রামেদের এক অগ্রজ বোন ছিলেন। তিনি কৌশল্যা নন্দিনী শান্তা। অতএব তিনি রামের সহদরা ।

      দশরথের মিত্র রাজা লোমপাদ শান্তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। এই শান্তার সাথে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির বিবাহ হয়েছিল , যিনি পুত্রকামেষ্টি যজ্ঞ করেছিলেন যার ফলে রামাদির জন্ম হয়েছিল।

    • কাক ভূষন্ডী -আমরা বাগধারায় কাক ভূষন্ডী কথাটি দীর্ঘজীবি অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু বাস্তবে এই ভূষন্ডী কাক শুধু দীর্ঘজীবি নয়, চিরঞ্জীব এবং ত্রিকালদর্শী।ভূষন্ডী একজন ত্রিকালজ্ঞ মুনি ছিলেন। লোমস মুনির অভিশাপে তিনি কাক হয়ে যান । কিন্তু তারপরও তার জ্ঞানসকল লোপ পেয়ে যায়নি । তিনি রাম-রাবণের যুদ্ধ দেখেছেন আবার মহাভারতের যুদ্ধও দেখেছেন।

  • রাম মারা যাওয়ার আগে কোশল সাম্রাজ্যটি দু’ভাগে ভাগ করে যান। শোনা যায় লব-কে তিনি শ্রাবস্তীর রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করে যান এবং কুশ-কে দিয়ে যান কুশাবতী নগর। বিন্ধ্য পর্বতের পাদদেশে নাকি ছিল এই নগর। শোনা যায় কাশী এবং মৌর্য রাজবংশ নাকি কুশেরই বংশধর। লব কিন্তু শ্রাবস্তীর রাজা হয়ে থেমে থাকেননি। প্রচলিত মত, তিনি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে তাঁর রাজ্য বিস্তার করেন এবং লাভাপুরী নামের একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এই লাভাপুরীই হল এখনকার পাকিস্তানের ‘লাহোর’ এই লবেরই আর এক নাম ‘লোহ’। লাহোর ফোর্টের ভিতরে তাঁর নামে একটি মন্দিরও রয়েছে। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ‘লাওস’ এবং থাইল্যান্ডের একটি শহর ‘লবপুরী’ তাঁরই নামাঙ্কিত। রাজস্থানের মেবার রাজবংশ লবেরই বংশধর বলে ধারণা। এছাড়া রাজস্থানের বেশ কিছু গোষ্ঠী রয়েছে যারা নিজেদের লবের বংশধর বলে দাবি করেন।
  • সীতার জন্মবৃত্তান্ত রহস্যঃ জনক রাজা ভূমিকর্ষণের সময় লাঙলের ফলায় এক শিশুকন্যাকে ধরিত্রীর বুক থেকে উদ্ধার করেন। সংস্কৃতে 'লাঙলের কর্ষণরেখা'কে সীতা বলা হয়।তাই এই কন্যার নামকরণ করেন "সীতা"। কিন্তু সীতার জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কীয় বিভিন্ন কাহিনী শোনা যায়।
    • "অদ্ভুত রামায়ণ" থেকে জানা যায়, সীতা নাকি রাবণ ও মন্দোদরীর কন্যা। তাঁর জন্মের আগে গণকরা জনিয়েছিলেন, তিনি নাকি রাবণের ধ্বংসের কারণ হবেন। তাই রাবণ তাঁকে পরিত্যাগ করেন।
    • 'রামায়ণ’-এর কিছু অন্য লেখা থেকে জানা যায় , রাবণ নাকি প্রকৃত সীতাকে হরণ করেননি। যাকে রাবণ হরণ করেছিলেন, সে মায়াসীতা। দেবী পার্বতী আসল সীতাকে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং রাম-রাবণের যুদ্ধের পরে আসল সীতা প্রকট হন। মায়াসীতাই নাকি পরে দ্রৌপদী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।
    • 'আনন্দ রামায়ণ’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, রাজা পদ্মাক্ষের কন্যা পদ্মাই নাকি পরবর্তী জন্মে সীতা হন। রাবণ পদ্মার শ্লীলতাহানি করতে চাইলে তিনি আগুনে আত্মঘাতী হন। পরজন্মে তিনিই সীতা রূপে অবতীর্ণা হন এবং রাবণের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ান।
    • আর একটি প্রচলিত ধারণা এই সীতা পূর্বজন্মে ছিলেন বেদবতী নামে এক পুণ্যবতী নারী। রাবণ তাঁকে কামনা করলে তিনি রাবণকে অভিশাপ দেন যে, তিনি পরবর্তী জন্মে রাবণকে হত্যা করবেন।
  • রাবণ সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্যঃ মৃত্যুপথযাত্রী রাবণের কাছে রামের আদেশে লক্ষ্মণ জ্ঞান অর্জনের জন্য গেলেও, প্রথমে রাবণ কোনও কথা বলেন নি। লক্ষ্মণ ফিরে গিয়ে রামচন্দ্রকে তা জানালে, রামচন্দ্র তাঁকে বলেন, রাবণের পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে। কারণ, তিনি তখন রাবণের শিষ্য। তাই গুরুর প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর পায়ের কাছেই দাঁড়ানো উচিত লক্ষ্মণের। লক্ষ্মণ পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে রাবণ তাঁকে "রাজধর্ম" বিষয়ে মুল্যবান জ্ঞান প্রদান করেন। যেমন -
    • নিজের সারথী, দ্বাররক্ষক, রাঁধুনি ও সহোদরের সঙ্গে কখনও শত্রূতা করতে নেই। তাঁরা যে কোনও সময়ে ক্ষতি করতে পারে।
    • সব সময় জেতা মানেই যে নিজেকে জয়ী মনে করবে, তা যেন না হয়।
    • যে মন্ত্রী সব সময়েই রাজার খুঁত ধরে, তাঁকে সব ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করা উচিত।
    • কোনও শত্রুকেই ছোট বা ক্ষমতাহীন মনে করা উচিত নয়।
    • যে রাজা বা শাসক প্রসিদ্ধি পেতে চায়, তাঁদের লোভ নিবারণ করতে শিখতেই হবে।
    • কারোর উপকার করার সুযোগ এলে, রাজা হিসেবে তা ততক্ষণাৎ করা উচিত।
  • রাবণ ছিলেন এক অসামান্য বীণাবাদক। তিনি নিজেই তাঁর বীণার নকশা করেছিলেন। তিনি ‘শিব তাণ্ডব’ স্তোত্রেরও রচয়িতা।
  • রাবণ ছিলেন এক দক্ষ চিকিৎসক। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তাঁর বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল। ‘নাড়ি পরীক্ষা’, ‘অর্ক শাস্ত্র’, ‘অর্ক পরীক্ষা’ প্রভৃতি বিখ্যাত আয়ুর্বেদ শাস্ত্রগ্রন্থ রাবণ কর্তৃক লিখিত বলে প্রচলিত। ক্ষত চিকিৎসায় তাঁর অবদানের কথা আজও আয়ুর্বেদ স্বীকার করে। জ্যোতির্বিদ্যায় রাবণের বিশেষ দখল ছিল। একথা রামায়ণে বার বার উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি নাকি গ্রহতারকাদের নির্দেশ দিতেও পারতেন। তিনি গ্রহতারকার ভবিষ্যৎ অবস্থান অনর্গল বলে যেতে পারতেন।
  • শূর্পনখা বিধবা - বনচারিণী শূর্পনখা বিধবা ছিলেন। রাবণ তার স্বামী দৈত্য বিদ্যুৎজিহ্বাকে বধ করেছিলেন। শূর্পনখা দুঃখিতা হলে রাবণ তাকে দন্ডকারণ্যে যথেচ্ছ বিচরণের বর দেন। ( বাল্মীকি রামায়ণ , উত্তর কান্ড , সর্গ ৪৬)




মহাভারতের কিছু অজানা তথ্যঃ

  • অর্জুন এবং নাগ রাজকন্যা উলুপীর পুত্র ইরাবান পিতা অর্জুনের বিজয়কে সুনিশ্চিত করতে নিজেকে মা কালীর কাছে উৎসর্গ করেছিলেন। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, তিনি বিবাহ করবেন। এমন এক কন্যা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে, যিনি ভাবী স্বামীর অবধারিত মৃত্যুর কথা জেনেও তাঁকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক। এমন পরিস্থিতিতে কৃষ্ণ মোহিনী রূপ ধারন করেন এবং ইরাবানকে বিবাহ করেন। ইরাবানের মৃত্যুর পরে কৃষ্ণ একদিনের বৈধব্যও পালন করেছিলেন।
  • যুদ্ধের চতুর্দশতম দিনে ভীম ও অর্জুন জয়দ্রথ বধে উদ্যোগী হন। সূর্যাস্তের আগে অর্জুন জয়দ্রথকে বধ করার সংকল্প করেন। এমন সময়ে দুর্যোধন তাঁর ভাই বিকর্ণকে পাঠান ভীমের উপরে নজর রাখার জন্য। বিকর্ণ ধর্মপথ ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন না। তা ছাড়া তিনি জানতেন, যথা কৃষ্ণ তথা জয়। তিনি পাণ্ডবদের সমর্থন করলেও কৌরব পক্ষ ত্যাগ করে পারেননি। দ্রৌপদীর অপমানের সময়ে বিকর্ণই একমাত্র প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু বিকর্ণের অনুরোধেই ভীম তাঁর সঙ্গে গদাযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভীম বিকর্ণকে বধ করেন। কারণ তিনি ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের নিশ্চিহ্ন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন।
  • দুর্যোধনের স্ত্রী ভানুমতী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের অনুসারী।
  • সহদেব জ্যোতিষশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন। কিন্তু অভিশাপবশত সোজাসুজি ভবিষ্যৎ বলা তাঁর বারণ থাকায় কৃষ্ণের নির্দেশে তিনি প্রশ্নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ব্যক্ত করতেন।
  • কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে সমস্ত রাজারা কোনও না কোনও পক্ষে যোগদান করেন । একমাত্র ব্যতিক্রম উদুপির রাজা । তিনি যোগদান করেননি, পরিবর্তে দুপক্ষের সেনাকেই রোজ খাবার সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেন। রোজ রাতে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে এক বাটি করে বাদাম 
  • ধনুক দ্বারা যে বান অর্জুন নিক্ষেপ করতো সেটার প্রায় ১ কিমি প্রতি সেকেন্ড গতি পেত।
  • মহাভারত যুদ্ধের সময় অর্জুনের বয়স ছিল ৮৯ বছর। অবাক হবার কিছু নেই - তখন কার দিনে মানুষের গড় আয়ু ছিল প্রায় ১৬০-১৭০ বয়স। ৮৯ বছর বয়সী তখন কার হলো এখন কার ৪৫ । মহাভারতের যুদ্ধের পর মানুষের গড় আয়ু কমতে শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীতে এখন আবার মানুষের গড় আয়ু বাড়তে শুরু করেছে।
  • মহাভারতের যুদ্ধে ভীমসেন প্রধান অস্ত্র হিসেবে ধনুর্বান ব্যবহার করেছিল , গদা নয়।
  • দ্রোণাচার্য যুদ্ধে একটা বল্লম ব্যবহার করতো যার ওজন ছিল প্রায় ১২০ কেজি। আর এই বল্লম এক আঘাতেই ১০০০ কেজি এক পাথরকে ভেঙে ফেলতে পারত।
  • মহাভারতের সমাজ সেই সময় খুবই মুক্ত ছিল। এখনকার মতো গোড়ামি, বৈষম্য, কুসংস্কার ইত্যাদি কিছুই ছিল না। সেই সমাজ ছিল খুবই যৌন মুক্ত সমাজ। যৌনতা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। তখনকার কোনো মানুষ যদি আমাদের আজকের সমাজকে দেখে , সত্যিই খুব অবাক হবে দেখে।
  • মহাভারতের সময় শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই উন্নত ছিল। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, ধর্ষণ, ইত্যাদি অপরাধ এখনকার সমাজের তুলনায় অনেক অনেক কম ছিল - প্রায় ৯০ শতাংশ কম। আসলে শিক্ষা ব্যবস্থা যত খারাপ হবে, অপরাধের পরিসংখ্যান ততো বাড়বে।
  • মহাভারতের সমাজে বিবাহিতদের মধ্যে একটা অভ্যাস খুব প্রচলিত ছিল। কোনো পুরুষ সঙ্গমের আগে তার স্ত্রীর নাভির ওপর হাত রেখে বলতো ' প্রসিদ্ধ জগৎ - জননী ' । এই কাজটা করে এই অর্থ বোঝানো হতো যে স্বামী তার স্ত্রী কে বলছে ' প্রসিদ্ধ তুমি হে জগতের মাতা, তোমার মাধ্যমে আমি নিজেকে প্রকাশ করছি ' ।
  • মহাভারতের দিনে উভয় স্ত্রী এবং পুরুষ শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে এখনকার স্ত্রী , পুরুষদের চেয়ে অধিকতর সুন্দর ছিল।
  • মহাভারতের সময় অর্থনৈতিক কাঠামো খুবই ভালো এবং উন্নত ছিল। এরম বলা যায় যে প্রায় সকল মানুষের খাওয়া পরার কোনো সমস্যা ছিল না। অভুক্ত, গৃহহীন, ভিখারী – এসবের প্রশ্নই ওঠে না।
  • আমরা মহাভারত সম্বন্ধে যা বই পত্র দেখি তার প্রায় সবই ভুলে ভরা। আসল তথ্য সম্পূর্ণ ভাবে কেউ তুলে ধরে না।
  • মহাভারতে বেশ্যা দের প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশ্যা দের সম্বন্ধে যে ধারণা, সেই ধারণা তখন ছিল না। বেশ্যা বলতে তখন বোঝানো হতো যারা রাজকীয় ভাবে রাজাদের মনোরঞ্জন করতো— সেটা নাচ - গান, জলকেলি, কিম্বা যৌন ক্রীড়া ( অবাক হওয়ার কিছু নেই, তখনকার দিনে এটা একটা সাধারণ জিনিস হিসাবেই গ্রহণ করা হতো ) । এটা বলা প্রযোজ্য যে তখনকার সমাজে বেশ্যা দের প্রতি সম্মান আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ছিল, তাদের কে আলাদা মনে করে একঘরে করা হতো না এখনকার মত।
  • মহাভারতের সময় সমস্ত মানুষকেই অনেক পরিশ্রম করতে হতো কারণ তখন প্রযুক্তি এতো উন্নত হয়নি। কিন্তু সমাজে শান্তি ছিল।
  • একজন পুরুষের গড় উচ্চতা ছিল ৬ ফিট। এবং একজন নারী ৫.৫ ফিট।
  • ভোগ দিতেন। সকালে উঠে গুনে দেখতেন কটি বাদাম কৃষ্ণ ভক্ষন করেছেন। যদি দেখতেন দশটি বাদাম তাহলে বুঝতেন সেদিন দশ হাজার সৈন্যের মৃত্যু হবে। সেই হিসাবে খাবার সরবরাহ করার নির্দেশ দিতেন।
  • চন্দ্রদেব সোমের পুত্র "বরচস" অভিমন্যু রূপে জন্মগ্রহন করেন। কিন্তু চন্দ্রদেব তাঁর প্রানপ্রিয় পুত্রের বিয়োগে কাতর হওয়ায় শুধুমাত্র ১৬ বছরের জন্য তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণের অনুমতি দেন। তাই মাত্র ১৬ বছর বয়েসে অভিমন্যু বীরগতি প্রাপ্ত হন।
  • অর্জুন ও কর্ণের শত্রুতার সুত্রপাত দেবলোকে । একদিন ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মতবিরোধের সময় ব্রহ্মার স্বেদ থেকে 'শ্বেতজ' ও বিষ্ণুর স্বেদ থেকে 'রক্তজ' নামে দুই অসুর জন্ম নেয়। শ্বেতজ সহস্র কবচ বিশিষ্ট ও রক্তজ সহস্র হস্ত বিশিষ্ট ছিল। এদের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হলে বিষ্ণু বুঝতে পারেন রক্তজের মৃত্যু নিশ্চিত। বিষ্ণু ব্রহ্মদেবকে জানান যদি এই লড়াই না থামে তবে সৃষ্টির ধ্বংস অনিবার্য। এই পরিস্থিতিতে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের নির্দেশানুসারে অমিমাংসিত লড়াই থেমে যায় এবং স্থির হয় এই লড়াই তাদের পরের জন্মে মীমাংসা লাভ করবে। পরজন্মে শ্বেতজ "কর্ণ" ও রক্তজ "অর্জুন" রূপে জন্মগ্রহন করেন। 
  • নিষাদ রাজপুত্র একলব্য কৃষ্ণের সম্পর্কিত ভাই ছিলেন। একলব্যের পিতা দেবশ্রবা সম্পর্কে কুন্তী ও বাসুদেবের ভাই হতেন। কৃষ্ণের হাতে তাঁর মৃত্যু ঘটলেও মৃত্যুর ঘটনাকাল নিয়ে মতবিরোধ আছে।
  • বিশ্বরূপ শুধু কৃষ্ণ না। অনেকেই দেখিয়েছেন। মহাভারতে শিব প্রথম কৃষ্ণকে উনার নিজের বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন। এই নিয়ে আমার লেখা পূর্বের ব্লগ আছে। 
  • অর্জুনের গান্ডিবের ওজন ছিল প্রায় ৩০০ কেজি।
  • ধনুক দ্বারা যে বান অর্জুন নিক্ষেপ করতো সেটার প্রায় ১ কিমি প্রতি সেকেন্ড গতি পেত।
  • মহাভারত যুদ্ধের সময় অর্জুনের বয়স ছিল ৮৯ বছর। অবাক হবার কিছু নেই - তখন কার দিনে মানুষের গড় আয়ু ছিল প্রায় ১৬০-১৭০ বয়স। ৮৯ বছর বয়সী তখন কার হলো এখন কার ৪৫ । মহাভারতের যুদ্ধের পর মানুষের গড় আয়ু কমতে শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীতে এখন আবার মানুষের গড় আয়ু বাড়তে শুরু করেছে।
  • মহাভারতের যুদ্ধে ভীমসেন প্রধান অস্ত্র হিসেবে ধনুর্বান ব্যবহার করেছিল , গদা নয়।
  • দ্রোণাচার্য যুদ্ধে একটা বল্লম ব্যবহার করতো যার ওজন ছিল প্রায় ১২০ কেজি। আর এই বল্লম এক আঘাতেই ১০০০ কেজি এক পাথরকে ভেঙে ফেলতে পারত।
  • মহাভারতের সমাজ সেই সময় খুবই মুক্ত ছিল। এখনকার মতো গোড়ামি, বৈষম্য, কুসংস্কার ইত্যাদি কিছুই ছিল না। সেই সমাজ ছিল খুবই যৌন মুক্ত সমাজ। যৌনতা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। তখনকার কোনো মানুষ যদি আমাদের আজকের সমাজকে দেখে , সত্যিই খুব অবাক হবে দেখে।
  • মহাভারতের সময় শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই উন্নত ছিল। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, ধর্ষণ, ইত্যাদি অপরাধ এখনকার সমাজের তুলনায় অনেক অনেক কম ছিল - প্রায় ৯০ শতাংশ কম। আসলে শিক্ষা ব্যবস্থা যত খারাপ হবে, অপরাধের পরিসংখ্যান ততো বাড়বে।
  • মহাভারতের সমাজে বিবাহিতদের মধ্যে একটা অভ্যাস খুব প্রচলিত ছিল। কোনো পুরুষ সঙ্গমের আগে তার স্ত্রীর নাভির ওপর হাত রেখে বলতো ' প্রসিদ্ধ জগৎ - জননী ' । এই কাজটা করে এই অর্থ বোঝানো হতো যে স্বামী তার স্ত্রী কে বলছে ' প্রসিদ্ধ তুমি হে জগতের মাতা, তোমার মাধ্যমে আমি নিজেকে প্রকাশ করছি ' ।
  • মহাভারতের দিনে উভয় স্ত্রী এবং পুরুষ শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে এখনকার স্ত্রী , পুরুষদের চেয়ে অধিকতর সুন্দর ছিল।
  • মহাভারতের সময় অর্থনৈতিক কাঠামো খুবই ভালো এবং উন্নত ছিল। এরম বলা যায় যে প্রায় সকল মানুষের খাওয়া পরার কোনো সমস্যা ছিল না। অভুক্ত, গৃহহীন, ভিখারী – এসবের প্রশ্নই ওঠে না।
  • আমরা মহাভারত সম্বন্ধে যা বই পত্র দেখি তার প্রায় সবই ভুলে ভরা। আসল তথ্য সম্পূর্ণ ভাবে কেউ তুলে ধরে না।
  • মহাভারতে বেশ্যা দের প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে বেশ্যা দের সম্বন্ধে যে ধারণা, সেই ধারণা তখন ছিল না। বেশ্যা বলতে তখন বোঝানো হতো যারা রাজকীয় ভাবে রাজাদের মনোরঞ্জন করতো— সেটা নাচ - গান, জলকেলি, কিম্বা যৌন ক্রীড়া ( অবাক হওয়ার কিছু নেই, তখনকার দিনে এটা একটা সাধারণ জিনিস হিসাবেই গ্রহণ করা হতো ) । এটা বলা প্রযোজ্য যে তখনকার সমাজে বেশ্যা দের প্রতি সম্মান আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ছিল, তাদের কে আলাদা মনে করে একঘরে করা হতো না এখনকার মত।
  • তখনকার মানুষ অনেক মুক্তমনা ছিল এখনকার তুলনায়।
  • মহাভারতের সময় সমস্ত মানুষকেই অনেক পরিশ্রম করতে হতো কারণ তখন প্রযুক্তি এতো উন্নত হয়নি। কিন্তু সমাজে শান্তি ছিল।
  • একজন পুরুষের গড় উচ্চতা ছিল ৬ ফিট। এবং একজন নারী ৫.৫ ফিট।
  • দুর্যোধনের বাস্তবিক নাম -দুর্যোধনের আসল নাম ছিল সুযোধন । সবাই তাকে দুষ্কৃতীর জন্য দুর্যোধন বললেও যুধিষ্ঠির কিন্তু তাকে সর্বদা সুযোধন বলেই ডাকতেন।

  • দুর্যোধনের কন্যা লক্ষ্মনাকে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ব বিবাহ করেছিলেন। সেজন্য দুর্যোধন আর কৃষ্ণ একে অপরের বৈবাহিক অর্থাৎ বেয়াই।

  • দুর্যোধনের বিবাহ -

    দুর্যোধন যেখানে বিবাহ করতে যেতেন সেখানেই কৃষ্ণ অথবা পাণ্ডব হাজির হতেন । আর রাজকন্যাদের বিবাহ করে যেতেন।

    প্রথমে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর । সেখানে অর্জুন জিতলেন। রাজকুমারী ভদ্রার স্বয়ংবরে গেলেন ,সেখানে কৃষ্ণের গলায় মালা পড়ল। সুভদ্রার সাথে বলরাম দুর্যোধনের বিয়ে ঠিক করলেন । কিন্তু বিবাহ সভায় গণেশ গেল উল্টে ! সুভদ্রা কৃষ্ণের সমর্থনে বিয়ে করলেন অর্জুনকে। বেচারা দুর্যোধন। শেষকালে একে কন্যা হরণ করে বিবাহ করতে হল। হরণ করলেন রাজকুমারী ভানুমতিকে। এ কাজেও সাহায্য নিতে হল মিত্র অঙ্গরাজ কর্ণের ।

  • অভিমন্যুর স্বল্পায়ু -

    আমরা অনেকেই দুঃখী যে , সপ্ত রথীর আক্রমণে ১৬ বছরের অভিমন্যুকে বেঘোরে প্রাণটা দিতে হল। কিন্তু বেচারার আয়ু এতটুকুই ছিল।

    অভিমন্যু বাস্তবে ছিলেন চন্দ্র দেবের শাপিত পুত্র। ওর অভিশাপ ছিল ওকে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিতে হবে। কিন্তু তার মাতা জানালেন , অধিককাল তিনি পুত্রছাড়া থাকতে পারবেন না। তাই শুধুমাত্র ১৬ বছরের জন্য পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠাতে সম্মত হলেন।

    তথ্য - Abhimanyu - Wikipedia


    ফুটনোট

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts