আমরা অনেকেই জানি না যে, নারী-পুরুষেরও রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক বিবেচনা করে নারী ও পুরুষের এ শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের ঋষি বাৎস্যায়ন। আর উনার দেখানো পথে এই শ্রেনী বিভাগ করে গেছেন আরও অনেকে। নারী ও পুরুষের সংযুক্ত রতিক্রিয়ায় উভয়ের যে চরম উল্লাস হয় তার অধিকাংশ নির্ভও করে মন ও শরীরের ওপর। মনস্তত্তের দিক দিয়ে বলা যায় নারী ও পুরুষের মন পরস্পরের প্রতি প্রবল হলে এই যৌন সঙ্গমের সূখ খুব উচ্চস্তরের হয়। কিন্তু দেহাংশের ওপরেও এই সুখ অনেকটা নির্ভর করে। পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য ও নারীর যোনির বিস্তারের ওপরেই নারী-পুরুষ উভয়ে চরম আত্মিক ও শারীরিক সুখবোধ নির্ভর করে।
আমাদের মনে অনেকেই এই নিয়ে অনেক গোপন প্রশ্ন। কে আসলে কি? কিভাবে হাত পা দেখেই বোঝা যায় কে কি ধরনের পুরুষ বা মহিলা? কিভাবে নিজ পছন্দমতন সঙ্গি নির্বাচন করবো? ইত্যাদি। সনাতন ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা আর সেক্সকে একটা ট্যাবু হিসাবে নেয়ার কারনে আজ আমাদের এই করুন দশা।শুধুমাত্র শারীরিক গঠন দেখেই একজন নারী বা পুরুষের সম্পর্কে বলে দেয়া যায়। আসুন দেরী না করে শুরু করি।
প্রথমেই নারীর প্রকারভেদ।
নারী চরিত্র বেজায় জটিল...পরতে পরতে শুধুই নিপাট রহস্য লুকিয়ে। প্রকৃতির মতোই নিবিড় রহস্য লুকিয়ে যেখানে, তাকে সহজ, সরল, তরলবৎ করে এ সাধ্যি কার ? সাধে কী আর বলে- স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা না জানন্তি কুতো মনুষ্যা। তবে এরহস্যকে ভাঙার চেষ্টা, জানার চেষ্টা কিন্তু সেই আদিকাল থেকেই জারি রয়েছে। সময়ে সময়ে নারীকে নিজের মতো করে এঁকেছে পুরুষ। ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে নারী শরীরের অসংখ্য রূপ। তারই মধ্যে ৪টি শ্রেণি বেছে নিয়েছে পণ্ডিতবর্গ - পদ্মিনী, চিত্রিণী, শঙ্খিনী, হস্তিনী।আমি - আপনি না। এই শ্রেণিবিন্যাস করে গেছেন স্বয়ং বাৎসায়ন। আর তার বর্ণনা করে গেছেন কবিরা যুগে যুগে। যেমন ধরুন কবি রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র। নারী মন ও শরীরকে নিপুণভাবে এঁকেছেন তাঁর লেখায়। রমণীকুলের এই চারটি প্রকার তুলে ধরেছেন ছবির মতো করে।
তিনি লিখছেন- “অতঃপর চারি জাতি বর্ণিব কামিনী। পদ্মিনী-চিত্রিণী আর শঙ্খিনী-হস্তিনী।”
পদ্মিনী
নামেই যেন লুকিয়ে আছে এই রমণীর রহস্য। চোখ পদ্মের মতো। কোঁকড়ানো চুল। স্তন গভীর। স্মিত হাসি। পদ্মিনী নারীদের নাকের ফুটো নাকি খুব ছোটো হয়। কথা বলে ধীরে সুস্থে-মিষ্টি গলায়। নাচে-গানে পারদর্শী। পদ্মিনী নারী সচরাচর সত্য কথাই বলে।
নয়নকমল, কুঞ্চিত কুন্তল, ঘন কুচস্থল, মৃদু হাসিনী।
ক্ষুদ্র রন্ধ্রনাসা, মৃদু মন্দ ভাষা , নৃত্য গীতে আশা সত্যবাদিনী।
দেবদ্বিজে ভক্তি, পতি অনুরক্তি, অল্প রতিভক্তি, নিদ্রাভোগিনী।
সুললিত কায়, লোম নাহি হয়, পদ্মগন্ধ কয়, সেই পদ্মিনী।
(রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র)
অর্থাৎ ভারত চন্দ্র বলছেন - পদ্মিনী নারীর শরীর হয় আকর্ষণীয়। এরা ভক্তিমতীও বটে। ঠাকুর দেবতার পূজাপাঠ নিয়ে বেশ মগ্ন থাকতে ভালোবাসে। স্বামীর প্রতি অনুরক্ত হয়। শরীর হয় সুললিত, এককথায় সুন্দর। অতিরিক্ত যৌনতা এদের পছন্দ নয়। বরং বেশি ঘুমোতে পছন্দ করে পদ্মিনী নারীরা। শরীরে লোমের আধিক্য কম। শরীরের গোপনে পদ্মগন্ধের ঘ্রাণ মেলে। এই রমণীদের রমণীকুলের মধ্যে সর্বোত্তম ধরা হয়।
পদ্মিনী নারী অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ হয়। এরা সৎপথে থাকতে এবং ধর্ম আচরণ করতে ভালোবাসে। অসাধু কথা বা অসৎ কর্ম এরা একেবারেই পছন্দ করে না। পদ্মিনী নারীরা পরম রূপবতী হয়। তাদের গাত্র থেকে পদ্মফুলের মতো সুন্দর ভ্ৰাণ নির্গত হয়। তাদের নেত্ৰ মৃগের মতো মনোহর, কণ্ঠের মিষ্ট ঝঙ্কার কোকিলের সঙ্গে তুলনা করা চলে। তারা যখন হেঁটে চলে তখন যেন মর্যালের মতো দেখায়। পদ্মিনী নারীর মুখ কমলিনীর মতো সদা হাস্যময়। তারা পরম স্নেহময়ী ও সর্বপ্রকার সুলক্ষণযুক্ত হয়ে থাকে। পদ্মিনী নারীকে শাস্ত্রে সর্বনারীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থাৎ উত্তম বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সোজা কথায় গাঢ় নীল উন্মুক্ত আকাশে উজ্জ্বল পুর্ণচন্দ্রকে যেমন সুন্দর ও মোহনীয় দেখায়, তেমনি রমনীয় পদ্মিনী নারী , আয়তলোচন,নারীসুলভ সরলতা ও সজ্জলতা,স্বর মধুর,বচন সুমিষ্ট, ব্যবহার নমনীয়,ধর্মপরায়ণা,মৃদুভাষিণী,সদা হাস্যময়,পতিব্রতা ,নারী জাতির মধ্যে এরাই সর্বোত্তম।
চিত্রিণী
না দীর্ঘ, না হ্রস্ব- প্রমাণ শরীরের অধিকারিণী হয় চিত্রিণী নারীরা। ধীরস্থির। যে কোনও কাজে অস্থিরতা দেখা যায় না এদের মধ্যে। নাভি হয় সুগভীর। মুখে একচিলতে মিষ্টি হাসি লেগে থাকে। স্তন হয় দৃঢ়। চুল মসৃণ, ঝলমলে। খাওয়া ও ঘুমোনোর ব্যাপারে এঁরা মধ্যচারিণী। ধীরেসুস্থে চলাফেরা করে চিত্রিণী নারীরা। শরীর হয় নরম। শরীরে লোম প্রায় থাকে না বললেই চলে। শরীরের গোপনাংশ থেকে ক্ষারের গন্ধ মেলে। পরপুরুষের প্রতি এদের আকর্ষণ থাকে না।
প্রমাণ শরীর, সর্ব্বকর্ম্মে স্থির, নাভি সুগভীর মৃদুহাসিনী।
সুকঠিন স্তন, চিকুর চিকণ, শয়ন ভোজন মধ্যচারিণী।
তিন রেখাযুত, কণ্ঠ বিভূষিত, হাস্য অবিরত মন্দগামিনী।
কমনীয় কায়, অল্প লোম হয়, ক্ষারগন্ধ কয় সেই চিত্রিণী।
(রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র)
চিত্ৰিণী নারীর গুণাবলি অনেকটা পদ্মিনী নারীর মতোই। তবে পদ্মিনীর দেহের চেয়ে তারা একটু বেশি লম্বা হয়। চিত্ৰিণী নারীর দেহও অপূর্ব সুন্দর ও লাবণ্য-মণ্ডিত ! তাদের চিত্ত দৃঢ় অর্থাৎ লোভ ইত্যাদিতে তারা বিগলিত হয় না। চিত্ৰিণী নারী সর্বদা জিতেন্দ্রিয় ও সত্যবাদিনী হয়ে থাকে। তারা সবসময় দেবতা ও গুরুজনদের প্রতি ভক্তি প্ৰদৰ্শন করে থাকে । একমাত্র পতি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের প্রতি তারা আকৃষ্ট হয় না। প্রলোভন বা প্রচুর অর্থও সচরাচর চিত্ৰিণী নারীর মন জয় করতে বা তাদের বিপথগামিনী করতে পারে না। কামভাব খুব বেশি থাকে না। এই জাতীয় নারীদের। অল্প মিলন বা বিহারেই তারা সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত হয়। তারা সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে ও সকলের প্রতি মিষ্ট বাক্য প্রয়োগ করে। পাপকর্মের প্রতি তাদের মন কখনো আকৃষ্ট হয় না। দয়া, ক্ষমা, সততা এগুলো যেন তাদের অঙ্গের ভূষণ । নীলকমলের মত ক্লান্তিময় মুখযুক্ত, সুদীর্ঘ আয়ত নয়ন,সহজেই সাধারণের মন জয় করতে পারে , দৃঢ়চিত্তা, জিতেন্দ্রিয় , সত্যবাদিনী , পতি বাদে অন্য পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয় না , সর্বদা ধার্মিক, এরা উত্তম শ্রেনীর।
শঙ্খিনী
নারী হয় দীর্ঘশরীরের। কান বড়ো, চোখ বড়ো, হাত-পা বড়ো। শরীরে লোম থাকে । গোপনাঙ্গের গন্ধ আঁশটে। চঞ্চল গতি। মধ্যম প্রকৃতির নারী শঙ্খিনী।
ভারতচন্দ্র লিখছেন-
দীঘল শ্রবণ, দীঘল নয়ন, দীঘল চরণ, দীঘল পাণি।
সুদীঘল কায়, অল্প লোম হয়, মীনগন্ধ কয়, শঙ্খিনী জানি।
শঙ্খিনী নারীর দেহ ও প্রকৃতি অন্য প্রকার নারীর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে থাকে। এদের গাত্র থেকে সর্বদা ক্ষারের গন্ধ অনুভূত হয়। এদের কেশ হয় দীর্ঘ, নাক হয় ঈষৎ উন্নত, তাই এদের দেহ মোটামুটি ভালো হলে বেশ ভালোই দেখায়। শঙ্খিনী নারী হয় ভোজন বিলাসিনী । সবসময় যেন তাদের ক্ষুধার উদ্রেক হয়েই থাকে। তাদের দেহ একটু স্কুল ধরনের হয়। স্তন-দ্বয় হয় উন্নত ও কঠোর। এই জাতীয় নারীদের ধর্মে ততটা মতি থাকে না। ধর্ম আলোচনা বা সৎ কথা এরা ততটা ভালোবাসে না। এরা কু-বুদ্ধিমতী হয়। এরা উচ্চ স্বরে হাস্য করতে ভালোবাসে। সেই হাস্য-ধ্বনিতে যেন গগন-বিদীর্ণ হয়। এরা সর্বদা মদনাতুরা হয়ে কামবশে হাস্য পরিহাস করতে ভালোবাসে। নিজ পতিকে ত্যাগ করে সর্বদা অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলন বাঞ্ছা করে। এদের হৃদয় কপটতায় পূর্ণ। নিজের প্রবৃত্তি ও কুমনোভাব এরা সর্বদা মিথ্যা কথার আড়ালে গোঁপন রাখে। এরা নিরন্তর শৃঙ্গারে উন্মত্ত হয়ে থাকে। আর তাছাড়া পাপ কথায় দিনরাত্ৰ কাটাতে ভালোবাসে। দেবতা কিংবা গুরুজনে এদের বিন্দু মাত্ৰ ভক্তি থাকে না।চোখ তেরছা, লোম বড় বড়, পিঙ্গলবর্ণ, চঞ্চলগতি , ধর্মে মত থাকে না , পরপুরুষের প্রতি আসক্ত হয় ,গুরুজনের প্রতি ভক্তি ভাব থাকে না । এরা মধ্যম প্রকৃতির ।
হস্তিনী
এই হল রমণীকুলের চারপ্রকার।
নারী ও পুরুষ জাতি সম্পর্কে ফকির লালন শাহ বলেছেন ,
নারী হয় দীর্ঘশরীরের। কান বড়ো, চোখ বড়ো, হাত-পা বড়ো। শরীরে লোম থাকে । গোপনাঙ্গের গন্ধ আঁশটে। চঞ্চল গতি। মধ্যম প্রকৃতির নারী শঙ্খিনী।
ভারতচন্দ্র লিখছেন-
দীঘল শ্রবণ, দীঘল নয়ন, দীঘল চরণ, দীঘল পাণি।
সুদীঘল কায়, অল্প লোম হয়, মীনগন্ধ কয়, শঙ্খিনী জানি।
শঙ্খিনী নারীর দেহ ও প্রকৃতি অন্য প্রকার নারীর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে থাকে। এদের গাত্র থেকে সর্বদা ক্ষারের গন্ধ অনুভূত হয়। এদের কেশ হয় দীর্ঘ, নাক হয় ঈষৎ উন্নত, তাই এদের দেহ মোটামুটি ভালো হলে বেশ ভালোই দেখায়। শঙ্খিনী নারী হয় ভোজন বিলাসিনী । সবসময় যেন তাদের ক্ষুধার উদ্রেক হয়েই থাকে। তাদের দেহ একটু স্কুল ধরনের হয়। স্তন-দ্বয় হয় উন্নত ও কঠোর। এই জাতীয় নারীদের ধর্মে ততটা মতি থাকে না। ধর্ম আলোচনা বা সৎ কথা এরা ততটা ভালোবাসে না। এরা কু-বুদ্ধিমতী হয়। এরা উচ্চ স্বরে হাস্য করতে ভালোবাসে। সেই হাস্য-ধ্বনিতে যেন গগন-বিদীর্ণ হয়। এরা সর্বদা মদনাতুরা হয়ে কামবশে হাস্য পরিহাস করতে ভালোবাসে। নিজ পতিকে ত্যাগ করে সর্বদা অন্য পুরুষের সঙ্গে মিলন বাঞ্ছা করে। এদের হৃদয় কপটতায় পূর্ণ। নিজের প্রবৃত্তি ও কুমনোভাব এরা সর্বদা মিথ্যা কথার আড়ালে গোঁপন রাখে। এরা নিরন্তর শৃঙ্গারে উন্মত্ত হয়ে থাকে। আর তাছাড়া পাপ কথায় দিনরাত্ৰ কাটাতে ভালোবাসে। দেবতা কিংবা গুরুজনে এদের বিন্দু মাত্ৰ ভক্তি থাকে না।চোখ তেরছা, লোম বড় বড়, পিঙ্গলবর্ণ, চঞ্চলগতি , ধর্মে মত থাকে না , পরপুরুষের প্রতি আসক্ত হয় ,গুরুজনের প্রতি ভক্তি ভাব থাকে না । এরা মধ্যম প্রকৃতির ।
হস্তিনী
স্থূলদেহ অর্থাৎ সাধারণত ভারী শরীরের অধিকারিণী হয় হস্তিনী নারী। স্তন হয় ভারী। গলার আওয়াজ হয় তীব্র। প্রচুর খেতে ভালোবাসে, ঘুমোতে ভালোবাসে। পরকীয়া সম্পর্কে নাকি আসক্ত হয় হস্তিনী নারী। ধর্মে-কর্মে মত থাকে না। মিথ্যা কথা বলতে নাকি পটু হয় হস্তিনী নারী। শরীরে প্রচুর লোম থাকতে পারে। গোপনাঙ্গ থেকে মদগন্ধ মেলে।
স্থূল কলেবর, স্থূল পয়োধর, স্থূল পদকর ঘোরনাদিনী।
আহার বিস্তর, নিদ্রা ঘোরতর, বিহারে প্রখর পরগামিনী।
ধর্ম্ম নাহি ডর, দন্ত ঘোরতর, কর্ম্মেতে তৎপর মিথ্যাবাদিনী।
সুপ্রশস্ত কায়, বহু লোম হয়, মদ গন্ধ কয় সেই হস্তিনী।
(রায়গুণাকর ভারত চন্দ্র)
স্থুলাঙ্গী , মেদবহুল ,স্বার্থান্বেষী , মুখে নির্লজ্জতা থাকে ,এরা অধিক কৃচ্ছতায় কষ্ট পায় তবুও এদের স্বার্থভাব কমে না , পরপুরুষের প্রতি সর্বদা আকৃষ্ট থাকে , ধর্মে কর্মে মত থাকে না । এরা নারী জাতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা নীচ ।হস্তিনী নারীর আকার ও আচরণ অন্যসব নারীদের থেকে একেবারে পৃথক। হস্তিনীদের মতোই এই প্রকারের নারী হয় প্রকাণ্ড। অনেক সময় তারা ভীষণভাবে স্কুলাঙ্গী হয়ে থাকে। তাদের অঙ্গে সব সময় যেন মদগন্ধ প্রবাহিত হতে থাকে। এদের মাথায় চুল খুব সামান্য মাত্র থাকে। মুখে মৃদু মৃদু হাসি লেগেই থাকে। চোখ দুটি হয় টকটকে লাল। সেই চোখে এরা সবসময় চারিদিকে তাকিয়ে দেখে । এদের স্তনদ্বয় হয় উচ্চ ও কঠিন এবং স্বর হয় কর্কশ ও গভীর। এরা সামান্য সুন্দরী হয়ে থাকে। কিন্তু দেখতে প্ৰবীণা অর্থাৎ প্রকৃত বয়সের চেয়ে এদের বয়স অনেক বেশি দেখায়। হস্তিনী নারী সর্বদা মদনবিহবলা থাকে ও মদনাবশে নির্লজ্জর মতো আচরণ করে। পুরুষের সংস্পর্শে এদের সর্বাঙ্গ রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে এবং মন আনন্দ রসে পূর্ণ হয় । হস্তিনী নারী দিবারাত্ৰ শৃঙ্গারে মনোনিবেশ করে। নিজের পতির প্রতি রতি-কামনা ছাড়া অন্য আকর্ষণ বেশি থাকে না। প্রয়োজন হলে নিজের পতি ছাড়াও অপর পুরুষসহ সুখ সম্মিলন করে থাকে। এদের পাপ প্রবণতা অত্যন্ত বেশি । ধর্মকর্ম বা দেব-দ্বিজ-গুরুজনে ভক্তি এদের থাকে না । এ বিষয়ে কেউ তাদের উপদেশ দিলেও ওরা অবহেলায় তা উপেক্ষা করে থাকে। যে সমস্ত নারীরা স্বার্থের জন্য পাপের পথে পা বাড়ায় এবং বিপথগামিনী হয় বা ব্যভিচারিণী হয় তাদের মধ্যে বেশির ভাগ হস্তিনী জাতীয় ও কিছুটা শঙ্খিনী জাতীয় নারী।
ফকির লালন সাঁইজির একটি গানে আছে
“সবে কি হবে ভাবে ধর্মপরায়ণ |
যার যে ধর্ম সে তাই করে তোমার বলা অকারণ৷
চিন্তামণি পদ্মিনী নারী এরাই পতিসেবার অধিকারী। হস্তিনী শঙ্খিনী নারী কর্কশ ভাষায় কয় বচন|”
নারীর যোনিও তিনভাগে বিভক্ত :
১. হরিণী যোনি।
২. ঘোটকী যোনি।
৩. হস্তিনী যোনি।
১. হরিণী : এদের চটুল চক্ষুতে লাল রেখা থাকে। তাদের মুখ পদ্মের মত প্রফুল্ল, বাবলা জাতীয় গাছের ফুলের মত তাদের গাত্র চর্ম কোমল হয়। এদের স্তনও হয় কদন্ত গাছের ফুলের মত গোলাকার বিশিষ্ট ও নরম। পাত্র চর্ম হয় চম্পা পুষ্পের মত শ্বেতবর্ণ। টিয়া পাখীর নাকের মত তাদের নাসিকা তীক্ষè, লম্বা হয়। দন্ত হয় মুক্তার মতো এবং গমনধারা হয় রাজহংসীর মতো। কোকিলের মতো কন্ঠস্বর হয় সুমধুর। হরিণী মত হয় গ্রীব। তারা কথা বলে কম এবং এরা ঘুমায় অল্প। তাদের যোনি ছয় আঙ্গুল গভীর হয়ে থাকে।
২. ঘোটকী : এরা ধৈর্যহীনা হয়। এদের স্তন হয় শিথিল। চক্ষু হয় কাপর্দ ও শ্যামবর্ণ কিন্তু বাঁকা চোখে কটাক্ষ মারতে খুবই পটু। এরা তাড়াতাড়ি হাঁটে। পুরুষের সঙ্গে সহবাসে বড়ই প্রিয় এবং চিমটিতে বড়ই অগ্রসর। সুবিধা পেলে অত্যাধিক মদ্য পান করতে পারে। এদের কন্ঠস্বর কর্কশ এবং চিৎকার প্রবণ। লম্বা লম্বা দাঁত এবং খাঁড়া খাঁড়া চুল এদের বিশেষত্ব। এদের যোনি হয় নয় আঙ্গুল গভীর।
৩. হস্তিনী : এদের গতি ভঙ্গী হস্তিনীর মতো। এদের আঙ্গুল হয় মাংসল এবং বাঁকা বাঁকা। গ্রীবা হ্রস্ব এবং মাংসল হয়ে থাকে। ওষ্ঠাধর হয় পুরু পুরু। নিতম্ব বিশেষ চর্বিযুক্ত প্রচুর খাদ্য খেতে পারে। এরা হস্তিনীর মত নিদ্রা যায়। এদের অঙ্গে বহু লোম থাকতে দেখা যায়। আচরণ হয় নির্লজ্জ। এরা সর্বদাই পুরুষ সহবাসে প্রস্তুত। এদের যোনি খুব প্রশস্ত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো ধারণ করতে পারে।
নারী ও পুরুষ জাতি সম্পর্কে ফকির লালন শাহ বলেছেন ,
"চিন্তামণি পদ্মিনী নারী এরাই পতিসেবার অধিকারী।
হস্তিনী শঙ্খিনী নারী তারা কর্কশ ভাষায় কয় বচন।।
শশক পুরুষ সত্যবাদী মৃগপুরুষ উর্ধ্ধভেদী।
অশ্ব বৃষ বেহুশ নিরবধি তাদের কুকর্মেতে সদাই মন।।"
পুরুষ রতিশাস্ত্ৰ অনুযায়ী পুরুষকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
----চার জাতির পুরুষ হলো
১. শশক জাতীয় পুরুষ
২. মৃগ জাতীয় পুরুষ
৩. বৃষ জাতীয় পুরুষ
৪. অশ্ব জাতীয় পুরুষ
১. শশক জাতীয় পুরুষ:
শশক জাতীয় পুরুষের শরীর কন্দৰ্পের মতো অপরূপ কান্তিবিশিষ্ট ও সুলক্ষণ যুক্ত। এদের দেহ নাতি খর্ব ও নাতি দীর্ঘ হয়ে থাকে। শশক জাতীয় পুরুষ শান্ত, শিষ্ট ও পরোপকার প্রবৃত্তিযুক্ত হয়ে থাকে। পরের উপকারেই তার আনন্দ । তার বচন হয় গম্ভীর, মুখমণ্ডল সদা প্রফুল্ল ও হাস্য-পূর্ণ থাকে। শশক জাতীয় পুরুষের মন সাধারণত কাম-গন্ধহীন হয়ে থাকে। এদের মনে বিন্দু মাত্ৰ পাপ থাকে না। একনিষ্ঠ, উচ্চ মানসিক প্রেম এরা পছন্দ করে। ফলে বিভিন্ন নারীর প্রতি এদের আসক্তি দেখা যায় না। এরা গুরুভক্তি, ধ্যান ও স্ৰষ্টার উপাসনা করতে অত্যন্ত ভালোবাসে।এই লিঙ্গের অধিকারী মানুষদের বচন হবে মিষ্ট, মন সদা প্রফুল্ল, সে দেখতে সুন্দর এবং কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। তাদের মুখ গোলাকার এবং দেহ মধ্যাকারের হয়। হাত-পা খুব হালকা এবং সুন্দরহ য়। তাদের আত্মসম্মান জ্ঞান থাকে। এদের গুরু ও জ্ঞানীজনের ভক্তি থাকে। এদের পুরুষাঙ্গ ছয় আঙ্গুল লম্বা এবং বীর্য থেকে সুরভিগন্ধ বের হয়। তারা খুব হালকাভাবে বেড়ায় এবং কামেচ্ছা মাঝে মাঝে উদ্ভূত হয়।
২• মৃগ জাতীয় পুরুষ:
মৃগ জাতীয় পুরুষেরা সাধারণত দীর্ঘাঙ্গ হয়ে থাকে। তাই চলাফেরার ভঙ্গি থেকেও এদের অনেকটা চিনতে পারা যায়।কারণ দীর্ঘাঙ্গ বলে যখন তারা চলে তখন দেখলে মনে হয় এরা লাফিয়ে চলছে ।এই পুরুষেরা বহুভোজী ও ভোজনবিলাসী হয়। এরা বেশ বলবান হয়ে থাকে। তবে বিশেষ স্থূল হয় না। এরা দিনরাত সংগীতে রত থাকতে ভালোবাসে, দেবতা ও অতিথির সেবা করে। গুরুভক্তি ও স্রষ্টার প্রতি প্ৰেম এদের মধ্যেও দেখা যায়। শশক পুরুষের সঙ্গে এ বিষয়ে মৃগ পুরুষের চমৎকার মিল রয়েছে। কিন্তু শশক পুরুষের থেকে মৃগ পুরুষের বিশেষ পার্থক্য এই যে, শশকের মন যেমন নির্মল ও বিশুদ্ধ হয়, পাপের লেশমাত্র মনে স্থান পায় না, মৃগের ঠিক তা নয়। এরা বাইরে অনেক ধর্মপরায়ণ হলেও অন্তরে কিছুটা কপট থাকে। কিন্তু এদের আচার-আচরণে সেটা সহজে বুঝতে পারা যায় না। মৃগ জাতীয় পুরুষের প্রেমের সঙ্গে কিছুটা কামগন্ধ মেশানো থাকে ! তাই মৃগ জাতীয় পুরুষেরা শশকের চেয়ে একটু বেশি নারীসঙ্গ অভিলাষী হয়।
৩. বৃষ জাতীয় পুরুষ:
বৃষ জাতীয় পুরুষের পা ক্ষুদ্র এবং জিহ্বা বড় হয়ে থাকে। এদের দেহ থেকে গুবকের গন্ধ (সুপারির গন্ধ) বের হয়ে থাকে। এরা অতিরিক্ত মাত্রায় ভোজনপ্রিয় হয়ে থাকে। এরা নির্লজ্জ ও অধাৰ্মিক হয়ে থাকে । কোনো কথা বলতে বা কোনো অন্যায় কাজ করতে এদের কখনো বাধে না । এদের মন সর্বদা পাপে রত থাকে। পাপ প্রবৃত্তি যেন এদের মনের সঙ্গে সব সময় জড়িয়ে থাকে। এরা সব সময় নারী দর্শনে অভিলাষী হয়ে থাকে। শুধু দর্শনে নয়, মনে প্রাণেও এরা নারীসঙ্গ দিবারাত্ৰ কামনা করে। বৃষ জাতীয় পুরুষেরা মৃগ ও শশকের থেকে অনেক বেশি কামপ্রবৃত্তি-পূর্ণ হয়ে থাকে। কামের জন্য এমন কিছু নেই যা এরা করতে পারে না। বৃষ জাতীয় পুরুষেরা রাসভের (গাধার) চিহ্নযুক্ত হয়ে থাকে।
এরূপ ব্যক্তির ঘাড় গর্দান বলিষ্ঠ, কর্কশ কণ্ঠস্বর, রক্তবর্ণ হস্ত পদ এবং গতি চমৎকার। তাদের ভ্রু খাড়া এবং পেট কচ্ছপাকারে গোলাকার। তাদের পুরুষাঙ্গ নয় আঙ্গুল দীর্ঘ হয়। তাদের বীর্য এবং দেহ থেকে লবণাক্ত আস্বাদ বের হয়।
৪. অশ্ব জাতীয় পুরুষ:
অশ্ব জাতীয় পুরুষের দেহ রক্ত বর্ণ হয়। শরীরও খুব স্থূল হয়ে থাকে। এরা দ্রুত চলাচল করতে পারে। এরা অধাৰ্মিক, মিথ্যাবাদী, দুরাচার ও মদন-কাতর হয়ে থাকে। পরনিন্দা, পরিচর্চা করতে এরা ভালোবাসে। এরা ধর্মহীন ও ক্ৰোধপরায়ণ হয়। প্রচুর পান ভোজনে এদের আগ্রহ দেখা যায়। যেকোনো রমণী দেখলেই এরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং তার সঙ্গকামনা করে। অশ্বজাতীয় পুরুষেরা নিজ স্বার্থসিদ্ধি ও কাম-তৃষ্ণা চরিতাৰ্থ করবার জন্যে সর্বদা লিপ্ত থাকে। এদের রতিশক্তি অন্য তিন জাতীয় পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি হয়।এরূপ লোক সাধারণত বাচাল এবং মুখ হয় লম্বা। লম্বা ও সরু কান, মাথা ও অধর ওষ্ঠ সরু। চুল হয় ঘন সন্নিবিষ্ট ও বক্র। হাত পা খুব লম্বা এবং দৃঢ়। তাদের লম্বা আঙলি কিন্তু নখের চেহারা সুগঠিত। তাদের স্বর যেন মেঘ গর্জন এবং তারা দ্রুত পা ফেলে হাঁটে। তাদের পুরুষাঙ্গ প্রায় বারো আঙ্গুল লম্বা হয়ে থাকে।