Monday, June 1, 2020

বিশ্বের ১০ টি অমীমাংসিত রহস্য





প্রকৃতির ধর্মই হচ্ছে রহস্য সৃষ্টি করা। বিজ্ঞান প্রযুক্তির কল্যাণে এমন অনেক রহস্যের দ্বার জনসম্মুখে উন্মোচিত হলেও কিছু রহস্যের আজ অব্দি কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। দেখি তো সেই অনুম্মোচিত রহস্যের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছয়টি রহস্য কি কি!

১। নাজকা রেখা
দক্ষিণ পেরুতে অবস্থিত নাজকা ও পালপা শহরের মাঝখানে প্রায় ৮০ কি.মি. এলাকাজুড়ে এক দীর্ঘ আর রহস্যময় রেখা বিস্তৃত যা মানুষের নিকট ‘নাজকা রেখা’ অথবা Nazca/Nasca lines নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় নাজকা সভ্যতার বাসিন্দারা খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই রেখাগুলো তৈরি করেন। এর মাঝে ১০০টির অধিক রেখা পুরোপুরি জ্যামিতিক রেখার সাদৃশ এবং আরো ৭০টির মত রেখা দ্বারা ফুল, পাখি, বাঁদর, মাকড়সা, মানুষের মাথা সহ বিভিন্ন প্রাণীর চিত্র আঁকা রয়েছে। এর মাঝে বৃহত্তম রেখাচিত্রটি প্রায় ২০০মিটার লম্বা। ১৯২৭ সালে, তোরিবিও মেহিয়া সিসপে নামক এক প্রত্নতাত্তিক ‘ফুটহিল’ পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে এই লাইন সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। উল্লেখ্য যে, এই বিশালাকৃতির কারণে এই রেখাগুলো শুধুমাত্র আকাশপথ এবং ফুটহিল পাহাড়ের উপর থেকেই পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।

এই রেখাঙ্কনের কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনেক মতবাদ। অনেকের মতে সৃষ্টিকর্তাকে আকৃষ্ট করার জন্যই এই বিশালাকার রেখার সৃষ্টি। অনেকে মনে করেন যে, ঐ যুগে মানুষ ভিনগ্রহী প্রানীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করত এবং এই রেখাগুলোর আঁকার কারণ হচ্ছে যাতে করে তারা এই রেখাগুলো দেখে পৃথিবীতে নেমে আসতে পারে। অনেকে আবার বলেন, নাজকাই পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন রানওয়ে, কেননা এর মাঝে অনেক রেখা রানওয়েতে অঙ্কিত রেখার সাদৃশ্যপূর্ণ। অনেক রকমের মতবাদ থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ এই নাজকা রেখা অঙ্কনের আসল কারণ উদঘাটন করতে না পারার কারণে রেখাগুলো আজও রহস্য হয়েই রয়ে গেছে।

২। হারানো শহর আটলান্টিস
দার্শনিক প্লেটোর ডায়ালগ ‘টাইমাউস (Timeaus)– এ উল্লেখিত ‘পিলার অফ হার্কিউলিস’-এর সামনে অবস্থিত আটলান্টিস ছিল দশম মিলেনিয়ামের(আজ থেকে প্রায় ১০০০০ বছর আগে) বিশ্বের সর্বশক্তিমান শহর। নৌশক্তির দ্বারা ইউরোপের বেশিরভাগ স্থান জয়ের পর ‘এথেন্স’-এর নিকট পরাজিত হয়ে এই শহর একরাতের মাঝে সমুদ্রে ডুবে যায়! তবে অনেকেই মনে করেন প্লেটো পৌরাণিক কল্পকাহিনী এবং যুদ্ধের কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই রহস্য তৈরি করেছেন যার কোনো সত্যতা নেই কিন্তু।

৩। স্টোনহেঞ্জ
কম্পিউটারে উইন্ডোস এক্সপি ব্যবহারকারীদের মাঝে কমবেশি সকলেই স্টোনহেঞ্জের সাথে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের অ্যামাসবারির নিকটে অবস্থিত এই স্তম্ভটি, খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০-৩০০০ অব্দের মাঝে, নিওলিথিক ও ব্রোঞ্জযুগে প্রতিষ্ঠিত। এতে বৃত্তাকারে বিশালাকৃতির বেশকিছু দণ্ডায়মান পাথর রয়েছে এবং এগুলোর চতুর্দিকে মাটির বাঁধ রয়েছে। এ বাঁধের ভেতর চতুর্দিকে বেষ্টন করে আছে ৫৬টি মৃত্তিকা গহ্বর।। পাথরগুলোর মধ্যে আরও দুই সারি গর্ত বেস্টন করে আছে। পাথরগুলোর গঠনের মধ্যে আছে দুইটি বৃত্তাকার এবং দুইটি ঘোড়ার খুরের নলের আকারবিশিষ্ট পাথরের সারি। এ ছাড়াও এতে কতগুলো পৃথক পাথর রয়েছে যা পূজার বেদীর পাথর কিংবা বধ্যভূমির পাথর হিসেবে পরিচিত। নিখুঁত এবং জটিল গঠনের এই স্তম্ভটি কে বা কারা প্রতিষ্ঠা করেছে, এর প্রতিষ্ঠার পেছনের কারণ কি, তা এই বিংশ শতাব্দীতেও রহস্যই রয়ে গেছে।

এতে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা দেখা যাওয়ায়, সংকেতটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল।

৪। রোয়ানোক কলোনি
ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে, রাণী এলিজাবেথ উত্তর আমেরিকায় ইংরেজদের স্থায়ী বন্দোবস্ত করার উদ্দেশ্যে রোয়ানোক আইল্যান্ড (বর্তমানে যা উত্তর ক্যারোলিনার একটি অংশ)- এ ‘রোয়ানোক কলোনি (Roanoke Colony)’ স্থাপন করেন। এই কলোনির কাহিনীও অনেকটা আটলান্টিসের মতই। অ্যাংলো-স্প্যানিশ যুদ্ধের পর এই কলোনির বাসিন্দারা হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়, যার কারণে একে ‘দ্যা লস্ট কলোনি’ নাম দেয়া হয়। বিংশ শতাব্দীতে এসেও সেই কলোনির বাসিন্দাদের সাথে কি হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল, তাদের এভাবে হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়ার কারণ কি, কিচ্ছু জানা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই, রোয়ানোক কলোনি এখনও মানুষের নিকট রহস্যই রয়ে গেছে।

৫। ওয়াও! সংকেত
ওয়াও! সংকেত (Wow! Signal) একটি ন্যারোব্যান্ড বেতার সংকেত। ১৯৭৭ সালের ১৫ই আগস্টে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির বিগ এয়ার নামক রেডিও টেলিস্কোপে এই সংকেত ধরা পড়ে। পরবর্তীতে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরি আর. এহম্যান সংকেতটি বিশ্লেষন করতে গিয়ে অভিভূত হয়ে এর কম্পিউটার প্রিন্টআউটের পাশে ‘Wow!’ লিখেন যা থেকে এই সংকেতের নামকরণ করা হয়। সাধারণত, সৌরজগতের ভিতর থেকে এই ধরনের সংকেত আসার কথা নয়। এতে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা দেখা যাওয়ায়, সংকেতটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। এটি ৭২ সেকেন্ড ধরে বিরাজমান ছিল কিন্তু এরপর এই সংকেতটি আর পাওয়া যায়নি।

৬। রঙ্গোরঙ্গো
১৫তম শতাব্দীর প্রথম দিকে সম্পূর্ণ অজানা এক ভাষায় লিখিত ভয়নিচ পান্ডুলিপি (Voynich Manuscript) হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় পান্ডুলিপি। উইলফ্রিড ভয়নিচ নামক এক বই ব্যবসায়ী এবং পান্ডুলিপি সংগ্রাহক ১৯১২ সালে এটি সংগ্রহ করেন। ভয়নিচের নামানুসারেই এই পান্ডুলিপির নামকরন করা হয়। কিছু পাতা হারানো গেলেও, এর বর্তমান সংস্করণে প্রায় ২৩৪টি পাতা রয়েছে যার অধিকাংশই চিত্রালংকরণের সাথে গঠিত। পান্ডুলিপিটির অনেক বর্ণনাতে সে সময়ের ভেষজ পান্ডুলিপি, গাছপালার চিত্রালংকরণ এবং তাদের সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এই পান্ডুলিপির আসল অর্থ উদঘাটন করতে পারেনি।

এরকম আরো এক রহস্যময় গ্লিফ পাওয়া যায় রাপা নুই (ইংরেজীতে ইস্টার এবং স্প্যানিশে ইস্লা দে পাস্কুয়া) দ্বীপে। ‘রঙ্গোরঙ্গো’ নামক এই গ্লিফটি রাপা নুই দ্বীপের আরেক রহস্য ‘মোয়াই’ সম্পর্কে লিখিত বলে ধারনা করা হলেও এখন পর্যন্ত তা পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি। মোয়াই হচ্ছে, রাপা নুইদ্বীপে সংকুচিত আগ্নেয় শিলায় খোদাইকৃত অনেকগুলো আবক্ষ মূর্তি। প্রত্যেকটি মূর্তি একেকটি আস্ত শিলা হতে খোদাই করা হয়েছে, প্রত্যেকটি মূর্তির ওজন ২০ টন এবং উচ্চতা ২০ ফুট। এ পর্যন্ত ৮৮৭টি মোয়াই সম্পর্কে জানা গেছে, কিন্তু বর্তমানে ৩৯৪ টি মোয়াই দেখা যায়।

৭। ফ্রেডরিক ভ্যালেন্টিস
সেসনা ১৮২ মডেলের একটি বিমান নিয়ে ১৯৭৮ সালে ২০ বছর বয়সী এই পাইলট নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি সে সময় তার সামনে চারটি উজ্জ্বল সবুজ আলো দেখতে পাচ্ছিলেন। এটি ছিলো রেডিওতে দেওয়া তার সর্বশেষ বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন আলোটি তার চেয়ে এক হাজার ফুট উপরে ছিলো। তিনি বলেছিলেন আলোটি তার দিকে এগিয়ে আসছে। তবে সেটা কোন বিমান ছিলো না, এই বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। এটিই ছিলো তার শেষ কথা। বিমান নিয়ে তার হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ইতিহাসে এক অন্যতম রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।

৮। এরডস্টাল
এরডস্টাল হলো ইউরোপের সরু আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল, যার সন্ধান পেয়ে সকলেই বিস্মিত। সাতশো’রও বেশি টানেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, শুধুমাত্র জার্মানির বাভারিয়াতেই। টানেলগুলো এত সংকীর্ণ, যাদের উচ্চতা শুনলে মনে জাগবে বিস্ময়। টানেলগুলো উচ্চতায় এক থেকে দেড় মিটার উঁচু এবং চওড়া এক মিটারের মতো। এই টানেলগুলো কে বা কারা কী উদ্যেশ্যে তৈরি করেছিলো তা জানা যায় নি।

কোন পন্ডিতেরা বলে থাকেন, এই টানেলগুলো কোন ধর্মীয় কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো, আবার কারো কারো মতে টানেলগুলো পালানোর পর আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই টানেলগুলো তৈরির পেছনের আসল রহস্য উদ্ধার হয় নি। এছাড়া টানেলগুলো অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে রহস্যজনকভাবে তৈরি করা হয়েছিলো। টানেলগুলোর ভিতরে ঢোকার মুখগুলোও ছিলো, কোনটা শহর থেকে দূরে, কোনটা বা গোরস্থানের ভেতরে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই টানেলগুলোর ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ পুরাতাত্ত্বিক কিছু পাওয়া যায় নি। এই টানেলগুলো পৃথিবীতে অন্যতম অমীমাংসিত রহস্য।

৯। ফুট বিচ ইন ব্রিটিশ কলাম্বিয়া
সমুদ্রের পানিতে পুরো শরীর ভিজবে ব্যাপারটি খুব স্বাভাবিক। এমনকি আমরা যারা সমুদ্রে বেড়াতে গিয়েছি কিংবা সমুদ্রের ব্যাপারে জেনেছি আমরা জানি সমুদ্রের পানিতে শরীর ভিজবেই। কিন্তু কলাম্বিয়ার একটি সমুদ্র রয়েছে যেখানে সমুদ্রের পানিতে পা সবসময় ভাসমান থাকে। ব্যাপারটি অদ্ভুত শোনালেও সত্য যে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওই সমুদ্রে পা পানিতে ডুবে যায় না। সবসময় ভাসমান অবস্থায় থাকে। কেন এরকম হয় সে রহস্য আজ অব্দি রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।

১০। ডিবি কুপার
ডিবি কুপার একটি বোয়িং হাইজ্যাক করেন এবং তিনি প্লেন থেকে লাফ দেবার জন্য মনস্থির করেন. তিনি প্লেন থেকে লাফ দেন, সাথে প্যারাসুট নিয়ে। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং ইউএস এভিয়েশনের ইতিহাসে এটি একমাত্র সমাধানহীন ঘটনা, যা কিনা ইতিহাসের পাতায় একটি রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts