Monday, March 22, 2021

একটি ছবির মধ্যে ১০০ বছরের ক্যালেন্ডার

 হ্যাঁ, সম্ভব। নিচের ছবিটি দেখুন, এই ছবির মালিক হচ্ছেন, জিতেন্দ্র দে। তিনি তার সৃজনশীলতা দিয়ে এই ছবিটি তৈরি করেছেন। প্রথম অবস্থায় এই ক্যালেন্ডার বোঝা খুব শক্ত, কিন্তু মনযোগ দিয়ে দেখলে এটাও স্বাভাবিক ক্যালেন্ডারের মতো মনে হবে।

  • ক্যালেন্ডাটির ব্যবহারবিধিঃ

বামদিকের সংখ্যা গুলো সাল (2001 to 2100) ওই সালের লাইন বরাবর গিয়ে মাসটা দেখুন ওখানে যে ক্যাপিটাল লেটার আছে ওটা অনুযায়ী নীচে কোন তারিক কি বার দেখে নিন ।

উদাহরনস্বরূপ :- 2020 সালের 18 august কি বার জানতে হলে, বাম দিকে 20 সংখ্যা টি খুজুন তারপর ওই সংখ্যার লাইন বরাবর আগস্ট মাসে লেটার (F) টি দেখুন , এবার নীচে F এর ঘরের 18 তারিখ কি বার ( Tuesday ) লক্ষ করুন।

Friday, March 19, 2021

মিয়ানমারকে চীন একতরফা বা অন্ধভাবে সমর্থন করে কেন?

 মিয়ানমারে চীনের স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে প্রথমেই বলতে হয় আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কথা যার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন। দুই পক্ষই মিয়ানমারকে হাত করতে হয় তাদের সরাসরি পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, নয়তো তাদের বিপক্ষে না গিয়ে নীরব থেকেছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে নৌশক্তির ভূমিকা ব্যাপক। আর এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে বঙ্গোপসাগরকেও দখলে রাখা গুরুত্বপূর্ণ! বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার তুলনায় মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবেই মিয়ানমারের উপর সমর্থনের পাল্লা ভারী হওয়ার কথা। তার উপর গত বছরের(২০২০) নভেম্বরে চীনকে টক্কর দিতে ভারত, আমেরিকাসহ চারটি দেশ যৌথ নৌ মহড়া চালিয়েছে বঙ্গোপসাগরে, চীন এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। একটা কথা না বললেই নয়, চীনের সাথে বঙ্গোপসাগরের সরাসরি সীমান্ত নেই। সেক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা মিয়ানমার।

মিয়ানমারের সমুদ্রাঞ্চল

দ্বিতীয়ত, চীন কখনোই অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অংশ বলে স্বীকৃতি দেয়নি, এমনকি তারা গত বছরের সেপ্টেম্বরে অরুণাচলকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছে! এর আগে বেশ কয়েকবার চীনের সেনারা অরুণাচল প্রদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। ওদিকে ভারত অরুণাচল প্রদেশসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে যোগাযোগ সহজ করার জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে কালাদান নদীকেন্দ্রীক 'কালাদান প্রোজেক্ট' গ্রহণ করেছে। এটা সফল হলে ভারতের অরুণাচলসহ অন্যান্য রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে যা চীনের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

কালাদান প্রোজেক্ট

ভারত থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ সহজতর করার জন্য মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করছে, আর তা করতে পারলে এসব দেশে ভারতের প্রভাব বাড়বে। এখানেও চীনের কথা বলতে গিয়ে ভারতকে টানার কারণ চীন-ভারত দ্বন্দ্ব এবং মিয়ানমারকে কাছে টানার প্রতিযোগিতা!

ত্রিদেশীয় সড়ক যোগাযোগ

এবার ভারতকে বাদ দিয়ে দেখা যাক মিয়ানমারে চীনের সরাসরি কী কী স্বার্থ।

প্রথমত, মিয়ানমারে যে দেশটির বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি সেটি হলো চীন, গত ৩০ বছরে যার পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

দ্বিতীয়ত, চীন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মধ্য দিয়ে তার ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত গ্যাস ও তেলের পাইপলাইন স্থাপন করেছে যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা তেলগ্যাস এসব প্রদেশে সহজে নিতে পারছে। উল্লেখ্য, এই পাইপলাইন স্থাপনের সময়ে রোহিঙ্গারা বেশ বিরোধিতা করেছিলো!

চীনের পাইপলাইন

তৃতীয়ত, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কাইয়াকপুতে চীন একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে এবং ৭.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে যার ৭০ শতাংশ মালিকানা চীনের। সেক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব ঠেকানোর জন্য এবং মিয়ানমারে নিজেদের বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য মিয়ানমারে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে চীনের। আর মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব চীন বেশ ভালোমতোই জানে!

একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কি? মিয়ানমারে ভারত ও চীনের যে কর্মযজ্ঞ তার বড় অংশই কিন্তু রাখাইনে, যার জন্য দরকার প্রচুর জমি, নির্বিঘ্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ! সেক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?!

যদি এতক্ষণ আপনারা আমার বকবকানি কষ্ট করে পড়েন তবে এখন একটু ভেবে দেখেন এর ভিতর বাংলাদেশ কি আছে? নেই। চীন বা ভারতের জায়গায় আপনি থাকলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন? নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই মিয়ানমারকে। বাংলাদেশকে ভারতের না লাগবে অরুণাচল প্রদেশের সাথে যোগাযোগ করতে, না লাগবে থাইল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করতে। চীনেরও বাংলাদেশকে তেল বা গ্যাস কোনটারই পাইপলাইন নিতে দরকার নেই! শুধু বিনিয়োগে দরকার আছে। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বিনিয়োগ তো মিয়ানমারেও করে! আর মিয়ানমার আসলেই এক্ষেত্রে ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী রাষ্ট্র যারা দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ঠাণ্ডা লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফসল ঘরে তুলতে পেরেছে!

আমরা মাঝেমাঝেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আবেগে অভিমান করি কেন তারা বিপদের দিনে পাশে নেই! এইসব অভিমান, অন্য দেশকে দোষারোপ, এসব একেবারেই অর্থহীন। দেশের সাথে দেশের বন্ধুত্বে নিঃস্বার্থ কিছু নেই। এই বন্ধুত্ব আমার সাথে আমার ছোটবেলার বন্ধুর মত না যে আমাকে বাঁচানোর জন্য নিজে পিঠ পেতে দিয়ে মার খাবে! অন্য দেশগুলোর কাছে আপনি মানুষ নন, পণ্য। আপনি যদি তাদের কাছে তুলে ধরতে পারেন যে অন্য দেশটির তুলনায় আপনি তাদের কাছে বেশি লাভজনক তবেই তারা তাকে ভুলে আপনাকে সমর্থন দিতে পারে! নইলে কখনোই নিজেদের ক্ষতি করে আপনাকে সাহায্য করবে না! এই যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমেরিকা বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে তার পেছনেও কোন না কোন স্বার্থ আছে। এই একই আমেরিকা কিন্তু ফিলিস্তিনে ইজরায়েলি বসতি স্থাপন কিংবা ইয়েমেনে সৌদি হামলার সময়ে নীরব থাকে! স্বার্থ!!

আপনাকে অন্য দেশের কাজে লাগলে আপনি তার কাছে হীরা, আর কাজে না লাগলে আপনি স্রেফ পিঁপড়া!

মহর্ষি সুশ্রুত - Father of Surgery

 রাজা মহারাজারা শাস্তি হিসাবে সত্যিসত্যিই কিন্তু এককালে নাক কেটে দিতো। সেই কেটে দেওয়া নাকের চিকিৎসা দিয়েই এসেছে বর্তমান Rhinoplasty নামক বিশেষ চিকিৎসা। এই ধরনের শল্যচিকিৎসার প্রথম উল্লেখ দেখা যায় "সুশ্রুত সংহিতা" নামক গ্রন্থে। আজ এই বিশেষ গ্রন্থ এবং তার রচয়িতাকে নিয়েই বলবো।

আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে কাশীরাজের ঘরে জন্ম নেয় দেববৈদ্য ধন্বন্তরি, গরুড়পুরাণ (অধ্যায় - ১৩৯) মতে তার নাম ছিল দিবোদাস। মহর্ষি বিশ্বামিত্র যখন জানতে পারে দেব ধন্বন্তরি অবতীর্ণ হয়েছেন পৃথিবীতে এবং কাশীতে বাস করে চিকিৎসা বিদ্যা শিখাচ্ছেন, তিনি তার পুত্র সুশ্রুতকে তার নিকট প্রেরণ করেন৷ সেখানে সুশ্রুত তার চিকিৎসা শিক্ষা লাভ করে বিশেষ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং হয়ে উঠেন মহর্ষি সুশ্রুত। তার এই কাহিনির উল্লেখ গরুড় পুরাণ ছাড়াও শতপথ ব্রাহ্মণ এবং মহাভারতের অনুশাসন পর্বেও পাওয়া যায়।

কিছু মতান্তর আছে এমন যে, তিনি বিশ্বামিত্রের পুত্র নয় বরং তার বংশের তথা বিশ্বামিত্র গোত্রীয় ছিলেন। এমন কথাও শুনা যায় যে, মহর্ষি সুশ্রুত ১৫০০ বা ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের লোক ছিলেন, যা ভিত্তিহীন বলা চলে বহু করণে। যাই হোক, শাস্ত্রের কথাই বিশ্বাসে রাখলাম। এবার আসা যাক সুশ্রুতের কীর্তির দিক গুলিতে।

সাধারণ চিকিৎসা শাস্ত্রের / Medical Science এর সংজ্ঞা এমন, "the science of dealing with the maintenance of health and the prevention and treatment of disease" কিন্তু যখন আমরা আয়ুর্বেদের বিষয়ে আসি তখন দেখা যাবে "the medical treatise summarizing the art of healing and prolonging life" কেবল চিকিৎসাকে আয়ুর্বেদ বলা যায় না। আয়ুর্বেদ আয়ু বদ্ধির সকল প্রক্রিয়াকে নিয়ে গঠিত, যদিও প্রায় কাছাকাছি অর্থই দাঁড়ায়। অনেকে আবার এটাকে কেবল Herbal care মনে করে, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। প্রাচীণ কালে ব্যবস্থা যেমন ছিলো তাতে গাছগাছালী বেশি ব্যবহার হতো ঠিকই কিন্তু তার মানে এই না যে সব গাছপালার উপরই নির্ভরশীল ছিলো। আরও অনেক ধরনের ব্যবস্থা ছিলো যা এই বইগুলি পড়লে বুঝবেন। আমি ছোট একটা বর্ণনা দিচ্ছি কেবল।

সুশ্রুত সংহিতা মূলতঃ বৈদিক চিকিৎসা শাস্ত্র যাকে মহর্ষি সুশ্রুত একত্রিত এবং সুসজ্জিত ভাবে পুস্তকাকারে মুদ্রিত করেছেন। গ্রন্থের এক্কেবারে প্রথমেই দেখা যায় চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভাজন। ধন্বন্তরি অবতার দিবোদাস বলছেন - আয়ুর্বেদ যা অথর্ববেদের একটি অংশ মাত্র। এটি ব্রহ্মার মুখে বিশালাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু মানবমস্তিস্কের কথা ভেবে একে ৮ ভাগে ভাগ করা হলো। যথা - (১) শল্য তন্ত্র - Ulcer, পাথর, জমাট বাধা রক্ত, অতিরিক্ত হাড় ইত্যাদি মুক্তকরণ মূলত যেকোনো কিছু শরীর থেকে বের করা, (২) শালক্য তন্ত্র - চোখ, নাসিকা আদি গলার উপরের অঙ্গের চিকিৎসা, (৩) কায় চিকিৎসা - জ্বর, আমাশয়, Haemoptysis, উন্মাদনা, Hysteria, কুষ্ঠরোগ, মূত্রনালী থেকে অপ্রাকৃত স্রাব ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা, (৪) ভূত বিদ্যা - ভূতে ধরা ইত্যাদি মানসিক রোগমুক্তি, (৫) কৌমার ভৃত্য - শিশুপালন, (৬) অগদ তন্ত্র - Toxicology বা বিষবিদ্যা, (৭) রসায়ন তন্ত্র - আয়ু বৃদ্ধির বিভিন্ন প্রক্রিয়া, (৮) বাজিকরণ তন্ত্র - শুক্রাণু এবং তার বিষয়ে আলোচনা। তাছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসক বা বৈদ্যের বর্ণনা, কে বৈদ্য হতে সক্ষম আদি আলোচনা।

সেই ব্যক্তিই সেবার জন্য বা রোগীর শয্যাতে যোগ দিতে উপযুক্ত, যিনি শান্ত মাথার এবং যার আচরণ আনন্দদায়ক। যে কারও সম্পর্কে খারাপ কথা বলেন না, অসুস্থ ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তার প্রতি দায়িত্বশীল এবং মনোযোগী এবং অনিবার্যভাবে চিকিৎসার নির্দেশ অনুসরণ করে। — সুশ্রুত সংহিতা, ১/৩৪

ধাত্রীবিদ্যা, দন্তচিকিৎসা (Dentistry), Lithotomic Operations, বিভিন্ন ধরনের কাটাছেঁড়া (Amputations, Dissection), হাড় জোড়া লাগানো, Anatomy, ভ্রুণতত্ত্ব (Embryology), Sexual Dimorphism, Anabolic and Catabolic occurances, রোগপ্রতিরোধ এবং সুস্থ থাকার সব রকম উপায় তিনি তার গ্রন্থে বলে গেছেন। রোগ গুলিকে তিনি মূলতঃ ত্রিবিধ দোষের ফল হিসাবে বর্ণনা করেছেন — ১. বাত, ২. পিত্ত, ৩. কফ (সাধারণ বাংলা শব্দের সাথে তুলনীয় নয়)। Ulcer, মধুমেহ (Diabetes), কুষ্ঠ, রক্তচাপ, Blood Fluids সম্পর্কিত তথ্য, হৃত শল (Heart Pain) ইত্যাদি রোগের বর্ণনাও পাওয়া যায় এতে। উৎস ইত্যাদি অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৩৬০টি হাড়ের বর্ণনা পাওয়া যায় যার মধ্যে Endo skeleton এর সাথে Exo skeleton যথা দাঁত নখকেও রেখেছেন তিনি। অনেকেই বিভ্রান্ত হন কারণ আমরা ২০৬টি হাড়ের যেই বর্ণনা পড়ি তা প্রাপ্তবয়স্ক মজবুত (Endo skeleton) হাড়ের কথা কেবল, এছাড়াও অনেক গভীর আলোচনা আছে এতে। Balanced Diet, য়োগসাধনা ইত্যাদি নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ গ্রন্থটি মুদ্রিত করেছেন মোট ১৮৬ অধ্যায়ে। যা ৬ ভাগে বিভক্ত —

১. সুত্র স্থান - ৪৬ অধ্যায়

২. নিদান স্থান - ১৬ অধ্যায়

৩. শরীর স্থান - ১০ অধ্যায়

৪. চিকিৎসা স্থান - ৪০ অধ্যায়

৫. কল্প স্থান - ৮ অধ্যায়

৬. উত্তর তন্ত্র - ৬৬ অধ্যায়

এই গ্রন্থে তিনি ১১২০ ধরনের রোগের উল্লেখ করেছেন, ৭০০ ভেষজ, ৬৪ minerals এবং ৫৭ প্রাণিজাত ঔষধির কথা বলেছেন। তার শল্যচিকিৎসার কীর্তি এবং Cosmetic Surgery তে অবদানের জন্য তাকে Father of Surgery এবং Father of Plastic Surgery হিসাবে আক্ষায়িত করা হয়। তার বর্ণনাকৃত ৩০০ ধরনের অস্ত্র (surgical instruments) এখনো ব্যবহার হয় আমাদের মেডিকেল হাসপাতাল গুলিতে।

কিছু বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত শস্ত্রের নাম আর ছবি দিলাম। সুশ্রুত সংহিতায় চিকিৎসকের জন্য Anatomy শিক্ষার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং মৃত দেহ থেকে তার জ্ঞান অর্জনের জন্য বলা হয়েছে। ছাত্রদের শল্যচিকিৎসা শিক্ষার জন্য বিভিন্ন কুমার জাতীয় ফল, মৃত প্রাণী ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

এই গ্রন্থ যাকে ধর্মগ্রন্থের সাথে তুলনা করা হয়, তার প্রথম আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয় Kitab Shah Shun al-Hindi নামে, বাগদাদে এই বইয়ের নাম Kitab i-Susurud (অষ্টম শতকে অনুবাদিত) এর পর আরও পশ্চিমের দিকে এই বই প্রচারিত হতে থাকে কম্বোডিয়া আদি দেশগুলিতেও এই বই প্রচারিত হয়৷

অনেকে আবার এই ধারণায় থাকে যে এই বইগুলিতে যা আছে তাই করতে হবে। তাদের এই মতবাদ নিতান্তই হাস্যকর। উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করে তোলাকে হিন্দুশাস্ত্র সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়েছে। তার একটা কাহিনি বলি,

সাল ১৭৯৪, তখনো "রয়াল সোসাইটি অফ সার্জারি" প্রতিষ্ঠিত হয় নি। ব্রিটেনে প্রথম প্রথম ম্যাগাজিন বের হচ্ছে তখন। The Gentleman's Magazine, October 1794 এর মুদ্রনে একটা লেখা উঠে আসে। ভারতের পুনেতে এক ব্যক্তি Nose Surgery করছে (Rhinoplasty নাম তখনও প্রচলিত হয় নি)। সে করছে এমন যে কপালের চামড়া কেটে তা দিয়ে নাক পুনর্নির্মাণ করছে, সুশ্রুত সংহিতায় যদিও বলছে গালের চামড়া দিয়ে করতে। বিশেষ উল্লেখ্য এই যে, সে চামড়া সুশ্রুতের মতো সম্পূর্ণ কেটে ফেলছে না, বরং এক ভাবে যুক্ত রেখেই লাগিয়ে দিচ্ছে যার ফলে চামড়া মরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে বুঝা তো গেলোই বর্তমান Medical Science কিভাবে আয়ুর্বেদের অংশ, বলতে গেলে উন্নত আয়ুর্বেদ। অনেকের মধ্যেই দেখেছি, Medical Science এর বদনাম করে আয়ুর্বেদের সুনাম করতে। তারা আবার এমন ধারণায় বিশ্বাসী যে আয়ুর্বেদ আসলে Herbal চিকিৎসা। কী আর বলবো! হাস্যকর।

যাই হোক, Surgery এর ইতিহাসে আসি। পুনের সেই লোকের নাম ছিল Cowsjee, এই ব্যপারে আমি YouTube এর একটা ভিডিও থেকে জেনেছি যদিও। এখন এই Cowsjee -র নাম থেকে Chirurgie এবং তা থেকে এসেছে Surgery নাম বলা হচ্ছে। এর কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে সেই সাধারণ গল্প, কাটাকাটি তো তৎকালের প্রতিটা যুদ্ধেরই ঘটনা। কিন্তু এই Rhinoplasty করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছিল। যা সফল ভাবে প্রয়োগ করছে ভারতের এই গাড়োয়ান কিম্বা কুমার৷ যার কারণে তার প্রতি এতো আগ্রহ ছিলো বিদেশিদের। এভাবেই সুশ্রুত সংহিতা পুনরায় প্রচারিত হতে শুরু করে।

আবার ১৮৯০ সালের দিকে স্যার হেমিলটনের আবিষ্কৃত রাশিয়া অঞ্চলের এক প্রাচীণ নথির কথাও বিশেষ শুনা যায় যা আত্রেয়, হরিত, পরাসর, বশিষ্ঠ, সুশ্রুত আদি কিছু বিশেষ চিকিৎসকের কথা উল্লেখ করছে। যা সুশ্রুত সংহিতাকে আরও আগ্রহের কেন্দ্র করে তোলে। এটার মূল কারণ বিদেশিরা মানতে নারাজ ছিল, উপমহাদেশের গেঁয়োরা কোনো ভাবেই এতো উন্নতি করতে পারে না। তারা শতপথ ব্রাহ্মণ ইত্যাদি দেখে শেষে এটাকে ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বলে চালিয়ে দেয়। তাও মহাভারতের আমালের ব্যক্তি হিসাবে সুশ্রুতকে মানতে পারে না। যাই হোক, তাও সুশ্রুত প্রাচীণতম চিকিৎসা বিদ্যার পণ্ডিত, শল্যচিকিৎসার জনক।

এতো কিছু তো জানলেন, কিন্তু বলুন তো Anesthesia তখন ছিলো কী ছিলোনা? না থাকলে Operation কিভাবে করতো?

Friday, March 5, 2021

সনাতন শাস্ত্র মতে কিভাবে সু-সন্তান লাভ করা যায়?

 ঋতুর প্রথম দিন থেকে  ১৬ দিন  পর্যন্ত  স্ত্রীর গর্ভধারণযোগ্য শক্তি থাকে।  সুসন্তানকামী ও সুস্থ শরীরাভিলাষী ব্যক্তি  ঋতুর প্রথম ৪ দিন এবং  ১১  ও ১৩ তম  দিন সহবাস  করবে না। এই ৬ দিন বাদ দিয়ে  বাকি  ১০  দিনের  মধ্যে  যত বেশি দিন পরে  গর্ভধারণ করবেন,   সন্তান বেশি তত বেশি  সুস্থ ও বলবান  হয় ও তার  পরমায়ু বৃদ্ধি পায়। 



উপরোক্ত  ১০ দিনের মধ্যে   রবিবার,অমাবস্যা   পুর্নিমা, ,চতুর্দশী,অষ্টমী ও সংক্রান্তির দিন সহবাস করবেন না। কারণ, এই দিন গুলি  পুরুষ ও স্ত্রীর শুক্র ও শোনিত দুষিত থাকে।   রাত্রির  প্রথম প্রহরে গর্ভধারণ হলে  সেই গর্ভস্থ সন্তান অল্পায়ু ও রুগ্ন হয়।  দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রহরে  গর্ভধারণের জন্য খুব একটা ভালো সময় নয়।  চতুর্থ প্রহরে গর্ভধারণ হলে  সন্তান দীর্ঘায়ু ও  নীরোগ হয়। অর্থাৎ,  ঋতুর  ৪র্থ,  ৬ ষ্ঠ,  ৮ ম,  ১০ম , ১২ তম ,১৪তম ও ১৬তম  ( জোড় দিন) রাত্রে সহবাস করলে পুত্র সন্তান হয়।  সমরাত্রে পুরুষের বীর্য স্ত্রীর রজ অপেক্ষা বেশি থাকে, মানে স্ত্রীর রজ  ,স্বামীর বীর্যের আগে পরে যায়, সেই কারনে পুত্রসন্তান জন্ম হয়। 

অপরদিকে,  ঋতুর  ৫ম,  ৭ম,  ৯ম,  ১১তম, ১৩ তম ও ১৫তম (বিজোড় দিন)  রাত্রে সহবাস করলে কন্যাসন্তান জন্ম হয়। সেই রকম বিজোড় রাত্রে স্ত্রীর রজঃ পুরুষের বীর্য অপেক্ষা বেশি থাকে, সেই কারনে কন্যাসন্তান জন্ম হয়। অর্থাৎ,  পুরুষের বীর্য  ,স্ত্রীর রজঃ নিসৃত হওয়ার পুর্বে পরে যায়, এ কারনে কন্যাসন্তান হয়। 

সোমবার,  বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে সহবাস করা ভালো।  মঙ্গলবার রাত্রে সহবাস করলে মৃতসন্তান  জন্ম হয়। 

সকাল-সন্ধ্যা ও দ্বিপ্রহরে  সহবাস করা হানিকারক। শরীর সম্পুর্ন সুস্থ থাকবে, মনের ভিতর কোন প্রকার খারাপ চিন্তা থাকবে না  ,খাদ্য আধহজম হবে কিন্তু খালি পেট থাকবে না, ঠিক সে সময় সহবাস করা উচিত। পায়খানা,  প্রস্রাব এবং খিদে, পিপাসার সময় সহবাস করা উচিত নয়। 

গর্ভবস্থায় ধর্ম ও সৎচিন্তা  করলে সন্তান  ধার্মিক  ও সুখী হয়।রাতকে অর্থাৎ ১২ ঘন্টাকে চারটি যামে ভাগ করে তৃতীয় যামে সহবাস করলে সবচেয়ে ভালো ও সুস্থ সবল সন্তান জন্মায়। আর, পাঁজিতে গর্ভাধানের তারিখ উল্লেখ করা থাকে। সেই তারিখ গুলো দেখেও গর্ভাধান করা যেতে পারে।

Tuesday, March 2, 2021

পরমেশ্বর শিবের পঞ্চ মুখ অবৈদিক?

বিভিন্ন অপপ্রচারকারীদের দাবী যে পরমেশ্বর শিবের যে রূপ তা নাকি অবৈদিক । এই রূপ নাকি বেদে নেই। যদিও এরা নিজেরাই বেদ পুরো মানেন না এবং বেদের অল্প কিছু অংশ মেনে বাকি অংশকে ফেলে দেন। মূলত বেদে শুধু শিব মন্ত্রই বিদ্যমান আর সকল স্থানে পরমেশওর শিবের গুনকীর্তনই করেছে। 

আসুন দেখে নেই মহা পবিত্র বেদে পরমেশ্বর শিবের পঞ্চমুখের রেফারেন্সগুলো। 




মন্ত্রই পরমেশ্বর শিবের বিশেষ রূপে জগত, এবং তা থেকেই তাঁর পঞ্চকৃত্যের উদ্ভব। সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার, অনুগ্রহ ও তিরোভাব এই হল পঞ্চকৃত্য। পবিত্র যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের এই পঞ্চবিধ শিবমূর্তির মহামন্ত্র নিম্নে উল্লেখ করা হল –


ॐ সদ্যোজাতং প্রপদ্যামি সদ্যোজাতায় বৈ নমো নমঃ। ভবে ভবেনাতিভবে ভবস্ব মাং ভবোদ্ভবায় নমঃ॥ (যজুর্বেদ/তৈত্তরীয় আরন্যক - ৪৩)


ॐ বামদেবায় নমাে জ্যেষ্ঠায় নমঃ শ্রেষ্ঠায়

নমাে রুদ্রায় নমঃ কালায় নমঃ কলবিকরণায় 

নমাে বলবিকরণায় নমাে বলায় নমাে বলপ্রমথনায়

নমঃ সর্বভূতদমনায় নমাে মনােন্মথায় নমঃ ॥ (যজুর্বেদ/তৈত্তরীয় আরন্যক - ৪৪)


ॐ অঘােরেভ্যোঽথ ঘােরেভ্যো ঘােরঘােরতরেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ সর্বশর্বেভ্যো নমস্তেঽস্তু রুদ্ররূপেভ্যঃ ॥

(যজুর্বেদ/তৈত্তরীয় আরন্যক - ৪৫) 


ॐ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহী। 

তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ॥

(যজুর্বেদ/তৈত্তরীয় আরন্যক - ৪৬)


ॐ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানামীশ্বরঃ সর্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণো ব্রহ্মা শিবো মেঽস্তু সদা শিবোম্ ॥ (যজুর্বেদ/তৈত্তরীয় আরন্যক - ৪৭)


সদ্যোজাত(পশ্চিম), বামদেব(উত্তর), অঘোর(দক্ষিণ), তৎপুরুষ(পূর্ব) এবং ঈশান(উর্ধ্ব)       – এই পাঁচটি বক্ত্র বা মুখপদ্ম পরমেশ্বর শিবের ব্রহ্মস্বরূপ।

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts