Friday, April 29, 2022

কৃৈষ্ণবদের দাবী আদি শংকর মায়াবাদ প্রচার করেছেন?

নমঃ শিবায়। সকলকে নমস্কার । বর্তমানে কৃৈষ্ণব আগ্রাসন বাংলায় সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। সকল কালী, শিব, দূর্গা, শনি ইত্যাদি মন্দির দখল করে সেখানে চলছে অশাস্ত্রীয় এবং বিকৃত হরে কৃষ্ণ নাম এবং আন্তর্জাতিক আমেরিকান একটি অবৈদিক সংঘটনের আস্ফালন। 

এদের গুরু বা আচার্য্যরা এদের যে শিক্ষা দিয়েছে এরা এদেরই পথ অনুসরণ করছে। এদের বিভেদকামী আচরণ আর মতবাদের জন্য বাংলাদেশী সনাতন সমাজ আজ ভাগে ভাগে বিভক্ত। আদিগুরু যেভাবে সনাতন ধর্মের আমাদের সকল মত বা পথের সমন্বয় করে দিয়ে আমাদের শক্তিশালী একটি জাতিতে পরিণত করেছিলেন,  সেই ব্যাক্তির মতকে এই অবৈদিক দল মায়াবাদ বলে গালি দেয়। এর প্রমাণে এরা পদ্মপুরাণ থেকে একটি শ্লোক মানুষকে দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে। আজকে সেই হাস্যকর যুক্তির খন্ডনে এই লেখা। আসুন প্রথমে শ্লোকটি দেখে নেই।     

পদ্মপুরাণে উত্তরখণ্ডে ৬২ অধ্যায়ে রুদ্র স্বয়ং দেবীকে বলেছেন--


"মায়াবাদমসচ্ছাস্ত্রং প্রচ্ছন্নং বৌদ্ধ মুচ্যতে।

ময়ৈব বিহিতং দেবী কলৌ ব্রাহ্মণ মূর্তিণা।।"


"হে দেবী , আমি কলি যুগে ব্রাহ্মণ মূর্তি ধারণ করে অসৎ শাস্ত্র মাধ্যমে মায়াবাদ রুপ প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ মত স্থাপন করি"।


ভগবদ্ বিমুখ ঘোর নাস্তিক আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষের চেতনা থেকে ভগবান নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাইলেন। তাই ভগবান তার প্রিয় জন মহাদেবের মাধ্যমে মায়াবাদ প্রচার করতে নির্দেশ দিলেন।


ভগবান শ্রী হরি মহাদেব কে বলেন-


"স্বাগমৈঃ কল্পিতৈস্ত্ব জনান্ মদ্বিমুখান্ কু্রু।

মাং চ গোপয় যেন স্যাৎ সৃষ্টিরেষোত্তরোত্তরা।।"


"তোমার কল্পিত মতবাদের দ্বারা মানুষদের আমার প্রতি বিমুখ করে তোল। আমাকে এমন ভাবে গোপন করো যাতে বহির্মুখ মানুষেরা তাদের সংসার প্রবৃত্তি কর্মে বিরক্তি না জন্মে। বরং তারা উত্তরোত্তর জড়-জাগতিক উন্নতিতে আগ্রহী হয়।" (পদ্মপুরাণ উত্তর খন্ড ৬২/৩১)


এইস্থলে দেখা যায়,বলা হচ্ছে---

(১) জ্ঞানিগণের পাতিত্যকারক যে সকল তামসশাস্ত্র,তারা শৈব,পাশুপত,বৈশেষিক,ন্যায়,সাংখ্য,চার্বাক,বৌদ্ধ ও জৈনশাস্ত্র।

(২)মায়াবাদটি অসৎশাস্ত্র ও প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধশাস্ত্র।

(৩)এটি ব্রাহ্মণরুপী রুদ্রকর্তৃক কলিতে কথিত।

(৪)এই বাদটিতে শ্রুতিবাক্যের অন্যথা করা হয়েছে,কর্মের ত্যাগ উপদিষ্ট হয়েছে,জীব ও ঈশ্বরের ঐক্য উক্ত হয়েছে,ব্রহ্মকে নির্গুণ বলা হয়েছে ইত্যাদি।

  ভগবান শঙ্করের মত মায়াবাদ না--কিন্তু ব্রহ্মবাদ বা ঔপনিষদবাদ

এস্থলে ব্রাহ্মণরুপী রুদ্র মায়াবাদপ্রচারকর্তা বলে নির্দেশ থাকায় বৈষ্ণবগণ আচার্য শঙ্কর ও তাঁর মতবাদ বলে বুঝে থাকেন।কিন্তু শঙ্করসম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিগণ বলেন--এতে আচার্য শঙ্করের ব্রহ্মবাদ লক্ষ্য করা হয় নাই।কারণ,শঙ্করের মতবাদটি মায়াবাদই না; ব্রহ্মবাদ।যেহেতু শঙ্কর নিজ বেদান্তসূত্রভাষ্যে ২/২/৯ সূত্রের ভাষ্যে নিজেই বলেছেন--

 জ্ঞানশক্তিও সাংখ্য অনুমান করলে প্রতিবাদকার্য হতে তিনি নিবৃত্ত হলেন,আর তখন এক চেতনই অনেকস্বরুপ জগৎ প্রপঞ্চের উপাদান হল এরুপে ব্রহ্মবাদই স্বীকার করা হল।

এই যে শঙ্করমতকে মায়াবাদ বলা হয়,তা বিপক্ষগণের কথা।যেমন হিন্দু শব্দটা যবনগণ সিন্ধুবাসিগণকে নিন্দার ছলে বলত,কিন্তু কালে তারাই রাজা হওয়ায় যেমন আর্যগণ বাস্তবিকই সিন্ধুনদতীরবাসী বলে নিজেদেরকে হিন্দু বলতে লাগল।এস্থলেও যেন তদ্রুপ কতকটা হয়ে পড়েছে।বৈষ্ণবগণ প্রবল হয়ে শঙ্কর সম্প্রদায়কে যা বলে নিন্দা করতেন,শঙ্করসম্প্রদায়ের অজ্ঞব্যক্তিগণ তা নিন্দার সূচক না বুঝে নিজেকেই তাই বলে নির্দেশ করতে লাগল।পরে প্রসিদ্ধি অনুরোধে বিজ্ঞেও তাই বলতে লাগলেন।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শঙ্করমতকে মায়াবাদ বলাই যায় না।কারণ,যে মতে যাকে সর্বমূলতত্ত্ব বলে নির্দেশ করা হয়,তারই নামে সেই মতবাদের নামকরণ করা হয়।যেমন--শিব শক্তি বিষ্ণু প্রভৃতি যে যে মতে মূলতত্ত্ব বলা হয়,সেই সেই মতের নাম শৈব শাক্ত বৈষ্ণব প্রভৃতি।শঙ্করমতে জগৎ মিথ্যা(আবার এ মিথ্যা মানে অলীক বা অসৎ মনে করবেন না।) অর্থ্যাৎ মায়া,সত্য একমাত্র ব্রহ্ম।তাই সকলের মূলতত্ত্ব।এই ব্রহ্মে এই জগৎ কল্পিত বলে জগৎ মিথ্যা বলা হয়।সুতরাং মায়া মূলতত্ত্ব না, ব্রহ্মই মূলতত্ত্ব।এজন্য শঙ্করমতকে ব্রহ্মবাদই বলা সঙ্গত।অন্যত্র বহু স্থলে মীমাংসক ও ন্যায়াচার্যগণ এবং স্বমতের আচার্যগণ একে ঔপনিষদবাদ নামে আখ্যাত করেছে।এজন্য কুসুমাঞ্জলি,শাস্ত্রদীপিকা এবং মধুসূদনী প্রভৃতি গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।

        এবার আসুন দেখে নেই কেন শঙ্করমতকে মায়াবাদ বলে এরা 

কৃৈষ্ণবগণ একে মায়াবাদ বলবার কারণ এই যে,এর সঙ্গে বৌদ্ধমতের কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য আছে।সে সাদৃশ্য এই যে,বৌদ্ধগণ জগৎকে অসতে অর্থ্যাৎ শূন্যে,মায়া বা অবিদ্যাকল্পিত বলিয়া থাকেন,সুতরাং বৌদ্ধমতেও জগৎ নাই।শঙ্করমতে জগৎ সতে অর্থাৎ ব্রহ্মে মায়াকল্পিত বলিয়া পরমার্থতঃই নাই।এখন জগতের না থাকা অংশে বা কল্পিতত্ব অংশে ঐক্যই একটু সাদৃশ্য বলতে হবে।বৈষ্ণবাদি বিপক্ষগণ এই সাদৃশ্য অংশকে লক্ষ্য করিয়া নিজমতে নিষ্ঠার বৃদ্ধি উদ্দেশ্যে পরমতের নিন্দা করে একে মায়াবাদ বলেছেন।বস্তুতঃ বৌদ্ধমতে জগৎকল্পনার অধিষ্ঠান অর্থ্যাৎ মূলতত্ত্ব অসৎ বা শূন্য এবং শঙ্করমতে সেই অধিষ্ঠান বা মূলতত্ত্ব সৎ ব্রহ্ম,আর তাতে এই দুই মতের যে অত্যন্ত বিরোধ তা কেউই অস্বীকার করতে পারেন না।অতএব মায়াবাদ শঙ্করের বাদ নহে।শঙ্কর যদি জগতের মূলতত্ত্ব বা অধিষ্ঠানকে মায়া বা শূন্য বলতেন তা হলে তাঁর মতবাদ মায়াবাদ হত।যেহেতু মূলত্ত্বানুসারেই মতবাদের নামকরণ হয়--এটাই রীতি।মায়া উভয় মতেই নিমিত্তকারণ বটে,কিন্তু তাই বলে তা যে অধিষ্ঠানরুপ উপাদান কারণ,তা শঙ্কর বলেন নাই।বৌদ্ধমতে উপাদানরূপ এই অধিষ্ঠান স্বীকার করা হয় না,তাঁদের মতে নিরধিষ্ঠান ভ্রম স্বীকার করা হয়।অতএব পদ্মপুরাণের এই নিন্দা প্রকৃতপক্ষে শঙ্করমতের নিন্দা না,পরন্তু অন্য কোন মতবাদের নিন্দা।পরবর্তী বিপক্ষগণ শঙ্করমতে এরুপ মায়াবাদত্ব আরোপ করিয়া নিন্দা করে থাকেন মাত্র।


তাদের যুক্তি অনুসারে  তারাই বিপদে পড়ে চৈতন্যস্বরুপ আত্মার জ্ঞানরুপে পরিণাম স্বীকার করায়,রামানুজ জৈনমতের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছেন বলে মনে করার সঙ্গত কারণ আছে।সর্বদর্শনসংগ্রহে মাধবাচার্য মধ্বের মুখে ভেদাভেদবাদী রামানুজকে জৈন পদাঙ্কনুসারী বলতে কুন্ঠিত হন নাই।রামানুজ যে পাঞ্চরাত্রমতাবলম্বী,সেই পাঞ্চরাত্র মত সম্বন্ধে বরাহ পুরাণে ৬৬ অধ্যায়ে আছে--

অলভা বেদমন্ত্রাণাং পাঞ্চরাত্রোদিতেন হি....শুদ্রাদীনান্ত ন শ্রোতপদবী মুপাযাস্যতি।।১২

তাহার পর অপরাপর পুরাণ মধ্যে আছে--

পাঞ্চরাত্রং ভাগবতং তন্ত্রং-----এবং বিধানি চান্যানি মোহনার্থানি তানি তু।।।

কুর্ম ১১ অধ্যায়,সুতসংহিতা ৪র্থ মুক্তিখণ্ড

এইরুপ পুরাণজাতীয় অপরাপর বহু গ্রন্থেই ভাগবত ও রামানুজমতের বহু নিন্দা আছে।যাহা হউক ইহা হইতে জানা যায়--

(১) বেদমন্ত্র লভ্য না হইলে পাঞ্চরাত্র আচারে ভগবান লাভ।

(২) পাঞ্চরাত্রমত ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের জন্য,শূদ্রের জন্য নহে।

(৩) পাঞ্চরাত্র ভাগবত ও বৈখানসতন্ত্র বেদভ্রষ্টের জন্য বিষ্ণু উপদেশ করিয়াছেন।

(৪) পাঞ্চরাত্রাদির বেদমূলকত্ব নাই ।

(৫)পাঞ্চরাত্রাদি শাস্ত্র মোহনার্থ রচিত।

(৬)ভাগবত ও সাত্ত্বত শাস্ত্র অভিন্ন।

(৭) কুণ্ড ও গোলকগণের জন্য অভিপ্রেত।কুণ্ড অর্থ--পতিসত্ত্বে জারজ পুত্র এবং গোলক অর্থ--পতি মরণান্তে জারজ পুত্র।।


এদিকে অদ্বৈতমতে জগৎকে বলা হয় মিথ্যা অর্থ্যাৎ অনির্বচনীয়।কেবলমাত্র জগতের ব্যবহারিক সত্যতাই এই মতে স্বীকৃত হইয়া থাকে।দ্বৈতবাদীও এই ব্যবহারিক সত্তার বাইরে যেতে পারেন না।আর,ব্যবহারিক সত্তাতো প্রাতিভাসিক সত্তারই সামগ্রিক উন্নতর সংস্করণমাত্র।

(The Collective elevation of an individual illusion)।

এই অবস্থায় বিজ্ঞানে বিজ্ঞেয় বিষয়ের প্রাতিভাসিক সত্তা দ্বৈতবাদীকেও নত মস্তকে স্বীকার করতে হবে।এই প্রাতিভাসিক সত্তার ক্ষেত্রে তা হলে দ্বৈতবাদী,অদ্বৈতবাদী,বিজ্ঞানবাদী বৌদ্ধ প্রভৃতি সকলেই  একমত।বিজ্ঞেয় বিষয়ের প্রাতিভাসিক সত্তার অতিরিক্ত পারমার্থিক সত্তার প্রশ্নে দ্বৈতবাদের সাথে অদ্বৈত ও বৌদ্ধমতের মতদ্বৈধ আছে সন্দেহ নাই।কিন্তু অন্ততঃ একটি ক্ষেত্রে (প্রাতিভাসিক সত্তার ব্যাখায়) তো সকল মতেরই অনুমোদন আছে দেখা গেল।অতএব বিজ্ঞানের আধারে জগৎ কল্পিত,এই সিদ্ধান্তের জন্য অদ্বৈতবেদান্তবাদ ও বিজ্ঞানবাদ যদি অভিন্ন হয়,তবে বিজ্ঞান জ্ঞেয় বিষয়ের প্রাতিভাসিক সত্তা আছে,এইরুপ সিদ্ধান্ত স্বীকার করার জন্য দ্বৈতবাদীকেও বিজ্ঞানবাদী বলতে আপত্তি কী?দ্বৈতবাদীর অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রকাশত্মযতি তদীয় 'বিবরণে' যে প্রত্যুত্তর দিয়েছেন,এটাই তাঁর(প্রকাশত্মযতির) নিগূঢ় রহস্য বলে মনে হয়।প্রকাশত্মযতির বক্তব্যের সাথে আমরা আরও একটু যোগ করে বলতে পারি-বহির্জগতের বস্তুসত্তা অস্বীকার করার জন্য যদি বিজ্ঞানবাদ ও অদ্বৈতবাদ এক হয়ে যায়,তবে পরিদৃশ্যমান বিশ্বের বাস্তব সত্তা স্বীকার করার জন্য চার্বাক দর্শন ও দ্বৈতদর্শন এক বা অভিন্ন হয়ে যায় না কেন?দ্বৈতবাদীরা কি নিজেদের চার্বাকপন্থী বলতে রাজি হবেন?


পুরাণে শঙ্করমতের নিন্দার উদ্দেশ্য

আর শঙ্করকে,চার্বাকমতপ্রবর্তক বৃহস্পতি অথবা বৌদ্ধমতপ্রবর্তক বুদ্ধের ন্যায় দৈত্যবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিগণকে মোহিত করবার জন্য রুদ্রাবতার বলতে পারা যায় না।কারণ,তাঁর প্রচারিত মত ব্যাসদেবেরই পুরাণমধ্যে বিস্তৃতভাবে বর্ণিত।পুরাণাদিমধ্যে বৌদ্ধ বা চার্বাকমত থাকলেও তাতে অশ্রদ্ধা উৎপাদনের জন্য সেই পুরাণমধ্যেই বলা হয়েছে।কিন্তু শঙ্করমতের সম্বন্ধে সে চেষ্টা করা হয় নাই।যে পুরাণে শঙ্করমত উক্ত তাতে তার বিন্দুমাত্র নিন্দা নাই।যে পুরাণে অন্যমত বর্ণিত,তাতেই নিন্দা আছে।


ঋণঃ স্বামী চিদঘনানন্দ পুরী ও  আশুতোষ শাস্ত্রী,কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ,
প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ স্কলার,এম-এ পিএইচডি,বিদ্যাবাচস্পতি

Sunday, April 24, 2022

শ্রীকৃষ্ণের শিব উপাসনার তাৎপর্য ও শিক্ষা

“যদত্র পরমং গুহ্যং স বৈ দেব মহেশ্বরঃ”;



সমস্ত শাস্ত্রের মধ্যে অতি গোপনীয় তত্ত্ব হল শিবতত্ত্ব। অত্যন্ত গোপনীয় হওয়ায় শিবকে সবাই জানতে পারে না। যে অধিকারী ভক্তকে তিনি দয়া করেন, তিনিই তাঁকে বিন্দু পরিমাণ জানতে পারে।তিনি চিন্তার অতীত, বুদ্ধির অতীত, শাস্ত্রের অতীত। সাধনায় তুষ্ট হয়ে ভক্তের হৃদয়ে গভীরে তিনি দর্শন দেন; আবার কখনো মূর্তিমান হয়ে সাকার রূপ ধারণ করেন। কেউ তাঁকে সম্যকরূপে জানতে পারে না। পক্ষান্তরে তিনি ভূত,বর্তমান ভবিষ্যতের দ্রষ্টা, নিয়ন্তা এবং সাক্ষীপুরুষ।


বেদাঃ সাঙ্গোপনিষদঃ পুরাণাধ্যাত্মনিশ্চয়াঃ।

যদত্র পরমং গুহ্যং স বৈ দেব মহেশ্বরঃ।।

(মহাভারত: দ্রোণপর্ব, ১৭০.৮৯)


বেদ, ব্যাকারণাদি বেদাঙ্গশাস্ত্র, উপনিষদ পুরাণ ও সমস্ত অধ্যাত্মশাস্ত্রের মধ্যে যা অত্যন্ত গোপণীয় তাই মহাদেব মহেশ্বর।


পরমেশ্বর শিব সমস্ত কিছুর মধ্যে অতি গূঢ় ভাবে আছেন এবং সমস্ত শাস্ত্রে অতি গোপনীয় তত্ত্ব, তাই সকলে পরমেশ্বর শিবকে জানতে পারেন না।


দেবাসুরমুনীনাং তু যচ্চ গুহ্যং সনাতনম্।

গুহায়াং নিহিতং ব্রহ্ম দুর্ব্বিজ্ঞেয়ং মুনেরপি।।

(মহাভারত:অনুশাসনপর্ব, ১৫.২৯)


“যিনি দেবতা, অসুর ও মুনিগণের নিকটেও গুপ্ত রয়েছেন, যে সনাতন ব্রহ্ম সাধুগণের হৃদয়গুহায় নিহিত আছেন এবং যিনি মুনিগণেরও দুর্জ্ঞেয়।”


দুর্জ্ঞেয় শিবকে অবতার পুরুষেরা অবতার রূপে এসে তাঁর উপাসনা পদ্ধতি আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। নিরাকার বাতাস যেমন চোখে দেখা যায় না। কিন্তু একটি বেলুনে সেই বাতাসকে ভরে নিলে সেই বাতাসের একটি সাময়িক রূপ পাওয়া যায়। আবার বেলুন ছিদ্র করে দিলে কোন রূপ নেই। তেমনিভাবে চিন্তার অতীত পরমেশ্বর ভগবান যখন অবতাররূপে আসেন, তিনি জীবের মাঝে জীবের মত করে থেকে তাদের লোকশিক্ষা দিয়ে যান। জগতের মানুষের কি কি করতে হবে তা আমরা অবতারদের কর্ম থেকেই শিক্ষা লাভ করতে পারি। যিনি শিবরূপী দুর্জ্ঞেয় পরমেশ্বর তিনিই যখন কৃষ্ণ নামে অবতাররূপে এসেছেন ; তিনি তখন লোকশিক্ষার জন্যে শিবরূপে নিজেরই উপাসনা করে জগতকে শিক্ষা দিয়েছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ , শিবভক্ত উপমন্যুর কাছে পাশুপত ব্রতের অনুষ্ঠান করেছিলেন। বিষয়টি শাস্ত্রের বিভিন্ন স্থানেই বর্ণিত আছে।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিব উপাসনার এ বিষয়টি মহাভারতের অনুশাসন পর্বের সাথে সাথে কূর্ম পুরাণের পূর্বভাগে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভস্ম মেখে, মুণ্ডিত মস্তকে বল্কল পড়ে রুদ্ররূপ শিবের নাম জপ করতে করতে তাঁর দর্শন পান। ভগবান শিব তাঁর শক্তি দেবী ভবানী সহ শ্রীকৃষ্ণের সামনে প্রকট হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হাতজোড় করে কৃতাঞ্জলি মুদ্রায় গিরিশ ও গৌরীকে প্রণাম করে তাঁর স্তোত্র করেন।



নমোঽস্তু তে শাশ্বত সর্বযোনে

ব্রহ্মাধিপং ত্বামৃষয়ো বদন্তি ।

তপশ্চ সত্ত্বঞ্চ রজস্তমশ্চ

ত্বামেব সর্বং প্রবদন্তি সন্তঃ ।।

ত্বং ব্রহ্মা হরিরথ বিশ্বযোনিরগ্নিঃ

সংহর্ত্তা দিনকরমণ্ডলাধিবাসঃ ।

প্রাণস্ত্বং হুতবহবাসবাদিভেদ-

স্ত্বামেকং শরণমুপৈমি দেবমীশম্‌ ।।

সাংখ্যাস্ত্বাং ত্রিগুণমথাহুরেকরূপং

যোগাস্ত্বাং সততমুপাসতে হ্রদিস্থম্‌ ।

বেদাস্ত্বামভিদধতীহ রুদ্রমীড্যং

ত্বামেকং শরণমুপৈমি দেবমীশম্‌ ।।

ত্বৎপাদে কুসুমমথাপি পত্রমেকং

দত্বাসৌ ভবতি বিমুক্তবিশ্ববন্ধঃ ।

সর্বাঘং প্রণুদতি সিদ্ধ যোগিজুষ্টং

স্মৃত্বা তে পদযুগলং ভবৎপ্রসাদাৎ ।।

যস্যাশেষবিভাগহীনমমলং হ্রদ্যন্তরাবস্থিতং।

ত্তত্ত্বং জ্যোতিরনন্তমেকমচলং সত্যং পরংসর্বগম্‌ ।

স্থানং প্রাহুরনাদিমধ্যনিধনং যস্মাদিদং জায়তে।

নিত্যংত্বাহমুপৈমিসত্যবিভবং বিশ্বেশ্বরংতং শিবম্‌ ।।

ওঁ নমো নীলকণ্ঠায় ত্রিনেত্রায় চ রংহসে ।

মহাদেবায় তে নিত্যমীশানায় নমো নমঃ ।।

নমঃ পিনাকিনে তুভ্যং নমো মুণ্ডায় দণ্ডিনে ।

নমস্তে বহুহস্তায় দিগ্বস্ত্রায় কপর্দ্দিনে ।।

নমো ভৈরবনাদায় কালরূপায় দংষ্ট্রিনে ।

নাগযজ্ঞোপবীতায় নমস্তে বহ্নিরেতসে ।।

নমোঽস্তু তে গিরীশায় স্বাহাকারায় তে নমঃ ।

নমো মুক্তাট্টহাসায় ভীমায় চ নমো নমঃ ।।

নমস্তে কামনাশায় নমঃ কালপ্রথাথিনে ।

নমো ভৈরববেশায় হরায় চ নিষঙ্গিণে ।।

নমোঽস্তু তে ত্র্যম্বকায় নমস্তে কৃত্তিবাসসে ।

নমোঽম্বিকাধিপতয়ে পশূনাং পতয়ে নমঃ ।।

নমস্তে ব্যোমরূপায় ব্যোমাধিপতয়ে নমঃ ।

নরনারীশরীরায় সাংখ্যযোগপ্রবর্তিনে ।।

নমো ভৈরবনাথায় দেবানুগতলিঙ্গিনে ।

কুমারগুরুবে তুভ্যং দেবদেবায় তে নমঃ ।।

নমো যজ্ঞধিপতয়ে নমস্তে ব্রহ্মচারিণে ।

মৃগব্যাধায় মহতে ব্রহ্মাধিপতয়ে নমঃ ।।

নমো হংসায় বিশ্বায় মোহোনায় নমো নমঃ ।

যোগিনে যোগগম্যায় যোগমায়ায় তে নমঃ ।।

নমস্তে প্রাণপালায় ঘণ্টানাদপ্রিয়ায় চ ।

কপালিনে নমস্তুভ্যং জ্যোতিষাং পতয়ে নমঃ ।।

নমো নমো নমস্তুভ্যং ভূয় এব নমো নমঃ ।

মহ্যং সর্বাত্মনা কামান্‌ প্রপচ্ছ পরমেশ্বর ।।

(কূর্ম পুরাণ: পূর্বভাগ, ২৫.৬২-৭৮ )


“হে শ্বাশ্বত সর্বযানে ! আপনাকে প্রণাম করি। ঋষিগন আপনার সম্বন্ধে বলেন যে আপনিই ব্রহ্মারও অধিপতি এবং সাধুরা আপনাকেই সত্ত্ব, রজঃ তমঃ ও তপঃ বলে থাকেন।আপনিই ব্রহ্মা, আপনিই বিশ্বযোনি হরি, আপনিই অগ্নি, আপনিই সংহারকর্ত্তা এবং আপনিই সূর্যমণ্ডলের মধ্যে অবস্থান করেন । হে প্রভো! আপনিই প্রাণ, আপনিই অগ্নি ও ইন্দ্রাদিভেদে লোকপাল এবং আপনিই ঈশ। আমি ( শ্রীকৃষ্ণ ) একমাত্র আপনারই শরণগ্রহণ করছি । সাংখ্যেরা আপনাকে একরূপ এবং ত্রিগুণ বলে থাকেন । যোগিগন সতত আপনাকে হৃদয়ে ধ্যান করেন এবং বেদসমূহ আপনাকে পূজনীয় ‘রুদ্র’ বলে উল্লেখ করেছে। আমি একমাত্র আপনারই শরণাপন্ন হলাম। যে আপনার চরণে একটি পুস্প অথবা পত্র দেয়, সে-ই ভববন্ধন হতে বিমুক্ত হয় ; সিদ্ধ ও যোগীগণের সেবিত আপনার চরণযুগল স্মরণ করলে আপনার প্রসাদেই সমস্ত পাপ নিবারিত হয় । যিনি একমাত্র জ্যোতিঃ ; অশেষ বিভাগরহিত ; নির্মল হৃদয়ের অন্তরে অবস্থিত তত্ত্বপ্রকাশক , অচল, সত্য , সর্বোত্তোম ও সর্বগামী ; যিনি অনাদি – মধ্য – নিধন স্থানরূপ এবং সমস্ত জগত যাঁর থেকেই উৎপন্ন হয়েছে ; আমি সেই সত্যবিভব বিশ্বেশ্বর শিবকে প্রতিনিয়ত আশ্রয় করি । হে দেব! আপনি নীলকণ্ঠ , ত্রিনেত্র , রংহঃ , ঈশান ও মহাদেব – আপনাকে বারবার প্রনাম করছি । আপনি পিনাকী , মুণ্ডী, দণ্ডী, বহুভুজ , দিগ্বসন ও কর্প্পদী – আপনাকে নমস্কার । আপনি ভৈরবনাদ , কালরূপ , দংষ্ট্রী , নাগযজ্ঞোপবীতধারী ও বহ্নিরেতাঃ- আপনাকে নমস্কার । আপনি গিরিশ , স্বাহাকার , মুক্তাট্টহাস এবং ভীম – আপনাকে প্রণাম করি । আপনি কামনাশক , কালপ্রমাথী , ভৈরববেশ ও নিষঙ্গী হর ; আপনাকে নমস্কার । আপনি ত্রিলোচন , কৃত্তিবাসা , অম্বিকাপতি ও পশুপতি – আপনাকে নমস্কার করি । আপনি ব্যোমরূপ , ব্যোমাধিপতি , নরনারীদেহ এবং সাংখ্যযোগের প্রবর্তক – আপনাকে বারবার প্রণাম করি । আপনি ভৈরবনাথ , দেবানুগতলিঙ্গী, কুমারগুরু ও দেবদেব – আপনাকে নমস্কার করি । আপনি যজ্ঞাধিপতি , ব্রহ্মচারী , মহান মৃগব্যাধ ও ব্রহ্মাধিপতি – আপনাকে প্রণাম । আপনি হংস , বিশ্বমোহন , যোগী, যোগগম্য ও যোগময় – আপনাকে প্রনাম করি । আপনি প্রাণপাল , ঘণ্টানাদপ্রিয় , কপালী ও জ্যোতিস্পতি – আপনাকে প্রণাম । হে পরমেশ্বর ! আমি আপনাকে প্রনাম করছি ; আপনি সর্বপ্রযত্নে আমার মনের অভিষ্ট সিদ্ধ করুন।”


এইভাবে স্তব করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, পরমেশ্বর ভগবান শিব ও পরমেশ্বরী জগন্মাতা গৌরীর চরণে দণ্ডবৎ পতিত হয়ে তাঁদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করলেন।


এবং হি ভক্ত্যা দেবেশমাতিষ্টুয় স মাধবঃ ।

পপাত পাদয়োর্বিপ্রা দেবদেব্যোঃ স দণ্ডবৎ ।।

(কূর্ম পুরাণ:পূর্বভাগ,২৫.৭৯ )


“হে বিপ্রগণ ! শোনো। এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান দেবাদিদেবের স্তব করে পরমেশ্বর ভগবান শিব ও দেবী অম্বিকার চরণে দণ্ডবৎ হলেন ।


শ্রীকৃষ্ণকে উমা সহ মহেশ্বর সশরীরে দর্শন দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে তিনিই যে সকল জীবের কামনাপূর্ণকারী শিবের অভেদমূর্তি পুরুষোত্তম নারায়ণ। এ নারায়ণরূপে তিনিই সকল

জীবের প্রার্থনা সিদ্ধি করেন। যাঁর কৃপা ব্যতিরেকে সমস্ত কিছুই বিনষ্ট হয়ে যায়।


ত্বং হি সা পরমা মুর্মিমর্ম নারায়ণাহ্বা।

ন বিনা ত্বাং জগৎ সর্বং বিদ্যতে পুরুষোত্তম্।।

বেত্থ নারায়ণানন্তমাত্মানং পরমেশ্বরম্।

মহাদেবং মহাযোগং স্বেন যোগেন কেশব॥

(কূর্ম পুরাণ:পূর্বভাগ,২৫.৮২-৮৩ )


মহাভারতের অনুশাসন পর্বে শ্রীকৃষ্ণের শিব উপাসনার অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ তাৎপর্যমণ্ডিত এ বিষয়টি আরও সুবিস্তৃতভাবে রয়েছে। মহর্ষি উপমন্যুর নির্দেশনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে মহাদেব এবং মহাদেবী উমা-মহেশ্বর আবির্ভূত হয়। শত্রুহন্তা শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন দিয়ে ভগবান শিব তাঁকে যেকোন দুর্লভ আটটি বর প্রার্থনা করতে বলেন। ভগবান শিব শ্রীকৃষ্ণকে নিজের পরম ভক্তরূপে উল্লেখ করে, তাঁর মঙ্গল বিধানের জন্য বর প্রার্থনা করতে বলেন। ভগবান শিব সাধুশ্রেষ্ঠ, যদুবংশশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণকে অতি দুর্লভ যেকোন দুর্লভ বর কামনা করতে বললেন। অনন্ত তেজরাশির মধ্যে ভগবান শিবের দর্শন এবং বরদানের প্রতিশ্রুতিবাক্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তিনি প্রীত হৃদয়ে উমা-মহেশ্বরকে ভূতলে মস্তক নিপতিত করে প্রণাম করে বর প্রার্থনা করলেন। মহাদেব শ্রীকৃষ্ণের আটটি বর প্রার্থনা শুনে “তাই হোক” বলে পূর্ণ করলেন। তখন শিবপত্নী উমাদেবী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর মঙ্গল সম্পাদনের জন্য স্বেচ্ছায় মহাদেবের মত তেজসম্পন্ন গুণসম্পন্ন ‘শাম্ব’ নামে একটি পুত্রের আশীর্বাদ করলেন।


ধর্মে দৃঢ়ত্বং যুধি শক্রঘাতং

যশস্তথাগ্র‍্যং পরমং বলঞ্চ।

যােগপ্রিযন্বং তব সন্নিকর্ষং

বৃণে সুতানাঞ্চ শতং শতানি॥

এবমস্ত্বিতি তদ্বাক্যং ময়ােক্তঃ প্রাহ শঙ্করঃ।

ততো মাং জগতো মাতা ধারিণী সর্বপাবনী।।

উবাচোমা প্রণিহিতা সর্বাণী তপসাং নিধিঃ।

দত্তো ভগবতা পুত্রঃ শাম্বাে নাম তবানঘ॥

(মহাভারত: অনুশাসন পর্ব,১৪.২-৪)


“ধৰ্মানুষ্ঠানে দৃঢ়তা, যুদ্ধে শত্রুসংহার, উত্তম যশ, উৎকৃষ্ট বল, যােগানুষ্ঠানে প্রীতি, আপনার সান্নিধ্য এবং দশসহস্র পুত্র আমি প্রার্থনা করি।আমার বর প্রার্থনায় মহাদেব বলিলেন—”তাই হোক”। এরপরে জগন্মাতা, জগদ্ধাত্রী, সর্বপাবনী, তপস্যানিধি ও মহাদেবের পত্নী উমাদেবী আমার মঙ্গলসম্পাদনে স্বেচ্ছায় আমাকে বললেন—হে নিস্পাপ কৃষ্ণ। ভগবান মহাদেব ‘শাম্ব’ নামে একটি পুত্র তােমাকে দান করিবেন।”


আমরা সনাতন শাস্ত্রের গুহ্য আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে না বুঝে বর্তমানে নিজস্ব সংকীর্ণতা, নিজস্ব চিন্তা এবং নিজস্ব মানসিকতা নিয়ে শাস্ত্রকে পাঠ করতে গিয়ে বারেবারেই নিজেদের অজ্ঞাতসারে নিজেরাই প্রতারিত হচ্ছি। আমরা যদি কূর্ম পুরাণের উক্ত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিব উপাসনার এ ঘটনাটি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করি তবে দেখতে পাবো- অচিন্ত্য পরমেশ্বরই অবতাররূপে জগতে এসে আবার তিনিই শিবের উপাসনা করছেন। উপাসনায় তুষ্ট হয়ে পরমেশ্বর শিবও তাঁদের অভেদত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। অর্থাৎ যিনিই শিব, তিনিই কৃষ্ণ। পরবর্তীতে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর শিবের কাছে তাঁর তুল্য পুত্র কামনা করেন।এ সকল বিষয়ই লোকশিক্ষার্থে এক অদ্বিতীয় পরমেশ্বরের লীলা। তিনি এক ও অদ্বিতীয় হয়েও অনন্ত হয়ে, অনন্ত মূর্তিতে প্রকাশিত হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে লীলা করেন। এ লীলা যোগ্য অধিকারী বিহীন কেউ উপলব্ধি করতে পারে না, তখন তারা প্রতারিত হয়। পরমেশ্বরকে বহু মনে করে। অচিন্ত্য পরমেশ্বরের কোন সুনির্দিষ্ট মূর্তি নেই। সর্বত্রই তিনি প্রকাশিত। তাঁর কোন পরিবার পরিজন নেই; কারো প্রতি রাজ বিদ্বেষ নেই; কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। জগতের সকল জীবই যেমন তাঁর সন্তান, তেমনি তাঁর কোন সন্তানসন্ততি নেই।কিন্তু আমরা উপাসনার স্বার্থে আমাদের পরিবার পরিজনের আদলে সৃষ্টিকর্তারও পরিবার পরিজন কল্পনা করে অসীম ঈশ্বরকে সসীম সীমায় এনে সাধন জগতে অগ্রসর হই।


বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন আপাত পরস্পরবিরুদ্ধ কাহিনী এবং সিদ্ধান্ত দেখে আমরা বর্তমানে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাই। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। শাস্ত্রের সঠিক পাঠ, চর্চা এবং ধারণা না থাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটছে। শিবপুরাণে শিবের মাহাত্ম্য, দেবীপুরাণে দেবীর মাহাত্ম্য, বিষ্ণুপুরাণে বিষ্ণুর মাহাত্ম্য, সূর্যপুরাণে সূর্যের মাহাত্ম্য এবং গণেশপুরাণে গণেশের মাহাত্ম্য সহ বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন দেবতার মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। যে পুরাণ যে দেবতার নামে, সে পুরাণে সেই দেবতারই মাহাত্ম্যমণ্ডিত করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে মনে করে সনাতন ধর্ম বহুঈশ্বরবাদী। বিষয়টি হাস্যকর এবং অশাস্ত্রীয় হলেও অজ্ঞানতার কারণে সমাজে মতবাদটি প্রচলিত। যে পুরাণ নিয়ে এ বিভ্রান্তি, একটু ভাল করে সেই পুরাণগুলোর মধ্যে যদি আমরা দৃষ্টি দেই, তবে সেই পুরাণগুলোর মধ্যে আমরা একটি শাশ্বত সাধারণ বিষয় অনেকেই লক্ষ্য করে দেখি না। খুব ভালো করে যদি আমরা পুরাণগুলোকে পাঠ করি, তবে লক্ষ্য করে দেখতে পাবো প্রত্যেক পুরাণের মধ্যে যে দেবাতার নামে এবং যাঁর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে সেই দেবতাকেই পরমেশ্বর পরমব্রহ্ম রূপে স্তোত্র করা হয়েছে। অর্থাৎ আমি যেই রূপে উপাসনা করি না কেন, পরমেশ্বরের আদতে এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর দ্বিতীয় নেই। তাই মুনিদের, ঋষিদের, পবিত্র হৃদয় সাধু-সন্তদের উপাসিত যেকোনো একটি রূপকে ইষ্ট নির্দিষ্ট করে যদি আমরা সাধন পথে অগ্রসর হই তবে আমরা মুক্তির পথে যেতে পারবো। এ সাধারণ বিষয়টি আমরা বুঝতে ভুল করি বারবার। বেদের মধ্যে, অষ্টাদশ পুরাণ এবং অষ্টাদশ উপপুরাণ মধ্যে, স্মৃতিশাস্ত্র মধ্যে -একথাই বোঝানো হয়েছে বিভিন্ন কাহিনী এবং দৃষ্টান্তের মাধ্যমে।

Thursday, April 14, 2022

অদ্বৈতবাদ খন্ডনের নামে বাতুলতার জবাব।

 অনলাইন দুনিয়ায় নতুন কিছু মাথামোটার আবির্ভাব হয়েছে যারা সনাতন ধর্মের হাজার হাজার বছরের অদ্বৈত পরম্পরার উপরে প্রশ্ন রেখে নিজেদের ব্যাবসা ফুলিয়ে তুলছে। আমাদের মাঝে বিভেদের যে দেয়াল তাঁর সূত্রপাত হয় এই এদের হাত ধরেই। যবন, ম্লেচ্ছরা ভারতবর্ষে আসার পরেও এদের এই বিভেদের দেয়াল দীর্ঘায়িত করা থামে নাই। যেমন বলা যায় কয়দিন আগেও ইস্কনের এক তথাকথিত সদস্য উনাদেরই আচার্য্যের বানী মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। 


নিম্ন সেই ভিডিওটি 


শুধু তাই নয় এই নির্লজ্জ অহিন্দু ইস্কনের ব্যাক্তিকে অনলাইনে ইস্কনেরই কিছু সদস্য নির্লজ্জ ভাবে সমর্থন দিচ্ছে এবং এর যাবতীয় দোষ ঢাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। 

এদের মতনই আরেক বিভেদবাদী হল দয়ানন্দ সরস্বতীর আর্য সমাজ। এদের অনেক সদস্যই অদ্বৈতবাদের বেসিক না জেনেই একে খন্ডাতে এসে হোঁচট খেয়েছে। এদের একজনের বাতুলতার প্রশ্নে আজকের এই লেখা। 

মুল পোষ্টের লিঙ্ক নিম্নে ( https://www.xn--45baaj2aiao5xbdb.com/2020/12/blog-post_18.html?m=1) 


এবার আমাদের উত্তরের পালা। অনেক বড় এবং শাস্ত্রীয় অনেক ট্যাকনিকাল ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে তাই ধৈর্য্য ধরে জিজ্ঞাসু চোখকে পড়ার অনুরোধ রইলো।  

চলুন শুরু করা যাক।  


দাবী

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশে বলেছেন 


জীব ও ব্রহ্মের একতা এবং জগৎ মিথ্যা ইত্যাদিরূপ যে শঙ্করাচার্য্যের মত ছিল তাহা উৎকৃষ্ট মত নহে,তবে যদি শঙ্করাচার্য্য জৈনমত কন্ডনের নিমিত্ত উক্ত মত স্বীকার করিয়া থাকেন তবে অপেক্ষাকৃত ভাল। নবীব বেদান্তীদিগের মতে জগৎ স্বপ্নবৎ,রজ্জুতে সর্প,শুক্তিকায় রজত,মৃগতৃষ্ণিকায় জল,গন্ধর্ব্ব নগর এবং ইন্দ্রজালের সদৃশ এই সংসার মিথ্যা এবং এক ব্রহ্মই সত্য। বাস্তবে নবীন বেদদন্তীগন রজ্জুকে বস্তু এবং সর্পকে অবস্তু মনে করিয়া এই ভ্রমজালে পতিত হইয়াছে। প্রশ্ন আসে সর্প কি বস্তু নহে..? যদি বল রজ্জুতে উহা নাই, তবে দেশান্তরে আছে উহার সংস্কার তোমার হৃদয়ে আছে" অতএব সর্প ও আর অবস্তু রহিলনা । এইরূপ স্থানুতে পুরুষ এবং সুক্তিকায় রজত ইত্যাদির; ব্যবস্থা বুঝিয়া লইতে হইবে। স্বপ্নাবস্থায়ও যাহার ভান (জ্ঞান) হয়, তাহা দেশান্তরে আছে এবং তাহার সংস্কার মনেও (আত্মাতেও) আছে। সুতরাং স্বপ্ন ও বস্তুতে অবস্তুর আরোপণের তুল্য নহে। অত্বৈত্যবাদী দের মতে রজ্জুতে সর্প তিন কালেই নাই অথচ অন্ধকার এবং অল্প প্রকাশের সংযোগে অকস্মাৎ রজ্জুর দর্শন হইলে সর্পভ্রম উপস্থিত হইয়া ভীতিবশতঃ কম্প উপস্থিত হয়। পরে যখন দীপাদি দ্বারা দেখা যায় তখন উক্ত ভয় এবং ভ্রম নিবৃত্ত হইয়া যায়; তদ্রূপ ব্রহ্মে জগতের মিথ্যা প্রতীতি হইয়াছে। ব্রহ্মের সাক্ষাৎকার হইলেই জগতের নিবৃত্তি এবং ব্রহ্মের প্রতীতি হইয়া যায়, যে রূপ সর্পের নিবৃত্তি 


এবং রজ্জুর প্রতীতি হইয়া থাকে। 


উত্তরঃ


এত মাত্রাতিরিক্ত বানানে ভুলে লেখা প্রশ্ন কি তা বুঝতেই মগজ থেকে রক্ত বের হচ্ছে।ধরে নিলাম এখানে তার প্রশ্ন নাই বা থাকলেও সেটা হচ্ছে সত্য বস্তুরই ভ্রম হয় এই। সেরকম কিছু হলে

তিনকালে যা একরূপ থাকে তাই সত্য। বস্তু শব্দে এই আত্মাকে বোঝায়।ব্যবহারিক সত্তা প্রতীত হলেও এদের কালত্রয়ব্যাপী একরূপতা নাই বলে মিথ্যা,অবস্তু। উপমার ক্ষেত্রে রজ্জু ও সর্প উভয়েই ব্যবহারিক সত্তা।একটিকে অপরটি বলে ভুল হয়। এই একের রজ্জুর সত্যজ্ঞান নাহলে সাদৃশ্যবশত অপরের আরোপ হয়।এই অধ্যারোপ দাষ্টার্ন্তিক থেকে বুঝতে পারি সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মে অর্থাৎ বস্তুতে,অজ্ঞানাদি সকল জড়বস্তুর আরোপ।জড়পদার্থাদির তিনকালে একরূপতা নাই বলে অবস্তু।

তাছাড়া আরোপ হতে গেলে যে পূর্বের সত্যবস্তু থাকতেই হবে,এমন কোন নিয়মও নাই। কারণ সংশয় বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বস্তুশূন্য ভ্রমও হয়।মানুষ ভাবে হায়রে আগেও এভাবের ভুল হয়েছিল  এটা স্থাণু না পুরুষ ধ্যাৎ এখনো সেই ভুল হলো। এভাবে বস্তুশূন্য ভ্রম পরম্পরায় অধ্যারোপ হয়।সুতরাং ব্রহ্মে জগদভ্রমের ক্ষেত্রে পূর্বের সত্য জগতের অস্তিত্ব ধরতে হবে এমত টেকে না। কারণ অসত্য জগতের ভ্রমসংস্কারবশত পরবর্তী কালের দৃষ্ট জগৎকে সত্য বলে ভুল হয়।

এছাড়া মনে রাখতে হবে ব্রহ্মে অজ্ঞানের আরোপকে আমরা অনাদি বলেছি।ব্রহ্মে অজ্ঞানের আরোপ হল কারণ নিরপেক্ষ ও অনাদি।আরো মনে রাখা উচিত অধ্যারোপ প্রসঙ্গে সর্বত্র অধিকসত্তাক বস্তুতে  ন্যূনসত্তাক বস্তুর আরোপ হয়। যেমন রজ্জু সর্পের তুলনায় রজ্জুর সত্তা অধিক,কারণ যখন এটা সর্প নয়,রজ্জু এমন জ্ঞান হয় তখন পূর্বক্ষণে থাকা সর্পজ্ঞান বাধিত হয়ে যায়। তেমনি সংসার দশায় রজ্জুর জ্ঞান বাধিত হয় না রজ্জুসর্পের তুলনায় রজ্জু অধিকসত্তাক এবং রজ্জুর তুলনায় ব্রহ্ম অধিকসত্তাক। অতএব ব্রহ্মে রজ্জু অধ্যস্ত এবং রজ্জুতে সর্প অধ্যস্ত। দেখা যাচ্ছে—প্রাতিভাসিক সদ্বস্তু ব্যবহারিক সদ্বস্তুতে আর ব্যবহারিক সদ্বস্ত পারমার্থিক সদ্বস্তুতে আরোপিত হচ্ছে। বেদান্তের মতে আমরা জানি যে, ব্রহ্ম পারমার্থিক সৎ, জগৎপ্রপঞ্চ ব্যাবহারিক সৎ এবং স্বাপ্ন প্রপঞ্চ প্রাতিভাসিক সৎ।


এবার আরো কিছু বিষয়ে বলি জগৎ সমস্ত কিছু পারমার্থিক সত্য হয়।তাহলে বন্ধনও পারমার্থিক সত্য!অনেকে অদ্বৈতবেদান্তবিরোধী আচার্যের মতে পারমার্থিক হলেও নিবৃত্ত হয়।কিন্তু ভুলে যায় পারমার্থিক সত্য তাকেই বলে যে কোনো কালে কোনপ্রকারেই কারোর বাপের হেডম নাই তাকে নিবৃত্ত করার যেমন ব্রহ্মবস্তু। তার ভিন্ন সমস্ত জগৎ ও জাগতিক বন্ধন ও দুঃখাদি,যাদের অস্তিত্ব সত্য বলে প্রতিভাত হয় এবং যারা নিবৃত্ত হয় তারা লৌকিক পারমার্থিক বা ব্যবহারিক। যেসমস্ত মিঞ্চারা এই প্রকার অঙ্গীকার না করলে জগৎ এবং বন্ধন ও সুখদুঃখাদি জাগতিক পদার্থসকল পরমার্থসত্য ব্রহ্মবস্তুর সাথে সমসত্তাযুক্ত হয়ে পড়বে,ফলে তাদের বাধ বা নিবৃত্তি সম্ভব হবে না।কারণ সমসত্তাযুক্ত পারমার্থিক সত্য ব্রহ্মবস্তুর নিত্যতা এবং তার সমসত্তাযুক্ত পারমার্থিক সত্য জগৎ ও সত্য বন্ধনের অনিত্যতা অঙ্গীকারে "অর্দ্ধজরতীয়ন্যায়" প্রসক্ত হয়ে পড়বে। সেই অদ্ভুত বানানে ভুলে ভরা ব্লগারকে হয় " অর্দ্ধজরতীয়ন্যায়" অঙ্গীকার করতে হবে,অথবা জগৎ ও বন্ধনাদি জাগতিক পদার্থের "লৌকিক পারমার্থিকত্ব" স্বীকার করতে হবে। অন্য উপায় নাই। ফলে জগৎ ও জাগতিক পদার্থসকলের অপারমার্থিকত্ব,সুতরাং মিথ্যাত্বই বেচারিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও স্বীকার্য।জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞানই নিবৃত্ত হয় এটাই বস্তুর স্বভাব। পারমার্থিক সত্য বস্তু,যা অজ্ঞানের কার্য্য তা জ্ঞানের দ্বারা কিপ্রকারে নিবৃত্ত হবে? শ্রীভগবানের প্রসাদে নিবৃত্ত হলেও তার সত্যতা ব্যাবহারিক হবে, পারমার্থিক না।


 


দাবী

মিথ্যা থেকে সত্যে পৌঁছানো যায় কিভাবে?এরকম অনেকের প্রশ্ন আসতে পারে



উত্তরঃ 


এখানে ছোট্ট করে সংকেতে উত্তর দিয়ে দিচ্ছি  ব্যাবহারিক জীবনে অনেক সময় মিথ্যা বস্তু-বোধ এবং অসত্য দর্শনকেও সত্য, শুভ ফলের জনক হতে দেখা যায়। দৃষ্টান্ত-স্বরূপে চিৎসুখ বলেন যে, কোনও উজ্জ্বল মণির ভাস্বর জ্যোতিঃপুঞ্জকে মণি-ভ্রম করে যদি কোন ভ্রান্তদর্শী মণি আহরণ করবার উদ্দেশ্যে ধাবিত হয়, তবে, সে সেখানে মণিটি অবশ্যই পাবে, এবং ঐ মণির দ্বারা জীবনে অনেক কাজও করতে পারবে। এখানে কিন্তু সে মণি দেখে মণি আহরণ করবার জন্য প্রবৃত্ত হয় নাই, মণির উজ্জ্বল জ্যোতিকে মণি ভ্রম করে ধাবিত হয়েছে। ভ্রমই যে এখানে তাঁর স্বার্থ-সিদ্ধির অনুকূল হয়েছে, এটা অস্বীকার করবার উপায় নাই। এরূপ আরও অনেক বিভ্রম দেখা যায়, যাহা ভ্রম হলেও ব্যাবহারিক জীবনে তার কার্যকারিতা কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিই অস্বীকার করতে পারেন না। পৃথিবী বস্তুতঃ সচলা হইলেও পৃথিবী অচলা; পৃথিবী ঘোরে না, সূর্য্য পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘুরে বেড়াইতেছে, এরূপ অন্ধ বিশ্বাস কত যুগ যুগান্ত ধরে কত মানুষের চিত্তকে অধিকার করে আছে, এবং ঐরূপ মিথ্যা বিশ্বাস-মূলে কত কাজ কত ভাবে মানুষ করে চলেছে। জীবণে গতিপথে তাঁর ঐ মিথ্যা জ্ঞান তাঁকে নানা প্রকারে সাহায্যই করেছে; জীবনের গতিতে কোনরূপ বাধার সৃষ্টি করে নাই। সুতরাং কেমন করে বলব যে, মিথ্যার কোন প্রকার কার্যকারিতা নাই।





দাবী


এখন কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা দরকার যেমন ব্রহ্মে জগতের ভান কাহার হইয়াছে? নিশ্চয় জীবের এবং এই ভান (জ্ঞান) অজ্ঞানতার কারনে হয়। ইহাও বিচার্য অজ্ঞানতা কোথা হইতে হইয়াছে এবং কোথায় রহিয়াছে..? যদি বল অজ্ঞান অনাদি এবং ব্রহ্মে অবস্থান করে তাহলে 

ব্রহ্মে ব্রহ্ম বিষয়ক অজ্ঞান হইল অথবা অন্য কোন বিষয়ের অজ্ঞান হইল এবং ঐ অজ্ঞান কাহার হইল..?

অবিদ্যা কি সর্ব্বব্যাপী সর্ব্বজ্ঞের গুণ, নিশ্চয় নয় তা অল্পজ্ঞের গুণ হওয়া স্বাভাবিক। তাহা হইলে এক অনন্ত সর্ব্বজ্ঞ চেতন ব্যাতিরেকে অন্য কোন চেতন সত্ব্যার প্রমান মেলে। যদি অল্পজ্ঞ চেতন ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন বলিয়া বিশ্বাস কর তাহা হইলে সমীচীন হয়। যদি এক স্থানে ব্রহ্মে অপনার স্বরূপ সম্বন্ধীয় অজ্ঞান হয় তাহা হইলে উক্ত অজ্ঞান সর্ব্বত্র বিস্তৃত হইয়া পড়ে। যেরূএ শরীরের (এক স্থানর) বিষ্ফোটকের পীড়া সমস্ত শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে আতুর অপটু করিয়া দেয় তদ্রুপ,ব্রহ্ম ও একদেশে অজ্ঞানী এবং ক্লেশযুক্ত হইলে সমস্ত ব্রহ্মই অজ্ঞানী এবং পীড়াভবনুযুক্ত হইয়া পড়ে


উত্তরঃ


এ ব্লগারের লেখা দেখে বুঝলাম ব্যাক্তি অদ্বৈতবাদ নিয়ে যখন ভূমিকা লিখছিল তা না বুঝে কপি পেস্ট মেরে দিয়েছে। নইলে খণ্ডনের বেলায় এরকম আউল ফাউল লেখার কথা না।

একই চৈতন্য মায়াপ্রতিবিম্বে ঈশ্বর,অবিদ্যাপ্রতিবিম্বে জীব। ঈশ্বর মায়াধীশ,জীব মায়ার অধীনে। বেশি না পঞ্চদশী গ্রন্থ খুলে পড়তে পারেন।

এবার বলি এ মহান দ্বিগিজয়ী পণ্ডিত ব্যক্তি ভক্তশ্রেষ্ঠ জগৎগুরু শ্রীরামানুজাচার্যের থেকে কপি পেস্ট মারার চেষ্টা করছে কিন্তু মডিফাই করতে গিয়ে পুরো বর্বাদ করে দিয়েছে  এককথায় লাইন ছাড়া কথাবার্তা হয়ে গেছে,অথবা নিজেই এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন করে রেখেছে।কারণ অদ্বৈতবাদকে আঘাত দিতে গিয়ে বিশিষ্টাদ্বৈতাবাদী, ভেদাভেদবাদী পরিণামবাদীদের আঘাত দিয়ে ফেলেছে। গোমূ% হলে যা হয়। 

ব্রহ্ম অবিদ্যার আশ্রয়। যখন ব্রহ্মকে অবিদ্যার আশ্রয় বলা হয়--তখন সেটাও বলা হয় এই অবিদ্যা মিথ্যাবস্তু,সুতরাং তাতে ব্রহ্মের কোন অন্যথাভাব বা অসঙ্গত্বের হানি হয় না।যেটুকু যা বোধ হয়,তাও মিথ্যাই হয়। আর হ্যাঁ ব্রহ্মের সত্তা ও অবিদ্যার সত্তা সমান না।ব্রহ্ম তিনকালেই একরূপে বর্তমান,আর অবিদ্যা বর্তমানকালে মাত্র বর্তমান বলে বোধ হয়,অর্থাৎ তার প্রতীতি হয় বলে তাকে সৎ বলা হয়।কিন্তু ব্রহ্ম সৎ ই।সুতরাং হে মহাপণ্ডিত ব্রহ্মের সাথে অবিদ্যার বিরোধ কোথায়?রজ্জুকে যে সর্প আশ্রয় করে তাতে কি রজ্জুর সাথে বিরোধ হয়?অবিদ্যা যদি ব্রহ্মের ন্যায় সদ্বস্তু হতো,তা হলে আপনার আজাইরা আপত্তি মানা যেত।

এবার বলি জ্ঞান ও অজ্ঞানের বিরোধ তা বৃত্তিজ্ঞানের সম্বন্ধেই অদ্বৈতবাদী বলেন।যেমন ঘটজ্ঞানকালে ঘটবিষয়ক অজ্ঞান থাকে না,অর্থাৎ ঘটাকার বৃত্তিজ্ঞান ঘটবিষয়ক অজ্ঞানের বিরোধী। ব্রহ্ম তদ্রূপ অজ্ঞানের বিরোধী না,কিন্তু ব্রহ্মবিষয়ক বৃত্তিজ্ঞানই সেই ব্রহ্মবিষয়ক অজ্ঞানের বিরোধী। আর এই ঘটবিষয়ক বা ব্রহ্মবিষয়ক জ্ঞানের পূর্বে ঘটবিষয়ক বা ব্রহ্মবিষয়ক অজ্ঞানই থাকে বলে ঘট বা ব্রহ্ম সেই অজ্ঞান দ্বারা আবৃত বা তিরোহিত বলা হয়। 

যেমন রজ্জুবিষয়ক অজ্ঞান রজ্জুকে তিরোহিতই করে রাখে। কিন্তু বস্তুতঃ রজ্জু তিরোহিত না; তদ্রূপ ব্ৰহ্ম কখনই যথার্থরূপে তিরোহিত না। শুদ্ধ ব্রহ্মে অবিদ্যা কোন কালেই নাই। শুধু প্রপঞ্চদর্শনকালে মিথ্যা সম্বন্ধেই অবিদ্যা স্বীকার করা হয়; আর সেজন্যে তার দ্বারা ব্রহ্মের তাদৃশ তিরোধান হবে না কেন? 

ব্রহ্ম অল্পজ্ঞ হয়ে যাবে ব্রহ্মের হেন হবে তেন হবে এভাবে পারমার্থিক,ব্যবহারিক সব গুলিয়ে ফেললে বড় সমস্যা।

ভ্রম কার? আপনার এই প্রশ্ন দেখেই বুঝা যাচ্ছে ব্যবহারিকের সাথে পারমার্থিকের ভালো খিচুড়ী পাকিয়েছেন।

ভ্রম জীবের। ব্যবহারিক দশাতে যত কল্পনা,ভ্রম,সত্তা,ঈশ্বর,জীব ইত্যাদি এসব। পরমার্থে ব্রহ্ম ব্যতীত কিছুই নেই।তাই এত ভয়ের কিছু নেই।

এরপরের যে পীড়ার কথা বলেছেন যারা পরিণামবাদ স্বীকার করে বা অংশাঅংশী স্বীকার করে বা পারমার্থিক অবিদ্যা স্বীকার করে এসব তাদের এসব প্রশ্ন করেন। 

এখন অনেকের মাথায় এ প্রশ্ন আসতে পারে যেমনটি ব্লগারটির মাথায়ও এসেছে


দাবী

যদি বলা হয় ব্রহ্ম,নিজ ব্রহ্মবিষয় অজ্ঞান হইয়া অর্থাৎ আপনার স্বরূপকে আপনিই ভুলিয়া যান তাহলে তাঁহার ভ্রম হইবার নিমিত্ত কারন অবিদ্যা..!!??


সহজ ভাষায় সে প্রশ্নটি এরকম, সেটি হচ্ছে "অবিদ্যাকে যতই তুচ্ছ বলুন, ব্রহ্মে তা মিথ্যাসম্বন্ধে থাকলেও তার সেই মিথ্যাসম্বন্ধই বা কেন?  শুদ্ধব্রহ্মে প্রতীত হল কেন—এই প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে?


উত্তরঃ 


যতক্ষণ প্রতীত ততক্ষণ এই প্রশ্ন। জাগ্রতাবস্থায় যেমন স্বপ্ন বিষয়ে ‘কেন হইল' প্রশ্ন হয় না—এটাও সেরকম ভ্ৰমান্তে যেমন ‘কেন ভ্রম হল' প্রশ্ন হয় না—এটাও সেরকম। অবিদ্যা এই প্রকার স্বভাবাপন্ন। স্বভাবের উপর প্রশ্ন করলে কে কি উত্তর দিবে? অবিদ্যা এই প্রকারই বলে জানতে হবে।


“আচ্ছা, আপনার ঈশ্বর লীলাময় কেন??" —বললে আপনি কি উত্তর দিবেন? প্রশ্ন তো পাগলেও করে। আর তার কি উত্তর আছে?

 ব্রহ্মাশ্রিত অবিদ্যা এই ভাবে সংসার প্রদর্শন করে এবং ব্রহ্মজ্ঞানে তা বিলুপ্ত হয়; তার বীজ ছিল না এবং বিনাশেও কিছু থাকিবে না—এটাই তাহার স্বভাব; এটা এজন্য অনির্বচনীয়। এতাদৃশ অবিদ্যাদ্বারা ব্রহ্ম সবিশেষ কিরূপে হবেন? যেরূপ সত্তা স্বীকার করিয়া ব্রহ্মে এটা‘কেন প্রতীত হল’ জিজ্ঞাসা করছেন, তাতে ব্রহ্মে এটা প্রতীত হয় নাই বলতেও পারা যায়।”


যারা অদ্বৈতবেদান্তী পণ্ডিত তারা এ নিয়ে আরো ভালো বলতে পারবে। শিবের নাম করে যা অল্প জানি তা থেকেই দিলাম ভুলত্রুটির জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।


হর হর মহাদেব

ওঁ নমঃ শিবায়



Tuesday, April 5, 2022

পরমেশ্বর শিব কি কারো উপাসনা করেন?

 ইদানিংকালে কিছু শিব বিদ্বেষীদের দাবী যে মহাদেব নাকি বিষ্ণুর ধ্যান করেন, আবার কিছু কিছু উগ্র রামায়েতের দাবী মহাদেব পঞ্চমুখে রাম নাম করেন, কিছু কৃৈষ্ণবদের দাবী মহাদেব নাকি পঞ্চমুখে হরি নাম করেন। যদিও কোন বৈদিক রেফারেন্স দেখাতে বললে এরা জোড়াতালি মারে বা গালাগালিতে নেমে আসে। 

আসুন আজ এই বিষয়ে আলোকপাত করবো। আমরা জানি পরমেশ্বর মহাদেবের অনেক অবতার আর অনেক রূপ। সদা শিব বা শাম্বা শিবা কখনও কারো নাম করেন না কারণ উনিই হলে জগতের আদি কারণ এবং উনার থেকেই ব্রম্মা বিষ্ণু রুদ্রের সৃষ্টি। এবার অনেকেই এখানে পদ্মপুরাণের রেফারেন্স টেনে বলবেন যে পরমেশ্বর শিব হরি নাম করেন। আসলে ইনি শিব নন। ইনি হলেন প্রভু পরমেশ্বর শিবের কালরুদ্র রূপ। যিনি আর কেউ নন পরমেশ্বরের অবতার। 
পদ্ম পুরাণের পাতাল খন্ডের ১১৪ অধ্যায়ের ২৪৭ নং শ্লোকে এবং একই ব্যপার নারদ পুরাণের পুর্ব ভাগের৭৯ অধ্যায়ের ২০০তম শ্লোকেও পরমেশ্বর শিব বলেছেন " বাস্তবে আমি কারো উপাসনা করি না ।

যাইহোক অধিকাংশ কৃৈষ্ণব পন্ডিত আমাদের স্মৃতি বা ইতিহাস থেকে প্রমান দেখান যে মহাদেব হরি থেকে সৃষ্টি এবং উনার ললাট থেকে উৎপন্ন । এই ক্ষেত্রে মহাভারতের অনুশাসন পর্বের শ্লোকটি যা দেখানো হয় তা নিম্নে স্ক্রীনশটঃ


 

















এইবার আসুন স্মৃতি শাস্ত্র থেকেই আমরা দেখে নেই এর খন্ডন। 

মূর্খ কৃৈষ্ণবরা সবসময় অর্ধেক পড়ে বাকি অর্ধেক ছেড়ে দেয় বা লুকায়। এটা তাঁদের পুরানো স্বভাব এবং এদের তথাকথিত গুরুরাও এই কাজ করে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করে গেছেন। কেন এই কথা বলছি আসুন একই পর্বের শুরুর দিকে তাকাই। 

মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৩ নং অধ্যায়ে পিতামহের উক্তি স্ক্রিনশট


অর্থ্যাৎ প্রভু শিব শ্রীবিষ্ণুর ( হরির ) সৃষ্টিকর্তা। এবং খেয়াল করে দেখুন উনাকে অক্ষর ব্রহ্ম ( ওঁ) এর স্বরুপ বলা হচ্ছে। 

তাইতো ঋষি মার্কেন্ডেয় বলেছেন 

ওঁ ওঁ 

ওঁঙ্কারম্‌ সৃষ্টিসারম্‌ বিধিবিধি লিখিতম্‌ মোক্ষদক্ষসম্‌ সুবিক্ষম ।

গমগংগম দিব্যলিঙ্গম্‌ গজমুখ বিনুতম স্বর্ণাপূর্ণা সমক্ষসম। 

বেদার্থম্‌ ব্যাসপীঠম্‌ সুর মুনি সহিতম শান্তিকান্তমসুখান্তম। 

বিশ্বশ্বেম্‌ চিৎপ্রকাশম স্মৃতিজন বরদম কাশীনাথম নমামি। 

ওঁ ওঁ ।


এবার আসুন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ কি বলছেন দেখে নেয়া যাক ! 

মহাভারত অনুশাসন পর্ব ১৩/ ২১-২৪


এবার আসুন বৈষ্ণব পুরাণ আর স্মৃতি থেকে দেখা যাক !  


পদ্ম পুরাণ পাতাল খন্ড, ১১৪ নম্বর অধ্যায় ২৪৭ থেকে ২৫৪ নং শ্লোক দেখুন। যদিও বাংলা কোন ভার্সনে এই শ্লোক দেখা যায় না। বাংলা বৈষ্ণব ভাইজানেরা কেটে দিয়েছেন উনারা। প্রভু পরমেশ্বর শিব কারো উপাসনা করেন না। বরং উনাকেই সবাই উপাসনা করেন।





পদ্মপুরাণ/উত্তর খণ্ড/১৭৫ নং অধ্যায় । এখানে শ্রী নারায়ন দেবী লক্ষীকে বলছেন।


শ্রীভগবানুবাচ্ –

" নাহং সুমুখি নিদ্রালুর্নিজং মাহেশ্বরং বপুঃ |

দৃশাতত্ত্বানুবর্ত্তি ন্যাপশ্যাম্যংতর্নিমগ্নযা || ৭ ||

কুশাগ্রয়াধিযা দেবি যদংতর্যোগিনোহৃদি |

পশ্যন্তি যচ্চ বেদানাং সারং মীমাংসতেমৃশম্ || ৮ ||

তদেবমক্ষরং জ্যোতিরাত্মরুপমনামযম্ |

অখংডানংদ সংদোহনিষ্পাদিদ্বৈতবর্জিতম্ || ৯ ||

যদাশ্রয়া জগদ্বৃত্তির্যন্ময়াচানুভূযতে |

নযেনরহিতংকিংচিতজ্জগত্তত্বং চরাচরম্ || ১০ || "

বঙ্গানুবাদ –

উত্তরে ভগবান বিষ্ণু বলেন – হে সুমুখি! আমি কদাপি শয়ন করি না। আমি ধ্যান নেত্রে (নিজেরই অন্তরস্থ) আত্মস্বরূপ মহেশ্বরকে অনুভব করে থাকি। হে দেবি! কুশাগ্রের ন্যায় (তীক্ষ্ণ) (দৃষ্টিসম্পন্ন) যোগীগণ নিজের হৃদয়ে সেই মহেশ্বরকেই অনুভব করে থাকেন। (সকলের হৃদয়ে অবস্থিত সেই অখণ্ড চৈতন্য) সমগ্র বেদের সার এবং মীমাংসা স্বরূপ। সেই দেব (মহেশ্বর) অক্ষর, জ্যোতিরূপ, অরূপ এবং অনামেয়।তিনি অখণ্ড, অনন্ত এবং অদ্বৈত(অদ্বিতীয় পরমেশ্বর)। যার আশ্রয়ে সমগ্র জগৎ, যাকে আমিও(শ্রীবিষ্ণু) অনুভব করে থাকি (ধ্যাননেত্রে), যার বিনা এ জগত-চরাচরের কোনো অস্তিত্বই নেই।












পদ্ম পুরাণে এরপর দেবী লক্ষী-নারায়ণের আরও কথোপকথন আছে। চলুন দেখে নেই। 

লক্ষ্মীদেবী বললেন, আপনিই তো জগতের প্রভু তথা সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার কর্তা। তো আপনার চেয়েও পরমতম তত্ত্ব আর কিই বা আছে? হে অচ্যুত! যদি কেউ থেকেও থাকে তবে তার সম্পর্কে জানতে আমি কৌতুহলী। 

তখন  ভগবান বিষ্ণুদেব বললেন , আমার এই দেহ মায়ার তৈরি। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের মায়াজালে আবদ্ধ আমার দেহ(বিষ্ণুরূপীদেহ)।কিন্তু আমার আত্মরূপ (অর্থাৎ আত্মা)এই মায়াদেহ হতে পৃথক, সেটি অদ্বৈত, বিকাররহিত, আদি-অন্ত শূণ্য এবং ভাব-অভাব এবং অদ্বৈত এরও উপরে। সেই আত্মা শুদ্ধ সম্বিত্ স্বরূপ(পরাচৈতন্য), পরমানন্দময় এবং সুন্দর। আত্মস্বরূপ সেই ঈশ্বরই (পরমেশ্বর) গীতার(ভগবদ্গীতা) দ্বারা ব্যক্ত হয়েছে।

একই কথা কিন্তু আদিগুরু শংকরও বলেছেন 

কাজেই এইটা পরিস্কার যে শ্রী হরির শরীর জড় এবং উনি তা নিজ মুখেই মাতা লক্ষীকে বলেছেন। 



এবার আসি কৃৈষ্ণবদের প্রাণভোমরা ভাগবত নিয়ে ।। 


ভাগবত মহাপুরাণের চতুর্থ স্কন্ধের ষষ্ঠোহধ্যায়ের ৪২ নং শ্লোকে প্রজাপতি ব্রহ্মা বলেন -


জানে ত্বামীশং বিশ্বস্য জগতো যোনিবীজয়োঃ । 

শক্তেঃ শিবস্য চ পরং যত্তদব্রহ্ম নিরন্তরম ।। 


অর্থ - ব্রহ্মা বললেন হে মহাদেব! আমি জানি আপনি সমগ্র বিশ্বের অধীশ্বর, কারণ জগতের যোনিস্বরূপ যে শক্তি (প্রকৃতি) এবং বীজস্বরূপ যে শিব (পুরুষ) তা আপনিই এবং আপনিই অতীত নির্বিকার একরস পরব্রহ্ম স্বরূপ ।।
















এখানেই শেষ না আরও আছে ফ্রবু !! 



এবার মহাভারতের দিকে তাকাই? আসুন সেখানে প্রভু পরমেশ্বর শিবকে নিয়ে কি বলা আছে দেখা যাক ! 

এখানে  স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলছেন প্রভু পরমেশ্বর শিব হলেন সবার আরাধ্য ! 

তবে এখানে কেউ কেউ কৃষ্ণকে ছোট করতে গিয়ে মহাদেবকে বড় করছি এমন যাতে না ভাবেন সেখানে আমার আরও কিছু প্রমাণ। কারণ দ্বৈতবাদী কৃৈষ্ণবরা অসুর হলেও আমরা শৈবরা ভেদ মানি না।

এখানে অন্যতম পান্ডব শ্রী অর্জুন কি বলছেন দেখুন। মহাদেবকে পুজা করে উনি প্রভুর মাহাত্ম্য বর্ণনায় বলেছেন । যিনিই বিষ্ণু তিনিই শিব আবার যিনি শিব তিনিই বিষ্ণু। এরা অভেদ এবং এদের মাঝে কোন



 ভেদ নেই। 


শেষ করছি কিছু শ্রুতি প্রমাণ দিয়ে।  

অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে।
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ।। (শ্বেতশ্বতর-৪/২১)
অর্থাৎ : হে রুদ্র, তুমি মৃত্যুঞ্জয়। যে জন্মাদি মৃত্যুভয়ে ভীত সেই তোমার শরণ নেয়। তোমার প্রসন্ন মুখ আমার দিকে ফেরাও এবং নিয়ত আমাকে রক্ষা কর।


একো হি রুদ্রো ন দ্বিতীয়ায় তস্থূঃ য ইমান্ লোকান্ ঈশত ঈশনীভিঃ।
প্রত্যক্ জনান্ তিষ্ঠতে সঞ্চুকোপান্তকালে সংসৃজ্য বিশ্বাঃ ভুবনানি গোপাঃ।। (শ্বেতাশ্বতর-৩/২)

অর্থাৎ : এক সেই পরমেশ্বর কে, যাঁর দ্বিতীয় কেউ নেই ? তিনি হলেন রুদ্র। প্রতি জীব-হৃদয়ে তাঁর অবস্থান– তাই পরমাত্মা। তিনিই তাঁর সেই ঐশ্বরিক শক্তি-বুদ্ধি দিয়ে জগৎকে শাসন করছেন। সেই শক্তির কোন ব্যাখ্যা চলে না। ব্রহ্মাণ্ডকে সৃষ্টি করে প্রতিটি মানুষের অন্তরে তিনি অবস্থান করছেন, আবার গোপা অর্থাৎ রক্ষাও করছেন। আবার অন্তিমকালে এলে সংহার-মূর্তিতে তিনিই সব সংহার করছেন।


সর্বাননশিরোগ্রীবঃ সর্বভূতগুহাশয়ঃ।
সর্বব্যাপী স ভগবান্ তস্মাৎ সর্বগতঃ শিবঃ।। (শ্বেতাশ্বতর-৩/১১)
অর্থাৎ : তিনি সর্বানন– জগতের সব মুখই তাঁর মুখ। জগতের প্রাণীমাত্রেরই মাথা, গলা– তাঁরই শির-গ্রীবা। প্রাণীর ভেতরে সেই গুহা, যার নাম বুদ্ধি, তিনি আছেন সেই গুহায়। সর্বব্যাপী এবং সর্বগত শিবস্বরূপ মঙ্গলময় তিনি ভগবান।


--- সর্বভূতে সমগ্র জীবেদের মুখ, গলা, ঘাড় রূপে সেই সর্বব্যাপী শিবই আছেন এবং তিনিই প্রত্যেকের হৃদয়গুহায় প্রত্যগাত্মারূপে বিরাজিত।

সব শেষে পবিত্র অথর্ব্বশির থেকে একটি স্ক্রিনশট! 
বোঝাই যাচ্ছেন প্রভু পরমেশ্বর শিব হলেন অদ্বিতীয় পরমেশ্বর যার থেকে আমি আপনি এমনকি সকল অবতারের সৃষ্টি। 



সকল কৃৈষ্ণবের মানসিক সুস্থতা কামনা করছি প্রভু পরমেশ্বরের কাছে। 
নমঃ শিবায়।। 









সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts