Wednesday, August 19, 2020

শিব এবং শিব নাম নিয়ে কৃৈষ্ণবদের ভন্ডামি বৈষ্ণব পুরান থেকে প্রমান।

 শিব নাম নিলে বা শিব নিয়ে কিছু প্রকাশ করলেই যেন কৃৈষ্ণবদের শরীর জ্বালা করে। আর করবে নাই বা কেন বলুন, কারন এরা তো দক্ষেরই অবতার এই কলিতে। এরা যে ঘোর পাপী এবং ভন্ড তা আমি না ক্ষোদ শাস্ত্র বলছে। আমার ব্লগ নিয়েও এঁদের চুলকানীর শেষ নেই। কারণ আমি যা যা লিখেছি এরা এর কিছুই উল্টাতে পারে না। তাই আমার বানান নিয়ে লেগেছে। 

যাইহোক আসুন কিছু আলোচনা করা যাক এঁদের নিয়ে। প্রথমেই আসছি সৌর পুরাণ নিয়ে। 

কলিকালে বৈষ্ণব চরিত্রঃ

কলিকালে মধুদর্শিতা পথানুসারী পাপিষ্ঠ বৈষ্ণব অনেক হইবে'অনন্তর জাতিভ্রষ্ট শূদ্র-ম্লেচ্ছাগণ এই বৈষ্ণব পথাবলম্বী হইবে।

(সৌরপুরাণ-৩৯/৭৯)।


বলা বাহুল্য এইখানে সমগ্র বৈষ্ণবগোষ্ঠিকে কিছু বলা হচ্ছে না। বরং ভন্ডদের নির্দেশ করতে এই কথা বলা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ ভন্ডরা নিজেদের বৈষ্ণব বলে আখ্যায়িত করবে। কিন্তু আসলে এরা বৈষ্ণব না। এরা হল কলির চর। যারা মধু মাখা হরি নাম( আদতে শ্রী হরির নাম না) বিক্রি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে এবং মানুষকে শাস্ত্র বিমুখ তথা ধর্ম বিমুখ করবে। এই গৌড়িয় কৃৈষ্ণব সম্প্রদায় তাই করছে এর মাঝে ইস্কন অন্যতম। 

এবার আসি অন্যতম এক স্মৃতি শাস্ত্র অত্রি সংহিতা নিয়ে। মনু সংহিতার পরেই এই সংহিতার স্থান যা ঋষি অত্রি বলেছেন। সে সংহিতার ৩৭৫ নং শ্লোক দেখুন। স্ক্রীনশট। মূর্খরা বেদ পাঠে বিফল হলে পুরাণ পড়ে। সেটাতেও বিফল হলে কৃষিকাজে নিযুক্ত হয়।এতেও বিফল হলে ভন্ড বৈষ্ণব ধর্ম অবলম্বন করে। অর্থ্যাৎ যেইগুলা সমাজের চরম অকর্মণ্য এইগুলাই এই ভন্ড বৈষ্ণব ধর্ম অর্থ্যাৎ কৃৈষ্ণববাদে ঝুকে ইস্কনে যায়।   


কিন্তু এর মানে কি সব বৈষ্ণব খারাপ?? মোটেই না। এখানে তাৎপর্য হল। ভন্ডরাই বৈষ্ণববাদ কে ব্যাবহার করে নিজেদের টাকা ইনকামের ধান্দা করবে। ইস্কন বা গৌড়ীয় কৃৈষ্ণব সম্প্রদায় তা-ই করছে। কাজেই বুঝতেই পারছেন এটা আমার কথা না শাস্ত্র বচন যে এই ইস্কনীরা চরম ভন্ড। 

এবার আসি আমার মুল প্রসঙ্গে । কৃৈষ্ণবরা নিজেদের অবস্থান পাকা পোক্ত করার জন্য সহজ সরল শাস্ত্র না জানা হিন্দুদের টার্গেট করে। আর এর জন্যই এরা বিভিন্ন বৈষ্ণব পুরাণের অর্ধেক শ্লোক আওড়িয়ে বলে এরাই একমাত্র ঠিক। এই ক্ষেত্রে এরা বৃহদনারদীয় পুরাণের একটা শ্লোক আওড়ায় কিন্তু এরপর আর কিছুই বলে না। যেমনঃ

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম।


কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।


সরলার্থঃ এই কলিযুগে কেবল হরির নাম, হরির নাম, হরির নামই একমাত্র আছে। এই ছাড়া আর কোনও গতি নেই , আর কোনও গতি নেই, আর কোন গতি নেই।

বৃহদনারদীয় পুরান। পূর্বভাগ ৪১ অধ্যায় , ১১৫ নং শ্লোক। (বিষ্ণু নাম মহিমা) গীতাপ্রেস কতৃক সংস্কৃত পুরান থেকে।


কিন্তু এই চতুর এবং চালাক দক্ষের অনুচরেরা এর পরের শ্লোক বলে না আর নিজেদের বইয়ে দেখায় না। আসুন শ্লোকগুলো দেখে নেই। 

আমরা জানি নারায়নের হাজার নাম, উনি অনন্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের পালন কর্তা তথা শিবাংস। মানে উনি আর শিবে ভেদ নেই।তো এইখানে হরির নাম বলতে কোথায় ওদের উপনিষদের বিকৃত মন্ত্র বলা আছে?? সেরকম কিছুই এই পুরানে আছে? দেখে নিচ্ছি। 

একই অধ্যায়ের ১০৭নং শ্লোকে প্রভু বিষ্ণুর সেই নাম বলা হচ্ছে যা নিলে আমাদের কলির প্রভাব কাটবে। হরি, কেশব, গোবিন্দ, বাসুদেব জগন্ময়।।

ইতি রয়ন্তি এ নিত্যমনহি বাধতে কলিঃ

সরলার্থঃ এই নাম গুলো ব্যাক্তি যদি জপ করে , বা স্বরন মনন করে তাহলে কলি তাঁকে বাধা প্রদান করেন না। 

পাঠক, এখানে ওদের বিকৃত নাম যা তাঁরা হরি নাম বলে চালায় সেটা কই? 

এবার আসি পরের যুক্তিতে যা এই গৌড়িয় কৃৈষ্ণবরা কখনও দেখায় না। 

 একই অধ্যায়ের আরেক শ্লোক ১০৮ কি বলছে?

শিব শংকর রুদ্রেশ নিলকন্ঠ ত্রিলোচন

ইতি জপন্তিয়ে ইয়াপি

কলি স্তন্যাপিবাধতে

সরলার্থঃ শিব শংকর রুদ্রেশ নিলকন্ঠ ত্রিলোচন এই নামগুলো যে জপেন কলি তাঁদেরকেও বাধা দেন না।

এবার ১১২ নং শ্লোকে আসুন

হরির নাম স্বরণ করা ব্যাক্তি এবং শিব নাম স্বরন করা ব্যাক্তির সকল মনকামনা পূর্ণ হয়ে যায়। 


স্ক্রীনশটে দেখেতেই পাচ্ছেন শাস্ত্র বচন কি। 

এরা সাধারণত শিব প্রসাদ খায় না। বা শিবকে কৃষ্ণের উচ্ছিষ্ঠ ভোগ লাগায় এবং পরে সেটা গ্রহণ করে। মানে শিব এঁদের কাছে কোন পরমেশ্বরই না। এঁদের শিব বিদ্বেষ চরম মাত্রায় এবং এরাই যে দক্ষের অবতার সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বৈষ্ণব পুরান বা নারদ বানী কি তাই ? আসুন একই পুরান থেকে নারদের মুখের কথা দেখে নেই। 

কলি কালে কি শিব পূজা পাপ? 




মানে, কলিতে যে নারায়ণ পূজা বা শিব পূজা করবে কলি তাঁকেও স্পর্শ করবে না। এবং জীব যে শিব পূজা করবে সে শিব তুল্য হবে। 

এই পুরানেও হরি এবং হর অভেদ তত্ত্ব আনা হয়েছে। এমনকি মহাদেব পরমেশ্বর শিবকে সাক্ষাৎ ঈশ্বর বলা হয়েছে। স্ক্রীনশট।

১১৫ নং সেই শ্লোকের আগে কি বলা আছে দেখুন। স্ক্রীনশট। 




২য় স্ক্রীনশট দেখুনঃ 







মানে হর -হরি অভেদ যে মানে সেই সাধু বলার যোগ্য এবং যে শিব বিষ্ণু এক তত্ত্ব মানে তা এই ঘোর কলিতেও পূন্য লাভ হয়।
এবার পাঠক, আপনারা বলুন। ইস্কন তথা গৌড়ীয় সমাজ কি দেবর্ষী নারদের থেকে উর্ধ্বে ? এরা কি এমন সাধু যে নারদের কথার উপেক্ষা করে শিব অপমান করে এবং শিবকে কৃষ্ণ থেকে আলাদা করে?? 
অত্রি সংহিতা এবং সৌর পুরাণের বচন অনুযায়ী এরাই যে মহা পাপী এবং ঘোর কলির চর এতে কি আর সন্দেহ রইলো?? 

এঁদের হিন্দু সমাজ থেকে সামাজিকভাবে বয়কট করুন। তবেই সমাজ এবং জাতির মঙ্গল। 

ইস্কন নিপাত যাক 

সনাতন মুক্তি পাক।

হর হর মহাদেব। 


Sunday, August 9, 2020

ভগবান আদি শংকরের বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ যে গরুর মাংস খাবার কথা বলা হচ্ছে সেই সম্পর্কে আপনার মতামত বা খণ্ডন কি?

 হোক তা বিধর্মী ষড়যন্ত্রকারী কিংবা হোক মুর্তি পূজা বা প্রতীক পূজা বিরোধী কতিপয় ব্যাক্তি। সবার সেই এক কথা। আপনাদের ধর্মে তো গরু খাওয়া আছে কিংবা, আপনাদের মতন যারা শৈব বা অদ্বৈতবাদী আছেন যারা আদি শঙ্করকে মানেন বা শ্রদ্ধা করেন এরা কি পারবেন বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ যে গরুর মাংস খাবার কথা বলা হচ্ছে তার খণ্ডন দিতে? কলার উচিয়ে অনেকেই বলে থাকেন তমুকই একমাত্র এর খণ্ডন দিয়েছেন বা সহজ কথায় শ্লোকের  মাঝে অন্য কিছু খুঁজে পেয়েছেন ।

আসুন প্রথমেই দেখে নেই সেখানে কি বলা আছে। মানে রামকৃষ্ণ মিশন কতৃক প্রকাশিত গ্রন্থে কি লেখা। 














শুধুমাত্র এই লেখাগুলোকে দেখিয়ে কিছু কতিপয় অসাধু ব্যাক্তি প্রমাণ করতে চায় যে আদি গুরু শংকরপন্থিরা গরুর মাংস খাবার সমর্থন করেন এবং এরা বেদ বিমুখ কার্য করে থাকেন। বলা বাহুল্য এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা বা গ্রন্থ অধ্যয়ন না করেই এরা যেকোনো উপসংহারে এসে দাড়িয়ে যান। কিছু প্রশ্ন করলে তোতা পাখির মতন একটাই কথা আওড়াতে থাকেন আর তা হল " এইগুলা মধ্যযুগে বিকৃত হয়েছে আর তাই সব প্রক্ষিপ্ত"। যদিও এর বিপরীতে কোন প্রমান এরা উপস্থাপন করতে পারেন না। 
যেমন ভাগবত পুরান নিয়ে এঁদের দাবী ইহা নাকি বোপদেব রচিত অথচ। আদিগুরু ভগবান শঙ্করাচার্যের গুরু গোবিন্দপাদের গুরু গৌড়পাদ।(অর্থাৎ শঙ্করাচার্যের গুরুর গুরু) তাঁর "উওর গীতা" ভাষ্যে এবং "সাংখ্য কারিকা বৃত্তি" গ্রন্থে শ্রীমদ্ভাগবতমের নাম এবং একাধিক শ্লোক উল্লেখ করেছেন।গৌড়পাদ শুধুমাত্র শ্লোক নয়,শ্রীমদ্ভাগবতের নামসমেত ১০/১৪/৪ শ্লোক উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও গৌড়পাদ শ্রীমদ্ভাগবতমে ১/৩/১ এর "জগৃহে পৌরুষং রুপং" শ্লোকটি তার পঞ্জীকরণ ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছে।
শঙ্করাচার্যের জন্ম উইকিপিডিয়া মতে ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে।শঙ্করাচার্যের গুরুর গুরু এক্ষেত্রে কমপক্ষে হলেও ১৫০-২০০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ৫০০ খ্রীস্টাব্দে শ্রীমদ্ভাগবতের কোটেশন ব্যবহার করে গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন।সুতরাং এখানে এটা প্রমাণ হয় যে শ্রীমদ্ভাগবত ১৪০০-১৫০০ খ্রীস্টাব্দের মোঘলদের দ্বারা বা বৈষ্ণবদের দ্বারা রচিত গ্রন্থ নয় বরং শ্রীমদ্ভাগবতের আর্বিভাবের ইতিহাস আরোও অনেক পুরোনো।

আবার, পঞ্চম শতকে রচিত জৈনধর্মগ্রন্থ "নন্দী সূত্র" এ শ্রীমদ্ভাগবতের নাম আছে।এই গ্রন্থে জৈনধর্মে নিষিদ্ধ গ্রন্থসমূহের তালিকা দেওয়া হয়েছে।এটিতে সরাসরি রামায়ণ,মহাভারত,ভাগবত পুরাণ,সাংখ্যকারিকা ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।ইহার রচয়িতা বল্লভী।তিনি মহাবীর জৈনের ৯৮০ বছর পরের ব্যাক্তিত্ব।
সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর সময়কাল পঞ্চম শতাব্দীতে মানা হয়।এটি প্রমাণ করে শ্রীমদ্ভাগবতম একাদশ শতাব্দীর বোপদেব রচিত নয়।বরং ইহা শঙ্করাচার্যের বহু পূর্ববর্তী।
সুতরাং আবারও প্রমাণিত হলো যে শ্রীমদ্ভাগবত বোপদেব কিংবা বৈষ্ণবদের দ্বারা রচিত গ্রন্থ নয় বরং শ্রীমদ্ভাগবতের আর্বিভাবের ইতিহাস আরোও অনেক পুরোনো।
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে আসল ইতিহাস পর্যালোচনা করলে পুরাণাদি শাস্ত্র তথা স্মৃতিগুলো যে অক্ষত এবং ভুল নয় তা বোঝা যায়। কিন্তু মুর্খের চোখ, যত না পড়ে দোষারোপ করতে পারে ততই এঁদের সুবিধা হয়। 
তো আসুন একটু বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ যে গরুর মাংস খাবার কথা বলা হচ্ছে সেই বিষয়ে পর্যালচনা করা যাক। 
যদি আমরা আমাদের সবথেকে অথেন্টিক (বিশ্বাসযোগ্য) পাব্লিকেশন গীতাপ্রেসের বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ এর দিকে তাকাই তাহলে কি দেখতে পাই? 
নিম্নের স্ক্রীনশট দেখুন। যারা হিন্দি বোঝেন তাঁরা সহজেই ধরতে পারবেন। 

এই দুই স্ক্রীনশট পর্যালোচনা করছি। 

শ্লোকের মূল অনুবাদঃ 

যিনি চান তার পুত্র প্রখ্যাত পন্ডিত, বিদ্যানদের সভায় নির্ভয়ে প্রবেশকারী তথা শ্রবনমুখী বানী বলার যোগ্য, সম্পূর্ণ বেদের সাধ্যায় করে এবং পুরো শতবছর জিবিত থাকে, সেই পুরুষ এবং তার পত্নী ঔষধীর শাঁস এবং চাউল রান্না করে তাতে ঘি মিশিয়ে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। এর দ্বারা উক্ত যোগ্যবান পুত্র জন্ম দিতে সমর্থ হয়। 

ঋষভ নামক ঔষধির (ফলের শাঁস) খাওয়ার নিয়ম আছে বা রয়েছে। 


মূল শংকর ভাষ্যঃ বিবিধং গীতো বিগীতোঃ প্রখ্যাত ইত্তর্থঃ। 

সমির্বিগমঃ সভাং গচ্ছতীতি প্রগল্ম ইত্তর্থঃ ।পান্ডীত্যস্য পৃথগ গ্রহণাৎ ।শুশ্রুশীতাং শ্রতুমিষ্টং রমণীয়াং বাচং ভাষিতা সঙ্গস্কৃতায়া অর্থবত্যা বাচঃ ভাপিতেত্যর্থঃ মাংসমিশ্রমুদং মাংসৌদনম তন্মাংস নিয়মার্থ মাহ ঔখেন বা মাংসেন উক্ষ্যা সেচনসমর্থঃ পুংগস্থদীয়ং মাংসম । ঋষভস্ততোহপ্য ধীক্বয়াস্ত দীয়মার্ষভং মাংসম।


ভাষ্যানুবাদঃ নানা প্রকারে যার মহত্ব গীত হয় তাঁকেই বিগীত   বলা হয়।  বিগীত অর্থ্যাত প্রখ্যাত। সমিতিঙ্গম - বিদ্যান্দের সভায় যেতে পারে এমন নির্ভীক। " সমিতিঙ্গমঃ" - অর্থ হল বিদ্যান অথবা পন্ডিত এই জন্য করা হয় নি। কারণ মন্ত্রে পাণ্ডিত্যের পৃথকভাবে গ্রহণ হয় এমনটা দেখা যায়। শুশ্রুশিতা- অর্থ শুনতে প্রিয় বা শ্রুতিমধুর রমণীয় বাণীর বক্তা , অর্থ্যাত সংস্কারযুক্ত স্বার্থক বানীর বক্তা । ঔষধি অথবা ফলের শাঁসকে মাংস বলা হয় । এর সাথে মিশ্রিত ভাত কে এখানে " মাংসৌদন" বলা হয়েছে। এই ঔষধীর শাঁসকে নিয়মের জন্য বলা হচ্ছে- উক্ষ্যার শাঁসের সাথে। গর্ভাদানের সমর্থ ষাঁড়কে উক্ষ্যা বলা হয়। ষাড়ের সমান শক্তিশালী হওয়ায় ঔষধী বিশেষের নামও উক্ষ্যা। সেটারই শাঁস এখানে অভিষ্ঠ আছে। পূর্বোক্ত ষাঁড় হতেও অধিক শক্তিশালী হলে তাঁকে ঋষভ বলা হয়ে থাকে। তার সমান শক্তিশালী ঔষধি বিশেষের নামও ঋষভ। তারই শাঁস এখানে " আরষভ" বুঝতে হবে। 

গীতাপ্রেসের ভাষ্য বিবৃতিঃ উক্ষ্যা শব্দের অভিধানে   ২ প্রকার অর্থ পাওয়া যায়। কলকাতা হয়ে প্রকাশিত বাচসপত্ত নামক বৃহৎ সংস্কৃত অভিধানে এইটিকে অষ্টবর্গান্তরগত ঋষভ নামক ঔষধির পর্যায়ে মানা হয়েছে। " ঋষভ ঔষধি চ " ।  প্রসিদ্ধ ইংরেজ বিদ্বান মনিয়র উলিমসন তার নিজের বৃহৎ সংস্কৃত - ইংরেজী কোষ অভিধানে " সোম " নামক বৃক্ষের পর্যায়ে মেনেছেন। 

" ঋষভ" নামক ঔষধির আয়ুর্বেদে অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রামানিক গ্রন্থ শুশ্রুত সংহিতাএর শুত্রস্থান নামক প্রথম খন্ডের ৩৮তম অধ্যায়ে ৩৭ প্রকার দ্রব্যগণের অন্তর্গত বলে উক্ত ঋষভ শব্দের  উল্লেখ আছে। ভাবপ্রকাশ নামক প্রশিদ্ধ সংগ্রহ গ্রন্থে এর বর্ণন এইধরণের আছে- 

জীবকর্ষভকৌ গেঔ হিমাদ্রীশিখরো দ্রবৌ রশদকন্দবৎ কন্দৌ নিশ্বারৌ সুক্ষ্মপত্রকৌ ................. ঋষভ বৃষশৃংগবৎ .............

ঋষভ বৃষভ বীরো বিষানী ব্রাহ্ম ইত্যপি জীভকর্ষভকৌ   বল্লৌ শিতৌ শুক্রকফপ্রদৌ মধুরৌ পিত্তদাহধ্নৌং কাষবাথক্ষয়ান্নৌ।। 

জীবক এবং ঋষভক (ঋষভ) নামের ঔষধি হিমালয়ের শিখরে উৎপন্ন হয়। এর জড় বা শিকড় রসুনের মতন হয়ে থাকে। গাছের ছোট ছোট পাতা হয় । এর মধ্যে ঋষভ ষাঁড়ের শিংএর আকৃতির মতন হয়। এর জন্য এই ঔষধির নাম ঋষভ।       

এর দ্বিতীয় নাম " বৃষভ", বীর , বিষানী ব্রাহ্ম ইত্যাদি। জীবক এবং বৃষভ ২ টাই শক্তিবর্ধক । শীত, বীর্য এবং কফ মধুর পিত্ত এবং দাহের প্রশমনকারী তথা কাশী এবং বাথ রোগের নাশকারী। ঋষভকে প্রশিদ্ধ অষ্টবর্গ নামক ঔষধীয়তে গন্য করা হয়। ভাবপ্রকাশকারী বলেন, 

জীবকর্ষভকৌ মেদে কাকোল্যৌ ঋদ্ধিবৃদ্ধির অষ্টবর্গোহষ্টমির্দ্রব্যৈঃ কথিতক্ষরকাদিভিঃ ।

আরও বিস্তারিত জানার জন্য পুজ্যপাদ জগতগুরু নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর এই ভিডিওটি দেখার আমন্ত্রন রইলো। 


তাহলে এইখানে প্রমাণিত হল যে এই চক্রান্তকারীরা সনাতন ধর্মের শাস্ত্র  তথা মহান আচার্য্যদের নিন্দা করে সহজ সরল হিন্দুদের বিভ্রান্ত করতেই মুলত এইসব বলে থাকে। আসলে এইখানে অল্প শাস্ত্র অধ্যয়ন করে নিজেদের বিশাল কিছু ভেবে বসা এইসব ষড়যন্ত্রকারীরা মূলত কিছুই জানে না এবং শাস্ত্রের নিগুঢ় তত্ত্ব উপলব্ধি করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যার্থ। তাই এদের থেকে  সবার সাবধান থাকার বিকল্প নেই। 

হর হর মহাদেব 

Tuesday, August 4, 2020

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দাহকার্য

অনেকেই বলে থাকেন শ্রীকৃষ্ণের দেহ নাকি পোড়ানো হয় নাই। আবার অনেকে এও মনে করে থাকেন যে শ্রীকৃষ্ণের দেহ দিব্য তাই উনার আবার কিসের দেহ সৎকার?

মহাভারত এবং বৈষ্ণব পুরাণ থেকে আজ প্রমান দিচ্ছি।

প্রথমেই আসি মহাভারতের মৌসল পর্বের সপ্তম অধ্যায় , শ্লোক সংখ্যা ৩১ এবং ৩২ ।

 ততঃ শবীরে বামস্য বাহুদেবস্য চোভযোঃ।

অন্বিষ্য দাহযামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ ৩১।। 

স তেষাং বিধিবৎ কত্বা প্রেতকার্য্যাণি পান্ডবঃ ।

সপ্তমে দিবসে  প্রাযাদবথমারুহ্য সত্বরঃ ॥৩২॥

সরলার্থঃ  তাহার পর অর্জ্জুন, রাম ও কৃষ্ণের শবীর দুইটি অন্বেষণ করিয়া বিশ্বস্ত ঔর্ধ্বদেহিক ক্রিয়াধিকারী পুরুষগণদ্বারা সেই শরীব দুইটি দাহ করাইলেন ৩১

অর্জ্জুন যথাবিধানে তাঁহাদের প্রেতকার্য্য করাইয়া সপ্তম দিবসে রথে আরোহণ করিয়া সত্বর দ্বারকা হইতে প্রস্থান করিলেন।৩২॥

 

এবার আসি বিষ্ণু পুরাণে। যা অতি প্রাচীন পুরাণগুলির মাঝে অন্যতম। তো এই পুরাণের পঞ্চম অংশের ৩৮ তম অধ্যায়ের ১নং এবং ৫ নং শ্লোক দেখুন।

 

 অর্জ্জুনোহপি তদান্বিষ্য  কৃষ্ণরামকলেবরে।

সংস্কারং লম্ভয়ামাস তথা  ন্যেষামনুক্রমাৎ ॥ ১

অষ্টৌ মহিষ কথিতা রুক্মিনীপ্রমুখাস্তু যাঃ

উপগৃহ হরের্দেহং বিবিশুস্তা হতাশনম। ২.

সরলার্থঃ  শ্রীপরাশর কহিলেন অর্জ্জুন, কৃষ্ণ ও রামের কলেবরদ্বয় এবং অনন্য প্রধান প্রধান যাদবগণের দেহ সকল অন্বেষণ করিয়া সংস্কার করাইলেন। রুক্মিণী -প্রমুখা কৃষ্ণের যে আটটী মহিষী কথিত হইয়াছেন, তাঁহারা সকলেই হরির দেহ আলিঙ্গন করিয়া অগ্নিতে প্রবেশ করিলেন। .

 


 ততোহর্জ্জুনঃ প্রেতকার্য্যং কৃত্বা তেষাৎ .যথাবধি।

নিশ্চক্রাম জনং সর্ব্বং গৃহীত্বা বজ্রমেব চ॥ ৫

সরলার্থঃ অনন্তর অজ্জুন যথাবিধি প্রেতকার্যা-সমাপনান্তে বজ্র ও অন্যান্য কৃষ্ণমহিষী” 'প্রভৃতিকে লইয়া দ্বারকা হইতে নিশক্রান্ত হইলেন। 

 


তাহলে দেখলেন কিভাবে অর্জুন কতৃক ভগবান কৃষ্ণের স্থুল শরীরকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হল। এখন প্রশ্ন হল ভগবানের তো জন্ম মৃত্যু কিছুই হয় না। তাহলে এই কৃষ্ণ কি ভগবান নন বা ঈশ্বর নন? (যেহেতু অনেকেই ভগবান কে ঈশ্বর সাদৃশ মনে করেন)

উত্তর হল, সূর্য্যের উদয় অস্ত কিছুই হয় না কিন্তু মানুষ তা দেখছে যে সূর্য উঠছে আর অস্ত যাচ্ছে। তেমনি আত্মার বিনাশ নেই। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগী ছিলেন এবং পরমাত্মার জ্ঞান উনার ছিল তাই উনি ভগবান অবশ্যই। কিন্তু সেই উপাধি আমরা দিচ্ছি শুধু উনার আত্মাকে। উনার পঞ্চভূতের শরীরকে নয়। শ্রীকৃষ্ণ(আত্মা বলা হচ্ছে) নিজেই বলেছেন আমি অজ (জন্ম রহিত) অব্যয় ( মৃত্যু রহিত) আবার ভাগবতেও বলা হচ্ছে উনার পিতা মাতা নেই। মানে উনি সেই চিন্ময় পরমাত্মা যিনি ইহ-জগতের  মায়ার উর্ধ্বে। কিন্তু যখন তিনি জড় শরীরে আসেন তখন তিনি প্রকৃতি আশ্রয় করে প্রকট হন। আর এই কথা গীতাতেই আছে। তাই অবতার অতি মানব কিছু এমনটা নয়। অবতারেরা সব কিছুর অধীনে থেকেই লীলা করেন। তাই তাঁদের সাধারণ মানুষ ভাবা যাবে না অবশ্যই। তিনি লোকশিক্ষার জন্য দেহ ধারণ করেন আর জীব জগতকে ধর্ম শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

নমস্কার। 

হর হর মহাদেব। জয় শ্রীকৃষ্ণ। 


সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts