Saturday, August 17, 2019

আধুনিক বনাম প্রাচীন ICBM ক্ষেপণাস্ত্র

আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্র
============================
আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্র বা Intercontinental ballistic missile (ICBM) হলো লেসার রশ্মি দ্বারা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত পরমাণু অস্ত্র সংবহনকারী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। ন্যূনতম ৫৫০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্ব অতিক্রমকারী পরমাণু অস্ত্র সংবহনকারী ক্ষেপণাস্ত্রকেই ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেসটিক ক্ষেপণাস্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। শত্রু পক্ষের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একসাথে নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হানবার জন্য আধুনিককালের আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে একাধিক থার্মো নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। আধুনিক আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির কর্মসূচি অনুসারে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রক শুধুমাত্র একটিই ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে স্বতন্ত্রভাবে শত্রুপক্ষের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে একসাথে পরমাণু হামলা চালাতে সক্ষম। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রক একবার নিজের কম্পিউটার স্ক্রিনে লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করলেই সেটি শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে ধাবিত হয়ে মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পরমাণু বিস্ফোরণ করে গুঁড়িয়ে দেবে চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তুকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাট্রিয়ট অ্যান্টি ICBM মিসাইল ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া নিক্ষিপ্ত ICBM কে নিষ্ক্রিয় করবার জন্য এই মুহূর্তে আর কোন সামরিক অস্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, ভারত আর উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রাগারেই মজুদ রয়েছে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্র। বলাই বাহুল্য চিনের সহায়তা গ্রহণ করে উত্তর কোরিয়া ICBM নির্মাণ করতে সফল হয়েছে আর এই মুহূর্তে চিনের নিকট থেকে ICBM ক্রয় করতে ব্যাস্ত পাকিস্তান।
পূর্বে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মারন ক্ষমতা অনেকটাই সীমিত ছিল এবং এই ধরনের দূরপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মূলত শত্রুপক্ষের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কোন মহাগুরুত্বপূর্ণ স্থানকে (যেমন কোন বড় শহর) ধ্বংস করবার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া পূর্বে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি এমন সুরক্ষিত সামরিক স্থানে সংরক্ষিত করা হতো যেখানে সহজে শত্রুপক্ষের সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। শত্রুপক্ষের অনান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র সামরিক স্থানগুলিতে মূলত ফাইটার জেটের সাহায্যেই আক্রমন করা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি আর সেই সাথে আরও সুদৃঢ় হয়েছে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমনের পরিধি। বর্তমান যুগের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের LGM-118 Peacekeeper আর ভারতের অগ্নি ৫ এর মতো ক্ষেপণাস্ত্রগুলি শত্রুপক্ষের অত্যন্ত ক্ষুদ্র লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। ভারত যখন ১৯শে এপ্রিল, ২০১২ সালে প্রথমবারের জন্য অগ্নি ৫ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষামূলক ভাবে উৎক্ষেপণ করে তখন এটির দূরত্ব ছিল মাত্র ৫০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ সামরিক পরিভাষায় অগ্নি ৫ তখনও ICBM এর মর্যাদা পায়নি। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে এটির ষষ্ঠ আর সপ্তম উৎক্ষেপণের পরে এটি সফলতার সাথে ৮০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করে ICBM এর তালিকাভুক্ত হয়। সম্প্রতি ৮০০০ থেকে ১২০০০ কিলোমিটার দূরত্ব সম্পন্ন নতুন অগ্নি ৬ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ শুরু করেছে DRDO। অগ্নি ৬ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগারে আসতে এখনও লেগে যাবে কমকরে ৫-৬ বছর সময়। দুঃখের বিষয় আমেরিকা, রাশিয়া আর চিনের ICBM গুলি ন্যূনতম ১০,০০০ কিলোমিটার থেকে ১৬,০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এমনকি উত্তর কোরিয়ার ICBM KN-08 ১২,০০০ কিলোমিটার আর Hwasong-15 ১৩,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। একুশ শতকের আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ভ্রাম্যমাণ পরিবহনকারী লঞ্চারের সাহায্যে অনায়াসেই এক স্থান থেকে অপর স্থানে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপ করা যায়। এধরনের ভ্রাম্যমাণ লঞ্চারকে Transporter Erector Launchers (TEL) নামে অভিহিত করা হয়।
যদিও বর্তমানে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রের অস্ত্রভাণ্ডারে ভারত অবশিষ্ট ৪ টি রাষ্ট্রের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে কিন্তু প্রাচীনকালে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে বিশ্বের অন্ত্যতম অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত হতো। রামায়ন আর মহাভারতের বিবরনে রয়েছে ভারতীয় যোদ্ধা আর দেবতাদের দ্বারা অত্যাধুনিক ICBM এর যথেচ্ছ ব্যবহারের বিবরণ। প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের মাটিতে ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু সংবহনকারী ICBM এর নাম হলো ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র, ব্রহ্মাণ্ড অস্ত্র, পাশুপাত অস্ত্র আর ব্রহ্মাস্ত্রের।





ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র
=========
মহাভারতের গাথা অনুসারে ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র নামধারী পরমাণু সংবহনকারী ক্ষেপণাস্ত্রটি অশ্বত্থমা এবং অর্জুন দুজনে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন। এই ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্রই সম্ভবত পৃথিবীর বুকে ব্যবহৃত প্রথম পরমাণু অস্ত্র, থার্মো নিউক্লিয়ার ফিউশন বোমা সংবহনকারী ICBM। এই সেই অস্ত্র যা কোন রাষ্ট্র বা নগরে একবার নিক্ষেপ করা হলে পরবর্তী দ্বাদশ বর্ষকাল যাবৎ সেই স্থানে আর বৃষ্টি হতো না, আবহাওয়া বিষাক্ত হয়ে উঠতো এবং খরার প্রকোপে পড়তো।
ব্রহ্মাণ্ড অস্ত্র
========
মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী স্বয়ং ব্রহ্মার পঞ্চ মুণ্ডমালা এই অস্ত্রের প্রান্ত হিসাবে ব্যবহার করা হতো। সম্পূর্ণ সৌর জগৎ বা ব্রহ্মাণ্ড এক লহমায় ধ্বংস করে দেবার ক্ষমতা ছিল এই অস্ত্রের। প্রাচীন সনাতন বা হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে ব্রহ্মাণ্ড বলতে ১৪ টি লোককে বোঝানো হয়েছে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে একবার পৃথিবীর বুকে এই ব্রহ্মাণ্ড নামক ICBM ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলে সাগরের জলরাশি আগ্নেয়গিরির ন্যায় একটি তপ্তকুণ্ডে পরিণত হতো আর হিমালয়ের ন্যায় সুবিশাল পর্বতরাজি শূন্যে উত্থলিত হয়ে ঘূর্ণিয়মান হতো।
পাশুপাত অস্ত্র
==========
মহাভারতে বর্ণিত অস্ত্রভাণ্ডারের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ মারণাস্ত্র হলো পাশুপাত অস্ত্র। মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী এই ICBM ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার করতেন স্বয়ং মহাদেব আর মা কালী। এই অস্ত্র বিশেষ একটি গাণ্ডীবের (ধনুক) সহায়তায় নিক্ষিপ্ত করা হতো। পাশুপাত অস্ত্রটি নিক্ষেপ করবার জন্য প্রয়োজন হতো বিশেষ একটি মন্ত্রের। অস্ত্রটি সজীব করবার জন্য প্রয়োজন হতো ব্যবহারকারীর চোখের রেখার। সমগ্র ধরিত্রীকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত করবার ক্ষমতা ছিল এই পাশুপাত অস্ত্রেরও। মহাদেবের নিকট থেকে বরদান হিসাবে এই মারাত্মক অস্ত্রটি লাভ করেছিলেন ইন্দ্রপুত্র অর্জুন, তবে এর মারণ ক্ষমতার কথা ভেবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কখনও ব্যবহার করেননি এই অস্ত্র। পাশুপাত অস্ত্রের মারণ ক্ষমতার কথা চিন্তা করে কলিযুগে এর অপব্যবহার রুদ্ধ করবার জন্য স্বয়ং মহাদেব লুপ্ত করেছেন এই অস্ত্র নিক্ষেপ করবার বিশেষ গোপন মন্ত্র।
ব্রহ্মাস্ত্র
=====
রামায়ন, মহাভারত আর বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় গাথা অনুসারে ব্রহ্মাস্ত্র নামক পরমাণু অস্ত্র সংবহনকারী ICBM ছিল দেবতাদের দ্বারা ব্যবহার করা সর্বোচ্চ শক্তিশালী মারনাস্ত্র। বিভিন্ন ভারতীয় পুরাণ গাথার বর্ণনা অনুসারে একবার এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে আর কোন অস্ত্র দ্বারা সেটিকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব ছিল না। আমেরিকার প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্রের ন্যায় শুধুমাত্র ব্রহ্মদণ্ড ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারাই ব্রহ্মাস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব ছিল। লেসার রশ্মির ন্যায় উন্নত ভিনগ্রহী দেবতাদের দ্বারা আবিষ্কৃত কোন বিশেষ শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়ে একেবারে নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হেনে শত্রুপক্ষের সুবিশাল নগরী থেকে ক্ষুদ্র বস্তুকেও সফলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম ছিল ব্রহ্মাস্ত্র নামক আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রটি। খুব সম্ভবত পূর্বের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ICBM এর প্রাথমিক সংস্করণ ছিল আর ব্রহ্মাস্ত্র ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের LGM-118 Peacekeeper এর ন্যায় একেবারে তৃতীয় জেনারেশনের অত্যাধুনিক ICBM। রামায়ন আর মহাভারতের বিবরণ অনুযায়ী ব্রহ্মাস্ত্রকেও বিশেষ ধনুকের সাহায্যে অনায়াসেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থান্তরিত করা যেতো। ওই ধরনের বিশেষ ধনুকই একুশ শতকে Transporter Erector Launchers (TEL) নামে সুপরিচিতি লাভ করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে মানবজাতি যখন সবেমাত্র প্রস্তর যুগ অতিক্রম করে তামার তরবারি ব্যবহার করা আর ঘোড়ায় চড়া শিখছে সেই সময় কিভাবে তাঁরা এতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে পারলো ? নাকি তথাকথিত উন্নত ভিনগ্রহী দেবতাদের ব্যবহার করা অস্ত্রগুলি দর্শন করে আর দেবতাদের নিকটেই এসব অস্ত্র পরিচালনার বর্ণনা শুনে রামায়ন আর মহাভারতে এইসব মারাত্মক অস্ত্রের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছিল তৎকালীন মানবজাতি ? প্রশ্ন আরও উঠছে পরবর্তীকালে অখণ্ড ভারতবর্ষের ভূমিতে যখন ঝঞ্ঝার ন্যায় আছড়ে পড়ছে গ্রীক, শক, হুন, তুর্কি আর মোগলদের একের পর এক আক্রমন তখন কেন সেইসব অস্ত্র ব্যবহার করে ভারতবর্ষকে রক্ষা করেননি তৎকালীন ভারতীয় রাজা আর সম্রাটরা ? তাহলে কি পৃথিবীর ভূমিতে নিজেদের স্বার্থ ফুরনোর সাথে সাথে দেবতারা নিজেদের মহাকাশযানে সওয়ার হয়ে সেইসব অস্ত্রশস্ত্র সমেত চিরতরে পাড়ি দিয়েছিলেন সদুর নক্ষত্রলোকে নিজেদের গ্রহে ? সুমেরীয় সভ্যতার আনুনাকিদের বিবরণ কিন্তু সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ফিরে যাবার পূর্বে নিজেদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দেবতারা পৃথিবীর মাটিতে রেখে গিয়েছিলেন অত্যাধুনিক জেনেটিক প্রযুক্তির দ্বারা সৃষ্ট বুদ্ধিমান আর উন্নত এক নতুন মানবজাতিকে যারা একুশ শতকে সফলতার সাথে নির্মাণ করতে পেরেছেন ব্রহ্মাস্ত্রের আধুনিক সংস্করণ লেসার পরিচালিত ICBM ক্ষেপণাস্ত্র। সম্প্রতি নাসার এক বৈজ্ঞানিক হেঁয়ালিপূর্ণ ভাষায় বলেছেন বর্তমান যুগের মানবজাতি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত পৃথিবীর মাটিতে দেবতাদের সম্মুখীন হবার জন্য।

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts