১। বাল্মীকি রামায়ণের মা সীতা আর কৃত্তিবাস রামায়ণের মা সীতার মাঝে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বাল্মীকির রামায়ণে মা সীতা বীরাঙ্গনা। অপহরণকালে তিনি ক্রুদ্ধা সিংহিনীর মত গর্জন করে বলছেন,
‘ধিক্ তে শৌর্য্যঞ্চ সত্ত্বঞ্চ ষৎ ত্বয়া কথিতং তদা’।
আর অন্যদিকে কৃত্তিবাসের বর্ণনা হলো,
‘জানকী কাঁপেন যেন কলার বাগুড়ি’।
বুঝলেন কিছু ? বাল্মীকির রামায়ণে মা সীতা রাবণের সাথে রেগে তর্ক করছেন, গর্জন করছেন। অপরদিকে কৃত্তিবাস লিখলেন মা সীতা অপহরণকালে ভয়ে কাঁপছে! একজন অবলা স্বরূপ।
‘ধিক্ তে শৌর্য্যঞ্চ সত্ত্বঞ্চ ষৎ ত্বয়া কথিতং তদা’।
আর অন্যদিকে কৃত্তিবাসের বর্ণনা হলো,
‘জানকী কাঁপেন যেন কলার বাগুড়ি’।
বুঝলেন কিছু ? বাল্মীকির রামায়ণে মা সীতা রাবণের সাথে রেগে তর্ক করছেন, গর্জন করছেন। অপরদিকে কৃত্তিবাস লিখলেন মা সীতা অপহরণকালে ভয়ে কাঁপছে! একজন অবলা স্বরূপ।
২। বাল্মীকি রামায়ণে বাল্মীকি একজন তপস্বী ছিলেন। উনি রাময়ণের প্রথম শ্লোকেই একজন তপস্বী। কিন্তু কৃত্তিবাস রামায়ণে বাল্মীকি ছিলেন রত্নাকর দস্যু! মরা মরা জপ করে বাল্মীকি হয়েছেন! এমন কথা বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
৩। কৃত্তিবাস রামায়ণে রামের দূর্গাপূজার উল্লেখ রয়েছে বা অকাল বোধনের কথা আছে। এই দূর্গাপূজার কথাও বাল্মীকি রামায়ণে নেই!
৪। কৃত্তিবাস রামায়ণে পাওয়া যায় শ্রী রামের জন্মের ৬০ হাজার বছর পূর্বে রামায়ণ রচনা হয়। এটাও মিথ্যা। কারণ বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় নারদকে বাল্মীকি প্রশ্ন করছেন,
‘কোন্বস্মিন্ সাম্প্রতং লোকে গুনবান্ কশ্চ বীর্য্যবাণ্’ এই প্রশ্ন থেকেই বুঝা যায় রামায়ণ রচনাকালে শ্রী রাম তখন রাজত্ব করছেন।
মূল রামায়ণে স্পষ্ট বলা আছে,
‘প্রাপ্ত রাজস্য রামস্য বাল্মীকির্ভগবান ঋষীঃ।’
(আদিকাণ্ড, ৪/১)।।
‘কোন্বস্মিন্ সাম্প্রতং লোকে গুনবান্ কশ্চ বীর্য্যবাণ্’ এই প্রশ্ন থেকেই বুঝা যায় রামায়ণ রচনাকালে শ্রী রাম তখন রাজত্ব করছেন।
মূল রামায়ণে স্পষ্ট বলা আছে,
‘প্রাপ্ত রাজস্য রামস্য বাল্মীকির্ভগবান ঋষীঃ।’
(আদিকাণ্ড, ৪/১)।।
৫। কৃত্তিবাস রামায়ণে পাওয়া যায়, যজ্ঞ রক্ষার জন্য বিশ্বামিত্রের সাথে রাম লক্ষণকে পাঠাতে হবে জেনে রাজা দশরথ বিশ্বামিত্রের সাথে ছলনা করেন। অথচ বাল্মীকি রামায়নে দশরথ প্রসন্নচিত্তে, নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে বিশ্বামিত্রের সাথে রাম লক্ষণকে পাঠিয়েছিলেন।
৬। কৃত্তবাস রামায়ণে, গৌতমপত্নী অহল্যা পাথর হয়েছিলেন। রামের চরণ স্পর্শে তিনি মনুষ্য শরির প্রাপ্ত হন। অথচ বাল্মীকি রাময়ায়নে পাই, অহল্যা দেবী লোকচুক্ষুর অন্তরালে থেকে কঠোর ব্রহ্মচারিণী জীবন যাপন করেছিলেন।
‘বাতভক্ষ্যা নিরাহারা তপ্যন্তী ভস্মশায়িনী’।।
‘বাতভক্ষ্যা নিরাহারা তপ্যন্তী ভস্মশায়িনী’।।
৭। কৃত্তিবাস রামায়নে, রাবণ বিভিষণকে পদাঘাত করায় সে রামের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু বাল্মীকি রামায়ণে রাবন কেবল ক্রোধী হয়ে তিরস্কার করেছিলেন। বরং বিভীষণ রাবনের সেই তিরস্কার সহ্য করতে না পেরে বারণকে গালি দিয়ে প্রস্থান করেন।
৮। কৃত্তিবাস রামায়ণে, হনুমান সূর্যকে বগলদাবা করে গন্ধমাদন পর্ব্বত মাথায় করে নিয়ে আসা। কালনেমি সংবাদ। নন্দী গ্রামে ভরতের সাথে হনুমানের সাক্ষাৎ। সমুদ্রলঙ্ঘনের সময় হনুমানের সাথে রাক্ষসী সিংহিকার সাক্ষাৎ - এই সমস্ত কিছুই বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
৯। কৃত্তিবাস রামায়ণের মহীরাবণ বধ, অহীরাবণ বধ, অতিকায়, বীরবাহু তরণীসেন প্রভৃতির কাটামুণ্ডের রাম নাম উচ্চারণ করার কাহিনীও বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
১০। কৃত্তিবাস রামায়নে লক্ষণের চৌদ্দ বছর ধরে ফল আনয়নের কাহনী, লবকুশের যুদ্ধাদি সহ সমগ্র উত্তর কাণ্ডই বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় না!
এখন এই কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রকারভেদ যদি বলি তাহলে চমকে উঠবেন। কারণ, কৃত্তিবাসের নামকরণে প্রায় দেড়শত রামায়ণ পাওয়া যায়! যা একটির সাথে আরেকটির অনেক অমিল খোঁজে পাওয়া যায়। বটতলা প্রকাশিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ ইদানীংকালের প্রচার বেশি। কিন্তু সত্যি হলো এই রামায়ণের লেখক কৃত্তিবাস নয়! ইহা পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার কর্ত্তৃক পরবর্তিতে লিপিবদ্ধ হয়।
আবার ত্রিপুরা শ্রীহট্টতে যে সব কৃত্তিবাসী রামায়ণ পাওয়া যায় সেগুলোতে মহীরাবণ বধ, অহীরাবণ বধ, অতিকায়, বীরবাহু তরণীসেন প্রভৃতির কাটামুণ্ডের রাম নাম উচ্চারণ করার কাহিনী গুলো মিসিং। তো, বুঝতেই পারছেন কবির ভাষায় রামায়ণ কাহিনীতে পর্যায়ক্রমে শুধু ঘঠনাক্রম বেড়েই এসেছে। মূল রামায়ণে পাওয়া যায় বাল্মীকি নারদের কাছে জানতে চাইলেন, ভূমণ্ডলের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ? জ্ঞানেগুনে সত্যনিষ্ঠা এবং প্রজানুরঞ্জনে আদর্শ চরিত্র কার ? উত্তরে, নারদ শ্রীরাম বর্ণনা শুরু করলেন। বাল্মীকির সেই সব কাহীনি শুনে যখন উনার কবিত্ব জেগে উঠলো তখন কেবল ৭১ শ্লোকের রামায়ণ রচিত হয়।।
আবার ত্রিপুরা শ্রীহট্টতে যে সব কৃত্তিবাসী রামায়ণ পাওয়া যায় সেগুলোতে মহীরাবণ বধ, অহীরাবণ বধ, অতিকায়, বীরবাহু তরণীসেন প্রভৃতির কাটামুণ্ডের রাম নাম উচ্চারণ করার কাহিনী গুলো মিসিং। তো, বুঝতেই পারছেন কবির ভাষায় রামায়ণ কাহিনীতে পর্যায়ক্রমে শুধু ঘঠনাক্রম বেড়েই এসেছে। মূল রামায়ণে পাওয়া যায় বাল্মীকি নারদের কাছে জানতে চাইলেন, ভূমণ্ডলের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ? জ্ঞানেগুনে সত্যনিষ্ঠা এবং প্রজানুরঞ্জনে আদর্শ চরিত্র কার ? উত্তরে, নারদ শ্রীরাম বর্ণনা শুরু করলেন। বাল্মীকির সেই সব কাহীনি শুনে যখন উনার কবিত্ব জেগে উঠলো তখন কেবল ৭১ শ্লোকের রামায়ণ রচিত হয়।।