Saturday, September 30, 2017

সাত প্রকার স্ত্রী কথা ও গৌতম বুদ্ধের উপদেশে সুজাতার আমূল পরিবর্তন

সুজাতা ছিলেন ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠীর কন্যা। বিশাখার ছোট বোন সুজাতা ছোটকাল হতে অত্যন্ত মুখর দাম্ভিক ছিলেন। বিশাখার সহোদরা হলেও দু'বোনের মধ্যে স্বভাবের কোন মিল নেই। বড় বোন বিশাখা ধীরস্থির, বিদুষী, বিনীতা, শান্তশীলা ও বুদ্ধিমতি আর ছোটবোন সুজাতা ঠিক তার বিপরীত।
ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠী কন্যা সুজাতাকে অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীর বাড়ীতে বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন করেন। সুজাতার পিতার অতুল ঐশ্বর্য্যের নিকট শ্বশুর অনাথপিণ্ডিকের সম্পত্তি কম হলেও উপেক্ষণীয় নয়। তবুও শ্বশুরকুলের বিত্ত সুজাতার মনকে সন্তোষ দিতে পারল না।

অনাথপিণ্ডিক জেতবন বিহার তৈরী করতে চুয়ান্ন কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেন। তখন তিনি সেই সময় প্রতিদিন পাঁচশত ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান করতেন। কত কর্মচারী, দাস-দাসী রয়েছে! তবুও সুজাতার মন খুশী নয়। ধীরে ধীরে তার স্বভাব, আত্মগৌরব ও দাম্ভিকতা উন্মুখ হয়ে উঠল। পিতার সম্পত্তির গর্ব করে শ্বশুরকুলের প্রতি অমান্যতা, কর্কশ বাক্য আর উচ্চবাক্য প্রয়োগ করতে লাগল। সকলের শান্তি নষ্ট হল। শান্তিকামী সুখবিহারী অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীর সুখ ভেঙ্গে গেল। তাদের সুখের সংসারে অশান্তির সূচনা হল। অনাথপিণ্ডিক চিন্তিত হলেন। পুত্রবধুর কুৎসা প্রচার রটানো কি অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীর শোভা পায়? অগত্যা তিনি নীরবে থাকায় বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলেন।





একদিন অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠী তথাগত বুদ্ধকে ঘরে আহারের নিমন্ত্রণ করেন। তথাগত যথাসময়ে এসে সুসজ্জিত আসনে উপবেশন করলেন। এমন সময়ে অন্তঃপুরে কলহের উচ্চ শব্দ শুনতে পেয়ে বুদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন। এতে শ্রেষ্ঠীর মুখ বিমর্ষ হইল। দুঃখের সাথে বললেন, ভগবান, আমার পুত্রবধু সুজাতাই যত অনর্থের মূল। ধনকুবের ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠীর কন্যা কিনা, তাই তার এত অহংকার বেশী! সে শ্বশুর-শ্বাশুরীকে মান্য করে না, স্বামীকে অমান্য করে, অবহেলা করে। এমনকি প্রভু! আপনাকেও সম্মান প্রদর্শনে সে আগ্রহী নয় মনে করি। অন্যজনের কথাই বা কি! তথাগত সুজাতাকে আহ্বান করলেন। সুজাতা এসে বুদ্ধকে বন্দনা করে বসে পড়ল।

 বুদ্ধ বললেন, সুজাতা! আমি এখন তোমাকে পুরুষের সাত প্রকার ভার্য্যা সম্বন্ধে বলব; (১) বধকাসমা ভার্য্যা, (২) চৌরিসমা ভার্য্যা, (৩) আর্য্যাসমা ভার্য্যা, (৪) মাতৃসমা ভার্য্যা, (৫) ভগ্নিসমা ভার্য্যা, (৬) সখীসমা ভার্য্যা ও (৭) দাসীসমা ভার্য্যা - এই সাত প্রকার ভার্য্যার মধ্যে তুমি কোন প্রকারের ভার্য্যা? সুজাতা তখন বিনীতভাবে বললেন, প্রভু! আপনি সংক্ষেপে যা বললেন তা আমি বুঝলাম না। অনুগ্রহ করে আমাকে ভালভাবে বিস্তারিত বুঝিয়ে দিন আমি যাতে বুঝতে পারি। বুদ্ধ তখন বললেন, শোন সুজাতা ----

(১) যে স্ত্রী প্রদুষ্টাচিত্তা, কলহ স্বভাবা, স্বামীর অমঙ্গলকারিনী, পরপুরুষে আসক্তা, নিজের স্বামীকে অবজ্ঞাকারিনী, স্বামীর ধনসম্পদ অপব্যয়কারিনী, অর্থ না পেলে অনর্থকারিনী, স্বামীকে হত্যা করার ভয় দেখায়, এমনকি হত্যা করতেও উন্মুখ হয়, তেমন স্ত্রীকে বধকাসমা ভার্য্যা বলা হয়।

(২) যে স্ত্রী স্বামীর শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষি কর্মের দ্বারা উৎপন্ন ধন-সম্পদ উপভোগ করে, তবুও স্বামীর সম্পদ চুরি করার ইচ্ছা করে এবং অল্প হলেও চুরি করে, যেমন- রান্নার সময় ধৌত করার জন্য যে চাউল নেয়া হয়, তা হতেও চুরি করে। আর অন্যকিছুর কথাই বা কি? সেই রকম স্ত্রীকে চৌরিসমা ভার্য্যা বলা হয়।

(৩) যে স্ত্রী নিষ্কর্মা আলস্যপরায়ণ, অধিক ভোজনকারিনী, আর্য্যের বস্তুর প্রতি অধিকার ও লোভ পরায়ণা, মুখরা, প্রচণ্ডা, দুর্ভাষিনী, বাক্যের উপর বাক্য প্রয়োগ করে, স্বামীকে অবজ্ঞা করে, জনমণ্ডলীকে পরাস্থ করার চেষ্টা করে, স্বামীর উৎসাহ উদ্যম অসহনশীলা। এই রকম স্ত্রীকে আর্য্যাসমা ভার্য্যা বলে।








(৪) স্বামীর সঞ্চিত ধন যে স্ত্রী রক্ষা করে, সর্বদা স্বামীর হিত কামনা করে ও উপকারিনী, মাতা পুত্রকে রক্ষার ন্যায় স্বামীকে রক্ষা করে, এই রকম স্ত্রীকে মাতৃসমা ভার্য্যা বলা হয়।

(৫) জ্যেষ্ঠ সহোদরের প্রতি কনিষ্ঠ ভগ্নির আদর ও সম্মান প্রদর্শনের ন্যায় যে স্ত্রী স্বামীকে প্রতি আদর সম্মান করে, স্বামীর প্রতি লজ্জাবনতা ও স্বামীর প্রতি অনুবর্ত্তনী হয়। এই রকম স্ত্রীকে ভগ্নিসমা ভার্য্যা বলে।

(৬) দীর্ঘদিন পরে সখার আগমনে সখীর আনন্দিত হবার মত স্বামী দর্শনে যে স্ত্রী আনন্দিত হয় এবং কুল মর্যাদা রক্ষাকারিনী, শীলবতী ও পতিব্রতা হয়। সে স্ত্রীকে সখীসমা ভার্য্যা বলা হয়।

(৭) যে স্ত্রী স্বামী শাসন-অনুশাসন এবং লাঠি হস্তে তর্জন-গর্জন করলেও যে স্ত্রীর চিত্ত দূষিত হয় না বা ক্রোধ হয় না, হিংসা উৎপন্ন হয় না বরং স্বামীর শাসন সহ্য করে এবং ক্রোধহীনা, শান্তশীলা ও স্বামীর আনুগত্য হয়। সে স্ত্রীকে দাসীসমা ভার্য্যা বলা হয়।

এই সাত প্রকার ভার্য্যা বিষয়ে বর্ণনা করার পর বুদ্ধ আরো বললেন “সুজাতা, যে সকল ভার্য্যা বধকা, চোরী ও আর্য্যাসমা হয়, মুখরা, প্রচণ্ডা, দুঃশীলা, লজ্জাহীনা হয় ও পরুষবাক্য প্রয়োগ করে, স্বামীকে অনাদর করে, অখাদ্য খাওয়ায়, স্বামী রোগগ্রস্থ হলে সেবা করে না, সেইসব স্ত্রী মৃত্যুর পর নরকে জন্ম নিয়ে দুঃসহ দুঃখ ভোগ করে। আর যেইসব স্ত্রী মাতৃসমা, ভগ্নিসমা, সখীসমা এবং দাসীসমা তারা মৃত্যুর পর সুগতি স্বর্গে উৎপন্ন হয়। সুজাতা, এই সপ্ত প্রকারের মধ্যে তুমি কোন প্রকারের ভার্য্যা? সুজাতা তখন বিনীত বাক্যে বললেন, প্রভু! অদ্য হতে আমাকে দাসীসমা ভার্য্যা বলে জানবেন। সুজাতা আবার বলে উঠল, প্রভু! আমি এতদিন অন্ধকারে আবৃত ছিলাম।





এখন আপনার দয়ায় আলোকের সন্ধান পেয়েছি। বাবার ঐশ্বর্য্যের অহঙ্কার আত্মভিমান এখন আমার ধ্বংস হয়েছে। আমার ভ্রান্তি নিরসন হয়েছে। ভগবান! মহান বৌদ্ধকুল পরিবারের কুলবধু হয়ে আমার বিচ্যুতির জন্য আমি এখন খুবই লজ্জিত, অনুতপ্ত। আপনার অমৃতবাণী আমার মনে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই বলে সুজাতা বুদ্ধের চরণ তলে ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন। আর শ্বশুর-শ্বাশুরীকে ও স্বামীর পায়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।

সেই হতে সুজাতা ভদ্রা, বিনীতা, শান্তশীলা, প্রিয়ভাষিনী হলেন; মধুর মিষ্টি স্বরে সকলের প্রতি প্রাণে প্রীতি ও আনন্দ দান করতেন; ত্রিরত্নের উপাসিকা হয়ে দানে আত্মনিয়োগে রত থাকতেন, শীল সমাধিতে ও প্রজ্ঞায় অনুশীলনে তাঁর কুল মর্যাদার অক্ষুন্ন রাখতেন। অর্থাৎ সুজাতার বিভিন্ন গুণ বিদ্যমানে সবাই আনন্দমুখর হয়ে উঠল। সর্বজ্ঞ বুদ্ধের মহিমাময় প্রভাবেই সুজাতার এমন বর্ণনাতীত আমূল পরিবর্তন হল।




Friday, September 29, 2017

দুর্গা পুজায় পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রের রকমফের




শ্রীশ্রীদুর্গাপূজায় সপ্তমী, অষ্টমী আর নবমীর পুষ্পাঞ্জলি এবং প্রণামমন্ত্র আলাদা আলাদা হয়, একটু খেয়াল রাখবেন। তিনদিনই সচন্দনপুষ্প ও বিল্বপত্র হাতে নিয়ে বলুন :
* সপ্তমী :-
(1) নমঃ আয়ুর্দ্দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে | পুত্রান্ দেহি ধনং দেহি সর্ব্বান্ কামাশ্চ দেহি মে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
(2) হর পাপং হর ক্লেশং হর শোকং হরাসুখম্ | হর রোগং হর ক্ষোভং হর মারীং হরপ্রিয়ে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
(3) সংগ্রামে বিজয়ং দেহি ধনং দেহি সদা গৃহে | ধর্ম্মার্থকামসম্পত্তিং দেহি দেবী নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
* প্রণাম মন্ত্র :- সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বাথসাধিকে | শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোস্তু তে ||
* অষ্টমী :-
(1) নমঃ মহিষগ্নি মহামায়ে চামুন্ডে মুন্ডমালিনি | আয়ুরারোগ্য বিজয়ং দেহি দেবী নমোস্তুতে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
(2) নমঃ সৃষ্টিস্তিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি | গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
(3) নমঃ শরণাগতদীর্নাত পরিত্রাণপরায়ণে | সর্বস্যাতিহরে দেবী নারায়ণি নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
* প্রণাম মন্ত্র :- জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী | দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তু তে ||
* নবমী :-
(1) কালি কালি মহাকালি কালিকে কালরাত্রিকে | ধম্মকামপ্রদে দেবি নারায়ণি নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
(2) লক্ষ্মি লজ্জে মহাবিদ্যে শ্রদ্ধে পুষ্টি স্বধে ধ্রুবে | মহারাত্রি মহামায়ে নারায়ণি নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
(3) কলাকাষ্ঠাদিরূপেণ পরিণামপ্রদায়িনি | বিশ্বস্যোপরতৌ শক্তে নারায়ণি নমোস্তু তে ||
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ নমঃ দক্ষযঞ্জ বিনাশিন্যে মহাঘোরায়ৈ যোগিনী কোটিপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ||
* প্রনাম মন্ত্র :- সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বি তে | ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোস্তু তে ||

Friday, September 15, 2017

দুর্গা পূজা ও বৈষ্ণব শাস্ত্র

 এই লেখাটি গোঁড়া বৈষ্ণবদের উদ্দেশ্যে লেখা । ইস্কন নামক এক নব্য বৈষ্ণব গোষ্ঠী সবসময় প্রচার করে আসছে যে , দুর্গা নাকি কৃষ্ণের দাসী !! তাদের বলতে চাই -- আপনারা নিজেদের কথা যত সত্য হয় বলুন । কিন্তু অন্যের সম্বন্ধে কথা বলতে গেলে দৃঢ় শাস্ত্র যুক্তি দিয়ে কথা বলবেন । যদি বিচার করতে চান তবে আসুন বিচার করি ।
দুর্গা পূজা বছরে দুই বার হয় । শরৎকালে আর বসন্তকালে । বসন্তকালে হয় বলে এর নাম বাসন্তী পূজা । বৈষ্ণবদের অন্যতম প্রধান শাস্ত্র ব্রহ্মবৈবত্ত পুরাণে আছে --
পুরা স্তুতা সা গোলোকে কৃষ্ণেণ পরমাত্মনা ।
সংপূজ্য মধুমাসে চ প্রীতেন রাসমণ্ডলে ।। ( প্রকৃতি খণ্ড ৬৬/২ ) ।
" পূর্বকালে গোলোকে রাসমণ্ডলে বসন্তকালে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ সর্বপ্রথম দুর্গা পূজা করেছেন । দ্বিতীয়বার বিষ্ণু এবং পরে ব্রহ্মা দুর্গা পূজা করেছেন " ।
শরৎকালে অকাল বোধনের মাধ্যমে দুর্গা পূজা করেছেন ভগবান রামচন্দ্র ।
বৈষ্ণবদের সবথেকে প্রধান শাস্ত্র ভাগবত পুরাণে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁর যোগমায়া শক্তি দুর্গাকে বলছেন -- তুমি পৃথিবীতে নানা নামে পূজিত হবে এবং ভক্তগণ তোমাকে নানা পূজা সামগ্রীর দ্বারা তোমার আরাধনা করবে । ( ভাগবত , ১০/২/ ১০-১২ ) ।
মহাভারতের যুদ্ধের পূর্বে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দুর্গা স্তব করতে আদেশ করে । ( মহাভারত , ভীষ্মপর্ব , ২৩/ ৪-১৬ ) ।
পরম বৈষ্ণব শ্রীজীব গোস্বামী ভাগবতের ব্যাখ্যায় বলেছেন --
যঃ কৃষ্ণ সৈব দুর্গা স্যাৎ
যা দুর্গা কৃষ্ণ এব সঃ ।। ( শ্রী জীব গোস্বামী , ব্রহ্ম সংহিতা -টীকা -ধৃত গৌতমীয় কল্পবচন )
অর্থাৎ , যে কৃষ্ণ , সেই দুর্গা । যে দুর্গা , সেই কৃষ্ণ ।। উহারা অভিন্ন । শক্তিমান ও শক্তি যেমন অভিন্ন , সেই ভাবেই , কৃষ্ণ ও দুর্গা এক ও অভিন্ন ।
তিনি আরও বলেছেন --
অতঃ স্বয়মেব শ্রীকৃষ্ণস্বরূপ শক্তিরুপেন দুর্গানাম --- অর্থাৎ , শক্তিরূপিণী দুর্গার নামই স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণস্বরূপ ।।
অথচ আজ কি আমাদের বৈষ্ণব সমাজ দুর্গা পূজা করে ? হয়তো অনেকেই করে । তারা বলেন -- দুর্গা নাকি কৃষ্ণের দাসী !!! আপনি জানেন কি -- স্বয়ং নিত্যানন্দ প্রভুর বাড়িতে আজও জাঁকজমকের সহিত দুর্গা পুজা হয় ।।
স্বয়ং মহাপ্রভু মা দুর্গার রুপ ধরে ভক্তদের দর্শন দিয়েছেন । ( চৈতন্য ভাগবত , ১৮ অধ্যায় ) ।
----দুর্গারুপী গৌরহরি স্তব----
জননী আবেশ বুজিলেন সর্বজনে ।
সেইরূপে সভে স্তুতি পড়ে , প্রভু শুনে ।।
জয় জয় জগত জননী , মহামায়া
দুঃখিত জীবেরে দেহ চরণের ছায়া ।।
জয় জয় অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড কোটীশ্বরী
তুমি যুগে যুগে ধর্ম রাখ অবতরি ।।
ব্রহ্মা , বিষ্ণু , শিবে তোমার মহিমা
বলিতে না পারে অন্যে কে দিবেক সীমা ।।
জগত স্বরূপা তুমি , তুমি সর্ব শক্তি
তুমি শ্রদ্ধা , দয়া , লজ্জা , তুমি বিষ্ণু ভক্তি ।।
যত বিদ্যা সকল তোমার মূর্তি ভেদ
সর্ব প্রকৃতির শক্তি তুমি কহে বেদ ।।
নিখিল ব্রহ্মাণ্ড গনের সর্ব মাতা
কে তোমার স্বরূপ কহিতে পারে কথা ।।
তুমি ত্রিজগৎ হেতু গুনত্রয়ময়ি
ব্রম্মাদি তোমারে নাহি জানে , এই কহি ।।
সব্বাশ্রয়া তুমি সর্ব জীবের বসতি
তুমি আদ্যা অবিকারা পরমা প্রকৃতি ।।
জগত জননী তুমি দ্বিতীয়া রহিতা
মহী রুপে তুমি সর্ব জীব পাল মাতা ।।
জল রুপে তুমি সর্ব জীবের জীবন
তোমা স্মরিলে খণ্ডে অশেষ বন্ধন ।।
সাধুজন গৃহে তুমি লক্ষ্মী মূর্তিমতী
অসাধুর ঘরে তুমি কালরুপাকৃতি ।।
তুমি সে করাহ ত্রিজগতে সৃষ্টি স্থিতি
তোমা না ভজিলে পায় ত্রিবিধ দুর্গতি ।।
তুমি শ্রদ্ধা বৈষ্ণবের সর্বত্র উদয়া
রাখহ জননী দিয়া চরণের ছায়া ।।
তোমার মায়ায় মগ্ন সকল সংসার
তুমি না রাখিলে মাতা কে রাখিবে আর ।।
সবার উদ্ধার লাগি তোমার প্রকাশ
দুঃখিত জীবের মাতা কর নিজ দাস ।।
ব্রহ্মাদির বন্দ্য তুমি সর্বভূত বুদ্ধি
তোমা স্মরিলে সর্ব মন্ত্রাদির শুদ্ধি ।।
এইমত স্তুতি করে সকল মহান্ত
বর মুখ মহাপ্রভু শুনয়ে নিতান্ত ।। ( চৈতন্য ভাগবত , ১৮ অধ্যায় )।
প্রখ্যাত বৈষ্ণব আচার্য শিরোমণি ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী তাঁর জগত জননী কালী মাতা তত্ত্বে বলেছেন ---
যঃ গৌর সৈব কালী স্যাৎ
যা কালী গৌর এব সঃ ।।
অর্থাৎ -- যে গৌরাঙ্গ সেই কালী , যে কালী সেই গৌরাঙ্গ ।।
আবার , শাস্ত্রে আছে -- কলৌ কৃষ্ণ কলৌ কৃষ্ণা জাগ্রত পন্নগী --- কলিকালে কৃষ্ণ এবং কালী জাগ্রত । কালীর বীজমন্ত্র ক্রীং এবং কৃষ্ণের বীজমন্ত্র ক্লীং । উভয় বীজমন্ত্রের অর্থ একই ।
ঋক বেদের দশম মণ্ডলের ১২৫ নং সূক্তটি দেবী সূক্ত । সেখানে স্পষ্ট মহাশক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে ।
বেদে মা দুর্গার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে -- দুর্গাং দেবীং শরণম অহং প্রপদ্যে । ( ঋক বেদ ৪/২/১২) ।
ঋকবেদের ৪/২/৩ মন্ত্রে কালী মাতার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে । সেখানে কালী কে স্বয়ং ভগবতী বলা হয়েছে ।
অথর্ববেদের মুণ্ডক উপনিষদে কালী মাতার উল্লেখ রয়েছে ।
সামবেদের কেন উপনিষদে উমা / পার্বতীর কথা উল্লেখ রয়েছে ।
সুতরাং কোন যুক্তিতে আপনারা দুর্গা পূজার বিপক্ষে বলেন ।
স্বয়ং বিচার করুন । আমরা কোন পথে আছি ???

Wednesday, September 13, 2017

পরমেশ্বর ভগবান শিবের গাঁজা খাওয়া এবং গাঁজার ইতিকথা

অনেকে শিবকে নিয়ে এই ভাবে কটুক্তি করে যে, শিব গাঁজা খায়, আর গাঁজাখোর শিবকে হিন্দুরা পূজা করে, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।যারা এই ভাবে কটূক্তি করে, তারা জানে না শিবের আসল পরিচয় এবং তারা এটাও জানে না যে, গাঁজা আসলে কোনো মাদকদ্রব্য নয়। এই দুটি বিষয় সবার কাছে পরিষ্কার হবে, আজকের এই পোস্টে। প্রথমেই বলি শিব কে ? হিন্দুশাস্ত্র মতে, সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর হলো পরমব্রহ্ম, যাকে শুধু ব্রহ্মও বলা হয়। পরমাত্মারূপে এই ব্রহ্ম সবকিছুর মধ্যে বিরাজিত, এই জন্যই হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়েছে,
“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম”
এর অর্থ হলো- সকলের মধ্যে ব্রহ্ম বিদ্যমান। - (ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৩/১৪/১, বেদান্ত দর্শন)
পরমব্রহ্ম, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, এই তিনটি রূপে তার কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। ব্রহ্ম, যখন সৃষ্টি করেন, তখন তার নাম ব্রহ্মা; যখন তিনি পালন করেন, তখন তার নাম বিষ্ণু; যখন তিনি বিনাশ করেন, তখন তার নাম শিব বা মহেশ্বর। এই ব্যাপারটা আর একটু পরিষ্কার করার জন্য বলছি, অনেকে বা সকলেই জানেন যে, বিষ্ণু হলো পালন কর্তা। তাহলে বিষ্ণুর অবতারদের তো যুদ্ধ, ধ্বংস, বিনাশ এই সব করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিষ্ণুর আংশিক অবতার রাম কি যুদ্ধ করে রাবনের বংশকে বিনাশ করে নি ? বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার শ্রীকৃষ্ণ কি নিজে কংস, শিশুপাল, নরকাসুরকে হত্যা করে নি ? কৃষ্ণ কি ভীমের মাধ্যমে জরাসন্ধ, দুর্যোধনকে হত্যা করায় নি ? কৃষ্ণ, পাণ্ডবদের মাধ্যমে কুরুবংশকে ধ্বংস করে নি ? বিষ্ণু যদি কোনো আলাদা সত্ত্বা হতো আর তার কাজ শুধু যদি পালন করা হতো, তাহলে কি সে এই যুদ্ধ, বিনাশগুলো করতো ? আসলে এগুলো করিয়েছেন ব্রহ্ম, আমাদের শাস্ত্রকাররা তাদেরকে শুধু বিষ্ণুর অবতার হিসেবে কল্পনা করে ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যা করেছেন মাত্র। না হলে পৃথিবীতে এত বিষ্ণুর অবতার, সেই তুলনায় ব্রহ্মা ও শিবের কোনো অবতার নেই কেনো ? আসলে- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর তো আলাদা কেউ নয়। ব্রহ্ম, যখন সৃষ্টি করেন, তখন তারই নাম ব্রহ্মা; যখন তিনি পালন করেন, তখন তারই নাম বিষ্ণু এবং যখন তিনি বিনাশ করেন, তখন তারই নাম শিব বা মহেশ্বর; যে কথা বলা আছে গীতার এই শ্লোকে-

“অবিভক্তংচ ভূতেষু বিভক্তমিব চ স্থিতম্।

ভূতভর্তৃ চ তজজ্ঞেয়ং গ্রসিষ্ণু প্রভবিষ্ণু চ।।”
অর্থ- পরমেশ্বরকে যদি যদিও সমস্ত ভূতে বিভক্তরূপে বোধ হয়, কিন্তু তিনি অবিভক্ত। যদিও তিনি সর্বভূতের পালক, তবু তাঁকে সংহার কর্তা ও সৃষ্টিকর্তা বলে জানবে।
শিব পৃথিবীতে জন্ম নেয় নি; তাহলে যে পৃথিবীতে জন্ম নেয় নি, তার কোনো খাদ্যের প্রয়োজন হবে না, । তাহলে শিবের গাঁজা খাওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে ? আমাদের মুনি-ঋষিরা ধ্যান করতেন। ধ্যান আসলে গবেষণা। হিন্দিতে ধ্যান শব্দের অর্থ মনোযোগ। তার মানে কোনো কিছুর প্রতি মন নিবিষ্ট করাই হলো ধ্যান। আর যেখানে মন নিবিষ্ট হয়, সেখানেই কোনো নতুন কিছুর উদ্ভব বা আবিষ্কার হয়। এই ধ্যান বা গবেষণা করতে গিয়ে আমাদের মুনি-ঋষিরা উপলব্ধি করেছিলেন, প্রকৃতির লক্ষ লক্ষ গাছ পালার মধ্যে রয়েছে অজস্র ভেষজ বা ঔষধি গুন। এ থেকেই তারা আবিষ্কার করেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্র, যা পৃথিবীর প্রথম চিকিৎসা জ্ঞান। এই চিকিৎসা জ্ঞান বেদের অংশ বলেই এর নাম আয়ুর্বেদ। অর্থাৎ বেদ এর যে জ্ঞান মানুষের আয়ু বাড়ায় তাই আয়ুর্বেদ। এই আয়ুর্বেদ বলছে, গাঁজার রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুন, যা স্বল্পমাত্রার ব্যবহারে মানুষ তার উপকার পেতে পারে। কিন্তু গাঁজা খেলে যেহেতু একধরণের নেশা হয় এবং মানুষ এটা বার বার খেতে বাধ্য হয়, তাই আধুনিক যুগ শুরু হলে, অনেকেই এটাকে মাদক হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে এবং এটা এবং এর সেবনকারীরা, সমাজে একেবারে ঘৃণিত না হলেও তারা সমালোচনার পাত্র হয়ে পড়ে। স্বল্প পরিমানের গাঁজা খাওয়ার যে বিজ্ঞানভিত্তিক কী উপকারিতা, সেটা আমি একটু পরেই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো; কিন্তু গাঁজা খেলে যে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কাজে বা কোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগের সৃষ্টি হয় বা গাঁজা সেবনকারী কোনো বিষয়ে গভীরভাবে মনোযোগ দিতে পারে, এটা কিন্তু বাস্তবভাবে প্রমাণিত। এজন্যই আমাদের মুনি-ঋষিরা তাদের ধ্যান বা গবেষণায় মনোযোগ বৃদ্ধির সুবিধার্থে স্বল্প পরিমান গাঁজা সেবন করতেন। আমাদের মুনি ঋষিদের পরম্পরা হলো বর্তমানের সাধু-সন্ন্যাসী, এই পরম্পরা চলে আসছে প্রায় ৮/১০ হাজার বছর আগে থেকে; তো মুনি ঋষিরা যা করতেন, তার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের সাধু সন্ন্যাসীদের মধ্যে এখনও আছে। এই ভাবে সমাজ সংসার ত্যাগ করা, পাহাড় জঙ্গল শ্মশানে বিচরণকারী সাধু-সন্ন্যাসীদের মধ্যে গাঁজা সেবনের প্রচলন এখনও আছে এবং প্রাচীন বা মধ্যযুগেও ছিলো। কিন্তু মধ্যযুগের শেষ এবং আধুনিক যুগের শুরুর দিকে যখন গাঁজাকে মাদক হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হলো, তখন সাধু-সন্ন্যাসীদের মতো ব্যক্তি কেনো গাঁজা খায়, এই প্রশ্নের জবাবে আমাদের সাধু-সন্ন্যাসীরা বিব্রত হলো; কারণ, এর ভেষজগুন সম্পর্কে তাদের কোনো স্পষ্ট এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা ছিলো না, কিন্তু তারা যেহেতু খায় এবং তাদেরকে যেহেতু এটা খেতে হবে, তাই আত্মপক্ষ সমর্থন ক’রে এটা সেবনের জন্য তারা বলে দেয়, আমাদের মহাদেব শিবও গাঁজা সেবন করতেন এবং শিবের বেশ ভূষা যেহেতু সাধু সন্ন্যাসীদের মতোই এবং সে সব সময় থাকে ধ্যানমগ্ন, সেহেতু শিবের সাথে গাঁজা সেবনের এই গল্প খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে যায় এবং লোকজন তা বিশ্বাস করে ফেলে। এভাবেই সমাজে শিবের গাঁজা সেবনের গল্প ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তা মধ্যযুগের শেষ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুনাকরের অন্নদামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে তা লোকমনে একেবারে সুপ্রতিষ্ঠিত রূপ পায়; কারণ, সেই কাব্যে বলা আছে, স্বয়ং শিবঠাকুর গাঁজা-ভাং খেয়ে কচুরিপানায় উপর দিয়ে দিব্যি হেঁটে বেড়াতেন। এইসব বিবেচনা থেকেই বাংলা গান বানানো হয়েছে,
“গাঁজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়।”
হিন্দু শাস্ত্রে গাঁজার অবস্থান মহাদেবের সাথে জড়িয়ে আছে
মূলত বন জঙ্গল পাহাড়ে বসবাসকারী ও বিচরণকারী আমাদের স্বল্পজ্ঞানী সাধু সন্ন্যাসীরা নিজেদের গাঁজা সেবনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য মহাদেব শিবের উপর এই কলঙ্ক লেপন করে এবং যেহেতু মনে করা হয় যে, সাধু সন্ন্যাসীরা শাস্ত্র পড়ে এবং তারা শাস্ত্র সম্পর্কে ভালো জানে এবং যেহেতু বেশ ভূষা ও ধ্যানমগগ্নতার দিক থেকে শিব হলো সাধু-সন্ন্যাসীদের রোল মডেল, সেহেতু জনসমাজে শিবের নামে গাঁজা খাওয়ার এই অপপ্রচার খুব সহজেই বিশ্বাসযোগ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যা হোক, অপপ্রচার করে যতই শিবের নামে গাঁজা খাওয়ার অপবাদ দেওয়া হোক, একটা প্রশ্নে এই থিয়োরি সম্পূর্ণ ধ্বসে পড়বে, আর তা হলো, পৃথিবী যে শিব জন্ম নেয় নি, তার খাবারের প্রয়োজন হবে কেনো ? আর যদি কেউ বলে, পৃথিবীতে শিব ছিলেন। তখন তাকে প্রশ্ন করবেন, তাহলে সেই শিব মরলেন কোথায় এবং কিভাবে ?
কেন গাঁজা খারাপ?
মারিজুয়ানা বা গাঁজা ভারতবর্ষে ১৯৮৫ পর্জন্ত লিগাল ছিল। এরপর আমেরিকান প্রেসারে তৎকালীন রাজীব গান্ধীর সরকার তা বন্ধ করে দেয়। কেন করে দেয়? বিস্তারিত বলার আগে আসুন জেনে নেই এর আসল নাম। Cannabis sativa যা এই গোত্রের হেড প্ল্যান্ট। যার শুকানো ফুল থেকে মারিজুয়ানা বা গাঁজা তৈরি হয়। এর কুঁড়ি কে ঘষে ঘষে হাশিশ বা চরস তৈরি হয়। এই গুল্মের আরেকটি ভেরাইটি প্ল্যান্ট হল হেম্প আর এই গাছের পাতা অথবা বীজ থেকে ভাং তৈরি হয়। ভাং ভারতে যদিও ম্যাস লেভেলে ইউজ হয় কারন কালচারাল একটা ইম্প্যাক্ট থেকেই যায় কারন সেখানে ভাং ব্যাবহার করা হয় মহাদেবের প্রসাদ হিসাবে তাছাড়া সেখানে অনেকেই আজও মদ বা সিগারেটের বদলে গাঁজা সেবন করে। এমনকি আয়ুর্বেদের মেডিসিন তৈরিতে গাঁজা কাঁচামাল হিসাবেও ব্যাবহার হয়। যারা অর্গানিক অর্গানিক বলে লাফাচ্ছেন ইনারা কেন জানি মেডিসিন, এলকোহল কিংবা নিকোটিন সেবন করার সময় এই অর্গানিক শব্দটা ভুলে যান। কারন একটাই “ মানুষ কি বলবে !”
আসুন দেখি পবিত্র বেদ কি বলে।
অথর্ব্ববেদ

অধ্যায় নম্বর ১১, ভারাক নম্বর ৬, মন্ত্র নম্বর ১৫ কি বলে?
পঞ্চ রাজ্যানীবিরুধাম সোমাসরেস্থানী ব্রুম্ম
দার্ভো ভাংইয়াভা শাস্তেনো মুঞ্ছান্তাভাবমহাসা।।
অনুবাদঃ আমরা আবাহন করি অতিগুরুত্বপুর্ন ৫টি ঔষধি গুল্ম যাদের প্রধান হলেন সোম। যার মূল, ডাটা, পাতা, বীজ, ফুল এবং ফল আমাদের কাছে পবিত্র। এবং আমরা আবাহন করি দুর্বাঘাস এবং সেই উদ্দিপক গুল্মকে যা থেকে সোমরস বা ভাং তৈরি হয় এবং তাঁদের শক্তিকে এবং আমরা প্রার্থনা করি তাঁদের দ্বারা যাতে আমরা সমস্ত পাপ তথা সমস্ত রোগ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাই।
অথর্ব্ববেদ অধ্যায় নম্বর ১১, ভারাক নম্বর ৬, মন্ত্র নম্বর ১৫


আমরা সবাই জানি সোমরস কি আর ভাং কিসের মাধ্যমে তৈরি হয়। বেদ যাকে সম্মান দিচ্ছে সেখানে কিছু মানুষদের খারাপ কথায় কি কিছু যায় আসার কথা? বেদ বার বার আমাদের বলেছেন গাঁজা বা কেনিবাস হল সৃষ্টির সবথেকে পবিত্র ৫টি গাছের মাঝে একটি। যা আমাদের আনন্দ দেয় , জ্ঞ্যান শক্তি বিকশিত করে আর রোগ মুক্তি দান করে।
এত গুরুত্বপুর্ন এই গাছকে তাহলে কেন নিষিদ্ধ বা ব্যান করা হল? চলুন দেখে নেই বিস্তারিত, ১৯৬১ সালে আমেরিকান প্রেসারে এসে ইউনাইটেড নেশনর একটি কনভেনশনের মাধ্যমে এই গাছটিকে সিন্থেটিক ড্রাগের ক্যাটাগরিতে ফেলে দেয়া হয়।
ইউএন ! পড়ালেখা করা স্যুট বুট পড়া এত জ্ঞ্যানীরা এটা বুঝলেন না এটা সিন্থেটিক ড্রাগ কিভাবে? এই প্ল্যান্টে কি কোনভাবে কৃত্তিমতা আছে? উনারা এটা কিভাবে বুঝলেন না একটা টবে মাটি নিলাম, বীজ দিলাম, কেনিবাস গাছ হল, এর শুকনো পাতা কিভাবে সিন্থেটিক ড্রাগ হয়? যারা সিন্থেটিক ড্রাগ বোঝেন না এরা এই লিঙ্কে দেখুন https://en.wikipedia.org/wiki/Designer_drug যে কারনে একে সিন্থেটিক বলা হচ্ছে তা হল পেস্টিসাইড। প্রশ্ন হল এমন অনেক অনেক মারিজুয়ানার গাছ আছে জাতে পেষ্টিসাইড করা লাগে না। তাহলে এটা সিন্থেটীক কিভাবে হল?? কোকেন আর হেরোইন এর মতন এই মুল্যবান গাছটিকেও একি ক্যাটাগরিতে ফেলে দেয়া হল। যদিও এসব ক্ষতিকর ড্রাগ থেকে গাঁজার অবস্থান অনেক অনেক দূরে। যাইহোক, তখন ভারত এই ট্রিটিতে সাইন করতে অপারগতা প্রকাশ করে কারন তখন গাঁজা ব্যাবহার করে ভারতে আয়ুর্বেদিক ঔষধ বানানো হতো। আর এতে বাইরের ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি এইদেশে সুবিধা করতে পারছিল না কারন আয়ুর্বেদ সাইডেফেক্ট ছাড়া অনেক অসুখ বা রোগ নির্মুল করে ফেলত। তাছাড়া একে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিজ্ঞ্যানে পেনিসিলিন হিসাবেও ব্যাবহার করা যেত। মানে আয়ুর্বেদে এই গাছটির মান অনেক উপরে।
১৯৬১ নারকটিক এক্ট

এবার একটা ব্যাপার চিন্তা করুন।
প্রেসার কে দিল? আমেরিকা ।
অথচ ভারতের মাঝে এই গাছটি ইলিগাল।
ইলিগাল কে করালো? আমেরিকা।
মজার ব্যাপার হলো আমেরিকার মোট ২৭টি স্টেটে মারিজুয়ানা লিগ্যাল মেডিসিন পারপাসের কারনে।
আরও মজার ব্যাপার হলো এই ২৭টি স্টেটের মাঝে ১১টি স্টেটে এই গাছকে রিক্রিয়েশনের জন্য ব্যাবহার করা হয়। তাছাড়া শুধু আমেরিকা না এই গাছটি ৪০+ বেশীর দেশে লিগ্যাল। মজার ব্যাপার হল এইসব দেশে গ্রস হেপিনেস ইন্ডেক্স ভারত থেকে অনেক অনেক বেশী। ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার অনেক দেশ ইতোমধ্যেই চিকিৎসাশাস্ত্রের খাতিরে গাজাকে বৈধতা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কলোরাডোতে প্রথম বৈধতা দেয়া হয়েছিল। এরপর কলোরাডোতে গাজা বৈধকরণের সফলতার পর অন্যান্য রাজ্যগুলোও ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। এর বাইরে নতুন করে চিলি তাদের দেশ গাজাকে শুধু বৈধতাই দেয়নি, প্রতিটি নাগরিক সর্বোচ্চ পাঁচটি গাজা গাছ লাগাতে পারবে সেই অনুমোদনও দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কানাডা, স্পেন, হল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া মারিজুয়ানাকে ঔষধ হিসেবে গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে।
কেন এই প্রপাগান্ডা?
আসলে এই ষড়যন্ত্র যা দেখছেন তা সব আমেরিকান ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি, এলকোহল বেভারেজ, লিকার আর টোব্যাকো কোম্পানি গুলোর সমন্বয়ে তৈরি। কেন? প্রথমে আসি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি এই গাঁজা দিয়েই পেইন কিলার আর ঔষুধ বানিয়ে আপনার কাছে উচু দামে বিক্রী করে। তাই গাঁজা কে লিগাল করা হলে উনাদের ধান্দার ১২টা বেজে যাবে। এবার ভাবছেন আমি এসব কি বানিয়ে বলছি? একদম না। অভিজিৎ প্রতাপ আর যাই করুক বানানো জিনিস বিশ্বাস করে না। বিনা ফ্যাক্টে আমি কোন কথা বলি না। ওয়াশিংটন পোষ্টের রিপর্ট অনুযায়ী আমেরিকার যেসব স্টেটে মারিজুয়ানা লিগ্যাল সেসব স্টেটে পেইনকিলারের ব্যাবহার কমে এসেছে। একি ভাবে ঐসব স্টেটে এলকোহল খাবার প্রবনতাও ১০% কমে এসেছে। তাহলে ব্যাপারটা এই দাঁড়ালো যে মারিজুয়ানা লিকার আর টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করছে।

https://www.washingtonpost.com/news/wonk/wp/2016/07/13/one-striking-chart-shows-why-pharma-companies-are-fighting-legal-marijuana/?utm_term=.d1f295dd7647



আর সমাজসেবার নামে মানুষদের ১২টা বাজানোর জন্য আর একটি ইন্ডাস্ট্রি হল এনজিও বা হেলথ অর্গানাইজেশনস গুলো। এদের ভাষ্য মতে
মারিজুয়ানা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ!

এবার একটু চিন্তা শক্তিতে শান দিন। এদের ফান্ড কোথা থেকে আসে? গেস করুন তো? আমি বলছি ফার্মাসিটিক্যাল , লিকার আর টোব্যাকো কোম্পানি গুলো থেকে। আমেরিকার অনেক বড় কোম্পানি গুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার এনজিও গুলোকে ডনেট করে যাতে পাব্লিকের মাঝে এরা গাঁজা নিয়ে একটি নেগেটিভ পারসেপ্সন বানিয়ে রাখতে পারে।



https://www.washingtonpost.com/news/wonk/wp/2017/04/19/11-charts-that-show-marijuana-has-truly-gone-mainstream/?utm_term=.ba5bb9905e04


http://www.paho.org/disasters/index.php?option=com_content&view=article&id=545%3Adrug-donations&Itemid=661&lang=en



এরকম শুধু আমেরিকান কোম্পানিগুলো না। অনেক ভারতীয় কোম্পানি গুলোও করে থাকে। আর এসব কাজ এরা এতটাই সিক্রেটলি করে থাকে যে এদের নাম এক্সপজ করা সম্ভব হয় না। তবে একজনের নাম বলা যাবে । ২*২=৪ আপনারা মিলিয়ে নিবেন! উনার টাইটেল মালিয়া। ভারতের বিখ্যাত ব্যাবসায়ী জিনি আইপিএল সহ অনেক কিছুর সাথেই ইনভল্ব।
যদি এখন কেউ বলেন এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কথা তাহলে বলবো, যেকোনো কিছুকে লিমিটের বাইরে গ্রহন করলে সাইড এফেক্ট থাকবেই। ভাত বেশী খেলে শারীরিক ঝুঁকির কথা আশা করি যারা শিক্ষিত আছেন তাঁদের বুঝিয়ে বলা লাগবে না। বেশী পানি পান করলেও আপনি বমি করবেন। এরমানে এই না পানি বা ভাত আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। হেলথ কন্ডিশনের ব্যাপারে কথা বললে বলতে হয়, গাঁজার থেকে সিগারেট আর এলকোহল ১১৪% বেশী ক্ষতিকর। তাহলে এসব লিগ্যাল কেন?
ভারতে প্রতি ৯৬ মিনিটে একজন মানুষ মদ খাবার জন্য মারা যান। অন্যদিকে গাঁজা সেবন করার জন্য লাষ্ট একজন মারা গিয়েছিলেন জিনি রাস্তা ক্রস করার সময় মদে মাতাল এক গাড়ী চালক উনাকে ধাক্কা দেন। আর এখানেও মদেরই এফেক্ট জাজ্বল্যমান।
আমরা জানি আয়ুর্বেদ অথর্ব্ব বেদের অন্তর্গত। আর অথর্ব্ববেদ কে আমাদের মাঝে নিয়ে এসেছিলেন পরমেশ্বর শিব। আমাদের মুনি-ঋষিরা তাদের ধ্যান বা গবেষণায় গাঁজার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছিলেন এবং তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন আমাদের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে; আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের সেই কথাই নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায়, এবার নজর দেওয়া যাক সেই দিকে।
গাঁজা, পুরুষের বন্ধ্যাত্বকে দূর করে:
হ্যাঁ,এমনই অবিশ্বাস্য কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গাঁজার নেশা করলে তা গিয়ে প্রভাব ফেলে ব্রেনের ক্যানাবিনয়েড রিসেপটরে, এই ক্যানাবিনয়েড রিসেপটরে গাঁজার ধোয়া যখন তা পৌঁছায় তখন তা স্পার্ম উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এইভাবে সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম পুরুষদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাঁজা ফলদায়ক। ডিটেইলস রিপোর্টি দেখত হলে ক্লিক করুন নিচের এই লিঙ্কে:
http://zeenews.india.com/bengali/lifestyle/marijuana-can-help-in-infertility_139329.html
গাঁজা খেলে ভালো থাকে চোখ : হ্যাঁ, এরকমই কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। গাঁজা খেলে রাত্রিকালীন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয়। কারণ, গাঁজার মধ্যে রয়েছে ক্যানাবিনয়েডস, যা অল্প আলোতেও দেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। গাঁজার উপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়েছেন কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল গবেষক। তাদের গবেষণাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য। তারা বলেছেন, গাঁজার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে আলো শনাক্তকরণ ক্ষমতা। মারিজুয়ানা বা গাঁজা বা ক্যানাবিস-এ রয়েছে ৫০০টি প্রাকৃতিক যৌগ। এরমধ্যে কমপক্ষে ৮৫টি যৌগ মিলে তৈরি করে ক্যানাবিনয়েডস। যারমধ্যে সবচেয়ে বেশি গুণসম্পন্ন হল THC বা টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল ও CBD বা ক্যানাবিনল। বিস্তারিত রিপোর্টটি পাবেন নিচের এই লিঙ্কে :
http://zeenews.india.com/bengali/health/marijuana-can-cause-this-benefit-to-you_147425.html

গাঁজা প্রতিরোধ করে অ্যালঝেইমারস : বয়স হলে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার রোগ অ্যালঝাইমার এর উদাহরণ রয়েছে সারা বিশ্বে। ডায়বেটিস, ওবেসিটির মতোই বর্তমান সময়ের অন্যতম দুঃশ্চিন্তার বিষয় অ্যালঝাইমার। এই অসুখের চিকিৎসা এখনও অজানা বিশ্বের কাছে। তবে সম্প্রতি জানা গিয়েছে গাঁজার মধ্যে খুব কম পরিমানে থাকা ডেল্টা-৯- টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল বা টিএইচসি রুখে দিতে পারে অ্যালঝাইমারকে। ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ফ্লোরিডার নিউরোসাইন্টিস্টরা জানাচ্ছেন বয়স্ক মস্তিষ্কের অ্যামাইলয়েড বিটার পরিমান কমিয়ে দিতে পারে গাঁজা সেবন। গবেষকরা বলেন খুব কম পরিমানে গাঁজা সেবনের ফলে ধরে রাখা যাবে স্মৃতিশক্তি। গবেষকরা এখন টিএইচসি-র মধ্যে ড্রাগ ককটেলের ব্যবহার নিয়ে গবেষনা করছেন।
দেখুন, জার্নাল অফ অ্যালজাইমারস ডিজিসে প্রকাশিত হয়েছে গবেষনার রিপোর্ট।
http://zeenews.india.com/bengali/lifestyle/marijuana-can-beat-aljhimers_120146.html
এছাড়াও দেখুন, গবেষকরা বলছেন পরিমাণমতো গাঁজা ওষুধ হিসেবে সেবন করলে নাকি অনেক উপকার৷ বিজ্ঞানীদের বাতলে দেওয়া এমনই নয়টি উপকার তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে !
মৃগীরোগ কমায় : যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০১৩ সালেই জানিয়েছেন, মারিজুয়ানা বা গাঁজা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিলে মৃগী বা এই ধরণের কিছু স্নায়ুরোগ থেকে দূরে থাকা যায়৷ বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী জার্নাল অফ ফার্মাকোলজি অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল থেরাপিউটিক্সে ছাপাও হয়েছে তাদের এই গবেষণালব্ধ তত্ত্ব৷
গ্লুকমা দূরে রাখতে সহায়তা করে : যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আই ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, মারিজুয়ানা গ্লুকোমার ঝুঁকিও কমায়৷ গ্লুকোমা চোখের এমন এক রোগ যা চির অন্ধত্ব ডেকে আনে৷ এখানে মারিজুয়ানা বলতে যা বোঝানো হচ্ছে, তা গাঁজারই আমেরিকান নাম।
গাঁজা, ক্যানসারেরও ‘অ্যানসার’! এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকারিভাবেই স্বীকার করেছে৷ ২০১৫ সালে সেই দেশের ক্যানসার বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্যানসার অর্গ-এ জানানো হয়, মারিজুয়ানা অনেক ক্ষেত্রে টিউমারের ঝুঁকি কমিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধকেরও ভূমিকা পালন করে৷
কেমোথেরাপির ক্ষতি কম : ইউএস এজেন্সি ফর ড্রাগ জানিয়েছে, মারিজুয়ানা ক্যানসার রোগীর রোগ যন্ত্রণা অন্যভাবেও কমায়৷ ক্যানসার রোগীকে এক পর্যায়ে কেমোথেরাপি নিতে হয়৷ কেমোথেরাপির অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া৷ মারিজুয়ানা কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত অনেক ক্ষতি লাঘব করে৷
স্ট্রোক কম হয় : এটি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহ্যামের গবেষকদের উদ্ভাবন৷ তাঁরা গবেষণা করে দেখেছেন, মারিজুয়ানা মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে৷ ফলে স্ট্রোক-এর ঝুঁকি কমে৷
গাঁজা মাল্টিপল সক্লেরোসিস বিরোধী: মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের একটি বিশেষ স্তর ক্ষতিগ্রস্থ হলে ‘মাল্টিপল সক্লেরোসিস’ বা এমএস নামের এক ধরণের স্নায়ুরোগ হয়৷ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মারিজুয়ানা সেবন করলে এই রোগের ঝুঁকিও কমে৷
ব্যথা নিরোধ : ডায়াবেটিস চরম রূপ নিলে রোগীদের অনেক সময় হাত-পা এবং শরীরের নানা অংশে জ্বালা-যন্ত্রণা হয়৷ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা বলছেন, ক্যানাবিস সেই যন্ত্রণা লাঘব করতে সক্ষম৷
হেপাটাইটিস ‘সি’-র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমায় : হেপাটাইটিস সি-র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কমায় মারিজুয়ানা৷ নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধের মতো গাঁজা সেবন করিয়ে দেখা গিয়েছে এই রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৮৬ ভাগেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক কমেছে।

উপরের এই প্রতিবেদনটি যে আমার বানানো নয়, তার প্রমান পাবেন নিচের এই লিঙ্কে গেলে।
http://www.chandpurweb.com/health/2016/04/21/25051

গাঁজা শরীরের বিষ-ব্যথা সারায়: একটু আগেই অন্য একটা রিপোর্টে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছি, এখানে করছি বিস্তারিত। গাঁজার এই উপকারের কথার বর্ণনা রয়েছে ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চিকিৎসা শাস্ত্র অর্থাৎ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বর্তমানে গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানার ওপর গবেষণা করে জেনেছেন যে, এ সব দ্রব্য থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ব্যথানাশক ওষুধ প্রস্তুত করা সম্ভব, যা মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। গবেষণাটি করেছে ফ্রান্সের বায়োমেডিকেল ইনস্টিটিউট। এর নেতৃত্ব দিয়েছে আইএনএসইআরএম। ফ্রান্সের গবেষকরা জানান, 'তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কের যে অংশের কোষের নিউরনে গাঁজা বা মারিজুয়ানা ক্রিয়া করে তা ওষুধ প্রয়োগ করে নিষ্ক্রিয় করেন প্রথম। এর পর ওই ইঁদুরের শরীরে এসব পদার্থ প্রবেশ করিয়ে দেখা গেছে যে, তাতে ইঁদুরটি বেহুশ হয় না। বরং ওটির প্রাণচাঞ্চল্য ঠিকই থাকে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্যথানাশক হিসেবে গাঁজা বা মারিজুয়ানার ভালো গুণ মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের জন্য চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। শিগগিরই গাঁজা ও মারিজুয়ানার নির্যাস থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এ ওষুধ প্রস্তুত হবে।
গাঁজার ক্ষতি সিগারেটের চেয়ে কম : যারা গাঁজাকে খুব নিম্নশ্রেণির নেশা বলে মনে ক’রে সিগারেট ফুঁকেন, তাদের জন্য আছে দাঁত ভাঙ্গা জবাব। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন, ভাং ও গঞ্জিকা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি, তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেটের চেয়ে কম।

এই দুটি বিষয়ের উপর করা রিপোর্ট দেখতে পারেন, নিচের এই লিঙ্কে :
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%9C%E0%A6%BE
গাঁজা সেবনকারীর হাড় জোড়া লাগে খুব তাড়াতাড়ি : সম্প্রতি ইসরায়েলের একদল বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় দেখেছেন যে, গাজা সেবনকারীদের মধ্যে কারও হাড় ভেঙ্গে গেলে তা যারা গাজাসেবন করেন না তাদের চেয়ে দ্রুত জোড়া লাগে। পরীক্ষার অংশ হিসেবে গবেষকদল গাজায় থাকা নন-সাইকোঅ্যাকটিভ কমপাউন্ড ক্যানাবাইডিয়ল (সিবিডি) কিছু ইদুরের উপর পরীক্ষা করেন। গবেষকদলের গবেষক ড. ইয়াঙ্কেল গাবেত বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে সিবিডি হাড় জোড়া হতে এবং খুব দ্রুত ক্ষতস্থান সারিয়ে তুলতে বেশ কার্যকরীই শুধু নয়, অন্যান্য উপাদানের চেয়ে অধিক কার্যকরী। হাড়ের নতুন টিস্যু তৈরিতে এর রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। সিবিডি’র মাধ্যমে একবার হাড় জোড়া লাগলে তা আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত হয়।’ গবেষকদলের মতে, মানবশরীর প্রকৃতিগত ভাবেই এন্ডোক্যানাবাইনয়েড ব্যবস্থা চালু রাখে যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মেরুদণ্ডের উপর কাজ করে। মানুষের মস্তিস্ক এবং শরীর ক্যানাবাইনয়েডের সংস্পর্শে আসলে স্বাভাবিকভাবেই সাড়া দেয়, তা সেটা আভ্যন্তরীন পর্যায়েই হোক অথবা গাজা সেবনের মাধ্যমেই হোক। এছাড়াও এক গবেষণায় দেখা গেছে, গাজা রক্তচাপ সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে এবং এইচআইভি প্রতিহত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।শুধু তাই নয় কয়েক প্রকার ক্যান্সার নিরাময়েও পর্যন্ত গাজা ভালো ফল দেয়। বিশেষ করে যারা লিওকোমিয়ায় আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিনই চিকিৎসকরা অনুমোদন সাপেক্ষে গাজা ব্যবহার করে আসছেন। যা হোক, প্রাচীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন মিথ বা সাহিত্যে গাজার ব্যবহার দেখা যায়। কোথাও নেশাদ্রব্য হিসেবে গাজার ব্যবহার দেখা যায়নি। এর ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় শাস্ত্রবিদেরা এবং অন্যান্য গবেষকরা দাবি করছেন যে, গাজার ক্ষতি নেই বরংচ রয়েছে শারিরীক লাভ। মানব শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে গাজা মহৌষধ হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু ভারতের সেকুলার সরকার, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এই জ্ঞানকে পাত্তা না দিয়ে কেমিক্যালজাত মাদকের সাথে সাথে গাজাকেও মাদকের পর্যায়ভূক্ত করে এবং ১৯৮৫ সালে আইন করে গাজাকে অবৈধ ঘোষণা করে।
এই রিপোর্টটি সত্য কিনা, তা যাচাই করতে চাইলে দেখুন লিঙ্কটি।
উপরে বলেছি, আমাদের মুনি-ঋষিরা গাঁজা সেবন করতেন, এটা শুনে যাদের কষ্ট হয়েছে বা মেনে নিতে পারেন নি, তাদের জন্য উইকিপিডিয়া বলছে, “হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতে হিন্দু ও শিখদের মাঝে এবং নেপালে কেনাবিস গ্রহণের রেওয়াজ ছিল।এই বনজ উদ্ভিদের নাম ছিল সংস্কৃত ভাষায় গঞ্জিকা বা গাঁজা।” এটা যে শুধু হিন্দু মুনি-ঋষিরাই খেতো, তাই নয়, প্রাচীন কালের ইহুদি খ্রিষ্টানরা সেবন করতো এমন কি সেবন করতো, মামলুক আমলের মুসলিম সুফীরাও। দেখুন, উইকিতে কিভাবে বলা আছে এই কথা- “কান্নাবিসকে প্রাচীন ইহুদি ও ক্রিস্টানরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করত। মামলুক সময়ে বিভিন্ন সূফী সম্প্রদায়রা কান্নাবিস গ্রহণ করত।”উইকির এই লিঙ্কটি দেখতে পারেন নিচে-

https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE



তাস খেলা একটি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত ও মজাদার খেলা, কিন্তু এই খেলার সাথে যখন টাকা যুক্ত হলো অর্থাৎ তাস খেলা যখন জুয়ায় পরিণত হলো, তখন সমাজ তাকে খারাপভাবে দেখতে শুরু করলো এবং যারা তাস খেলে, তারা সমালোচনার পাত্র হয়ে পড়লো। শুধু এই ভয়েই অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাস খেলে না। এটা কিন্তু তাসের দোষ নয়, দোষ মানুষের; যারা তাসকে ঐ খারাপভাবে ব্যবহার করা শুরু করেছিলো।একইভাবে উপকারী গাঁজাকে যারা নেশার দ্রব্যে পরিণত ক’রে একে সমালোচিত করেছে, দোষ সেই মানুষদের, কোনোভাবেই গাঁজার নয়।
এবার আসি গাঁজার লিগ্যাল আর ইলিগ্যাল কন্ডিশনে কার কি লাভ হচ্ছে?
ইলিগাল হয়া মানে এই নয় যে গাঁজা পাওয়া যায় না। গাঁজার ব্ল্যাক মার্কেট খুব চাঙ্গা। এমনকি বাংলাদেশে স্মাগলার বা কালো বাজারীদের প্রথম পছন্দ হল গাঁজা। এতে ব্ল্যাক মার্কেট বুম হচ্ছে সন্দেহ নেই। আর এসব ব্ল্যাক মার্কেট চালাচ্ছেন সেসব লোকেরা যারা পৃথিবীতে বড় বড় লিকার আর টোব্যাকো কম্পানীর মালিক। ২*২=৪ মেলাতে পারছেন। কিভাবে ২ দিক থেকে মুনাফা আসছে?
আজও ভারতের হিমাচল প্রদেশে ৬০০০০ কেজির ইলিগ্যাল গাঁজা চাষ হচ্ছে! বিশ্বাস হয় না?
http://indiatoday.intoday.in/story/indian-village-malana-himachal-pradesh-cannabis-livelihood/1/826614.html
দেখে নিন। যার মাঝে মাত্র ১% ধরা পড়ে। তো বাকি কোথায় যায়? ?? বিচক্ষন মস্তিষ্ক বুঝে নিন। আমেরিকা শুধু মেডিক্যাল পারপাস বা রিক্রিয়েসনের জন্য গাঁজার ব্যাবহার করছে না বরং হেম্প(গাঁজার আরেক নাম) চাষ করে আরও অনেক প্রডাক্ট বানানো হয়। যেমন বডিক্র্যাফট, ফুড সাপ্লিমেন্টস, প্লাস্টিক প্রডাক্টস ইত্যাদি যা অলরেডি আমেরিকার ইকনমিকে বুষ্ট করছে। হেম্প ইন্ডাস্ট্রি ২০২০ সালের মাঝে আমেরিকা ৬লাখ কোটি টাকা আয় করবে। ভাবুন একবার অঙ্কটা !
মানে ভারতের পুর্ব দিকের স্টেট গুলো নিন আর তার জিডিপি কেল্কুলেট করুন। তাও এই অঙ্ক থেকে অনেক কম। বিশ্বাস হয় না?
http://www.independent.co.uk/news/world/americas/marijuana-industry-expected-to-reach-44-billion-by-2020-a6933106.html
কিন্তু এরজন্ম স্থান ভারতে এই ইন্ডাস্ট্রি প্রায় নাই।







আরও আছে ! ফর্বস এর রিপর্ট অনুযায়ী হেম্প ইন্ডাস্ট্রি ২০২০ সালের মাঝে আমেরিকার মেনুফেকচারিং ইন্ডাস্ট্রি থেকেও বেশী জব ক্রিয়েট করবে।
https://www.forbes.com/sites/debraborchardt/2017/02/22/marijuana-industry-projected-to-create-more-jobs-than-manufacturing-by-2020/#44459dcd3fa9
আমেরিকায় যেসব স্টেটে গাঁজা লিগ্যাল সেসব স্টেটে সিন্থেটিক ড্রাগ ব্যাবহার যেমন হেরোইন, কুকেইন অনেকাংশে কমে এসেছে। নেদারল্যান্ডে মারিজুয়ানাকে লিগ্যাল করে দেয়া হয়েছে । ফলাফলঃ ক্রাইম রেট কমা, এওয়ারনেস বেড়েছে আর ট্যাক্সের টাকা সরকারের পকেটে।
ব্যাপারটা এখন একদম পরিষ্কার যে কিভাবে আমেরিকা আর ভারতের তৎকালীন দুর্নীতিগ্রস্থ সরকার মিলে আমাদের সাথে ২ নাম্বারী করল? মানে আমাদের মাল আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে আমাদেরকেই আবার বিক্রি করছে। অতিরিক্ত সব কিছুই খারাপ, এমনকি যদি অতিরিক্ত ভাত বা জল খাওয়া হয়, সেটাও খারাপ। তাহলে আপনি অতিরিক্ত গাঁজা খাবেন কেনো ? আপনার প্রয়োজনে এবং কার্যসিদ্ধির জন্য যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন তাই খাবেন। যেমন সপ্তাহে একবার আপনি যদি বিয়ার বা অয়ান পান করেন তাঁর মেডিক্যাল বেনিফিট অনেক। কেন কিভাবে তা জিজ্ঞ্যেস করার আগে একটু গুগুল করে নিন।
শেষে একটা কথা না বললেই নয়, গাঁজার উপকারিতা নিয়ে পোস্ট লিখলাম বলে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, আমি কাউকে গাঁজা খেতে উৎসাহিত করছি বা আমি গাঁজা খাই। শিব সম্পর্কে কটূক্তির জবাব দিতে গিয়ে, আমি শুধু প্রকৃত সত্যটাকে জানালাম, এখন এটাকে কে কিভাবে ব্যবহার করবে, সেটা তার বা তাদের ব্যাপার। আমার এই পোষ্ট এতক্ষন মন দিয়ে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সবাই। নমস্কার ।
হর হর মহাদেব ।

Tuesday, September 5, 2017

কলিযুগে পরমেশ্বর ভগবান শিব

ভগবান শিব সচ্চিদানন্দঘন লীলাময় পরম প্রভু। তিনি সত্য, সনাতন, অনাদি ও অনন্ত ব্রম্মহের স্বরূপ। তিনি সর্বশক্তিমান, শাশ্বত , নিরঞ্জন। সাকারে তিনি মহাদেব, লীলাময় প্রভু শিব, বিষ্ণু, ব্রম্মা ইত্যাদি নামে জানা গেলেও তিনি আদতে নিরাকার। এরজন্য উনার কোন মুর্তি পূজা হয় না। লিঙ্গম বা লিঙ্গ পূজা করা হয়। কিছু বিকৃত মস্তিষ্ক উনার এই পূজা কে পুরুষের লিঙ্গের সাথে তুলনা করে ধর্মকে হেয় বা নীচু দেখানর চেষ্টা করে। কিন্তু আদতে অজ্ঞ্যান ও মুর্খতার দরুন তাঁরা এর গুঢ তত্ত্ব অনুধাবন করতে ব্যার্থ হয়। সংস্কৃত লিঙ্গাম শব্দ থেকে লিঙ্গ শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ হল চিহ্ন। অর্থ্যাত পরম পুরুষ নিরাকার পরম ব্রহ্মের একটি চিহ্নকে আমরা উপাসনা করি। যা অনেকটাই নিরাকার ঈশ্বর উপাসনার মতন। পবিত্র বেদের মাঝে যে রুদ্রকে আমরা দেখি তা আসলে নিরাকার সেই পরম তত্ত্বের রূপ। এরজন্যই শৈবদের মাঝে অতিমার্গ ও মন্ত্রমার্গ শৈবরা পরম তত্ত্বের বৈদিক রুদ্রকে উপাসনা করেন। বলাবাহুল্য আমি নিজেও অতিমার্গ শৈবইসম অনুসরন করি। তাই যে বৈদিক রুদ্র ও পরম তত্ত্ব রূপ শিব এর মাঝে অভেদ করেন তিনি অল্প বিদ্যায় পারদর্শি এই কথা বোঝাই যায়। পরম নয়ন্তা,পরম প্রভু, পরম শক্তিমান। তিনি চির সুন্দর , চির নিরুপম। রহস্যময় মনরম তাঁর অপ্রাকৃত লীলা। তিনিই একমাত্র পরম সত্য ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর। শান্তম শিবম অদ্বৈতম। তাই শিব তত্ত্বই একমাত্র পরম তত্ত্ব। কিন্তু কিছু অজ্ঞ লোক এই বিষয়ে একেবারেই না জেনে বিজ্ঞ সাজতে গিয়ে অযথাই অপকথা বলে বেড়াচ্ছেন।
বাংলাদেশী হিন্দুদের কাছে শিব বা মহাদেব হলেন তম গুন সম্পন্ন এক শ্মশানবাসী। যিনি মদ গাঁজা আর ভুত প্রেত নিয়ে পরে থাকেন। তাঁকে এই দেশের মানুষরা এতো মুল্য দেয় না বর্তমানে। কারন ইনি নাকি মুক্তি দিতে পারেন না। অবশ্য এইসব অবান্তর কথা এই অঞ্চলে বেশীদিন হয় নাই। আগে এই অঞ্চলের মানুষদের প্রধান উপাস্য ছিলেন মা কালী। যিনি দক্ষিণা কালী হিসাবে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। চৈতন্য মহাপ্রভু আসার পর এই অঞ্চলে গৌড়ীয় মতবাদ বিস্তৃতি লাভ করে। এইখানে শাক্তবাদ এর কল্যানে মানুষ শিব সম্পর্কে এতটা জ্ঞ্যানি ছিলেন না। কিন্তু শিব এর পূজা ঠিকই করতেন। পূজা বলতে শিব লিঙ্গে একটু দুধ ঢেলে একটা কলা মাথায় দিয়ে বোম বোম বা ভলে বাবা  ঠান্ডা হউ এই ধরনের আচরণ যা এখনও চলে আসছে। ব্যাপারটা অনেকটা যেন শিবকে ঠাণ্ডা রাখ নাহলে উনি পাগলামি করে সব নষ্ট করে দিবেন। কিন্তু আসলে কি তাই? এরজন্য আমার কিছু বক্তব্য  শাস্ত্রের আলোকে ব্যাখ্যা করবো।যেহেতু এইদেশের সবাই পুরান তথা সংহিতায় বিশ্বাসী তাই আমি এর আলোকেই সমস্ত কিছু ব্যাখ্যা করবো। যারা বেদ বা উপনিষদ এর রেফারেন্স চান তাঁরা আমাকে ইনবক্স করতে পারেন।
ভগবান শিব সাক্ষ্যাৎ সত্য সনাতন পরমেশ্বর। তিনি কালের উর্ধে বিরাজিত মহাকালেশ্বর। কাল বা সময় উনার অধীন। তাই সর্বযুগে সবার আরাধ্য ভগবান শিব। কিন্তু ঐ যে, অসাধু ও মুর্খ্যরা অপকথা বলে আর মানতে চায় না। তাই শাস্ত্র থেকে কিছু কথা বলবো।
অজ্ঞরা বলে থাকে যে , কলি কালে নাকি এক কৃষ্ণ নামে মুক্তি বাকীরা নাকি মুক্তি দিতে পারেন না। এরজন্যই যারা শিব উপাসনা করেন এদেরকে এরা হেয় বা হীন চোখে দেখে। কথাটা একটু যদি ঘুরিয়ে বলি তাহলে বলা যায় শাস্ত্রে শিব নামে মুক্তি নেই এই কথা নেই। বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় এরা শিব, দুর্গা, কালী ভক্তদের ইনিয়ে বিনিয়ে বা সরাসরি বলতে শুরু করে কলি যুগে নাকি এক কৃষ্ণ নাম ছাড়া মুক্তি নেই। এসব ক্ষেত্রে এরা কয়েকটি শ্লোক আওড়ায়। যথা-
হরিনাম্ হরিনাম্ হরিনামব্য কেবলম্
কলৌও নাস্তব্য নাস্তব্য নাস্তব্য গতিরন্যথা
সারমর্ম হল ‘হরি( এদের ভাষায় কৃষ্ণ) নাম ছাড়া কলি যুগে মুক্তি নাই।‘
আর একটি শ্লোক হল ভাগবত গীতার
সর্ব ধর্ম পরিত্যাজ্যং মামেকং শরনং ব্রজ
মানে সব ধর্ম ত্যাগ করে আমার স্মরণ নাও।
একটু বিশ্লেষনে যাই এবার। প্রথমে আসি হরি নাম নিয়ে। অবশ্যই, হরি মানে বিষ্ণু নামে মুক্তি আছে। কারন উনি পরম পুরুষের একটি পালন রূপ। উনার নাম নিয়ে ভক্ত প্রহ্লাদ বা ধ্রুব মুক্তি পেয়েছিলেন। এর হাজার প্রমান আছে। মহাবিষ্ণুর শ্রী চরনে আমার হাজার হাজার প্রনাম। কিন্তু অজ্ঞ্যানীরা এইখানে কৃষ্ণকে কোথায় পেলেন? যদি কেউ বলেন কৃষ্ণ উনার অবতার তাহলে উনার সাথে কৃষ্ণকে জড়ালে দোষ কথায়? আমি বলবো নৃসিংহ, রাম, পরশুরাম, বরাহ উনাদের সাথেও জড়ান না কেন? বা কেনই উনাদের নিয়ে আপনারা কোন পুরান আবিস্কার করেন না?জানি করবেন না কারন এতে আপনাদের রমরমা ব্যাবসা নষ্ট হবে আর সত্য উন্মচিত হবে।
এবার আসি ভাগবত গীতার শ্লোকে।গীতা নিয়ে আমার অনেক কিছু বলার আছে। আসলে মুর্খ ও অল্প শিক্ষিত লোকজন বলে ভাগবত গীতা নাকি বেদসার সংক্ষেপ। শুনে হাসি পায় এরকম মুর্খ কথা শুনলে। আমাদের ধর্মে মোট ২০০ ধরনের গীতা আছে এর মাঝে ৪২টি গীতা অন্যতম।গীতা বলতে ৯৮% মানুষ ঐ ভাগবত গীতাকেই বোঝেন। বাস্তবে এর বাইরেও আরও অনেক কিছু যে আছে তা এই মুর্খ্য কুয়োর ব্যাঙেরা জানেন না। হিন্দু ধর্ম বলতে এরা শুধু বোঝে গৌড়ীয় তিলক দেয়া, মালা জপা আর একাদশী রেখে মনের সুখে লাফানো। হিন্দু ধর্মের খুব নগন্য ও তুচ্ছ একটি বিষয়কে আঁকড়ে ধরে এরা মনে করেন বিশ্ব জগতের সমস্ত জ্ঞ্যান আমার মাথায় গিজ গিজ করছে। আসলে যে ভগবত গীতা আপনারা দেখেন তা হিন্দু ধর্মের ইতিহাস নামে খ্যাত মহাভারতের খুব ছোট একটি অংশ মাত্র।
শুধু এক মহাভারত থেকে প্রায় ২০+ গীতা বের হয়েছে। 



রাম কৃষ্ণ উভয়েই শিব আরাধনা করতেন



এবার আসি সেই ভগবত গীতা প্রসঙ্গে। ভগবত গীতাতে কৃষ্ণ আমি বলতে নিজেকে যে বোঝান নি তা অনুগীতার উৎপত্তিই আমাদের বলে দেয়। মহাভারতের ১৪ তম অধ্যায়ের অশ্বমেধ পর্বে অর্জুন যখন কৃষ্ণকে বলেন “হে কৃষ্ণ আমি ভগবত গীতার সৃতিভ্রষ্ট হইয়াছি আমাকে আবার আপনার বিশ্ব রূপ দর্শন দিন।‘ কৃষ্ণ তখন উত্তরে বলেন “ হে পার্থ, আমি যোগী শ্রেষ্ঠ। যোগ দ্বারা আবিষ্ট হইয়া আমি পরম পুরুষের বানী আমি মানব জাতিকে দিয়েছি। সেই পরম যোগ আমার পক্ষে এই জন্মে আর ধারন করা সম্ভব নহে। তাই এর সারমর্ম আমি তোমাকে বলিতেছি, শ্রবন করো।“এতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে আমি বলতে উনি কোন আমিকে নির্দেশ করেছিলেন। কিন্তু বোকারা এই আমি বলতে কৃষ্ণকে ধরে নিয়েছেন। কৃষ্ণ বোধ হয় ওপরে গিয়ে নিজেই নিজের মাথা চাপড়াচ্ছেন।যাইহোক যদি আমি ভগবত গীতাকে কৃষ্ণের বানী সত্যি ধরেও নেই তারপরও বলবো সেই পরম সত্ত্বা আর কেউ নন শিব নিজে। কেন বলছি??!! অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই? একটু পেছনে যাই। ভগবান বিষ্ণু কৃষ্ণের জন্মের আগে উনি ত্রেতা যুগে যে শরীর ধারন করেছিলেন তাঁর নামটা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রাম। উনিও কৃষ্ণের মতনই ভীষণ শিব ভক্ত ছিলেন। রাম যখন সীতা হরনের পর বিলাপ করতে থাকেন তখন মহামুনি অগস্ত্য রামকে শিব আরাধনার জন্য বলেন। আর সেই পরমাত্তার স্বরূপের জ্ঞ্যান ও বর রামকে প্রার্থনা করতে বলেন। এরি পরিপ্রেক্ষিতে রাম শিব আরাধনা করেন আর পরম পুরুষ শিবের দর্শন লাভ করেন। প্রভু শিব শ্রী রামকে পরম জ্ঞ্যান ও মানব আত্মার প্রকৃত স্বরূপের কথা ব্যাক্ত করেন যা উনারি পরবর্তী জন্ম শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন। বিশ্বাস হয় না?! শিব গীতার সাথে ভাগবত গীতার শ্লোকগুলো একটু মিলিয়ে দেখতে পারেন। বরং শিব গীতায় মানব ভ্রুনের অনেক বিস্তারিত বর্ণণা পাবেন যা আধুনিক বিজ্ঞ্যান বলে।
কলি যুগে শিব মানেই মুক্তি। শুধু কলিযুগে কেন, সর্ব যুগে, সর্ব সময়ে শিব নামে অথবা শিব ভক্তিতেই মুক্তি হয়। শাস্ত্র থেকে এই বিষয়ে অসংখ্য উদ্বৃতি দেয়া যায়। তবে এতে লেখার আকার বড় হবে অন্য কিছুই না। তবে অল্প কিছু দিলাম। বুঝতে পারলেই হল। যারা খুঁতখুঁতে মনের মানুষ তাঁদের বিচার বিশ্লেষণ করতে অনুরোধ করবো। আর যারা বিনীত ও অহংমুক্ত হয়ে জিজ্ঞ্যাসু, তাদেরকে মনোযোগ দিয়ে অনুধাবন করতে প্রার্থনা করবো।
আমি বলে রাখি শুদ্ধ বৈষ্ণব, শাক্ত , শৈব সকলেই মহান। প্রত্যেকেই মুক্তি লাভ করবেন যদি নিজ নিজ স্থান থেকে প্রভুকে স্মরণ মনন করেন।উত্তম ভক্তের লক্ষন বিষয়ে বৃহন্নারদীয় পুরানে বলা হয়েছে,
শিবপ্রিয়াঃ শিবসক্তাঃ শিবপাদার্চ্চনে রতাঃ।
ত্রিপুন্ড্রধারিণো যে চ তে বৈ ভাগবতত্তমাঃ।
ব্যাহরন্তিচ নামনি হরেঃ শম্ভোর্মহাত্ন্নঃ।
রুদ্রাক্ষালংকৃতা যে চ তে বৈ ভাগবতোত্তমাঃ।।
যে যজন্তি মহাদেবং ক্রতুর্ভিবহুদক্ষিনৈঃ।
হরিং বা পরয়া ভক্ত্যা তে বৈ ভাগবতত্তমাঃ।
বিদিতানি চ শাস্ত্রানিপরার্থং প্রবদন্তি যে।
সর্ব্বত্র গুনভাজো যে তে বৈ ভাগবতোত্তমাঃ।।
- শিবে প্রীতি, শিবে ভক্তি, শিবের অর্চ্চনায় রত, ত্রিপুন্ড্রধারী। বিষ্ণুনাম ও শিবনাম কীর্তন, রুদ্রাক্ষ ধারন যারা এসব করে এরাই ভাগবতত্তম।বহুদক্ষিণা দানে দৃঢ়ভক্তির সাথে মহাদেবের অথবা বিষ্ণুর যজ্ঞ্যানুষ্ঠান করেন এবং পরমার্থ বষোয়ে বিদিত শাস্ত্রের উপদেশ যারা প্রদান করেন এবং যারাগুনধর, তাঁরাই উত্তম ভাগবত।

বিনা শম্ভু সেবাং সংসার তরনং ন হি।। - সৌরপুরান
- ভগবান শিবকে আশ্রয় করেই মুক্তি হয়। শিবসেবা ব্যাতিত সংসার পার হওয়া যায় না।

নার্চ্চ্যন্তীহ যে রুদ্রং শিবং ত্রিদশবন্দিতম
তেষাং দানং তপো যজ্ঞ্য বৃথা জীবিতমেব চ।।
--কুর্ম্ম পুরান
যারা ইহলোক ত্রিদশ বন্দিত মহাদেবের আরাধনা না করে তাঁদের দান, তপস্যা, যজ্ঞ্য ও জীবন সমস্তই বৃথা।
বায়বীয় সংহিতায় মাতা পার্বতি (দুর্গা) প্রভু শিবকে জিজ্ঞ্যাসা করেন – হে ভগবান! কলিযুগে আপনার ভক্তগন কিভাবে মুক্ত হবেন? তখন পরমেশ্বর বলেন
আশ্রিত্য পরমাং বিদ্যাং হ্রিদ্যাং পঞ্চাক্ষরীয়ং মম।
ভক্ত্যা চ ভাবিতাত্মানো মুচ্যন্তে কলিজা নরাঃ।।
-প্রিতমে! কলিকালের মানুষ আমার প্রতি ভক্তি ভাবিত হয়ে আমার পঞ্চাক্ষরি বিদ্যা অবলম্বন করলেই মুক্তি লাভ করবে।

ময়ৈবমস্কৃদ্দেবি প্রতিজ্ঞ্যাতং ধরাতলে।
পতিতোহপি বিমুচ্যেত মদ্ভক্তো বিদ্যায়ানয়া।
-হে দেবী! আমি বার বার ধরাতলে প্রতিজ্ঞ্যা করেছি যে , আমার ভক্ত পতিত হলেও শুধু আমার পঞ্চাক্ষরী নামের প্রভাবে মুক্তি পেয়ে থাকে।
সুতরাং পরমেশ্বর শিবের পঞ্চাক্ষরী মহামন্ত্র (ওম নমঃ শিবায়ঃ) জপ করলে মানুষ অনায়াসে মুক্তি পায়।
শ্রী ব্রম্মা বলেছেন
‘তন্নাম জাপিন দেব ন ভবন্তি ভবাশ্রয়াঃ।।‘
-বামন পুরান।
হে শিব তোমার নাম যারা জপ করেন তাঁদের আর পুনউৎপত্তি হয় না।
ওঙ্কারং রুথমারুহ্য বিষ্ণুং কৃত্তা তু সারথিম।
ব্রম্মলক পদান্বেষী রুদ্রারাধন তৎপরঃ।।
-অমৃতনাদ উপনিষদ
-ব্রম্মলক তথা ব্রম্মজ্ঞ্যান পথের যারা সন্ধানী, তাঁরা ওমকার রূপ রথকে বাহন করে তার ওপর চেপে বসবেন। বিষ্ণুকে করবেন সেই রথের সারথি। আর রুদ্রের আরাধনায় নিমগ্ন হবেন।

পরমেশ্বর সদা শিব বলেছেন-
জগত প্রলয়ে প্রাপ্তে নষ্টে চ কমলোদ্ভবে।
মদ্ভক্তা নৈব নশ্যন্তি স্বেচ্ছা বিগ্রহ ধারিনঃ।
যোগিনাং কর্ম্মিনাঞ্চৈব তাপসানাং যতাত্মানাম।
অহমেব গতিস্তেষাং নান্যদস্তিতী নিশ্চয়ঃ।।- সৌর পুরান
-জগতের প্রলয় হলে , এমনকি ব্রম্মার প্রলয়হলেও আমার ভক্ত বিনষ্ট হয় না, কেননা তারা আমার কৃপাধারী। যোগী, কর্মী এবং সংযত চিত্ত তপসশী-সকলেরই গতি আমি। অন্য গতি নাই এটা নিশ্চিত।
শিব ভক্তগন অনায়াসে মুক্তিলাভ করেন। তাঁদের সুবিধা এটাই যে, তারা পরমেশ্বর সদা শিবের কৃপায় ব্রম্মলক, বিষ্ণুলোক , গলক ইত্যাদি ধামে ইচ্ছামত বিচরন করতে পারেন। 



শ্রী বিষ্ণুর সুদর্শন লাভ থেকে শুরু করে রামের মুক্তিদাতা হিসাবে প্রভু শঙ্কর সব সময় প্রকট হয়েছিলেন।


পরম পুরুষ , নিরাকার নির্গুন শিব শঙ্কর সম্পর্কে কিছু তথ্য
----------------------------------------------------------------------------------
কথিত আছে, পরম পুরুষ একটি বেলপাতাতেই তুষ্ট। কিন্তু অতি প্রাচীন কাল থেকেই শিবলিঙ্গের উপাসনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বেলপাতা কয়েকটি বিশেষ বস্তু অর্ঘ্য দিয়ে এসেছে। বিশ্বাস এই যে, এই বস্তুগুলি শিবলিঙ্গে প্রদান করলে বিশেষ বিশেষ মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
কী সেইগুলি দেখা যাক
• বেল পাতার পেছনের অংশে মা লক্ষ্মীর বাস। বেল পাতা ৩ গুন ও ত্রিদেব এর প্রতীক। তাই বিল্ব পত্র পরমপুরুষের অনেক প্রিয়। এতে সার্বিক মঙ্গল হয় ও দাতা প্রভুর প্রিয় পাত্র হন।
• শিবলিঙ্গে ধুতুরা নিবেদন করলে জীবনে সমৃদ্ধি আসে, জীবন অনেক সহজ হয় বলে জানায় বিবিধ পুরাণ।
• শিবলিঙ্গে দুধ-গঙ্গাজল প্রদানের সময়ে তা লিঙ্গগাত্রে ঘষে দেওয়ার বিধি অতি প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত। বিশ্বাস এই, এর ফলে জীবন সুখের হয়।
• বিবাহিত জীবন সুখপ্রদ করতে শিবলিঙ্গে জাফরান প্রাদন বিধেয়। এর দ্বারা বিবাহে বাধাও দূর হয়।
• শনির সাড়ে সাতি দশা কাটাতে শিবলিঙ্গে তিল প্রদানের রীতিও বহু প্রাচীন।
• ১১টি বিল্বপত্র দ্বারা নির্মিত মালা শিবলিঙ্গে প্রদান করলে অশুভ প্রভাব জীবন থেকে দূর হঠে বলে বিশ্বাস রয়েছে।
• শিবলিঙ্গে দুর্বাঘাস প্রদান করলে নীরোগ জীবন লাভ হয় বলে বিশ্বাস।
• শিবলিঙ্গে দুগ্ধ প্রদানের জন্য তাম্রপাত্রই প্রশস্ত।
• আর্থিক সমৃদ্ধিকে অব্যাহত রাখতে শিবলিঙ্গে চাল প্রদান করাও প্রাচীন রীতি।

আরও ব্যাপার হল মহাদেব এর গনেশ -কার্তিক ছাড়াও ৪ পুত্র আছে। এই পুত্রেরা কেউই কিন্তু পার্বতীর সন্তান নন। শিবের বিভিন্ন লীলার সময়ে তাঁদের জন্ম হয়েছিল। কার্তিক-গণেশ ছাড়াও বাকি চার পুত্রের সন্ধান রইল এখানে।
• অয়প্প— অসুরদের হাত থেকে অমৃতকে বাঁচানোর জন্য বিষ্ণু মোহিনীরূপ ধারণ করেন। সেই সময়ে শিব শক্তি তাঁর সঙ্গে যোগে মিলিত হন এবং এই মিলনের ফলেই অয়প্পর জন্ম হয়। দক্ষিণ ভারেত অয়প্পকে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা বলেই মনে করা হয়। তাঁকে হরি ও হরের সম্মিলিত রূপ বলে মনে করা হয়।
• অন্ধক— দানবরাজ হিরণ্যাক্ষ পুত্রহীন ছিলেন। তিনি পুত্রলাভের আশায় মহাদেবের তপস্যা করেন। শিব তাঁকে এক পুত্রসন্তান প্রদান করেন। জন্মান্ধ সেই পুত্রের নাম ছিল অন্ধক।
• ভৌম— শিবের অংশ ভূমিতে পড়েই ভৌমের জন্ম হয়েছিল। শিব তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। ভূমিদেবীই ভৌমকে পালন করেন। পরে শিব ভৌমের কথা জানতে পারেন এবং তাঁকে পুত্র হিসেবে স্বীকার করে নেন।
• খুজ— একবার গভীর ধ্যানে মগ্ন অবস্থায় শিবের দেহ থেকে তীব্র জ্যোতি বিকীর্ণ হতে থাকে। সেই জ্যোতি ভূমিতে প্রবিষ্ট হলে খুজের জন্ম হয়। তাঁকে লৌহের দেবতা বলে মনে করা হয়।

আশ্চর্য সুন্দর কৈলাস পর্বত।
কৈলাস পর্বতকে দেবাদিদেব মহাদেবের আবাস বলে বর্ণনা করেছে হিন্দু পুরাণ। ২২০০০ ফিট উচ্চতাবিশিষ্ট এই পর্বত তার চেহারার দিক থেকেও স্বাতন্ত্রপূর্ণ। তার উপরে এই পর্বতের সন্নিহিত মানস সরোবরের অবস্থান একে অন্য মহিমা দান করেছে। সবমিলিয়ে কৈলাস এক দুর্লভ তীর্থ। কিন্তু কৈলাসের রহস্যময়তাও কিছু কম নয়। কৈলাস সংক্রান্ত আলোচনায় বার বার উঠে এসেছে এমন কিছু রহস্য, যার সমাধান সম্ভব হয়নি কোনও কালেই।
দেখা যাক কৈলাস-রহস্যের কয়েকটিকে।
• পশ্চিম তিব্বতের এই পর্বত কেবল হিন্দুদের কাছেই নয়, জৈন, বৌদ্ধ, তিব্বতের প্রাচীন ‘বন’ ধর্ম— সব ক’টিই কৈলাসকে পবিত্র বলে মনে করে।
• এক সময়ে রাশিযান বিশেষজ্ঞরা কৈলাস কে একটি বিশালাকৃতি পিরামিড বলে বর্ণনে করেছিলেন। তাঁরা এই পর্বতকে মানুষের তৈরি বলেও জানান। কোনও গোপন কাল্টের উপাসনাস্থল হিসেবে তাঁরা কৈলাসকে ব্যক্ত করেন। খুঁটিয়ে দেখলে কৈলাসের পিরামিডাকৃতি বোঝা যায়।
• ইউরোপের অকাল্টবাদীরা কৈলাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাঁদের মতে, এখানে অতিপ্রাকৃত শক্তির অবস্থান। অনেকের মতে আবার এই স্থান যাবতীয় অতিপ্রাকৃতের কেন্দ্র।
• পুরাণ অনুযায়ী কৈলাস পর্বতের চারটি পাশ স্ফটিক, চুনি, সোনা এবং লাপিস লাজুলি দ্বারা গঠিত। এই তথ্য সত্য নয়। কিন্তু, দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোর পড়ে এই সব পাথর বা ধাতুর বিভ্রম কৈলাস অবশ্যই তৈরি করে।
• কৈলাস অঞ্চলে অবস্থিত হ্রদগুলির আকৃতি রহস্যময়। মানস সরোবর পূর্ণ গোলাকার এক জলাশয়। রাক্ষস তালের আকৃতি অর্ধচন্দ্রাকার। এরা নাকি সূর্য ও চন্দ্রের শক্তিকে প্রকাশ করে।
• তিব্বতী তান্ত্রিক ঐতিহ্য অনুযায়ী কৈলাস তাঁদের দেবতা ডেমচমংয়ের আবাস। হিন্দুদের মতে এখানে বাস করেন শিব। জৈন-ধারণায় কৈলাসের বাসিন্দা তাঁদের প্রথম তীর্থঙ্কর। এই তিন ধর্ম অনুসারে কৈলাসে আরোহণ নিষিদ্ধ।
• কেবল এটুকুই জানা যায়, ১১ শতকের তিব্বতী মহাযোগী মিলারেপাই একমাত্র কৈলাসে আরোহণ করেছিলেন।

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts