প্রথমে আসি যক্ষিণী সম্বন্ধে। যক্ষ, যক্ষিণী খুবুই কামুক স্বভাব হয়। অনেক সময় এরা মানব মানবী রূপ ধরে ভূলোকের মানব মানবীর সাথে কামপিপাসা চরিতার্থ করে। অনেক সময় সঙ্গী/ সঙ্গিনীর দেহে ভর করে কাম তৃষ্ণা মেটায়। কামকলায় এরা সিদ্ধহস্ত। আবার এনাদের কৃপায় কবিত্ব ভাব, নাট্যশৈলী, কামকলার মূর্তি নির্মাণের শিল্পীকে অলক্ষ্যে শক্তি যোগায়। ‘যক্ষিণী সাধনা’ খুবুই শক্তিশালী। তবে যক্ষিণী দের মাতৃরূপে, ভগিনী রূপে সাধন করাই শ্রেয়। প্রেমিকা রূপে করলে সর্বনাশের আর কিছু বাকী রাখে না এরা। যক্ষদের ওপরে মা লক্ষ্মীর কৃপা অনেক। যক্ষরাজ কুবের হলেন দেবরাজ ইন্দ্রের সম্পদভাণ্ডারের কোষাধ্যক্ষ। যক্ষদের মধ্যে একটা জাতি হল “গুহ্যক”। এরা আবার ভগবান শিবের ভক্ত। সাধুদের বিশ্বাস বিভিন্ন পবিত্র তিথিতে এই যক্ষ যক্ষিণী, গুহ্যকেরা মানব মানবীর ছদ্দবেশে বিভিন্ন শিবমন্দির গিয়ে ভগবান শিবের পূজা করেন। মহাভারতের শিখণ্ডীর সাথে স্থূনাকর্ন নামক এক যক্ষের দেখা হয়েছিল। এরা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে। আবার যক্ষেরা অনেক জ্ঞানী হয়। মহারাজ যুধীষ্ঠির কে প্রশ্ন করেছিলেন এক যক্ষ। দীপাবলির সন্ধ্যায় যক্ষেরা বের হয়। যে গৃহে সে সময় প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়, যক্ষেরা সেই গৃহে ধন সম্পদ প্রদান করে। হিমালয়ের বিভিন্ন পবিত্র তীর্থে এখনও কুবের তাঁর অনুচরদের নিয়ে বিশেষ তিথিতে রাতে আসেন। ভারতের অনেক সাধু সন্ত এঁদের দর্শন পেয়েছে। তবে উপযুক্ত গুরু ব্যাতীত কেও এই সাধনা করলে বেঘোরে পতন হবার চান্স আছে।
এর পর আসে “গন্ধর্ব”। এদের শরীর থেকে সুন্দর দিব্য সুগন্ধ পাওয়া যায়। এরা কোথাও থাকলে সেখানে বিভিন্ন সুগন্ধি পুস্পের গন্ধ পাবেন। অপূর্ব সুন্দর হয় এরা। স্বর্গলোকে নৃত্যের সময় বাজনা বাজান এরা। এরা নানা সুন্দর অলঙ্কার পরে। অনেক সঙ্গীতজ্ঞকে আড়ালে থেকে শক্তি দান করে। বাদ্যযন্ত্রের ওপর এদের প্রবল আকর্ষণ। এরা আকাশে ভ্রমণের বিদ্যাও জানে। ভারতের অনেক সাধু গন্ধর্ব সাধনায় সিদ্ধ। আবার কেও কেও প্রাণ হারিয়েছে এই সাধনায়। এরাও ভগবান শিবের ভক্ত। শিবরাত্রিতে বিভিন্ন শিবমন্দিরে মানবের ছদ্দবেশে এসে ভগবান শঙ্করের পূজা করেন। কাশী বিশ্বনাথ, উজ্জয়নীর মহাকালে অনেক সাধু সন্ত এদের দেখা পেয়েছেন। গন্ধর্বসাধনায় সিদ্ধ সাধক সঙ্গীত ও বাদ্যশিল্পে সিদ্ধ হন। এছাড়াও বহু প্রকার সিদ্ধ হন।তবে উপযুক্ত গুরু ব্যাতীত কেও এই সাধনা করলে বেঘোরে পতন হবার চান্স আছে।
এরপর আসে “কিন্নর”। কিন্নর বলতে আমরা ভূলোকের ‘হিজড়া’ বুঝি। হ্যাঁ এনারাও তাই। তবে একটু তফাৎ। কিন্নরদের মধ্যে কিন্নর ও কিন্নরী দুই আছে। এরা স্বর্গে থাকে। সুগন্ধি পারফিউম, ফুল এদের খুব পছন্দ। অনেক সময় এরা মানব শরীরে জন্ম নেয়। তখন এদের শরীরের পুরুষ ভাব স্ত্রী ভাব দুই থাকে। তাই “হিজরা” দের শাপ আর আশীর্বাদ দুই ফলিত হয়। তাই শুভ কাজে এদের উপস্থিতি শুভ। এঁদের আশীর্বাদও শুভ। আর এঁদের অভিশাপ জীবন ধ্বংস করতে যথেষ্ট। তাই হিজরাদের কখনো খারাপ কিছু বলবেন না। এঁদের সাধনায় বহু প্রকার সিদ্ধি লাভ হয়। তবে উপযুক্ত গুরু ব্যাতীত কেও এই সাধনা করলে বেঘোরে পতন হবার চান্স আছে।
“বিদ্যাধর” স্বর্গে থাকে। নানা প্রকার বিদ্যা জানেন। স্থাপত্য বিদ্যা এদের করায়ত্ত। প্রাচীন কালে যজ্ঞশালা নির্মাণে মুনি ঋষিরা যজ্ঞের আগে সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে রচনা করতে এদের আহ্বান জানাতেন। কারণ যজ্ঞ ঠিকঠাক ভাবে না হলে বা ভুলভাল হলে অগ্নিদেবতা ক্রুদ্ধ হয়ে যজ্ঞের ঋত্বিককে ধ্বংস করেন। যজ্ঞাগ্নির সময় মন্ত্র উচ্চারন নির্ভুল হওয়া চাই। নিয়ম ও বেদী নির্মাণ সঠিক হওয়া উচিৎ। বিদ্যাধরেরা শিল্পীদের আড়ালে থেকে স্থাপত্যকলায় সাহায্য করেন। অনেক সময় সিদ্ধ সাধুদের এরা নানাভাবে সাহায্য করে সাধারন মানুষের উপকার করে। তন্ত্রে এই বিদ্যাধর দের সিদ্ধ করার নানা মন্ত্র ও বিধান আছে। তবে উপযুক্ত গুরু ব্যাতীত কেও এই সাধনা করলে বেঘোরে পতন হবার চান্স আছে।
“অপ্সরা” স্বর্গে থাকে। দেবতাদের মনোরঞ্জন করে এমন নর্তকী। এদের রূপ লাবণ্য এত সুন্দর যে অসুর থেকে শুরু করে বড় বড় মুনি ঋষিরা সাধন ভুলে যান। অপ্সরা দের মধ্যে সবাই সুন্দর। মেনকা, রম্ভা, ঘৃতাচী, গন্ধকালী, অনুপমা, মনোরমা , সুদেষ্ণা সকলেই এত সুন্দর যে , একজনের সাথে অপরজনের রূপের তুলনা করা কঠিন। সবচেয়ে সুন্দরী হল “উর্বশী”। অপ্সরাদের ডানাও থাকে। এরা আকাশ মার্গে যথেচ্ছা ভ্রমণ বিদ্যায় সিদ্ধ। এরা সাজতে খুব ভালোবাসে। কোন কুৎসিত কেও এই বিদ্যা রপ্ত করলে অনায়েসে সুন্দর হয়। অপ্সরা রা লম্বা, রোগা, হালকা, সুগঠিত স্তন, গজগামিনী ( মানে গজের ন্যায় ধীরে ধীরে কমোর দুলিয়ে চলে ) । এদের কেশ নিতম্ব স্পর্শ করে, সুন্দর টাণা নয়ন, কপালে কুন্তল রেখা খেলা করে। এরা লোকের ভ্যবিষ্য জানে। অনেক জ্যোতিষী এই বিদ্যায় সিদ্ধ হয়ে মানুষের ভাগ্য বলতে পারেন। এরা স্বর্গেই থাকে। তবে বিশেষ তিথিতে চন্দ্রালোকে এরা হিমালয়ে বিভিন্ন পবিত্র তীর্থে আসে। অনেক সাধু সন্ত এদের দেখেছে। তবে ইন্দ্রিয়বিজয়ী সাধুদের এরা কোন ক্ষতি করতে পারে না। নর-নারায়ণ ঋষির (যারা পরে কৃষ্ণ আর বলরাম হয়েছেন) আশ্রমে, মার্কণ্ড মুনির আশ্রমে এসে এরা কোন প্রভাব ফেলতে পারে নি। তবে উপযুক্ত গুরু ব্যাতীত কেও এই সাধনা করলে বেঘোরে পতন হবার চান্স আছে।
শাস্ত্রে এমন ভাবেই এদের বর্ণনা আছে। কিছু অঘোরী সাধক ও কাপালিক ও তান্ত্রিক এইসব বিদ্যায় পারদর্শী। ইউটিঊব সার্চ করলে এদের সাধনার মন্ত্রও পাবেন। তবে সাবধান, সামান্য ভুল কিন্তু আপনার জীবন শেষ করতে পারে এঁনারা। যদি চান ত , উপযুক্ত গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে, গুরুর নির্দেশমতো এই সকল সাধনা করতে পারেন। তবে সাধনা করলেই যে এরা আসবে আর আপনি সফল হবেন এমন নাও হতে পারে। অনেকে কিন্তু এসব সাধনা করতে গিয়ে মারাও গেছে বা পাগল হয়ে গেছে। আবার অনেকে সফল হয়ে এই সব বিদ্যায় সিদ্ধ হয়েছে।