Monday, April 29, 2019

সামুদ্রিক শাস্ত্র অথবা জ্যোতিষ শাস্ত্র

ছয়টি বেদাঙ্গের একটি জ্যোতিষ। প্রাচীনকালে জ্যোতিষ অনুসারে শুভ তিথি অনুযায়ী যজ্ঞ করা হত। জ্যোতিঃ অর্থ আলো। বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র দীপ্তিমান অর্থাৎ এদের জ্যোতি বা আলো রয়েছে। পরবর্তী কালে মানব-জীবনে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব সম্পর্কে চর্চা শুরু হয় এবং সেই সংক্রান্ত জ্ঞান বা বিদ্যাই জ্যোতিষ বিজ্ঞান বলে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করে। ভৃগু, পরাশর, জৈমিনি আদি প্রাচীন ঋষিগণকে জ্যোতিষ বিজ্ঞানের প্রবর্তক বলা চলে। তাঁরা জ্যোতিষবিদ্যা বিভিন্ন অঙ্গ বা শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁরা উপলব্ধি করেছেন যে, পৃথিবীর নিকটবর্তী নয়টি গ্রহ, বারটি রাশি ও সাতাশটি নক্ষত্র মানুষের জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং এই প্রভাবই ফলিত জ্যোতিষ বিজ্ঞানের মুখ্য আলোচ্য বিষয়। জাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় এই সব গ্রহ, রাশি ও নক্ষত্রের অবস্থান অনুসারে জাতকের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয়। জ্যোতিষ বিজ্ঞান বলে গ্রহগণ নিছক জড় বস্তু নয়। জ্যোতিষ শান্ত্রে গ্রহগণকে দেবতা জ্ঞান করা হয়েছে -- 'গ্রহরূপী জনার্দনঃ'। গ্রহগণ সর্বদা ঘুর্ণায়মান। সনাতনী জ্যোতিষমতে প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন গ্রহ দ্বারা প্রভাবিত। গ্রহেরা ঘুরতে ঘুরতে যখন শুভ অবস্থানে থাকে তখন জাতকের শুভ হয় এবং গ্রহগণ যখন অশুভ অবস্থানে থাকে তখন জাতকের অশুভ হয়। নবগ্রহের নাম- ১) রবি, ২) সোম, ৩) মঙ্গল, ৪) বুধ, ৫) বৃহস্পতি, ৬) শুক্র, ৭) শনি, ৮) রাহু ও ৯) কেতু। এই নবগ্রহের মধ্যে সোম, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র এই চারটি গ্রহ অধিকাংশ সময় শুভফল প্রদান করে বলে এদেরকে শুভ গ্রহ এবং রবি, মঙ্গল, শনি, রাহু ও কেতু এই পাঁচটি গ্রহ অধিকাংশ সময় অশুভফল প্রদান করে বলে এদেরকে অশুভ গ্রহ বা পাপ গ্রহ বলে। নবগ্রহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি পুরুষ, চন্দ্র ও শুক্র স্ত্রী এবং বুধ ও শনি ক্লীব বা নপুংসক। রবি একটি রাশিতে ত্রিশ দিন, চন্দ্র সোয়া দুই দিন, মঙ্গল পয়তাল্লিশ দিন, বুধ আঠার দিন, বৃহস্পতি এক বছর, শুক্র আটাশ দিন, শনি আড়াই বছর এবং রাহু-কেতু দেড় বছর অবস্থান করে।
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে রবি -- আত্মা, পিতা, রক্ত বর্ণ, কটু (ঝাল) রস, পিত্ত ধাতু, স্বভাব, যশ-খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির কারক।
চন্দ্র -- মন, মাতা, জল, শুভ্রবর্ণ, লবণ রস, শ্লেষ্মা ধাতু, চঞ্চলতা, চিন্তাশক্তি, সাহিত্য প্রভৃতির কারক।
মঙ্গল -- শক্তি, ভ্রাতৃ, ভূমি, সম্পত্তি, সাহস, পরাক্রম, অগ্নি, লাল বর্ণ, তিক্ত রস, পিত্ত ধাতু প্রভৃতির কারক। 
বুধ -- বুদ্ধি, মাতুল, বাণিজ্য, বাক্-শক্তি, মিশ্র রস, সম ধাতু, হাস্য, শিল্প, সাহিত্য, সবুজ বর্ণ প্রভৃতির কারক।
বৃহস্পতি -- ধর্ম, পুত্র, ধন, জ্ঞান, মিষ্টি রস, কফ ধাতু, হলুদ বর্ণ প্রভৃতির কারক।
শুক্র -- প্রেম, কাম, স্ত্রী, সুখ, অম্ল রস, কফ ধাতু, গীত, কাব্য, শুভ্র বর্ণ প্রভৃতির কারক।
শনি -- দুঃখ, মৃত্যু, বিপদ, কষায় রস, বায়ু ধাতু, অস্ত্র, আধ্যাত্মিকতা, গুপ্তবিদ্যা প্রভৃতির কারক নীল বর্ণ প্রভৃতির কারক।
রাহু -- শত্রু, নিদ্রা, চৌর্য, বিষক্রিয়া, পিতামহ, দ্যুত-ক্রিড়া, বায়ু ধাতু, কাল বর্ণ প্রভৃতির কারক।
কেতু -- মাতামহ, সর্প, দংশন, ক্ষুধা, ধুম্র বর্ণ, ব্রণ ও চর্ম রোগ প্রভৃতির কারক।

সনাতনী জ্যোতিষ বিজ্ঞান বলে গ্রহদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও মিত্রতা রয়েছে। 
  • রবির মিত্র- চন্দ্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি, শত্রু- শুক্র ও শনি এবং সম- বুধ। 
  • চন্দ্রের মিত্র- রবি ও বুধ, শত্রু- নেই এবং সম- মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি।
  • মঙ্গলের মিত্র- রবি, চন্দ্র ও বৃহস্পতি, শত্রু- বুধ এবং সম- শুক্র ও শনি। 
  • বুধেরমিত্র- রবি ও শুক্র, শত্রু- চন্দ্র এবং সম- শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি।
  •  বৃহস্পতির মিত্র- রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল,শত্রু- বুধ ও শুক্র এবং সম- শনি। 
  • শুক্রের মিত্র- বুধ ও শনি, শত্রু- রবি ও চন্দ্র এবং সম- মঙ্গল ও বৃহস্পতি। 
  • শনির মিত্র- বুধ ও শুক্র, শত্রু- রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল এবং সম- বৃহস্পতি। 
  • রাহুর মিত্র- শুক্র ও শনি, শত্রু- রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল এবং সম- বুধ ও বৃহস্পতি। 
  • কেতুর মিত্র- রবি ও চন্দ্র, শত্রু- শুক্র ও শনি এবং সম- বুধ ও বৃহস্পতি।
এবার আসুন রাশিদের একটি জেনারেল গুন-দোষ আলোচনা করা যাক। 

  • মেষ রাশির জাতক ভাবপ্রবণ, চঞ্চল, জেদী, ক্রোধী, সামান্য কারণে আনন্দিত বা বিষাদগ্রস্ত, মিষ্টান্নপ্রিয়, ত্যাগী, ধনী, নিজ কর্মে বিশ্বাসী, প্রবল আত্মবোধ ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির অধিকারী। 
  •  বৃষ রাশির জাতক স্থুল নেত্রযুক্ত, স্বল্পভাষী, ধীর-স্থীর, ধার্মিক, কুলজনের হিতকারী, তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী, স্থির-প্রতিজ্ঞ, বাস্তববাদী, আধিপত্য বিস্তারকারী ও হিসাবী। 
  • মিথুন রাশির জাতক ধীর-গতিসম্পন্ন, স্পষ্টবাক, পরহিতৈষী, তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, পণ্ডিত, হাস্যযুক্ত, কৌতুকপ্রিয়, আত্ম-প্রশংসাকামী, সমালোচক, গীতবাদ্য অনুরাগী।
  • কর্কট রাশির জাতক চিন্তাশীল, ভাবুক, কল্পনাপ্রবন, উদার, সত্যবাদী, দয়ালু, দেবদ্বিজে ভক্তিপরায়ণ, পণ্ডিত, প্রগতিশীল হলেও পুরাতনপন্থী, দৃঢ়-প্রতীজ্ঞ, ভ্রমণপ্রিয়, আশ্চর্যজনক বিষয়ে আগ্রহশীল, মাতা-পিতার প্রতি ভক্তিপরায়ণ এবং সাহিত্য ও গীতবাদ্যে অনুরাগী।
  • সিংহ রাশির জাতকবিশ্বাসী, ক্রোধী, বন্ধুহীন, উন্নত-বক্ষবিশিষ্ট, খেয়ালী, কর্তৃত্বপ্রিয়, স্বাধীনচেতা, বিলাসী, স্পষ্টবক্তা, অন্যায়ের বিরুদ্ধাচারী, আত্ম-সচেতন ও অমিতব্যয়ী।
  • কন্যা রাশির জাতক ধার্মিক, বালক-স্বভাবযুক্ত, ক্ষমাপরায়ণ, একমনা, তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, সমালোচক, সৎ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে কুটিল-স্বভাবযুক্ত, মাতৃভক্ত, সাহিত্য-রসিক এবং রমণীগণের প্রিয়। 
  • তুলা রাশির জাতক কোমল শরীর-বিশিষ্ট, দাতা, বন্ধুবৎসল, সদালাপী, অতিভাষী, দৈব-প্রভাবযুক্ত, বুদ্ধিমান, সামাজিক, ভোগী, বিলাসী, শাস্ত্রজ্ঞ, সঙ্গীতজ্ঞ ও রমণীগণের প্রিয়।
  • বৃশ্চিক রাশির জাতক পণ্ডিত, দৃঢ়মতি, বলশালী, আত্মনির্ভরশীল, কর্মদক্ষ, গম্ভীর, জেদী, ক্রোধী, পরমত অসহিষ্ণু, সর্বদা উদ্বেগযুক্ত ও খলবুদ্ধিসম্পন্ন। 
  • ধনু রাশির জাতক নানা কীর্তিপরায়ণ, কুলগৌরবযুক্ত, বন্ধুলোকের হিতকামী, সূক্ষ্মদৃষ্টিসম্পন্ন, প্রভূত ধন-সম্পদযুক্ত, ধীর গতিসম্পন্ন, ধার্মিক, স্বাধীনচেতা, উচ্চাভিলাসী, কর্তৃত্বপ্রিয়, অহংকারী, ক্ষণক্রোধী, পিতৃধন ত্যাগী, গীতপ্রিয়, মীতব্যয়ী, কখনও ধীর আবার কখনও স্থীর, দ্বিধাভাবগ্রস্ত ও সন্দিগ্ধমনা। 
  •  মকর রাশির জাতক তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, ধীর, আত্মাভিমানী, পরাক্রমযুক্ত, বন্ধুবৎসল, দ্বায়িত্বসম্পন্ন, ভোগবিলাসী, মন্ত্রণা ও বাদানুবাদে দক্ষ, সুনামপ্রিয়, পরদারাসক্ত এবং বাইরে থেকে সহজ-সরল মনে হলেও অমত্মরে কুটিল। 
  • কুম্ভ রাশির জাতক উদ্যমী, একাগ্র চিত্তের অধিকারী, ভাবুক, ধার্মিক, নির্জনতাপ্রিয়, সংস্কারপ্রিয়, জ্ঞাতিবর্গসহ আমোদকারী, পরদারাসক্ত, ধনশালী, গম্ভীর, কুটিল স্বভাবযুক্ত ও নিদ্রাপ্রিয়। 
  • মীন রাশির জাতক ধৈর্যশালী, শামিত্মপ্রিয়, একাগ্র, জ্ঞানী, মানী, আশাবাদী, উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন, উদার, ধার্মিক, দ্বিধাভাবগ্রস্ত, স্ত্রী-জয়ী, রমণীপ্রিয়, সাহিত্যরসিক ও ধনেজনে সুখভোগী।
এবার জানা যাক সমুদ্রিক শাস্ত্র মতে জন্ম লগ্ন কি? জন্মের সময় পৃথিবীর নিকটস্থ রাশিকে অর্থাৎ পৃথিবী যে রাশিকে অতিক্রম করছিল সে রাশিকে জন্ম-লগ্ন বলে। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে দ্বাদশ প্রকার জন্ম-লগ্নের ফল দেওয়া হল।
  • মেষ লগ্নের জাতক যশস্বী, মানী, পরবৎসল, জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, সাহসী, ক্রোধী, কুটচিন্তাশীল, ভোগী ও স্ত্রীপুত্র সুখে সুখী হয়ে থাকে।
  •  বৃষ লগ্নের জাতক গুরুভক্ত, প্রিয়ভাষী, গুণবান, কৃতী, তেজস্বী, সর্বজনপ্রিয়, সুরতক্রিয়া নিপুন, লোভী ও পরস্ত্রীতে অনুরক্ত হয়ে থাকে। 
  •  মিথুন লগ্নের জাতক মান্যগণ্য, যশস্বী, শিক্ষিত, আত্মীয়বৎসল, ত্যাগী, ভোগী, ধনী, কামী, দীর্ঘসূত্রী, সাহিত্যরসিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সুবক্তা হয়ে থাকে। 
  •  কর্কট লগ্নের জাতক সর্বজনপ্রিয়, স্বজনপ্রিয়, ধার্মিক, ধনী, ভোগী, পণ্ডিত, ভাষাবিদ, জনসেবক এবং মিষ্টান্ন ও পানীয় দ্রব্যপ্রিয় হয়ে থাকে। 
  •  সিংহ লগ্নের জাতক শত্রুজয়ী, বুদ্ধিমান, উৎসাহী, বলশালী, পরদ্রব্যভোগী, ক্রোধী, স্বল্পপুত্রবিশিষ্ট, জনপ্রিয় ও স্বার্থহীন হয়ে থাকে। 
  •  কন্যা লগ্নের জাতক ধার্মিক, জ্ঞানী, শাস্ত্রজ্ঞ, বিচক্ষণ, অহংকারী, পর্যটক, বক্তা, কামকলাপ্রিয়, সৌভাগ্যশালী ও স্বল্পাহারী হয়ে থাকে।
  •  তুলা লগ্নের জাতক ধীর-স্থির, বহুজনের হিতকারী, বিদ্বান, সৎকর্মে অনুরক্ত, ধনী, মানী, শিল্পকলায় পরিদর্শী ও অল্পভোগী হয়ে থাকে। 
  •  বৃশ্চিক লগ্নের জাতক শৌর্যশালী, বুদ্ধিমান, সৌভাগ্যযুক্ত, ক্রোধী, কামুক, সাহসী, ক্ষুধাতুর, বিবাদকারী ও দুষ্টবুদ্ধিযুক্ত হয়ে থাকে।
  • ধনু লগ্নের জাতক নীতিপরায়ণ, ধার্মিক, শাণিতবাক, বিদ্বান, ধনী, সুখী, জ্ঞানী, বহুলোকের হিতকারী, চাপা-স্বভাব, অহংকারী ও উচ্চাভিলাসী হয়ে থাকে। 
  •  মকর লগ্নের জাতক যশস্বী, ধনী, বহুসন্তানযুক্ত, কপট, কর্মঠ, কষ্টসহিষ্ণু, লোভী, হীনকর্মযুক্ত ও স্বকার্যে তৎপর হয়ে থাকে। 
  •  কুম্ভ লগ্নের জাতক বলশালী, সুখী, বন্ধুযুক্ত, বেদজ্ঞ, সূক্ষ্ম অনুভূতিশীল, তপস্বী, ক্রোধী, চঞ্চল, পরস্ত্রীতে আসক্ত ও নিদ্রালু হয়ে থাকে। 
  •  মীন লগ্নের জাতক অতিশয় জ্ঞানী, দেবতা ও গুরু-পূজক, মানী, ধনী, স্পর্শকাতর, নিঃসঙ্গ জীবনীশক্তিযুক্ত, স্বল্প রোমবিশিষ্ট ও বহুকাল পরীক্ষাকারী হয়ে থাকে।
  •  মিথুন লগ্নের জাতক মান্যগণ্য, যশস্বী, শিক্ষিত, আত্মীয়বৎসল, ত্যাগী, ভোগী, ধনী, কামী, দীর্ঘসূত্রী, সাহিত্যরসিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সুবক্তা হয়ে থাকে। 


 জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে নক্ষত্র পরিচয়। মহাকাশে অগণিত নক্ষত্র রয়েছে। তার মধ্যে পৃথিবীর উপর সাতাশটি নক্ষত্রের প্রভাব বিদ্যমান। জ্যোতিষ শাস্ত্রে উল্লিখিত সাতাশটি নক্ষত্রের নাম- ১) অশ্বিনী, 
২) ভরণী, 
৩) কৃত্তিকা, 
৪) রোহিণী,
৫) মৃগশিরা,
৬) আর্দ্রা,
৭) পুনর্বসু,
৮) পুষ্যা,
৯) অশ্লেষা,
১০) মঘা,
১১) পূর্ব-ফাল্গুনী,
১২) উত্তর-ফাল্গুনী,
১৩) হস্তা,
১৪) চিত্রা,
১৫) স্বাতী,
১৬) বিশাখা,
১৭) অনুরাধা,
১৮) জ্যেষ্ঠা,
১৯) মূলা,
২০) পূর্বাষাঢ়া,
২১) উত্তরাষাঢ়া,
২২) শ্রবণা,
২৩) ধনিষ্ঠা,
২৪) শতভিষা,
২৫) পূর্ব-ভাদ্রপদ,
২৬) উত্তর-ভাদ্রপদ ও
২৭) রেবতী।
হিন্দু-পুরাণ মতে এই সাতাশটি নক্ষত্র কোন দীপ্তিমান জড় বস্ত্ত নয়। প্রকৃতক্ষে এই সাতাশটি নক্ষত্র মূলত দক্ষরাজার সাতাশটি কন্যা। চন্দ্র এই সাতাশজন কন্যাকে বিবাহ করেছেন। যা হোক, চন্দ্র পর্যায়ক্রমে একটি রাশিতে আড়াই দিন অবস্থান করেন। চন্দ্র ব্যতীত অন্যান্য গ্রহগণও সাতাশটি নক্ষত্রকে পর্যায়ক্রমে নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে অতিক্রম করেন। নক্ষত্রসমূহকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন ---
উগ্রগণ- পূর্ব-ফাল্গুনী, পূর্বাষাঢ়া, পূর্ব-ভাদ্রপদ, মঘা ও ভরণী নক্ষত্র।
ধ্রুবগণ- উত্তর-ফাল্গুনী, উত্তরাষাঢ়া, উত্তর-ভাদ্রপদ ও রোহিণী নক্ষত্র।
চরগণ- স্বাতী, পুনর্বসু, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা ও শতভিষা নক্ষত্র।
ক্ষিপ্রগণ- পুষ্যা, অশ্বিনী ও হস্তা নক্ষত্র।
মৃদুগণ- চিত্রা, অনুরাধা, মৃগশিরা ও রেবতী নক্ষত্র।
তীক্ষ্ণগণ- আর্দ্রা, অশ্লেষা, জ্যেষ্ঠা ও মূলা নক্ষত্র।
মিশ্রগণ-কৃত্তিকা ও বিশাখা।
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, জন্ম-নক্ষত্র অনুসারে জাতককে বিভিন্ন গ্রহের দশা ভোগ করতে হয়। জ্যোতিষ-শাস্ত্রে দুই প্রকার দশা প্রচলিত, যথা- অষ্টোত্তরী ও বিংশোত্তরী দশা। জাতক কৃষ্ণপক্ষে দিনে ও শুক্লপক্ষে রাতে জন্মগ্রহণ করলে বিংশোত্তরী দশা এবং কৃষ্ণপক্ষে রাতে ও শুক্লপক্ষে দিনে জন্মগ্রহণ করলে অষ্টোত্তরী দশা প্রযোজ্য হবে। অষ্টোত্তরী নিয়মে জাতক রবি (৬ বছর), চন্দ্র (১৫ বছর), মঙ্গল (৮ বছর), বুধ (১৭ বছর), শনি (১০ বছর), বৃহস্পতি (১৯ বছর), রাহু (১২ বছর) ও শুক্র (২১ বছর) এই আটটি গ্রহের দশা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে উক্ত ক্রমে ভোগ করবে। যেমন- কেউ রবির দশায় জন্মগ্রহণ করলে তাকে রবির দশার ভোগ্যকাল শেষে ১৫ বছর চন্দ্রের দশা ভোগ করতে হবে এবং এরপর তাকে ৮ বছর মঙ্গলের দশা ভোগ করতে হবে, এভাবে মৃত্যর পূর্ব পর্যমত্ম তাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন গ্রহের দশা ভোগ করে যেতে হবে।
অষ্টোত্তরী মতে জন্ম-নক্ষত্র কৃত্তিকা, রোহিণী ও মৃগশিরা হলে প্রথমে রবির দশা হবে, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা ও অশেস্নষা হলে প্রথমে চন্দ্রের দশা হবে, মঘা, পূর্ব-ফাল্গুনী ও উত্তর-ফাল্গুনী হলে প্রথমে মঙ্গলের দশা হবে, হস্তা, চিত্রা, স্বাতী ও বিশাখা হলে প্রথমে বুধের দশা হবে, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা ও মূলা হলে প্রথমে শনির দশা হবে, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা হলে প্রথমে বৃহস্পতির দশা হবে, ধনিষ্ঠা, শতভিষা ও পূর্ব-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে রাহুর দশা হবে এবং উত্তর-ভাদ্রপদ, রেবতী, অশ্বিনী ও ভরণী হলে প্রথমে শুক্রের দশা হবে।
বিংশোত্তরী মতে, জাতক রবি (৬ বছর), চন্দ্র (১০ বছর), মঙ্গল (৭ বছর), রাহু (১৮ বছর), বৃহস্পতি (১৬ বছর), শনি (১৯ বছর), বুধ (১৭ বছর), কেতু (৭ বছর) ও শুক্র (২০ বছর) এই নয়টি গ্রহের দশা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে উক্ত ক্রমে ভোগ করবে। কৃত্তিকা, উত্তর-ফাল্গুনী ও উত্তরাষাঢ়া জন্ম-নক্ষত্র হলে প্রথমে রবির দশা হবে, রোহিণী, হসত্মা ও শ্রবণা হলে প্রথমে চন্দ্রের দশা হবে, মৃগশিরা, চিত্রা ও ধনিষ্ঠা হলে প্রথমে মঙ্গলের দশা হবে, আর্দ্রা, স্বাতী ও শতভিষা হলে প্রথমে রাহুর দশা হবে, পুনর্বসু, বিশাখা ও পূর্ব-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে বৃহস্পতির দশা হবে, পুষ্যা, অনুরাধা ও উত্তর-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে শনির দশা হবে, অশ্লেষা, জ্যেষ্ঠা ও রেবতী হলে প্রথমে বুধের দশা হবে, মঘা, মূলা ও অশ্বিনী হলে প্রথমে কেতুর দশা হবে এবং পূর্ব-ফাল্গুনী, পূর্বাষাঢ়া ও ভরণী হলে প্রথমে শুক্রের দশা হবে।
এখন অষ্টোত্তরী মতে প্রথম দশার ভোগ্যকাল নির্ণয় প্রসঙ্গে আসা যাক। ধরা যাক, কোন জাতক রোহিণী নক্ষত্রের ৩০ দণ্ডে (১২ ঘণ্টা) জন্মগ্রহণ করেছেন। যেহেতু কৃত্তিকা, রোহিণী ও মৃগশিরা নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করলে জাতকের প্রথমে রবির দশা হয় সেহেতু ঐ জাতক রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করায় তাকে প্রথমে রবির দশা ভোগ করতে হবে। এখন ৩টি নক্ষত্রের জন্য রবির মোট ভোগ্য বছর ৬। তাহলে প্রতিটি নক্ষত্রকে রবি ৬/৩ = ২ বছর করে ভোগ করে। রোহিনী নক্ষত্রের স্থিতিকাল ৬০ দণ্ড (২৪ ঘণ্টা)। বর্তমান নক্ষত্র যে সময় পর্যমত্ম অবস্থান করে তা থেকে পূর্ববর্তী নক্ষত্র যে সময় পর্যন্ত অবস্থান করেছিল তা বিয়োগ করলেই নক্ষত্রে স্থিতিকাল পাওয়া যাবে। যেহেতু ৩০ দণ্ড পর জন্ম হয়েছে সেহেতু সে ৬০ - ৩০ = ৩০ দণ্ড ভোগ করবে। এখন সম্পূর্ণ নক্ষত্র ভোগের জন্য অর্থাৎ ৬০ দণ্ডের জন্য রবির ভোগ্যকাল ২ বছর হলে ৩০ দণ্ডের জন্য রবির ভোগ্যকাল হবে ১ বছর। জন্মের ১ বছর পর রবির ভোগ্যকাল শেষে চন্দ্রের দশা শুরু হবে যা ১০ বছর পর্যন্ত থাকবে। 
বিংশোত্তরী মতে কোন জাতকের জন্ম রোহিনী নক্ষত্রে হলে তাকে প্রথমে চন্দ্রের দশা ভোগ করতে হবে। রোহিনী নক্ষত্রের ২৪ দ-- জন্ম হলে তার নক্ষত্র ভোগ্যকাল হবে ৬০ - ২৪ = ৩৬ দণ্ড। এখন ৬০ দণ্ডের জন্য চন্দ্রের ভোগ্যকাল ১০ বছর হলে ৩৬ দণ্ডের জন্য চন্দ্রের ভোগ্যকাল হবে ৬ বছর। জন্মের ৬ বছর পর চন্দ্রের ভোগ্যকাল শেষে মঙ্গলের দশা শুরু হবে যা ৭ বছর পর্যন্ত থাকবে এবং এভাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দশা ভোগ চলতে থাকবে।
জন্ম-রাশি বা জন্ম-লগ্নকে ১ম স্থান ধরে অবশিষ্ট এগারোটি রাশিগুলোকে ২য়, ৩য়, ৪র্থ এই ক্রমে গণনা করে শেষ পর্যমত্ম যে ১২টি স্থান পাওয়া যায় ঐ ১২টি স্থান দ্বারা ১২ প্রকার ভাব ফল নির্ণয় করা হয়। জন্ম-লগ্নের ১ম, ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম স্থানকে কেন্দ্র বলে। যেমন মেষ লগ্নের নক্ষত্রে ১ম স্থানে মেষ, ৪র্থ স্থান কর্কট, ৭ম স্থানে তুলা এবং ১০ম স্থানে মকর রয়েছে। সুতরাং ১ম স্থানে, কর্কটের স্থানে, তুলার স্থানে এবং মকরের স্থানে কোন গ্রহ থাকলে তা কেন্দ্রে আছে ধরা হয়। লগ্ন, ৯ম ও ৫ম স্থানকে কোণ বলে এবং ৩য়, ৬ষ্ঠ, ৮ম স্থানকে দুঃস্থান বলে। গ্রহগণ জন্ম-লগ্নের কেন্দ্র ও কোণে বলশালী হয় এবং শুভ ফল প্রদান করে কিন্তুডএূ দুঃস্থানে অশুভ ফল প্রদান করে।
১ম অর্থাৎ জন্ম-লগ্ন ও জন্ম-রাশি থেকে দেহভাব, ৩য় স্থান থেকে ভ্রাতৃভাব, ৪র্থ স্থান থেকে বন্ধুভাব, ৫ম স্থান থেকে পুত্রভাব, ৬ষ্ঠ স্থান থেকে শত্রুভাব, ৭ম স্থান থেকে পতি বা পত্নীভাব, ৮ম স্থান থেকে আয়ু বা নিধনভাব, ৯ম স্থান থেকে ভাগ্য বা ধর্মভাব, ১০ম স্থান থেকে কর্মভাব, ১১শ স্থান থেকে আয়ভাব এবং ১২শ স্থান থেকে ব্যয়ভাব বিচার করা হয়। যেমন- মেষ রাশি বা মেষ লগ্নের ৭ম স্থানে তুলা রাশি অবস্থিত। ৭ম স্থান দ্বারা পতি বা পত্নীযোগ, বিবাহ ও দাম্পত্য-জীবন বিচার করা হয়। এখন মেষ রাশির ৭ম স্থানে অর্থাৎ তুলা রাশিতে যদি শুভ, উচ্চস্থ ও মিত্র গ্রহ অবস্থান করে এবং শুভ গ্রহের দৃষ্টি থাকে তবে ঐ জাতকের পতি বা পত্নী, বিবাহ ও দাম্পত্য-জীবন সুন্দর হবে। এর বিপরীত হলে বিপরীত ফল প্রসব করবে। এভাবে দ্বাদশ স্থানে গ্রহ-নক্ষত্রে অবস্থান অনুসারে দ্বাদশ প্রকার ভাব বিচার করা হয়। দ্বাদশ স্থানের অধিপতি গ্রহের অবস্থান অনুসারেও দ্বাদশ ভাব নির্ণয় করা হয়। যেমন- মেষ রাশির অধিপতি মঙ্গল তাই মঙ্গল হবে লগ্নপতি। মেষ রাশির ২য় স্থানে বৃষ রাশি রয়েছে। বৃষ রাশির অধিপতি শুক্র তাই শুক্র হবে তনুপতি। এই শুক্রের শুভ বা অশুভ দ্বারা তনু বা দেহভাবের শুভাশুভ বিচার করা হয়।
সবশেষে আলোচনা করবো মানুষের হাতের গড়ন নিয়ে। সামুদ্রিক শাস্ত্র মানুষের হাতের গড়ন দেখে তাঁর স্বভাব বলে দেবার অসাধারণ বিদ্যা দান করেছে। 
 
বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া বাকি চারটে আঙুল, তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা আর কনিষ্ঠা - প্রত্যেকটি একেকটি গ্রহের প্রতিনিধি। এই আঙুলের আকার-প্রকারের বিভিন্নতা মানুষের চরিত্রেও ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
আঙুলের গড়ন দেখে মানুষ চেনার আগে জেনে নিন, কোন আঙুল কোন গ্রহের প্রতিনিধি। তর্জনী - গুরু বা বৃহস্পতি, মধ্যমা - শনি, অনামিকা - রবি বা সূর্য আর কনিষ্ঠা - বুধ গ্রহের প্রতীক।
★ তর্জনী -- এই আঙুল মানুষের উচ্চাকাঙ্খা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আর 'অহম'-এর প্রতীক। এর সাহায্যে কে, কতটা ভাগ্যবান এবং কাজে উন্নতি করবে তা-ও জানা যায়। তর্জনী সাধারণত উচ্চতায় মধ্যমা-র মধ্যভাগ-কে ছুঁয়ে থাকে। কারও আঙুল এর থেকে সামান্য লম্বা হলে বলা হয়, তার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আর তার বৃহস্পতি গ্রহ খুবই শক্তিশালী। আঙুল ছোটো হলে অন্যের দেখানো পথে চলতে কিংবা একা কাজ করতে ভালোবাসে সেই মানুষটি। তর্জনী স্বাভাবিকের থেকে বেশি বড়ো হলে সব বিষয়ে অবহেলা ও ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। আর ছোটো হলে এই বৈশিষ্ট্যগুলোই আর থাকে না। তর্জনী বাঁকা যার, সে খুব চালাক, স্বার্থপর আর খল প্রকৃতির। এই আঙুলের ঠিক নীচেই বৃহস্পতির অবস্থান। গ্রহটি হাতে পূর্ণভাবে বিকশিত (উঁচু) হলে মানুষের মধ্যে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, নীতিপরায়ণতা ও আত্মাভিমান দেখা যায়। বেশি উঁচু হলে অহঙ্কারী, রাগী, ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠে। নীচস্থ হলে বৃহস্পতির কোনও মৌলিক গুণ ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায় না।
★ মধ্যমা -- এই আঙুলের নীচে শনি গ্রহের অবস্থান। এটি সত্য, ন্যায়পরায়ণ, নিয়মানুবর্তিতার প্রতীক। অন্যান্য আঙুলের চাইতে তুলনায় একটু বেশি বড়ো হলে ব্যক্তিটি দায়িত্ববান, গভীর ব্যক্তিত্বশালী এবং উচ্চাকাঙ্খী হবে। আঙুলের উচ্চতা বেশি হওয়া মানে একাকীত্ব পছন্দ। এবং অনেক সময় বাজে কাজেও জড়িয়ে পড়তে পারে। উচ্চতায় ছোটো হলে অলস প্রকৃতির হয়। মধ্যমার প্রথম ভাগ লম্বা হলে আধ্যাত্মবাদের প্রতি আগ্রহ থাকবে। আঙুলের মধ্য ভাগ লম্বা হলে রসায়ন, লোহা সহ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত ব্যবসায়-র সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তৃতীয় ভাগ লম্বা হলে সেই ব্যক্তি চালাক, স্বার্থপর হয়। খারাপ কাজের সঙ্গে ষুক্ত থাকে। আঙুলের নীচে স্থিত শনিগ্রহের অবস্থান উঁচুতে হলে সেই মানুষ জ্ঞানী হয়। বিচারশক্তির ক্ষমতা প্রবল থাকে এবং ইন্দ্রিয় নিজের বশে থাকে।
★ অনামিকা -- এই আঙুল রবি-র ধারক। এটি আমাদের যশ লাভ, বুদ্ধি ও সৃষ্টিশীল কাজ করতে সাহায্য করে। তর্জনী-র থেকে অনামিকা লম্বা হলে সেই ব্যক্তির যে কোনও বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা থাকে। এছাড়া, ফ্যাশন বা ছবির জগতে কাজ করার আগ্রহ দেখা যায়। লম্বায় ছোটো হলে সব অবস্থাতেই সে সন্তুষ্ট। যশ লাভের খুব ইচ্ছাও তার থাকে না। যদিও তর্জনী থেকে অনামিকা লম্বায় ছোটো খুব কমই দেখা যায়। অনামিকার নীচে অবস্থিত রবি গ্রহ পূর্ণ মাত্রায় (উঁচু) থাকলে সব কাজেই সাফল্য, যশ, প্রতিষ্ঠা আসে। ব্যক্তিটি পরিশ্রমী হয় এবং ব্যবসায় উন্নতি করে। ধার্মিক হলেও ধর্মান্ধ হয় না। নিজের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকে। এরা যেমন চট করে রেগে যায় তেমনি আবার খুব তাড়াতড়ি শান্তও হয়।
★ কনিষ্ঠা -- বুধ গ্রহের ধারক এই আঙুল। এর মাধ্যমে ব্যক্তির বাকপটুতা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও চাতুর্য বোঝা যায়। কণিষ্ঠা অনামিকার প্রথম ভাগের সমান এর উচ্চতা হলে যে কোনও বিষয়েই ব্যক্তির অভিব্যক্তি কম প্রকাশ পায়। ভাবনা এবং কথায় নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ছেলেমানুষী স্বভাবে এর আরও একটি বৈশিষ্ট্য। আর লম্বা হলে আই কিউ তীক্ষ্ণ হয়। খুব ভালো লেখক ও সুবক্তা হয়। কনিষ্ঠা-র নীচু ভাগ চওড়া মানেই খুব বিলাসী।
এছাড়াও, হাতের আঙুলগুলি থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মনের ইচ্ছা, আয়ু সম্বন্ধেও জানা যায়। যেমন, যে কোনও আঙুলের অগ্রভাগ দেখে সেই ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি, দ্বিতীয় ভাগ তর্ক করার ক্ষমতা জানা যায়। আঙুলগুলি টান টান সোজা মানেই মানুষটি প্রচণ্ড কঠোর ও জেদি হবেই। এই ধরনের মানুষ অত্যন্ত বিশ্বাসী হলেও কঠোর ও জেদি স্বভাবে জন্য বেশি বন্ধু থাকে না।
আবার হাতের আঙুল খুব নরম মানেই সেই ব্যক্তি অত্যন্ত খরুচে। তবে সহজে এই লোককে বিশ্বাস না করাই ভালো। জেদি হওয়ায় এদের বন্ধুর সংখ্যা কম। নরম মানসিকতার জন্য অনেকেই বন্ধুত্বের আগ্রহ দেখায়। যদিও এরা কঠিন কাজ বা দায়িত্ব নিতে পারে না। বোহেমিয়ন স্বভাবের জন্য এরা নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনাও নিতে পারে না।
হাত মেলে ধরার সময় যাদের সব আঙুল ৬০ ডিগ্রি-র কোণে খোলা যায় না তারা জ্ঞানী ও কর্ম নিপুণ হয়। যাদের ৯০ ডিগ্রি কোণ পর্যন্তু খোলে তারা অনায়েসে ঝুঁকি নিতে পারে। ১২০ডিগ্রি কোণের আঙুলধারীরা সব সময় অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে অভ্যস্ত। আঙুলের গঠন কোমর-এর মতো হলে সেই ব্যক্তি তর্কে পারদর্শী হলেও শারীরিক সুস্থতা কম থাকে।
আঙুলের ডগা ছুঁচালো হলে প্রখর বুদ্ধিমান হবে। আঙুল আগা-গোড়া চওড়া হলে প্রচণ্ড জেদি হবে। আঙুলের ডগা চৌকো হলে বাজে কাজে জড়িয়ে জেলে যাওয়ারও অসম্ভব নয়। যদিও এরা খুবই বাস্তব মেনে থাকে।

Friday, April 26, 2019

আধুনিক অর্থনীতি নাকি শুভংকরের ফাঁকি

পৃথিবীর মোট সম্পদের মূল্যমান।।
পাঁচশো বছর আগে গোটা পৃথিবীর মোট সম্পদের মূল্যমান ছিল ২৫০ বিলিয়ন ডলারের মত। আজ সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার।
কেবল মানুষ বাড়সে বলেই কি সম্পদের এই বিস্ফোরণ? উহুঁ।
সেসময় মাথা পিছু মানুষের উৎপাদন ছিল বছর প্রতি ৫৫০ ডলার। এখন যেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮,৮০০ ডলার।
এই যে ভয়ানক গ্রোথ, এর পেছনে কারণটা কী?
কারণটা আর কিছুই না, আধুনিক অর্থনীতি। আধুনিক অর্থনীতি খুব জটিল একটা ব্যাপার। জটিল ব্যাপারকে সহজ করার জন্য একটা গল্প শোনাই বরং।
অনেকগুলা ক্যারেক্টার আছে এই গল্পে। দেইখেন, ট্র্যাক হারায়ে ফেইলেন না আবার:P
সৈয়দ সাহেব খুবই উঁচু বংশের লোক। ঢাকা শহরে উনার একটা ব্যাঙ্ক আছে।
চৌধুরী সাহেব ঢাকা শহরেরই একজন উঠতি কন্ট্র্যাক্টর। একটা প্রজেক্টে উনি বিরাট লাভ করলেন। সেই লাভের ১ কোটি টাকা উনি সৈয়দ সাহেবের ব্যাঙ্কে রাখলেন। তার মানে সেই ব্যাঙ্কে এখন ১ কোটি টাকার ক্যাপিটাল আছে।
টমি মিয়া তখন ঢাকায় এলেন। এসে খেয়াল করলেন, তিনি শহরের যে অংশে থাকেন, ঐ অংশে কোন ভালো ভাতের হোটেল নাই। সব স্যান্ডউইচ, বার্গার আর ফ্রাইড রাইসে ভর্তি।। নিখাদ ভাত-মাছের দোকান নাই কোন।
টমি মিয়া ঠিক করলেন, এইখানে একটা ভাতের হোটেল দিবেন। কিন্তু হোটেল যে দিবেন, তার জন্য তো টাকা লাগবে। সেই টাকা সে পাবে কই? সে গেলো ব্যাঙ্কের কাছে। ব্যাংকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে বুঝাতে সক্ষম হল, যে এইখানে ভাতের হোটেল দিলে বেশ চলবে।
ব্যাঙ্ক তাকে ১ কোটি টাকা লোন দিল। সেই লোন দিয়ে সে কনট্রাক্টর ভাড়া করলো। কাকে করলো? সেই চৌধুরী সাহবেকে যে কিনা ব্যাঙ্কে টাকা রাখসিলো।
চৌধুরী সাহেব সেই টাকা ব্যাঙ্কে ডিপোজিট করলো। এইখান ঠেকে সে দরকারমত চেক ভাঙিয়ে ইট-বালু, রড-সিমেন্ট যা দরকার কিনবে।
মজার ব্যাপার হল, চৌধুরী সাহেবের টাকাই আবার তার এ্যাকাউন্টে ফেরত আসছে। ব্যাঙ্কের হিসাব খাতা দেখাচ্ছে, চৌধুরী সাহেবের এ্যাকাউন্টে এখন ২ কোটি টাকা আছে। সত্যিকার ক্যাশ কিন্তু ঐ ১ কোটিই রয়ে গেছে। টাকা কিন্তু বাচ্চা দেয় নাই।
ঘটনা এইখানেই শেষ না। ২ মাস শেষে কিছুদূর কাজ আগানোর পর কনট্রাক্টর সাহেবের মনে হইলো, যে কাজটা শেষ করতে আরো টাকা লাগবে। সে আরো ১ কোটি টাকার বিল ধরায়ে দিল।
টমি মিয়া বিল দেখে বেজার হইলো। কিন্তু কাজ অনেকখানি আগায়ে গেছে। এখন আর ফেরৎ আসাও ঠিক হবে না। সে আবার ব্যাঙ্কে দৌড় দিলো। ম্যানেজারকে বুঝায়ে সুঝায়ে আরো ১ কোটি টাকা লোনের বন্দোবস্ত করলো। এই ১ কোটি কিন্তু সেই ১ কোটি যেটা কন্ট্র্যাক্টর রড-সিমেন্ট কিনবে বলে ব্যাঙ্কে ডিপোজিট করে রেখেছিল।
যাই হোক, এই লোনের টাকা সে আবার কন্ট্রাক্টরের এ্যাকাউন্টে পাঠালো।
তো, কন্ট্রাক্টরের এ্যাকাউন্টে এখন কতো টাকা হল?
৩ কোটি টাকা। শুরুতে নিজের জমা করা ১ কোটি আর টমি মিয়ার দেয়া ২ কোটি।
আর ব্যাঙ্কে সত্যিকার অর্থে ক্যাশ টাকা আছে কত? সেই ১ কোটিই। যেই ১ কোটি চৌধুরী সাহেব বহু আগে জমা করসিলো।
এই কাজটাই বর্তমান আমেরিকান ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ১০ বার করা যাবে। (বাংলাদেশের সিস্টেমে ক’বার করা যাবে—আমি জানি না। কেউ জানলে জানাবেন, প্লিজ) মানে কন্ট্রাক্টরের এ্যাকাউন্টে ১০ কোটি টাকা দেখানোর জন্য ব্যাঙ্কের ভল্টে ১০ কোটি টাকা থাকা লাগবে না। ১ কোটি টাকা থাকলেই চলবে।
সোজা কথা, আমাদের সবার এ্যাকাউন্টে যে পরিমাণ টাকা আছে, ঐ পরিমাণ ক্যাশ ব্যাঙ্কে নাই। এখন দেশে যদি একটা গুজব উঠে যে সামনে যুদ্ধ, ব্যাঙ্ক সব কল্যাপ্স করবে, ব্যাঙ্কে যার যত টাকা আছে সব উঠায়ে নেও আর দেশের সব মানুষ সেটা বিশ্বাস করে ব্যাঙ্কে টাকা উঠাতে যায়, ব্যাঙ্ক কিন্তু সবার টাকা ফেরত দিতে পারবে না। দিবে কোথ থেকে? থাকলে না দিবে!
এই ব্যাপারটাই ঘটসিলো It’s a wonderful life এর নায়কের সাথে। তার ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে শুনে সবাই টাকা উঠাইতে চলে আসলো। এখন তার কাছে তো টাকা নাই। সে কাস্টোমারদয়ের বুঝাইতেই পারে না, যে সে কোন টাকার ম্যাশিন না । সে একটা সিস্টেম মাত্র। সে X এর টাকা Y কে, Y এর টাকা Z কে আর Z এর টাকা X কে ধার দিয়ে এই সিস্টেমটা চালু রাখসে মাত্র।
এখন এইটাকে আপনি ভণ্ডামি বলতে পারেন। তাহলে গোটা আধুনিক অর্থনীতিই একটা বিরাট ভণ্ডামি।
এক ভণ্ডামি না বলে বরং বলা যায়, ভবিষ্যতের উপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস। সৈয়দ সাহেব বিশ্বাস করে যে, টমি মিয়ার হোটেল একবার চালু হয়ে গেলে সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা মুনাফা আসবে। সেই প্রফিট থেকে সে আস্তে আস্তে তার ঋণ সুদাসলে শোধ করবে। এক বোল ভাতও সিদ্ধ হয় নাই—তার আগেই সে তাই এই ঝুঁকি নিতে রাজি হইসে।
এই ব্যাপারটাকে আজ আমরা বলি Credit. ল্যাটিন Credo শব্দ থেকে এটা আসছে। এর মানে I trust you. বিশ্বাসটা যতোটা না একজন মানুষের উপর আরেকজনের, তার চেয়ে অনেক বেশি একটা সুখী, সম্‌দ্ধ ভবিষ্যতের। ব্যাঙ্কার আর হোটেলওয়ালা—দুই জনই একই স্বপ্নে বিশ্বাস করে বলেই এই গোটা সিস্টেমটা কাজ করতেসে। ঐ বিশ্বাসটুকু না থাকলে সিস্টেমটা মুহূর্তে ধ্বসে পড়বে।
ব্যাঙ্ক যদি টমি মিয়াকে লোন না দিত, তখন সে কী করতো? সে এমন কোন কনট্রাক্টর খুঁজে বের করতো, যে কিনা নিজের টাকায় তার হোটেলটা করে দিবে। পরে হোটেল লাভ করা শুরু করলে তার পেমেন্টটা নিবে। সমস্যা হল, এমন কনট্রাক্টর পাওয়া ভূভারতে সম্ভব না। কাজেই, তার হোটেলও বানানো হবে না। হোটেল না হলে মানুষ খেতে আসবে না। তার ট্যাঁকে পয়সা আসবে না। পয়সা ছাড়া সে কন্ট্রাক্টর পাবে না। আর কনট্রাক্টর ছাড়া তার স্বপ্নের হোটেলও হবে না।
যুগের পর যুগ ধরে মানুষ ‘না হবার’ এই দুষ্টচক্রে বন্দী হয়ে ছিল। ইতালির কিছু মানুষ সামান্য Bench এ বসে ধার দেবার যে কালচার শুরু করেছিল, সেই কালচারই ফুলেফেঁপে Bank এর রূপ ধারণ করে মানুষকে এই দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত করেছে। আমরা মনে করি, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। ব্যাংকারদের ফিলোসফি উলটা। তাদের কথা হচ্ছে—আজকের দিন যেমন তেমন, সামনের দিন সোনার মতন।
ব্যাঙ্কগুলো আমাদের টাকা ধার দেয় না। ধার দেয় স্বপ্ন। এই স্বপ্নের কেনাবেঁচা করেই আমরা গড়ে তুলি আধুনিক সভ্যতা। বর্তমানকে বিক্রি করে কিনি সোনালী ভবিষ্যৎ।
১৭৭৬ সালে আমেরিকা স্বাধীন হয়। ঐ বছরই এডাম স্মিথ একটা দুর্দান্ত বই লেখেন। বইয়ের নাম The Wealth of Nations, নিউটনের প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা বাদ দিলে এইটা আধুনিক প্‌থিবীর সবচেয়ে গ্রুত্বপূর্ণ বই।
এই বইয়ের আট নম্বর চ্যাপ্টারে স্মিথ একটা সম্পূর্ণ নতুন আইডিয়া নিয়ে হাজির হন। আইডিয়াটা এমনঃ ধরা যাক, পুরান ঢাকার ফজলু মামার মত আপনার একটা ছোটখাটো পিঠার দোকান আছে। নিজেই পিঠা বানান, নিজেই সেটা বেঁচেন। পিঠা বেঁচে আপনার কিছু লাভও হল।
এখন এই লাভ দিয়ে আপনি কী করবেন? বিড়ি-সিগারেট খেয়ে শেষ করবেন? না দোকানের বেচাবিক্রি বাড়ানোর জন্য কোন পিচ্চি আকা কুদ্দুস আকা বাবুল নিয়োগ করবেন?
যুগ যুগ ধরে ফজলু মামারা লাভের টাকা দিয়ে গাঁজায় দম দিয়ে সেটা উড়িয়ে আসতো। এডাম স্মিথ এসে মামাকে বললেন, তুমি এই টাকা দিয়ে একটা এ্যাসিস্ট্যান্ট রাখো, ব্যবসা বড় করো। লাভের টাকা দিয়ে মৌজ না করে সেটা আবার ইনভেস্ট করো। তাইলে খালি তোমার একার লাভ তা না, আশেপাশের দশটা মানুষেরও লাভ।
শুনে মনে হতে পারে, আরে, এ আর এমন কী আইডিয়া! এই আইডিয়া তো আমিও দিতে পারি। এডাম স্মিথের জায়গায় আমি থাকলে আজকে আমি অর্থনীতির জনক হইতে পারতাম।
আমাদের এমনটা মনে হচ্ছে। কারণ, আমরা ঠিক এই ক্যাপিটালিস্টিক সমাজের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। প্রাচীন মানুষ কিন্তু একটু টাকাপয়সা হলেই এই মৌজমাস্তির খপ্পরে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল। সেটা রোম সম্রাট ক্যালিগুলা থেকে শুরু করে মোগল বাদশা শাহজাহান পর্যন্ত সবাই। এডাম স্মিথ এসে এই দুষ্টচক্র ভাঙেন। তিনি আমাদের সূত্র দেনঃ সমাজের মোট সম্পদ স্ট্যাটিক কিছু না। বরং চেষ্টাচরিত্র করে একে বাড়ানো যেতেই পারে। নিউটনের ত্‌তীয় সূত্রের চেয়ে এই সূত্র তাই কোন অংশে কম শক্তিশালী না।
আমাদের ধর্মে, মিথোলজিতে সবসময়ই লোভকে খারাপ চোখে দেখা হয়েছে। বলা হয়েছে, লোভে পাপ, পাপে ম্‌ত্যু। স্মিথই প্রথমা আমাদের বলেন—Greed is good. তুমি যদি নিজের লাভের জন্য খাটো, লোভের জন্য খাটো— তাইলে খালি নিজের না, সমাজেরই লাভ।
আচ্ছা, আমার ইচ্ছা আমি গরিব থাকবো। কার কী সমস্যা?
সমস্যা আছে। আমি গরিব থাকলে আমি বাজারের সেরা মোবাইলটা কিনতে পারবো না। তাইলে যেই লোক কষ্ট করে মোবাইলটা বানাইসে, সেও গরিব থাকবে। কারণ তার তো বিক্রি হচ্ছে না। আর আমি বড়লোক হইলে আপনিও বড়লোক হবেন। কারণ, আপনার বানানো জিনিস তখন আমি কিনতে পারবো। এটাকে বলে উইন উইন সিচুয়েশন।
ধনবানদের পাপী হিসেবে দেখা আমাদের আরেকটা ট্রাডিশন। ধন আর পাপ মোটামুটি সমার্থক ব্যাপার। স্মিথ এইসব ট্রাডিশনাল ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেন। তিনি বলেন, বড়লোক মানেই পাপী না। বরং বড়লোক-ই ভালো। সে দশটা লোকের চাকরির বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে। স্বর্গের দরজা যদি খোলা হয়, তবে এই লোকটাই সবার আগে ঢুকবে। দিনরাত ইবাদত করা লোকটা তার পেছনেই থাকবে।
আমাদের অবশ্য ধারণা, আমি বড়লোক হতে হলে আশেপাশের সবাইকে দাবায়ে বড়লোক হতে হবে। স্মিথ এটারও বিরোধিতা করেন। স্মিথ বলেন, চাইলেই তুমি আশেপাশের সবাইকে নিয়েই বড়লোক হতে পারবা। লাভের গুড়টা নিজের পকেটে না পুরে সেই গূড় দিয়ে ফ্যাক্টরির সাইজ বাড়াও। নতুন প্রডাক্ট বানাও। নতুন প্রডাক্ট নিয়ে আসলে মানুষ সেটা খাবেই। তুমি দুধ-চা বানাতে। একজন এ্যাসিস্ট্যান্ট রেখে মাল্টা চা-ও বানানো শুরু করো। দুধ চা-র বিক্রি তাতে কমবে না।
এইভাবে প্রডাক্ট ডাইভার্সিটি তৈরি করে মানুষের কনজামশন বাড়ানো সম্ভব। এটাই ক্যাপিটালিজম। এটাই পুঁজিবাদ। পুঁজির সাথে সম্পদের এইখানে পার্থক্য। মিশরের ফারাওরা পুঁজিবাদী ছিলেন না। তারা ছিলেন সম্পদবাদী। স্প্যানিশ যে নাবিকটা আমেরিকায় এসে কাড়ি কাড়ি স্বর্ণ লুট করে গেছে, সেও পুঁজিবাদী না। যে লোকটা কষ্ট করে মাস শেষে কিছু টাকা জমিয়ে সেই টাকা আবার শেয়ার বাজারে রি-ইনভেস্ট করে, সেই প্রক্‌ত পুঁজিবাদী।



মধ্যযুগ পর্যন্ত এই পুঁজিবাদীদের দেখা পাওয়া ছিল বিরল। মধ্যযুগের বড়লোকদের দেখেন। কী জমকালো পোশাক পরে ঘুরে বেড়াইতো। আর এখনকার টাকার মেশিনদের দেখেন। সামান্য জিন্স আর টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। অথচ আজকের জাকারবার্গদের সম্পদের পরিমাণ কিন্তু মিশরের যে কোন ফারাওর চেয়ে অনেক বেশিই হবে। সেসময় মানুষ দান খয়রাত করে পুণ্য কামাইতো। পকেটে টাকা বেশি হয়ে গেলে বউয়ের জন্য তাজমহল বানাইতো। আজকের পুঁজিপতিরা সেটাই করে লাভের টাকা আবার খাটিয়ে। সমাজে টাকার ফ্লো-টা ঠিক রেখে।
ফলাফল—মধ্যযুগে অভিজাত সমাজের কেন্দ্রে থাকা ডিউক আর নবাবদের সরিয়ে সেই জায়গাটা আজ দখল করে নিয়েছে ব্যবসায়ী আর পুঁজিপতিরা। যে মিডল ক্লাসের সুখ-দুঃখ আবেগ নিয়ে আমরা দিনরাত জিকির করি, সেই মিডল ক্লাসের জন্মও দিয়েছে আধুনিক পুঁজিবাদ।
পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় আছর পড়সে বোধয় আধুনিক বিজ্ঞানের উপর। একটা রিসার্চ গ্রান্ট যখন লেখা হয়, তখন প্রথম যে প্রশ্নটা ফেস করতে হয়, তা হল—এই প্রজেক্টটার ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট কী? এইটা সমাজকে নতুন কিছু দিবে কিনা। বিজ্ঞানের জন্য বিজ্ঞান তখন মন খারাপ করে সাইড বেঞ্চে বসে থাকে।
আজ আমেরিকা, চীন অলমোস্ট শূন্য থেকে টাকা ছাপায়ে বাজারে ছাড়তেসে। এতো যে টাকা ছাড়তেসে—সমাজে সেই পরিমাণ সম্পদ তো তৈরি হচ্ছে না। তারপরও তারা কেন এই ঝুঁকিটা নিচ্ছে? তার কারণও বিজ্ঞানের উপর এই অগাধ বিশ্বাস। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, শিগগিরই ল্যাবগুলো থেকে নতুন নতুন সব ব্রেকথ্রু টেকনোলজি বের হবে। জন্ম নিবে নতুনতর সব ইন্ডাস্ট্রি। সামনে বাবল অবশ্যম্ভাবী। আর তা ঠেকানোর পুরো দায়িত্ব এখন এই বিজ্ঞানীদের। সারা দুনিয়া তাই তাকায়া আছে এই ল্যাবগুলোর দিকে। কখন তারা নতুন কিছু নিয়া আসবে আমাদের জন্য?
ব্যাঙ্কগুলো তো টাকা ছাপায়েই খালাস। এই টাকার আসল মূল্য তৈরি করে বিজ্ঞানী আর ইঞ্জিনিয়াররাই।
ইউরোপেই প্রথম ব্যবসায়ীরা ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। ব্যাপারটা এতো সহজে হয়নি। এর পেছনে কাজ করেছে এদের ক্রেডিট ইকোনমির সাফল্য।
কোন এক দুঃসাহসী লোক হয়তো মানুষজনের কাছে ধারকর্জ করে অজানার পথে পাড়ি দিল। সেখান থেকে সোনাদানা নিয়ে এসে আগের ধার ফেরত দিল। ফলে ব্যবসায়ী মহলে তার একটা ক্রেডিবিলিটি গড়ে উঠলো। পরে যখন সে আরো বড় অংকের ক্রেডিট এর জন্য এ্যাপ্লাই করলো, সেটা সহজেই মিললো। সেই টাকা দিয়ে আবার যাত্রা, আবারো লাভ, আবারো যাত্রা—এইভাবে চলতেই থাকলো। এমনকি সে নিজের লাভের টাকা থেকে অন্যকে ধারকর্জ দিতেও শুরু করলো। এইভাবে গোটা সমাজে একটা ক্রেডিট ফ্লো গড়ে উঠলো।
যে ক্রেডিট সিস্টেমের কথা আমরা বলছি, সেই ক্রেডিট সিস্টেম যে ইউরোপীয়দের একক আবিষ্কার—তা না। চায়না, ভারত এমনকি মুসলিম জাহানেও এর চল ছিল। আ্ঠারো শতক পর্যন্ত তো প্‌থিবীতে পুঁজির ভরকেন্দ্র এশিয়ার দিকেই হেলে ছিল।
কিন্তু প্রাচ্যের সমাজে ক্রেডিট সেই সম্মানটা পায়নি, যা সে পেয়েছে পশ্চিমে এসে। প্রাচ্যের হিরো ছিল নাদির শাহ’র মত খুনী। কিংবা অটোম্যানদের মত ব্যুরোক্র্যাটেরা। যাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল জনগণের কাছ থেকে আদায় করা ট্যাক্স। ক্রেডিট আর বণিক—দুটোকেই এখানে খুব হেয় চোখে দেখা হত।
ইউরোপের রাজারা ওদিকে প্রাচ্যের শাসকদের মত ‘খেয়ে ছেড়ে দিব’ টাইপ চিন্তাভাবনা থেকে সরে এসে ব্যবসায়ীদের মত চিন্তাভাবনা শুরু করেন। কোথায় ইনভেস্ট করলে লাভ হবে, কারে ধার দিলে সেটা দ্বিগুণ ফেরত আসবে—এই ওয়েতে। রাষ্ট্রকে তারা আর স্রেফ রাষ্ট্র রাখলেন না। একে একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের আদলে চালাতে শুরু করলেন। যার মূল লক্ষ হচ্ছে প্রফিট।
শুরুটা করেন স্পেনের রাণী ইসাবেলা। কলম্বাসের যাত্রার পুরোটাই স্পন্সর করেন তিনি। কলম্বাস অবশ্য ফার্স্টেই ইসাবেলার দরবারে যাননি। তিনি গেছিলান পর্তুগাল রাজার দরবারে। পর্তুগাল সম্রাটকে কনভিন্স করতে ব্যর্থ অন তিনি। একজন সফল উদ্যোক্তার মতই তিনি থেমে যাননি। সাতঘাট ঘুরে অবশেষে ইসাবেলার মন জয় করতে সক্ষ্ম হন তিনি। বোঝান, প্‌থিবী গোল—এই তত্ত্বে যেহেতু আমাদের ঈমান আছে, সেহেতু পশ্চিমে যাত্রা করলে একদিন ঠিকই স্বর্গের ভারতে যাওয়া যাবে।
আজ আমরা জানি, স্পেন সেইবার বাজিমাৎ করেছিল। কলম্বাসের সফল অভিযানের পর ব্যাংকাররা এইসব অভিযানে ইনভেস্ট করতে আরো সাহস পান। স্পেন পবশ্য বেশিদিন এই সেক্টরে রাজত্ব করতে পারেনি। স্পেনের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে স্পেনেরই অধীনস্থ ডাচরা এই ক্রেডিট সেক্টরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে।
ডাচরা ছিল স্পেনের খুবই ছোট্ট একটা উপনিবেশ। কেউ তাদের গোনাতেই ধরতো না। ১৫৬৮ সালে তারা স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। মাত্র আট বছরের মধ্যেই তারা স্বাধীনতা তো পায়ই, সেই সাথে স্প্যানিশদের হটিয়ে পায় সমুদ্রপথে আধিপত্য।
এই আধিপত্য কোন নাদির শাহ বা কলম্বাস এনে দেয়নি ডাচদের। এনে দিয়েছে ডাচ ব্যাংকার আর ব্যবসায়ীরা। টাকাপয়সার ব্যাপারে ডাচদের একটা সুনাম ছিল ইউরোপে। ডাচরা ছিল ইউরোপের আল-আমিন। তাই কোন যাত্রা করার আগে তারা সহজেই ধার পেত। নিজেদের কোন স্থায়ী সৈন্যবাহিনী ছিল না তাদের। ধারের টাকা দিয়ে সৈন্যবাহিনী ভাড়া করতো তারা। যাত্রা শেষে লাভের টাকা দিয়ে ধার ফেরত দিত। এই করে করে তারা গোটা ইউরোপের মহাজনদের আস্থা অর্জন করে। স্পেনের রাজপরিবার যেখানে অযথা যুদ্ধবিবাদ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে, দেনার সমুদ্রে ডুবছে, ডাচরা সেখানে পুঁজির পাহাড় গড়ে তুলছে। ডাচ সাম্রাজ্য কোন রাজাধিরাজ গড়ে তুলেনি। তুলেছে এর ব্যাংকার আর ব্যবসায়ীরা।
কীভাবে? একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
ধরা যাক, আপনার বাবা জার্মানির বিরাট মহাজন। উনি দেখলেন, ইউরোপের বাজার বড় হচ্ছে। কাজেই, তার ব্যবসাও বড় করা দরকার। তিনি আপনাকে পাঠালেন আমস্টারডাম আর আপনার ছোট ভাইকে পাঠালেন মাদ্রিদ। সাথে দিলেন ১০,০০০ করে স্বর্ণমুদ্রা।
আপনার ভাই তার টাকাটা স্পেনের রাজাকে ধার দিল। সে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যুদ্ধের রসদপাতি লাগবে না? আর আপনি দিলেন হল্যান্ডের এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীকে। সে আটলান্টিকের ঐপারে ব্যবসা করে। তার ইচ্ছা, ম্যানহাটন নামে এক জায়গায় কিছু জমি কিনে রাখার। তার প্রেডিকশন বলে, কয় দিনের মধেয়ি এই জমির দাম হু হু করে বেড়ে যাবে। তখন সে বেশি দামে বেঁচে লাভ করবে।
ক্যালেণ্ডারের পাতা ওল্টালো। হাডসন নদীর তীর শূন্য বিরানভূমি থেকে জনবহুল ট্রেড রুটে পরিণত হলো। ডাচ ব্যবসায়ী কড়া দামে তার জমি বেঁচে ধারের টাকা ইন্টারেস্ট সহ ফেরত দিল। আপনি খুশি, আপনার বাপও খুশি।
এদিকে স্পেনের রাজাও যুদ্ধে জিতসে। কিন্তু এই ফাঁকে তুর্কীদের সাথে তার লেগে গেছে। তুর্কীদের একটা শিক্ষা দেয়া দরকার। তার যে ঋণ আছে–এটা তার মাথায় আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ঋণ শোধ করার চেয়ে তুর্কীদের সাইজ করাটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।
আপনার ভাই ঠিকই চেষ্টাচরিত্র চালিয়ে যাচ্ছে টাকাটা উদ্ধার করার জন্য। রাজপ্রাসাদে তার যে লিঙ্ক-টিঙ্ক আছে, ওদের দিয়ে ওদের দিয়ে ট্রাই করে যাচ্ছে। এই করে তার পায়ের জুতাই ক্ষয় হল কেবল, টাকা আর ফেরত এলো না।
অবস্থা আরো খারাপ হল যখন সে আপনার ছোট ভাইর আগের ঋণ তো শোধ করলোই না, উলটা আরো ১০,০০০ স্বর্ণমুদ্রা ধার চেয়ে বসলো। এখন জলে নেমে তো আর কুমিরের কথা অমান্য করলে চলে না। আপনার ছোট ভাই আপনার বাপকে বলে আরো ১০০০০ মুদ্রা আনায়ে রাজার হাতে তুলে দিল।
আপনার ব্যবসা এদিকে ভালোই যাচ্ছে। ধার দিচ্ছেন, ফেরত পাচ্ছেন। বেশ মোটা অংকের লাভ হচ্ছে মাসে মাসে। দিন তো আর সবসময় সমান যায় না। এক ক্লায়েন্ট আপনাকে কনভিন্স করলো যে, সামনে কাঠের জুতার ট্রেন্ড আসতেসে বাজারে। এই বাজার ধরতে হলে এখনই একটা কাঠের জুতার ফ্যাক্টরি দিতে হবে। আপনি তার কথায় ইম্প্রেসড হয়ে ধার দিলেন। দুর্ভাগ্যনকভাবে, কাঠের জুতা মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হইলো। সে ধার তো ফেরত দিতে পারলোই না। ফেরত চাইলে ধারের কথা বেমালুম অস্বীকার করলো।
আপনার পিতা মহাশয় গেলেন ক্ষেপে। তিনি আপনাদের দু’জনকেই বললেন আইনের আশ্রয় নিতে। কথামত আপনি আইনের দরবারে গেলেন। নেদারল্যান্ডের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। কাজেই, আইন আপনার কথা শুনলো। শুনে আপনার পক্ষেই রায় দিল। ঐ ব্যাটা জুতাখোরকে আপনার পয়সা ফেরত দিতে বাধ্য করলো। স্পেনে কী হইলো?
স্পেনের আইন আদালত তো আর সেপারেট কোন প্রতিষ্ঠান না। সবই রাজার অঙ্গুলি হেলনে চলে। বিচারক পয়সা ফেরতের কোন বন্দোবস্ত তো করলোই না, উলটা কয়দিন পর রাজা আপনার ছোট ভাইর কাছে ২০০০০ স্বর্ণমুদ্রা চাইলো। দিতে পারলে ভালো। না পারলে তাকে জেলে পুরে রাখবে। কোন কারণে তার ধারণা হইসে, আপনার ছোট ভাই হচ্ছে টাকার খনি। যখনই চাইবো, তখনই পাওয়া যাবে।
সব শুনে আপনার বাপ সিদ্ধান্ত নিলেন, ইনাফ ইজ ইনাফ। স্পেন দেশে আর কোন বিজনেস নয়। এইসব রাজাগজার সাথে তো নয়ই। উনি ছেলের মুক্তিপণটুকু দিয়ে স্পেন থেকে তার ব্যবসা উঠায়ে নিলেন। দুই ভাইকেই আমস্টারডামে বসালেন দুটো ব্রাঞ্চের দায়িত্ব দিয়ে। অবস্থা তখন এতোই শোচনীয় তখন যে খোদ স্পেনের বণিকেরাও আর সেখানে ইনভেস্ট করার সাহস পাচ্ছে না। তারাও তাদের পুঁজি স্পেন থেকে সরিয়ে হল্যান্ডে এনে খাটাচ্ছে।
একটা শিক্ষা তো হল। পকেটে টাকা থাকলেই সেই টাকা বাচ্চা দেয় না। কিন্তু আইনের শাসন থাকলে মানুষ এসে তোমার পকেট ভর্তি করে টাকা দিয়ে যাবে।
ডাচরা তাদের এই সততা আর বিশ্বস্ততা দিয়েই হাডসনের তীরে একটা চমৎকার শহর গড়ে তুলেছিল। নিজেদের রাজধানীর নামে এর নাম দিয়েছিল নিউ আমস্টারডাম। চতুর ইংরেজরা পরে অবশ্য এটা দখল করে নেয়। আকিকা দিয়ে এর নতুন নাম রাখে নিউ ইয়র্ক।
ব্রিটিশদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ডাচরা শহরে একটা দেয়াল গড়ে তোলে। সেই দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ-ই কালক্রমে পরিণত হয়েছে আজকের দুনিয়ার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়। যার নাম ওয়াল স্ট্রীট।
ব্যবসায়ীদের হাতে, বা ব্যবসায়ী মাইন্ডেড লোকেদের হাতে দেশের পলিসি তুলে দেবার কিছু সমস্যাও আছে।
গল্পের শুরুটা একটা জয়েন্ট স্টক কোম্পানি দিয়ে।
কোম্পানির নাম মিসিসিপি কোম্পানি। মিসিসিপি তখন ছিল আটলান্টিকের ওপারের জলা জনমানবশূন্য একটা দেশ। এক কুমির ছাড়া এখানে বলার মত কিছু ছিল না। এই জলা জনমানবহীন জায়গা নিয়েই এই কোম্পানি তখন কল্পকাহিনী ছড়াতে শুরু করে। একে তো আমেরিকা তখন মানুষের কাছে ল্যান্ড অফ অপরচুনিটি। আর সেই সময় এই গালগপ্পো ভেরিফাই করার কোন উপায়ও ছিল না। কাজেই, ফ্রান্সের মানুষ গোগ্রাসে এই গপ্পো খেতে শুরু করে।
এই কোম্পানির যে ডিরেক্টর, উনি আবার ছিলেন ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্ণর। নিজের প্রভার আর কানেকাশান খাটিয়ে উনি প্যারিস স্টক এক্সচেঞ্জে তার কোম্পানির শেয়ার ছাড়েন। মিসিসিপি হাইপ তখন চরমে। এই হাইপকে কাজে লাগিয়ে সেই শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়িয়ে নেন। যে শেয়ারের দাম ছিল ১০০০ টাকা, তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০,০০০ টাকা। ফ্রান্সের এলিট শ্রেণী তো তার এই ফাঁদে পড়েই, সাধারণ মানুষ জায়গাজমি বেঁচে এই কোম্পানির শেয়ার কেনা শুরু করে। বড়লোক হবার এতো সোজা রাস্তা পেলে কে ছাড়ে?
কিছুদিনের মধ্যেই প্যানিক শুরু হয়। বুদ্ধিমান দুই – একজন বুঝতে পারে, শেয়ারের দাম তো এতো হবার কথা না। মিসিসিপিতে যতো সোনাদানাই থাক না কেনো, মানুষজন যে দামে শেয়ার কিনতেসে, এই পরিমাণ সম্পদ ওখানে নাই। তারা দাম বেশি থাকতে থাকতে শেয়ার বেঁচে দেয়া শুরু করে। তাদের দেখাদেখি আরো লোক দাম কমার আগেই শেয়ার হাত থেকে ঝেড়ে দিতে শুরু করে। পুরো বাজারে একটা হিস্টিরিয়া তৈরি হয়। যে শেয়ারের দাম ১০,০০০ উঠসিলো, সেটা আবার ১০০০ এ নেমে আসলো। পাকা খেলোয়াড়্ররা তথা পুঁজিপতিরা ঠিকই তাদের আখের গোছায়ে নিল। মারা খেলো সাধারণ মানুষ। অনেকে আত্নহত্যাও করলো। (আমাদের শেয়ার বাজারের কথা মনে পড়ে কি?)
মিসিসিপি বাবলের ফলাফল দুইটা। এক, এই যে ফ্রান্সের অর্থনীতি কল্যাপ্স করসিলো, প্রায় এক শতাব্দী তা আর এর ধকল কাটায়ে উঠতে পারে নাই। ফ্রান্সের অভিজাতদের দেখে আমাদের ভুল ধারণা হইতে পারে। সাধারণ মানুষের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। খুব খারাপ মানে খুবই খারাপ। এক টুকরা রুটির জন্য একজন আরেকজনকে খুন করতো—এই অবস্থা। আই ক্রাইসিসই পরে ফ্রেঞ্চ রেভোল্যুশনের রাস্তা তৈরি করে দেয়।
দুই, ফ্রেঞ্চ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর গোটা ইউরোপের আস্থা উঠে গেলো। এরা আর আগের মত বড় বড় মহাজনদের কাছ থেকে ধার পাইলো না। ফলে, উপনিবেশ নিয়া ফ্রান্স আর ব্রিটেনের মধ্যে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলতেসিলো, তাতে আগায়ে গেলো ব্রিটেন। কিছুদিনের মধ্যেই অর্ধেক প্‌থিবীর সম্রাট হিসবে আবির্ভাব ঘটলো ব্রিটিশদের।
ব্রিটিশ পুঁজিপতিরাও প্‌থিবীকে শান্তি দেয়নি। ব্রিটিশ নাবিকেরা দেশে দেশে তাদের নৌতরী ভিড়িয়েছে। আর ব্রিটিশরাজ চোখ বুজে তার বণিকদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। পলাশীর যুদ্ধের কাহিনী তো আমরা সবাই জানি। পলাশীর যুদ্ধ থাক। আজ আমরা আরেকটা যুদ্ধের গল্প শুনি।
ঊনিশ শতকের শুরুর দিক। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন চায়নায় আফিম বেঁচে বেশ দুই পয়সা কামাচ্ছে। এক সময় দেখা গেলো, গোটা জাতি আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। চাইনিজ সরকার নড়েচড়ে বসে। আইন করে আফিম নিষিদ্ধ করে। ব্রিটিশরা তো আর কারো কথা শুনে না। তারা চাইনিজদের মধ্যাঙ্গুল দেখিয়ে ঠিকই ড্রাগের চালান পাঠাচ্ছিল।
গভর্ণমেন্ট তখন কঠোর অবস্থানে যায়। ব্রিটিশ জাহাজগুলোকে জব্দ করা শুরু করে। অনেকগুলো ধ্বংসও করে দেয়। এদিকে ড্রাগ কোম্পানিগুলোতে এমপি-দের একটা বড় শেয়ার ছিল।
এমপি-রা নিজের পেট বাঁচাতে একজোট হয়। ব্রিটিশরাজকে কনভিন্স করে চায়নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায়। মুক্ত বাণিজ্যের নামে এ যুদ্ধ হলেও আসলে এটা ছিল অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। যার মূল বক্তব্য হল—আমি তোকে ভাত খাইতে বললে তুই ভাত খাবি। আর আমি তোকে গাঁজা খাইতে দিলে তুই গাঁজা খাবি। দিন শেষে আমার প্রোডাক্টই তোর বাজারে থাকবে।
অসম এ যুদ্ধে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশরা অনায়াসে জয়ী হয়। চাইনিজরা নাকে খত দিয়ে আফিমের অবাধ ট্রানজিট মেনে নিতে বাধ্য হয়। হংকং তো ব্রিটিশরা পুরোটাই দখল নিয়ে নেয়। দীর্ঘদন এই হংকং ছিল চায়নায় ব্রিটিশ ড্রাগ কার্টেলের মূল বেস।
পুঁজিবাদ এইভাবে গুটিকতক লোকের পকেট ভারি করতে গয়ে সাধারণ মানুষকে বলির পাঁঠা বানিয়েছে। কখনো খোলাখুলি প্রফিটের নামে করেছে। কখনো সেবার নামে। যদিও দুনিয়ায় নন প্রফিট অর্গানাইজেশন বলে কিছু নাই। সবই মানুষকে একটা বুঝ দিয়ে নিজেদের প্রফিট অর্গানাইজেশনের লাভ বাড়ানোর ধান্দা। ট্যাক্স না দেবার ধান্দা।
১৮৭৬ সালে বেলজিয়ামের রাজা মধ্য আফ্রিকার কঙ্গোয় একটা নন প্রফিট অর্গানাইজেশন খুলেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকা নিয়ে গবেষণা করা আর এখানে যে দাস বাণিজ্য হয়, লাখ লাখ দাসকে যে জাহাজে করে আটলান্টিকের ঐপারে পাঠানো হয়—তা বন্ধ করা। আফ্রিকার জনমানুষের জন্য স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল করাও ছিল এর অন্যতম লক্ষ্য।
কয়েক বছরের মধ্যে এই মানবিক প্রতিষ্ঠানটি দানবিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। যার মূল লক্ষ হয়ে দাঁড়ায় গ্রোথা আর প্রফিট। স্কুল-কলেজ লাটে উঠলো। তার জাউগায় বসানো হল কয়লার খনি আর রাবার বাগান। রাবার ছিল কঙ্গোর প্রধান রপ্তানি পণ্য। পুঁজিবাদের নিয়ম অনুযায়ী, মালিকেরা প্রতি বছর রাবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়তো। আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে তার দায় মেটাতে হতো ক্‌ষকদের তাদের জীবন দিয়ে।
ধারণা করা হয়, ১৮৮৫ থেকে ১৯০৮ সালের মধ্যে ৬০ লক্ষ লোকের ম্‌ত্যু ঘটে বেলজিয়ান আর্মির হাতে। কারো কারো মতে, এই সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
এইভাবে পুঁজিবাদ মানুষকে বারবার ব্যর্থ করেছে। তাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। তার পরও মানুষ পুঁজিবাদকে ছাড়তে পারেনি। এর কারণ বোধয়, তার কাছে এর চেয়ে ভালো কোন অপশন এখনো আসেনি।
কিংবা পুঁজিবাদ অনেকটা ক্‌ষির মত একটা টেকনোলজি। শিকারী মানুষ যেমন একবার হাল ধরার পর শত অভাব-অভিযোগ সত্ত্বেও আর শিকারী জীবনে ফিরে যেতে পারেনি, আমরাও পুঁজিবাদের হাজারটা ফাঁক-ফোকড় জেনেও একে ডিভোর্স দিতে পারছি না। আমাদের অর্থনীতি এখন এতোই কমপ্লেক্স যে, চাইলেই আমরা ‘গ্রামে ফিরে যাই’ নীতিতে সবকিছু ছেঁড়েছুঁড়ে সহজ একটা জীবন যাপন করতে পারবো না। বড়জোর যেটা করতে পারি, পুঁজিবাদের গলদ্গুলো শুধরে বেটার কোন মডেলে প্‌থিবীটাকে দাঁড় করাতে, যেন কঙ্গোর কালো মানুষটা কিংবা চা বাগানের শ্রমিকেরাও তাদের বেসিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারে।
মনুষ্যজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
ইউভাল নোয়া হারারি।
ভাবানুবাদ : আশফাক আহমেদ

Friday, April 19, 2019

রাহু

আজ আমি আপনাদের জন্য ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা একটি গ্ৰহ রাহুর রাশিচক্রে শুভ ও অশুভ ফলাফল প্রকাশ করব। সঙ্গে প্রতিবিধান সম্পর্কে আলোচনাও করব।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে - রাহু দানব বিশেষ। দানব বিপ্রচিত্তির ঔরসে ও সিংহিকার গর্ভে এঁর জন্ম হয়। উল্লেখ্য, সমুদ্রমন্থন শেষে উত্থিত অমৃত অসুরদের বঞ্চিত করে দেবতারা পান করেছিল। ইনি কৌশলে গোপনে অমৃতপান করতে থাকলে চন্দ্র ও সূর্য এঁকে চিনতে পেরে অন্যান্য দেবতাদের জানান। এই সময় বিষ্ণু এঁর দুই বাহু মাথা কেটে দেন। কিছুটা অমৃত পান করায় এই দানব ছিন্নমস্তক হয়ে অমরত্ব লাভ করেন। এঁর মস্তকভাগ রাহু ও দেহভাগ কেতু নামে পরিচিত।
রাশিচক্রের দ্বাদশ ভাবে অবস্থানভেদে রাহু গ্রহের অশুভ ফলাফল দেখুন ---
১) রাহু লগ্নভাবে থাকলে জাতক শত্রু কৃতকার্য হয় অপরের সাহায্যে কৌশলে কার্যসাধন এ তৎপর হয় তবে এই রাহু পত্নী বিষয়ে বা নিজ দৈহিক সুখের ক্ষেত্রে বিঘ্ন কারক হয় রবি চন্দ্র মঙ্গল শুক্রবা শনি লগ্নপতি হলে এই রাহু আর্থিকভাবে সচ্ছলতা দানে সমর্থ হয়।
২) রাহু ধন ভাবে বা দ্বিতীয়ে থাকলে জাতক আমিষ প্রিয় হয় আমিষ সংক্রান্ত ব্যবসায় সহজে সফলতা পায়। অনিশ্চিত পথে অর্থ আয় বা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের উৎসাহী হয়। জাতককে ভ্রমণবিলাসী বাকপটু ও নীচসংসর্গ যুক্ত করতে পারে।
৩) রাহু ভ্রাতৃ ভাবে বা তৃতীয়ে থাকলে জাতক বহু শত্রু বিশিষ্ট পরাক্রমী বহু বন্ধু যুক্ত ও যশস্বী হয় তবে এই রাহু ভ্রাতা ভগিনী বিষয়ে অশুভ ফল দান করে।
৪) রাহু পুত্র ভাবে বা পঞ্চমে থাকলে জাতকের চারিত্রিক দুর্বলতা আনয়ন করে। গৃহ মাতা পুত্র ইত্যাদি বিষয়ে অশুভফল দান করে। মঙ্গল, চন্দ্র, বুধ, শুক্র চতুর্থপতি হলে চতুর্থভাবে রাহু অপেক্ষাকৃত শুভ ফলদায়ক হয়।‌
৫) রাহু পুত্র ভাবে বা পঞ্চমে থাকলে জাতক পেটের রোগে আক্রান্ত হয় সন্তান এবং স্ত্রীর বিষয়ে মানসিক অশান্তির ভোগ করে। প্রণয় সংক্রান্ত বিষয়ে এই রাহু জাতককে ভাবপ্রবণ করে তোলে।
৬) রাহু শত্রু ভাব এ বা ষষ্ঠে থাকলে জাতক শত্রু জয়ী ও সুস্বাস্ব্যবান হয় ভিন্নধর্মী লোকেদের মাধ্যমে বহু উপকৃত হয় তবে এই রাহু জাতকের কটিদেশে রোগ সৃষ্টি করে নিম্নস্থ হলে গোপন শত্রু দ্বারা বিষ প্রয়োগের সম্ভাবনা থাকে।
৭) রাহু স্ত্রী ভাবে বা সপ্তমে থাকলে জাতক নিজের শরীর ও স্ত্রীর বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। দাম্পত্য সুখে এই রাহু নিঃসন্দেহে বিঘ্ন কারক হয়। অবৈধ প্রণয় নারীসঙ্গে জাতকের আসক্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
৮) রাহু মৃত্যু ভাবে বা অষ্টমে থাকলে জাতক রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বা সরকারি কর্মে বিশেষ মর্যাদা পায় তবে এই রাহু গুপ্তরোগ বা গুহ্য
সংক্রান্ত রোগে কষ্ট প্রদান করে। স্ত্রী ও সন্তান বিষয়ে অশুভ ফল দিতে পারে।
৯) রাহু ভাগ্যভাবে বা নবমে থাকলে জাতক নিজ যোগ্যতায় যশ পায় বুদ্ধিবলে বহু সুকর্মে সফলতা লাভ করে। তবে নিম্নস্থ হলে ভাগ্যের বিষয়ে অশুভ ফল পায়।
১০) রাহু কর্ম ভাবে বা দশমে থাকলে জাতক ভিন্নধর্মের লোকেদের মাধ্যমে উপকৃত হয়। উচ্চপদ প্রাপ্তিতে বা বিশেষ সম্মান প্রাপ্তিতে এই রাহু যথেষ্ট সাহায্য করে। নিম্নস্থ হলে বিপরীত ফল দান করে।
১১) রাহু আয় ভাবে বা একাদশে থাকলে জাতক পরাক্রমী বা প্রতিপত্তিশালী হয়। ব্যবসা বা কর্মে অধিক সফলতা পায় । স্ব শ্রমের বাইরে অর্থ-সম্পত্তি লাভে এই রাহু বিশেষ সাহায্যকারী হয়। তবে সন্তান বিষয়ে জাতক সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়।
১২) রাহু ব্যয় ভাবে বা দ্বাদশে থাকলে জাতক কুসঙ্গে বা কুকর্মে লিপ্ত হয়। অসৎ পথে বা নিন্দনীয় গোপন পথে অর্থ উপার্জনের প্রয়াসী হয়। চোখ বা চোখ পা বা গুহ্য দেশের রোগ এই রাহু প্রদান করে।
জন্ম রাশিচক্রে অবস্থানভেদে রাহুর ফলাফল
---------------------------------------------------------------------
১। লগ্নে রাহুর জাতকের প্রচুর প্রাণশক্তি হয়। এরা উদ্যমী, বিভিন্ন গুণসম্পন্ন হয়। হাসতে ও হাসাতে এরা ভালবাসে। প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন, প্রেমে পটু, একের অধিক প্রেম করতে সক্ষম, নেতৃত্ব দিতে ভালবাসে, আকর্ষণ ক্ষমতা প্রচুর।
২। লগ্নের দ্বিতীয়ে রাহু অর্থপ্রিয়, তর্কপ্রিয়, বাক্যপটু, চাকরিজীবী হয়। সম্মোহনী কথায় এরা কাজ হাসিল করার ক্ষমতা রাখে। আত্মীয়দের থেকে এদের লাভবান হওয়ার সুযোগ আসে। এরা কিছুটা অপরিষ্কার থাকতে ভালবাসে।
৩। লগ্নের তৃতীয়ে রাহু উদ্যমী, জনপ্রিয়, হস্তশিল্পে দক্ষ হয়। যে কোন উপায়ে কার্যসিদ্ধি করতে এরা পটু হয়। এরা লড়াকু ও সাহসী মানসিকতার হয়। অভিনয়ে পারদর্শী হয়।
৪। লগ্নের চতুর্থে রাহু ঘুরতে ও বেড়াতে ভালবাসে। একাধিক গাড়ি বাড়ির ইচ্ছা, পরিবারের সূত্রে লাভ, দৃঢ় মানসিকতার ও ভূসম্পত্তি প্রিয় হয়।
৫। লগ্নের পঞ্চমে রাহু অতি রোমান্টিক, যৌনকলায় পারদর্শী, তীক্ষবুদ্ধি দ্বারা কাউকে ফাঁসানো সক্ষম হয়। ব্যবসায়ে সফল, সব কাজে মধ্যস্থতা করে। এরা হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে যায়। বহু সন্তানের পিতা বা মাতা হয়।
৬। লগ্নের ষষ্ঠে রাহু প্রচন্ড উদ্যমী, জেদী, পরিশ্রমী, চাকরিজীবী, রস জ্ঞান সম্পন্ন হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যে কোনও ভাবে বুঝিয়ে তার প্রিয়পাত্র হতে পারে এরা। এদের আইনি জ্ঞান থাকে। এরা শত্রুজয়ী হয়।
৭। লগ্নের সপ্তমে রাহু অলস প্রকৃতির হলেও নানা উপায়ে অর্থশালী, জনপ্রিয়, সকল কামনা বাসনা তৃপ্ত, ইন্দ্রিয়সুখে সুখী হয়। এদের একের অধিক ব্যবসা থাকে।
৮। লগ্নের অষ্টমে রাহু অর্থ বা সম্পত্তি কেনা বেচা ব্যবসায়ে লাভবান হয়। এরা উগ্রকামুক ও শয্যাসঙ্গীকে সুখদানে সক্ষম হয়। পারিবারিক সূত্রে এরা অর্থবান হয়।
৯। লগ্নের নবমে রাহুর হঠাৎ সৌভাগ্যের যোগ থাকে। পিতার দ্বারা সৌভাগ্যশালী, বহু তীর্থ ভ্রমণে সক্ষম হয় এরা। এরা প্রচণ্ড যুক্তিবাদী, একাধিক কর্মে সফল হয়। প্রেমে সাফল্য পায় এরা।
১০। লগ্নের দশমে রাহু বহু কর্মে যুক্ত, পিতৃধনে ধনী হয়। এদের কর্মক্ষেত্র হয় পরিবর্তনশীল। এরা বাকপটু হয়। উপরি অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ আসে এদের।
১১। লগ্নের একাদশে রাহু হঠাৎ প্রচুর ধনপ্রাপ্তির সুযোগ এনে দেয়। এদের প্রচুর ভ্রমণ হয়। এদের ভ্রমণ সূত্রে অর্থ লাভ হয়।
১২। লগ্নের দ্বাদশে রাহু শয্যাসুখে সুখী করে। এরা অর্থলগ্নি সূত্রে বহু আয় করে। বিবাহ সংক্রান্ত মামলা থেকে আয় বেশী(আইনজীবী) করে।
★ রাহু শুভ হলে -- উচ্চ পদের চাকুরি, ব্যবসায় সাফল্য, রাজনীতিতে সাফল্য, হঠাৎ বিপুল অর্থপ্রাপ্তি, শেয়ার ব্যবসায় অর্থ লাভ, সৃজনশীলতা, বৈদেশিক ভাষায় দক্ষতা, সমাজ কল্যাণমুলক কাজে আগ্রহ ও সাফল্য, উচ্চশিক্ষা, কারিগরি কাজ/বিদ্যায় দক্ষতা।
রাহু অশুভ হলে -- উৎকণ্ঠা, অর্থনাশ, স্বাস্থ্যহানি, আতঙ্ক, মর্যাদাহানী, বিব্রতকর পরিস্থিতির স্বীকার, ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদকাসক্ততা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা, উৎসাহ উদ্যমের ঘাটতি, আইনগত ঝামেলা/হয়রানী, কারাবরন, চোরের উপদ্রপ, ক্রমাগত দুঃস্বপ্ন দেখা, প্রবাস জীবন, প্রবাসে সমস্যা, অশুভ শক্তি- ভুত-প্রেতাত্মা-ব্ল্যাক ম্যাজিক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া, চর্মরোগ, কুষ্ঠ, উন্মাদ, অশান্তি, এমন রোগ যার কারন শনাক্ত করা যাচ্ছে না, একাকীত্ব, মানসিক সমস্যা, দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পাওয়া।



প্রতিবিধান ---
১) রত্ন গোমেদ -- ৯-১০ রতি।
২) মূল -- শ্বেত চন্দন মূল বা দূর্বা মূল।
৩) দেবী ছিন্নমস্তার পূজা।
রাহু বীজ মন্ত্র – ওঁ ঐং হ্রীং রাহবে। বা
রাহু বীজ মন্ত্র - ওঁ ভ্রাঁ ভ্রীং ভ্রৌং সঃ রাহবে নমঃ
জপ সংখ্যা – ১২০০০ বার।
গায়ত্রী– ওঁ শিরোরূপায় বিদ্মহে অমৃতেশায় ধীমহিঃ তন্নঃ রাহুঃ প্রচোদয়াৎ।
প্রণাম মন্ত্র --
ওঁ অর্দ্ধকায়ং মহাঘোরং চন্দ্রাদিত্যবিমর্দকম্।
সিংহিকায়াঃ সুতং রৌদ্রং তং রাহুং প্রণমাম্যহম্॥
ইষ্টদেবতা – ছিন্নমস্তা।
ধারণরত্ন – গোমেদ,
ধূপ – দারুচিনি,
বার – শনি/মঙ্গল বার,
প্রশস্ত সময় – সন্ধ্যাবেলা।

কালসর্প যোগ

ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রে গ্রহগণের অবস্থান অনুযায়ী শুভ ও অশুভ যোগ সৃষ্টি হয়। এমনি এক অশুভ যোগ হল কালসর্প যোগ। রাহু এবং কেতু সব সময় নিজেদের সম সপ্তমে অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রি দুরত্বে অবস্থান করে। রাহু ও কেতুর মাঝখানে যখন সমস্ত গ্রহ চলে আসে তখন এই যোগ হয়। রাহু কে সাপের মুখ ও কেতুকে সাপের লেজ মান্য করা হয়। এর মধ্যে অর্থাৎ (সাপের পেটে) সমস্ত গ্রহ চলে আসে তখন এই যোগ সৃষ্টি হয়। এই যোগ খুব পীড়াদায়ক হয়। বিশেষ করে রাহু, কেতুর দশা মহাদশায় এবং গোচরে রাহু, কেতু যখন নিজ ভাব দিয়ে পাস করবে। রাহু ও কেতুর অবস্থান অনুযায়ী ১২ টি ভাবের জন্য ১২ রকম কালসর্প যোগ হয় এবং প্রত্যেক কালসর্প যোগ আলাদা আলাদা ফল দেয়।


১> অনন্ত নাগ কালসর্প যোগ
-------------------------------------------
রাহু লগ্নে ও কেতু সপ্তমে থাকলে অনন্ত কালসর্প যোগ হয়। এই যোগে পীড়িত ব্যাক্তিরা শারিরিক ও মানসিক ভাবে খুব বিব্রত থাকেন এবং মামলা মকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েন এই যোগের ব্যাক্তিরা খুব সাহসী হয়ে থাকেন ।
২> কুলিক কালসর্প যোগ
--------------------------------------
রাহু দ্বিতীয়ে ও কেতু অষ্টমে থাকলে কুলিক কালসর্প যোগ হয়। এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিরা আর্থিক কষ্টে ভোগেন। পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকে এবং সামজিক ভাবে ও কর্মে প্রতিষ্ঠা পায়না।
৩> বাসুকি নাগ কালসর্প যোগ
-------------------------------------------
রাহু তৃতীয়ে ও কেতু নবমে থাকলে এই কালসর্প যোগ হয়। এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিদের জীবন খুব সংঘর্ষ ময় হয়। চাকরি এবং ব্যাবসায় সমস্যা লেগেই থাকে। ভাতৃ সুখের অভাব হয়। ভাগ্য এদের কখনও সাথ দেয় না।
৪> শঙ্খপাল কালসর্প যোগ
---------------------------------------
রাহু চতুর্থে এবং কেতু দশমে অবস্থান করলে এই যোগ হয়। এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিদের কিছুটা অর্থ কষ্ট ভোগ করতে হয়। মানসিক ভাবে এবং পরিবার পরিজনের কাছ থেকে এরা কষ্ট পেয়ে থাকে। এদের মাতৃ সুখ হয় না। জমি, বাড়ি নিয়ে এরা সমস্যায় থাকেন।
৫> পদ্মনাগ কালসর্প যোগ
-------------------------------------
পঞ্চমে রাহু ও একাদশে কেতু থাকলে পদ্মনাগ কালসর্প যোগ হয় । এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিদের মিথ্যা বদনাম হয় । সন্তান সুখে বাধা । উচ্চ শিক্ষা ও ধন প্রাপ্তিতে বাধা হয় ।
৬> মহাপদ্ম নাগ কালসর্প যোগ
------------------------------------------
ষষ্ঠে রাহু ও দ্বাদশে কেতু থাকলে এই যোগ হয়। এদের মাতুল সুখ হয় না বা মাতুল থেকে কষ্ট পেয়ে থাকেন। প্রেমে সাফল্য আসে না। এবং অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত এরা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে থাকে।
৭> তক্ষক কালসর্প যোগ
-----------------------------------
এই যোগ অনন্ত কাল যোগের ঠিক উল্টো অর্থাৎ কেতু লগ্নে ও রাহু সপ্তমে অবস্থান করে। এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিদের বিবাহিত জীবন খুব অশান্তি পূর্ণ হয়ে থাকে এবং চাকরি ও ব্যাবসায় বার বার ক্ষতি হয়। এবং মানসিক অশান্তি হয়।
৮> কর্কটক কালসর্প যোগ
------------------------------------
দ্বিতিয়ে কেতু ও অষ্টমে রাহু থাকলে এই যোগ হয়। এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিরা খুব ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করেন। এরা কখনও শান্ত ভাবে থাকতে পারেনা। পর্যাপ্ত টাকা পয়সা কখনও এদের হাতে থাকে না।
৯> শঙ্খচূড় কালসর্প যোগ
-------------------------------------
তৃতীয়ে কেতু ও নবমে রাহু অবস্থান করলে এই যোগ সৃষ্টি হয়। এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিদের পিতৃ সুখ হয় না। ভাগ্য সবসময় নিজের অনুকুলে থকে না। নিজের ব্যবসায় লোকসান হয়ে থাকে।
১০> ঘাতক কালসর্প যোগ
-------------------------------------
কোষ্ঠীতে চতুর্থে কেতু ও দশমে রাহু থাকলে এই যোগ হয়ে থাকে। এই যোগে গৃহে কলহ অশান্তি লেগে থাকে। কর্ম ক্ষেত্রে খুব সংঘর্ষ করতে হয়।
১১> বিষধর কালসর্প যোগ
-------------------------------------
কেতু পঞ্চমে ও রাহু একাদশে অবস্থান করলে এই যোগ হয়। এই যোগে প্রভাবিত ব্যাক্তিরা নিজের সন্তানের কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে থাকেন। এদের নেত্র ও হৃদ রোগ হতে পারে। এদের স্মরণ শক্তি খুব দুর্বল হয়। উচ্চ শিক্ষায় বাধা এবং সামজিক ভাবে এরা প্রতিষ্ঠা পায় না।
১২> শেষনাগ কালসর্প যোগ
--------------------------------------
ষষ্ঠে কেতু ও দ্বাদশে রাহু থাকলে এই যোগ হয়। এই যোগের ব্যাক্তিদের প্রচুর গুপ্ত শত্রু থাকে যারা এদের প্রতি সবসময় ষড়যন্ত্র করতে থাকে এমনকি শত্রুরা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। এই যোগে মানসিক অশান্তি ও মিথ্যা বদনাম হয়। এই যোগের ব্যাক্তিদের মৃত্যুর পরে মানুষ খুব গুণগান করে।
আপনার কোষ্ঠীতে কালসর্প যোগ থাকলেই যে সব সময় অশুভ ঘটনা ঘটবে তা কিন্তু নয়। কিছু শুভ গ্রহের বা শুভ ভাবের দৃষ্টি অথবা প্রেক্ষা পেলে অশুভ ভাব কিছুটা কাটবে। মনে রাখবেন জন্মগত জ্যোতিষীক যোগ বা ভাব কখনোই কোনও প্রতিকারে দূরীভূত হয় না শুধুমাত্র প্রশমিত হয় মাত্র।

Wednesday, April 17, 2019

রাশি অনুযায়ী গণেশ মন্ত্র পাঠ করুন, সমস্যার সমাধান হবে

গণেশের সাধনা করে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। গণেশের কৃপালাভ করলে সমস্ত কাজেই সিদ্ধিলাভ হয়। পুরাণে বলা হয়েছে যে, গণেশজির ১২টি নামের অসীম মাহাত্ম্য। এই ১২টি নামের সঙ্গে ১২টি রাশি যুক্ত। এখন দেখে নেওয়া যাক আপনার রাশি অনুযায়ী কে কোন মন্ত্র পাঠ করবেন ---
রাশি গণেশজির নাম গণেশজির মন্ত্র
--- ---- ------ ------ ----- ---- ------ --- ----- -----
মেষ -- বক্রতুণ্ড -- ওঁ বক্রতুণ্ডায় নমঃ
বৃষ -- একদন্ত -- ওঁ একদন্তায় নমঃ
মিথুন -- কৃষ্ণপিঙ্গাক্ষ -- ওঁ কৃষ্ণপিঙ্গাক্ষায় নমঃ
কর্কট -- গজবক্ত্র -- ওঁ গজবক্ত্রায় নমঃ
সিংহ -- লম্বোদর -- ওঁ লম্বোদরায় নমঃ
কন্যা -- বিকট -- ওঁ বিকটায় নমঃ
তুলা -- বিঘ্নরাজেন্দ্র -- ওঁ বিঘ্নরাজেন্দ্রায় নমঃ
বৃশ্চিক -- ধূম্রবর্ণ -- ওঁ ধূম্রবর্ণায় নমঃ
ধনু -- মহোদর -- ওঁ মহোদরায় নমঃ
মকর -- বিনায়ক -- ওঁ বিনায়কায় নমঃ
কুম্ভ -- গণপতি -- ওঁ গণপতয়ে নমঃ
মীন -- গজানন -- ওঁ গজাননায় নমঃ
ক্রিয়াটি কী ভাবে সম্পন্ন করবেন --- প্রথমে শ্রী গণেশের পূজা করুন। তারপর প্রতি দিন প্রথমে উপরে লেখা ১২টি গণেশ-মন্ত্র এক বার করে পাঠ করুন। তার পর আপনি আপনার রাশি অনুসারে গণেশজির মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন। ভক্তিভরে এই ভাবে জপ করলে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।
-
গণেশের ধ্যান –
“খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং
প্রস্যন্দন্মদ্গন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্।
দন্তাঘাতবিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দূরশোভাকরং
বন্দে শৈলসুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।”
------- অর্থাৎ, “যিনি খর্বাকৃতি, স্থূলশরীর, লম্বোদর, গজেন্দ্রবদন অথচ সুন্দর; বদন হইতে নিঃসৃত মদগন্ধে প্রলুব্ধ ভ্রমরসমূহের দ্বারা যাঁহার গণ্ডস্থল ব্যাকুলিত; যিনি দন্তাঘাতে শত্রুর দেহ বিদারিত করিয়া তাহার দন্ত দ্বারা নিজ দেহে সিন্দূরের শোভা ধারণ করিয়াছেন; সেই পার্বতীপুত্র সিদ্ধিদাতা ও কামদাতা গণপতিকে বন্দনা করি।”
গণেশের প্রণামমন্ত্র –
"একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং।
বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।।"
--------- অর্থাৎ, “যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।”
গণেশের প্রার্থনামন্ত্র –
দেবেন্দ্রমৌলিমন্দারমকরন্দকণারুণাঃ।
বিঘ্নং হরন্তু হেরম্বচরণাম্বুজরেণবঃ।।
---------- অর্থাৎ, “দেবরাজ ইন্দ্রের মস্তকে বিরাজিত মন্দারপুষ্পের পরাগসমূহের দ্বারা রক্তিম হেরম্বের পাদপদ্মের রেণুসমূহ আমার বিঘ্নহরণ করুক।”

Sunday, April 14, 2019

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরম শিবভক্ত।

গিরীধারী, গোপীজনবল্লভ। তিনি সুদর্শনধারী, রুক্ষ্মিণীপতি, যোগেশ্বর। তিনি সর্বগুণের আশ্রয় এবং শিবমন্ত্রে দীক্ষিত।

★"সান্দীপনিং সমাসাদ্য ততশ্চ শিবমন্ত্রকম্।
সম্প্রাপ্য তৎপ্রভাবেন বিদ্যাঃ সর্ব্বাঃ স্বয়ং প্রভুঃ।।"
------ জ্ঞান সংহিতা।
অর্থাৎ " প্রভু কৃষ্ণ গুরু সান্দীপনির আশ্রমে গমন করে তাঁর নিকট হতে শিবমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহন করেন। শ্রীকৃষ্ণ অল্পকালের মধ্যেই শিবমন্ত্র প্রভাবে সর্ব বিদ্যা আয়ত্ব করেন।"

সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ পরম শৈব ছিলেন। তিনি শিবারাধনা করতেন। শ্রীকৃষ্ণ শিবের কৃপাতেই সর্বশক্তি প্রাপ্ত হন। কেননা শাস্ত্রে বলা হয়েছে--

★"বরাংশ্চ বিবিধান্ লব্ধা তম্মাদ্দেবান্মহেশ্বরাৎ।
অজেয়স্ত্রিষু লোকেষু দেবদেবো জনার্দ্দনঃ।।"
-----সৌরপুরান।

--- "দেবদেব জনার্দন, সেই দেবাদিদেব মহেশ্বরের নিকট থেকে বিবিধ বর লাভ করে ত্রিলোকে অজেয় হয়েছেন।"

শ্রীকৃষ্ণ যে শিবভক্ত ছিলেন, তা তো অন্ধরা স্বীকার করবে না। কারন তাদের জ্ঞান মায়ার দ্বারা অপহৃত হয়েছে। ভক্তিহীন মোহিত অন্ধরা শিবকে কৃষ্ণের দাসানুদাস, আজ্ঞাবহ এই রকম অপকথা প্রচার করছে।  পরমেশ্বর শিবকে দাস প্রমাণ করার জন্য শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করেই চলেছে। আর তাদের অমার্জিত ভাষা আর কি বলব!!!! তারা শাস্ত্রজ্ঞানে অনভিজ্ঞ সহজ সরল মানুষদের, অর্ধশিক্ষিতদের, সম্মানলোভীদের সহজেই তোষামোদ আর অপব্যাখ্যায় ভ্রমিত করে দল ভারী করতে নিজ দলে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়।
এইসব শিব বিরোধীরা "বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভু" কিংবা "ক্ষীরং যথা দধি বিকার বিশেষ যোগাৎ" কিংবা " ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ" প্রভৃতি শ্লোকের অপব্যাখ্যা করে শিব ও শৈব বিরোধী মতবাদ প্রচার করছে।

শাস্ত্র তাই বলেছেন-
★"সমুৎপতস্যন্তি দৈত্যাশ্চ ঘোরেহস্মিন্ বৈ কলৌ যুগে।।
শিবোক্তং কর্ম্মযোগঞ্চ দ্বেষন্তশ্চ কুযুক্তিভিঃ।।"

--- "এই ঘোর কলিযুগে নিহত দৈত্যরা পুনরায় জন্মগ্রহণ করে কুযুক্তি দিয়ে শিবোক্ত কর্মযোগের বিদ্বেষ করবে।"

হচ্ছেও তাই। সেজন্য স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এইসব শিব বিদ্বেষীদের প্রসঙ্গে বলেছেন-

★"যো মাং সমর্চ্চয়েন্নিত্যমেকান্তং ভাবমাশ্রিতঃ।
বিনিন্দন দেবমীশানং স যাতি নরকাযুতম্।।"
---------- কুর্ম্ম পুরানম্।

----- "যে ব্যক্তি একান্ত ভক্তি সহকারে প্রতিদিন আমার অর্চনা করে কিন্তু মহেশ্বরের নিন্দা করে, তাকে সহস্র সহস্র নরকে গমন করতে হয়।"

জানি এইসব কথায় অসাধুরা সংযত হবেনা, বরং ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠবে। তারা যে কত শিব বিদ্বেষী তা বুঝা যায় যখন শিবের প্রসাদকে তারা অবজ্ঞা করে। কত নিকৃষ্ট তাদের ভাবনা!!!!! এরা পরম শৈব কৃষ্ণকে দেয়া ভোগ উনারই আরাধ্য শিবকে দেয়। মানে কৃষ্ণের উচ্ছিষ্ঠ এরা শিবকে নিবেদন করে। ক্তবড় মহাপাপী!!!! 
পক্ষান্তরে শৈবরা ভক্তিভরে কৃষ্ণের প্রসাদ গ্রহণ করেন। শৈবরা জানেন কৃষ্ণ হচ্ছেন শিবেরই রূপভেদ।

ভগবান কৃষ্ণ সর্বদাই শিবকে আশ্রয় করে থাকেন। তিনি শিবেরই পরম ভক্ত। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন-

★"স্থানং প্রাহুরনাদিমধ্যনিধনং যস্মাদিদং জায়তে।
নিত্যং ত্বাহমুপৈমি সত্যং বিভবং বিশ্বেশ্বরং তং শিবম্।।"
-------কুর্ম্ম পুরাণম্।

---"যিনি অনাদি-মধ্য-নিধনস্থানরূপ এবং সমস্ত জগৎ যা হতে উৎপন্ন হয়েছে, আমি সেই সত্য বিভব বিশ্বেশ্বর শিবকে প্রতিনিয়ত আশ্রয় করি।"

প্রভু শ্রীকৃষ্ণ এমনই ভক্ত যে তিনি ভক্তি বিনম্র চিত্তে শিব দর্শনের জন্য আকুল হয়ে মহামুনি উপমন্যুকে বলেছিলেন-

★"ধন্যস্ত্বমসি বিপ্রেন্দ্র কস্ত্বত্তেহস্তীহ পুণ্যকৃৎ।
যস্য দেবাদিদেবস্তে সান্নিধ্যং কুরুতে শ্রমে।।
দর্শনং মুনিশার্দ্দূল দদ্যাৎ স ভগবান শিবঃ।
অপি তাবন্মমাপ্যেবং প্রসাদং বা করোত্বসৌ।।
--------------ধর্ম সংহিতা।

------ " হে বিপ্রেন্দ্র! আপনিই ধন্য, এ জগতে কোন ব্যক্তি আপনা অপেক্ষা পুণ্যবান আছে? দেবদেবও যাঁর আশ্রমে সন্নিহিত থাকেন। হে মুনিশ্রেষ্ঠ! সেই ভগবান শিব কি আমাকে দেখা দিবেন? তিনি কি আমার প্রতি এরূপ অনুগ্রহ করবেন?"

শিবকৃপা লাভের জন্য মহামুনি উপমন্যু আশ্রমে শিবকথা শ্রবনে আট দিন অতিবাহিত হলে শ্রীকৃষ্ণ নবম দিবসে গুরু উপমন্যুর নিকটে শৈবমন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিলেন। যথাঃ-

★"নবমে তু দিনে প্রাপ্তে মুনিনা স চ দীক্ষিতঃ।
মন্ত্রমধ্যাপিতঃ শার্ব্বমথর্ব্বশিরসং মহৎ।।"
------------বায়বীয় সংহিতা।

ভগবান শিব পরম ভক্তবৎসল। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে পরম ভক্ত রূপে গ্রহণ করেছেন।

★"পার্বত্যাশ্চ মুখং প্রেক্ষ্য ভগবান ভক্তবৎসলঃ।
উবাচ কেশবং তুষ্টো রুদ্রশ্চাথ বিড়ৌজসঃ।।
কৃষ্ণ জানামি ভক্তং ত্বাং ময়ি নিত্যং দৃঢ়ব্রতঃ।
বৃণীস্বাষ্টৌ বরান মত্তঃ পুণ্যাংস্ত্রৈলোক্যদুর্লভান।।"
-------- বায়বীয় সংহিতা।

---"ভক্তবৎসল ভগবান শঙ্কর পার্বতীর প্রতি দৃষ্টিপাত করে কেশবকে বললেন, হে কৃষ্ণ! তোমার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তোমাকে দৃঢ়ব্রত ও নিত্য ভক্ত বলে জানি। আমার নিকট হতে পবিত্র ও ত্রৈলোক্য-দুর্লভ আটটি বর প্রার্থনা কর।"

সুতরাং শাস্ত্র স্পষ্ট ভাষায়ই বলেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ পরম শৈব।

★"ন কৃষ্ণাদধিকস্তস্মাদস্তি মাহেশ্বরাগ্রণী।।"

অর্থাৎ "কৃষ্ণ অপেক্ষা শৈবশ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই।"

যাই হোক, শিবভক্তিই পরম প্রাপ্তি। আর শিবভক্তি পরম দুর্লভ। কোটি কোটি জন্মের অর্জিত পুণ্যফলেই কারো হৃদয়ে শিব ভক্তির সঞ্চার হয়। অসৎ কর্মের জন্য যাদের কোটি কোটি জন্মের পাপরাশি সঞ্চিত রয়েছে, সেই রকম মোহান্ধ ব্যক্তিদের হৃদয়ে শিব ভক্তি সঞ্চারিত হয় না। কিন্তু পরম প্রভু সর্বশক্তিমান, ভক্তবৎসল, পরম করুণাময়। তিনি সকলের হৃদয়ে প্রেমভক্তি সঞ্চার করুন।

Friday, April 12, 2019

রাশি অনুযায়ী ঘুম

আহার, নিদ্রা, বিশ্রাম, মনের শান্তি এসব সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। আসলে
মানুষের শরীরটাই চলে এক বিশাল কম্পিউটারের মতো। মানব শরীরের বিভিন্ন যন্ত্রের কর্মক্ষমতা যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে একটি সুক্ষ্ম অত্যাধুনিক কম্পিউটারের মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানব শরীরের এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চলছে বিরামহীনভাবে।
তাই মানব শরীরকে যথাযথ কর্ম করতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত বিশ্রাম ও ঘুম। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। আর পরিমিত ঘুম হলে শরীর, মন, মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয়। ফলে কাজের পারফরম্যান্স বা আউটপুট ভালো হয়।
এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পরিমিত ঘুমের পাশাপাশি সকালে ঘুম থেকে ওঠেন, জগিং করেন, প্রার্থনা করেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা কম হয়, কাজের গতি বাড়ে ও আউটপুট ভালো হয়। তাই দৈনিক অন্তত: ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমাতে চেষ্টা করুন ও সুস্থ থাকুন।
মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তির আচরণ এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার সঙ্গে ঘুমের যোগসূত্রের বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ঘুমের অভ্যাস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত এবং এই দুটোকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিনের কাজকর্ম ঠিকঠাক রাখা যায়। ঘুমের অভ্যাস ঠিক করতে পারলে সারা দিনের কর্মশক্তি বাড়ে, আচরণ সাবলীল হয়, কাজে মনোযোগ বেশি থাকে এবং ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। ফলে প্রতিদিনের জীবনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ঘুমের অভ্যাস ঠিকঠাক করার বিষয়ে আমাদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
ঘুম বা নিদ্রা হচ্ছে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যখন সচেতন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্তিমিত থাকে। নিষ্ক্রিয় জাগ্রত অবস্থার সাথে ঘুমন্ত অবস্থার পার্থক্য হল এ সময় উত্তেজনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শীতনিদ্রা বা কোমার চেয়ে সহজেই জাগ্রত অবস্থায় ফেরত আসা যায়। সকল স্তন্যপায়ী ও পাখি এবং বহু সরীসৃপ, উভচর এবং মাছের মধ্যে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী এবং অন্য বেশ কিছু প্রানীর (যেমন কিছু প্রজাতির মাছ, পাখি, পিঁপড়া এবং ফ্রুটফ্লাই) অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে নিয়ম মত ঘুম আবশ্যক। ঘুমানোর কারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি এবং তা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে। আর একটি ব্যপার। ঘুমন্ত মানুষের চেহারা কোন এক অজানা অতিরিক্ত আবেগ অনুভূতি কাজ করে। যা তার গোপন এক প্রাকৃতিক নিরাপত্তা দেয়।
বয়স অনুপাতে আপনার ভিন্ন ধরনের ঘুম দরকার। বাচ্চাদের – ১৬ ঘন্টা, ৩ থেকে ১২ বছর – ১০ ঘন্টা, ১৩ থেকে ১৮ বছর – ১০ ঘন্টা, ১৯ থেকে ৫৫ বছর – ৮ ঘন্টা, ৬৫ বছরের উপরে – ৬ ঘন্টা।
ঘুম কম হওয়াটা চলতেই থাকে, তাহলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, নিয়মিত অতিরিক্ত ঘুমালেও স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো বেড়ে যেতে পারে।
আসুন, জেনে নিই কোন রাশি অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির কতটুকু ঘুম হয় বা হওয়া উচিত।
মেষ - এই রাশির জাতক-জাতিকারা অতিমাত্রায় সক্রিয় এবং উত্তেজিত। সারাদিন নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে মেষ। এদের চোখে ঘুম নেই বললেই চলে। ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করায় বিশ্বাসী নয়। এরা দেরি করে শুতে যায়। উঠে পড়ে অনেক সকালে।
বৃষ - ঘুম এদের মারাত্মক প্রিয় কাজ। এরা যেখানে-সেখানে যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়তে পারে। বৃষ রাশির গ্রহ শুক্র। ফলত, শুক্রের প্রভাবে এরা ঘুমোয় বেশি। সুযোগ পেলে এরা সারাদিন ঘুমোতে পারে।
মিথুন - ঘুমের সমস্যা থাকে মিথুন রাশির জাতক-জাতিকাদের। এরা ইনসমনিয়ার শিকার। জীবনের যাবতীয় সমস্যা এরা রাতে শুতে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে করে নিয়ে যায়। ফলত, দুশ্চিন্তায় এদের ঘুম আসতে চায় না। আবার অনেক মিথুনই ঘুম কাতুরে।
কর্কট - মিথুনের মতো কর্কটও ইনসমনিয়ায় ভোগে। কারোর কারোর আবার ঘুম বেশি। কিছু কর্কট জাতক-জাতিকা রাতে দুঃস্বপ্নও দেখে। ভয়ের স্বপ্ন দেখে লাফিয়ে জেগে ওঠে।
সিংহ - কোলবালিশ ছাড়া ঘুমোতে পারে না সিংহ রাশির নারীপুরুষ। এদের ঘুমোতে সময় লাগে। কিন্তু একবার ঘুমোলে চট করে ওঠে না। এরা রাত জেগে থাকতে পারে না। দিনের শেষে চায় পরিপূর্ণ ঘুম।
কন্যা - স্বাস্থ্য ও ঘুম নিয়ে আপোস করে না কন্যা রাশির নারীপুরুষ। এরা ঘড়ি মিলিয়ে ৮ ঘণ্টা ঘুমোনোর পক্ষপাতি। কিন্তু মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত সমস্যা ও অফিসের টেনশন এদের ঠিকমতো ঘুমোতে দেয় না।
তুলা রাশি - এরা সব ব্যাপারে ব্যালেন্স করে চলতে পছন্দ করে। একদিন রাতে ৩ ঘণ্টা ঘুমোলে পরদিন ১২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে ক্ষতিপূরণ করে নেয়।
বৃশ্চিক - রহস্য ঘিরে থাকে বৃশ্চিকদের। এদের ঘুমের কোনও নির্দিষ্ট থাকে। যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়তে পারে। এরা সারারাত জেগে গুরুত্বপূর্ণ কাজে মগ্ন থাকতে পারে।
ধনু - এরা রোমাঞ্চপ্রিয়। দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। পার্টিপ্রিয়। মাঝেমধ্যে ক্লান্ত হলে লম্বা ঘুম দেয়। চঞ্চল হওয়ার কারণে খুব তাড়াতাড়ি শক্তি হারিয়ে যায়। এরা স্বপ্ন সত্যি করায় বিশ্বাসী।
মকর - খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বভাবের হয় মকর রাশির নারীপুরুষ। কাজে সাফল্য পেলে ভালো ঘুম হয় এদের। বিলাসিতা করতে পছন্দ করে। সুন্দর পালঙ্কে নিদ্রা এদের ভালো লাগে।
কুম্ভ - ঘুম-এ বিশ্বাস করে কুম্ভ রাশির নারীপুরুষ। এরা অবাস্তব স্বপ্ন দেখে না। মাঝেমধ্যে এদের ঘুম উড়ে যায়। রাতে শুয়ে জীবনের সমস্যার সমাধান করে কুম্ভ রাশির নারীপুরুষ। তাই ঘুমের বারোটা বেজে যায় সহজে।
মীন - মীনরা ঘুমোতে ও স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। আনন্দের সময় মীনদের ঘুমের পরিমাণ কমে যায়। কিন্তু দুঃখ পেলে এরা অনেক ঘুমোতে পারে। তাই মেজাজ এদের ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে।

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts