Sunday, December 22, 2019

শৈব পবিত্রতা

ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয়পন্থার ভিতরে শৈব ধর্মের ইতিহাস অতি প্রাচীন ।।
এই কথা বেদ সমূহের রচনাক্রম,বয়স আর কোন বেদে কোন দেবতাকে মুখ্য করা হয়েছিল তার থেকেই সম্যক নির্ণয় করা যায়। শৈব দর্শনের মতে শিব সমগ্র জগতের মূল,উনিই জগতের কারণ, কর্তা   এবং বীর্যোৎপাদনের অধিকারী । পরম বীর্যপুরুষ যেইজন সেইজনই শিব।ঋগবেদোক্ত পরম ব্রহ্ম, অলক নিরঞ্জনই শিব ।



শিবই বিশাল চৈতন্যের আধার আর সমগ্র চরা--
চরের 'নাথ'।। ঋগ্বেদের দেবতা ব্রহ্মা রজোগুণা-
-ন্বিত এবং যথাক্রমে সাম এবং যজুর্বেদের দেবতা শিব-বিষ্ণু সত্বগুনধারী এবং প্রকৃত্যাতীত পরম পুরুষ।গণ ধর্মে উপাস্য পরম পুরুষ হিসাবে শিব এবং বিষ্ণুর প্রাধান্যতাই বেশী। রুদ্রদেবতার আর এক নাম শিব। রুদ্র  সংহারকারী ।ব্রহ্ম বৈবর্তপুরাণে উনাকে কালাগ্নি রুদ্র বলা হয়েছে ।কালাগ্নিরুদ্র একাদশ
রুদ্রের মধ্যে  একজন।উনিই ত্বমোগুণান্বিত এবং সৃষ্টি সংহারকারী।প্রকৃতই শিব পরম পুরুষ এবং
পরম ব্রহ্মে শুভ্র,শুদ্ধ এক সাকার রূপ মাত্র ।। তিনিই সর্ব্ব ব্যাপ্ত এবং সর্ব্ব শক্তিমান,"যত্র জীব তত্র শিব" । সুতরাং শিব আর বিষ্ণুর মধ্যে কোন
গুণগত পার্থক্য নাই।।

শিব কহে  শুন শুন  পার্বতী সুন্দরী ।
জিজ্ঞাসিলে যাহা তাহা কহিব বিস্তারি ।।
আমাতে বিষ্ণুতে ভেদ নাহিকো কখন।
যেই আমি   সেই বিষ্ণু   স্বরূপ বচন ।। আমাতে বিষ্ণুতে ভেদ কভু না করিবে।
কর্তব্য   হইবে তবে জানিবে এ ভবে।।
অভেদে বিষ্ণুর সহ   করিয়া বিচার   ।
আমারে  পূজিবে সদা সংসার মাঝার।।
                            (শিব পুরাণ, আত্মবোধ খন্ড)

Tuesday, December 10, 2019

অদ্বৈতবাদে জগৎ মিথ্যা বলতে কি বুঝিয়েছে?

আজ একটা গুরুতর বিষয়ে আলোচনা করব।
অনেকে এই একটা ধারণা পোষণ করে আসতেছেন যে,ভগবান শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদে জগৎ অসত্য,মিথ্যা বলে উড়ে দেওয়া হয়েছে।এই যে আমরা নগ-নদাদিসঙ্কুল বিচিত্র জগৎ দেখতেছি;এই যে আমরা প্রতি নিয়ত সুখ-দুঃখ হর্য-বিষাদাদি অনুভব করতেছি,--এ সকলই মায়াময়,অসত্য,অলীক।সকলই ভ্রান্ত-প্রতীতি মাত্র।একমাত্র ব্রহ্মই সত্য,আর সবই অসত্য।অনেকের চিত্তে,পাষাণে অঙ্কিত রেখার ন্যায়,এই সংস্কারটা,এই ধারণাটা,বদ্ধমূল হয়ে পড়েছে।শঙ্করাচার্য নাকি,তাঁর অদ্বৈতবাদে তাই শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন!এখন আমরা এই কথাটা ঠিক কিনা,প্রকৃতই শঙ্কর এই জগৎটাকে অলীক,মায়াময়,অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন কিনা,--তাই পরীক্ষা করে দেখতে অগ্রসর হব।শঙ্করাচার্য্য স্পষ্টবাক্যে,অনেক স্থানে জগৎকে অসত্য,মিথ্যা,অসার,মায়াময় বলে নির্দ্দেশ করেছেন,দেখতে পাওয়া যায়।কিন্তু তিনি কি ভাবে এই শব্দ গুলির ব্যবহার করেছেন,তা পরীক্ষা করে দেখা নিতান্তই আবশ্যক।






(১) কিন্তু এই বিষয়টির পরীক্ষা পূর্ব্বে,আমরা একটি তত্ত্ব পাঠকবর্গের মনে জাগিয়ে দিতে ইচ্ছা করি।দর্শনশাস্ত্রে "কার্য্য ও কারণ" শব্দটি পুনঃ পুনঃ ব্যবহৃত হয়েছে।বস্তু বা জীব হতে "অভিব্যক্ত ধর্ম বা বিকারগুলি,এক অবস্থা হতে অবস্থান্তর ধারণ করে থাকে।বিকারগুলির প্রকৃতি এই প্রকার।পূর্ববর্তী অবস্থা বিনষ্ট হলে,পরবর্তী অবস্থায় পরিণত হয়।এই পূর্ববর্তী অবস্থাকে কারণ শব্দে নির্দেশ করা যায়।জড় বিজ্ঞান ও মনো-বিজ্ঞান এই অর্থেই 'কারণ' শব্দটিকে ব্যবহার করে থাকে।শঙ্করাচার্য অতি স্পষ্ট কথায় আমাদেরকে বলে দিয়েছেন যে,তিনি তাঁর ভাষ্যে কোথাও এরুপ অর্থে 'কারণ' শব্দের ব্যবহার করবেন না।বস্তুই বল,আর জীব বল,বা ব্রহ্মই বল,--সকলেরই এক একটা 'স্বভাব' বা 'স্বরুপ' আছে।এই স্বভাব হতেই কতকগুলি ধর্ম বা গুণ বা ক্রিয়ার অভিব্যক্তি হয়ে থাকে।অবশ্য এই ধর্ম বা গুণগুলি পুনঃপুন রুপান্তর ধারণ করে;এক অবস্থা হতে অপর অবস্থা গ্রহণ করে।পূর্ব্বাবস্থা বিনষ্ট হয়ে,বর্তমানাবস্থায় আসে।শঙ্কর বলেছেন যে যে স্বরুপ হতে ঐ সকল ধর্ম্ম বা গুণ উৎপন্ন হচ্ছে;সেই স্বরুপটি সকল অবস্থানন্তরের মধ্যেই আপনার স্বরুপ,আপন একত্ব বজায় রাখে।পূর্ব্বাবস্থা নাশের সঙ্গে,ঐ স্বরুপটা বিনষ্ট হয় না।পূর্ব্বাবস্থার মধ্যেও ঐ স্বরুপটা অনুগত ছিল:আবার বর্তমানাবস্থার মধ্যেও সেই স্বরুপটাই অনুগত রয়েছে।শঙ্কর বলে দিয়েছেন যে,তিনি এই স্বরুপটাকেই 'কারণ' শব্দে নির্দ্দেশ করবেন।এই 'কারণের' যত অবস্থান্তরই হোক না কেন,তা কোন অবস্থান্তরের মধ্যেই নিজকে হারায় না;তার স্বাতন্ত্র্য ও একত্ব(identity) ঠিক থাকে।তিনি এই স্বরুপ বা স্বভাবটাকেই 'কারণ' বলবেন।এই নিয়ম স্থির করে নিয়ে,শঙ্করাচার্য্য এই কারণ এবং তা হতে অভিব্যক্ত কার্য্য বা বিকার বা ধর্মগুলির মধ্যে সম্বন্ধ কিরুপ তার আলোচনা করেছেন।আমরা দেখতে পাই,তিনি এই সম্বন্ধটা বুঝাবার জন্য বেদান্তদর্শনের একটা সমগ্র 'পাদ' ব্যয়িত করেছেন।এত পরিশ্রম তিনি কেন করলেন?এই বিকারগুলি,ধর্মগুলি,ক্রিয়া ও গুণগুলি যদি তাঁর মতে মিথ্যা,অলীক,অসত্যই হয়;তা হলে একটা অলীক বস্তুর সম্বন্ধই বা কিরুপে হবে এবং সেই তথা-কথিত সম্বন্ধ নির্ণয়ের জন্য তিনি শ্রমই বা কেন করতে গেলেন?তিনি নিজেই এই মন্তব্য প্রকাশ করেছেন যে,---
"দুইটা বস্তুই যদি অলীক হয়,তা হলে সেই দুই অলীক বস্তুর মধ্যে পরস্পর কোন সম্বন্ধ হতে পারে না।আবার যদি,একটা অলীক বস্তু;আর,অপরটি সত্য বস্তু;---এরুপ হয়;তা হলেও উভয়ের সম্বন্ধ হতে পারে না।পরস্পর সম্বন্ধ হতে হলেই,দুইটা বস্তু আবশ্যক; এবং এই দুইটা বস্তুই সত্য হওয়া চাই।
(২) আমরা এই জগৎটাকেই সর্ব্বদা আমাদের ইন্দ্রিয়-পথে বিস্তারিত দেখতে পাই।অসংখ্য নাম-রুপাত্মক বিকার নিয়েই এই জগৎ।এই বিকারগুলোকে আমরা দেশে ও কালে অভিব্যক্ত দেখতে পাই।বিকারগুলো সর্ব্বদা পূর্ব্ববর্ত্তী একটা অবস্থা ত্যাগ করে,পরবর্তী অপর একটা অস্থানন্তর গ্রহণ করতেছে,দেখতে পাই।এইরুপে তারা পরস্পর কার্য্য-কারণ-সূত্রে আবদ্ধ হয়ে ক্রিয়া করে।সুতরাং আমরা এই নামরুপাত্মক জগৎকে,এই বিকার-গুলিকে স্বাধীন,স্বয়ংসিদ্ধ বস্তু বলেই বিবেচনা করি।কিন্তু এই জগৎ যখন দেশে ও কালে অভিব্যক্ত,তখন তা অবশ্যই এমন একটা বস্তুর বিকাশ,যে বস্তুটি দেশ ও কালের অতীত।জগৎটা যখন আমাদের সম্মুখে অভিব্যক্ত দেখতেছি।তখন তা অবশ্যই এমন একটা বস্তুর বিকাশ,যে বস্তুটি দেশ ও কালের অতীত।জগৎটা যখন আমাদের সম্মুখে অভিব্যক্ত দেখতেছি,তখন তা অবশ্যই কোন বস্তু হতে অভিব্যক্ত হয়েছে।তা 'শূন্য'হতে আসে নাই।--এই প্রকাণ্ড কথাটা আমরা একেবারে ভুলে যাই।এই কথাটা ভুলে গিয়ে আমরা জগৎটাকে একটা স্বতন্ত্র বস্তু,স্বাধীন বস্তু,স্বতঃসিদ্ধ বস্তু বলেই গ্রহণ করি।আমরা মনে করে থাকি যে,জগতের বিকারগুলি অনন্তদেশে ও অনন্তকালে বিস্তৃত রয়েছে এবং এই প্রকারেই পরস্পর কার্য্য-কারণ-শৃঙ্খলে বদ্ধ হয়ে ক্রিয়া করে চলেছে।শঙ্করাচার্য আমাদেরকে বলে গিয়েছেন যে জগৎকে যদি এইরুপ স্বাধীন,স্বতন্ত্র,স্বয়ংসিদ্ধ বস্তু বলে গ্রহণ কর,তা হলে তুমি প্রকাণ্ড ভুল করলে।এ প্রকার স্বাধীন জগৎ 'অসত্য','মিথ্যা'।এ জগৎ ব্রহ্মবস্তু হতে অভিব্যক্ত।ব্রহ্ম এই জগতের কারণ।যিনি দেশ,কালাতীত,এই জগৎ তাঁরই দেশ-কালে বিকাশ।এই জগৎ তাঁর স্বরুপের অভিব্যক্তি সুতরাং এই জগৎ,তা হতে স্বতন্ত্র হয়ে তাঁকে ছেড়ে স্বাধীন-ভাবে থাকতে পারে না।
এই কথাগুলো শিবাবতার ভগবান শঙ্করাচার্য্য কি প্রকারে বলে দিয়েছেন,নিম্নে আমরা তা প্রদর্শন করতেছি।তা হতে পাঠক দেখতে পাবেন যে ভাষ্যকার এই জগৎকে,নামরুপাত্মক বিকারগুলোকে,কিভাবে 'অসত্য' 'মিথ্যা' বলে নির্দ্দেশ করেছেন।
(১)জগতের নাম-রুপাত্মক বিকারগুলো আপনা আপনি আসে নাই।সুতরাং এই বিকার-গুলিও যে স্বয়ংসিদ্ধ,স্বাধীন 'বস্তু' তা হতে পারে না।যেখানেই কোন বিকার দেখবে সেখানেই দেখবে ঐ বিকার কোন বস্তুর বা জীবেরই বিকার।--কোন বস্তু বা জীবের স্বরুপ হতেই তা অভিব্যক্ত।সুতরাং তা কোন বস্তুবিশেষ হতে বা কোন জীব-বিশেষ হতে অভিব্যক্ত গুণ বা ধর্ম।তা হলেই,তুমি ঐ বিকার-গুলিই যে স্বতঃসিদ্ধ,স্বাধীন,বস্তু,তা বলবে কিরুপে?যেটি প্রকৃত বস্তু,তা হতেই অভিব্যক্ত হয়েছে এবং তাকেই আশ্রয় করে রয়েছে।
(২)যে বস্তু বা জীবের স্বরুপ হতে ঐ গুণ বা বিকার-গুলি অভিব্যক্ত হয়েছে,তাকে ছাড়িয়া,তা হতে 'বিভক্ত' হয়ে তা হতে স্বতন্ত্র হয়ে তা থাকতে পারে না।
(৩)বিকারগুলো যখন কোন বস্তু বা জীবের 'স্বরুপ' হতে অভিব্যক্ত,তখন তাদের নিজের কোন স্বতন্ত্র স্বরুপ থাকতে পারে না।এই জন্যই বিকারগুলি নিয়ত চঞ্চল,অস্থির,পুনঃপুন রুপান্তর প্রাপ্ত হয়।তারা যে বস্তু বা জীবের ধর্ম্ম বা গুণ,তারাই স্বরুপের পরিচয় প্রদান করে থাকে।কাজেই,সেই স্বরুপটাকে বাদ দিয়ে সেগুলোকে বুঝা যায় না।সুতরাং সেগুলোকে সেই স্বরুপ হতে 'স্বতন্ত্র' বস্তু বলবে কি প্রকারে?
এই প্রকারে শঙ্করাচার্য্য,এই জগৎকে বা এই জগতে অভিব্যক্ত বিকারগুলোকে,স্বতন্ত্র,স্বাধীন,স্বয়ংসিদ্ধ বস্তু বলে গ্রহণ করতে পারেন নাই।এই জগৎ যাঁর অভিব্যক্তি,তা হতে এই জগৎকে স্বতন্ত্র করে নেওয়া যায় না।"মরুভুমি হতে স্বতন্ত্র করে নিয়ে কি মরীচিকাকে ভাবতে পারা যায়"?তাই,এ জগৎ ব্রহ্ম হতে স্বতন্ত্র বস্তু না।
(৪)এই সকল আলোচনা হতে বুঝতে পারা যাচ্ছে যিনি দেশ,কালাতীত ব্রহ্ম,---এ জগৎ তাঁর 'কার্য্য'।শঙ্কর এই কারণ ও কার্য্যের সম্বন্ধকে "অনন্য"শব্দে নির্দ্দেশ করেছেন।জগৎ যখন ব্রহ্ম হতে 'স্বতন্ত্র' হয়ে থাকতে পারে না,তখন জগৎ নিশ্চয়ই ব্রহ্ম হতে 'স্বতন্ত্র' বা অন্য কোন স্বাধীন স্বয়ংসিদ্ধ বস্তু হতে পারতেছে না।এই জন্যই এই জগৎ--ব্রহ্ম হতে 'অনন্য'।শঙ্করের সিদ্ধান্ত এই যে,এই জগৎটা-ব্রহ্ম হতে অভিব্যক্ত।জগৎ--ব্রহ্মেরই অবস্থাবিশেষ,রুপান্তর।এজগৎ--তাঁরই স্বরুপের পরিচয় দিবে বলে অভিব্যক্ত হয়েছে।সুতরাং জগৎ ব্রহ্ম অপেক্ষা একটা একান্ত স্বতন্ত্র বস্তু,ভিন্ন বস্তু হবে কি প্রকারে?সুতরাং জগৎকে স্বতন্ত্র,স্বাধীন,স্বয়ংসিদ্ধ বস্তু বলে মনে করলে ভুল হলো।তা হতে স্বতন্ত্র করে নিলে,এই জগৎ মিথ্যা হলো,অসত্য হলো।এই রুপেই ভাষ্যকার সর্ব্বত্র জগৎকে মিথ্যা বলেছেন।এইজন্যই শঙ্কর বলেছেন।
"কার্য্যস্য কারণাত্মত্বং নতু কারণস্য কার্যাত্মত্বং"--কার্য্য,তার কারণের অভিব্যক্তিমাত্র এবং সেই কারণটি--কার্য্যের মধ্যে আপন স্বরুপের স্বাতন্ত্র‍্য ঠিক রাখে।
(৫)শঙ্করাচার্য্য এইভাবে কারণ ও কার্য্যের সম্বন্ধ নির্ণয় করেছেন।পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ এই "অনন্য"শব্দটিকে "identical" শব্দ দ্বারা অনুবাদ করেছেন।আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে,এই অনুবাদ অত্যন্ত অসঙ্গত ও ভ্রমপূর্ণ অনুবাদ।এই অনুবাদ গ্রহণ করলে,কার্য্য ও কারণ এক হয়ে উঠে।ব্রহ্ম ও জগৎ এক হয়ে উঠে।মূলে এই ভ্রম করাতেই পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ,শঙ্করের অদ্বৈতবাদকে Pantheism বলে বুঝেছেন।জগৎগুরু বারংবার বলে দিয়েছেন যে,'কারণ ও কার্য্য' তার সম্বন্ধ বুঝতে দুইটা কথা মনে করে রাখতে হবে।যদি 'কারণ ও তার কার্য্যকে--'এক'ই বস্তু বল--উভয়কে "identical" বল,-তা হলে,কারণ ও কার্য্য এই শব্দ দুইটির ভেদ উঠে যায়।পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা আজ যে ভুল করতেছেন,শঙ্করের টীকাকারগণও বহুশতাব্দী পূর্ব্বে এই আশঙ্কা করেছিলেন।কি জানি যদি লোকে,কার্য্য ও কারণকে identical বা এক বলেই মনে করে,এই আশঙ্কায় টীকাকারও বলে দিয়েছিলেন যে,
"কারণাৎ পৃথক-সত্তা-শূন্যত্বং সাধ্যতে,
ন ঐক্যাভিপ্রায়েণ"
"কার্য্য বা বিকার গুলি তাদের 'কারণ' হতে স্বতন্ত্র না।" শঙ্কর বলে দিয়েছেন যে কার্য্য ও কারণের সম্বন্ধ বুঝতে হলে এই একটা অংশ মনে রাখতে হবে।আবার,আর একটা অংশও মনে রাখতে হবে;সেই অংশটা এই "কারণ,তার কার্য্যগুলি হতে স্বতন্ত্র"।"কার্য্য গুলি কারণ হতে স্বতন্ত্র না"।এই দুটি কথা একত্র মনে রাখতে হবে।এমন স্পষ্ট কথা বলাতেও কেমন করে বড় বড় পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতেরা--কারণ ও কার্য্যের সম্বন্ধকে "identical" বলে ব্যাখা করলেন তা আমরা বুঝতে নিতান্তই অসমর্থ।শঙ্করের এই সিদ্ধান্তটা মনে রাখলে বেদান্তের সর্ব্বত্র ব্যবহৃত "সর্ব্বং খলিদ্বং ব্রহ্ম""ব্রহ্মবৈদং সর্ব্বং" "ইদং সর্ব্বং যদয়মাত্মা,""আত্মৈব ইদং সর্ব্বং" এই সকল বাক্যের অর্থ,এই এই সকল কথার প্রকৃত অভিপ্রায়,--অনায়াসে বুঝতে পারব।
যেখানেই বেদান্তে "সর্ব্বং খল্বিদং ব্রহ্ম" এই প্রকারের উক্তি আছে,ভাষ্যকার সেখানেই বলে দিয়েছেন যে,এই প্রকার উক্তির তা অর্থ না যে,ব্রহ্মই এ বিশ্ব বা জগৎ;ব্রহ্মে ও জগতে কোন ভেদ নাই।এ সকল উক্তির অর্থ এই যে,--
(১)কার্য্য বা বিকারগুলি কারণ হতে স্বতন্ত্র না ও স্বতন্ত্র হয়ে থাকতে পারে না।
আর--
(২)কারণটি কিন্তু,তার কার্য্য হতে স্বতন্ত্র,ভিন্ন।কার্য্যাকার ধারণ করলেও কারণটি আপন স্বাতন্ত্র্য হারায় না;কোন স্বতন্ত্র বস্তু হয়ে উঠে না।সকল বিকারের মধ্যে,সকল অবস্থান্তরের মধ্যে,কারণের একত্ব ঠিক থাকে।তবেই পাঠক দেখুন--ভগবান শঙ্করের মতে ঐ সকল উক্তির সেই অর্থ পাওয়া যাচ্ছে যে এই জগৎ ব্রহ্মেরই অবস্থান্তর,আকার-বিশেষ,রপান্তর মাত্র;তা ব্রহ্ম হতে কোন স্বতন্ত্র স্বাধীন বস্তু না।কিন্তু এই জগদাকার ধারণ করাতেও,এই জগতের মধ্যে ব্রহ্ম,আপন স্বাতন্ত্র্য ও একত্ব হারান নাই;কেননা তিনি জগৎ হতে স্বতন্ত্র।ভাষ্যকার বলেছেন যে, যারা ব্রহ্ম ও জগৎকে এক মনে করে তারা অবিদ্যাচ্ছন্ন।অবিদ্যাচ্ছন্ন লোকেরাই পরমাত্মার স্বাতন্ত্র্য ভুলে গিয়ে পরমাত্মা ও জগৎকে এক বা identical বস্তু বলে মনে করে।ভগবান কেন এ সকল লোকলে "অবিদ্যাচ্ছন্ন" বললেন এখন আমরা তাই দেখব।
(৬)অনেকের মুখে এরুপ একটা কথা সর্ব্বদাই শুনতে পাওয়া যায় যে,ভগবান শঙ্করাচার্য্য তাঁর ভাষ্যে আমাদের জাগরিতাবস্থাকে 'স্বপ্নাবস্থার' সঙ্গে তুলনা করলেন,উভয় অবস্থা তুল্য বলে নির্দ্দেশ করেছেন।সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে তাঁর মতে এ জগৎটা অসত্য,মিথ্যা,অলীক।তারা বলেন এই যে জাগরিতকালে বৃক্ষ,লতা,মনুষ্য,পশু প্রভৃতি বস্তুর আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকি,এবং শব্দ স্পর্শ সুখ দুঃখাদির জ্ঞান লাভ করে থাকি।স্বপ্ন দর্শনকালে আমরা,এই জাগরিত কালের মত কত বস্তু প্রত্যক্ষ করি।এবং কত বিষয়ের জ্ঞান আমাদের হয়ে থাকে।তাঁরা বলেন যে,ভগবান এই দুই কালের অনুভূত বস্তুগুলি ও তদ্বিষয়ক জ্ঞানকে তুল্য বলে মীমাংসা করেছেন।কিন্তু তা কারোই অবিদিত নাই যে,স্বপ্ন-দৃষ্ট বস্তুগুলি অসত্য-মিথ্যা।তা হলেই দাঁড়াইতেছে যে,শঙ্কর মতে জাগরিতকালের বস্তুগুলিও তবে অসত্য মিথ্যা হচ্ছে।অনেকের নিকট এই কথাটা শুনতে পাওয়া যায়।আমরা পাঠকবর্গের সম্মুখে এ বিষয়ে ভগবান কি মীমাংসা করেছেন তা উপস্থিত করতেছি।পাঠক দেখতে পাবেন যে,এই তুলনায় বৃক্ষ,লতাদি বস্তুকে অলীক বলে উড়ে দেবার কোন কথা বলা হয় নাই
লোকে,ভাল করে শঙ্করের মন্তব্যগুলো তলিয়ে দেখে না।উপর উপর দেখেই একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়!তাই এই প্রকার ধারণা প্রচলিত হয়ে পড়েছে।বৃহদারণ্যকে "অজাতশত্রু ও বালাকির" উপাখ্যানে জাগবিতাবস্থা ও স্বপ্নাবস্থার বিস্তৃত বিবরণ আছে।শঙ্করাচার্য্য এই উভয় অবস্থার তুলনা করে যা মীমাংসা করেছেন তাতে তিনি জগৎকে যে অর্থে মিথ্যা,অসত্য বলেছেন তা আপনারা সুস্পষ্ট বুঝতে পারবেন।তিনি বলছেন--স্বপ্নে,আমি রাজা হয়ে সিংহাসনে উপবিস্ট হয়ে আছি;সম্মুখ দাস দাসী প্রভৃতি পরিজনবর্গ আমার সেবা করতেছে;আমি নানারুপ সুখদুঃখাদি অনুভব করতেছি;--এই প্রকার বোধ করে থাকি।এস্থলে প্রশ্ন এই যে,স্বপ্নদর্শনকালে এই যে আত্মা,আপনাকে রাজা বলে বোধ করে পরিজনাদি দ্বারা পরিবৃত দেখতে পায়;সুখদুঃখাদি অনুভব করতে থাকে--এই সকল সুখ দুঃখাদি নানা ধর্মবিশিষ্ট বলেই ত তখন আত্মাকে বুঝা যায়।তবে কি আত্মার তাই স্বরুপ?অথবা,এই সকল সুখদুঃখাদি ধর্ম্ম বা অবস্থা হতে আত্মার একটি 'স্বতন্ত্র' স্বরুপ আছে?শঙ্কর বলেছেন যে কেউ কেউ মনে করেন যে,এই সকল অবস্থা বিশিষ্ট যে সেইত আত্মা রাজা বলে বোধ,দাস দাসী প্রভৃতির দর্শন,সুখ দুঃখাদির অনুভব এই সকল ধর্ম্ম বিশিষ্ট সেই ত আত্মা।এ সকল ছাড়া আবার আত্মার একটা স্বতন্ত্র স্বরুপ কোথায়?এগুলো নিয়েই তো আত্মা।ভগবান এই কথার উত্তরে সিদ্ধান্ত করেছেন যে 'না এই সকল সুখ দুঃখাদি বিবিধ ধর্ম,কখনই আত্মার স্বরুপ হতে পারে না।এই সকল দাস-দাসী প্রভৃতি পরিজন,রাজ্য ধনাদি বস্তু,সুখ দুঃখাদি বিবিধ ধর্ম কখনই আত্মার স্বরুপ হতে পারে না।স্বপ্নে এই সকল বস্তুর যে জ্ঞান হয়,এই সকল বস্তু ও বস্তুর বোধকে যদি আত্মার স্বরুপ বলে মনে কর;তা হলে আমরা বলব যে আত্মার স্বরুপ ভাবে এ সকল বস্তু সত্তা নাই তারা আত্মার উপরে মিথ্যা আরোপিত হয়ে থাকে মাত্র।আত্মার যেটি প্রকৃত স্বরুপ তা এই সকল বস্তু ও বস্তুর বোধ হতে স্বতন্ত্র।জাগরিতকালের বস্তু ও বস্তুর বোধ সম্বন্ধেও তাই বুঝতে হবে।তারও আত্মার স্বরুপ না।আত্মার স্বরুপ যেটা তা ঐ সকল ধর্ম্ম বা অবস্থান্তরের মধ্যেও আপন সাতন্ত্র‍্য ঠিক রাখে।পাঠক শঙ্করের এই সকল কথা হতে দেখছেন যে,শঙ্কর জাগরিতাবস্থায় দৃষ্ট বা অনুভূত বস্তু বা বস্তুর জ্ঞানকেই 'মিথ্যা' বা অবিদ্যমান বলতেছেন না।স্বপ্ন দৃষ্ট বস্তু বা বস্তুর বোধকেও তিনি অসত্য মিথ্যা বলতেছেন না।এস্থলে আর একটা বিষয় লক্ষ্য করা কর্তব্য।আত্মার স্বরুপটি যে ঐ সকল সুখ-দুঃখাদি বিবিধ ধর্ম্ম বা অবস্থা হতে স্বতন্ত্র;তারাই যে আত্মার স্বরুপ না,তা বলতে গিয়ে ভগবান শঙ্কর তিনটি সুন্দর যুক্তি দিয়েছেন।যুক্তি কয়েকটি এই--
(ক) "ব্যভিচারদর্শনাৎ"।--স্বপ্নে আত্মায় যে সকল ধর্ম উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছে;সেগুলোকে আত্মার স্বরুপ বলা যায় না।কেননা, তারা পরিবর্তিত হয়,রুপান্তরিত হয়।স্বপ্নে তাদের যে আকার,যে রুপ দেখতেছ জেগে উঠলে আর সেরুপ,সে আকার থাকবে না।কিন্তু যেটা যার স্বভাব বা স্বরুপ তা পরিবর্তন করা যায় না।সুতরাং তাদেরকে আত্মার স্বরুপ বলতে পার না।
(খ)দৃশ্যত্বাৎ:--ঐ সকল সুখ দুঃখাদি ধর্মকে আত্মা স্বপ্নে নিজের বিষয় রুপে object দৃশ্যরুপে,অনুভব করে থাকে।দৃশ্য বস্তু হতে তা 'দ্রষ্টা' অবশ্যই স্বতন্ত্র।সুতরাং তাদেরকে আত্মার স্বরুপ বলতে পার না।
(গ) বস্তুন্তর সম্বন্ধ জনিতত্বাচ্চ:--ঐ সকল ধর্ম বা বিকার যে আত্মাতে উদ্রিক্ত হয়েছে তা অন্য বস্তুর সহিত সংসর্গের ফলে কারণান্তর যোগে।যা অন্য কোন কারণের সর্ম্পলে আসায় উৎপন্ন হয় ,তাতো অনিত্য সেই কারণটি চলে গেলে আর তাও থাকবে না।সুতরাং ঐ ধর্ম-গুলিকে আত্মার স্বরুপ বলতে পারা যায় না।আমাদের জাগরিত কালেও,বিষয়ে ইন্দ্রিয়যোগে যে সকল ধর্ম্ম বা ক্রিয়া উদ্রিক্ত হয়,সেগুলিও এই সকল হেতুতে আত্মার স্বরুপ হতে পারে না।
শঙ্কর স্বপ্নদৃষ্ট বস্তুগুলিকে বা জাগ্রত দৃষ্ট বস্তুগুলিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন নাই।আত্মার যেটি প্রকৃত স্বরুপ সেটা সকল ধর্ম বা গুণ হতে স্বতন্ত্র।যারা অবিদ্যাচ্ছন্ন তারাই ঐ ধর্ম্ম বা গুণ গুলিকে আত্মার উপরে "আরোপিত" করে নিয়ে এবং তাদেরকে আত্মার স্বরুপ বলে মনে করে।কারণান্তর যোগে আত্মায় যে সকল ধর্ম্ম বা ক্রিয়া বা গুণ উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে সে সকলের মধ্যে আত্মার একত্ব ও স্বাতন্ত্র‍্য পরিস্ফুট থাকে।তা ভুলে অবিদ্যাচ্ছন্ন লোকেরা সেগুলোকে আত্মার স্বরুপ বলে মনে করর।তাকেই বেদান্তে "অধ্যারোপ" বলে।তা মিথ্যা,অসত্য।সর্ব্বত্র ভাষ্যকার এই ভাবেই ধর্ম্মগুলিকে মিথ্যা,অসত্য বলেছেন।
(৬) কার্য্য ও কারণের সম্বন্ধ নির্ণয় করতে গিয়ে শঙ্করাচার্য্য বলে দিয়েছেন যে প্রত্যেক বস্তু বা জীবের একটি স্বতঃসিদ্ধ 'স্বরুপ';এবং তার একটি 'সম্বন্ধি রুপ' আছে।যখন একটা বস্তু বা জীবের,অপর একটা বস্তুর সহিত বা অবস্থার সহিত বা কোন ব্যক্তির সহিত সম্বন্ধ হয়,সেইটাই তার সম্বন্ধি রুপ।অপর কারও সাথে সম্পর্ক হলেই যে তদযোগে বস্তুর বা ব্যক্তির স্বরুপটা একটা স্বতন্ত্র বস্তু হয়ে উঠে তা না।ঐ স্বরুপটির কোন হানি হয়।সুতরাং প্রত্যেক বস্তু বা জীব অপর কারোও সাথে সর্ম্পকে আসলেও তার আপন স্বরুপটি ঠিকই থেকে যায়।
শঙ্করাচার্য্য এই মূল্যবান তত্ত্বটি এরকম ভাবে বলেছেন
**রেখা বা বিন্দু ত একি রকম।কিন্তু স্থানের ভেদে,স্থানের সম্বন্ধে পড়ে--ঐ একই রেখাকে কখন লোকে একশ,কখন এক সহস্র শব্দে নির্দ্দেশ করে থাকে।
অতএব এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারা যাচ্ছে যে ব্রহ্ম আপন স্বরুপ পরিত্যাগ করে,এই নাম -রুপাদি বিকারের সর্ম্পকে ,একটা স্বতন্ত্র বস্তু হয়ে উঠেন নাই।নাম রুপাদি বিকারগুলি,ব্রহ্ম হতেই অভিব্যক্ত হয়েছে।কিন্তু তাদের সর্ম্পকে তাঁর স্বরুপের কোন হানি হয় নাই।
নামরুপাদি বিকারের মধ্যে,সকল পরিবর্তনের মধ্যে-ব্রহ্মের স্বরুপটি ঠিকই থাকছে।তাঁর স্বরুপের একত্ব ও স্বাতন্ত্র‍্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছেযদি মনে কর আর নাম-রুপাদি সর্ম্পকে এসে তার স্বরুপ অন্যরুপ হয়ে উঠল এও মনে কর তবেই ভুল করলে।
যদি মনে কর যে,এই জগৎটা যখন অভিব্যক্ত হল তখন,ব্রহ্ম আপন স্বরুপ ত্যাগ করে এই জগৎ নামক একটা স্বতন্ত্র বস্তু হয়ে উঠলেন তাও ভুল করলে এই প্রকার জগৎ অসত্য,মিথ্যা।
অবিদ্যাচ্ছন্ন লোকেরাই এই জগৎকে ব্রহ্মের উপর আরোপিত করে তাঁর স্বাতন্ত্র‍্য ভুলে মনে এই জগৎ একটা স্বতন্ত্র বস্তু।প্রকৃত কথা এই যে অপর কারও সাথে সর্ম্পক হলেও স্বরুপ ঠিকই আছে।ব্রহ্মের স্বরুপ হতেই নাম-রুপাদি বিকারগুলো অভিব্যক্ত হয়েছে তাই বলে ব্রহ্ম আপন স্বরুপ হারিয়ে একটা স্বতন্ত্র বস্তু হয়ে উঠল না।
শঙ্করাচার্য এই প্রকার জগৎকে অসত্য,মিথ্যা বলে নির্দ্দেশ করেছেন।এত নির্দ্দেশ স্বত্তেও লোকে জগৎগুরুকে বুঝতে পারে নাই।
(৮) শঙ্কর ভাষ্যে অনেকস্থলে কতক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।অনেকে এই শব্দগুলি দেখে মন করে শঙ্করে যেন জগৎকে ও জগতের বিকারগুলিকে অলীক বলে উড়ে দিয়েছেন।এই শব্দগুলি পরীক্ষা করে দেখা অবশ্যই প্রয়োজন।
শঙ্কর কি অর্থে এই শব্দগুলির ব্যবহার করেছেন তা তিনি নিজেই সে সকল স্থানে বলে দিয়েছেন।যে ব্যক্তি যে শব্দ বা যে কথাকে নিজে যে অর্থ ব্যবহার করেন,সেই শব্দের ও সেই কথার সেই অর্থটিই গ্রহণ করা কর্তব্য তা না করে নিজের মনোমত অর্থ করা উচিত না।আমরা এখন শঙ্করের ব্যবহৃত শব্দগুলির উল্লেখ করতেছি।এই সকল শব্দদ্বারা শঙ্কর এই জগৎটাকে উড়িয়ে দিয়েছেন কিনা একটু বিচার করে দেখবেন
(a) শঙ্কর ভাষ্যে অনেক স্থলে দেখতে পাই যে এই জগৎ অবিদ্যাকল্পিত;নামরুপগুলি অবিদ্যা প্রত্যুপস্থাপিত,নামরুপাদির ভেদ অবিদ্যাকল্পিত,নাম-রুপাদি উপাধির পরিচ্ছেদ অবিদ্যাত্মক।এই প্রকার উক্তি আছে।এই অবিদ্যাকল্পিত কথাটার ব্যবহার দেখেই অনেকে এই জগৎকে অলীক বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু শঙ্করের অভিপ্রায় তা না।
কি অর্থে শঙ্কর,অবিদ্যা শব্দ ব্যবহার করেছেন?
বিষয়েন্দ্রিয় যোগে আত্মায় কতগুলি গুণ,ধর্ম বা বিকারে অভিব্যক্তি হয়ে থাকে এবং এই সকল গুণ বা ধর্মের মধ্যে আত্মার যেটি স্বরুপ সেটি অবিকৃত থেকে তার স্বাতন্ত্র্য ও একত্ব পরিস্ফুট থাকে।এই ধর্ম বা বিকার গুলি আত্মায় 'জ্ঞেয়' রুপেই অনুভূত হয়ে থাকে।স্বরুপটি স্বতন্ত্র বলে আত্মা তাদের জ্ঞাতা।কিন্তু সেই ধর্ম বা বিকারগুলি আত্মার উপরে অধ্যারোপিত করে সেই স্বাতন্ত্র‍্য টাকে বিলুপ্ত করে ঐ ধর্ম বা বিকারগুলিকেই আত্মা বলে ধরে নেওয়া হয় তখন সেটার নাম অবিদ্যা।অবিদ্যার প্রভাবে আমরা এইরুপ মনে করি।
Paul Deussen প্রভৃতি ইউরোপীয় পাশ্চাত্ত্য পণ্ডিতরা শঙ্করের এই অবিদ্যা শব্দের অর্থ ভুলে, মিথ্যা অর্থ Unreal অর্থ করেছেন।যা একদম ভুল।
অবিদ্যার প্রভাবে আমরা ব্রহ্মের স্বাতন্ত্র‍্যটা ভুলে যাই।ভুলে যায় যে ব্রহ্ম এ জগৎ হতে স্বতন্ত্র।এই নাম-রুপাদি বিকারের মধ্যেও সকল পরিবর্তনের মধ্যেও তিনি স্বতন্ত্রই রয়েছেন।
শঙ্কর বলেন যে অবিদ্যার কাণ্ডই এইরুপ।জগৎটা যখন ব্রহ্ম হতে অভিব্যক্ত হল।তখন আমাদের মনে হয় যেন এই অভিব্যক্ত জগতের যোগে ব্রহ্ম--একটা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বস্তু হয়ে উঠলেন।অন্য বস্তুর যোগে তিনিও যেন অন্য হয়ে উঠলে ।একটা ভিন্ন বস্তু হয়ে উঠলেন।আমরা মনে করি যে তাঁর স্বরুপটি মরে গিয়ে একটা সর্ম্পূণ নতুন বস্তু (এই জগৎটা) যেন উপস্থিত হল।এরুপ আমাদের দৃষ্টি কেবল বিকারগুলোতেও আবদ্ধ হয়ে পড়ে।ব্রহ্ম হতে যেন স্বতন্ত্র বস্তু বলে মনে হতে থাকে।এই প্রকারে তিনি যেন প্রত্যেক বিকারের একটা একটা স্বতন্ত্র নানারুপে দেখা দিল।শঙ্কর সেটাকেই অবিদ্যার কল্পনা মিথ্যাজ্ঞান বলে নির্দ্দেশ করেছে।।
এই জগৎ স্বতন্ত্র স্বাধীন বস্তু হতে পারে না।ব্রহ্মকে ছেড়ে তা হতে স্বতন্ত্র হয়ে থাকতে গেলে জগতের বিকারগুলি ধুলিচূর্ণবৎ খসে পড়বে।তা হলে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে শঙ্কর কিভাবে জগৎকে অসত্য মিথ্যা বললেন।তিনি কোথাও এই জগৎকে,জগতের বিকারগুলিকে উড়ে দেন নাই।
এ সকলের অর্থ এই যে জগতের কোন বস্তুই প্রকৃত পক্ষে ব্রহ্ম হতে স্বতন্ত্র না।কোন বস্তুকেই ব্রহ্ম হতে স্বতন্ত্র করে নেওয়া যায় না।ব্রহ্ম হতে স্বতন্ত্র হতে গেলেই তাঁকে ছেড়ে থাকতে গেলে জগৎ চূর্ণ হয়ে পড়বে।
অবিদ্যার টা বুঝলাম আরো একটি শব্দ আছে তা হলো নেতি নেতি শব্দ।কোথাও বা নানাত্ব নাই বলা হয়েছে।যে ব্যক্তি ব্রহ্মকে নানাত্বকে দেখে অনেককে দেখে সে মৃত্যু হতেও মৃত্যুকে প্রাপ্ত হয়।এ কথা বলাও আছে।অনেকে মনে করে শঙ্করাচার্য্য এই নানাত্বপূর্ণ জগৎটাকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বেদান্তে ব্যবহৃত নেতি নেতি শব্দের তাৎপর্য্য নির্ণয় করতে গিয়ে বলতেছেন যে জগতে সূক্ষ্ম ও স্থুলাকারে যে সকল গুণ,ধর্ম বা ক্রিয়াদি অভিব্যক্ত হয়েছে সেইগুলি নিয়ে ত সংসার।শব্দ স্পর্শ রুপ রসাদি বাহ্য বিষয় এবং ইন্দ্রিয় মন প্রাণ প্রভৃতি আন্তর শক্তি এইগুলি দ্বারাই ত জগতের তাবৎ বস্তু নির্ম্মিত।সুতরাং যাকে ব্রহ্ম বলতেছ তারাই ত সেই ব্রহ্মের রুপ বা আকার।এ সকল ছাড়া আবার ব্রহ্ম কোথায়?শঙ্কর বলতেছেন যে এই প্রকারে ব্রহ্মের স্বতন্ত্রতা ভুলে যদি ব্রহ্মকে এই সকল গুণ বা ধর্মবিশিষ্ট বলে মনে করা হয় তাহলে ভুল হল।বেদান্তে নেতি নেতি শব্দদ্বারা ব্রহ্মের এই প্রকার আকার নিষিদ্ধ হয়েছে।জগতে অভিব্যক্ত সর্ব্বপ্রকার গুণ বা ধর্ম হতে ব্রহ্ম স্বতন্ত্র;তিনি এই সকল গুণ বা ধর্ম বিশিষ্ট না।সকল প্রকার গুণ বা ধর্ম মধ্যে তাঁর স্বাতন্ত্র‍্য ও একত্ব ঠিক রয়েছে।সুতরাং তাঁকে এই সকল ধর্ম বিশিষ্ট মনে করা যেতে পারে না।শঙ্কর এই কথা আমাদেরকে বলে দিয়েছেন।তাহলে আপনারা আবারও দেখলেন নেতি নেতি শব্দদ্বারা জগতের কোন বস্তুকে উড়ে দেওয়া হয় নাই।নানাত্ব নাই বলতে ভগবান বুঝিয়েছেন যে একটা বস্তুকে যুগপৎ 'এক' অথচ 'অনেক' বলতে পারা যায় না।যা অনেক বা নানা হয়েছে যা নানা আকারে আকারিত নানা ধর্ম বিশিষ্ট তা আবার একত্ব থাকল কোথায়?সুতরাং ব্রহ্মকে এই জগদাকার বিশিষ্ট,জগদাকারধারী একটা স্বতন্ত্র বস্তু বলতে পারা যায় না।কেন না তিনি ত আপন স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে এই জগদাকার ধারণ করেন নাই।এই জগতের মধ্যেও তাঁর স্বরুপের স্বাতন্ত্র‍্য ও একত্ব ঠিক আছে।এই প্রকারে শঙ্করাচার্য্য ব্রহ্মে নানাত্ব নাই বলেছেন।আপনারা আশা করি বুঝতে পারলেন নানাত্ব শব্দ দিয়েও জগতের কোন বস্তুকেই উড়িয়ে দেওয়া হয় নাই।
বিশেষ প্রতিষেধ বা বিশেষ নিরাকরণ বেদান্তে আরো একটা শব্দ আছে এখানে ব্রহ্মে কোন প্রকার গুণ,ধর্ম্ম,ক্রিয়া,জাতি বা ভেদ নাই।ব্রহ্ম সর্ব্বপ্রকার বিশেষত্ব-বর্জ্জিত।এ নিষেধ দেখে অনেকে মনে করে জগতে নাম-রুপাদি সকল বিশেষ বস্তুই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।শঙ্কর বলেছেন অবিদ্যাচ্ছন্ন লোকেরা ব্রহ্মের স্বাতন্ত্র‍্য ও একত্ব ভুলে তাঁকে এই সকল শক্তি গুণাদি বিশিষ্ট বলেই মনে করে।"বিশেষ নিরাকরণ" শব্দ দ্বারা ব্রহ্মকে জগদাকার বিশিষ্ট মনে করাটাই নিষিদ্ধ হয়েছে জগৎ বা জগতের বস্তুগুলি নিষিদ্ধ করেন নাই।অনেকে জীবাত্মাকেও দেহেন্দ্রিয়াদি ধর্ম বিশিষ্ট বলে মনে করে সর্ব্বত্র তাই নিষিদ্ধ হয়েছে।
আরো সহজ কথায় মানে বাচ্চা লেভেলে যদি বলতে চাই শঙ্কর কোথাও জগৎকে অলীক বলে উড়িয়ে দেন নাই।
শঙ্করের জগৎ মিথ্যা বলতে ব্রহ্মের মতো সৎ ও না আবার আকাশকুসুমের মতো অসৎ ও না।তাই মিথ্যা বলতে অনির্বচনীয় বুঝিয়েছেন।

হিন্দু সমাজে পদবী প্রচলন

হিন্দুধর্ম অতি প্রাচীন বলেই বিভিন্ন সময় এর পথ পরিক্রমায় বিচিত্র পরিবর্তন সাধিত হয়েছে যা বাস্তবক্ষেত্রের ধর্মীয় নিয়ম নীতির সাথে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। সনাতনী হিন্দু সমাজে  তথাকথিত পদবী প্রচলন হওয়ায় পর থেকে বর্ণভেদের চেয়ে আরও অধিকতর ভেদাভেদ বিভিন্ন পদবী ভেদের লোকরাই সৃষ্টি করতে শুরু করে। পদবী ব্যবহারের ঐতিহাসিক প্রমাণ ও তথ্য --- ১৫১০ খ্রীস্টাব্দে আনন্দ ভট্ট রচিত 'বল্লাল চরিত' যা ১৯০৪ খ্রীস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। এই বল্লাল চরিত পুস্তকে হিন্দু সমাজে পদবী প্রচলন সর্ম্পকে বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা আছে। উক্ত গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে গৌড়ের বৈদ্য বংশীয় রাজা বল্লাল সেন (১১৫৮-১১৭৯) নিজ সহধর্মিনী থাকা অবস্থায় অধিক বয়সে পদ্মিনী নাম্মী এক সুন্দরী ডোম নর্তকীকে বিবাহ করেন। এতে দেশজুড়ে রাজার সুনাম নষ্ট হয় এবং এ কুকীর্তি নিয়ে প্রজারা সমালোচনা শুরু করে দেন। রাজা এ কলংক থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য রাজ্য মধ্যে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের প্রজাদের এক সম্মিলিত ভোজ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু প্রায় সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা উপস্থিত থাকলেও নমঃশূদ্র পারশব বিপ্রগণ এই ভোজ অনুষ্ঠানে যোগদানে বিরত থাকেন। অর্থাৎ রাজার এ কুকীর্তিকে সমর্থন করে ভোজ সভায় অংশ নেন নি। নমঃশূদ্র বংশের কিছু পরিচয় এখানে বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। মহামুনি কশ্যপের পুত্র ছিল নমস্। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে ব্রহ্মজ্ঞ মুনিবর নমস্ এর পত্নী (ব্রহ্মার মানসপুত্র রুচির কন্যা) সুলোচনা গর্ভজাত পুত্র কীর্তিবান ও উরুবান নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের পিতা। মুনিবর নমস্ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে তিনটি বরও লাভ করেছিলেন ।
এগুলো হচ্ছে --- 1> তার পুত্রগণ বেদাচার ব্রাহ্মণাচার অধিকারী হবে এবং পরবর্তীতে হোমযজ্ঞ ও পূর্জাচনায় অধিকারী হয়ে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করবে।
2> তাঁর বংশ তাঁরই নামে খ্যাত হবে। পুত্রদ্বয় শূদ্রাকে বিয়ে করায় নমস্ নামের সাথে শূদ্র যোগ হয়ে নমঃশূদ্র নামে খ্যাত হবে।
3> তাঁর বংশধরদের চরিত্রগুন ও কীর্তি গৌরবে তাঁর নামের মহিমা ক্রমোজ্জ্বল হবে।
নমঃশূদ্র সম্প্রদায় বল্লাল সেনের পদবীভেদ করার আগে কুলীন ব্রাহ্মণ ও জ্ঞানী ছিলেন। যেহেতু নমঃশূদ্ররা বল্লাল সেনের ভোজসভার অংশ গ্রহণ করেন নি, সেহেতু রাজা তাঁদের ব্যবহারে অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন এবং নিজেকে অপমানিত বোধ করেন। রাজার আদেশে সকল নমঃশূদ্র লোকদের চাকুরীচ্যুত করা হলো এবং এমনকি নতুন নিয়োগও বন্ধ করে দেয়া হলো। শুধু তাই নয় তাঁদের যজ্ঞসূত্র ছিন্ন করে চন্ডাল বলে গালাগাল দিয়ে নগর বন্দর থেকে উৎখাত করা হল। অনন্যোপায় হয়ে এই নমঃশূদ্ররা সেদিন পাহাড়, বনাঞ্চলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে অনেকটা নিভৃত জীবনযাত্রা শুরু করলেন এবং প্রকৃতি নির্ভর বৃত্তি অবলম্বন করেন। অন্যদিকে রাজার আয়োজিত উক্তভোজ  অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সম্প্রদায়ভুক্তরা নমঃশূদ্রগণের প্রতি রাজার এই ব্যবহারে উৎসাহিত হয়ে নিজেদের নিম্ন সামাজিক মর্যাদা ঢাকবার চেষ্টায় তাঁদের প্রতি অধিক মাত্রায় দুর্ব্যবহার শুরু করে। তারা রাজার সকল কর্মকে নির্বিচারে সমর্থন করে রাজার অনুগ্রহ লাভ করতে যত্নবান হয়।  রাজাও এসব সম্প্রদায়কে সাহায্য করেন এবং অনেক সম্প্রদায়কে কৌলিন্য তথা পদবী দান করেন।
বল্লাল সেনের আগে পাল রাজাদের আমলে বাংলাতে বৌদ্ধ এবং লোকায়েত অনেক ধর্মই ছিল-যার মধ্যে তান্ত্রিক, কালীভক্ত এবং নানান স্থানীয় 'যোগী' সংস্কৃতিই পাওয়া যাবে। বৌদ্ধ ছিল রাজধর্ম। কিন্ত কোন জাতিভেদ পাওয়া ছিল না।




বল্লাল সেনের (1160–1179) আগে বাংলায় বৈদিক ধর্মের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কোন ব্রাহ্মনই ছিল না বাংলায়।
বল্লালসেন সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা। ১১৬০ খ্রিষ্টাব্দে সেন রাজবংশের প্রথম রাজা বিজয়সেন (১০৯৭-১১৬০ খ্রিষ্টাব্দ)-এর মৃত্যুর পর বল্লালসেন সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজলাভের পর তিনি রাজ্য বিস্তারের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ সংস্কারকার্যে অধিকতর মনোনিবেশ করেন। তিনি পিতার মতোই ‘অরিরাজনিশঙ্ক শঙ্কর’ এবং অন্যান্য সম্রাটসুলভ উপাধি গ্রহণ করেন। তিনি চালুক্যরাজ দ্বিতীয় জগদেকমল্লের কন্যা রামাদেবীকে বিবাহ করে সেনবংশের সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেন। বল্লালসেনের রাজত্বকালের ইতিহাস পুনর্গঠন করার জন্য কয়েকটি মূল্যবান উপকরণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে যথাক্রমে ‘নৈহাটি তাম্রশাসন’ ও ‘সানোখার মূর্তিলিপি’, বল্লালসেন কর্তৃক রচিত ‘দানসাগর’ ও ‘অদ্ভুতসাগর’ ছাড়াও বল্লাল চরিত নামে দু’খানি গ্রন্থ আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথমটি বল্লাল সেনের অনুরোধে তাঁর শিক্ষক (গোপাল ভট্ট) ১৩০০ শকাব্দে দুই খণ্ডে রচনা করেন এবং বল্লাল চরিতের তৃতীয় খণ্ড নবদ্বীপাধিপতির আদেশে গোপালভট্টের বংশধর আনন্দভট্ট ১৫০০ শকাব্দে রচনা করেন। উপরোক্ত বইগুলি সমসাময়িক।
সেন রাজারা এসে প্রথমে বাংলার সব প্রজাদের শুদ্র বানালেন! কনৌজ থেকে ব্রাহ্মন ধরে এনে তাদের দিয়ে বাংলায় ব্রাহ্মন্য ধর্ম, বৈদিক মতে পূজা অর্চনা চালু করলেন। ব্রাহ্মনদের বংশ বৃদ্ধি করতে এদেরকে অনেকগুলি গ্রাম দিলেন। কুলীন ব্রাহ্মনদের অসংখ্য বিবাহে উৎসাহ দেওয়া হল যাতে ব্রাহ্মনদের বংশ বৃদ্ধি হয়। এরাই আজকের তথাকথিত 'ব্রাহ্মণ'। এক অদ্ভুত হিন্দু যুগের সুচনা হল বাংলায়। কিছু ব্রাহ্মণ, বাকী সবাই শুদ্র, বাংলাতে আজো ক্ষত্রিয় বৈশ্য নেই। বাংলার ব্যবসায়ী শ্রেনী সাহারাও শুদ্র আবার ঘোষ-বোসের মতন রাজকরনিক শ্রেনীও শুদ্র!! ...... বাংলার জনগন তখন এই বহিরাগত ব্রাহ্মন আর সেনদের প্রতি বেজায় বিক্ষুব্ধ। ফলে মাত্র দুহাজার সৈন্য নিয়ে বখতিয়ার খিলজি যখন নবদ্বীপ আক্রমন করলেন (১২০২), লক্ষন সেনের পালানো ছাড়া আর কোন পথ ছিল না। এর পরবর্তীকালে বাংলায় লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে থাকে ব্রাহ্মন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণায় আবার চতুর ইসলামিক ফকিরদের শঠতা ও জংগী ইসলামিক শাসকের দমনপীড়নে। হজরত শাহ জালালের (১৩০৬) মতন সুফীদের প্রচারে আকৃষ্ট হয়ে বাঙালী দলে দলে ইসলাম গ্রহন করতে থাকে চোদ্দশ শতক পর্যন্ত।

রুদ্রাষ্টধ্যায়ী এর সপ্তম অধ্যায় হতে লিখিত সংক্ষিপ্ত বংগানুবাদ

দূঃখ দূরকারী ও জ্ঞান প্রদানকারী হে রুদ্র তোমার ক্রোধের প্রতি নমষ্কার; তোমার বাণের প্রতি নমষ্কার; এবং তোমার দুই ভুজার প্রতি নমষ্কার। (১)


কৈলাসে থেকে সংসারের প্রতি কল্যাণকারী হে রুদ্র! তোমার যে মঙ্গলদায়ক, সৌম্য, কেবল পূণ্যপ্রকাশক শরীর, সেই অনন্ত সুখকারক শরীর দ্বারা আমাদের প্রতি কৃপাকর তথা আমাদের রক্ষা কর। (২)


কৈলাসে থেকেও সংসারের কল্যাণকারী তথা মেঘে স্থিত থেকে বৃষ্টির দ্বারা জগতের রক্ষাকারী হে সর্বজ্ঞ রুদ্র! শত্রুর নাশ করার জন্য যে বাণকে তুমি নিজ হস্তে ধারণ কর তা কল্যাণকারক হোক এবং তুমি আমার পুত্র-পৌত্র তথা গো, অশ্বাদির বিনাস কর না। (৩)


কৈলাসে শয়নকারী হে রুদ্র! তোমাকে প্রাপ্ত করার জন্য আমি মঙ্গলময় বাক্যে তোমার স্তুতি করছি। আমাদের সমস্ত পুত্র-পৌত্র তথা পশু সমূহও যেন নিরোগ থাকে এবং নির্মল মনের হয়, তুমি এমনটাই কৃপা কর। (৪)


অত্যধিক বন্দনশীল, সমস্ত দেবতাদের মূখ্য, দেবগণের হিতকারী তথা সমস্ত রোগের নাশকারী হে রুদ্র! আমার সাথে সবচেয়ে বেশী বাক্যালাপ কর, যাতে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ হতে পারি। হে রুদ্র! তোমাকে নমষ্কার (৫)

Thursday, November 14, 2019

রাসলীলা সত্য নাকি কাল্পনিক ?

১/ ভাগবত পুরাণের ১০ম স্কন্ধে উল্লেখ আছে শ্রীকৃষ্ণ শরৎ পূর্ণিমা তে রাসলীলা করেছিলেন ।
২/ ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ডের ২৮ নং অধ্যায়ে বর্ণিত আছে শ্রীকৃষ্ণ চৈত্র মাসে রাসলীলা করেছিলেন।
৩/ গর্গসংহিতার বৃন্দাবন খণ্ডের ১৯ তম অধ্যায়ে উল্লেখ আছে শ্রীকৃষ্ণ বৈশাখ মাসে রাসলীলা করেছিলেন ।
প্রথমত পৌরাণিক গণ আগে ঠিক করুন রাসলীলা কোন সময়ে হয়েছিল ? এই তিনটির মধ্যে একটি ঠিক হলে অপরটি মিথ্যা হয়ে পড়ে ।
এবার দ্বিতীয়ত রাসলীলার বর্ণনা ভাগবত থেকে করা যাক , তাতে স্পষ্ট হয়ে যাবে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা কতখানি সত্য ?
কৃষ্ণের রাসের কামক্রীড়া দেখে দেবতাদের পত্নীরাও কামার্ত হয়ে গেলেন । কামদেবের উগ্র ইচ্ছা সঞ্চারিত হলে তাদের শরীর কামরসে আর্দ্র হয়ে গেল । চন্দ্র তারা ও গ্রহ সকল হতভম্ব হয়ে গেল । ( ভাগবত স্কন্ধ ১০/ অধ্যায় ৩৩/ শ্লোক নং ১৯-২১ )
কৃষ্ণ যমুনার কর্পূর সমান উদ্জ্বল বালুতটে গোপীদের নিয়ে উপস্থিত হলেন । এই স্থান জল তরঙ্গে শীতল ও কুমুদিনীর সুগন্ধে সুবাসিত ছিল । সেখানে কৃষ্ণ গোপীদের সঙ্গে রমন করলেন ।
বাহু বিস্তার করে আল­িঙ্গন করা , গোপীদের হাতের চাপ দেওয়া , তাদের শিখা ধরা, উরুতে হস্তাবলেপ , সায়ার দড়ি ধরে টান­ দেওয়া, স্তন ধরা, রসিকতা করা, নখ দিয়ে অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করা , মৃদু হাসি হাসা এবং এইসব ক্রীড়া দ্বারা নবযৌবনা কবিদের মধ্যে কামদেব কে জাগ্রত করে কৃষ্ণ রাতে রমন ( ভোগ) করলেন । (ভাগবত পুরাণ স্কন্ধ ১০/ অধ্যায় ২৯/ শ্লোক নং ৪৫-৪৬ ) ‌
এই হলো মহাপুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতের রাসলীলার বিবরণ । কোন সভ্য সমাজ এই অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কাহিনী গুলো কে গ্রহন করতে পারে না । আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামে এমন দোষারোপ করা যে তিনি এমন লীলা করেছিলেন , ইহা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয় । শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র অতি উজ্জ্বল , তাকে মহাভারতে যোগীরাজ যোগেশ্বর বলা হয়েছে , অতএব তার নামে এমন মিথ্যা দোষারোপ করা যে তিনি রাসলীলা করেছিলেন , এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ।

Friday, October 25, 2019

বাংলাদেশের ইস্কন কি আসলেই নিরীহ?

অনেকে বলছে, “ইসকন একটি নিরীহ সংগঠন, তারা নিরামিষ ভোজী, তাদের কাজ শুধু ধর্ম প্রচার করা। তাই ইসকন সম্পর্কে অপপ্রচার করা ঠিক নয়।”
যারা এ ধরনের কথা বলছেন, আমার মনে হয়, তারা হয় ইসকন সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না, অথবা ইসকন সম্পর্কে তাদের অন্ধ বিশ্বাস আছে। আসলে এই ধরনের অন্ধবিশ্বাস অনেকেরই থাকতে পারে, তবে সেই অন্ধ বিশ্বাস দূর করা জরুরী।
বর্তমান কালে এরকম একটা আলোচিত ঘটনা হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজিলাতুনেছা ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক বিথীকা বনিকের ফ্ল্যাটে তার ভাই ইসকন সদস্য শ্যামল বণিক কর্তৃক এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ।
ঘটনা সংক্ষেপে- ঘটনার রাতে অধ্যাপক বিথীকা বণিক টিউশনি শেষে ইংরেজি বিভাগের ওই ছাত্রীকে রাতে তার সঙ্গে থাকার অনুরোধ করা হয়। তাই রাতে তিনি সেই নারী অধ্যাপকের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে যান। তাদের পাশের কক্ষে ছিলেন অধ্যাপকের দুই মেয়ে, আরেকটি কক্ষে ছিলেন তার ভাই শ্যামল বণিক। রাত দেড়টার দিকে হল থেকে ওই অধ্যাপকের কাছে ফোন যায়। হলের এক আবাসিক ছাত্রীর ঝামেলা হয়েছে, বিষয়টি মীমাংসা করানোর জন্য তিনি হলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।




প্রভোস্ট হলে যাবেন শুনে ওই ছাত্রীও তার সঙ্গে হলে ফিরতে চেয়েছিলেন। তিনি ওভাবে প্রভোস্টের বাসায় থাকতে চাননি। কিন্তু ওই প্রভোস্ট তাকে হলে আনেননি। রাত ৩টার দিকে বাসা থেকে অধ্যাপকের কাছে ফোন আসে যে, তার ভাই ঐ ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে উদ্দত হয়েছে। সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষণিক তিনি বাসায় যান। গিয়ে পুরো ঘটনা শোনেন। এরই মধ্যে পুলিশ গিয়ে তার ভাইকে আটক করে এবং ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে।
(https://bit.ly/33PyUAQ)
এ ঘটনা নিয়ে কিন্তু রাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। (https://bit.ly/36092nJhttps://bit.ly/2o5FAM2)।
কিন্তু ঐ নারী অধ্যাপক তার ধর্ষক ভাইয়ের পক্ষে। অধ্যাপক বিথীকা বনিকের বক্তব্য হচ্ছে, তার ভাই ইসকন সদস্য, মাছ-মাংস, পেঁয়াজ-রসুন খায় না, তাই ১০০টা মেয়ে থাকলেও ফিরে তাকাবে না। (https://bit.ly/2JtDKfJ)
সে বরং এই ঘটনা ফাঁস করার জন্য মিডিয়া ও পুলিশকে দোষ দিয়েছে।
(https://bit.ly/33UYwwu)
এখন কথা হলো, ইসকন সদস্য হলেই যে নারীর প্রতি লিপ্সু হবে না, অনৈতিক কাজ করবে না, এর দলিল কোথায় ?
আপনাদের মনে থাকার কথা, ২০১৬ সালে সিলেট ইসকন মন্দিরে সাধারণ ইসকন সদস্যরা অনেক আন্দোলন করেছিলো ইসকন বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও ইসকন সিলেটের (কাজলশাহ) অধ্যক্ষ নবদ্বীপ দ্বীজ গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিলো দুটি-
১) ব্রহ্মচারী হওয়ার পরেও নারীদের তার অনৈতিক সম্পর্ক।
২) বিদেশ থেকে আসা কোটি টাকা লুটপাট
তথ্যসূত্র-
ক) সাধারণ ইসকন সদস্যদের মুখে ইসকনের শীর্ষ নেতার নারী অপকর্মের কথা শুনুন- https://youtu.be/pK2OclNTQUk
খ) নারীহীন ইসকন রাজ্যে নারী নিয়ে ঝড় - https://bit.ly/2MCIzVU
গ) যুগলটিলা ইসকন মন্দিরে অধ্যক্ষের অপকর্মের প্রতিবাদে মানববন্ধন-
https://bit.ly/2odS44u
ঘ) ইসকনের শীর্ষ নেতার কোটি টাকা লুটপাটের গোমর ফাঁস করায় ৩ সদস্য বহিষ্কার
(https://bit.ly/31EuknI)
ঙ) চোরাচালানকারী থেকে ইসকন বাংলাদেশের সহ সভাপতি-
(https://bit.ly/2W66U9v)
কথা হলো- যেখানে সারা বাংলাদেশের ইসকনের শীর্ষ দ্বিতীয় প্রধান কথিত ব্রহ্মচারী হওয়ার পরও একাধিক নারী কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত, অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত, সেখানে অধ্যাপক বিথীকা বণিকের ভাই শ্যামল বণিক ইসকন সদস্য হওয়ার কারণে কোন নারীকে ধর্ষণ করতে পারবে না, এটা তো হতে পারে না।

Tuesday, September 24, 2019

কোন স্বপ্ন দেখলে কি ফল হয়

স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি।
 মানুষের মন দুই প্রকার --
১. চেতন মন বা কনসাস মাইন্ড
২. অবচেতন মন বা সাব কনসাস মাইন্ড।
মানুষ যখন জাগ্রত অবস্থায় চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া, সমস্থ ধরনের কাজ সম্পাদন করে চলে তখন তাদের মন চেতন বা কনসাস মাইন্ডের থাকে। এইসময় অবচেতন বা সাব কনসাস মাইন্ড নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। আর মানুষ যখন ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে তখন অবচেতন মনের ক্রিয়া শুরু হয়। এই অবচেতন মনই স্বপ্নের মূল কারন। মানুশের সচেতন মন জাগ্রত অবস্থাই যা যা করে, দেখে বা অনুমান করে অবচেতন মন তা নিদ্রিত অবস্থাই সচেতন মন দৃষ্ট বিষয় বস্তুকে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করায়। এই প্রকাশই স্বপ্ন।
কি স্বপ্ন দেখলে কি ফল হয় ----(কিছু স্বপ্নের ফলাদেশ দেওয়া হল)
* আকাশ- উন্নতি, খুশি, সুখ
*আকাশে উড়া- ইচ্ছা পূরন।
* আগুন- কোন ভালবাসার মানুষের সাথে মিলিত হওয়া।
* আয়না - কোন ভালবাসার মানুশের সাথে ছিন্ন হওয়া।
* সূর্য- সম্পদ লাভ ও উন্নতি।
* অন্ধ মানুশ- ভ্রমন ভয় যুক্ত।
* বৃষ্টি- ঝগড়া, রোগ
* চুলকাটা - তর্কের অবসান
* মেঘ- ভ্রমন, যোগাযোগ ছিন্ন।
* দরজা বন্ধ করা- ভয় ও হারানো।
* নারী বা পরুষ (ক্রন্দনরত)- সুখবর প্রপ্তি ও বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করার প্রচেষ্টা
* বিবাহ- ভয় ও বিপদ
* দৈহিক মিলন- প্রাপ্তি
* বাথটব- সন্মানসূচক আলোচনা।
* নৃত্যশালা- ভাল সময়ের আগমন বার্তা।
* সাঁতার- উন্নতি ( বিশেষ ভাবে কর্মক্ষেত্রে)
* মাটি কোপান- ভয়ের বার্তা।
* সর্প ধরা- শত্রুজয় সুনিশ্চিত।
* সাপে কামড়নো- ভয় ও আতঙ্ক।
* সাপ দেখার স্বপ্ন- শত্রুর ধংসাত্মক পরিকল্পনা।
* নৌকায় চড়া- বদনাম ও ভয়
* নৌকাহতে নামা- ভয় ও ভীতির মুক্তি
* চুমু খাওয়া- সুন্দর পরিকল্পনার লাভদায়ক ফলাফল।
* চুমু নেওয়া- ভাল বন্ধুত্তের প্রাপ্তি
* নদীতে সাঁতার- রোগমুক্তি
* মৃতদেহ- রোগমুক্তি:



* মাছ-স্বপ্নে মাছ দেখাটা সৌভাগ্যের লক্ষণ। বিশেষ করে যদি স্বপ্নে যদি দেখেন মাছ ধরছেন, তাহলে অর্থ প্রাপ্তি হবে। আর যদি মাছ ফসকে যায় তাহলে টাকা আসবে, তবে তা খরচও হয়ে যাবে।
* গরু -স্বপ্নে নিজের গরু দেখা মানে হল ধনসম্পত্তি প্রাপ্তি হবে। আর যদি মরা গরু দেখেন তাহলে সম্পদ হাতছাড়া হবে।
শারিরিক সম্পর্ক-স্বপ্নে কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখলে বা কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হতে দেখলে বুঝবেন যে আপনি নিঃসঙ্গ বোধ করছেন।
* দাঁত নড়া- স্বপ্নে দাঁত নড়তে দেখলে নিকট আত্মিয় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর দাঁত পড়ে যাওয়া দেখলে নিকট আত্মীয় কেউ মারা যাবে। নতুন দাঁত গজাতে দেখলে সম্পত্তি লাভ হবে।
* গাছ- ফলভরতি গাছ দেখার অর্থ হল ধনসম্পত্তি লাভ। গাছ থেকে নিজেকে ফল পাড়তে দেখলে অর্থ প্রাপ্তি হবে।
* আগুন লাগা- গায়ে আগুন লাগা দেখলে পেটের সমস্যা হয়। সেটা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে। এর আরেকটি অর্থ হলো বিপদগ্রস্ত হওয়া।
* পড়ে যাওয়া- স্বপ্নে উপর থেকে নিচে পড়ে যেতে দেখার অর্থ হল কাজে অবনতি। এর আরেকটি অর্থ রয়েছে, তা হল মানুষটি মানসিক চাপে রয়েছে এবং বিষণ্নতায় ভুগছেন।
* জলে ডুবে যাওয়া- স্বপ্নে জলে ডুবে যাওয়ার অর্থ হল বিপদগ্রস্ত হওয়ার আভাস। তবে বৃষ্টি হতে দেখা মানে নতুন কিছু পাওয়া বা আগমনের পূর্বাভাস।
* সাপ- স্বপ্নে সাপ দেখার অর্থ হলো শত্রু বৃদ্ধি। তবে সাপ মেরে ফেলতে দেখা মানে আপনি শত্রুকে পরাস্ত করতে পারবেন। স্বপ্নে সাদা সাপ দেখা সৌভাগ্য ও বংশবৃদ্ধির লক্ষণ।
* নগ্ন-নিজেকে নগ্ন দেখার অর্থ হলো সম্মানহানি। অন্য কাউকে নগ্ন দেখার অর্থ হল তার সম্মানহানি।
* নক্ষত্র- বয়স্কদের হতে প্রাপ্তি।
* এরোপ্লেন- পরিবেশের পরিবর্তন।
* প্লেনে চড়া- কাজের সময় সতর্ক্তা জরুরি।
* শিশু- ব্যবসাতে উন্নতি ও সুখি জীবন
* পিতা- ভাল সময়ের সূচনা
* আচেনা মাঠ দেখ- সুফল যুক্ত ভ্রমন
* অজগর দেখা- বিবাদের চিহ্ন।
* অলঙ্কার দেখা- সন্মান
* অগ্নি জ্বালতে গিয়ে বিপদে পড়া- চোখের রোগ হয়।

মাথার পেছনের চুটকি বা টিকির রহস্য কি?

মস্তক বা মাথার উপরে কিন্তু পিছন দিকে চুলের এক গুচ্ছ, ক্ষৌরকর্মের সময়, কাটা হয় না। এই গুচ্ছটিকেই টিকি বা শিখা কিম্বা চৈতন বলা হয়। টিকি রাখা হয় ব্রহ্মরন্ধ্রের উপরেই, ফলে ঐ স্থান বা সহস্রারের শক্তিকেন্দ্র বা শক্তিমর্ম মনে করে (বা নির্দেশ করে) সুরক্ষিত থাকে। যারা প্রকৃত অর্থে ব্রহ্মসাধনায় নিরত, তারা চলতি বাংলা ভাষায় টিকি বা শুদ্ধ ভাষায় শিখা রাখেন। টিকিকে অনেকে 'চৈতন'-ও বলে থাকেন অর্থাৎ যার চৈতন্য হয়েছে, এমন।
একজন হিন্দু মানুষের জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যুা পর্যন্ত ১৬টি সংস্কার এর মধ্যে ৮ম সংস্কার হল চুড়াকর্ম সংস্কার। শিশুর জন্মের পর তৃতীয় বর্ষে চুড়াকর্ম সংস্কার যজ্ঞ করতে হয় অর্থাৎ শিশুর মস্তক মুন্ডন বা কেশছেদন করতে হয়। এই সময়ই ঐ ব্রহ্মরন্ধ্রের স্থানে একগোছা চুল রেখে দিতে হয়। এইটিই শিখাা বা টিকি।
টিকি / শিখা প্রত্যেক সনাতনীর 'চুড়াকর্ম' সংস্কার থেকেই রাখতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় (এই শিখা এবং) সূত্র/যজ্ঞোপবিত এখন সম্প্রদায় বিশেষের জন্য রক্ষিত। তথাকথিত ব্রাহ্মণ পদবীধারীরা টিকি কেউ রাখেই না, বলতে গেলে। আমি কয়েকজন পুরোহিতকে ব্যক্তিগত ভাবে রাখিয়েছি। টিকি ছাড়া ব্রাহ্মণ-পুরোহিত একদমই বিসদৃশ অবস্থা/ব্যবস্থা নির্দেশ করে। আসলে টিকির অবস্থান পরমপদের কোনখানে, তার বাহ্য প্রকাশ করে!
শুশ্রুত ঋষি মাথায় মুখ্য স্পর্শকাতর অংশটিকে 'অধিপতি মর্ম' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। যা সমস্ত স্নায়ুর যোগসূত্র। শিখা বা টিকি ওই অংশটিকে নিরাপত্তা প্রদান করে বলেও বলেছেন। শরীরের নিম্নাংশ থেকে মস্তিষ্কের নীচে, ব্রহ্মরন্ধ্রে সুষুম্না স্নায়ু পৌঁছয়। যোগ অনুসারে ব্রহ্মরন্ধ্র ১০০০-(৫০*২০) পাপড়ি বিশিষ্ট পদ্ম এবং এটি শীর্ষ সপ্তমচক্র। এটি জ্ঞানের কেন্দ্র। গিঁঠ বাধা শিখা বা টিকি কেন্দ্রটিকে উত্‌সাহিত করে এবং 'ওজঃ' নামে পরিচিত এর সূক্ষ্ম শক্তিকে সংরক্ষিত করে।

রাশি অনুযায়ী গণেশ মন্ত্র পাঠ করুন, সমস্যার সমাধান হবে

গণেশের সাধনা করে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। গণেশের কৃপালাভ করলে সমস্ত কাজেই সিদ্ধিলাভ হয়। পুরাণে বলা হয়েছে যে, গণেশজির ১২টি নামের অসীম মাহাত্ম্য। এই ১২টি নামের সঙ্গে ১২টি রাশি যুক্ত। এখন দেখে নেওয়া যাক আপনার রাশি অনুযায়ী কে কোন মন্ত্র পাঠ করবেন ---

রাশি গণেশজির নাম গণেশজির মন্ত্র
--- ---- ------ ------ ----- ---- ------ --- ----- -----

মেষ -- বক্রতুণ্ড -- ওঁ বক্রতুণ্ডায় নমঃ

বৃষ -- একদন্ত  -- ওঁ একদন্তায় নমঃ

মিথুন -- কৃষ্ণপিঙ্গাক্ষ -- ওঁ কৃষ্ণপিঙ্গাক্ষায় নমঃ

কর্কট -- গজবক্ত্র -- ওঁ গজবক্ত্রায় নমঃ

সিংহ -- লম্বোদর -- ওঁ লম্বোদরায় নমঃ

কন্যা -- বিকট -- ওঁ বিকটায় নমঃ

তুলা -- বিঘ্নরাজেন্দ্র -- ওঁ বিঘ্নরাজেন্দ্রায় নমঃ

বৃশ্চিক -- ধূম্রবর্ণ -- ওঁ ধূম্রবর্ণায় নমঃ

ধনু --  মহোদর -- ওঁ মহোদরায় নমঃ

মকর -- বিনায়ক -- ওঁ বিনায়কায় নমঃ

কুম্ভ -- গণপতি -- ওঁ গণপতয়ে নমঃ

মীন -- গজানন -- ওঁ গজাননায় নমঃ

ক্রিয়াটি কী ভাবে সম্পন্ন করবেন --- প্রথমে শ্রী গণেশের পূজা করুন। তারপর প্রতি দিন প্রথমে উপরে লেখা ১২টি গণেশ-মন্ত্র এক বার করে পাঠ করুন। তার পর আপনি আপনার রাশি অনুসারে গণেশজির মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন। ভক্তিভরে এই ভাবে জপ করলে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।




গণেশের ধ্যান –

“খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং
প্রস্যন্দন্মদ্গন্ধলুব্ধমধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্।
দন্তাঘাতবিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দূরশোভাকরং
বন্দে শৈলসুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।”

------- অর্থাৎ, “যিনি খর্বাকৃতি, স্থূলশরীর, লম্বোদর, গজেন্দ্রবদন অথচ সুন্দর; বদন হইতে নিঃসৃত মদগন্ধে প্রলুব্ধ ভ্রমরসমূহের দ্বারা যাঁহার গণ্ডস্থল ব্যাকুলিত; যিনি দন্তাঘাতে শত্রুর দেহ বিদারিত করিয়া তাহার দন্ত দ্বারা নিজ দেহে সিন্দূরের শোভা ধারণ করিয়াছেন; সেই পার্বতীপুত্র সিদ্ধিদাতা ও কামদাতা গণপতিকে বন্দনা করি।”

গণেশের প্রণামমন্ত্র –

"একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননং।
বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।।"

--------- অর্থাৎ, “যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।”

গণেশের প্রার্থনামন্ত্র –

দেবেন্দ্রমৌলিমন্দারমকরন্দকণারুণাঃ।
বিঘ্নং হরন্তু হেরম্বচরণাম্বুজরেণবঃ।।

---------- অর্থাৎ, “দেবরাজ ইন্দ্রের মস্তকে বিরাজিত মন্দারপুষ্পের পরাগসমূহের দ্বারা রক্তিম হেরম্বের পাদপদ্মের রেণুসমূহ আমার বিঘ্নহরণ 

গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছে

গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত মোট ৩ টি শ্লোক রয়েছে। এই তিনটি শ্লোক ছাড়াও অনেকেই আরো ১ টি শ্লোক নিয়ে সেটাকে খাদ্য সম্পর্কিত স্থানে নিয়ে যায়। যদিও সেই শ্লোকটির সাথে মানুষের খাদ্যের কোন সম্পর্ক নেই। আবার ইসকনের গীতা অর্থাৎ গীতা যথাযথতে খাদ্য সম্পর্কিত শ্লোক পাওয়া যায় মোট ৫ টি! সেটা একটু পর বুঝিয়ে বলছি। প্রথমেই মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত ৩ টি শ্লোকে নজর দেই। শ্রী কৃষ্ণ মানুষের খাদ্য সম্পর্কে বলেছেন ১৭ তম অধ্যায়ে। এই অধ্যায়টি শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ। মানুষ মোট তিন ধরণের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। তাদের শ্রদ্ধা তিন ধরণের হয়ে থাকে। সেই তিন ধরণের শ্রদ্ধা নিয়েই এই অধ্যায়। সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক।
মানুষের খাদ্যকেও গীতার ১৭/৮; ১৭/৯; ১৭/১০ এই শ্লোক গুলোতে খাদ্য আলোচনা করেছেন। সেখানে খাবারকে সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। মানুষের চরিত্রকেও সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। যে যেমন চরিত্রের সে তেমন আহার পছন্দ করেন। এমনটাই বলা হয়েছে শ্লোক গুলোতে। যেমন সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনা করতে গিয়ে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন,
‘‘যে সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম সেই গুলো সাত্ত্বিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
রাজসিক খাবারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,
‘‘তিক্ত, অম্ল, অতি উষ্ণ, অতিলবণাক্ত... সেগুলো রাজসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
তামসিকের বর্ণনায় বলেছেন,
‘‘দূর্গন্ধময়, রসহীন, বাসী, উচ্ছিষ্ট.... সেগুলো তামসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
লক্ষ্যকরুণ, এখানে কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ খাবার নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা করেনি। বলা হয়েছে মানুষের চরিত্র অনুযায়ী সেই সকল খাদ্য তাদের প্রিয় হয়। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। গীতায় শ্রী কৃষ্ণ সকল কর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। এখন সকল জ্ঞান অনুধাবন করে আপনি নিজ ইচ্ছামত কার্য সম্পন্ন করবেন নিজের উপলব্ধির উপর নির্ভর করে। গীতা জ্ঞান অনুধাবন করে বুঝা যায় সকল কিছুতেই সাত্ত্বিক ভাব বজায় রেখে চলতে হয়, সাত্ত্বিক খাবার খেতে হয়। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে সাত্ত্বিক খাবার কেন ? এর কারণটা সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনায় খুব ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে
সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম। এখন এই সাত্ত্বিক খাবার খোঁজতে গেলে প্রথম আসবে সুষম এবং প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। কারণ অনুভবে দেখা যায় আমেরিকান, ইউরোপিয়ানরা বুদ্ধিবিকাশ ও জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তাদের প্রধান খাদ্য প্রোটিন জাতীয়। গমে ৯৫% আমিষ/প্রোটিন থাকে। মাংস, ডিম ইত্যাদি তাদের প্রধান খাবার। দুধ সুষম খাদ্য, এটা কারো অজানা নয়। এই দুধে ৩/৪% প্রোটিন রয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় বলা প্রয়োজন। যেকোন খাদ্যই সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। এই উদাহরণ দিতে আমরা দুধকে নির্বাচন করতে পারি। দুধ সাত্ত্বিক খাদ্য। কারণ সাত্ত্বিক সূত্র অনুসারে এটি প্রথম স্থানে। এবার এই দুধ যদি আপনি অতি উষ্ণ ভাবে গ্রহন করেন তাহলে সেটি রাজসিকে পরিণত হচ্ছে। আবার এই দুধ যদি আপনি একসপ্তাহ খোলা স্থানে রেখে দিয়ে তারপর দূর্গন্ধযুক্ত ভাবে পান করেন তাহলে সেটি তামসিক খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। ধরুন আপনি উদ্ভিদ দিয়ে শাখ বা তরকারী রান্না করছেন সেটি সাত্ত্বিক খাবার। কিন্তু লবন দিলেন অধিক মাত্রায়। এখন কিন্তু এটি রাজসিক। আবার এই তরকারি উচ্ছিষ্ট করে যদি খেয়ে নেন তাহলে নিশ্চই তামসিক হয়ে যাচ্ছে। আবার ধরুন, আমদের প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা ভাত খেয়ে সুস্থ থাকি। কিন্তু যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তারা কিন্তু ভাত খেয়ে অসুস্থ অনুভব করবে। অর্থাৎ আমাদের সাত্ত্বিক ভাত তাদের কাছে রাজসিক হিসেবে পরিণত হচ্ছে। গীতা সূত্র অনুসারে মিলিয়ে নিবেন। যাইহোক, তাহলে বুঝা গেল যেকোন খাবার সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। স্থান কাল হিসেবে আপনি কিভাবে সেটা গ্রহন করছেন সেটিই আলোচ্য বিষয়।

কিন্তু সনাতন সমাজের অনেকেই খাদ্যের এই ৩ শ্লোক গুলোর উর্ধে গিয়ে একটি শ্লোকের ব্যখ্যা দিয়ে বলেন ভগবান বলেছে উদ্ভিদ অর্থাৎ নিরামিষ আহার করার জন্য। প্রথমেই এখানে একটি কথা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন যে, উদ্ভিদ নিরামিষ নয়। প্রোটিনের দুটি ভাগ। একটি প্রানিজ অন্যটি উদ্ভিজ্জ। তাই উদ্ভিদ মানেই আমিষ বিহিন হবে এটা মূর্খের প্রলাপ। আমরা গম খাই, শাখ সবজী খাই আমিষ বিহিন হিসেবে কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে প্রায় সকল খাদ্যেই আমিষের উপস্থিতি আছে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে এই আমিষ নিরামিষ ভাগ হলো কিভাবে ? যদি ভগবান বলে থাকেন ‘আমাকে পত্র পুষ্প জল নিবেদন করে গ্রহন করো তাহলে আপনারা এটা বলুন যে উদ্ভিদ অর্থাৎ লতাপাতা জল খাওয়ার জন্য। সেখানে নিরামিষ নাম দিয়ে দেওয়াটা কি মূর্খতারূপ নয় ? আমার জানা মতে আমিষ নেই এমন খাদ্য হলো পিয়াজ আর রসুন। যদি নিরামিষের কথাই বলেন তাহলে তো পিয়াজ রসুন খাওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ এগুলোতে আমিষের ছিটে ফোটাও নেই। এখন আবার আপনারা এখানে নিরামিষের কথা বলবেন না। এখন বলবেন, পিয়াজ রাজসিক খাবার আর রসুন তামসিক খাবার। যদি রাজসিক আর তামসিক হিসেবেই চলেন তাহলে আমিষ নিরামিষ কোথা থেকে নিয়েছেন ? বৈদিক কোন গ্রন্থেই আমি এই আমিষ নিরামিষ শব্দ পাইনি। যাইহোক, যে শ্লোকটির কথা বলছিলাম সেটি গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২৬ তম শ্লোক।
এই শ্লোকের বাংলা অর্থ হলো, ‘‘যিনি আমাকে ভক্তিপূর্বক পত্র, পুষ্প, ফল, জল অর্পণ করেন, মন থেকে প্রযত্নশীল সেই ভক্তের ঐসব সামগ্রী আমি গ্রহন করি’’। ধারণা করা হয় এই শ্লোক থেকেই মূলত নিরামিষ খাওয়ার নিয়মটি এসেছে। শ্লোকটি ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন। প্রথমে বলা হয়েছে যিনি ভক্তিপূর্বক..., শেষের দিকে বলা হয়েছে মন থেকে প্রযত্নশীল। অর্থাৎ আপনি ভগবানকে পত্র, পুষ্প, ফল, জল দিলেই হবে না। সেই সাথে প্রথমেই ভক্তিকে জাগ্রত করতে হবে এবং মন থেকে প্রযত্নশীল হতে হবে। তবেই ভগবান সেটি গ্রহন করবেন। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। ভগবান কি গ্রহন করেন ? কি চায় ভগবান আমাদের কাছে ?
ফুল ফল ? খাওয়া দাওয়া ? নাকি ভক্তের ভক্তি ?? পুরাণ থেকে জানা যায় মহাকালী পরমেশ্বরী ‘মাতঙ্গী’ রূপে এক চণ্ডালিনী ভক্তের এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন। তাহলে কি আমরা বুঝব পরমেশ্বরী এঁটো খাবার পছন্দ করেন ? চিন্তা করুণ, উনি এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন নাকি ভক্তের ভক্তি গ্রহন করেছিলেন ?
মহাভারত থেকে জানা যায়, সঞ্চয়ের স্ত্রী ছিলেন গোবিন্দ ভক্ত। গোবিন্দ যখন উনার গৃহে গিয়েছিলেন তখন উনি এতটাই আবেগপূর্ণ হয়ে গেলেন যে উনি কলা দিতে গিয়ে কলা না দিয়ে কলার খোসা দিয়েছিলেন। আর গোবিন্দ সেই খোসাটুকুই খেয়ে নিয়েছিলেন পরম তৃপ্তিতে! এখন এই ঘঠনা থেকে কি আমরা বুঝে যাব গোবিন্দ কলার খোসা ভালোবাসে ? না। ভগবান আমাদের কাছে কিছু খেতে চান না। উনি আমাদের কাছে ভক্তি চাইছেন। ভক্তের ভক্তিই উনার কাছে পরম চাওয়া। এই বিষয়টা আরো পরিষ্কার হবে যদি আপনি সম্পূর্ণ নবম অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন। নবম অধ্যায়টি রাজগুহ্য যোগ। এই সম্পূর্ণ অধ্যায়ে ভগবান শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে ভক্তির উদয় করতে হয়। কিভাবে ভক্তির মাধ্যমে ভগবান লাভ করা যায় সেই শিক্ষাই শ্রী কৃষ্ণ দিয়েছেন। তাই অকপটে বলা যায় মানুষের খাবার নিয়ে এই অধ্যায়ে শ্রী কৃষ্ণ কোন আলোচনা করেনি। তাছাড়া গীতায় একই প্রসঙ্গ কখনোই দুই অধ্যায়ে বা বারংবার বলা হয়নি।
এই হলো মোট চারটি শ্লোক। এবার ইসকনের গীতায় এই চারটি শ্লোক ছাড়াও মানুষরের খাদ্য সম্পর্কি বাড়তি যে শ্লোকটি পাওয়া যায় সেটি ৩য় অধ্যায়ে ১৪ তম শ্লোকের প্রথম লাইন। এই শ্লোকে অন্নের কথা বলা হয়েছে। চলুন শ্লোকটির প্রথম লাইনটা অর্থ সহ ভালো ভাবে দেখে আসি।
‘‘অন্নদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদন্নসম্ভবঃ’’
শব্দার্থঃ অন্নদ্ = অন্ন থেকে, ভবন্তি = উৎপন্ন হয়,
ভূতানি = প্রাণী বা জড় দেহ, পর্জন্যাদ = বৃষ্টি থেকে। অন্ন = অন্ন, সম্ভবঃ = উৎপন্ন হয়।
প্রকৃত অনুবাদ = বৃষ্টি থেকে অন্ন উৎপন্ন হয়। অন্ন থেকে প্রাণী উৎপন্ন।
এখন এই শ্লোক থেকে গীতা যথাযথ অর্থাৎ ইসকনের গীতা অনুবাদ লিখেছে, ‘‘অন্ন খেয়ে প্রাণীগন জীবন ধারণ করে।’’
উনারা এই অন্ন খেয়ে জীবন ধারণ কোথায় পেয়েছেন সেটা উনারাই জানেন।
তো, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আপনি কেমন আহার করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত। তবে অবশ্যই চেস্টা করবেন সাত্ত্বিক আহার গ্রহন করার জন্য। অর্থাৎ, শরিরের সম্পূর্ণ সুস্থতা, মেধা, জ্ঞান বৃদ্ধি হয় এমন খাদ্য গ্রহন করুন।

Monday, September 2, 2019

শিব লিঙ্গ নিয়ে বিস্তারিত

 আজ যে পোস্টটি করতে চলেছি, আশা করি এ বিষয়ে বর্তমানকালে বা তার আগে বাণেশ্বর শিবলিঙ্গ নিয়ে এমন প্রামাণ্য দলিল আর কোথাও পাওয়া যায় নি। বহু আলোচিত বিভিন্ন প্রকার লিঙ্গ সম্বন্ধে বহু কিংবদন্তী শুনলেও কেউই এ বিষয়ে যথার্থ আলোকপাত করেননি বলেই আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। তাই এই বিষয়ে লিখতে বসা।

শিবলিঙ্গ দু’প্রকার-অকৃত্রিম ও কৃত্রিম। স্বয়ম্ভূলিঙ্গ, বাণলিঙ্গ প্রভৃতিকে অকৃত্রিম লিঙ্গ বলে। ধাতু মাটি পাথর দিয়ে গড়া লিঙ্গকে বলে কৃত্রিম লিঙ্গ বা ভৌব লিঙ্গ। যে লিঙ্গের মূল পাওয়া যায় না বা স্থানান্তরিত করা যায় না তাকে বলে অনাদিলিঙ্গ। এছাড়া আর এক জাতীয় লিঙ্গ কে বলা হয় জ্যোতির্লিঙ্গ যা স্বয়ং মহাদেব নিজ থেকে প্রকট হয়ে বলেছেন এই জ্যতির্লিঙ্গগুলোতে এই কল্পে উনি সদা বিরাজমান।
ভারতবর্ষে জ্যোতির্লিঙ্গ আছে মোট বারোটি। মহাকালেশ্বর, সোমনাথ, ওঙ্কারেশ্বর, বৈজনাথ (বৈদ্যনাথ), নাগনাথ, রামেশ্বর, বিশ্বনাথ, ঘৃষ্ণেশ্বর, কেদারনাথ, ভীমাশঙ্কর, ত্র্যম্বকেশ্বর ও মল্লিকার্জুন – শিবপুরাণে উল্লিখিত এই জ্যোতির্লিঙ্গগুলি সমধিক আদৃত ও প্রসিদ্ধ।
উক্ত শিবলিঙ্গগুলি স্বয়ম্ভূ ও জ্যোতির্লিঙ্গ। অকৃত্রিম লিঙ্গও বটে। তবে জ্যোতির্লিঙ্গ ঠিক কী বস্তু তা বলা শক্ত। প্রলয় পয়োধিজলে যে লিঙ্গের আবির্ভাব হয় তা জ্যোতির্লিঙ্গ। আমার বিশ্বাস, ওই লিঙ্গের শক্তি যে যে অনাদিলিঙ্গে সন্নিবিষ্ট আছে, সেগুলিই জ্যোতির্লিঙ্গ।

মহানির্বাণতন্ত্রে স্বয়ং শিব পার্বতীকে বলেছেন, ‘দেবী! যে ব্যক্তি আগে আমার লিঙ্গের অর্চনা না করে অন্য দেবতার পুজো করে, তার পুজো কোনও দেবতাই গ্রহণ করেন না।’…

এবার মহানির্বাণতন্ত্রে শিলা ধাতু মাটি প্রভৃতি দিয়ে নির্মিত কৃত্রিম শিবলিঙ্গের কথা বলা হয়েছে। এই ধরণের কৃত্রিম লিঙ্গ আছে অসংখ্য। তার মধ্যে বিশেষ বিশেষ কতগুলি দ্রব্য দিয়ে নির্মিত শিবলিঙ্গের বিবরণ ও ফললাভের কথাই বলি।

পাথরে নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে মোক্ষলাভ ও আনুষঙ্গিক ভোগলাভ হয়ে থাকে। পার্থিব লিঙ্গ পুজো করলেও ভোগলাভ ও আনুষঙ্গিক মুক্তিলাভ হতে পারে। দারুময় লিঙ্গ ও বিল্ব-নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলেও ওই একই ফল হয়। সোনায় নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে লক্ষ্মী স্থিরতরা হন ও রাজ্যপ্রাপ্তি হয়। তামার তৈরি লিঙ্গ পুজোয় সন্তান বৃদ্ধি এবং রঙ্গ-নির্মিত (রঞ্জকদ্রব্য অর্থাৎ রাং ধাতু) শিবলিঙ্গ পুজো করলে পরমায়ু বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

পদ্মপুরাণের কথায়, পারদের শিবলিঙ্গ পুজোয় অতুল ঐশ্বর্য, মুক্তার লিঙ্গ পুজো করলে সৌভাগ্য, চন্দ্রকান্তমণি (Moon Stone) দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে দীর্ঘায়ু লাভ হয়। সমস্ত কাম্য বস্তু লাভ করতে পারা যায় সুবর্ণময় লিঙ্গ পুজো করলে।

জাগতিক সমস্ত কামনা পূর্ণ হয় হিরে, স্ফটিক, গুড় অন্ন প্রভৃতি দিয়ে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করে পুজো করলে। তবে গুড় বা অন্ন দিয়ে সদ্যনির্মিত লিঙ্গই পুজো করা বিধেয়, পরদিন তা বাসি হবে, পুজো করা যাবে না।

লক্ষ্মণ সমুচ্ছয়ে কথিত আছে, গন্ধলিঙ্গ পুজো করলে মানুষের সৌভাগ্য বৃদ্ধি হয়। গরুড় পুরাণের কথায়, দু-ভাগ কস্তূরী, চারভাগ চন্দন, তিনভাগ কুমকুম (জাফরান), চারভাগ কর্পূর, এগুলো সব একত্র করে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করলে তাঁকে গন্ধলিঙ্গ বলে। এই লিঙ্গ পুজো করলে মানুষ বন্ধুদের শিবসাযুজ্য হয় (পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার সংযোগ বা অভেদ, একত্ব বুঝায়)।

মুক্তিলাভ হয়ে থাকে পুষ্পময় লিঙ্গ পুজো করলে। পলি মাটি দিয়ে নির্মিত শিবলিঙ্গে বিবিধ কামনা সিদ্ধি, লবণের লিঙ্গে পুজো করলে সুখ ও সৌভাগ্যলাভ হয়। পাশ-নির্মিত (রজ্জু বা দড়ি) লিঙ্গ পুজো করলে উচাটন কার্য হয়ে থাকে। মূল দিয়ে (বৃক্ষাদির গোড়ার নিচের অংশবিশেষ, শিকড়) তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে শত্রুক্ষয় হয়।

ধুলো দিয়ে নির্মিত শিবলিঙ্গ ভক্তিপূর্বক কেউ পুজো করলে তিনি বিদ্যাধর পদ (স্বর্গের গায়করূপে দেবযোনিবিশেষ) প্রাপ্ত হয়ে পরে শিবসদৃশ হন। মানুষ লক্ষ্মীলাভ করতে পারে গোময় (গোবর) দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে। তবে গোময় স্বচ্ছ অর্থাৎ শূন্যে ধরা (ভূমিতে পতনরহিত) ও কপিলা গাভির হতে হবে। যব, গোধূম (গম), ধান দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজোয় লক্ষ্মীলাভ, পুষ্টি ও বংশবৃদ্ধি হয়। সিতাখণ্ড (মধুজাত শর্করা) নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে আরোগ্যলাভ, লবণ হরিতাল (পারদযুক্ত পীতবর্ণ বিষাক্ত ধাতব পদার্থ বিশেষ) শুণ্ঠী পিপ্পলী ও মরিচ মিশিয়ে তৈরি লিঙ্গ পুজো করলে বশীকরণ সিদ্ধ হয়।

গব্যঘৃতের লিঙ্গে বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, লবণ নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি হয়। তিল পিষে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজোয় সমস্ত কামনা সিদ্ধ, তুষের লিঙ্গে মারণ কার্য, ভস্ম দিয়ে তৈরি লিঙ্গ পুজো করলে যাবতীয় অভিপ্রেত সিদ্ধ হয়। গুড়ের শিবলিঙ্গে প্রীতি বৃদ্ধি, গন্ধদ্রব্য (চন্দনাদি যে কোনও গন্ধদ্রব্য) দ্বারা নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে প্রভূত পরিমাণে গুণশালী হতে পারা যায়।

শর্করায় তৈরি লিঙ্গ পুজোয় শত্রু সংহার হয়ে থাকে। কাঠের তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে দারিদ্র আসে। দই দিয়ে তৈরি করা শিবলিঙ্গ পুজোয় কীর্তি লক্ষ্মী ও সুখসৌভাগ্য বৃদ্ধি হয়। ধানের লিঙ্গ পুজোয় ধানলাভ, ফলের শিবলিঙ্গ পুজোয় ফললাভ, ফুলের শিবলিঙ্গ পুজো করলে দিব্যভোগ ও পরমায়ু লাভ হয়।

ধাত্রীফলে নির্মিত লিঙ্গ পুজো করলে মুক্তিলাভ, ননী দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজোয় কীর্তি ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি, দূর্বাকাণ্ড দিয়ে প্রস্তুত লিঙ্গ পুজো করলে নিবারণ হয় অপমৃত্যুর। কর্পূরের শিবলিঙ্গ তৈরি করে পুজো করলে ভোগ ও মোক্ষলাভ হয়।

নবরত্নের মধ্যে মুক্তা নির্মিত লিঙ্গ পুজোয় সৌভাগ্য, স্ফটিক লিঙ্গে সর্বকামনাসিদ্ধি হয়। সোনার শিবলিঙ্গ তৈরি করে পুজো করলে অতুল ঐশ্বর্যভোগ, কাঁসা ও পিতল মিশ্রিত শিবলিঙ্গে শত্রুবিনাশ, শুধু কাঁসার তৈরি শিবলিঙ্গে কীর্তিলাভ, শুধু পিতলের লিঙ্গে ভোগ ও মোক্ষলাভ, রাং সিসা কিংবা লোহার লিঙ্গে শত্রুনাশ এবং অষ্টধাতু নির্মিত শিবলিঙ্গ পুজো করলে সমস্ত কামনাসিদ্ধি হয়। অষ্টধাতুর লিঙ্গ পুজোয় নিবারণ কুষ্ঠরোগ। সোনা রুপো ও তামা মিশিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ পুজো করলে বিজ্ঞান বিষয়ে সিদ্ধিলাভ হয়ে থাকে।

যাদের ধনাকাঙ্ক্ষা আছে, তাদের কর্তব্য গন্ধপুষ্প নির্মিত লিঙ্গ, অন্নাদি দ্বারা নির্মিত অথবা কস্তূরী দ্বারা নির্মিত লিঙ্গ পুজো করা, এ কথা বলা হয়েছে কালোত্তরে।

মাতৃকাভেদ তন্ত্রে দ্বাদশ পটলে আছে, বালুকাময় শিবলিঙ্গ পুজো করলে কামনাসিদ্ধি, গোময় শিবলিঙ্গ পুজো করলে শত্রুবিনাশ হয়। উক্ত শিবলিঙ্গের মাহাত্ম্য এমনই, এতে ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষলাভ হয়ে থাকে।

‘শিবধর্ম’ নামক ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, ব্রহ্মা নিয়মিত শিলাময় লিঙ্গ পুজো করেন। এ জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রহ্মত্বপদ প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। ভগবান বিষ্ণু নিয়ত পুজো করেন ইন্দ্রনীলময় শিবলিঙ্গ। তার প্রভাবেই তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন সর্ব-পালকত্বরূপ বিষ্ণুত্বপদ। নিয়ত নির্মল স্ফটিকময় শিবলিঙ্গ পুজো করে থাকেন বরুণ। এ জন্যই তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন তেজোবল সমন্বিত বরুণত্বপদ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা শিবলিঙ্গে পূজা করতেন এবং মহাভারতে শ্রীষ্ণের পরিচয় দিতে গিয়ে স্বয়ং ব্যাস দেব  বলেছেনঃ→
"স এস রুদ্রভক্তশ্চ কেশবো রুদ্রসম্ভবঃ।
সর্ব্বরুপং ভবং জ্ঞাত্বা লিঙ্গে যো আর্চ্চয়ত প্রভুম্।।"
অর্থাৎঃ→ যিনি জগদীশ্বর শিব কে সর্ব্বময় জানিয়া তাঁহার লিঙ্গে পূজা করিতেন, তিনি শিবাংশ জাত ও শিব ভক্ত সেই নারয়ণ এই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ।।
(মহাভারত,,দ্রোণ পর্ব্ব-১৬৯/৬২)

যে সব শিবলিঙ্গের কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে যে কোনও একটি শিবলিঙ্গ পুজো করা সকলেরই কর্তব্য। লিঙ্গার্চনতন্ত্রে প্রথম পটলের কথা, সমস্ত পুজোর মধ্যে লিঙ্গ পুজোই শ্রেষ্ঠ ও মুক্তিদায়ক।

দেবাদিদেব সদাশিব পার্বতীকে বলেছেন, ‘দেবী, অচল শিবলিঙ্গ স্থাপনের মাহাত্ম্য তোমার কাছে বেশি আর কী বলব; এই শিবলিঙ্গ স্থাপন করলে মানুষ সমস্ত মহাপাতকাদি থেকে বিমুক্ত হয়ে পরমপদ লাভ করে’।






 বাণলিঙ্গ
ছবি : তিনটি আসল বাণলিঙ্গ
                                                    ছবি : তিনটি আসল বাণলিঙ্গ


বাণেশ্বর শিবলিঙ্গের আদি কাহিনী
------------------------------------------------------
শিবক্ষেত্র নর্মদাতীরে পরম শিবভক্ত বাণাসুর কঠোর তপস্যা করে শিবকৃপা লাভ করেন। তিনি প্রতিদিন সহস্তে সোয়া একলক্ষ মাটির শিবলিঙ্গ গড়ে বহু বছর পূজা করে এইসব মাটির শিবলিঙ্গ নর্মদা নদীজলে বিসর্জন করেন। তাঁর পূজায় মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে বর দেন যে, তাঁর পূজিত এই সকল শিবলিঙ্গ পৃথিবীতে বাণলিঙ্গ বা বাণেশ্বর শিবলিঙ্গ নামে বিখ্যাত হবে। ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হবে এইসব শিবলিঙ্গ। এই শিবলিঙ্গ একবার মাত্র পূজিত হলেই সহস্রবার পূজার ফলদান করে।

বাণলিঙ্গ কোথায় কিভাবে পাওয়া যায়
---------------------------------------------------------
গুজরাটে নর্মদাতীরে নর্মদার উত্তর তটে 'করোদ' বলে এক গ্রামে বাণাসুরের তপস্যার স্থান অবস্থিত। এইখানে নর্মদা নদীর মধ্যে জলের ভিতরে এক গুপ্ত কুণ্ড আছে যার নাম বাণকুণ্ড, এই কুণ্ডেই বাণাসুরের নিজহাতে পূজা করা সমস্ত মাটির শিবলিঙ্গ জলের মধ্যে ডুবে রয়েছে। কমপক্ষে অন্তত আঠারো বছর পর যখন বৈশাখ মাস মলমাস হয়, তখন আপনা আপনি এই কুণ্ড দৃষ্টিগোচর হয়। তখন বিশেষ তিথিতে মাত্র কয়েক দিনের জন্য কোটি কোটি বাণলিঙ্গ নর্মদার স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশে ছড়িয়ে যায়। তখন এখানে বিরাট মেলা বসে ও বহু ভক্ত সমাগম হয়। আবার তিথি ফুরালেই এই কুণ্ড নর্মদা মায়ের বুকের মধ্যে অন্তর্লীন হয়ে যায়। এই সময়ই বাণলিঙ্গ সংগ্রহ করতে হয়।

বাণলিঙ্গের আশ্চর্য গুণ
------------------------------------
এই শিবলিঙ্গ সম্পূর্ণ মাটির তৈরী, হাতে নিয়ে দেখলে মনে হয় যেন মাটি দিয়ে তৈরী করে রোদে শোকানো হয়েছে। শুকনো মাটি যেমন জল শোষণ করে তেমনি বাণলিঙ্গে এক ফোঁটা জল দিলে সাথে সাথে শুষে নেয়। বাণলিঙ্গ ঘষলে গুঁড়ো গুঁড়ো মাটি ঝরে পরে। আরো আশ্চর্য ব্যাপার, হাজার হাজার বছর জলের নীচে থাকলেও বাণলিঙ্গ জলে দ্রবীভূত হয় না।
আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পরীক্ষা করে জানিয়েছে এগুলো প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয় নি, বরং বহু প্রাচীনকালে এগুলো মানুষের হাতে তৈরী করা, যা কালক্রমে আংশিক ভাবে পাললিক শিলায় পরিণত হয়েছে।

পরিতাপের বিষয়
----------------------------
সর্দার সরোবর বাঁধের জন্য নর্মদার বহু তীর্থের সর্বনাশ হয়েছে। কৃত্রিমভাবে জল সরবরাহের জন্য হয়তো ভবিষ্যতে কোনদিনই আর এই কুণ্ড দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।
অনেক বিখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত ধাবড়ীকুণ্ডের নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গ এমনভাবে বাণেশ্বর নামে বহুল প্রচলিত হয়ে গেছে যে, কি যে সত্য আর কি মিথ্যা তা 'দশচক্রে ভগবান ভূত' প্রবাদের মতই সত্য হবার উপক্রম। আজকাল পশ্চিমা বিভিন্ন ধর্ম ব্যাবসায়ীদের আগমন ঘটেছে। পরিতাপের বিষয় এদের হিন্দুরা মাথায় নিয়ে বসে আছে। আর এরাই বলছে শিবলিঙ্গ পূজা করা যাবে না বা গৃহে শিবলিঙ্গ রাখা যায় না, শিব হলেন দধি আর আমাদের দেবতা হলেন দুধ , শিব পরম বৈষ্ণব ইত্যাদি আসুরিক কথা। আদতে এরা মহাপাপী আর আমাদের দিয়েও পাপ করাচ্ছে। তাই সতর্ক থাকুন। 
হর হর মহাদেব! 
জয় ভোলেনাথ। 

Saturday, August 17, 2019

আধুনিক বনাম প্রাচীন ICBM ক্ষেপণাস্ত্র

আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্র
============================
আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্র বা Intercontinental ballistic missile (ICBM) হলো লেসার রশ্মি দ্বারা পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত পরমাণু অস্ত্র সংবহনকারী দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। ন্যূনতম ৫৫০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্ব অতিক্রমকারী পরমাণু অস্ত্র সংবহনকারী ক্ষেপণাস্ত্রকেই ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেসটিক ক্ষেপণাস্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়। শত্রু পক্ষের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একসাথে নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হানবার জন্য আধুনিককালের আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে একাধিক থার্মো নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। আধুনিক আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির কর্মসূচি অনুসারে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রক শুধুমাত্র একটিই ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে স্বতন্ত্রভাবে শত্রুপক্ষের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে একসাথে পরমাণু হামলা চালাতে সক্ষম। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রক একবার নিজের কম্পিউটার স্ক্রিনে লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করলেই সেটি শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে ধাবিত হয়ে মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পরমাণু বিস্ফোরণ করে গুঁড়িয়ে দেবে চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তুকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাট্রিয়ট অ্যান্টি ICBM মিসাইল ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া নিক্ষিপ্ত ICBM কে নিষ্ক্রিয় করবার জন্য এই মুহূর্তে আর কোন সামরিক অস্ত্র আবিষ্কৃত হয়নি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, ভারত আর উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রাগারেই মজুদ রয়েছে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্র। বলাই বাহুল্য চিনের সহায়তা গ্রহণ করে উত্তর কোরিয়া ICBM নির্মাণ করতে সফল হয়েছে আর এই মুহূর্তে চিনের নিকট থেকে ICBM ক্রয় করতে ব্যাস্ত পাকিস্তান।
পূর্বে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মারন ক্ষমতা অনেকটাই সীমিত ছিল এবং এই ধরনের দূরপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মূলত শত্রুপক্ষের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কোন মহাগুরুত্বপূর্ণ স্থানকে (যেমন কোন বড় শহর) ধ্বংস করবার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া পূর্বে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি এমন সুরক্ষিত সামরিক স্থানে সংরক্ষিত করা হতো যেখানে সহজে শত্রুপক্ষের সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। শত্রুপক্ষের অনান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র সামরিক স্থানগুলিতে মূলত ফাইটার জেটের সাহায্যেই আক্রমন করা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি আর সেই সাথে আরও সুদৃঢ় হয়েছে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রের আক্রমনের পরিধি। বর্তমান যুগের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের LGM-118 Peacekeeper আর ভারতের অগ্নি ৫ এর মতো ক্ষেপণাস্ত্রগুলি শত্রুপক্ষের অত্যন্ত ক্ষুদ্র লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। ভারত যখন ১৯শে এপ্রিল, ২০১২ সালে প্রথমবারের জন্য অগ্নি ৫ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষামূলক ভাবে উৎক্ষেপণ করে তখন এটির দূরত্ব ছিল মাত্র ৫০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ সামরিক পরিভাষায় অগ্নি ৫ তখনও ICBM এর মর্যাদা পায়নি। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে এটির ষষ্ঠ আর সপ্তম উৎক্ষেপণের পরে এটি সফলতার সাথে ৮০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করে ICBM এর তালিকাভুক্ত হয়। সম্প্রতি ৮০০০ থেকে ১২০০০ কিলোমিটার দূরত্ব সম্পন্ন নতুন অগ্নি ৬ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ শুরু করেছে DRDO। অগ্নি ৬ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগারে আসতে এখনও লেগে যাবে কমকরে ৫-৬ বছর সময়। দুঃখের বিষয় আমেরিকা, রাশিয়া আর চিনের ICBM গুলি ন্যূনতম ১০,০০০ কিলোমিটার থেকে ১৬,০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এমনকি উত্তর কোরিয়ার ICBM KN-08 ১২,০০০ কিলোমিটার আর Hwasong-15 ১৩,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। একুশ শতকের আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ভ্রাম্যমাণ পরিবহনকারী লঞ্চারের সাহায্যে অনায়াসেই এক স্থান থেকে অপর স্থানে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপ করা যায়। এধরনের ভ্রাম্যমাণ লঞ্চারকে Transporter Erector Launchers (TEL) নামে অভিহিত করা হয়।
যদিও বর্তমানে আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রের অস্ত্রভাণ্ডারে ভারত অবশিষ্ট ৪ টি রাষ্ট্রের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে কিন্তু প্রাচীনকালে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে বিশ্বের অন্ত্যতম অগ্রদূত হিসেবে বিবেচিত হতো। রামায়ন আর মহাভারতের বিবরনে রয়েছে ভারতীয় যোদ্ধা আর দেবতাদের দ্বারা অত্যাধুনিক ICBM এর যথেচ্ছ ব্যবহারের বিবরণ। প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের মাটিতে ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু সংবহনকারী ICBM এর নাম হলো ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র, ব্রহ্মাণ্ড অস্ত্র, পাশুপাত অস্ত্র আর ব্রহ্মাস্ত্রের।





ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র
=========
মহাভারতের গাথা অনুসারে ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্র নামধারী পরমাণু সংবহনকারী ক্ষেপণাস্ত্রটি অশ্বত্থমা এবং অর্জুন দুজনে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন। এই ব্রহ্মশীর্ষ অস্ত্রই সম্ভবত পৃথিবীর বুকে ব্যবহৃত প্রথম পরমাণু অস্ত্র, থার্মো নিউক্লিয়ার ফিউশন বোমা সংবহনকারী ICBM। এই সেই অস্ত্র যা কোন রাষ্ট্র বা নগরে একবার নিক্ষেপ করা হলে পরবর্তী দ্বাদশ বর্ষকাল যাবৎ সেই স্থানে আর বৃষ্টি হতো না, আবহাওয়া বিষাক্ত হয়ে উঠতো এবং খরার প্রকোপে পড়তো।
ব্রহ্মাণ্ড অস্ত্র
========
মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী স্বয়ং ব্রহ্মার পঞ্চ মুণ্ডমালা এই অস্ত্রের প্রান্ত হিসাবে ব্যবহার করা হতো। সম্পূর্ণ সৌর জগৎ বা ব্রহ্মাণ্ড এক লহমায় ধ্বংস করে দেবার ক্ষমতা ছিল এই অস্ত্রের। প্রাচীন সনাতন বা হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে ব্রহ্মাণ্ড বলতে ১৪ টি লোককে বোঝানো হয়েছে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে একবার পৃথিবীর বুকে এই ব্রহ্মাণ্ড নামক ICBM ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হলে সাগরের জলরাশি আগ্নেয়গিরির ন্যায় একটি তপ্তকুণ্ডে পরিণত হতো আর হিমালয়ের ন্যায় সুবিশাল পর্বতরাজি শূন্যে উত্থলিত হয়ে ঘূর্ণিয়মান হতো।
পাশুপাত অস্ত্র
==========
মহাভারতে বর্ণিত অস্ত্রভাণ্ডারের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ মারণাস্ত্র হলো পাশুপাত অস্ত্র। মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী এই ICBM ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যবহার করতেন স্বয়ং মহাদেব আর মা কালী। এই অস্ত্র বিশেষ একটি গাণ্ডীবের (ধনুক) সহায়তায় নিক্ষিপ্ত করা হতো। পাশুপাত অস্ত্রটি নিক্ষেপ করবার জন্য প্রয়োজন হতো বিশেষ একটি মন্ত্রের। অস্ত্রটি সজীব করবার জন্য প্রয়োজন হতো ব্যবহারকারীর চোখের রেখার। সমগ্র ধরিত্রীকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত করবার ক্ষমতা ছিল এই পাশুপাত অস্ত্রেরও। মহাদেবের নিকট থেকে বরদান হিসাবে এই মারাত্মক অস্ত্রটি লাভ করেছিলেন ইন্দ্রপুত্র অর্জুন, তবে এর মারণ ক্ষমতার কথা ভেবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কখনও ব্যবহার করেননি এই অস্ত্র। পাশুপাত অস্ত্রের মারণ ক্ষমতার কথা চিন্তা করে কলিযুগে এর অপব্যবহার রুদ্ধ করবার জন্য স্বয়ং মহাদেব লুপ্ত করেছেন এই অস্ত্র নিক্ষেপ করবার বিশেষ গোপন মন্ত্র।
ব্রহ্মাস্ত্র
=====
রামায়ন, মহাভারত আর বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় গাথা অনুসারে ব্রহ্মাস্ত্র নামক পরমাণু অস্ত্র সংবহনকারী ICBM ছিল দেবতাদের দ্বারা ব্যবহার করা সর্বোচ্চ শক্তিশালী মারনাস্ত্র। বিভিন্ন ভারতীয় পুরাণ গাথার বর্ণনা অনুসারে একবার এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হলে আর কোন অস্ত্র দ্বারা সেটিকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব ছিল না। আমেরিকার প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্রের ন্যায় শুধুমাত্র ব্রহ্মদণ্ড ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারাই ব্রহ্মাস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব ছিল। লেসার রশ্মির ন্যায় উন্নত ভিনগ্রহী দেবতাদের দ্বারা আবিষ্কৃত কোন বিশেষ শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়ে একেবারে নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হেনে শত্রুপক্ষের সুবিশাল নগরী থেকে ক্ষুদ্র বস্তুকেও সফলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম ছিল ব্রহ্মাস্ত্র নামক আন্তর্মহাদেশীয় প্রক্ষেপণকারী ক্ষেপণাস্ত্রটি। খুব সম্ভবত পূর্বের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ICBM এর প্রাথমিক সংস্করণ ছিল আর ব্রহ্মাস্ত্র ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের LGM-118 Peacekeeper এর ন্যায় একেবারে তৃতীয় জেনারেশনের অত্যাধুনিক ICBM। রামায়ন আর মহাভারতের বিবরণ অনুযায়ী ব্রহ্মাস্ত্রকেও বিশেষ ধনুকের সাহায্যে অনায়াসেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থান্তরিত করা যেতো। ওই ধরনের বিশেষ ধনুকই একুশ শতকে Transporter Erector Launchers (TEL) নামে সুপরিচিতি লাভ করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে মানবজাতি যখন সবেমাত্র প্রস্তর যুগ অতিক্রম করে তামার তরবারি ব্যবহার করা আর ঘোড়ায় চড়া শিখছে সেই সময় কিভাবে তাঁরা এতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে পারলো ? নাকি তথাকথিত উন্নত ভিনগ্রহী দেবতাদের ব্যবহার করা অস্ত্রগুলি দর্শন করে আর দেবতাদের নিকটেই এসব অস্ত্র পরিচালনার বর্ণনা শুনে রামায়ন আর মহাভারতে এইসব মারাত্মক অস্ত্রের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছিল তৎকালীন মানবজাতি ? প্রশ্ন আরও উঠছে পরবর্তীকালে অখণ্ড ভারতবর্ষের ভূমিতে যখন ঝঞ্ঝার ন্যায় আছড়ে পড়ছে গ্রীক, শক, হুন, তুর্কি আর মোগলদের একের পর এক আক্রমন তখন কেন সেইসব অস্ত্র ব্যবহার করে ভারতবর্ষকে রক্ষা করেননি তৎকালীন ভারতীয় রাজা আর সম্রাটরা ? তাহলে কি পৃথিবীর ভূমিতে নিজেদের স্বার্থ ফুরনোর সাথে সাথে দেবতারা নিজেদের মহাকাশযানে সওয়ার হয়ে সেইসব অস্ত্রশস্ত্র সমেত চিরতরে পাড়ি দিয়েছিলেন সদুর নক্ষত্রলোকে নিজেদের গ্রহে ? সুমেরীয় সভ্যতার আনুনাকিদের বিবরণ কিন্তু সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ফিরে যাবার পূর্বে নিজেদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দেবতারা পৃথিবীর মাটিতে রেখে গিয়েছিলেন অত্যাধুনিক জেনেটিক প্রযুক্তির দ্বারা সৃষ্ট বুদ্ধিমান আর উন্নত এক নতুন মানবজাতিকে যারা একুশ শতকে সফলতার সাথে নির্মাণ করতে পেরেছেন ব্রহ্মাস্ত্রের আধুনিক সংস্করণ লেসার পরিচালিত ICBM ক্ষেপণাস্ত্র। সম্প্রতি নাসার এক বৈজ্ঞানিক হেঁয়ালিপূর্ণ ভাষায় বলেছেন বর্তমান যুগের মানবজাতি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত পৃথিবীর মাটিতে দেবতাদের সম্মুখীন হবার জন্য।

Sunday, May 26, 2019

কে এই করপাত্রীজী? আর গো-রক্ষা???






সালটা 1966, একদিকে ইন্দিরা ও তার কংগ্রেজ সরকারে আসার পর, গো-রক্ষা বিষয়ক পূর্বপ্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মিথ্যায় পর্যবসিত হলো। তৎকালীন প্রসিদ্ধ মহাত্মাদের আশীর্বাদ নেওয়ার সময় গো-রক্ষার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইন্দিরা, তা ক্ষমতায় আসার পর অস্বীকার করলেন। এমত অবস্থায় উত্তাল হয়ে উঠল সন্ত সমাজ। আর বিলম্ব নয়, রামরাজ্য পরিষদ গড়ে তুললেন এক প্রগার পন্ডিত, মহাতপা, নির্বিকল্প সমাধিপদ প্রাপ্ত দশনামি সন্যাসী।। গোরক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্বদাতা সেই সন্তসেনাপতির নেতৃত্বে সর্বপ্রথম গো-রক্ষার দাবিতে সাধু-সন্তরা ঘিরে ফেলল সংসদ-ভবন। ইন্দিরা-কংগ্রেজ তাঁকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য তার চোখের সামনে শতশত গরু ও সন্তকে গুলি করে মেরে রক্তাক্ত করলো ইন্দিরা কংগ্রেজ। ঐ দিনটা ছিল ২০১২ বিক্রমীসন কার্তিকি শুক্ল অষ্টমী বা গোপা অষ্টমী।।সেই সন্তনেতা প্রসিদ্ধমহাত্মা সন্যাসিকেও একাধিকবার নিক্ষেপ করাহল জেলে। শুধু এখানেই থামল না; গেলে দেওয়া হলো তার একটি চোখ।। সেই মহাত্মা সন্ন্যাসীর কথা কি কেউ জানেন?... নাঃ!... 'আমরা যে অপদার্থ বাঙালি', 'ঈগোসেন্ট্রীক হিন্দু কাঙালী'। না জেনেছি না পরোয়া করি গাইজ। শুধু সাধু-সন্ত দেখে টোন-টিটকারি করি। সেকুলার ভন্ড সাধু সুরসুরে সেক্সি কথা বললেই তার পেছন চাটি, তাদের পাপের আখড়ায় পয়সা ঢালি।
আদি শঙ্করাচার্যের প্রতিষ্ঠিত 2500 বছরের পরম্পরার ব্যাসপিঠ গুলির নাম জেনেও কাম কি!! আর ক্লাসের ইতিহাস বইতে আদি শংকরাচর্যের কথা তো নেই!!তাই জানিনা!
অথচ তার দশনামি সম্প্রদায়ের সন্যাসী কেশবভারতী কর্তৃক দীক্ষিত বাঙালি শ্ৰীচৈতন্যের ভাবকেন্দ্রিক বিকৃত ইতিহাস, দশনামি সন্যাসী তোতাপুরী শিষ্য রামকৃষ্ণের অতিরঞ্জিত জীবনপাত সম্পর্কে জানি!ওহ! না না কেশব_ভারতী , তোতা পুরী, দশনামি, দশনামির প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শঙ্কর!! এত দূর জেনে কি হবে? বইতে নেই পরীক্ষাতেও আসেনা।
বৌদ্ধ-চার্বাকদের বৈদিক অদ্বৈতদর্শনের যুক্তিবলে উৎখাত করে যেই আচার্য শংকর ভারতে সনাতন ধর্মের ভিত্তি সুদৃঢ় করেছিল, সনাতনী ছত্র ছায়ায় ফিরিয়ে এনেছিল সর্ব ভৌম সম্রাট শুধনকে ও তার সাথে সহস্র বিপথগামী মানুষকে, সেই শিবকল্পযোগী আদিশঙ্কর যে কে, কিই বা তার কৃতিত্ব, তাই জানিনা।
হায়! ধিক! বাঙালি তোমাদের ধ্বংস আটকায় কে? তোমরা শুধু টাকার গোলাম।।

গোরক্ষা আন্দোলনের এই মহাতপা পন্ডিত বীর সৈনিক সন্যাসী হলেন আদি শঙ্করাচার্য প্রতিষ্ঠিত ব্যাসপিঠ গোবর্ধন মাঠের নির্বিকল্পসমাধিপদ প্রাপ্ত করপাত্রীজী মহারাজ।
 এই মহাত্মা কংগ্রেজ সরকারের সন্ত ও গো-নিধনের পাশবিকতা দেখে অভিশাপ দিয়েছিলেন ইন্দিরাসরকারকে; ঠিক এই গোপা অষ্টমী তিথিতে সেও এই ভাবে ধ্বংস হবে, তাঁর শরীরও একাধিক গুলিতে ঝাঁজরা হবে, তার বংশের বাকিরাও ওই তিথিতেই মরবে এবং তার পরিবারতন্ত্র শেষ হয়ে একদিন একজন সর্বত্যাগী, ভারতের রাষ্ট্রনায়ক হয়ে এসে হিন্দুর অধিকার রক্ষা করবেন। এই মহাতপা শঙ্করপন্থী বীর সন্ন্যাসী করপাত্রীজীর শিষ্য বর্তমান গোবর্ধন মঠ পুরীপিঠাধীশ শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ স্বরস্বতী।
করপাত্রীজীর কৃতিত্বএখানেই শেষ নয়। তিনি রাজনীতি বিষয়ক লিখেছেন বহু বই।। তুলনা মূলক রাষ্ট্রনীতি-সমাজনীতি, রামরাজ্য বনাম মার্ক্সবাদ, উমাপত্তনামের মতন দুর্বোধ্য অসামান্য সংষ্কৃত সংগীত শাস্ত্র-গ্রন্থের প্রথম ভাষ্য দেন, গণিত বিষয়ক গ্রন্থ, এবং রামায়ণ মীমাংসার মতন আরো বেশ কিছু গ্রন্থ তাঁর সুমহান কৃতিত্ব কে উজ্বল করে রেখেছে। দুঃখের বিষয় তার এ সকল কৃতিত্ব ভারতে নয় বিদেশেই বেশি চর্চিত। কংগ্রেজ সরকার তার রচিত বইয়ের ওপরেও ব্যান লাগিয়েছিল। যদিও বর্তমান সরকারের সৌজন্যে মঠ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।

ইন্দিরা কংগ্রেজ পূজ্যপাদ করপাত্রীজীকে শুধু বরংবার হাজত বাস-ই নয়, হাজতে ওনার চোখে গরম শিখ ঢুকিয়ে একটি চোখ গেলে দিয়েছিল।
তবে ব্রহ্মস্থিত মহাতপার অভিশাপ কিন্তু বিফলে যায় না...

✔️একটু মিলিয়ে নিন এবার সঞ্জয় গান্ধী মরলো আকাশ পথে। তিথিটা ছিল (১৯৮০)- গোপা_অষ্টমী।

✔️ ইন্দিরা গান্ধী মরলো আকাশ পথে। তিথি ছিল ( ১৯৮৪)- গোপা_অষ্টমী।

✔️রাজীব গান্ধী মরলো আকাশ পথে। তিথি ছিল (১৯৯১)- গোপা_অষ্টমী।

ওই দিনের পাশবিক নির্ণমতা ও গুরুর প্রতি ঐ রকম পৈশাচিক অত্যাচার সহ্য করেন নি নিশ্চলানন্দ, আজও শংকরমঠ গোবর্ধন ব্যাসপিঠ থেকে ক্রমাগত হিন্দুত্ব রক্ষা, গোমাতার রক্ষার জন্য লড়ে যাচ্ছেন নিশ্চলানন্দ সরস্বতী।।

ভিডিওটি দিলাম কষ্ট করে নষ্ট করার মতো সময় হাতে থাকলে দেখবেন, এই আসা রাখি:-
(করপাত্রী জী রেয়ার ভিডিও ফুটেজ সহ)
Video link:- https://www.youtube.com/watch?v=D5VgSUbw61M

Monday, April 29, 2019

সামুদ্রিক শাস্ত্র অথবা জ্যোতিষ শাস্ত্র

ছয়টি বেদাঙ্গের একটি জ্যোতিষ। প্রাচীনকালে জ্যোতিষ অনুসারে শুভ তিথি অনুযায়ী যজ্ঞ করা হত। জ্যোতিঃ অর্থ আলো। বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র দীপ্তিমান অর্থাৎ এদের জ্যোতি বা আলো রয়েছে। পরবর্তী কালে মানব-জীবনে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব সম্পর্কে চর্চা শুরু হয় এবং সেই সংক্রান্ত জ্ঞান বা বিদ্যাই জ্যোতিষ বিজ্ঞান বলে পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করে। ভৃগু, পরাশর, জৈমিনি আদি প্রাচীন ঋষিগণকে জ্যোতিষ বিজ্ঞানের প্রবর্তক বলা চলে। তাঁরা জ্যোতিষবিদ্যা বিভিন্ন অঙ্গ বা শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁরা উপলব্ধি করেছেন যে, পৃথিবীর নিকটবর্তী নয়টি গ্রহ, বারটি রাশি ও সাতাশটি নক্ষত্র মানুষের জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং এই প্রভাবই ফলিত জ্যোতিষ বিজ্ঞানের মুখ্য আলোচ্য বিষয়। জাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় এই সব গ্রহ, রাশি ও নক্ষত্রের অবস্থান অনুসারে জাতকের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয়। জ্যোতিষ বিজ্ঞান বলে গ্রহগণ নিছক জড় বস্তু নয়। জ্যোতিষ শান্ত্রে গ্রহগণকে দেবতা জ্ঞান করা হয়েছে -- 'গ্রহরূপী জনার্দনঃ'। গ্রহগণ সর্বদা ঘুর্ণায়মান। সনাতনী জ্যোতিষমতে প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন গ্রহ দ্বারা প্রভাবিত। গ্রহেরা ঘুরতে ঘুরতে যখন শুভ অবস্থানে থাকে তখন জাতকের শুভ হয় এবং গ্রহগণ যখন অশুভ অবস্থানে থাকে তখন জাতকের অশুভ হয়। নবগ্রহের নাম- ১) রবি, ২) সোম, ৩) মঙ্গল, ৪) বুধ, ৫) বৃহস্পতি, ৬) শুক্র, ৭) শনি, ৮) রাহু ও ৯) কেতু। এই নবগ্রহের মধ্যে সোম, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র এই চারটি গ্রহ অধিকাংশ সময় শুভফল প্রদান করে বলে এদেরকে শুভ গ্রহ এবং রবি, মঙ্গল, শনি, রাহু ও কেতু এই পাঁচটি গ্রহ অধিকাংশ সময় অশুভফল প্রদান করে বলে এদেরকে অশুভ গ্রহ বা পাপ গ্রহ বলে। নবগ্রহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি পুরুষ, চন্দ্র ও শুক্র স্ত্রী এবং বুধ ও শনি ক্লীব বা নপুংসক। রবি একটি রাশিতে ত্রিশ দিন, চন্দ্র সোয়া দুই দিন, মঙ্গল পয়তাল্লিশ দিন, বুধ আঠার দিন, বৃহস্পতি এক বছর, শুক্র আটাশ দিন, শনি আড়াই বছর এবং রাহু-কেতু দেড় বছর অবস্থান করে।
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে রবি -- আত্মা, পিতা, রক্ত বর্ণ, কটু (ঝাল) রস, পিত্ত ধাতু, স্বভাব, যশ-খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির কারক।
চন্দ্র -- মন, মাতা, জল, শুভ্রবর্ণ, লবণ রস, শ্লেষ্মা ধাতু, চঞ্চলতা, চিন্তাশক্তি, সাহিত্য প্রভৃতির কারক।
মঙ্গল -- শক্তি, ভ্রাতৃ, ভূমি, সম্পত্তি, সাহস, পরাক্রম, অগ্নি, লাল বর্ণ, তিক্ত রস, পিত্ত ধাতু প্রভৃতির কারক। 
বুধ -- বুদ্ধি, মাতুল, বাণিজ্য, বাক্-শক্তি, মিশ্র রস, সম ধাতু, হাস্য, শিল্প, সাহিত্য, সবুজ বর্ণ প্রভৃতির কারক।
বৃহস্পতি -- ধর্ম, পুত্র, ধন, জ্ঞান, মিষ্টি রস, কফ ধাতু, হলুদ বর্ণ প্রভৃতির কারক।
শুক্র -- প্রেম, কাম, স্ত্রী, সুখ, অম্ল রস, কফ ধাতু, গীত, কাব্য, শুভ্র বর্ণ প্রভৃতির কারক।
শনি -- দুঃখ, মৃত্যু, বিপদ, কষায় রস, বায়ু ধাতু, অস্ত্র, আধ্যাত্মিকতা, গুপ্তবিদ্যা প্রভৃতির কারক নীল বর্ণ প্রভৃতির কারক।
রাহু -- শত্রু, নিদ্রা, চৌর্য, বিষক্রিয়া, পিতামহ, দ্যুত-ক্রিড়া, বায়ু ধাতু, কাল বর্ণ প্রভৃতির কারক।
কেতু -- মাতামহ, সর্প, দংশন, ক্ষুধা, ধুম্র বর্ণ, ব্রণ ও চর্ম রোগ প্রভৃতির কারক।

সনাতনী জ্যোতিষ বিজ্ঞান বলে গ্রহদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও মিত্রতা রয়েছে। 
  • রবির মিত্র- চন্দ্র, মঙ্গল ও বৃহস্পতি, শত্রু- শুক্র ও শনি এবং সম- বুধ। 
  • চন্দ্রের মিত্র- রবি ও বুধ, শত্রু- নেই এবং সম- মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি।
  • মঙ্গলের মিত্র- রবি, চন্দ্র ও বৃহস্পতি, শত্রু- বুধ এবং সম- শুক্র ও শনি। 
  • বুধেরমিত্র- রবি ও শুক্র, শত্রু- চন্দ্র এবং সম- শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি।
  •  বৃহস্পতির মিত্র- রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল,শত্রু- বুধ ও শুক্র এবং সম- শনি। 
  • শুক্রের মিত্র- বুধ ও শনি, শত্রু- রবি ও চন্দ্র এবং সম- মঙ্গল ও বৃহস্পতি। 
  • শনির মিত্র- বুধ ও শুক্র, শত্রু- রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল এবং সম- বৃহস্পতি। 
  • রাহুর মিত্র- শুক্র ও শনি, শত্রু- রবি, চন্দ্র ও মঙ্গল এবং সম- বুধ ও বৃহস্পতি। 
  • কেতুর মিত্র- রবি ও চন্দ্র, শত্রু- শুক্র ও শনি এবং সম- বুধ ও বৃহস্পতি।
এবার আসুন রাশিদের একটি জেনারেল গুন-দোষ আলোচনা করা যাক। 

  • মেষ রাশির জাতক ভাবপ্রবণ, চঞ্চল, জেদী, ক্রোধী, সামান্য কারণে আনন্দিত বা বিষাদগ্রস্ত, মিষ্টান্নপ্রিয়, ত্যাগী, ধনী, নিজ কর্মে বিশ্বাসী, প্রবল আত্মবোধ ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির অধিকারী। 
  •  বৃষ রাশির জাতক স্থুল নেত্রযুক্ত, স্বল্পভাষী, ধীর-স্থীর, ধার্মিক, কুলজনের হিতকারী, তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, অধ্যবসায়ী, পরিশ্রমী, স্থির-প্রতিজ্ঞ, বাস্তববাদী, আধিপত্য বিস্তারকারী ও হিসাবী। 
  • মিথুন রাশির জাতক ধীর-গতিসম্পন্ন, স্পষ্টবাক, পরহিতৈষী, তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, পণ্ডিত, হাস্যযুক্ত, কৌতুকপ্রিয়, আত্ম-প্রশংসাকামী, সমালোচক, গীতবাদ্য অনুরাগী।
  • কর্কট রাশির জাতক চিন্তাশীল, ভাবুক, কল্পনাপ্রবন, উদার, সত্যবাদী, দয়ালু, দেবদ্বিজে ভক্তিপরায়ণ, পণ্ডিত, প্রগতিশীল হলেও পুরাতনপন্থী, দৃঢ়-প্রতীজ্ঞ, ভ্রমণপ্রিয়, আশ্চর্যজনক বিষয়ে আগ্রহশীল, মাতা-পিতার প্রতি ভক্তিপরায়ণ এবং সাহিত্য ও গীতবাদ্যে অনুরাগী।
  • সিংহ রাশির জাতকবিশ্বাসী, ক্রোধী, বন্ধুহীন, উন্নত-বক্ষবিশিষ্ট, খেয়ালী, কর্তৃত্বপ্রিয়, স্বাধীনচেতা, বিলাসী, স্পষ্টবক্তা, অন্যায়ের বিরুদ্ধাচারী, আত্ম-সচেতন ও অমিতব্যয়ী।
  • কন্যা রাশির জাতক ধার্মিক, বালক-স্বভাবযুক্ত, ক্ষমাপরায়ণ, একমনা, তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, সমালোচক, সৎ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে কুটিল-স্বভাবযুক্ত, মাতৃভক্ত, সাহিত্য-রসিক এবং রমণীগণের প্রিয়। 
  • তুলা রাশির জাতক কোমল শরীর-বিশিষ্ট, দাতা, বন্ধুবৎসল, সদালাপী, অতিভাষী, দৈব-প্রভাবযুক্ত, বুদ্ধিমান, সামাজিক, ভোগী, বিলাসী, শাস্ত্রজ্ঞ, সঙ্গীতজ্ঞ ও রমণীগণের প্রিয়।
  • বৃশ্চিক রাশির জাতক পণ্ডিত, দৃঢ়মতি, বলশালী, আত্মনির্ভরশীল, কর্মদক্ষ, গম্ভীর, জেদী, ক্রোধী, পরমত অসহিষ্ণু, সর্বদা উদ্বেগযুক্ত ও খলবুদ্ধিসম্পন্ন। 
  • ধনু রাশির জাতক নানা কীর্তিপরায়ণ, কুলগৌরবযুক্ত, বন্ধুলোকের হিতকামী, সূক্ষ্মদৃষ্টিসম্পন্ন, প্রভূত ধন-সম্পদযুক্ত, ধীর গতিসম্পন্ন, ধার্মিক, স্বাধীনচেতা, উচ্চাভিলাসী, কর্তৃত্বপ্রিয়, অহংকারী, ক্ষণক্রোধী, পিতৃধন ত্যাগী, গীতপ্রিয়, মীতব্যয়ী, কখনও ধীর আবার কখনও স্থীর, দ্বিধাভাবগ্রস্ত ও সন্দিগ্ধমনা। 
  •  মকর রাশির জাতক তীক্ষ্ণ-বুদ্ধিযুক্ত, ধীর, আত্মাভিমানী, পরাক্রমযুক্ত, বন্ধুবৎসল, দ্বায়িত্বসম্পন্ন, ভোগবিলাসী, মন্ত্রণা ও বাদানুবাদে দক্ষ, সুনামপ্রিয়, পরদারাসক্ত এবং বাইরে থেকে সহজ-সরল মনে হলেও অমত্মরে কুটিল। 
  • কুম্ভ রাশির জাতক উদ্যমী, একাগ্র চিত্তের অধিকারী, ভাবুক, ধার্মিক, নির্জনতাপ্রিয়, সংস্কারপ্রিয়, জ্ঞাতিবর্গসহ আমোদকারী, পরদারাসক্ত, ধনশালী, গম্ভীর, কুটিল স্বভাবযুক্ত ও নিদ্রাপ্রিয়। 
  • মীন রাশির জাতক ধৈর্যশালী, শামিত্মপ্রিয়, একাগ্র, জ্ঞানী, মানী, আশাবাদী, উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন, উদার, ধার্মিক, দ্বিধাভাবগ্রস্ত, স্ত্রী-জয়ী, রমণীপ্রিয়, সাহিত্যরসিক ও ধনেজনে সুখভোগী।
এবার জানা যাক সমুদ্রিক শাস্ত্র মতে জন্ম লগ্ন কি? জন্মের সময় পৃথিবীর নিকটস্থ রাশিকে অর্থাৎ পৃথিবী যে রাশিকে অতিক্রম করছিল সে রাশিকে জন্ম-লগ্ন বলে। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে দ্বাদশ প্রকার জন্ম-লগ্নের ফল দেওয়া হল।
  • মেষ লগ্নের জাতক যশস্বী, মানী, পরবৎসল, জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, সাহসী, ক্রোধী, কুটচিন্তাশীল, ভোগী ও স্ত্রীপুত্র সুখে সুখী হয়ে থাকে।
  •  বৃষ লগ্নের জাতক গুরুভক্ত, প্রিয়ভাষী, গুণবান, কৃতী, তেজস্বী, সর্বজনপ্রিয়, সুরতক্রিয়া নিপুন, লোভী ও পরস্ত্রীতে অনুরক্ত হয়ে থাকে। 
  •  মিথুন লগ্নের জাতক মান্যগণ্য, যশস্বী, শিক্ষিত, আত্মীয়বৎসল, ত্যাগী, ভোগী, ধনী, কামী, দীর্ঘসূত্রী, সাহিত্যরসিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সুবক্তা হয়ে থাকে। 
  •  কর্কট লগ্নের জাতক সর্বজনপ্রিয়, স্বজনপ্রিয়, ধার্মিক, ধনী, ভোগী, পণ্ডিত, ভাষাবিদ, জনসেবক এবং মিষ্টান্ন ও পানীয় দ্রব্যপ্রিয় হয়ে থাকে। 
  •  সিংহ লগ্নের জাতক শত্রুজয়ী, বুদ্ধিমান, উৎসাহী, বলশালী, পরদ্রব্যভোগী, ক্রোধী, স্বল্পপুত্রবিশিষ্ট, জনপ্রিয় ও স্বার্থহীন হয়ে থাকে। 
  •  কন্যা লগ্নের জাতক ধার্মিক, জ্ঞানী, শাস্ত্রজ্ঞ, বিচক্ষণ, অহংকারী, পর্যটক, বক্তা, কামকলাপ্রিয়, সৌভাগ্যশালী ও স্বল্পাহারী হয়ে থাকে।
  •  তুলা লগ্নের জাতক ধীর-স্থির, বহুজনের হিতকারী, বিদ্বান, সৎকর্মে অনুরক্ত, ধনী, মানী, শিল্পকলায় পরিদর্শী ও অল্পভোগী হয়ে থাকে। 
  •  বৃশ্চিক লগ্নের জাতক শৌর্যশালী, বুদ্ধিমান, সৌভাগ্যযুক্ত, ক্রোধী, কামুক, সাহসী, ক্ষুধাতুর, বিবাদকারী ও দুষ্টবুদ্ধিযুক্ত হয়ে থাকে।
  • ধনু লগ্নের জাতক নীতিপরায়ণ, ধার্মিক, শাণিতবাক, বিদ্বান, ধনী, সুখী, জ্ঞানী, বহুলোকের হিতকারী, চাপা-স্বভাব, অহংকারী ও উচ্চাভিলাসী হয়ে থাকে। 
  •  মকর লগ্নের জাতক যশস্বী, ধনী, বহুসন্তানযুক্ত, কপট, কর্মঠ, কষ্টসহিষ্ণু, লোভী, হীনকর্মযুক্ত ও স্বকার্যে তৎপর হয়ে থাকে। 
  •  কুম্ভ লগ্নের জাতক বলশালী, সুখী, বন্ধুযুক্ত, বেদজ্ঞ, সূক্ষ্ম অনুভূতিশীল, তপস্বী, ক্রোধী, চঞ্চল, পরস্ত্রীতে আসক্ত ও নিদ্রালু হয়ে থাকে। 
  •  মীন লগ্নের জাতক অতিশয় জ্ঞানী, দেবতা ও গুরু-পূজক, মানী, ধনী, স্পর্শকাতর, নিঃসঙ্গ জীবনীশক্তিযুক্ত, স্বল্প রোমবিশিষ্ট ও বহুকাল পরীক্ষাকারী হয়ে থাকে।
  •  মিথুন লগ্নের জাতক মান্যগণ্য, যশস্বী, শিক্ষিত, আত্মীয়বৎসল, ত্যাগী, ভোগী, ধনী, কামী, দীর্ঘসূত্রী, সাহিত্যরসিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সুবক্তা হয়ে থাকে। 


 জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে নক্ষত্র পরিচয়। মহাকাশে অগণিত নক্ষত্র রয়েছে। তার মধ্যে পৃথিবীর উপর সাতাশটি নক্ষত্রের প্রভাব বিদ্যমান। জ্যোতিষ শাস্ত্রে উল্লিখিত সাতাশটি নক্ষত্রের নাম- ১) অশ্বিনী, 
২) ভরণী, 
৩) কৃত্তিকা, 
৪) রোহিণী,
৫) মৃগশিরা,
৬) আর্দ্রা,
৭) পুনর্বসু,
৮) পুষ্যা,
৯) অশ্লেষা,
১০) মঘা,
১১) পূর্ব-ফাল্গুনী,
১২) উত্তর-ফাল্গুনী,
১৩) হস্তা,
১৪) চিত্রা,
১৫) স্বাতী,
১৬) বিশাখা,
১৭) অনুরাধা,
১৮) জ্যেষ্ঠা,
১৯) মূলা,
২০) পূর্বাষাঢ়া,
২১) উত্তরাষাঢ়া,
২২) শ্রবণা,
২৩) ধনিষ্ঠা,
২৪) শতভিষা,
২৫) পূর্ব-ভাদ্রপদ,
২৬) উত্তর-ভাদ্রপদ ও
২৭) রেবতী।
হিন্দু-পুরাণ মতে এই সাতাশটি নক্ষত্র কোন দীপ্তিমান জড় বস্ত্ত নয়। প্রকৃতক্ষে এই সাতাশটি নক্ষত্র মূলত দক্ষরাজার সাতাশটি কন্যা। চন্দ্র এই সাতাশজন কন্যাকে বিবাহ করেছেন। যা হোক, চন্দ্র পর্যায়ক্রমে একটি রাশিতে আড়াই দিন অবস্থান করেন। চন্দ্র ব্যতীত অন্যান্য গ্রহগণও সাতাশটি নক্ষত্রকে পর্যায়ক্রমে নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে অতিক্রম করেন। নক্ষত্রসমূহকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন ---
উগ্রগণ- পূর্ব-ফাল্গুনী, পূর্বাষাঢ়া, পূর্ব-ভাদ্রপদ, মঘা ও ভরণী নক্ষত্র।
ধ্রুবগণ- উত্তর-ফাল্গুনী, উত্তরাষাঢ়া, উত্তর-ভাদ্রপদ ও রোহিণী নক্ষত্র।
চরগণ- স্বাতী, পুনর্বসু, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা ও শতভিষা নক্ষত্র।
ক্ষিপ্রগণ- পুষ্যা, অশ্বিনী ও হস্তা নক্ষত্র।
মৃদুগণ- চিত্রা, অনুরাধা, মৃগশিরা ও রেবতী নক্ষত্র।
তীক্ষ্ণগণ- আর্দ্রা, অশ্লেষা, জ্যেষ্ঠা ও মূলা নক্ষত্র।
মিশ্রগণ-কৃত্তিকা ও বিশাখা।
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, জন্ম-নক্ষত্র অনুসারে জাতককে বিভিন্ন গ্রহের দশা ভোগ করতে হয়। জ্যোতিষ-শাস্ত্রে দুই প্রকার দশা প্রচলিত, যথা- অষ্টোত্তরী ও বিংশোত্তরী দশা। জাতক কৃষ্ণপক্ষে দিনে ও শুক্লপক্ষে রাতে জন্মগ্রহণ করলে বিংশোত্তরী দশা এবং কৃষ্ণপক্ষে রাতে ও শুক্লপক্ষে দিনে জন্মগ্রহণ করলে অষ্টোত্তরী দশা প্রযোজ্য হবে। অষ্টোত্তরী নিয়মে জাতক রবি (৬ বছর), চন্দ্র (১৫ বছর), মঙ্গল (৮ বছর), বুধ (১৭ বছর), শনি (১০ বছর), বৃহস্পতি (১৯ বছর), রাহু (১২ বছর) ও শুক্র (২১ বছর) এই আটটি গ্রহের দশা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে উক্ত ক্রমে ভোগ করবে। যেমন- কেউ রবির দশায় জন্মগ্রহণ করলে তাকে রবির দশার ভোগ্যকাল শেষে ১৫ বছর চন্দ্রের দশা ভোগ করতে হবে এবং এরপর তাকে ৮ বছর মঙ্গলের দশা ভোগ করতে হবে, এভাবে মৃত্যর পূর্ব পর্যমত্ম তাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন গ্রহের দশা ভোগ করে যেতে হবে।
অষ্টোত্তরী মতে জন্ম-নক্ষত্র কৃত্তিকা, রোহিণী ও মৃগশিরা হলে প্রথমে রবির দশা হবে, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা ও অশেস্নষা হলে প্রথমে চন্দ্রের দশা হবে, মঘা, পূর্ব-ফাল্গুনী ও উত্তর-ফাল্গুনী হলে প্রথমে মঙ্গলের দশা হবে, হস্তা, চিত্রা, স্বাতী ও বিশাখা হলে প্রথমে বুধের দশা হবে, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা ও মূলা হলে প্রথমে শনির দশা হবে, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা হলে প্রথমে বৃহস্পতির দশা হবে, ধনিষ্ঠা, শতভিষা ও পূর্ব-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে রাহুর দশা হবে এবং উত্তর-ভাদ্রপদ, রেবতী, অশ্বিনী ও ভরণী হলে প্রথমে শুক্রের দশা হবে।
বিংশোত্তরী মতে, জাতক রবি (৬ বছর), চন্দ্র (১০ বছর), মঙ্গল (৭ বছর), রাহু (১৮ বছর), বৃহস্পতি (১৬ বছর), শনি (১৯ বছর), বুধ (১৭ বছর), কেতু (৭ বছর) ও শুক্র (২০ বছর) এই নয়টি গ্রহের দশা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে উক্ত ক্রমে ভোগ করবে। কৃত্তিকা, উত্তর-ফাল্গুনী ও উত্তরাষাঢ়া জন্ম-নক্ষত্র হলে প্রথমে রবির দশা হবে, রোহিণী, হসত্মা ও শ্রবণা হলে প্রথমে চন্দ্রের দশা হবে, মৃগশিরা, চিত্রা ও ধনিষ্ঠা হলে প্রথমে মঙ্গলের দশা হবে, আর্দ্রা, স্বাতী ও শতভিষা হলে প্রথমে রাহুর দশা হবে, পুনর্বসু, বিশাখা ও পূর্ব-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে বৃহস্পতির দশা হবে, পুষ্যা, অনুরাধা ও উত্তর-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে শনির দশা হবে, অশ্লেষা, জ্যেষ্ঠা ও রেবতী হলে প্রথমে বুধের দশা হবে, মঘা, মূলা ও অশ্বিনী হলে প্রথমে কেতুর দশা হবে এবং পূর্ব-ফাল্গুনী, পূর্বাষাঢ়া ও ভরণী হলে প্রথমে শুক্রের দশা হবে।
এখন অষ্টোত্তরী মতে প্রথম দশার ভোগ্যকাল নির্ণয় প্রসঙ্গে আসা যাক। ধরা যাক, কোন জাতক রোহিণী নক্ষত্রের ৩০ দণ্ডে (১২ ঘণ্টা) জন্মগ্রহণ করেছেন। যেহেতু কৃত্তিকা, রোহিণী ও মৃগশিরা নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করলে জাতকের প্রথমে রবির দশা হয় সেহেতু ঐ জাতক রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করায় তাকে প্রথমে রবির দশা ভোগ করতে হবে। এখন ৩টি নক্ষত্রের জন্য রবির মোট ভোগ্য বছর ৬। তাহলে প্রতিটি নক্ষত্রকে রবি ৬/৩ = ২ বছর করে ভোগ করে। রোহিনী নক্ষত্রের স্থিতিকাল ৬০ দণ্ড (২৪ ঘণ্টা)। বর্তমান নক্ষত্র যে সময় পর্যমত্ম অবস্থান করে তা থেকে পূর্ববর্তী নক্ষত্র যে সময় পর্যন্ত অবস্থান করেছিল তা বিয়োগ করলেই নক্ষত্রে স্থিতিকাল পাওয়া যাবে। যেহেতু ৩০ দণ্ড পর জন্ম হয়েছে সেহেতু সে ৬০ - ৩০ = ৩০ দণ্ড ভোগ করবে। এখন সম্পূর্ণ নক্ষত্র ভোগের জন্য অর্থাৎ ৬০ দণ্ডের জন্য রবির ভোগ্যকাল ২ বছর হলে ৩০ দণ্ডের জন্য রবির ভোগ্যকাল হবে ১ বছর। জন্মের ১ বছর পর রবির ভোগ্যকাল শেষে চন্দ্রের দশা শুরু হবে যা ১০ বছর পর্যন্ত থাকবে। 
বিংশোত্তরী মতে কোন জাতকের জন্ম রোহিনী নক্ষত্রে হলে তাকে প্রথমে চন্দ্রের দশা ভোগ করতে হবে। রোহিনী নক্ষত্রের ২৪ দ-- জন্ম হলে তার নক্ষত্র ভোগ্যকাল হবে ৬০ - ২৪ = ৩৬ দণ্ড। এখন ৬০ দণ্ডের জন্য চন্দ্রের ভোগ্যকাল ১০ বছর হলে ৩৬ দণ্ডের জন্য চন্দ্রের ভোগ্যকাল হবে ৬ বছর। জন্মের ৬ বছর পর চন্দ্রের ভোগ্যকাল শেষে মঙ্গলের দশা শুরু হবে যা ৭ বছর পর্যন্ত থাকবে এবং এভাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দশা ভোগ চলতে থাকবে।
জন্ম-রাশি বা জন্ম-লগ্নকে ১ম স্থান ধরে অবশিষ্ট এগারোটি রাশিগুলোকে ২য়, ৩য়, ৪র্থ এই ক্রমে গণনা করে শেষ পর্যমত্ম যে ১২টি স্থান পাওয়া যায় ঐ ১২টি স্থান দ্বারা ১২ প্রকার ভাব ফল নির্ণয় করা হয়। জন্ম-লগ্নের ১ম, ৪র্থ, ৭ম ও ১০ম স্থানকে কেন্দ্র বলে। যেমন মেষ লগ্নের নক্ষত্রে ১ম স্থানে মেষ, ৪র্থ স্থান কর্কট, ৭ম স্থানে তুলা এবং ১০ম স্থানে মকর রয়েছে। সুতরাং ১ম স্থানে, কর্কটের স্থানে, তুলার স্থানে এবং মকরের স্থানে কোন গ্রহ থাকলে তা কেন্দ্রে আছে ধরা হয়। লগ্ন, ৯ম ও ৫ম স্থানকে কোণ বলে এবং ৩য়, ৬ষ্ঠ, ৮ম স্থানকে দুঃস্থান বলে। গ্রহগণ জন্ম-লগ্নের কেন্দ্র ও কোণে বলশালী হয় এবং শুভ ফল প্রদান করে কিন্তুডএূ দুঃস্থানে অশুভ ফল প্রদান করে।
১ম অর্থাৎ জন্ম-লগ্ন ও জন্ম-রাশি থেকে দেহভাব, ৩য় স্থান থেকে ভ্রাতৃভাব, ৪র্থ স্থান থেকে বন্ধুভাব, ৫ম স্থান থেকে পুত্রভাব, ৬ষ্ঠ স্থান থেকে শত্রুভাব, ৭ম স্থান থেকে পতি বা পত্নীভাব, ৮ম স্থান থেকে আয়ু বা নিধনভাব, ৯ম স্থান থেকে ভাগ্য বা ধর্মভাব, ১০ম স্থান থেকে কর্মভাব, ১১শ স্থান থেকে আয়ভাব এবং ১২শ স্থান থেকে ব্যয়ভাব বিচার করা হয়। যেমন- মেষ রাশি বা মেষ লগ্নের ৭ম স্থানে তুলা রাশি অবস্থিত। ৭ম স্থান দ্বারা পতি বা পত্নীযোগ, বিবাহ ও দাম্পত্য-জীবন বিচার করা হয়। এখন মেষ রাশির ৭ম স্থানে অর্থাৎ তুলা রাশিতে যদি শুভ, উচ্চস্থ ও মিত্র গ্রহ অবস্থান করে এবং শুভ গ্রহের দৃষ্টি থাকে তবে ঐ জাতকের পতি বা পত্নী, বিবাহ ও দাম্পত্য-জীবন সুন্দর হবে। এর বিপরীত হলে বিপরীত ফল প্রসব করবে। এভাবে দ্বাদশ স্থানে গ্রহ-নক্ষত্রে অবস্থান অনুসারে দ্বাদশ প্রকার ভাব বিচার করা হয়। দ্বাদশ স্থানের অধিপতি গ্রহের অবস্থান অনুসারেও দ্বাদশ ভাব নির্ণয় করা হয়। যেমন- মেষ রাশির অধিপতি মঙ্গল তাই মঙ্গল হবে লগ্নপতি। মেষ রাশির ২য় স্থানে বৃষ রাশি রয়েছে। বৃষ রাশির অধিপতি শুক্র তাই শুক্র হবে তনুপতি। এই শুক্রের শুভ বা অশুভ দ্বারা তনু বা দেহভাবের শুভাশুভ বিচার করা হয়।
সবশেষে আলোচনা করবো মানুষের হাতের গড়ন নিয়ে। সামুদ্রিক শাস্ত্র মানুষের হাতের গড়ন দেখে তাঁর স্বভাব বলে দেবার অসাধারণ বিদ্যা দান করেছে। 
 
বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া বাকি চারটে আঙুল, তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা আর কনিষ্ঠা - প্রত্যেকটি একেকটি গ্রহের প্রতিনিধি। এই আঙুলের আকার-প্রকারের বিভিন্নতা মানুষের চরিত্রেও ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
আঙুলের গড়ন দেখে মানুষ চেনার আগে জেনে নিন, কোন আঙুল কোন গ্রহের প্রতিনিধি। তর্জনী - গুরু বা বৃহস্পতি, মধ্যমা - শনি, অনামিকা - রবি বা সূর্য আর কনিষ্ঠা - বুধ গ্রহের প্রতীক।
★ তর্জনী -- এই আঙুল মানুষের উচ্চাকাঙ্খা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আর 'অহম'-এর প্রতীক। এর সাহায্যে কে, কতটা ভাগ্যবান এবং কাজে উন্নতি করবে তা-ও জানা যায়। তর্জনী সাধারণত উচ্চতায় মধ্যমা-র মধ্যভাগ-কে ছুঁয়ে থাকে। কারও আঙুল এর থেকে সামান্য লম্বা হলে বলা হয়, তার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আর তার বৃহস্পতি গ্রহ খুবই শক্তিশালী। আঙুল ছোটো হলে অন্যের দেখানো পথে চলতে কিংবা একা কাজ করতে ভালোবাসে সেই মানুষটি। তর্জনী স্বাভাবিকের থেকে বেশি বড়ো হলে সব বিষয়ে অবহেলা ও ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। আর ছোটো হলে এই বৈশিষ্ট্যগুলোই আর থাকে না। তর্জনী বাঁকা যার, সে খুব চালাক, স্বার্থপর আর খল প্রকৃতির। এই আঙুলের ঠিক নীচেই বৃহস্পতির অবস্থান। গ্রহটি হাতে পূর্ণভাবে বিকশিত (উঁচু) হলে মানুষের মধ্যে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, নীতিপরায়ণতা ও আত্মাভিমান দেখা যায়। বেশি উঁচু হলে অহঙ্কারী, রাগী, ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠে। নীচস্থ হলে বৃহস্পতির কোনও মৌলিক গুণ ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায় না।
★ মধ্যমা -- এই আঙুলের নীচে শনি গ্রহের অবস্থান। এটি সত্য, ন্যায়পরায়ণ, নিয়মানুবর্তিতার প্রতীক। অন্যান্য আঙুলের চাইতে তুলনায় একটু বেশি বড়ো হলে ব্যক্তিটি দায়িত্ববান, গভীর ব্যক্তিত্বশালী এবং উচ্চাকাঙ্খী হবে। আঙুলের উচ্চতা বেশি হওয়া মানে একাকীত্ব পছন্দ। এবং অনেক সময় বাজে কাজেও জড়িয়ে পড়তে পারে। উচ্চতায় ছোটো হলে অলস প্রকৃতির হয়। মধ্যমার প্রথম ভাগ লম্বা হলে আধ্যাত্মবাদের প্রতি আগ্রহ থাকবে। আঙুলের মধ্য ভাগ লম্বা হলে রসায়ন, লোহা সহ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত ব্যবসায়-র সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তৃতীয় ভাগ লম্বা হলে সেই ব্যক্তি চালাক, স্বার্থপর হয়। খারাপ কাজের সঙ্গে ষুক্ত থাকে। আঙুলের নীচে স্থিত শনিগ্রহের অবস্থান উঁচুতে হলে সেই মানুষ জ্ঞানী হয়। বিচারশক্তির ক্ষমতা প্রবল থাকে এবং ইন্দ্রিয় নিজের বশে থাকে।
★ অনামিকা -- এই আঙুল রবি-র ধারক। এটি আমাদের যশ লাভ, বুদ্ধি ও সৃষ্টিশীল কাজ করতে সাহায্য করে। তর্জনী-র থেকে অনামিকা লম্বা হলে সেই ব্যক্তির যে কোনও বিষয়ে ঝুঁকি নেওয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা থাকে। এছাড়া, ফ্যাশন বা ছবির জগতে কাজ করার আগ্রহ দেখা যায়। লম্বায় ছোটো হলে সব অবস্থাতেই সে সন্তুষ্ট। যশ লাভের খুব ইচ্ছাও তার থাকে না। যদিও তর্জনী থেকে অনামিকা লম্বায় ছোটো খুব কমই দেখা যায়। অনামিকার নীচে অবস্থিত রবি গ্রহ পূর্ণ মাত্রায় (উঁচু) থাকলে সব কাজেই সাফল্য, যশ, প্রতিষ্ঠা আসে। ব্যক্তিটি পরিশ্রমী হয় এবং ব্যবসায় উন্নতি করে। ধার্মিক হলেও ধর্মান্ধ হয় না। নিজের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকে। এরা যেমন চট করে রেগে যায় তেমনি আবার খুব তাড়াতড়ি শান্তও হয়।
★ কনিষ্ঠা -- বুধ গ্রহের ধারক এই আঙুল। এর মাধ্যমে ব্যক্তির বাকপটুতা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও চাতুর্য বোঝা যায়। কণিষ্ঠা অনামিকার প্রথম ভাগের সমান এর উচ্চতা হলে যে কোনও বিষয়েই ব্যক্তির অভিব্যক্তি কম প্রকাশ পায়। ভাবনা এবং কথায় নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ছেলেমানুষী স্বভাবে এর আরও একটি বৈশিষ্ট্য। আর লম্বা হলে আই কিউ তীক্ষ্ণ হয়। খুব ভালো লেখক ও সুবক্তা হয়। কনিষ্ঠা-র নীচু ভাগ চওড়া মানেই খুব বিলাসী।
এছাড়াও, হাতের আঙুলগুলি থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মনের ইচ্ছা, আয়ু সম্বন্ধেও জানা যায়। যেমন, যে কোনও আঙুলের অগ্রভাগ দেখে সেই ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি, দ্বিতীয় ভাগ তর্ক করার ক্ষমতা জানা যায়। আঙুলগুলি টান টান সোজা মানেই মানুষটি প্রচণ্ড কঠোর ও জেদি হবেই। এই ধরনের মানুষ অত্যন্ত বিশ্বাসী হলেও কঠোর ও জেদি স্বভাবে জন্য বেশি বন্ধু থাকে না।
আবার হাতের আঙুল খুব নরম মানেই সেই ব্যক্তি অত্যন্ত খরুচে। তবে সহজে এই লোককে বিশ্বাস না করাই ভালো। জেদি হওয়ায় এদের বন্ধুর সংখ্যা কম। নরম মানসিকতার জন্য অনেকেই বন্ধুত্বের আগ্রহ দেখায়। যদিও এরা কঠিন কাজ বা দায়িত্ব নিতে পারে না। বোহেমিয়ন স্বভাবের জন্য এরা নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনাও নিতে পারে না।
হাত মেলে ধরার সময় যাদের সব আঙুল ৬০ ডিগ্রি-র কোণে খোলা যায় না তারা জ্ঞানী ও কর্ম নিপুণ হয়। যাদের ৯০ ডিগ্রি কোণ পর্যন্তু খোলে তারা অনায়েসে ঝুঁকি নিতে পারে। ১২০ডিগ্রি কোণের আঙুলধারীরা সব সময় অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে অভ্যস্ত। আঙুলের গঠন কোমর-এর মতো হলে সেই ব্যক্তি তর্কে পারদর্শী হলেও শারীরিক সুস্থতা কম থাকে।
আঙুলের ডগা ছুঁচালো হলে প্রখর বুদ্ধিমান হবে। আঙুল আগা-গোড়া চওড়া হলে প্রচণ্ড জেদি হবে। আঙুলের ডগা চৌকো হলে বাজে কাজে জড়িয়ে জেলে যাওয়ারও অসম্ভব নয়। যদিও এরা খুবই বাস্তব মেনে থাকে।

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts