Friday, April 30, 2021

ইন্টারনেটের কিছু মজার আর রহস্যময় সাইট

 ইন্টারনেটে কিছু অদ্ভুত সাইট আছে। সেই সম্পর্কে আজকের এই লেখা। 

১. https://you.regettingold.com 


এই ওয়েবসাইট আপনাকে অবাক করতে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। আপনাকে শুধু এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার জন্মতারিখ লিখতে হবে। এবার তারা আপনাকে এমন সব গাণিতিক হিসাব দেখাবে যা আপনি কখনো ভাবতেও পারেন নি।এমনকি দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি কিভাবে আপনার জন্মদিনের সাথে জড়িত হতে পারে তাও হাতে কলমে দেখিয়ে দিবে। আপনারাই দেখে নিন।


২.  https://pointerpointer.com/

এই ওয়েবসাইটটির মাত্র একটিই পেজ আছে। আপনাকে এই পেজের যেকোনো স্থানে টাচ করতে হবে বা মাউস পয়েন্টার রাখতে হবে। একটু পর একটি ছবি আসবে আর আপনি দেখবেন আপনি ছবির কাছে বোকা বনে যাচ্ছেন। বারবার করতে থাকুন, পেইজের প্রতিটি বিন্দুর জন্য আলাদা করে ছবি সেট করা আছে, যখনই বিন্দুতে আপনার কার্সর রাখবেন ঐ বিন্দুতে সেট করে রাখা ছবিটি দেখানো হবে আর এমন ছবি সেট করা হয় যেন ঐ বিন্দুটাকেই নির্দেশ করছে ছবিতে থাকা ব্যক্তি।


৩.  http://en.bigpixel.cn/t/5834170785f26b37002af46d


এই সাইটে রয়েছে  এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের তৃতীয় বড় ছবি। এই ছবিটি চীনের সাংহাই শহরের একটি ৩৬০° ছবি এবং সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো এর ক্লিয়ারিটি এবং শার্প ডিটেইলস। জুম করে কয়েক কিলোমিটার দূরের কোনো গাড়ির নম্বর প্লেট ও মানুষের চেহারা স্পষ্ট দেখা যায় এই ছবিতে। তাই মনে ভাবনা আসতে পারে যে এটি নিশ্চয়ই কোনো স্যাটেলাইটের শক্তিশালী ক্যামেরায় তোলা। একদম না! এই ছবিটি "ওরিয়েন্টাল পার্ল টাওয়ার"(Oriental Pearl Tower) থেকে তুলেছে "জিংকুন টেকনোলজি"(Jingkun Technology) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের ওয়েবসাইট মতে এই ছবিটির রেজুলেশন হলো ১৯৫ বিলিয়ন পিক্সেল। এটি মূলত অনেকগুলো ছবি জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে যেমনটা আমরা গুগল স্ট্রিটভিউ(streetview) তে দেখতে পাই। এই ধরনের টেকনোলজিকে বলা হয় "Image Stitching Technology"। তবে ঐ ছবিগুলো তোলা হয়েছে উন্নতমানের হাই-রেজুলেশন ক্যামেরা দিয়ে। এরকম আরো অনেকগুলো ছবি রয়েছে ঐ ওয়েবসাইটে।তবে এই ছবিগুলো মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।


৪. https://internet-map.net/ 


বিশ্বের সকল ওয়েবসাইট একটি মাত্র পেজে প্রদর্শন করার দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছে এই ওয়েবসাইট। এই যে বড় বড় বৃত্ত দেখতে পাচ্ছেন এগুলোই বর্তমানে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ওয়েবসাইট যাদেরকে টেক-জায়ান্ট বললেও ভুল হবে না।


৫.  https://www.flightradar24.com


এই অবিশ্বাস্য রকমের ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে বিশ্বের সকল বিমান লাইভ ট্র্যাক করতে পারবেন। এজন্য বিমান নম্বর কিংবা ফ্লাইট নম্বর লিখে সার্চ দিতে হবে। বিমান কত গতিতে উড়ছে, কত উচ্চতা দিয়ে উড়ছে,বিমানের আশেপাশে আবহাওয়ার পরিবর্তন কি পরিমানে হচ্ছে তাও জানতে পারবেন। এছাড়াও বিমানের কোনো যাত্রী যদি এই ওয়েবসাইটে লগড ইন থাকে তাহলে জানতে পারবেন তার সম্পর্কেও।আরও একটি অবিশ্বাস্য কাজ করতে পারবেন এই ওয়েবসাইটে। 3d সিমুলেশন গেমের মতো বিমান ও এর আশেপাশের সবকিছুই (+3d ম্যাপ) দেখতে পারবেন 3d তে। কিন্তু গেমের মতো বিমানের নিয়ন্ত্রণ আপনার কাছে না থেকে ঐ আসল বৈমানিকের কাছে থাকবে।


৬. http://www.milliondollarhomepage.com/ 


এই সেই ওয়েবসাইট যার মাধ্যমে একজন 21 বছরের ছাত্র মিলিয়নিয়ার হয়েছিল। অনেকেরই শুনতে অবিশ্বাস্য লাগবে। ছাত্রটির নাম ছিলো Alex Tew। সে ইংল্যান্ডে বসবাস করত। সেটা 2005 সালের কথা। অ্যালেক্সের আগে থেকেই ছিল মিলিয়নিয়ার হওয়ার স্বপ্ন। এসময় ইউনিভার্সিটির খরচ তার স্বপ্নকে সত্যিতে রূপান্তর করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তবে সে একটা বিকল্প পন্থার অবলম্বন করল। সে একটা ওয়েবপেজ তৈরি করে সেখানে 1000×1000 পিক্সেল তৈরি করল। এই পিক্সেলগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ওয়েবসাইট ক্রয় করার সুযোগ পেত। প্রতি পিক্সেলের দাম $1. যারা ক্রয় করত অ্যালেক্স তাদের প্রতিষ্ঠানের লোগো বা অন্য কোনো ছবি ঐ পিক্সেলে যোগ করে দিতো এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের সাথে লিংক করে দিতো। কিছুটা অ্যাড দেখানোর মতো। এভাবে কিছুদিনের মধ্যেই এটি ইন্টারনেটের ভাইরাল টপিকে পরিণত হল।আস্তে আস্তে অনেক জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান $1 দিয়ে পিক্সেল কিনতে থাকল। তবে সর্বশেষ 1000 টি পিক্সেল কেনার জন্য আবেদন জমা পড়েছিল অসংখ্য। ফলে অ্যালেক্স ইবে (e-bay) তে নিলামের আয়োজন করল। শেষ পর্যন্ত নিলামের মাধ্যমে সবগুলো পিক্সেল বিক্রি হয়ে গেল। সর্বশেষ পিক্সেলটি বিক্রি হয়েছিলো $38,100! আর এভাবেই তার পকেটে গেল $1,037,100! তবে বর্তমানে এর 40% লিংকই ডেড।


৭. http://thefacesoffacebook.com/ 


এই মুহূর্তে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হলো— 1,278,838,458…468…489..এভাবে বাড়ছেই। এই ওয়েবসাইটি সকল ফেইসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইল পিকচার একসাথে আপনাকে দেখার ব্যবস্থা করে দিবে।জুম করার জন্য যেকোনো জায়গায় দুবার টাচ করুন অথবা মাউস বাটনটিকে দুবার আঘাত করুন(:)।আরও মজার ব্যাপার হলো প্রতিটা ছবির সাথে ঐ অ্যাকাউন্টের লিংক করে রাখা হয়েছে। আসলে এই এত সংখ্যক মানুষকে ছোট একটা স্ক্রিনে দেখা তো সত্যিই অবাক করে দেয়ার মতো ব্যপার! আমি চাইলেই এই 1,278,839,678..709 মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি (+ফেইক আইডি)! তবে আরেকটা কথা বলা যায় যে এই অসংখ্য মানুষগুলোর সব ব্যক্তিগত তথ্য একসাথে এক স্ক্রিনে নিয়ে আসা হয়েছে।


৮. https://quickdraw.withgoogle.com/


এটি কিছুটা আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (AI) ধরনের। এখানে, আপনি 20 সেকেন্ডে যেকোনো কিছু আঁকার সুযোগ পাবেন। নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো কিছু আঁকতে পারবেন। তবে, একটু পরই অবাক হয়ে যাবেন। কারণ, আঁকা শুরুর সাথে সাথেই একটি কণ্ঠস্বর আপনি কি আঁকছেন তা বর্ণনা করতে থাকবে। সত্যিই অসাধারণ!


৯. https://howsecureismypassword.net/


হ্যাঁ জনাব, আপনি যদি আপনার পাসওয়ার্ড নিয়ে চিন্তিত হন; সবসময় যদি ভাবেন "আমার পাসওয়ার্ড কতটা শক্তিশালী?";তাহলে এটি আপনার জন্য। এই ওয়েবসাইট টি আপনাকে দেখাবে আপনার পাসওয়ার্ড একটি কম্পিউটারের হ্যাক করতে কত সময় লাগবে। যেমন: ধরুন, আমি লিখলাম 12345678.......


১০. https://www.internetlivestats.com/


এই ওয়েবসাইটে ইন্টারনেট সম্পর্কিত সকল তথ্য লাইভ দেখতে পারবেন।যেমনঃinternet ইউজারের সংখ্যা, google এ আজকে search সংখ্যা ইত্যাদি আরও অনেক কিছু দেখতে পারবেন।


১১. https://www.mapcrunch.com/


এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে বিচরণ করতে পারবেন।


১২.  http://papertoilet.com/


আপনি যদি ইন্টারনেটে টয়লেট পেপার ব্যবহার করতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য….:)


১৩.https://www.worldometers.info/world-population/


এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে আপনি বিশ্বের জনসংখ্যা কি পরিমানে বাড়ছে তা লাইভ দেখতে পারবেন।


১৪. https://www.anomalies-unlimited.com/


এখানে আপনি এমন সব কন্টেন্ট পাবেন যা সত্যিই ভয়ংকর।পৃথিবীর সব আজব ঘটনা, ভয়ংকর সব ছবি এখানে সংরক্ষিত আছে।এমনকি এলিয়েনদের নিয়ে আছে বিপুল তথ্য এবং ছবি।


১৫.https://www.hashima-island.co.uk/#


এই ওয়েবসাইটটি সত্যিই ভয় ধরানো।এর ইফেক্ট আর ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড আপনাকে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। এটি জাপানের একটি ভুতুড়ে দ্বীপ সম্পর্কে তৈরি করা হয়েছে।


১৬.  http://www.planecrashinfo.com/lastwords.htm


এই ওয়েবসাইটের সাথে গেঁথে আছে হাজার হাজার প্রাণের আর্তনাদ। এটির মাধ্যমে প্ল্যান ক্র্যাশের সময় যাত্রী,পাইলট এবং বিমানবন্দরের মধ্যকার কথাবর্তা শুনতে পারবেন।


১৭.https://spiritboard.redwerk.com/


অনেকেই দাবি করেছেন, এই ওয়েবসাইটির মাধ্যমে তারা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বর্তমানেই ধারণা নিতে পেরেছেন। এটি নাকি স্পিরিট এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করিয়ে দেয়।


১৮.  http://www.staggeringbeauty.com/


এটাকে অবশ্য রহস্যময় বলা যায় না…তবে মজার বলা চলে।


১৯.https://www.tdcj.texas.gov/death_row/dr_executed_offenders.html


টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আগে তাদের কাছ থেকে নেয়া "ফাইনাল স্টেটমেন্ট" নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ওয়েবসাইট। এমনকি ঐসব আসামিদের পরিচয় ও তুলে ধরা হয়েছে বিশদভাবে। কিছুুদিন পরপরই আপডেট হয় এই ওয়েবসাইট।


২০. https://e.magnificence.org/


এতে আপনার মন্তব্য হয়তো কোনো অচেনা মানুষ উত্তর দিবে।


২১. http://lastmealsproject.com/


অনেক মানুষ মারা যাওয়ার পূর্বে যা খেয়েছিল তা নিয়েই এই ওয়েবসাইট। তবে আমার কাছে বেশি একটা ভয়ংকর মনে হয়নি। এগুলো জেনে আমাদের কি লাভ!


এখানে উল্লেখ্য কিছু কিছু অয়েবসাইট এমনি খুলবে না। ভিপিএন দ্বারা খুলতে হবে। আর এইসব অয়েবসাইট নিজ দায়িত্বে খুলবেন। কিছু কিছু আসলেই অনেক রহস্যময়। 


Wednesday, April 21, 2021

সবচেয়ে আকর্ষণীয় সূর্য মন্দিরটি ভারতের কোথায় অবস্থিত?

 কোণার্ক সূর্য মন্দির ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কোনারক শহরে অবস্থিত। নামটি সংস্কৃত কোণ এবং অর্ক (সূর্য) শব্দদুটির সমন্বয়ে গঠিত। ইউরোপীয় নাবিকরা একে ব্ল্যাক প্যাগোডা বলত এবং অপরদিকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে হোয়াইট প্যাগোডা বলত।

ইতিহাস- পূর্বগঙ্গ রাজবংশের নরসিংহদেব ১২৩২ - ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা জয়ের স্মারকরূপে চন্দ্রভাগা নদীর তীরে প্রাচীন মিত্রাবনে অর্থাৎ আজকের কোনারকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আরও একটি গল্প কথিত আছে যে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্‍ব তার অপরূপ রূপ হারিয়েছিলেন পিতার অভিশাপে। তখন তিনি সূর্যদেবের কঠোর তপস্যা করে তার রূপ ফিরে পান ও তিনি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

নির্মাণ ও স্থাপত্য- মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির,ভোগমন্দির ও গর্ভগৃহ। তবে দেউলের আস্তিত্ব তেমন আর পাওয়া যায় না। মন্দিরের অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, তা কবে এবং কিভাবে তা নিয়ে নানান মত রয়েছে। এর স্থাপত্যের নথি তাল পাতার পাণ্ডুলিপির আকারে আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৬০ তে।

উড়িষ্যা ও দ্রাবিড় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে নির্মিত মন্দিরটি ধূসর বেলেপাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে সাত জোড়া ঘোড়া। সাতটি ঘোড়া মানে সপ্তাহের সাত দিন। বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত। চব্বিশটি চাকা মানে চব্বিশ পক্ষ। চাকার কারুকার্য দর্শকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। প্রতিটি চাকা একেকটি সূর্যঘড়ি। চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা। আটটি দাড়ি মানে অষ্টপ্রহর। এখনো নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে। মন্দিরের প্রবেশপথেই রয়েছে বিশাল দুটি সিংহের মূর্তি যারা লড়াই করছে দুটি রণহস্তীর সঙ্গে।

বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় পাথরের ভাস্কর্য ও কারুকার্য রয়েছে। দেবতা,অপ্সরা, কিন্নর, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, মানুষ, বালিকা বধূ বিয়ের শোভাযাত্রা, সমকামিতা, রাজার যুদ্ধ প্রস্তুতি, মৃদঙ্গকরতাল বীণা, মোহিনী, মিঠুন মূর্তি, ছয় হাতের শিব, রাজদরবারের নানান দৃশ্য, পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিরূপ, নৃত্যরত নরনারী, প্রেমিক যুগল, ফাঁদ দিয়ে হাতি ধরা,শিকারের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাথরের বুকে। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যার আলো মন্দিরের তিনদিকে তিনজন সূর্য মূর্তির ওপর পড়ে।

জলচক্র এবং বেদ

 বৈদিক দর্শনগুলির একটি হলো বৈশেষিক সুত্র। এটি ঋষি কণাদ তথা কশ্যপ কর্তৃক রচিত। এই গ্রন্থেই আছে অণু পরমাণু ইত্যাদি বিজ্ঞানের কথা। এই গ্রন্থের কিছু শ্লোক বলছে,

অপাং সংয়োগাভাবে গুরুত্বাৎ পাতম্।।

দ্রবত্বাৎ স্যন্দনম্।।

নাড্যো বায়ুসংয়োগাদারোহণম্।।

নোদনাপীডনৎ সংয়ুক্তসংয়োগাচ্চ।।

বৃক্ষাভিসর্পণমিত্যদৃষ্টকারিতম্।।

অপাং সঙ্ঘাতো বিলয়নঞ্চ তেজঃসংয়োগাৎ।।

তত্র বিস্ফুর্জ্জথুর্লিঙ্গম্।।

বৈদিকঞ্চ।।

অপাং সংয়োগাদ্বিভাগাচ্চ স্তনয়িত্নোঃ।।
৫/২/৩-১১বৈশেষিক সুত্র

বঙ্গানুবাদ :

জল সংযোগের অভাবে মাধ্যাকর্ষণের কারণে পাতিত হচ্ছে। দ্রবীভূত হয়ে বয়ে যায়।
সূর্যরশ্মি বায়ুর সাথে সংযুক্ত করে জলকে (আকাশে) আরোহণ করে।
জলের কণা/অনু পুনরায় উপরে একত্রিত হয়।
অদৃষ্টের ফলে বৃক্ষের মধ্যে জল সঞ্চালিত হয়।
(সূর্যের) তেজের কারণে (গাছের খাদ্যাদি) ঘনীভূত হয়ে সেই জল(-ও) বিলীন হয়।
(এখানে যে তেজের প্রভাব আছে) তার চিহ্ন/প্রমাণই বজ্রপাত।
ইহা বৈদিক কথা বা বেদ সিদ্ধ।
বজ্রপাত মেঘের সংযুক্তির ফলে এবং জলের বিভাগের(*) ফলে হয়।

(*) জলের অনু সূর্যের তেজের ফলে উত্তপ্ত হয়ে দূরে সরে যায়। তাকেই বিভাগ হওয়া বলছে৷ এখানে মূলতঃ বাষ্পীভবনে জল উপরে যায় যে, তার কথা বলছে ।

ব্যাখ্যা :

১.
প্রথম ধাপে বলছে, বৃষ্টি হচ্ছে৷ এখন জল নিচে আসার কারণ মাধ্যাকর্ষণের কথাও বলে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপ, বৃষ্টির জল পুষ্করিণী/নদী/সাগরের জলের সাথে মিশে/দ্রবীভূত হচ্ছে। সেই জল প্রবাহিত হচ্ছে।
তৃতীয় ধাপে বলছে, সূর্যের তেজের কারণে জল বাষ্পীভূত হচ্ছে। বাষ্পীভবনের প্রক্রিয়াও স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।
চতুর্থ ধাপে বলছে, আকাশে আবার জলের অণুগুলি একত্রিত হয়ে জমাট বেঁধে মেঘ হচ্ছে।

২.
প্রথম ধাপে বলছে, এটা সাধারণ প্রক্রিয়া যে গাছের মধ্যে তার নিজস্ব খাদ্য প্রস্তুতের জন্য জল প্রবাহিত হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপে বলছে, Transpiration প্রক্রিয়ার কথা। Transpiration এর ফলে গাছের ভেতরের তরল ঘনীভূত হওয়ার কথা বলছে।

৩.
এতোদূর যা দেখা গেলো তাতে এটা স্পষ্ট, জল বাষ্পীভূত হচ্ছে তেজের কারণে, মূলতঃ সূর্যের।
জলের কণা/অনু তরল অবস্থায় অনেকটা সংযুক্ত বা কাছাকাছি থাকে। বাষ্পীভবনে তা দূরে সরে যায়।

৪.
মেঘের জলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তেজ থাকে, Potential Energy বলা যায়। জলের বাষ্পীভবনের দূরে সরে যাওয়া জল আবার একত্রিত হয়ে জমা হয় মেঘ। তাদেরই ধাক্কা খাওয়ার মধ্যে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে আগুনের তেজ, শব্দের তেজ, আলোর এবং বিদ্যুতের তেজ দেখা যায়। তা নিশ্চয়ই কোনো যাদু না, তা জলের মধ্যে জমে থাকা তেজেরই প্রকাশ।

আরও বিস্ময় :

(১) মাধ্যাকর্ষণের জ্ঞানের স্পষ্ট প্রকাশ পাওয়া যায়।

(২) কঠিন-তরল-বায়বীয় অবস্থায় প্রতিটি কণা/অনুর মধ্যবর্তী দূরত্ব কেমন থাকে তা এখানে স্পষ্ট। কঠিন থেকে তরলের দূরত্ব বেশি তার থেকেও বেশি দূরত্ব দেখা যায় বায়বীয় কণায়।

লক্ষণীয় : সংস্কৃত লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন। এখানেই প্রমাণ।

সরস্বতী রহস্য

 সরস্বতীর জন্ম কিভাবে হলো?

কে তার সৃষ্টিকর্তা?

সরস্বতী কী বিবাহিত নাকি অবিবাহিত?

বিবাহিত হলে তার স্বামী কে? বিষ্ণু নাকি ব্রহ্মা?

ব্রহ্মা তো সৃষ্টিকর্তা, উনি বিয়ে করবেন তার নিজের কন্যাকে?

আসুন আজকে আপনাদের দ্বন্দ্ব সমাধান করব।

অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী ||

— ঋগ্বেদ ২.৪১.১৬

মাতাশ্রেষ্ঠ, নদীশ্রেষ্ঠ, দেবীশ্রেষ্ঠ তুমি সরস্বতী।

প্রথমে একটা ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিৎ। পরমেশ্বরীর জন্ম হয় না৷ এই ব্যাপারে দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন নাই। এবার বলবেন, তাহলে সরস্বতী আসলো কোথা থেকে?

সরস্বতীর উৎপত্তি সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ বলছে, বিষ্ণুর নাভিপদ্ম থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি কালে সরস্বতীও উৎপন্ন হয়েছে, তারই সাথে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, তার প্রকাশ কিভাবে হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে অগ্নিপুরাণের একটা শ্লোক দেখা যাক,

অগ্নি বলছেন :

হে মহান (ঋষি বসিষ্ঠ), উক্ত সাত ঋষি প্রাণীকুল এবং রুদ্রগণের জন্মদেন। প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একভাগে নর(ব্রহ্মা নিজে) হলেন অন্যভাগে নারী(দেবী সরস্বতী) হলেন। অনন্তর তারা সন্তান(স্বয়ম্ভু মনু)-এর জন্ম দিলেন।

— অগ্নিপুরাণম্, ১৭/১৬

আরও বিশ্লেষণ পাওয়া যায় মৎস্যপুরাণে -

গুণেভ্যঃ ক্ষোভমাণোভ্যস্ত্রয়ো দেবা বিজজ্ঞিরে।

একা মূর্তিস্ত্রয়ো ভাগা ব্রহ্মাবিষ্ণুমহেশ্বরাঃ।।

— মৎস্যপুরাণম্, ৩/১৬

বঙ্গানুবাদ : এই তিনগুণের (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণের) অস্থিতিশীলতার কারণে দেবতাদের সৃষ্টি হয়। এক মূর্তি (পরমেশ্বর) তিনভাগ হয়ে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর হলো।

একই অধ্যায়ের কিছুদূর পরের শ্লোকে বলা হচ্ছে,

ব্রহ্মা যখন নিজে এই সৃষ্টির অংশ হিসেবে প্রবেশ করলেন, তিনি সাবিত্রীর তথা পরমেশ্বরীর কাছে নিজেকে সমর্পিত করলেন। সেই সময় তপস্যারত অবস্থায় তার দেহ দুইভাগে বিভক্ত হলো। অর্ধেকে ব্রহ্মা নিজে রইলেন অন্যভাগ নারী রূপ ধারণ করল। সেই নারী সাবিত্রী, শতরূপা, সরস্বতী, গায়ত্রী বা ব্রহ্মাণী নামে পরিচিত হলো। প্রথমে ব্রহ্মা সেই পরমেশ্বরীর রূপকে নিজের সৃষ্টি তথা কন্যা ভেবে বসেন।(*) পরে তিনি মোহিত হন তার রূপে৷ দেবী তখন তার উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ ব্রহ্মার পরিক্রমা করছিল। ব্রহ্মা পরমেশ্বরীর অপূর্ব রূপ দখে তার দিকে সর্বদা তাকিয়ে থাকার জন্য চার দিকে চারটা মাথা উৎপন্ন করলেন। ব্রহ্মার এরূপ তাকিয়ে থাকার কারণে সৃষ্টি অবজ্ঞায় পরে গেল। তার লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায়,পাপের কারণে চতুর্মুখের উপরে আরও একটা মস্তক উৎপন্ন হলো। ব্রহ্মা তার মন থেকে উৎপন্ন পুত্রদের সৃষ্টির দায়িত্ব দিল। অতঃপর ব্রহ্মা তার অর্ধাঙ্গিনীকে বিবাহ করে পুনরায় সৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় ফিরে এলো। ব্রহ্মা ও সরস্বতী প্রথম মনু স্বয়ম্ভুর জন্ম দিল।

— মৎস্যপুরাণম্, ৩/৩০-৪৭

(*) এটাই মূল দ্বন্দ্বের কেন্দ্র। এই চরণ ভুল পড়া বা বুঝানোর কারণেই যতো ভ্রান্তির সৃষ্টি।

তার পরের অধ্যায়ের একদম শুরুতে দেখা যায় বৈবস্বত মনু সেই একই প্রশ্ন করছেন যা সরস্বতীকে ব্রহ্মার মেয়ে ভাবার কারণে আমাদের মাথায় ঘুরে। ব্রহ্মা সরস্বতীকে বিয়ে করে নিষ্কলঙ্ক কিভাবে রইলেন?

মৎস্য অবতারে ভগবান বলছেন :

প্রথমতঃ রজঃগুণাত্মিকা সরস্বতী এবং দেবতারা মানবশরীরের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে না। তাই তাদের কোনোকিছুর প্রভাব সম্ভব নয়৷ ইহা মানুষের মতো করে চিন্তা করা ঠিক না। দ্বিতীয়তঃ ব্রহ্মা আর সরস্বতী একজনই, প্রকাশ যেমন সূর্য থেকে আলাদা করা সম্ভব না তেমনই তাদের সম্পর্কটাও।

— মৎস্যপুরাণম্, ৪/১-১০

দ্বিধা দূর এখানেই হবে যখন এটা উপলব্ধি হবে, তারা একই মায়ের সন্তান নয় বা তারা একজনের সন্তান অন্যজন নয়। গোত্র ইত্যাদি তখনই থাকবে যখন রক্তমাংসের দেহ থাকবে, যখন ডিএনএ থাকবে।

এখন যেই দেবতারা আছে; তারা আগেও ছিল, পরমেশ্বরের মধ্যে। প্রয়োজন অনুসারে তারা রূপ নিয়েছে। রূপ দানে মূল দায়িত্বে ব্রহ্মা। তাকে সৃষ্টিকর্তা অপেক্ষা রচয়িতা বা শিল্পি বলাটাই শ্রেয় বলে আমি মনে করি। কারণ?

সবকিছুই তো সেই পরমেশ্বরের অংশ, সেই পরমেশ্বর যিনি অনাদি-অনন্ত। তারই মধ্যে রূপ দেওয়া হচ্ছে। মূল কথা দেবতাদের জন্ম হয় না, হয় উৎপত্তি।

অর্ধাঙ্গিনী শব্দটা দেবতাদের জন্য বিশেষ প্রযোজ্য। সরস্বতী ব্রহ্মারই অংশ, অর্থাৎ অর্ধাঙ্গিনী। সরস্বতীও ব্রহ্মা ছাড়া অপূর্ণ। পূর্ণরূপ ব্রহ্মা সৃষ্টির জন্য নিজেকে দ্বিখণ্ডিত করে নিজের অংশকে প্রকাশ করেছেন দেবী সরস্বতী রূপে। সৃষ্টির জন্য এটা আবশ্যক ছিল।

সত্যি বলতে, স্বামী-স্ত্রীর যেই স্বর্গীয় সম্পর্কের কথা তা এখান থেকেই আসে। এটা বুঝার জিনিস না। রক্তমাংসের চক্ষু দিয়ে বিচার করা সম্ভব না।

সরস্বতী ব্রহ্মার কন্যা নয়, তার অর্ধাঙ্গিনী। উৎপত্তিতে তারা এক, প্রকাশ বিভাজনের মাধ্যমে।

বৌদ্ধরাও কি সরস্বতী পূজা করে?

হ্যাঁ, বৌদ্ধদের মধ্যে দেবী স্বরস্বতীর আরাধনার প্রচলন আছে।

হিন্দু শাস্ত্রে তিনি বিদ্যা দান করেন। সংস্কৃতি রক্ষা করেন। কিন্তু সেই দেবী বৌদ্ধ ধর্মের আঙ্গিকে গিয়ে কিছুটা পাল্টে যান৷ সেখানে তিনি ধর্মগ্রন্থ 'ত্রিপিটক'কে রক্ষা করেন।

সরস্বতী বৌদ্ধধম্মে ত্রিপিটক রক্ষাকারী দেবী হিসেবে পরিচিত। হয়তো সেই কারণেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশগুলিতে তাঁর পূজার প্রচলন রয়েছে। পালিতে ‘সূরস্সতী’ নামে ডাকা হয়। মায়ানমারে ‘থুরাথান্ডি’ বা তিপিটকা মেডাও নামে পরিচিত। একইভাবে জাপান, থাইল্যান্ড ও চিনেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে।

এছাড়াও, বৌদ্ধদের বজ্রযান শাখায়, দেবী স্বরস্বতীর তান্ত্রিক রূপ, 'দশমহাবিদ্যা'র নবম স্থানে অবস্থিত 'মাতঙ্গী' পূজিত হত।

Monday, April 12, 2021

অসুরদের ও তাদের বধ যাঁর হাতে হয়েছে তাদের নাম

১) তারকাসুর ( কার্ত্তিক ) 

২) চন্ড ও প্রচন্ড (অর্ধনারীশ্বর) 

৩) মধু কৈটভ ( নারায়ণ),

 ৪) তারকাক্ষ, কমলাক্ষ, বিদ্যুৎমালি ( শিব বধ করেন)। 

৫) মহিষাসুর ( দেবি), 

৬) শুম্ভ , নিশুম্ভ, ধুম্রলোচন, চন্ড , মুন্ড , রক্তবিজ ( দেবী), 

৭) রুরু ( দেবী) 

৮) একাক্ষ ( দেবী) 

৯) অন্ধক ( শিব ) 

১০) দুর্গম ( দেবি) 

১১) দারুকাসুর ( দেবী ) , 

১২) অর্গলাসুর (দেবী ), 

১৩)  অনলাসুর ( গণেশ ), 

১৪) গজমুখঅসুর (গণেশ ), 

 ১৫) সিন্দুরা ( গণেশ ) 

১৬) বৃত্তাসুর ( ইন্দ্র),

 ১৭) ত্রিসীরা (  ইন্দ্র),

 ১৮) জালন্ধর (শিব ) 

১৯) নামুচি ( ইন্দ্র ), 

২০) অরুণাসুর ( দেবী), 

২১) হিরনক্ষ, হিরনকশ্যপ ( নারায়ণ ),

 ২২) দুন্দুভি ( শিব ), 

২৩) বেত্রাসুর ( দেবী ), 

২৪) অশ্বশিরা ( নারায়ণ ),  

২৫) হয়গ্রীবা ( দেবী), 

২৬) ধুম্রাসুর (দেবি), 

২৭) মদনাসুর ( দেবী) 

২৮) জ্বরাসুর (দেবী), 

২৯)  গজাসুর ( শিব) 

৩০) ভণ্ডাসুর (দেবি), 

৩১) জম্ভাসুর (নারায়ণ), 

৩২) রক্তমালা রাক্ষসী ( নারায়ণ ),

 ৩৩)ভিমাসুর (শিব)

৩৪) চৈত্রাসুর (দেবী)

৩৫) রাবন ও মেঘনাদ , কুম্ভকর্ণ ও রাক্ষস ( নারায়ণ ও তার ভক্তদের হাতে), 

৩৬)কংস ও তার আশ্রিত অসুর গন ( নারায়ণ), 

৩৭) বানাসুর ( দেবী)






এখানে সে সব অসুরদের নাম দেওয়া হলো যারা স্বর্গ দখল করার পর বধ হয়েছে। এছাড়াও অনেক অসুর আরও আছে।।

Saturday, April 10, 2021

’ভারত‘-এর শেষে ‘বর্ষ’ যুক্ত করে ’ভারতবর্ষ‘ বলা হয় কেন?

 সংস্কৃতে একই শব্দের নানারকম অর্থ হয়। কোন প্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়েছে, সেই অনুযায়ী অর্থ উদ্ধার করতে হয়।

এটা গবেষকদের কাছে অনেক ক্ষেত্রে মুশকিলের হলেও বেশ মজার ব্যাপার।


যাইহোক, বর্ষ (IAST: varṣa) শব্দেরও নানারকম অর্থ আছে। এবং এটা নানান প্রেক্ষিতে নানারকম ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

  • এটা বর্ষণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বর্ষণ মানে বৃষ্টি, আবার অন্যকিছুর বর্ষণ ও বোঝানো যায়।
  • ভারতের অধিকাংশ জায়গায় বছরে একবার বৃষ্টি হত, তাই বর্ষ দিয়ে বছরও বোঝানো হয়। একটা বর্ষাকাল আছে যাতে- এক বর্ষ।
  • আবার তৎকালীন লোকে জানতেন যে পর্বতের সাথে বর্ষার সম্বন্ধ আছে। একটা পর্বত বর্ষা ধারণ করতে পারে। তাই পর্বতকেও বর্ষ বা বর্ষপর্বত বলা হত।
  • একই কারণে মেঘকেও বর্ষ বলা হত।

এই উত্তরে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পর্বতের সমার্থক শব্দ 'বর্ষ' হওয়া।

এই পর্বতগুলো বর্ষার কারণ, তার উপর, এই পর্বত গুলো ভূমিকে নানা ভাগে ভাগ করে। এখন সেই ভাগ করা অংশগুলোকেও বর্ষ বলে।

যে পর্বতগুলোর কারণে বর্ষা হয়, তাদেরকে বর্ষপর্বত (IAST: barṣaparbata) -ও বলে। এরকম ছয়টা/সাতটা বর্ষপর্বত পাওয়া যায়-

  1. হিমবতবর্ষ
  2. হেমকূটবর্ষ
  3. নিষাধবর্ষ
  4. নীলবর্ষ
  5. শ্বেতবর্ষ
  6. শৃঙ্গীনবর্ষ বা শৃঙ্গবতবর্ষ
  7. মেরুবর্ষ

এই বর্ষপর্বতগুলো শুধু বর্ষা ঘটাতো তাই নয়, এইগুলো ভূমিকে নানা ভাগে ভাগ করত। সেই ভাগগুলি যেহেতু বর্ষপর্বতের দ্বারা কৃত, তাই এই ভাগগুলির নামের শেষে বর্ষ থাকত।


এই বর্ষপর্বতের দ্বারা বিভক্ত ভূ-ভাগগুলি হল-

  • হিরণ্যময়বর্ষ
  • রম্যকবর্ষ
  • ইলাবৃতবর্ষ
  • হরিবর্ষ
  • কেতুমালবর্ষ (Monier-Williams এ এটা আলাদা করে দেওয়া- কেতুবর্ষ ও মালবর্ষ, পরের বর্ষের উল্ল্যেখ নেই।)
  • কিম্পূরুষবর্ষ
  • ভাদ্রশ্ববর্ষ
  • কিন্নরবর্ষ
  • ভারতবর্ষ

এই হল "বর্ষ" নামের রহস্য।

অনেকে এই মানচিত্র বিশ্বাস করে, আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। ফ্যান্টাসীর জন্য বানানো হয়ে থাকতে পারে।

বিষ্ণুপুরাণে উল্লিখিত আছে-

উত্তরং যত্সমুদ্রস্য: হিমাদ্রেশ্চৈব দক্ষিণম্ ।
বর্ষং তদ্ ভারতং নাম: ভারতী যত্র সংততিঃ ।।

[অনুবাদঃ যে বর্ষ সমুদ্রের উত্তরে, তুষারপর্বতের দক্ষিণে, সেই বর্ষের নাম ভারতবর্ষ, সেখানে ভরতের উত্তপুরুষেরা বাস করেন।]


আমি বৌদ্ধ সাহিত্যে ও অনুসারী আধুনিক রচনায় "কিম্পূরুষবর্ষ" নাম পেয়েছি অনেকবার। এর মাধ্যমে তিব্বত বোঝানো হত। তিব্বতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেক প্রাচীন। বাংলায় পালশাসনের সময়, বা তার আগে-পরে তিব্বতরাজ ভারত আক্রমণও করেছিলেন একবার। যাহোক, সেটা আলোচনার বিষয়বস্তু নয়।

মহাভারতে কুবেরের শাসনাধীন কিম্পূরুষবর্ষ অর্জুনের দ্বারা বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। এবং এটা যে কিন্নরবর্ষের উত্তরসীমানায় তা বলা হয়েছে।


এগুলো বর্তমানের কোন ভূ-ভাগকে বোঝায়, তার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না।

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts