গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত মোট ৩ টি শ্লোক রয়েছে। এই তিনটি শ্লোক ছাড়াও অনেকেই আরো ১ টি শ্লোক নিয়ে সেটাকে খাদ্য সম্পর্কিত স্থানে নিয়ে যায়। যদিও সেই শ্লোকটির সাথে মানুষের খাদ্যের কোন সম্পর্ক নেই। আবার ইসকনের গীতা অর্থাৎ গীতা যথাযথতে খাদ্য সম্পর্কিত শ্লোক পাওয়া যায় মোট ৫ টি! সেটা একটু পর বুঝিয়ে বলছি। প্রথমেই মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত ৩ টি শ্লোকে নজর দেই। শ্রী কৃষ্ণ মানুষের খাদ্য সম্পর্কে বলেছেন ১৭ তম অধ্যায়ে। এই অধ্যায়টি শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ। মানুষ মোট তিন ধরণের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। তাদের শ্রদ্ধা তিন ধরণের হয়ে থাকে। সেই তিন ধরণের শ্রদ্ধা নিয়েই এই অধ্যায়। সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক।
মানুষের খাদ্যকেও গীতার ১৭/৮; ১৭/৯; ১৭/১০ এই শ্লোক গুলোতে খাদ্য আলোচনা করেছেন। সেখানে খাবারকে সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। মানুষের চরিত্রকেও সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। যে যেমন চরিত্রের সে তেমন আহার পছন্দ করেন। এমনটাই বলা হয়েছে শ্লোক গুলোতে। যেমন সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনা করতে গিয়ে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন,
‘‘যে সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম সেই গুলো সাত্ত্বিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
রাজসিক খাবারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,
‘‘তিক্ত, অম্ল, অতি উষ্ণ, অতিলবণাক্ত... সেগুলো রাজসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
তামসিকের বর্ণনায় বলেছেন,
‘‘দূর্গন্ধময়, রসহীন, বাসী, উচ্ছিষ্ট.... সেগুলো তামসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
লক্ষ্যকরুণ, এখানে কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ খাবার নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা করেনি। বলা হয়েছে মানুষের চরিত্র অনুযায়ী সেই সকল খাদ্য তাদের প্রিয় হয়। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। গীতায় শ্রী কৃষ্ণ সকল কর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। এখন সকল জ্ঞান অনুধাবন করে আপনি নিজ ইচ্ছামত কার্য সম্পন্ন করবেন নিজের উপলব্ধির উপর নির্ভর করে। গীতা জ্ঞান অনুধাবন করে বুঝা যায় সকল কিছুতেই সাত্ত্বিক ভাব বজায় রেখে চলতে হয়, সাত্ত্বিক খাবার খেতে হয়। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে সাত্ত্বিক খাবার কেন ? এর কারণটা সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনায় খুব ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে
সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম। এখন এই সাত্ত্বিক খাবার খোঁজতে গেলে প্রথম আসবে সুষম এবং প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। কারণ অনুভবে দেখা যায় আমেরিকান, ইউরোপিয়ানরা বুদ্ধিবিকাশ ও জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তাদের প্রধান খাদ্য প্রোটিন জাতীয়। গমে ৯৫% আমিষ/প্রোটিন থাকে। মাংস, ডিম ইত্যাদি তাদের প্রধান খাবার। দুধ সুষম খাদ্য, এটা কারো অজানা নয়। এই দুধে ৩/৪% প্রোটিন রয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় বলা প্রয়োজন। যেকোন খাদ্যই সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। এই উদাহরণ দিতে আমরা দুধকে নির্বাচন করতে পারি। দুধ সাত্ত্বিক খাদ্য। কারণ সাত্ত্বিক সূত্র অনুসারে এটি প্রথম স্থানে। এবার এই দুধ যদি আপনি অতি উষ্ণ ভাবে গ্রহন করেন তাহলে সেটি রাজসিকে পরিণত হচ্ছে। আবার এই দুধ যদি আপনি একসপ্তাহ খোলা স্থানে রেখে দিয়ে তারপর দূর্গন্ধযুক্ত ভাবে পান করেন তাহলে সেটি তামসিক খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। ধরুন আপনি উদ্ভিদ দিয়ে শাখ বা তরকারী রান্না করছেন সেটি সাত্ত্বিক খাবার। কিন্তু লবন দিলেন অধিক মাত্রায়। এখন কিন্তু এটি রাজসিক। আবার এই তরকারি উচ্ছিষ্ট করে যদি খেয়ে নেন তাহলে নিশ্চই তামসিক হয়ে যাচ্ছে। আবার ধরুন, আমদের প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা ভাত খেয়ে সুস্থ থাকি। কিন্তু যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তারা কিন্তু ভাত খেয়ে অসুস্থ অনুভব করবে। অর্থাৎ আমাদের সাত্ত্বিক ভাত তাদের কাছে রাজসিক হিসেবে পরিণত হচ্ছে। গীতা সূত্র অনুসারে মিলিয়ে নিবেন। যাইহোক, তাহলে বুঝা গেল যেকোন খাবার সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। স্থান কাল হিসেবে আপনি কিভাবে সেটা গ্রহন করছেন সেটিই আলোচ্য বিষয়।
কিন্তু সনাতন সমাজের অনেকেই খাদ্যের এই ৩ শ্লোক গুলোর উর্ধে গিয়ে একটি শ্লোকের ব্যখ্যা দিয়ে বলেন ভগবান বলেছে উদ্ভিদ অর্থাৎ নিরামিষ আহার করার জন্য। প্রথমেই এখানে একটি কথা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন যে, উদ্ভিদ নিরামিষ নয়। প্রোটিনের দুটি ভাগ। একটি প্রানিজ অন্যটি উদ্ভিজ্জ। তাই উদ্ভিদ মানেই আমিষ বিহিন হবে এটা মূর্খের প্রলাপ। আমরা গম খাই, শাখ সবজী খাই আমিষ বিহিন হিসেবে কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে প্রায় সকল খাদ্যেই আমিষের উপস্থিতি আছে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে এই আমিষ নিরামিষ ভাগ হলো কিভাবে ? যদি ভগবান বলে থাকেন ‘আমাকে পত্র পুষ্প জল নিবেদন করে গ্রহন করো তাহলে আপনারা এটা বলুন যে উদ্ভিদ অর্থাৎ লতাপাতা জল খাওয়ার জন্য। সেখানে নিরামিষ নাম দিয়ে দেওয়াটা কি মূর্খতারূপ নয় ? আমার জানা মতে আমিষ নেই এমন খাদ্য হলো পিয়াজ আর রসুন। যদি নিরামিষের কথাই বলেন তাহলে তো পিয়াজ রসুন খাওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ এগুলোতে আমিষের ছিটে ফোটাও নেই। এখন আবার আপনারা এখানে নিরামিষের কথা বলবেন না। এখন বলবেন, পিয়াজ রাজসিক খাবার আর রসুন তামসিক খাবার। যদি রাজসিক আর তামসিক হিসেবেই চলেন তাহলে আমিষ নিরামিষ কোথা থেকে নিয়েছেন ? বৈদিক কোন গ্রন্থেই আমি এই আমিষ নিরামিষ শব্দ পাইনি। যাইহোক, যে শ্লোকটির কথা বলছিলাম সেটি গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২৬ তম শ্লোক।
এই শ্লোকের বাংলা অর্থ হলো, ‘‘যিনি আমাকে ভক্তিপূর্বক পত্র, পুষ্প, ফল, জল অর্পণ করেন, মন থেকে প্রযত্নশীল সেই ভক্তের ঐসব সামগ্রী আমি গ্রহন করি’’। ধারণা করা হয় এই শ্লোক থেকেই মূলত নিরামিষ খাওয়ার নিয়মটি এসেছে। শ্লোকটি ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন। প্রথমে বলা হয়েছে যিনি ভক্তিপূর্বক..., শেষের দিকে বলা হয়েছে মন থেকে প্রযত্নশীল। অর্থাৎ আপনি ভগবানকে পত্র, পুষ্প, ফল, জল দিলেই হবে না। সেই সাথে প্রথমেই ভক্তিকে জাগ্রত করতে হবে এবং মন থেকে প্রযত্নশীল হতে হবে। তবেই ভগবান সেটি গ্রহন করবেন। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। ভগবান কি গ্রহন করেন ? কি চায় ভগবান আমাদের কাছে ?
ফুল ফল ? খাওয়া দাওয়া ? নাকি ভক্তের ভক্তি ?? পুরাণ থেকে জানা যায় মহাকালী পরমেশ্বরী ‘মাতঙ্গী’ রূপে এক চণ্ডালিনী ভক্তের এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন। তাহলে কি আমরা বুঝব পরমেশ্বরী এঁটো খাবার পছন্দ করেন ? চিন্তা করুণ, উনি এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন নাকি ভক্তের ভক্তি গ্রহন করেছিলেন ?
মহাভারত থেকে জানা যায়, সঞ্চয়ের স্ত্রী ছিলেন গোবিন্দ ভক্ত। গোবিন্দ যখন উনার গৃহে গিয়েছিলেন তখন উনি এতটাই আবেগপূর্ণ হয়ে গেলেন যে উনি কলা দিতে গিয়ে কলা না দিয়ে কলার খোসা দিয়েছিলেন। আর গোবিন্দ সেই খোসাটুকুই খেয়ে নিয়েছিলেন পরম তৃপ্তিতে! এখন এই ঘঠনা থেকে কি আমরা বুঝে যাব গোবিন্দ কলার খোসা ভালোবাসে ? না। ভগবান আমাদের কাছে কিছু খেতে চান না। উনি আমাদের কাছে ভক্তি চাইছেন। ভক্তের ভক্তিই উনার কাছে পরম চাওয়া। এই বিষয়টা আরো পরিষ্কার হবে যদি আপনি সম্পূর্ণ নবম অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন। নবম অধ্যায়টি রাজগুহ্য যোগ। এই সম্পূর্ণ অধ্যায়ে ভগবান শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে ভক্তির উদয় করতে হয়। কিভাবে ভক্তির মাধ্যমে ভগবান লাভ করা যায় সেই শিক্ষাই শ্রী কৃষ্ণ দিয়েছেন। তাই অকপটে বলা যায় মানুষের খাবার নিয়ে এই অধ্যায়ে শ্রী কৃষ্ণ কোন আলোচনা করেনি। তাছাড়া গীতায় একই প্রসঙ্গ কখনোই দুই অধ্যায়ে বা বারংবার বলা হয়নি।
এই হলো মোট চারটি শ্লোক। এবার ইসকনের গীতায় এই চারটি শ্লোক ছাড়াও মানুষরের খাদ্য সম্পর্কি বাড়তি যে শ্লোকটি পাওয়া যায় সেটি ৩য় অধ্যায়ে ১৪ তম শ্লোকের প্রথম লাইন। এই শ্লোকে অন্নের কথা বলা হয়েছে। চলুন শ্লোকটির প্রথম লাইনটা অর্থ সহ ভালো ভাবে দেখে আসি।
‘‘অন্নদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদন্নসম্ভবঃ’’
মানুষের খাদ্যকেও গীতার ১৭/৮; ১৭/৯; ১৭/১০ এই শ্লোক গুলোতে খাদ্য আলোচনা করেছেন। সেখানে খাবারকে সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। মানুষের চরিত্রকেও সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। যে যেমন চরিত্রের সে তেমন আহার পছন্দ করেন। এমনটাই বলা হয়েছে শ্লোক গুলোতে। যেমন সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনা করতে গিয়ে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন,
‘‘যে সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম সেই গুলো সাত্ত্বিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
রাজসিক খাবারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে,
‘‘তিক্ত, অম্ল, অতি উষ্ণ, অতিলবণাক্ত... সেগুলো রাজসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
তামসিকের বর্ণনায় বলেছেন,
‘‘দূর্গন্ধময়, রসহীন, বাসী, উচ্ছিষ্ট.... সেগুলো তামসিক ব্যক্তিগনের প্রিয়।’’
লক্ষ্যকরুণ, এখানে কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ খাবার নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা করেনি। বলা হয়েছে মানুষের চরিত্র অনুযায়ী সেই সকল খাদ্য তাদের প্রিয় হয়। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন। গীতায় শ্রী কৃষ্ণ সকল কর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। এখন সকল জ্ঞান অনুধাবন করে আপনি নিজ ইচ্ছামত কার্য সম্পন্ন করবেন নিজের উপলব্ধির উপর নির্ভর করে। গীতা জ্ঞান অনুধাবন করে বুঝা যায় সকল কিছুতেই সাত্ত্বিক ভাব বজায় রেখে চলতে হয়, সাত্ত্বিক খাবার খেতে হয়। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে সাত্ত্বিক খাবার কেন ? এর কারণটা সাত্ত্বিক খাবারের বর্ণনায় খুব ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে
সকল আহার আয়ু, বুদ্ধি, বল, আরোগ্য....., পুষ্টিকর, মনোরম। এখন এই সাত্ত্বিক খাবার খোঁজতে গেলে প্রথম আসবে সুষম এবং প্রোটিন জাতীয় খাদ্য। কারণ অনুভবে দেখা যায় আমেরিকান, ইউরোপিয়ানরা বুদ্ধিবিকাশ ও জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তাদের প্রধান খাদ্য প্রোটিন জাতীয়। গমে ৯৫% আমিষ/প্রোটিন থাকে। মাংস, ডিম ইত্যাদি তাদের প্রধান খাবার। দুধ সুষম খাদ্য, এটা কারো অজানা নয়। এই দুধে ৩/৪% প্রোটিন রয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় বলা প্রয়োজন। যেকোন খাদ্যই সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। এই উদাহরণ দিতে আমরা দুধকে নির্বাচন করতে পারি। দুধ সাত্ত্বিক খাদ্য। কারণ সাত্ত্বিক সূত্র অনুসারে এটি প্রথম স্থানে। এবার এই দুধ যদি আপনি অতি উষ্ণ ভাবে গ্রহন করেন তাহলে সেটি রাজসিকে পরিণত হচ্ছে। আবার এই দুধ যদি আপনি একসপ্তাহ খোলা স্থানে রেখে দিয়ে তারপর দূর্গন্ধযুক্ত ভাবে পান করেন তাহলে সেটি তামসিক খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। ধরুন আপনি উদ্ভিদ দিয়ে শাখ বা তরকারী রান্না করছেন সেটি সাত্ত্বিক খাবার। কিন্তু লবন দিলেন অধিক মাত্রায়। এখন কিন্তু এটি রাজসিক। আবার এই তরকারি উচ্ছিষ্ট করে যদি খেয়ে নেন তাহলে নিশ্চই তামসিক হয়ে যাচ্ছে। আবার ধরুন, আমদের প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা ভাত খেয়ে সুস্থ থাকি। কিন্তু যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তারা কিন্তু ভাত খেয়ে অসুস্থ অনুভব করবে। অর্থাৎ আমাদের সাত্ত্বিক ভাত তাদের কাছে রাজসিক হিসেবে পরিণত হচ্ছে। গীতা সূত্র অনুসারে মিলিয়ে নিবেন। যাইহোক, তাহলে বুঝা গেল যেকোন খাবার সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক হতে পারে। স্থান কাল হিসেবে আপনি কিভাবে সেটা গ্রহন করছেন সেটিই আলোচ্য বিষয়।
কিন্তু সনাতন সমাজের অনেকেই খাদ্যের এই ৩ শ্লোক গুলোর উর্ধে গিয়ে একটি শ্লোকের ব্যখ্যা দিয়ে বলেন ভগবান বলেছে উদ্ভিদ অর্থাৎ নিরামিষ আহার করার জন্য। প্রথমেই এখানে একটি কথা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন যে, উদ্ভিদ নিরামিষ নয়। প্রোটিনের দুটি ভাগ। একটি প্রানিজ অন্যটি উদ্ভিজ্জ। তাই উদ্ভিদ মানেই আমিষ বিহিন হবে এটা মূর্খের প্রলাপ। আমরা গম খাই, শাখ সবজী খাই আমিষ বিহিন হিসেবে কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে প্রায় সকল খাদ্যেই আমিষের উপস্থিতি আছে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে এই আমিষ নিরামিষ ভাগ হলো কিভাবে ? যদি ভগবান বলে থাকেন ‘আমাকে পত্র পুষ্প জল নিবেদন করে গ্রহন করো তাহলে আপনারা এটা বলুন যে উদ্ভিদ অর্থাৎ লতাপাতা জল খাওয়ার জন্য। সেখানে নিরামিষ নাম দিয়ে দেওয়াটা কি মূর্খতারূপ নয় ? আমার জানা মতে আমিষ নেই এমন খাদ্য হলো পিয়াজ আর রসুন। যদি নিরামিষের কথাই বলেন তাহলে তো পিয়াজ রসুন খাওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ এগুলোতে আমিষের ছিটে ফোটাও নেই। এখন আবার আপনারা এখানে নিরামিষের কথা বলবেন না। এখন বলবেন, পিয়াজ রাজসিক খাবার আর রসুন তামসিক খাবার। যদি রাজসিক আর তামসিক হিসেবেই চলেন তাহলে আমিষ নিরামিষ কোথা থেকে নিয়েছেন ? বৈদিক কোন গ্রন্থেই আমি এই আমিষ নিরামিষ শব্দ পাইনি। যাইহোক, যে শ্লোকটির কথা বলছিলাম সেটি গীতার ৯ম অধ্যায়ের ২৬ তম শ্লোক।
এই শ্লোকের বাংলা অর্থ হলো, ‘‘যিনি আমাকে ভক্তিপূর্বক পত্র, পুষ্প, ফল, জল অর্পণ করেন, মন থেকে প্রযত্নশীল সেই ভক্তের ঐসব সামগ্রী আমি গ্রহন করি’’। ধারণা করা হয় এই শ্লোক থেকেই মূলত নিরামিষ খাওয়ার নিয়মটি এসেছে। শ্লোকটি ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন। প্রথমে বলা হয়েছে যিনি ভক্তিপূর্বক..., শেষের দিকে বলা হয়েছে মন থেকে প্রযত্নশীল। অর্থাৎ আপনি ভগবানকে পত্র, পুষ্প, ফল, জল দিলেই হবে না। সেই সাথে প্রথমেই ভক্তিকে জাগ্রত করতে হবে এবং মন থেকে প্রযত্নশীল হতে হবে। তবেই ভগবান সেটি গ্রহন করবেন। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। ভগবান কি গ্রহন করেন ? কি চায় ভগবান আমাদের কাছে ?
ফুল ফল ? খাওয়া দাওয়া ? নাকি ভক্তের ভক্তি ?? পুরাণ থেকে জানা যায় মহাকালী পরমেশ্বরী ‘মাতঙ্গী’ রূপে এক চণ্ডালিনী ভক্তের এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন। তাহলে কি আমরা বুঝব পরমেশ্বরী এঁটো খাবার পছন্দ করেন ? চিন্তা করুণ, উনি এঁটো খাবার গ্রহন করেছিলেন নাকি ভক্তের ভক্তি গ্রহন করেছিলেন ?
মহাভারত থেকে জানা যায়, সঞ্চয়ের স্ত্রী ছিলেন গোবিন্দ ভক্ত। গোবিন্দ যখন উনার গৃহে গিয়েছিলেন তখন উনি এতটাই আবেগপূর্ণ হয়ে গেলেন যে উনি কলা দিতে গিয়ে কলা না দিয়ে কলার খোসা দিয়েছিলেন। আর গোবিন্দ সেই খোসাটুকুই খেয়ে নিয়েছিলেন পরম তৃপ্তিতে! এখন এই ঘঠনা থেকে কি আমরা বুঝে যাব গোবিন্দ কলার খোসা ভালোবাসে ? না। ভগবান আমাদের কাছে কিছু খেতে চান না। উনি আমাদের কাছে ভক্তি চাইছেন। ভক্তের ভক্তিই উনার কাছে পরম চাওয়া। এই বিষয়টা আরো পরিষ্কার হবে যদি আপনি সম্পূর্ণ নবম অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেন। নবম অধ্যায়টি রাজগুহ্য যোগ। এই সম্পূর্ণ অধ্যায়ে ভগবান শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে ভক্তির উদয় করতে হয়। কিভাবে ভক্তির মাধ্যমে ভগবান লাভ করা যায় সেই শিক্ষাই শ্রী কৃষ্ণ দিয়েছেন। তাই অকপটে বলা যায় মানুষের খাবার নিয়ে এই অধ্যায়ে শ্রী কৃষ্ণ কোন আলোচনা করেনি। তাছাড়া গীতায় একই প্রসঙ্গ কখনোই দুই অধ্যায়ে বা বারংবার বলা হয়নি।
এই হলো মোট চারটি শ্লোক। এবার ইসকনের গীতায় এই চারটি শ্লোক ছাড়াও মানুষরের খাদ্য সম্পর্কি বাড়তি যে শ্লোকটি পাওয়া যায় সেটি ৩য় অধ্যায়ে ১৪ তম শ্লোকের প্রথম লাইন। এই শ্লোকে অন্নের কথা বলা হয়েছে। চলুন শ্লোকটির প্রথম লাইনটা অর্থ সহ ভালো ভাবে দেখে আসি।
‘‘অন্নদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদন্নসম্ভবঃ’’
শব্দার্থঃ অন্নদ্ = অন্ন থেকে, ভবন্তি = উৎপন্ন হয়,
ভূতানি = প্রাণী বা জড় দেহ, পর্জন্যাদ = বৃষ্টি থেকে। অন্ন = অন্ন, সম্ভবঃ = উৎপন্ন হয়।
ভূতানি = প্রাণী বা জড় দেহ, পর্জন্যাদ = বৃষ্টি থেকে। অন্ন = অন্ন, সম্ভবঃ = উৎপন্ন হয়।
প্রকৃত অনুবাদ = বৃষ্টি থেকে অন্ন উৎপন্ন হয়। অন্ন থেকে প্রাণী উৎপন্ন।
এখন এই শ্লোক থেকে গীতা যথাযথ অর্থাৎ ইসকনের গীতা অনুবাদ লিখেছে, ‘‘অন্ন খেয়ে প্রাণীগন জীবন ধারণ করে।’’
উনারা এই অন্ন খেয়ে জীবন ধারণ কোথায় পেয়েছেন সেটা উনারাই জানেন।
তো, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল গীতায় মানুষের খাদ্য সম্পর্কিত সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আপনি কেমন আহার করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত। তবে অবশ্যই চেস্টা করবেন সাত্ত্বিক আহার গ্রহন করার জন্য। অর্থাৎ, শরিরের সম্পূর্ণ সুস্থতা, মেধা, জ্ঞান বৃদ্ধি হয় এমন খাদ্য গ্রহন করুন।