Sunday, July 10, 2022

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত ( ইসকন) এর অশাস্ত্রীয় কাল্পনিক গুরু পরম্পরা

 

খুব ছোট লেখা এবং খুব সংক্ষেপে যাতে পাঠক এক নজরে বুঝতে পারে। এই কথাগুলো যেকোন ইসকনের আখড়ায় ( মন্দির না) গিয়ে জিজ্ঞাসা করে দেখুন। এই অশাস্ত্রীয় পাপীগুলো চুপ করে থাকবে নাহয় উলটাপালটা যুক্তি প্রদর্শন করবে। 
কেশব দত্ত ঠক্কুর মহাশয় ছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ( পড়ুন কৃৈষ্ণব )পন্থার এক অন্যতম গুরু বা Pioneer বলা যায়। তো উনার ছেলে শ্রী বিনোদ দত্ত তাঁর বাবার পরম্পরায় দীক্ষিত না হয়ে উনি এদেরই আরেক পরম্পরার গুরু গৌড় কিশোরদাস  বাবাজির নিকট দীক্ষা নেন। এইদিকে গৌড় কিশোর দাস বাবাজি হলেন জগন্নাথ দাস বাবাজির দীক্ষিত। বলা হয় জগন্নাথ দাস বাবাজি ,গৌড়িয় কৃৈষ্ণবদের অন্যতম পন্ডিত শ্রী বলদেব বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের পরম্পরার একজন ছিলেন। মজার ব্যাপার হল যাদের আপনারা সন্ন্যাসী বলে জানেন এরা আসলে গৃহস্থ ছিলেন। এই যে মহা পন্ডিত শ্রী বলদেব বিদ্যাভূষণ, উনি কিন্তু গৃহস্থ ছিলেন। মানে উনার স্ত্রী সন্তান ছিল। এই সমস্থ সন্ন্যাসকে আতুড় সন্ন্যাস বলা হয়। আর এই কথা আমার না উপনিষদ বাক্য। 

যাইহোক, বিনোদ দত্ত বাবু কি করলেন? গৌড় কিশোর দাস বাবাজি গত হবার পর নিজে ব্রাহ্মন ডেকে উনার ছবি সামনে রেখে বিরজা করান এবং এরপর সন্ন্যাস নেন। কি হাস্যকর চিন্তা করেন। সাধারণত গুরু সবার সামনে এবং সর্ব সম্মুখকে স্বাক্ষী মেনে তাঁর শিষ্যকে দীক্ষা দেন এবং সেটাই হাজার হাজার বছর থেকে হয়ে আসছে আর এটাই শাস্ত্রীয় নিয়ম। কিন্তু এই বিনোদ বাবু কি করলেন? গায়ের জোরে বলা যায় নিজেই নিজের সন্ন্যাস দীক্ষা সম্পন্ন করলেন। এইখানে মূর্খের দল ট্যালিপ্যাথি, স্বপ্ন সহ অনেক হাস্যকর যুক্তি টানবে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন একে জোড়াতালি বলে। যখন এরা ধরা খায় তখন এরা এইসব বলেই পার পায়। বাস্তবে এই ধরণের অধিকার শাস্ত্র আমাদের কাউকে দেয় না। তাছাড়া বিরজা সন্ন্যাসে অব্রাহ্মণের অধিকার নাই।  তো এইসব কুকীর্তি শুনে আমাদের কেশব দত্ত ঠক্কুর মহাশয় অনেক রাগান্বিত হয়ে যান। উনি তাঁর সন্তানকে প্রশ্ন করেন 

"তুমি তো ব্রাহ্মণ নউ! আমি তা নই। তো তুমি কোন যুক্তিতে এই ব্রাহ্মণের ন্যায় সন্ন্যাস নিলে?"

এর উত্তরে উনি কিছুই বলতে পারেন নাই। ফলে কেশব বাবু উনার সন্তানকে ত্যাজ্য পুত্র করেন । এখন কথা হল সরস্বতী পরম্পরা যেহেতু ইসকনী কৃৈষ্ণবদের নাই তাই এরা এই উপাধি লিখতে পারে না। ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী বলে যার চুরণ সাধারণ ভক্তদের খাওয়ানো হয় তা আসলে ভুল। ইনাদের পরম্পরা হলেন সোজা কথায় গৌড় কিশোর দাস বাবাজি । সন্ন্যাস পরম্পরা নিয়ে এরা যে ফাইযলামী আর গায়ের জোরে অতিরিক্ত পরম্পরা যুক্ত করেছেন সেখানে গুরুর কোন অস্তিত্বই নাই।  এরজন্যই এই ইসকনের যে পরম্পরা তা একটি ভ্রান্ত পরম্পরা। গৌড়ীয় পরম্পরার সাথে এই ইসকনের পরম্পরার কোন সম্পর্ক নেই। অতিরক্ত যে পরম্পরা সেখানে যোগ হয়েছে এর কারণে এদের যে পরম্পরা সেটা একটা দূষিত পরম্পরা। আর কলিতে এটাই যে স্বাভাবিক তা শাস্ত্রবাক্য সিদ্ধ। 



এবার আসি দ্বিতীয় যুক্তিতে। যারা আরও ডিটেলে পড়তে চান এঁদের জন্য।


ইসকনীদের দাবী এরা হলেন চৈতন্য ভারতীর ( এরা মহাপ্রভু বলেন) অনুসারী। উনার দেখানো পথেই এরা চলেন। এখন আসুন দেখে নেই এই চৈতন্য ভারতী কে ছিলেন? এবং উনার পরম্পরা কি? 

প্রথমে দেখে নেই আদি শংকর প্রবর্তিত গুরু পরম্পরা।  (ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায় দ্বিতীয় ভাগ, পৃষ্ঠা-১৪) এর মতে, 


আনন্দগিরি-কৃত শঙ্করদিগ্বিজয় গ্রন্থে বলা হয়েছে–


শৃঙ্গপুরসমীপে তুঙ্গভদ্রানদীতীরে চক্রং নির্ম্মায় তদগ্রে সরস্বতীং নিঘায় এবমাকল্পং স্থিরাভব মদাশ্রমে ইত্যাজ্ঞাপ্য নিজমঠং কৃত্বা তত্র দেব্যাঃ পীঠনির্ম্মাণং কৃত্বা ভারতীসম্প্রদায়ং নিজশিষ্যাঞ্চকার। –(শঙ্করদিগ্বিজয়)

অর্থাৎ : তুঙ্গভদ্রা-নদীতীরে শৃঙ্গপুরের নিকটে চক্র নির্মাণ করিয়া তাহার সম্মুখে সরস্বতীদেবীকে প্রতিষ্ঠিত করিলেন, এবং বলিলেন, “কল্পান্ত পর্যন্ত আমার আশ্রমে অবস্থিতি কর।” পরে নিজ মঠ নির্মাণ ও তাহাতে দেবীর পীঠ প্রস্তুত করিয়া ভারতী নামক শিষ্য-সম্প্রদায় প্রবর্তিত করিলেন।

লিখিত আছে, শঙ্করাচার্যের শিষ্যেরা তাঁর আদেশানুসারে নানা দেশে ভ্রমণ ও সেখানকার পণ্ডিতদের সাথে বিতর্ক-বিচারে অবতীর্ণ হয়ে শিব, বিষ্ণু প্রভৃতি সাকার দেবতার উপাসনা প্রচার করেন। যেমন–

এবমশেষদিগ্বিজয়ং কৃত্বা তত্তদ্দেশস্থান্ কাংশ্চিত্ পঞ্চাক্ষরিহামন্ত্ররাজ্যে পদেশাদিনা তন্মতাবলম্বিনঃ করোতি পরমতকালানলঃ শঙ্করচার্য্যশিষ্যঃ। –(আনন্দগিরি-কৃত শঙ্করদিগ্বিজয়)

অর্থাৎ : শঙ্করাচার্যের শিষ্য পরমতকালানল অশেষরূপে দিগ্বিজয় করিয়া সেই সেই দেশের অনেক লোককে পঞ্চাক্ষর মন্ত্রের উপদেশ দ্বারা শৈবমতাবলম্বী করিতে থাকেন।


এভাবে দিবাকর আচার্য দ্বারা সৌর-মত, ত্রিপুর-কুমার দ্বারা শাক্ত-মত, গিরিজাপুত্র দ্বারা গাণপত্য-মত ও বটুকনাথ দ্বারা ভৈরব-উপাসনা প্রচারিত হয় বলে লিখিত আছে। তাঁরা সবাই পরম গুরু শঙ্করাচার্যের শিষ্য। তাঁর প্রধান চার শিষ্য হলেন– পদ্মপাদ, হস্তামলক, মণ্ডন ও তোটক। পদ্মপাদের দুই শিষ্য– তীর্থ ও আশ্রম। হস্তামলকের দুই শিষ্য– বন ও অরণ্য। মণ্ডনের তিন শিষ্য– গিরি, পর্বত ও সাগর। তোটকের তিন শিষ্য– সরস্বতী, ভারতী ও পুরি। 

এই শব্দগুলো উপাধি-বিশেষ। লিখিত আছে, বিশেষ বিশেষ লক্ষণানুসারে এই দশ শিষ্যের তীর্থাদি দশটি নাম ও এই দশ জন থেকেই দশনামী সন্ন্যাসীদের তীর্থাদি দশ সংজ্ঞা উৎপন্ন হয়েছে। 

এবার চৈতন্যদেবের জীবনী দিকে তাকাই। 

উনার সন্ন্যাসের দীক্ষাগুরু ছিলেন কেশব ভারতী। উনি কুলিয়াতে যা বর্ধমান পশ্চিম বঙ্গে অবস্থিত ।উনার পূর্ব নাম ছিল কালীনাথ আচার্য। তিনি মাধবেন্দ্ৰ পুরীর শিষ্য ছিলেন। শ্ৰীচৈতন্যদেব তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়ে সন্ন্যাসব্রত গ্ৰহণ করেন। এটা পরিস্কার যে উনি দশনামী সম্প্রদায়ের ছিলেন। এর জন্য চৈতন্য চরিতামৃততে দেখিঃ 

উনি নিজেই শঙ্করাচার্য্যকে গুরু মানতেন।।

পাশাপাশি যারা শ্রীধরকে মানে না, তাদের বেশ্যা বলে গালিগালাজ করতেন।।

" প্রভু হাসি কহে স্বামী না মানে যেইজন

বেশ্যার ভিতরে তারে করয়ে গণন "

------- চৈ.চঃ অন্তলীলা, সপ্তম পরিচ্ছদ, ১০০---------


"শ্রীধরের অনুগত যে করে লিখন

সব লোক মান্য করি করয়ে গ্রহণ।"

-------চৈ.চঃ অন্তলীলা, সপ্তম পরিচ্ছদ, ১২০----------


স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু ভাগবত পুরানের ক্ষেত্রে শ্রীধর স্বামীর ভাষ্যকেই শ্রেষ্ঠ বলেছেন।

এবং এও বলেছেন, "যে ভাগবতে শ্রীধর স্বামীর ভাষ্য মানে না তাকে তোমরা বেশ্যার মধ্যে গণন কর।"

"শ্রীধর-উপরে গর্ব যে কিছু করিবে।

অন্তব্যন্ত লিখন সে লোকে না মানিবে।"

[অন্তব্যন্ত লিখন= অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত অর্থাৎ, শাস্ত্রের মীমাংসা বা সিদ্ধান্ত না বুঝে যথেচ্ছ ভাবে লেখা]

শ্রী ধর স্বামী ছিলেন ১১৬ তম গোবর্ধন পুরীপিঠাধীশ শঙ্করাচার্য্য।।


মাধবেন্দ্র পুরী মহাশয় ছিলেন লক্ষীপতি তীর্থের শিষ্য । ইনারা সবাই ছিলেন আচার্য্য শংকর প্রবর্তিত ১০ নামী সম্প্রদায়ের । প্রমাণ এদের নামের টাইটেলেই আছে। তীর্থ, পুরী , ভারতী ইত্যাদী যত টাইটেল বা উপাধি দেখা যায় এরা সবাই ১০ নামীর অন্তর্ভূক্ত। যদিও গৌড়িয়রা এঁদের সবাইকে মাধ্বচার্য্যের শিষ্য বলে দাবী করেন কিন্তু এই দাবী খুব খোঁড়া এবং হাস্যকর বটে। কারণ মাধ্বচার্য্য বা আনন্দ তীর্থ  মহাশয়ের যে সময় তা মধ্যযুগ  (১২৩৮-১৩১৭) এবং উনি নিজে যে তীর্থ উপাধি পান সেটা অদ্বৈত মঠের অধীন ১০ নামী সম্প্রদায় থেকে পান। তাহলে এইটা পরিষ্কার যে উনাদের গোড়াপত্তনকারী নিজেই দশনামীর অন্তর্ভুক্ত। মধ্যযুগীয় একজন ব্যাক্তি থেকে কিভাবে হাজার হাজার বছরের সনাতন ধর্মের পরম্পরার শুরু হয়? সাধারণ কমন সেন্স দিয়ে ধরলেই এঁদের ভন্ডামি ধরা যায়। তাছাড়া এঁদের যে ভাগবত গীতার হাস্যকর গুরু পরম্পরা সেটাও একটি কাল্পনিক মত। সে নিয়ে আলাদা লেখার ইচ্ছা আছে। 

এবার তাহলে ভাবুন,  শঙ্করাচার্যের সিদ্ধান্তকে খন্ডন করার অর্থ হলো চৈতন্য মহাপ্রভুকে কাঁদানো, তাই নয় কি! সোজা কথায় মহাপ্রভুকে গালি দেওয়া। কি রকম হাস্যকর ব্যাপার যার নাম ব্যবহারের মাধ্যমে গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের প্রসিদ্ধি হয়েছে, তাঁর(চৈতন্য মহাপ্রভুর) সিদ্ধান্তকেই অস্বীকার করা যে চরম অজ্ঞতা এটা আপনাদের বুঝতে হবে।


আরেকটা মজার ব্যাপার হল,চৈতন্য মহাপ্রভু কতগুলো গ্রন্থ লিখেছেন সেটা নিয়ে ওনাদের নিজেদের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে ।  ক্ষোদ চৈতন্য চরিতামৃত চৈতন্য ভারতী মারা যাবার ২৪ বছর পরে লিখা হয় । যাইহোক এই নিয়ে নাহয় আরেকদিন লিখবো। সেখানে উল্লেখিত শিক্ষাষ্টকম যা চৈতন্য ভারতীর কতৃক একমাত্র রচনা। মজার ব্যাপার হল  এঁদের মাঝে আবার তিনি যে শিক্ষাষ্টক্(আটটি শ্লোকের) রচনা করছেন এটা নিয়ে কোন মতবিরোধ নেই।এবার শিক্ষাষ্টক্ এর প্রথম শ্লোকের যে সিদ্ধান্ত তা শঙ্করাচার্যের সিদ্ধান্ত নয় কি! এই শিক্ষাষ্টক উনি ভজ গোবিন্দম ( আদি গুরু শংকরের রচনা) এর সিদ্ধান্ত থেকেই রচনা করেন। এবার দেখুন

 ―"চেতদর্পন মার্জনম্ অন্তে― শ্রীকৃষ্ণ সংকীর্তনম্"― অর্থাৎ চিত্তরূপী দর্পনের(যা পূর্বজন্মের সংস্কার,অহংকার ক্রোধ ইত্যাদির দরুন ময়লা হয়ে গেছে) পরিষ্কার শ্রীকৃষ্ণ সংকীর্তনের মাধ্যমে হয়(এটাই সংক্ষেপে প্রথম শ্লোকের অর্থ)।এবার একটু বিচার করুন তো, এটি কার সিদ্ধান্ত? উপনিষদ তথা শঙ্করাচার্য্যের সিদ্ধান্ত নয় কি? এবার শুনুন ও বিচার করুন― অন্যের মুখ দেখার জন্য শুধু নেত্র হলেই চলে নাকি দর্পণের প্রয়োজনীয়তা আছে?না নেই।শুধু নেত্র হলেই হয়।কিন্তু নিজের মুখ দেখতে হলে নেত্রের সাথে দর্পনের প্রয়োজন পড়ে। যদি চৈতন্য মহাপ্রভুর দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ কেবলমাত্র উনার উপাস্যই বা আত্মীয়ই হত তাহলে তিনি শ্রীকৃষ্ণের দর্শনের জন্য কেবল নেত্রের কথাই উল্লেখ করতেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ উনার দৃষ্টিতে নিজ-আত্মাস্বরূপ বিধায়, আত্মাস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণের দর্শনের জন্য চিত্তরূপী দর্পনের পরিষ্কারের প্রয়োজনীয় পড়েছে।



সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts