Friday, June 22, 2018

সনাতন শাস্ত্রে বার , মাস ও নক্ষত্র

ছোটবেলায় পড়েছিলাম সাত দিনে এক সপ্তাহ। আর সপ্তাহের সাতটি দিন হচ্ছে শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র। এ বারগুলো আমাদের জীবনে এই ক্রমানুসারে আসে। অর্থাৎ শনির পর রবিবার, রবির পর সোমবার। সোমের পর মঙ্গল। এভাবে সাতটি দিনে সাতটি বার। কখনোই এ অনুক্রমের ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু কেন? শনির পর সোমবার হলে কী দোষ হত?

 সপ্তাহের দিনগুলোর নাম সৌরজগতের গ্রহ আর উপগ্রহদের দিয়েই চিহ্নিত (যদিও রবি বা সূর্য একটি নক্ষত্র)। তাই বলে সৌরমণ্ডলে এদের অবস্থানের সাথে বারগুলোর অনুক্রমের কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই। যেমন ধরা যাক, বুধের কথা। এটি সূর্যের নিকটতম গ্রহ। দ্বিতীয় নিকটতম গ্রহ হচ্ছে শুক্র। অথচ সপ্তাহের দিনে বুধবারের পর শুক্রবার আসে না, আসে বৃহস্পতিবার। এর কারণ কি?

 বারগুলোর এ অনুক্রমটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও প্রচলিত। তবে যে সব ভাষায় লাতিনের প্রভাব আছে সেগুলোতে কিছু পরিবর্তন রয়েছে, গ্রহদের নামের জায়গায় সেই গ্রহদের সাথে জড়িত রোমান দেবদেবীর নাম ঢুকে পড়েছে। আবার ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় এসেছে অন্য সভ্যতার দেবদেবীর নাম। যেমন, রোমানদের কাছে বৃহস্পতি যেমন আকাশের দেবতা, তেমনই ভাইকিংদের বজ্রের দেবতা ‘থর’। তাই বৃহস্পতিবার ইংরেজিতে হয়ে গেছে ‘ঞযঁৎংফধু’ বা ‘ঞযড়ৎ’ং ফধু’।

 এবার আসা যাক সপ্তাহের বারগুলোর অনুক্রম বিশ্লেষণে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে এই বারের সাথে গ্রহদের সম্বন্ধ ব্যাবিলনে খুঁজে পাওয়া যায়। তখন ব্যাবিলনবাসীরা আকাশের সাতটি জ্যোতিষ্ক সূর্য, চন্দ্র বা সোম, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিকে ভাবত একেকজন দেবদেবী। তারা মনে করত এ জ্যোতিষ্কগুলো মানবজীবনে বিস্তর প্রভাব বিস্তার করে। তারা এই জ্যোতিষ্কগুলোকে সাজিয়েছিল আকাশে এদের গতি অনুসারে, পৃথিবী থেকে যে রকমটি মনে হয় (চন্দ্র ছাড়া আসলে কোন বস্তু যদিও পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে না)। যেমন পৃথিবীর আকাশে একই জায়গায় ফিরে আসতে শনির লাগে সবচেয়ে বেশি সময়, ২৯ বছর। এরপর আসে বৃহস্পতি (১২ বছর), মঙ্গল (৬৮৭ দিন), সূর্য (৩৬৫ দিন), শুক্র (২২৫ দিন), বুধ (৮৮ দিন), আর চাঁদ (২৭ দিন)। এই ক্রমটি থেকেই আমরা বারের ক্রম পেতে পারি। এজন্যে কোন একটি দিনে শুরু করে তার পরের দুটি গ্রহ ছেড়ে দিতে হবে। যেমন যদি শনিবার দিয়ে শুরু করি, তা হলে এরপরের বৃহস্পতি ও মঙ্গলকে ছেড়ে দিলে পাব রবিবার। তারপর রবিকে বিবেচনা করে পরবর্তী শুক্র ও বুধ ছেড়ে দিয়ে পাব চাঁদ অর্থাৎ সোমবার।

 সাপ্তাহিক বারের এ নিয়মের উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, রোমান ইতিহাস লেখক প্লুটার্কের ১০০ খ্রিস্টাব্দে লেখা একটি বইয়ের সূচিপত্রের পাতায় তার একটি প্রবন্ধের কথা জানা যায়, যার বিষয় ছিল, ‘বারগুলো গ্রহদের ক্রমানুযায়ী সাজানো হয় কেন?’ সেই বইটি অবশ্য কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আরেকজন ইতিহাস রচয়িতা, দিও ক্যাসিওসের লেখায় তখনকার দিনের জ্যোতিষীদের একটি প্রচলিত প্রথার কথা জানা যায়। এই প্রথা অনুসারে, যা মনে করা হয় আলেকজান্দ্রিয়াতে শুরু হয়েছিল, দিনের প্রতিটি ঘণ্টাকে এই সাতটি জ্যোতিষ্কদের নামে চিহ্নিত করা। আর দিনের প্রথম ঘণ্টার সঙ্গে জড়িত গ্রহকে ভাবা হত সেইদিনের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী গ্রহ এবং সেই দিনটিকে গ্রহের নাম দেয়া হত। জ্যোতিষীদের এই বিশ্বাসই আমাদের ভাষায় বারগুলোকে এখনকার মত সাজিয়েছে।

 উল্লেখ্য, দিনে ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন সাতটি গ্রহের সাতজন দেবতা। প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টার ভার যদি শনির হাতে দেয়া হয় (যেহেতু ব্যাবিলনীয় তালিকায় শনি সবচেয়ে উপরে) তাহলে এর পরের ঘণ্টাগুলোর ‘অধিকর্তা’ হবে একে একে বৃহস্পতি, মঙ্গল, রবি, শুক্র, বুধ ও চাঁদ। কিন্তু ২৪কে ৭ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকে তিন। তাই ২২, ২৩, ২৪ নম্বর ঘণ্টার নাম হবে আবার শনি, বৃহস্পতি আর মঙ্গলের নাম। আর তা হলে ২৫তম ঘণ্টা, যেটা পরের দিনের প্রথম ঘণ্টা হবে, সেটা হবে রবির নামে চিহ্নিত। তাই শনিবারের পরের দিনের নাম হবে রবিবার। ঠিক একই নিয়মে দেখা যাবে ২৯তম ঘণ্টার (তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টা) ঘরে থাকবে চন্দ্র, আর তৃতীয় দিনের নাম হবে সোমবার।

 প্রাচীন ভারতে সপ্তাহ, ঘণ্টা ইত্যাদির ব্যবহারে গ্রিক আর ব্যাবিলনীয় সভ্যতার প্রভাব পড়েছে বলে ইতিহাস রচয়িতরা মনে করেন। আলেকজান্ডারের এশিয়া বিজয়ের পর ইউরোপ, মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতের আরও যোগাযোগ বাড়ে। তাই বর্তমানের বেশিরভাগ ভাষায় একই ধরনের দিনের ক্রম সাজানো আছে। আশা করা যায়, এ ক্রম চিরকালই অবিকৃত থাকবে।



 বাংলা সাতটি বারের নাম আমরা সকলেই জানি,
সাতটি গ্রহের নামে নামকরণ করা রবি, সোম/চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, এবং শনিবার,
এই ধারণা মোটামুটি সবারই জানা আছে,
কিন্তু বাংলা মাসের নামকরণ কিসের থেকে হয়েছে তা সবার জানা দরকার, এই নাম করন হয়েছিল রাশিচক্র থেকে যে বারটি রাশির কথা বলা হয়েছে, সে গুলি বেষ্টন করে ২৭ টি নক্ষত্রপুঞ্জ রয়েছে। ৩৬০ ডিগ্রিতে যদি ২৭ টি নক্ষত্র থাকে তবে এক একটি নক্ষত্রের ব্যপ্তি ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট করে অর্থাৎ মেষরাশির শুরু থেকে ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট অন্তর পর পর একটি করে নক্ষত্র রয়েছে। নক্ষত্রগুলির নাম ও সংখ্যা হ'ল - অশ্বিনী (১); ভরণী (২); কৃত্তিকা (৩); রোহিণী (৪); মৃগশিরা (৫); আর্দ্রা (৬); পুনর্বসু (৭); পুষ্যা (৮); অশ্লেষা (৯); মঘা (১০); পূর্বফাল্গুনী (১১); উত্তরফাল্গুনী (১২); হস্তা (১৩); চিত্রা (১৪); স্বাতী (১৫); বিশাখা (১৬); অনুরাধা (১৭); জ্যেষ্ঠা (১৮); মূলা (১৯); পূর্বাষাঢ়া (২০); উত্তরাষাঢ়া (২১); শ্রবণা (২২); ধনিষ্ঠা (২৩); শতভিষা (২৪); পূর্ব্বভাদ্রপদ (২৫); উত্তরভাদ্রপদ (২৬); রেবতী (২৭)।
এই নক্ষত্রের মধ্যে পূর্ণিমার সময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে অবস্থান করত সেই নক্ষত্রের নাম অনুসারে মাসের নামকরণ করা হয়েছে,
যেমন সূর্য মেষাদি বিন্দু অতিক্রম করে বছরের প্রথম পূর্ণিমার চন্দ্র বিশাখা নক্ষত্রে অবস্থান করত এইভাবে যথাক্রমে,
 বিশাখা =বৈশাখ
জ্যেষ্ঠা=জৈষ্ঠ
পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া =আষাঢ়
শ্রবণা =শ্রাবন
পূর্বভাদ্রপদ ও উত্তরভাদ্রপদ = ভাদ্র
অশ্বিনী=আশ্বিন
কৃত্তিকা=কার্তিক
আদ্রা= অগ্রহায়ন
পুষ্যা=পৌষ
মঘা=মাঘ
পুর্বফল্গুনী ও উত্তরফল্গুনী= ফাল্গুন
চিত্রা=চৈত্র
কিন্তু বর্তমানে অয়নচলনের কারনে নক্ষত্র অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে

বাল্মীকি রামায়ণ ও কৃত্তিবাস রামায়ণের যে পার্থক্য গুলো সহজেই পাওয়া যায়...


১। বাল্মীকি রামায়ণের মা সীতা আর কৃত্তিবাস রামায়ণের মা সীতার মাঝে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বাল্মীকির রামায়ণে মা সীতা বীরাঙ্গনা। অপহরণকালে তিনি ক্রুদ্ধা সিংহিনীর মত গর্জন করে বলছেন,
‘ধিক্ তে শৌর্য্যঞ্চ সত্ত্বঞ্চ ষৎ ত্বয়া কথিতং তদা’।
আর অন্যদিকে কৃত্তিবাসের বর্ণনা হলো,
‘জানকী কাঁপেন যেন কলার বাগুড়ি’।
বুঝলেন কিছু ? বাল্মীকির রামায়ণে মা সীতা রাবণের সাথে রেগে তর্ক করছেন, গর্জন করছেন। অপরদিকে কৃত্তিবাস লিখলেন মা সীতা অপহরণকালে ভয়ে কাঁপছে! একজন অবলা স্বরূপ।
২। বাল্মীকি রামায়ণে বাল্মীকি একজন তপস্বী ছিলেন। উনি রাময়ণের প্রথম শ্লোকেই একজন তপস্বী। কিন্তু কৃত্তিবাস রামায়ণে বাল্মীকি ছিলেন রত্নাকর দস্যু! মরা মরা জপ করে বাল্মীকি হয়েছেন! এমন কথা বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
৩। কৃত্তিবাস রামায়ণে রামের দূর্গাপূজার উল্লেখ রয়েছে বা অকাল বোধনের কথা আছে। এই দূর্গাপূজার কথাও বাল্মীকি রামায়ণে নেই!
৪। কৃত্তিবাস রামায়ণে পাওয়া যায় শ্রী রামের জন্মের ৬০ হাজার বছর পূর্বে রামায়ণ রচনা হয়। এটাও মিথ্যা। কারণ বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় নারদকে বাল্মীকি প্রশ্ন করছেন,
‘কোন্বস্মিন্ সাম্প্রতং লোকে গুনবান্ কশ্চ বীর্য্যবাণ্’ এই প্রশ্ন থেকেই বুঝা যায় রামায়ণ রচনাকালে শ্রী রাম তখন রাজত্ব করছেন।
মূল রামায়ণে স্পষ্ট বলা আছে,
‘প্রাপ্ত রাজস্য রামস্য বাল্মীকির্ভগবান ঋষীঃ।’
(আদিকাণ্ড, ৪/১)।।
৫। কৃত্তিবাস রামায়ণে পাওয়া যায়, যজ্ঞ রক্ষার জন্য বিশ্বামিত্রের সাথে রাম লক্ষণকে পাঠাতে হবে জেনে রাজা দশরথ বিশ্বামিত্রের সাথে ছলনা করেন। অথচ বাল্মীকি রামায়নে দশরথ প্রসন্নচিত্তে, নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে বিশ্বামিত্রের সাথে রাম লক্ষণকে পাঠিয়েছিলেন।




৬। কৃত্তবাস রামায়ণে, গৌতমপত্নী অহল্যা পাথর হয়েছিলেন। রামের চরণ স্পর্শে তিনি মনুষ্য শরির প্রাপ্ত হন। অথচ বাল্মীকি রাময়ায়নে পাই, অহল্যা দেবী লোকচুক্ষুর অন্তরালে থেকে কঠোর ব্রহ্মচারিণী জীবন যাপন করেছিলেন।
‘বাতভক্ষ্যা নিরাহারা তপ্যন্তী ভস্মশায়িনী’।।
৭। কৃত্তিবাস রামায়নে, রাবণ বিভিষণকে পদাঘাত করায় সে রামের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু বাল্মীকি রামায়ণে রাবন কেবল ক্রোধী হয়ে তিরস্কার করেছিলেন। বরং বিভীষণ রাবনের সেই তিরস্কার সহ্য করতে না পেরে বারণকে গালি দিয়ে প্রস্থান করেন।
৮। কৃত্তিবাস রামায়ণে, হনুমান সূর্যকে বগলদাবা করে গন্ধমাদন পর্ব্বত মাথায় করে নিয়ে আসা। কালনেমি সংবাদ। নন্দী গ্রামে ভরতের সাথে হনুমানের সাক্ষাৎ। সমুদ্রলঙ্ঘনের সময় হনুমানের সাথে রাক্ষসী সিংহিকার সাক্ষাৎ - এই সমস্ত কিছুই বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
৯। কৃত্তিবাস রামায়ণের মহীরাবণ বধ, অহীরাবণ বধ, অতিকায়, বীরবাহু তরণীসেন প্রভৃতির কাটামুণ্ডের রাম নাম উচ্চারণ করার কাহিনীও বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
১০। কৃত্তিবাস রামায়নে লক্ষণের চৌদ্দ বছর ধরে ফল আনয়নের কাহনী, লবকুশের যুদ্ধাদি সহ সমগ্র উত্তর কাণ্ডই বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় না!
এখন এই কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রকারভেদ যদি বলি তাহলে চমকে উঠবেন। কারণ, কৃত্তিবাসের নামকরণে প্রায় দেড়শত রামায়ণ পাওয়া যায়! যা একটির সাথে আরেকটির অনেক অমিল খোঁজে পাওয়া যায়। বটতলা প্রকাশিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ ইদানীংকালের প্রচার বেশি। কিন্তু সত্যি হলো এই রামায়ণের লেখক কৃত্তিবাস নয়! ইহা পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার কর্ত্তৃক পরবর্তিতে লিপিবদ্ধ হয়।
আবার ত্রিপুরা শ্রীহট্টতে যে সব কৃত্তিবাসী রামায়ণ পাওয়া যায় সেগুলোতে মহীরাবণ বধ, অহীরাবণ বধ, অতিকায়, বীরবাহু তরণীসেন প্রভৃতির কাটামুণ্ডের রাম নাম উচ্চারণ করার কাহিনী গুলো মিসিং। তো, বুঝতেই পারছেন কবির ভাষায় রামায়ণ কাহিনীতে পর্যায়ক্রমে শুধু ঘঠনাক্রম বেড়েই এসেছে। মূল রামায়ণে পাওয়া যায় বাল্মীকি নারদের কাছে জানতে চাইলেন, ভূমণ্ডলের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ? জ্ঞানেগুনে সত্যনিষ্ঠা এবং প্রজানুরঞ্জনে আদর্শ চরিত্র কার ? উত্তরে, নারদ শ্রীরাম বর্ণনা শুরু করলেন। বাল্মীকির সেই সব কাহীনি শুনে যখন উনার কবিত্ব জেগে উঠলো তখন কেবল ৭১ শ্লোকের রামায়ণ রচিত হয়।।

রামায়নের রচনাকার বাল্মীকি মুনির ''মরা মরা'' জপের সত্যি রহস্য উন্মোচন।


কথিত আছে, বাল্মীকি মুনি 'মুনি' হওয়ার আগে ছিলেন দস্যু! শুধু তাই নয়, উনার নামটাও ছিল রত্নাকর। উনি এতই পাপ করেছিলেন... সেই পাপের কারণে 'রাম' নাম পর্যন্ত মুখ দিয়ে আসছিল না। ভাবতে পারছেন, কি পরিমান পাপ জমা হয়েছিল? অতঃপর নারদ উনাকে 'রাম' নামের পরিবর্তে উল্টো নাম অর্থাৎ 'মরা মরা' জপ করতে বলেন এবং এই উল্টো নাম জপ করেই উনি পাপ মুক্ত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়... এই রত্নাকর হয়ে উঠলেন বাল্মীকি মুনি এবং রামায়ণ রচনা করে ফেললেন!! 
একটু চিন্তা করলে সত্যিই থমকে যাবেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। রত্নাকর এত পাপ করার পর যখন পূর্ণ সমর্পণে ভক্তিসহকারে 'মরা মরা' জপ করছিলেন সেখানে অবশ্যই 'রাম' নামের মাহাত্ম্য অন্তর্নিহিত ছিল। যাইহোক, চলুন এবার দেখাযাক এই কাহিনীর পিছনে সত্যি কি?
পুরাণকার এবং বাংলা রামায়ণের রচিয়তারাই দস্যু রত্নাকরের 'মরা মরা' অর্থাৎ উল্টো নাম জপের কাহিনী প্রচার করেছে। মূল রামায়ণে এই সকল কথার বিন্দুবিসর্গও নেই! মূল রামায়ণে পাওয়া যায় বাল্মীকি নারদকে জিজ্ঞাসা করছেন, 'ভুমন্ডলের শ্রেষ্ঠ রাজা কে? জ্ঞানেগুনে সত্যনিষ্ঠা এবং প্রজারঞ্জনে আদর্শ চরিত্র কার?' 
রামায়ণের প্রথম শ্লোকটি হলো, 
'' তপঃ স্বাধ্যায়নিরতং তপস্বি বাগ্মীদাং বরং,
নারদং পরিপপ্রচ্ছ বাল্মীকিমুনি পুঙ্গবং।।১।।''
অর্থাৎ, ''তপঃপরায়ণ বাল্মীকি, স্বাধ্যায়নিরত, তপোনিষ্ঠ বাগ্মী নারদকে জিজ্ঞাসা করিলেন।''
এই হলো মূল রামায়ণের প্রথম শ্লোকের কথা, যেখানে বাল্মীকি একজন 'তপস্বী'। এখানে তো দস্যু রত্নাকর প্রথম থেকেই বাল্মীকি! 
তারপর নারদ বললেন, 
''ইক্ষাকু বংশ প্রভোব রাম নাম জৈনঃ শ্রুতঃ'' ইত্যাদি....। নারদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাল্মীকি রামায়ন রচনা করলেন। মিথুনরত এক ক্রৌঞ্চকে একটি নিষাদ তীর নিক্ষেপে হত্যা করায় ক্রৌঞ্চী অত্যন্ত শোকাতুর হয়ে ছটপট করে। তমসা নদীর তীরে এই বিষাদ চিত্র দেখে বাল্মীকির কবিত্ব শক্তি উৎসারিত হয়ে উটলো। এই কথাও রামায়ণে আছে। কিন্তু বাল্মীকি একজন নরহত্যা দস্যু ছিলেন আর তারপর মরা মরা জপ করে বাল্মীকিতে রূপান্তর হলেন এমন কথা রামায়ণে নেই। রাম নামের বিশেষ মাহাত্ম্য দেখানোর জন্যই কোন রাম ভক্তের এমন সাজানো রটনা। 
'ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মৈব্য ভবতি' (শ্রুতি) - ব্রহ্ম-Region এ গেলে ব্রহ্মানুভূতি ব্রহ্মাজ্ঞ পুরুষ 'ব্রহ্মৈব্য ভবতি!' এখান থেকেই তুলসীদাস বলেছেন, 'বাল্মীকি ব্রহ্মভূমিতে গিয়ে ব্রহ্মসমানা হয়ে গেলেন' আর জগত জেনে রেখেছে তিনি উল্টো নাম জপতেন! 





কিছুক্ষণের জন্য ধরে নিন, এই উল্টো কাহিনী সত্য। এখন এই মুহুর্তে আপনি এই পোস্ট পড়ার সময় একটু চেস্টা করে দেখুন তো 'রাম' শব্দটি বলতে পারেন কিনা ? আশাকরি অবশ্যই পারবেন। অর্থাৎ, আপনি রত্নাকর দস্যু থেকে কম পাপী। তাই নয় কি ? তাহলে উনি যদি এত পাপ করে উল্টো নাম 'মরা মরা' জপ করে পাপ মুক্ত হয়ে ভগবানের জীবনচরিত রচনা করতে পারে তাহলে লক্ষ লক্ষ বার আপনি শুদ্ধ রাম নাম জপ করে ঋষিত্ব, বাল্মীকত্ব অর্জন তো দূরের কথা, অন্তর্জগতের সামান্য আধ্ম্যাতিক অনুভুতি লাভেও বঞ্চিত কেন ?? এখন হয়তো বলবেন ভক্তির অভাব। না, পৃথিবী অনেক মানুষ আছে যারা রাম নাম জপে সেই নামে নিজেকে বিলিন হতে হতে অশ্রু পর্যন্ত ঝরায়। কিন্তু অবশেষে নিজেকে পাপীই মনেহয়। কেন হবে এমনটা?? তাহলে কি ইহা ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্য ? 
না। সত্যি এটাই, রত্নাকর দস্যু বলে কেউ ছিলেন-ই না! তিনি ছিলেন তপস্বী বাল্মীকি। 
প্রণিপাত।

Friday, June 8, 2018

"একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত?

মহাপ্রভূ তাঁর লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই "একাদশী উপবাসের প্রথা" প্রবর্তন করেছিলেন।
=> জিঙ্গাসাঃ সত্যি কি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূ "একাদশী উপাসের প্রথা" প্রবর্তন করেছিলেন???
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থ স্কন্দ পুরানে একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন-
" যে মানুষ একাদশী দিন শস্য দানা গ্রহন করে সে তার পিতা,মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী। এবং সে বৈকুন্ঠলোকে উন্নীত হয় তবু তাঁর অধঃপতন হয়।
=>> শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ কি অর্জুনকে উপবাস থাকতে বলেছিলেন??
> দেখি উপবাস সম্পর্কে গীতায় কি বলেছেন!→
> হে অর্জুন! যে অতিরিক্ত ভোজন করে অথবা উপবাসী থাকে, আবার অতিরিক্ত নিদ্রা অথবা সমস্ত রাত্রি জাগীয়া থাকে তাহার যোগ হয় না।
গীতাঃ ৬/১৬ নং শ্লোক।
(গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনে উপবাসী থাকতে নিষেধ করেছেন।)

দেখুন গীতা ৬/১৬ শ্লোক থেকে



> আহার, বিহার, কর্ম, নিদ্রা ও জাগরণে যিনি সমতা রাখিয়া (নিয়মিত মানিয়া) চলেন, তাঁহার যোগ দুঃখনাশী (দুঃখ নাশ) হয়। গীতাঃ ৬/১৭
(গীতায় শ্রীকৃষ্ণ আহার, বিহার, নিদ্রা ও জাগরন নিয়মিত রাখতে বলেছেন)



দেখুন গীতা ৬/১৭ শ্লোক থেকে




> যে সকল লোক অশাস্ত্রীয় কঠোর তপস্যা করে, দম্ভ ও অহংকারের বলে কাম ও আসক্তিপরায়ণ হয় এবং বলশালী হইয়া শরীরের ভূতগুলিকে কষ্ট দেয় আর শরীরের মধ্যস্থ আমাকে কষ্ট দেয়; এইসব লোকেরা অসুরের ন্যায়, ইহা তুমি জানিও।
গীতাঃ ১৭/ ৫-৬
(উপবাস থাকিলে তো! নিজের শরীরের ভূতিগুলি কষ্ট পাবেই)


দেখুন গীতা ১৭/৫-৬ শ্লোক থেকে



একাদশীর দিন শ্রীবিষ্ণুর জন্য সব কিছু রন্ধন করা হয়, এমন কি অন্ন এবং ডাল ও, কিন্তু শাস্ত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, সেই দিন বৈষ্ণবদের বিষ্ণু প্রসাদ পর্যুন্ত গ্রহন করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমন কি অন্ন - তা যদি বিষ্ণুপ্রসাদও হয়, তবুও তা গ্রহন কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
>শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থে স্কন্দ পুরানের উদাহরণ দিয়ে একি বলিলেন???
=> শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় দেখি শ্রীকৃষ্ণ বাসী খাবার খেতে বলেছি কি?
> যে সকল খাবার বহু অগ্রে তৈয়ারী করা হইয়াছে, রস যাহার শুকাইয়া গিয়েছে, "বাসী", দুর্গন্ধযুক্ত, উচ্ছিষ্ট (কাহারও এঁটো) তাহা তামসিক ব্যক্তির প্রিয়। গীতাঃ ১৭/১০ নং শ্লোক।

দেখুন গীতা ১৭/১০ শ্লোক থেকে


বিধবা না হলেও শাস্ত্র অনুষারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা চৈতন্য মহাপ্রভূ প্রবর্তন করেছিলেন।
==> জিঙ্গাসাঃ তবে কি চৈতন্য মহাপ্রভু গীতা বিরোধী ছিলেন???
=> পাঠক মিত্রগণ আপনারই স্বয়ং বিবেচনা করুন কোনটি গ্রহণযোগ্য →শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতা নাকি "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" আদিলীলা ।
উপরক্ত গীতা বিরুদ্ধ কথাগুলি শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভূপাদ বলেছে!



দেখুন- "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" আদিলীলা, ১৫/৮-১০ থেকে 


 পাঠক মিত্রগন আপনারা স্বয়ং বিবেচনা করুন শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভূপাদ গীতা বিরোধীতা করে কি সঠিক সনাতন ধর্ম প্রচার করেছিলেন???

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts