Tuesday, September 7, 2021

বেদের ব্রাহ্মণ ভাগ কি পরিতাজ্য?

বাংলাদেশ অগ্নিবীর সহ আর্য সমাজী ঘেষা বিভিন্ন সংঘটন আজকাল প্রচার করে বেড়াচ্ছেন যে বেদের ব্রাহ্মণ ভাগ নাকি প্রক্ষিপ্ত এবং তা মান্য নয়। যা অতি-বাতুলতা এবং সনাতন ধর্মের জন্য আশংকাজনক বটে। বিভিন্ন শাস্ত্র না জানা সহজ সরল ছেলেমেয়রা এদের এইসব মিথ্যাচারে পা দিচ্ছেন। তাই আজ আমার এই লেখা। 

 

মীমাংসকগন বলেন, মন্ত্র আর ব্রাহ্মণ এই নিয়েই বেদ। সংহিতা মন্ত্রময়, ব্রাহ্মণে আছে তার দ্বারা সঙ্কেতিত সাধনার কথা আর মন্ত্রার্থ ভাবনার রহস্যময় বিবৃতি। আরণ্যক এবং উপনিষদ এই ব্রাহ্মণভাগের অন্তর্গত; কেবল ঈশোপনিষংখানা পড়েছে শুরু যজুর্বেদের শেষাংশে কর্ম আর জ্ঞানের মাঝে সেতুর মত। মন্ত্র ব্রাহ্মণ আরণ্যক উপনিষৎ এই নিয়ে বৈদিক সাহিত্যের যে ভাগ, তা শ্রুতি। আর বেদাঙ্গ সুত্র এবং ইতিহাস পুরাণ নিয়ে যে ভাগ, তা স্মৃতি। স্মৃতি শ্রুতির আশ্রিত। বেদমন্ত্র ঋক সাম যজু এবং অথর্ব এই চারিটি সংহিতায় সংকলিত হয়েছে। প্রত্যেক সংহিতার সঙ্গে যুক্ত আছে তার ব্রাহ্মণ ভাগ। বর্তমান সঙ্কলন এই শ্রুতির। সংহিতা বেদের আদি আর উপনিষদ তার অন্ত, উপনিষদের ভাবনা সংহিতার ভাবনার প্রতিবাদ-আধুনিকদের এই দিগভ্রষ্ট উপস্থাপনা অপ্রমাণ এবং অশ্রদ্ধেয়। সংহিতায় যা রূপময়, অধ্যাত্ম্য মননের অবিচ্ছিন্ন ধারায় বাহিত হয়ে উপনিষদে তা ভাবসিদ্ধ, সমগ্র বেদার্থে একটি অখণ্ড মহাসত্যের ব্যঞ্জনা, এই দৃষ্টিই সমীচীন। এই বেদার্থ ই শতধার ভারত- সংস্কৃতির অক্ষীয়মাণ উৎস। কোন সুদূর অতীতে রাজা সুদাসের যজ্ঞ- ভূমিতে দাড়িয়ে দ্যুলোক-ভূলোক পরিব্যাপ্ত ইন্দ্রের অপরাজিতা শৌরষশ্রীর বন্দনাগানে মুখর হয়ে ঋষি বিশ্বামিত্র উদাত্ত কণ্ঠে ঘাষোণা করেছিলেন
“ বিশ্বামিত্রস্য ব্রহ্মেদং  রক্ষতি ভারতং জনম্ ”
-আমি বিশ্বামিত্র, আমারই বৃহৎ ভাবনার চিদবীর্য রক্ষা করছে ভারতজনকে। তার সেই সুপ্রাচীন ব্ৰহ্মঘোষ এক কাস্তোজ্জল ভবিষ্য দিব্যদর্শনেরই মহাব্যাহৃতি, উত্তরাধিকার সুত্রে আমরা যাকে সার্থক করার দায়কে আজ বহন করছি। সমগ্র বেদসংহিতায় বলতে গেলে কেবল দেবতার কথা। যিনি বলছেন তিনি ঋষি, অর্থাৎ সত্যের পথে অভিযাত্রী তিনি, আঁধারকে বিদীর্ণ করে চলছেন অগ্র্যাবুদ্ধির শাণিত ফলকে। চলিত কথায়, তিনি মন্ত্রদ্রষ্টা।   

 

 

শুধু তাই নয়। দ্যুলোক অন্তরিক্ষ আর পৃথিবী সবই যে দেবতা। সংহিতায় পাই

একং বা ঈদং বি বভৃব সর্বম

সেই একই যে বিচিত্র রূপে হয়েছেন এই সবকিছু। উপনিষদে দেখি

সর্বং খলিদং ব্ৰহ্ম-  সবই এই যা কিছু সবই এক বৃহৎ চৈতন্যমাত্র। যা বাইরে তাই অন্তরে। বাইরে যে আকাশ তা-ই আবার এষ অন্তহৃদয়ে এই যে,আমার মধ্যে আমার হৃদয়ে। যা দৃষ্টিতে, তাই আবার চেতনায়। প্রত্যক্ষ অনুভব করছি এই-যে বায়ু, সে তো বৃহতেরই নিঃশ্বসিত। এই যে পৃথিবী, এতো শুধু মাটি নয়, এ যে হিরণ্যবক্ষা.. ..অদিতিঃ পরমে ব্যোমন--এযে পরম ব্যোমের অখন্ডিতা অবন্ধনা চেতনা, মেলে রয়েছে তার সোনার বুকখানি।

 

এমনি করে সংহিতার দেববাদ আর উপনিষদের ব্ৰহ্মবাদ এক অখণ্ড অদ্বয় চিন্ময় প্রতাক্ষেরই দুটি ভঙ্গিমাত্র। এই চিন্ময় প্রত্যক্ষবাদই বেদমন্ত্রের মর্মরহস্য। অধিদৈবতদষ্টিতে বাইরে যাকে দেখছি বিশ্বরূপে তাকেই আবার অনুভব করছি অন্তশ্চেতনায়। পৃথিবীর বুকে অগ্নিরূপে জলছেন যিনি, তিনিই আমার অন্তরে অভীপ্সার শিখা; অন্তরিক্ষে যিনি বায়ু, অন্তরে তিনিই প্রাণ। বাইরে যিনি আদিত্য, অন্তরে তিনিই অধৃমক জ্যোতীরূপ পুরুষ। বাইরে যা দেখছি তার মধ্যে যদি দেবতাকে বা আত্মাকে না দেখি, তাহলে সে দর্শন অচিত্তি বা অবিদ্যার বিভ্রম মাত্র।

 বেদবাণীর প্রবক্তা ঋষি। তার তাত্বিক দৃষ্ট অধিদৈবত (spiritual), অথচ তার বাগভঙ্গি আশ্রয় করেছে অধিভূত (phenomenal) দৃষ্টিকে। চিন্ময় প্রত্যক্ষবাদই যদি বেদবাদের মূলকথা হয়, তাহলে এতে অসঙ্গতি বা নৃয়্যনতার কিছুই নাই। কেননা দেবতাকে প্রত্যক্ষ বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করা অধ্যাত্ম উপলব্ধির শেষ কথা। কিন্তু গোল বেধেছে এইখানেই। ঋষির অধিদৈবত দৃষ্টির অধিভূত বিবৃতিকে প্রাকৃতবুদ্ধি জড়প্রত্যক্ষের সঙ্গে ঘুলিয়ে ফেলতে এ দেশে দেববাদের প্রতি যারা অপ্রসন্ন, তাদেরও কিন্তু এ মতিদ্রম ইয়নি। হয়েছে আধুনিক কালে, পাশ্চাত্য গবেষকদের কল্যাণে। এদের অধিভূত দৃষ্টি বেদমীমাংসার একটা নৃতন পুর্বপক্ষ উপস্থাপিত করেছে। তার প্রভাবে এক শ্রেণীর পণ্ডিতদের সমাজে বেদবাণী দূর্বাখ্যাবিষমুর্ছিতা। মনে হয়, প্রাচীন অধিদৈবত দৃষ্টিকে অধ্যাত্মদৃষ্টির স্বারা আপুরিত করে সে পুর্বপক্ষের জবাব দেবার সময় আজ এসেছে।

 

বাংলাদেশ অগ্নিবীর এভাবেই বেদের নামে যাতা লিখে হিন্দু সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

যাস্ক বলেন, তিনি সাক্ষাৎকৃতধর্মা সত্যর যে শাশ্বতবিধান বিশ্বের ধারক, প্রজ্ঞাচক্ষু দিয়ে তাকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। বেদের ভাষায় ঋষির্ষিপ্রঃ কাব্যেন -তিনিই ঋষি, অলখের আকৃতিতে হৃলয় যার টলমল। এই আকৃতি আছে বলেই তিনি কবি। আবার বেদে দেখি, যিনি পরম দেবতা তিনিও, কবি, এই বিশ্ব তার অজর অমর কাব্য। দেবতার আকৃতি প্রকাশের, ঋষির আকৃতি উপলব্ধির । অলখের হৃদয় হতে আলোক ধারা ঝরে পড়ছে, তার ছোয়ায় ঋষির হৃদয় জল মেলছে। দুটি কবির হৃদয়ে এই যে ছন্দদোলার বিনিময়, বেদমন্ত্র তার বাণীরূপ।

আমরা শুনে এসেছি, বেদমন্ত্রে কেবল কামনার উদগার। একদিক দিয়ে কথাটা যেমন অংশত সত্য, আরেকদিক দিয়ে তেমনি ভয়ঙ্কর মিথ্যা অলখের কবি যিনি তাঁর আকুতিতে ফোটে কামনার দিব্যরূপ। সে কামনায় বিশ্বপ্রাণের সেই আদিম আকৃতি : আমি জড়ত্বের বাধা ভাঙব : আমি বৃহৎ হব। এই আকৃতিতে আত্মচেতনার যে বিষ্ফারণ, বেদের ঋষি তাকে বলেছেন ব্রহ্ম বা বৃহতের ভাবনা। তার লক্ষ্য স্বর যার অর্থ পরম জ্যোতি বা পরাবাণী দুইই-হতে পারে। দুয়ের অধিষ্ঠান হল দার্শনিকের ভাষায় আকাশের আনন্ত্য, ঋষির ভাষায়-পরম ব্যোম। ওই অঙ্গহীন বৈপুল্যের মধ্যে অবগাহনেই তৃষ্ণার্ত জীবনের পরম তৃপ্তি। প্রাণষ্ফুরণের যে দুটি বাধা জরা আর মৃত্যু, ওইখানে তারা পরাভূত। দেবতারা ওইখানে আছেন, তাঁরা অজর, তারা অমৃত। তাদের সঙ্গে হৃদয়ের যে সাজুষা, সে-ই আমাদের কাম্য। বেদমন্ত্রে এই কামনাই ছন্দিত হয়েছে।

দেবতারা দ্যুলোকে বা আকাশে-ওই তাদের নিত্যধাম। সে আকাশ উরুরনিবাধঃ সব ছাওয়া এক চিন্ময় মহাবৈপুল্য, যার মধ্যে স্বচ্ছন্দ বিচরণের কোন বাধা নাই। সেইখানে দেবতারা স্বধয়া  মদন্তি আত্মস্থিতির নিরঙ্কুশ আনন্দে টলমল। আবার তারা আছেন অন্তরিক্ষেও। আকাশ দ্যুলোক বা আলোর রাজ্য, আকাশ চিন্ময়।  অন্তরিক্ষ বায়ুর রাজ্য, প্রাণময়। তার নীচে এই পৃথিবী,সে অন্নময় বা জড়, কিন্তু অগ্নিবাসা এবং অগ্নিগর্ভা, দেবতারা সেখানেও আছেন, আকাশ বাতাস পৃথিবীর সব দেবময় বা চিন্ময়।

 

খষি দেখছেন কবির দৃষ্টিতে। বে্দের ভাষা ছন্দময় ছবির ভাষা। অনেক অর্থের ব্যঞ্জনায় তা ব্যাপক এবং গভীর। খষিকে ঘিরে শব্দম্পর্শ- রূপের় মেলা। কিন্তু এক অলখের প্রভাসকে বহন করে প্রতিমুহর্তে তাঁর অনুভবে তারা প্রতীকী হয়ে উঠছে। অর্ধচ্ছন্ন রহস্যের ইংগিতে প্রতীক হৃদয়কে উদ্বেল করে তোলে, সত্তার গভীরে সঞ্চারিত করে না-পাওয়াকে পাওয়ার এক জালাময় অভীপ্সা। বেদমন্ত্র এই অভীগ্সার বাহন। মীমাংসক যদি বলে থাকেন ক্রিয়া বা সাধনার প্রতি প্রেরণা দেওয়াই বেদপ্রতিপাদিত ধর্মের তাৎপর্য, তাহলে তিনি ভুল বলেন নি। বেদমন্ত্রের বীর্য এই প্রচোদনাতে, তার এই সাবি্ত্রী শক্তিতে। এক কথায় বলতে গেলে গভীর দর্শনকে ছবির ভাষায় রূপ দিয়ে অন্তরের আকুতিকে লেলিহান করে  তোলা এই হল বেদমন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। সে বৈশিষ্ট্য এখনও ক্ষু্ণ্ণ হয়নি। বরং অধ্যাত্ম সাধনাকে প্রত্যক্ষাবগম ও বিশ্বজনীন করবার জন্য বেদের সাধনাকে ভারতবর্ষের আজ বিশেষ প্রয়োজন। 

Saturday, July 31, 2021

৩ ৬ ৯ কেন এই সংখ্যা ৩ টি সুপার সংখ্যা?

 বিজ্ঞানী টেসলার একটি বিখ্যাত উক্তি থেকে এই তিনটি সংখ্যার বিশেষত্ব প্রথমবার প্রকাশিত হয় । তিনি বলেছিলেন -

বঙ্গানুবাদ - আমরা যদি ৩, ৬ আর ৯ - এর বিশেষত্ব সম্বন্ধে জানতে পারি । তবে আমাদের হাতে চলে আসবে বিশ্বের চাবিকাঠি ।

কিন্তু এই ৩ , ৬ আর ৯ কেন এত বিশেষ ?

প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে আমরা অঙ্কের সূত্র আসলে উদ্ভাবন করি না । আমরা শুধু এটাকে আবিষ্কার করি । প্রকৃতির মধ্যে নিহিত রয়েছে কিছু প্যাটার্ন , সেই প্যাটার্নকে অনুসরণ করে আমরা নির্মাণ করেছি বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র । এইজন্য মহাবিশ্বের যেকোনো স্থানে গেলেই আমরা পেতে পারি ২+২=৪ ।

এই প্যাটার্নগুলোর মধ্যে একটি হল - " পাওয়ার অফ ২ বাইনারি সিস্টেম "

অর্থাৎ কোন কিছু এক থেকে শুরু হয়ে ক্রমাগত সেটা একে অপরের দ্বিগুণ হতে থাকে । এই প্যাটার্নকে অনুসরণ করেই আমাদের কোশ এবং ভ্রূণ আস্তে আস্তে বিভাজিত হয় । তাই এই প্যাটার্নকে - ১ , ২, ৪, ৮ , ১৬, ৩২ , ৬৪ , ১২৮ , ২৫৬…… অনেকে বলে থাকে " ভগবানের পরিকল্পনা " ( God's blueprint) ।

এবার এই উপরিক্ত প্যাটার্নের বিশেষত্ব হল -

১×২=২

২×২= ৪

৪×২= ৮

১৬ —-> ১+৬ = ৭

৩২ —- > ৩+২ =৫

৬৪ —-> ৬+৪ = ১

১২৮ —- > ১+২+৮ = ২

২৫৬ —-> ২+৫+৬ = ৪

৫১২ —- > ৫+১+২ = ৮

অর্থাৎ পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাচ্ছে যে - ১, ২, ৪,৮, ৭, ৫ এই প্যাটার্ন বারংবার ফিরে ফিরে আসছে । এটা যেন ওই পেন্ডুলামের ঘড়ির মতো দুলে দুলে ফিরে আসছে তার সেই প্রাথমিক অবস্থায় । আবার আমরা যদি ১ থেকে শুরু করি এবং সেটাকে ক্রমাগত অর্ধেক করতে থাকি তবেও আমরা ঠিক একই প্যাটার্নকে বিপরীত দিক থেকে ফিরে পাব -

১/২ = ০.৫ — > ৫

০.৫/২ = ০.২৫ — > ২+৫=৭

০.২৫/২ = ০.১২৫ —- > ১+২+৫ = ৮

কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই প্যাটার্নে তিনটে সংখ্যা অনুপস্থিত - ৩, ৬ আর ৯ । এই তিনটে সংখ্যা যেন এই প্যাটার্নের ঊর্ধ্বে থাকা মুক্ত কোন সত্ত্বা । বিজ্ঞানী মার্ক রোডিন বিশ্বাস করেন - এই তিনটে সংখ্যা বর্ণনা করে ফোরথ বা থার্ড ডায়মেনশনের কোন ভেক্টর , যাকে তিনি নাম দিয়েছিলেন ফ্লাক্স ফিল্ড ।

এবার যদি আমরা ৩ সংখ্যাটিকে নিয়ে তাকে ক্রমাগত দ্বিগুণ করতে থাকি । তবে আমরা পাব -

৩*২ = ৬

৬*২= ১২ — > ১+২ = ৩

১২*২ = ২৪ — > ২+৪ = ৬

এটাও আবার একটা প্যাটার্ন । ৩ আর ৬ -এর মধ্যে দোদুল্যমান একটা প্যাটার্ন । কিন্তু এই প্যাটার্নে ৯ অনুপস্থিত ।

তবে কি ৯ অন্য কোন প্যাটার্নের অন্তর্ভুক্ত ?

হ্যাঁ , একদমই তাই।

এই ৯ সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করলে আমরা পাব -

৯*২ — > ১৮ = ১+৮ = ৯

১৮* ২ — > ৩৬ = ৩+৬ = ৯

অর্থাৎ এই প্যাটার্নে শুধু অস্তিত্ব রয়েছে সংখ্যা ৯ -এর ।

এবার তিনটে প্যাটার্নকে যদি একত্রিত করে পরপর বসাই । তবে আমরা পাব দুটো মেরু । যার একদিকে রয়েছে ১, ২, ৪ আর অপরদিকে রয়েছে ৮, ৭,৫ । বিশ্বের সব কিছু যেন নদীর স্রোতের মতো একবার ১, ২, ৪ থেকে ৮, ৭,৫ দিকে যাচ্ছে আবার ফিরে আসছে ১,২,৪‌ — এর কাছে । আবার ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝব এই ১,২,৪ - কে আগলে রেখেছে ৩ আর ৮,৭,৫ -কে আগলে রেখেছে ৬ ।

আবার এই ৩ আর ৬ রয়েছে ৯-এর অধীনে ।

৩+৬ = ৯ =৬+৩

১+২+৩+৬+৭+৮+৯ = ৪৫—- > ৪+৫ =৯

১+২+৪+৫+৭+৮ = ২৭ —- > ২+৭= ৯

সুতরাং সব কিছু যেন মিশে রয়েছে ৯ -এর মধ্যে আর ৯ হল সেই একক সত্ত্বা ।

শুধু এটাই নয় আরও অনেক পথ রয়েছে যেগুলো থেকে অনুভব করা গেছে সব কিছুর অভ্যন্তরে লুকিয়ে রেয়েছে ৩ , ৬ আর ৯ ।

যেমন আমাদের সংখ্যাদের মধ্যে -

প্রকৃতির প্রতিসাম্যতার‌ অভ্যন্তরে

আমাদের প্রকৃতির ক্ষেত্রেও তিন এবং ছয় মাত্রার প্রতিসাম্যতাও বেশ স্পষ্টরূপে লক্ষ্য করা যায়। যেমন — মৌমাছির চাঁকে ছয়মাত্রার প্রতিসাম্যতা দেখা যায় ।

সময়কালে

আমাদের ১ ঘন্টাতে ৬০ মিনিট → ৬

১ মিনিটে ৬০ সেকেন্ডে → ৬

১ দিনে রয়েছে ২৪ ঘন্টা → ২+৪=৬

জ্যামিতিক আকৃতিতে

একটা বৃত্তের কোণের মান ৩৬০°

সেই ৩+৬+০=৯

আবার একে অর্ধেক করলে পাওয়া যায় —১৮০°

১+৮+০= ৯

আবার সেটাকে অর্ধেক করলেও পাওয়া যায় — ৯০°

৯+০ =৯

পরমাণুর অভ্যন্তরে

পরমাণু গঠিত হয় তিনটে অংশ দিয়ে — নিউট্রন , প্রোটন আর ইলেকট্রন ।

আবার কোয়ার্ক আর লেপ্টনের ক্ষেত্রে সংখ্যা ৬

আমাদের ঋতুর সংখ্যা ৬

আমাদের বিশ্ব গঠিত হয়েছে তিনটে জিনিস দিয়ে — ডার্ক ম্যাটার , ডার্ক এনার্জি আর সাধারণ বস্তু / ম্যাটার ।

৩ সংখ্যাটাও বেশ অদ্ভুত ।

এটি একমাত্র মৌলিক সংখ্যা , যার পূর্ববর্তী সংখ্যার সমষ্টি ওই সংখ্যাটি নিজে ।

০+১+২=৩

হয়ত চেষ্টা করলে প্রকৃতির মধ্যে আরো বহুক্ষেত্রে আমরা খুঁজে পাব ৩,৬,৯ সংখ্যা তিনটির অস্তিত্ব ।

এগুলো কি নিখাদ কোন কাকতালীয় ঘটনা বা সমাপতন না'কি নিকোলা টেসলার উক্তিই কোন ইঙ্গিত বহন করছে । ভবিষ্যত হয়ত উত্তর দেবে আমাদের।

ধন্যবাদ

তথ্য সূত্রঃ গুগল

Monday, July 26, 2021

গ্রাফোলজি

 গ্রাফোলজি কথাটার মানে হলো, মানুষের হাতের লেখা অ্যানালাইসিস করে, সেই মানুষটার স্বভাব চরিত্র সব বলে দেওয়া। যদিও এটা একটা সিউডো সায়েন্স। তবে সম্প্রতি এই গ্রাফোলজি নিয়ে চর্চা বেশ বেড়েছে। একজন সেদিন দেখলাম এই গ্রুপে পোস্ট করেছেন গ্রাফোলজি নিয়ে জানতে চেয়ে। এই গ্রাফোলজি নিয়েই শুরু করলাম একটা নতুন সিরিজ।

হাতের লেখা দেখে কীভাবে মানুষ চেনা, সেসব নতুন নতুন ফান্ডা এখানে আলোচনা করবো। 

আজকে আলোচনা করবো, হাতের লেখা দেখে কীভাবে মিথ্যাবাদী চেনা যায়। কীভাবে বোঝা যায় একজন মানুষ মিথ্যা কথা বলে নাকি? মানুষটা কতোটা সিক্রেটিভ? কে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড না?

এই সমস্তটাই বোঝা যায়, ছোটো হাতের লেখা O এর লুপ দেখে। আর ছোটো হাতের C এর লুপ দেখে। 

১) প্রথম ছবিটা ভালো করে দেখুন। Luck শব্দটার C-টায় লুপটা লক্ষ্য করুন। এরকম লুপ যদি, কোনো হাতের লেখায় ছোটো হাতের C তে দেখা যায়, তার মানে এই যে, ওই মানুষটা স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড না। ইনিয়েবিনিয়ে বা ঘুরিয়ে কথা বলতে সে ভালোবাসে।

২) দ্বিতীয় ছবিতে দেখুন, Love শব্দটায় ছোটো হাতের O তে বাঁদিকে লুপ আছে। এরকম কোনো হাতের লেখায়, O-এর বাঁদিকে লুপ থাকার মানে, যার হাতের লেখা, সেই মানুষটা নিজে এমন সব জিনিস স্বজ্ঞানে অজ্ঞানে বিশ্বাস করে, যেগুলো পুরোপুরি কিংবা একেবারেই সত্যি না। অথচ তারা নিজের মনে মনেই এসব মিথ্যাকে সত্যি বলে বিশ্বাস করে এসেছে। এবং সামনের মানুষটাকে বলার সময় সেই মিথ্যাটাই সত্যি হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করে। এর মানে এই নয় যে সে মিথ্যাবাদী। এর মানে মানুষটা নিজে মিথ্যাটাকে সত্যি বলে অ্যাকসেপ্ট করে। 

৩) তৃতীয় ছবিতে Son শব্দটায় O তে দুদিকে দুটো লুপ দেখা যাচ্ছে। এরকম হাতের লেখার মানে, মানুষটা মিথ্যাবাদী। লোকটার মিথ্যা কথা বলাটা একটা অভ্যাস। 

৪) চতুর্থ ছবিতে Pond লেখায় O-তে ডানদিকে লুপ তৈরি হয়েছে। এরকম ডানদিকে লুপওয়ালা O, কারো হাতের লেখায় দেখা গেলে, এর মানে মানুষটা সিক্রেটিভ। যেকোনো কিছু সবার সামনে প্রকাশ না করে, নিজের মনে চেপে রাখতে পছন্দ করে। 




Sunday, July 4, 2021

ভারতীয় সমাজে নরবলি প্রথার অতীত ও বর্তমান

বাহরাম জমাদার অল্পের জন্যে এক হাজার খুন তিনি করতে পারেননি, ৯৩১ এ থেমে গেছেন। ওনাকে নিয়ে বলিউডে সিনেমা বানানো হয়েছে। বাহরাম একজন ঠগি ছিলেন। ঠগিরা মানুষহত্যায় খুবই দক্ষ ছিল। হলুদ রুমাল ভাঁজ করে গলায় পেঁচিয়ে মানুষ মেরে ফেলত, একজন পিছন থেকে মাথা ধরে রাখত, একজন চেপে ধরে রাখত পা। পায়ের হাড় আর শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়ে লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলতো।

বাহারামের যে ছবিটি ইন্টারনেটে আছে

চিত্রে: ঠগীরা যেভাবে মানুষ মারত , সোর্স Thuggees of India - World's First Mafia

লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (ভারতের ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল) জোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার চিফ এজেন্ট ক্যাপ্টেন উইলিয়াম স্লিম্যান বেশ কয়েকটি রাজপরিবারের কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ঠগিদের নির্মূল করেছিলেন। ১৮৩১ থেকে ১৮৩৭ সাল পর্যন্ত ৩,২৬৬ ঠগি ধরা পড়ে, যাদের মধ্যে ৪১১ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

ঠগিরা ছিল দেবী কালীর উপাসক, নির্দোষদের হত্যাকে তাদের ধর্মীয় কর্তব্য হিসাবে দেখত। তারা বিশ্বাস করেছিল যে হত্যার বিষয়টি কালীকে সন্তুষ্ট করবে।

সাম্প্রতিক সময়ের কিছু খরব—

শাশুড়ির মাথা কেটে রক্তপান করল জামাই - জিনিউজ

তন্ত্রসাধনার জন্য স্বামীর বুকে বসে রক্তপান! রক্তশূন্যতা ভুগে স্বামী বেচারা শেষ। -ওয়ান ইন্ডিয়া

ভালো ফলনের জন্য ১২-বছরের ভাইপোকে বলি দিল কাকা - এই সময়

তন্ত্র সাধনায় হাত পাকাতেই যুবতীকে বলি! কলকাতা24x7

এরকম আরো আরো আছে। ডয়চে ভেলের রিপোর্টটা দেখেন -

নরবলির মতো কুসংস্কার আজও রয়েছে ভারতে

২০১৯, দ্য এজ অব আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। মানুষ আজকে চাঁদে, কালকে মঙ্গলে যাচ্ছে। কিন্তু সুরেন্দ্র প্রসাদ সিংহ আছেন অন্য চিন্তায়। সরকারকে তিনি চিঠি দিয়েছেন, "নরবলি কোনও অপরাধ নয়। এই নরবলির জন্য অন্য কারও ক্ষতি করতে চাই না। নিজের ছেলেকেই বলি দিয়ে আমার সাধনা সম্পূর্ণ করতে চাই।" ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু তাতে কী? মন্দিরে টাকা দেয় না। সুরেন্দ্র লিখেছে,

‘‘তন্ত্র সাধনায় নরবলি খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। কামাখ্যায় গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকেই সবার আগে বলি দিতে চাই। কারণ, আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হলেও মন্দিরের জন্য অর্থ সাহায্য করতে রাজি নয়। এই সব বিষয়ে বিশ্বাসও নেই ওর। তাই নিজের ছেলেকেই আগে মায়ের কাছে উৎসর্গ করতে চাই আমি।’’


২০১৭ সালের কথা। ফুলু মাহাতোর তিন ছেলে। কত ভাগ্যবতী তিনি, যে মায়ের একটা ছেলেমেয়েও নেই তিনিই জানেন। বড় ছেলে চেন্নাইয়ে থাকে, চাকরি করে। মেজটা শ্বশুরবাড়িতে থিতু হয়েছে। ছোট ছেলে নারায়ণ আছে মাকে নিয়ে। নারায়ণ আবার তন্ত্রসাধক, কালির পুজো করে।

তন্ত্রসাধনায় সফলতার জন্যে নারায়ণ নিজের মাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কালির প্রতিমার সামনে প্রণাম করতে বলে। …তারপর তলোয়ার দিয়ে মায়ের মাথা কেটে ফেলে। কত বড় সাধক ছেলে! আর সন্তানের সাফল্য কোন মা চান না?


জঙ্গলে ডাকাতেরা কালি দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দিত, বাংলা সাহিত্যে এমন কথা অচেনা নয়। আনন্দবাজারে প্রকাশিত সেকালের ডাকাতদের পূজ্য কালীই এখন সর্বজনীন লেখাটি পড়তে পারেন। বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় কাপালিক এক সাধকের নরবলির অভ্যাস নিয়ে লেখা হয়েছে। সুচিত্রা ভট্টাচার্য লিখেছেন 'ভাঙা ডানার পাখি', সেখানেও আছে কাপালিকদের নরহত্যার বর্ণনা। কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ লিখেছেন গোমতী নদীতে নরবলি দেয়ার ইতিহাস। আরো অনেক কথা সাহিত্যের পাতায় পাতায় আছে। দীনেশচন্দ্র সেন,রমেশচন্দ্র মজুমদারের লেখায় নরবলির সংস্কৃতির উল্লেখ দেখতে পাই।

ডক্টর দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী লিখেছেন,

অধঃপাতে-যাওয়া কয়েকটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য ছিলো যৌনশৈথিল্য; এগুলি ক্রমশ লোকায়ত সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এগুলির মধ্যে একটি হলো কাপালিক সম্প্রদায়। তারা মদ্যপান করে, নরবলি দেয় এবং নারী উপভোগ করে। তারা শব, মদ্য ও নারীর সাহায্যে ধর্মের আদর্শ লাভ করবার চেষ্টা করে।

বাঙালি ইতিহাসবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও শিল্পকলা-গবেষক পন্ডিত নীহাররঞ্জন রায় লিখেছেন,

এ-তথ্য এখন অনেকটা পরিষ্কার যে, আদিতে হোলী ছিল কৃষিসমাজের পূজা; সুশস্য উৎপাদন-কামনায় নরবলি ও যৌনলীলাময় নৃত্যগীত উৎসব ছিল তাহার প্রধান অঙ্গ। তারপরের স্তরে কোনও সময় নরবলির স্থান হইল পশুবলি এবং হোমযজ্ঞ ইহার অঙ্গীভূত হইল। (বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব )

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "শক্তিপূজা" প্রবন্ধে লিখেছেন,

একটি কথা মনে রাখতে হবে, দস্যুর উপাস্য দেবতা শক্তি, ঠগীর উপাস্য দেবতা শক্তি, কাপালিকের উপাস্য দেবতা শক্তি। আরো একটি ভাববার কথা আছে, পশুবলি বা নিজের রক্তপাত, এমন কি, নরবলি স্বীকার করে মানত দেবার প্রথা শক্তিপূজায় প্রচলিত। মিথ্যা মামলায় জয় থেকে শুরু করে জ্ঞাতিশত্রুর বিনাশ কামনা পর্যন্ত সকল প্রকার প্রার্থনাই শক্তিপূজায় স্থান পায়।

জন ক্যাম্পবেল হিউম্যান স্যাক্রিফাইস ইন ইন্ডিয়া বইয়ে উড়িষ্যার খোন্দ উপজাতির নারী-শিশু বিসর্জন দেয়ার ইতিহাস লিখেছেন।

ফুটনোটগুলি

Saturday, May 15, 2021

জনৈক ইসকন ধর্মের ভক্তের বাতুলতার কিছু প্রশ্নের উত্তর । আগ্রহীগণ দেখতে পারেন।

 বৈদিক বৈদিক করে লাফাচ্ছেন আপনি বৈদিক মানে বুঝেন ? আপনি কতটুকু সংস্কৃত জানেন যে বৈদিক ভিত্তি বৈদিক ভিত্তি করে চিৎকার করছেন। রাবণ ও চার বেদের জ্ঞানী ছিল কিন্তু সে ও পরম সত্য অন্বেষণ করতে পারেনি। আপনার মত আবাল কোনদিনই বেদ বুঝতে সক্ষম হবে না।

ইসকন অবশ্যই বেদ কে সম্মান করে, বলেই তো পুরো বিশ্বে ইসকন বৈদিক বিবাহ করাচ্ছে, তাছাড়া হোম যাগযজ্ঞ এগুলোও তো ইস্কনে অনুষ্ঠিত হয় এবং সেগুলোও বেদের ই অন্তর্গত।

বেদ হচ্ছে অনেক কমপ্লেক্স বা কঠিন যা বুঝার সবার সাধ্য নেই, সেজন্য পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগের জীব দের জন্য বেদের সার গীতার অনুকরণ করতে বলেছেন এবং বেদকে না মানার কথাও বলেননি। এবং প্রমাণ প্রমাণ বলছেন তো শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কলিযুগের যেসব সম্ভাব্যতা বলেছিলেন বর্তমানে তার সব কিছুই ঘটছে, এটা কি কাকতালীয় ? ঈশ্বরের বাণী সত্যতা বিচার করার কোন প্রমাণের দরকার নেই ঈশ্বরের বাণীটিই হচ্ছে ওটার প্রমাণ, যা আমাদেরকে এক নিষ্ঠে পালন করার দরকার।

আর আপনার রামকৃষ্ণ গরমহংস, তিনি ও তো ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন একবার হিন্দু হয়েছিলেন ,একবার মুসলিম ,খ্রিস্টান আরো কত কি, নিজের স্ত্রীকে মা কালী ভেবে পুজো করা এগুলো কি সুস্থ মানুষের লক্ষণ ?😆 অজুহাত দেখিয়ে কোন লাভ হবে না।

যাগ্গে, ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন একজন ভারতীয় এবং তা নিয়ে আপনার গর্ব হওয়া দরকার কিন্তু আপনি নিজের দেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশে গিয়ে গোরাদের পা চেটে চেটে খাচ্ছেন।

যা বোঝালাম তা বুঝার চেষ্টা করবেন দয়া করে। অযথা তর্ক করবেন না। পরমেশ্বর পরম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আপনাকে কথা বোঝার শক্তি দিক। 🙏 Hare Krishna.



আপনার মত আবাল কোনদিনই বেদ বুঝতে সক্ষম হবে না।

বেদ বুঝি বলেই ইস্কন ঘৃণা করি। আর আমাকে আবাল বলে গালি মারছেন তো ? এটাই হল আসল ইস্কনী পাঠা ছাগলদের লক্ষন। যুক্তি আর কথায় না পারলে গালি হল মূর্খদের ভরসা। এবার আসি সংস্কৃত জানা আর না জানা দিয়ে। আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ইংরেজীতে একবার না, বহুবার বেদ অনুবাদিত হয়েছে। সায়ন আচার্য্যের ভাস্য নিয়ে প্রচুর ইংলিশ আর ফ্রেঞ্চ মনিষীরা কমেন্টও করেছেন। তাই ২০২১ সালে যদি কিছু জানতে হয় তখন ভাষা এখানে সমস্যা না। সমস্যা হল আপনার মতন অন্ধকার যুগে মধ্য যুগীয় ভাবধারাইয় বিশ্বাসী কুয়োর ব্যাঙদের অন্ধত্ব।
রাবন অহংকারী ছিলেন বিধায় পরমেশ্বরের করুণা প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও সেই প্রেক্ষাপটে উনি উনার স্থানে ঠিক আর পুরুষত্তম রামচন্দ্রও উনার স্থান থেকে ঠিক ছিলেন। শুধু অহংকার আর নন্দি মহারাজের অভিশাপ এবং বিভিন্ন মুনি ঋষিদের অভিশম্পাত রাবণকে ধ্বংশের মুখে নিয়ে যায়। এখানে ইস্কন আর সনাতনির কোন বিষয়ই নাই। তাই এই প্রসংগ অবান্তর।

ইসকন অবশ্যই বেদ কে সম্মান করে, বলেই তো পুরো বিশ্বে ইসকন বৈদিক বিবাহ করাচ্ছে, তাছাড়া হোম যাগযজ্ঞ এগুলোও তো ইস্কনে অনুষ্ঠিত হয় এবং সেগুলোও বেদের ই অন্তর্গত।

এটা হল শতাব্দির সবথেকে ডাহা মিথ্যা কথা। বেদ সম্মান করলে এরা বৈদিক আচার মানতো। বৈদিক দেবতার পূজা অর্চ্চনা করতো। তা না করে এরা উল্টো বৈদিক সকল দেবতাদের অপমান করে। যা সনাতন ধর্মের আচারের বাইরে। বৈদিক আচার , যম, প্রাণায়াম কিছুই ইস্কন মানে না। উল্টো হাত পা ছুড়ে লাফালাফি করে যা বেদ এবং সনাতন ধারার বিরোধী। চৈতন্য ভারতীর সেই রাজনৈতিক আন্দোলনকে এরা আধ্যাত্ম্যবাদের রূপ দিয়েছে। অবশ্য এদের দোষ নেই। এদের পূর্ব পুরুষ ৬ গোস্বামীর এন্টারপ্রাইজ এই কাল্পনিক তত্ত্ব নিয়ে এসেছে।
আপনি বৈদিক বিবাহের কথা বলেছেন যা আরো হাস্যকর। সনাতন শাস্ত্র সম্পর্কে আপনার জ্ঞান যে শূন্যের কোঠায় তা প্রমাণিত। এই বৈদিক বিবাহ নামক ফালতু রীতির উদ্ভব ব্রহ্মসংহিতা নামক কালনিক শাস্ত্রে। যার স্মৃতি এবং শ্রুতিগত কোন ভিত্তিই নেই। চৈতন্য ভারতী দক্ষীন ভারত থেকে তা একজন থেকে ধার নিয়ে অনুবাদ করেন যার মূল লেখক কে আজ পর্জন্ত জানা যাইয় নাই। এবার আসি কোনটা বৈদিক বা আসল বৈদিক বিবাহ কোনটি। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সেই রামায়ন যুগ থেকেই ৪ ধরণের বিবাহ করে আসছেন। এর মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হল প্রজাপতি বিবাহ যা মনু এবং গৌতম ঋষি দ্বারা স্বীকৃত। এখনকার যত হিন্দু বিয়ে হয় তা এই বৈদিক আচরণ মেনেই হয়। এখন এখানে বিচক্ষন পাঠক বিবেচনা করবেন যে ঋষি প্রদর্শিত বিবাহ বৈদিক না এই কাল্পনিক মধ্যযুগীয় শাস্ত্রের বিবাহ বৈদিক। বৈদিক বিবাহের নামে যা চলে তা হল ১০০% ফাইযলামী।

বেদ হচ্ছে অনেক কমপ্লেক্স বা কঠিন যা বুঝার সবার সাধ্য নেই,

বেদ সর্বকালের জন্য মান্য। আপনাদের মতন বেদ বিরোধীদের মুখেই এটা মানায়। আর আমার দাবী যে সত্য তাঁর প্রমান আপনি নিজেই দিয়ে দিলেন বিধায় ধন্যবাদ। বেদ যে সকল যুগের জন্য মান্য তাঁর প্রমান দেখুন নিম্নেঃ

অংতি সন্তং ন জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি।

দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্যতি।

(অথর্ববেদ ১০.৮.৩২)

সরলার্থঃ মনুষ্য সমীপবর্ত্তী পরমাত্মাাকে দেখেও না, তাহাকে ছাড়িতেও পারে না। পরমাত্মাার কাব্যকের দেখ, তাহা মরেও না, জীর্ণও হয় না।

অর্থাৎ বেদ সকল যুগ ও কালের জন্য প্রযোজ্য।এর বাণী কখনো অপ্রাসঙ্গিক হয়না,অচল হয়না।বেদ মন্ত্র কলিযুগে নিষ্ক্রিয়-এ ধরনের প্রলাপ তাই অনর্থক।সর্বযুগে ই সমানভাবে প্রযোজ্য ও তা সর্বদা আধুনিক।

এখন মনিষীরা বেদ সমন্ধ্যে কি বলেছেন একটু শুনি-

"বেদ হচ্ছে সকল সত্য জ্ঞানের উৎস। মহাকর্ষ শক্তি যেমন তা আবিস্কারের আগেও বিদ্যমান ছিল তেমনি মানবজাতি যদি এটা ভুলেও যায় তারপরও এটা অপরিবর্তিতভাবে বিদ্যমান থাকবে।ঠিক তেমনি বেদ"

(স্বামী বিবেকানন্দ,Comp lete work,vol 1,paper on Hinduism)

তাছাড়া পবিত্র বেদমাতা আরো বলেছেন

যথেমাং বাচং কল্যানীমাবদানিজনেভ্যঃ।ব্রহ্ম রাজান্যাভ্যাং শূদ্রায়চার্যায় চ স্বায় চারণায়।প্রিয়ো দেবানংদক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ ভুয়াসময়ং মে কামংসমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু।।

(যজুর্বেদ ২৬।২)

সরলার্থঃ পরমেশ্বর সব মনুেষ্যর প্রতিউপদেশ দিতেছেন ব্রহ্মণ,ক্ষত্রিয়,শুদ্র,বৈশ্য,স্বীয় স্ত্রীর ও সেবকাদি এবংঅন্যান্য সকল মনুষ্যকেই যেমন আমি এই মঙ্গলদায়িনী বেদবানীর উপদেশ দান করিয়াছি, তোমরাও সেইরুপ করো।

এবার বিচক্ষন পাঠক বিবেচনা করুক জনৈক ইস্কন ধর্মের অনুসারীর উপোরোক্ত দাবী আসলেই সঠিক কিনা আর এরা আসলেই বেদ মানে কিনা।

সেজন্য পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগের জীব দের জন্য বেদের সার গীতার অনুকরণ করতে বলেছেন এবং বেদকে না মানার কথাও বলেননি।

আপনার সদয় অবগতির জন্য আবারো জানাচ্ছি যে কোন আচার্য্য আই রিপিট কোন আচার্য্য এই দাবী প্রমান করেন নাই। দাবী করেছেন মাত্র। তাও বৈষ্ণব আর কৃৈষ্ণবীয় কিছু অপদার্থ আচার্য্য এই দাবী করেছেন। এবার আসি ভগবান কৃষ্ণের গীতা বলা নিয়ে। না উনি গীতার বক্তা না। এর প্রমান কূর্ম্ম পুরান, মহাভারত আর শিব পুরান। মহাভারত থেকে যেহেতু ভাগবত গীতার উৎপত্তি তাই মহাভারত থেকেই কোট করছি।

মহাভারত অশ্বমেধিক পর্বের ১৬ তম অধ্যায়ে অর্জুন কে গীতা দান প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন যে,

" পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া।।১৩।। "
অর্থাৎ সেই পরম ব্রহ্মের উপদেশ আমি যোগযুক্ত অবস্থায় করেছিলাম।

এ থেকে আমরা জানতে পারি যে, কৃষ্ণ অর্জুন কে যোগযুক্ত অবস্থায় গীতা জ্ঞান দান করেছিলেন। এই আমি যে কৃষ্ণ নিজে নন তাঁর প্রমান উপনিষদেও আছে। আবার পুরাণেও আছে। শিষ্যকে অহংভাবে "আমি, আমার " বোধে উপদেশ দেওয়ার প্রমাণ পেয়ে থাকি। উদাহরণ স্বরূপ ছান্দোগ্যপনিষদ এ সনদ মুনি উপদেশ দিচ্ছেন -

"তিনিই নিম্নে, তিনি উর্ধে, তিনি পশ্চাতে, তিনি সম্মুখে, তিনি পশ্চাতে, তিনি দক্ষিনে, তিনি উত্তরে অর্থাৎ তিনি সর্বত্র।

এর পরই আবার তিনি অহংভাবে উপদেশ দিচ্ছেন -

আমিই অধোভাগে, আমি উর্ধে, আমি পশ্চাতে, আমি সম্মুখে, আমি পশ্চাতে, আমিই দক্ষিনে।

(ছান্দোগ্যপনিষদ ৭।২৫।১)

কাজেই আপনার এই দাবীও যে মিথ্যা তা প্রমাণিত।

এবং প্রমাণ প্রমাণ বলছেন তো শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কলিযুগের যেসব সম্ভাব্যতা বলেছিলেন বর্তমানে তার সব কিছুই ঘটছে, এটা কি কাকতালীয় ?

শ্রীকৃষ্ণ কোন সাধারণ মানুষ ছিলেন না। উনি ষড়গুন সম্পন্ন একজন ভগবান। উনার অজানা কিছুই থাকে না। যেমন বাবা লোকনাথ বা ঠাকুর রামকৃষ্ণ উনারা কেউ সাধারণ মানুষ না। তেমনি কৃষ্ণও ছিলেন না বিধায় উনি সব বলতে পেরেছেন। হরি নাম বিক্রি করে কলিতে অসুরদের উত্থান হবে সেটাও শাস্ত্রে আছে। আর কৃষ্ণ কোথাও বলেন নাই। বেদ না মেনে গীতা মানো কারন এটা বেদের সার। এই দাবী হাস্যকর।

ঈশ্বরের বাণী সত্যতা বিচার করার কোন প্রমাণের দরকার নেই ঈশ্বরের বাণীটিই হচ্ছে ওটার প্রমাণ, যা আমাদেরকে এক নিষ্ঠে পালন করার দরকার।

সেম কথা আমিও বলছি। বেদ মানুন। আর কিছু মানার দরকার নেই। বৈদিক দেবতাদের পুজা করুন। আর কিছু দরকার নেই।

আর আপনার রামকৃষ্ণ গরমহংস, তিনি ও তো ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন একবার হিন্দু হয়েছিলেন ,একবার মুসলিম ,খ্রিস্টান আরো কত কি, নিজের স্ত্রীকে মা কালী ভেবে পুজো করা এগুলো কি সুস্থ মানুষের লক্ষণ ?😆 অজুহাত দেখিয়ে কোন লাভ হবে না।

আপনার সদয় অবগতির জন্য বলছি রামকৃষ্ণ আমার একার না বরং সমগ্র হিন্দু ধর্মের। উনি যে সর্বধর্ম সমন্বয় করেছেন সেটাও একটা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু না। মিশনের অনেক ভক্ত এর বিরোধী। মিশনের এই ব্যাপ্পারটার নিন্দা আমিও করি তবে এরা আর যাই করুক ইস্কনের মতন শাস্ত্র বিকৃতি করে না। শুদ্ধ ধারায় ( দশনামী) থেকে শাস্ত্র অনুবাদ করে সাধারণের জন্য তা বিলিয়ে দিচ্ছে যা প্রশংসার দাবীদার বটে। এবার আসি স্ত্রী পুজায়। আসলে আপনাদের সাথে ইস্লামিষ্টদের এইখানে খুব মিল। ঘৃণা আপনাদের শুরু থেকেই। আর এর বীজ দিয়েইএ মগজ ধোলাই এর শুরু। রামকৃষ্ণের জীবনি পড়েন নাই বা জানেন না বলেই জানা নেই যে উনারা বিবাহ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু সেই বিবাহ সাধারন মানুষের মতন না। যেমন শ্রীকৃষ্ণ বিবাহ করেছেন ঠিকি কিন্তু আপনারা যা মাতাজিদের সাথে করে গন্ডায় গন্ডায় ছাগল প্যদা করেন সেসব উনারা কেউ করেন নাই। সঙ্গম ঋষি মুনিরা বা ভগবানেরা মানুষের মতন করেন না। সেটা ভাল করে মাথায় ঢুকান।


যাগ্গে, ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন একজন ভারতীয় এবং তা নিয়ে আপনার গর্ব হওয়া দরকার কিন্তু আপনি নিজের দেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশে গিয়ে গোরাদের পা চেটে চেটে খাচ্ছেন।

আযমল কাসাবও একজন ভারতীয়। কিন্তু ভারত বিরোধী আর হিন্দু বিদ্বেষ এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল। তেমনি এই অসভ্য ইতর প্রভুপাদ নামক ব্যাক্তিটাও সেম। কিভাবে? কারন সে বলেছিল

মেয়েরা রেপ পছন্দ করে।
মেয়েরা এমন পুরুষকেই পছন্দ করে যে রেপে পারদর্শী ( প্রমান এইখানেঃ
PrabhupadaBooks.com Srila Prabhupada's Original Books)
মেয়েদের ব্রেণে কিছুই নেই । ( প্রমানঃ
Srimad-Bhagavatam 1.3.21 -- Los Angeles, September 26, 1972 Srimad-Bhagavatam Lectures) ইত্যাদি।

রামকৃষ্ণ অন্তত কোন নারীকে এমন অপমান করেন নাই। মাতৃজ্ঞানে পূজা করেছেন। এবার বিচক্ষন , শিক্ষিত জনগন ভাবুন বাকিটা।
এবার আসি আমার পা চাটার বিষয়ে। আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি ইস্কনের ৯০% ফান্ড এই গোরা বা হোয়াইট বেকুবের দলেইরাই দিচ্ছে। ইস্কন তাই ক্রীস্মাস পালন করে, কৃষ্ণকে সান্তাক্লস সাজায়, ফোর্ড কোম্পানির গাড়ী ফ্রী পায়। নাহলে এখানে এদের কেউ পাত্তাও দেয় না। ফোর্ডের মালিক ইস্কনী হয়েছেন তাও মাতাজি দিয়ে তাঁকে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে। আপনারা প্রচারে মেয়েদের ব্যাবহার করেন সেটা সবাই জানে। এমনকি রাশিয়ান এক মাতাজি আমাকে নিয়ে বিছানায় লিলা করারও অফার দিয়েছেন বিনিময়ে আমাকে ইস্কনী হতে হবে। এতেই বোঝা যায় সেখানে কোন ধরণের মেয়েরা থাকে আর যায়।
যাইহোক এই বিষয়ে গেলে বিস্তর। রেপ, হিউম্যান ট্রাফিকিং, জায়গা দখল, গুন্ডামী সবই ইস্কন করে থাকে। এইদিকে গেলে লেখা খামাকা লম্বা হবে।

যা বোঝালাম তা বুঝার চেষ্টা করবেন দয়া করে। অযথা তর্ক করবেন না। পরমেশ্বর পরম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আপনাকে কথা বোঝার শক্তি দিক। 🙏 Hare Krishna.

যা প্রমান দিলাম তা বোঝার চেষ্টা করবেন। মাথা যদি অয়াশ না হয়ে থাকে তো এদের কবল থেকে বের হয়ে সত্য সনাতন ধর্মে ফেরৎ আসুন। ফালতু অজ্ঞানীদের মতন তর্ক করবেন না।
পরমেশ্বর ( শিব, কালী , দূর্গা, গনেশ, ইন্দ্র, কৃষ্ণ, রাম আপ্পনি যে নামেই ডাকুন) আপনাকে সত্য বঝার শক্তি দিন এই কামনা করি।

ওম তৎসৎ। 

Saturday, May 8, 2021

কোনারকের সূর্য মন্দিরের ইতিহাস

 কোণার্ক সুর্য মন্দির যা ১৩শ-শতাব্দীতে নির্মিত ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরী জেলার কোণার্ক শহর অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয় যে মন্দিরটি ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব গঙ্গ রাজবংশের নরসিংহদেব । একে নিমাণ করেছিলেন।মন্দির কমপ্লেক্সটি একটি বিশাল রথের আকৃতি যা বিস্তারিতভাবে পাথরের চাকার, স্তম্ভ এবং দেওয়ালগুলি তৈরি করা হয়েছে।কাঠামোর একটি প্রধান অংশ এখন ধ্বংসাবশেষ। মন্দিরটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং ভারতে সাতটি বিস্ময়ের বিভিন্ন তালিকাতেও রয়েছে। মন্দিরটি পু্রী থেকে ৩৫ কিমি এবং ভুবনেশ্বর থেকে ৬৫ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত।

কোনার্ক নামটি সংস্কৃত কোনা ,কোনা বা কোণ এবং আর্ক ,সূর্য শব্দগুলির সমন্বয়ে গঠিত, যা মন্দিরের উল্লেখিত সৌর দেবতা সূর্যকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। অর্থাৎ সুর্য্যের বিভিন্ন কোণের অবস্থান। এই মন্দিরটি সুর্য্যের বিভিন্ন অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে।
স্মৃতিস্তম্ভটিকে ইউরোপীয় নাবিকরা একে ব্ল্যাক প্যাগোডা কালা পাগোডাও বলা হতো। এর বিপরীতে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরটিকে হোয়াইট প্যাগোডা ,সাদা পাগোডা, নামে পরিচিত ছিল। উভয় মন্দিরটি নাবিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান হিসেবে কাজ করেছিলো । কোণার্ক সূর্য মন্দিরের তার পরিকাঠামোর জন্য লোহার ভিম ব্যবহার করে।মন্দির গড়ে ওঠার পেছনে দুটি মত আছে। প্রথম পূর্বগঙ্গা রাজবংশের ১০৭৮,১৪৩৪ নরসিংহদেব ১২৩৮-১২৬৪ বা ১২৩২-১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে বাংলা জয়ের স্মারক রূপে চন্দ্রাভাগা নদীর তীরে প্রাচীন মৈত্রিয়ারনে অর্থাৎ সাজেকের কোনারাকে এই মন্দির প্রতিষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত পুরান মতে শ্রীকৃষনের পুত্র সাম্ব রূপে অত্যন্ত নায়ানভোলানো ছিলেন। সব মহিলাদের নজর কারতেন। সাম্ব একদিন নারদের ডাকে সাড়া দিতে ভুলে গেলে নারদের মোড়ে প্রতিরোধ স্পৃহা জাগে। এক দিন কৃষ্ণ যখন গোপিনীদের সঙ্গে লীলায় ব্যস্ত তখন নারদের কুতিরাতে সাম্ব সেখানে ঢুকে পড়ে।তখন গোপিনীদের নজর তার ওপর গিয়ে পড়ে। তখন কৃষ্ণ প্রচুর রেগে গিয়ে তাকে অভিশাপ দানের প্রয়োজনে শাস্তি দেন যে তার রূপ হারিয়ে যাবে। তখন মনে দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে সে কোনারাকে সমুদ্রের তীরে এসে সূর্জদেবকে কঠোর তপস্যায় মুগ্ধ করেনিজ হারানো রূপ ফিরে পেয়ে সমুদ্রতীরে এই মন্দির প্রতিষ্ঠএ করেন।

মন্দিরে সূর্যদেবতার যে বিশাল বিগ্রহ ছিল তা এখন নেই। কালের করাল গ্রাসে স্থাপনার অনেকটাই আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এর কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত বাংলার সুলতান সুলেমান খান কারানির সেনাপতি কালাপাহাড়ের আক্রমণে কোনার্ক মন্দির প্রথম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। উড়িষ্যার ইতিহাস অনুযায়ী কালাপাহাড় ১৫০৮ সালে কোনার্ক আক্রমণ করে। দ্বিতীয়ত নরসিংহদেব মুসলিম মেয়ে কে বিয়ে করার জন্যে বহিসকিত হয়। তাই সে নিজে মন্দির ধ্বংসকরেন। তৃতীয়ত ১৬২৬ সালে খুরদার তত্কালীন রাজা পুরুষোত্তম দেবের পুত্র নরশিমা দেব সূর্যদেবের বিগ্রহটি পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে নিয়ে যান। সেখানে একটি পৃথক মন্দিরে সূর্য এবং চন্দ্র দেবতার বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। শুধু বিগ্রহই নয় তিনি কোনার্ক মন্দির থেকে কারুকার্য করা অনেক পাথর পুরীর মন্দিরে নিয়ে যান। এমনকি নবগ্রহ পথ নামে একটি বিশাল প্রস্তর খন্ডও তিনি পুরীতে নিয়ে যান। মারাঠা শাসনামলে কোনার্ক মন্দির থেকে অনেক ভাস্কর্য ও প্রস্তরখন্ড পুরীতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭৭৯ সালে কোনার্ক থেকে অরুণ কুম্ভ নামে বিশাল একটি স্তম্ভ নিয়ে পুরীর সিংহদ্বারের সামনে স্থাপন করা হয়। সেই সময় মারাঠা প্রশাসন কোনার্কের নাট মন্ডপটি অপ্রয়োজনীয় মনে করে ভেঙ্গে ফেলে। সূর্যদেবের বিগ্রহ অপসারণের পর কোনার্কে পূজা এবং আরতি বন্ধ হয়ে যায়। চতুর্থত পর্তুগীজ জলদস্যুদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে কোনার্ক বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। পর্তুগীজ জলদস্যুদের দস্যুবিতি করতে অসুবিধা হওয়ার জন্য পর্তুগীজ দস্যুরা কোনার্ক মন্দিরের মাথায় অবস্হিত অতি শক্তিশালি চুম্বক টিকে নষ্ঠ করে দেয়.আঠারশ শতক নাগাদ কোনার্ক মন্দির তার সকল গৌরব হারিয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। মন্দিরের অনেক অংশ বালির নিচে চাপা পড়ে যায় ।মন্দির চত্বর ও এর আশেপাশের এলাকা ধীরে ধীরে ঘন অরণ্যে ছেয়ে যায় ।বুনো জন্তুরা বাসা বাঁধে মন্দিরের ভিতর। জলদস্যু ও ডাকাতের আস্তানায় পরিণত হয় কোনার্ক মন্দির। সেসময় দিনের আলোতেও সাধারণ মানুষ ভয়ে এর ত্রিসীমানায় যেত না।

আকৃতির।মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্ডপ। এখানে একসময় দেবদাসীরা দেবতার উদ্দেশ্যে পূজানৃত্য পরিবেশন করতেন। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির,ভোগমন্দির এবং গর্ভগৃহ। মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮৫৭ ফুট ।তবে মন্দিরের অনেক অংশ এখন বালিতে দেবে গেছে। মন্দিরের দেউল এখনো ২০০ ফুট উঁচু।উড়িষ্যা এবং দ্রাবিড় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে নির্মিত মন্দিরটি ধূসর বেলে পাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ,তার সামনে রয়েছে সাত জোড়া ঘোড়া। সাতটি ঘোড়া মানে সপ্তাহের সাত দিন। বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত। চব্বিস্টি চাকা মানে চব্বিশ ghonta। চাকার কারুকার্য দর্শকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। প্রতিটি চাকা একেকটি সূর্যঘড়ি। চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা। আটটি দাড়ি মানে অষ্টপ্রহর। এখনো নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে। মন্দিরের প্রবেশপথেই রয়েছে বিশাল দুটি সিংহের মূর্তি যারা লড়াই করছে দুটি রণহস্তীর সঙ্গে।তাছাড়াও রয়েছে ডানসিং হল ও ছায়াদেবীর মন্দির এবং মায়া মন্দির। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে মন্দির প্রাঙ্গনে বসে ডান্স ফেস্টিবল। সেএই সময় বহু দূর থেকে ছুটে আসে বহু নৃত্যপ্রেমী মানুষ।

আজও ভোরের সূর্যোদয়ের প্রথম আলো মন্দিরের প্রাঙ্গনে এসে পড়ে। মন্দিরের ভাস্কর্য অনুপম। বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় পাথরের ভাস্কর্য ও কারুকার্য রয়েছে। দেবতা,অপ্সরা, কিন্নর, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, মানুষ, বালিকা বধূ বিয়ের শোভাযাত্রা, সমকামিতা, রাজার যুদ্ধ প্রস্তুতি, মৃদঙ্গকরতাম বীণা, মোহিনী, মিঠুন মূর্তি, ছয় হাতের শিব, রাজদরবারের নানান দৃশ্য, পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিরূপ, নৃত্যরত নরনারী, প্রেমিক যুগল, ফাঁদ দিয়ে হাতি ধরা,শিকারের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাথরের বুকে ।মূর্তিগুলোর মানবিক আবেদন, নিখুঁত গড়ন,লীলায়িত ভঙ্গী শিল্পকলার চরম উত্কর্ষের নিদর্শন। মন্দিরের তরণে মানুষের মূর্তি শায়িত। সিংহ শক্তি অর্থাৎ ক্ষমতার প্রতীক এবং হাতি কিংবা সম্পদের প্রতীক এদের মাজে পিসে মরছে মানুষ।

বিংশ শতাব্দীতে প্রত্নতত্ববিদরা কোনার্ক মন্দির পুনঃরাবিষ্কার করেন। ৩০০ বছর ধরে বালিরস্তূপের নীচে অনাদর ও অবহেলায় পড়ে থাকা এই সূর্য মন্দিরটি কে ১৯০৪ সালে বড়লাট লর্ডকার্জন উদ্ধার করেন৷ তবে তার ও আগে কোন বিপর্যয় বসত মূল সূর্য মন্দিরটি অবুলুপ্ত হয়। আমরা যেটাকে মন্দির হিসেবে দেখি সেটা আসলে নাট মন্দির,মূল মন্দির নয়৷ ফলে লোকচক্ষুর সামনে উন্মোচিত হয়। কোনার্ক মন্দিরের অপূর্ব স্থাপত্য শৈলী,বিষ্ময়কর ভাস্কর্যকীর্তি ও অনন্য শিল্প সম্ভার। কোনার্ক মন্দিরের অনেক শিল্প কীর্তি এখন সূর্য মন্দির জাদুঘর ও উড়িষ্যার জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী কোনার্কের সূর্য মন্দির দেখতে আসেন ।প্রাচীন ভারতীয় স্থপতি ও ভাস্করদের শিল্পনৈপুণ্য ও সৃষ্টিশীলতা আজও মানুষকে বিস্ময় বিমুগ্ধ করে।


Source:
 https://en.m.wikipedia.org/wiki/Konark_Sun_Temple

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Konark

https://www.worldhistory.org/Konarak_Sun_Temple/

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A3%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95_%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF_%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B0


https://roar.media/bangla/main/art-culture/konark-sun-temple-symbol-of-medieval-tradition

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts