Tuesday, July 21, 2020

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য শ্রী সরস্বতী মন্ত্র ও টোটকা

(কামরূপ-কামাখ্যায় একজন বৃদ্ধ সাধু মানুষের থেকে শোনা)
আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো,  'ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে' ছাত্রদের বিভিন্ন শিক্ষা সংক্রান্ত মূল্যবান  তথ্য গুলো। এখানে লিপিবদ্ধ করে দিলাম।

  • প্রাথমিক শিক্ষামূলক (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত) পড়াশুনার ক্ষেত্রে পড়াশুনার ঘরের মধ্যে সর্বদা উত্তর দিক কিংবা উত্তর-পূর্ব কোণের (ঈশান কোণ) দিকে মুখ করে বসা উচিৎ, তবে উত্তর-পূর্ব কোণটাই গুরুত্বপূর্ণ।
  • পড়াশুনার ঘর সর্বদা সবুজ রঙ করা প্রয়োজন কারন সবুজ রঙ বুধ গ্রহের রঙ আর এই রঙ থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশী মনঃসংযোগ বাড়ে।
  • পড়াশুনা করতে হলে সবসময় চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করে তাতে বসে পড়াশুনা করা উচিৎ এবং তার সাথে যদি পাশে সাদা রঙের একটা টেবিল ল্যাম্প থাকে তাহলে সেটা শুভফলদায়ক।
  • উচ্চতর শিক্ষামূলক পড়াশুনা (উচ্চমাধ্যমিকের পরবর্তী শিক্ষা কিংবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কিংবা কোনো টেকনোলজি কিংবা গবেষণা সংক্রান্ত শিক্ষা) উচ্চতর শিক্ষামূলক পড়াশুনার ক্ষেত্রে সর্বদা দক্ষিন-পূর্ব কোণ (অগ্নি কোণ) বরাবর মুখ করে প্রতিদিন পড়াশুনা করতে হবে।
  • উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে আপনার জন্ম কুন্ডলী (Horoscope) অনুযায়ী যে দিক শুভ, বাড়ীর সেই দিকের ঘরে পড়াশুনা করা উচিৎ। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রেও পড়াশুনার ঘরের রঙ সবুজ করতে হবে।
  • গবেষনা মূলক কিংবা টেকনোলজি শিক্ষার ক্ষেত্রে নীল, গোলাপী ইত্যাদি রঙও করা যেতে পারে।
  • পড়াশুনার ঘরে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যে একটি করে চন্দনের ধুপ জ্বালানো উচিৎ কারন একমাত্র চন্দনের ধূপের মধ্যে মনঃসংযোগ করার অধিক ক্ষমতা আছে।
  • আপনাদের বাড়ীর মধ্যে যদি একটা গ্লোব রাখতে পারেন তাহলে এটা সেই বাড়ীর শিক্ষার্থীদের উপর শুভ প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
  • আপনাদের শোবার ঘরে যেদিকে আপনি মাথা রেখে ঘুমান সেই দিকে আমাদের দেশের একটা বড় আকৃতির কাগজের ম্যাপ (Map) বা মানচিত্র দেওয়ালে পেরেক দিয়ে কিংবা আঠা লাগিয়ে শুধু টাঙিয়ে রাখবেন, এতে আশাকরি আপনাদের বাচ্চার মনঃসংযোগ অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।
  • যেসব ছাত্ররা উচ্চতর শিক্ষামূলক পড়াশুনা করছেন তারা তাদের পড়ার টেবিলে একটি পরিস্কার কাঁচের গ্লাসে চারটি সবুজ রঙের (মাথা ছোলা) পেন্সিল নিয়ে সেগুলিকে একটি সবুজ সুতো দিয়ে ৩ প্যাঁচে বেঁধে পেন্সিল গুলোর ছোলা দিকটা উপরের দিকে করে কাঁচের গ্লাসে রেখে দিন এবং সেই পেন্সিল সমেত গ্লাসটি পড়ার টেবিলে রেখে দিন, এতে আশা করি আপনাদের পড়াশুনার প্রতি মনঃসংযোগ বৃদ্ধি পাবে.. আর এই কাজটি করতে হবে শুক্ল পক্ষ্যের মধ্যে শুক্রবার।
  • আপনাদের বাচ্চার পড়ার বই গুলোর মধ্যে শুক্লপক্ষের শনিবার একটি করে লবঙ্গ প্রতিটি বইয়ের মধ্যে রেখে দিন এতে ছাত্রের পড়ায় মনঃসংযোগ বাড়বে।
  • পরীক্ষার সময় যদি আপনারা আপনাদের বাচ্চার হাতের অনামিকা আঙ্গুল (Ring Finger) দিয়ে টক দইয়ের ফোটা কিংবা হনুমানজীর মন্দিরে গিয়ে তাঁর ডান কাঁধের থেকে কিছুটা মেটে সিন্দুর অনামিকা আঙ্গুল (Ring Finger) দিয়ে কপালে এবং গলায় তিলক দিয়ে তারপর পরীক্ষা দিতে যায় তাহলে পরীক্ষাকেন্দ্রে আপনার বাচ্চা মনঃসংযোগ সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারবে।
  • আপনাদের বাড়ীর শৌচালয় ঘরের (Toilet Room) পাশে অথবা শৌচালয় ঘরের দেওয়ালের সাথে সংযুক্ত কোনো ঘরে পড়াশুনা করা উচিৎ নয়।
  • আপনাদের বাড়ীর শোওয়ার বিছানার উপর বসে পড়াশুনা করা কখনোও উচিৎ নয়, এটা ভারতীয় বাস্তুমতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, তবে এই বাস্তুদোষের জন্য হয়তো প্রথম প্রথম আপনারা আপনাদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে বাস্তুর কুপ্রভাব বুঝতে নাও পারেন কিন্তু পরবর্তীকালে উচ্চ শিক্ষার সময় ৯৯% নিশ্চিতভাবে অবশ্যই আপনারা কুপ্রভাব আপনাদের বাচ্চার পড়াশুনার ক্ষেত্রে পাবেন।

অবশ্য করে মনে রাখবেন ,পড়াশুনা করার প্রতি মনঃসংযোগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে এতক্ষন যে আলোচনা করলাম, এই পড়াশুনা, কে কতটা ভালোবেসে করবে সেটা পুরোটাই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, একজন ছাত্র সে নিজে থেকে কতটা পড়াশুনাকে ভালোবাসবে সেটা ব্যক্তিগত জন্ম-কুন্ডলী দেখে বিচার করতে হয়। কোনো ছাত্র যদি নিজে বা পরিবার থেকে তার মধ্যে পড়াশুনার প্রতি ভালোবাসা না থাকে তাহলে কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আমার এই তথ্য কিংবা আমি তার কাছে দায়ী থাকব না।
এবার পড়াশুনায় খুব ভালো ফল করবার জন্য শ্রী সরস্বতী মন্ত্র নিয়ে বলছি। দীপাবলীর আগের দিন, দীপাবলীর দিন, দীপাবলীর পরের দিন – এই তিনদিন (অথবা যে কোনও পূর্ণিমার দিন, তার আগের দিন ও তার পরের দিন) উত্তর দিকে মুখ করে সাদা বস্ত্র পরে, সাদা আসনে, সাদা মালা পরে, স্ফটিক মালায় প্রতিদিন ৪০০০ করে মোট ১২০০০ বার নীচে লেখা সরস্বতী মন্ত্র জপ করতে হবে। সামনে শ্রী সরস্বতী দেবীর মুর্তি বা ছবি (সরস্বতী ধারণ যন্ত্র) রাখতে হবে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়ে পড়াশুনা মনে থাকবে। এর সাথে সাথে একটি চারমুখী রুদ্রাক্ষ, একটি পান্না ও সরস্বতী কবচ্ ধারণেও পড়াশুনায় ভালো ফল পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে -- পাথর, কবচ্, শিকড় ইত্যাদি সাহায্যকারীর ভুমিকা পালন করে মাত্র, পড়াশুনায় আরও ভালো ফল করায় মাত্র, পাশ করায় না।
.
শ্রী সরস্বতী মন্ত্র ---- ও শ্রীং হ্রীং ... বাগ্বাদিনী ভগবতী অর্হনমুখনিবাসিনী সরস্বতী মমাংসে প্রকাশং কুরু স্বাহা

Saturday, July 18, 2020

ভাগবত পুরান নিয়ে কৃৈষ্ণবদের ভন্ডামি

অনেকেই বলে থাকেন যে ব্যাসদেব নাকি সর্ব শাস্ত্র রচনা এবং বেদ কে পরিবর্ধন করে শান্তি পাচ্ছিলেন না। অর্থ্যাৎ উনি নাকি সকল বেদ (উপনিষদ সহ), পুরান লিখেও নাকি শান্তি পাচ্ছিলেন না। পরে উনি নাকি ভাগবত রচনা করেন। ভাগবত ব্যাবসায়ীরা এও বলে থাকেন যে উনি নাকি আত্মপলব্ধির চরম পর্যায়ে এসে নাকি ভাগবত রচনা করেন। তাই ইহা সর্ব শাস্ত্রের সার(!!!!) । আজ দেখবো এই বাক্য কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা।

ইস্কনের বিশাল এক পন্ডিত উনাদের এক ভিডিওতে  আমার উপোরক্ত কথাগুলই বলেছেন। উনি এ-ও বলেছিলেন যে ব্যাসদেব নাকি ১০৮ খানা উপনিষদ রচনা করেছেন। আবার কোন কোন স্থানে লেখা ১০০৮ খানা উপনিষদ। আসল উপনিষদ কয়টি তা আজও আমি জানি না।  আল্লাহপনিষদও আজকাল ব্যাসদেবের রচনা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। তো আমার ইস্কনি প্রভু বলেছেন যে ১৮টি মহাপুরান রচনার পর উনি নাকি অমল পুরান বা ভাগবত রচনা করেন। তাহলে ১৮ পুরানের মাঝে তো ভাগবত একটি। তাহলে ১৮ পুরান রচনার পর উনি আবার কোন ভাগবত রচনা করেন? আমার মাথায় ঢুকছে না।

তো উনার স্লিপ অফ টাং হয়েছে মানে ১৭ এর স্থানে প্রভু উত্তেজনা বসত ১৮ বলে ফেলেছেন মেনে আমি উনার কথা মেনে নিচ্ছি। আর ১৮ নাম্বার পুরান হিসাবে ভাগবত কে মেনে নিচ্ছি। এবার দেখি শাস্ত্র কি বলে? আসুন শুরু করা যাক।

প্রথমেই উনাদের প্রানপ্রিয় ভাগবত পুরানে দেখি।

ভাগবত ১২/১৩/ শ্লোক ৪-১০



 

আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি যে বিভিন্ন পুরানের শ্লোক সংখ্যা দেয়া হয়েছে । এখানে ৪ এবং ৫ নং শ্লোক খেয়াল করুন। ভাগবত পুরান আসছে ৫ নম্বরে। ব্রহ্ম, পদ্ম, বিষ্ণু, শিব এবং এরপর ভাগবত। মানে ভভাগবত পুরান মতেই ভাগবত ৫ নম্বর পুরান। মানে ১৭ পুরান পরে ১৮ নম্বরে গিয়ে ইহা রচনা হয় নাই। শুধু এখানেই না আরও আছে।

আসুন বিষ্ণু পুরানের ৩য় অংশের, ষষ্ঠ অধ্যায়, ২১-২৫ নম্বর শ্লোকে তাকাই।




স্ক্রীনশট খেয়াল করুন। এইখানে স্পষ্ট বলা আছে যে কোন পুরান কিভাবে রচনা হয়েছে। তার আগে ২০ নম্বর শ্লোক দেখে নেই। পুরানজ্ঞ পুরুষ ১৮ টি পুরানের কথা বলেন এর মধ্যে প্রাচীনতম হল ব্রহ্ম পুরান। ব্রহ্ম, পদ্ম, বিষ্ণু, শিব এবং এরপর ভাগবত এখানেও তাই। তাহলে লেটেষ্ট কি? এখানে বা আগের শ্লোক মতে ব্রম্মান্ড পুরান হল ১৮নং পুরান। তাহলে আমার কৃৈষ্ণব প্রভুজি কি বলেছিলেন? আর এখানে কি দেখতে পাচ্ছি?
এরপর শেষে আসছি লিঙ্গ পুরানে। যা ১৮ পুরানের একটি। লিঙ্গ পুরানের পূর্বভাগের ৩৯ তম অধ্যায়, ৬১- ৬৩ নং শ্লোক পড়ে নিতে পারেন।


সেখানেও বলা হচ্ছে একই কথা। ভাগবত পুরান এখানেও পঞ্চম। আর সর্বশেষ পুরানের নাম এখানেও ব্রহ্মাণ্ড পুরান।    

তাহলে দেখতে পাচ্ছি সকল পুরান একই কথা বলছে। বিষ্ণু পুরানে তো স্পষ্ট করে বলেই দেয়া হচ্ছে যে প্রথমে রচনা  হয়েছিল ব্রহ্ম পুরান, এরপরে পদ্ম, বিষ্ণু, শিব এরপর ভাগবত। মানে সেখানে রচনা পর্জন্ত ক্রনলজিকাল অর্ডারে বলেই দেয়া হয়েছে। এমনকি নারদ পুরানও যদি ঘেটে দেখেন তাহলে পাবেন একই কথা। একই লিষ্ট। কোথাও লেখা নেই যে সর্বশেষ হল ভাগবত পুরান। সকল স্থানেই সর্বশেষ ব্রহ্মাণ্ড পুরানকে বলা হয়েছে।

তাহলে প্রমানিত হল যে জনৈক কৃৈষ্ণব যে মিথ্যা এবং নিজের মনের বানোয়াট কথা বলছেন। উনাদের যে দাবী মিথ্যা তা পুরান থেকেই প্রমান হল। এবার উনারা কি দেখাতে পারবেন যে সর্বশেষ পুরান হল ভাগবত পুরান। ভন্ড ইস্কন তথা কৃৈষ্ণব থেকে সাবধান হন। 

হর হর মহাদেব। 


Friday, July 17, 2020

শিবলিঙ্গ পূজার সূত প্রকরণ ও তার তাৎপর্য

স্থান :- নদী অথবা পুকুরের ধারে অথবা পর্বতে অথবা বনে অথবা শিবালয়ে অথবা কোনাে পবিত্র স্থানে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করে তার পূজা করা উচিত।

কাল :- যেকোনো শুভদিন।

পাত্র :- ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্র সবার জন্য প্রযোজ্য। ভক্তকে নিজেই সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, এছাড়া অতিরিক্ত ভাবে কোনো পুরোহিতের প্রয়োজন নেই৷

তথ্যসূত্র :- উল্লেখিত বিধিটি শিবমহাপুরাণের অন্তর্গত বিদ্যেশ্বরসংহিতার ২০ নং অধ্যায় থেকে সংগৃহীত৷ বিধিটিকে আরো সহজ ভাবে তুলে ধরার জন্য লেখক বিধির নিচে সেই অংশের তাৎপর্য যোগ করেছেন মাত্র, মূল অংশের কোনো পরিবর্তন করেননি।

পুরাণে উল্লেখিত প্রকরণ ও তার তাৎপর্য :-

সূতদেব বলেন - ব্রাহ্মণগণ! এখানে বৈদিক বিধিতে যে পূজার ক্রম বলা হয়েছে, তাকে পূর্ণ ভাবে সম্মান করে আমি পূজার আর একটি নিয়ম জানাচ্ছি, যা উত্তম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বসাধারণের জন্য উপযুক্ত। মুনিবরগণ! পার্থিব লিঙ্গের পূজা ভগবান শিবের নামে বলা হয়েছে। সেই পূজা সমস্ত অভীষ্ট প্রদানকারী। আমি তা বলছি, শােনাে!

হরাে মহেশ্বরঃ শম্ভুঃ শূলপাণিঃ পিনাকধৃক। শিবঃ পশুপতিশ্চৈব মহাদেব ইতি ক্ৰমাৎ৷৷  মৃদাহরণসংঘট্টপ্রতিষ্ঠাহ্বানমেব চ। স্নপনং পূজনং চৈব ক্ষমস্বেতি বিসর্জনম।। ওঁকারাদিচতুর্থ্যন্তৈর্নমােহন্তৈর্নামভিঃ ক্ৰমাৎ। কর্তব্যাশ্চ ক্রিয়াঃ সর্বা ভক্ত্যা পরময়া মুদা৷৷

(শিবপুরাণ, বি .২০।৪৭ - ৪৯)

অর্থ্যাৎ হর, মহেশ্বর, শম্ভু, শূলপাণি, পিনাকধৃক, শিব, পশুপতি ও মহাদেব — শিবের এই আটটি নাম বলা হয়েছে। প্রত্যেক নামের আগে ওঁকার এবং শেষে চতুর্থী বিভক্তির সঙ্গে ‘নমঃ' পদ দিয়ে অত্যন্ত আনন্দ এবং ভক্তিভাব সহকারে পূজা সম্বন্ধীয় কাজ সম্পন্ন করা উচিত।



এর মধ্যে প্রথম নামে অর্থাৎ 'ওঁ হরায় নমঃ' উচ্চারণ করে পার্থিব লিঙ্গ তৈরি করার জন্য মাটি আনবে।

[তাৎপর্য - উক্ত মন্ত্রটি জপ করতে করতে শুদ্ধ স্থান থেকে মাটি নিয়ে আসতে হবে এবং পূজা নদী বা পুকুরের ধারে, পর্বতে, বনে, শিবালয়ে অথবা কোনাে পবিত্র স্থানেই করা উচিত।]

দ্বিতীয় নাম অর্থাৎ 'ওঁ মহেশ্বরায় নমঃ' উচ্চারণ করে লিঙ্গ নির্মাণ করবে।

[তাৎপর্য - উক্ত মন্ত্রটি মনে মনে উচ্চারণ করতে হবে এবং মাটির দলা দিয়ে শিবলিঙ্গের নির্মাণ করতে হবে।]

পরে 'ওঁ শম্ভবে নমঃ' বলে সেই পার্থিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করবে।

[তাৎপর্য - যে স্থানে পূজা হবে সবার প্রথমে তার ক্ষেত্রশুদ্ধি করতে হবে, এরজন্য হাতে কিছুটা পঞ্চামৃত নিয়ে উক্ত মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে সেই স্থানে প্রক্ষেপ করতে হবে। এরপর সেখানে একই মন্ত্র দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করতে করতে নির্মিত শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।]

তারপর ‘ওঁ শূলপাণয়ে নমঃ' বলে সেই পার্থিব লিঙ্গে ভগবান শিবের আবাহন করবে।

[তাৎপর্য - আহ্বান দুই প্রকারের হয়, এক ভৌতিক অপরটি আধ্যাত্মিক। তাই সবার প্রথমে ডান হাতের মধ্যমা আঙুলটিকে শিবলিঙ্গের লিঙ্গ ভাগে স্পর্শ করে উক্ত মন্ত্রটি মনে মনে পাঠ করতে হবে। এরপর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় উক্ত মন্ত্রটি আবার মনে মনে পাঠ করতে হবে এবং মনে মনে ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করতে হবে তিনি জাগরিত হন। মহাদেব সর্বব্যাপী আবার জীবের অন্তরেও বিদ্যমান, তার সর্বব্যাপী স্বরূপ যজ্ঞের মাধ্যমে পূজিত হয় এবং প্রতীকের মাধ্যমে অন্তরস্থ স্বরূপ। এই আহ্বান প্রক্রিয়ার তাৎপর্য নিজ মনকে স্থির করে, তার চিত্তশুদ্ধি করে, কেন্দ্রীভূত করে, অন্তরস্থ মহাদেবের জাগরণ। এই জাগরিত মহাদেবের প্রতীক হল মাটির তৈরি বিগ্রহটি তথা শিবলিঙ্গটি। তাই অন্তরস্থ মহাদেব জাগরিত হলে, মাটির তৈরি বিগ্রহও উপাসনা যোগ্য হয়, নচেৎ নয়।]

'ওঁ পিনাকধৃষে নমঃ' বলে সেই শিবলিঙ্গকে স্নান করাবে।

[তাৎপর্য - উক্ত মন্ত্রটি জপ করতে করতে শিবলিঙ্গের উপরে জল অথবা দুধ অথবা পঞ্চামৃত অর্পণ করবে।]

'ওঁ শিবায় নমঃ' বলে তাঁর পূজা করবে।

[তাৎপর্য - সুগন্ধি দ্রব্য, ধূপ, দীপ ও পুষ্প দ্বারা নির্মিত শিবলিঙ্গের পূজা করবে, উক্ত মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে৷]

পরে ‘ওঁ পশুপতয়ে নমঃ' বলে ক্ষমা প্রার্থনা চাইবে এবং শেষে ‘ওঁ মহাদেবায় নমঃ' বলে আরাধ্য দেবতাকে বিসর্জন দেবে।

[তাৎপর্য - আমরা বর্তমান দিনের সাধারণ মানুষেরা প্রাচীন ঋষিমুনিদের ন্যায় অথবা শুদ্ধ শৈব সাধকদের ন্যায় অতোটা তত্ত্বজ্ঞ নই! তাই পূজার নিয়মাচার পালনে কোনো ত্রুটি হতে পারে, এরজন্য পূজার শেষে উক্ত মন্ত্রটি উচ্চারণ করে মনে মনে ভগবানের কাছে ক্ষমা চাইবে৷ এরপর সমগ্র ক্রিয়া সম্পন্ন হলে পূজা করা শিবলিঙ্গটি কোনো জলাশয়ে বিসর্জন দেবে দ্বিতীয় মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে।]

বিঃদ্রঃ - উল্লেখিত মন্ত্র গুলো কমপক্ষে ১১ বার এবং সর্বোচ্চ ১০৮ জপ করতে পারেন, এর মধ্যে যেটা আপনার সুবিধা হবে।


Tuesday, July 7, 2020

২০১৬ সালে আমার দেয়া সহজ শিব পূজা পদ্ধতি

শিবপূজার সাধারণ পদ্ধতি এখানে বর্ণিত হল। এই পদ্ধতি অনুসারে প্রতিদিন বা প্রতি সোমবার প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ বা বাণেশ্বর শিবলিঙ্গে শিবের পূজা করতে পারেন। যাঁরা ‘সোমবার ব্রত’ করেন, তাঁরাও এই পদ্ধতি অনুসারে শিবপূজা করে ব্রতকথা পাঠ করতে পারেন। মনে রাখবেন, সাধারণ শিবলিঙ্গ ও বাণেশ্বর শিবলিঙ্গে পূজার মন্ত্র আলাদা। যাঁদের বাড়িতে বাণেশ্বর আছেন, তাঁরাই বাণেশ্বর মন্ত্রে শিবের পূজা করবেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধারণ শিবপূজার মন্ত্রেই পূজা করবেন। শিবরাত্রির দিন বিশেষভাবে পূজা করার নিয়ম আছে। সেই পদ্ধতি পরে দেওয়া হবে।
সকালে সূর্যোদয়ের তিন ঘণ্টার মধ্যে পূজা সেরে নেওয়াই উচিত। একান্ত অসমর্থ হলে খেয়াল রাখতে হবে যেন বেলা বারোটার মধ্যেই পূজা সেরে ফেলা যায়। তারপর সকালের পূজা করা উচিত নয়। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া অন্যেরা কিছু না খেয়েই পূজা করবেন। সকালে স্নান ও আহ্নিক উপাসনা সেরে শিবপূজায় বসবেন। প্রথমে পূজার সামগ্রীগুলি একত্রিত করে গুছিয়ে নিন। প্রতিদিন শিবপূজা করলে অনেক সময় ফুল-বেলপাতা ইত্যাদি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেক্ষেত্রে ওই সব উপাচারের নাম ও মন্ত্র উচ্চারণ করে সামান্যার্ঘ্য (জলশুদ্ধি) জল দিয়ে পূজা করলেই চলে। ধূপ ও প্রদীপ জ্বেলে নিন। শিব, শ্রীগুরু ও ইষ্টদেবতাকে প্রণাম করে তিন জনকে অভিন্ন চিন্তা করতে করতে যথাশক্তি দীক্ষামন্ত্র জপ করবেন। তারপর করজোড়ে এই মন্ত্রটি পাঠ করবেন—
ওঁ  সর্বমঙ্গলমাঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্।
নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণি কারয়েৎ।।

আচমন

ডান হাতের তালু গোকর্ণাকৃতি করে মাষকলাই ডুবতে পারে এই পরিমাণ জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রটি পাঠ করে পান করুন। এইভাবে মোট তিন বার জলপান করে আচমন করার পর হাত জোড় করে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন—

ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ

দিবীব চক্ষুরাততম্।

ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।

যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।

আচমন ২ প্রকার তান্ত্রিক (শাক্ত) এবং বৈষ্ণব নিম্নে শাক্ত পদ্ধতি দেয়া হল:



প্রতি আচমন শেষে বিষ্ণু স্মরণ করতে হয়। নিম্নে অব্রাহ্মণদের বিষ্ণু স্মরণ দেয়া হল। বলা বাহুল্য এই আচমন শাক্ত এবংবৈষ্ণব আলাদা হলেও

ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ

দিবীব চক্ষুরাততম্।

ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।

যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।। এই মন্ত্র আচমন শেষে বিষ্ণু স্মরণ অবশ্যই করতে হবে। অনেকেই বলবেন ২ বার এক মন্ত্র কেন পড়বো। কারণ প্রথমবার আপনি আচমন করেছেন এরপর আপনি বিষ্ণুকে স্মরণ করেছেন। ২ ক্ষেত্রে মন্ত্র এক হলেও কার্য ভিন্ন ভিন্ন।




জলশুদ্ধি

তাম্রপাত্রে বা কোশায় গঙ্গাজল বা পরিষ্কার জল নিয়ে মধ্যমা দ্বারা সেই জল স্পর্শ করে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন—

ওঁ  গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।

নর্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু।

সূর্যমণ্ডল থেকে সকল তীর্থ সেই পার্শ্বস্থ জলে এসে উপস্থিত হয়েছেন এই চিন্তা করতে করতে সেই জলে একটি ফুল দিয়ে তীর্থপূজা করুন। তীর্থপূজার মন্ত্রটি হল—

ওঁ  এতে গন্ধপুষ্পে তীর্থেভ্যো নমঃ।

এরপর এই জল সামান্য কুশীতে নিয়ে পূজাদ্রব্যের উপর ও নিজের মাথায় ছিটিয়ে দিন।

আসনশুদ্ধি

যে আসনে বসেছেন, সেই আসনটিতে একটি ফুল দিয়ে হাত জোড় করে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন—

ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।

ত্বঞ্চ ধারায় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্।।

পুষ্পশুদ্ধি

পুষ্প স্পর্শ করে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন—

ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে। পুষ্পাচয়াবকীর্ণে চ হুঁ ফট্ স্বাহা।

ভূতশুদ্ধি

হাত জোড় করে মনে মনে এই চারটি মন্ত্র পাঠ করুন—

ওঁ ভূতশৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্নাপথেন জীবশিবং

পরমশিবপদে যোজয়ামি স্বাহা ।। ১ ।।

ওঁ যং লিঙ্গশরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা ।। ২ ।।

ওঁ রং সংকোচশরীরং দহ দহ স্বাহা ।। ৩ ।।

ওঁ পরমশিব সুষুম্নাপথেন মূলশৃঙ্গাটমুল্লসোল্লস

জ্বল জ্বল প্রজ্জ্বল প্রজ্জ্বল সোঽহং হংসঃ স্বাহা ।। ৪ ।।

প্রাণায়ম

‘ওঁ’ বা গুরুপ্রদত্ত বীজমন্ত্রে (বাণেশ্বর শিবের ক্ষেত্রে ‘ঐঁ’ মন্ত্রে) চার বার ৪/১৬/৮ ক্রমে পূরক, কুম্ভক ও রেচক করে প্রাণায়ম করুন।

শ্রীগুর্বাদিপূজা

এরপর একটি একটি করে গন্ধপুষ্পদ্বারা শ্রীগুরু ও অন্যান্য দেবতাদের পূজা করুন। মন্ত্রগুলি হল—

ঐঁ এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীগুরবে নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে গণেশাদিপঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে আদিত্যাদিনবগ্রহেভ্যো নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদিদশদিকপালেভ্যো নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে কাল্যাদিদশমহাবিদ্যাভ্যো নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মৎস্যাদিদশাবতারেভ্যো নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মৎস্যাদিদশাবতারেভ্যো নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ।

ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বাভ্যো দেবীভ্যো নমঃ।

ধ্যান

এরপর একটি ফুল নিয়ে (সম্ভব হলে কূর্মমুদ্রায় ফুলটি নেবেন) শিবের ধ্যান করবেন। শিবের সাধারণ ধ্যানমন্ত্র ও বাণেশ্বর ধ্যানমন্ত্র দুটি নিচে দেওয়া হল—

(সাধারণ ধ্যানমন্ত্র)—

ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্।

পদ্মাসীনং সমন্তাৎ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম্।।

(বাণেশ্বর শিবের ধ্যান)—

ঐঁ প্রমত্তং শক্তিসংযুক্তং বাণাখ্যঞ্চ মহাপ্রভাং।

কামবাণান্বিতং দেবং সংসারদহনক্ষমম্।।

শৃঙ্গারাদি-রসোল্লাসং বাণাখ্যং পরমেশ্বরম্।

এবং ধ্যাত্বা বাণলিঙ্গং যজেত্তং পরমং শিবম্।।

স্নান

এরপর শিবকে স্নান করাবেন। গঙ্গাজলে শুদ্ধজলে চন্দন মিশ্রিত করে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে শিবকে স্নান করাবেন এই মন্ত্রে শিবকে স্নান করাবেন—

ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্।

উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ।।

ওঁ  তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি

তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।

বিঃ দ্রঃ সাধারণ শিবলিঙ্গ ও বাণেশ্বর—উভয়ক্ষেত্রেই স্নান মন্ত্র এক।

প্রধান পূজা

স্নানের পর আরেকবার আগের ধ্যানমন্ত্রটি পাঠ করে শিবের ধ্যান করবেন। তারপর মনে মনে উপচারগুলি শিবকে উৎসর্গ করে মানসপূজা করবেন। মানসপূজার পর একে একে উপচারগুলি বাহ্যিকভাবে শিবকে সমর্পণ করবেন।

(সাধারণ শিবলিঙ্গে দশোপচার পূজার মন্ত্র)—

ওঁ নমো শিবায় এতৎ পাদ্যং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় এষঃ অর্ঘ্যঃ শিবায় নমঃ। (আতপচাল ও দূর্বা একটি সচন্দন বেলপাতায় করে ফুল সহ দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদমাচমনীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং স্নানীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় এষ গন্ধঃ শিবায় নমঃ। (চন্দনের ফোঁটা দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং সচন্দনপুষ্পং শিবায় নমঃ। (একটি চন্দনমাখানো ফুল দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং শিবায় নমঃ। (একটি চন্দনমাখানো বেলপাতা দিন)

ওঁ নমো শিবায় এষ ধূপঃ শিবায় নমঃ। (ধূপটি শিবের সামনে তিনবার ঘুরিয়ে দেবতার বাঁদিকে, অর্থাৎ নিজের ডানদিকে রাখুন)

ওঁ নমো শিবায় এষ দীপঃ শিবায় নমঃ। (প্রদীপটি শিবের সামনে তিনবার ঘুরিয়ে দেবতার ডানদিকে, অর্থাৎ নিজের বাঁদিকে রাখুন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং শিবায় নিবেদয়ামি।

(নৈবেদ্যের উপর অল্প সামান্যার্ঘ্য জল ছিটিয়ে দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং পানার্থোদকং শিবায় নমঃ।

(পানীয় জলের উপর অল্প সামান্যার্ঘ্য জল ছিটিয়ে দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং পুনরাচমনীয়ং শিবায় নমঃ।

(সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং তাম্বুলং শিবায় নমঃ। (একটি পান দিন, অভাবে সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন।)

ওঁ নমো শিবায় ইদং মাল্যং শিবায় নমঃ। (মালা থাকলে মালাটি পরিয়ে দিন)

(বাণেশ্বর শিবলিঙ্গে দশোপচার পূজার মন্ত্র)—

বিঃ দ্রঃ উপচার দেওয়ার নিয়ম সাধারণ শিবলিঙ্গে পূজার অনুরূপ।

ঐঁ এতৎ পাদ্যং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ এষঃ অর্ঘ্যঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদমাচমনীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদং স্নানীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ এষ গন্ধঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদং সচন্দনপুষ্পং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ এষ ধূপঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ এষ দীপঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং বাণেশ্বরশিবায় নিবেদয়ামি।

ঐঁ ইদং পানার্থোদকং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদং পুনরাচমনীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদং তাম্বুলং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ঐঁ ইদং মাল্যং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

পুষ্পাঞ্জলি

সচন্দন পুষ্প ও বেলপাতা নিয়ে এই মন্ত্রে এক, তিন অথবা পাঁচ বার অঞ্জলি দেবেন—

(সাধারণ পুষ্পাঞ্জলি)—

ওঁ নমো শিবায় এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো শিবায় নমঃ।

(বাণেশ্বর শিবের পুষ্পাঞ্জলি)—

ঐঁ এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

গৌরীপূজা

এইভাবে শিবপূজা শেষ করে শিবলিঙ্গের গৌরীপীঠ বা পিনেটে একটি ফুল দিয়ে এই মন্ত্রে গৌরীর পূজা করুন—

ওঁ হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে গৌর্যৈ নমঃ।

অষ্টমূর্তি পূজা

বাণেশ্বর শিবে অষ্টমূর্তির পূজা করতে হয় না। কিন্তু অন্যান্য শিবলিঙ্গের ক্ষেত্রে করতে হয়। একটি ফুল দিয়ে এই মন্ত্রে অষ্টমূর্তির পূজা করুন—

ওঁ  এতে গন্ধপুষ্পে অষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ।

জপ ও জপসমর্পণ

এরপর ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ বা দীক্ষামন্ত্র ১০৮ বার জপ করে এই মন্ত্রে এক গণ্ডুষ জল শিবের নিচের দিকের ডান হাতের উদ্দেশ্যে প্রদান করুন—

ওঁ গুহ্যাতিগুহ্যগোপ্তা ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্।

সিদ্ধির্ভবতু মে দেব ত্বৎপ্রসাদান্মহেশ্বর।।

প্রণাম

এইবার এই মন্ত্রটি পড়ে সাষ্টাঙ্গে শিবকে প্রণাম করে পূজা সমাপ্ত করুন—

(সাধারণ শিবলিঙ্গের ক্ষেত্রে)—

ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।

নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।

(বাণেশ্বর শিবের ক্ষেত্রে)—

ওঁ বাণেশ্বরং নরকার্ণবতারণায়

জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায়।

কর্পূরকুন্দধবলেন্দুজটাধরায়

দারিদ্র্যদুঃখদহনায় নমঃ শিবায়।।

 

সবশেষে

মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং মহেশ্বরো যত পুজিতং ময়া দেব,পরিপুর্ন্নং তদস্তুমে আবাহনং ন জনামি,নৈব জনামি পুজনম বিসর্জনং ন জনামি,ক্ষমশ্বো মহেশ্বরো

বিঃ দ্রঃ এটি সাধারণ নিয়ম। দীক্ষাগুরু বিশেষ নিয়ম কিছু বলে দিলে, সেই মতো পূজা করবেন। নতুবা এই নিয়মেই পূজা করা যেতে পারে।

—ইতি শিবপূজাপদ্ধতি সমাপ্ত—


Monday, July 6, 2020

দ্বাদশ রাশি বুঝে পৃথক মেনু

স্বাস্থ্যই সম্পদ। কথাটি বহু ব্যবহৃত হলেও এর গুরুত্ব চিরকালীন। আর ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রধান প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাবার। রাশি অনুযায়ী আপনার শরীরে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনে তারতম্য ঘটে। তাই পরের বার ডিনার টেবিল সাজানোর আগে জেনে নিন আপনার রাশির জন্য উপযুক্ত খাবার।

★ মেষ - মেষ রাশির জাতকদের প্রধান উপাদান আগুন। তাই এদের বেশি ঝাল ও মশলাদাখাবর এড়িয়ে যাওয়া উচিত। না হলে অম্বল ও পেটের গোলমাল হতে পারে। শরীর ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার মেষ রাশির উপযুক্ত। মেষের জাতকদের উপযুক্ত খাবার - ব্রাউন রাইস, কলা, ফলের রস, জলপাই, টমেটো, পেঁয়াজ, লেটুস পাতা, শসা, পালং শাক, ব্রকোলি, বিনস, কুমড়ো, আদা, সর্ষে এড়িয়ে যান - মশলাদার খাবার, নুন ও অ্যালকোহল।

★ বৃষ - পাশ্চাত্য জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, বৃষের জাতকদের প্রধান উপদান পৃথিবী। সেইজন্য তাঁদের এমন খাবার খাওয়া উচিত, যাতে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাঁদের খাবারে নুন একটু বেশি দিলেও ভালো। সঙ্গে ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি।বৃষের জাতকদের উপযোগী খাবার - বিট, ফুলকপি, শসা, পালং শাক, পেঁয়াজ, কুমড়ো, বাদাম, বিনস। দূরে রাখুন - খুব বেশি মশালাদার খাবার ও বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এমন যে কোনও খাবার।

★ মিথুন - মিথুন রাশির জাতকদের প্রধান উপাদান বাতাস। তাঁদের এমন খাবার খাওয়া উচিত যা তাঁদের স্নায়ুতন্ত্র ও ফুসফুসকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে। এরা অনেকেই কোলা ও কফি পছন্দ করেন। কিন্তু এই দুটো মিথুনের জাতকদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। 
মিথুনের জন্য উপযোগী খাবার - কমলালেবু, আঙুর, আঙুরের রস, আপেল, লেটুস পাতা, ফুলকপি, পালং শাক, গাজর, বিনস, টমেটো, ইয়োগার্ট, আমন্ড, আদা, রসুন। দূরে রাখুন - কফি, আলু বা অন্য যে কোনও শিকড় জাতীয় সবজি, চিনি।

★ কর্কট - এই রাশির জাতকদের হজমপ্রক্রিয়া সহজে খারাপ হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। এদের তাই এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভর্তি থাকে। এর ফলে দুটো খাবারের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান রাখা সম্ভব। এরা অ্যালকোহল ও মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য খেতে খুবই ভালোবাসে। কিন্তু কর্কটের জাতকদের সহজে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অ্যালকোহল ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
কর্কটের জন্য উপযোগী খাবার - গম, দানাশস্য, ভাত, ওটমিল, ফল, সেদ্ধ সবজি, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কুমড়ো, শসা, ইয়োগার্ট, বিনস। দূরে রাখুন - তেলতেলে খাবার, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার, মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য।

★ সিংহ - সিংহ রাশির জাতকদের প্রধান উপাদান আগুন। এরা সাধারণত খুবই কর্মব্যস্ত জীবন যাপন করেন। তাই সিংহ রাশির জাতকদের খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকা জরুরি। ছাগলের দুধ নিয়মিত পান করলে এরা কাজে নতুন শক্তি ও উদ্যম পাবে। এছাড়া হৃদযন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ থাকে, এমন খাবার সিংহ রাশির জন্য উপযোগী। 
সিংহ রাশির উপযোগী খাবার - গোটা শস্য, ভাত, লেবু জাতীয় ফল, আপেল, আলু, গাজরের মতো শিকড় জাতীয় সবজি, পালং শাক, ব্রকোলি, উচ্ছে, করলার মতো তেতো সবজি, বাদাম,আমন্ড।দূরে রাখুন - মশালাদার খাবার ও ডেয়ারি দ্রব্য।

★ কন্যা - কন্যা রাশির জাতকদের স্নায়ুতন্ত্র ও তলপেটে নানা ধরনের সমস্যার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণে এদের দুধ, আইসক্রিমের মতো ডেয়ারিজাত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ফাইবার জাতীয় ও অমেগা ফ্যাট বেশি পরিমাণ রয়েছে এমমন খাবার কন্যা রাশির জাতকদের জন্য উপকারী। এদের মস্কিষ্ক সদাসর্বদা ক্রিয়াশীল হয়। তাই ওমেগা ফ্যাট এদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও উন্নত করবে।
কন্যা রাশির জন্য উপযোগী খাবার - গোটাশস্য ও দানাশস্য, ওটমিল, ফল, স্যালাড, ফলের রস, পাতওয়ালা সবজি, স্যুপ, চা, আমন্ড। দূরে রাখুন - বেশি মশলাদার, হাই ক্যালোরিযুক্ত খাবার, চকোলেট।

★ তুলা - তুলা রাশির জাতকদের প্রধান উপাদান বাতাস। সাধারণত তুলা রাশির জাতকদের স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয় এবং মেজাজের ওঠানামা ঘনঘন হয়। এদের অ্যালকোহল ও কফি থেকে দূরে থাকা ভালো। রক্তচাপ যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেদিকে নজর রাখা ভালো। খুব বেশি পরিমাণ সবুজ শাকসবজি খাওয়া তুলা রাশির জাতকদের জন্য উপকারী।
তুলার জাতকদের উপযোগী খাবার - গোটা শস্য, ওটমিল, আপেল, আঙুর, স্ট্রবেরি, ভাপানো সবজি, পালং শাক, টমেটো, মটরসুটি, গাজর, ভুট্টা, বাদাম, আমন্ড। দূরে রাখুন - অ্যালকোহল, নরম পানীয়, মিষ্টি খাবার।

★ বৃশ্চিক - বৃশ্চিক রাশির জাতকদের প্রধান উপাদান জল। এদের অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। দিনে অন্তত আট গ্লাস জল খাওয়া দরকার। এরা ঝিনুক, শামুক ইত্যাদি খেতে ভালোবাসেন। বেশি করে ব্ল্যাক চেরি খেলে বৃশ্চিক রাশির জাতকদের মেজাজের ওঠানামা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বৃশ্চিক রাশির উপযোগী খাবার - কলা, ব্ল্যাক চেরি, নারকোল, ভাপানো সবজি, স্যালাড, ফুলকপি, পেঁয়াজ, টমেটো, শসা, বিট, বিনস, আমল্ড। দূরে রাখুন - তেলতেলে খাবার, অতিরিক্ত ভাজাভুজি, মিষ্টি জাতীয় খাবার।

★ ধনু - ধনু রাশির জাতকদের লিভারের সমস্যা একটি সাধারণ বিষয়। তাই তাঁদের এমন খাবার খাওয়া দরকার যা লিভারকে সুস্থ রাখে। পরিমিত খাদ্য গ্রহণ এদের জন্য খুবই জরুরী। এরা সস, চকোলেট ও মিষ্টি খেতে ভালোবাসে। কিন্তু সে সব খাবার এদের জন্য এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। প্রোটিনের পরিমাণ বেশি এমন খাবার এদের জন্য উপকারী।
ধনু রাশির উপযোগী খাবার - গোটাশস্য, আপেল, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, আলু, রাঙাআলু, গাজরের মতো শিকড় জাতীয় সবজি। এড়িয়ে চলুন - মশলাদার খাবার, মিষ্টি, অ্যালকোহল।

★ মকর - মকর রাশির উপাদান মাটি। এদের হাড় ও দাঁত শক্তিশালী রাখে এমন খাবার খাওয়া ভালো। তাই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার এদের জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া লেবু, পালং শাক, ভুট্টা, ব্রাউন রাইস খাওয়া এদের জন্য ভালো। 
মকর রাশির জন্য উপযোগী খাবার - ফল, স্যালাড, লেবু, বাঁধাকপি, ভুট্টা, আলু, স্যুপ, চা। দূরে রাখুন - হাই ক্যালোরি মশলাদার খাবার, চকোলেট।

★ কুম্ভ - বাতাস হল কুম্ভ রাশির জাতকদের প্রধান উপাদান। এদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে বাতাস। কুম্ভ রাশির জাতকেরা কোলা ও কেক খেতে ভালোবাসে। কিন্তু এই সব খাবার কুম্ভ রাশির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সামুদ্রিক মাছ বেশি পরিমাণে খেয়ে এদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী।
কুম্ভ রাশির উপযোগী খাবার - আপেল, কমলালেবু, ভাপানো সবজি, বাঁধাকপি, ভুট্টা, গাজর, টমেটো, ব্রকোলি, সোয়া ইয়োগার্ট, বাদাম, আদা, রসুন। দূরে রাখুন - কফি, মিষ্টি, কোলা।

★ মীন - মীন রাশির জাতকদের প্রধান উপাদান হল জল। সেই জন্য এদের এমন খাবার খাওয়া উচিত যা তাঁদের রক্ত, লিভার ও মস্তিষ্কের ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এই রাশির প্রধান গ্রহ হল নেপচুন। এদের মধ্যে সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। লোহার ভাগ রয়েছে এমন খাবার এদের খাওয়া ভালো।
মীন রাশির জাতকদের উপযোগী খাবার - গোটা শস্য, ভাত, আপেল, আঙুর, কমলালেবু, পাতিলেবু, পালং শাক, পেঁয়াজ। দূরে রাখুন - কফি, তেলে ভাজা খাবার, নুন, চিনি।

মুদ্রা ও এর উপকারীতা

প্রাণায়ামে অঙুলি সংস্থাপন একটি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এই অঙুলির দ্বারা পঞ্চভূতকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমাদের শরীরের পাঁচটি আঙুল পাঁচটি প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়। যথা-

১.বৃদ্ধ আঙুল- সূর্য বা আগুনের প্রতীক।
২.তর্জনী- বাতাস বা বায়ুর প্রতীক।
৩.মধ্যমা- মহাকাশের প্রতীক।
৪.অনামিকা- পৃথিবীর প্রতীক।
৫.কনিষ্ঠা- জলের প্রতীক।

দশটি মুদ্রা ও এগুলোর উপকারিতা নিম্ন উপস্থাপন করা হল-

১.ধ্যান মুদ্রাঃ- প্রাণায়ামের সময় শুধু তর্জনীর দ্বারা বৃদ্ধ আঙুল স্পর্শ করলে তা হয় ধ্যান মুদ্রা। এই সময় অন্য আঙুল গুলো সোজা থাকবে।
উপকারিতাঃ এই অভ্যাস সকাল সন্ধ্যায় অন্তত ১৫ বার করা উত্তম। এই মুদ্রার সাহায্যে একাগ্রতা ও স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। দুশ্চিন্তা দূর হয় ও অনিদ্রা জনিত ক্লান্তি নাশ হয়।

২.বায়ু মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় তর্জনীকে বুড়ো আঙুলের গোড়ায় বা মূলে মাউন্ট অফ ভেনাসের উপর চেপে ধরে রাখতে হবে এবং চাপ দিতে হবে। বাকি আঙুল সোজা থাকবে। অন্তত ১০-১৫ মিনিট করা উত্তম।
উপকারিতাঃ বাত রোগ, হাঁটুর যন্ত্রণা, সাইটিকা এবং গ্যাস জাতীয় রোগ দূর হয়। ঘাড় ও মেরুদন্ডের যন্ত্রণাতেও এই মুদ্রা বিশেষ ভাবে ফল দেয়।

৩.আকাশ মুদ্রাঃ- মধ্যমা আঙুলকে বুড়ো আঙুলের মূলে লাগিয়ে চেপে রাখতে হবে, বাকি আঙুল সোজা থাকবে। অন্তত ১০-১৫ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতাঃ মাথা ঘোরা, কানের রোগ, থাইরয়েড ও গলার রোগ দূর হয়। হৃদয়ের রোগ ঠিক হয়, মাড়ি মজবুত হয়।

৪.পৃথিবী মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় অনামিকা দিয়ে বৃদ্ধ আঙুলকে চাপ দিতে হবে। বাকি আঙুল সোজা থাকবে, অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে ১৫ বার করলে ভালো।
উপকারিতাঃ শরীরের ওজন স্বল্পতা ও মুটিয়ে যাওয়া রোগ দূর হয়, শারীরিক দূর্বলতা দূর হয়। দেহ ও মনের সজীবতা বৃদ্ধি পায়। মানসিক শান্তি বজায় থাকে, সাত্ত্বিক গুণগুলোর বিকাশ ঘটে, স্ফূর্তি ও তেজস্বীতা বৃদ্ধি পায়।





৫.প্রাণ মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙুলকে বৃদ্ধ আঙুল এর অগ্রভাগে একসাথে মিলাতে হবে। বাকি আঙুল সোজা থাকবে। অন্তত ৩০ সেকেন্ড করে ১৫-২০ বার করলে ভালো হয়।
উপকারিতাঃ এতে প্রাণের সুপ্ত শক্তির বিকাশ ঘটে, শরীর ও মনে স্ফূর্তি বিরাজ করে, চোখের জ্যোতি বাড়তে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় এই মুদ্রা অভ্যাস করলে উপবাস করলেও ক্ষুধা তৃষ্ণা থাকে না।

৬.অপান মুদ্রাঃ- এই মুদ্রা বৃদ্ধ, মধ্যমা ও অনামিকা আঙুল এর অগ্রভাগকে এক জায়গায় এনে পরস্পরকে স্পর্শ করতে হবে, বাকি আঙুল সোজা থাকবে।
উপকারিতাঃ পেট ও হৃদপিন্ডের রোগের জন্য বিশেষ উপকারী, শরীরের বিজাতীয় তত্ত্ব বাহিরে বের করে দেয়। নিয়মিত অভ্যাসে কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, ডায়বেটিস, বুয়ু বিকার, কিডনির দোষ, দন্তবিকার, মূত্র দোষে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৭.অপান বায়ু মুদ্রাঃ- একমাত্র কনিষ্ঠা আঙ্গুলটি সোজা রেখে বাকি আঙুল বৃদ্ধা আঙুল এর অগ্রভাগে এক সাথে মিলিয়ে স্পর্শ করতে হবে।
উপকারিতাঃ উচ্চ রক্ত চাপ, হাঁপানি, মাথা ব্যাথা এর ক্ষেত্রে খুব ভালো ফল দেয়। দুর্বল হৃদয়ের ব্যক্তির জন্য খুবই উপকারী, পেটের গ্যাস নির্গমনে বিশেষ উপকারী।

৮.অগ্নি মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় অনামিকাকে মুড়ে তার বাহিরের দিকের দ্বিতীয় ভাজে বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে চাপ দিন। অভ্যাসটি ৩০ সেকেন্ড ধরে ১৫-২০ বার করা ভালো।
উপকারিতাঃ এই মুদ্রায় অভ্যাস হলে হজম শক্তি বাড়ে। দেহে তাহ সৃষ্টি হয়, চর্বি কমে, টেনশন কমে,শক্তির বিকাশ ঘটে, রক্তের কোলেস্টেরল কমে বলে কথিত হয়।




৯.বরুন মুদ্রাঃ- কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধ আঙুল এর অগ্রভাগ স্পর্শ করে রাখতে হবে ও বাকি আঙুল সোজা থাকবে। ৩০ সেকেন্ড ধরে ১৫-২০ বার করুন।
উপকারিতাঃ জীবনী শক্তি বৃদ্ধি পায়, শরীরের রুক্ষতা কমে, মনকে সজীব করে ও চোখের দৃষ্টি বাড়ায়।

১০.শিব মুদ্রাঃ- দুই হাতের তালু জুড়ে নিয়ে আঙুল গুলোকে পরস্পরের খাঁজে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এবার বা হাতের বুড়ো আঙুল সোজা করে রেখে ডান হাতের তর্জনী ও বুড়ু আঙুল দিয়ে জড়িয়ে নিন। ১৫-২০ বার করুন। এটি করলে জল, ফল, ঘী, ও দুধ বেশী করে সেবন করা উচিৎ।
উপকারিতাঃ ফুসফুসের শক্তি বৃদ্ধি করে, দেহে তাপ সৃষ্টি করে। সর্দি ও শ্লেষ্মা হ্রাস করে, দেহের চর্বি কমায়। এই মুদ্রা বেশি করা উচিৎ নয়।




Saturday, July 4, 2020

আমেরিকা কার কাছ থেকে কিভাবে স্বাধীনতা অর্জন করে?

কলোম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের (১৪৯২) পর, একদল ইংরেজ উত্তর আমেরিকায় নতুন ভূখন্ডে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। এর পিছনে অনেক কারণ ছিল, যেমন, নতুন ভূখন্ডে বিপুল পরিমাণে সম্ভাব্য কাঁচামাল ও খনিজের আকর্ষন, পছন্দসই পরিবেশ এবং আভ্যন্তরীন সামাজিক অস্থিরতা। এই ভূখন্ডে ইউরোপীয় পরিযায়ীরা তেরোটি কলোনি তৈরি করে, যদিও বেশিরভাগেরাই জাতিতে ইংরেজ ছিল কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও বহু মানুষ এসে সেখানে বসতি স্থাপন করে। ইংল্যান্ডের সরকার এই কলোনির গুলোর শাসনব্যবসস্থা পরিচালনার জন্য একজন করে গভর্নর নিযুক্ত করে। একটি নির্দিষ্ট কলোনির মুরুব্বিদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠিত হত, এরা শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য গভর্নরকে সাহায্য করত। এইভাবে একটি আধা স্বয়ংনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা তৈরি হয়, যদিও কলোনির পাশ করা আইন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা ছিল ব্রিটিশ সংসদের।
যে কারণগুলি আমেরিকান জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয় সেগুলি বিভিন্ন প্রকার, যেমন, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয়। মনস্তাত্বিকভাবে কলোনিতে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে একরকম একত্বতাবোধ তৈরি হয়। যদিও তাঁরা বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে এসেছিল, মাতৃভূমি থেকে অনেক দূরে বাস করা, একসাথে বিরূপ প্রকৃতির বিরূদ্ধে লড়াই, একই গীর্জায় একসাথে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, ইত্যাদির ফলে যে সামাজিক একত্ববোধ তৈরি হয় তার ফলেই জন্ম নেয় আমেরিকান জাতীয়তাবাদের। বেশিরভাগ কলোনিতে বসবাসকারী মানুষ জাতে ইংরেজ হলেও এরা বাপটিস্ট ক্রিশ্চান গোত্রের পিউরিট্যান বা কোয়েকার ছিলেন, এদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ইংল্যান্ডের প্রোটেস্ট্যান্ট ক্রিশ্চানদের থেকে আলাদা ছিল। তাঁদের পূর্বপুরুষেরা অভিজাত ব্রিটিশ শ্রেণীর মধ্যে পড়তেন না, তাই তাদের মধ্যে সামন্ততান্ত্রিক আভিজাত্যের অহংবোধ ছিল না। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন, কোনো সামাজিক উচ্চ নিচ বিভাজন ছিল না, তাই এই স্বাধীনচেতা মানুষগুলির একত্ববোধ তাঁদের শহুরে ইংরেজ অভিজাতদের বিরুদ্ধে বিরূপ করে তোলে।
এর পর আসে বৌদ্ধিক নবজাগরন। আমেরিকান মানুষেরা খুব গর্বের সাথে তাঁদের নেটিভ ইংরেজি ব্যবহার করত, শহুরে শুদ্ধ ব্যাকরণের ধার ধারত না। তাঁরা জানত, অভিজাতরা এদের নিচু নজরে দেখেন। এই নেভিট ইংরেজিতে তাঁরা লিখতেন, কথা বলতেন। সমসাময়িক দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী থম্যাস জেফারসন গ্রীক দর্শন ও প্রাচীন গ্রীক-রোমান ইতিহাস থেকে অনুপ্রাণিত হন, তাঁর লেখনী আমেরিকান মানুষদের এক ভিন্ন সংস্কৃতি প্রদান করে। লেখক থমাস পাইনের লেখা The rights of Man শুধু আমেরিকা নয়, সারা বিশ্বজুড়ে অত্যাচারী ঔপনিবেশিক শক্তির চেহারাটা নগ্ন করে দেয়।
এবার রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের দিকে মনোনিবেশে করব। রাজনৈতিক অসোন্তোষের জন্ম নেয় যাকে ইতিহাসে আমরা বলি the seven years war, তার পরে।কানাডা থেকে ফরাসী আক্রমনের ভয় ছিল, তাই আমেরিকাবাসী ইংরেজরা মাথা নত করে নিজের মাতৃভূমির সরকারের দ্বারাই নিপীড়িত হচ্ছিল চুপচাপ। এই যুদ্ধ শেষ হতেই সে ভয়টা কেটে যায়। সাথে সাথে ইংরেজ সরকারের অত্যাচারের মাত্রাটাও যেন বেড়ে ওঠে কয়েকগুন।
ব্রিটিশ সরকার ঠিক করে, এই আমেরিকান উপনিবেশগুলোকে তাঁদের কাঁচামালের উৎস ও ইংল্যান্ডের কলকারখানায় তৈরি পণ্যের বাজার, এই দুইভাবেই ব্যবহার করবে। শুরু হয়ে গেল অর্থনৈতিক শোষন। একগুচ্ছ নেভিগেশন আইন পাশ হল। আমেরিকানদের পায়ে বেড়ি পড়ল।

১. আমেরিকানদের চিনি, কাপড়, পশম, মদ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য ইংল্যান্ডের থেকেই কিনতে হবে। স্বস্তায় পেলেও অন্য জায়গা থেকে কেনা যাবে না, অন্যথায় প্রচুর কর দিতে হবে।

২. আমেরিকানরা কোনো কারখানা খুলতে পারবে না। ফলতঃ স্বনির্ভর হওয়ার রাস্তা বন্ধ।

৩. তাঁদের উৎপাদিত কাঁচামাল যেমন, তামাক, চামড়া, খনিজ ইত্যাদি বেশি দাম পেলেও অন্য জায়গায় বেচতে পারবে না। ব্রিটিশ সরকারকেই বেচতে হবে।

এইভাবে অর্থনৈতিক নিপীড়নের যাঁতাকলে পেশাই হতে থাকে আমেরিকান স্বাধীন চেতনা ও মূল্যবোধ।
তৃতীয় জর্জ ও তার টরি মন্ত্রীসভা এই আর্থিক শোষনে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। তারা ঠিক করে the seven years war এর আর্থিক ক্ষতি আমেরিকান মানুষদের অর্থনৈতিক শোষনের মধ্য দিয়েই মেটাবে। ফলে পাশ হয়, writs of assistance act, যাতে-

১. আমেরিকানদের ঘরে ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ সার্চ করতে পারবে।

২. ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ছাড়া আমেরিকানরা গুদামের পণ্য মজুদ করতে পারবে না।

এর পর গ্ৰেনভিল্যে মন্ত্রক আরো দুটি দমন পীড়ন মূলক আইন পাশের সিধান্ত নেয়, যা stamp act এবং sugar act নামে পরিচিত। প্রথমটিতে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য বা সংবাদপত্রে পাবলিকেশনের জন্য ব্রিটিশ সরকারকে কর দিতে হবে। এতে সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েন আইনজীবি ও সংবাদমাধ্যমের সাথে যুক্ত মানুষ। পরের আইনটিতে আমেরিকানদের কম দামে ফরাসী কলোনি গুলোর থেকে চিনি আমদানির ওপড় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের থেকে অধিক মূল্যে চিনি আমদানির ফলে চিনি ও মদের দাম বেড়ে যায়। সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে।
এই আমেরিকান আইনজীবীদের মধ্যে একাংশ একটি মৌলিক প্রশ্ন তোলেন। কিভাবে ব্রিটিশ সংসদ, যেখানে আমেরিকানদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই তারা আমেরিকানদের উপড় কর চাপান? জেমস্ ওয়েটিসের একটি ব্যক্তব্য, যা প্রায় একটি স্লোগানে রূপান্তরিত হয়, "No taxation without representation."
ক্রমশ Technicality থেকে একটি বৃহৎ সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম নেয়। ইংল্যান্ডের রাজার চার্টারে কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত গভর্নর কতৃক শাসনের কথা লেখা ছিল। এমন কোথাও লেখা ছিল না যে ব্রিটিশ সংসদ স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে পারবে। বিশেষত যেখানে আমেরিকানদের প্রতিনিধিত্ব নেই।এছাড়াও ব্রিটিশ সংসদ কমন ল এবং ন্যাচারাল ল দ্বারা চালিত হত। ন্যাচারাল ল অনুযায়ী কর প্রতিনিধিত্ব ছাড়া চাপানো যায় না। অথচ এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণরুপে লঙ্ঘন করে ব্রিটিশ সরকার। হিসেব বলছে, এই স্ট্যাম্প আইনের ফলে প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ইউরো দন্ড দিতে হয় আমেরিকান জনগনকে। আমেরিকানরা বলেন স্বেচ্ছাকৃতভাবেই তাঁরা কর দেবেন, দমনপীড়নের মাধ্যমে নয়।
রকিংঘ্যাম মন্ত্রীসভা বিদ্রোহের আঁচ পেয়ে একটি Declaratory act পাশ করায়, তার মাধ্যমে স্ট্যাম্প আইন কিছু সময়ের জন্য তুলে নেওয়া হয়। ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টাউনশেন্ড সুগার আইনে ব্যাপক কাটছাঁট করেন। আমদানিকৃত প্রতি কিলোগ্রাম চিনিতে মাত্র তিন পেনি করে কর আদায়ের সিধান্ত নেওয়া হয়, যা আমেরিকান কলোনিগুলোর শাসনব্যাবস্থাতেই খরচ হবে। কিন্তু আমেরিকানদের যে মৌলিক প্রশ্ন, যার সঙ্গে তাঁদের আত্মসম্মান জড়িয়ে ছিল, অর্থাৎ প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কর আদায় কিভাবে সম্ভব? তা কিন্তু রয়েই যায়। লর্ড অ্যাকশন পরবর্তীতে দাবি করেছিলেন,এই চার পেনি করের জন্য আমেরিকায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন হয়। অর্থাৎ অর্থের চেয়েও আত্মসম্মানের লড়াই ছিল অনেক বেশি।
এমতবস্থায় কিছু আমেরিকান জাতীয়তাবাদী একটি কান্ড করে বসেন। এদের মধ্যে Benjamin, Franklin George Washington মত ব্যক্তিত্বরাও ছিলেন। বোস্টন বন্দরের Dartmouth জাহাজের ডেকের ওপড় রাখা চা ভর্তি পেটি তারা সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দিয়ে প্রতীকি প্রতিবাদ জানান, যা ইতিহাসের পাতায় Boston tea party নামে পরিচিত। এই ঘটনায় ব্রিটিশ সরকারের আঁতে ঘা লাগে। অবিলম্বে বোস্টন বন্দর বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, ম্যাসাচুসেটস্ উপনিবেশের সায়ত্বশাসন বাতিল করা হয় ও চারটি শাস্তিমূলক অর্ডিন্যান্স তাঁদের ওপড় চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমেরিকানরা এই চারটি অর্ডিন্যান্সকে অবৈধ ঘোষনা করে ও মানতে অস্বীকার করে।


এরপর জর্জিয়া বাদে বাকি বারেটি উপনিবেশের মেম্বাররা একত্রে ফিলাডেলফিয়াতে সমাবেশ করেন। তাঁরা রাজা তৃতীয় জর্জের কাছে সুবিচারের আবেদন জানান, রাজা তাঁদের দাবি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেন। এরপর লেনিংটনে ইংরেজ নাবিকেরা আমেরিকানদের ওপড় গুলি চালায়, পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। অবশেষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফিলাডেলফিয়া কংগ্রেসের পর বিখ্যাত Declaration of independence পাশ হয়। আমেরিকানরা স্বাধীনতার শপথ নেন। থমাস পাইনে তাঁর বিখ্যাত common sense শীর্ষক প্রবন্ধে এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে অকুন্ঠ সমর্থন জানান। শুরু হয় আমেরিকার স্বাধীনতার লড়াই। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ডের চিরশত্রু ফরাসী সরকার নৌ ও পদাতিক সৈন্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পূর্ণ সমর্থন জানায়। অবশেষে ১৭৮৩ সালে treaty of Versailles এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের পর স্বাধীনতার সূর্য ওঠে আমেরিকার দিগন্তে। অত্যাচারী, দাম্ভিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন হয় চিরতরে।

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

  সিলেটের   ‎ গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের   ‎ শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস স...

Popular Posts