Thursday, August 17, 2017

যুক্তি যুক্ত কিছু প্রশ্ন অন্ধদের প্রতি

এক শ্রেণির হিন্দু ( এদের অধিকান্সংশই বাংলাদেশী ) ফেসবুকে লাগাতার প্রচার করে চলেছেন : ' একমাত্র কৃষ্ণই নাকি ঈশ্বর আর শিব দুর্গা প্রভৃতি নাকি কৃষ্ণের দাস দাসী । ' 
এই মিথ্যা প্রচারকারীদের প্রতি একটি পোস্টে প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। প্রশ্নগুলি সকলের জ্ঞাতার্থে পুনরায় নীচে উল্লেখ করলাম । কারও কাছে আছে কি এই প্রশ্নগুলির উত্তর ?
কেউ দয়া করে আমার নিম্নে লেখা প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন কি?


1 - শ্রীকৃষ্ণই যদি একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান হন, তবে বেদে ( আমাদের ধর্মে বেদ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত ) শ্রীকৃষ্ণকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভগবান বলা তো দূরের কথা, শ্রীকৃষ্ণের কোনো উল্লেখ পর্যন্ত নেই কেন? আপনারা বেদ থেকে একটা কোনো উদ্ধৃতি দিতে পারবেন কি যেখানে শ্রীকৃষ্ণের নাম উল্লিখিত আছে?


2 - ভাগবত, মহাভারত, হরিবংশ, বিষ্ণু পুরাণ, গীতার মত শাস্ত্রে রাধার কথা কোথাও পাওয়া যায় না কেন? আপনারা এই সমস্ত গ্রন্থ থেকে এমন কোন শ্লোক দেখাতে পারবেন কি যেখানে রাধারাণীর উল্লেখ আছে?


3- শিবপুরাণে ও মহাভারতে আছে, শ্রীকৃষ্ণ শিবের আরাধনা করতে উপমন্যুর শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিলেন । পরে গুরু উপমন্যুর নির্দেশে কঠোর তপস্যা করেন । অবশেষে তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব ও পার্বতী তাঁকে দর্শন দেন । ইষ্ট দর্শনে আপ্লুত কৃষ্ণ তাঁর আরাধ্য শিব ও পার্বতীর চরণবন্দনা করেন । কৃষ্ণের ভক্তিতে তুষ্ট মহাদেব ও মহাদেবী দুজনেই প্রসন্ন হয়ে তাঁকে প্রথমে আটটি করে বর নিতে বলেন । পরে তাঁরা অতিরিক্ত ষোলটি বর প্রদান করেন কৃষ্ণকে । এভাবে শিব ও পার্বতী তাঁদের এই একনিষ্ঠ ভক্তের ওপর কৃপা বর্ষণ করে অন্তর্হিত হন ।প্রশ্ন হল, এরপরও কি বলবেন যে শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান?


4- শ্রীকৃষ্ণই যদি একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান হন, তবে মহর্ষি ব্যাসদেব কেন তাঁর রচিত শিবপুরাণ ও দেবীভাগবতে যথাক্রমে শিব ও দুর্গাকে একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান বা পরমেশ্বরী ভগবতী বলে উল্লেখ করলেন এবং শ্রীকৃষ্ণকে নেহাত তাঁদের ভক্ত বলে বর্ণনা করলেন?


5- ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, শ্রীকৃষ্ণই সর্বপ্রথম গোলোকের রাসমণ্ডলে মা দুর্গার পুজা করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণই যদি একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান হন, তবে কেন তাঁকে বারবার মা দুর্গার শরণ নিতে হয়?


6- মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বের 16th অধ্যায়েও আছে যে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর অর্জুন গীতার উপদেশ ফের শুনতে চাইলে কৃষ্ণ নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে বলেন, যে ব্রহ্মতত্ব আমি তখন যোগযুক্ত হয়ে বলেছিলাম এখন তা বলার সামর্থ্য আমার নেই । ন শক্যং তন্ময়া ভূয়স্তথা বক্তুমশেষতঃ ।পরং হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া । ।প্রশ্ন হল, গীতা যদি শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত না হয়েই বলে থাকেন তবে অর্জুনের এই কথায় তিনি এতটা অসহায় হয়ে নিজের অসমর্থতা জানালেন কেন?


ইউটিউবের এই ভিডিওতে দেখা যায় এইসব কৃষ্ণ ভক্তরা কিভাবে আদিদেব পরমেশ্বর মহাদেবকে অপমান করছে





7- চৈতন্যদেবকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার বলে যে সমস্ত পুরাণে বর্ণনা আছে বলে আপনারা দাবি করেন, তা কেন ওই সমস্ত শাস্ত্রের শুধুমাত্র কয়েকটা বাংলা সংস্করণেই পাওয়া যায়, সারা ভারতের অন্যত্র উপলব্ধ ওই একই গ্রন্থে ওই শ্লোক গুলো পাওয়া যায় না কেন? এতে কি বোঝা যায়?


8- আমাদের যেকোনো সর্বজন স্বীকৃত শাস্ত্রের কথা অন্যান্য শাস্ত্রে আছে, কিন্তু ব্রহ্মসংহিতার উল্লেখ কোনো শাস্ত্রে নেই। ব্রহ্মসংহিতা বলে কোন শাস্ত্রের স্বীকৃতি আমাদের কোনও শাস্ত্রে নেই। এমনকি রামানুজ, মধ্ব, বল্লভ, নিম্বার্কের মত বৈষ্ণবাচার্যরাও এই গ্রন্থকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেন নি। তবে কেন কেবলমাত্র গৌড়ীয় বৈষ্ণবরাই এই গ্রন্থ নিয়ে মাতামাতি করে?


8- আপনাদের দাবি, শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অংশ নন বরং বিষ্ণুই কৃষ্ণের অংশ। অথচ ভাগবত, মহাভারত, বিষ্ণুপুরাণ ইত্যাদি যাবতীয় শাস্ত্রে কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অংশাবতার বলে চিহ্নিত করা হয়েছে । মহাভারত ও বিষ্ণুপুরাণে আছে, বিষ্ণুর একটিমাত্র সাদা ও কালো চুলই বলরাম ও কৃষ্ণরূপে ধরাতলে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ভাগবতেও এর সমর্থন পাওয়া যায় । এরপরও কি বিষ্ণুকে কৃষ্ণের অংশ বলবেন?


9- চৈতন্যদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার হলে তুলসীদাস, কবির, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, মীরাবাই, সমর্থ রামদাস, পুরন্দরদাস, নরসি মেহতা, দাদুজি, ভক্ত নভদাস, গুরু নানক, বল্লভাচার্য, বৃন্দাবনের স্বামী হরিদাস, সুরদাস, শঙ্করদেব, মাধবদেব প্রমুখ তৎকালীন প্রথম সারির পণ্ডিত বৈষ্ণবাচার্যরা কেউ তাঁকে চিনলেন না কেন?


10- চৈতন্যদেবকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার বলে চালাতে আপনারা যে সমস্ত শাস্ত্রের দোহাই দেন , সে সমস্ত শাস্ত্র কি তাঁরা পড়েননি না পড়লেও বোঝেননি? এতবড় একটা ভবিষ্যৎ বাণী কি তাঁদের সবার চোখ এড়িয়ে গেল? নাকি এই সমস্ত গ্রন্থ মুষ্টিমেয় কয়েকটি গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের চোখেই পড়েছে?


11- পদ্মপুরাণে বৈষ্ণব পুরাণগুলোকে সাত্ত্বিক, ব্রহ্মা বিষয়ক পুরাণগুলোকে রাজসিক ও শৈব পুরাণগুলোকে তামসিক বলা হয়েছে। কিন্তু স্কন্দপুরাণে আছেদশশৈব পুরাণানি সাত্ত্বিকানি বিদুর্বুধঃ ।তামসানি চ চত্বারি বৈষ্ণবানি প্রচক্ষতে । ।অর্থাৎ দশটি শৈব পুরাণ সাত্ত্বিক আর চারটি বৈষ্ণব পুরাণ তামসিক । তাই স্কন্দপুরাণ মতে আপনাদের সমস্ত শাস্ত্রই তামসিক । এক ব্যাসদেবই এই দুটি পুরাণেরই রচয়িতা। তবে কোনটি ঠিক এবং কি কারণে ঠিক?







12 - ভগবান কখনো জন্ম-মৃত্যুর অধীন নন। তাঁর জন্ম বাল্য যৌবন বার্ধক্য মৃত্যু কিছুই নেই। কিন্তু কৃষ্ণের মথুরাতে বসুদেবের ঔরসে দেবকীর গর্ভে জন্ম হয়েছিল ও দ্বারকায় জরা নামের ব্যাধ তাঁর পায়ে শর বিঁধেছিল এবং তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। মহাভারতের মৌষল পর্বে এর বিস্তারিত বর্ণনার পর বলা হয়েছে, কৃষ্ণের মৃতদেহ চিতায় তোলা হলে অর্জুন তাঁর মুখাগ্নি করেন এবং কৃষ্ণের চিতায় রুক্মিনী, সত্যভামা, জাম্ভবতী সমেত অন্যান্য স্ত্রীরা সবাই সতী হন। এরপরেও কি আপনারা তাঁকে ভগবান বলবেন? যদি বলেন, তার পেছনে কারণটা কি?

তাছাড়া, মূলত কোন পুরাতন কৃষ্ণ মন্দির প্রাচীন ভারতে নেই,১২শতকের আগে পর্যন্ত ভারতে শিব,বিষ্ণু ও ভিন্ন ভিন্ন দেবতার মন্দির থাকলেও কোন প্রাচীন কৃষ্ণ মন্দির কিন্তু নেই। এর দ্বারা প্রমান মেলে প্রাচীন ভারতে কৃষ্ণ দেবতা রুপে পূজিত হতেন না।কৈলাস মন্দির, থেকে ভেঙ্কাটেস মন্দির,সোমনাথ মন্দির অনেক দেব দেবীর মন্দির থাকলেও কোন মন্দির তথা মুদ্রায়ও কৃষ্ণের কোন অস্তিত্ব নেই। অনেক সময় দেখা যায় প্রাচীন রাজারা মন্দির নিরমানের পাশে মুদ্রাতেও ইস্ট দেবতার প্রতিকৃতি চালুকরেন কিন্তু সেই রূপ কোন নিদর্শন নেই প্রাচীন ভারত হতে যে প্রমান পাওয়া যায় সেই সময় কৃষ্ণ পুজা প্রছলিত ছিল।দ্বিতীয়ত কৃষ্ণ সনাতন ধর্মের একটি দেবতা কিন্তু কি আশ্চর্য যে সেই ধর্মেরই মূল গ্রন্থ শ্রুতি তথা বেদ ও মূল উপনিশদে দেবতা তো দুর কৃষ্ণের নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই।
কস্থানে শুধু সিস্য হিসেব ছাড়া। যে স্মৃতি শাস্ত্রে কৃষ্ণ আছে সেই গুলিতেও বৈষ্ণব সাহিত্য ও মহাভারত ছাড়া কৃষ্ণ কে কথাও মূল ঈশ্বর মানা হয়নি যেমন দেবী ভাগবতে কৃষ্ণ কে নারায়নের অংশ অবতার ও এমনকি মহাভারতে স্বর্গারোহণ পর্বেও তাকে নারায়নের অংশ অবতার মানা হয়েছে।এমনকি বৈষ্ণব সাহিত্যেও সব স্থানে তাকে পরম ঈশ্বর মানা হয়নি যেমন মহাভারত ও বিষ্ণু পুরানে।বিষ্ণু পুরানে এও আছে কৃষ্ণ নারায়নের চুল থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। পরবর্তী কিছু একদমই নতুন ১৬(ষোড়শ শতকের) বৈষ্ণব সাহিত্য যেমন চৈতন্য চরিতামৃত,ব্রহ্মসংহিতা জেগুলি একদমই গোঁড়া বৈষ্ণব যেমন কৃষ্ণদাসের রচনা সেগুলি ছাড়া। অনেকেই বলে মধ্যযুগে বিশেষত উত্তর ভারতে ধর্মীয় বিপ্লবের যার আরেক নাম ভক্তি আন্দলনের সময় কৃষ্ণ উঠে আসে এক দেবতা রুপে ও পরবর্তী কালে বিশেষত বিস্বম্ভর মিশ্রের দ্বারা যিনি চৈতনদেব নামে সমধিক পরিচিত তার আন্দলনের দ্বারা কৃষ্ণের পুজা মূলত শুরু হয়।কারন বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নাম কিন্তু বৈদিক পুরাতন দেবতা বিষ্ণু থেকেই এসেছে।তো যদি আমরা সনাতনীরা নিরপেক্ষ বিচার ও বিশ্লেষণ করি তাহলে কিন্তু দেখা যায় কৃষ্ণের দৈবত্তে অনেকই ফাক থেকে যায়, মূলত সেই ধর্মেরই মূল শ্রুতি তে কথাও নেই,ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ করলে পুরাতন কোন মন্দির মুদ্রা নেই যার দ্বারা প্রমানিত হয় প্রাচীন কালে পূজিত হতেন,নিজের সম্প্রদায়ের শাস্ত্রেও সব স্থানে পরমেশ্বর রুপে স্থান পায়নি এমন কি কিছু কিছু স্থানে অবতার হিসেবে স্থান পেয়েছে ও মহাভারতে নিজেই স্বীকার করেছেন উনি গীতা ভুলে গেছেন অনুগিতা পর্বে যা কিনা এক বিশাল ব্যাপার যে জগতের প্রথম ঈশ্বর জিনি নিজের জ্ঞান নিজেই ভুলে গেছেন।

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts