Friday, August 25, 2017

প্রদোষ ব্রত , শৈবদের একাদশী

আসলে শৈবদের একাদশী কথাটা ঠিক হয় নাই। কারন, শিব ভক্তরা একাদশী রাখেন না। এটা শুধুমাত্র বৈষ্ণবদের অনুষ্ঠান। তাহলে শৈবদের কি? আসুন জেনে নেই প্রদোষ বা চতুর্দশী নিয়ে।

প্রদোষ

পরমেশ্বর ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতীর উদ্দ্যেশে পালিত প্রদোষ ব্রত হিন্দুদের জন্য একটি অতি জনপ্রিয় ব্রত। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি মাসে দুইবার প্রদোষ ব্রত বা প্রদোষাম্‌ পালিত হয়। এই উপবাসটি সাধারণত পালিত হয় ত্রয়োদশ দিবসে শুক্লপক্ষে অর্থাৎ পূর্ণিমা তিথিতে অথবা কৃষ্ণপক্ষে অর্থাৎ অমবস্যা তিথিতে। হিন্দী ভাষায় প্রদোষ শব্দের অর্থ হলো সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্ত (গোধূলী তিথিতে) অথবা সূর্য উদয়ের পূর্ব মুহূর্ত(ঊষাকাল)। যেহেতু এই পবিত্র ব্রতটি গোধূলীকালে তথা সন্ধ্যাকালে পালিত হয় তাই এই ব্রতের নাম ‘প্রদোষ ব্রত’
প্রদোষ ব্রতকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 
  1. শনিবারে পালিত প্রদোষ ব্রত শনি প্রদোষম্‌ বলে পরিচিত, 
  2. সোমবারে পালিত প্রদোষ ব্রতগুলো সোম প্রদোষম্‌ বলে পরিচিত এবং 
  3. মঙ্গলবারে পালিত ব্রত ভৌম প্রদোষম্‌ বলে পরিচিত 


প্রদোষ ব্রতের কথা ঋষি পঞ্চমের জীবনিতেও পাওয়া যায়

হিন্দু পুরাণ মতে এই প্রদোষ ব্রতের এই শুভ দিনে ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতী একত্রে খুবই আনন্দিত, প্রসন্ন এবং সদয় থাকেন। তাই সকল ভক্তেরা তাদের আরাধ্যের নিকট থেকে ঐশ্বরিক বর লাভের আশায় এই বিশেষ দিন গুলোতে উপবাস করে পূজা করে থাকেনপ্রদোষ ব্রত সকলেই পালন করতে পারেন সকল বয়সের মানুষ এমনকি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা এই ব্রতটি ভক্তি এবং শ্রদ্ধা সহকারে পালন করে থাকে।

ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতীকে কেন্দ্র করেই এই প্রদোষ ব্রতটি উজ্জাপন করতে পরিলক্ষিত হয়। ভারতের কিছু কিছু স্থানে নৃত্যকলায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভগবান শিবের নটরাজ রূপকে পূজা করে থাকেন। স্কন্দ পুরাণ মতে, প্রদোষ ব্রত পালনের দুটি নিয়ম আছে। প্রথম নিয়ম অনুসারে, প্রদোষ ব্রত উজ্জাপিত হয় কঠোর নিয়মের মধ্য দিয়ে যেখানে দিবা রাত্রি (২৪ ঘণ্টা) জেগে থেকে আরাধনা করতে হয়। দ্বিতীয় রীতি অনুসারে, সূর্যোদয়ের মুহূর্ত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করতে হয় অর্থাৎ, সন্ধ্যাকালে ভগবান শিবের পূজা দেয়ার পরপরই এই ব্রত সম্পন্ন হয়।   

প্রদোষ ব্রত পালনের রীতি
  1. প্রদোষ ব্রত পালনের সর্বাধিক উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে সূর্য্য উদয় এবং অস্তিমিত হওয়ার পূর্বমুহূর্ত(ঊষালগ্ন ও গোধূলীলগ্ন)এই সময়ের মধ্যেই সকল পূজাবিধি পালনীয়।
  2. সূর্য্য অস্ত যাওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্বে ভক্তদের স্নান করে পূজার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
  3. প্রারম্ভিক পূজাকালে ভগবান শিবের সঙ্গে মাতা পার্বতী, শ্রী গণেশ, শ্রী     কার্তিক এবং নন্দি মহারাজের পূজা করা হয়। এরপর ভগবান শিবকে আহ্বান করা হয় একটি পবিত্র কলসে। সেই কলসে পদ্ম অঙ্কিত থাকে এবং তা পানিদ্বারা পূর্ণ করে দূর্বা ঘাসের উপর স্থাপন করা হয়।
  4. কোনো কোনো স্থানে আবার শিবলিং- এর মাধ্যমে পূজা করা হয়ে থাকে। শিবলিং-এ দুধ, দই এবং ঘৃত দ্বারা স্নান করানো হয়। ভক্তরা পূজা সম্পন্ন করেন শিবলিং-এ বিল্বপত্র অর্পনের মাধ্যমে। আবার অনেকে ভগবান শিবের পটে অথবা চিত্রের মধ্যে পূজা করে থাকেন। বিল্বপত্র প্রদোষ ব্রতের সময় অর্পন করাকে মঙ্গলদায়ক বলে বিশ্বাস করা হয়।
  5. এই সকল পূজাবিধি সম্পন্ন করার পর ভক্তরা প্রদোষ ব্রতকথা পাঠ করেন।
  6. এরপর ভগবান শিবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র ১০৮ জপ করতে হয়।
  7. পূজাবিধি সম্পন্ন হওয়ার পর পবিত্র কলসের জল ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তারপর শিবভক্তরা কপালে ভস্ম দ্বারা ত্রিপুণ্ড্রা (শৈব তিলক) লেপন করেন।
  8. পূজা শেষে ভক্তরা শিবমন্দির দর্শন করতে যান। এই দিনে শিব মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন মঙ্গল বয়ে আনে।






প্রদোষ ব্রতের মাহাত্ম্যঃ
প্রদোষের মাহাত্ম্য পবিত্রতা স্কন্দ পুরানে বিস্তারিত পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে যে জিনি ভক্তি, আচার আর উপবাসের সাথে এই মহাব্রত পালন করে থাকেন তাঁরা প্রভুর পরম কৃপা লাভ করেন , পরকালে পরম মুক্তি তথা ইহকালে ধন, মান,সুস্বাস্থ্য আর শৌর্য নিয়ে প্রভুর সেবা করে থাকেন। দক্ষিণ ভারতে সাধারনত এই ব্রত নিজেদের আধ্যাত্মিক মুক্তি তথা নিজেদের ইচ্ছাপুরনের জন্য করা হয়ে থাকে। সনাতন হিন্দু শাস্ত্রে এই ব্রতকে সর্বোচ্চ সম্মান দান করেছে কারন এই ব্রতের দিনে শুধু এই ব্রত পালনকারীকে শুধু দর্শন করলেই সর্ব পাপ বিনষ্ট হয়, সর্ব ক্ষেত্রে সৌভাগ্য অর্জন হয় আর ইহজীবন সুখের হয়।এখানে উল্লেখ্য যে এক এক প্রদোষের এক এক ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে
আসুন বিভিন্ন প্রদোষ ব্রত সম্পর্কে জেনে নেই।
  1. সোম প্রদোষঃ যে সকল প্রদোষ এর তিথি সোমবার পালিত হয় সেগুলো সোম প্রদোষ নামে পরিচিত। এই ব্রত পালনকারী ভক্তদের মনে সকল বিষয়ে নিয়ে সুচিন্তার বোধোদয় হবে এবং তাঁদের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হবে।
  2. ভৌম প্রদোষ ব্রতঃ যে সকল প্রদোষ এর তিথি মঙ্গলবার এ পালিত হয় সেগুলো ভৌম প্রদোষ নামে পরিচিত। এ তিথিতে প্রদোষ পালন করলে দেহ যে কোন রোগ থেক মুক্তি পায় এবং তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। তাছাড়া তাদের জীবনের উন্নতি হয়। 
  3. সৌম ভরা প্রদোষ ব্রতঃ সৌম ভরা প্রদোষ ব্রত পালিত হয় বুধবারে। এই দিনে প্রদোষ ব্রত পালন করলে ভক্তদের মনো বাঞ্ছাপূর্ণ হয় এবং তাদের জ্ঞ্যান ও বুদ্ধির উন্নতি হয়।
  4. গুরবার প্রদোষ ব্রতঃ বৃধস্পতিবার যে প্রদোষ পালিত হয় তা গুরুবার প্রদোষ নামে পরিচিত। এই ব্রত পালন করলে তাদের সকল বিপদ এর নিরসন ঘটে এবং তা পালন করলে পিতৃপুরুষ থেকেও আশীর্বাদ প্রাপ্তি ঘটে।
  5. ভৃগুবার প্রদোষ ব্রতঃ শুক্রবারে যে প্রদোষ পালিত হয় তাই ভৃগুবার প্রদোষ ব্রত। এই ব্রত পালনে ভক্তদের মধ্যে সন্তোষ আসে এবং ব্যক্তি জীবনের সকল বাধা বিপত্তির অবসান ঘটে।
  6. শনি প্রদোষ ব্রতঃ সকল প্রদোষ ব্রতের মধ্যে এই শনি প্রদোষ ব্রতের তাৎপর্য অপরিসীম কেননা ব্রত পালনের ফলে হারানো সম্পত্তি ফিরে পাওয়া যায় এবং জীবনের উন্নতি ঘটে।
  7.  ভানু ভারা প্রদোষ ব্রতঃ রবিবার এই ব্রত পালিত হয়। এই দিনে উপবাস করলে ভক্তরা দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত হন এবং জীবনে শান্তি ও সুখ প্রাপ্ত হন।
নমঃ শিবায়
নমঃ শিবায়
নমঃ শিবায়




প্রদোষ ব্রত পালনের রীতি  

                   
                


               প্রদোষ ব্রত পালনের রীতি

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts