Tuesday, August 1, 2017

প্রাচীন ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ

শুরু করার আগে কিছু ইতিহাস আর প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে চাই। সন ২০১১। সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কে এডমিশন সেন্টারে বসে আছি। লাইন ধরে বসে থাকা লাগে। এরপর সিরিয়াল অনুযায়ী যার যার নাম্বার আসে। আর স্টুডেন্ট কাউন্সিলর এসে এসে যার যার ডেস্কে ডেকে নিয়ে এডমিশন নিয়ে কথা বলেন। আমার সাথে আর একটি ছেলে বসে ছিল যে কিনা ইউনিভার্সিটি অফ অকল্যান্ড থেকে এসেছে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে।ওর সাথে আলাপ জমালাম। ওর নাম ‘শন’। ওর বাবা একটি তেল কোম্পানীতে ইঞ্জিনিয়ার। তাই কর্মসুত্রে নিউ ইয়র্কে এসেছেন। সাথে করে ও নিজেও এসেছে এখানে পড়ার জন্য। আলাপ চলছিল তো হটাৎ করে আমার নাম্বার এল। স্টুডেন্ট কাউন্সিলারের সাথে ভেতরে গেলাম। বললাম ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে চাই। সে উত্তরে আমাকে বলল আমাকে ওদের ভার্সিটিতে পরীক্ষা দেবার জন্য প্রথমে এলিজেবল হতে হবে। এলিজেবল হবার জন্য আর একটি ভেরিফাইড সংস্থা থেকে আমার ক্রেডিট ট্রান্সফারের ডিটেল ওদের দিতে হবে। এরপর ওরা আমার ভার্সিটি রেজাল্ট সহ বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে আমাকে ক্রেডিট দিবে। ৭ দিন অপেক্ষা করার পর চিঠি আসলো। মোট ৫৭ ক্রেডিট থেকে আমাকে মাত্র ১১ ক্রেডিট দেয়া হয়েছে। এরমানে প্রায় প্রথম থেকেই আমাকে শুরু করতে হবে। অন্যদিকে শন এর কথা বলি। সে এপ্লাই করলো। কোন ঝামেলা ছাড়া। তাঁর ৬৯ ক্রেডিট থেকে ৫০ গ্রান্ট হল। কোন পরীক্ষা ছাড়াই সে ক্লাস শুরু করলো।
আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থাতে কি এমন নেই যার জন্য এমন বৈষম্যের শিকার আমাদের হতে হয়? একটু পেছনে যাই। ব্রিটিশ যখন ভারতে আসে তখন তাঁদের ফ্যাক্টরি, ক্লার্ক, আর অফিস আদালত চালনা করার জন্য তাঁদের মানসিকতার আর তাঁদের অর্ডার মানার মতন লোকের খুব অভাব ছিল। তাই, ১৮৩৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লর্ড মেকৌলে (Thomas Babington Macaulay)
Thomas Babington Macaulay bill in British parliament


 ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যাবস্থা চালুর জন্য বিল উথাপন করেন। উনি সেই বিলে লিখেন যদি আমরা এই অশিক্ষিতদের ইংরেজী শিক্ষা সহ আমাদের শুদ্ধ(!!) কালচারাল শিক্ষা দেই তাহলে এরা তাদের ভাষা,ধর্ম, সংস্কৃতি ছেড়ে দিয়ে আমাদের হয়ে কথা বলবে। আর আমরা তাদের উপর রাজত্ব করতে পারবো কোন অসুবিধা ছাড়াই। এরা ভুলে গিয়েছিল আমরা কি! এখনও আমরা লুঙ্গি তুলে বা জিপ খুলে শত শত মানুষের সামনে রাজার মতন মুতে মুতে এলাকার চারদিকে সুবাস ছড়িয়ে দেই। আসলে এরা চাইছিল এদের ক্যাটাগরির স্কুল কলেজ যদি এইখানে খুলে তাহলে অর্ডার পালনের জন্য কিছু গাধা উতপাদন হবে ফর শিউর। ক্রিয়েটিভিটি তো এদের শেখানোর দরকার নেই। গোলাম গোলামের মতন থাকবে। আমাদের কালচার ধ্বংস করা হচ্ছে মূল লক্ষ্য। তাই আজ পর্জন্ত ঐ রেটেই কিংবা প্রফিটেবল রেটে দিনের পর দিন বেঞ্চপাশ করা গাধা প্রোডাকশন হচ্ছে। অথচ আমরা এমন জাতিকে ফলো করছি যারা এখনো নিজেদের পশ্চাতদেশ কাজ শেষে জল দিয়ে পরিষ্কার করতে জানে না। মানে কিভাবে থাকে এরা? চেয়ার বা সোফাতে বসে কিভাবে? আমার মাথায় ঢুকে না? মোছা আর পরিষ্কারের মধ্যে তো পার্থক্য আছে ভাই!!
আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ে অনেক অনেক ভুল বা লুপহল দেয়া যাবে বা ধরা যাবে। এই বিষয়ে আর একদিন আলোচনা হবে।
যাইহোক, তো এই ব্রিটিশ আসার আগে বা এদের এই সুশিক্ষা আসার আগে আমরা কি ছিলাম? কিভাবে চলতাম আমরা? মানে কিছু তো ছিল ? কি ছিল? আর্য ভট্ট, ব্রম্মগুপ্ত, চানক্য এরা কি ব্রিটিশ ছিলেন? এরা কিভাবে পড়াশুনা করেছে? ব্রিটিশ আসার আগে আমরা রিতিমতন বৈদিক গনিত শিক্ষা কিংবা এর উপরে রিসার্চ করেছি । চলুন দেখে নেই আমাদের এসব সাফল্যের পেছনে কি এমন ছিল।
বর্তমানকালে অধিকাংশ ভারতীয়রা দুইটি বিখ্যাত প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অবগত আছেন। একটি হচ্ছে তক্ষ্যশীলা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরটি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু একমাত্র এগুলোই কি প্রাচীন ভারতের জ্ঞান আহরণের স্থান ছিল? প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে জ্ঞান তথা শিক্ষা অর্জনকে ভারতীয় সমাজ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তাদের প্রধান উদাহরণ পরিলক্ষিত হয় গুরুকুল এবং আশ্রমের মধ্য দিয়ে, যা শিক্ষা অর্জনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। বিবর্তনের মধ্য দিয়ে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীন ভারতে প্রতিষ্ঠা করা হয় তন্মধ্যে তক্ষ্যশীলা এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বাধিক প্রসিদ্ধ এবং বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। নিম্নে কতক বিখ্যাত প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হলো যে সব প্রতিষ্ঠান বিস্ময়কর সাফল্য লাভ করেছিল।
· নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়য় স্থাপিত হয় গুপ্ত বংশের রাজা শকরাদিত্যের আমলে। যা আধুনিক বিহারে ৫ম-১২শ শতাব্দী পর্যন্ত অর্থাৎ ৬০০ সাল পর্যন্ত প্রচার ও খ্যাতি লাভ করে। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সুব্যবস্থা ছিল।প্রতি রবিবার জনসম্মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোলারদেরকে নিয়ে একটি মুক্ত আলোচনা আয়োজন করা হত যা অনুষ্ঠিত হত একটি বিশাল কক্ষে।কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য এবং তুরস্ক ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন লাভের উদ্দেশ্যে আসতেন।প্রাচীন বিশ্বে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার আকৃতিতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ছিল এবং তাতে ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা, সাহিত্য, জ্যোতির্বিদ্যা, মহাকাশবিদ্যা এবং চিকিৎসাবিদ্যার হাজারো প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত ছিল। পাঠাগারের ভবনটি ধর্মগঙ্গা নামে পরিচিত ছিল। এছাড়াও তিনটি বৃহদাকার ভবন ছিলঃ রত্নসাগর, রত্নদধি এবং রত্নরঞ্জক নামে পরিচিত। রত্নদধি ভবনটির নয়টিতলায় বিভক্ত ছিল এবং সেখানে সর্বাধিক পবিত্র পাণ্ডুলিপিগুলো সংরক্ষণ করা হত তন্মধ্যে প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র এবং সমাজগূহ্য পাণ্ডুলিপিগুলোও বিদ্যমান।
২০১০ সালে ভারতীয় সংসদে একটি আইন পাশ করে যার মাধ্যমে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে পুণর্জ্জীবীত করার হবে। যার নাম হবে আধুনিক যুগের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় যা পুরোপুরিভাবে উৎসর্গ করা হবে স্নতোকোত্তর, পি. এইচ. ডি. এবং পোস্ট ডক্টরেট প্রোগ্রামে। তাছাড়া এখানে পোস্ট ডক্টরেট এবং পোস্ট গ্রেজুয়েট সমমানে গবেষনার ব্যবস্থা থাকবে।এসব গবেষণা ধর্মশিক্ষা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ভৌগলিক ইতিহাস ইত্যাদির উপরে কেন্দ্রিভূত থাকবে। পূর্ব এশিয় দেশগুলোর মধ্যে চীন, সিঙ্গাপুর এবং জাপান সহ অনেক দেশ এগিয়ে এসেছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যে।
Nalanda University

 তক্ষ্যশীলা বিশ্ববিদ্যালয়
তক্ষ্যশীলা যদিও এখনকার নাম, কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২৭০০ সাল পূর্বে। তখন প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন কোণ থেকে ১০,৫০০ থেকেও অধিক সংখ্যক জ্ঞ্যনপিপাসু ৬৪ টিরও অধিক শাখায় শিক্ষা অর্জনের জন্য আসতেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল বেদ, ব্যাকরণ, দর্শন, আয়ুর্বেদ, কৃষি, শল্যবিদ্যা, রাজনীতি, ধনুর্বিদ্যা, রণবিদ্যা, অর্থশাস্ত্র, ভবিষ্যচর্চা, নৃত্য, জ্যোতির্বিদ্যা, বাণিজ্য, সংগীত ইত্যাদি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত স্নাতোকত্তর শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাণক্য, পানিনি, চরক, বিষ্ণু শর্মা, জীবকা সহ অসংখ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়।
Takkhashila University

 বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়
পাল বংশের রাজা ধর্মপাল এর শাসনকালে বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় এবং ৮ম শতাব্দী থেকে ৪০০ বছর ব্যাপী ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত উন্নিত হয়। বর্তমান বিহার যা প্রাচীনকালে ভাগলপুর নামে পরিচিত ছিল সেখানে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এর প্রতিযোগীতা হতো কারণ এই বিদ্যাপীঠেও ১০০ এর অধিক সংখ্যক শিক্ষক এবং ১০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী নাম লিপিবদ্ধ আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় তন্ত্র বিদ্যার জন্য বিখ্যাত ছিল কারণ তন্ত্রবিদ্যার জন্য এখানে বিশেষভাবে শিক্ষা দেয়া হত। অতীশ দীপঙ্কর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতনামা শিক্ষার্থী, যিনি শর্মাদের তিব্বতীয় বৌদ্ধ রীতির প্রবর্তক ছিলেন এবং তিব্বতের বৌদ্ধধর্মের পুনর্জ্জীবিত করেন ।
Vikramshila University

বল্লভী বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক গুজরাটের সৌরাষ্ট্রে বল্লভী বিশ্ববিদালয় স্থাপিত হয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় ৬০০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত উন্নিত হয়। চীনা পরিব্রাজক ইতসিং ৭ম শতাব্দীতে ভ্রমনকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার অন্যতম স্থান বলে বর্ণিত করেন।গুনমতি এবং স্থিরমতি বৌদ্ধধর্মের বিখ্যাত দই পণ্ডিত এখান থেকেই শিক্ষা জীবন পূর্ণ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়যতি তার উন্মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বহুজাতিক শিক্ষার্থীদের জনয জগৎবিখ্যাত ছিল। এর অতি উচ্চ শ্রেণঈর শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জায়গায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হতো।
Vallabi University

পুষ্পগিরী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাচীন কলিঙ্গ রাজ্যে (যা এখন অধুনিক উড়িষ্যা)পুষ্পগিরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বিস্তৃতি লাভ করে কুট্টাক এবং জয়পুর পর্যন্ত। তৃতীয় শতকে ইহা স্থাপিত হয় যা পরবর্তীতে ৮০০ বছর জ্ঞ্যান সাধনার উন্মেষ ঘটায় ১১ শতকে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। মজার ব্যাপার হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি বিস্তৃত হয় তিনটি পাহাড়ের সমন্বয়ে যার নামগুলো হল ললিতগিরি রত্নাগিরি এবং উদয়গিরি।এই বিশ্ববিদযালয়কে প্রাচিন ভারত যা সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে বিদ্যার্জনের জন্য বিখ্যাত একটি স্থান ছিল, সেই ভারতের মধ্যে অন্যতম একতি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এই পুষ্পগিরি বিশ্ববিদ্যালয়। তখনকার সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে তক্ষ্যশীলা নালন্দা এবং বিক্রমশীলার সঙ্গের তুলনা করা হত। চীনা পরিব্রাজক জুং এন যাং(হিউয়েন সাং) এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন ৬৩৯ খ্রীষ্টাব্দে। ললিতগিরি খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দির সবচেয়ে পুরাতন বৌদ্ধিস্ট স্থাপত্যকর্ম। খুব সম্প্রতি কিছু ছবি পাওয়া গিয়েছে। এই প্রামাণ্য দলিলের উপর ভিত্তি করে নৃতত্ত্ববিদেরা ধারণা করছেন সম্রাট অশোকের সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় অথবা সম্রাট এর প্রধান পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে একজন ছিলেন।
Pushpagiri University
অদন্তাপুরী বিশ্ববিদ্যালয়
পাল সাম্রাজ্যের রাজা ধর্মপাল অষ্টম শতাব্দীতে মগধে(আধুনিক বিহার) স্থাপন করা হয় যা ৮ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে ৪০০ বছর পর্যন্ত ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত এটি উন্নিত হয়। বিক্রমশীলার বিখ্যাত আচার্য শ্রীগঙ্গা ছিলেন অদন্তাপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতোকত্তর সম্মাননা অর্জন করেন। প্রাচীন তিব্বত ইতিহাস মতে তখন প্রায় ১২,০০০ সংখ্যক শিক্ষার্থি এখানে অধ্যয়নরত ছিলেন।প্রাচীন তিব্বতীয় ইতিহাসে ইহাও লিপিবদ্ধ আছে যে তদানিন্তকালে অদন্তাপুরী সহ বিক্রমশীলা, নালন্দা, সোমপুর এবং জগদ্দলা নামক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীন ভারতে অবস্থিত ছিল।
Adantapuri University
সোমপুর বিশ্ববিদ্যালয়
সোমপুর মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত হয় পাল সাম্রাজ্যের রাজা ধর্মপালের রাজত্ব কালে যা অষ্টম শতাব্দীত শেষভাগে থেকে ৪০০ বছর পর্যন্ত ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত এটি উন্নিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় এর ভূমির বিস্তরণ ছিল ২৭ একর যার মধ্যে মূল কাঠামোটি ছিল ২১ একর জমির উপর যা তদানিন্তনকালের স্থাপত্যকর্মের মধ্যে সর্ববৃহৎ ছিল বলে ধারণা করা হয়। এটি বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং সনাতন ধর্মে জ্ঞ্যান অর্জনের জন্য প্রধান বিদ্যাপীঠ ছিল। এমনকি এখনও অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের দেয়ালগুলোতে অসাধারন কারুকার্য সমন্বিত মাটির তৈরি ভাস্কর্য দেখতে পান যা পৃথিবীর তিন অতি সুপ্রাচীন ধর্মের নিদর্শন বহন করে।
Sompura University
অন্যান্য বিবিধ
উপরের উল্লেখিত তালিকার বাইরেও আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় , শিক্ষা প্রথিষ্ঠান বা টোল ছিল। জানা যায়, পাল সাম্রাজ্যের রাজা ধর্মপাল নিজে ৫০টির অধিক শিক্ষাপ্রথিষ্ঠানের অধিকর্তা ছিলেন। যা উনার পুরো রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত ছিল। আর এইগুলো উপরের উল্লেখিত বাকিগুলর মতনই খুব উন্নত আর বিখ্যাত ছিল। উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, গত ২৩ মার্চ ২০১৩ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলায় বিহারে কিছু ঘোর আবিষ্কার করা হয়েছে যা প্রত্নতাত্ত্বিকবিদেরা ৯ম শতাব্দির নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন। আরও বলা হয়েছে যে, এইসব ঘরে প্রায় ৮০০০ শিক্ষার্থী খুব খোলামেলা ভাবে আরামে থাকতে পারতেন। এখানে উল্লেখ্য যে এইসব ঘোর গুলো এক একটা এক এক রকমের। মানে, এইসব ঘরে তাঁরাই থাকতো যারা অনেক দূর দূরান্ত থেকে আসতো যেমন চীন, তিব্বত, নেপাল, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশর শিক্ষ্যার্থী।
· প্রাচীন ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস
উপরের ইতিহাস পড়ে বুঝা যাচ্ছে যে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ১২ শতাব্দীর পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নালন্দা, বিক্রমশীলা ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা হয় যখন ভারতবর্ষে মুসলিম আক্রমন শুরু হয়। ১১৯৩ সালে নালন্দা , বিক্রমশীলা ধ্বংস করে কুখ্যাত তুর্কী সেনাপতি বখতিয়ার খিলজি. এই সময় নালন্দার বিশাল সমৃদ্ধ পাঠাগার ধ্বংস করা হয়। সমস্ত বই লুন্ঠন করে তা জ্বালিয়ে দেয়া হয় যা খিলজির সৈন্যরা খুব নিষ্ঠুর ভাবে সম্পন্ন করে। ইতিহাসে দেখা যায় যে এই ধ্বংসযজ্ঞ এতই ভয়াবহ ছিল যে শুধু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো ৩ মাস ধরে শুধু জ্বলেছে। এই ধ্বংসযজ্ঞে এমনসব বই পুড়ান হয়েছে যা হাজার হাজার বছর ধরে নালন্দার পাঠাগারে খুব যত্নের সাথে রক্ষা করা হয়েছিল। শুধু বই নয়। এই পাশবিক ধ্বংসের হাত থেকে ছাত্র শিক্ষক কেউ রেহাই পায় নাই। এদের কাউকে হয় গলা কেটে হত্যা করা হয় অথবা জীবন্ত দগ্ধ করা হয়। ইতিহাসবিদ ডি.সি আহিরের বই Buddhist Revolution and Counter-Revolution in Ancient India তে এই নিয়ে বিস্তারিত পাওয়া যায়। উনার বইয়ে দেখা যায় তৎকালীন প্রাচীন ভারত সহ উতর ভারতের যাবতীয় গনিত, জ্যোতির্বিদ্যা , রসায়ন আর শল্য চিকিৎসার সকল উন্নতির পেছনে ছিল এই নালন্দার মহা মুল্যবান বইগুলো যা খুব বাজে ভাবে ধ্বংস করা হয়। ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য।

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts