কোণার্ক সূর্য মন্দির ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কোনারক শহরে অবস্থিত। নামটি সংস্কৃত কোণ এবং অর্ক (সূর্য) শব্দদুটির সমন্বয়ে গঠিত। ইউরোপীয় নাবিকরা একে ব্ল্যাক প্যাগোডা বলত এবং অপরদিকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে হোয়াইট প্যাগোডা বলত।
ইতিহাস- পূর্বগঙ্গ রাজবংশের নরসিংহদেব ১২৩২ - ১২৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা জয়ের স্মারকরূপে চন্দ্রভাগা নদীর তীরে প্রাচীন মিত্রাবনে অর্থাৎ আজকের কোনারকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আরও একটি গল্প কথিত আছে যে শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্ব তার অপরূপ রূপ হারিয়েছিলেন পিতার অভিশাপে। তখন তিনি সূর্যদেবের কঠোর তপস্যা করে তার রূপ ফিরে পান ও তিনি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
নির্মাণ ও স্থাপত্য- মন্দিরের ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির,ভোগমন্দির ও গর্ভগৃহ। তবে দেউলের আস্তিত্ব তেমন আর পাওয়া যায় না। মন্দিরের অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, তা কবে এবং কিভাবে তা নিয়ে নানান মত রয়েছে। এর স্থাপত্যের নথি তাল পাতার পাণ্ডুলিপির আকারে আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৬০ তে।
উড়িষ্যা ও দ্রাবিড় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে নির্মিত মন্দিরটি ধূসর বেলেপাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে সাত জোড়া ঘোড়া। সাতটি ঘোড়া মানে সপ্তাহের সাত দিন। বারো জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত। চব্বিশটি চাকা মানে চব্বিশ পক্ষ। চাকার কারুকার্য দর্শকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। প্রতিটি চাকা একেকটি সূর্যঘড়ি। চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা। আটটি দাড়ি মানে অষ্টপ্রহর। এখনো নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে। মন্দিরের প্রবেশপথেই রয়েছে বিশাল দুটি সিংহের মূর্তি যারা লড়াই করছে দুটি রণহস্তীর সঙ্গে।
বেদী থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত প্রতি ইঞ্চি জায়গায় পাথরের ভাস্কর্য ও কারুকার্য রয়েছে। দেবতা,অপ্সরা, কিন্নর, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, মানুষ, বালিকা বধূ বিয়ের শোভাযাত্রা, সমকামিতা, রাজার যুদ্ধ প্রস্তুতি, মৃদঙ্গকরতাল বীণা, মোহিনী, মিঠুন মূর্তি, ছয় হাতের শিব, রাজদরবারের নানান দৃশ্য, পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিরূপ, নৃত্যরত নরনারী, প্রেমিক যুগল, ফাঁদ দিয়ে হাতি ধরা,শিকারের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাথরের বুকে। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যার আলো মন্দিরের তিনদিকে তিনজন সূর্য মূর্তির ওপর পড়ে।
![](https://qph.fs.quoracdn.net/main-qimg-7710e5b7ef0ab8c3c74613f006b197d0.webp)