Wednesday, April 21, 2021

জলচক্র এবং বেদ

 বৈদিক দর্শনগুলির একটি হলো বৈশেষিক সুত্র। এটি ঋষি কণাদ তথা কশ্যপ কর্তৃক রচিত। এই গ্রন্থেই আছে অণু পরমাণু ইত্যাদি বিজ্ঞানের কথা। এই গ্রন্থের কিছু শ্লোক বলছে,

অপাং সংয়োগাভাবে গুরুত্বাৎ পাতম্।।

দ্রবত্বাৎ স্যন্দনম্।।

নাড্যো বায়ুসংয়োগাদারোহণম্।।

নোদনাপীডনৎ সংয়ুক্তসংয়োগাচ্চ।।

বৃক্ষাভিসর্পণমিত্যদৃষ্টকারিতম্।।

অপাং সঙ্ঘাতো বিলয়নঞ্চ তেজঃসংয়োগাৎ।।

তত্র বিস্ফুর্জ্জথুর্লিঙ্গম্।।

বৈদিকঞ্চ।।

অপাং সংয়োগাদ্বিভাগাচ্চ স্তনয়িত্নোঃ।।
৫/২/৩-১১বৈশেষিক সুত্র

বঙ্গানুবাদ :

জল সংযোগের অভাবে মাধ্যাকর্ষণের কারণে পাতিত হচ্ছে। দ্রবীভূত হয়ে বয়ে যায়।
সূর্যরশ্মি বায়ুর সাথে সংযুক্ত করে জলকে (আকাশে) আরোহণ করে।
জলের কণা/অনু পুনরায় উপরে একত্রিত হয়।
অদৃষ্টের ফলে বৃক্ষের মধ্যে জল সঞ্চালিত হয়।
(সূর্যের) তেজের কারণে (গাছের খাদ্যাদি) ঘনীভূত হয়ে সেই জল(-ও) বিলীন হয়।
(এখানে যে তেজের প্রভাব আছে) তার চিহ্ন/প্রমাণই বজ্রপাত।
ইহা বৈদিক কথা বা বেদ সিদ্ধ।
বজ্রপাত মেঘের সংযুক্তির ফলে এবং জলের বিভাগের(*) ফলে হয়।

(*) জলের অনু সূর্যের তেজের ফলে উত্তপ্ত হয়ে দূরে সরে যায়। তাকেই বিভাগ হওয়া বলছে৷ এখানে মূলতঃ বাষ্পীভবনে জল উপরে যায় যে, তার কথা বলছে ।

ব্যাখ্যা :

১.
প্রথম ধাপে বলছে, বৃষ্টি হচ্ছে৷ এখন জল নিচে আসার কারণ মাধ্যাকর্ষণের কথাও বলে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপ, বৃষ্টির জল পুষ্করিণী/নদী/সাগরের জলের সাথে মিশে/দ্রবীভূত হচ্ছে। সেই জল প্রবাহিত হচ্ছে।
তৃতীয় ধাপে বলছে, সূর্যের তেজের কারণে জল বাষ্পীভূত হচ্ছে। বাষ্পীভবনের প্রক্রিয়াও স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।
চতুর্থ ধাপে বলছে, আকাশে আবার জলের অণুগুলি একত্রিত হয়ে জমাট বেঁধে মেঘ হচ্ছে।

২.
প্রথম ধাপে বলছে, এটা সাধারণ প্রক্রিয়া যে গাছের মধ্যে তার নিজস্ব খাদ্য প্রস্তুতের জন্য জল প্রবাহিত হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপে বলছে, Transpiration প্রক্রিয়ার কথা। Transpiration এর ফলে গাছের ভেতরের তরল ঘনীভূত হওয়ার কথা বলছে।

৩.
এতোদূর যা দেখা গেলো তাতে এটা স্পষ্ট, জল বাষ্পীভূত হচ্ছে তেজের কারণে, মূলতঃ সূর্যের।
জলের কণা/অনু তরল অবস্থায় অনেকটা সংযুক্ত বা কাছাকাছি থাকে। বাষ্পীভবনে তা দূরে সরে যায়।

৪.
মেঘের জলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তেজ থাকে, Potential Energy বলা যায়। জলের বাষ্পীভবনের দূরে সরে যাওয়া জল আবার একত্রিত হয়ে জমা হয় মেঘ। তাদেরই ধাক্কা খাওয়ার মধ্যে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে আগুনের তেজ, শব্দের তেজ, আলোর এবং বিদ্যুতের তেজ দেখা যায়। তা নিশ্চয়ই কোনো যাদু না, তা জলের মধ্যে জমে থাকা তেজেরই প্রকাশ।

আরও বিস্ময় :

(১) মাধ্যাকর্ষণের জ্ঞানের স্পষ্ট প্রকাশ পাওয়া যায়।

(২) কঠিন-তরল-বায়বীয় অবস্থায় প্রতিটি কণা/অনুর মধ্যবর্তী দূরত্ব কেমন থাকে তা এখানে স্পষ্ট। কঠিন থেকে তরলের দূরত্ব বেশি তার থেকেও বেশি দূরত্ব দেখা যায় বায়বীয় কণায়।

লক্ষণীয় : সংস্কৃত লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন। এখানেই প্রমাণ।

শিবতত্ত্বে সৃষ্টি, সংহার ও রক্ষা – শ্রীকণ্ঠ ও পুরাণসমূহের আলোক

শৈব দর্শনে শিব কেবল একজন উপাস্য দেবতা নন—তিনি নিজেই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান ও পরম ব্রহ্ম । তিনিই এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহারের মূল কেন্দ্র...

Popular Posts