প্রাণায়ামে অঙুলি সংস্থাপন একটি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এই অঙুলির দ্বারা পঞ্চভূতকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমাদের শরীরের পাঁচটি আঙুল পাঁচটি প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়। যথা-
১.বৃদ্ধ আঙুল- সূর্য বা আগুনের প্রতীক।
২.তর্জনী- বাতাস বা বায়ুর প্রতীক।
৩.মধ্যমা- মহাকাশের প্রতীক।
৪.অনামিকা- পৃথিবীর প্রতীক।
৫.কনিষ্ঠা- জলের প্রতীক।
দশটি মুদ্রা ও এগুলোর উপকারিতা নিম্ন উপস্থাপন করা হল-
১.ধ্যান মুদ্রাঃ- প্রাণায়ামের সময় শুধু তর্জনীর দ্বারা বৃদ্ধ আঙুল স্পর্শ করলে তা হয় ধ্যান মুদ্রা। এই সময় অন্য আঙুল গুলো সোজা থাকবে।
উপকারিতাঃ এই অভ্যাস সকাল সন্ধ্যায় অন্তত ১৫ বার করা উত্তম। এই মুদ্রার সাহায্যে একাগ্রতা ও স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়। দুশ্চিন্তা দূর হয় ও অনিদ্রা জনিত ক্লান্তি নাশ হয়।
২.বায়ু মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় তর্জনীকে বুড়ো আঙুলের গোড়ায় বা মূলে মাউন্ট অফ ভেনাসের উপর চেপে ধরে রাখতে হবে এবং চাপ দিতে হবে। বাকি আঙুল সোজা থাকবে। অন্তত ১০-১৫ মিনিট করা উত্তম।
উপকারিতাঃ বাত রোগ, হাঁটুর যন্ত্রণা, সাইটিকা এবং গ্যাস জাতীয় রোগ দূর হয়। ঘাড় ও মেরুদন্ডের যন্ত্রণাতেও এই মুদ্রা বিশেষ ভাবে ফল দেয়।
৩.আকাশ মুদ্রাঃ- মধ্যমা আঙুলকে বুড়ো আঙুলের মূলে লাগিয়ে চেপে রাখতে হবে, বাকি আঙুল সোজা থাকবে। অন্তত ১০-১৫ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতাঃ মাথা ঘোরা, কানের রোগ, থাইরয়েড ও গলার রোগ দূর হয়। হৃদয়ের রোগ ঠিক হয়, মাড়ি মজবুত হয়।
৪.পৃথিবী মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় অনামিকা দিয়ে বৃদ্ধ আঙুলকে চাপ দিতে হবে। বাকি আঙুল সোজা থাকবে, অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে ১৫ বার করলে ভালো।
উপকারিতাঃ শরীরের ওজন স্বল্পতা ও মুটিয়ে যাওয়া রোগ দূর হয়, শারীরিক দূর্বলতা দূর হয়। দেহ ও মনের সজীবতা বৃদ্ধি পায়। মানসিক শান্তি বজায় থাকে, সাত্ত্বিক গুণগুলোর বিকাশ ঘটে, স্ফূর্তি ও তেজস্বীতা বৃদ্ধি পায়।
৫.প্রাণ মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙুলকে বৃদ্ধ আঙুল এর অগ্রভাগে একসাথে মিলাতে হবে। বাকি আঙুল সোজা থাকবে। অন্তত ৩০ সেকেন্ড করে ১৫-২০ বার করলে ভালো হয়।
উপকারিতাঃ এতে প্রাণের সুপ্ত শক্তির বিকাশ ঘটে, শরীর ও মনে স্ফূর্তি বিরাজ করে, চোখের জ্যোতি বাড়তে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় এই মুদ্রা অভ্যাস করলে উপবাস করলেও ক্ষুধা তৃষ্ণা থাকে না।
৬.অপান মুদ্রাঃ- এই মুদ্রা বৃদ্ধ, মধ্যমা ও অনামিকা আঙুল এর অগ্রভাগকে এক জায়গায় এনে পরস্পরকে স্পর্শ করতে হবে, বাকি আঙুল সোজা থাকবে।
উপকারিতাঃ পেট ও হৃদপিন্ডের রোগের জন্য বিশেষ উপকারী, শরীরের বিজাতীয় তত্ত্ব বাহিরে বের করে দেয়। নিয়মিত অভ্যাসে কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ, ডায়বেটিস, বুয়ু বিকার, কিডনির দোষ, দন্তবিকার, মূত্র দোষে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭.অপান বায়ু মুদ্রাঃ- একমাত্র কনিষ্ঠা আঙ্গুলটি সোজা রেখে বাকি আঙুল বৃদ্ধা আঙুল এর অগ্রভাগে এক সাথে মিলিয়ে স্পর্শ করতে হবে।
উপকারিতাঃ উচ্চ রক্ত চাপ, হাঁপানি, মাথা ব্যাথা এর ক্ষেত্রে খুব ভালো ফল দেয়। দুর্বল হৃদয়ের ব্যক্তির জন্য খুবই উপকারী, পেটের গ্যাস নির্গমনে বিশেষ উপকারী।
৮.অগ্নি মুদ্রাঃ- এই মুদ্রায় অনামিকাকে মুড়ে তার বাহিরের দিকের দ্বিতীয় ভাজে বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে চাপ দিন। অভ্যাসটি ৩০ সেকেন্ড ধরে ১৫-২০ বার করা ভালো।
উপকারিতাঃ এই মুদ্রায় অভ্যাস হলে হজম শক্তি বাড়ে। দেহে তাহ সৃষ্টি হয়, চর্বি কমে, টেনশন কমে,শক্তির বিকাশ ঘটে, রক্তের কোলেস্টেরল কমে বলে কথিত হয়।
৯.বরুন মুদ্রাঃ- কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধ আঙুল এর অগ্রভাগ স্পর্শ করে রাখতে হবে ও বাকি আঙুল সোজা থাকবে। ৩০ সেকেন্ড ধরে ১৫-২০ বার করুন।
উপকারিতাঃ জীবনী শক্তি বৃদ্ধি পায়, শরীরের রুক্ষতা কমে, মনকে সজীব করে ও চোখের দৃষ্টি বাড়ায়।
১০.শিব মুদ্রাঃ- দুই হাতের তালু জুড়ে নিয়ে আঙুল গুলোকে পরস্পরের খাঁজে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এবার বা হাতের বুড়ো আঙুল সোজা করে রেখে ডান হাতের তর্জনী ও বুড়ু আঙুল দিয়ে জড়িয়ে নিন। ১৫-২০ বার করুন। এটি করলে জল, ফল, ঘী, ও দুধ বেশী করে সেবন করা উচিৎ।
উপকারিতাঃ ফুসফুসের শক্তি বৃদ্ধি করে, দেহে তাপ সৃষ্টি করে। সর্দি ও শ্লেষ্মা হ্রাস করে, দেহের চর্বি কমায়। এই মুদ্রা বেশি করা উচিৎ নয়।