স্থান :- নদী অথবা পুকুরের ধারে অথবা পর্বতে অথবা বনে অথবা শিবালয়ে অথবা কোনাে পবিত্র স্থানে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করে তার পূজা করা উচিত।
কাল :- যেকোনো শুভদিন।
পাত্র :- ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্র সবার জন্য প্রযোজ্য। ভক্তকে নিজেই সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, এছাড়া অতিরিক্ত ভাবে কোনো পুরোহিতের প্রয়োজন নেই৷
তথ্যসূত্র :- উল্লেখিত বিধিটি শিবমহাপুরাণের অন্তর্গত বিদ্যেশ্বরসংহিতার ২০ নং অধ্যায় থেকে সংগৃহীত৷ বিধিটিকে আরো সহজ ভাবে তুলে ধরার জন্য লেখক বিধির নিচে সেই অংশের তাৎপর্য যোগ করেছেন মাত্র, মূল অংশের কোনো পরিবর্তন করেননি।
পুরাণে উল্লেখিত প্রকরণ ও তার তাৎপর্য :-
সূতদেব বলেন - ব্রাহ্মণগণ! এখানে বৈদিক বিধিতে যে পূজার ক্রম বলা হয়েছে, তাকে পূর্ণ ভাবে সম্মান করে আমি পূজার আর একটি নিয়ম জানাচ্ছি, যা উত্তম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বসাধারণের জন্য উপযুক্ত। মুনিবরগণ! পার্থিব লিঙ্গের পূজা ভগবান শিবের নামে বলা হয়েছে। সেই পূজা সমস্ত অভীষ্ট প্রদানকারী। আমি তা বলছি, শােনাে!
হরাে মহেশ্বরঃ শম্ভুঃ শূলপাণিঃ পিনাকধৃক। শিবঃ পশুপতিশ্চৈব মহাদেব ইতি ক্ৰমাৎ৷৷ মৃদাহরণসংঘট্টপ্রতিষ্ঠাহ্বানমেব চ। স্নপনং পূজনং চৈব ক্ষমস্বেতি বিসর্জনম।। ওঁকারাদিচতুর্থ্যন্তৈর্নমােহন্তৈর্নামভিঃ ক্ৰমাৎ। কর্তব্যাশ্চ ক্রিয়াঃ সর্বা ভক্ত্যা পরময়া মুদা৷৷
(শিবপুরাণ, বি .২০।৪৭ - ৪৯)
অর্থ্যাৎ হর, মহেশ্বর, শম্ভু, শূলপাণি, পিনাকধৃক, শিব, পশুপতি ও মহাদেব — শিবের এই আটটি নাম বলা হয়েছে। প্রত্যেক নামের আগে ওঁকার এবং শেষে চতুর্থী বিভক্তির সঙ্গে ‘নমঃ' পদ দিয়ে অত্যন্ত আনন্দ এবং ভক্তিভাব সহকারে পূজা সম্বন্ধীয় কাজ সম্পন্ন করা উচিত।
এর মধ্যে প্রথম নামে অর্থাৎ 'ওঁ হরায় নমঃ' উচ্চারণ করে পার্থিব লিঙ্গ তৈরি করার জন্য মাটি আনবে।
[তাৎপর্য - উক্ত মন্ত্রটি জপ করতে করতে শুদ্ধ স্থান থেকে মাটি নিয়ে আসতে হবে এবং পূজা নদী বা পুকুরের ধারে, পর্বতে, বনে, শিবালয়ে অথবা কোনাে পবিত্র স্থানেই করা উচিত।]
দ্বিতীয় নাম অর্থাৎ 'ওঁ মহেশ্বরায় নমঃ' উচ্চারণ করে লিঙ্গ নির্মাণ করবে।
[তাৎপর্য - উক্ত মন্ত্রটি মনে মনে উচ্চারণ করতে হবে এবং মাটির দলা দিয়ে শিবলিঙ্গের নির্মাণ করতে হবে।]
পরে 'ওঁ শম্ভবে নমঃ' বলে সেই পার্থিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করবে।
[তাৎপর্য - যে স্থানে পূজা হবে সবার প্রথমে তার ক্ষেত্রশুদ্ধি করতে হবে, এরজন্য হাতে কিছুটা পঞ্চামৃত নিয়ে উক্ত মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে সেই স্থানে প্রক্ষেপ করতে হবে। এরপর সেখানে একই মন্ত্র দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করতে করতে নির্মিত শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।]
তারপর ‘ওঁ শূলপাণয়ে নমঃ' বলে সেই পার্থিব লিঙ্গে ভগবান শিবের আবাহন করবে।
[তাৎপর্য - আহ্বান দুই প্রকারের হয়, এক ভৌতিক অপরটি আধ্যাত্মিক। তাই সবার প্রথমে ডান হাতের মধ্যমা আঙুলটিকে শিবলিঙ্গের লিঙ্গ ভাগে স্পর্শ করে উক্ত মন্ত্রটি মনে মনে পাঠ করতে হবে। এরপর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় উক্ত মন্ত্রটি আবার মনে মনে পাঠ করতে হবে এবং মনে মনে ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করতে হবে তিনি জাগরিত হন। মহাদেব সর্বব্যাপী আবার জীবের অন্তরেও বিদ্যমান, তার সর্বব্যাপী স্বরূপ যজ্ঞের মাধ্যমে পূজিত হয় এবং প্রতীকের মাধ্যমে অন্তরস্থ স্বরূপ। এই আহ্বান প্রক্রিয়ার তাৎপর্য নিজ মনকে স্থির করে, তার চিত্তশুদ্ধি করে, কেন্দ্রীভূত করে, অন্তরস্থ মহাদেবের জাগরণ। এই জাগরিত মহাদেবের প্রতীক হল মাটির তৈরি বিগ্রহটি তথা শিবলিঙ্গটি। তাই অন্তরস্থ মহাদেব জাগরিত হলে, মাটির তৈরি বিগ্রহও উপাসনা যোগ্য হয়, নচেৎ নয়।]
'ওঁ পিনাকধৃষে নমঃ' বলে সেই শিবলিঙ্গকে স্নান করাবে।
[তাৎপর্য - উক্ত মন্ত্রটি জপ করতে করতে শিবলিঙ্গের উপরে জল অথবা দুধ অথবা পঞ্চামৃত অর্পণ করবে।]
'ওঁ শিবায় নমঃ' বলে তাঁর পূজা করবে।
[তাৎপর্য - সুগন্ধি দ্রব্য, ধূপ, দীপ ও পুষ্প দ্বারা নির্মিত শিবলিঙ্গের পূজা করবে, উক্ত মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে৷]
পরে ‘ওঁ পশুপতয়ে নমঃ' বলে ক্ষমা প্রার্থনা চাইবে এবং শেষে ‘ওঁ মহাদেবায় নমঃ' বলে আরাধ্য দেবতাকে বিসর্জন দেবে।
[তাৎপর্য - আমরা বর্তমান দিনের সাধারণ মানুষেরা প্রাচীন ঋষিমুনিদের ন্যায় অথবা শুদ্ধ শৈব সাধকদের ন্যায় অতোটা তত্ত্বজ্ঞ নই! তাই পূজার নিয়মাচার পালনে কোনো ত্রুটি হতে পারে, এরজন্য পূজার শেষে উক্ত মন্ত্রটি উচ্চারণ করে মনে মনে ভগবানের কাছে ক্ষমা চাইবে৷ এরপর সমগ্র ক্রিয়া সম্পন্ন হলে পূজা করা শিবলিঙ্গটি কোনো জলাশয়ে বিসর্জন দেবে দ্বিতীয় মন্ত্রটি উচ্চারণ করতে করতে।]
বিঃদ্রঃ - উল্লেখিত মন্ত্র গুলো কমপক্ষে ১১ বার এবং সর্বোচ্চ ১০৮ জপ করতে পারেন, এর মধ্যে যেটা আপনার সুবিধা হবে।