সনাতন হিন্দু ধর্মের ৫ টি শাখা বা পঞ্চ মতের অন্যতম মত হল শৈব মত। পরমেশ্বর শিবকে পরম ব্রহ্ম রুপে পূজা অর্চনা করা তথা বৈদিক রুদ্রের সাথে উপনিষদ তথা পুরানের সমন্বয় সাধন করে ব্রহ্মের স্বরূপ উপলব্ধি করাই শৈবদের উদ্দেশ্য ও কাজ।
আজকাল এক অসুর শ্রেনীর উদ্ভব হয়েছে যারা ধর্মের পঞ্চ মত ও পথকে অস্বীকার করে এবং অন্য মত বা পথকে পুরো অস্বীকার করে থাকে। যা সম্পুর্ন শাস্ত্র বহির্ভুত ও শাস্ত্র বিরুদ্ধ। পঞ্চমতের সব মত একতার কথা বলে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় পরমেশ্বর শিবকে পরম বৈষ্ণব তথা উনি হরি নাম করেন ইত্যাদি অশাস্ত্রীয় অবৈদিক কথা বলে উনাকে নীচু বা নিম্ন স্তরের সাধারন তামসিক দেবতা বলে হেলা ফেলা বা অপমান করা হয়। এই দিক থেকে গৌড়ীয় মতবাদী সম্প্রদায় অন্যতম। যাইহোক আমার লেখা পড়ে বা ইনবক্সে কথা বলে অনেকে শিবের প্রতি আকর্ষিত হয়েছেন। যা আমার জন্য আনন্দদায়ক। কিন্তু শিব দর্শন নিয়ে জিজ্ঞ্যেস করলে উনারা নির্বাক থাকেন। কিছু বলার থাকে না। না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ শৈব দর্শনকে অনেক অনেক কাল ধরে ধাপাচাপা দেয়া হয়েছে। আমিও ৭ দিন আগে জানতাম না শৈব দর্শন কি। অনেকের হাতে পায়ে ধরেছি, বিভিন্ন গ্রুপের মানুষের কাছে ধর্না দিয়েও উত্তর পাইনাই। অনেকেই জানেন না। কেউ কেউ আলসেমী করে উত্তর দেন নাই। ৩ দিন আগে। ভারতের বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শ্রদ্ধেও দাদার সাথে এই বিষয়ে কথা বলছিলাম। উনি আমাকে অসাধারন কয়েকটি লিঙ্ক দিলেন যাতে দেখা যায় দক্ষিনে বৈষ্ণবরা কিভাবে শিব মন্দির ধ্বংস তথা কি পরমান অমানবিক অত্যাচার করেছে শৈব ভক্তদের উপরে। প্রমান চাইলে এই বিষয়ে গুগুল করলে হাজার লিঙ্ক পাওয়া যায় যার ইতিহাস গত প্রচুর প্রমান আছে।
শৈববাদের ইতিহাস বলা মুশকিল। ধারনা করা হয় সৃষ্টির শুরু থেকেই বেদজ্ঞ ঋষিরা যেমন যাজ্ঞবল্ক্য, ভৃগু, মার্কেন্ডেয়, সুত, বশিষ্ঠ, অঙ্গিরা, অত্রি ইত্যাদি অনেক বেদের মন্ত্র দ্রষ্টারা শৈব মতের ধারা প্রচার করেছেন। তবে ভারতবর্ষের ইতিহাস মতে বর্তমান ভারত, নেপাল, ভূটান, শ্রীলংকা, মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়াতে শৈবদের বিচরণ পরিলক্ষিত হয়।
হিন্দুধর্মের ইতিহাস খ্যাত গ্রন্থ মহাভারতের বর্ণণা অনুযায়ী কুরু বংশের কুল দেবতা ছিলেন ভগবান শিব। আর একারণেই কুরু বংশের একশত কৌরব ও পঞ্চ পান্ডব এবং তাদের পিতৃপুরুষ সকলেই শৈব ধারার উপাসক ছিলেন। বিগত ২০১৩ সালে ভারতীয় টিভি চ্যানেল Star plus নির্মিত মহাভারত নামক টিভি সিরিয়ালটিতেও বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। প্রাচীন যুগে বাংলার গৌড়েশ্বর মহারাজ শশাংক ছিলেন শৈব ধারার উপাসক। তিনি তার নামের প্রথমে পরম শৈব উপাধি ব্যবহার করতেন। আর্যাবর্তে পাশুপত সম্প্রদায় সবচেয়ে প্রাচীন শৈব ধর্মাবলম্বী। এছাড়া প্রাচীন বাংলার সেন বংশীয় রাজারা ছিলেন শৈব ধারার উপাসক। সেন রাজারা তাদের রাজকার্যের শুরুতে ভগবান শিবের স্তবের প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষন সেন পিতামহ ও পিতৃদেবের শৈবধর্মের প্রতি অনুরাগ ত্যাগ করে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহন করেন। এর ফলে রাজা লক্ষনকে অনেক দূর্গতি পোহাতে হয়েছিল। শৈব ধারার সুন্দর নিয়ম নীতি ত্যাগ করে তিনি বৈষ্ণবীয় নিয়ম নীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে রাজকার্যে অমনোযোগী হয়ে পড়েন। তারপর একজন তুর্কি সেনাপতি মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহী সৈন্যদলের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে রাজপ্রাসাদের পিছনের দরজা দিয়ে পলায়ন করে সপরিবারে প্রথম রাজধানী নবদ্বীপ / নদীয়া নৌকাযোগে থেকে দ্বিতীয় রাজধানী পূর্ববঙ্গের মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে চলে আসেন। ধারণা করা হয় পিতামহ ও পিতৃদেবের শৈব ধারা ত্যাগ করার কারণেই লক্ষন সেনের এরকম দূর্গতির কারণ ছিল।
সংগ্রহিত -বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা ,শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ (৪০০-২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ), শৈবধর্মের প্রথম সুসংহত দর্শনগ্রন্থ গেভিন ফ্লাড বলেছেন
“ A theology which elevates Rudra to the status of supreme being, the Lord (Sanskrit: Īśa) who is transcendent yet also has cosmological functions, as does Shiva in later traditions. “
স্থান, প্রথা ও দর্শন ভেদে শৈবদের ভিন্ন ভিন্ন শাখা রয়েছে। শৈবধর্মের সুবিশাল ধর্মীয় সাহিত্যে একাধিক দার্শনিক মতের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর মধ্যে "অভেদ" (অদ্বৈত), "ভেদ" (দ্বৈত) ও "ভেদাভেদ" (অদ্বৈত ও দ্বৈতের মিশ্রণ) শাখা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
Sectors of Shaivism |
শৈব অদ্বৈত দর্শনের আদি প্রবক্তা হলেন আচার্য শ্রীকণ্ঠ। বাদরায়ণ ব্যাস উপনিষদ্ গ্রন্থাবলির সারবক্তব্য সংকলন করে ৫৫০টি সূত্রে যে ব্রহ্মসূত্র রচনা করেছিলেন, তার শৈব ভাষ্যের রচয়িতা শ্রীকণ্ঠ। এই ভাষ্যেই তিনি শৈব অদ্বৈত মতবাদ প্রথম ব্যাখ্যা করেন।
উপনিষদ্, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ও ব্রহ্মসূত্র বেদান্ত দর্শনের বিভিন্ন শাখায় কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থ বিবেচিত হয়। আদি শঙ্করাচার্য, রামানুজ ও মধ্ব এই গ্রন্থগুলির ভাষ্য রচনার মাধ্যমে তাঁদের অদ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত ও দ্বৈতবাদ প্রচার করেন। প্রত্যেকটি ভাষ্যই নিজেদের সঠিক ও অন্যদের বেঠিক বলে প্রচার করেছিল। শঙ্করাচার্য ছিলেন অদ্বৈতবাদী। তিনি সগুণ ব্রহ্মের উপাসনাকে নিন্মস্তরের উপাসনা বলেছিলেন। অন্যদিকে রামানুজ ও মধ্ব বিষ্ণু বা কৃষ্ণ উপাসনাকেই শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছিলেন। শ্রীকণ্ঠের আগে শিবভক্তিমূলক কোনো বৈদান্তিক শাখার অস্তিত্ব ছিল না। এই অভাব পূর্ণ করেন শ্রীকণ্ঠ। তাঁর দর্শনকে বলা হয় শৈব বিশিষ্টাদ্বৈত। তবে এই বিশিষ্টাদ্বৈতের সঙ্গে রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতের বিশেষ প্রভেদ রয়েছে। তাঁর ভাষ্যে শ্রীকণ্ঠ শৈবদর্শনকে বৈদান্তিক পরিভাষার আলোকে প্রচার করেন।
শ্রীকণ্ঠ ছিলেন একাদশ শতাব্দীর ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবনকথার প্রায় কিছুই জানা যায় না। অদ্ভুত রহস্যাবৃত মানুষ। বীরশৈববাদী বা শৈবসিদ্ধান্তবাদীদের মতো তিনি কোনো সামাজিক আন্দোলনের জন্ম দেননি। কিন্তু তাঁর রচনাবলিই জানান দেয়, কতটা উচ্চ পর্যায়ের শিবভক্ত ছিলেন তিনি। দক্ষিণ ভারতে বৈষ্ণবরা শৈববিদ্বেষী মতবাদ প্রচারে বিশেষভাবে উদ্যোগী হলে ষোড়শ শতাব্দীতে আয়াপ্পা দীক্ষিত শ্রীকণ্ঠের ভাষ্যের উপর একটি টীকা রচনা করে তাদের প্রতিহত করেন। সেই থেকেই শ্রীকণ্ঠের মতবাদ শৈবধর্মে একটি বিশেষ স্থান করে নেয়।
শ্রীকণ্ঠের মতে, শিব লীলার ছলে জগৎ সৃষ্টি করেননি। শিবই সৃষ্টির প্রধান কারণ। শিব ও শক্তি উভয়েই জগৎকারণ। শিবই তাঁর শক্তির সাহায্যে ব্রহ্মাণ্ডের রূপ গ্রহণ করে নিজেকে ব্রহ্মাণ্ডে পরিণত করেছেন। শিবের একটি সূক্ষ্মশরীর রয়েছে। এই শরীর কোটিসূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল। এই শরীরই জীবাত্মাকে মোক্ষ প্রদান করে। ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যে শ্রীকণ্ঠ লিখেছেন,“সৃষ্টির সময় কোনো জাগতিক কারণের সাহায্য ছাড়াই নিজের ইচ্ছার তাড়নায় তাঁর শক্তির প্রথম তরঙ্গে এবং তাঁর নিজের সত্ত্বা থেকেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, নিজেকে জীব ও জড়পদার্থে পরিণত করেছেন।”আত্মশুদ্ধি, ভক্তি, হৃদয়ে আকাশরূপী পরআত্মা অর্থাৎ শিবের ধ্যানই পথ। ধ্যানই সকল সৃষ্টির মূল পরমাত্মারূপী শিবের দিকে মনকে নিয়ে যায়। নৈঃশব্দ, বিশ্বাস ও ত্যাগই জীবকে মুক্ত করতে পারে। পরমাত্মা শিবের সঙ্গে একাত্ম অনুভূতির মাধ্যমেই আত্মার বন্ধন মুক্তি হয়। কর্মের মাধ্যমে নয়, শিবের কৃপাতেই মুক্তিলাভ সম্ভব। মৃত্যুর পর মুক্ত আত্মা শিবলোকে যায়। তখন আর তাকে জগতে ফিরে আসতে হয় না। জীবাত্মা তখন অধ্যাত্মভূমিতে অবস্থান করে। সবকিছুকে শিবময় বলে জানতে পারে এবং সৃষ্টিক্ষমতা ছাড়া বাকি সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়। জীবাত্মা কখনই ব্রহ্ম অর্থাৎ শিবের সঙ্গে সম্পূর্ণ এক হয় না, কিন্তু ব্রহ্মের সকল প্রধান গুণাবলি উপভোগ করে। মানুষ তার নিজের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করে। কাজের দায়দায়িত্বও তারই উপর বর্তায়। শিব শুধুই কর্ম অনুসারে কর্মফল দেন। ব্রহ্মসূত্র ভাষ্যে শ্রীকণ্ঠ লিখেছেন, “শিব নিজেকে ত্রিশক্তির [জ্ঞান, ইচ্ছা ও কর্ম] সঙ্গে যুক্ত করেছেন, প্রচেষ্টার সামগ্রিক স্তরে প্রবেশ করেছেন, এবং ব্রহ্মাণ্ডের আকার নিয়েছেন, তিনি ত্রিদেবের [বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও রুদ্র] সম্মিলিত রূপ। সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ শিবের মাহাত্ম্য কে অনুধাবন করতে পারে?”
অসাধারন একটি বই। যা শৈব দর্শনকে ছড়িয়ে দিয়েছে সাধারনের মাঝে |
আয়াপ্পা দীক্ষিত (১৫৫৪-১৬২৬) হিন্দু ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন শাখার দর্শনের উপর তাঁর টীকা এতটাই গভীর যে, প্রতিটি শাখাতেই তাঁকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। এমনকি তিনি নিজে যে শাখাগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, সেগুলিতেও। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ শিবভক্ত। তাঁর রচিত পূজাপদ্ধতি আজও শৈব পুরোহিতরা মেনে চলেন। তিনি ছিলেন এক মহান সন্তকবি। শ্রীকণ্ঠ নিজে ছিলেন আদি শঙ্করাচার্যের অদ্বৈত সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁর সমসাময়িক যুগে শৈব-বিদ্বেষী বৈষ্ণবদের প্রভাবে শিবপূজার প্রচলন হ্রাস পেলে তিনি শিবপূজার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে প্রয়াসী হন। এই কাজে তাঁকে অসংখ্য হুমকির মুখে পড়তে হয়।
ষোড়শ শতাব্দীতে বিজয়নগরের রাজা রামরাজার পৃষ্ঠপোষকতায় বৈষ্ণবধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এই সময় দক্ষিণ ভারতে শৈবধর্ম প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছিল। ১৫৬৫ সালে বিজয়নগরের পতন হলে রামরাজার মৃত্যু হয়। তাঁর উত্তরাধিকাররা অন্যান্য শহর থেকেই বৈষ্ণবধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। আয়াপ্পা ভেলোরের রাজা চিন্না বোম্মার (শাসনকাল ১৫৫৯-১৫৭৯) পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। এই ঘটনা শৈবধর্মের পুনরুজ্জীবনের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বোম্মা অতীতে ছিলেন বিজয়নগরের অধীনস্থ সামন্তপ্রভু। বিজয়নগরের পতনের পর তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
আয়াপ্পা দীক্ষিত শ্রীকণ্ঠ সহ সেযুগের বিশিষ্ট দার্শনিকদের রচনার উপর টীকা রচনা করেন। দ্বৈতবাদী মধ্বের রচনার উপর তাঁর টীকা আজও মধ্ব সম্প্রদায়ে মান্য করা হয়। ১০৪টি গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে আয়াপ্পা বিভিন্ন দার্শনিক শাখার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেন। সেই সঙ্গে শৈবধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেন এবং ভক্তিমূলক শিবপূজার প্রচলন করেন। রাজা চিন্না বোম্মার পৃষ্ঠপোষকতায় আয়াপ্পার মতবাদ বিস্তার লাভ করেছিল। ৫০০ পণ্ডিতের সাহায্যে এবং আয়াপ্পা ও অন্যান্য প্রশিক্ষিত পণ্ডিতদের সাহায্যে শৈবমত প্রচারিত হয়। একটি গ্রন্থে আয়াপ্পা লিখেছিলেন, “শিব ও শিবপূজার বিরোধী রাক্ষসদের সমালোচনার ফলে যখন ভক্তের মন থেকে শিবভক্তি প্রায় অবলুপ্ত হতে বসেছিল। যার ফলে তাঁদের পূর্বজন্মকৃত সুকৃতি বিনষ্ট হচ্ছিল। তাঁদের সেই ভক্তিকে ফিরিয়ে আনার জন্যই এই শিবকর্ণামৃত রচিত হল।” আয়াপা দীক্ষিতের মতে, শ্রীকণ্ঠের দর্শন ও অন্যান্য দ্বৈত ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী দর্শন অদ্বৈত সত্য উপলব্ধির ধাপ মাত্র। তাঁর মতে শ্রীকণ্ঠ সগুণ ব্রহ্মের উপাসনার উপর জোর দিয়েছেন, নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনার উপর নয়। কারণ তিনি শৈবদের ভক্তিপথে অগ্রসর হওয়াই বাঞ্ছনীয় মনে করেছেন। ভক্তি নির্গুণ ব্রহ্মস্বরূপ পরাশিবকে জানার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিবার্কমণি দীপিকা গ্রন্থে আয়াপ্পা দীক্ষিত বলেছেন,“অদ্বৈত বেদান্ত শ্রীশঙ্কর প্রমুখ প্রাচীনকালের মহান ধর্মগুরুদের দ্বারা গৃহীত ও প্রচারিত এক ধর্ম। তবুও একমাত্র শিবের দয়াতেই অদ্বৈতের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা জাগা সম্ভব, অন্য কোনো উপায়ে নয়।” আজকের সমাজে শৈব অদ্বৈত মতবাদের অনুসারী কোনো সম্প্রদায় নেই। কিন্তু এই মতবাদের দ্বারাই বেদান্ত ও সিদ্ধান্ত এক হয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীতে আয়াপ্পা দীক্ষিত কর্তৃক শৈবধর্মের নবজাগরণই এই মতবাদের শ্রেষ্ঠ অবদান।
আমার লেখাতে কোন ভুল ত্রুটি কিংবা আমাকে যদি শৈব দর্শন সম্পর্কে আরও কেউ কিছু বলে বা ইনফরমেশন দিয়ে সহায়তা করেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
পরমেশ্বর শিব আমাদের জ্ঞ্যান চক্ষু উন্মোচন করুন এই কামনা করছি।
হর হর মহাদেব।