Friday, September 1, 2017

হিন্দুধর্ম কি গ্রহণ করা যায়? গ্রহণকরা গেলে গ্রহণের পদ্ধতি কী?

পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন ধর্ম সনাতনধর্ম। সকল ধর্ম, মত, পথ ওউপাসনা পদ্ধতি এসব কিছুরই উৎসমুখহচ্ছে এই হিন্দুধর্ম। যেহেতু একসময়পুরো পৃথিবীতে হিন্দুধর্ম ছাড়া অন্যধর্মই ছিল না তাই সেসময়ে ভিন্নধর্মাবলম্বীকে হিন্দুধর্মে দীক্ষিতকরার প্রথাও ছিল না, কেননা সেসময়ভিন্ন ধর্ম বলতে কিছু ছিল না। কিন্তুসময়ের পরিবর্তনে শুধু ভিন্ন ধর্মেরউদ্ভবইঘটেনি এমনকি হিন্দুধর্মকে সংহারকরতে বহু ধর্মেরই উদ্ভব ঘটেছে আর এদেরদ্বারা হিন্দুরা বিপথে চালিতও কমহয়নি।মহামানবরা যেমন সমাজ সংস্কারেরজন্য কাজ করেন তেমনি সময়েরপ্রয়োজনে কিছু পদ্ধতিও সম্প্রদায় ওসমাজের জন্য নির্দেশ করেন। খ্রিস্টিয়চতুর্থ/পঞ্চম শতাব্দীরদিকে তেমনি একজন ঋষির আবির্ভাবঘটে। যদিও ১২০০খ্রিস্টাব্দে ভারতে আনুষ্ঠানিক ইসলামধর্মের রাজনৈতিক বিস্তার শুরু হয়কিন্তু মূল কাজটি শুরু হয়েছিল বেশপূর্বে। আর ভিন্নধর্মে চলে যাওয়া হিন্দুদের নিজধর্মে ফিরিয়ে আনতে এবং ভিন্নধর্মের মানুষকে হিন্দুধর্ম গ্রহণেরপদ্ধতি লিপিবদ্ধ করেন এই মহানঋষি দেবল। তাঁর রচিত ‘দেবলস্মৃতি’তে হিন্দুধর্ম গ্রহণের পূর্ণাঙ্গবিধান দেয়া আছে।ভারতীয় আর্য সমাজ, ভারত সেবাশ্রমসঙ্ঘ, স্বামী নারায়ণ সংস্থা ও অন্যান্যপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্নসময়ে কনভার্ট হওয়া হিন্দুদের নিজধর্মে ফিরিয়ে আনা ও ভিন্নধর্মাবলম্বীর হিন্দুধর্ম গ্রহণের‘শুদ্ধি যজ্ঞ’ নামক আনুষ্ঠানিকতাটি মূলতএই দেবল স্মৃতির অনুসরণ।চতুর্থ/পঞ্চম শতাব্দীরদিকে ঋষি দেবলের ডাকে সমসাময়িকভারতে ঋষিদের নিয়ে সিন্ধুতীরবর্তী (বর্তমান পাকিস্তান অংশে)এক সম্মেলন হয়। এইসম্মেলনে ঋষি দেবল ও অন্যান্য ঋষিগণহিন্দুদের রক্ষা ও হিন্দুধর্ম প্রসারেরলক্ষ্যে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এইসিদ্ধান্তের ফলাফল হচ্ছে ‘দেবল স্মৃতি’নামক গ্রন্থ।ভারতের দেরাদুন আর্য সমাজেরগ্রন্থাগারে আজও ‘দেবল স্মৃতি’সংরক্ষিত আছে। এই গ্রন্থেরবাংলা অনুবাদ যত শীঘ্র হবে ততইআমাদের জন্য মঙ্গল।
এছাড়াও বেদের সেই বিখ্যাত মন্ত্রওআমাদের নির্দেশ করে যে হিন্দুধর্মগ্রহণ করা যায়-‘হে মনুষ্যগণ তোমরা ঈশ্বরেরমহিমাকে বৃদ্ধি কর, সমগ্রবিশ্বকে আর্যধর্মে দীক্ষিত কর’।ঋগ্বেদ, ৯/৬৩/৫

বৈদিক ধর্মে ধর্মান্তরের প্রক্রিয়াটিকে 'শুদ্ধি' বলা হয়।
“শুদ্ধি” বিধান কেবল প্রাচীনই নয় শাস্ত্রে অনেক বর্ণনাও প্রমাণ করে সনাতন ধর্মে প্রত্যাবর্তন বৈধ।
•পবিত্র বেদ এ শুদ্ধির বার্তাঃ
১। হে বিদ্বানগণ! যারা অন্ধকারে পতিত হয়েছে তাদেরকে পুনরায় জাগ্রত করো। যে পাপ করছে অথবা যার
জীবন কর্দমাক্ত হয়েছে তাকে নতুন জীবনদান করো অথবা “শুদ্ধ” করো।
~ঋগ্বেদ ১০।১৩৭।১ ২।
২।হে ইন্দ্রিয়গণের শাসনকর্তা পরমাত্মা! শত্রু নিবারনের জন্য আমাদের শক্তি প্রদান কর যা হিংসাবিহীন এবং কল্যানকর। যার দ্বারা তুমি দুষ্টদের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত কর। যা মনুষত্ব বৃদ্ধির সহায়ক। ~
ঋগ্বেদ ৬।২২।১০
৩।পরমেশ্বরের নাম নিয়ে এগিয়ে চলো, সমস্ত বিশ্বকে আর্যত্বে(শ্রেষ্ঠত্বে) দীক্ষীত কর।
-ঋগ্বেদ ৯।৬৩।৫ 






•স্মৃতি-সূত্র গ্রন্থে শুদ্ধির বিধানঃ
১।দুর্নীতিগ্রস্ত জ্ঞানীর সন্তানদের শুদ্ধ করে যজ্ঞপবীত [যজ্ঞেরপবিত্রতা, পৈতা ] দেওয়া উচিত।
-আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১।১।১ 

২।প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়েপ্রায়শ্চিত্তকারী নিজের আসল বর্ণ লাভ করতে পারে।
-আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১।১।২

৩। উপদ্রব, ব্যাধী, বিপদ ইত্যাদির জন্য যারা বিধর্মী হয়, শান্তির স্থিতি তৈরি হলে প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে তারা
পুনরায় শুদ্ধ হতে পারে।
-পরাশর সংহিতা ৭।৪১

৪।ম্লেচ্ছরা বলপূর্বক যাদেরকে দিয়ে গোহত্যা, মাংসভক্ষন ইত্যাদি নীচ কাজ করিয়েছে তারা বর্ণানুসারে কৃত্য ব্রতযজ্ঞের মাধ্যমে শুদ্ধ হয়ে যাক।
দেবল স্মৃতি ৯।১১

৫। গোহত্যা বা তার সমতূল্য পাপের শুদ্ধি চন্দ্রায়ণ, গোপাল ইত্যাদি ব্রত দ্বারা হয়। 
-যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি, প্রচ্ছদ ৫


• পূরাণে শুদ্ধির বর্ণনাঃ
১।কাণ্ব ঋষি দ্বারা ম্লেচ্ছর পরিশোধন বর্ণনা।
ভবিষ্যত পূরাণ, অনুচ্ছেদ ৪, অধ্যায় ২১, শ্লোক১৭-২১ 

২।অগ্নি বংশের রাজার দ্বারা বৌদ্ধ পরিশোধন বর্ণনা.
 প্রতিসর্গ অনুচ্ছেদ ৪, অধ্যায় ২১, শ্লোক ৩১-৩৫, ভবিষ্যত পূরাণ।

৩।কৃষ্ণচৈতন্যেরসেবক রামানন্দের শিষ্য,নিম্বাদিত্য, বিষ্ণু স্বামী দ্বারা ম্লেচ্ছর পরিশোধন বর্ণনা.
প্রতিসর্গ অনুচ্ছেদ ৪, অধ্যায় ২১, শ্লোক ৪৮-৫৯, ভবিষ্যত পূরাণ।


•ইতিহাসে শুদ্ধির বর্ণনাঃ
১। শঙ্করাচার্য এবং কুমারিলভট দ্বারা বৌদ্ধদের শুদ্ধি।

 ২।শিবাজীর দ্বারা নেতাজী পালকরের ইসলাম থেকে শুদ্ধির মাধ্যমে আর্য হওয়া।

৩। হুণ, কম্ভোজ, শক ইত্যাদি জাতির আর্য হওয়া।





এছাড়া আরও অনেক উদাহরণ, শাস্ত্রের বর্ণনা পাওয়া যায় যার দ্বারা প্রমাণিত হয় শুদ্ধি একটি শাস্ত্রানুমোদিত প্রক্রিয়া। কিন্তু একটা সময় সনাতন ধর্ম ছাড়া পৃথিবীতে অন্য কোন ধর্ম ছিলনা।তাই তখন আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ধর্মান্তরকরন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন ও ছিলনা!পরবর্তীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব হওয়ার মানুষকে বিপথ থেকে বৈদিক ধর্মে ফিরিয়ে আনতে ধর্মান্তরের প্রক্রিয়াবিধি বর্ণনা করে ঋষি দেবল অন্যান্য ঋষিদের সাথে সিন্ধুতীরের এক সম্মেলনে দেবলস্মৃতি রচনা করেন।এই গ্রন্থটি দেহরাদুন আর্যসমাজে সংরক্ষিত রয়েছে।দেবল স্মৃতিতে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুসারেই আর্যসমাজ,অগ্নিবীর,স্বামীনারায়ণ সংস্থা,ভারতীয় সেবাশ্রম সংঘসহ বিভিন্ন হিন্দুধর্মীয় সংগঠনসমূহ প্রতিবছর হাজার হাজার অহিন্দুকে শুদ্ধিযজ্ঞের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করে।বিশেষত প্রতিবছর আর্যসমাজের শুদ্ধিযজ্ঞে আবেদনপত্রের মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী প্রায় ছয় থেকে দশহাজার বিধর্মীগণ বৈদিক ধর্মে
প্রত্যাবর্তন করেন।
বাংলাদেশের সকল উকিলই এই তত্ত্বদিয়ে থাকেন যে হিন্দুধর্ম গ্রহণকরা যায় না। আর সেকারণে অনেকে প্রেম বা ধর্মবোধযেকারণেই হোক হিন্দুধর্ম গ্রহণকরতে চাইলে গ্রহণ করার পথ খুঁজে পায়না। এই মিথ্যা আইনের চর্চা একঅর্থে প্রচ্ছন্ন সাম্প্রদায়িকতার চর্চা।

সূত্র: Hindu-Muslim Relations in British India: AStudy of Controversy, Conflict ... LeidenNetherlands; BY: Gene R. Thursby

http://www.aryasamaj.com/enews/2012/jan/4.htm?fref=gc&dti=216694788431234

http://aryasamajthane.com/conversion.html?fref=gc&dti=216694788431234


শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন...

Popular Posts