Friday, November 1, 2024

বেদাদি শাস্ত্রে পশুবলির প্রমাণ

 

এষ ছাগঃ পুরো অশ্বেন বাজিনা পুষ্ণে ভাগো নীয়তে বিশ্বদেব্যঃ।


অভিপ্রিয়ং যত্ পুরোলোশমর্বতা ত্বষ্টেদেনং সোশ্রবসায় জিন্বতি।।     – ঋগবেদ ১/১৬২/৩


অর্থাৎ, সকল দেবতার উপযুক্ত ছাগ পূষারই ভাগে পড়ে, একে দ্রুতগতি অশ্বের সাথে সম্মুখে আনা হচ্ছে। অতএব ত্বষ্টা দেবতাগণের সুভোজনের নিমিত্ত অশ্বের সাথে ঐ অজ হতে সুখাদ্য পুরোডাশ প্রস্তত করুন।


যদশ্বস্য ক্রবিষো মক্ষিকাশ যদ্বা স্বরৌ স্বধিতৌ রিপ্তমস্তি।


যদ্ হস্তয়ৌঃ শামিতুর্যন্নখেষু সর্বা তা তে অপি দেবেষ্বস্তু।।    – ঋগবেদ ১/১৬২/৯


অর্থাৎ, অশ্বের অপক্ক মাংসের যে অংশ মক্ষিকা ভক্ষণ করে, ছেদনকালে বা পরিস্কার করবার সময় ছেদন ও পরিস্কার সাধন অস্ত্রে যা লিপ্ত হয় , ছেদকের হস্তদ্বয়ে এবং নখে যা লিপ্ত থাকে, সে সমস্তই দেবগণের নিকট যাক।


যদুবধ্যমুদরস্যাপবাতি য আমস্য ক্রবিষো গন্ধো অস্তি।


সুকৃতা তচ্ছমিতারঃ কৃণ্বন্তুত মেধং শৃ্তপাকং পচন্তু।।     – ঋগবেদ ১/১৬২/১০


অর্থাৎ, উদরের অজীর্ণ তৃণ বের হয়ে যায়, অপক্ক মাংসের যে লেশমাত্র থাকে, ছেদনকর্তা তা নির্দোষ করুন এবং পবিত্র মাংস দেবতাগণের উপযোগী করে পাক করুন।


যত্তে গাত্রাদগ্নিনা পচ্যমানাদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি।


মা তদ্ ভুম্যামা শ্রিষন্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশদ্ভ্যো রাতমস্তু।।    – ঋগবেদ ১/১৬২/১১


অর্থাৎ, হে অশ্ব, অগ্নিতে পাক করবার সময়, তোমার গাত্র হতে যে রস বের হয় এবং যে অংশ শূলে আবদ্ধ থাকে তা যেন ভূমিতে পড়ে না থাকে এবং তৃণের সাথে মিশ্রিত না হয়। দেবতারা লালায়িত হয়েছেন, সমস্তই তাদের প্রদান করা হউক।


যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্বং যে ইমাহুঃ  সুরভির্নির্হরেতি।


যে চার্বতো মাংসভিক্ষামুপাসত উতো নেষামভিগুর্তির্ন ইন্বতু।।   – ঋগবেদ  ১/১৬২/১২


অর্থাৎ, যারা চারিদিক হতে অশ্বের পাক দর্শন করে, যারা বলে এর গন্ধ মনোহর হয়েছে, এখন নামাও এবং যারা মাংস ভিক্ষার জন্য অপেক্ষা করে, তাদের সংকল্প আমাদের সংকল্প হোক।


এভাবে ঘোড়াকে কেটে, রান্না করেও বলা হত ঘোড়া মরে নি, সে স্বর্গে দেবতাদের কাছে গিয়েছেঃ


ন বা উ এতন্ ম্রিয়সে ন রিষ্যসি দেবাং ইদেষি পথিভিঃ সুগেভিঃ    – ঋগবেদ    ১/১৬২/২১


অর্থাৎ, হে অশ্ব! তুমি মরছ না অথবা লোকে তোমার হিংসা করছে না, তুমি উত্তম পথে দেবতাগণের নিকট যাচ্ছ।


সব কিছু সমাপ্ত করে ঘোড়ার কাছে অর্থাৎ অশ্বমেধ থেকে ধন, পুত্র এবং শারীরিক বলের কামনা করা হতঃ


সুগব্যং তো বাজী স্বশ্ব্যং পুংসঃ পুত্রান্ উত বিশ্বাপুষং রয়িম্।


অনাগাস্ত্বং ত অদিতিঃ কৃণোতু ক্ষত্রং তো অশ্বা বনতাং হবিষ্মান্।।    – ঋগবেদ ১/১৬২/২২








অর্থাৎ, এ অশ্ব, আমাদের গো ও অশ্ববিশিষ্ট জগৎপোষক ধন প্রদান করুক, আমাদের পুরুষ অপত্য দান করুক। তেজস্বী অশ্ব আমাদের পাপ হতে বিরত করুক। হবির্ভূত অশ্ব আমাদের শারীরিক বল প্রদান করুক


অথ সংবৎসরে পূর্ণে তস্মিন্ প্রাপ্তে তুরংগমে।


সরয়্বাশ্চোত্তরে তীরে রাজ্ঞো যজ্ঞোহভ্যবর্তন।। ১


ঋষ্যশৃংগং পুরস্কৃত্য কর্ম চক্রুর্দ্বিজর্ষভাঃ।


অশ্বমেধে মহাযজ্ঞে রাজ্ঞোস্তস্য সুমহাত্মনঃ।। ২


নিযুক্তাস্তত্র পশাবস্তত্তদুদি্দশ্য দৈবতম্।


উরগা পক্ষিণশ্চৈব যথাশাস্ত্রং প্রচোদিতাঃ।।৩০


শামিত্রে তু হযস্তত্র তথা জলচরাশ্চ যে।


ঋষিভিঃ সর্বমেবৈতন্নিযুক্তং শাস্ত্রতস্তদা।। ৩১


পশুনাং ত্রিশতং তত্র যুপেষু নিয়তং তদা।


অশ্বরত্নোত্তমং তত্র রাজ্ঞো দশরথস্য চ।। ৩২


কৌসল্যা তং হয়ং তত্র পরিচর্য সমন্ততঃ।


কৃপাণৌর্বিশশাসৈনং ত্রিভিঃ পরময়া মুদা।। ৩৩


পত্রত্ত্রিণা তথা সার্ধং সুস্থিতেন চ চেতসা।


অবসদ্ রজনীমেকাং কৌসল্যা ধর্মকাম্যয়া।। ৩৪


হোতাধ্বর্যুস্তথোদ্গাতা হয়েন সমযোজয়ন্।


মহিষ্যা পরিবৃত্ত্যাথ বাবাতামপরাং তথা।। ৩৫


পতত্ত্রিণস্তস্য বপামুদ্ধৃত্য নিয়তেন্দ্রিয়ঃ।


ঋত্বিক্পরমসম্পন্নঃ শ্রপয়ামাস শাস্ত্রতঃ।। ৩৬


ধুমগন্ধং বপায়াস্তু জিঘ্রতি স্ম নরাধিপ।


যথাকালং যথান্যায়ং নির্ণুদন্ পাপমাত্মনঃ।। ৩৭


হয়স্য যানি চাংগানি তানি সর্বাণি ব্রাহ্মণাঃ।


অগ্নৌ প্রাপ্স্যন্তি বিধিবত্ সমস্তাঃ ষোড়শর্ত্বিজঃ।। ৩৮ 


(বালকাণ্ড, সর্গ ১৪)


তারপরে এক বছর সম্পন্ন হলে ঘোড়া ফিরে এল এবং সরযূ নদীর উত্তর তীরে রাজার যজ্ঞ আরম্ভ হল। (১) মহাত্মা রাজা (দশরথ)র  অশ্বমেধ নামক মহাযজ্ঞে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণগণ ঋষ্যশৃঙ্গ কে নিজেদের প্রধান বানিয়ে যজ্ঞকর্ম করতে লাগলেন। (২) … পশু, পক্ষী এবং সাপ, যাদের রাখার অনুমতি শাস্ত্র দেয় তাদের অধিষ্ঠাতা দেবতাদের নামে সেখানে রাখা হল। (৩০) ঋষিরা যজ্ঞে বধ করার জন্য ঘোড়া এবং জলচর প্রাণীদের যূপের সাথে বাধলেন। (৩১) সেই যজ্ঞে তিনশত পশু যূপের সাথে বাঁধা হয়েছিল।রাজা দশরথের সেই শ্রেষ্ঠ ঘোড়াকেও ( যে পৃথিবীর সর্বত্র ঘুরে এসেছিল) বাঁধা হয়েছিল। কৌশল্যা খুশিমনে অশ্বের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে  তলোয়ারের তিন কোপে তাকে হত্যা করেছিলেন। (৩৩) কৌশল্যা ঐ মৃত ঘোড়ার পাশে সাবধানচিত্ত হয়ে ধর্মের কামনা করে এক রাত অবস্থান করেছিলেন। (৩৪) তারপর হোতা, অধ্বর্যু এবং উদগাতা মহিষী (যে রানির রাজার সাথে রাজ্যাভিষেক হয়েছিল), পরিবৃত্তি (রাজার শূদ্র জাতীয় পত্নী) এবং বাবাতা (রাজার বৈশ্য জাতীয় পত্নী) এই তিন শ্রেণীর রানিদের ঘোড়ার সাথে যুক্ত করেছিলেন। (৩৫) জিতেন্দ্রিয় এবং শ্রৌতকর্মে কুশল ঋত্বিক (পুরোহিত) ঐ ঘোড়ার চর্বি বের করেছিল এবং শাস্ত্রানুসারে তা রান্না করেছিল। (৩৬) রাজা দশরথ সেই হবনকৃত চর্বির গন্ধ উপযুক্ত সময়ে বিধান অনুসারে শুঁকেছিলেন, যার ফলে তার পাপ দূর হয়ে গিয়েছিল। (৩৭) ষোল জন ঋত্বিক ব্রাহ্মণেরা মিলে ওই ঘোড়ার যত অঙ্গ ছিল, সব গুলোকে অগ্নিতে হবন করেছিলেন।


যজস্ব বাজিমেধেন বিধিবত্ দক্ষিণাবতা।। ১৫


অশ্বমেধো হি রাজেন্দ্র পাবনঃ সর্বপাপ্মনাম্।


তেনেষ্ট্বা ত্বং বিপাপ্মা বৈ ভবিতা নাত্র সংশয়ঃ।। ১৬  (অশ্বমেধিকপর্ব, অধ্যায় ৭১)


অর্থাৎ, ব্যাস বলেছেন, “ হে যুধিষ্ঠির, বিধি পূর্বক দক্ষিণা দিয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান কর। রাজেন্দ্র, অশ্বমেধ যজ্ঞ সমস্ত পাপ নাশ করে যজমানকে পবিত্র করে। এর অনুষ্ঠান করে তুমি পাপমুক্ত হবে, এতে সংশয় নেই।“


ততো নিযুক্তাঃ পশবো যথাশাস্ত্রং মনীষিভিঃ।


তং তং দেবং সমুদ্দিশ্য পক্ষিণঃ পশবশ্ব যে।।


ঋষভাঃ শাস্ত্রপঠিতাস্তথা জলচরাশ্চ যে।


সর্বাস্তানভ্যযুংজংস্তে তত্রাগ্নিচযকর্মণি।।


যুপেষু নিয়তা চাসীত্ পশুনাং ত্রিশতী তথা।


অশ্বরত্নোত্তরা যজ্ঞে কৌন্তেয়স্য মহাত্মনঃ।।   (অশ্বমেধিকপর্ব  ৮৮/৩৩-৩৫)


অর্থাৎ, এরপর মনিষী ঋত্বিকেরা শাস্ত্রোক্ত বিধি অনুসারে পশুদের নিযুক্ত করলেন। ভিন্নভিন্ন দেবতাদের উদ্দেশ্যে পশু, পাখি এবং শাস্ত্রকথিত বৃষভ এবং জলচর জন্তু-  এদের অগ্নিস্থাপন কার্যে যাজকেরা ব্যবহার করলেন। কুন্তীনন্দন মহাত্মা যুধিষ্ঠির এই যজ্ঞে যে সব যূপ দাঁড় করানো হয়েছিল, তাতে তিনশত পশু বাঁধা হয়েছিল। এসবের মধ্যে প্রধান সেই অশ্বরত্ন ছিল।


(মহাভারত, খণ্ড ৬, গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর, হিন্দি অনুবাদ সহিত, পৃষ্ঠা ৬২৯০)


শ্রপয়িত্বা পশুনন্যান্ বিধিবদ্ দ্বিজসত্তমাঃ।


তং তুরংগং যথাশাস্ত্রমালভন্ত দ্বিজাতয়ঃ।। ১


ততঃ সংশ্রপ্য তুরংগং বিধিবদ্ যাজকাস্তদা।


উপসংবেশয়ন্ রাজংস্ততস্তাং দ্রুপদাত্মজাম্।। ২


উদ্ধৃত্য তু বপাং তস্য যথাশাস্ত্রং দ্বিজাতয়ঃ।। ৩


শ্রপয়ামাসুরব্যগ্রা বিধিবদ্ ভরতর্ষভ।


তং বপাধুমগন্ধং তু ধর্মরাজঃ সহানুজৈঃ।। ৪


উপাজিঘ্রদ্ যথাশাস্ত্রং সর্বপাপাহং তদা।


শিষ্টান্যংগানি যান্যাসংস্তস্যাশ্বস্য নরাধিপ।। ৫


তান্যগ্নৌ জুহুবুর্ধীরাঃ সমস্তাঃ ষোড়শর্ত্বিজঃ।। ৬     ( অশ্বমেধিক পর্ব ৮৯ )


অর্থাৎ, সেই শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণেরা অন্যান্য পশুদের বিধিপূর্বক রান্না করে ওই অশ্বকেও শাস্ত্রীয় বিধি অনুসারে বধ করলেন। (১) রাজন, তারপর যাজকেরা বিধিপূর্বক অশ্বকে রান্না করে তার কাছে দ্রৌপদীকে শাস্ত্রোক্ত বিধি অনুসারে বসালেন। (২)  হে ভরতশ্রেষ্ঠ, তারপর ব্রাহ্মণেরা শান্তচিত্ত হয়ে সেই অশ্বের চর্বি বের করে তাকে বিধিপূর্বক রন্ধন করা শুরু করলেন। (৩) ভাইদের সাথে যুধিষ্ঠির শাস্ত্রোক্ত আজ্ঞা অনুসারে সমস্ত পাপনাশক সেই চর্বির ধোয়ার গন্ধ শুঁকেছিলেন। (৪) নরেশ্বর, ওই অশ্বের যে শেষ অঙ্গ ছিল তা দিয়ে শান্ত স্বভাবের সমস্ত ষোল জন ঋত্বিকেরা অগ্নিতে হোম করেছিলেন। (৫) (মহাভারত, ষষ্ঠ খণ্ড, গীতাপ্রেস, গোরখপুর, হিন্দি অনুবাদ সহিত, পৃষ্ঠা ৬২৯০-৬১৯১)


৩৯। যজ্ঞার্থং পশবঃ সৃষ্টাঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা।


যজ্ঞস্য ভূত্যৈ সর্বস্য তস্মাদ্‌যজ্ঞে বধোহবধঃ ॥


ব্রহ্মা নিজেই যজ্ঞের জন্য পশুগণকে সৃষ্টি করেছেন। যজ্ঞ সকলের উন্নতির কারণ ; সুতরাং, যজ্ঞে পশুবধ বধ নয়।


৪০। ওষধ্যঃ পশবো বৃক্ষাস্তির্যঞ্চঃ পক্ষিণস্তথা।


যজ্ঞার্থং নিধনং প্রাপ্তাঃ প্রাপ্নুবন্ত্ত্যচ্ছ্রিতীঃ পুনঃ ॥


ওষধি (যে গাছ ফল পাকলে মরে যায়), পশুগণ, বৃক্ষসমূহ, কচ্ছপাদি তির্যগ্‌জাতি ও পক্ষিগণ যজ্ঞের জন্য নিহত হলে পুনরায় উচ্চ জন্ম লাভ করে।


৪১। মধুপর্কে চ যজ্ঞে চ পিতৃদৈবতকর্মণি।


অত্রৈব পশবো হিংস্যা নান্যত্রেত্যব্রবীন্মনুঃ ॥


মধুপর্কে২, যজ্ঞে, পিতৃকার্যে ও দৈবকার্যেই শুধু পশুহত্যা বিহিত, অন্য স্থলে নয়—এই কথা মনু বলেছেন।


৪২। এবর্থেষু পশুন্‌ হিংসন্‌ বেদতত্ত্বার্থবিদ্‌ দ্বিজঃ।


আত্মানঞ্চ পশুঞ্চৈব গময়ত্যুত্তমাং গতিম্ ॥


এই সকল উপলক্ষ্যে পশুহত্যা করে বেদতত্ত্বজ্ঞ দ্বিজ নিজেকে ও (ঐ) পশুকে সদগতি লাভ করান।


৪৩। গৃহে গুরাবরণ্যে বা নিবসন্নাত্মবান্‌ দ্বিজঃ।


নাবেদবিহিতাং হিংসামাপদ্যপি সমাচরেৎ ॥


গৃহে, গুরুগৃহে বা বনে বাস করে প্রশস্তাত্মা দ্বিজ বেদনিষিদ্ধ হিংসা বিপদ্‌কালেও করবেন না।


৪৪। যা বেদবিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে।


অহিংসামেব তাং বিদ্যাদ্বেদাদ্ধর্মো হি নির্বভৌ॥


এই চরাচর জগতে যে হিংসা বেদবিহিত, তাকে অহিংসা বলেই জানবে ; কারণ, বেদ থেকে ধর্ম প্রকাশিত হয়েছিল।


মনুস্মৃতি ৫ অধ্যায় 


মনুস্মৃতির একটি শ্লোকের মধ্যেও বলা নেই যে বেদে পশুবলি নিষিদ্ধ বরং বলা হয়েছে বেদ নির্দেশিত পশুবলি অহিংসা

Thursday, October 17, 2024

"শ্রী শ্রী অশ্বিনীকুমারদ্বয় ব্রত", দুই চিকিৎসক দেবতার ইতিবৃত্ত

অশ্বিনী কুমারদ্বয়।সনাতন দেব পরম্পরার  মহত্তপূর্ণ দুইজন দেবতা।সনাতনের সবচেয়ে প্রাচীন শাস্ত্রে যে তেত্রিশ জন বা কোটী দেবতার উল্লেখ রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই দুই দেব।পবিত্র বেদের সংহিতা ভাগ থেকে বেদের ব্রাহ্মণভাগ,সুপ্রাচীন বৃহদ্দেবতা থেকে পুরান মহাপুরাণ উপপুরাণ, লোককথা সব জায়গায় রয়েছে এই দুইজন দেবের মাহাত্ম্য। 


অশ্বিনী কুমারদের পরিচয় দিতে গিয়ে পৃথিবীর প্রথম লিখিত সাহিত্য গ্রন্থ পবিত্র  ঋগ্বেদ জানাচ্ছে...

"ত্বষ্টা দুহিত্রে বহতু কৃণোতীতীদং বিশ্বংভূবংসমেতি।

যমস্য মাতা পর্যহ্যমানা মহো জায়া বিবস্বতে ননাস।।

অপাগৃহন্নমৃতাং মত্যের্ভ্যুঃ কৃত্বী সর্বন্নামদদুবিবস্বতে।

উতাশ্বিনাবভরদ্যওদাসীদজহাদু দ্বা মিথুনাসকন্যঃ।।[ঋগ্বেদ ১০/১৭/১-২]


ভাবার্থ-ত্বষ্টা দেব বিশ্বকর্মা নিজ কন্যা সুরণ্য সংজ্ঞা কে বিবস্বান সূর্যের সাথে বিবাহ দিলে যম দেবের জন্ম হয়।পরবর্তীতে সঙ্ঘা অদর্শন হইলে, তার মতো এক দিব্য নারীর সৃষ্টি করা হয় যাহা হতে অশ্বিনীকুমারদ্বয় দেবগণ জন্মগ্রহণ করেন।।


বৈদিক সাহিত্যের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থ বৃহদ্দেবতা। মহর্ষি শৌনক রচিত এই গ্রন্থের রচনা আনুমানিক ১৫০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ।অর্থাৎ আজকে থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে।  সুপ্রাচীন এই বৈদিক শাস্ত্রের মত প্রায়ই ঋগ্বেদের মতো একই। বৃহদ্দেবতাকার জানাচ্ছেন, 


"সরণ্যশ্চ বিবস্বস্তং বিদিত্বা হয়রূপিণম্। মৈথুনায়োপচক্রাম তাঞ্চ তত্রারূরোহ সঃ ॥ 

ততস্তয়োত্ত্ব বেগেন শুক্রং তদপতত্ত্ববি। 

উপাজিমুচ্চ সা তথা তদুক্ৰং গর্ভকামায়া ৷৷ আঘাতমাত্রাচ্ছক্রান্তু কুমারৌ সংবভূবতুঃ। 

নাসত্যশ্চৈব দশ্চ যৌ খ্যাতাবশ্বিনাবিতি ৷।

[বৃহদ্দেবতাঃ৭.১-৬]


অন্যদিকে মৎস,কূর্ম,বরাহ,বায়ু,স্কন্ধ, ভাগবত, মহাভারত ও রামায়ণ একই সুরে বলছে,


ততঃ স ভগবান্ গত্বা ভুলোকমমরাধিপঃ।

কাময়ামাস কামাৰ্ত্তো মুখ এব দিবাকরঃ।

অশ্বরূপেণ মহতা তেজসা চ সমাবৃতঃ।

সংজ্ঞা চ মনসা ক্ষোভম গমদ্ভয়বিহ্বলা ৷৷

নাসাপুটাভ্যামুৎসৃষ্টং পরো’য়মিতি শঙ্কয়া ।

তদ্ৰেতসম্ভৃতো জাতাবশ্বিনাবিতি নিশ্চিতম্ ৷৷

দত্রৌ দ্রুতত্বাৎ সঞ্জাতৌ নাসত্যৌনাসিকাগ্রতঃ।

[ মৎস্য পু. ১১.৩৪-৩৬]


এই যে এতোগুলো শাস্ত্রে তাঁদের পরিচয় দিচ্ছে। এই পরিচয়ের সারসংক্ষেপ হলো, সূর্যদেব ও সঙ্ঘার অশ্ব রুপকালে এই দুই দেবতার জন্ম হয়।পার্থক্য শুধু সংঙ্ঘা দেবীকে কোথাও সূরণ্য ডাকা হয়েছে। 

 

আমাদের সমাজে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ অশ্বিনী কুমার দ্বয় দেবতাকে -" আশ্বিন কুমারী" বলে জানেন। যা নিতান্তই ভুল।শুধু অন্যরা কেন পুরোহিত পণ্ডিত সমাজের অধিকাংশ লোক ও আমরা এই দুই দেবতার আসল নামই জানিনা। এই দুই দেবতার একজন হলেন  - নাসত্য, অন্যজনের নাম দস্র।

" দসৌ স্ত্রতত্বাৎ সঞ্জাতৌ নাসতৌ নাসিকাগ্রতঃ।।

[মৎস পুরান -১১/৩৬][বায়ু পুরান-৮৪/২৩-২৪]



তবে খুবই আশ্চর্যের কথা এঁরা দুজন দেবতার সন্তান হয়েও তাঁরা সমাজে যজ্ঞের ভাগ পেতনা। পেতনা সোমরস। দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও ছিলোনা তাঁদের।  খোদ মহাভারতের মত গ্রন্থেই তাদের একবার শুদ্র দেবতা বলে ডাকা হয়েছে। পরবর্তী মহর্ষি চ্যাবনকেই দেখতে পাচ্ছি এই দুই দেবতাকে যজ্ঞের ভাগ ও সোমরস দিয়ে দেবত্বে প্রতিষ্ঠা করতে।

- অশ্বিনৌ তু স্মৃতৌ শূদ্রৌ তপস্যূগ্রে সমাস্থিতৌ। 

 [মহাভারত-১২.২০২.২৩]


অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে দেব বৈদ্য বা চিকিৎসক বলা হয়।

আমাদের ভারতবর্ষে প্রাচীন কাল থেকে মধ্যকাল পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ব্রাহ্মণরা বৈদ্য বা চিকিৎসা করত তাঁদের প্রচন্ডরকম সামাজিক বৈষম্যের শিকার হতেন।সমাজে তাঁদের সম্মানের চোখে দেখা হতো না। স্মৃতিশাস্ত্রে এমন ভুঁড়ি ভুঁড়ি উদাহারন দেওয়া যায় যেখানে বৈদ্য ও চিকিৎসকদের নিচু করে দেখানো হয়েছে সামাজিক ভাবে।আমরা এই সামাজিক অবহেলারই পূর্ব প্রতিরূপ খুঁজে পাই অশ্বিনীকুমার এবং চ্যবন ঋষির ঘঠনায়। যেখানে সোমযজ্ঞে ইন্দ্রের সমান মর্যাদা দেওয়া হচ্ছেনা এই দুই দেবকে।পরবর্তীতে তাঁরা পূর্ন দেবতার মর্যাদা হয়তো পেয়েছেন। বেদের ব্রাহ্মণ ভাগেও আমরা এই দুই দেবকে  চিকিৎসক হিসেবে দেখতে পাই.

-অশ্বিনৌ বৈ দেবানাং ভিষজৌ।।

[ঐতেরেয় ব্রাম্মণ-১ম খন্ড -১/১/১৮]


শুধু তাই নয়,পাঠক জেনে অবাক হবেন পৃথিবীর অনেক বড় বড় সভ্যতা যখন শুধুমাত্র লতাপাতা কিংবা তাবিজ-কবজ দিয়ে চিকিৎসা করাতো, তখন ভারতবর্ষের আর্যরা কৃত্রিম হাত পা লাগানোর চর্চ্চা করছে। অবাস্তব নয়, স্বয়ং ঋগ্বেদেই আমরা  অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে সর্বপ্রথম কৃত্রিম পা সংযোজন কারী অর্থোপেডিক্স সার্জারী চিকিৎসক হিসেবে দেখতে পাচ্ছি, যা বিশেষজ্ঞ মহলে বহুল আলোচিত।


ঋগ্বেদের সময়ে খেল নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর কুলপুরোহিত ছিলেন অগস্ত্য। খেলের স্ত্রীর নাম ছিল বিশপলা। কোনো সময় এক যুদ্ধকালে বিশপলার একটি পা কাটা যায়। তিনি নিজেই যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন কিনা, সেটা বোঝা যায় না। বিষ্পলার পায়ের জন্য অগস্ত্য ঋষি অশ্বিনীকুমারদের স্তুতি করেন। তারপর দেখা যায় অশ্বিনীকুমারেরা রাতের কালে এসে বিশ্বলার পা-টাকে লোহার পায়ে সংযুক্ত করে দিলেন।

-" সদ্যো জঙ্গামায়সীং বিশাপলায়ে।ধনেহিতৈ সর্তবে প্রতৈধতম্।।

[ঋগ্বেদ -১/১১৬/৫-২৪]


মহাভারত কালীন সময়েও, দুই দেবতার চেহারা  হিরন্ময় সূর্যের মতো উজ্জ্বল এব অল্পবয়সী তরুণের মতো ভীষণ সুন্দর বলে লোকে জানতো।তাই অশ্বিনীকুমারদের সৌন্দর্য্যের ব্যাপারটা ইতিহাস পুরাণেও বিখ্যাত হয়ে আছে। মহাভারতে দুই অশ্বিনীকুমারের তেজে পান্ডুর পত্নী মাদ্রীর গর্ভে নকুল-সহদেবের জন্ম হয়। এই যমজ ভাইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল-তাঁরা অসাধারণ সুন্দর   দেখতে -রূপেণাপ্রতিমৌ ভুবি। তাঁদের জন্মের সময় আকাশবাণী হল- অসামান্য রূপ, উৎসাহ এবং শৌর্য্যাদিগুণযুক্ত এই দুটি বালক যথাসময়ে আপন রূপ এবং তেজে দুই অশ্বিনীকুমারকেও ছাড়িয়ে যাবে- রূপসত্ত্বগুণোপেতাবেতাবত্যশ্বিনাবিতি। ভাসতস্তেজসাত্যর্থং রূপদ্রবিণসম্পদা ।। 

[ মহভারত- ১.১১৮.১৭-১৯;  মৎস্য পৃ. ৪৬.১০; ৫০.৫০]


এখনো ভারতবর্ষের মায়ের এই দুই দেবতার মতো সুন্দর সন্তান কামনায় পুজো করেন। আর কামনা করেন যাতে এই দেবতাদের দ্বারাই তাঁর সন্তানেরা সব রোগ থেকে মুক্ত থাকে।


এছাড়া যদুবংশ ধ্বংস হবার কিছুদিন আগে ইন্দ্র প্রভৃতি বিশিষ্ট দেবতারা দ্বারকায় এসে কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেন এবং কৃষ্ণকে তাঁর নশ্বর দেহ ত্যাগ করে বৈকুণ্ঠলোকে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। এই সময় অন্যান্য দেবতাদের সঙ্গে অশ্বিনীকুমাররাও কৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। 

[ভাগবত পু. ১১.৬.২]


অন্যদিকে, রাবনের সাথে দেবতাদের যুদ্ধ,বৃষপর্বা নামের দৈত্যের যুদ্ধের দিন ও আমরা এই দুই দেবতার প্রবল পরাক্রম দেখতে পাচ্ছি।  বৈদ্য  বা চিকিৎসক হলেই যে তিনি দূর্বল হবেন বা যুদ্ধ করতে পারেন না এমন ধারণা মিথ্যা করে দিয়ে এই অশ্বিনীকুমার রা সেদিন তাঁদের পরাক্রম দিয়ে সম্পূর্ণ দেব সমাজকেই অবাক করেছিলো।


কথিত আছে, সূর্য ও সঙ্ঘা শিবতেজ  সম্পন্ন সবচেয়ে সুন্দর রুপের পুত্র লাভার্থে দেবী ভগবতীর কাছে গেলে ভগবতী তাঁদের  দুইমুষ্টি তন্ডুল বা চাউল দিয়ে বলেন,আশ্বিন নবরাত্রি শেষে আশ্বিনের শেষদিনে তাঁরা যেনো এই চাউল রান্না করে কার্ত্তিকের প্রথমদিনে তাঁ ভক্ষন করে।তবেই তাঁদের মনের আশা পূর্ণ হবে।


পরবর্তীতে দেবীর কথামত এই নিয়ম পালন করলে অশ্বরুপে অশ্বিনীকুমার দ্বয়ের জন্ম হয়।এখোনো সনাতন সমাজের মায়েরা সন্তান লাভ বা সন্তানের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত করেন।মা সন্তানের আশায় বা সন্তানের জন্য যেকোনো বর প্রার্থনা করলে শীঘ্রই তা পূরণ হয়।মায়েরা বলেন,

"আশ্বিনে রাধে কার্তিকে খায়,

যে বর মাঁগে, সে বর পায়"


অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের ধ্যান... 


- ওঁ আশ্বিনেয়ৌ মহাভাগৌ বন্ধ্যা-পুত্রবর প্রদৌ। দ্বিভুজৌ পদ্মনয়নৌ শরদিন্দু সমগ্রতৌ। সূর্য্যপুত্রৌ স্বৰ্গবৈদ্যৈ প্রমেয়ৈ কমলাননৌ । ধায়ত্তৌ নাসিকা জাতৌ রোগ-শোক নিবারকৌ।।


সজলান্ন নিবেদন মন্ত্রঃ 

"ওঁ এতানি ধাতবঃ পাত্রস্থ সজল সোপকরণ সিদ্ধান্নাণি অশ্বিনী কুমারাভ্যাং নমঃ ।।


প্রণাম - ওঁ জয়ো রবিনন্দনৈব কবস্থশ্চন্দ্র শেখর।নাসাবাভ্য মশ্বাভ্যাং স্বর্গ-বৈদ্যভাং নমোনমঃ ।। 


তথ্যসূত্রঃ

১.ঋগ্বেদ -রামকৃষ্ণ মিশন অনুবাদিত।পশ্চিমবঙ্গ।

২.ঐতৈরেয় ব্রাহ্মণ-রামকৃষ্ণমিশন অনুবাদিত।বেলুড়মঠ,পশ্চিমবঙ্গ।

৩.বৃহদ্দেবতা-অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়। 

৪.মৎসপুরান-পঞ্চানন তর্করত্ন -নবভারত পাবলিশার্স। 

৫.বায়ু,কূর্ম,বরাহ, স্কন্দ পুরান-পঞ্চাননতর্করত্ন।

৬.মহাভারত -হরিসিদ্ধান্ত বাগীশ ভট্টাচার্য।

Friday, May 3, 2024

শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন। 

চলুন দেখে নেই বাস্তবে কি বলছে বৈষ্ণবদের স্বাত্তিক পুরাণ?

হ্যাঁ উনি রাম নাম করেন। তবে এর একটি কারণ রয়েছে। নারদ পুরান কি বলছে দেখুন। 

ध्याये न किंचिद्गोविंदनमस्ये ह न किंचन ।।

किंतु नास्तिकजंतूनां प्रवृत्त्यर्थमिदं मया ।। ७९-२00 ।।


दर्शनीयं हरे चैतदन्यथा पापकारिणः ।।

तस्माल्लोकोपकारार्थमिदं सर्वं कृतं मया ।। ७९-२0१ ।।


Chapter 79, verse 200-201. “O Govinda, I do not meditate on anything. I do not bow to anybody. But in order to inspire the unbelieving animal beings, (Pasu) etc. this is shown to them. O Hari, otherwise, they will remain sinners. Hence, it was to render help to the world that all these activities have been performed by me."

মানে পশুদের ( আমাদের কথা বলা হচ্ছে) মাঝে যারা অবিশ্বাসী তাদেরকে দেখানোর জন্য আমি এই কাজ করে থাকি । নাহলে এরা পাপী থেকে যাবে। মানে শিব তা ইচ্ছা করেই করেন আমাদের জন্য। 

একই কথা আবার পদ্ম পুরান বলছেঃ 


शंकर उवाच-

ध्याये न किंचिद्गोविंद न नमस्येह किंचन २४७।

नोपास्ये कंचन हरे न जपिष्येह किंचन ।

किंतु नास्तिकजंतूनां प्रवृत्त्यर्थमिदं मया २४८।

दर्शनीयं हरे ते स्युरन्यथा पापकारिणः ।

तस्माल्लोकोपकारार्थमिदं सर्वं कृतं मया २४९।

ओमित्युक्त्वा हरिरथ तं नत्वा समतिष्ठत ।

अथ ते गौतमगृहं प्राप्ता देवगणर्षयः २५०।

सर्वे पूजामथो चक्रुर्देवदेवे पिनाकिने ।

देवो हनूमता सार्द्धं गायन्नास्ते रघूत्तम २५१।

पञ्चाक्षरीं महाविद्यां सर्व एव तदा जपन् ।

हनूमत्करमालंब्य देव्यभ्याशं गतो हरः २५२।

एकशय्यासमासीनौ तावुभौ देवदंपती ।

गायन्नास्ते स हनुमांस्तुंबुरुर्नारदस्तथा २५३।

नानाविधिविलासांश्च चकार परमेश्वरः ।

आहूय पार्वतीमीश इदं वाक्यमुवाच ह २५४।


Śaṅkara said: O Viṣṇu, I am not meditating upon anyone. I am not saluting anything. O Viṣṇu, I am not waiting upon anyone. I shall not mutter any prayer here; but O Viṣṇu, I have to exhibit (like) this for leading the unbelievers to activity. Otherwise they will be sinners. Therefore, to oblige the world, I have done all this.

Padma Purana,  Section 5 - Pātāla-Khaṇḍa, 247-254



Saturday, April 27, 2024

সমুদ্রপুত্র রাজা গৌড় গোবিন্দ ও শ্রীহট্ট

 সিলেটের  গৌড় গোবিন্দ এবং আজকের  শাহজালাল বিভিন্ন তথ্যপঞ্জী এবং পরবর্তিতে আবিষ্কৃত তাম্রফলক ও শিলালিপি থেকে সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কের জানা যায়। সিলেটের নামের অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। সেগুলা হলো- সিরিহট্ট, শিলহট বা শ্রীহট্ট। শ্রীঅর্থে- লাবন্য, তেজ, বীর্য ও জ্যোতি বোঝায়, অপর অর্থে লক্ষী। সিলেটের অন্যতম গৌরব মন্ডীত প্রাক্তন নাম শ্রীভুমি।ভারতের ভূস্বর্গ কাশ্মিরের সৌন্দর্যের কারনে এর রাজধানীর নাম রাখা হয়েছিলো শ্রীনগর। অনুরুপ ভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের নগরী সিলেটশ্রীভুমিনামে পৃথিবীর কাছে পুর্বে পরিচিতি লাভ করেছিলো। শ্রীহট্ট তিনদিক থেকে ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত। উত্তরে মেঘালয়, পূর্বে আসামের কাছার জেলা এবং দক্ষিনে ত্রিপুরা রাজ্য। শ্রীহট্টের নিম্নাঞ্চল অসমতল ভুমি এক সময় সাগরের অংশ ছিল।অনেক হাওর, বিল এবং নৌঘাটির অস্তিত্ব এ সাক্ষ্য বহন করে। হাওরের উৎপত্তি সায়র বা সাগরথেকে। সপ্তম শতাব্দীতে চীনা তীর্থ যাত্রি হিউয়েন সাং ভারতভ্রমনের সময় সাগর তীরে অবস্তিতএলাকাটিকে শিলিচট্টল বলে উল্লেখ করেছেন। এই শিলিচট্টলই শ্রীহট্ট।শ্রীহট্টের অধিকাংশই জলাভুমি। বিল,নদী, হাওর দ্বারা বেস্টিত। প্রাচীনশ্রীহট্ট প্রধান তিনটি খন্ডে বিভক্ত ছিল। তিনটি খন্ড রাজ্য হল- গৌড় লাউড়ও জয়ন্তিয়া। এ তিনটি রাজ্য ছাড়াও তরফ, ইটা, ও প্রতাপগর নামে ছোট ছোটরাজ্য ছিল যা পরবর্তীতে গৌড়রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়।

১)গৌড়ঃ বর্তমান সিলেট শহরসহ উত্তর সিলেট এবং পুর্ব ও দক্ষিণে অনেকদূর জায়গা নিয়ে গৌড় রাজ্য ছিল।

২) লাউড়ঃ গৌড়ের পশ্চিমে অর্থাৎ সিলেট জেলার পশ্চিমাংশ জুড়ে লাউড় রাজ্য ছিল। লাউড় রাজ্য ময়মনসিংহ ও হবিগঞ্জ জেলার কিছুঅংশ এবং সুনামগঞ্জ জেলার কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত।

৩) জয়ন্তীয়াঃ এই রাজ্য সিলেটের উত্তর-পুর্বাংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল।দক্ষিণে সুরমা নদী ও দক্ষিণ-পুর্বাংশের ত্রিপুরা রাজ্যের জয়ন্তীয়া রাজ্যের সীমারেখা অর্ন্তভুক্ত ছিল। সমগ্র পার্বত্য জয়ন্তীয়া জেলা এই রাজ্যের অর্ন্তগত।তরফ, ইটা এবং প্রতাপনগর রাজ্য পরবর্তীতে গৌড় রাজ্যের অংশ বলে বিবেচিত হয়েছিল।প্রাচীন সিলেট নগরির উত্তর এবং পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্তের অনেক অংশ জুড়ে গৌড় রাজ্য বিস্তৃতছিল ।ঐতিহাসিক সুত্র মতে, সমুদ্রেরসন্তান ছিলেন রাজা গৌড় গোবিন্দ।

 

ত্রিপুরা রাজবংশীয় কোন এক রাজার শত রাণী ছিল । সমুদ্রদেব রাজার কোন এক রাণীর সঙ্গে রাজার মুর্তি রুপে মিলিত হন। এক পর্যায়ে রাণী গর্ভবতী হলে একথা মুনি দ্বারা জানাজানি হলে রাজা সেই রাণীকে নির্বাসিত করেন। রাণীর এইঅসহায় অবস্থা দেখে সমুদ্র তখন আবির্ভূত  হলেন। রাণীকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,তাঁর ইচ্ছায় সমুদ্রের জল সরে যতদূর চর পড়বে, নবজাত শিশু ততদুর পর্যন্ত রাজ্যঅধিকার করতে পারবে।উক্ত রাজ্যেরসকল বাসিন্দা বাণিজ্য দ্বারা অন্য দেশ থেকে প্রচুর ধনবান হবে এবং উক্তরাজ্যে ধনের অভাব কখনো হবে না (এজন্যই হয়তো সিলেটিরা সব লন্ডনী এবংটাকা-পয়সাওয়ালা) পরে সমুদ্র সরে যাওয়ায় ভরাট হওয়া স্থানটি গৌড়রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল। একসময় রাণী সুন্দর এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। এই নির্বাসিতা রাণীর পুত্রই রাজা গোবিন্দ। গৌড় রাজ্য রাজা গৌড়গোবিন্দের শাসনাধীন ছিল। গোবিন্দ কোন নির্দিষ্ট রাজার নাম নয়। গৌড়রাজ্যের রাজারা গোবিন্দ উপাধিতে পরিচিত ছিলেন।

গৌড় গোবিন্দের চরিত্রঃ দেবতার ঔরসে জন্ম নেয়া গৌড় অত্যান্ত ধর্মভীরু এবং ন্যায় পরায়ণ শাষক ছিলেন। তিনি রাজ্যের সকল পুরুষদেরঅন্যরাজ্যে ব্যবসা এবং চাকরীর সুযোগকরে দিতেন নিজ রাজ্যের অর্থনৈতিকধারা সুদৃঢ় করার জন্য।  কথিত আছে একদা গৌড় তীর্থ ভ্রমনে গিয়ে বর্তমান বগুড়া জেলায় অবস্থিত পরশুরাম অবতারের অন্যতম জিয়ন কুয়ার সন্ধান স্বপ্নে দর্শন পান,যা ঈঁশা-খাঁ আক্রমণের ভয়ে গো-রক্ত ফেলে নষ্ট করে দিয়েছিলেন।সেখানে অবস্থানরত দুইজন সত্যদ্রষ্টা সাধুকে নিজ রাজ্যে এনে প্রধান উপদেষ্টাজন করে।এইসাধুরাই মুলত প্রাক্তন শ্রী হট্টের উন্নয়ন এবং গৌড়ের ধ্বংসের কারন। এরা প্রায়সই গৌড়কে ভুল পথে পরিচালিত করতেন।বেদ মন্ত্রদ্বারা পোষ্য একাধিক বাজ পাখি রাজ্যের সর্বত্র উড়েবেড়াতো প্রজাদের অবস্থা দর্শনের জন্য।এর মধ্যে একবার গৌড় রাজ্যে খড়াদেখা দেয়,উপদেষ্টা সাধুদের পরামর্শে গৌড় সারা রাজ্যে গো-হত্যা মৃত্যুতুল্য শমন জারী করে।এরই মধ্যেউক্ত সিলেটের বর্তমান যেটি জালালাবাদ পাহাড়,সেই পাহাড়ের এক অগ্যাত স্থানে এক যবন, পুত্রপ্রাপ্তির শোকরানা স্বরুপ গোপনে গরু জবাই করে।গৌড়ের বাজপাখি তা দেখে এক টুকরা গো মাংস মুখে নিয়ে গৌড়ের কাছে নিয়ে আসে।ক্রোধান্বিত গৌড় সৈনিক পাঠিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে ধরে আনে এবং দেশদ্রোহী (যেহেতু রাজ্যের খড়া দুরীকরনে গো-হত্যা নিষিদ্ধ হয়েছিলো) আখ্যা দিয়ে তাকে হত্যার নির্দেশ দেয়।কিন্তু উপদেষ্টা সাধুরা গৌড়কে জানায় উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা না করে তার সদ্যজাত সন্তানকে হত্যা করলে সবচেয়ে ভাল হবে।অত:পর গৌড় তাইকরে উক্ত ব্যক্তিকে রাজ্য থেকে  বহিস্কার করে।উক্তব্যক্তি তখন বড়পীড় আব্দুলকাদের জিলানীর নিকট আশ্রয় নেয় এবং গৌড়ের রাজ্য সম্পুর্ন ইসলাম বিরোধী সে বিষয়ে বড়পীরকে অবহিত করে।বড়পীর তখন শাহজালাল কে তুরস্ক থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দ্যেশে গৌড়ের রাজ্যে প্রেরন করে এবং এখান থেকেই ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়।

 

যুদ্ধের কৌশল নির্ধারনে ভুলঃ শাহজালাল সুরমা পাড়ি দেবার আগেই সাধুরা ধ্যানবলে তা জানতে পেরে গৌড়কে অবহিত করে।গৌড় তখন সুরমার চারদিকে সৈন্যদের প্রেরন করে এক দুর্গ গড়ে তোলে। একই সাথে শাহজালালের জাহাজ ধ্বংস করতে বৈদিক গাণিতিক সুত্র ব্যবহার করে উপদেষ্টা সাধুরা প্রাসাদের মাথায় কয়েকটি বিশালাকার আয়না স্থাপনকরে যার মধ্যে সুর্যের আলোকেপ্রতিফলিত করে জাহাযে আগুন ধরিয়ে দেয়া যেত( অর্কিমিডিস এর সুত্রজানা আছে তো? পদার্থ বিজ্ঞ্যানে লেন্সের প্রতিফলনে এর ধারনা পাওয়া যাবে)

শাহজালালকে যুদ্ধে পরাস্থ করতে ক্রোধান্ধ সাধুরা ২য় মারাত্বক ভুল কৌশল অবলম্বন করেছিলো যা শাহজালালকে শুধু নয়,সমস্ত যুদ্ধের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক এবং গৌড়ের গৌরবকে অনেকটাই হীন করে দিয়েছিলো, তা হলো শত শত উলঙ্গ নারী,যারা সৈন্যদের প্রথম সারিতে ছিলো।কারন উপদেষ্টাধী জানতেন শাহজালাল বা তার কোন সাহাবীই উলঙ্গ শরীরের দিকে তাকাবে না।সেই সুযোগে তাদের হত্যা করা সহজ হবে।রাজা গৌড় রাজ্যের মানুষদের রক্ষায় সব কিছু নিরবে মেনে নেন এবং যুদ্ধেরজন্য প্রস্তুত নেন। প্রকৃত যুদ্ধ শাহজালাল ভারতের পূর্বাংশ দিয়ে সিলেটের দিকে যাত্রা শুরু করেন। পথে  চাশনী পীরসহ আরও বেশ কয়েকজন দরবেশ তার সফরসঙ্গী হন। দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া তাঁর আধ্যাত্নিক ক্ষমতার প্রমান পেয়ে এক জোড়া পায়রা উপহারদেন। পায়রা গুলির বংশধররা স্থানীয়ভাবে 'জালালি কবুতর' নামে পরিচিত ।

শ্রীভূমি (সিলেট)পর্যন্ত পৌঁছাতে শাহজালাল(রাঃ) এর শিষ্য সঙ্গীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮০ জন। উক্ত ৩৮০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যোদ্ধারা হলেন শাহপরাণ,  খল্লা শাহ  কাশেম শাহ।কিন্তু সুরমা পাড়ি দেবার সময়প্রতিফলিত আলোকরশ্মি এসে একটিবহরের ২০ জন সাহাবীকেই মেরেফেলে। এতে প্রধান প্রধান কিছু আউলিয়া মারা যান।ক্রোধে শাহ পরানমামা  শাহজালালের কাছে গৌড়কে হত্যার অনুমতি চাইলে মামা বাধা দিয়ে বলেন এতে গৌড়ের কোন দোষ নেই।সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য নয়,রাজ্যের মানুষকে বাঁচানোর জন্য ভুলভাবে যুদ্ধ করছে।  শাহজালাল দ্রুত নৌবহর ঘুড়িয়ে সন্ধার পর যাত্রা করে ভোর রাতে সিলেটে প্রবেশ করেন। এইদিকে চারদিকে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে, সৈন্যদের চোখ ফাকি দিয়ে জেলের ভেক ধারন করে শাহজালাল জালালাবাদ পাহাড়ে গিয়ে অবস্থান নেন এবং ফযরের আযান দেন। এই সময় নামায শেষ করে কিছু সাহাবী তীক্ষ্ণ তীর শলাকা নিক্ষেপ করে প্রাসদের উপরে রাখা বিশালাকার আয়না গুলো ধ্বংস করে দেয়(মুসলিমরা দাবী করে আযানের শব্দে প্রাসাদ কেঁপে উঠেছিলো এবং আয়না ভেংগে গিয়েছিলো, কিন্তু তা সঠিক নয়।বিশালাকার আয়না বিশাল কোন বস্তু দূর থেকে নিক্ষেপ করে ভাংগা যায় না।কাঁচের কোন বস্তুকে সম্পুর্ণ ধ্বংস করতে হলে চিকন কিছু দিয়ে যত দূর থেকে নিক্ষেপ করবেন,ততোই দ্রুত এর মধ্যকার বন্ধন ভেংগে কাঁচ দ্রুত চুরমাচুর হয়ে যাবে, এটাই বিজ্ঞান বলে)এরপরেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।১ম যুদ্ধে উলজ্ঞ নারী দেখে  শাহজালাল সবাইকে চোখ বন্ধ করে যুদ্ধ করার আদেশ দেন এবং সবাই তা করে। শাহজালাল সৈনিকদের শেষ প্রান্তে ছিলেন। ১ম সারিতে থাকা অর্ধেক সৈন্যই যুদ্ধে মারা যায়। অত্যান্ত কৌশলে এবং চতুরতার সাথে তিনি মাত্র ১৫০ জন সৈন্য নিয়ে এই যুদ্ধে জয়লাভ করলেও খল্লাশাহ, কাশেম শাহ সহ সুলতানশাহের মত অনেক সাহাবীদের হারাণ।ইতিমধ্যেই  শাহজালাল পায়রা মারফত খবর পাঠিয়ে আরো আওলাদ নিয়ে আসতে বড়পীরকে বিশেষ ভাবেঅনুরোধ করলে ঝাঁকেঝাঁকে পীর,মুর্শিদি আসতে থাকে।চারদিক থেকে সিলেটে মুসলীম আওলাদরা এসে যুদ্ধে যোগদান করেন।সেনাদের হত্যা,রশদ ভেংগে দেয়া,খাদ্যে বিষ মিশিয়ে হত্যা,চোরাগুপ্তা হামলা প্রভৃতি দুই দলই সমানে চালালো।এরমধ্যে রাজ্যে অবস্থানরত অন্যন্য যবন যুবকরাও মিলে গৌড়ের বিরুদ্ধে দূর্গের ভিতরই যুদ্ধ শুরু করে দেয়ায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। সৈনিকদের মধ্যে যারা ভিন্ন ধর্মের ছিলো এবং হিন্দু ছিলো তাদের মুসলিম সৈন্য দলরা হত্যা করা শুরু করলো।এমতাবস্থায় গৌড় সম্পুর্ণ দিশেহারা হয়ে যান।কারন দেশ রক্ষার যুদ্ধের বদলে ধর্ম যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।তিনি দ্রুত বাজ পাখি মারফত পাশ্ববর্তী রাজ্যে সাহায্যের চিঠি পাঠালেও প্রত্যেকটি বাজকে তীর বিদ্ধ করে মারা হয়।এছাড়াও গৌড়ের নিজস্ব ১২জন দূতকে হত্যা করা হয়।রাজ্যে চরম অস্থিতিশীলতা তৈরী হয়।সমস্ত মুসলিম প্রজারা এবার যার যার অবস্থান থেকেই বিদ্রোহ শুরু করে দেয়।সেই যুদ্ধে শাহজালালের বাহিনী তীব্র থেকেও তীব্রতর হয়ে ওঠে।তারা ঐরাজ্যে অবস্থানরত মুসাফির,অন্যরাজ্যের দুত এবং ভিনদেশী ব্যবসায়ী ও পরিব্রাজক ছাড়া সকলকেই হত্যা শুরু করে।যুদ্ধের কৌশলেও এবার পরিবর্তন আনেন।এবার সরাসরি সৈনিকের বক্ষে তীর নিক্ষেপ নাকরে সৈনিকের বাহনে তীর নিক্ষপের বুহ্য সাজালেন।এতে খুব সহজেই অল্পসময়েই অনেক সৈন্য মরতে লাগলো।ক্রমেই  গৌড়ের শক্তি হ্রাস পাচ্ছিলো।গৌড়ের বিশ্বাসী ২০ দেহরক্ষীর মধ্যে কালা মিয়া নামের এক মুসলিম ছিলো।শেষ পর্যন্ত সেই জীবিত ছিলো।প্রভুভক্ত কালা মিয়া  গৌড়কে ছদ্মবেশ ধরিয়ে নিজের ভাই এবং গৌড়ের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বানিয়ে রাতে মহল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পরই শাহপরাণ মহল আক্রমন করেন এবং একজন মুসলিম ভৃত্য শাহপরাণকে কালামিয়ার ব্যাপারে বলে দেয়।ক্ষিপ্ত শাহপরাণ উক্ত ভৃত্যকে নিয়ে খুঁজতে বের হলেন।ঐদিকে কালা মিয়া  গৌড়কে নিরাপদে পেঁচাগড়ে পৌছে দিয়ে ফিরে আসার সময়  শাহ পরাণের হাতে ধরা পরেন।কালা মিয়া সালাম করার ভংগিতে ঐ ভৃত্যকে হত্যা করেন এই ভেবে যে যদি সে শাহ-পরাণকে পেঁচাগড়ের ঠিকানা বলে দেয় তাহলে  গৌড়কে আর বাঁচানো যাবে না। ভৃত্যকে খুন করতে দেখে  শাহপরাণ কালামিয়াকেও বর্শা দিয়ে হত্যা করেন।

গৌড়ের অনুপস্থিতি  শাহজালালের বিজয় নির্দেশ করে।সমগ্র সিলেটতিনি নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসেন।তবে যে পরিব্রাজক এই যুদ্ধের কাহানী ঐ স্থানে থেকে লিখেছেন,একই সময় আরো এক ব্যবসায়ী যুদ্ধের বিভিন্ন বার্তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তারমতে, গৌড়ের সরোবরে পরশুরামের জিয়ন কুয়াহতে আনা স্বর্ণের কৈ এবং মাগুর মাছ ছিলো। যা যুদ্ধের পর প্রথম শাহপরাণ দেখতে পান এবং মামা শাহজালালকে উপহার স্বরুপ প্রদান করেন। এছাড়াও তার ভাষ্যমতে কালামিয়াকে বর্তমান হবিগঞ্জজেলা বাজারে ইসলাম বিরোধী আখ্যা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়।তার দেহ যখন কুমীরকে দিয়ে খাওয়ানোর জন্য সুরমা নদীতে নিয়ে ফেলা হয়,তখন  গৌড় গোবিন্দের ১মযুদ্ধে নিহত শাহজালালের প্রধান সেনাপতি  খল্লাশাহর ছিন্ন মস্তক উদ্ধার করে সিলেটে তার ১ম মাজার একটি জৈন মন্দির ভেংগে করা হয়।

শেষমেশ  গৌড় গোবিন্দের কি হয়েছিলো তা জানা যায় নি। শাহজালাল সিলেটে দীর্ঘ ৩০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। গৌড় গোবিন্দের মাথার বিনিময়ে গ্রাম ঘোষনা করা হয়েছিলো।তথাপি তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।সেই সময় শ্রীহট্ট ছেড়ে অনেক হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈনরা পালিয়ে যান।পরবর্তিতে ঘোষনা করা হয় গৌড় গোবিন্দকে হত্যা করা হয়েছে।কিন্তু তার কোন উপযুক্ত প্রমান নেই।ঐতিহাসিকদের মতে, গৌড় মানষিকভাবে প্রচন্ড বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।পেঁচাগড় থেকে তিনি হয়তো তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ভারত বা অন্যকোন জায়গায় চলে গিয়েছিলেন।কারন যুদ্ধের এক বছর পর গৌড়ের ব্যবহৃত একটি হার এক ব্যক্তির নিকট পাওয়া যায়,সে দাবী করেছিলো উক্ত হারটি এক ব্যক্তি তার অশ্বালয় থেকে একটি তেজী ঘোড়ার বিনিময়ে নিয়েছিলেন।রাত্রী ছিলো বলে তিনি তাঁকে চিনতে না পারলেও সেই ব্যক্তির কথা বার্তা অন্যরকম ছিলো।সেই স্থান ত্যাগের আগে তিনি শ্রীহট্ট মুখী হয়ে ক্রদন করেছিলেন,এবং বলেছিলেন ‘আজ যদি আমার কোন বংশধর থাকতো,তা হলে আমার এই পরাজয়ের শোধ নিত। হে পিনাকনাথ,যদি মন দিয়ে তোমার সেবা দিয়ে থাকি,আমার পিতারচরের এই রাজ্য যেন যবন প্রসুত হয়ে সমুদ্রেচলে যায়,অথবা এমন কাউকে পাঠিয়ো,যে গোবিন্দ বংশীয় না হয়েও এইঅন্যায়ের শোধ তুলবে।’ উক্ত ব্যক্তির ভাষ্য সত্য না মিথ্যা তার কোন প্রমান নেই।কিন্তু অত্যান্ত দুখাতুর ভাবে একজন দেশপ্রেমিক আর্যের নিরবে পরাজয় ঘটলো।ইতিহাস আজ গৌরকে একজন অত্যাচারী রাজা হিসেবে জানে।কিন্তু বাস্তব সত্য, এই বাংলায় প্রত্যেক হিন্দু শাষকই তাঁদের রাজত্ব শেষ পর্যন্ত যবনদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন।১৩৮৪ খৃষ্টাব্দে সমুদ্র পুত্র আর্যসৈনিক রাজা গৌড়ের শ্রীহট্ট বিজয়ের পর শাহজালাল তাঁর শিষ্য অনুসারীদের বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দেন। হযরত শাহজালাল(রাঃ)৩২ বছর বয়সে শ্রীহট্ট আগামন করেন এবং ৩০ বছর বাস করার পর ৬২ বছর বয়সে মারা যান।১৩৮৫ সালে শ্রীহট্টের নাম পরিবর্তন করে "শিলাচট্টল" এবং পরে সিলেট রাখা হয়।খন্ডিত কাহিনী গুলো নিয়ে জোড়া বানালাম।লাইব্রেরিতে নিচের বইগুলো পেলে সব পেয়ে যাবেন।কিভাবে একজন ব্যক্তিকে পরাজিত করে অন্যায় ভাবে অপদস্ত করে জগতের চোখে তাকে ঘৃনিত করা হয়।

তথ্যসুত্রঃ

১) বাংলার ইসলামী আন্দোলন

২)ভক্তি ধর্ম আন্দোলন

৩)আজিমির চিস্তির জীবনকাহিনী

৪)World Sunni Saints in Bangla

৫) Hu An Sung Bangladesh Saint war

 

Saturday, April 20, 2024

দ্বৈতবাদীদের জন্য - শিব (সোম ) থেকেই নারায়নের সৃষ্টি

আমার এই লেখাটা ঐসব মধ্যযুগীয় বিভেদকামী বৈষ্ণবদের জন্য , যারা মনে করে নারায়ণ , গোবিন্দ, কৃষ্ণ বড় আর পরমেশ্বর শিব ছোট। অদ্বৈতবাদীদের জ্ঞ্যাতার্থে জিনি হর তিনিই হরি।  


পবিত্র বেদশাস্ত্রে পরমেশ্বর শিবের সোমরূপ থেকেই শ্রীবিষ্ণুর সৃষ্টির তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে -

ঋগ্বেদে ( নবম মণ্ডল / ৯৬ নং সুক্ত / নং মন্ত্র) বলা হয়েছে -

 

সোমঃ পবতে জনিতা মতীনাং জনিতা দিবো জনিতা পৃথিব্যাঃ।

জনিতাগ্নের্জনিতা সূর্যস্য জনিতেন্দ্রস্য জনিতোত বিষ্ণোঃ।।

 

অর্থঃ স্তুতি, দ্যুলোক,পৃথিবী, অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র এবং বিষ্ণুকে উৎপন্ন বা সৃষ্টিকারী সোম সর্বদা শুদ্ধ তথা সকল দোষাবহ গুণ হইতে মুক্ত।

ঋগ্বেদ ৯/২৬/৫

 

.পরমেশ্বর শিবের নিশ্বাস স্বরূপ নিগম তথা বেদশাস্ত্রে সোম পদ দ্বারা একমাত্র পরমেশ্বর শিব দেবী উমার একত্র রূপকেই স্তুতি করা হয়েছে। এজন্যই শুক্ল যজুর্বেদের অন্তর্গত শতরুদ্রিয় বা শ্রীরুদ্রমের ৮ম অনুবাকে শিবকে সোমপদ দ্বারা স্তুতি করা হয়েছে। যথা-

 

নমঃ সোমায রুদ্রায চ।১

 

.এই মন্ত্রের ভাষ্যে আচার্য্য মহীধর বলেছেন- উমযা সহিতঃ সোমঃ তস্মৈ।

অর্থঃ উমা সহিত পরমেশ্বর রুদ্রের রূপই হলেন সোম।

 

.বেদভাষ্যকার উবটাচার্য এই মন্ত্রের ভাষ্যে বলেছেন - নমঃ সোমায রুদ্রায নামতো নমস্কারাঃ।

অর্থঃ শিবকে সোম, রুদ্র এসব নাম দ্বারা নমস্কার করা হয়েছে।

 

.বেদভাষ্যকার সায়ণাচার্য এই মন্ত্রের ভাষ্যে বলেছেন - উমযা সহ বর্তত ইতি সোমঃ।

অর্থঃ উমা সহিত রুদ্রের রূপই হলেন সোম।

 

.বেদভাষ্যকার ভাষ্করাচার্য শতরুদ্রিয় এর ভাষ্যে বলেছেন

রুদ্রপশুপত্যাদিশব্দানাং পুনরভিধানং দেবস্যানুগ্রাহকরূপতামপি প্রখ্যাপযিতুম্।
নমঃ
সোমায চ।
উমযা
সহিতঃ সোমস্তস্মৈ।

 

অর্থঃ রুদ্র, পশুপতি অন্যান্য শব্দের পুনরাবৃত্তির উদ্দেশ্য হলো পরমেশ্বরের অনুগ্রহ রূপকে প্রকাশ করা।সোমকে প্রণাম, সোম হলো উমার সহিত রুদ্র রূপ।

 

.এছাড়াও শৃঙ্গেরী পূর্ব মঠাধিশ্বর অভিনবশঙ্করাচার্য শ্রীরুদ্রমের ভাষ্যে একই ধরনের কথা বলেছেন-
(নমঃসোমাযেতিবিশেধিতম্উমযা সহিতঃ সোম)

 

সুতরাং সোম যে পরমেশ্বর শিবেরই একটি রূপের নাম তা বেদভাষ্যকারদের দ্বারা প্রমাণিত।

 

.এছাড়াও কৃষ্ণ যজুর্বেদের তৈতরীয় সংহিতার চতুর্থকাণ্ডে ( //১৭)  যে শ্রীরুদ্রম্ পাওয়া যায় সেখানেও রুদ্রকে. নমঃ

সোমায রুদ্রায প্রভৃতি মন্ত্রে স্তুতি করা হয়েছে।

 

.অথর্ববেদের অন্তর্ভুক্ত ভস্মজাবাল উপনিষদের ২য় অধ্যায়ে বলা হয়েছে -

ব্রহ্ম সোমো'হং পবনঃ সোমো'হং পবতে সোমো'হং জনিতা মতীনাং সোমো'হং জনিতা পৃথিব্যাঃ সোমো'হং জনিতা'গ্নেঃ সোমো'হং জনিতা সূর্যস্য সোমো'হং জনিতেন্দ্রস্য সোমো'হং জনিতোত বিষ্ণোঃ সোমো'হমেব জনিতা যশ্চন্দ্রমসো দেবানাং ভূর্ভুবঃস্বরাদীনাং সর্বেষাং লোকানাং ||

বিশ্বং ভূতং ভুবনং চিত্রং বহুধা জাতং জাযমানং যৎ |

সর্বস্য সোমো'হমেব জনিতা বিশ্বাধিকো রুদ্রো মহর্ষিঃ ||

 

অর্থঃ আমি (শিব) সোম ( উমাসহিত ), ব্রহ্ম, পবন।আমি সেই সোম যা সূত্ররূপ  পবন যা সকল কিছুকে পবিত্র করে দেয়। আমি মতি আদি জন্মদানকারী সোম ( উমাসহিত ) আমিই পৃথিবী, অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র, বিষ্ণু প্রভৃতির জনক সোম তথা উমাসহিত পরমেশ্বর।এই চন্দ্রমা ভূঃ র্ভুঃ স্বঃ-আদি সর্বলোক উৎপন্নকারী সোম ( উমাসহিত পরমেশ্বর )

বিশ্ব, ভূত, ভুবন, চিত্র আদি উৎপন্নকারী  আমিই সোম তথা উমাসহিত পরমেশ্বর। আমি জন্মদাতা রূপে বিশ্বের কারণ হয়েও কারণাতীত বিশ্বাধিক রুদ্র,আমিই মহর্ষি।

 

.ঋগ্বেদের ৬ষ্ঠ মণ্ডলের ৭৪ নং সুক্ত সমগ্রটাই সোমরুদ্রের প্রতি সমর্পিত।তথায় বলা হয়েছে -

 

সোমারুদ্রা যুবমেতান্যস্মৈ বিশ্বা তনূষু ভেষজানি ধত্তম্।

অব স্যতং মুঞ্চতং যন্নো অস্তি তনূষু বদ্ধং কৃতোমেতো অস্মৎ।।৩

 

অর্থঃ হে সোমরুদ্র,আপনি আমাদের শরীরের উপকারকারী সকল ঔষধি ধারণ করুন।আমাদের দ্বারা কৃত পাপ আমাদের শরীরে বেঁধে আসে, এটিকে শিথিল করে দূর করুন।

 

তিগ্মাযুধৌ তিগ্মহেতী সুশেবৌ সোমরুদ্রাবিহ সু মূলতং নঃ।

প্র নো মুঞ্চতং বরুণস্য পাশাদ্ গোপাযতং নঃ সুমনস্যমানা।।৪

 

অর্থঃ হে সোমরুদ্র, আপনি দীপ্ত ধনুষের ন্যায়, তেজ বাণের ন্যায় এবং শোভন সুখ প্রদান কারী।শোভন স্তোত্রের ইচ্ছা করতে আপনি এই সংসারে আমাদের সুখী বানান, বরুণের পাশ থেকে আমাদের মুক্ত করুণ এবং আমাদের রক্ষা করুন।

 

এজন্যই পরমেশ্বর শিব বৈদ্যনাথ রূপে খ্যাত। এবং তাঁকে শ্রুতিতে পাশবিমোচক বলা হয়েছে।

 

.এছাড়াও হংস উপনিষদে ( ১৪ নং মন্ত্র)  এবং একাক্ষর উপনিষদ ( নং মন্ত্র)  অনুসারেও শিবই সোম।

 

.সোম থেকেই যে বিষ্ণুর উৎপত্তি তা ইতিহাস শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত শিবরহস্য শাস্ত্রে ( ১২ তম অংশ/ নং অধ্যায় ) বলা হয়েছে -

 

সূর্যস্য জনিতা সোম ইন্দ্রস্য জনিতা শিবঃ।

বিষ্ণোর্বৈ জনিতা সোমঃ সর্বেষাং জনিতা হরঃ।।১৩

 

অর্থঃ সূর্যের জন্ম সোমরূপ থেকে,ইন্দ্রের জন্ম শিব থেকে। বিষ্ণুর জন্ম সোমরূপ ( উমাসহিত শিব) থেকে, এবং সর্বোলোকের জন্ম হর থেকে।

 

একই শাস্ত্রের (১৩ তম অংশ / নং অধ্যায়)  বলা হয়েছে -

 

সোমো'যং জনিতা দেবো বিষ্ণোশ্চাপি ত্রিযম্বকঃ।

এষো'ন্তরা মহাদেব আদিত্যে শ্রুযতে বিভুঃ।।২১

 

অর্থঃ সোমদেব থেকে বিষ্ণুর সৃষ্টি, যিনি ত্র্যম্বক নামেও পরিচিত। সেই বিভু মহাদেব আদিত্যেরও অভ্যন্তরীণ আত্মাস্বরূপ যা শ্রুতিতে বর্ণিত।

 

মহাভারতে ( /২০২/১৪১) বলা হয়েছে -

 

উরুভ্যামর্ধমাগ্নেযং সোমার্থং শিবা তনুঃ।

আত্মতো'র্থে তথা চাগ্নি সোমো'র্থেং পুনরুচ্যতে।।

 

অর্থঃ শিব তনুর নিচের ভাগ তথা উরুর হলো অগ্নি এবং শিবতনুর উপরের ভাগ হলো সোম।অনেকের মতে শিবের সমগ্র দেহের অর্ধেক হলো অগ্নি এবং অর্ধেক হলো সোম।

 

.কূর্মপুরাণের ( উপরিভাগ /২৯ নং অধ্যায়)  বলা হয়েছে -

 

নমঃ সোমায় রুদ্রায মহাগ্রাসায হেতবে।

 প্রপদ্যেহং বিরূপাক্ষং শরণ্যং ব্রহ্মচারিণম্। ৪৫

 

অর্থঃ হে শিব, তুমি সোম, রুদ্র,মহাগ্রাসী, তুমি জগতের হেতু, তুমি বিরুপাক্ষ, জগৎ এর শরণ্য ব্রহ্মচারী, আমি তোমাতেই আশ্রয় নিলাম।

 

.পদ্মপুরাণের ( পাতালখণ্ড / ৬৪ নং অধ্যায় )  বলা হয়েছে -

 

শিবস্য শিবরূপ শিবতত্ত্বার্থবেদিনঃ।

সোমস্য সোমভূষস্য সোমনেত্রস্ব রাজিসু।।১০৮

 

অর্থঃ শিব মঙ্গলরূপী  শিবতত্ত্বার্থবিৎ,সোম, চন্দ্রভূষিত, চন্দ্র তার নেত্র।

 

.এছাড়াও মহাভারতের অনুশাসন পর্বোক্ত শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.লিঙ্গপুরাণোক্ত শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.বেদসারখ্য শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.শিবপুরাণোক্ত শিবসহস্রনামে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

. স্কন্দপুরাণোক্ত শংকর সংহিতায় শিবনামাষ্টোত্তরশতে শিবকে সোম বলা হয়েছে।

.শাক্ত শ্রীকূলের আচার্য ভাস্করাচার্য শিবনামকল্পলতাবাল স্তোবে শিবকে সোম বলেছেন।

 

.অপ্পয়দীক্ষিতের কনিষ্ঠ ভ্রাতা নীলকণ্ঠ দীক্ষিত শংকর সংহিতার শিবনামাষ্টোতত্তরশতের শিবতত্ত্বরহস্য নামক ব্যাখ্যায় সোম পদ বিশ্লেষণ করে বলেছেন -

 

উমযা সহিত সোমঃ,উমাসহাযং পরমেশ্বরং প্রভুম্ ইতি শ্রুতেঃ।.........সোমঃ পবতে জনিতা মতীনাং জনিতা দিবো জনিতা পৃথিব্যাঃ।জনিতাগ্নের্জনিতা  সূর্যস্য জনিতেন্দ্রস্য জনিতোত বিষ্ণোঃ।"অযং সোম কপর্দিনে "ইতি শ্রুতিরপ্যুপন্না।....তথা চোক্তং স্কান্দে সনৎকুমারসংহিতাযাং কাশীগতাদাল্ভ্যেশ্বরলিঙ্গকথাপ্রস্তাবে-মতীনাং দিবঃ পৃথ্ব্যা বহ্নেঃ সূর্যস্য বজ্রিণঃ।সাক্ষাদপি #বিষ্ণুোঞ্চ_সোমো_জনযিতেশ্বরঃ। এবং জাতঃ পুনঃ সোমঃ পুনাপি সকলাঘতঃ।সোমো বৈ হ্যাত্মনঃ সোমমাত্মনং বেত্তি শঙ্করঃ,ইতি।...."রুদ্র হুতঃ "ইতি সোমহুতে.....

 

.বেদসারখ্য শিবসহস্রনামের ভাষ্যে শৃঙ্গেরী শঙ্করাচার্য শ্রীমৎপরমশিবেন্দ্র সরস্বতী সোম শব্দ বিশ্লেষণ করে বলেছেন -

 

উমা সংবিদ্রুপা পরা শক্তিঃ।তযা সহ সর্বদা বর্তত ইতি সোম।

 

অর্থঃ উমা পরাশক্তি রূপে বর্ণিত তাহার সহিত সর্বদা শিবের অবস্থানই সোম বলে কথিত।

 

.এছাড়াও শিব মহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতায় ( পূর্বখণ্ড / ২৭ নং অধ্যায়)  সোম রূপের সম্পূর্ণ বর্ণনা আছে।

.ব্রহ্মাণ্ড পুরাণেও ( //২৭/১১১-১১২) শিবকে সোম বলা হয়েছে।

উপরোক্ত শাস্ত্র সিদ্ধান্ত অনুসারে পরমেশ্বর শিবের সোম রূপ থেকেই বিষ্ণুদেবের সৃষ্টি হয়েছে।

বেদাদি শাস্ত্রে পশুবলির প্রমাণ

  এষ ছাগঃ পুরো অশ্বেন বাজিনা পুষ্ণে ভাগো নীয়তে বিশ্বদেব্যঃ। অভিপ্রিয়ং যত্ পুরোলোশমর্বতা ত্বষ্টেদেনং সোশ্রবসায় জিন্বতি।।     – ঋগবেদ ১/১৬২...

Popular Posts