এষ ছাগঃ পুরো অশ্বেন বাজিনা পুষ্ণে ভাগো নীয়তে বিশ্বদেব্যঃ।
অভিপ্রিয়ং যত্ পুরোলোশমর্বতা ত্বষ্টেদেনং সোশ্রবসায় জিন্বতি।। – ঋগবেদ ১/১৬২/৩
অর্থাৎ, সকল দেবতার উপযুক্ত ছাগ পূষারই ভাগে পড়ে, একে দ্রুতগতি অশ্বের সাথে সম্মুখে আনা হচ্ছে। অতএব ত্বষ্টা দেবতাগণের সুভোজনের নিমিত্ত অশ্বের সাথে ঐ অজ হতে সুখাদ্য পুরোডাশ প্রস্তত করুন।
যদশ্বস্য ক্রবিষো মক্ষিকাশ যদ্বা স্বরৌ স্বধিতৌ রিপ্তমস্তি।
যদ্ হস্তয়ৌঃ শামিতুর্যন্নখেষু সর্বা তা তে অপি দেবেষ্বস্তু।। – ঋগবেদ ১/১৬২/৯
অর্থাৎ, অশ্বের অপক্ক মাংসের যে অংশ মক্ষিকা ভক্ষণ করে, ছেদনকালে বা পরিস্কার করবার সময় ছেদন ও পরিস্কার সাধন অস্ত্রে যা লিপ্ত হয় , ছেদকের হস্তদ্বয়ে এবং নখে যা লিপ্ত থাকে, সে সমস্তই দেবগণের নিকট যাক।
যদুবধ্যমুদরস্যাপবাতি য আমস্য ক্রবিষো গন্ধো অস্তি।
সুকৃতা তচ্ছমিতারঃ কৃণ্বন্তুত মেধং শৃ্তপাকং পচন্তু।। – ঋগবেদ ১/১৬২/১০
অর্থাৎ, উদরের অজীর্ণ তৃণ বের হয়ে যায়, অপক্ক মাংসের যে লেশমাত্র থাকে, ছেদনকর্তা তা নির্দোষ করুন এবং পবিত্র মাংস দেবতাগণের উপযোগী করে পাক করুন।
যত্তে গাত্রাদগ্নিনা পচ্যমানাদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি।
মা তদ্ ভুম্যামা শ্রিষন্মা তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশদ্ভ্যো রাতমস্তু।। – ঋগবেদ ১/১৬২/১১
অর্থাৎ, হে অশ্ব, অগ্নিতে পাক করবার সময়, তোমার গাত্র হতে যে রস বের হয় এবং যে অংশ শূলে আবদ্ধ থাকে তা যেন ভূমিতে পড়ে না থাকে এবং তৃণের সাথে মিশ্রিত না হয়। দেবতারা লালায়িত হয়েছেন, সমস্তই তাদের প্রদান করা হউক।
যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্বং যে ইমাহুঃ সুরভির্নির্হরেতি।
যে চার্বতো মাংসভিক্ষামুপাসত উতো নেষামভিগুর্তির্ন ইন্বতু।। – ঋগবেদ ১/১৬২/১২
অর্থাৎ, যারা চারিদিক হতে অশ্বের পাক দর্শন করে, যারা বলে এর গন্ধ মনোহর হয়েছে, এখন নামাও এবং যারা মাংস ভিক্ষার জন্য অপেক্ষা করে, তাদের সংকল্প আমাদের সংকল্প হোক।
এভাবে ঘোড়াকে কেটে, রান্না করেও বলা হত ঘোড়া মরে নি, সে স্বর্গে দেবতাদের কাছে গিয়েছেঃ
ন বা উ এতন্ ম্রিয়সে ন রিষ্যসি দেবাং ইদেষি পথিভিঃ সুগেভিঃ – ঋগবেদ ১/১৬২/২১
অর্থাৎ, হে অশ্ব! তুমি মরছ না অথবা লোকে তোমার হিংসা করছে না, তুমি উত্তম পথে দেবতাগণের নিকট যাচ্ছ।
সব কিছু সমাপ্ত করে ঘোড়ার কাছে অর্থাৎ অশ্বমেধ থেকে ধন, পুত্র এবং শারীরিক বলের কামনা করা হতঃ
সুগব্যং তো বাজী স্বশ্ব্যং পুংসঃ পুত্রান্ উত বিশ্বাপুষং রয়িম্।
অনাগাস্ত্বং ত অদিতিঃ কৃণোতু ক্ষত্রং তো অশ্বা বনতাং হবিষ্মান্।। – ঋগবেদ ১/১৬২/২২
অর্থাৎ, এ অশ্ব, আমাদের গো ও অশ্ববিশিষ্ট জগৎপোষক ধন প্রদান করুক, আমাদের পুরুষ অপত্য দান করুক। তেজস্বী অশ্ব আমাদের পাপ হতে বিরত করুক। হবির্ভূত অশ্ব আমাদের শারীরিক বল প্রদান করুক
অথ সংবৎসরে পূর্ণে তস্মিন্ প্রাপ্তে তুরংগমে।
সরয়্বাশ্চোত্তরে তীরে রাজ্ঞো যজ্ঞোহভ্যবর্তন।। ১
ঋষ্যশৃংগং পুরস্কৃত্য কর্ম চক্রুর্দ্বিজর্ষভাঃ।
অশ্বমেধে মহাযজ্ঞে রাজ্ঞোস্তস্য সুমহাত্মনঃ।। ২
নিযুক্তাস্তত্র পশাবস্তত্তদুদি্দশ্য দৈবতম্।
উরগা পক্ষিণশ্চৈব যথাশাস্ত্রং প্রচোদিতাঃ।।৩০
শামিত্রে তু হযস্তত্র তথা জলচরাশ্চ যে।
ঋষিভিঃ সর্বমেবৈতন্নিযুক্তং শাস্ত্রতস্তদা।। ৩১
পশুনাং ত্রিশতং তত্র যুপেষু নিয়তং তদা।
অশ্বরত্নোত্তমং তত্র রাজ্ঞো দশরথস্য চ।। ৩২
কৌসল্যা তং হয়ং তত্র পরিচর্য সমন্ততঃ।
কৃপাণৌর্বিশশাসৈনং ত্রিভিঃ পরময়া মুদা।। ৩৩
পত্রত্ত্রিণা তথা সার্ধং সুস্থিতেন চ চেতসা।
অবসদ্ রজনীমেকাং কৌসল্যা ধর্মকাম্যয়া।। ৩৪
হোতাধ্বর্যুস্তথোদ্গাতা হয়েন সমযোজয়ন্।
মহিষ্যা পরিবৃত্ত্যাথ বাবাতামপরাং তথা।। ৩৫
পতত্ত্রিণস্তস্য বপামুদ্ধৃত্য নিয়তেন্দ্রিয়ঃ।
ঋত্বিক্পরমসম্পন্নঃ শ্রপয়ামাস শাস্ত্রতঃ।। ৩৬
ধুমগন্ধং বপায়াস্তু জিঘ্রতি স্ম নরাধিপ।
যথাকালং যথান্যায়ং নির্ণুদন্ পাপমাত্মনঃ।। ৩৭
হয়স্য যানি চাংগানি তানি সর্বাণি ব্রাহ্মণাঃ।
অগ্নৌ প্রাপ্স্যন্তি বিধিবত্ সমস্তাঃ ষোড়শর্ত্বিজঃ।। ৩৮
(বালকাণ্ড, সর্গ ১৪)
তারপরে এক বছর সম্পন্ন হলে ঘোড়া ফিরে এল এবং সরযূ নদীর উত্তর তীরে রাজার যজ্ঞ আরম্ভ হল। (১) মহাত্মা রাজা (দশরথ)র অশ্বমেধ নামক মহাযজ্ঞে শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণগণ ঋষ্যশৃঙ্গ কে নিজেদের প্রধান বানিয়ে যজ্ঞকর্ম করতে লাগলেন। (২) … পশু, পক্ষী এবং সাপ, যাদের রাখার অনুমতি শাস্ত্র দেয় তাদের অধিষ্ঠাতা দেবতাদের নামে সেখানে রাখা হল। (৩০) ঋষিরা যজ্ঞে বধ করার জন্য ঘোড়া এবং জলচর প্রাণীদের যূপের সাথে বাধলেন। (৩১) সেই যজ্ঞে তিনশত পশু যূপের সাথে বাঁধা হয়েছিল।রাজা দশরথের সেই শ্রেষ্ঠ ঘোড়াকেও ( যে পৃথিবীর সর্বত্র ঘুরে এসেছিল) বাঁধা হয়েছিল। কৌশল্যা খুশিমনে অশ্বের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে তলোয়ারের তিন কোপে তাকে হত্যা করেছিলেন। (৩৩) কৌশল্যা ঐ মৃত ঘোড়ার পাশে সাবধানচিত্ত হয়ে ধর্মের কামনা করে এক রাত অবস্থান করেছিলেন। (৩৪) তারপর হোতা, অধ্বর্যু এবং উদগাতা মহিষী (যে রানির রাজার সাথে রাজ্যাভিষেক হয়েছিল), পরিবৃত্তি (রাজার শূদ্র জাতীয় পত্নী) এবং বাবাতা (রাজার বৈশ্য জাতীয় পত্নী) এই তিন শ্রেণীর রানিদের ঘোড়ার সাথে যুক্ত করেছিলেন। (৩৫) জিতেন্দ্রিয় এবং শ্রৌতকর্মে কুশল ঋত্বিক (পুরোহিত) ঐ ঘোড়ার চর্বি বের করেছিল এবং শাস্ত্রানুসারে তা রান্না করেছিল। (৩৬) রাজা দশরথ সেই হবনকৃত চর্বির গন্ধ উপযুক্ত সময়ে বিধান অনুসারে শুঁকেছিলেন, যার ফলে তার পাপ দূর হয়ে গিয়েছিল। (৩৭) ষোল জন ঋত্বিক ব্রাহ্মণেরা মিলে ওই ঘোড়ার যত অঙ্গ ছিল, সব গুলোকে অগ্নিতে হবন করেছিলেন।
যজস্ব বাজিমেধেন বিধিবত্ দক্ষিণাবতা।। ১৫
অশ্বমেধো হি রাজেন্দ্র পাবনঃ সর্বপাপ্মনাম্।
তেনেষ্ট্বা ত্বং বিপাপ্মা বৈ ভবিতা নাত্র সংশয়ঃ।। ১৬ (অশ্বমেধিকপর্ব, অধ্যায় ৭১)
অর্থাৎ, ব্যাস বলেছেন, “ হে যুধিষ্ঠির, বিধি পূর্বক দক্ষিণা দিয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান কর। রাজেন্দ্র, অশ্বমেধ যজ্ঞ সমস্ত পাপ নাশ করে যজমানকে পবিত্র করে। এর অনুষ্ঠান করে তুমি পাপমুক্ত হবে, এতে সংশয় নেই।“
ততো নিযুক্তাঃ পশবো যথাশাস্ত্রং মনীষিভিঃ।
তং তং দেবং সমুদ্দিশ্য পক্ষিণঃ পশবশ্ব যে।।
ঋষভাঃ শাস্ত্রপঠিতাস্তথা জলচরাশ্চ যে।
সর্বাস্তানভ্যযুংজংস্তে তত্রাগ্নিচযকর্মণি।।
যুপেষু নিয়তা চাসীত্ পশুনাং ত্রিশতী তথা।
অশ্বরত্নোত্তরা যজ্ঞে কৌন্তেয়স্য মহাত্মনঃ।। (অশ্বমেধিকপর্ব ৮৮/৩৩-৩৫)
অর্থাৎ, এরপর মনিষী ঋত্বিকেরা শাস্ত্রোক্ত বিধি অনুসারে পশুদের নিযুক্ত করলেন। ভিন্নভিন্ন দেবতাদের উদ্দেশ্যে পশু, পাখি এবং শাস্ত্রকথিত বৃষভ এবং জলচর জন্তু- এদের অগ্নিস্থাপন কার্যে যাজকেরা ব্যবহার করলেন। কুন্তীনন্দন মহাত্মা যুধিষ্ঠির এই যজ্ঞে যে সব যূপ দাঁড় করানো হয়েছিল, তাতে তিনশত পশু বাঁধা হয়েছিল। এসবের মধ্যে প্রধান সেই অশ্বরত্ন ছিল।
(মহাভারত, খণ্ড ৬, গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর, হিন্দি অনুবাদ সহিত, পৃষ্ঠা ৬২৯০)
শ্রপয়িত্বা পশুনন্যান্ বিধিবদ্ দ্বিজসত্তমাঃ।
তং তুরংগং যথাশাস্ত্রমালভন্ত দ্বিজাতয়ঃ।। ১
ততঃ সংশ্রপ্য তুরংগং বিধিবদ্ যাজকাস্তদা।
উপসংবেশয়ন্ রাজংস্ততস্তাং দ্রুপদাত্মজাম্।। ২
উদ্ধৃত্য তু বপাং তস্য যথাশাস্ত্রং দ্বিজাতয়ঃ।। ৩
শ্রপয়ামাসুরব্যগ্রা বিধিবদ্ ভরতর্ষভ।
তং বপাধুমগন্ধং তু ধর্মরাজঃ সহানুজৈঃ।। ৪
উপাজিঘ্রদ্ যথাশাস্ত্রং সর্বপাপাহং তদা।
শিষ্টান্যংগানি যান্যাসংস্তস্যাশ্বস্য নরাধিপ।। ৫
তান্যগ্নৌ জুহুবুর্ধীরাঃ সমস্তাঃ ষোড়শর্ত্বিজঃ।। ৬ ( অশ্বমেধিক পর্ব ৮৯ )
অর্থাৎ, সেই শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণেরা অন্যান্য পশুদের বিধিপূর্বক রান্না করে ওই অশ্বকেও শাস্ত্রীয় বিধি অনুসারে বধ করলেন। (১) রাজন, তারপর যাজকেরা বিধিপূর্বক অশ্বকে রান্না করে তার কাছে দ্রৌপদীকে শাস্ত্রোক্ত বিধি অনুসারে বসালেন। (২) হে ভরতশ্রেষ্ঠ, তারপর ব্রাহ্মণেরা শান্তচিত্ত হয়ে সেই অশ্বের চর্বি বের করে তাকে বিধিপূর্বক রন্ধন করা শুরু করলেন। (৩) ভাইদের সাথে যুধিষ্ঠির শাস্ত্রোক্ত আজ্ঞা অনুসারে সমস্ত পাপনাশক সেই চর্বির ধোয়ার গন্ধ শুঁকেছিলেন। (৪) নরেশ্বর, ওই অশ্বের যে শেষ অঙ্গ ছিল তা দিয়ে শান্ত স্বভাবের সমস্ত ষোল জন ঋত্বিকেরা অগ্নিতে হোম করেছিলেন। (৫) (মহাভারত, ষষ্ঠ খণ্ড, গীতাপ্রেস, গোরখপুর, হিন্দি অনুবাদ সহিত, পৃষ্ঠা ৬২৯০-৬১৯১)
৩৯। যজ্ঞার্থং পশবঃ সৃষ্টাঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা।
যজ্ঞস্য ভূত্যৈ সর্বস্য তস্মাদ্যজ্ঞে বধোহবধঃ ॥
ব্রহ্মা নিজেই যজ্ঞের জন্য পশুগণকে সৃষ্টি করেছেন। যজ্ঞ সকলের উন্নতির কারণ ; সুতরাং, যজ্ঞে পশুবধ বধ নয়।
৪০। ওষধ্যঃ পশবো বৃক্ষাস্তির্যঞ্চঃ পক্ষিণস্তথা।
যজ্ঞার্থং নিধনং প্রাপ্তাঃ প্রাপ্নুবন্ত্ত্যচ্ছ্রিতীঃ পুনঃ ॥
ওষধি (যে গাছ ফল পাকলে মরে যায়), পশুগণ, বৃক্ষসমূহ, কচ্ছপাদি তির্যগ্জাতি ও পক্ষিগণ যজ্ঞের জন্য নিহত হলে পুনরায় উচ্চ জন্ম লাভ করে।
৪১। মধুপর্কে চ যজ্ঞে চ পিতৃদৈবতকর্মণি।
অত্রৈব পশবো হিংস্যা নান্যত্রেত্যব্রবীন্মনুঃ ॥
মধুপর্কে২, যজ্ঞে, পিতৃকার্যে ও দৈবকার্যেই শুধু পশুহত্যা বিহিত, অন্য স্থলে নয়—এই কথা মনু বলেছেন।
৪২। এবর্থেষু পশুন্ হিংসন্ বেদতত্ত্বার্থবিদ্ দ্বিজঃ।
আত্মানঞ্চ পশুঞ্চৈব গময়ত্যুত্তমাং গতিম্ ॥
এই সকল উপলক্ষ্যে পশুহত্যা করে বেদতত্ত্বজ্ঞ দ্বিজ নিজেকে ও (ঐ) পশুকে সদগতি লাভ করান।
৪৩। গৃহে গুরাবরণ্যে বা নিবসন্নাত্মবান্ দ্বিজঃ।
নাবেদবিহিতাং হিংসামাপদ্যপি সমাচরেৎ ॥
গৃহে, গুরুগৃহে বা বনে বাস করে প্রশস্তাত্মা দ্বিজ বেদনিষিদ্ধ হিংসা বিপদ্কালেও করবেন না।
৪৪। যা বেদবিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে।
অহিংসামেব তাং বিদ্যাদ্বেদাদ্ধর্মো হি নির্বভৌ॥
এই চরাচর জগতে যে হিংসা বেদবিহিত, তাকে অহিংসা বলেই জানবে ; কারণ, বেদ থেকে ধর্ম প্রকাশিত হয়েছিল।
মনুস্মৃতি ৫ অধ্যায়
মনুস্মৃতির একটি শ্লোকের মধ্যেও বলা নেই যে বেদে পশুবলি নিষিদ্ধ বরং বলা হয়েছে বেদ নির্দেশিত পশুবলি অহিংসা