আমরা সকলেই ব্রাহ্মণের গলায় একটা নয় প্যাচ যুক্ত পৈতা বা যজ্ঞোপবীত দেখতে পাই, যা প্রমাণ করে যে সে একজন ব্রাহ্মণ। আর এই পৈতা বা যজ্ঞোপবীত এক বিপ্র বালক এমনি এমনি পায় না; তাকে এটা দেয়ার জন্য উপনয়ন সংস্কার প্রচলিত আছে, এই উপনয়ন সংস্কারের মাধ্যমেই এক বিপ্রবালক সয়ংসম্পূর্ণ দ্বিজ এবং বিপ্র হয়ে উঠে।
কিন্তু আমরা অনেক ব্রাহ্মণ এবং অনেকেই এই যজ্ঞোপবীতের নয়টি গুন কি কি তা জানি না! এই যজ্ঞোপবীতের নয়টি গুন সম্পর্কে শ্রীমদ্ভগবতগীতা বলছে.....
শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম॥
~ [শ্রীমদ্ভগবতগীতা - ১৮/৪২]
অর্থ: শম, দম, তপঃ, শৌচ, ক্ষান্তি, আর্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং আস্তিক্য এই সব হলো ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত (পূর্বজন্মের স্বীকৃতি প্রাপ্ত) কর্ম।
আমরা গীতার এই শ্লোক দ্বারা এইটা বুঝতে পারি যে এইসব (শম,দম,তপ ইত্যাদি) হলো ব্রাহ্মণের যজ্ঞোপবীতের এক একটি গুন সমন্বিত কর্ম, ব্রাহ্মণের এক একটি পৈতার প্যাচে এই এক একটি গুন আছে; কিন্তু আমরা এই গুলো জানলেও উপরে দেয়া গুন গুলোর চলিত ভাষায় অর্থ জানি না, আজকে আমরা সেটিই জানবো.......
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞোপবীতের প্রথম গুনটি হলো~
শম:- শম অর্থ হলো অন্তর ইন্দ্রিয়ের বা মনের সংযম। আমাদের মধ্যে সবার মধ্যেই যে মন আছে তা নিয়ন্ত্রণে রাখাই হলো শম, আর ব্রাহ্মণ সবসময় তার মন নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাই তার প্রথম গুন শম।
[এই পৈতার প্রথম গন্ডির দেবতা হলো পরমাত্মা বা ॐ]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞোপবীতের দ্বিতীয় গুনটি হলো~
দম:- দম অর্থ হলো বহিঃ ইন্দ্রিয়ের সংযম, আমাদের শরীরে যে একাদশ ইন্দ্রিয় এবং প্রধান পাচ ইন্দ্রিয় (নাক, কান, চোখ, ত্বক এবং জিহ্বা) আছে তা নিয়ন্ত্রণে রাখাই হলো দম, ব্রাহ্মণ সবসময় চেষ্টা করে এই বহিঃ ইন্দ্রিয় সংযমে রাখার, তাই তার দ্বিতীয় গুন দম।
[এই পৈতার দ্বিতীয় গণ্ডীর দেবতা হলো অগ্নিদেব]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞোপবীতের তৃতীয় গুনটি হলো~
তপ:- তপ অর্থ হলো তপস্যা করা, কিন্তু কলিযুগে তপস্যা না থাকায় এখানে তপস্যা শব্দের অর্থ ঈশ্বরের চিন্তা করা; আর ব্রাহ্মণ সবসময় ঈশ্বরের চিন্তা বা ঈশ্বরের কর্ম করে, তাই তার তৃতীয় গুন হচ্ছে তপ।
[এই পৈতার তৃতীয় গণ্ডীর দেবতা হলেন অনন্তনাগ]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞোপবীতের চতুর্থ গুনটি হলো~
শৌচ:- শৌচ অর্থ হলো পবিত্রতা, ব্রাহ্মণ সবসময় পবিত্র; তাই ব্রাহ্মণের আরেক গুন হলো শৌচ।
[এই পৈতার চতুর্থ গণ্ডীর দেবতা হলেন চন্দ্রঁদেব]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞোপবীতের পঞ্চম গুনটি হলো~
ক্ষান্তি:- ক্ষান্তি অর্থ হলো ক্ষমা করা, ব্রাহ্মন সবসময় ক্ষমাশীল এবং সে সবসময় অন্যকে ক্ষমা করতে শিখে ছোটো হতে, তাই তার পৈতার আরেক গুন হলো ক্ষান্তি!
[এই পৈতার পঞ্চম গণ্ডীর দেবতা হলেন পিতৃপুরুষগন]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞপবীতের ষষ্ঠ গুনটি হলো~
আর্য:- আর্য শব্দের অর্থ হলো সরলতা, ব্রাহ্মণ সবসময় শুভচিন্তক, তাই ব্রাহ্মণ সরল প্রকৃতির; এইজন্যই ব্রাহ্মণের আরেকটি গুন হলো আর্য বা সরলতা!
[এই পৈতার ষষ্ঠ গণ্ডীর দেবতা হলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞপবীতের সপ্তম গুনটি হলো~
জ্ঞান:- এখানে জ্ঞান শব্দের অর্থ শাস্ত্রজ্ঞান বোঝানো হয়েছে, ব্রাহ্মণ সবসময় শাস্ত্র অধ্যায়ন এবং অধ্যাপনা করান, তাই তার আরেক গুন হলো জ্ঞান।
[এই পৈতার সপ্তম গণ্ডীর দেবতা হলেন বায়ুদেব]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞপবীতের অষ্টম গুনটি হলো~
বিজ্ঞান:- এখানে বিজ্ঞান শব্দের অর্থ হলো আত্ম জ্ঞান; ব্রাহ্মণ সবসময় নিজের আত্মাকে জানেন এবং তাকেই পরমাত্মার অংশ বলে মানেন, তাই তার আরেক গুন বিজ্ঞান।
[এই পৈতার অষ্টম গণ্ডীর দেবতা হলেন সূর্যদেব]
ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞোপবীতের একদম শেষের গুনটি হলো~
আস্তিক্য:- এখানে আস্তিক্য শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস রাখা; ব্রাহ্মণ সবসময় তার গুরু, বেদ এবং অন্যান্য শাস্ত্রে বিশ্বাসী, তাই তার আরেক গুন হলো আস্তিক্য।
[এই পৈতার শেষের গণ্ডীর দেবতা হলেন সবাই অর্থাৎ সমস্ত দেবদেবী]
এই হলো ব্রাহ্মণের পৈতা বা যজ্ঞোপবীতের নয়টি গুন এবং তার অর্থ, আজকের আলোচনা এতোটুকুই; আবার আগামী পোষ্টে নতুন কোনো টপিক নিয়ে দেখা হবে!
{অতিরিক্ত যুক্ত:- পৈতায় থাকা নয়টি গুনের দেবতা}
নমস্কার, নমঃ শিবায়
শিবার্পনমস্তু