Saturday, October 15, 2022

কৃষ্ণ কি শুধুই বর লাভের জন্য শিব উপাসনা করেছেন? শিব কৃষ্ণে কি ভেদ আছে? কি বলেন স্বয়ং দ্বারকানাথ?

 নমঃ শিবায়

নমস্কার 

সনাতনী সকল ভ্রাতা ভগ্নিরদের নিকট অধমের প্রনাম ও ভালবাসা।

  বস্তুত এইসব ব্লগ দ্বৈতবাদী কৃৈষ্ণব সম্প্রদায়ের জন্য। যারা শিব কৃষ্ণে ভেদ করেন না, এদের জন্য না। 

দীর্ঘদিন অনলাইনের কল্যানে প্রায় সকল সচেতন মহল জানেন যে ভগবান কৃষ্ণ শিব উপাসনা করেছেন। মহাভারত এবং শিব মহাপুরাণের বায়বীয় সংহিতা এর বড় প্রমাণ (বিস্তারিত)। তাছাড়া হরিবংশতেও এর হাল্কা উল্লেখ রয়েছে। তবে অনেক ইস্কন সহ উগ্র দ্বৈতবাদী কৃষ্ণভক্তের দাবী উনি (শ্রীকৃষ্ণ) শুধু বর লাভের নিমিত্তেই শিব উপাসনা করেছেন বাস্তবে পরমেশ্বর শিব নাকি উল্টো পরম বৈষ্ণব ( বিস্তারিত) । যদিও এইসব দাবী বহু আগেই শৈবরা খন্ডন করেছেন এবং আগম শাস্ত্রের দ্বারাও এর প্রামাণিকতা পাওয়া যায় যে বাস্তবে পরমেশ্বর শিব কারো উপাসনা করেন না বরং নারায়ন সহ শ্রীকৃষ্ণ সবাই শিব অনুগ্রহ লাভ করেছেন বার বার। এমনকি শ্রীবিষ্ণুর ১০ অবতারকেও বার বার বধ করে পরমেশ্বর শিব নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেছেন। শিব নারায়ণপ্রকৃতি আর পুরুষ স্বরুপ। এখানে পুরুষ হলেন শিব আর প্রকৃতি হলেন নারায়ণ। শুধু এই একটাই দাবী যা এরা শাক ঢাকতে ব্যাবহার করে। কিন্তু শাস্ত্র প্রমাণ এতই রবির ন্যায় জাজ্বল্যমান যে সেই রূপালি রঙ বের হয়েই যায়। 

আসুন আজ কূর্ম পুরাণ ( যা একদম স্বাত্তিক পুরাণ) থেকে দেখে নেই কৃষ্ণের নিজের মুখের কথা। 




বিস্তারিত বইয়ের লিঙ্ক

 তৎপরে দেবতা, খষি ও পিতৃগণের তর্পণ সমাধান করিলেন এবং মার্কেন্ডেয়ের সহিত দেবভবনে প্রাবেশ করিয়া লিঙ্গস্থ ভূতি- ভূষণ ভূতনাথের পৃজা করিলেন। হে বিপেন্দ্রসকল! অনস্তর সকল মনুষ্যের নিয়ন্তা সেই হরি আপনার সমস্ত নিয়ম সমাপন করিয়া ব্রাহ্মণদিগের পুজা করিলেন এবং মহর্ষ মার্কেন্ডেয়কে ভোজন করাইয়া, আত্মযোগ সমাপনপূর্ব্বক পুত্রাদিদ্বারা পরিবৃত হইয়া, মহর্ষি মার্কেন্ডেয়ের সহিত পৌরাণিকী পবিত্র কথা কহিতে আগন্ত করিলেন। অনন্তর মহামুনি মারকেন্ডেয় এই সমস্ত দেখিয়া হাসিতে কসিতে মধুর বাক্যে শ্রীকৃষ্ণকে বলিতে আরম্ভ  ক'রলেন। ৪২--৫১। 

মার্কেন্ডেয় কহিলেন-যাবতীয় লোকে কর্ম্মদ্ধারা আপনারই পূজা করিয়া থাকে এবং যোগিগণ আপনারই ধ্যান করে, কিন্তু আপনি পুণ্যকর্ম্মদ্বারা কোন দেবতার আরাধনা করিতেছেন, তাহা আমাকে বলুন। আপনিই সেই পরমব্রহ্ম ও নির্ব্বাণস্বরূপ অমলপদ, আপনিই ভারাবতরণ্রে নিমত্ত বৃষ্ণিকুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। ব্রহ্মবিদ্বর মগাবাহু কৃষ্ণ শ্রবণসমুৎসুক পুত্রগণের সমক্ষেই হাসিতে হাসিতে তাহাকে বলিতে লাগিলেন,আপনি যাহা! যাহা বলিলেন, সে সমস্তই সত্য, সন্দেহ নাই; তথাপি আমি সন|তন মহেশ্বরের পূজা করিতেছি। হে বিপ্র! আমার কিছুই কর্তব্য নাই, এবং আমার প্রার্থয়িতব্য কিছুই নাই; তথাপি সমস্ত জানিয়াও আমি. পরম শিব মহেশ্বরেরই পূজা করিতেছি। লোকে কামমোহিত হইয়া মোহুবশতঃ সেই দেবাদিদেবকে দেখিতে পায় না, সেই হেতু মহদেবই আত্মার মূল, ইহ! জানাইবার নিমিত্তেই আমি তাহার পুজা কারতেছি। শিবলিঙ্গ পূজা করা অপেক্ষা লোকমধ্যে আর পূণ্যকর নাই এবং দূর্গতি-খন্ডনেরও অপর কোন, উপায় নাই ; অতএব এই সমস্ত লোকের হিতের জন্য লিঙ্গে শিবের পূজা করিবে। বেদতত্বজ্ঞ পণ্ডিতেরা আমাকেই সেই শিবলিঙ্গ বলিয়া থাকেন, অতএব আমিই স্বয়ং আপনাতে মহাদেবের পূজা করিতেছি। আমিই সেই শিবের পরমা মুর্তি এবং আমিই শিবময়, আমাদের উভয়ের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই, বেদে ইহাই নিশ্চিত হইয়াছে । অতএব সংসারভীরু লোকেরা সর্ব্বদাই লিঙ্গে সেই দেবদেব মহেশ্বরের ধ্যান, পুজা ও বন্দনা করিবে। ৫২--৬১। 

মার্কেন্ডেয় বলিলেন, হে সুরশ্রেষ্ঠ বিশলাক্ষ কৃষ্ণ সেই লিঙ্গ কি পদার্থ এবং লিঙ্গে কাহারই বা পুজা করিতে হয়? এই গভীর ও উৎকৃষ্ট বিষয়টী আমাকে বলিয়া। দিন। ভগবান কহিলেন, লিঙ্গ, অব্যক্ত আনন্দস্বরূপ জ্যতির্ম্ময় এবং অক্ষর? বেদে মহেশ্বরই অব্যয় ও লিঙ্গরূপী দেবতা বলিয়া কথিত হইয়াছেন। পূর্ববকালে ঘোর একার্ণব সময়ে স্থাবর-জঙ্গম বিলুপ্ত হইলে পর, ব্রহ্মার এবং আমার প্রবোধের নিমিত্ত মহাশিব প্রাদূর্ভূত হইয়াছিলেন। সেই অবধি ব্রহ্মা এবং আমি সমস্ত লোকের হিতের নিমিত্ত সর্বদাই মহাদেবের পূজা করিয়া থাকি। মার্কেন্ডেয় কহিলেন। হে কৃষ্ণ! পূর্ব্বে আপনাদের প্রবোধের জন্য কি প্রকারে পরমপদ ঐশ্বর লিঙ্গ উৎপন্ন হইয়াছিল, তাহাই এক্ষণে বলুন। ভগবান কহিলেন,_পূর্ব্বে যখন ঘোর অবিভক্ত তমোময় একার্ণব ছিল, তখন আমি সেই একার্ণবের মধ্যে শঙ্খ-চক্র-গদাধারী, সহস্রশীর্ষা, সহস্রাক্ষ সহস্রচরণ, সহস্রবাহু, সনাতন পুরুষ হইয়া শয়ন করিয়া ছিলাম। এমন সময়ে দূরে অমিততেজাঃ কোটিসূর্য্যপ্রতিকাশ, সৌন্দর্য সম্পন্ন, দীপ্তিবিশিষ্ট, চতূর্ব্বক্ত্র, মহাযোগী জগতের কারণ, কৃষ্ণাজিনধর, খক্‌ যজুঃ সাম মন্ত্র দ্বারা অতিষ্টুত ও বিভু আদিপুরুষকে দেখিতে পাইলাম । ৬২--৭০। 


প্রিয় ভ্রাতা ভগ্নিরা। এখানে লাল কালি দিয়ে হাইলাইট করা অংশটি দেখুন। ভগবান কৃষ্ণ শিবা উপাসনাকে নিজের উপাসনার সাথে তুলনা করেছেন। শিব কৃষ্ণে কোন ভেদ নেই। যেখানে সাক্ষাৎ ভগবান বলছেন উনি শিবময় এবং উনাতে আর শিবে ভেদ নাই। সেখানে দ্বৈতবাদী কৃৈষ্ণবগণ কোন সাহসে উনাদের আরাধ্যের বাক্য অপমান করে ভেদাভেদ করেন? পাশাপাশি ইদানিং কিছু উগ্র শৈবরাও শিব কৃষ্ণে ভেদ করে মহাপাপী হচ্ছেন। এদের জন্য করুনা হয়। এরা চোখ থাকতেও অন্ধ, জ্ঞান থাকতেও অজ্ঞানী। 

শাস্ত্র প্রমাণের মাধ্যমে সিদ্ধ হল শিব এবং কৃষ্ণ এরা অভেদ। ভগবান আর ভক্তে ভেদ নেই। আবার ভক্ত আর ভগবানেও ভেদ নেই। 

শিব শিব 

নমঃ শিবায়। 

    `    

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts