Wednesday, November 9, 2022

বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কিছু অদ্ভুত প্রাণী

 আমাদের ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত প্রাণী দিয়েই শুরু করা যাক

কামধেনু

সমুদ্রমন্থনজাত কামধেনুর কথা আমরা প্রত্যেকেই জানি। মনের কাঙ্খিত সকল বস্তু দিতে সক্ষম, বহু দিব্য ক্ষমতা সম্পন্ন এই কামধেনু। পুরাণ মতে গরু-মহিষের মত সকল দ্বিক্ষুর জাতীয় প্রাণী কামধেনুর সন্তান।

ঐরাবত

সমুদ্রমন্থন থেকে উত্থিত বিশালাকায়, প্রচন্ড শক্তিশালী, সাতশুড় যুক্ত, দিব্য সাদাহাতি হলো ঐরাবত। পুরানমতে ঐরাবত দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন।

ইচ্ছাধারী নাগ

পুরাণ এবং বিভিন্ন উপকথায় ইচ্ছাধারী নাগ-নাগিনের ছড়াছড়ি। আমরা সবাই এদের সম্বন্ধে জানি তাই আর গভীরে গেলাম না।

গরুড়

গরুড় সম্বন্ধেও আমরা সবাই জানি, মানুষ এবং ঈগলের মিশ্রিত বিশালাকায় প্রাণী গরুড়। পুরাণ মতে গরুড় পক্ষীরাজ, পাখিদের দেবতা, বিষ্ণুবাহন এবং ব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে শক্তিশালী জীব।

শরভ

শরভ পুরাণে উল্লিখিত এক অতি অদ্ভুত জীব। যার দেহ সিংহের, সিংহের ঘাড়ের ওপর কোমর পর্যন্ত মানুষের দেহ, সেই মানুষের ঘাড়ে সিংহের মাথা কিন্তু তার ঠোঁটে ঈগলের চঞ্চু এবং মাথায় হরিণের শিং। তার দুটি বিশাল ডানা, সুদীর্ঘ লেজ এবং আটটি পা।

ভগবান বিষ্ণু যখন নৃসিংহ রূপে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠেন তখন মহাদেব এই শরভ রূপ নিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করেন।

গন্দভেরুণ্ড

পুরাণে উল্লিখিত দুই মুখযুক্ত বিশালাকায় পক্ষী, তার আকার এতটাই বড় যে একটি হাতিও তার কাছে খেলনার মতো।

কাহিনী অনুসারে মহাদেব যখন শরভ রূপে ভগবান নৃসিংহ কে পরাজিত করেন তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে গন্দভেরুণ্ড রূপে অবতীর্ণ হয়ে মহাদেবের শরভ রূপকে পরাজিত করেন।

মকর

মকর পুরাণে উল্লিখিত একটি প্রাণী যার দেহ মাছের কিন্তু মাথা হাতির মতো। পুরাণ মতে এই মকর মা গঙ্গার বাহন।

কবন্ধ

কবন্ধ রামায়ণে উল্লিখিত একটি রাক্ষস। তার মাথা এবং দুটি পা শরীরে ভেতর ঢোকানো। তার পেটে তীক্ষ্ম দাঁতযুক্ত মুখ এবং একটি বিশাল চোখ ছিলো, তার দুই হাত একশ যোজন লম্বা ছিলো। পা শরীরের ভেতর ঢুকে যাওয়ার কারণে সে চলতে পারতো না, কিন্তু তার হাত দুটো বিশাল হওয়ার কারণে তা দিয়ে বহুদুরের থেকেও শিকার ধরে আনতে পারতো।

রামায়ণের অরন্যকাণ্ডে এর উল্লেখ পাওয়া যায়, রাম এবং লক্ষণ যখন দেবী সীতার খোঁজ করছিলেন কবন্ধ তখন তাদের দুজনকে দুহাতে ধরে নেয় যার ফলে লক্ষণ তার হাত দুটো কেটে দেয়।

নবগুঞ্জরা

ওড়িয়া মহাভারতে উল্লিখিত 'ন রকম' প্রাণীর মিশ্রণ এই নবগুঞ্জরা। তার তিনটি পায়ের মধ্যে একটি হাতি, একটি ঘোড়া এবং একটি বাঘের পা, কিন্তু তার চতুর্থ পায়ের জায়গায় মানুষের হাত। তার ষাড়ের পিঠ, সিংহের কোমর, ময়ুরের গলা, মোরগের মাথা এবং তার লেজ একটি সাপ।

মহাভারত মতে একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই রূপে অর্জুনকে দর্শন দেন।



ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত জীবের বর্ণনা অনেক হলো এবার অন্যান্য পৌরাণিক জীবের সম্বন্ধে জানা যাক

মাইনটর

গ্রীক পুরাণে উল্লিখিত বিশাল প্রাণী যে মানুষ এবং ষাড়ের মিশ্রণ। এটি অত্যন্ত রগচটা প্রাণী বলে মনে করা হয়।

সেন্টর

সেন্টর গ্রীক পুরাণে উল্লিখিত খুবই জনপ্রিয় একটি জীব যার উপরিভাগ মানুষ এবং দেহের নিচের অংশ ঘোড়ার। গ্রীক পুরাণ মতে এরা সামাজিক প্রাণী হয় এবং গভীর বনে থাকে।

ড্রাগন

ড্রাগন বিভিন্ন পুরাণ এবং উপকথায় উল্লিখিত অত্যন্ত শক্তশালী প্রাণী যা আমাদের প্রত্যেকেরই পরিচিত। ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন গল্পে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ড্রাগনের বেশ কিছু প্রজাতি আছে, যেমন -

Wyvern

Qilin

Mushussu

তবে আমাদের সবথেকে পরিচিত দুটি ড্রাগন হলো

ইউরোপীয় ড্রাগন

চাইনিজ/জাপানিজ ড্রাগন

ব্যাসিলাস্ক

গ্রীক পুরাণ মতে ব্যসিলাস্ক হলো সাপেদের রাজা। এর জন্ম কাহিনী বেশ অদ্ভুত, কোনো মোরগ যদি সাপের ডিমে তা দেয় তবে এর জন্ম হয়। একে দেখতেও সাপ আর মোরগের মিশ্রণ, এর দেহ মোরগের কিন্তু লেজ ও জিভ সাপের। এবার এর গলাও কিছুটা সাপের মতো। বলা হয় যে এর চোখে চোখ রাখা মাত্রই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়।

কোনো কোনো মতে এটিও ড্রাগনের একটি প্রজাতি।

ক্র্যাকেন

সমুদ্রগর্ভে বসবাসকারী এক বিশাল হিংস্র দানব এই ক্র্যকেন। এর সঠিক বিবরণ কোথাও ঠিক করে দেওয়া হয়নি, তবে বলা হয় যে এটি এতটাই বিশাল, যে একটি জাহাজ নাকি এর সামনে খেলনার মতো। এর শরীরে অক্টোপাসের মতো অনেকগুলি হাত আছে। ১৮ শতকে অনেকে একে দেখার দাবিও করে। বলা হয় মাছ ধরার সময় হঠাৎ করে যদি জালে বেশী বেশী মাছ উঠতে শুরু করে তাহলে তাদের সেই মুহূর্তে পারে ফিরে আসা উচিত, কারন সেই মাছগুলি নাকি ক্র্যাকেনের ভয়েই দলে দলে সেদিকে পালিয়ে আসছে।

স্ফিংস

স্ফিংস মিশরের পৌরাণিক জীব, যার সিংহের দেহের ওপর নারী মস্তক এবং দুটি বিশাল ডানা। এটি শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার প্রতীক, পিরামিডের পাশাপাশি এর বহু মুর্তি দেখা যায়।

কাহিনী অনুযায়ী স্ফিংস মরুভূমিতে যাতায়াতকারী সকলকে দাড় করিয়ে একটি ধাঁধা জিজ্ঞাসা করে, আর তার তার উত্তর না পারলে সে সেই মানুষকে মেরে ফেলে। কিন্তু সে যদি উত্তর দিতে পারে তাহলে স্ফিংস নিজেই আত্মহত্যা করে নেয়।

বুরাক

ইসলামিক উপকথায় বর্ণিত একপ্রকার অদ্ভুত জীব যার দেহ গাধার কিন্তু মাথা এক নারীর। ইসলামীক কাহিনী অনুসারে মহম্মদ এই বুরাকের পিঠে চড়ে সাত আসমান পাড় করে আল্লাহর সিংহাসন অবধি পৌঁছেছিলেন।

কাপ্পা

কাপ্পা জাপানের উপকথায় বর্ণিত খুব হিংস্র প্রাণী, যার শরীর ব্যাঙের মত, চঞ্চু ও লিপ্তপদ হাঁসের মত এবং এর পিঠে কচ্ছপের মতো খাল। বলা হয় এরা জলে থাকতো এবং রাতের অন্ধকারে মানুষের ওপর আক্রমণ করতো। আর এরা নাকি বাচ্চাদের ওপরেই আক্রমণ বেশি করতো।

ফন

ফন রোমান পৌরাণিক কাহিনীর উল্লিখিত প্রাণী যার দেহের ওপরিভাগ মানুষের মতো আর কোমরের নিচের অংশ ছাগলের মত।

ম্যান্টিকোর

ম্যান্টিকোর গ্রীক পুরাণের এক অত্যন্ত হিংস্র, বিপজ্জনক, আক্রমণাত্মক পশু, যার দেহ সিংহের, মাথা মানুষের এবং লেজ একটি বিছের।

সাইনোসেফালি

মিশরীয় পুরাণে উল্লিখিত হিংস্র এবং মাংসাশী জীব যার মানুষের দেহ এবং কুকুর/শেয়ালের মাথা। বহু মিশরীয় চিত্রকলায় এর ছবি দেখা যায়।

মোনোপদ

মোনোপদ গ্রীক এবং রোমান পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত বামনাকৃতি মানব যাদের একটি মাত্র পা ছিলো। কিন্তু এদের সেই একটি পা এতটাই বড়ো যে দুপুরের কড়া রোদে সেটাকে তারা ছাতার মতো ব্যবহার করতো।


এছাড়াও আরও কিছু পৌরাণিক প্রাণী পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যতায় দেখা যায় যেমনঃ 


  • নরওয়ে দেশের পুরাণে জরমুংগ্যান্ড নামে এক বিশালাকার সাপের কথা বলা আছে। সে নাকি সমুদ্রে থাকে, আর মাঝে মাঝেই সাঁতার কেটে পৃথিবীর শেষপ্রান্তে তীরে গিয়ে ওঠে। সেখানে সে লড়াই করে দেবতাদের সাথে।
  • মধ্যপ্রাচ্যের পুরাণকথায় প্রথম 'গ্রাইফোনের 'উল্লেখ পাওয়া যায়। গ্রাইফোন হল সিংহ আর ঈগল পাখির মিলিত রূপ।
  • বাইবেল আর গ্রিক উপকথায় পাওয়া যায় 'ককাট্রিসে' -কে। এ এক অদ্ভুত প্রাণী — সাপের শরীর অথচ তাতে মুরগির পাখা আর ড্রাগনের লেজ।
  • 'মেডুসা দ্য গর্গন ' হল গ্রিক পুরাণের এক দানবী। তার মাথায় থাকে অজস্র সাপ। কেউ তার মুখের দিকে তাকালেই পাথর হয়ে যেত!!
  • 'ফিনিক্স ' পাখির নাম মোটামুটি আমাদের সবারই জানা। এই ফিনিক্স পাখি নিজের শরীরে আগুন দিয়ে মারা যায়। পরে সেই ছাই থেকে জন্ম নেয় আবার।
  • 'ইউনিকর্ন '- কে আমরা অনেক হলিউড ও বলিউড মুভিতে দেখতে পাই। এদের বিশেষত্ব হলো শরীরটা ঘোড়ার মতো, কিন্তু মাথায় একটা পাকানো শিং আছে।
  • 'বুনিপ' — কি কিছু মনে পড়ল? 'চাঁদের পাহাড় ' উপন্যাসের সেই ভয়ংকর জীবটির নামই ছিল বুনিপ। অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীদের লোককথায় আছে জলাভূমির দানব বুনিপের কথা।
  • গ্রিক পুরাণে উল্লেখ আছে তিন মাথাওয়ালা দানব 'সারবেরাস'-এর কথা। বীর হেরাক্লিস এদের টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছিলেন ইউরিসথিয়াসের রাজদরবারে। আর তারপর তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ছিলেন পাতালপুরীতে।
  • গ্রিক পুরাণে আরও এক দানবের কথা পাওয়া যায়। এর মাথাটা সিংহের, লেজটা সাপের আর শরীরটা ছাগলের।আর এই দানবের নাম 'কিমিরা'।
  • 'মৎস্যকন্যা'-শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে সুন্দরী মেয়ে যার অর্ধেক শরীর মানুষের মতো আর বাকি অর্ধেকটা মাছের মতো। পুরাকাল থেকে মানুষজনের ধারণা, যদি কেউ মৎস্যকন্যার চিরুনি খুঁজে পায় তাহলে তার যেকোনো একটি ইচ্ছে পূরণ হয়।
  • সবশেষে আমাদের বাংলার রূপকথার কথা না বললেই চলে না। রূপকথার গল্পে সমৃদ্ধ আমাদের বাংলা ভাষাতেও রয়েছে ব্যাঙ্গমাব্যাঙ্গমীর মতো আজব পাখি আর পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প। যা গ্রীক মাইথলজিতে Pegasus নামে পরিচিত।  


সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts