Wednesday, October 5, 2022

হিন্দু ধর্মের যাবতীয় সকল বিশ্বরূপ

 শ্রী কৃষ্ণতো শুধুমাত্র একবার  যোগযুক্ত অবস্থায় অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন আর তাতেই বৈষ্ণবরা কৃষ্ণকে ঈশ্বর মনে করেন।  নিচে লক্ষ করুন বিষ্ণুর মায়াবসত কারনে দধীচি মুনিও বিষ্ণুকে  বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন।যারা শুধু কৃষ্ণকেই পরমেশ্বর ভাবেন এই পোস্ট তাদের জন্য।

মহাকাব্য মহাভারত বা ভাঃগীতা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন এটা আমরা সবাই জানি। বাস্তবে বিশ্বরূপে স্রষ্টার পরমতত্ত্বকে অনুধাবণ করার জন্য উত্তরদাতা প্রশ্নকর্তাকে দেখিয়ে থাকেন। এখানে প্রশ্ন কর্তা সহজেই সেই পরম তত্ত্বের বিশালত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। তাই উত্তরদাতা কোনভাবেই শুধুমাত্র একাই ব্রহ্ম হয়ে যান না। ইস্কন সহ অনেক বিভেদকামী সংঘটন আজকাল বিশ্বরূপ নিয়ে বড়াই করে হিন্দু সমাজে বিভেদ এনে আমাদের বিভক্ত করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। বলা বাহুল্য শুধু শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বরূপ দেখান নাই আরও অনেকেই দেখিয়েছেন। নিম্নের এর কিছু তুলে ধরা হল। 

 

>> দক্ষের কন্যা সতী জন্মের পরেই দক্ষকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেনঃ

(কূর্মপুরাণ, পূর্বভাগঃ ১২/৫২-৫৩,৫৮)

>> বৃহৎ সংহিতায় ইন্দ্রের বিশ্বরূপের বর্ণনা করা হয়েছেঃ(বৃহৎ সংহিতাঃ ৪৩/৫৪-৫৫)

>> গণেশ রাজা বরেণ্যকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেনঃ

(গণেশ গীতাঃ ৮/৬-৭)

>> ব্রহ্মা চন্ডিকে স্তুতি করে বলছেনঃ

-হে দেবী, তুমিই সবকিছু ধারণ কর, তুমি জগৎ সৃষ্টি কর, তুমিই পালন কর, তুমিই প্রলকালে গ্রাস কর।

(চণ্ডীঃ ১/৬৮-৬৯)

- এই জগতে আমি একাই, আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় কে আছে? এই দুষ্ট দেখো- আমার বিভূতি আমাতেই প্রবেশ করছে।

(চণ্ডী - ১০/৮)

>>বরাহ পুরাণে শিবের বিশ্বরূপ প্রদর্শিত হয়েছেঃ

- শিব এখানে প্রোদেশ প্রমাণমাত্র হয়েও শতশীর্ষ, শত উদর বিশিষ্, সহস্র বাহু, সহস্র পদ, সহস্র চক্ষু, সহস্র মস্তক ও সহস্র মুখ সমন্বিত। অণু থেকে ক্ষুদ্র হয়েও সর্ববৃহৎ।

(বরাহ পুরাণ - ১/৯/৬৮)

>> বায়ু পুরাণেও শিবের বিশ্বমূর্তি বর্ণিত হয়েছেঃ

- শিবের উৎপত্তি অব্যাক্ত, তার দেহ ব্যাক্ত অর্থাৎ প্রকাশিত। তার দেহের অন্তর্গতসমূহ কাল। অগ্নি তাঁর মুখ, চন্দ্র ও সূর্য তার নেত্রদ্বয়, দিকসমূহ তাঁর কর্ণ, বায়ু তার ঘ্রাণ, বেদ তার বাক্য, অন্তরীক্ষ শরীর, পৃথিবী পদদ্বয়, তারকাগণ রোমকূপ।

(বায়ু পুরাণঃ ১/৯/৬৮)

>> বামন পূরাণেও শিবের বিশ্বরূপ পাওয়া যায়ঃ

- তুমিই বিষ্ণু, তুমিই ব্রহ্মা, তুমিই মৃত্যু, তুমিই বরদ, তুমি সূর্য ও চন্দ্র, তুমি ভূমি, তুমি জল, তুমি যজ্ঞ, নিয়ম, তুমি অতীত, ভবিষ্যৎ, তুমি আদি ও অন্ত, তুমি সূক্ষ্ম ও স্থুল, তুমিই (বিরাট) পুরুষ।

(বামন পুরাণঃ ৫৪/৯৬-৯৯)

>> পদ্মপুরাণে ব্রহ্মার বিশ্বরূপের বর্ণনাঃ

- হে বিভু, আমি দেখছি তোমার অনেক মুখ, তুমি যজ্ঞের গতি, তুমি পুরাণ পুরুষ, তুমি ব্রহ্মা, ঈশ, জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা। প্রপিতামহ, তোমাকে নমস্কার।

(পদ্মপুরাণ সৃষ্টি খণ্ডঃ ৩৪/১০০)





>> গণেশ গীতাতে গণেশকে ব্রহ্মস্বরূপ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। গণেশ নিজের স্বরূপ বর্ণনা করছেন এভাবে:

- হে রাজন। শিব, বিষ্ণু, শক্তি এবং সূর্যে যে ভেদবুদ্ধি সে আমারই সৃষ্টি, যেহেতু আমিই জগৎ সৃষ্টি করি, হে প্রিয়। আমিই মহা বিষ্ণু, আমিই সদাশিব, আমিই মহাশক্তি, আমিই অর্যমা।

(গণেশ গীতাঃ ১/২০-২২)

>> মহাভারতের মার্কেণ্ডেয়-কৃত কার্তিকেয় স্তবে কার্তিকেয়ে বিশ্বমূর্তিরূপে বন্দিত হয়েছেনঃ

- তুমি পদ্মপলাশলোচন, তুমি অরবিন্দতুল্যমুখ-বিশিষ্ট, তোমার সহস্র বদন,সহস্র বাহু, তুমি লোকপাল, শ্রেষ্ঠ হরি, সকল দেব ও অসুরগণের আবাধ্য।

(মহাভাঃ বনপর্বঃ ২৩১, অঃ৪৩)

>> লিঙ্গপুরাণ পূর্বভাগের ৩৬ তম অধ্যায়ে এরকম বর্ননা এসেছে। শ্রীবিষ্ণু ব্রাহ্মণবেশে দধীচি মুনির নিকট এসে বললেন - আমি আপনার নিকট বর প্রার্থনা করি আমাকে বর প্রদান করুন। দধীচি মুনি বললেন রুদ্রদেবের অনুগ্রহে ভূত ভবিষ্যত আমি জানি। আপনাকে আমি চিনিতে পারিয়াছি আপনি স্বরূপে ফিরে আসুন। আপনি কৃপা করে বলুন শিব আরাধনা পরায়ন ব্যক্তির কোন ভীতি থাকে? আমি কাহারও সমীপে ভয় পাই না। তখন বিষ্ণু ছদ্মবেশ ত্যাগ করে বললেন - হে বিপ্র আমি জানি তুমি কাহারো নিকট ভয় পাও না তবুও তুমি সভামধ্যে ক্ষুপভূপতিকে বলো আমি ভয় পাইতেছি। তখন মহামুনি বললেন আমি ভয় পাই না। তখন বিষ্ণু ক্ষুব্ধ হইয়া মহামুনিকে চক্র উত্তোলন করে মারতে উদ্যত হলেন। তখন মুনির সহিত ভয়ানক যুদ্ধ বাধলো। অতপর বিষ্ণু মুনির বিস্ময় সাধনার্থে বিশ্বমূর্তি ধারন করলেনঃ

- অনন্তর হরি মুনির বিস্ময় সাধনার্থে বিশ্বমূর্তি ধারন করলেন। মুনিবর ভগবান দধিচী নারায়ন শরীর মধ্যে পৃথক পৃথক দেবতা, কোটি কোটি রুদ্র এবং কোটি কোটি ব্রহ্মান্ড অবলোকন করলেন।

(৫৮;৫৯)

অতঃপর দধীচি মুনি মুনি বললেন -

- হে মহাবাহো! বিচারপূর্বক প্রতিভা দ্বারা মায়া ত্যাগ করুন, হে মাধব! বিজ্ঞানসহস্র নিতান্ত দূর্বিজ্ঞেয়। হে অনিন্দিত! আমি তোমাকে দিব্যদৃষ্টি দান করিতেছি, তুমি আমার শরীর মধ্যে তোমা সহ সমস্ত জগৎ ব্রহ্মা, রুদ্র এই সকল অবলোকন করো। (৬২;৬৩)

শ্লোকগুলোতে দধীচি মুনি বিশ্বরূপ কে মায়ার সাথে তুলোনা করেছেন এমনকি তিনি নিজেও বিষ্ণুকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছেন। অতঃএব বিশ্বরূপ প্রদর্শন একজন মুনির পক্ষেও সম্ভব।

পুরাণ সমূহে বিশ্বরূপের এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে।

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts