Tuesday, April 5, 2022

পরমেশ্বর শিব কি কারো উপাসনা করেন?

 ইদানিংকালে কিছু শিব বিদ্বেষীদের দাবী যে মহাদেব নাকি বিষ্ণুর ধ্যান করেন, আবার কিছু কিছু উগ্র রামায়েতের দাবী মহাদেব পঞ্চমুখে রাম নাম করেন, কিছু কৃৈষ্ণবদের দাবী মহাদেব নাকি পঞ্চমুখে হরি নাম করেন। যদিও কোন বৈদিক রেফারেন্স দেখাতে বললে এরা জোড়াতালি মারে বা গালাগালিতে নেমে আসে। 

আসুন আজ এই বিষয়ে আলোকপাত করবো। আমরা জানি পরমেশ্বর মহাদেবের অনেক অবতার আর অনেক রূপ। সদা শিব বা শাম্বা শিবা কখনও কারো নাম করেন না কারণ উনিই হলে জগতের আদি কারণ এবং উনার থেকেই ব্রম্মা বিষ্ণু রুদ্রের সৃষ্টি। এবার অনেকেই এখানে পদ্মপুরাণের রেফারেন্স টেনে বলবেন যে পরমেশ্বর শিব হরি নাম করেন। আসলে ইনি শিব নন। ইনি হলেন প্রভু পরমেশ্বর শিবের কালরুদ্র রূপ। যিনি আর কেউ নন পরমেশ্বরের অবতার। 
পদ্ম পুরাণের পাতাল খন্ডের ১১৪ অধ্যায়ের ২৪৭ নং শ্লোকে এবং একই ব্যপার নারদ পুরাণের পুর্ব ভাগের৭৯ অধ্যায়ের ২০০তম শ্লোকেও পরমেশ্বর শিব বলেছেন " বাস্তবে আমি কারো উপাসনা করি না ।

যাইহোক অধিকাংশ কৃৈষ্ণব পন্ডিত আমাদের স্মৃতি বা ইতিহাস থেকে প্রমান দেখান যে মহাদেব হরি থেকে সৃষ্টি এবং উনার ললাট থেকে উৎপন্ন । এই ক্ষেত্রে মহাভারতের অনুশাসন পর্বের শ্লোকটি যা দেখানো হয় তা নিম্নে স্ক্রীনশটঃ


 

















এইবার আসুন স্মৃতি শাস্ত্র থেকেই আমরা দেখে নেই এর খন্ডন। 

মূর্খ কৃৈষ্ণবরা সবসময় অর্ধেক পড়ে বাকি অর্ধেক ছেড়ে দেয় বা লুকায়। এটা তাঁদের পুরানো স্বভাব এবং এদের তথাকথিত গুরুরাও এই কাজ করে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করে গেছেন। কেন এই কথা বলছি আসুন একই পর্বের শুরুর দিকে তাকাই। 

মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৩ নং অধ্যায়ে পিতামহের উক্তি স্ক্রিনশট


অর্থ্যাৎ প্রভু শিব শ্রীবিষ্ণুর ( হরির ) সৃষ্টিকর্তা। এবং খেয়াল করে দেখুন উনাকে অক্ষর ব্রহ্ম ( ওঁ) এর স্বরুপ বলা হচ্ছে। 

তাইতো ঋষি মার্কেন্ডেয় বলেছেন 

ওঁ ওঁ 

ওঁঙ্কারম্‌ সৃষ্টিসারম্‌ বিধিবিধি লিখিতম্‌ মোক্ষদক্ষসম্‌ সুবিক্ষম ।

গমগংগম দিব্যলিঙ্গম্‌ গজমুখ বিনুতম স্বর্ণাপূর্ণা সমক্ষসম। 

বেদার্থম্‌ ব্যাসপীঠম্‌ সুর মুনি সহিতম শান্তিকান্তমসুখান্তম। 

বিশ্বশ্বেম্‌ চিৎপ্রকাশম স্মৃতিজন বরদম কাশীনাথম নমামি। 

ওঁ ওঁ ।


এবার আসুন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ কি বলছেন দেখে নেয়া যাক ! 

মহাভারত অনুশাসন পর্ব ১৩/ ২১-২৪


এবার আসুন বৈষ্ণব পুরাণ আর স্মৃতি থেকে দেখা যাক !  


পদ্ম পুরাণ পাতাল খন্ড, ১১৪ নম্বর অধ্যায় ২৪৭ থেকে ২৫৪ নং শ্লোক দেখুন। যদিও বাংলা কোন ভার্সনে এই শ্লোক দেখা যায় না। বাংলা বৈষ্ণব ভাইজানেরা কেটে দিয়েছেন উনারা। প্রভু পরমেশ্বর শিব কারো উপাসনা করেন না। বরং উনাকেই সবাই উপাসনা করেন।





পদ্মপুরাণ/উত্তর খণ্ড/১৭৫ নং অধ্যায় । এখানে শ্রী নারায়ন দেবী লক্ষীকে বলছেন।


শ্রীভগবানুবাচ্ –

" নাহং সুমুখি নিদ্রালুর্নিজং মাহেশ্বরং বপুঃ |

দৃশাতত্ত্বানুবর্ত্তি ন্যাপশ্যাম্যংতর্নিমগ্নযা || ৭ ||

কুশাগ্রয়াধিযা দেবি যদংতর্যোগিনোহৃদি |

পশ্যন্তি যচ্চ বেদানাং সারং মীমাংসতেমৃশম্ || ৮ ||

তদেবমক্ষরং জ্যোতিরাত্মরুপমনামযম্ |

অখংডানংদ সংদোহনিষ্পাদিদ্বৈতবর্জিতম্ || ৯ ||

যদাশ্রয়া জগদ্বৃত্তির্যন্ময়াচানুভূযতে |

নযেনরহিতংকিংচিতজ্জগত্তত্বং চরাচরম্ || ১০ || "

বঙ্গানুবাদ –

উত্তরে ভগবান বিষ্ণু বলেন – হে সুমুখি! আমি কদাপি শয়ন করি না। আমি ধ্যান নেত্রে (নিজেরই অন্তরস্থ) আত্মস্বরূপ মহেশ্বরকে অনুভব করে থাকি। হে দেবি! কুশাগ্রের ন্যায় (তীক্ষ্ণ) (দৃষ্টিসম্পন্ন) যোগীগণ নিজের হৃদয়ে সেই মহেশ্বরকেই অনুভব করে থাকেন। (সকলের হৃদয়ে অবস্থিত সেই অখণ্ড চৈতন্য) সমগ্র বেদের সার এবং মীমাংসা স্বরূপ। সেই দেব (মহেশ্বর) অক্ষর, জ্যোতিরূপ, অরূপ এবং অনামেয়।তিনি অখণ্ড, অনন্ত এবং অদ্বৈত(অদ্বিতীয় পরমেশ্বর)। যার আশ্রয়ে সমগ্র জগৎ, যাকে আমিও(শ্রীবিষ্ণু) অনুভব করে থাকি (ধ্যাননেত্রে), যার বিনা এ জগত-চরাচরের কোনো অস্তিত্বই নেই।












পদ্ম পুরাণে এরপর দেবী লক্ষী-নারায়ণের আরও কথোপকথন আছে। চলুন দেখে নেই। 

লক্ষ্মীদেবী বললেন, আপনিই তো জগতের প্রভু তথা সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার কর্তা। তো আপনার চেয়েও পরমতম তত্ত্ব আর কিই বা আছে? হে অচ্যুত! যদি কেউ থেকেও থাকে তবে তার সম্পর্কে জানতে আমি কৌতুহলী। 

তখন  ভগবান বিষ্ণুদেব বললেন , আমার এই দেহ মায়ার তৈরি। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের মায়াজালে আবদ্ধ আমার দেহ(বিষ্ণুরূপীদেহ)।কিন্তু আমার আত্মরূপ (অর্থাৎ আত্মা)এই মায়াদেহ হতে পৃথক, সেটি অদ্বৈত, বিকাররহিত, আদি-অন্ত শূণ্য এবং ভাব-অভাব এবং অদ্বৈত এরও উপরে। সেই আত্মা শুদ্ধ সম্বিত্ স্বরূপ(পরাচৈতন্য), পরমানন্দময় এবং সুন্দর। আত্মস্বরূপ সেই ঈশ্বরই (পরমেশ্বর) গীতার(ভগবদ্গীতা) দ্বারা ব্যক্ত হয়েছে।

একই কথা কিন্তু আদিগুরু শংকরও বলেছেন 

কাজেই এইটা পরিস্কার যে শ্রী হরির শরীর জড় এবং উনি তা নিজ মুখেই মাতা লক্ষীকে বলেছেন। 



এবার আসি কৃৈষ্ণবদের প্রাণভোমরা ভাগবত নিয়ে ।। 


ভাগবত মহাপুরাণের চতুর্থ স্কন্ধের ষষ্ঠোহধ্যায়ের ৪২ নং শ্লোকে প্রজাপতি ব্রহ্মা বলেন -


জানে ত্বামীশং বিশ্বস্য জগতো যোনিবীজয়োঃ । 

শক্তেঃ শিবস্য চ পরং যত্তদব্রহ্ম নিরন্তরম ।। 


অর্থ - ব্রহ্মা বললেন হে মহাদেব! আমি জানি আপনি সমগ্র বিশ্বের অধীশ্বর, কারণ জগতের যোনিস্বরূপ যে শক্তি (প্রকৃতি) এবং বীজস্বরূপ যে শিব (পুরুষ) তা আপনিই এবং আপনিই অতীত নির্বিকার একরস পরব্রহ্ম স্বরূপ ।।
















এখানেই শেষ না আরও আছে ফ্রবু !! 



এবার মহাভারতের দিকে তাকাই? আসুন সেখানে প্রভু পরমেশ্বর শিবকে নিয়ে কি বলা আছে দেখা যাক ! 

এখানে  স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলছেন প্রভু পরমেশ্বর শিব হলেন সবার আরাধ্য ! 

তবে এখানে কেউ কেউ কৃষ্ণকে ছোট করতে গিয়ে মহাদেবকে বড় করছি এমন যাতে না ভাবেন সেখানে আমার আরও কিছু প্রমাণ। কারণ দ্বৈতবাদী কৃৈষ্ণবরা অসুর হলেও আমরা শৈবরা ভেদ মানি না।

এখানে অন্যতম পান্ডব শ্রী অর্জুন কি বলছেন দেখুন। মহাদেবকে পুজা করে উনি প্রভুর মাহাত্ম্য বর্ণনায় বলেছেন । যিনিই বিষ্ণু তিনিই শিব আবার যিনি শিব তিনিই বিষ্ণু। এরা অভেদ এবং এদের মাঝে কোন



 ভেদ নেই। 


শেষ করছি কিছু শ্রুতি প্রমাণ দিয়ে।  

অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রপদ্যতে।
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ।। (শ্বেতশ্বতর-৪/২১)
অর্থাৎ : হে রুদ্র, তুমি মৃত্যুঞ্জয়। যে জন্মাদি মৃত্যুভয়ে ভীত সেই তোমার শরণ নেয়। তোমার প্রসন্ন মুখ আমার দিকে ফেরাও এবং নিয়ত আমাকে রক্ষা কর।


একো হি রুদ্রো ন দ্বিতীয়ায় তস্থূঃ য ইমান্ লোকান্ ঈশত ঈশনীভিঃ।
প্রত্যক্ জনান্ তিষ্ঠতে সঞ্চুকোপান্তকালে সংসৃজ্য বিশ্বাঃ ভুবনানি গোপাঃ।। (শ্বেতাশ্বতর-৩/২)

অর্থাৎ : এক সেই পরমেশ্বর কে, যাঁর দ্বিতীয় কেউ নেই ? তিনি হলেন রুদ্র। প্রতি জীব-হৃদয়ে তাঁর অবস্থান– তাই পরমাত্মা। তিনিই তাঁর সেই ঐশ্বরিক শক্তি-বুদ্ধি দিয়ে জগৎকে শাসন করছেন। সেই শক্তির কোন ব্যাখ্যা চলে না। ব্রহ্মাণ্ডকে সৃষ্টি করে প্রতিটি মানুষের অন্তরে তিনি অবস্থান করছেন, আবার গোপা অর্থাৎ রক্ষাও করছেন। আবার অন্তিমকালে এলে সংহার-মূর্তিতে তিনিই সব সংহার করছেন।


সর্বাননশিরোগ্রীবঃ সর্বভূতগুহাশয়ঃ।
সর্বব্যাপী স ভগবান্ তস্মাৎ সর্বগতঃ শিবঃ।। (শ্বেতাশ্বতর-৩/১১)
অর্থাৎ : তিনি সর্বানন– জগতের সব মুখই তাঁর মুখ। জগতের প্রাণীমাত্রেরই মাথা, গলা– তাঁরই শির-গ্রীবা। প্রাণীর ভেতরে সেই গুহা, যার নাম বুদ্ধি, তিনি আছেন সেই গুহায়। সর্বব্যাপী এবং সর্বগত শিবস্বরূপ মঙ্গলময় তিনি ভগবান।


--- সর্বভূতে সমগ্র জীবেদের মুখ, গলা, ঘাড় রূপে সেই সর্বব্যাপী শিবই আছেন এবং তিনিই প্রত্যেকের হৃদয়গুহায় প্রত্যগাত্মারূপে বিরাজিত।

সব শেষে পবিত্র অথর্ব্বশির থেকে একটি স্ক্রিনশট! 
বোঝাই যাচ্ছেন প্রভু পরমেশ্বর শিব হলেন অদ্বিতীয় পরমেশ্বর যার থেকে আমি আপনি এমনকি সকল অবতারের সৃষ্টি। 



সকল কৃৈষ্ণবের মানসিক সুস্থতা কামনা করছি প্রভু পরমেশ্বরের কাছে। 
নমঃ শিবায়।। 









শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন...

Popular Posts