ইদানিংকালে কিছু শিব বিদ্বেষীদের দাবী যে মহাদেব নাকি বিষ্ণুর ধ্যান করেন, আবার কিছু কিছু উগ্র রামায়েতের দাবী মহাদেব পঞ্চমুখে রাম নাম করেন, কিছু কৃৈষ্ণবদের দাবী মহাদেব নাকি পঞ্চমুখে হরি নাম করেন। যদিও কোন বৈদিক রেফারেন্স দেখাতে বললে এরা জোড়াতালি মারে বা গালাগালিতে নেমে আসে।
আসুন আজ এই বিষয়ে আলোকপাত করবো। আমরা জানি পরমেশ্বর মহাদেবের অনেক অবতার আর অনেক রূপ। সদা শিব বা শাম্বা শিবা কখনও কারো নাম করেন না কারণ উনিই হলে জগতের আদি কারণ এবং উনার থেকেই ব্রম্মা বিষ্ণু রুদ্রের সৃষ্টি। এবার অনেকেই এখানে পদ্মপুরাণের রেফারেন্স টেনে বলবেন যে পরমেশ্বর শিব হরি নাম করেন। আসলে ইনি শিব নন। ইনি হলেন প্রভু পরমেশ্বর শিবের কালরুদ্র রূপ। যিনি আর কেউ নন পরমেশ্বরের অবতার।
পদ্ম পুরাণের পাতাল খন্ডের ১১৪ অধ্যায়ের ২৪৭ নং শ্লোকে এবং একই ব্যপার নারদ পুরাণের পুর্ব ভাগের৭৯ অধ্যায়ের ২০০তম শ্লোকেও পরমেশ্বর শিব বলেছেন " বাস্তবে আমি কারো উপাসনা করি না ।
যাইহোক অধিকাংশ কৃৈষ্ণব পন্ডিত আমাদের স্মৃতি বা ইতিহাস থেকে প্রমান দেখান যে মহাদেব হরি থেকে সৃষ্টি এবং উনার ললাট থেকে উৎপন্ন । এই ক্ষেত্রে মহাভারতের অনুশাসন পর্বের শ্লোকটি যা দেখানো হয় তা নিম্নে স্ক্রীনশটঃ
এইবার আসুন স্মৃতি শাস্ত্র থেকেই আমরা দেখে নেই এর খন্ডন।
মূর্খ কৃৈষ্ণবরা সবসময় অর্ধেক পড়ে বাকি অর্ধেক ছেড়ে দেয় বা লুকায়। এটা তাঁদের পুরানো স্বভাব এবং এদের তথাকথিত গুরুরাও এই কাজ করে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করে গেছেন। কেন এই কথা বলছি আসুন একই পর্বের শুরুর দিকে তাকাই।
মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৩ নং অধ্যায়ে পিতামহের উক্তি স্ক্রিনশট
অর্থ্যাৎ প্রভু শিব শ্রীবিষ্ণুর ( হরির ) সৃষ্টিকর্তা। এবং খেয়াল করে দেখুন উনাকে অক্ষর ব্রহ্ম ( ওঁ) এর স্বরুপ বলা হচ্ছে।
তাইতো ঋষি মার্কেন্ডেয় বলেছেন
ওঁ ওঁ
ওঁঙ্কারম্ সৃষ্টিসারম্ বিধিবিধি লিখিতম্ মোক্ষদক্ষসম্ সুবিক্ষম ।
গমগংগম দিব্যলিঙ্গম্ গজমুখ বিনুতম স্বর্ণাপূর্ণা সমক্ষসম।
বেদার্থম্ ব্যাসপীঠম্ সুর মুনি সহিতম শান্তিকান্তমসুখান্তম।
বিশ্বশ্বেম্ চিৎপ্রকাশম স্মৃতিজন বরদম কাশীনাথম নমামি।
ওঁ ওঁ ।
এবার আসুন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ কি বলছেন দেখে নেয়া যাক !
মহাভারত অনুশাসন পর্ব ১৩/ ২১-২৪
এবার আসুন বৈষ্ণব পুরাণ আর স্মৃতি থেকে দেখা যাক !
পদ্ম পুরাণ পাতাল খন্ড, ১১৪ নম্বর অধ্যায় ২৪৭ থেকে ২৫৪ নং শ্লোক দেখুন। যদিও বাংলা কোন ভার্সনে এই শ্লোক দেখা যায় না। বাংলা বৈষ্ণব ভাইজানেরা কেটে দিয়েছেন উনারা। প্রভু পরমেশ্বর শিব কারো উপাসনা করেন না। বরং উনাকেই সবাই উপাসনা করেন।
পদ্মপুরাণ/উত্তর খণ্ড/১৭৫ নং অধ্যায় । এখানে শ্রী নারায়ন দেবী লক্ষীকে বলছেন।
শ্রীভগবানুবাচ্ –
" নাহং সুমুখি নিদ্রালুর্নিজং মাহেশ্বরং বপুঃ |
দৃশাতত্ত্বানুবর্ত্তি ন্যাপশ্যাম্যংতর্নিমগ্নযা || ৭ ||
কুশাগ্রয়াধিযা দেবি যদংতর্যোগিনোহৃদি |
পশ্যন্তি যচ্চ বেদানাং সারং মীমাংসতেমৃশম্ || ৮ ||
তদেবমক্ষরং জ্যোতিরাত্মরুপমনামযম্ |
অখংডানংদ সংদোহনিষ্পাদিদ্বৈতবর্জিতম্ || ৯ ||
যদাশ্রয়া জগদ্বৃত্তির্যন্ময়াচানুভূযতে |
নযেনরহিতংকিংচিতজ্জগত্তত্বং চরাচরম্ || ১০ || "
বঙ্গানুবাদ –
উত্তরে ভগবান বিষ্ণু বলেন – হে সুমুখি! আমি কদাপি শয়ন করি না। আমি ধ্যান নেত্রে (নিজেরই অন্তরস্থ) আত্মস্বরূপ মহেশ্বরকে অনুভব করে থাকি। হে দেবি! কুশাগ্রের ন্যায় (তীক্ষ্ণ) (দৃষ্টিসম্পন্ন) যোগীগণ নিজের হৃদয়ে সেই মহেশ্বরকেই অনুভব করে থাকেন। (সকলের হৃদয়ে অবস্থিত সেই অখণ্ড চৈতন্য) সমগ্র বেদের সার এবং মীমাংসা স্বরূপ। সেই দেব (মহেশ্বর) অক্ষর, জ্যোতিরূপ, অরূপ এবং অনামেয়।তিনি অখণ্ড, অনন্ত এবং অদ্বৈত(অদ্বিতীয় পরমেশ্বর)। যার আশ্রয়ে সমগ্র জগৎ, যাকে আমিও(শ্রীবিষ্ণু) অনুভব করে থাকি (ধ্যাননেত্রে), যার বিনা এ জগত-চরাচরের কোনো অস্তিত্বই নেই।
পদ্ম পুরাণে এরপর দেবী লক্ষী-নারায়ণের আরও কথোপকথন আছে। চলুন দেখে নেই।
লক্ষ্মীদেবী বললেন, আপনিই তো জগতের প্রভু তথা সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার কর্তা। তো আপনার চেয়েও পরমতম তত্ত্ব আর কিই বা আছে? হে অচ্যুত! যদি কেউ থেকেও থাকে তবে তার সম্পর্কে জানতে আমি কৌতুহলী।
তখন ভগবান বিষ্ণুদেব বললেন , আমার এই দেহ মায়ার তৈরি। সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের মায়াজালে আবদ্ধ আমার দেহ(বিষ্ণুরূপীদেহ)।কিন্তু আমার আত্মরূপ (অর্থাৎ আত্মা)এই মায়াদেহ হতে পৃথক, সেটি অদ্বৈত, বিকাররহিত, আদি-অন্ত শূণ্য এবং ভাব-অভাব এবং অদ্বৈত এরও উপরে। সেই আত্মা শুদ্ধ সম্বিত্ স্বরূপ(পরাচৈতন্য), পরমানন্দময় এবং সুন্দর। আত্মস্বরূপ সেই ঈশ্বরই (পরমেশ্বর) গীতার(ভগবদ্গীতা) দ্বারা ব্যক্ত হয়েছে।
একই কথা কিন্তু আদিগুরু শংকরও বলেছেন
কাজেই এইটা পরিস্কার যে শ্রী হরির শরীর জড় এবং উনি তা নিজ মুখেই মাতা লক্ষীকে বলেছেন।এবার আসি কৃৈষ্ণবদের প্রাণভোমরা ভাগবত নিয়ে ।।
ভাগবত মহাপুরাণের চতুর্থ স্কন্ধের ষষ্ঠোহধ্যায়ের ৪২ নং শ্লোকে প্রজাপতি ব্রহ্মা বলেন -
জানে ত্বামীশং বিশ্বস্য জগতো যোনিবীজয়োঃ ।
শক্তেঃ শিবস্য চ পরং যত্তদব্রহ্ম নিরন্তরম ।।
অর্থ - ব্রহ্মা বললেন হে মহাদেব! আমি জানি আপনি সমগ্র বিশ্বের অধীশ্বর, কারণ জগতের যোনিস্বরূপ যে শক্তি (প্রকৃতি) এবং বীজস্বরূপ যে শিব (পুরুষ) তা আপনিই এবং আপনিই অতীত নির্বিকার একরস পরব্রহ্ম স্বরূপ ।।
এখানেই শেষ না আরও আছে ফ্রবু !!
এবার মহাভারতের দিকে তাকাই? আসুন সেখানে প্রভু পরমেশ্বর শিবকে নিয়ে কি বলা আছে দেখা যাক !
এখানে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলছেন প্রভু পরমেশ্বর শিব হলেন সবার আরাধ্য !
তবে এখানে কেউ কেউ কৃষ্ণকে ছোট করতে গিয়ে মহাদেবকে বড় করছি এমন যাতে না ভাবেন সেখানে আমার আরও কিছু প্রমাণ। কারণ দ্বৈতবাদী কৃৈষ্ণবরা অসুর হলেও আমরা শৈবরা ভেদ মানি না।
এখানে অন্যতম পান্ডব শ্রী অর্জুন কি বলছেন দেখুন। মহাদেবকে পুজা করে উনি প্রভুর মাহাত্ম্য বর্ণনায় বলেছেন । যিনিই বিষ্ণু তিনিই শিব আবার যিনি শিব তিনিই বিষ্ণু। এরা অভেদ এবং এদের মাঝে কোন
শেষ করছি কিছু শ্রুতি প্রমাণ দিয়ে।