Friday, March 19, 2021

মিয়ানমারকে চীন একতরফা বা অন্ধভাবে সমর্থন করে কেন?

 মিয়ানমারে চীনের স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে প্রথমেই বলতে হয় আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কথা যার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন। দুই পক্ষই মিয়ানমারকে হাত করতে হয় তাদের সরাসরি পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, নয়তো তাদের বিপক্ষে না গিয়ে নীরব থেকেছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে নৌশক্তির ভূমিকা ব্যাপক। আর এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে বঙ্গোপসাগরকেও দখলে রাখা গুরুত্বপূর্ণ! বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার তুলনায় মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবেই মিয়ানমারের উপর সমর্থনের পাল্লা ভারী হওয়ার কথা। তার উপর গত বছরের(২০২০) নভেম্বরে চীনকে টক্কর দিতে ভারত, আমেরিকাসহ চারটি দেশ যৌথ নৌ মহড়া চালিয়েছে বঙ্গোপসাগরে, চীন এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। একটা কথা না বললেই নয়, চীনের সাথে বঙ্গোপসাগরের সরাসরি সীমান্ত নেই। সেক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা মিয়ানমার।

মিয়ানমারের সমুদ্রাঞ্চল

দ্বিতীয়ত, চীন কখনোই অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অংশ বলে স্বীকৃতি দেয়নি, এমনকি তারা গত বছরের সেপ্টেম্বরে অরুণাচলকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করেছে! এর আগে বেশ কয়েকবার চীনের সেনারা অরুণাচল প্রদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। ওদিকে ভারত অরুণাচল প্রদেশসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে যোগাযোগ সহজ করার জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে কালাদান নদীকেন্দ্রীক 'কালাদান প্রোজেক্ট' গ্রহণ করেছে। এটা সফল হলে ভারতের অরুণাচলসহ অন্যান্য রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে যা চীনের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

কালাদান প্রোজেক্ট

ভারত থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ সহজতর করার জন্য মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করছে, আর তা করতে পারলে এসব দেশে ভারতের প্রভাব বাড়বে। এখানেও চীনের কথা বলতে গিয়ে ভারতকে টানার কারণ চীন-ভারত দ্বন্দ্ব এবং মিয়ানমারকে কাছে টানার প্রতিযোগিতা!

ত্রিদেশীয় সড়ক যোগাযোগ

এবার ভারতকে বাদ দিয়ে দেখা যাক মিয়ানমারে চীনের সরাসরি কী কী স্বার্থ।

প্রথমত, মিয়ানমারে যে দেশটির বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি সেটি হলো চীন, গত ৩০ বছরে যার পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

দ্বিতীয়ত, চীন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মধ্য দিয়ে তার ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত গ্যাস ও তেলের পাইপলাইন স্থাপন করেছে যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা তেলগ্যাস এসব প্রদেশে সহজে নিতে পারছে। উল্লেখ্য, এই পাইপলাইন স্থাপনের সময়ে রোহিঙ্গারা বেশ বিরোধিতা করেছিলো!

চীনের পাইপলাইন

তৃতীয়ত, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কাইয়াকপুতে চীন একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে এবং ৭.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে যার ৭০ শতাংশ মালিকানা চীনের। সেক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব ঠেকানোর জন্য এবং মিয়ানমারে নিজেদের বিনিয়োগ ধরে রাখার জন্য মিয়ানমারে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে চীনের। আর মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব চীন বেশ ভালোমতোই জানে!

একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কি? মিয়ানমারে ভারত ও চীনের যে কর্মযজ্ঞ তার বড় অংশই কিন্তু রাখাইনে, যার জন্য দরকার প্রচুর জমি, নির্বিঘ্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ! সেক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?!

যদি এতক্ষণ আপনারা আমার বকবকানি কষ্ট করে পড়েন তবে এখন একটু ভেবে দেখেন এর ভিতর বাংলাদেশ কি আছে? নেই। চীন বা ভারতের জায়গায় আপনি থাকলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন? নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই মিয়ানমারকে। বাংলাদেশকে ভারতের না লাগবে অরুণাচল প্রদেশের সাথে যোগাযোগ করতে, না লাগবে থাইল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করতে। চীনেরও বাংলাদেশকে তেল বা গ্যাস কোনটারই পাইপলাইন নিতে দরকার নেই! শুধু বিনিয়োগে দরকার আছে। তবে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বিনিয়োগ তো মিয়ানমারেও করে! আর মিয়ানমার আসলেই এক্ষেত্রে ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী রাষ্ট্র যারা দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ঠাণ্ডা লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফসল ঘরে তুলতে পেরেছে!

আমরা মাঝেমাঝেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আবেগে অভিমান করি কেন তারা বিপদের দিনে পাশে নেই! এইসব অভিমান, অন্য দেশকে দোষারোপ, এসব একেবারেই অর্থহীন। দেশের সাথে দেশের বন্ধুত্বে নিঃস্বার্থ কিছু নেই। এই বন্ধুত্ব আমার সাথে আমার ছোটবেলার বন্ধুর মত না যে আমাকে বাঁচানোর জন্য নিজে পিঠ পেতে দিয়ে মার খাবে! অন্য দেশগুলোর কাছে আপনি মানুষ নন, পণ্য। আপনি যদি তাদের কাছে তুলে ধরতে পারেন যে অন্য দেশটির তুলনায় আপনি তাদের কাছে বেশি লাভজনক তবেই তারা তাকে ভুলে আপনাকে সমর্থন দিতে পারে! নইলে কখনোই নিজেদের ক্ষতি করে আপনাকে সাহায্য করবে না! এই যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমেরিকা বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে তার পেছনেও কোন না কোন স্বার্থ আছে। এই একই আমেরিকা কিন্তু ফিলিস্তিনে ইজরায়েলি বসতি স্থাপন কিংবা ইয়েমেনে সৌদি হামলার সময়ে নীরব থাকে! স্বার্থ!!

আপনাকে অন্য দেশের কাজে লাগলে আপনি তার কাছে হীরা, আর কাজে না লাগলে আপনি স্রেফ পিঁপড়া!

শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন...

Popular Posts