অনেকেই বলে
থাকেন শ্রীকৃষ্ণের দেহ নাকি পোড়ানো হয় নাই। আবার অনেকে এও মনে করে থাকেন যে শ্রীকৃষ্ণের
দেহ দিব্য তাই উনার আবার কিসের দেহ সৎকার?
মহাভারত এবং
বৈষ্ণব পুরাণ থেকে আজ প্রমান দিচ্ছি।
প্রথমেই আসি
মহাভারতের মৌসল পর্বের সপ্তম অধ্যায় , শ্লোক সংখ্যা ৩১ এবং ৩২ ।
অন্বিষ্য দাহযামাস পুরুষৈরাপ্তকারিভিঃ ৩১।।
স তেষাং বিধিবৎ কত্বা প্রেতকার্য্যাণি পান্ডবঃ ।
সপ্তমে দিবসে প্রাযাদবথমারুহ্য সত্বরঃ ॥৩২॥
সরলার্থঃ তাহার পর অর্জ্জুন, রাম ও কৃষ্ণের শবীর দুইটি অন্বেষণ করিয়া বিশ্বস্ত ঔর্ধ্বদেহিক ক্রিয়াধিকারী পুরুষগণদ্বারা সেই শরীব দুইটি দাহ করাইলেন ৩১
অর্জ্জুন যথাবিধানে তাঁহাদের প্রেতকার্য্য করাইয়া সপ্তম দিবসে রথে আরোহণ করিয়া সত্বর দ্বারকা হইতে প্রস্থান করিলেন।৩২॥
এবার আসি বিষ্ণু
পুরাণে। যা অতি প্রাচীন পুরাণগুলির মাঝে অন্যতম। তো এই পুরাণের পঞ্চম অংশের ৩৮ তম অধ্যায়ের
১নং এবং ৫ নং শ্লোক দেখুন।
সংস্কারং লম্ভয়ামাস তথা ন্যেষামনুক্রমাৎ ॥ ১
অষ্টৌ মহিষ কথিতা রুক্মিনীপ্রমুখাস্তু যাঃ
উপগৃহ হরের্দেহং বিবিশুস্তা হতাশনম। ২.
সরলার্থঃ শ্রীপরাশর কহিলেন অর্জ্জুন, কৃষ্ণ ও রামের কলেবরদ্বয় এবং অনন্য প্রধান প্রধান যাদবগণের দেহ সকল অন্বেষণ করিয়া সংস্কার করাইলেন। রুক্মিণী -প্রমুখা কৃষ্ণের যে আটটী মহিষী কথিত হইয়াছেন, তাঁহারা সকলেই হরির দেহ আলিঙ্গন করিয়া অগ্নিতে প্রবেশ করিলেন। .
নিশ্চক্রাম জনং সর্ব্বং গৃহীত্বা বজ্রমেব চ॥ ৫
সরলার্থঃ অনন্তর অজ্জুন যথাবিধি প্রেতকার্যা-সমাপনান্তে বজ্র ও অন্যান্য কৃষ্ণমহিষী” 'প্রভৃতিকে লইয়া দ্বারকা হইতে নিশক্রান্ত হইলেন।
তাহলে দেখলেন
কিভাবে অর্জুন কতৃক ভগবান কৃষ্ণের স্থুল শরীরকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হল। এখন প্রশ্ন
হল ভগবানের তো জন্ম মৃত্যু কিছুই হয় না। তাহলে এই কৃষ্ণ কি ভগবান নন বা ঈশ্বর নন? (যেহেতু
অনেকেই ভগবান কে ঈশ্বর সাদৃশ মনে করেন)
উত্তর হল, সূর্য্যের
উদয় অস্ত কিছুই হয় না কিন্তু মানুষ তা দেখছে যে সূর্য উঠছে আর অস্ত যাচ্ছে। তেমনি আত্মার
বিনাশ নেই। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগী ছিলেন এবং পরমাত্মার জ্ঞান উনার ছিল তাই উনি
ভগবান অবশ্যই। কিন্তু সেই উপাধি আমরা দিচ্ছি শুধু উনার আত্মাকে। উনার পঞ্চভূতের শরীরকে
নয়। শ্রীকৃষ্ণ(আত্মা বলা হচ্ছে) নিজেই বলেছেন আমি অজ (জন্ম রহিত) অব্যয় ( মৃত্যু রহিত)
আবার ভাগবতেও বলা হচ্ছে উনার পিতা মাতা নেই। মানে উনি সেই চিন্ময় পরমাত্মা যিনি ইহ-জগতের
মায়ার উর্ধ্বে। কিন্তু যখন তিনি জড় শরীরে আসেন
তখন তিনি প্রকৃতি আশ্রয় করে প্রকট হন। আর এই কথা গীতাতেই আছে। তাই অবতার অতি মানব কিছু
এমনটা নয়। অবতারেরা সব কিছুর অধীনে থেকেই লীলা করেন। তাই তাঁদের সাধারণ মানুষ ভাবা
যাবে না অবশ্যই। তিনি লোকশিক্ষার জন্য দেহ ধারণ করেন আর জীব জগতকে ধর্ম শিক্ষা দিয়ে
থাকেন।
নমস্কার।
হর হর মহাদেব। জয় শ্রীকৃষ্ণ।