Sunday, August 9, 2020

ভগবান আদি শংকরের বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ যে গরুর মাংস খাবার কথা বলা হচ্ছে সেই সম্পর্কে আপনার মতামত বা খণ্ডন কি?

 হোক তা বিধর্মী ষড়যন্ত্রকারী কিংবা হোক মুর্তি পূজা বা প্রতীক পূজা বিরোধী কতিপয় ব্যাক্তি। সবার সেই এক কথা। আপনাদের ধর্মে তো গরু খাওয়া আছে কিংবা, আপনাদের মতন যারা শৈব বা অদ্বৈতবাদী আছেন যারা আদি শঙ্করকে মানেন বা শ্রদ্ধা করেন এরা কি পারবেন বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ যে গরুর মাংস খাবার কথা বলা হচ্ছে তার খণ্ডন দিতে? কলার উচিয়ে অনেকেই বলে থাকেন তমুকই একমাত্র এর খণ্ডন দিয়েছেন বা সহজ কথায় শ্লোকের  মাঝে অন্য কিছু খুঁজে পেয়েছেন ।

আসুন প্রথমেই দেখে নেই সেখানে কি বলা আছে। মানে রামকৃষ্ণ মিশন কতৃক প্রকাশিত গ্রন্থে কি লেখা। 














শুধুমাত্র এই লেখাগুলোকে দেখিয়ে কিছু কতিপয় অসাধু ব্যাক্তি প্রমাণ করতে চায় যে আদি গুরু শংকরপন্থিরা গরুর মাংস খাবার সমর্থন করেন এবং এরা বেদ বিমুখ কার্য করে থাকেন। বলা বাহুল্য এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা বা গ্রন্থ অধ্যয়ন না করেই এরা যেকোনো উপসংহারে এসে দাড়িয়ে যান। কিছু প্রশ্ন করলে তোতা পাখির মতন একটাই কথা আওড়াতে থাকেন আর তা হল " এইগুলা মধ্যযুগে বিকৃত হয়েছে আর তাই সব প্রক্ষিপ্ত"। যদিও এর বিপরীতে কোন প্রমান এরা উপস্থাপন করতে পারেন না। 
যেমন ভাগবত পুরান নিয়ে এঁদের দাবী ইহা নাকি বোপদেব রচিত অথচ। আদিগুরু ভগবান শঙ্করাচার্যের গুরু গোবিন্দপাদের গুরু গৌড়পাদ।(অর্থাৎ শঙ্করাচার্যের গুরুর গুরু) তাঁর "উওর গীতা" ভাষ্যে এবং "সাংখ্য কারিকা বৃত্তি" গ্রন্থে শ্রীমদ্ভাগবতমের নাম এবং একাধিক শ্লোক উল্লেখ করেছেন।গৌড়পাদ শুধুমাত্র শ্লোক নয়,শ্রীমদ্ভাগবতের নামসমেত ১০/১৪/৪ শ্লোক উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও গৌড়পাদ শ্রীমদ্ভাগবতমে ১/৩/১ এর "জগৃহে পৌরুষং রুপং" শ্লোকটি তার পঞ্জীকরণ ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছে।
শঙ্করাচার্যের জন্ম উইকিপিডিয়া মতে ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে।শঙ্করাচার্যের গুরুর গুরু এক্ষেত্রে কমপক্ষে হলেও ১৫০-২০০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ৫০০ খ্রীস্টাব্দে শ্রীমদ্ভাগবতের কোটেশন ব্যবহার করে গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন।সুতরাং এখানে এটা প্রমাণ হয় যে শ্রীমদ্ভাগবত ১৪০০-১৫০০ খ্রীস্টাব্দের মোঘলদের দ্বারা বা বৈষ্ণবদের দ্বারা রচিত গ্রন্থ নয় বরং শ্রীমদ্ভাগবতের আর্বিভাবের ইতিহাস আরোও অনেক পুরোনো।

আবার, পঞ্চম শতকে রচিত জৈনধর্মগ্রন্থ "নন্দী সূত্র" এ শ্রীমদ্ভাগবতের নাম আছে।এই গ্রন্থে জৈনধর্মে নিষিদ্ধ গ্রন্থসমূহের তালিকা দেওয়া হয়েছে।এটিতে সরাসরি রামায়ণ,মহাভারত,ভাগবত পুরাণ,সাংখ্যকারিকা ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।ইহার রচয়িতা বল্লভী।তিনি মহাবীর জৈনের ৯৮০ বছর পরের ব্যাক্তিত্ব।
সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর সময়কাল পঞ্চম শতাব্দীতে মানা হয়।এটি প্রমাণ করে শ্রীমদ্ভাগবতম একাদশ শতাব্দীর বোপদেব রচিত নয়।বরং ইহা শঙ্করাচার্যের বহু পূর্ববর্তী।
সুতরাং আবারও প্রমাণিত হলো যে শ্রীমদ্ভাগবত বোপদেব কিংবা বৈষ্ণবদের দ্বারা রচিত গ্রন্থ নয় বরং শ্রীমদ্ভাগবতের আর্বিভাবের ইতিহাস আরোও অনেক পুরোনো।
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে আসল ইতিহাস পর্যালোচনা করলে পুরাণাদি শাস্ত্র তথা স্মৃতিগুলো যে অক্ষত এবং ভুল নয় তা বোঝা যায়। কিন্তু মুর্খের চোখ, যত না পড়ে দোষারোপ করতে পারে ততই এঁদের সুবিধা হয়। 
তো আসুন একটু বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ যে গরুর মাংস খাবার কথা বলা হচ্ছে সেই বিষয়ে পর্যালচনা করা যাক। 
যদি আমরা আমাদের সবথেকে অথেন্টিক (বিশ্বাসযোগ্য) পাব্লিকেশন গীতাপ্রেসের বৃহদারন্যক উপনিষদ ভাষ্যে ৬/ ৪/ ১৮ এর দিকে তাকাই তাহলে কি দেখতে পাই? 
নিম্নের স্ক্রীনশট দেখুন। যারা হিন্দি বোঝেন তাঁরা সহজেই ধরতে পারবেন। 

এই দুই স্ক্রীনশট পর্যালোচনা করছি। 

শ্লোকের মূল অনুবাদঃ 

যিনি চান তার পুত্র প্রখ্যাত পন্ডিত, বিদ্যানদের সভায় নির্ভয়ে প্রবেশকারী তথা শ্রবনমুখী বানী বলার যোগ্য, সম্পূর্ণ বেদের সাধ্যায় করে এবং পুরো শতবছর জিবিত থাকে, সেই পুরুষ এবং তার পত্নী ঔষধীর শাঁস এবং চাউল রান্না করে তাতে ঘি মিশিয়ে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। এর দ্বারা উক্ত যোগ্যবান পুত্র জন্ম দিতে সমর্থ হয়। 

ঋষভ নামক ঔষধির (ফলের শাঁস) খাওয়ার নিয়ম আছে বা রয়েছে। 


মূল শংকর ভাষ্যঃ বিবিধং গীতো বিগীতোঃ প্রখ্যাত ইত্তর্থঃ। 

সমির্বিগমঃ সভাং গচ্ছতীতি প্রগল্ম ইত্তর্থঃ ।পান্ডীত্যস্য পৃথগ গ্রহণাৎ ।শুশ্রুশীতাং শ্রতুমিষ্টং রমণীয়াং বাচং ভাষিতা সঙ্গস্কৃতায়া অর্থবত্যা বাচঃ ভাপিতেত্যর্থঃ মাংসমিশ্রমুদং মাংসৌদনম তন্মাংস নিয়মার্থ মাহ ঔখেন বা মাংসেন উক্ষ্যা সেচনসমর্থঃ পুংগস্থদীয়ং মাংসম । ঋষভস্ততোহপ্য ধীক্বয়াস্ত দীয়মার্ষভং মাংসম।


ভাষ্যানুবাদঃ নানা প্রকারে যার মহত্ব গীত হয় তাঁকেই বিগীত   বলা হয়।  বিগীত অর্থ্যাত প্রখ্যাত। সমিতিঙ্গম - বিদ্যান্দের সভায় যেতে পারে এমন নির্ভীক। " সমিতিঙ্গমঃ" - অর্থ হল বিদ্যান অথবা পন্ডিত এই জন্য করা হয় নি। কারণ মন্ত্রে পাণ্ডিত্যের পৃথকভাবে গ্রহণ হয় এমনটা দেখা যায়। শুশ্রুশিতা- অর্থ শুনতে প্রিয় বা শ্রুতিমধুর রমণীয় বাণীর বক্তা , অর্থ্যাত সংস্কারযুক্ত স্বার্থক বানীর বক্তা । ঔষধি অথবা ফলের শাঁসকে মাংস বলা হয় । এর সাথে মিশ্রিত ভাত কে এখানে " মাংসৌদন" বলা হয়েছে। এই ঔষধীর শাঁসকে নিয়মের জন্য বলা হচ্ছে- উক্ষ্যার শাঁসের সাথে। গর্ভাদানের সমর্থ ষাঁড়কে উক্ষ্যা বলা হয়। ষাড়ের সমান শক্তিশালী হওয়ায় ঔষধী বিশেষের নামও উক্ষ্যা। সেটারই শাঁস এখানে অভিষ্ঠ আছে। পূর্বোক্ত ষাঁড় হতেও অধিক শক্তিশালী হলে তাঁকে ঋষভ বলা হয়ে থাকে। তার সমান শক্তিশালী ঔষধি বিশেষের নামও ঋষভ। তারই শাঁস এখানে " আরষভ" বুঝতে হবে। 

গীতাপ্রেসের ভাষ্য বিবৃতিঃ উক্ষ্যা শব্দের অভিধানে   ২ প্রকার অর্থ পাওয়া যায়। কলকাতা হয়ে প্রকাশিত বাচসপত্ত নামক বৃহৎ সংস্কৃত অভিধানে এইটিকে অষ্টবর্গান্তরগত ঋষভ নামক ঔষধির পর্যায়ে মানা হয়েছে। " ঋষভ ঔষধি চ " ।  প্রসিদ্ধ ইংরেজ বিদ্বান মনিয়র উলিমসন তার নিজের বৃহৎ সংস্কৃত - ইংরেজী কোষ অভিধানে " সোম " নামক বৃক্ষের পর্যায়ে মেনেছেন। 

" ঋষভ" নামক ঔষধির আয়ুর্বেদে অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রামানিক গ্রন্থ শুশ্রুত সংহিতাএর শুত্রস্থান নামক প্রথম খন্ডের ৩৮তম অধ্যায়ে ৩৭ প্রকার দ্রব্যগণের অন্তর্গত বলে উক্ত ঋষভ শব্দের  উল্লেখ আছে। ভাবপ্রকাশ নামক প্রশিদ্ধ সংগ্রহ গ্রন্থে এর বর্ণন এইধরণের আছে- 

জীবকর্ষভকৌ গেঔ হিমাদ্রীশিখরো দ্রবৌ রশদকন্দবৎ কন্দৌ নিশ্বারৌ সুক্ষ্মপত্রকৌ ................. ঋষভ বৃষশৃংগবৎ .............

ঋষভ বৃষভ বীরো বিষানী ব্রাহ্ম ইত্যপি জীভকর্ষভকৌ   বল্লৌ শিতৌ শুক্রকফপ্রদৌ মধুরৌ পিত্তদাহধ্নৌং কাষবাথক্ষয়ান্নৌ।। 

জীবক এবং ঋষভক (ঋষভ) নামের ঔষধি হিমালয়ের শিখরে উৎপন্ন হয়। এর জড় বা শিকড় রসুনের মতন হয়ে থাকে। গাছের ছোট ছোট পাতা হয় । এর মধ্যে ঋষভ ষাঁড়ের শিংএর আকৃতির মতন হয়। এর জন্য এই ঔষধির নাম ঋষভ।       

এর দ্বিতীয় নাম " বৃষভ", বীর , বিষানী ব্রাহ্ম ইত্যাদি। জীবক এবং বৃষভ ২ টাই শক্তিবর্ধক । শীত, বীর্য এবং কফ মধুর পিত্ত এবং দাহের প্রশমনকারী তথা কাশী এবং বাথ রোগের নাশকারী। ঋষভকে প্রশিদ্ধ অষ্টবর্গ নামক ঔষধীয়তে গন্য করা হয়। ভাবপ্রকাশকারী বলেন, 

জীবকর্ষভকৌ মেদে কাকোল্যৌ ঋদ্ধিবৃদ্ধির অষ্টবর্গোহষ্টমির্দ্রব্যৈঃ কথিতক্ষরকাদিভিঃ ।

আরও বিস্তারিত জানার জন্য পুজ্যপাদ জগতগুরু নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর এই ভিডিওটি দেখার আমন্ত্রন রইলো। 


তাহলে এইখানে প্রমাণিত হল যে এই চক্রান্তকারীরা সনাতন ধর্মের শাস্ত্র  তথা মহান আচার্য্যদের নিন্দা করে সহজ সরল হিন্দুদের বিভ্রান্ত করতেই মুলত এইসব বলে থাকে। আসলে এইখানে অল্প শাস্ত্র অধ্যয়ন করে নিজেদের বিশাল কিছু ভেবে বসা এইসব ষড়যন্ত্রকারীরা মূলত কিছুই জানে না এবং শাস্ত্রের নিগুঢ় তত্ত্ব উপলব্ধি করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যার্থ। তাই এদের থেকে  সবার সাবধান থাকার বিকল্প নেই। 

হর হর মহাদেব 

শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন...

Popular Posts