Sunday, April 14, 2019

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরম শিবভক্ত।

গিরীধারী, গোপীজনবল্লভ। তিনি সুদর্শনধারী, রুক্ষ্মিণীপতি, যোগেশ্বর। তিনি সর্বগুণের আশ্রয় এবং শিবমন্ত্রে দীক্ষিত।

★"সান্দীপনিং সমাসাদ্য ততশ্চ শিবমন্ত্রকম্।
সম্প্রাপ্য তৎপ্রভাবেন বিদ্যাঃ সর্ব্বাঃ স্বয়ং প্রভুঃ।।"
------ জ্ঞান সংহিতা।
অর্থাৎ " প্রভু কৃষ্ণ গুরু সান্দীপনির আশ্রমে গমন করে তাঁর নিকট হতে শিবমন্ত্রে দীক্ষা গ্রহন করেন। শ্রীকৃষ্ণ অল্পকালের মধ্যেই শিবমন্ত্র প্রভাবে সর্ব বিদ্যা আয়ত্ব করেন।"

সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ পরম শৈব ছিলেন। তিনি শিবারাধনা করতেন। শ্রীকৃষ্ণ শিবের কৃপাতেই সর্বশক্তি প্রাপ্ত হন। কেননা শাস্ত্রে বলা হয়েছে--

★"বরাংশ্চ বিবিধান্ লব্ধা তম্মাদ্দেবান্মহেশ্বরাৎ।
অজেয়স্ত্রিষু লোকেষু দেবদেবো জনার্দ্দনঃ।।"
-----সৌরপুরান।

--- "দেবদেব জনার্দন, সেই দেবাদিদেব মহেশ্বরের নিকট থেকে বিবিধ বর লাভ করে ত্রিলোকে অজেয় হয়েছেন।"

শ্রীকৃষ্ণ যে শিবভক্ত ছিলেন, তা তো অন্ধরা স্বীকার করবে না। কারন তাদের জ্ঞান মায়ার দ্বারা অপহৃত হয়েছে। ভক্তিহীন মোহিত অন্ধরা শিবকে কৃষ্ণের দাসানুদাস, আজ্ঞাবহ এই রকম অপকথা প্রচার করছে।  পরমেশ্বর শিবকে দাস প্রমাণ করার জন্য শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করেই চলেছে। আর তাদের অমার্জিত ভাষা আর কি বলব!!!! তারা শাস্ত্রজ্ঞানে অনভিজ্ঞ সহজ সরল মানুষদের, অর্ধশিক্ষিতদের, সম্মানলোভীদের সহজেই তোষামোদ আর অপব্যাখ্যায় ভ্রমিত করে দল ভারী করতে নিজ দলে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়।
এইসব শিব বিরোধীরা "বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভু" কিংবা "ক্ষীরং যথা দধি বিকার বিশেষ যোগাৎ" কিংবা " ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ" প্রভৃতি শ্লোকের অপব্যাখ্যা করে শিব ও শৈব বিরোধী মতবাদ প্রচার করছে।

শাস্ত্র তাই বলেছেন-
★"সমুৎপতস্যন্তি দৈত্যাশ্চ ঘোরেহস্মিন্ বৈ কলৌ যুগে।।
শিবোক্তং কর্ম্মযোগঞ্চ দ্বেষন্তশ্চ কুযুক্তিভিঃ।।"

--- "এই ঘোর কলিযুগে নিহত দৈত্যরা পুনরায় জন্মগ্রহণ করে কুযুক্তি দিয়ে শিবোক্ত কর্মযোগের বিদ্বেষ করবে।"

হচ্ছেও তাই। সেজন্য স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এইসব শিব বিদ্বেষীদের প্রসঙ্গে বলেছেন-

★"যো মাং সমর্চ্চয়েন্নিত্যমেকান্তং ভাবমাশ্রিতঃ।
বিনিন্দন দেবমীশানং স যাতি নরকাযুতম্।।"
---------- কুর্ম্ম পুরানম্।

----- "যে ব্যক্তি একান্ত ভক্তি সহকারে প্রতিদিন আমার অর্চনা করে কিন্তু মহেশ্বরের নিন্দা করে, তাকে সহস্র সহস্র নরকে গমন করতে হয়।"

জানি এইসব কথায় অসাধুরা সংযত হবেনা, বরং ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠবে। তারা যে কত শিব বিদ্বেষী তা বুঝা যায় যখন শিবের প্রসাদকে তারা অবজ্ঞা করে। কত নিকৃষ্ট তাদের ভাবনা!!!!! এরা পরম শৈব কৃষ্ণকে দেয়া ভোগ উনারই আরাধ্য শিবকে দেয়। মানে কৃষ্ণের উচ্ছিষ্ঠ এরা শিবকে নিবেদন করে। ক্তবড় মহাপাপী!!!! 
পক্ষান্তরে শৈবরা ভক্তিভরে কৃষ্ণের প্রসাদ গ্রহণ করেন। শৈবরা জানেন কৃষ্ণ হচ্ছেন শিবেরই রূপভেদ।

ভগবান কৃষ্ণ সর্বদাই শিবকে আশ্রয় করে থাকেন। তিনি শিবেরই পরম ভক্ত। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন-

★"স্থানং প্রাহুরনাদিমধ্যনিধনং যস্মাদিদং জায়তে।
নিত্যং ত্বাহমুপৈমি সত্যং বিভবং বিশ্বেশ্বরং তং শিবম্।।"
-------কুর্ম্ম পুরাণম্।

---"যিনি অনাদি-মধ্য-নিধনস্থানরূপ এবং সমস্ত জগৎ যা হতে উৎপন্ন হয়েছে, আমি সেই সত্য বিভব বিশ্বেশ্বর শিবকে প্রতিনিয়ত আশ্রয় করি।"

প্রভু শ্রীকৃষ্ণ এমনই ভক্ত যে তিনি ভক্তি বিনম্র চিত্তে শিব দর্শনের জন্য আকুল হয়ে মহামুনি উপমন্যুকে বলেছিলেন-

★"ধন্যস্ত্বমসি বিপ্রেন্দ্র কস্ত্বত্তেহস্তীহ পুণ্যকৃৎ।
যস্য দেবাদিদেবস্তে সান্নিধ্যং কুরুতে শ্রমে।।
দর্শনং মুনিশার্দ্দূল দদ্যাৎ স ভগবান শিবঃ।
অপি তাবন্মমাপ্যেবং প্রসাদং বা করোত্বসৌ।।
--------------ধর্ম সংহিতা।

------ " হে বিপ্রেন্দ্র! আপনিই ধন্য, এ জগতে কোন ব্যক্তি আপনা অপেক্ষা পুণ্যবান আছে? দেবদেবও যাঁর আশ্রমে সন্নিহিত থাকেন। হে মুনিশ্রেষ্ঠ! সেই ভগবান শিব কি আমাকে দেখা দিবেন? তিনি কি আমার প্রতি এরূপ অনুগ্রহ করবেন?"

শিবকৃপা লাভের জন্য মহামুনি উপমন্যু আশ্রমে শিবকথা শ্রবনে আট দিন অতিবাহিত হলে শ্রীকৃষ্ণ নবম দিবসে গুরু উপমন্যুর নিকটে শৈবমন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছিলেন। যথাঃ-

★"নবমে তু দিনে প্রাপ্তে মুনিনা স চ দীক্ষিতঃ।
মন্ত্রমধ্যাপিতঃ শার্ব্বমথর্ব্বশিরসং মহৎ।।"
------------বায়বীয় সংহিতা।

ভগবান শিব পরম ভক্তবৎসল। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে পরম ভক্ত রূপে গ্রহণ করেছেন।

★"পার্বত্যাশ্চ মুখং প্রেক্ষ্য ভগবান ভক্তবৎসলঃ।
উবাচ কেশবং তুষ্টো রুদ্রশ্চাথ বিড়ৌজসঃ।।
কৃষ্ণ জানামি ভক্তং ত্বাং ময়ি নিত্যং দৃঢ়ব্রতঃ।
বৃণীস্বাষ্টৌ বরান মত্তঃ পুণ্যাংস্ত্রৈলোক্যদুর্লভান।।"
-------- বায়বীয় সংহিতা।

---"ভক্তবৎসল ভগবান শঙ্কর পার্বতীর প্রতি দৃষ্টিপাত করে কেশবকে বললেন, হে কৃষ্ণ! তোমার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তোমাকে দৃঢ়ব্রত ও নিত্য ভক্ত বলে জানি। আমার নিকট হতে পবিত্র ও ত্রৈলোক্য-দুর্লভ আটটি বর প্রার্থনা কর।"

সুতরাং শাস্ত্র স্পষ্ট ভাষায়ই বলেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ পরম শৈব।

★"ন কৃষ্ণাদধিকস্তস্মাদস্তি মাহেশ্বরাগ্রণী।।"

অর্থাৎ "কৃষ্ণ অপেক্ষা শৈবশ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই।"

যাই হোক, শিবভক্তিই পরম প্রাপ্তি। আর শিবভক্তি পরম দুর্লভ। কোটি কোটি জন্মের অর্জিত পুণ্যফলেই কারো হৃদয়ে শিব ভক্তির সঞ্চার হয়। অসৎ কর্মের জন্য যাদের কোটি কোটি জন্মের পাপরাশি সঞ্চিত রয়েছে, সেই রকম মোহান্ধ ব্যক্তিদের হৃদয়ে শিব ভক্তি সঞ্চারিত হয় না। কিন্তু পরম প্রভু সর্বশক্তিমান, ভক্তবৎসল, পরম করুণাময়। তিনি সকলের হৃদয়ে প্রেমভক্তি সঞ্চার করুন।

শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন...

Popular Posts