সুশ্রুতর প্রাচিন ভারতে এবং সম্ভবত মানব ইতিহাসের প্রথম সার্জন বা শল্যচিকিৎসক। তাঁর জন্ম সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৬ শতকে এবং জন্মস্থান কাশীর নিকটে অবস্থিত। এই মহাঋষি ‘সুশ্রুত সংহিতা’ একটি সংস্কৃত বই লেখেন যা সার্জারি আদি পুস্তক।এই বইটিতে ১৮৪ টি অধ্যায় আছে, যেখানে ১১২০ টি রোগের বর্ণনা,৭০০ ভেষজ উদ্ভিদের কথা,৬৪ টি রাসায়নিক মিশ্রনের বর্ণনা যা বিভিন্ন খনিজ থেকে তৈরি হয় এবং আরও ৫৭ টি মিশ্রন যা প্রানিজ উপাদান থেকে প্রস্তুত করা হত । প্রাচীন ভারতে বিশেষ করে বাংলা অঞ্চলে শল্য চিকিৎসারও ব্যাপক প্রসারের খোঁজ পাওয়া যায়। চরকের মতো সুশ্রুত নামে একজন শল্য চিকিৎসক ‘সশ্রত সংহিতা‘ রচনা করেন, যিনি কাশীর অধিবাসী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তাকে ভারতবর্ষের সার্জারির জনক বলে বিবেচনা করা হয়। তার বইটিও আরবি, ফার্সিসহ জার্মান ভাষাতেও অনূদিত হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সুশ্রত তার বইয়ে শতাধিক সার্জারির প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে গেছেন, সেই সঙ্গে দিয়েছেন অসংখ্য সার্জিকাল যন্ত্রপাতির বিবরণ। কামারদের কাছ থেকে কী করে অতি সূক্ষ সেসব যন্ত্র বানিয়ে নিতে হবে, তারও উপদেশ রয়েছে তার বইয়ে। প্রাচীনকালে শাস্তিস্বরূপ অনেকের নাক কেটে দেয়া হতো। সশ্রত দেহের অন্য অংশ থেকে চামড়া এনে সেই নাক মেরামতেরবর্ণনা দিয়েছেন। একে আধুনিক প্লাস্টিক সার্জারির আদি রূপ বলা যেতেপারে।
চিকিৎসাশাস্ত্র ও রসায়নের এমন রচনা বিশ্বে বিরল।তালপাতার ওপর সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছে এ পাণ্ডুলিপিটি। ১২০ রকমের সার্জারির যন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে, তার ৫৬টির বিশদ বর্ণনা। ব্যবহারের আগে যন্ত্রগুলি জলে ফুটিয়ে নেওয়া হত, রোগীকে অজ্ঞান করা হত নানা মদিরা দিয়ে। ১৪ রকম পদ্ধতিতে ১৫ রকম ফ্র্যাকচার সারানোর কথা বলা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান এ সব পদ্ধতির পুনরাবিষ্কার করেছিল উনিশ শতকে। প্রাচীন এ পাণ্ডুলিপির ঐতিহাসিক মূল্য ও গুরুত্ব বিবেচনায় এনে গত জুনে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
প্রাচীন ভারতের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল আয়ুর্বেদ। সেই সূত্রে, বলাইবাহুল্য, প্রাচীন বাংলাতেও আয়ুর্বেদই ছিল চিকিৎসার মূলধারা। আগেই উল্লেখ করেছি সে সময় চিকিৎসাচর্চা ছিল ধর্মচর্চারই অংশ। আয়ুর্বেদও এর ব্যতিক্রম নয়। আয়ুর্বেদও বস্তুত একটি ধর্মগ্রন্থই। বেদশাস্ত্রেরই একটি শাখা এটি। আয়ু বৃদ্ধির বেদ।
‘সুশ্রুত সংহিতা’ তে সার্জারির যে সব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে সে গুলো হলঃ making incisions, probing, extraction of foreign bodies, alkali and thermal cauterization, tooth extraction, excisions, and trocars for draining abscess draining hydrocele and ascitic fluid, the removal of the prostate gland, urethral stricture dilatation, vesiculolithotomy, hernia surgery, caesarian section, management of haemorrhoids, fistulae, laparotomy and management of intestinal obstruction, perforated intestines, and accidental perforation of the abdomen with protrusion of omentum and the principles of fracture management, viz., traction, manipulation, appositions and stabilization including some measures of rehabilitation and fitting of prosthetics.
এছাড়া বইটিতে ৬ ধরনের ডীযলোকেশন, ১২ ধরনের হাড় ভাঙ্গা, অস্থির প্রকারভেদ, ছানি পরা সহ বিভিন্ন চোখের রোগের প্রকারভেদ আলোচনা করা হয়েছে।
এই বইটি ২ ভাগে বিভক্ত। পূর্বতন্ত্র এবং উত্তরতন্ত্র। যেখানে মেডিসিন,শিশুরোগ, নাক কান গলা, চক্ষুর বিভিন্ন রোগ এবং টক্সিকোলজি এবং মনরোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ৮ম শতকে এই বইটি আরবি ভাষায় আনুদিত হয় যার নাম কিতাব ই সুশ্রুতর।
এই মহান ঋষিকে প্রান থেকে জানাই প্রনাম।
বিজ্ঞান বিশ্বে সভ্যতার আদি হতে অবদান রেখে চলেছে বৈদিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী গন।যখন ইউরোপে ভালভাবে কাপড় বোনার প্রযুক্তিও ভালভাবে রপ্ত হয়নি তখন প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানীরা পাই এর মান বের করেছেন,পৃথিবী সূর্যের দূরত্ব বের করেছেন,ত্রিকোণমিতির সুত্র বের করেছেন,ক্যালকুলাসের মৌলিক বিষয় নিয়ে চর্চা করেছেন,জ্যামিতির সুত্রপাত করেছেন,জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করেছেন।কিন্তু যখনই ভারত বিদেশি শাসনের অন্তরালে বন্দী হয়েছে তখন থেকেই শুরু হয়েছে অন্ধকার যুগের যার রেশ এখনও বয়ে চলেছে এই ভারতীয় উপমহাদেশ।কারণ বিদেশি শাসকেরা জ্ঞানবিজ্ঞান দর্শন চর্চার কেন্দ্র গুলোকে ধ্বংস করে ফেলে,হত্যা করে ফেলে যারা এগুলো চর্চা করত।