Thursday, September 22, 2022

গণেশ কি পরম বৈষ্ণব? গণেশ কি বৈদিক?


গণেশ, শিবগণের মুখ্য, তাদের নায়ক.. গণনায়ক; তিনি কি বৈষ্ণব হবেন? স্বয়ং পরমেশ্বর শিব যিনি নিজেই বৈষ্ণব নন বরং নারায়ন উনার ভজনা করেন সেই পরম প্রভুর গণনায়ক কিভাবে বৈষ্ণব হতে পারেন??  তিনি বিঘ্নেশ, বিঘ্নকর্তা; আবার একইসঙ্গে তিনি সিদ্ধিদাতা। যিনি সিদ্ধি দান করেন তিনি বিঘ্নের কর্তা বা বিঘ্ন দান করেন কীভাবে? আসুন আলোচনা করি। 

তিনি কেন গজানন? 

প্রথমেই বাঙালী পাঠক ভ্রূ তুলে বলবেন, "শনি, শনি; শনির নজরেই তো উমার ছেলের অত সুন্দর মুখটা গলা থেকে খসে পড়ল। আহা গো!" 

বাঙালী মানসে ব্রহ্মবৈবর্তের প্রভাব অনস্বীকার্য ও সুদূরপ্রসারী। সেই ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেই আছে শনির দৃষ্টির জন্য গণেশ গজমুণ্ডধারী। 

ছোটবেলায় এটাই আমিও জানতাম। তারপর ধীরে ধীরে পৌরাণিক সিরিয়ালের বাড়বাড়ন্তের আমলে শিবপুরাণের তথ্যটি সামনে এল। 

উমা নিজের গাত্রমল দিয়ে এক শিশুকে সৃজন করেছেন। নিযুক্ত করেছেন দ্বারপালরূপে। শিব উপস্থিত হয়েছেন উমাভবনের দ্বারে। বিনায়ক কিছুতেই তাকে প্রবেশ করতে দেবেন না। অবশেষে শিবের ত্রিশূলের আঘাতেই তিনি মুণ্ডহীন হলেন যদিও পরে গজানন রূপে আত্মপ্রকাশ করলেন। 

শিবপুরাণ অনুসারে, দেবী পার্বতী কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিতে বিনায়ককে সৃজন করেছিলেন। 

তবে এই দুই কাহিনির পরেও রয়ে যায় কিছু অতিরিক্ত; যা নিয়ে সকলে চর্চা করেন, যে কাহিনি সকলের জানা তা চর্বিতচর্বণে আমি আগ্রহী নই কোনওকালেই। গণেশ কেন গজানন এই বিষয় নিয়েও আজকের দিনে আলোচনা করতাম না কিন্তু আমি নিশ্চিত গণেশের গজানন হওয়ার যে কাহিনিটি লিখতে চলেছি, তা অধিক আলোচিত নয়। 

গণেশের জন্য কোনও ভিন্ন পুরাণ নেই। তবে গণেশ পুরাণ নামে একটি উপপুরাণ পাওয়া যায়। উমাত্মজ গণেশের সন্ধান পাই তাই শৈব পুরাণের পাতাতেই। 

স্কন্দপুরাণের মাহেশ্বর খণ্ডে গণেশের জন্মকথা বিবৃত হয়েছে। 

তারকাসুর দেবতাদের স্বর্গচ্যূত করেছেন; দেবতারা মরিয়া হয়ে হর পার্বতীর বিয়ে দেবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপর বিস্তর কাঠখড় এবং আস্ত কামদেবকে পুড়িয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন হৈমবতী ও শঙ্কর। মন্দারপর্বতের রত্নময় প্রাসাদে বাস করা কালীন পার্বতী নিজের গাত্রমল থেকে এক গজমুখ মনুষ্যমূর্তি নির্মাণ করলেন। 

এতস্মিন্তরে দেবী প্রোদ্বর্ত্তয়তি গাত্রকম্।। 

উদ্বর্ত্তনমলেনাথ নরং চক্রে গজাননম্। 

দেবানাং সংস্তবৈঃ পুণ্যৈঃ কৃপয়াভিপরিপ্লুতা।। 

পুত্রেত্যুবাচ তং দেবী ততঃ সংহৃষ্টমানসা। 

দেবতাদের পুণ্য স্তুতি শুনে আপ্লুত হয়ে দেবী হৃষ্টচিত্তে তাকেই পুত্র বলে সম্বোধন করলেন ও আদর করতে শুরু করলেন। 

অর্থাৎ মাহেশ্বরখণ্ডের অন্তর্গত কুমারিকা খণ্ডমের এই অংশ অনুসারে গণেশ গজমুণ্ড নিয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন; তার মস্তক কর্তিতই হয়নি কখনও। 

এবারে ফিরি সেই প্রথম কথায়, বিঘ্নের দেবতা নাকি বিঘ্ননাশক? 

এই কুমারিকাখণ্ডমেই গজাননের জন্মের পরে মহাদেব পার্বতীকে বলেন যে তাদের পুত্র মহাদেবের মতই গুণবান হবেন। বিক্রমে, বীর্যে, দয়ায় তিনি শিবতুল্য। 

আর এরপরেই গণেশের সম্পর্কে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কথাটি ঘোষণা করেন। 

যেষাং ন পূজ্যাঃ পূজ্যন্তে ক্রোধাসত্যপরাশ্চ যে। 

রৌদ্রসাহসিকা যে তেষাং বিঘ্নং করিষ্যতি। 

শ্রুতিধর্ম্মান্ জ্ঞাতিধর্ম্মান্ পালয়ন্তি গুরূংশ্চ যে।। 

কৃপালবো গতক্রোধাস্তেষাং বিঘ্নং হরিষ্যতি। 

যারা পূজনীয়দের পূজা (সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি) করবে না, যারা ক্রোধী, দুঃসাহসী ও অসত্যপরায়ণ, এই পুত্র (গণেশ) তাদের জীবনে বিঘ্ন উৎপাদন করবেন। 

যারা ধর্ম পালন করেন(এর মানে এই নয় তিলক কেটে নিরামিষ কেহেয় লাফালাফি করবো), গুরুজনের পূজা করেন, দয়ালু, ক্রোধহীন তাদের বিঘ্ননাশ করবেন। 

অর্থাৎ বোঝা গেল বিঘ্ন নামের বিভাগের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাকেই দেওয়া হয়েছে। কর্ম অনুসারে তিনিই কখনও বিঘ্নদান করেন কখনওবা বিঘ্ননাশ। 

আর শুধু তাই নয়,

সবিঘ্নানি ভবিষ্যন্তি পূজয়াস্য বিনা শুভে 

শঙ্কর, পার্বতীকে বললেন, "হে শুভে, এঁর পূজা ছাড়া সমস্ত ধর্মকর্ম বিবিধ বিঘ্নে আক্রান্ত হবে"। 

এমনকি স্কন্দপুরাণ অনুসারে কার্তিকের অগ্রজ তিনি। তারকাসুরহন্তা কার্তিকের আবির্ভাবের আগে অবধি তিনিই দায়িত্ব নিয়ে দেবতাদের বিঘ্ননাশ ও দৈত্য দানবদের বিঘ্নদান করে গেছেন।

পরবর্তীতেও, এই একই কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করেছেন তিনি। 

এইবার যেহেতু বাঙালি হিন্দু এক শ্রেণীর অসাধু ধর্ম ব্যাবসায়ীদের দ্বারা মারাত্মক রকমের ইনফ্লুয়েন্সড এবং এদের ধারনা গণেশ হলেন সামান্য দেবতা। আর যেহেতু ভাগবত গীতায় বলা আছে দেবতা পূজা ঠিক না তাই এরা গণেশকে অবহেলা করেন বা গণেশকে খুব একটা পাত্তা দেন না। 

আমাদের জানা উচিৎ বেদ ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই। বেদেই সকল কিছুর উৎস্য আমাদের ঋষি মুনিরা সবাই বেদ মাতাকে আশ্রয় করেই এই ধর্মীয় জ্ঞানকে ত্বরান্বিত করেছেন যুগে যুগে। তাই বেদের উল্লেখিত দেবতারাই আমাদের মুখ্য পূজ্য। আসুন দেখে নেই  বেদে 'গাণপত্য' মত বা গণেশ ভক্তদের সম্পর্কে কি বলা আছে। 



'গণ' বা জীবের যিনি ঈশ্বর তিনিই গণেশ। ভগবান গণেশ হলেন, গণশক্তির প্রতীক । সিদ্ধিবিনায়ক মঙ্গলমূর্তি ভগবান শ্রীগণেশকে বিঘ্নহর্তা নামে অবিহিত করা হয়। সকল শুভ কর্মের শুরুতে শ্রীগণেশের পূজা করা হয়। দেবতাদের মধ্যে ‘প্রথম পূজ্য’ তিনি।বৈদিককাল থেকেই গণেশের উপাসনা দেখতে পাওয়া যায় । ঋগ্বেদ সংহিতায় গণপতি বা গণেশকে কবিদের মধ্যে কবি, এবং মন্ত্রসমূহের স্বামী বলে অবিহিত করা হয়েছে।


গণানাং ত্বা গণপতিং হবামহে

কবিং কবীনামুপমশ্রবস্তমম্।

জ্যেষ্ঠরাজং ব্রহ্মণাং ব্রহ্মণস্পত

আ নঃ শৃণ্বন্নূতিভিঃ সীদ সাদনম্।।

(ঋগ্বেদ সংহিতা:২.২৩.১)


"হে ব্রহ্মণস্পতি! তুমি গণপতি, কবিদের মধ্যে তুমি কবি, তোমার অন্ন সর্বোৎকৃষ্ট ও উপমানভূত। তুমি প্রশংসনীয়দের মধ্যে রাজা এবং মন্ত্রসমূহের স্বামী। আমরা তোমাকে আহ্বান করি, তুমি আমাদের স্তুতি শ্রবণ করে আশ্রয় প্রদানার্থে যজ্ঞগৃহে উপবেশন কর।"


যাস্কাচার্যের নিরুক্তে ব্ৰহ্মণস্পতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ব্রহ্মের রক্ষক বা পালয়িতা। ব্রহ্মরূপ ব্ৰহ্মণস্পতি কি করে ব্রহ্মের রক্ষক বা পালয়িতা হতে পারে? এ বিষয়ের সংশয় নিরসনে বলা যায় যে, বৈদিক নিঘণ্টকোষ অনুসারে (২.৭) ‘ব্রহ্মন্’ শব্দের অর্থ অন্ন এবং ঋগাদি মন্ত্র। ব্রহ্মণস্পতি হলেন মন্ত্র এবং অন্ন এ উভয়েরই রক্ষক বা পালয়িতা।বৃষ্টিপ্রদানাদি দ্বারা; বৃষ্টি না হলে অন্ন হয় না এবং অন্নের অভাবে জীবলোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে সমাজ সভ্যতা বিনষ্ট হয়। তখন আর মন্ত্র যথাযথভাবে রক্ষিত হয় না।


ব্ৰহ্মণস্পতির্ব্রহ্মণঃ পাতা বা পালয়িতা বা ৷৷

(নিরুক্ত:১০.১২.৫)


"ব্রহ্মণস্পতি শব্দের অর্থ ব্রহ্মের রক্ষক বা পালয়িতা।"


শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতায় গণপতিকে গণের অধিপতি, প্রিয় গণের প্রিয়পতি এবং নিধি বা সম্পদের অধিপতি বলা হয়েছে ।


গণানাং ত্বা গণপতিং হবামহে,

প্রিয়াণাং ত্বা প্রিয়পতিং হবামহে।

নিধীনাং ত্বা নিধিপতিং হবামহে, বসো মম।।

(যজুর্বেদ : ২৩.১৯)


"হে জীবের অধিপতি গণপতি, তোমাকে আহ্বান করি। হে প্রিয়গণের মধ্যে প্রিয়পতি, তোমায় আহ্বান করি।তুমি নিধিগণের (সম্পদ) মধ্যে নিধিপতি, তোমায় আহ্বান করি। হে বসুরূপ ভগবান তোমায় আহ্বান করি; তুমিই আমার একমাত্র পালক হও।"


কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় আরণ্যকে ভগবান গণেশকে 'তৎপুরুষায়' বলে অবিহিত করে একটি বিনায়ক গায়ত্রী রয়েছে।


তৎপুরুষায় বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহি।

তন্নো দন্তিঃ প্রচোদয়াৎ।।

(তৈত্তিরীয় আরণ্যক:১০.১.২৫)


"সেই বিনায়ক পুরুষকে জানতে আমরা বক্রতুণ্ড গজাননের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে মহাদন্ত গণপতি আমাদের অনুপ্রাণিত করুন বা তাঁর পথে প্রেরণ করুন।"


শুক্লযজুর্বেদ সংহিতার ষোড়শ অধ্যায়ে সর্বব্যাপী এবং সকলের মাঝে বিরাজমান রুদ্রের স্তোত্র করতে গিয়ে রুদ্রকে গণপতি বলে অবিহিত করা হয়েছে।অর্থাৎ রুদ্ররূপ শিব এবং গণপতিরূপ গণেশ যে একই এ মন্ত্রে বিষয়টি সুস্পষ্ট।


নমো গণেভ্যো গণপতিভ্যশ্চ বো নমো৷

নমো ব্রাতভ্যো ব্রাতপতিভাশ্চ বো নমো।

নমো গৃৎসেভ্যো গৃৎসপতিভ্যশ্চ বো নমো।

নমো বিরূপেভ্যো বিশ্বরূপেভ্যশ্চ বো নমঃ॥


নমঃ সেনাভ্যঃ সেনানিভ্যশ্চ বো নমো।

নমো রথিভ্যো অরথেভ্যশ্চ বো নমো।

নমঃ ক্ষত্তৃভাঃ সংগ্রহীতৃভ্যশ্চ বো নমো।

নমো মহদ্ভ্যো অর্ভকেভ্যশ্চ বো নমঃ৷৷


নমস্তক্ষভ্যো রথকারেভ্যশ্চ বো নমো।

নমঃ কুলালেভ্যঃ কর্মরেভ্যশ্চ বো নমো।

নমো নিষাদেভ্যঃ পুঞ্জিষ্ঠেভ্যশ্চ বো নমো।

নমঃ শ্বনিভ্যো মৃগয়ুভ্যশ্চ বো নমঃ৷৷

(শুক্লযজুর্বেদ সংহিতা:১৬.২৫-২৭)


"গণসমূহকে নমস্কার এবং তোমাদের অর্থাৎ গণপতিগণকেও নমস্কার। নানা জাতিসমূহের সঙ্ঘকে নমস্কার। এই সঙ্ঘের পালকগণকে নমস্কার। লম্পটগণকে নমস্কার। জটী-মুণ্ডী ইত্যাদি বিরূপগণকে নমস্কার। (নগ্নমুণ্ডজটিলাদয়স্তেভ্যো বো নমঃ)। এবং তুরঙ্গবদন তথা হয়গ্রীব প্রভৃতি বিশ্বরূপ গণসমূহকে নমস্কার ৷


সেনাগণ রূপী রুদ্রদের নমস্কার; সেনাপতিগণকে নমস্কার; রথারোহীগণকে নমস্কার এবং রথহীনগণকে নমস্কার। রথের অধিষ্ঠাতাবৃন্দ রূপী রুদ্রদের নমস্কার; রথের অশ্বকে চালিতকারী সারথিগণকে নমস্কার; মহান্ বীরগণরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; বীর শিশুসমূহরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার৷


তক্ষ (সূত্রধার) জনরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; রথনির্মাতারূপী রুদ্রগণকে নমস্কার; কুম্ভকারগণকে নমস্কার, কর্মকারগণকে নমস্কার, গিরিচর মাংসাসী নিষাদগণকে নমস্কার; শিকারী কুক্কুরসমূহকে নমস্কার; শিকারী কুক্কুরগণের শিকারী প্রভুবৃন্দরূপী রুদ্রগণকে নমস্কার৷"


শুক্লযজুর্বেদ সংহিতার ষোড়শ অধ্যায়ের মত কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতাতেও গণ ও গণপতি স্বরূপ রুদ্রকে নমস্কার করা হয়েছে। মন্ত্রগুলো বা মন্ত্রগুলোর কয়েকটি পাদ প্রায় একই বলা চলে। অর্থাৎ রুদ্ররূপ শিব এবং গণপতিরূপ গণেশ যে একই তা শুক্লযজুর্বেদ সংহিতার মত কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতার মন্ত্রেও বিষয়টি সুস্পষ্ট। সেই মন্ত্রে মহৎ ও ক্ষুদ্র রূপসহ বিকৃতরূপ ও বিশ্বরূপধারী রুদ্রদেব এবং তাঁর গণদের উদ্দেশে বারবার নমস্কার করা হয়েছে।


নমো গণেভ্যো গণপতিভ্যশ্চ বো নমো

নমো বিরূপেভ্যো বিশ্বরূপেভ্যশ্চ বো নমো।

নমো মহদ্ভ্যঃ ক্ষুল্লকেভ্যশ্চ বো নমো নমো রথিভ্যোঽরথেভ্যশ্চ বো নমো নমো রথেভ্যঃ

রথপতিভ্যশ্চ বো নমো।

নমো রথেভ্যঃ রথপতিভ্যশ্চ বো নমো নমঃ

সেনাভ্যূঃ সেনানিভ্যশ্চ বো নমো। নমঃ ক্ষত্তৃভ্যঃ সংগ্রহীতৃভ্যশ্চ বো নমো নমস্তক্ষভ্যো রথকারেভ্যশ্চ

বো নমো। নমঃ কুলালেভ্যঃ কর্মারেভ্যশ্চ বো নমো

নমঃ পুঞ্জিষ্টেভ্যো নিষাদেভ্যশ্চ বো নমো।

নম ইষুকৃদ্ভ্যো ধন্বকৃদ্ভ্যশ্চ বো নমো।

নমো মৃগয়ুভ্যঃ স্বনিভ্যশ্চ বো নমো নমঃ

শ্বভ্যঃ শ্বপতিভ্যশ্চ বো নমঃ।।

(কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতা:৪.৫.৪)


শুক্লযজুর্বেদ সংহিতায় ভগবান গণেশের উদ্দেশ্যে যজ্ঞে আহুতি প্রদানের মন্ত্র প্রদান করা হয়েছে। সেই মন্ত্র হল, "গণপতয়ে স্বাহা"। যে মন্ত্র আজও ভগবান গণেশের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত যজ্ঞে ব্যবহৃত হয়।


অসবে স্বাহা বসবে স্বাহা বিভুবে

স্বাহা বিবস্বতে স্বাহা গণশ্রিয়ে স্বাহা

গণপতয়ে স্বাহাঽভিভুবে স্বাহাঽধিপতয়ে

স্বাহা শূষায় স্বাহা সংসর্পায় স্বাহা চন্দ্রায়

স্বাহা জ্যোতিষে স্বাহা মলিম্বুচায় স্বাহা

দিবা পতয়তে স্বাহা৷।

(শুক্লযজুর্বেদ সংহিতা:২২.৩০)


"অসু-বসু-বিভু-বিবস্বান-গণশ্রী-গণপতি-অভিভূ-বল-

সংসর্প জ্যোতিষ-ম্লীমুচ-দিবাপতি ইত্যাদির অধিপতি দেবগণের উদ্দেশ্যে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করছি।"


ভগবান গণপতিকে যারা ব্রহ্মরূপে উপাসনা করে, তাদের গাণপত্য বলে। এ গাণপত্য মতটি সনাতন পঞ্চমতের অন্যতম। এ গাণপত্য মতপথের সম্প্রদায়টি বৈদিককাল থেকেই বহমান। বেদের মধ্যেই আমরা গণেশ গায়ত্রী মন্ত্র পাই। সেই মন্ত্রে "বক্রতুণ্ডায় ধীমহি" এবং 'তন্নো দন্তিঃ প্রচোদয়াৎ" বাক্য পাই। যে বাক্য সুস্পষ্টভাবে ভগবান গণেশকে নির্দেশ করে। ভগবান গণেশকে বেদে কখনো ব্রহ্মণস্পতি (ঋগ্বেদ সংহিতা:২.২৩.১) ; কখনো রুদ্র বলা হয়েছে (কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতা:৪.৫.৪)।আবার ইন্দ্রও বলা হয়েছে:


নি ষু সীদ গণপতে গণেষু

ত্বামাহুর্বিপ্রতমং কবীনাম্।

ন ঋতে ত্বৎ ক্রিয়তে কিং

চনারে মহামর্কং মঘবঞ্চিত্ৰমর্চ।।

(ঋগ্বেদ সংহিতা:১০.১১২.৯)


"হে বহুলোকের অধিপতি গণপতি ! স্তবকর্তাদের মধ্যে উপবেশন কর, ক্রিয়াকুশল ব্যক্তিদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ। কি নিকটে, কি দূরে, তোমা ব্যতিরেকে কিছুই অনুষ্ঠান হয় না। হে ধনশালী ! আমাদের ঋকসমূহকে বিস্তারিত ও বিচিত্র রূপ করে দাও।"


একই পরমেশ্বর গণপতিকে ব্রহ্মণস্পতি, রুদ্র, ইন্দ্র ইত্যাদি বিবিধ নামে অবিহিত করার কারণ বেদেই সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। বেদে বলা হয়েছে যে, সেই পপরমেশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। সেই এক এবং অদ্বিতীয় পরমেশ্বরকেই বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হলেও, তিনি বহু নন।


ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নি-মাহু রথো

দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্মান্।

একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি

অগ্নি যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ।।

(ঋগ্বেদ: ১.১৬৪.৪৬)


"সেই সদ্বস্তু অর্থাৎ পরব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। কিন্তু জ্ঞানীগণ তাঁকেই ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, দিব্য (সূর্য্য), সুপর্ণ, গরুড়, যম, বায়ু ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকেন।"


শৈব এবং শাক্ত মতের মিলিত রূপ গাণপত্য। এ গাণপত্য মত বেদ থেকে উদ্ভূত হয়ে বৈদিক যুগ থেকেই প্রচলিত। এ গাণপত্য মত সনাতন পঞ্চমতের অন্যতম। কেউ যদি বলেন গণেশ বা গণপতি শুধুমাত্র দেবতা বা কারো দাস তাঁদের শক্তভাবে বর্জন করুন। 














সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts