বাহরাম জমাদার অল্পের জন্যে এক হাজার খুন তিনি করতে পারেননি, ৯৩১ এ থেমে গেছেন। ওনাকে নিয়ে বলিউডে সিনেমা বানানো হয়েছে। বাহরাম একজন ঠগি ছিলেন। ঠগিরা মানুষহত্যায় খুবই দক্ষ ছিল। হলুদ রুমাল ভাঁজ করে গলায় পেঁচিয়ে মানুষ মেরে ফেলত, একজন পিছন থেকে মাথা ধরে রাখত, একজন চেপে ধরে রাখত পা। পায়ের হাড় আর শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়ে লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলতো।
বাহারামের যে ছবিটি ইন্টারনেটে আছে
চিত্রে: ঠগীরা যেভাবে মানুষ মারত , সোর্স Thuggees of India - World's First Mafia
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (ভারতের ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল) জোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার চিফ এজেন্ট ক্যাপ্টেন উইলিয়াম স্লিম্যান বেশ কয়েকটি রাজপরিবারের কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ঠগিদের নির্মূল করেছিলেন। ১৮৩১ থেকে ১৮৩৭ সাল পর্যন্ত ৩,২৬৬ ঠগি ধরা পড়ে, যাদের মধ্যে ৪১১ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ঠগিরা ছিল দেবী কালীর উপাসক, নির্দোষদের হত্যাকে তাদের ধর্মীয় কর্তব্য হিসাবে দেখত। তারা বিশ্বাস করেছিল যে হত্যার বিষয়টি কালীকে সন্তুষ্ট করবে।
সাম্প্রতিক সময়ের কিছু খরব—
শাশুড়ির মাথা কেটে রক্তপান করল জামাই - জিনিউজ
তন্ত্রসাধনার জন্য স্বামীর বুকে বসে রক্তপান! রক্তশূন্যতা ভুগে স্বামী বেচারা শেষ। -ওয়ান ইন্ডিয়া
ভালো ফলনের জন্য ১২-বছরের ভাইপোকে বলি দিল কাকা - এই সময়
তন্ত্র সাধনায় হাত পাকাতেই যুবতীকে বলি! কলকাতা24x7
এরকম আরো আরো আছে। ডয়চে ভেলের রিপোর্টটা দেখেন -
নরবলির মতো কুসংস্কার আজও রয়েছে ভারতে
২০১৯, দ্য এজ অব আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। মানুষ আজকে চাঁদে, কালকে মঙ্গলে যাচ্ছে। কিন্তু সুরেন্দ্র প্রসাদ সিংহ আছেন অন্য চিন্তায়। সরকারকে তিনি চিঠি দিয়েছেন, "নরবলি কোনও অপরাধ নয়। এই নরবলির জন্য অন্য কারও ক্ষতি করতে চাই না। নিজের ছেলেকেই বলি দিয়ে আমার সাধনা সম্পূর্ণ করতে চাই।" ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু তাতে কী? মন্দিরে টাকা দেয় না। সুরেন্দ্র লিখেছে,
‘‘তন্ত্র সাধনায় নরবলি খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। কামাখ্যায় গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকেই সবার আগে বলি দিতে চাই। কারণ, আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হলেও মন্দিরের জন্য অর্থ সাহায্য করতে রাজি নয়। এই সব বিষয়ে বিশ্বাসও নেই ওর। তাই নিজের ছেলেকেই আগে মায়ের কাছে উৎসর্গ করতে চাই আমি।’’
২০১৭ সালের কথা। ফুলু মাহাতোর তিন ছেলে। কত ভাগ্যবতী তিনি, যে মায়ের একটা ছেলেমেয়েও নেই তিনিই জানেন। বড় ছেলে চেন্নাইয়ে থাকে, চাকরি করে। মেজটা শ্বশুরবাড়িতে থিতু হয়েছে। ছোট ছেলে নারায়ণ আছে মাকে নিয়ে। নারায়ণ আবার তন্ত্রসাধক, কালির পুজো করে।
তন্ত্রসাধনায় সফলতার জন্যে নারায়ণ নিজের মাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কালির প্রতিমার সামনে প্রণাম করতে বলে। …তারপর তলোয়ার দিয়ে মায়ের মাথা কেটে ফেলে। কত বড় সাধক ছেলে! আর সন্তানের সাফল্য কোন মা চান না?
জঙ্গলে ডাকাতেরা কালি দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দিত, বাংলা সাহিত্যে এমন কথা অচেনা নয়। আনন্দবাজারে প্রকাশিত সেকালের ডাকাতদের পূজ্য কালীই এখন সর্বজনীন লেখাটি পড়তে পারেন। বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় কাপালিক এক সাধকের নরবলির অভ্যাস নিয়ে লেখা হয়েছে। সুচিত্রা ভট্টাচার্য লিখেছেন 'ভাঙা ডানার পাখি', সেখানেও আছে কাপালিকদের নরহত্যার বর্ণনা। কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ লিখেছেন গোমতী নদীতে নরবলি দেয়ার ইতিহাস। আরো অনেক কথা সাহিত্যের পাতায় পাতায় আছে। দীনেশচন্দ্র সেন,রমেশচন্দ্র মজুমদারের লেখায় নরবলির সংস্কৃতির উল্লেখ দেখতে পাই।
ডক্টর দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী লিখেছেন,
অধঃপাতে-যাওয়া কয়েকটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য ছিলো যৌনশৈথিল্য; এগুলি ক্রমশ লোকায়ত সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এগুলির মধ্যে একটি হলো কাপালিক সম্প্রদায়। তারা মদ্যপান করে, নরবলি দেয় এবং নারী উপভোগ করে। তারা শব, মদ্য ও নারীর সাহায্যে ধর্মের আদর্শ লাভ করবার চেষ্টা করে।
বাঙালি ইতিহাসবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও শিল্পকলা-গবেষক পন্ডিত নীহাররঞ্জন রায় লিখেছেন,
এ-তথ্য এখন অনেকটা পরিষ্কার যে, আদিতে হোলী ছিল কৃষিসমাজের পূজা; সুশস্য উৎপাদন-কামনায় নরবলি ও যৌনলীলাময় নৃত্যগীত উৎসব ছিল তাহার প্রধান অঙ্গ। তারপরের স্তরে কোনও সময় নরবলির স্থান হইল পশুবলি এবং হোমযজ্ঞ ইহার অঙ্গীভূত হইল। (বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব )
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "শক্তিপূজা" প্রবন্ধে লিখেছেন,
একটি কথা মনে রাখতে হবে, দস্যুর উপাস্য দেবতা শক্তি, ঠগীর উপাস্য দেবতা শক্তি, কাপালিকের উপাস্য দেবতা শক্তি। আরো একটি ভাববার কথা আছে, পশুবলি বা নিজের রক্তপাত, এমন কি, নরবলি স্বীকার করে মানত দেবার প্রথা শক্তিপূজায় প্রচলিত। মিথ্যা মামলায় জয় থেকে শুরু করে জ্ঞাতিশত্রুর বিনাশ কামনা পর্যন্ত সকল প্রকার প্রার্থনাই শক্তিপূজায় স্থান পায়।
জন ক্যাম্পবেল হিউম্যান স্যাক্রিফাইস ইন ইন্ডিয়া বইয়ে উড়িষ্যার খোন্দ উপজাতির নারী-শিশু বিসর্জন দেয়ার ইতিহাস লিখেছেন।
ফুটনোটগুলি