Wednesday, January 30, 2019

বিবাহে সাবধান


বর্ণ চার প্রকার- বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র।
গোত্র- গো-শব্দের উৎপত্তি গম্-ধাতু থেকে, অর্থ-
গতি। আর 'ত্র' হ'ল ত্রৈ-ধাতু থেকে, মানে ত্রাণ করা।
তাই গোত্র মানে দাঁড়াবে বংশের ধারা বা গতি যাঁর
মাধ্যমে রক্ষিত হয় সেই স্মরনীয় পিতৃপুরুষ বা ঋষি।
তিনিই গোত্র পিতা।
প্রবর- প্রত্যেক গোত্রেরই একাধিক প্রবর থাকে। প্রবর
মানে বংশের মধ্যে প্রকৃষ্ট বরণীয় ব্যক্তি।
গোত্র প্রবর্ত্তক ঋষির ঔরসজাত সন্তান বা কৃষ্টিজাত সন্তানদের মধ্যে যিনি বা যাঁরা ভক্তি, জ্ঞান, গুণ, চরিত্র, কর্মদক্ষ, সাধনার দিক দিয়ে সবচেয়ে প্রকৃষ্ট বরণীয় তিনি বা তাঁরাই প্রবরনামে অভিহিত হয়ে থাকেন।
এখানে মনে রাখতে হবে ভিন্ন গোত্র হলেও প্রবর এক হতে পারে। যেমন, বাৎস ও সাবর্ণ্য আলাদা গোত্র। কিন্তু এই দুই গোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ, কারন এই দুই গোত্রের প্রবর একই। অনেক সময় এমন হয় -কারো গোত্রের পাঁচটি প্রবর, তার মধ্যে কোন একটি প্রবর অন্য গোত্রের সাথে মিলে যাচ্ছে। সেখানে ঐ গোত্র দুটি ভিন্ন হলেও বিবাহ নিষিদ্ধ। যেমন, অত্রি ও কাত্যায়ন এই
দু'টি গোত্রের তিনটি করে প্রবর, তার মধ্যে একটি প্রবর
উভয়ের এক। অতএব, অত্রি গোত্রের সাথে কাত্যায়ন
গোত্রের বিবাহ অবিধেয়। যদি একটি প্রবরও মিলে যায়
তবে বুঝতে হবে অতীতে দুটি বংশধারা কোনওসময়
এসে মিলে গিয়েছিল। এইভাবে রক্তের মিল হলে,
ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে হলে যা হওয়ার তাই হবে।
ফলে এই বিবাহ নিষিদ্ধ।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুর- বললেন-"
আপৎকালেও জনন-অনুশাসনকে অগ্রাহ্য
ক'রো না।"(বিবাহ-বিধায়না,১৪৯)।
-------------------------
★ চারপ্রকার বর্ণের প্রতিলোমজাত সন্তানদের ছয়
ভাগ করা হয়েছে।
১। ক্ষত্রিয়ের বিপ্রজাত কন্যাতে= সূত
২। বৈশ্যের ক্ষত্রিয়জাত কন্যাতে= মাগধ
৩। বৈশ্যের বিপ্রজাত কন্যাতে = বৈদেহ
৪। শুদ্রের বৈশ্যাজাত সন্তান = আয়োগব
৫। শুদ্রের ক্ষত্রিয়জাত সন্তান। = ক্ষতা
৬। শুদ্রের বিপ্রজাত কন্যাতে সন্তান=চন্ডাল।
প্রতিলোমজাত ছেলে সন্তানদের বিবাহ নিষিদ্ধ।
কিন্তু কন্যার বিবাহ দেয়া যাবে তবে তা অবশ্যই
উচুবর্ণে।পরপর সাত পুরুষ ঐরকম শ্রেয় বরে বিবাহ হবার পর প্রতিলোম কন্যার প্রতিলোমের কুপ্রভাব দুর
হতে পারে।(যাজ্ঞবল্ক-সংহিতা,১ম অধ্যায়)
★ চার বর্ণের অনুলোমজ সন্তানদের ছয়টিভাগ।
১। বিপ্রের ক্ষত্রিয়জাত সন্তান = মূর্ধাভিষিক্ত
২। বিপ্রের বৈশ্যাজাত সন্তান। = অম্বষ্ঠ
৩। বিপ্রের শুদ্রজাত সন্তান = পারশব
৪। ক্ষত্রিয়ের বৈশ্যজাত সন্তান_= মাহিষ্য
৫। ক্ষত্রিয়ের শুদ্রাজাত সন্তান = উগ্রক্ষত্রিয়
৬।বৈশ্যের শুদ্রজাত সন্তান। = করণ।
অনুলোমজাত সন্তানদের বিবাহ সম্পর্কে ঠাকুর
বলেছেন- অনুলোমজাত ছেলেদের বিবাহ হবে সমান
থাকে অর্থাৎ মাতৃবর্ণ যেমন তেমন ঘরে। আর মেয়েদের
বিবাহ হবে কমপক্ষে পিতৃবর্ণে। এর উল্টোপাল্টা করলে প্রতিলোম ঢুকে যাবার সম্ভাবনা। সমান-সমাণ বর্ণে বিবাহ - সদৃশ (শ্রেষ্ঠ)।।
পুরুষের বর্ণ উচ্চ এবং নারীর বংশ নীচু-অনুলোম।।
নারীর বংশ উচু এবং পুরুষের বর্ণ নীচু প্রতিলোম।।
বংশানুক্রমিক কিছু ব্যাধি আছে সেগুলো নিয়ে খোজখবর নেয়া দরকার।
যে বংশের সাথে বিয়ে হবে তার অন্ততঃ তিন পুরুষের
মধ্যে কেউ পাগল আছে কিনা দেখতে হবে, বিশেষত
মাতৃকুলে। যদি থাকে তবে সেই বংশে বিয়ে দিলে সন্তানদের মধ্যে পাগল হবার সম্ভাবনা স্বীকার
করে নিয়ে তবে বিয়ে দিতে হবে।
আমরা ঘোড়া-গরুর প্রজননের ব্যাপারে কখনই
নিকৃষ্টজাতের ঘোড়া-ষাঁড় দ্বারা প্রজননক্রিয়া সম্পন্ন
করাই না। সেখানে বীজের উকৃষ্টতা রক্ষা করে চলি।
কারন সেটাই জীববিজ্ঞানেরর নিয়ম। অথচ মানুষের
বেলায় আধুনিকতার দোহাই দিয়ে সৃষ্টিকে করে তুলি নিগৃহীত ও বিনিন্দিত।
সব পাপের প্রায়শ্চিত আছে কিন্তু প্রতিলোমের কোন
উপায় নেই। এটাই বিধির বিধান।
একই বিপ্র বর্ণের মধ্যে দুইটি থাক― কুলীন ওবংশজ। বংশজগন কুলীন বিপ্রদের চাইতে কোন কোন গুনে হীন। কুলীন বিপ্রসন্তান বংশজ মেয়েকে বিয়ে করতে পারে, কিন্তুু কখনও বংশজের ঘরে মেয়ে দিতে পারে না,
দিলে প্রতিলোম হয়ে যাবে।
বারেন্দ্রশ্রেনীর বিপ্রদের মধ্যেও দুটি ভাগ আছে―কুলীন ও কাপ। রাঢ়ী ও ও বারেন্দ্রশ্রনীর মধ্যে পরস্পর কন্যা আদানপ্রদানে কোন বাধা নেই। কারন এরা আদিতে একই ছিল। বিপ্রদের মধ্যে আরেকটি থাক হল 'শ্রোত্রিয়'। এরা নিম্নকৃষ্টিসম্পন্ন। রাঢ়ী, বারেন্দ্রশ্রেনীর কুলীন, ভঙ্গ কুলীন, কাপগন শ্রোত্রিয়ের মেয়ে নিতে পারেন কিন্তু শ্রোত্রিয়ের ঘরে মেয়ে দিতে পারেন না।
বাংলার কায়স্থদের মধ্যে আছে কুলীন ও মৌলিক।
এখানেও কুলীনেরা মৌলিকের মেয়ে নিতে পারে,
কিন্তু মৌলিক কখনই কুলীনের মেয়ে বিয়ে করতে পারে না। ঘোষ,বসু,গুহ ও মিত্র উপাধি যাঁদের তাঁরাই কুলীন। মৌলিক কায়স্থদের আবার দুটি ভাগ- আটঘর এবং বাহাত্তরঘর। আটঘরের মৌলিকদের বলা হয় 'সিদ্ধ মৌলিক', এঁদের মধ্যে আছেন- সেন, সিংহ, দত্ত, দাস, কর, গুহ, পালিত, দেব। আর বাহাত্তরঘরেরর মধ্যে আছেন -হোড়, আইচ, সুর, ভঞ্জ, লোধ, হুই, রুদ্র, রক্ষিত, রাউত,তেজ,আশ,গুণ , বর্দ্ধন প্রভৃতি উপাধি।
আটঘরের কায়স্থগন বাহাত্তরঘরেরর থেকে উচু।
তাই আটঘরেরা বাহাত্তরঘর থেকে মেয়ে আনতে পারেন,
কিন্তু দিতে পারবেন না। দিলে প্রতিলোম হবে।
আবার শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন - "যজমান তার নিজের
ঋত্বিকের কন্যাকে বিবাহ করতে পারে না,
অন্যদিকে ঋত্বিক তার স্বীয় যজমানকে বিয়ে করতে পারে না, কারন যজমান শিষ্যা ও কন্যাসমা।"
মেয়েদের বিয়ে দেরী হলেও ভাল কিন্তু নীচু বংশে বিয়ে দেয়া ভাল নয়।
বিপ্র বা বামুনদের মধ্যে এক ধরনের পতিত বামুন
আছে যাদের জেলের বামুন, কৈবর্ত্তের বামুন,
মাহিষ্যের বামুন ইত্যাদি।
বৈশ্য যদি শুদ্রের মেয়ে বিয়ে করে, তার সন্তান হয়
করণ। আর করনের মেয়ে যদি বামুনে বিয়ে করে তাহলে তার সন্তান হয় তাম্বুলি। আবার তাম্বুলির মেয়ে যদি বামুনে বিয়ে করে তবে তাদের সন্তান হয় বারুজীবী।
পারশবগণ বঙ্গদেশে নমঃশুদ্র নামে পরিচিত। এদের
চারটি ভাগ। শ্রীপালী(শিউলি), ধানী, মগা, জিয়েনী। এদের মধ্যে শ্রীপালী যারা তাঁরাই পারশব। অন্য ৩টি থাকের সাথে শ্রীপালীদের বিবাহাদি চলবে না।
শ্রীপালী ছেলেরা কেবল স্ব-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে করতে পারবে।
বাইরে কোথাও করতে হলে উগ্রক্ষত্রিয়, করণ ও শুদ্র
কন্যাকে বিয়ে করতে পারবে।
পারশবরা বৈশ্য বা ক্ষত্রিয়ের মেয়ে বিয়ে করলে সেটা মায়ের দিক থেকে প্রতিলোম হবে। পারশব মেয়েদের
স্ব-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে।
এছাড়া একমাত্র বিপ্রের সাথে দেয়া যায় অনুলোম বিধিতে।
মাহিষ্য,উগ্রক্ষত্রিয়(আগুরী), করণ -এইসব অনুলোমজ
সন্তানদের বিবাহ হবে অবশ্যই স্বঘরে অথবা ইষৎ
অনুলোমক্রমিক হ'তে হবে।
আবার অনুলোম বিয়ে করলেই তাতে সুফল ফলে না। এরও নীতি আছে, বিধি আছে। শ্রীশ্রীঠাকুর
বললেন -প্রথমে সবর্ণা বিবাহ করতে হবে। সেই সবর্ণা স্ত্রীর পুত্রসন্তান জাত হওয়া চাই। তারপর পুরুষ অসবর্ণা স্ত্রী গ্রহন করতে পারে। এমনতর ব্যবস্থার কারন, ঐ সবর্ণা স্ত্রীতে জাত পুত্রের মধ্য দিয়েই মানুষের পুরুষপরম্পরাগত বংশবৈশিষ্ট অবিকৃত ও অক্ষুন্ন
থেকে প্রবাহিত হ'তে পারে। কিন্তু অনুলোমজাত
ঐধারা ঠিক-ঠিক অবিকৃত থাকে না।
অসবর্ণাজাত সন্তান সবর্ণাজাত সন্তান থেকে একটু
নেমে যায়।
সবর্ণাজাত পুত্রের মত তাদের দেবকার্য্য ও পিতৃকার্য্যে অধিকার থাকে না।
এছাড়া -আবৃত(বিপ্রকর্ত্তক উগ্রকন্যায় জাত), আভীর
( বিপ্রকর্ত্তক অম্বষ্ঠ কন্যায় জাত), ঝল্ল-মল্ল(ব্রাত
্যক্ষত্রিয় কর্ত্তক সবর্ণা স্ত্রীতে জাত সন্তান),
কোনাই চাষী, খড়িয়া, সূত্রধর, রথকার, শঙ্খবনিক এদের বর্ণ নির্ণীত না হওয়া পর্যন্ত্য সবারই বিবাহ
স্বঘরে করতে হবে।
"নবসায়ক" নামে ৯টি সম্প্রদায় আছে ― গোপ, মালী,
তন্ত্রী (তাঁতী), মোদক, বারুজীবী, কুম্ভকার, কর্ম্মকার,
ও নাপিত এদের সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন-
"যতদিন এদের বর্ণ নিঃসন্দিগ্ধভাবে স্থিরীকৃত
না হচ্ছে ততদিন এদের বিয়ে-থাওয়া অবশ্যই নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে করতে হবে।
"যত্র ত্বেতে পরিধ্বংসা জায়ন্তে বর্ণদূষকাঃ।
রাষ্ট্রিকৈঃ সহ তদ্রাষ্টাং ক্ষিপ্রমেব বিনশ্যতি।"
- যে রাষ্ট্রে সমাজধ্বংসকারী বর্ণদূষক জাতক জন্ম
গ্রহন করে, রাজ্যবাসী সমস্ত প্রজাবর্গের সাথে
সেই রাষ্ট্র অচিরেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।।(১০/৬১,মনুসংহিতা)

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts