Wednesday, December 26, 2018

অভিশাপ এর রকমফের

আমরা অনেকেই অভিশাপের নাম শুনি। অভিশাপের অনেক ক্ষমতা। আমাদের পুরান গুলিতে অভিশাপের অজস্র ঘটনা বর্তমান। সাধারণত বলা যায়--- কেউ ক্রুদ্ধ হয়ে, বা দুঃখিত হয়ে, বা লাঞ্ছিত হয়ে দোষীর সর্বনাশ কামনা করাই অভিশাপ। 
অভিশাপ দুরকম -- একটা তান্ত্রিক অভিশাপ অপরটি দৈবিক অভিশাপ। দুই অভিশাপেরই ক্ষমতা সমান। 
তান্ত্রিক অভিশাপ হল -- পূর্বেই দোষীকে শাপ দিয়ে পড়ে তন্ত্র দ্বারা নানান পূজা করে দোষীর অমঙ্গল ঘটনো হয়। দৈবিক অভিশাপ হল ত্রিদেব, সূর্য, চন্দ্র, দেবতা, গঙ্গা যমুনা কে সাক্ষী করে অভিশাপ দেওয়া।
অভিশাপ দিতে হলে খুব তপঃ শক্তি লাগে। কারন এতে অনেক তপঃ শক্তি নষ্ট হয়। আবার সব সময় এমন যুক্তি খাটেও না। অনেক সময় শয়তান লোকের অভিশাপ লেগে যায়। আসলে ব্যাপার টা হল এমন- আমি একটা বিশাল পাথর ছুড়ে কাউকে মারতে চাই, তাহলে আগে আমাকে সেই বিশাল পাথর তোলার শক্তি অর্জন করতে হবে। একটা পাঁচ বছরের শিশু নিশ্চয়ই বিশাল পাথর তুলতে পারবে না। ঠিক তেমনই তপঃ শক্তি না হলে শাপ দেওয়া যায় না।
সাধারণত তেজস্বী ব্রাহ্মণ, সাধু, সন্ত, বিধবা নারী, লাঞ্ছিতা কন্যা --- এদের অভিশাপ ভয়ানক রূপে প্রতিফলিত হয়, অনেক সময় দোষীর সাথে নির্দোষীরাও শিকার হয়। পুরানে দেবযানীর অভিশাপ, ভীস্মকে অম্বার অভিশাপ, সীতার রাবণকে অভিশাপ, পার্বতীর অগ্নি দেবতা কে অভিশাপ, নারদ মুনি যে দুজন কে শাপ দিয়েছিল তারা গাছ হয়ে জন্মেছিল, নন্দী দ্বারা দক্ষকে অভিশাপ, দক্ষ দ্বারা চন্দ্রকে অভিশাপ, দুর্বাসা দ্বারা ইন্দ্রকে অভিশাপ, গণেশ দ্বারা চন্দ্রকে অভিশাপ – এমন অজস্র অভিশাপ এর ঘটনা পুরানে দেখা যায়। অভিশাপ থেকে ভগবান ও রেহাই পান না। মন্দাদোরীর অভিশাপ ভগবান রাম মাথা পেতে নিয়েছিলেন। গান্ধারীর অভিশাপ ভগবান কৃষ্ণ মাথা পেতে নিয়েছিলেন।
কিছু অভিশাপ এমন হয় বংশ পরম্পরা ধরে চলে। যেমন প্রাচীন কালে রাজা, জমিদার রা অনেক নিরীহ লোকের ক্ষতি করতেন। এমনকি নারীদের মান সম্মান হানি করতেন। তাঁদের অভিশাপে রাজারা নির্বংশ বা কোন প্রতিবন্ধকের শিকার হতেন। রাজবংশের অভিশাপ বংশ পরম্পরা ধরে চলে। মা কামাখ্যার অভিশাপে এখনও কোচবংশীয়রা কামাখ্যা মন্দিরে যেতে পারেন না।
অভিশাপ থেকে বাঁচার উপায়? সর্বদা সাধু, সন্ত, যোগী দের সম্মান করতে হবে। নিজেও শান্তিতে থাকবো --- অপরকে শান্তিতে থাকতে দেবো --- এই নীতি নিতে হবে। কখনো কারোর সাথে দুর্ব্যবহার করা চলবে না। করলেও সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। পুরান বলে একটা দিনে ব্রহ্ম কাল, কাল বেলা, রাক্ষসী বেলা ইত্যাদি থাকে।
গ্রহ নক্ষত্রের যোগে কারোর কারোর নাকি বিশেষ সময়ে জিহ্বা তে মা সরস্বতী অধিষ্ঠান করেন। সেই জন্য সব সময় মুখ দিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করতে হবে। কাউকে কটু কথা বলা যাবে না। আর ক্ষমা করতে শিখতে হবে। ক্ষমা মহৎ গুন।

Monday, December 3, 2018

মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র এবং মহামৃত্যুঞ্জয় স্তোত্রম্

মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র
==============
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম।
উর্বারুকমিববন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ স্বাহা।
ভাবার্থ --- হে সৃষ্টিকর্তা, ধর্তা ও হর্তা পরমাত্মন! তুমি আমাদের জন্য সুগন্ধিত, পুষ্টিকারক তথা বলবর্ধক ভোগ্য বস্তু দান করো। আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভক্তিসহকারে তোমার ভজন করি। হে দেব! আমরা পূর্ণায়ু ও পূর্ণভোগ করেই যেন এই শরীর রূপী বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারি।
-
ব্যাখ্যা --- খরমুজ পাকলেই বিনা কষ্টে সে তার ডাল থেকে মুক্ত হয়ে যায়। হে প্রভো! আমরা যেন এই জন্ম-মৃত্যু চক্র থেকে মুক্ত হয়ে কিন্তু তোমার অমৃতময়ীস্নেহ থেকে যেন বিমুখ না হই। তোমার অমৃতধারার বরদ হস্ত সদা যেন আমাদের উপরে থাকে।


মহামৃত্যুঞ্জয় স্তোত্রম্
===============
চন্দ্রার্কাগ্নিবিলোচনং স্মিতমুখং পদ্মদ্বয়ান্তস্থিতং
মুদ্রাপাশমৃগাক্ষসত্রবিলসৎপাণিং হিমাংশুপ্রভম্।
কোটীন্দুপ্রগলৎসুধাপ্লুততমুং হারাদিভূষোজ্জ্বলং
কান্তং বিশ্ববিমোহনং পশুপতিং মৃত্যুঞ্জযং ভাবয়েৎ।।
রুদ্রং পশুপতিং স্থাণুং নীলকণ্ঠম উমাপতিম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
নীলকন্ঠং কালমূর্ত্তিং কালজ্ঞং কালনাশনম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
নীলকণ্ঠং বিরূপাক্ষং নির্মলং নিলয়প্রদম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
বামদেবং মহাদেবং লোকনাথং জগদ্গুরুম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
দেবদেবং জগন্নাথং দেবেশং বৃষভধ্বজম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
ত্র্যক্ষং চতুর্ভুজং শান্তং জটামকুটধারিণম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
গঙ্গাধরং মহাদেবং সর্বাভরণভূষিতম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
ভস্মোদ্ধূলিতসর্বাঙ্গং নাগাভরণভূষিতম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
অনন্তমব্যয়ং শান্তং অক্ষমালাধরং হরম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
আনন্দং পরমং নিত্যং কৈবল্যপদদায়িনম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
অর্দ্ধনারীশ্বরং দেবং পার্বতীপ্রাণনায়কম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
প্রলয়স্থিতিকর্ত্তারমাদিকর্ত্তারমীশ্বরম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
ব্যোমকেশং বিরূপাক্ষং চন্দ্রার্দ্ধকৃতশেখরম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
গঙ্গাধরং শশিধরং শঙ্করং শূলপাণিনম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
অনাথঃ পরমানন্তং কৈবল্যপদগামিনি।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
স্বর্গাপবর্গদাতারং সৃষ্টিস্থিত্যন্তকারণম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
কল্পায়ুর্দ্দেহি মে পুণ্যং যাবদায়ুররোগতাম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
শিবেশানাং মহাদেবং বামদেবং সদাশিবম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
উৎপত্তিস্থিতিসংহারকর্তারমীশ্বরং গুরুম্।
নমামি শিরসা দেবং কিং নো মৃত্যুঃ করিষ্যতি।।
শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে মার্কণ্ডেয়কৃত মহামৃত্যুঞ্জয়স্তোত্রং সম্পূর্ণম্।।

Monday, November 19, 2018

দ্বাদশ জ্যোতিলিঙ্গ স্ত্রোত্রম্

সৌরাষ্ট্রে সোমনাথ 







সৌরাষ্ট্রদেশে বিশদেহতিরম্যে জ্যোতির্ময়ং চন্দ্রকলাবতংসম্ ।

ভক্তিপ্রদানায় কৃপাবতীর্ণং তং সোমনাথং শরণং প্রপদ্যে ।।
অর্থাৎ- যিনি দয়া পূর্বক সৌরাষ্ট্রপ্রদেশে অবতীর্ণ হয়েছেন , চন্দ্র যাঁর মস্তক ভূষণ, সেই জ্যোতিলিঙ্গ স্বরূপ ভগবান শ্রী সোমনাথের আমি শরণাগত হলাম ।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
শ্রীশৈলশৃঙ্গে বিবুধাতিসঙ্গে তুলাদ্রিতুঙ্গেহপি মুদা বসন্তম্ ।
তমর্জুনং মল্লিকপূর্বমেকং নমামি সংসারসমুদ্রসেতুম্ ।।
অর্থাৎ- যিনি উচ্চ আদর্শভূত পর্বত থেকেও উচ্চ শ্রীশৈল পর্বতের শিখরে , যে স্থানে দেবতাদের সমাগম হয় , অত্যন্ত আনন্দ সহকারে নিবাস করেন এবং সংসারসাগড় পার করবার জন্য যিনি সেতুস্বরূপ , সেই প্রভু মল্লিকার্জুনকে আমি নমস্কার জানাই ।।

•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
অবন্তিকায়াং বিহিতাবতারং মুক্তিপ্রদানায় চ সজ্জনানাম্ ।
অকালমৃত্যুোঃ পরিরক্ষণার্থং বন্দে মহাকালমহাসুরেশম্ ।।
অর্থাৎ- সাধু- সন্তদের মোক্ষ প্রদান করবার জন্য যিনি অবন্তীপুরীতে অবতরণ করেছেন, মহাকাল নামে প্রসিদ্ধ সেই মহাদেবকে আমি অকালমৃত্যু থেকে বাঁচবার জন্য নমস্কার জানাই ।
•••••••••••••••••••••••••••••••
কাবেরিকানর্মদয়োঃ পবিত্রে সমাগমে সজ্জনতারণায় ।
সদৈব মান্ধাতৃপুরে বসন্ত- মোঙ্কারমীশং শিবমেকমীড়ে ।।
অর্থাৎ- যিনি সৎ ব্যক্তিদের সংসার সাগর পার করানোর উদ্দেশ্যে কাবেরী ও নর্মদার পবিত্র সংগমের কাছে মান্ধাতাপুরে সর্বদা বাস করেন, সেই অদ্বিতীয় কল্যাণময় ভগবান ওঙ্কারেশ্বরের আমি স্তব করি ।।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
পূর্বোত্তরে প্রজ্বলিকানিধানে সদা বসন্তং গিরিজাসমেতম্ ।
সুরাসুরারাধিতপাদপদ্মং শ্রীবৈদ্যনাথং তমহং নমামি ।।
অর্থাৎ- যিনি পূর্বোত্তম দিকের বৈদ্যনাথ ধামের ভেতরে সর্বদা গিরিজার সঙ্গে বাস করেন , দেবতা ও অসুরগণ যাঁর চরণ কমল আরাধনা করেন, সেই শ্রীবৈদ্যনাথকে আমি প্রণাম করি ।।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
যাম্যে সদঙ্গে নগরেহতিরম্যে বিভূষিতাঙ্গং বিবিডধৈশ্চ ভোগৈঃ ।
সদ্ভক্তিমুক্তিপ্রদমীশমেকং শ্রীনাগনাথং শরণং প্রপদ্যে ।।
অর্থাৎ- যিনি দক্ষিণের রমণীয় নগর সদঙ্গে নানাবিধ ভোগ সহ সুন্দর বসন ভূষণে সজ্জিত হয়ে বিরাজ করেন, যিনি সদ্ ভক্তি ও মুক্তি প্রদান করেন, আমি সেই প্রভু শ্রীনাগনাথের শরণ নিলাম ।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
মহাদ্রিপার্শ্বে চ তটে রমন্তং সম্পূজ্যমানং সততং মুনীন্দ্রৈঃ ।
সুরাসুরৈর্যক্ষমহোরগাদ্যৈঃ কেদারমীশং শিবমেকমীড়ে ।।
অর্থাৎ- যিনি মহাগিরি হিমালয়ে কেদার শৃঙ্গের ওপর সর্বদা বসবাস করেন এবং মুনি, ঋষি, দেবতা তথা অসুর, যক্ষ , মহাসর্পাদি দ্বারা পূজিত হন, আমি সেই একমাত্র কল্যাণকর ভগবান কেদারনাথের স্তব পাঠ করি ।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
সহ্যাদ্রিশীর্ষে বিমলে বসন্তং গোদাবরীতীরপবিত্রদেশে ।
যদ্দর্শনাৎ পাতকমাশু নাশং প্রয়াধি তং ত্র্যম্বকমীশমীড়ে ।।
অর্থাৎ- যিনি গোদাবরী তটে পবিত্র সহ্যাদি পর্বতের নির্মল শিখরে বাস করেন, যাঁর দর্শন লাভে সত্বর সকল পাপ বিমোচন হয়, আমি সেই শ্রীত্র্যম্বকেশ্বরের স্তব পাঠ করি ।।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
সুতান্রপর্ণীজলরাশিযোগে নিবধ্য সেতুং বিশিখৈরসংখ্যৈঃ ।
শ্রীরামচন্দ্রেণ সমর্পিতং তং রামেশ্বরাখ্যং নিয়তং নমামি ।।
অর্থাৎ- ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তাম্রপর্ণী ও সাগর সঙ্গমে বাণের সাহায্যে সমুদ্রে বাঁধ দিয়ে তার ওপর যাঁকে স্থাপন করেছিলেন , সেই শ্রীরামেশ্বর দেবকে বিধি নিয়ম অনুসারে প্রণাম করি ।।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
যং ডাকিনীশাকিনিকাসমাজে নিষেব্যমাণং পিশিতাশনৈশ্চ ।
সদৈব ভীমাদিপদপ্রসিদ্ধং তং শঙ্করং- ভক্তহিতং নমামি ।।
অর্থাৎ- ডাকিনী, শাকিনী ও প্রেত দ্বারা যিনি নিত্য পূজিত হন, সেই ভক্তহিতকারী ভগবান শ্রীভীমশঙ্করকে আমি প্রণাম করি ।
সানন্দমানন্দবনে বসন্ত- মানন্দকন্দং হতপাপবৃন্দম্ ।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
বারাণসীনাথমনাথনাথং শ্রীবিশ্বনাথং শরণং প্রপদ্যে ।।
অর্থাৎ- যিনি স্বয়ং আনন্দকর এবং আনন্দ পূর্বক আনন্দবন কাশী ক্ষেত্রে বাস করেন, যিনি পাপ নাশ করেন, অনাথের নাথে সেই কাশীপতি শ্রীবিশ্বনাথের কাছে আমি শরণ নিলাম ।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
ইলাপুরে রম্যবিশালকেহস্মিন্ সমুল্লসন্তং জগদ্বরেণ্যম্ ।
বন্দে মহোদারতরস্বভাবং ঘৃঞ্চেশ্বরাখ্যং শরণং প্রপদ্যে ।।
অর্থাৎ- যিনি ইলাপুরের সুরম্য মন্দিরে বিরাজ করে সমস্ত জগতের পূজ্য হয়ে রয়েছেন, যাঁর স্বভাব খুবই উদার সেই শ্রীঘৃঞ্চেশ্বর জ্যোতির্ময় ভগবান শিবের আমি শরণ নিলাম ।।
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
জ্যোতির্ময়দ্বাদশলিঙ্গকানাং শিবাত্মনাং প্রোক্তমিদং ক্রমেণ ।
স্ত্রোত্রং পঠিত্বা মনুজোহতিভক্ত্যা ফলং তদালোক্য নিজং ভজেচ্চ ।।

অর্থাৎ -মানব যদি ভক্তি সহকারে এই দ্বাদশ জ্যোতিলিঙ্গ স্তব পাঠ করে তবে সে শিব দর্শনের ফল প্রাপ্ত হয় ।

Sunday, September 30, 2018

জ্যোতিষ শাস্ত্রে ২৭ নক্ষত্র এবং এর জাতক জাতিকাদের লক্ষণ।

ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রের সম্পূর্ণ রাশিচক্রে মোট ২৭টা নক্ষত্র আাছে। জাতক/জাতিকার জন্মসময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে বিচরণ করে সেই নক্ষত্র অনুযায়ী জন্ম নক্ষত্র ফল ---
১। অশ্বিনী - অশ্বিনী নক্ষত্রের অধকর্তা কেতু। এই নক্ষত্রে জন্ম জাতকহয় বুদ্ধিমান, মেধাবী,তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন এবং নিজের চেষ্টায় জীবনে উন্নতি করে। প্রথম জীবনে বিদ্যা লাভ হয়। মধ্যবর্তী জীবনে কিছু কষ্টে ও ব্যায়ের মধ্যে দিয়ে ভাল বসতি করে। কর্ম ক্ষেত্র শুভ হয়। অনেকে তাকে মান্য করে নেতৃত্ব করতে পারে। আত্মীয় স্বজনদের জন্য চিন্তা থাকে। সন্তান প্রায়ই প্রতিষ্ঠিত হয়। দাম্পত্যক্ষেত্র মধ্যম। জীবনে মাঝে মাঝে হঠাৎ উন্নতি আসে। মাঝ বয়েসে বা শেষ বয়েসে কয়েক বছর ব্যয়বাহূল্যে কিছুটা কষ্ট পেতেও পারে। শুভবর্ষ - ৭, ১৬, ২৫, ৩৪, ৪৩, ৫২, ৬১, ৭০
২। ভরণী– ভরনী নক্ষত্রের অধিকর্তা শুক্র। এদের জীবনে শুভাশুভ মিশ্র ভাব এ কাটে। এরা পরিশমী কমহয়, তবে মেধা খাটিয়ে কর্ম পরিচালনা দ্বারা জীবনে উন্নতি করিতে পারে। জীবনে সুযোগ মন্দ পায়না। জীবনের প্রথম দিকে অশুভভাবে কাটে। মধ্য বয়েস থেকে শুভ ভাব চলে। তখন অর্থ সঞ্চয় করলে শেষ জীবন সুখে কাটে। অর্থ বেশী অপচয় করলে বেশী বয়েসে আর্থিক দূশ্চিন্তায় ভোগে। দাম্পত্য জীবন বেশী সুখের নয়। শুভবর্ষ- ৬, ১৫, ২৪, ৩৩, ৪২, ৫১, ৬০, ৬৯,
৩। কৃত্তিকা- কৃত্তিকা নক্ষত্রের অধিকর্তা রবি। এরা যথেষ্ঠ পরিশ্রমী হয়। স্পষ্ট সত্যকথা বলতে ভালো বাসে।এদের জীবনে মাঝে মাঝেই বাধাবিঘ্ন আসে। অনেকেই এদের ভুল বোঝে। জীবনে অনেক বাধা বিঘ্ন আসলেও শ্রম দ্বারা এরা উন্নতি করতে সফল হয়। মাঝে মাঝে পাড়া প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে বিবাদ হতে পারে অন্যের প্রতি ভাল কাজ করলেও যশ বা প্রতিদান কম পায়। দাম্পত্যক্ষেত্র মোটামুটি শুভ। শুভবর্ষ- ১৯, ২৮, ৩৭, ৪৬, ৫৫, ৬৪, ৭৩,
৪। রোহিনী- রোহিনী নক্ষত্রের অধিকর্তা চন্দ্র। চন্দ্রের প্রকৃতি কিছুটা এদের মধ্যে থাকে। এরা শান্তিপ্রিয় এবং সবকিছু সমস্যার সমাধান ধীরে ধীরে করতে চায়। লোকের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়। অনেক সময় এরা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রিয় হয়। এরা সরল লোক ভালবাসে। নানা কাজে পার্গত হয়।
শুভবর্ষ- ১৩, ১৬, ২২, ২৫, ৩১, ৪০, ৪৯, ৫২, ৫৮, ৬১, ৬৭, ৭০,
৫। মৃগশিরা- মৃগশিরা নক্ষত্রর অধিকর্তা মঙ্গল। এরা ধীর স্থির কিন্তু কোন অন্যায় দেখলে এদের মাথা গরম হতে পারে। এদের মধ্যে মাঝে মাজে একটু দ্বিমনা ভাব দেখা যায়। অনেকে এদের শ্রদ্ধা করে। এবং এরা মিশুকে হয়। এদের জীবনে মাঝে মাঝে কর্মোন্নতির শুভ যোগ আসে। কিন্তু আত্মীয় ও পরিবেশ থেকে মনে আঘাত পায়। শুভবর্ষ - ৩, ৫, ১২, ১৪, ২১, ২৩, ৩০, ৩২, ৩৯, ৪১, ৪৮, ৫০, ৫৭, ৫৯, ৬৬, ৬৮,
৬। আদ্রা- আদ্রা নক্ষত্রের অধিকর্তা রাহু। এদের নিজ শ্রমদ্বারা উন্নতি করার চেষ্টা থাকে। তবে কাজে সফল হয়না। আকস্মিক প্রাপ্তিযোগথাকে। মানসিক চাঞ্চল্য ও দূশ্চিন্তার ভাব থাকে। দাম্পত্যক্ষেত্র শুভনয়। মাঝে মাঝে নানা রোগ ভয়। শুভবর্ষ- ৪, ৬, ১৩, ১৫, ২২, ২৪, ৩১, ৩৩, ৪০, ৪২, ৪৯, ৫১ ,৫৮, ৬০, ৬৭, ৬৯,
৭। পুনর্বসু- পুনর্নবসু নক্ষত্রর অধিকর্তা বৃহস্পতি। এরা মেধাবী হয় ও জীবনে উন্নতি করিতে পারে। প্রচুর সন্মান ও অর্থ লাভ করে থাকে। প্রায়ই মানসিক শান্তি ও আনন্দে থাকে। ভাই বোনদের জন্য কিছু চিন্তা হতে পারে। অনেকের বন্ধুত্ব ও সাহায্য লাভ করে। ব্যাবসা ও চাকরি দুটোই শুভ।
শুভবর্ষ ৭, ৯, ১৬, ১৮, ২৫, ২৭, ৩৪, ৩৬, ৪৩, ৪৫, ৫২, ৫৪, ৬১, ৬৩, ৭০, ৭২,
৮। পুষ্যা- পুষ্যা নক্ষত্রর অধিকর্তা শনি। এরা খুব ধার্মিক হয়। সংসারে আসক্তি কম থাকে। আধ্যাত্মিকভাব প্রবল হয়। মনুষ্যের মঙ্গল করতে ভালো বাসে। এদের মধ্যে যোগ জ্যোতিষ আধিভৌতিক প্রভৃতির দিকে আকর্ষণ থাকে। ভাগ্য শুভ, কর্মলাভ অর্থলাভ ও নানা দিকে উন্নতি হয়। গুরুজন ব্যাক্তিদের জন্যে চিন্তা থাকে। শুভবর্ষ ৬, ৮, ১৫, ১৭, ২৪, ২৬, ৩৩, ৩৫, ৪২, ৪৪, ৫১, ৫৩, ৬০, ৬২, ৬৯, ৭১,
৯। অশ্লেষা- অশ্লেষা নক্ষত্রর অধিপতি বুধ। এদের জীবনে সব সময় দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ভাব থাকে দ্বিমনা ভাবের থাকে। অনেক কাজ শুরু করে শেষ করতে পারেনা। তাই জীবনে অতৃপ্তি আসে। তবে শ্রম করলে উন্নতি হবেই। দাম্পত্য শুভ হয়। মাঝে মাঝে বাধা বিপত্তি ও চিন্তা হতাশায় জীবন উত্থান, পতন, হতেই থাকবে
শুভবর্ষ ৬, ৯, ১৫, ১৮, ২৪, ২৭, ৩৩, ৩৬, ৪২, ৪৫, ৫১, ৫৪, ৬০, ৬৩, ৬৯, ৭২,
১০। মঘা- মঘা নক্ষত্রর অধিকর্তা কেতু। এরা খুব তেজী হয় এবং আত্ম অভিমান প্রবল হয়। এরা স্পষ্ট কথা বলতে ভাল বাসে। তাই অনেকের অপ্রিয় হয়। এদের মেধাশক্তি খুব উচ্চ নাও হতে পারে। মধ্যম ভাবে জীবন কাটে। নানা বাধার মধ্যদিয়ে উন্নতি হয়। কিন্তু সময়ে হতাশা দেখাদেবে। মনে আবেগ প্রবনতা থাকে। শুভবর্ষ- ১০, ১২, ১৯, ২১, ২৮, ৩০, ৩৭, ৩৯, ৪৬, ৪৮, ৫৫, ৫৭, ৬৪, ৬৭,
১১। পুর্বফল্গুনী- পুর্ব্বফাল্গুনী নক্ষত্রর অধিকর্তা শুক্র এরা মিষ্টিভাষী ও ধীর স্থির এবং একটুগম্ভীর প্রকৃতির হয়। যা করবে মন স্থির করে নেয় সময় বিশেষ কখন প্রকাশ করেনা। অন্যের সমালোচনা করে নির্ভীক ভাবে। ভয় কম থাকে। মাঝেসময়ে কিছু স্বার্থ ভাবদেখা যায়। নারীর প্রতি আকর্ষণ থাকে। এদের জীবনে শুভযোগ অর্থ, আনন্দলাভ,ও সাংসারিক দিকে উন্নতি হয়। শুভবর্ষ- ১১, ১৫, ২০, ২৪, ২৯, ৩৩, ৩৮, ৪২, ৪৭, ৫১, ৫৬, ৬০, ৬৫, ৬৯,
১২। উত্তরফল্গুনী- উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রর অধিকর্তা রবি। এরা খুব ভক্তিমান হয়। এবং ঈশ্বরের কৃপালাভ করে। এরা স্ত্রীর বশীভূত হতে পারে। সত্য ও সৎ পথে থেকেই এরা উন্নতিসাধন করে। জাতক সুহৃদয়শীল হয় অনেককে সাহার্য্যও করতে ভাল বাসে। এরা সৎবুদ্ধিযুক্ত এবং সদ্ভাবনার হয়।
শুভবর্ষ- ৩, ৭, ১২, ১৬, ২১, ২৫, ৩০, ৩৪, ৩৯, ৪৩, ৪৮, ৫২, ৫৭, ৬১, ৬৬, ৭০,
১৩। হস্তা- হস্তা নক্ষত্রর অধিকর্তা চন্দ্র, এরা চোখের রোগ,বাত, পিত্তরোগ, সর্দিকাশি, প্রভৃতিতে কষ্ট পেতে পারে। এরা জ্ঞানী, বিচক্ষণ, বুদ্ধীমান, চতুর ও মেধাবী হয়। জাতক দীর্ঘায়ূহয়। পারিপার্শিক বাধা না এলে এরা বিরাট শিক্ষিত হয়। নিজ বুদ্ধির দ্বারা প্রচুরঅর্থ উপার্জন করে।
শুভবর্ষ ৪, ১২, ১৩, ২১, ২২, ৩০, ৩১, ৩৯, ৪০, ৪২, ৪৯,. ৫৭, ৫৮, ৬৬, ৬৭,
১৪। চিত্রা-চিত্রা নক্ষত্রর অধিকর্তা মঙ্গল। এরা সত্যবাদী, বিচক্ষণ ও অল্পাহারী হয়। ছোটখাট রোগ ব্যাধি অনেক হয়। অর্থ উপার্জন করে মধ্যম। বহূ কুটুম্ব থাকে। ক্ষমতাশালী হলেও একটু অলস হয়। স্থূলকপাল লোম যুক্তদেহ। দাতের রোগের ভয়।এরা মাঝে মাঝে জণসাধারনের প্রিয় হয়। কখন আবার অপ্রিয় হয়। উত্থান পতনের মধ্যদিয়ে জীবন। তবে এদের তেজ ও সাহস থাকে মনের জোর প্রচুর। শুভবর্ষ- ১৪, ২১, ৩২, ৩৯, ৪১, ৪৮, ৫৭, ৫৯, ৬৬, ৬৮, ৭৫,



১৫। স্বাতী- স্বাতী নক্ষত্রর অধিকর্তা রাহু। এদের মধ্যে শান্তভাব থাকবে। তবে কখন বা হঠাৎ করে রেগে ওঠে। এদের কপালস্থূল, দ্বাতা,সুবুদ্ধিমান, সৎপরামর্শ দাতা, বিদ্বানহয়। এরাধনবান হলেও মনে বৈরাগ্য ভাব থাকে। এরা হয় শুরেশ, দেবদ্বিজে ভক্তিপরায়ণ। সন্তানদের জন্য বিশেষ চিন্তাথাকে। দাঁত ও পেটের রোগের ভয়। শুভবর্ষ-৪, ৬, ১৩, ১৫, ২২, ২৪, ৩১, ৩৩, ৩৪, ৪০, ৪২, ৪৯, ৫১, ৫৮, ৬০, ৬৭, ৬৯,
১৬। বিশাখা- বিষাখা নক্ষত্রর অধিকর্তা বৃহস্পতি। এদের মাথাভার মাথাব্যাথা, পিত্তরোগ হতে পারে। এরা হয় দেবভক্ত, সত্যবাদী, এবং জিতেন্দ্রিয়। ধার্মিক ভাব থাকে প্রায়ই জ্ঞাণী হয়। অজীর্ণরোগ হয়। মোটামুটি সন্দেহ যুক্ত, কামী হয়। তবে এরা নিজ চেষ্টাদ্বারা ধনীহয়। এদের হৃদয়ে সদ্ভাবনা প্রচুর থাকে। কারো সঙ্গে ঝমেলা পছন্দ করে না। তবে রেগে গলে মাথা খুব গরম হয়। শুভবর্ষ- ৭, ৯, ১৬, ১৮, ২২, ২৫, ২৭, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪৩, ৪৫, ৫২, ৫৪, ৬১, ৭০, ৭২,
১৭। অনুরাধা- অনুরাধা নক্ষত্রর অধিকর্তা শনিদেব। এদের দেহ শ্যামবর্ণ হয়, এরা খুবগভীর ও দয়ালু প্রকৃতির হয়। ধর্মে মতি থাকে। চেষ্টাকরলে যথেষ্ঠ জ্ঞাণলাভ করতে পারে। এদের পেটের বা লিভারের রোগ হয়। এরা সুদেহী, কামভাব বেশি। শ্রমদ্বারা ভাল অর্থ উপার্জন করতে পারে। মনন শীলতা থাকে, তবেঅব্যয় খরচ দেখলে মাথাগরম হয়। শুভবর্ষ-৬,৮,১৫, ১৭, ২৪, ২৬, ৩৩, ৩৫, ৪২, ৪৪, ৫১, ৫৩, ৬০, ৬২, ৬৯, ৭১,
১৮। জেষ্ঠা- জেষ্ঠা নক্ষত্রর অধিকর্তা বুধ, এরা খুব দয়ালু হৃদয়বান থাকে।‌ চেষ্টাকরলে এরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারে। বাতরোগ পিত্তরোগ মাথার রোগ হতে পারে। এদের মধ্যে অল্প বয়েসে বেশী বুদ্ধির বিকাশ হয় এরা খুব বাস্তববাদী ও শ্রমশীল। তবে প্রচুর আয় করে গরীব দঃখীদের সাহার্য্য করে থাকে।
শুভবর্ষ-৬, ৯, ১৫, ১৮, ২৪, ২৭, ৩৩, ৩৬, ৪২, ৪৫, ৫১, ৫৪, ৬০, ৬৩, ৬৯, ৭২,
১৯। মূলা- মূলা নক্ষত্রর অধিকর্তা কেতু। এদের কপালহয় গজের মতো। শীতলদেহ বিপরীত লিঙ্গের বশীভূত হয়। এরা গান বাজনা ভাল শিখতে পারে। এরা খুব আড়াম্বরপ্রিয় হয়। চোখ একটু রক্তাভ। এদের বহূ আত্মীয় কুটুম্ব থাকে। এরা প্রায়ই একটু কৃপণ হয়। সন্তানের জন্য বিশেষ চিন্তাথাকে। দাম্পত্য মধ্যম, এরা নিজ মনের কথা প্রায় লুকিয়ে রাখে। শুভবর্ষ - ৭, ১০, ১৬, ১৯, ২৫, ২৮, ৩৪, ৩৭, ৪৩, ৪৬, ৫২, ৫৫, ৬১, ৬৪, ৭০, ৭৩,
২০। পূর্বাষাঢ়া-পূর্ব্বাষাঢ়া নক্ষত্রর অধিকর্তা শুক্র,এদের কপালস্থূল মতো। এরা লেখাপড়া ভাল শিখতে পারে। একটু আড়ম্বরপ্রিয় চোখ একটু রক্তাভ। এদের বহূত আত্মীয় কুটুম্ব থাকে। একটু খরচী হয়। এরা গৌরবর্ণর শুচিবদন জাতক দীর্ঘায়ূ এবং বাবা মার প্রিয় হয়। বহূ লোকের ও আপন আত্মীয়র আশ্রয়দাতা হয়। তবে প্রশংসা কম পায়। শুভবর্ষ- ৩, ৬, ১২, ১৫, ২১, ২৪, ৩০, ৩৩, ৩৯, ৪২, ৪৮, ৫১, ৫৭, ৬০, ৬৬, ৬৯,
২১। উত্তরষাঢ়া- উত্তরষাঢ়া নক্ষত্রর অধিকর্তা রবি। এদের দেহ একটু স্থূল মতো মনে গর্বিত ভাব থাকে। জাতকের যশ লাভহয়। গান বাজনা ও শিল্পে পার্গত হয়। এদের অজীর্ণ উদারময় বাতরোগ লিভার রোগঅম্লরোগ দেখা দেয়। পিঠ একটু কুঁজো ভাব, এরা অনেকের শ্রদ্ধালাভকরে এবং সন্মানিত হয়। এদের কাছেথেকে সবাই সমান সাহায্য পায়না। ৩, ১০, ১২, ১৯, ২১, ২৮, ৩০, ৩৭, ৩৯, ৪৬, ৪৮, ৫৫, ৫৭, ৬৪, ৬৬, ৭৩,
২২। শ্রবনা- শ্রবনা নক্ষত্রের অধিকর্তা চন্দ্র। এদের দেহ একটু কঠিন হয়। চাপা গজ কপাল, শ্যামবর্ণ হয়। এদের বাতরোগ, লিভাররোগ, অম্ল, অজীর্ণ, রোগ হয়। চোখ একটু রক্তাভ হয়। এরা বেশ সু-রসিকহয়। পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান শ্রমদ্বারা জীবনে উন্নতি করে। খরচা বেশী করতে চায় না।
শুভবর্ষ- ১৩, ১৬, ২২, ২৫, ৩১, ৩৪, ৪০, ৪৩, ৪৯, ৫২, ৫৮, ৬১, ৬৭, ৭০,
২৩। ধনিষ্ঠা- ধনিষ্ঠা নক্ষত্রর অধিকর্তা মঙ্গল। এরা গৌরবর্ণ ধার্মিক ও দেবভক্ত হয়। পেটেররোজ ও অজীর্ণ রোগ হয়। উপার্জন মধ্যমহয়। মন খুব চঞ্চল, খেতে ভাল বাসে। মাঝে সময়ে ভ্রমনে খুশী হয়। অনেক সময় ধনী ও দাতাহয়। মাঝ বয়েস থেকে সুখী হয় প্রথম জীবনে সংগ্রাম।
শুভবর্ষ- ১৪, ২১, ২৩, ৩০, ৩২, ৩৯, ৪১, ৪৮, ৫০, ৫৭, ৫৯, ৬৬, ৬৮, ৭৫,
২৪। শতভিষা- শতভিষা নক্ষত্রর অধিকর্তা রাহু। এদের মন বেশ পবিত্র এবং সত্যনিষ্ঠ হয়। জীবনে অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে। শ্যামবর্ণ হয়। এদের আমবাত এলার্জি স্নায়বিক ও চোখেররোগ হয়। এরা বিবেকি এবং বৈরাগ্য ভাবের হয়। শেষ জীবনে সন্ন্যাস ধর্ম লাভ করিতে পারে। ব্যাবহার মধুর তবে স্বভাব চাপা। শুভবর্ষ-৪, ৬, ১৩, ১৫, ২২, ২৪, ৩১, ৩৩, ৪০, ৪২, ৪৯, ৫১, ৫৮, ৬০, ৬৭, ৬৯,
২৫।- পূর্বভাদ্রপদ- নক্ষত্র অধিকর্তা বৃহস্পতি। এদের কপাল প্রশস্ত নাসা উন্নত হয়। দেহ তাম্রবর্ণ। বিপরীত লিঙ্গের বশীভূত হয়। এরা পরোপকারী এবং দয়ালু প্রকৃতির হয়। রূপ সুন্দর হয়, রাজভক্ত রাজসেবক হতে পারে। জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন যেমন করে তেমন খরচও অত্যাধিক করে। গৃহ নির্মাণ যোগ আছে। জাতক বিদ্বানও হয়। শুভবর্ষ-৭, ৯, ১৬, ১৮, ২৫, ২৭, ৩৪, ৩৬, ৪৩, ৪৫, ৫২, ৫৪, ৬১, ৬৩, ৭০, ৭২,
২৬। উত্তরভাদ্রপদ- উত্তর ভাদ্রপদ নক্ষত্র অধিকর্তা শনিদেব। এরা গৌরবর্ণ ও রূপবান হয়। গম্ভীর ভাব থাকে,সরকারী কাজ করলে প্রচুর উন্নতি করে। এরা নির্জনতা পছন্দ করে যাদুবিদ্যা, জ্যোতিষ, গভীর জ্ঞাণের পুস্তকপাঠ প্রভৃতি ভাল বাসে। হালকা ভাব সদায় পছন্দ করে। এদের মন বাইরে বোঝা কঠিন।
শুভবর্ষ- ৬, ৮, ১৫, ১৭, ২৪, ২৬, ৩৩, ৩৫, ৪২, ৪৪, ৫১, ৫৩, ৬০, ৬২, ৬৯, ৭১,
২৭। রেবতী নক্ষত্র অধিকর্তা বুধ। এরা সুন্দর চেহেরা বিশিষ্ট, এরা সুন্দর চেহেরা বিশিষ্ট, গৌর বর্ণ জ্ঞাণী মানী এবং বিরাট যশস্বী হতে পারে। এদের কেশ দীর্ঘ ও কাম ভাব বেশী থাকে এবং একাধিক নারীতে আকৃষ্ট হতে পারে। এরা বাইরে হালকা স্বভাব কিন্তু ভিতরে ভীষণ চতুর। মাঝে মাঝে দ্বিমনা ভাব দেখা যায়। অনেক সময় খেয়ালের বশে অনেক কাজ করে । বৃদ্ধি ও শিল্পী কাজে এরা প্রচুর উপার্জন করে।
শুভবর্ষ-৬, ৯, ১৫, ১৮, ২৪, ২৭, ৩৩, ৩৬, ৪২, ৪৫, ৫১, ৫৪, ৬০, ৬৩, ৬৯, ৭২,

Friday, September 21, 2018

কনকধারা স্তত্র

অতুল সম্পদের অধিকারী হয়ে ধনী হওয়ার যারা স্বপ্ন দেখেন ও এই স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য চেষ্টা করতে যারা মা লক্ষ্মীর স্মরণ নিতে চান তারা আদি শঙ্করাচার্য রচিত কনকধারা স্তোত্রমন্ত্র পাঠ করতে পারেন। এটি তেমন কঠিনও নয়। শাস্ত্রে এমন কিছু মন্ত্র রয়েছে, যার দ্বারা আকর্ষিত হয়ে ঈশ্বর অর্থ দিতে বাধ্য হন। আদি শঙ্করাচার্য রচিত কনকধারা স্তোত্র মন্ত্রকে এমনই সিদ্ধ মন্ত্র মনে করা হয়, যা নিয়মিত পাঠ করলে লক্ষ্মীর কৃপা সবসময়ে বজায় থাকে। কথিত আছে এই মন্ত্রের সাহায্যেই শঙ্করাচার্য সোনার বৃষ্টি করান। শুনেছি ধন বৃদ্ধির জন্য এই মন্ত্র অনেকেই পাঠ করেন। ফলাফল জানিনা।




আদি শঙ্করাচার্য রচিত কনকধারা স্তোত্র মন্ত্র
-----------------------------------------------------------
অঙ্গহরে পুলকভূষণ মাশ্রয়ন্তী ভৃগাঙ্গনৈব মুকুলাভরণং তমালম।
অঙ্গীকৃতাখিল বিভূতিরপাঙ্গলীলা মাঙ্গল্যদাস্তু মম মঙ্গলদেবতায়াঃ।।১।।

মুগ্ধ্যা মুহুর্বিদধতী বদনৈ মুরারৈঃ প্রেমত্রপাপ্রণিহিতানি গতাগতানি।
মালা দৃশোর্মধুকর বিমহোত্পলে যা সা মৈ শ্রিয়ং দিশ্তু সাগর সম্ভবায়াঃ।।২।।

বিশ্বামরেন্দ্রপদবিভ্রমদানদক্ষমানন্দ হেতুরধিকং মধুবিদ্‌বিষোপি।
ঈষন্নিষীদতু ময়ি ক্ষণমীক্ষণার্দ্ধমিন্দোবরোদর সহোদরমিন্দিরায়ঃ।।৩।।

আমীলিতাক্ষমধিগম্য মুদা মুকুন্দমানন্দকন্দম নিমেষমনঙ্গগতন্ত্রম্।
আকেকর স্থিত কনী নিকপক্ষ্ম নেত্রং ভূত্যৈ ভবেন্মম ভুজঙ্গরায়াঙ্গনায়াঃ।।৪।।

বাহ্যন্তরে মধুজিতঃ শ্রিতকৌস্তুভৈ য়া হারাবলীব হরিনীলময়ী বিভাতি।
কামপ্রদা ভগবতো পি কটাক্ষমালা কল্যাণ ভাবহতু মে কমলালয়ায়াঃ।।৫।।

কালাম্বুদালিললিতোরসি কৈটভারের্ধরাধরে স্ফুরতি য়া তডিদঙ্গনেব্।
মাতুঃ সমস্ত জগতাং মহনীয় মূর্তিভদ্রাণি মে দিশ্তু ভার্গবনন্দনায়াঃ।।৬।।

প্রাপ্তং পদং প্রথমতঃ কিল য়ত্প্রভাবান্মাঙ্গল্য ভাজিঃ মধুমায়নি মন্মথেন।
মধ্যাপতেত দিহ মন্থর মীক্ষণার্দ্ধ মন্দাবসং চ মকরালয়কন্যকায়াঃ।।৭।।

দদ্য়াদ দয়ানুপবনো দ্রবিণাম্বুধারাম স্মিভকিঞ্চন বিহঙ্গ শিশৌ বিষণ্ণ।
দুষ্কর্মধর্মমপনীয় চিরায় দূরং নারায়ণ প্রণয়িণী নয়নাম্বুবাহঃ।।৮।।

ইষ্টা বিশিষ্টমতয়ো পি যথা যযার্দ্রদৃষ্টয়া ত্রিবিষ্টপপদং সুলভং লভন্তে।
দৃষ্টিঃ প্রহূষ্টকমলোদর দীপ্তি রিষ্টাং পুষ্টি কৃষীষ্ট মম পুষ্কর বিষ্টরায়াঃ।।৯।।

গীর্দেবতৈতি গরুঢ়ধ্বজ ভামিনীতি শাকম্ভরীতি শশিশেখর বল্লভেতি।
সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় কেলিষু সংস্থিতায়ৈ তস্যৈ নমস্ত্রি ভুনৈক গুরোস্তরুণ্যৈ।।১০।।

শ্রুত্যৈ নমোস্তু শুভকর্মফল প্রসূত্যৈ রত্যৈ নমোস্তু রমণীয় গুণার্ণবায়ৈ।
শক্তয়ৈ নমোস্তু শতপাত্র নিকেতানায়ৈ পুষ্টয়ৈ নমোস্তু পুরুষোত্তম বল্লাভায়ৈ।।১১।।

নমোস্তু নালীক নিভাননায়ৈ নমোস্তু দুগ্ধৌদধি জন্ম ভূত্যৈ।
নমোস্তু সোমামৃত সোদরায়ৈ নমোস্তু নারায়ণ বল্লভায়ৈ।।১২।।

সম্পতকরাণি সকলেন্দ্রিয় নন্দানি সাম্রাজ্যদান বিভাবানি সরোরুহাক্ষি।
ত্ব দ্বংদনানি দুরিতা হরণাদ্যতানি মামেব মাতর নিশং কলয়ন্তু নান্যম্।।১৩।।

যত্কটাক্ষসমুপাসনা বিধিঃ সেবকস্য কলার্থ সম্পদঃ।
সন্তনোতি বচনাঙ্গমানসংসত্বাং মুরারিহৃদয়ৈশ্বরীং ভজে।।১৪।।

সরসিজনিলয়ে সরোজ হস্তে ধবলমাংশুকগন্ধমাল্যশোভে।
ভগবতি হরিবল্লভে মনোজ্ঞে ত্রিভুবনভুতিকারী প্রসীদ মহ্যম্।।১৫।।

দগ্ধিস্তিমিঃ কমকুংভমুখা ব সৃষ্টিস্বর্বাহিনী বিমলাচারু জল প্লুতাঙ্গীম।
প্রাতর্নমামি জগতাং জননীমহেষ লোকাধিনাথ গৃহিণী মমৃতাব্ধিপুত্রীম্।।১৬।।

কমলে কমলাক্ষবল্লভে ত্বং করুণাপুরতরাং গতৈরপাড়ংঙ্গৈঃ।
অবলোকয় মাম কিংচনানাং প্রথমং পাত্রমকৃত্রিমং দয়ায়াঃ।।১৭।।

স্তুবন্তি য়ে স্তুতিভির ভূমিরন্বহং ত্রয়ীময়ীং ত্রিভুবনামাতরং রমাম্।
গুণাধিকা গুরুতরভাগ্যভাগিনো ভহন্তি তে বুধভাহিতায়াঃ।।১৮।।

।। শ্রী কনকধারা স্তোত্র সম্পূর্ণম্।।

Friday, August 31, 2018

বাংলাদেশের কোন এক মফঃস্বল থেকে বলছি

খুব সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে সুবর্ণা। ওদের বাড়ির পাশেই মসজিদ, আজানের বিকট শব্দে ওর ঘুম ভেঙে যায়। তারপরও মরার মতো শুয়ে থাকে, মুসল্লীদের পায়ের শব্দ পায়। ওর কেমন যেন ভয় ভয় করে। কিসের ভয়? ওর প্রায়ই পূর্ণিমার কথা মনে পড়ে। সে তো ২০০১ সালের কথা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরেছিল। হিন্দুদের পাড়াগুলোতে হামলে পড়েছিল নরদানবেরা। পূর্ণিমা ছিল ছোট্ট এক বালিকা, তার মা ধর্ষণ করতে আসা মুসলিম যুবকদের ডেকে বলেছিল:‘বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট, তোমরা এক এক করে আসো।’
ওরও তেমনি ভয় করে। যদি ওরকম কিছু হয়। আলো ফোটার পরে বিছানা ছেড়ে ওঠে। একা বাইরে বেরোয় না। মাকে ডাকে। মা ওঠে। তারপর ও ঘরের দরজা খোলে। দাঁত ব্রাশ করে। থালাবাটিগুলো ধোয়, কাঠের গুঁড়ি চুলোয় গাদিয়ে চাল বসিয়ে দেয় চুলোয়। মা তরকারিগুলো কোটেন। সুবর্ণা তরকারি রান্না করে। রান্না শেষ হলে মা-মেয়ে স্নান করে আসে। এবার ঠাকুর পুজোর পালা। দু’জনে জোকার দিয়ে সবে ঠাকুরকে ভোগের প্রসাদ দিতে বসেছে এই সময়ে টিনের চালে একের পর এক ইট পড়ার শব্দ। জানালার কাঁচেও এসে ইট পড়ে। কাঁচের কোণা এসে লাগে সুবর্ণার গালে, রক্ত বেয়ে পড়ে। ওর মা ওকে নিয়ে বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েন। ফ্লরে পড়ে থাকে দেবতাদের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য ও থালা।

এভাবে কতোক্ষণ কেটে গেছে কে জানে, ভীতির মধ্য থেকে যখন সময় মানুষের যায় তখন সে টের পায় না কী তার অভিব্যক্তি, তলোয়ার দিয়ে গলা দু’ফাঁক করা হয়েছে যেন। সুবর্ণা এক সময় লেপের মধ্য থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ওর মা তখনও শুয়ে। চোখের পাশ থেকে গড়াচ্ছে অশ্রুকণা। সুবর্ণা মায়ের কপালে হাত রাখে, চুমু খায়, চোখের জল মুছিয়ে দেয়। তারপর ফ্লরে বসে ছোট ছোট থালাগুলো গুছিয়ে ঠাকুরাসনের দেব-দেবীদের মূর্তির সামনে রাখে, কৌটো থেকে চামচে বের করে চিনি দেয়, আর ছোট ছোট গ্লাস ভরা জল, লক্ষ্মীর কপালে সিঁদুরের রেখা আঁকে, ঠাকুরাসনের পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ মন্ত্র জপে। এখন দেবতারা অন্নভোগ করবেন।
সুবর্ণা উঠে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে যায়। গায়ের জোরে চিৎকার করে গালি দেয়:‘খাঙ্কির বাচ্চাআআ…।’
প্রায় প্রতিদিন সকালবেলা একই ঘটনা ঘটে। এরপর আর খাবার রুচি হয় না। তবুও মার জন্য খেতে হয় সুবর্ণাকে। মা-ও খেতে চায় না। তবুও বুঝিয়ে-সুজিয়ে মাকে খাইয়ে নিজেও দু’টো পেটে দিয়ে জামাকাপড় পাল্টে বেরিয়ে পড়ে।
সকাল এগারটার দিকে ওর কলেজ। বেশ কিছুটা পথ হাঁটতে হয়। মফস্বল শহরের কলেজ। পথে আসতে-যেতে ছেলেগুলোকে সে দেখে, ব্রীজের ঢালে দাঁড়িয়ে আছে। দূর পর্যন্ত একবার দেখে নেয়। রাস্তায় লোকজন আছে। সুবর্ণা বড় একটি নিশ্বাস নিয়ে আবার চলতে শুরু করে। ওগুলোর বেশ কয়েকটার আবার লম্বা দাড়ি। দাড়িগুলো দেখলেই ওর ঘেন্না লাগে। ওর এমনিতে যৌনকেশ না কাটলেই কেমন ঘিনঘিন করে। তার ওপর মুখের ওপর ওতগুলো দাড়ি নিয়ে ওরা কিভাবে যে ঘুমোয়, খায়। সূর্যের আলো ওদের গায়ে এসে পড়েছে। সে ছায়া রাস্তার ওপর। সুবর্ণা সে ছায়াগুলোকেও মাড়ায় না। দূর থেকে চলে যায়।
কথাটা ওর কানে আসে। ‘হিন্দু মেয়েটার লগে যদি প্রেম করতে পারতাম। আমার খুব শখ একটা হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করবো।’
সুবর্ণা সেদিকে তাকায় না। চুপচাপ হেঁটে চলে যায় কলেজের দিকে।
সুবর্ণাকে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ ওরা রসালো আলাপ করে। ছেলেটার নাম ইসমাইল। মোবাইলে সানি লিওনের একটা পর্ণভিডিও চালায়।
‘সুবর্ণাকে বিয়ে করলে তোর বাপমা মানবে?’ জানতে চায় আলম।
‘মানবে না কেন? ঐ উছিলায় আমরা সবাই বেহেশতে যেতেও পারবো।’
‘তবে মালাউনের বাচ্চা মালাউন বেশি বাড়ছে। ওকে সাইজ করতে হইবো। কোন একদিন বাগে পাইলে মনের খয়ায়েশ মিটাইয়া খাইতাম।'
ভাঙা মঠের ওপর থেকে ওপাশের শ্মশানের ধোঁয়া দেখা যায়।
ওদিকে সুবর্ণা কলেজে এসেছে। ক্লাসরুমে ঢুকে দেখে সাবিহা কোথায় বসা। জায়গাটা মেপে নেয় দ্রুত চোখ বুর্লিয়ে। সাবিহা ওকে পছন্দ করে না সুবর্ণা তা ভাল জানে। কারণ কি? কখনোই ওর সঙ্গে কিছুই কখনো হয়নি। কলেজের প্রথম দিন থেকে সাবিহা ওর সঙ্গে দূরত্ব রাখে। একবার কথা বলতেও গিয়েছিল যেচে। সাবিহা পালিয়ে যাবে না কি করবে বুঝতে পারছিল না, শেষে বোরখা পরা সাবিহা চিৎকার করে ওকে বলেছিল:‘তুমি আমাকে ছোঁবে না।’
হতভম্ব হয়েছিল সুবর্ণা। শুধুমাত্র হিন্দু বলে এমন ব্যবহার। সে আবার শিক্ষা নেবার জন্য কলেজে এসেছে। এর তো বাংলাদেশের কোন কওমি মাদ্রাসায় পড়া উচিত ছিল।
কিন্তু ওদিকে ব্যতিক্রমও আছে। এই যেমন রেখা। সেও মুসলিম পরিবারের মেয়ে। ওর সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব। ওরা একই টিচারের কাছে হিসাববিজ্ঞান পড়ে। ঘুরতে চায়। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা দেয়।
আজও গিয়ে রেখার পাশে গিয়েই বসে। রেখাও তো মুসলিম পরিবারের মেয়ে। কিন্তু সে তো সাবিহার মতো বিদ্বেষী নয়। ও যেন অচ্ছুত, ওর শরীর সাবিহার গায়ে লাগলেই যেন সাবিহা অপবিত্র হয়ে যাবে।
কলেজে দু’টো ক্লাস করে রেখা ও সুবর্ণা বেরিয়ে পড়ে। ওরা রেখার বাড়ি যায়। রেখার সঙ্গে কাল ঠিক করে রাখাই ছিল। অনুশীলনী থেকে হিসাববিজ্ঞানের কয়েকটি অঙ্ক বোঝেনি, গতকাল আলামিন স্যার, ওরা যার কাছে পড়ে, সুবর্ণা ঠিকঠাক বোঝেনি। রেখা আবার একাউন্টিং সাবজেক্টটা ভাল বোঝে।
অঙ্কগুলো বুঝে করতে করতে বেশ সময় লাগে। পয়তাল্লিশ মিনিট। দু’টো ফাইনাল একাউন্ট সমাধান করতে না করতেই তিনটে বেজে গেছে।

‘আজ তাহলে যাই।’ সুবর্ণা রেখাকে বলে।
‘সেকি?’
‘হ্যাঁ, অনেক বাজে। প্রায় তিনটে।’
‘চল। খেয়ে যা।’
‘নারে, বাসায় খাব।’
তবুও রেখা ছাড়তে চায় না। ওদিকে রেখার কাছ থেকে অঙ্কগুলো বুঝে নেয়ার সময় সুবর্ণা গরুর মাংস রান্নার গন্ধ পেয়েছিল। রেখার মা তখন রান্না করছিল। সেক্ষেত্রে আজ ওর রেখাদের বাড়িতে খাওয়া ঠিক হবে না।
রেখা আনমনে কি যেন ভাবছে দেখে রেখা হেসে ফেলল।
‘কিরে? তুই গরুর মাংসের কথা ভাবছিস?’
‘মা তোর জন্য মুরগির মাংসও রান্না করেছেন। খেয়ে যা। দুপুরবেলা আমাদের বাড়ি থেকে আমাদের চৌদ্দ পুরুষের আমলে কেউ না খেয়ে যায়নি। এটা আমাদের বাড়ির রেওয়াজ। তুই ভাল করে জানিস। আমরা খানদানি পরিবার। তোর জন্য আমাদের এ গর্ব নষ্ট হয়ে যাক তা তুই চাস?’
সুবর্ণা না করতে পারে না। ওর এমনিতে ক্ষুধাও লেগেছে খুব। হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে বসে পড়ে।
রেখার মা দু’টো প্লেটে ভাত দিয়েছেন। রেখা ও সুবর্ণার জন্য।
‘কাকীমা, আপনি খাবেন না?’
‘খাবো তো। শোনো মামণি, তোমাকে একদিন বলেছিলাম, আমাকে কাকীমা বলবে না, চাচীমা বলবে। বেসিনে হাত ধুয়ে বসে পড়ো।’
সুবর্ণা কিছু বলে না। ও আড়চোখে দেখে টেবিলে গরুর মাংস আছে কিনা। হিন্দুধর্মে নাকি গরু খাওয়া নিষেধ। তাই এক টেবিলে খেতে বসে গরুর মাংস না রাখার ভদ্রতাটুকু আশাকরি তিনি দেখাবেন।
না। টেবিলে গরুর মাংস নেই। ও হাত ধোঁয়ার জন্য বেসিনের দিকে যায়। বেসিনে হাত ধুতে ধুতে রান্নাঘরে দিকে তাকিয়ে ও ভেতরে ভেতরে ধাক্কা খায়। গরু মাংসের দু’টো বাটিতে গরুর মাংস, আর ওর জন্য একটা বাটিতে মুরগির মাংস রাখা আছে। কাকীমা মুরগির বাটিতে গরুর মাংসের ডেকচি থেকে অল্প একটু ঝোল ঢাললেন।
সুবর্ণা হাত ধুয়ে টেবিলে আসে। ওর ভেতরে উথালপাথাল চলছে। রেখার মা এমন কিছু করবেন ও ভাবতে পারেনি। সে রেখার মা’কে বিশ্বাস করেছিল। আগে এমন কতদিন তিনি এমন খাইয়েছেন কে জানে। অদ্ভুত তো! এতেও কি তার ছোয়াব হবে?
রেখা আর সুবর্ণা টেবিলে বসে। রেখার মা হাত বাটি তিনটে নিয়ে এলেন। ডাইনিং টেবিলের পাশে চারটি চেয়ার। সুবর্ণার দু’পাশে রেখা ও তার মা বসা। রেখার পাতে ওর মা গরুর মাংস ঢেলে দিলেন। নিজের পাতেও ঢাললেন। সুবর্ণার পাত্রে গরুর ঝোল মিশ্রিত মুরগির মাংস ঢেলে দিলেন।
সুবর্ণার প্রচণ্ড বমির বেগ পেল। সে এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।
বমি করে, বাথরুম থেকে বেরিয়ে সুবর্ণা জানালো ওর শরীর ভাল লাগছে না। ওর খেতে ইচ্ছে করছে না। রেখা ও রেখার মা অনেক জোরাজোরি করল। কিন্তু সুবর্ণা আর খেল না।
বাজারে ওদের ছোট একটা ওষুধের দোকান আছে। সেটা ওর বড় ভাই চালায়। খুব বেশি চলেও না। দোকানটার নাম জগৎবন্ধু মেডিসিন। ওর বাবার একসময় বেশ সুনাম ছিল। বাবা মারা যাবার পরে দাদা এল.এম.এফ পাশ করে বেশ কিছুদিন ভাল চালিয়েছে। অনেক লোকও আসতো। জগৎবন্ধুর হাতের দেয়া প্রেসক্রিপশন না পেলে কি হবে, তার ছেলে তো আছে। মানুষের মনে এমন একটা ভাবনা ছিল হয়তো। কিন্তু গত দশ বছরে আস্তে আস্তে পড়তির দিকে গেছে।
দোকান না চলার কারণ কি? দাদার কাছে অনেকবার জানতে চেয়েছে। দাদা বলতো না। ওকে উল্টো বকা-ঝকা করা হত ব্যবসাটাও ঠিকমত করতে পারে না দেখে। একদিন ওর দাদা একদিন বলল:‘বাজারে আল-মদিনা মেডিসিন খোলার পর থেকে এখন আর অধিকাংশ মুসলিমরা আমার দোকানে ওষুধ কিনতে আসে না।’ পাশাপাশি দোকান। অচেনা, পথচলতি কাস্টমারেরা দোকানের সামনে এসে সাইনবোর্ড দেখে, আমার দিকে কটমট করে তাকায়, তারপর আল-মদিনা মেডিসিনে ঢুকে পড়ে।’
বাসায় ফেরার পথে সুবর্ণা বাজারে রিক্সা থেকে নামে। দাদার দোকানে যায়। মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে আসে। দাদার সঙ্গে কথা হয় দু’একটা।
এখান থেকে বাড়ি বেশিদূরে না। হেঁটে হেঁটে বাড়ি চলে আসে।
বাড়ি ফিরে দেখে ছোটভাই রবিনের আবার মাথা ফেটেছে।
ছোটবেলায় ওদের মাথা ফাটতে ফাটতে মাথা থ্যাতা থ্যাতা হয়ে গেছে। প্রতি মাসে দু’বার করে ওদের ভাইবোনদের মাথা ফাটতো। হয়তো উঠোনে খেলছে, কোথা থেকে ঢিল এসে মাথায় পড়তো। ঢিলগুলো ছোঁড়া হত পড়শিদের কোন না কোন বাড়ির ছাদ থেকে।
আজকে আবার কি ঘটলো? ভাবছে সুবর্ণা। এখন তো ওরা বুঝতে শিখেছে। ওভাবে কেউ শত্রুতাবশত ঢিল ছুঁড়ে মারলে তাকে হয়তো রবিন দেখতে পেয়েছে। শত্রুতাও বা কি? ওদের সঙ্গে তো এলাকার কারো সঙ্গে বিশেষ কোন ঝগড়া নেই। শুধু ধর্মের ভিন্নতার কারণে ওরা অনেকটা একা হয়ে গেছে।
জখম তেমন গুরুতর কিছু নয়। ঘরে ব্যান্ডেজ ছিল। জায়গাটা স্যাভলন দিয়ে পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ বেধে দিয়েছে মা।


‘বল এবার, কি হয়েছে?’
‘আমাকে মেরেছে শামীম। আমরা ক্রিকেট খেলছিলাম। প্রতিদিনই স্কুলের পরে ক্রিকেট খেলে বাসায় আসি। আমাকে ওরা একদিনও ইউকেট কিপিং করতে দেয় না। অথচ আমি উইকেট কিপার হিসেবে ভালো খেলি। বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে দেয়। বলও ভাল করি। একদিনও বল করতে দেয় না। ব্যাটিং আগে পেলে সবার শেষে খেলতে নামায়। বেশিরভাগ দিন দেখা যায় ব্যাটিং করতে নামার পরপরই অন্যজন আউট হয়ে যায়। আর ব্যাটিং পরে পেলে আমি নামার আগেই হয়তো ম্যাচ আমাদের দল জিতে যায়। অথবা লাস্ট ইউকেটে আমি নামলে ম্যাচ ডিক্লেয়ার দিয়ে ফেলে। আজ এর প্রতিবাদ করেছিলাম। কথা কাটাকাটি করলে আমার মাথায় স্ট্যাম্প দিয়ে বাড়ি মেরেছে দর্জিবাড়ির শামীম।’
‘কেউ কিছু বলেনি?’
‘না। অন্যরা দাঁড়িয়ে হাসছিল।’
‘তুমি আর ওদের সঙ্গে খেলতে যাবে না।’
‘আমি আর কারো সঙ্গে খেলতে যাবো না। আমি হিন্দু বলে ওরা আমার সঙ্গে এমন করে। হিন্দু হওয়া কি আমার পাপ? আমি কি ইচ্ছে করে হিন্দু হয়েছি।’ বলে কাঁদতে থাকে রবিন।
ঘরের বাতাস গুমোট হয়ে ওঠে। যেন কতদিন ধরে এ ঘরের দরজা বন্ধ আছে। সুবর্ণা কিছু বলে না। ওর ছোটভাই রবিনের কথাগুলো আজ কেমন যেন কঠোর শোনায়। কথাগুলোর ভেতরে অভিমানেরও বেশি জেদ আছে। করাতকলের শব্দের মতো। ভাইটার মাঝে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। একই সমাজে বাস করেও ওরা যে আলাদা, ওদের যে আলাদা করে রাখা হয়েছে তা রবিন আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করেছে।
সুবর্ণা দুপুরে খেয়েদেয়ে বিছানায় একটু গা এলায়। আজ কোচিং নেই। বিকেলে ওর একটা প্রাইভেট টিউশনি আছে। একটু চোখ লেগেছে ওর ছোটবোন পুজার প্রশ্নে ঘুম ভাঙলো। তারমানে সাড়ে চারটা বাজে। ওর স্কুল চারটায় শেষ হয়। ভাবল সুবর্ণা।
‘দিদি, লাল পিঁপড়া কি হিন্দু?’
শুনে কেঁপে ওঠে সুবর্ণা।
‘মানে?’
‘লাল পিঁপড়া কি হিন্দু, আর কালো পিঁপড়া কি মুসলিম?’
‘এ কথা তোমাকে কে বলেছে?’
‘আজ টিফিন আওয়ারে আমরা স্কুলের বারান্দায় বসে ছিলাম। এমন সময় আমাদের সঙ্গে বসা একটি মেয়ে লাল পিঁপড়াগুলোকে দেখিয়ে বলে ওগুলো হিন্দু পিঁপড়া। তখন সে পিঁপড়াগুলো পা পিঁষে মারে।’
নাহ! এগুলোর জ্বালায় আর থাকা যাচ্ছে না। লাল পিঁপড়া আর কালো পিঁপড়ার গল্প ওরাও শুনেছে আগে। তখন কেউ মারতো না। এখন লাল পিঁপড়া পায়ের নিচে পিঁষে মারায় এসেছে ঘটনা ঠেকেছে।
পুজা একটু সোজাসাপ্টা মেয়ে। তাই ওকে নিয়েই সুবর্ণার যত ভয়। জীবনকে বুঝতে ওর রবিনের থেকেও বেশি সময় লাগবে হয়তো। ও এখনো সংস্কৃতির মাঝে কিভাবে ইসলামকে চাউর করা হচ্ছে, বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে এসব বোঝে না।
‘এসব কথা যারা বলে তারা মূর্খ। অথবা জ্ঞানপাপী। মূর্খরা না জেনে কথা বলে, আর জ্ঞানপাপীরা জেনেশুনে মিথ্যে কথা বলে মানুষের মাঝে ভেদ তৈরি করে। এদের সঙ্গে কথা বলবে বুঝে শুনে, বেশি বলবে না, শুনবে।’
বিকেল পাঁচটার দিকে প্রাইভেট পড়াতে যায় সুবর্ণা। যে মেয়েটিকে পড়ায় ওর নাম হুমায়রা। হুমায়রার মা এর মাঝে একদিন বলছিল: জল একটি হিন্দু শব্দ। পড়ানোর সময় ‘জল’ পড়ানো যাবে না। সুবর্ণার মাথায় ঠিক কাজ করে না, ও বুঝতে পারে না কি পড়াবে। মেয়েটিকে সব সাবজেক্ট পড়ায়। স্কুলের পড়াটাও ঠিকঠাক করে কিনা দেখে, হোমওয়ার্কে সাহায্য করে। যেমন বাংলায় আছে: ‘ডুবে ডুবে জল খাওয়া’ মানে গোপনে কোন কাজ করা। সে ওটাকে পড়ায় ‘ডুবে ডুবে পানি খাওয়া’। ওরা পড়েছিল গণিতে, তিনটি ড্রামে যথাক্রমে ২২৫, ৩৭৫ ও ৫২৫ লিটার জল ধরে। সর্বাধিক জল ধরে এরূপ কলসি হলে শেষ ড্রামে কত কলসি জল ধরে? এই একই গণিতে হুমায়রাদের সময়ে এসে ‘পানি’ হয়ে গেছে। অথচ এরা জানে না ‘পানি’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘পানীয়’ (যা পান করার যোগ্য) থেকে এসেছে। দিল্লীতেও ‘পানি’ শব্দের প্রচলন আছে। অথচ ‘জল’ শব্দটি বাংলা শব্দ। হিন্দুদের মুখে জল শুনে মুসলিমরা ‘জল’কে হিন্দুয়ানি শব্দ ভেবেছে। ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ সনেট কবিতার ক্ষেত্রে কি পড়াবে, ও বুঝতে পারে না। কবিতাটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা। কবিতার দু’পঙক্তি এরকম:‘বাংলার মাটি বাংলার জল/বাংলার বায়ু, বাংলার ফল/পূণ্য হউক, পূণ্য হউক, পূণ্য হউক হে ভগবান।’ তাই কবিতাটি বাদ দিয়েছে। কেননা এখানে জলের বদলে পানি আর ভগবানের বদলে আল্লাহ পড়ালে কবিতাটি বিকৃত হয়ে যাবে। তারচে’ কবিতাটি পাঠ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া ভাল। তাই কবিতাটি হুমায়রাকে পড়ায়নি সুবর্ণা।

হুমায়রাকে পড়িয়ে আজানের পরপর বাড়ি ফিরে আসে সুবর্ণা। ততক্ষণে নামাজ পড়ার আয়োজন চলছে। সকালের দিকে মাহফিলের স্টেজ বানানো চলছিল। রাস্তা জুড়ে মাদুর, হোগলা, পাটি বিছিয়ে ধর্মপ্রাণ লোকেরা তাদের বসার জায়গাতেই পশ্চিম দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে দাঁড়াচ্ছে। রাস্তা বন্ধ। কোন রিক্সা বা গাড়ি যাওয়ার অবস্থা নেই। বাড়ির দিকে যেতে হলে সরু একটু জায়গা আছে। ওখান থেকেই যেতে হবে। অগত্যা কি আর করা। ওড়না মাথায় ও বুকে ভাল করে পেঁচিয়ে চোখ স্থির সামনে রেখে শূন্য অভিব্যক্তিহীন দৃষ্টিতে সুবর্ণা এগিয়ে যায়। মাহফিলে বসা অসংখ্য মাথা ওর দিকে ঘোরে। কারো কারো চোখ মুদে আসে সুবর্ণার শরীরের পারফিউমের গন্ধে। কয়েকশ’ চোখ ওর বুকে, ঠোঁটে, পাছায় ঘোরে। সে স্পর্শগুলো যেন টের পায় সুবর্ণা। সভ্যতার গভীর অন্ধকারে যেন হাজার হাজার সাপেদের নারকীয় সঙ্গম চলছে। ঐটুকু রাস্তা যেন অনন্ত যোজন পথ। কুকুরদের শৃঙ্গারের অন্তিম শব্দে ভরা।
ও বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে মাহফিল শুরু হয়ে যায়। বড় হুজুরের নাম মাইকে শোনা যায়। তিনি আজ ওয়াজ করবেন। ঘরে ঢুকে এক গ্লাস জল খায় সুবর্ণা। মা তখন সন্ধ্যাবাতি জ্বালছেন ওদের বাড়ির মাঝে পৈতৃক শ্মশানে। সেখান থেকে তিনি ঘরে এসে ভগবানের নাম জপ করতে করতে দুয়ারে জলের ছিটা দেন। পাঁজালে নারকেলের ছোবড়া সাজিয়ে আগুন জ্বালান, ধূপ দেন। পাঁজাল নিয়ে প্রতিটি ঘরগুলোতে ঘুরে বেড়ান। সুগন্ধী ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে সারা বাড়িতে। যেন সব অশুভ শক্তি এ ঘ্রাণে পালিয়ে যাবে। এরপর ঠাকুরাসনের কাছে এসে জোকার দেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এ পাড়ায় হিন্দু বাড়িগুলোতে জোকার দেয়া হয়। অনেকের বাড়ির উঠোনে মন্দিরে বাড়ির সব নারীরা দল বেঁধে জোকার দেয়। সে স্বর হয় উচ্চ। কিন্তু তারা আজ জোকার দেয় অনেক ক্ষীণ স্বরে। যাতে রাস্তায় মাহফিলের স্থানে নামাজ পড়তে দাঁড়ানো লোকেদের কানে না পৌঁছায়।
ওদিকে নামাজ পড়া চলছে। এদিকে সুবর্ণা স্নানঘরে ঢোকে। উলঙ্গ হয়ে ঝর্ণার নিচে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায়। স্তন, গুঁড়ি গুঁড়ি কেশময় যোনি, হলদে পাখির রঙের লোভনীয় উরুদেশে হাত ঘঁষে ধোয়। এখনও কেউ ছোঁয়নি। এখনও কেউ চুম্বন করেনি। এখন কেউ পায়নি ওষ্ঠের গোপন স্বাদ, দুই পায়ের ঝিনুকের ফাঁকে একছত্র মাংসের গোপন কান্না কেউ শোনেনি।
গা মুছে, পোশাক পড়ে, স্নানঘর থেকে বেরিয়ে বিছানায় একটু বসে। মা এসে গরুর গরম দুধ আর দু’টুকরো রুটি দিয়ে যায়। মাইকের শব্দ খুব কানে বাজছে। ওয়াজের ফাঁকে ফাঁকে মাইকে বলা হচ্ছে কোন সামর্থ্যবান বান্দা কি আছেন যিনি অসমাপ্ত মসজিদের একটি জানালা, একটি দরজার ব্যয়ভার করবেন। একজনকে পাওয়া গেছে যিনি সৌদি আরব থেকে হজ্জ করে এসেছেন। আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। লোহার পাতের একটি জানালার দাম আর ক’টাকা? সাত হাজার বা আট হাজার। মাহফিলে আসা এত লোকের মাঝে কি কয়েকজনেরও এ সামর্থ্য নেই। আছে। আসলে তারা মাহফিলে এসেছে অশেষ নেকী হাসিলের জন্য। মাহফিলে এসে কর্ণকুহরে ওয়াজ ঢুকিয়েই তাদের নেকী হাসিল হয়ে গেছে। এখন আর মসজিদের জন্য আলাদা করে খরচ করার দরকার কি?
এলাকার কুখ্যাত কিছু লোকজন যারা কিছু বছর আগেও চোর, বদমাশ ছিল। কিংবা জেলা কোর্টে চিছকে উকিল নামকে খ্যাত ছিল এরা এখন  এলাকার মাথা। এই মসজিদটা আসলে বেশীদিনের না। জায়গাটা ছিল এক হিন্দু বিধমা মহিলার। ৯২-৯৩ সালে মুসলিম আক্রমণের ভয়ে মহিলা নিরুদ্দেশ হয়ে যান এরপর আর কেউ উনাকে খুজে পায় নাই আজ পর্জন্ত। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে হয়তো পালিয়েছিলেন কিন্তু হয়তো শেষ রক্ষা হয় নাই।সেই মহিলার জায়গা সরকার ডিসির খাস খতিয়ানের আওতায় নিয়ে আসেন। কিন্তু ৯৬ সালে আওয়ামীলীগ আসার পর কোন এক হিন্দু এমপির ধর্মপ্রাণ মুমিন পিএ জায়গাটি দখল করে মক্তব( মাদ্রাসার একটু ছোট ভার্সন) করে দেন। আর সেই মক্তব এখন ডালপালা মেলে একটি প্রকান্ড মসজিদের আকার ধারণ করেছে। ডিসি যারাই আসেন এরা ভাল করেই জানেন এসব জায়গায় হাত দেবার ক্ষমতা উনার কেন বাংলাদেশের আর্মিরও নেই। কারণ ইস্যু উঠবে মসজিদ ভাঙ্গা হচ্ছে। সাথে সাথে হাজার হাজার অন্ধ মুমিন কিছু না বুঝেই হামলা শুরু করবে। আর আইন শৃঙ্খলার ১২টা বাজবে। তাই ডিসি চুপ করে মেয়াদ উত্তির্ণ করে স্থান ত্যাগ করেন আবার নতুন ডিসি আসেন। এই মসজিদ হবার পর থেকে এলাকায় দুর্গা পুজার প্যান্ডেল থেকে শুরু করে কীর্তন, ঘন্টা, খোল -কর্তাল ইতায়দি বাজানোতে নিষেধাজ্ঞা আসে। একজন স্থানীয় আওয়ামীলিগের নেতা আছেন যিনি হিন্দু কিন্তু উনিও ভয়ে উনার বাসার পুজার প্যান্ডেল সীমিত করে আনছেন। কারণ দিনের শেষে উনাকে উনার ক্ষমতা নিয়ে নিজের আখের গুছাতে হবে। শুনেছি উনি কানাডা পালানোর প্রস্তুতিতে আছেন। যদিও এইখানে উনি সম্পত্তির বিশাল পাহারের মালিক। তবুও স-পরিবারে কানাডা পালাবেন। কারণ হিন্দুরা বরাবরই স্বার্থপর জাতি।

রবীন্দ্রনাথের নাম কানে যেতেই সুবর্ণা একটু সচেতন হল। কি বলছে মাইকে? রবীন্দ্রনাথ লিখেছিল:‘…তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা।’ বলেন আস্তাগফিরুল্লাহ। এক আল্লাহ ছাড়া মুসলমান আর কারো পায়ে মাথা ঠেকায় না। বলেন ঠিক কিনা? ঠিক। ঠিক। সমস্বর ওঠে। ওদিকে দেখেন কবি কাজী নজরুল কী বলেছিলেন। নজরুল লিখেছিলেন:‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই/যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।/আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে/পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।’ বলেন সুবানাল্লা। রবীন্দ্রনাথ হল হিন্দুদের কবি, আর নজরুল হলো মুসলমানদের কবি। নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। রবীন্দ্রনাথের লেখা কেন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হবে? জাতীয় কবিই তো জাতীয় সঙ্গীত লিখবে। কি কন আপনারা? ঠিক। ঠিক। ঠিক।
শুনে, সুবর্ণা কি ভাববে তাই খুঁজে পায় না। আজ আর পড়াশোনা হবে না। যদিও কাল কলেজের কিছু হোমওয়ার্ক ছিল। সকালে উঠে করা যাবে। দাদার দোকান থেকে আসতে দেরী হবে। বৌদি দাদার সঙ্গে খাবে। সুবর্ণা, পুজা, রবিন, ওদের মা একসঙ্গে রাতের খাবার খায়। মাহফিল শেষ হয়ে গেছে। লোকেরা তবারক নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। মাইকে আর কথা চলছে না। সুবর্ণা একটু স্বস্তি পায়। খেয়ে এসে নিজের ঘরে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে। কিছুক্ষণ পরে মোবাইলটা বেজে ওঠে। কলকাতার ধর্মতলা থেকে ফোন এসেছে। ওর পিসিমার ফোন। ওদের ঠাকুরদার বাড়ি ও দিদিমার বাড়ির অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছে। ওর বাবাও গিয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি ফিরে এসেছিলেন। তার ভারত ভাল লাগেনি। দেশের প্রতি একটা টান ছিল। টান ছিল শেকড়ের প্রতি। টান ছিল মায়ের প্রতি। সুবর্ণার ঠাকুমা এখানের জমিজমা দেখাশোনার জন্য থেকে গিয়েছিলেন। তারপর আর ওর বাবা জগৎবন্ধু দাসের যাওয়া হল না। পরে এখানে তিনি সুবর্ণার মাকে বিয়ে করে থিতু হন। থেকে যান মাকে নিয়ে। কেননা মা স্বামীর ভিটা ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলেন না। তাছাড়া সাত পুরুষের শ্মশানও তো এখানে। সুবর্ণার মা তার ছেলেমেয়েদের বারবার বলতেন তোরা ভারত চলে যা। এখানে তোদের কিছু হবে না। মেয়েগুলোকে কখন টেনে নিয়ে যায় মুসলমানেরা তার ঠিক নেই। একাত্তরের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি। ইসলাম রক্ষার নামে পাকিস্তানের অখ-তার নামে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এখানে হিন্দুদের বেছে বেছে খুন করা হয়েছিল। সেসময়ে রাস্তায় লোকেদের ধরে তাদের লুঙ্গি খুলে দেখা হত, খতনা করা কিনা। জগৎবন্ধু দাস বিপাকে পড়ে তখন খতনা করেছিলেন। শাহাদাৎ কলেমাও মুখস্থ করেছিলেন। একদিন পাকিস্তানী সৈন্যের সামনে পড়ে গেলে তার লুঙ্গি খুলে দেখা হল, শাহাদৎ কলেমা পড়ে জানে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু পরে নিজের কাটা লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে তার মনখারাপ হতো। শুধু একাত্তরের স্মৃতি কেন? এর আগে সাতচল্লিশে যে দাঙ্গা হল, তখনও কি ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়েছে। নোয়াখালিতে, বরিশালে। বরিশালে এখনও কাশিপুরের ভেতরের দিকে মাইলের পর মাইল খালি জায়গা, গাছপালা ঘেরা বাগান, কিন্তু পুকুরগুলো গৃহস্থ পুকুরের মত। এরা সবাই চলে গেছে সাতচল্লিশের দাঙ্গার সময়ে । দাঙ্গাও বা কিভাবে বলি? দাঙ্গা কাকে বলে? যখন এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের ওপর হামলে পড়ে তাকে কি দাঙ্গা বলা যায়? বাংলাদেশে কখনো দাঙ্গা হয়নি। হিন্দুদের ওপর কট্টর মুসলিমরা সাতচল্লিশে হামলে পড়েছিল, উনিশশ’ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয়ও পড়েছে, এমনকি স্বাধীনতার পরে আরো ভয়ঙ্কর দিন এসেছে। উনিশশ’ বিরানব্বই সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক রক্তাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কতজন হিন্দু যে খুন তার ঠিক নেই, ধর্ষণ, বাড়িঘর পোড়ানো, মন্দির ভাঙাÑসেসব তো আছেই। দু’হাজার এক সালে নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল ও ইসলামিক একটি দলের জোট হিন্দুদের পাড়াগুলোতে হামলা করে। কেননা তারা মনে করে হিন্দুরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। এভাবে করে করে হিন্দুদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারা চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ভারত তাদের আশ্রয় দিয়েছে, নাগরিকত্ব দিয়েছে।
কিন্তু মা যখন ভারতে চলে যাবার কথা বলত তখন সুবর্ণার মাথা গরম হয়ে যেত। ভাবত এদেশে জন্মগ্রহণ করেছি, আমি এদেশ ছেড়ে কেন যাবো। কিন্তু যত সে বড় হয়ে উঠেছে সে তত বুঝতে পেরেছে বাস্তবতা, তার বিশ্বাস টলে যেতে শুরু করেছে। আজকাল পিসিমা কলকাতা থেকে ফোন দিলে দেশের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন আর নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেন এখানে থেকে কিছু হবে না, তোরা চলে আয়।
সুবর্ণা তেমন কিছু বলে না। নিরুত্তর থাকে।
পিসিমার ছেলের বউয়ের সঙ্গে সুবর্ণা ফোনে তেমন কথা বলে না। একদিন সে বলে ফেলেছিল সুবর্ণাদের মতো যে হিন্দুরা এখনও বাংলাদেশে থাকে তারা মুসলমানদের সঙ্গে আপোস করে থাকে, দরকার হলে ওদের বাড়িতে গিয়ে গরু খায়, সেদিন তো সে নগ্ন ভাষায় বলেছিল সুবর্ণাকে, ‘তোরা তো ওদের হোলের নিচে থাকিস।’ সেই থেকে সুবর্ণা ওর সঙ্গে কথা বলে না। ওর ভাল লাগে না।
পিসিমার সঙ্গে ফোনে কথা শেষ করে দাঁত ব্রাশ করে সুবর্ণা মশারি টাঙিয়ে ঘুমোতে যায়। পাশেই একটা মেয়েদের হোস্টেল আছে। সেখানে পাহারাদার মাঝেমধ্যে হাঁক দেয়। হোস্টেলটা পুরনো বাড়িতে করা হয়েছে। বাড়িটা যিনি বানিয়েছিলেন অনেক বছর আগে তিনি এখানকার ডাকসাইটে উকিল ছিলেন। সাতচল্লিশ সালের দিকে সব সম্পদ ফেলে রেখে চলে গেছেন কলকাতায়। শোনা যায় কলকাতায়ও তিনি ওকালতি করে নাম করেছিলেন। বাড়িটা পরে সরকার নিয়ে নেয়। বেশ কয়েকটা সরকারি অফিসের হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত এখানে মেয়েদের একটি কলেজের ছাত্রীনিবাস বানানো হয়। নাম দেয়া হয় বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা নারী কবি সুফিয়া কামালের নামে। তাই কেউ আপত্তি করেনি। কিন্তু সুবর্ণা অন্যরকম করে ভাবে। চাইলে সরকার বাড়িটা যার বাড়ি সেই মনমোহন চাঁদ দাসের নামে ছাত্রীনিবাসটি করতে পারতো। কেউ সে প্রসঙ্গ তুলতে সাহস করেনি, সরকারও সৌজন্যতা দেখায়নি। এভাবে করে কৌশলে দেশের প্রথিতযশা সফল হিন্দু ব্যক্তিদের নাম মুছে দেয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে অনেক জায়গার নামও আজকাল চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। যেমন নারায়ণগঞ্জ হয়ে যাচ্ছে এন.গঞ্জ কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে যাচ্ছে বি.বাড়িয়া।
এসব ভাবতে ভাবতে সুবর্ণা ঘুমিয়ে পড়ে একসময়। ঘুমিয়েও শান্তি নেই। সেখানেও অপেক্ষা করে আছে দুঃস্বপ্ন। স্বপ্নে দেখে সকালবেলা কলেজের ড্রেসে ও রাস্তায় দৌড়–চ্ছে। পেছনে ধাওয়া করে আসছে রাস্তার পাশে সেই ছেলেগুলো। ওদের মুখ মে পান, হাত মে বিড়ি, মুখে শ্লোগান লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান। সুবর্ণা ছুটতে ছুটতে এক ব্রীজের ঢালে পড়ে গেল। সেই ছেলেগুলো এবার অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ভালুকের রূপ পেল। ওরা ব্রীজের ঢালে ওকে মাটিতে শুইয়ে ওর ঠোঁটে চুম্বন করতে এল। বোটকা একটা গন্ধ। এক ধাক্কায় সবকটাকে ফেলে দিয়ে আবার দৌড়–চ্ছে। একটা মসজিদ সামনে পড়ল। এবার দুপুরবেলার মোলায়েম আভাটা চলে গিয়ে প্রখর রৌদ্রের দুপুর। সুবর্ণা মসজিদের সামনে দাঁড়াল। ভেতরে ঢুকতে যাবে, এমন সময় মসজিদের সামনে গাছের সঙ্গে সাইনবোর্ডে লেখা দেখল:‘মসজিদ চত্ত্বরে মহিলা ও গবাদি পশু ঢোকা নিষেধ।’ আবার সে দৌড়–তে শুরু করে। চিৎকার করে বাঁচাও। কাছেই অনেক লোক যাচ্ছে এদিকে পেছন করে। তারা কি বোবা, কানা, কালা? ওর চিৎকারের শব্দ কি ওদের কানে যাচ্ছে না? কোন বিকার দেখা যাচ্ছে না। ওকে তাড়া করা ছেলেগুলো অনেক কাছে চলে এসেছে। তারা বলছে:‘ কুত্তি মাগীটারে ধর। হিন্দু মেয়েদের পুটকিতে অনেক গন্ধ।’
###
মালাউন একটি জাতিবিদ্বেষমূলক গালি যা বাংলাদেশে মূলত: বাঙালি হিন্দুদের উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয়।
মালাউন শব্দটি আরবী শব্দ “ ﻣﻠﻌﻮﻥ ” থেকে উদ্ভূত যার অর্থ অভিশপ্ত বা আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত।

Thursday, August 30, 2018

দশানন রাবণকৃত শ্রী শিবতান্ডব স্তোত্রম বাংলা অনুবাদ সহ


(১) জটাটবীগলজ্জল প্রবাহ পাবিতস্থলে
গলেহবলম্ব‍্য লম্বিতাং ভূজঙ্গতুঙ্গমালিকাম ।
ডমড্ডমড্ডমড্ডমন্নিনাদবড্ডমর্বয়ং
চকার চন্ডতান্ডবং তনোতু নঃ শিবঃ শিবম।।।।। ।

(২) জটাকটাহ সম্ভ্রম ভ্রমন্নিলিম্পনির্ঝরী
বিলোল বীচিবল্লরী বীরাজমানমূদ্ধনি।।
ধগদ্ধগদ্ধগজ্জলল্ললাট পট্রপাবকে
কিশোরচন্দ্রশেখরেরতিঃ প্রতিক্ষণং মম।।

(৩) ধরাধরেন্দ্রনন্দিনীবিলাসবন্ধুবন্ধুর
স্ফুরদ্দিগন্ত সন্ততি প্রমোদ মানমানসে
কৃপাকটাক্ষ ধোরণীনিরুদ্ধদুর্ধরাপদি
ক্বচিদ্দিগম্বরেমনো বিনোদমেতুবস্তুনি।।।।

(৪) জটাভুজঙ্গ পিঙ্গল স্ফুরৎফণামণিপপ্রভা
কদম্বকঙ্কুমদ্রবপ্রলিপ্তদিগ্বধূমুখে।।
মদান্ধসিন্ধুরস্ফুরত্ত্বগুত্তরীয়মেদুরে
মনো বিনোদ মদ্ভূতং বিভর্তু ভূতভর্তরি।।

(৫) সহস্রলোচনপ্রভৃত‍্যশেষলেখশেখর
প্রসূনধূলিধোরণীবিধূসরাঙঘ্রিপীঠভূঃ।
ভুজঙ্গরাজমালয়া নিবদ্ধজাটজূটকঃ
শ্রিয়ৈ চিবায় জায়তাং চকোর বন্ধুশেখর।।।।

(৬) ললাটচত্বরজ্বলদ্ধনঞ্জয়স্ফুলিঙ্গভা
নিপীতপঞ্চসায়কং নমন্নিলিম্পনায়কম।
সুদাময়ূখলেখয়াবিরাজমানশেখরং
মহাকপালি সম্পদে শিরো জটালমস্তু নঃ।।।।।

(৭) করালভাল পট্টিকাধগদ্ধগদ্ধগজ্জল
দ্ধনঞ্জয়াহুতীকৃতপ্রচন্ড পঞ্চসায়কে।
ধরাধরেন্দ্র নন্দিনী কুচাগ্ৰ চিত্রপত্রক
প্রকল্পনৈকশিল্পিনিত্রিলোচনে রতিমর্ম।।।

(৮) নবীন মেঘমন্ডলী নিরুদ্ধদুর্ধরস্ফুরৎ
তকুহূনিশীথিনী তমঃপ্রবন্ধবদ্ধকন্ধর
নিলিম্পনিরঝরীধরস্তনোতু কৃত্তিসিন্ধুরঃ
কলানিধানবন্ধুরঃ শ্রিয়ং জগদধুরন্ধরঃ।।

(৯) প্রফুল্লনীলপঙ্কজ প্রপঞ্চকালিমপ্রভা
বলন্বিকন্ঠকন্দলীরুচিপ্রবদ্ধকন্ধরম।
স্মরচ্ছিদং পুরচ্ছিদং ভবচ্ছিদং মখচ্ছিদং
গজচ্ছিদান্ধকচ্ছিদং তমন্তকচ্ছিদং ভজে।।

(১০) অখর্বসর্ব মঙ্গলা কলা কদম্বমঞ্জরী
রসপ্রবাহমাধুরী বিজৃম্ভণামধুব্রতম্
স্মরান্তকং পুরান্তকং ভবান্তকং মখান্তকং
গজান্তকান্ধকান্তকং তমন্তকান্তকংভজে।।।

(১১) জয়ত্বদভ্রবিভ্রমভ্রমদ্ভমশ্বসদ
বিনির্গমৎক্রমস্ফুরৎকরালভালহব‍্যবাট।
ধিমিদ্ধিমিদ্ধিমিদধ্বনন্মৃদঙ্গতুঙ্গমঙ্গল
ধ্বনিক্রমপ্রবর্তিতপ্রচন্ডতান্ডবঃ শিবঃ।।

(১২) দৃষদ্বি চিত্রতল্পয়োরভূজঙ্গমৌক্তিকস্রজো
গরিষ্ঠ রত্মলোষ্ঠয়োঃ সুহদ্বিপক্ষপক্ষয়োঃ তৃনারবিন্দচক্ষুষোঃ প্রজামহীমহেন্দ্রয়োঃ সমপ্রবৃত্তিকঃ কদা সদাশিবং ভজাম‍্যহম।।।

(১৩) কদানিলিম্পনিরঝরীনিকুঞ্জকোটরে বসন
বিমুক্তদুরমতিঃ সদা শিরঃস্থমঞ্জলিং বহন্।
বিলোললোচনোললামভাললগ্নকঃ শিবেতিমন্ত্রমুচরন কদা সুখী ভবিমহম।।।।

(১৪) ইমং হী নিত‍্যমেব মুক্তমত্তমোত্তমংস্তবং
পঠনং স্বরনংব্রুবন্নরো বিশুদ্ধিমমেতী সন্ততম
হরে গুরৌ সুভক্তি মাশু যাতি নান‍্যথা গতিং
বিমোহনং হি দেহিনাং সুশঙ্করস‍্য চিন্তনম।।।

(১৫) পূজাবসান সময়ে দশবক্তগীতং
যঃ শম্ভু পূজন পরং পঠতি প্রদোষে।
তস‍্য স্থিরাং রথ গজেন্দ্র তুরঙ্গ যুক্তাং
লক্ষীং সদৈব সুমুখীং প্রদদাতি শম্ভু।।।।

অনুবাদ:-

(১) যিনি জটারূপ অরণ‍্য থেকে নির্গত গঙ্গাদেবীর প্রবাহে ঐ পবিত্র করা সর্পের বিশাল মালা কন্ঠে ধারণ করে ডম রুতে ডমডম ডম।
এই শব্দ তুলে প্রচন্ড তান্ডব নৃত‍্য করছেন ,, সেই শিব যেন আমার কল‍্যাণ করে। এবং আমি প্রনাম জানাই।

(২) যার মস্তক জটারুপ কড়াই তে বেগে ভ্রমণ কারী গঙ্গার চঞ্চল তরঙ্গ লতাসমুহে সুশোভিত হচ্ছে;যার ললাটাগ্নি ধক ধক করে জ্বলছে,,, মস্তকে অর্ধচন্দ্র বিরাজিত, সেই ভগবান শিবে যেন আমার নিরন্তর অনুরাগ থাকে।

(৩) গিরিরাজ কিশোরী পার্বতীর বিশাল কালোপযোগী উচ্চ নিচ মস্তক ভূষণ দ্বারা দশ দিক প্রকাশিত হতে দেখে যার মন আনন্দিত; যার নিত‍্যকৃপাদৃষ্টির ফলে কঠিন বাধা বিপত্তির দূর হয়ে যায়, সেই দিগম্বর স্বরূপ তত্ত্বে যেন আমার মন আনন্দ লাভ করে।।।।।

(৪) যার জটাজুটের মধ্যে সর্পের ফণায় অবস্থিত মণির প্রকাশিত পিঙ্গল ছটা দিশা রূপিনী অঙ্গনাদের মুখে কঙ্কুমের রংছড়ায়; মত্তহাতির বিকশিত চর্মকে উত্তরীয় চাদর রূপে ধারণ করায় যিনি স্নিগ্ধ বর্ণ লাভ করেছেন, সেই ভূত নাথে আমার চিত্ত অদ্ভূত তৃপ্তি বোধ করুক।।।।।।।

(৫) যার চরন পাদুকা ইন্দ্রাদি সকল দেবতার প্রনামের সময় মস্তকে ফুলের পরাগে ধূসরিত হয়,,নাগরাজের মালায় বাধা জটাসম্পন্ন সেই ভগবান চন্দ্রশেখর আমার জন্য চিরস্থায়ী সম্পত্তির ব‍্যবস্থাপক হয়ে থাকুন।

(৬) যিনি তার ললাট রূপ বেদিতে প্রজ্বলিত অগ্নি স্ফুলিঙ্গের তেজে কাম দেবকে ভস্মীভূত করছিলেন, যাকে ইন্দ্রাদি দেবগণ নমস্কার করেন, চন্দ্রের কলাদ্বারা সুশোভিত মুকুট সম্পন্ন সেই মহাদেবের উন্নত বিশাল ললাটে জটিল মস্তক আমার সম্পত্তির কারণ হোক।

(৭) যিনি তার ভীষণ কপালে ধক ধক রূপে জলন্ত অগ্নিতে প্রচন্ড কাম দেবকে আহুতি দান করেছিলেন, গিরিরাজ কন‍্যার স্তনাগ্ৰে পত্র ভঙ্গ রচনা করার একমাত্র শিল্পী, সেই ভগবান ত্রিলোচনের উপরে আমার যেন রতি অনুরাগ থাকে।

(৮) যার কন্ঠে নবীন মেঘ মালা বেষ্টনীতে অমাস‍্যার অরধরাত্রে ন‍্যায় দুরুহ অন্ধকার সম শ‍্যামলতা বিরাজ করে, যিনি গজচর্ম পরিহিত, সেই জগতভার বহন কারী, চন্দ্রের অদ্ধাকৃতিতে মনোহর ভগবান গঙ্গাধর যেন আমার সম্পতির বিস্তার করেন।

(৯) যার কন্ঠদেশ প্রস্ফুটিত নীল কমল সমুহের শ‍্যামশোভার অনুকরন কারী হরিনীর ছবির ন‍্যায় চিহ্নে সুশোভিত এবং যিনি কামদেব ত্রিপুর,ভব দক্ষ, যজ্ঞ হাতি অন্ধকাসুর এবং যমরাজের ও উচ্ছেদ কারী আমি তার ভজনা করি।

(১০) যিনি নিরভিমান পার্বতীর কলারূপ কদম্বমঞ্জরী মকরন্দস্রোতের বৃদ্ধি প্রাপ্তমাধুরী পান কারী মধূপ এবং কামদেব,ত্রিপুর,ভব; আমি তার ভজনা করি।

(১১) যার মস্তকে উপর অতন্ত‍্য বেগে ঘূর্ণিমান ভূজঙ্গের নিঃশ্বাসের ভয়ঙ্কর অগ্নি ক্রমা গত প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে, ধিমি ধিমি শব্দের মৃদঙ্গের গম্ভীর মঙ্গলধ্বনি সঙ্গে যিনি প্রচন্ড তান্ডব নৃত‍্যকরেছেন এই ঈশ্বর কে আমি প্রনাম করি।।

(১২) পাথর এবং সুন্দরকোমল বিছানায়, সর্প ও মুক্তা মালা,বহু মূল‍্য রত্ম এবং মৃত্তিকা,মিত্র ও শত্রু পক্ষে,তৃন ও কমল নয়না তরুণীতে, সাধারণ প্রজা ও পৃথিবীর মহারাজ প্রতি যিনি সম ভাব রাখেন, সেই সদা শিব কে আমি যেন প্রতিদিন ভজনা করতে পারি।

(১৩) সুন্দর ললাট সম্পন্ন ভগবান চন্দ্রশেখর চিত্ত সমর্পন করে নিজ কুচিন্তা পরিত‍্যাগ করে, গঙ্গার তীরে কোন কাননের অভ‍্যন্তরে থেকে মস্তকে ওপর হাত জোড় করে বিহ্বল নয়নে শিব মন্ত্র উচ্চারণ করে আমি সুখ লাভ করি।

(১৪) যে ব‍্যাক্তি এইভাবে উক্ত অতি উত্তম স্তোত্র নিত‍্য পাঠ, স্মরণ এবং বর্ননা করে,সে সদা শুদ্ধ থাকে এবং অতি শীঘ্রই সুর গুরু শ্রীশঙ্করের প্রতি প্রকৃত ভক্তি ভাব প্রাপ্ত হয়। সেকখন ও বিপথে যায় না।
কারন শিবের সুচিন্তা প্রানিবরগের মোহ নাশ করে।

(১৫) সায়ং কালে পূজা সমাপ্ত হলে দশানন রাবণ দ্বারা গীত এই শম্ভু পূজন সম্পর্কিত স্তোত্র যিনি পাঠ করেন, ভগবান শঙ্কর সেই ব‍্যাক্তিকে সূখ সম্পত্তি মহাদেব প্রদান করেন।
সমাপ্ত।
ওম নমঃ শিবায়ঃ

Wednesday, August 8, 2018

সনাতনী বিবাহ নিয়ে কিছু কথা

অনেকেই মনে করে,
বিবাহ মানেই হলো দায় ও গ্যাঞ্জ্যাম। আবার অনেকে এইও মনে করে, এটি একটি ভেজাল, মনমালিন্য ও অনেক বড় বোঝা।একসাথে কাটাতে হবে এবং তাকে ছাড়া কোন গতি নেই। সে আমাকে অস্বীকার করলেও, আমার সাথে তার থাকতে হবে।আবার তার ইচ্ছমত আমার চলতে হবে, তাকে ছাড়া আমার কোন মত নেই।বেশীর ভাগ এইরকম চিন্তাধারীই মনে করেন, বৈবাহিক জীবন মানে স্বাধীনতাহীন বন্দী খাচা।তাদের উদ্দ্যেশ্যে আমি বলবো,
আমরা সামাজিক প্রানী। প্রাকৃতিক ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে আমাদের জীবন যাপনা হয়ে থাকে।আমরা জন্ম নেই, শিশুকাল পেরিয়ে যৌবনে পা রাখি, তখন আমাদের মধ্যে সার্বিক জ্ঞান ও তার পাশাপাশি জৈবিক চাহিদাও এসে যায়। আমরা মানুষ, তাই পশুর মত জীবিকানির্বাহ করতে পারিনা অর্থাৎ তাড়না অনুভব হলে যেখানে সেখানে সব কিছু করতে পারিনা।আমরা নিজের চিন্তাই কেবল করিনা। আমরা আমাদের পরিবার ও তার সম্মানেরও চিন্তা করি। যা পশুরা করেনা। অন্তত এই গুণাবলী র দিক থেকে আমরা পশুর চাইতে উন্নত। যদিও এখন মানুষেরা পশুর চাইতে নিম্নস্তরে পৌছে যাচ্ছে। আমি সেটা না হয় এখন রাখি, প্রসংগে আসি,
সনাতনধর্ম অনুযায়ী বিবাহ হলো একটি প্রবিত্র বন্ধন। এখানে বন্ধন হলো সম্পর্ক। সম্পর্ক টা হলো প্রতিশ্রুতি, এটা কোন দ্বায়ভার নয়। এটা ইতিবাচক। একজন আরেকজনের হয়ে যাওয়ার নাম বিবাহ। নিজেকে আরেকজনের আর তাকে আমার করে নেওয়ার নাম বিবাহ বন্ধন।এটা একেবারেই শুদ্ধ একটি সংস্কার ও সমাধান মানব জীবনের। এটার মুল ভিত্তি হলো, বিশ্বাস ও ভালোবাসা।
বিবাহ-মানে দুটো আত্মার মিলন।দুটি আত্মাকে একত্র করার অপর নাম হলো বিবাহ বন্ধন। সনাতনধর্ম মতে বিবাহ বন্ধনের কিছু সুন্দর সুন্দর ও অভাবনীয় নিময় আছে। যা অন্য লোকেরা ও অন্য মতের লোকেরা অন্য ধর্মের লোকেরা দেখলে হিংসা করে..
বিবাহ বন্ধনের অনেক সুন্দর সুন্দর নিয়ম আছে।তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহামুল্যবান নিয়ম গুলো হলোঃ শুভদৃষ্টি, সাত পাঁকে ঘুরা,মালা বদল, সিঁদুর দান। সমস্ত নিয়মই কিন্ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।যা অনেক গভীর রহস্য।


শুভ দৃষ্টি
শুভ অর্থাৎ ভালো বা মংগলতম আর দৃষ্টি হলো দেখা বা দর্শন করা।ভালোবাসার বন্ধনের প্রথম তম বন্ধন। যখন তাকে দেখে নিজেকে তার মাঝে হারিয়ে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। তার সবকিছুকে নিজের মধ্যে দেখা। সেই সুন্দর তম রুপের দৃষ্টিতে তাকে আজীবন দেখা।সেই দৃষ্টি খুব প্রবিত্র। সমগ্র সংসারের সমস্ত মানুষকে পরিত্যাগ করে, সেই দৃষ্টির মাধ্যমে তাকে আলাদা করে দেখা অর্থাৎ পৃথিবীর সব নারীকে বাদ দিয়ে তুমি কেবল আমার স্ত্রী বা প্রিয়তমা/ পৃথিবীর সকল পুরুষকে বাদ দিয়ে তুমিই কেবল আমার স্বামী বা প্রিয়। এটাই হলো সেই অভাবনীয় সুন্দরতম দৃষ্টি যাকে বলা হয় শুভ দৃষ্টি।
সনাতন ধর্ম মতে বিবাহে আমরা দেখতে পাই,
অগ্নি কুণ্ডলীকে মাঝখানে রেখে চতুর্দিকে বর এবং নববধূকে প্রদক্ষিণ করতে হয়। একে বলে সাত পাঁকে বাঁধা পড়া।
বলা হয়, এর মাধ্যমে অগ্নিদেবতাকে বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। শুধু আগুনের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করা নয়, এসময় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিতে হয় একে- অপরকে।এখানে প্রত্যেক প্রতিশ্রুতিই থাকে সমান অধিকারের,





প্রথম প্রতিশ্রুতি- প্রথমে বর তাঁর বউ এবং সন্তানদের যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্বামী এবং তাঁর পরিবারের যত্ন নেবেন।
.
দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি- এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে সবরকম পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবেন।
বিনিময়ে কনেও প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি স্বামী সবরকম সমস্যায়য় স্বামী পাশে থাকবেন।
.
তৃতীয় প্রতিশ্রুতি- এবার বর প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য রোজগার করবেন এবং তাঁদের দেখভাল করবেন। একই প্রতিশ্রুতি কনেও দিয়ে থাকেন।
.
চতুর্থ প্রতিশ্রুতি- স্ত্রীর কাছে তাঁর পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেওয়া এবং একইসঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বর।
স্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
.
পঞ্চম প্রতিশ্রুতি- যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন বর। স্বামীকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দেন স্ত্রী।
.
ষষ্ঠ প্রতিশ্রুতি- স্ত্রীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী। স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
.
সপ্তম প্রতিশ্রুতি- শুধু স্বামী হিসেবেই নয়, বন্ধু হিসেবেও
সারাজীবন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন বর।
স্ত্রীও স্বামীর সঙ্গে আজীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
.
সনাতন বিবাহের মূলমন্ত্র এবং মর্মার্থ :
.
যদ্যেত হৃদয়ং তব, তদস্তু হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।।
.
অর্থাৎ, আমার হৃদয় তোমার হোক; তোমার হৃদয় আমার হোক।আমি আমাকে তোমায় দিলাম,তোমার তোমাকে আমার করলাম।
মালা বদল এই নিয়মের মাধ্যমে সে তার মালা তাকে দেন এবং তার মালা সে নিয়ে বদল করে প্রমান দেন। যে আমি তোমাকে আমার করে নিলাম। আর আমাকে তোমার করে দিলাম।আমার যা আছে সবকিছু তোমার, আর তোমার যা আছে সব কিছু আমার। আমি তোমার তুমি আমার। আমার আগের জীবন থেকে আমি আজ নতুন জীবনে নতুন করে তোমায় নিয়ে বাচার অংগীকার করলাম।
সিঁদুর এইটা হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাকে আমার রক্তে(সিদুর প্রতীকে) তার মাথায় দিয়ে রক্তের আবদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে নিলাম। আমি প্রতিশ্রুতি দিলাম আমি আমার রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও তোমায় রক্ষা করে যাবো আজীবন। আমার রক্তের প্রতীকি করে তোমায় আমি আমার জীবনের পুরোটা দিয়ে তোমায় বেধে রাখবো, কখনই ছেড়ে যাবো না। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।
.
সিঁদুর পড়ানোর মন্ত্র :
.
ওঁ শিরোভূষণ সিন্দুরং ভর্তারায়ু বিবর্ধনং।
সর্বারত্নাকরং দিব্যং সিন্দুরং পতিগৃহ্যতাম্।।
.
শাঁখা পড়ানোর মন্ত্র :
.
ওঁ শঙ্খালঙ্কারং বিবিধং চিত্রং বাহুনাঞ্চ বিভূষণম্।
মহোদধিসম্ভূতাঃ সর্বদেবীপ্রিয়া সদা।
শঙ্খ বলয় কন্যাভূষণানাং সদুত্তমম্।।
.
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
নমস্কার।
হর হর মহাদেব!

Friday, June 22, 2018

সনাতন শাস্ত্রে বার , মাস ও নক্ষত্র

ছোটবেলায় পড়েছিলাম সাত দিনে এক সপ্তাহ। আর সপ্তাহের সাতটি দিন হচ্ছে শনি, রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র। এ বারগুলো আমাদের জীবনে এই ক্রমানুসারে আসে। অর্থাৎ শনির পর রবিবার, রবির পর সোমবার। সোমের পর মঙ্গল। এভাবে সাতটি দিনে সাতটি বার। কখনোই এ অনুক্রমের ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু কেন? শনির পর সোমবার হলে কী দোষ হত?

 সপ্তাহের দিনগুলোর নাম সৌরজগতের গ্রহ আর উপগ্রহদের দিয়েই চিহ্নিত (যদিও রবি বা সূর্য একটি নক্ষত্র)। তাই বলে সৌরমণ্ডলে এদের অবস্থানের সাথে বারগুলোর অনুক্রমের কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই। যেমন ধরা যাক, বুধের কথা। এটি সূর্যের নিকটতম গ্রহ। দ্বিতীয় নিকটতম গ্রহ হচ্ছে শুক্র। অথচ সপ্তাহের দিনে বুধবারের পর শুক্রবার আসে না, আসে বৃহস্পতিবার। এর কারণ কি?

 বারগুলোর এ অনুক্রমটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও প্রচলিত। তবে যে সব ভাষায় লাতিনের প্রভাব আছে সেগুলোতে কিছু পরিবর্তন রয়েছে, গ্রহদের নামের জায়গায় সেই গ্রহদের সাথে জড়িত রোমান দেবদেবীর নাম ঢুকে পড়েছে। আবার ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় এসেছে অন্য সভ্যতার দেবদেবীর নাম। যেমন, রোমানদের কাছে বৃহস্পতি যেমন আকাশের দেবতা, তেমনই ভাইকিংদের বজ্রের দেবতা ‘থর’। তাই বৃহস্পতিবার ইংরেজিতে হয়ে গেছে ‘ঞযঁৎংফধু’ বা ‘ঞযড়ৎ’ং ফধু’।

 এবার আসা যাক সপ্তাহের বারগুলোর অনুক্রম বিশ্লেষণে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে এই বারের সাথে গ্রহদের সম্বন্ধ ব্যাবিলনে খুঁজে পাওয়া যায়। তখন ব্যাবিলনবাসীরা আকাশের সাতটি জ্যোতিষ্ক সূর্য, চন্দ্র বা সোম, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিকে ভাবত একেকজন দেবদেবী। তারা মনে করত এ জ্যোতিষ্কগুলো মানবজীবনে বিস্তর প্রভাব বিস্তার করে। তারা এই জ্যোতিষ্কগুলোকে সাজিয়েছিল আকাশে এদের গতি অনুসারে, পৃথিবী থেকে যে রকমটি মনে হয় (চন্দ্র ছাড়া আসলে কোন বস্তু যদিও পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে না)। যেমন পৃথিবীর আকাশে একই জায়গায় ফিরে আসতে শনির লাগে সবচেয়ে বেশি সময়, ২৯ বছর। এরপর আসে বৃহস্পতি (১২ বছর), মঙ্গল (৬৮৭ দিন), সূর্য (৩৬৫ দিন), শুক্র (২২৫ দিন), বুধ (৮৮ দিন), আর চাঁদ (২৭ দিন)। এই ক্রমটি থেকেই আমরা বারের ক্রম পেতে পারি। এজন্যে কোন একটি দিনে শুরু করে তার পরের দুটি গ্রহ ছেড়ে দিতে হবে। যেমন যদি শনিবার দিয়ে শুরু করি, তা হলে এরপরের বৃহস্পতি ও মঙ্গলকে ছেড়ে দিলে পাব রবিবার। তারপর রবিকে বিবেচনা করে পরবর্তী শুক্র ও বুধ ছেড়ে দিয়ে পাব চাঁদ অর্থাৎ সোমবার।

 সাপ্তাহিক বারের এ নিয়মের উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, রোমান ইতিহাস লেখক প্লুটার্কের ১০০ খ্রিস্টাব্দে লেখা একটি বইয়ের সূচিপত্রের পাতায় তার একটি প্রবন্ধের কথা জানা যায়, যার বিষয় ছিল, ‘বারগুলো গ্রহদের ক্রমানুযায়ী সাজানো হয় কেন?’ সেই বইটি অবশ্য কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আরেকজন ইতিহাস রচয়িতা, দিও ক্যাসিওসের লেখায় তখনকার দিনের জ্যোতিষীদের একটি প্রচলিত প্রথার কথা জানা যায়। এই প্রথা অনুসারে, যা মনে করা হয় আলেকজান্দ্রিয়াতে শুরু হয়েছিল, দিনের প্রতিটি ঘণ্টাকে এই সাতটি জ্যোতিষ্কদের নামে চিহ্নিত করা। আর দিনের প্রথম ঘণ্টার সঙ্গে জড়িত গ্রহকে ভাবা হত সেইদিনের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী গ্রহ এবং সেই দিনটিকে গ্রহের নাম দেয়া হত। জ্যোতিষীদের এই বিশ্বাসই আমাদের ভাষায় বারগুলোকে এখনকার মত সাজিয়েছে।

 উল্লেখ্য, দিনে ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন সাতটি গ্রহের সাতজন দেবতা। প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টার ভার যদি শনির হাতে দেয়া হয় (যেহেতু ব্যাবিলনীয় তালিকায় শনি সবচেয়ে উপরে) তাহলে এর পরের ঘণ্টাগুলোর ‘অধিকর্তা’ হবে একে একে বৃহস্পতি, মঙ্গল, রবি, শুক্র, বুধ ও চাঁদ। কিন্তু ২৪কে ৭ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকে তিন। তাই ২২, ২৩, ২৪ নম্বর ঘণ্টার নাম হবে আবার শনি, বৃহস্পতি আর মঙ্গলের নাম। আর তা হলে ২৫তম ঘণ্টা, যেটা পরের দিনের প্রথম ঘণ্টা হবে, সেটা হবে রবির নামে চিহ্নিত। তাই শনিবারের পরের দিনের নাম হবে রবিবার। ঠিক একই নিয়মে দেখা যাবে ২৯তম ঘণ্টার (তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টা) ঘরে থাকবে চন্দ্র, আর তৃতীয় দিনের নাম হবে সোমবার।

 প্রাচীন ভারতে সপ্তাহ, ঘণ্টা ইত্যাদির ব্যবহারে গ্রিক আর ব্যাবিলনীয় সভ্যতার প্রভাব পড়েছে বলে ইতিহাস রচয়িতরা মনে করেন। আলেকজান্ডারের এশিয়া বিজয়ের পর ইউরোপ, মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারতের আরও যোগাযোগ বাড়ে। তাই বর্তমানের বেশিরভাগ ভাষায় একই ধরনের দিনের ক্রম সাজানো আছে। আশা করা যায়, এ ক্রম চিরকালই অবিকৃত থাকবে।



 বাংলা সাতটি বারের নাম আমরা সকলেই জানি,
সাতটি গ্রহের নামে নামকরণ করা রবি, সোম/চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, এবং শনিবার,
এই ধারণা মোটামুটি সবারই জানা আছে,
কিন্তু বাংলা মাসের নামকরণ কিসের থেকে হয়েছে তা সবার জানা দরকার, এই নাম করন হয়েছিল রাশিচক্র থেকে যে বারটি রাশির কথা বলা হয়েছে, সে গুলি বেষ্টন করে ২৭ টি নক্ষত্রপুঞ্জ রয়েছে। ৩৬০ ডিগ্রিতে যদি ২৭ টি নক্ষত্র থাকে তবে এক একটি নক্ষত্রের ব্যপ্তি ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট করে অর্থাৎ মেষরাশির শুরু থেকে ১৩ ডিগ্রি ২০ মিনিট অন্তর পর পর একটি করে নক্ষত্র রয়েছে। নক্ষত্রগুলির নাম ও সংখ্যা হ'ল - অশ্বিনী (১); ভরণী (২); কৃত্তিকা (৩); রোহিণী (৪); মৃগশিরা (৫); আর্দ্রা (৬); পুনর্বসু (৭); পুষ্যা (৮); অশ্লেষা (৯); মঘা (১০); পূর্বফাল্গুনী (১১); উত্তরফাল্গুনী (১২); হস্তা (১৩); চিত্রা (১৪); স্বাতী (১৫); বিশাখা (১৬); অনুরাধা (১৭); জ্যেষ্ঠা (১৮); মূলা (১৯); পূর্বাষাঢ়া (২০); উত্তরাষাঢ়া (২১); শ্রবণা (২২); ধনিষ্ঠা (২৩); শতভিষা (২৪); পূর্ব্বভাদ্রপদ (২৫); উত্তরভাদ্রপদ (২৬); রেবতী (২৭)।
এই নক্ষত্রের মধ্যে পূর্ণিমার সময়ে চন্দ্র যে নক্ষত্রে অবস্থান করত সেই নক্ষত্রের নাম অনুসারে মাসের নামকরণ করা হয়েছে,
যেমন সূর্য মেষাদি বিন্দু অতিক্রম করে বছরের প্রথম পূর্ণিমার চন্দ্র বিশাখা নক্ষত্রে অবস্থান করত এইভাবে যথাক্রমে,
 বিশাখা =বৈশাখ
জ্যেষ্ঠা=জৈষ্ঠ
পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া =আষাঢ়
শ্রবণা =শ্রাবন
পূর্বভাদ্রপদ ও উত্তরভাদ্রপদ = ভাদ্র
অশ্বিনী=আশ্বিন
কৃত্তিকা=কার্তিক
আদ্রা= অগ্রহায়ন
পুষ্যা=পৌষ
মঘা=মাঘ
পুর্বফল্গুনী ও উত্তরফল্গুনী= ফাল্গুন
চিত্রা=চৈত্র
কিন্তু বর্তমানে অয়নচলনের কারনে নক্ষত্র অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে

বাল্মীকি রামায়ণ ও কৃত্তিবাস রামায়ণের যে পার্থক্য গুলো সহজেই পাওয়া যায়...


১। বাল্মীকি রামায়ণের মা সীতা আর কৃত্তিবাস রামায়ণের মা সীতার মাঝে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বাল্মীকির রামায়ণে মা সীতা বীরাঙ্গনা। অপহরণকালে তিনি ক্রুদ্ধা সিংহিনীর মত গর্জন করে বলছেন,
‘ধিক্ তে শৌর্য্যঞ্চ সত্ত্বঞ্চ ষৎ ত্বয়া কথিতং তদা’।
আর অন্যদিকে কৃত্তিবাসের বর্ণনা হলো,
‘জানকী কাঁপেন যেন কলার বাগুড়ি’।
বুঝলেন কিছু ? বাল্মীকির রামায়ণে মা সীতা রাবণের সাথে রেগে তর্ক করছেন, গর্জন করছেন। অপরদিকে কৃত্তিবাস লিখলেন মা সীতা অপহরণকালে ভয়ে কাঁপছে! একজন অবলা স্বরূপ।
২। বাল্মীকি রামায়ণে বাল্মীকি একজন তপস্বী ছিলেন। উনি রাময়ণের প্রথম শ্লোকেই একজন তপস্বী। কিন্তু কৃত্তিবাস রামায়ণে বাল্মীকি ছিলেন রত্নাকর দস্যু! মরা মরা জপ করে বাল্মীকি হয়েছেন! এমন কথা বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
৩। কৃত্তিবাস রামায়ণে রামের দূর্গাপূজার উল্লেখ রয়েছে বা অকাল বোধনের কথা আছে। এই দূর্গাপূজার কথাও বাল্মীকি রামায়ণে নেই!
৪। কৃত্তিবাস রামায়ণে পাওয়া যায় শ্রী রামের জন্মের ৬০ হাজার বছর পূর্বে রামায়ণ রচনা হয়। এটাও মিথ্যা। কারণ বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় নারদকে বাল্মীকি প্রশ্ন করছেন,
‘কোন্বস্মিন্ সাম্প্রতং লোকে গুনবান্ কশ্চ বীর্য্যবাণ্’ এই প্রশ্ন থেকেই বুঝা যায় রামায়ণ রচনাকালে শ্রী রাম তখন রাজত্ব করছেন।
মূল রামায়ণে স্পষ্ট বলা আছে,
‘প্রাপ্ত রাজস্য রামস্য বাল্মীকির্ভগবান ঋষীঃ।’
(আদিকাণ্ড, ৪/১)।।
৫। কৃত্তিবাস রামায়ণে পাওয়া যায়, যজ্ঞ রক্ষার জন্য বিশ্বামিত্রের সাথে রাম লক্ষণকে পাঠাতে হবে জেনে রাজা দশরথ বিশ্বামিত্রের সাথে ছলনা করেন। অথচ বাল্মীকি রামায়নে দশরথ প্রসন্নচিত্তে, নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে বিশ্বামিত্রের সাথে রাম লক্ষণকে পাঠিয়েছিলেন।




৬। কৃত্তবাস রামায়ণে, গৌতমপত্নী অহল্যা পাথর হয়েছিলেন। রামের চরণ স্পর্শে তিনি মনুষ্য শরির প্রাপ্ত হন। অথচ বাল্মীকি রাময়ায়নে পাই, অহল্যা দেবী লোকচুক্ষুর অন্তরালে থেকে কঠোর ব্রহ্মচারিণী জীবন যাপন করেছিলেন।
‘বাতভক্ষ্যা নিরাহারা তপ্যন্তী ভস্মশায়িনী’।।
৭। কৃত্তিবাস রামায়নে, রাবণ বিভিষণকে পদাঘাত করায় সে রামের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু বাল্মীকি রামায়ণে রাবন কেবল ক্রোধী হয়ে তিরস্কার করেছিলেন। বরং বিভীষণ রাবনের সেই তিরস্কার সহ্য করতে না পেরে বারণকে গালি দিয়ে প্রস্থান করেন।
৮। কৃত্তিবাস রামায়ণে, হনুমান সূর্যকে বগলদাবা করে গন্ধমাদন পর্ব্বত মাথায় করে নিয়ে আসা। কালনেমি সংবাদ। নন্দী গ্রামে ভরতের সাথে হনুমানের সাক্ষাৎ। সমুদ্রলঙ্ঘনের সময় হনুমানের সাথে রাক্ষসী সিংহিকার সাক্ষাৎ - এই সমস্ত কিছুই বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
৯। কৃত্তিবাস রামায়ণের মহীরাবণ বধ, অহীরাবণ বধ, অতিকায়, বীরবাহু তরণীসেন প্রভৃতির কাটামুণ্ডের রাম নাম উচ্চারণ করার কাহিনীও বাল্মীকি রামায়ণে নেই।
১০। কৃত্তিবাস রামায়নে লক্ষণের চৌদ্দ বছর ধরে ফল আনয়নের কাহনী, লবকুশের যুদ্ধাদি সহ সমগ্র উত্তর কাণ্ডই বাল্মীকি রামায়ণে পাওয়া যায় না!
এখন এই কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রকারভেদ যদি বলি তাহলে চমকে উঠবেন। কারণ, কৃত্তিবাসের নামকরণে প্রায় দেড়শত রামায়ণ পাওয়া যায়! যা একটির সাথে আরেকটির অনেক অমিল খোঁজে পাওয়া যায়। বটতলা প্রকাশিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ ইদানীংকালের প্রচার বেশি। কিন্তু সত্যি হলো এই রামায়ণের লেখক কৃত্তিবাস নয়! ইহা পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার কর্ত্তৃক পরবর্তিতে লিপিবদ্ধ হয়।
আবার ত্রিপুরা শ্রীহট্টতে যে সব কৃত্তিবাসী রামায়ণ পাওয়া যায় সেগুলোতে মহীরাবণ বধ, অহীরাবণ বধ, অতিকায়, বীরবাহু তরণীসেন প্রভৃতির কাটামুণ্ডের রাম নাম উচ্চারণ করার কাহিনী গুলো মিসিং। তো, বুঝতেই পারছেন কবির ভাষায় রামায়ণ কাহিনীতে পর্যায়ক্রমে শুধু ঘঠনাক্রম বেড়েই এসেছে। মূল রামায়ণে পাওয়া যায় বাল্মীকি নারদের কাছে জানতে চাইলেন, ভূমণ্ডলের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ? জ্ঞানেগুনে সত্যনিষ্ঠা এবং প্রজানুরঞ্জনে আদর্শ চরিত্র কার ? উত্তরে, নারদ শ্রীরাম বর্ণনা শুরু করলেন। বাল্মীকির সেই সব কাহীনি শুনে যখন উনার কবিত্ব জেগে উঠলো তখন কেবল ৭১ শ্লোকের রামায়ণ রচিত হয়।।

রামায়নের রচনাকার বাল্মীকি মুনির ''মরা মরা'' জপের সত্যি রহস্য উন্মোচন।


কথিত আছে, বাল্মীকি মুনি 'মুনি' হওয়ার আগে ছিলেন দস্যু! শুধু তাই নয়, উনার নামটাও ছিল রত্নাকর। উনি এতই পাপ করেছিলেন... সেই পাপের কারণে 'রাম' নাম পর্যন্ত মুখ দিয়ে আসছিল না। ভাবতে পারছেন, কি পরিমান পাপ জমা হয়েছিল? অতঃপর নারদ উনাকে 'রাম' নামের পরিবর্তে উল্টো নাম অর্থাৎ 'মরা মরা' জপ করতে বলেন এবং এই উল্টো নাম জপ করেই উনি পাপ মুক্ত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়... এই রত্নাকর হয়ে উঠলেন বাল্মীকি মুনি এবং রামায়ণ রচনা করে ফেললেন!! 
একটু চিন্তা করলে সত্যিই থমকে যাবেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। রত্নাকর এত পাপ করার পর যখন পূর্ণ সমর্পণে ভক্তিসহকারে 'মরা মরা' জপ করছিলেন সেখানে অবশ্যই 'রাম' নামের মাহাত্ম্য অন্তর্নিহিত ছিল। যাইহোক, চলুন এবার দেখাযাক এই কাহিনীর পিছনে সত্যি কি?
পুরাণকার এবং বাংলা রামায়ণের রচিয়তারাই দস্যু রত্নাকরের 'মরা মরা' অর্থাৎ উল্টো নাম জপের কাহিনী প্রচার করেছে। মূল রামায়ণে এই সকল কথার বিন্দুবিসর্গও নেই! মূল রামায়ণে পাওয়া যায় বাল্মীকি নারদকে জিজ্ঞাসা করছেন, 'ভুমন্ডলের শ্রেষ্ঠ রাজা কে? জ্ঞানেগুনে সত্যনিষ্ঠা এবং প্রজারঞ্জনে আদর্শ চরিত্র কার?' 
রামায়ণের প্রথম শ্লোকটি হলো, 
'' তপঃ স্বাধ্যায়নিরতং তপস্বি বাগ্মীদাং বরং,
নারদং পরিপপ্রচ্ছ বাল্মীকিমুনি পুঙ্গবং।।১।।''
অর্থাৎ, ''তপঃপরায়ণ বাল্মীকি, স্বাধ্যায়নিরত, তপোনিষ্ঠ বাগ্মী নারদকে জিজ্ঞাসা করিলেন।''
এই হলো মূল রামায়ণের প্রথম শ্লোকের কথা, যেখানে বাল্মীকি একজন 'তপস্বী'। এখানে তো দস্যু রত্নাকর প্রথম থেকেই বাল্মীকি! 
তারপর নারদ বললেন, 
''ইক্ষাকু বংশ প্রভোব রাম নাম জৈনঃ শ্রুতঃ'' ইত্যাদি....। নারদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাল্মীকি রামায়ন রচনা করলেন। মিথুনরত এক ক্রৌঞ্চকে একটি নিষাদ তীর নিক্ষেপে হত্যা করায় ক্রৌঞ্চী অত্যন্ত শোকাতুর হয়ে ছটপট করে। তমসা নদীর তীরে এই বিষাদ চিত্র দেখে বাল্মীকির কবিত্ব শক্তি উৎসারিত হয়ে উটলো। এই কথাও রামায়ণে আছে। কিন্তু বাল্মীকি একজন নরহত্যা দস্যু ছিলেন আর তারপর মরা মরা জপ করে বাল্মীকিতে রূপান্তর হলেন এমন কথা রামায়ণে নেই। রাম নামের বিশেষ মাহাত্ম্য দেখানোর জন্যই কোন রাম ভক্তের এমন সাজানো রটনা। 
'ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মৈব্য ভবতি' (শ্রুতি) - ব্রহ্ম-Region এ গেলে ব্রহ্মানুভূতি ব্রহ্মাজ্ঞ পুরুষ 'ব্রহ্মৈব্য ভবতি!' এখান থেকেই তুলসীদাস বলেছেন, 'বাল্মীকি ব্রহ্মভূমিতে গিয়ে ব্রহ্মসমানা হয়ে গেলেন' আর জগত জেনে রেখেছে তিনি উল্টো নাম জপতেন! 





কিছুক্ষণের জন্য ধরে নিন, এই উল্টো কাহিনী সত্য। এখন এই মুহুর্তে আপনি এই পোস্ট পড়ার সময় একটু চেস্টা করে দেখুন তো 'রাম' শব্দটি বলতে পারেন কিনা ? আশাকরি অবশ্যই পারবেন। অর্থাৎ, আপনি রত্নাকর দস্যু থেকে কম পাপী। তাই নয় কি ? তাহলে উনি যদি এত পাপ করে উল্টো নাম 'মরা মরা' জপ করে পাপ মুক্ত হয়ে ভগবানের জীবনচরিত রচনা করতে পারে তাহলে লক্ষ লক্ষ বার আপনি শুদ্ধ রাম নাম জপ করে ঋষিত্ব, বাল্মীকত্ব অর্জন তো দূরের কথা, অন্তর্জগতের সামান্য আধ্ম্যাতিক অনুভুতি লাভেও বঞ্চিত কেন ?? এখন হয়তো বলবেন ভক্তির অভাব। না, পৃথিবী অনেক মানুষ আছে যারা রাম নাম জপে সেই নামে নিজেকে বিলিন হতে হতে অশ্রু পর্যন্ত ঝরায়। কিন্তু অবশেষে নিজেকে পাপীই মনেহয়। কেন হবে এমনটা?? তাহলে কি ইহা ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্য ? 
না। সত্যি এটাই, রত্নাকর দস্যু বলে কেউ ছিলেন-ই না! তিনি ছিলেন তপস্বী বাল্মীকি। 
প্রণিপাত।

Friday, June 8, 2018

"একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত?

মহাপ্রভূ তাঁর লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই "একাদশী উপবাসের প্রথা" প্রবর্তন করেছিলেন।
=> জিঙ্গাসাঃ সত্যি কি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূ "একাদশী উপাসের প্রথা" প্রবর্তন করেছিলেন???
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * * *
শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থ স্কন্দ পুরানে একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন-
" যে মানুষ একাদশী দিন শস্য দানা গ্রহন করে সে তার পিতা,মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী। এবং সে বৈকুন্ঠলোকে উন্নীত হয় তবু তাঁর অধঃপতন হয়।
=>> শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ কি অর্জুনকে উপবাস থাকতে বলেছিলেন??
> দেখি উপবাস সম্পর্কে গীতায় কি বলেছেন!→
> হে অর্জুন! যে অতিরিক্ত ভোজন করে অথবা উপবাসী থাকে, আবার অতিরিক্ত নিদ্রা অথবা সমস্ত রাত্রি জাগীয়া থাকে তাহার যোগ হয় না।
গীতাঃ ৬/১৬ নং শ্লোক।
(গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনে উপবাসী থাকতে নিষেধ করেছেন।)

দেখুন গীতা ৬/১৬ শ্লোক থেকে



> আহার, বিহার, কর্ম, নিদ্রা ও জাগরণে যিনি সমতা রাখিয়া (নিয়মিত মানিয়া) চলেন, তাঁহার যোগ দুঃখনাশী (দুঃখ নাশ) হয়। গীতাঃ ৬/১৭
(গীতায় শ্রীকৃষ্ণ আহার, বিহার, নিদ্রা ও জাগরন নিয়মিত রাখতে বলেছেন)



দেখুন গীতা ৬/১৭ শ্লোক থেকে




> যে সকল লোক অশাস্ত্রীয় কঠোর তপস্যা করে, দম্ভ ও অহংকারের বলে কাম ও আসক্তিপরায়ণ হয় এবং বলশালী হইয়া শরীরের ভূতগুলিকে কষ্ট দেয় আর শরীরের মধ্যস্থ আমাকে কষ্ট দেয়; এইসব লোকেরা অসুরের ন্যায়, ইহা তুমি জানিও।
গীতাঃ ১৭/ ৫-৬
(উপবাস থাকিলে তো! নিজের শরীরের ভূতিগুলি কষ্ট পাবেই)


দেখুন গীতা ১৭/৫-৬ শ্লোক থেকে



একাদশীর দিন শ্রীবিষ্ণুর জন্য সব কিছু রন্ধন করা হয়, এমন কি অন্ন এবং ডাল ও, কিন্তু শাস্ত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, সেই দিন বৈষ্ণবদের বিষ্ণু প্রসাদ পর্যুন্ত গ্রহন করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমন কি অন্ন - তা যদি বিষ্ণুপ্রসাদও হয়, তবুও তা গ্রহন কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
>শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থে স্কন্দ পুরানের উদাহরণ দিয়ে একি বলিলেন???
=> শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় দেখি শ্রীকৃষ্ণ বাসী খাবার খেতে বলেছি কি?
> যে সকল খাবার বহু অগ্রে তৈয়ারী করা হইয়াছে, রস যাহার শুকাইয়া গিয়েছে, "বাসী", দুর্গন্ধযুক্ত, উচ্ছিষ্ট (কাহারও এঁটো) তাহা তামসিক ব্যক্তির প্রিয়। গীতাঃ ১৭/১০ নং শ্লোক।

দেখুন গীতা ১৭/১০ শ্লোক থেকে


বিধবা না হলেও শাস্ত্র অনুষারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা চৈতন্য মহাপ্রভূ প্রবর্তন করেছিলেন।
==> জিঙ্গাসাঃ তবে কি চৈতন্য মহাপ্রভু গীতা বিরোধী ছিলেন???
=> পাঠক মিত্রগণ আপনারই স্বয়ং বিবেচনা করুন কোনটি গ্রহণযোগ্য →শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতা নাকি "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" আদিলীলা ।
উপরক্ত গীতা বিরুদ্ধ কথাগুলি শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভূপাদ বলেছে!



দেখুন- "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" আদিলীলা, ১৫/৮-১০ থেকে 


 পাঠক মিত্রগন আপনারা স্বয়ং বিবেচনা করুন শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভূপাদ গীতা বিরোধীতা করে কি সঠিক সনাতন ধর্ম প্রচার করেছিলেন???

সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স

 নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...

Popular Posts