Friday, June 22, 2018

রামায়নের রচনাকার বাল্মীকি মুনির ''মরা মরা'' জপের সত্যি রহস্য উন্মোচন।


কথিত আছে, বাল্মীকি মুনি 'মুনি' হওয়ার আগে ছিলেন দস্যু! শুধু তাই নয়, উনার নামটাও ছিল রত্নাকর। উনি এতই পাপ করেছিলেন... সেই পাপের কারণে 'রাম' নাম পর্যন্ত মুখ দিয়ে আসছিল না। ভাবতে পারছেন, কি পরিমান পাপ জমা হয়েছিল? অতঃপর নারদ উনাকে 'রাম' নামের পরিবর্তে উল্টো নাম অর্থাৎ 'মরা মরা' জপ করতে বলেন এবং এই উল্টো নাম জপ করেই উনি পাপ মুক্ত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়... এই রত্নাকর হয়ে উঠলেন বাল্মীকি মুনি এবং রামায়ণ রচনা করে ফেললেন!! 
একটু চিন্তা করলে সত্যিই থমকে যাবেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। রত্নাকর এত পাপ করার পর যখন পূর্ণ সমর্পণে ভক্তিসহকারে 'মরা মরা' জপ করছিলেন সেখানে অবশ্যই 'রাম' নামের মাহাত্ম্য অন্তর্নিহিত ছিল। যাইহোক, চলুন এবার দেখাযাক এই কাহিনীর পিছনে সত্যি কি?
পুরাণকার এবং বাংলা রামায়ণের রচিয়তারাই দস্যু রত্নাকরের 'মরা মরা' অর্থাৎ উল্টো নাম জপের কাহিনী প্রচার করেছে। মূল রামায়ণে এই সকল কথার বিন্দুবিসর্গও নেই! মূল রামায়ণে পাওয়া যায় বাল্মীকি নারদকে জিজ্ঞাসা করছেন, 'ভুমন্ডলের শ্রেষ্ঠ রাজা কে? জ্ঞানেগুনে সত্যনিষ্ঠা এবং প্রজারঞ্জনে আদর্শ চরিত্র কার?' 
রামায়ণের প্রথম শ্লোকটি হলো, 
'' তপঃ স্বাধ্যায়নিরতং তপস্বি বাগ্মীদাং বরং,
নারদং পরিপপ্রচ্ছ বাল্মীকিমুনি পুঙ্গবং।।১।।''
অর্থাৎ, ''তপঃপরায়ণ বাল্মীকি, স্বাধ্যায়নিরত, তপোনিষ্ঠ বাগ্মী নারদকে জিজ্ঞাসা করিলেন।''
এই হলো মূল রামায়ণের প্রথম শ্লোকের কথা, যেখানে বাল্মীকি একজন 'তপস্বী'। এখানে তো দস্যু রত্নাকর প্রথম থেকেই বাল্মীকি! 
তারপর নারদ বললেন, 
''ইক্ষাকু বংশ প্রভোব রাম নাম জৈনঃ শ্রুতঃ'' ইত্যাদি....। নারদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাল্মীকি রামায়ন রচনা করলেন। মিথুনরত এক ক্রৌঞ্চকে একটি নিষাদ তীর নিক্ষেপে হত্যা করায় ক্রৌঞ্চী অত্যন্ত শোকাতুর হয়ে ছটপট করে। তমসা নদীর তীরে এই বিষাদ চিত্র দেখে বাল্মীকির কবিত্ব শক্তি উৎসারিত হয়ে উটলো। এই কথাও রামায়ণে আছে। কিন্তু বাল্মীকি একজন নরহত্যা দস্যু ছিলেন আর তারপর মরা মরা জপ করে বাল্মীকিতে রূপান্তর হলেন এমন কথা রামায়ণে নেই। রাম নামের বিশেষ মাহাত্ম্য দেখানোর জন্যই কোন রাম ভক্তের এমন সাজানো রটনা। 
'ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মৈব্য ভবতি' (শ্রুতি) - ব্রহ্ম-Region এ গেলে ব্রহ্মানুভূতি ব্রহ্মাজ্ঞ পুরুষ 'ব্রহ্মৈব্য ভবতি!' এখান থেকেই তুলসীদাস বলেছেন, 'বাল্মীকি ব্রহ্মভূমিতে গিয়ে ব্রহ্মসমানা হয়ে গেলেন' আর জগত জেনে রেখেছে তিনি উল্টো নাম জপতেন! 





কিছুক্ষণের জন্য ধরে নিন, এই উল্টো কাহিনী সত্য। এখন এই মুহুর্তে আপনি এই পোস্ট পড়ার সময় একটু চেস্টা করে দেখুন তো 'রাম' শব্দটি বলতে পারেন কিনা ? আশাকরি অবশ্যই পারবেন। অর্থাৎ, আপনি রত্নাকর দস্যু থেকে কম পাপী। তাই নয় কি ? তাহলে উনি যদি এত পাপ করে উল্টো নাম 'মরা মরা' জপ করে পাপ মুক্ত হয়ে ভগবানের জীবনচরিত রচনা করতে পারে তাহলে লক্ষ লক্ষ বার আপনি শুদ্ধ রাম নাম জপ করে ঋষিত্ব, বাল্মীকত্ব অর্জন তো দূরের কথা, অন্তর্জগতের সামান্য আধ্ম্যাতিক অনুভুতি লাভেও বঞ্চিত কেন ?? এখন হয়তো বলবেন ভক্তির অভাব। না, পৃথিবী অনেক মানুষ আছে যারা রাম নাম জপে সেই নামে নিজেকে বিলিন হতে হতে অশ্রু পর্যন্ত ঝরায়। কিন্তু অবশেষে নিজেকে পাপীই মনেহয়। কেন হবে এমনটা?? তাহলে কি ইহা ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্য ? 
না। সত্যি এটাই, রত্নাকর দস্যু বলে কেউ ছিলেন-ই না! তিনি ছিলেন তপস্বী বাল্মীকি। 
প্রণিপাত।

শিবতত্ত্বে সৃষ্টি, সংহার ও রক্ষা – শ্রীকণ্ঠ ও পুরাণসমূহের আলোক

শৈব দর্শনে শিব কেবল একজন উপাস্য দেবতা নন—তিনি নিজেই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান ও পরম ব্রহ্ম । তিনিই এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহারের মূল কেন্দ্র...

Popular Posts