Thursday, December 7, 2017

নারীবাদ বা ফিমিনিজমের ৭ কাহন


যা দেবী সর্বভূতেষু ফিমিনিজমরুপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ  নমস্তস্যৈ  নমস্তস্যৈ নমো নমঃ

পৃথিবীতে ২ ধরনের মানুষ পাওয়া যায়। 
একদল নারী যারা মনে করেন  হাজার বছর ধরে পুরুষ বা ছেলেরা মেয়েদের উপর জুলুম অত্যাচার করে আসছে। এরজন্য ফিমিনিজম বা নারীবাদ থাকাটা খুব দরকার। 
কথা তো সত্য ! 
২য় হলো সেই পুরুষরা যারা বলে যাচ্ছেন ফিমিনিজমের কারনে পুরুষের উপর বা তাঁর পরিবারের উপর দিন দিন অত্যাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরজন্য এই তথাকথিত নারীবাদ নিপাত যাক। 
কথা তো এটাও সত্য। 
এবার আসি ৩য় ক্যাটাগরির মানুষের দিকে। ইনারা আসলে কনফিউসড এই ২ দলের মানুষের দাবীর মুখে। এরা আসলে কোন দলে যাবেন বা কোন দলে থাকবেন তা বুঝতে পারছেন না। তাই সবার মতন এরাও মধ্য পন্থা অবলম্বন করেন।
আসুন তাহলে ফিমিনিজমের এই জটিল সমিকরনে একটু চোখ বুলাই।

ফিমিনিজম মানে হল সমান অধিকার। অর্থাৎ লিঙ্গের কারনে সমাজে কোন নারী যাতে বৈষম্যের শীকার না হয়। পুরুষ নারী এক নয়। এটা যেমন সত্যি তেমনি অধিকার সকলের সমান। কেউ কম বেশী যাতে না পায় সেইদিকে সজাগ থাকা।

কিন্তু আমাদের আশে পাশের ইয় ইয় জেনারেশন যারা বর্তমানে ইন্টারনেট জগতে বাস করছেন তারা এই সম্পর্কে কি ভাবেন?
আমি নিজে আমার আশে পাশের কিছু  ইউথকে (যারা টপস জিন্স পরে বা হাতে ট্যাটু আর হাল্কা দাড়ি রেখে ফেবুতে দিন-রাত ছবি আপলোড দেন) তাঁদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনাদের কাছে ফিমিনিজম কি? উত্তর কিছুটা নিম্নরুপ
১ম ব্যাক্তি- যিনি দিনরাত জিমে নিজের মাসল বিল্ড করেন তাঁর কাছে ফিমিনিজম মানে হল সেই ছেলেরা যারা জিমে নাকি ব্যায়াম করতে করতে উনাকে দেখেন, মানে ঐসব ছেলেরা যারা ছেলেদের দেখে আকর্ষন বোধ করেন। বলা বাহুল্য আমার সেই বন্ধুটি আমার মতই দেশের নামকরা বিজনেস স্কুল থেকে গ্রেজুয়েট।
২য় ললনা- উনারা আসলে ২ জন বান্ধবী খুব ফটর ফটর ইংরেজী ঝাড়া ঝিংকু মামনি। উনাদের সাথে কথা হয়েছে ফিমিনিজম নিয়ে। তা উত্তর হিসাবে আসছে ‘ according to me feminism is ……. !!!! এই তুই বল! না না তোকে বলেছে তুই বল। হা হা হা …. হি হি হি … হে হে হে !!
৩য় ব্যাক্তি- গ্রাম থেকে আসা একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। উনার সরল উত্তর। ফিমিনিজম হল মেস্কুলিনজম এর উল্টো !!!!
৪র্থ বালক- যিনি সদ্য স্কুল পাশ করেছেন। উনার কাছে ফিমিনিজম হলো যে ছেলে মেয়েদের মতন দেখতে তাকে ফিমিনিজম বলে।
৫ম ললনা- যিনি সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। উনার মতে ‘ যখন আমরা বাইরে ফেন্সি ড্রেস পড়ে বের হই, গাড়ীতে লাউড মিউজিক প্লে করি, চিল করি, একটু হাল্কা হার্ড ড্রিঙ্ক করি সেটাই ফিমিনিজম।    
৬ষ্ঠ ললনা- মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্রী। উনার মতে ফিমিনিজম হল যদি কোন ছেলে কোন মেয়ের এডভান্টেজ নেয় আর কোন মেয়ে যদি সেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় আর সেই ছেলেকে মারধর করে সেটাই ফিমিনিজম।

Seriously!!! এই লেভেলের মিস্কন্সেপসন কই থেকে আসে এদের মাথায় কে জানে।

আলোচনা করবো তবে এর আগে এর ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেই আসুন।  
নারীবাদ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দFeminism. Feminism শব্দটি এসেছে ফরাসী শব্দFemmenisme থেকে। Femme অর্থ নারী, isme অর্থ মতবাদ। ১৮৮০ এর দশকে ফ্রান্সে শব্দটি গৃহীত হয়। পরে ইংরেজি ভাষায় গৃহীত হয়।

নারীবাদ সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। নারীবাদী Christina Hoff Sommers এর মতে, নারীবাদ হচ্ছে, A concern for women and a determination to see them fairly treated.' বিশিষ্ট নারীবাদী চিন্তাবিদ ` Kamla Basin ও Nighat Said Khan তাদের Workshop on South Asian Womenএ নারীবাদ সম্পর্কে বলেন, '
An awareness of women's oppression and exploitation in society, at work and within the family, and conscious action by women and men to change this situation.'
Olive Banks তার Faces of Feminism গ্রন্থে উলেস্নখ করেছেন যে, গোষ্ঠী নারীর অবস্থান কিংবা নারী সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা পরিবর্তনে প্রয়াসী তাদের নারীবাদী বলে আখ্যা দেয়া হয়।
Rosemarie Putnam tong তার Feminist Thought গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
No doubt feminist thought will eventually shed these labels for others that better express its intellectual and political commitments to women.

নারীর অধ:সত্মন অবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টার ঘটনার সঙ্গে নারীবাদ সম্পর্কিত। নারীবাদ হল _ পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও সমাজে নারীর উপর শোষণ-নিপীড়ন সম্বন্ধে সচেতনতা এবং এই অবস্থা বদলের লক্ষ্যে নারী (পুরুষের) সচেতন প্রয়াস।
নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশঃ
পাশ্চাত্যে নারীর মূল্য নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন ফরাসী রাজসভার নারী সদস্য Christin de Pizan. ১৪০৫ সালে তিনি The book of the city of Ladies নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৬৬২ সালে ওলন্দাজ নারী মার্গারেট লুকাস রচিত 'নারী ভাষণ'(Famel orations) হলো বিশ্বের জ্ঞাত ইতিহাসের প্রথম নারীবাদী সাহিত্য যেখানে নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয়টি বিধৃত হয়েছে। নারীবাদের ইতিহাসে প্রথম নারীবাদীরূপে যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন সতের শতকের ফরাসি নারী পলেইন ডিলা ব্যারে। পশ্চিমে নারী মুক্তির লড়াই একটি সুসংগঠিত রূপ নেয় সাফ্রাজেট এন্দালনের মাধ্যমে। নারীবাদকে প্রথম সংগঠিত আকারে উপস্থিত করেন ইংল্যান্ডের মেরি ওফেস্টোনক্রাফট তাঁর বিখ্যাত সারা জাগানো নারীবাদী গ্রন্থ 'নারীর অধিকারের ন্যায্যতা' ((Vindication of reights of women)) গ্রন্থে ১৭৯২ সালে। ১৮৪০ সাল থেকে আমেরিকার দাস প্রথা ও মদ্যপান বিলোপ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীতে নারীবাদী চেতনা আরো বিকশিত হয়। ১৮৯১ সালে এলিজাবেথ কেডি স্ট্যান্টন আরো ২৩ জন নারীসহ মিলিতভাবে রচনা করেন 'THE WOMAN'S BIBLE'। ১৮৬৮ সালে নর-নারীর অভিন্ন অধিকার প্রচারের লক্ষ্যে নারীবাদী সাময়িকী 'দি রেভোলিউশন' প্রকাশ করেন।
ঊনবিংশ শতব্দীর শেষার্ধে সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীগণ বেশ কিছু মৌলিক তত্ত্ব প্রচার করেন। ব্রিটেনে উদারনৈতিক সংস্কারবাদী জন স্টুয়ার্ট মিল রচিত The Subjection of Women', জার্মানির অগাষ্ট বেবেল রচিত Woman and Socialism এবং ফ্রেডারিক এঙ্গেলস রচিত The Origin of the family, Private Property and the State শিরোনামের গ্রন্থাবলী উলেস্নখযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফ্রান্সে সিমন দ্যা বুভ্যেয়ার রচনা করেন The Second Sex' নামক গ্রন্থ।
১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লেখক কেট মিলেট 'Sexual Politics' নামে সাড়া জাগানো গ্রন্থ রচনা করেন। এর বহু পূর্বে ১৮২৫ সালে ইংল্যান্ডে নারীর অধিকারের পক্ষে প্রথম পুরুষ দার্শনিক উইলিয়াম টমসন এর বই 'The half portion of mankind women's appeal to the rest portion gainst male chauvinism' প্রকাশিত হয়। আধুনিক নারীবাদীদের মধ্যে ভার্জিনিয়া উল্ফ এর সাহিত্যকম, ১৯৬৬ সালে বেটি ফ্রাইডান রচিত 'The Feminine Mystic ১৯৭০ সালে জার্মেইন গ্রিয়ার এর 'The Female Eunac, গুলাস্মিথ ফায়ারস্টোন-এর 'ডায়ালেকটিকস অব সেঙ্', আলেকজান্দ্রা কোলনতাই এর 'Sexual Relation and Class Struggle, এরিকা ইয়ং রচিত 'Fear for Flying', কেটি বোইফে এর Beauty myth ও 'Fire with Fire' প্রভৃতি বিখ্যাত গ্রন্থ নারীবাদের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে।১৮৩৭ সালে আমেরিকায় প্রথম দাসপ্রথা বিরোধী নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমে মার্কিন নারীরা রাজনীতি করার অধিকার ও সুযোগ পায়। ১৮৪৮ সালের ১৯-২০ জুলাই নারীবাদীদের উদ্যোগে নিউইয়র্কের সেনেকো ফলস এ বিশ্বের প্রথম নারীর অধিকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা করে। ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়। ১৯১০ সালে জামর্ান কমিউনিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেডকিন নেত্রী কর্তৃক আনত্মর্জাতিক শ্রমজীবী নারী সম্মেলনে উত্থাপিত প্রসত্মাব অনুযায়ী ১৯১৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৮ মার্চ আনত্মর্জাতিক নারী দিবস পালনের সিদ্ধানত্ম গৃহীত হয়। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আনত্মর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
১৮৮৫ সালে মেরী কার্পেন্টারের নেতর্ৃত্বে নারীদের মানবিক অধিকারের জন্য সংগঠন তৈরি হয় এবং আন্দোলন অব্যাহত থাকে যা নারীবাদী আন্দোলনরূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৩ সাল নাগাদ এমিলিন প্যাঙ্কখাস্টের নেতর্ৃত্বে ইংল্যান্ডে নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক ইউনিয়ন গঠন এবং নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন তীব্র হয়। ফ্রান্সে নারীবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ৩০-এর দশকে। ১৮৪৮ সালে নিবয়েট এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'Women Voice' পত্রিকা। জার্মানিতে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী ও আনত্মর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চের ঘোষক ক্লারা জেটকিন মার্কসবাদ বা সমাজতন্ত্রের সঙ্গে নারীবাদের সেতুবন্ধন ঘটান। ১৮৬৬ সালে দার্শনিক ও আইনজ্ঞ স্টুয়ার্ট মিল ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্য হবার পর নারীর ভোটাধিকারের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন পার্লামেন্টে। ১৮৭৯ সালে বিখ্যাত নাট্যকার হেনরি ইবসেন এর কালজয়ী নাটক 'পুতুলের খেলাঘর' (The Dolls House) এর নায়িকা নোরা চরিত্রটির মাধ্যমে আধুনিক নারীবাদী চেতনা মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। অগাস্ট বেবেল এর 'নারী: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত' গ্রন্থটি নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম দিকদর্শনরূপে চিহ্নিত হয়েছে।

যাইহোক, এর সম্পর্কে মিসকন্সেপশন কেন আসে?
কারন ১ঃ মিসরিপ্রেজেন্টেশন! ফিমিনিজম নিয়ে গত ৩ বছর আগে বলিউডের প্রখ্যাত নায়িকা দীপিকা পাডুকন একটি এড ক্যাম্পেইন লিড করেন যার ট্যাগ লাইন ছিল ‘ মাই বডী , মাই চয়েস” । ঐ ভিডিওতে অনেক বিষয়বস্তু একজন স্বাধীন ইনডিপেন্ডেন্ট নারীর পয়েন্ট অফ ভিউ দিয়ে দেখেছেন আর কথা বলেছেন। উনি সেই ভিডিওতে এও বলেছেন যে ‘ বিবাহিত মহিলারা স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে সেক্স করলেও এটা দোষের কিছু না। এটা নাকি উনাদের অধিকার। কারন মাই বডি মাই চয়েস!!!!! আপনারা কি বলেন? এটা কি ফিমিনিজম? দীপিকা এটা কিভাবে ভুলে গেলেন যে প্রতিটা চয়েসের বিপরীতে একটি কন্সিকুয়েন্স বা রেজাল্টও আসে। একিভাবে বলিউডের আরেকটি ফিল্ম যার নাম জাব তাক হে জান সেখানে আরেক বলিউড নায়িকা ক্যাট্রিনা কাইফ একজন মডার্ন ইনডিপেন্ডেন্ট মহিলা। সেখানে উনি বলেছেন ‘  I want to sleep with every nationality before getting married’
আচ্ছা ! উনি যদি এরকম না করেন এর মানে কি উনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বা মডার্ন নন?
ক্যাট্রিনা বলেছেন এর মানে উনি মডার্ন ,স্মার্ট ইনডিপেন্ডেন্ট !!
একি কথা আমাদের গ্রমাএর লেবু চাচা বললে উনি চরিত্রহীন , লম্পট !
একি কথা আমি আমার ফেবুতে বললে আমি ‘ pervert, sex maniac , NYMPHO” !!!

কারন ২ঃ স্টেরিওটাইপ চিন্তা ! আমাদের ব্রেনে ফিমিনিজম নিয়ে একটি থট বা চিন্তার ছাপ যেন ছেপে গেছে। আমাদের মতে ফিমিনিষ্ট মহিলা মিডিল এজের হলে  তিনি স্লীবলেস ব্লাউজ পড়বেন, কোন মহিলা ক্লাবের সদস্যা হবেন, কানে লম্বা দুল পড়বেন, চুল ববকাট করবেন, কপালে ৫ ইঞ্চি মোটা টিপ দিবেন, আর হাতে হুস্কির গ্লাস নিয়ে পার্টি করবেন।
ফিমিনিষ্ট যুবতী হলে মেয়ের সারা শরীরে ১০০+ ট্যাটু থাকবে , হাতে জলন্ত সিগারেট থাকবে , চুলে ৭ রঙের শেড থাকবে, শরীরে ছোটো কাপড় থাকবে…. ইত্যাদি ।
ছেলেরা ফিমিনিষ্ট হলে কেমন হবে? ঐ ব্যাক্তির শরীরে পিঙ্ক কালারের শার্ট থাকবে , শুধু ব্রিজার পান করবেন, আর হাতে সিগারেট থাকলেও তাঁর পেছনে লম্বা পাইপ থাকবে যাতে উনার ঠোঁট কালো হয়ে না যায়।
কিন্তু ভাইজান ! আসলে ফিমিনজমের কনো ড্রেস কোড নেই। ফিমিনজমের যারা ব্র্যান্ড আম্বেসেডর আছেন যেমন জাভেদ আখতার, শরা ভাসকর , রাজা রামমোহন রায়, জ্যতির্বাপউলে ইত্যাদি , ইনারা কেউ এরকম ছিলেন না বা নেই।
কিন্তু এসব কিভাবে শুরু হলো ? আমাদের সমাজে কি এসব পেট্রিয়ার্কি প্রথম থেকেই ছিল? না। যেকোনো সমাজে যান, এদের শুধু একটাই চাহিদা। টাকা, পয়সা, মাল…. ঠিক ধরেছেন। ইকনমিক্স বা অর্থ ব্যাবস্থা। আর সমাজ এই ইকনমিক্সের ধারাতেই বদলায়। ফিমিনিজম থাকবে না থাকবে না। থাকলেও কিভাবে থাকবে ইত্যাদি।
আসুন একেবারে পেছনে যাই। প্রস্তর যুগে যা হতো তা অনেকটা এরকম। পুরুষ বাইরে পাথর ভাঙত তখন মেয়েরা সেই পাথর জড়ো করার কাজ করতেন। পুরুষ মহিলা একসাথে কাজ করতেন। ঘরের মাঝেও একি ব্যাবস্থা ছিল। পুরুষ শিকার করতেন আর মহিলা তা রান্না করতেন। একে অন্যের পরিপূরক ছিলেন। তাই তখন ঝগড়া হতো না আর পুরুষের সোফাতেও ঘুমানো লাগত না। সমাজে ইকুয়ালিটি ছিল। কিন্তু যত সময় গেল সমাজ বিস্তার লাভ করলো। বর্ডার হলো। মানুষ এই বর্ডার রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করতে লাগলো। আর যুদ্ধ মানেই ফিজিকাল এক্টিভিটি। যা অধিকাংশ পুরুষরা  করতেন। যার জন্য অনেক পুরুষের দরকার ছিল। সৈন্যের  দরকার পড়লো। তা এই পুরুষ( সৈন্য) কই থেকে আসবে? প্রোডাকশন হিসাবে তখন নারীকে ব্যাবহার করা শুরু হলো।এর ফলশ্রুতিতে পুরুষ একাধিক নারীকে রাখা শুরু করলেন। মানে একাধিক বিবাহ। পুরুষ যখন যুদ্ধে বছর কে বছর পার করতেন তখন পরিবার কিভাবে আগাবে? যুদ্ধে তো সৈনিক দরকার!
রেজাল্টঃ সাম্রাজ্য বাড়ানোর জন্য যুদ্ধ! যুদ্ধের জন্য বেশী সৈনিক, বেশী সৈনিকের জন্য বেশী স্ত্রী। যুদ্ধে জয় তখনি সম্ভব যখন বেশী বেশী সৈনিক থাকবে। আর সাম্রাজ্য বাড়লে অর্থ বাড়বে । ইকোনমি বুষ্ট হবে। এখানে বোঝাই যাচ্ছে ইকোনমি সিদ্ধান্ত নেয় মেয়েদের কিভাবে সে ব্যাবহার করবে।

iDiva পেজের এই ২ জন তথাকথিত ফিমিনিষ্ট। যারা নিজেরাই জানে না এরা কি চায়
এবার আসুন ১৯ শতকে। ১৯২০ সালে প্রথম ফিমিনিজমের কথা আমরা শুনতে পাই। কারন একি জিনিস। পুজীবাদি সমাজ ব্যাবস্থা। এই প্রথম আমেরিকান টোব্যাকো কর্পারেশন উনাদের সিগারেটের সেল বাড়ানোর জন্য ফিমিনিজমের সহায়তা নেন বা ব্যাবহার করেন।এর মুলে ছিলেন সিগ্মন্ড ফ্রয়েডের ভাতিজা এডয়ার্ড বার্নিস। যিনি সাইকলজির মাধ্যমে ফিমিনিজমের ব্যাবহার করেন যাতে সিগারেটে সেল বাড়ানো যায়। উনি বলেছিলেন “ cigarette is a symbol of power! This is the sign of male dominance. So , to break male dominance women should inhale or take cigarette’. !!!!!
ভাইজান এটা পুরুষ শাসন নয় বরং ক্যান্সারের প্রতীক। এটা কিভেব ভুলে গেলেন ??!!! এডয়ার্ড বার্নিসের সময় ভাগ্য ভালো নারীর অন্তর্বাস সেল বাড়ানোর দরকার পড়ে নাই। নাহলে উনি পুরুষকেও এটা পড়তে উৎসাহিত করতেন। আর এড এজেন্সি গুলো এইটা নিয়ে এমনসব বিজ্ঞাপন তৈরি করতো যা দেখলে আসলেই আমাদের(ছেলেদের) সাইকলজি বলতো ‘ আসলেই আমাদের ব্রা পরা উচিৎ!!” যেমনটা ইদানিং কিছু হিন্দি এড দেখি। যা দেখলে আসলে মাথা ব্যাথ্যা করে।কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের সমাজ??
যাইহোক,এর ফলে কি হলো?  ঐ বছরে মানে ১৯২০ সালে নিউ ইয়র্ক ইষ্টার প্যারেডে অনেক নারী বোকার মতন মুখে সিগারেট খেয়ে রাস্তায় নামলো। আর মিডিয়া …. যারা পুঁজিবাদের সহায়ক হিসাবে সবসময় কাজ করে থাকে এরা এই ঘটনা এমনভাবে প্রেজেন্ট করতে লাগলো যে এই কাজটা অসাধারন হয়েছে। মেক্সিমাম পত্রিকার হেডলাইন ছিল ‘ মেয়েরা নিউ ইয়র্কের রাস্তায় স্বাধীনতার মশাল জ্বালিয়েছেন!! ”
সিগারেট = স্বাধীনতার মশাল !
ভারত কেন ১৯৪৭ এ এতো কষ্ট করলো? বাংলাদেশ কেন ১৯৭১ এ এতো রক্ত দিল। সোজা পাকিস্তানী বা ব্রিটিশএর সামনে সিগারে জ্বালালেই হতো??!!

Torch of freedom!!! 


এবার আসুন ২০ বছর পরের সিনে মানে অয়ার্ল্ড অয়ার ২এর সময়। সমস্ত পুরুষ আবার যুদ্ধে অংশ নিল। আর মহিলারা ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারতো না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে তো কাজ চলতে হবে নাহলে টাকা আসবে কোথা থেকে? পুরুষ তো নেই! তাহলে কে কাজ করবে?? তখন আবার সেই একি কাজ! ফিমিনিজম বা নারীবাদকে ব্যাবহার করা হলো।
মহিলারা ঘরে বসে থাকার জন্য জন্মে নাই ! এদের ঘর থেকে বের হতে হবে। কাজ করতে হবে পুরুষের মতন করে। মহিলার কম না!! ফলে যা হবার তাই হলো। সাধারন মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাদীদের উদ্দেশ্য সফল হতে লাগলো।
যুদ্ধ শেষ হলো। পৃথিবীতে শান্তি(!!) আসলো। এবার আসুন সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি রেভলুশন সময়ে। কেউ আর বাইরে কাজ করতে হয় না। অফিসে বসে কম্পিউটারে ঠক ঠক !
ফলে যা হল, একি জব এক্সিস্টেন্সি যেখানে পুরুষ মহিলা একি পজিসনে একি সেলারিতে কাজ করছে। এর ফলে পুরুষের ইগো সামনে আসলো। আমাদের পরিবার বা সমাজে এই কোথা প্রতিটা ছেলেই শুনে থাকবেন ‘ মেয়ে হয়েও কত কামায়??!!” মানে কি? মেয়ে হয়েও কথাটার মানে কি? সজা বললেই বললেই তো হয় মেয়েটা উপার্জন করছে। মেয়ে হয়েও মানে কি? এটা কি লিঙ্গ বৈষম্য আসে না?
ছেলেদের ক্ষেত্রেও কম লিঙ্গ বৈষম্য কম হয় না ভাইজান,
এইইইই ! ছেলে হয়ে কাঁদে কেন!!
ছেলেরা কাঁদে না!
কেন ভাই? ছেলেদের হৃদয় নেই? এদের ইমোশন নেই??
আর এইটা বেষ্ট ! বউয়ের পয়সায় কিভাবে খায়?? লজ্জা করে না?
কেন ভাই কেন খেতে পারবো না? বৌ যদি আমার পয়সায় খেতে পারে আমি কেন পারবো না?
ছেলে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে ….উনি যদি মেয়ে হয়ে আমার বাড়ীতে থাকতে পারে আমি কেন পারবো না?? ইকুয়ালিটি ভাইজান!!


সমাজ বা সোসাইটি যে কি পরিমান হিপক্রেসিতে ভুগছি তা একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বোঝা যায়। উদাহরন দিচ্ছিঃ আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ড। বুয়েট থেকে পাশ করা। আইটি ফার্মে ৫০ হাজার টাকার বেতনের চাকরী করে। প্রতি বছর থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, চীন, নেপাল ইত্যাদি এশিয়ান দেশে ভ্রমন করে। খুব মর্ডান। লিপষ্টিক মেকাপ ছাড়া বাসার বাইরে বের হোন না। টপ্স জিন্স, সানড্রেস, সিঙ্গেল সল্ডার ড্রেস ইত্যাদি আল্ট্রা মর্ডান আউটফিটে থাকে সব সময়। নারীবাদের জ্বালাময়ী ইকুয়ালিটির ভাষন ওর মুখে সবসময়। ‘আমি নিজের চেষ্টায় নিজের আইডেন্টিটি বানিয়েছি। আমি মর্ডান, ইনডিপেন্ডেন্ট। কনো পুরুষের মুখাপেক্ষী না।’ কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞ্যাসা করায় বলে “ আমার বর অবশ্যই আমার থেকে বেশী ইনকাম করতে হবে। নাহলে আমি কিভাবে ওকে রেস্পেক্ট করবো? অমা! নিজের বাড়ী না থাকলে হবে নাকি?? অবশ্যই আমার থেকে লম্বা হতে হবে নাহলে কেমন লাগে??’
আমার মুখটা ছিল তখন দেখার মতন। বিশাল প্রশ্নবোধক সাইন নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ‘ এখন তোর ফিমিনিজম কই গেল?? এটা কি ইকুয়ালিটী??’  
উত্তরঃ তুই খুব বেশী বাজে বকিশ!!
এবার ২য় ঘটনায় আসি। আমার প্রথম ব্রেকাপ আমার প্রথম ডেটেই হয়ে যায়। কিভাবে? মেয়ে ভালো শিক্ষিত টাকাওলা পরিবারে জন্ম। নিজেও ২৫ হাজার টাকার জব করছে পার্টটাইম গ্রামীন ফোনে। ঢাকার একটা রেস্তরাতে দেখা করতে গেলাম। বিল আসার পর বললাম ‘আসুন ৫০০-৫০০ স্প্লিট করি।’ এরপর উনার চেহারা লাল, কান গরম , পাঁদার জন্য তৈরি!!! আমি মনে মনে বললাম কি এমন বলে ফেলছি ভাই? পরেরদিনই ফোন দিয়ে ব্রেকাপ !
এই হলো সমাজের অবস্থা। আসলে দোষ উনাদের নয়। দোষ ফিমিনিজমেরও নয়। দোষ হলো কিছু প্রিটেন্ডার মানুষদের। যারা আসলে কি চায় এরা নিজেরাও জানে না। উদাহরন স্বরূপ একটা ফিমিনিষ্ট(!!)  পেজের নাম বলি আই ডীভা । এই পেজ থেকে যেসব ভিডিও আপলোড হয় তা দেখেলেই বোঝা যায় যে এরা কি পরিমান কনফিউসড মেসেজ দিয়ে থাকে।
আসলে পেট্রিয়ার্কি আসবে নাকি ফিমিনিজম আসবে সেটা ডিসাইড করে সমাজ আর পুঁজিবাদ। এই কারনে এই সমস্যা। তাইবলে সব ফিমিনিষ্ট যে খারাপ তা কিন্তু না। দেশে যারা অল্পবিস্তর ফিমিনিষ্ট আছেন তাঁদের উচিৎ সবার সাথে কথা বলা। যুদ্ধ নয়। বুঝিয়ে আসল নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা। রাস্তায় যাতে মেয়েরা ভালো করে স্বাধীনভাবে চলতে পারে,পুরুষ নারী সম অধিকার পায়, উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী যাতে নারীদের ব্যাবহার না করতে পারে, নারীকে কনো কালো মধ্য যুগীয় বস্তায় বন্দি করতে না পারে ইত্যাদি অগনিত ইস্যু নিয়ে কাজ করা। কিন্তু আজকাল ঠিক তাঁর উল্টো চিত্র। ফিমিনিজমের নামে বা নারী অধিকারের নামে যা হচ্ছে তা আমার চোখে পুরুষ বিরধীতা, পুরুষকে উত্যক্ত করা, প্রাচীন সুন্দর সমাজ ব্যাবস্থাকে সেকেলে বা চেঞ্জের নামে ব্যাঙ্গ করা। আর নারীবাদী সংঘটনগুলো নারী অধিকারের নামে অথবা আইনি সহায়তার  নাম করে পুরুষ শোষণ করে যাচ্ছে। নারীদের জন্য সরকারের করা আইনকে অপ-ব্যাবহার করে যাচ্ছে প্রতিদিন। বিশ্বাস হয় না? একবার ডিষ্ট্রিক কোর্টের পারিবারিক আদালতে গিয়ে দেখে আসুন কি নোংরামি হয় সেখানে। আমি নিজে ভুক্তভোগী তাই জানি এসব তথাকথিত ফিমিনিষ্টরা কি পরিমান ভয়ংকর হয়। নিজের পেটের মেয়ের ভবিষ্যতকেও ১২টা বাজিয়ে দেয় শুধুমাত্র ইগোর কারনে।

কেউ আবার মনে করবেন না যে আমি ফিমিনিজমের বিরুদ্ধে।
ফিমিনিজমের পজিটিভ সাইড হলো দেশের জিডিপির মাঝে উন্নতি হয়। ইউ এন এর রিপোর্ট অনুযায়ী নারী অধিকারের ইকুয়ালিটি একটি বানিজ্য বান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করতে সহায়ক। উদাহরন স্বরূপঃ
ইটালী,মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ২১%   
স্পেনে , যেখানে মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ১৯%
জাপান, যেখানে মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ১৬%
আমেরিকা, যেখানে মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ৯%
ছেলেদের বোঝা উচিৎ। মহিলারা যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে, নিজেদের খরচ নিজেরাই চালাতে পারে তাহলে ছেলেদের উপর দায়িত্বও অনেক কমে যায়। স্ট্রেস লেভেল কমে যায়। তাই আসুন সকলে আসল ফিমিনিষ্ট হই।
এবার একটু আইন বিষয়ে কথা বলবো। যা যৌতুক  নিরোধ আইন ১৯৮০ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩। এই ২টি আইনের মিসিউজের ফলে অনেক পুরুষ আর তাঁর পরিবারকে নিয়ে পথে বসেছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অনেক বাড়ির বৌ যাকে ঘরের লক্ষী হিসাবে ধরা হয় সেই লক্ষী মিথ্যা মামলার মাধ্যমে স্বামীর পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়ায়। আর এর ফলে পুরুষের আত্মহত্যার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। আর এটা ফ্যাক্ট বলছি। কোন বানানো কথা নয়। ভারতের সুম্প্রীম কোর্ট বলেছেন “ this section 498-A is used as a weapon for legal terrorism’  
মজার ব্যাপার হলো এই ব্যাপারে আজ পর্জন্ত কনো নারীবাদিকে মুখ খুলতে দেখলাম না। এদের বোঝা উচিৎ। equal rights এর মাঝে equal প্রথমে আসে। rights পরে আসে। Feminism is not about being one thing on the other. Its about having a choice of being anything without any explanation.   
তাহলে আসল ফিমিনিষ্ট কে? যেমন সকল সুট-বুট পরা লোক ভালো মানুষ না। তেমনি ফেবু বা টুইটারে ১ মিলিয়ন ফলয়ার হলেই কেউ ফিমিনিষ্ট হয় না।
আর হ্যা যেতে যেতে আমার সব পুরুষ ভাইদের বলছি। প্রথম ডেটে গেলে আপনার উনাকে অবশ্যই ৫০% বিল শেয়ার করতে বলবেন। যখনি দেখবেন উনার ফাটছে এই ৫০% বিল শেয়ার দিতে বুঝবেন আপনি কুলুর বলদ হতে চলেছেন। আর হ্যা আমি মজা করছি না। I am suggesting this! আপনি কি বলেন? কমেন্ট করে জানান।  


শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন...

Popular Posts