Thursday, December 7, 2017

সনাতন ধর্মে নিষিদ্ধ খাবার সমূহ

আজকাল অনেক হিন্দুকেই দেখি অনেক নিষিদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই এরা এই সম্পর্কে জানেন না। বা অবগত নন। কারন ধর্ম সম্পর্কে উদাসীনতা তথা পরিবার থেকে এই ব্যাপারে কনো চাপ এরা পান না। ফলে গরুর মাংস থেকে শুরু করে প্রায় সবই খান এসব আল্ট্রা মর্ডান যুবকের দল।

আসুন সনাতন ধর্মের নিষিদ্ধ খাবার গুলোর নাম জানি। আর যথা সম্ভব তা মেনে চলার চেষ্টা করি। এই লেখাটি বাঙালী হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য লিখা হয়েছে যারা হিন্দু সংস্কার (সম্প্রদায় ভিত্তিক নয়) কে অবলম্বন করে চলেন এবং জানতে ইচ্ছা রাখেন কোন কোন খাবার গুলো হিন্দু শাস্ত্রের সাপেক্ষে সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দু শাস্ত্র বলতে বেদ, পুরাণ ও তন্ত্রের মূল গ্রন্থ গুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই বৈধ-অবৈধ খাবারের সূচীটি বানানো হয়েছে।



প্রাণীজ

 দুধ 
✪  উট ও ভেড়ার দুধ পান করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২২-২৩, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১১-১২, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০

✪  এক খুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – ঘোড়া) দুধ পান করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৩, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০

✪  গরু, মোষ, ছাগলের বাচ্চা জন্মানোর পর থেকে ১০দিন যাবৎ তাদের দুধ পান নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৪, বসিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৫, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৯, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০

✪  নিচুস্তরের পশু (যেমন – কুকুর, বেড়াল) ও মাংসাশী পশুর (যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল) দুধ পান নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৮৪

 ডিম 
✪  হাঁস, মুরগি, ময়ুরের ডিম খাওয়া সিদ্ধ। তথ্যসূত্র – মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪, ভেল সংহিতা – চিকিতসাস্থানম – ২৬৭, চরক সংহিতা             ২৭.৬৩-৬৪

মাছ-মাংস 
✪  সাপ, কুমীর, ঘড়িয়াল, শুশুক, সর্প আকৃতির মাছ, ব্যাঙ, অনিয়তকার মস্তক বিশিষ্ট মাছ (যেমন – ইল, কুঁচে মাছ, হাঙর, তিমি ইত্যাদি) ও জলজ শামুক, ঝিনুক, গুগলি ইত্যাদি খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪১, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৬, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৮-৩৯

✪  বন্য মোরগ/মুরগি খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত মোরগ/মুরগি খাওয়া সিদ্ধ।

✪  যে সমস্ত পাখী শুধু তাদের পা দিয়ে মাটিতে আঁচড়ে আঁচড়ে খাবারের সন্ধান করে এবং যেসব পাখীরা লিপ্তপদী (যেমন – হাঁস) তাদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭

✪  রাজহাঁস, সারস, পানকৌড়ি, বক, কাক, পায়রা, টিয়া, ঘুঘু, তিতির, বাজ, চিল, শকূন, বাদুড়, ময়ূর, স্টার্লিং, দোয়েল, চড়ুই, কাঠঠোঁকরা, মাছরাঙা এবং নিশাচর পাখীর মাংশ খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২-১৭৪

✪  মাংসাশী পাখির মাংশ আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৪, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২

✪  যেকোনো বিস্বাদ ও খাদ্য অনুপযোগী মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মনু স্মৃতি ৫.১১-১৭, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৪

✪  যে সমস্ত পশুর দুধের দাঁত ভাঙেনি তাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৫, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩০-৩১★ অর্থ্যাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক পশুর মাংস আহার নিষিদ্ধ।

✪  যে সমস্ত পশুর একটি মাত্র চোয়ালে দাঁত আছে (যেমন-ঘোড়া) তাদের মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪০, মনু স্মৃতি ৫.১৪, বিষ্ণু স্মৃতি LI.৩০

✪  যে সমস্ত প্রাণীর পা বহু অংশে বাঁকা। যেমন শজারু, কাঁটাচয়া, শশক, খরগোশ, কচ্ছপ, গোধা, গোধিকা ইত্যাদির মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৯, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.২৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫, মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪

✪  গণ্ডার ও বন্য শূকরের মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫

✪  নরমাংস বা নরাকার যন্তুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮

✪  গৃহপালিত পশু, ছাগল, ভেড়ে, শূকরের মাংশ খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১-৪★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত শূকরের মাংস বৈধ।

✪  গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯

★ গ্রাম্য শূকর বলতে ফালতু শূকরের সেইসব প্রজাতি গুলোকে বোঝানো হয়, যারা আকারে ছোটো এবং পঙ্কিল নোংরা স্থানেই শুধু বাস করে। নোংরা স্থানে থাকার জন্য এদের মাংসে কৃমিজাতীয় পরজীবীর সিস্ট থাকে যা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে মানুষ সংক্রমিত হয়। উক্ত কারণের জন্য গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ কিন্তু গৃহপালিত শূকর নয়।

✪  যেকোনো মৃত প্রাণীর মাংস আহার করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.১৬

✪  বহু উপকারী গোজাতির মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, বিষ্ণু পুরাণ ৩.৩.১৫, ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ ১.৯.৯, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩-৪৫

✪  গৌর, ঘায়ল, সরাভ, ষাঁড় প্রভৃতি গো সম্প্রদায় ভুক্ত জীবের মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯

✪  মাংসাশী প্রাণীর মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪

★ মূলত মাংসাশী প্রাণী বলতে উচ্চতর প্রাণীদের বোঝানো হয়েছে যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল, বন্য কুকুর ইত্যাদি। এদের শিকার করা কঠিন এবং মাংস নিরস, দুর্গন্ধ এবং কুরুচিকর স্বাদ যুক্ত হওয়ার জন্য পরিত্যাজ্য।

✪  একখুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – উটের) মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯

✪  কৃষ্ণসার, নীলগাই, সাধারণ হরিণ, বন্য শূকরের মাংস খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৬

✪  স্বাদু ও লবণাক্ত জলের মাছ (যেমন- বিভিন্ন মেজর ও মাইনর কার্প, খাঁড়ির মাছ ইত্যাদি) আহার হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৮

অন্যান্য✪  যেকোনো আহারে উপযোগী বীজ, ফল, মূল, সব্জি খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১১.১২-২২

✪  সুস্বাদু আহারে উপযোগী রস (যেমন – খেঁজুরের রস, তালের রস, আখের রস, ডাবের জল, ফলের রস ইত্যাদি), দুগ্ধজাত পদার্থ (যেমন – দুধ, ঘি, মাখন, দই) মধু ইত্যাদি বৈধ।তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১৮.১২-১৩

✪  রসুন, পেঁয়াজ, পলাণ্ডু খাওয়ার উপর বিতর্কিত বিধান আছে, কাজেই ইহা খাওয়া যেতে পারে।

★আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৬, মনু স্মৃতি ৫.৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ১.১৭৬, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩ অনুসারে পেঁয়াজ রসুন খেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। অপরদিকে বৈদিক আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্র গুলিতে ভিন্ন চিকিৎসার কাজে পেঁয়াজ রসুনের ব্যাবহার উল্লেখ রয়েছে। কাজেই পেঁয়াজ রসুন খাওয়া কে নিষিদ্ধ বলা অযৌক্তিক।

✪  টকে যাওয়া (ব্যাতিক্রম – দই) বা পচে যাওয়া বা কোনো খাবারে উভয়ে মিশ্রিত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২০, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭

✪  কুকুর, বিড়াল, বানর, মহিষ প্রভৃতি বন্য প্রাণীর মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৯৩, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩, মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪

✪  যে খাবারে কোনো পশু মুখ দিয়েছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.১০, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭

✪  যে সব খাবারে পোকা জন্মছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.২৬, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭



উক্ত নিষিদ্ধতার বাইরের খাদ্য বস্তু বা আহার সামগ্রী সমূহ বৈধ, কারণ সেইসব আহার সামগ্রীর উপরে নিষিদ্ধতা আরোপ হয়নি হিন্দুশাস্ত্র সমূহে।

শিব রাম নাম করেন তাহলে শিব কি রামের থেকে ছোট?

 সম্প্রতি রামায়েতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর রামায়েতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যারা শ্রীরাম চন্দ্রকে উপরে তুলতে গিয়ে পরমেশ্বর শিবকে ছোট করছেন...

Popular Posts