গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে প্রকাশিত আমার ফেবু অয়াল থেকে পোষ্ট করলাম।
গত ৩ বছর যাবত আমি আমার ধর্ম বিষয়ে অর্জিত ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানকে প্রসার এর জন্য সামাজিক মাধ্যম ফেবু ব্যাবহার করে যাচ্ছি।
ইতিমধ্যে নিরাকারবাদী আর্য সমাজ ছাড়াও সব থেকে বেশী বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি গৌড়ীয় মতবাদের অনুসারীদের কাছ থেকে। অধিকাংশ হিন্দুর ধারনা ভাগবত গীতা হল আমাদের শাস্ত্র আর একমাত্র গীতা যা একদম ভুল কথা। এই কথা বলার সাথে সাথে যে প্রশ্ন আসে তা হল "আপনি কিসের ভিত্তিতে এই কথা বলছেন? " স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেই সর্বমোট ৪২ ধরনের গীতা। যারা মুক্ত মনের এরা প্রমান চান আমি কিছু নির্ভরযগ্য ওয়েব এড্রেস এর নাম দিয়ে দেই। আর যারা গোঁয়ার গোবিন্দ এরা সব মিথ্যা মিথ্যা বলে বৃথা আশফালন করে নিজেদের গর্তে ঢুকে যায়। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম এই ৪২ গীতার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন দিয়ে একটি পোষ্ট দিবো। এরি পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই পোষ্ট।
সনাতন হিন্দু ধর্মের ৪২ গীতা
গীতা বলতে সাধারণত বুঝায় কোন ধর্মীয় আধাত্মিক জ্ঞান যা গীত তথা সুরারোপ করে গুরু শিষ্যকে প্রদান করে। বাস্তবিক জীবনে সম্মুখীন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পন্ডিত ব্যাক্তি বা স্রষ্টা স্বয়ং প্রকটিত হয়ে তাদের সমাধান দেন । এই সকল সমস্যার সমাধানের স্বরূপ হিসেবেই গীতার সৃষ্টি। বলা বাহুল্য ৪২ গীতার অধিকাংশ এসেছে হিন্দু ধর্মের ইতিহাস খ্যাত মহাভারত থেকে।
অনুগীতাঃ
অনুগীতার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বে ১৬তম অধ্যায়ে। মহাভারতের যুদ্ধের পর যুদ্ধিষ্ঠীরের রাজ্যাভিষেকের মুহূর্তে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় সংকলিত হয়েছে। এখানেই কৃষ্ণ বলেছিলেন যে ভাগবত গীতার পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বর তিনি নিজে নন।
অষ্টবক্রগীতাঃ
রাজা জনক ও অষ্টবক্রের মধ্যে আত্মা, বন্ধন, জীবনের পরম সত্য নিয়ে কথোপকথন হয়। এই গীতায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সন্ন্যাস জীবন ও সংসার ত্যাগ তথা বৈরাগ্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
অবধ্যত্ত্ব গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল অদ্বৈত বেদান্ত এবং এই গীতার প্রবক্তা হলেন মুনি দত্ত্বাত্রেয়। যাঁর জন্ম হয়েছিল এই পৃথিবীতে আত্ম অহমিকাহীন এবং হিংসার ঊর্ধ্বে।
ভগবদ্গীতাঃ
ইহা ৭০০ শ্লোক এর একটি গ্রন্থ যা মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫তম অধ্যায় থেকে ৪২ তম অধ্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডব যুবরাজ অর্জুনের রথের সারথি হয়ে অর্জুনকে নির্দেশনা প্রদান করছিলেন।
ভীক্ষু গীতাঃ
ইহা শ্রীমদভাগবদ পুরাণের ৫ম অধ্যায় ১২শ স্কন্দের অন্তর্গত যেখানে রাজা পরিক্ষীত ও শুক মুনির মধ্যকার কথোপকথন মধ্য দিয়ে বেদান্ত দর্শন, ব্রাহ্মন ও আত্মার ওপর স্ংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
বোদ্ধগীতাঃ
ইহা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে গৃহীত, যেখানে ঋষি বোদ্ধের সাথে রাজা যজাতির কথোপকথন হয়ে থাকে।
ব্রহ্মগীতাঃ
ইহা স্কন্দ পুরাণের থেকে গৃহীত যা সুত সংহিতার ৪র্থ অধ্যায়, যজ্ঞ বৈভব খন্ডের প্রথম ১২টি অধ্যায় থেকে নেয়া। তার অপর একটি সংস্করণ পরবর্তীতে নির্বাণ খন্ডের ১৭৩ থেকে ১৮১ মধ্যেও পাওয়া যায় যা “যোগ বশিষ্ঠ” নামে পরিচিত।
ব্রাহ্মণ গীতাঃ
যা অনুগীতার একটি অংশ।
দেবী গীতাঃ
দেবীগীতা দেবী ভাগবতমের অন্তর্গত সপ্তম খন্ডের অধ্যায় ৩১ থকে ৪০ থেকে চয়ন করা হয়েছে, যাঁর রচয়িতা হলেন মহামুনি ব্যাস।এই গীতায় বিবৃত হয়েছে দেবীর আবির্ভাব ও তাঁর প্রকৃতি সম্পর্কে তাছাড়াও দেবীকে ধ্যান, যোগসাধনা ও পূজার মাধ্যমে কিরূপ আরাধনা করা হয় তা বিবৃত হয়েছে। এই গীতার আবার ২ অংশ যথা গনেশ আর গোপিকা গীতা।
গণেশ গীতাঃ
ইহা গণেশ পুরাণের ১৩৮-১৪৮ অধ্যায়ের অন্তর্গত যা কৃৎখন্ড থেকে নেয়া। যা অনেকটাই ভাগবদ গীতার আদলে রচিত যেখানে শ্রীগণেশকে পরমাত্মার স্বরূপ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। রাজা বরেণ্যের সাথে গজাননরূপী শ্রীগণেশের কথোপকথন হয়ে থাকে।
গোপিকা গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয়বস্তু হল শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গোপীদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়। ইহা ভাগবদ পুরাণের অন্তর্গত যা রাজা জনমেজয়কে শুকদেব মুনি বলছিলেন।
গুরুগীতাঃ
মুনি ব্যাস দ্বারা রচিত এই গীতার শ্লোক সংখ্যা ৩৫২টি। এই গীতায় ভগবান শিবের কাছে দেবী পার্বতী গুরুতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা স্কন্ধ পুরাণের অন্তর্গত।
হংস গীতা/ উদ্ধব গীতাঃ
ইহা শ্রীমদ্ভাগবদ্পুরাণের ১১শ স্কন্দের ৪০ শ্লোক ৬ষ্ঠ খন্ড থেকে ২৯ খন্ডের মধ্যে প্রায় ১০০০ শ্লোকের সমন্বয়ে রচিত। যেখানে নশ্বর দেহ ত্যাগের পূর্বে শ্রীকৃষ্ণের সাথে উদ্ধবের কথোপকথন যোজন করা হয়েছে।
হনুমদ গীতাঃ
শ্রীরামচন্দ্রের রাজা হওয়ার পর সীতা দেবীর সহিত শ্রীহনুমানের কথোপকথন চয়িত হয়েছে হনুমদ গীতায়।
হরি গীতাঃ
ভাগবদ গীতাকে নারদ মুনি কর্তৃক এই নামকরণ করা হয়েছিল। শান্তিপর্ব, ৩৪৬তম অধ্যায়, ১০ম শ্লোক।
ঈশ্বর গীতাঃ
কুর্ম পুরানের উত্তর বিভাগের প্রথম ১১টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা। পরমেশ্বর ভগবান শিবের শিক্ষা ও উনাকে কিভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে আলচনা হয়েছে।বলা হয়ে থাকে ভাগবত গীতার শিক্ষা তো বটেই এছাড়াও এই গীতায় পাতঞ্জলির ৮টি যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। এই গীতায় ভগবান শিব নিজেকে বার বার পরমেশ্বর বলেছেন।
কপিলা গীতাঃ
ভাগবত পুরানের ৩ নম্বর স্কন্দের ২৩-৩৩ অধ্যায় নিয়ে এই গীতা গঠিত। সাধু কপিল তাঁর মা দেবাদুতির আধ্যাত্মিক ক্ষুদা নিবারনের জন্য এই গীতা আলচনা করেন।
মানকি গীতাঃ
মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে এই গীতা গঠিত।মানকি মুনি তাঁর ২ ষাঁড়কে নিয়ে ৫০টি প্যারার একটি গল্প এইখানে বলা হয়েছে। এর মূল বিষয় বস্তু হল লোভ, কামনাকে ত্যাগ আর সকল নিষ্পাপ প্রানীর জন্য ভালবাসা জাগানো।
পান্ডব বা প্রপন্ন গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল আত্মসমর্পন এর গান। মূলত পুরানিক বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ত্যের উক্তি নিয়ে এই গীতা উপদেশ দেয়। এই ব্যাক্তিদের মাঝে পঞ্চ পান্ডবও আছে।
পরাশর গীতাঃ
এই গীতাও মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। শান্তি পর্বের সবথেকে বড় গীতা বলা হয় এই গীতাকে। শান্তি পর্বের মোট ৯টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা আলোচনা করে থাকে। পরাশর মুনি ও তাঁর পিতা ব্যাস মুনির সাথে রাজা জনকের কথাবার্তা নিয়ে এই গীতার ভাস্য।
পিঙ্গলা গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে সংকলিত। এখানে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে পিঙ্গলা নামক এক পতিতার মোক্ষ লাভ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
রাম গীতাঃ
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণের অন্তর্গত আধাত্ম রামায়ণ যা উত্তর কাণ্ডের পঞ্চম স্বর্গ থেকে সংকলিত। এছাড়াও এই গীতার আরেকটি সংকলন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে পাওয়া যায়। এই সংকলন তত্ত্বস্মরণের গুরুজ্ঞ্যান বশিষ্ঠের অন্তর্গত। এই গীতায় তিনটি কাণ্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত যথা জ্ঞ্যানকাণ্ড, উপাসনাকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড। উপাসনা কাণ্ডের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের আঠারটি অধ্যায় নিয়ে রামগীতা গঠিত।
রমন্ গীতাঃ
এই গীতা মহর্ষি রমনে্র দ্বারা রচিত। এই গীতা উনার সবচেয়ে কাছের শীষ্যদের মধ্যে অন্যতম শ্রীগণপতি মুনি যিনি আরো শীষ্যদের সাহায্যে মোট ৩৭ খানা প্রশ্ন মহর্ষি রমনে্র সম্মুখে উত্থাপবন করেন। এই গীতা ভগবদগীতার শ্লোক সহ মোট ১৮টি অধ্যায় এবং ৩০০ মন্ত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত।
রিভু গীতাঃ
ইহা শিব রহস্য পুরাণের ষষ্ঠ খণ্ড থেকে নেয়া হয়েছে । মুনি রিভু এবং মুনি নিদঘ এর কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমিত্ব এবং ব্রহ্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যা দুই সহস্র পঙক্তি দিয়ে রচিত।
রুদ্র গীতাঃ
শ্রীমদ্ভাগবদ পুরাণের চতুর্থ স্কন্দের ২৪শ তম অধ্যায়ের ১৬-৭৯ শ্লোক এবং বরাহ পুরাণের ৭০-৭২ তম অধ্যায়কে রুদ্র গীতা বলে অবহিত করা হয়। পরমেশ্বর ভগবান শিব দ্বারা প্রচীতা(পবন দেব) যিনি তখনকার সময় দক্ষ ছিলেন তাঁকে বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এই গীতার মন্ত্রগুলোর মধ্যে শ্রীবিষ্ণুর বিভিন্ন প্রশংসা করা হয়েছে। এখানে পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণুর উপাসনা এবং শ্রীবিষ্ণুর দ্বার মোক্ষ প্রদান করার বিভিন্ন ধরনের উপাসনা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন । তাছাড়া এই গীতাতে আত্মোপলব্ধি এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শিক্ষা ও দর্শন সম্পর্কে বলা আছে।
সম্পক গীতাঃ
মহাভারতের শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে এই গীতার উৎপত্তি। এই গীতা ২১টি মন্ত্র দ্বারা তৈরী যা সম্পক একজন সৎ বাহ্মণের দ্বারা উপেদেশাবলি হিসেবে পেয়েছিলেন। এসকল উপদেশের মূল উদ্দেশ্য হল একজন মানুষ কিভাবে তার আমিত্ব ত্যাগ করে সমর্পণের মাধ্যমে সচ্চিদাননন্দে লীন হতে পারেন।
শিব গীতাঃ
পদ্মপুরাণের পাতাল কান্ডের ১৬ টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা রচিত। শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা দেবিকে যখন লঙ্কাধিপতি রাবণ হরণ করেন, তখন ঋষি অগ্যস্ত রামচন্দ্রকে মহাদেবের আরাধনা করার উপদেশ প্রদান করেন। পরমেশ্বর শিব তখন শ্রীরামচন্দ্রের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব গীতার মাধ্যমে জ্ঞ্যান প্রদান করেন। শৈবদের মাঝে এই গীতার উপযোগীতা অপরিসীম।শ্রীরামচন্দ্রই সর্বপ্রথম বিষ্ণুর অবতার যিনি প্রভু পরমেশ্বরের বিশ্বরূপের দর্শন পান। শিব উনার বিশ্বরূপ প্রদর্শনের মাধ্যমে মানব ভ্রূণ মনুষ্যজন্মরহস্য, কর্ম, শরণাগতি ইত্যাদি বহু বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে শ্রীরামচন্দ্রকে সমৃদ্ধ করেন।
শ্রুতি গীতাঃ
শ্রীমদভাগবদপুরাণের ১০ম স্কন্দের ৮৭ নং অধ্যায়কে শ্রুতিগীতা নামে অবহিত করা হয়। রাজা পরিক্ষীত শুকদেবের কাছে ব্রাহ্মণের অনাচার এবং ঈশ্বরাচার এই দুইয়ের সম্পর্কে উপদেশাবলি সংকলতিত হয়েছে।
সূর্য গীতাঃ
গুরজ্ঞ্যান বশিষ্ঠ যা তত্ত্ব স্মরণের অন্তর্গত সেখানে সূর্যগীতার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। ইহা তিনটি খন্ডে বিভক্ত যথা জ্ঞ্যান কান্ড, উপাসনাকান্ড ও কর্মকান্ড। অদ্বৈত বশিষ্ঠের তৃতীয় পঙক্তির প্রথম পাঁচ অধ্যায় সূর্য গীতা দিয়ে শুরু।
সূত গীতাঃ
ইহা মূলত স্কন্দ পুরানের ১৩শ অধ্যায়ের ২০তম যজ্ঞবৈভব খণ্ডের অন্তর্গত। ইহা প্রবলভাবে অদ্বৈতবাদের পক্ষে এবং মনোথিজম অর্থাৎ দ্বৈত সত্তার মাধ্যমে অদ্বৈতবাদের খোঁজ এর পক্ষে সমর্থন প্রদান করে। মূলত নিরাকার অদ্বৈত ব্রহ্মকে জানাই এই গীতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।অদ্বৈতবাদের ব্যাপারে এই গীতা মূলত ভগবদগীতা থেকে অনেকাংশে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট নিয়ম মেনে চলে। মহর্ষি সুত অদ্বৈতবাদের ধারণা এবং ঈশ্বরের দর্শন মার্গের ধারণা পান পরমেশ্বর ভগবান শিবের কাছ থেকে।
স্বামী নারায়ণ গীতা বা যোগী গীতাঃ
মূলত এটি বৈষ্ণবদের একটি গীতা। শ্রী যোগীমহারাজ ভগবান শ্রীস্বামী নারায়ণ এর দর্শন লাভ করেন। এবং, উনার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞ্যান, যেমনঃ কিভাবে মানব জীবনে আধাত্মিক সফলতা পাওয়া যায়, এর জন্য একজন ভক্তকে কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়, কি কি গুণ এবং কি কি প্রার্থনার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। মূলত দাক্ষিণাত্যে বৈষ্ণবদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় গীতা হল এই স্বামী নারায়ণ গীতা।
উত্তর গীতাঃ
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর অর্জুন যখন বয়সের ভারে নিমজ্জিত এবং রাজ্যসুখ জগতের মায়া দ্বারা প্রবলভাবে বেষ্টিত তখন অর্জুন এসব থেকে মুক্তি পেতে শ্রীকৃষ্ণের কাছে যান। শ্রীকৃষ্ণকে তিনি ব্রাহ্মণের জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ শ্রীকৃষ্ণের কাছে উত্থাপন করেন। শ্রীকৃষ্ণের উনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এবং অর্জুনের সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। উত্তর গীতা তিনটি অধ্যায় দ্বারা পরিপূর্ণ। এটি মহাভারতের উত্তরকাণ্ডে সংকলিত রয়েছে।
বল্লভ গীতাঃ
বল্লভ গীতাকে সদাসা গ্রন্থ হিসেবেও জানা যায়। শ্রীবল্লভ উনার শিষ্যদের জীবনের উদ্দেশ্য ও মুক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।এটি শ্রীবল্লভের ১৬টি কর্ম এবং প্রতিটি কর্মের মূল বিষয়ের উপরে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।
বশিষ্ঠ গীতা বা যোগী বশিষ্ঠ গীতাঃ
রাজপুত্র রামচন্দ্রকে বিষন্ন অবস্থায় দেখে ঋষি বশিষ্ঠদেব বিশদভাবে অদ্বৈত বেদান্ত এবং অদ্বৈতবাদ সম্পর্কে আলোকপাত করেন যা ৩২,০০০ সংখ্যক শ্লোকের সমন্বয়ে সংকলিত হয়েছে।
বিভীষণ গীতাঃ
এই গীতা রামায়ণ থেকে সংকলিত। রাজা শ্রীরামচন্দ্র বিভীষণকে ভক্তি, বিশ্বাস সৎকার্যের লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞ্যান দান করেন।
বিচক্ষু গীতাঃ
এই গীতা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে নেয়া হয়েছে। রাজা বিচক্ষু একটি যজ্ঞে উপস্থিত হন যেখানে প্রাণী আহুতি দেয়া হয়। তিনি সেখানে অহিংসার প্রতি আলোচনা করেন যা এগারোটি শ্লোক এর মাধ্যমে সংকলিত। পিতামহ ভীষ্ম রাজা যুধিষ্ঠিরকে এই জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
বিদুর গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। বিদুর এবং সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখানে বিদুর সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রকে রাজনীতির জ্ঞ্যান এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মূল্য ,ন্যায় এবং সত্যবাদীতা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করেন।
বৃত্র গীতাঃ
ইহাও মহাভারত থেকে গৃহীত। মোক্ষ পর্বের শান্তি পর্ব থেকে ইহা চয়িত। এই গীতায় মূল কথোপকথন হয় ভয়ঙ্কর দানব বৃত্রাসুর এবং দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের মধ্যে হয়ে থাকে যা দুই অধ্যায়ে ব্যাপ্ত।
ব্যাধ গীতাঃ
মহাভারতের বন পর্বের অন্তর্গত। এই গীতায় এক মাংস বিক্রেতা এক সাধুকে জ্ঞ্যান প্রাদান করেন যিনি সম্রাট যুধিষ্টিরের সঙ্গে পরিচিত হন মার্কণ্ডেয় মুনির দ্বারা।সেই সাধারণ মাংস বিক্রেতা অহঙ্কারী সাধুকে নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
ব্যাস গীতাঃ
এটি কূর্ম পুরাণের দ্বাদশ অধ্যায় থেকে শুরু করে উত্তর বিভাগ পর্যন্ত ব্যাস গীতার অন্তর্গত। এখানে ব্যাস মুনি আত্ম জ্ঞ্যান অর্জনের সর্বোচ্চ মার্গ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেছেন। এখানে একতার বিশ্বাস এবং অদ্বৈতবাদ দর্শনের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
যম গীতাঃ
ভজসর্বার ছেলে শ্রী নচিকেতার সাথে ধর্মরাজ যমের ধর্মবিষয়ে কথোপকথনকে যম গীতা হিসেবে জানা যায়। পিতৃ আদেশ পালনে যমের দ্বারে উপস্থিত হয় ও নিজ ধর্ম জ্ঞ্যান এবং প্রজ্ঞা দ্বারা যমকে তুষ্ট করেন এবং ধর্মরাজকে ধর্মজ্ঞ্যান দিতে বাধ্য করেন। যম গীতার সারাংশ তিনটি জায়গায় পাওয়া যায়। ১) বিষ্ণু পুরাণের ৩য় খন্ড ৭ম অধ্যায় পর্যন্ত ২) অগ্নি পুরাণের ৩য় খণ্ড অধ্যায় ৩৮১ এবং ৩) নৃসিংহ পুরাণের ৮ম অধ্যায়সমূহে।
গত ৩ বছর যাবত আমি আমার ধর্ম বিষয়ে অর্জিত ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানকে প্রসার এর জন্য সামাজিক মাধ্যম ফেবু ব্যাবহার করে যাচ্ছি।
ইতিমধ্যে নিরাকারবাদী আর্য সমাজ ছাড়াও সব থেকে বেশী বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি গৌড়ীয় মতবাদের অনুসারীদের কাছ থেকে। অধিকাংশ হিন্দুর ধারনা ভাগবত গীতা হল আমাদের শাস্ত্র আর একমাত্র গীতা যা একদম ভুল কথা। এই কথা বলার সাথে সাথে যে প্রশ্ন আসে তা হল "আপনি কিসের ভিত্তিতে এই কথা বলছেন? " স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেই সর্বমোট ৪২ ধরনের গীতা। যারা মুক্ত মনের এরা প্রমান চান আমি কিছু নির্ভরযগ্য ওয়েব এড্রেস এর নাম দিয়ে দেই। আর যারা গোঁয়ার গোবিন্দ এরা সব মিথ্যা মিথ্যা বলে বৃথা আশফালন করে নিজেদের গর্তে ঢুকে যায়। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম এই ৪২ গীতার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন দিয়ে একটি পোষ্ট দিবো। এরি পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই পোষ্ট।
সনাতন হিন্দু ধর্মের ৪২ গীতা
গীতা বলতে সাধারণত বুঝায় কোন ধর্মীয় আধাত্মিক জ্ঞান যা গীত তথা সুরারোপ করে গুরু শিষ্যকে প্রদান করে। বাস্তবিক জীবনে সম্মুখীন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পন্ডিত ব্যাক্তি বা স্রষ্টা স্বয়ং প্রকটিত হয়ে তাদের সমাধান দেন । এই সকল সমস্যার সমাধানের স্বরূপ হিসেবেই গীতার সৃষ্টি। বলা বাহুল্য ৪২ গীতার অধিকাংশ এসেছে হিন্দু ধর্মের ইতিহাস খ্যাত মহাভারত থেকে।
অনুগীতাঃ
অনুগীতার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বে ১৬তম অধ্যায়ে। মহাভারতের যুদ্ধের পর যুদ্ধিষ্ঠীরের রাজ্যাভিষেকের মুহূর্তে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় সংকলিত হয়েছে। এখানেই কৃষ্ণ বলেছিলেন যে ভাগবত গীতার পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বর তিনি নিজে নন।
অষ্টবক্রগীতাঃ
রাজা জনক ও অষ্টবক্রের মধ্যে আত্মা, বন্ধন, জীবনের পরম সত্য নিয়ে কথোপকথন হয়। এই গীতায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সন্ন্যাস জীবন ও সংসার ত্যাগ তথা বৈরাগ্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
অবধ্যত্ত্ব গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল অদ্বৈত বেদান্ত এবং এই গীতার প্রবক্তা হলেন মুনি দত্ত্বাত্রেয়। যাঁর জন্ম হয়েছিল এই পৃথিবীতে আত্ম অহমিকাহীন এবং হিংসার ঊর্ধ্বে।
ভগবদ্গীতাঃ
ইহা ৭০০ শ্লোক এর একটি গ্রন্থ যা মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫তম অধ্যায় থেকে ৪২ তম অধ্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডব যুবরাজ অর্জুনের রথের সারথি হয়ে অর্জুনকে নির্দেশনা প্রদান করছিলেন।
ভীক্ষু গীতাঃ
ইহা শ্রীমদভাগবদ পুরাণের ৫ম অধ্যায় ১২শ স্কন্দের অন্তর্গত যেখানে রাজা পরিক্ষীত ও শুক মুনির মধ্যকার কথোপকথন মধ্য দিয়ে বেদান্ত দর্শন, ব্রাহ্মন ও আত্মার ওপর স্ংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
বোদ্ধগীতাঃ
ইহা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে গৃহীত, যেখানে ঋষি বোদ্ধের সাথে রাজা যজাতির কথোপকথন হয়ে থাকে।
ব্রহ্মগীতাঃ
ইহা স্কন্দ পুরাণের থেকে গৃহীত যা সুত সংহিতার ৪র্থ অধ্যায়, যজ্ঞ বৈভব খন্ডের প্রথম ১২টি অধ্যায় থেকে নেয়া। তার অপর একটি সংস্করণ পরবর্তীতে নির্বাণ খন্ডের ১৭৩ থেকে ১৮১ মধ্যেও পাওয়া যায় যা “যোগ বশিষ্ঠ” নামে পরিচিত।
ব্রাহ্মণ গীতাঃ
যা অনুগীতার একটি অংশ।
দেবী গীতাঃ
দেবীগীতা দেবী ভাগবতমের অন্তর্গত সপ্তম খন্ডের অধ্যায় ৩১ থকে ৪০ থেকে চয়ন করা হয়েছে, যাঁর রচয়িতা হলেন মহামুনি ব্যাস।এই গীতায় বিবৃত হয়েছে দেবীর আবির্ভাব ও তাঁর প্রকৃতি সম্পর্কে তাছাড়াও দেবীকে ধ্যান, যোগসাধনা ও পূজার মাধ্যমে কিরূপ আরাধনা করা হয় তা বিবৃত হয়েছে। এই গীতার আবার ২ অংশ যথা গনেশ আর গোপিকা গীতা।
গণেশ গীতাঃ
ইহা গণেশ পুরাণের ১৩৮-১৪৮ অধ্যায়ের অন্তর্গত যা কৃৎখন্ড থেকে নেয়া। যা অনেকটাই ভাগবদ গীতার আদলে রচিত যেখানে শ্রীগণেশকে পরমাত্মার স্বরূপ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। রাজা বরেণ্যের সাথে গজাননরূপী শ্রীগণেশের কথোপকথন হয়ে থাকে।
গোপিকা গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয়বস্তু হল শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গোপীদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়। ইহা ভাগবদ পুরাণের অন্তর্গত যা রাজা জনমেজয়কে শুকদেব মুনি বলছিলেন।
গুরুগীতাঃ
মুনি ব্যাস দ্বারা রচিত এই গীতার শ্লোক সংখ্যা ৩৫২টি। এই গীতায় ভগবান শিবের কাছে দেবী পার্বতী গুরুতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা স্কন্ধ পুরাণের অন্তর্গত।
হংস গীতা/ উদ্ধব গীতাঃ
ইহা শ্রীমদ্ভাগবদ্পুরাণের ১১শ স্কন্দের ৪০ শ্লোক ৬ষ্ঠ খন্ড থেকে ২৯ খন্ডের মধ্যে প্রায় ১০০০ শ্লোকের সমন্বয়ে রচিত। যেখানে নশ্বর দেহ ত্যাগের পূর্বে শ্রীকৃষ্ণের সাথে উদ্ধবের কথোপকথন যোজন করা হয়েছে।
হনুমদ গীতাঃ
শ্রীরামচন্দ্রের রাজা হওয়ার পর সীতা দেবীর সহিত শ্রীহনুমানের কথোপকথন চয়িত হয়েছে হনুমদ গীতায়।
হরি গীতাঃ
ভাগবদ গীতাকে নারদ মুনি কর্তৃক এই নামকরণ করা হয়েছিল। শান্তিপর্ব, ৩৪৬তম অধ্যায়, ১০ম শ্লোক।
ঈশ্বর গীতাঃ
কুর্ম পুরানের উত্তর বিভাগের প্রথম ১১টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা। পরমেশ্বর ভগবান শিবের শিক্ষা ও উনাকে কিভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে আলচনা হয়েছে।বলা হয়ে থাকে ভাগবত গীতার শিক্ষা তো বটেই এছাড়াও এই গীতায় পাতঞ্জলির ৮টি যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। এই গীতায় ভগবান শিব নিজেকে বার বার পরমেশ্বর বলেছেন।
কপিলা গীতাঃ
ভাগবত পুরানের ৩ নম্বর স্কন্দের ২৩-৩৩ অধ্যায় নিয়ে এই গীতা গঠিত। সাধু কপিল তাঁর মা দেবাদুতির আধ্যাত্মিক ক্ষুদা নিবারনের জন্য এই গীতা আলচনা করেন।
মানকি গীতাঃ
মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে এই গীতা গঠিত।মানকি মুনি তাঁর ২ ষাঁড়কে নিয়ে ৫০টি প্যারার একটি গল্প এইখানে বলা হয়েছে। এর মূল বিষয় বস্তু হল লোভ, কামনাকে ত্যাগ আর সকল নিষ্পাপ প্রানীর জন্য ভালবাসা জাগানো।
পান্ডব বা প্রপন্ন গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল আত্মসমর্পন এর গান। মূলত পুরানিক বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ত্যের উক্তি নিয়ে এই গীতা উপদেশ দেয়। এই ব্যাক্তিদের মাঝে পঞ্চ পান্ডবও আছে।
পরাশর গীতাঃ
এই গীতাও মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। শান্তি পর্বের সবথেকে বড় গীতা বলা হয় এই গীতাকে। শান্তি পর্বের মোট ৯টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা আলোচনা করে থাকে। পরাশর মুনি ও তাঁর পিতা ব্যাস মুনির সাথে রাজা জনকের কথাবার্তা নিয়ে এই গীতার ভাস্য।
পিঙ্গলা গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে সংকলিত। এখানে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে পিঙ্গলা নামক এক পতিতার মোক্ষ লাভ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
রাম গীতাঃ
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণের অন্তর্গত আধাত্ম রামায়ণ যা উত্তর কাণ্ডের পঞ্চম স্বর্গ থেকে সংকলিত। এছাড়াও এই গীতার আরেকটি সংকলন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে পাওয়া যায়। এই সংকলন তত্ত্বস্মরণের গুরুজ্ঞ্যান বশিষ্ঠের অন্তর্গত। এই গীতায় তিনটি কাণ্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত যথা জ্ঞ্যানকাণ্ড, উপাসনাকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড। উপাসনা কাণ্ডের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের আঠারটি অধ্যায় নিয়ে রামগীতা গঠিত।
রমন্ গীতাঃ
এই গীতা মহর্ষি রমনে্র দ্বারা রচিত। এই গীতা উনার সবচেয়ে কাছের শীষ্যদের মধ্যে অন্যতম শ্রীগণপতি মুনি যিনি আরো শীষ্যদের সাহায্যে মোট ৩৭ খানা প্রশ্ন মহর্ষি রমনে্র সম্মুখে উত্থাপবন করেন। এই গীতা ভগবদগীতার শ্লোক সহ মোট ১৮টি অধ্যায় এবং ৩০০ মন্ত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত।
রিভু গীতাঃ
ইহা শিব রহস্য পুরাণের ষষ্ঠ খণ্ড থেকে নেয়া হয়েছে । মুনি রিভু এবং মুনি নিদঘ এর কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমিত্ব এবং ব্রহ্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যা দুই সহস্র পঙক্তি দিয়ে রচিত।
রুদ্র গীতাঃ
শ্রীমদ্ভাগবদ পুরাণের চতুর্থ স্কন্দের ২৪শ তম অধ্যায়ের ১৬-৭৯ শ্লোক এবং বরাহ পুরাণের ৭০-৭২ তম অধ্যায়কে রুদ্র গীতা বলে অবহিত করা হয়। পরমেশ্বর ভগবান শিব দ্বারা প্রচীতা(পবন দেব) যিনি তখনকার সময় দক্ষ ছিলেন তাঁকে বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এই গীতার মন্ত্রগুলোর মধ্যে শ্রীবিষ্ণুর বিভিন্ন প্রশংসা করা হয়েছে। এখানে পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণুর উপাসনা এবং শ্রীবিষ্ণুর দ্বার মোক্ষ প্রদান করার বিভিন্ন ধরনের উপাসনা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন । তাছাড়া এই গীতাতে আত্মোপলব্ধি এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শিক্ষা ও দর্শন সম্পর্কে বলা আছে।
সম্পক গীতাঃ
মহাভারতের শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে এই গীতার উৎপত্তি। এই গীতা ২১টি মন্ত্র দ্বারা তৈরী যা সম্পক একজন সৎ বাহ্মণের দ্বারা উপেদেশাবলি হিসেবে পেয়েছিলেন। এসকল উপদেশের মূল উদ্দেশ্য হল একজন মানুষ কিভাবে তার আমিত্ব ত্যাগ করে সমর্পণের মাধ্যমে সচ্চিদাননন্দে লীন হতে পারেন।
শিব গীতাঃ
পদ্মপুরাণের পাতাল কান্ডের ১৬ টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা রচিত। শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা দেবিকে যখন লঙ্কাধিপতি রাবণ হরণ করেন, তখন ঋষি অগ্যস্ত রামচন্দ্রকে মহাদেবের আরাধনা করার উপদেশ প্রদান করেন। পরমেশ্বর শিব তখন শ্রীরামচন্দ্রের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব গীতার মাধ্যমে জ্ঞ্যান প্রদান করেন। শৈবদের মাঝে এই গীতার উপযোগীতা অপরিসীম।শ্রীরামচন্দ্রই সর্বপ্রথম বিষ্ণুর অবতার যিনি প্রভু পরমেশ্বরের বিশ্বরূপের দর্শন পান। শিব উনার বিশ্বরূপ প্রদর্শনের মাধ্যমে মানব ভ্রূণ মনুষ্যজন্মরহস্য, কর্ম, শরণাগতি ইত্যাদি বহু বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে শ্রীরামচন্দ্রকে সমৃদ্ধ করেন।
শ্রুতি গীতাঃ
শ্রীমদভাগবদপুরাণের ১০ম স্কন্দের ৮৭ নং অধ্যায়কে শ্রুতিগীতা নামে অবহিত করা হয়। রাজা পরিক্ষীত শুকদেবের কাছে ব্রাহ্মণের অনাচার এবং ঈশ্বরাচার এই দুইয়ের সম্পর্কে উপদেশাবলি সংকলতিত হয়েছে।
সূর্য গীতাঃ
গুরজ্ঞ্যান বশিষ্ঠ যা তত্ত্ব স্মরণের অন্তর্গত সেখানে সূর্যগীতার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। ইহা তিনটি খন্ডে বিভক্ত যথা জ্ঞ্যান কান্ড, উপাসনাকান্ড ও কর্মকান্ড। অদ্বৈত বশিষ্ঠের তৃতীয় পঙক্তির প্রথম পাঁচ অধ্যায় সূর্য গীতা দিয়ে শুরু।
সূত গীতাঃ
ইহা মূলত স্কন্দ পুরানের ১৩শ অধ্যায়ের ২০তম যজ্ঞবৈভব খণ্ডের অন্তর্গত। ইহা প্রবলভাবে অদ্বৈতবাদের পক্ষে এবং মনোথিজম অর্থাৎ দ্বৈত সত্তার মাধ্যমে অদ্বৈতবাদের খোঁজ এর পক্ষে সমর্থন প্রদান করে। মূলত নিরাকার অদ্বৈত ব্রহ্মকে জানাই এই গীতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।অদ্বৈতবাদের ব্যাপারে এই গীতা মূলত ভগবদগীতা থেকে অনেকাংশে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট নিয়ম মেনে চলে। মহর্ষি সুত অদ্বৈতবাদের ধারণা এবং ঈশ্বরের দর্শন মার্গের ধারণা পান পরমেশ্বর ভগবান শিবের কাছ থেকে।
স্বামী নারায়ণ গীতা বা যোগী গীতাঃ
মূলত এটি বৈষ্ণবদের একটি গীতা। শ্রী যোগীমহারাজ ভগবান শ্রীস্বামী নারায়ণ এর দর্শন লাভ করেন। এবং, উনার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞ্যান, যেমনঃ কিভাবে মানব জীবনে আধাত্মিক সফলতা পাওয়া যায়, এর জন্য একজন ভক্তকে কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়, কি কি গুণ এবং কি কি প্রার্থনার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। মূলত দাক্ষিণাত্যে বৈষ্ণবদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় গীতা হল এই স্বামী নারায়ণ গীতা।
উত্তর গীতাঃ
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর অর্জুন যখন বয়সের ভারে নিমজ্জিত এবং রাজ্যসুখ জগতের মায়া দ্বারা প্রবলভাবে বেষ্টিত তখন অর্জুন এসব থেকে মুক্তি পেতে শ্রীকৃষ্ণের কাছে যান। শ্রীকৃষ্ণকে তিনি ব্রাহ্মণের জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ শ্রীকৃষ্ণের কাছে উত্থাপন করেন। শ্রীকৃষ্ণের উনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এবং অর্জুনের সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। উত্তর গীতা তিনটি অধ্যায় দ্বারা পরিপূর্ণ। এটি মহাভারতের উত্তরকাণ্ডে সংকলিত রয়েছে।
বল্লভ গীতাঃ
বল্লভ গীতাকে সদাসা গ্রন্থ হিসেবেও জানা যায়। শ্রীবল্লভ উনার শিষ্যদের জীবনের উদ্দেশ্য ও মুক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।এটি শ্রীবল্লভের ১৬টি কর্ম এবং প্রতিটি কর্মের মূল বিষয়ের উপরে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।
বশিষ্ঠ গীতা বা যোগী বশিষ্ঠ গীতাঃ
রাজপুত্র রামচন্দ্রকে বিষন্ন অবস্থায় দেখে ঋষি বশিষ্ঠদেব বিশদভাবে অদ্বৈত বেদান্ত এবং অদ্বৈতবাদ সম্পর্কে আলোকপাত করেন যা ৩২,০০০ সংখ্যক শ্লোকের সমন্বয়ে সংকলিত হয়েছে।
বিভীষণ গীতাঃ
এই গীতা রামায়ণ থেকে সংকলিত। রাজা শ্রীরামচন্দ্র বিভীষণকে ভক্তি, বিশ্বাস সৎকার্যের লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞ্যান দান করেন।
বিচক্ষু গীতাঃ
এই গীতা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে নেয়া হয়েছে। রাজা বিচক্ষু একটি যজ্ঞে উপস্থিত হন যেখানে প্রাণী আহুতি দেয়া হয়। তিনি সেখানে অহিংসার প্রতি আলোচনা করেন যা এগারোটি শ্লোক এর মাধ্যমে সংকলিত। পিতামহ ভীষ্ম রাজা যুধিষ্ঠিরকে এই জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
বিদুর গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। বিদুর এবং সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখানে বিদুর সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রকে রাজনীতির জ্ঞ্যান এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মূল্য ,ন্যায় এবং সত্যবাদীতা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করেন।
বৃত্র গীতাঃ
ইহাও মহাভারত থেকে গৃহীত। মোক্ষ পর্বের শান্তি পর্ব থেকে ইহা চয়িত। এই গীতায় মূল কথোপকথন হয় ভয়ঙ্কর দানব বৃত্রাসুর এবং দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের মধ্যে হয়ে থাকে যা দুই অধ্যায়ে ব্যাপ্ত।
ব্যাধ গীতাঃ
মহাভারতের বন পর্বের অন্তর্গত। এই গীতায় এক মাংস বিক্রেতা এক সাধুকে জ্ঞ্যান প্রাদান করেন যিনি সম্রাট যুধিষ্টিরের সঙ্গে পরিচিত হন মার্কণ্ডেয় মুনির দ্বারা।সেই সাধারণ মাংস বিক্রেতা অহঙ্কারী সাধুকে নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
ব্যাস গীতাঃ
এটি কূর্ম পুরাণের দ্বাদশ অধ্যায় থেকে শুরু করে উত্তর বিভাগ পর্যন্ত ব্যাস গীতার অন্তর্গত। এখানে ব্যাস মুনি আত্ম জ্ঞ্যান অর্জনের সর্বোচ্চ মার্গ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেছেন। এখানে একতার বিশ্বাস এবং অদ্বৈতবাদ দর্শনের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
যম গীতাঃ
ভজসর্বার ছেলে শ্রী নচিকেতার সাথে ধর্মরাজ যমের ধর্মবিষয়ে কথোপকথনকে যম গীতা হিসেবে জানা যায়। পিতৃ আদেশ পালনে যমের দ্বারে উপস্থিত হয় ও নিজ ধর্ম জ্ঞ্যান এবং প্রজ্ঞা দ্বারা যমকে তুষ্ট করেন এবং ধর্মরাজকে ধর্মজ্ঞ্যান দিতে বাধ্য করেন। যম গীতার সারাংশ তিনটি জায়গায় পাওয়া যায়। ১) বিষ্ণু পুরাণের ৩য় খন্ড ৭ম অধ্যায় পর্যন্ত ২) অগ্নি পুরাণের ৩য় খণ্ড অধ্যায় ৩৮১ এবং ৩) নৃসিংহ পুরাণের ৮ম অধ্যায়সমূহে।