ভদ্রবেশে হিন্দু এবং ভিন দেশী কৃষ্ণ ভক্ত মেয়েদের দিয়ে সুকৌশলে বিয়ে নামক প্রতারণায় আমেরিকা এবং বিদেশী পুরুষদের হাতে তুলে দিয়ে দেহব্যবসা করাই এই সংগঠনের গোপন রহস্য, তা না হলে ভারত থেকে যে এরা প্রতি বছর ৩০.০০০ মেয়ে আমেরিকা , আফ্রিকা , সহ বাইরের দেশে নিয়ে যায় সে সব মেয়েদের হদিস কই? বিষয়টি কি একবার কেউ একবার ভেবে দেখেছেন?, ভেবে দেখেছন কি হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের বিয়ে করার কথা বলে কিছু আমেরিকান খ্রীষ্টান , জয়পতাকার ইসকন মন্দিরে এসে লোক দেখানো কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে, দীক্ষা নিয়ে দু এক সপ্তাহ টাপার- টুপুর করে কৃষ্ণ নাম জপে , কেউ হিন্দু সন্যাসীকে নিয়ে ভাগিয়ে যায়, কেউ আবার সরাসরি বিয়ে করে নেয়, কৃষ্ণ ভক্ত হওয়ার অধিকারে তা কি কেউ একবার ভেবে দেখেছেন? বিদেশী লোকদের হঠাৎ করে কৃষ্ণ মন্দিরে এসে দীক্ষা নেওয়ার কারণ কি? এর মূল কারণ হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের পার্ট টাইম যৌন ভোগের সুবিধা করে দেওয়া, ইসকন আমেরিকায় সেই কাজটি সুকৌশলে করে চলছে, আমেরিকানদের সুবিধার্থে! প্রভুপাদের সময়ে এই সব ভন্ড আমেরিকানরা এই সব কু কর্ম করতে পারেনি, জয় পতাকার আমল থেকে সন্যাসীদের মধ্যে সংসার কিংবা আশ্রমে থেকে যৌনজীবন, কিংবা আশ্রমের বাইরে মেয়েদের বিয়ে করার অনুমতি দেয়, বিদেশীরা সেই নিয়মে দু এক সপ্তাহের জন্য দীক্ষা নিয়ে সেই আশ্রমে থাকা হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের বিয়ে করে নিয়ে চম্পট দেয়, পরে হিন্দু হিন্দু সন্যাসী মেয়ে ঠিকই দেখে লোক দেখানো কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে যে বিদেশি তারে নিয়ে গেলো সে ঠিকই একজন খ্রীষ্টান, এবং মেয়েটি একজন তার গৃহ যৌন কর্মী! এই অবৈধ ব্যবসার জোরে বাইরের দেশ গুলোতে ইসকন সন্যাসীদের মধ্যে কৃষ্ণ শিশু তৈরীর মাধ্যমে চলছে অলিখিত দেহব্যবসা! সে জন্য বিদেশিদেরও বেশী ভীড় সেখানে লক্ষ্য করা যায়! এর থেকে এটাই বুঝা যায়, কৃষ্ণ নাম জপ করার জন্য বিদেশীরা আশ্রমে কিংবা কৃষ্ণ মন্দিরে ঘুরে না, কৃষ্ণ হিন্দু মেয়েদের যৌনদাসী কিংবা ভোগ করার লালসায় এই সব ভিনদেশী নকল কৃষ্ণ ভক্তরা ঘুরে আশ্রমের দ্বারে দ্বারে?
Friday, December 22, 2017
কৃষ্ণের ভেতরে আসল কৃষ্ণ
ভদ্রবেশে হিন্দু এবং ভিন দেশী কৃষ্ণ ভক্ত মেয়েদের দিয়ে সুকৌশলে বিয়ে নামক প্রতারণায় আমেরিকা এবং বিদেশী পুরুষদের হাতে তুলে দিয়ে দেহব্যবসা করাই এই সংগঠনের গোপন রহস্য, তা না হলে ভারত থেকে যে এরা প্রতি বছর ৩০.০০০ মেয়ে আমেরিকা , আফ্রিকা , সহ বাইরের দেশে নিয়ে যায় সে সব মেয়েদের হদিস কই? বিষয়টি কি একবার কেউ একবার ভেবে দেখেছেন?, ভেবে দেখেছন কি হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের বিয়ে করার কথা বলে কিছু আমেরিকান খ্রীষ্টান , জয়পতাকার ইসকন মন্দিরে এসে লোক দেখানো কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে, দীক্ষা নিয়ে দু এক সপ্তাহ টাপার- টুপুর করে কৃষ্ণ নাম জপে , কেউ হিন্দু সন্যাসীকে নিয়ে ভাগিয়ে যায়, কেউ আবার সরাসরি বিয়ে করে নেয়, কৃষ্ণ ভক্ত হওয়ার অধিকারে তা কি কেউ একবার ভেবে দেখেছেন? বিদেশী লোকদের হঠাৎ করে কৃষ্ণ মন্দিরে এসে দীক্ষা নেওয়ার কারণ কি? এর মূল কারণ হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের পার্ট টাইম যৌন ভোগের সুবিধা করে দেওয়া, ইসকন আমেরিকায় সেই কাজটি সুকৌশলে করে চলছে, আমেরিকানদের সুবিধার্থে! প্রভুপাদের সময়ে এই সব ভন্ড আমেরিকানরা এই সব কু কর্ম করতে পারেনি, জয় পতাকার আমল থেকে সন্যাসীদের মধ্যে সংসার কিংবা আশ্রমে থেকে যৌনজীবন, কিংবা আশ্রমের বাইরে মেয়েদের বিয়ে করার অনুমতি দেয়, বিদেশীরা সেই নিয়মে দু এক সপ্তাহের জন্য দীক্ষা নিয়ে সেই আশ্রমে থাকা হিন্দু সন্যাসী মেয়েদের বিয়ে করে নিয়ে চম্পট দেয়, পরে হিন্দু হিন্দু সন্যাসী মেয়ে ঠিকই দেখে লোক দেখানো কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে যে বিদেশি তারে নিয়ে গেলো সে ঠিকই একজন খ্রীষ্টান, এবং মেয়েটি একজন তার গৃহ যৌন কর্মী! এই অবৈধ ব্যবসার জোরে বাইরের দেশ গুলোতে ইসকন সন্যাসীদের মধ্যে কৃষ্ণ শিশু তৈরীর মাধ্যমে চলছে অলিখিত দেহব্যবসা! সে জন্য বিদেশিদেরও বেশী ভীড় সেখানে লক্ষ্য করা যায়! এর থেকে এটাই বুঝা যায়, কৃষ্ণ নাম জপ করার জন্য বিদেশীরা আশ্রমে কিংবা কৃষ্ণ মন্দিরে ঘুরে না, কৃষ্ণ হিন্দু মেয়েদের যৌনদাসী কিংবা ভোগ করার লালসায় এই সব ভিনদেশী নকল কৃষ্ণ ভক্তরা ঘুরে আশ্রমের দ্বারে দ্বারে?
Saturday, December 16, 2017
সনাতন হিন্দু ধর্মের ৪২ গীতা
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে প্রকাশিত আমার ফেবু অয়াল থেকে পোষ্ট করলাম।
গত ৩ বছর যাবত আমি আমার ধর্ম বিষয়ে অর্জিত ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানকে প্রসার এর জন্য সামাজিক মাধ্যম ফেবু ব্যাবহার করে যাচ্ছি।
ইতিমধ্যে নিরাকারবাদী আর্য সমাজ ছাড়াও সব থেকে বেশী বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি গৌড়ীয় মতবাদের অনুসারীদের কাছ থেকে। অধিকাংশ হিন্দুর ধারনা ভাগবত গীতা হল আমাদের শাস্ত্র আর একমাত্র গীতা যা একদম ভুল কথা। এই কথা বলার সাথে সাথে যে প্রশ্ন আসে তা হল "আপনি কিসের ভিত্তিতে এই কথা বলছেন? " স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেই সর্বমোট ৪২ ধরনের গীতা। যারা মুক্ত মনের এরা প্রমান চান আমি কিছু নির্ভরযগ্য ওয়েব এড্রেস এর নাম দিয়ে দেই। আর যারা গোঁয়ার গোবিন্দ এরা সব মিথ্যা মিথ্যা বলে বৃথা আশফালন করে নিজেদের গর্তে ঢুকে যায়। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম এই ৪২ গীতার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন দিয়ে একটি পোষ্ট দিবো। এরি পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই পোষ্ট।
সনাতন হিন্দু ধর্মের ৪২ গীতা
গীতা বলতে সাধারণত বুঝায় কোন ধর্মীয় আধাত্মিক জ্ঞান যা গীত তথা সুরারোপ করে গুরু শিষ্যকে প্রদান করে। বাস্তবিক জীবনে সম্মুখীন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পন্ডিত ব্যাক্তি বা স্রষ্টা স্বয়ং প্রকটিত হয়ে তাদের সমাধান দেন । এই সকল সমস্যার সমাধানের স্বরূপ হিসেবেই গীতার সৃষ্টি। বলা বাহুল্য ৪২ গীতার অধিকাংশ এসেছে হিন্দু ধর্মের ইতিহাস খ্যাত মহাভারত থেকে।
অনুগীতাঃ
অনুগীতার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বে ১৬তম অধ্যায়ে। মহাভারতের যুদ্ধের পর যুদ্ধিষ্ঠীরের রাজ্যাভিষেকের মুহূর্তে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় সংকলিত হয়েছে। এখানেই কৃষ্ণ বলেছিলেন যে ভাগবত গীতার পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বর তিনি নিজে নন।
অষ্টবক্রগীতাঃ
রাজা জনক ও অষ্টবক্রের মধ্যে আত্মা, বন্ধন, জীবনের পরম সত্য নিয়ে কথোপকথন হয়। এই গীতায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সন্ন্যাস জীবন ও সংসার ত্যাগ তথা বৈরাগ্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
অবধ্যত্ত্ব গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল অদ্বৈত বেদান্ত এবং এই গীতার প্রবক্তা হলেন মুনি দত্ত্বাত্রেয়। যাঁর জন্ম হয়েছিল এই পৃথিবীতে আত্ম অহমিকাহীন এবং হিংসার ঊর্ধ্বে।
ভগবদ্গীতাঃ
ইহা ৭০০ শ্লোক এর একটি গ্রন্থ যা মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫তম অধ্যায় থেকে ৪২ তম অধ্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডব যুবরাজ অর্জুনের রথের সারথি হয়ে অর্জুনকে নির্দেশনা প্রদান করছিলেন।
ভীক্ষু গীতাঃ
ইহা শ্রীমদভাগবদ পুরাণের ৫ম অধ্যায় ১২শ স্কন্দের অন্তর্গত যেখানে রাজা পরিক্ষীত ও শুক মুনির মধ্যকার কথোপকথন মধ্য দিয়ে বেদান্ত দর্শন, ব্রাহ্মন ও আত্মার ওপর স্ংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
বোদ্ধগীতাঃ
ইহা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে গৃহীত, যেখানে ঋষি বোদ্ধের সাথে রাজা যজাতির কথোপকথন হয়ে থাকে।
ব্রহ্মগীতাঃ
ইহা স্কন্দ পুরাণের থেকে গৃহীত যা সুত সংহিতার ৪র্থ অধ্যায়, যজ্ঞ বৈভব খন্ডের প্রথম ১২টি অধ্যায় থেকে নেয়া। তার অপর একটি সংস্করণ পরবর্তীতে নির্বাণ খন্ডের ১৭৩ থেকে ১৮১ মধ্যেও পাওয়া যায় যা “যোগ বশিষ্ঠ” নামে পরিচিত।
ব্রাহ্মণ গীতাঃ
যা অনুগীতার একটি অংশ।
দেবী গীতাঃ
দেবীগীতা দেবী ভাগবতমের অন্তর্গত সপ্তম খন্ডের অধ্যায় ৩১ থকে ৪০ থেকে চয়ন করা হয়েছে, যাঁর রচয়িতা হলেন মহামুনি ব্যাস।এই গীতায় বিবৃত হয়েছে দেবীর আবির্ভাব ও তাঁর প্রকৃতি সম্পর্কে তাছাড়াও দেবীকে ধ্যান, যোগসাধনা ও পূজার মাধ্যমে কিরূপ আরাধনা করা হয় তা বিবৃত হয়েছে। এই গীতার আবার ২ অংশ যথা গনেশ আর গোপিকা গীতা।
গণেশ গীতাঃ
ইহা গণেশ পুরাণের ১৩৮-১৪৮ অধ্যায়ের অন্তর্গত যা কৃৎখন্ড থেকে নেয়া। যা অনেকটাই ভাগবদ গীতার আদলে রচিত যেখানে শ্রীগণেশকে পরমাত্মার স্বরূপ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। রাজা বরেণ্যের সাথে গজাননরূপী শ্রীগণেশের কথোপকথন হয়ে থাকে।
গোপিকা গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয়বস্তু হল শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গোপীদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়। ইহা ভাগবদ পুরাণের অন্তর্গত যা রাজা জনমেজয়কে শুকদেব মুনি বলছিলেন।
গুরুগীতাঃ
মুনি ব্যাস দ্বারা রচিত এই গীতার শ্লোক সংখ্যা ৩৫২টি। এই গীতায় ভগবান শিবের কাছে দেবী পার্বতী গুরুতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা স্কন্ধ পুরাণের অন্তর্গত।
হংস গীতা/ উদ্ধব গীতাঃ
ইহা শ্রীমদ্ভাগবদ্পুরাণের ১১শ স্কন্দের ৪০ শ্লোক ৬ষ্ঠ খন্ড থেকে ২৯ খন্ডের মধ্যে প্রায় ১০০০ শ্লোকের সমন্বয়ে রচিত। যেখানে নশ্বর দেহ ত্যাগের পূর্বে শ্রীকৃষ্ণের সাথে উদ্ধবের কথোপকথন যোজন করা হয়েছে।
হনুমদ গীতাঃ
শ্রীরামচন্দ্রের রাজা হওয়ার পর সীতা দেবীর সহিত শ্রীহনুমানের কথোপকথন চয়িত হয়েছে হনুমদ গীতায়।
হরি গীতাঃ
ভাগবদ গীতাকে নারদ মুনি কর্তৃক এই নামকরণ করা হয়েছিল। শান্তিপর্ব, ৩৪৬তম অধ্যায়, ১০ম শ্লোক।
ঈশ্বর গীতাঃ
কুর্ম পুরানের উত্তর বিভাগের প্রথম ১১টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা। পরমেশ্বর ভগবান শিবের শিক্ষা ও উনাকে কিভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে আলচনা হয়েছে।বলা হয়ে থাকে ভাগবত গীতার শিক্ষা তো বটেই এছাড়াও এই গীতায় পাতঞ্জলির ৮টি যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। এই গীতায় ভগবান শিব নিজেকে বার বার পরমেশ্বর বলেছেন।
কপিলা গীতাঃ
ভাগবত পুরানের ৩ নম্বর স্কন্দের ২৩-৩৩ অধ্যায় নিয়ে এই গীতা গঠিত। সাধু কপিল তাঁর মা দেবাদুতির আধ্যাত্মিক ক্ষুদা নিবারনের জন্য এই গীতা আলচনা করেন।
মানকি গীতাঃ
মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে এই গীতা গঠিত।মানকি মুনি তাঁর ২ ষাঁড়কে নিয়ে ৫০টি প্যারার একটি গল্প এইখানে বলা হয়েছে। এর মূল বিষয় বস্তু হল লোভ, কামনাকে ত্যাগ আর সকল নিষ্পাপ প্রানীর জন্য ভালবাসা জাগানো।
পান্ডব বা প্রপন্ন গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল আত্মসমর্পন এর গান। মূলত পুরানিক বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ত্যের উক্তি নিয়ে এই গীতা উপদেশ দেয়। এই ব্যাক্তিদের মাঝে পঞ্চ পান্ডবও আছে।
পরাশর গীতাঃ
এই গীতাও মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। শান্তি পর্বের সবথেকে বড় গীতা বলা হয় এই গীতাকে। শান্তি পর্বের মোট ৯টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা আলোচনা করে থাকে। পরাশর মুনি ও তাঁর পিতা ব্যাস মুনির সাথে রাজা জনকের কথাবার্তা নিয়ে এই গীতার ভাস্য।
পিঙ্গলা গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে সংকলিত। এখানে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে পিঙ্গলা নামক এক পতিতার মোক্ষ লাভ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
রাম গীতাঃ
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণের অন্তর্গত আধাত্ম রামায়ণ যা উত্তর কাণ্ডের পঞ্চম স্বর্গ থেকে সংকলিত। এছাড়াও এই গীতার আরেকটি সংকলন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে পাওয়া যায়। এই সংকলন তত্ত্বস্মরণের গুরুজ্ঞ্যান বশিষ্ঠের অন্তর্গত। এই গীতায় তিনটি কাণ্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত যথা জ্ঞ্যানকাণ্ড, উপাসনাকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড। উপাসনা কাণ্ডের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের আঠারটি অধ্যায় নিয়ে রামগীতা গঠিত।
রমন্ গীতাঃ
এই গীতা মহর্ষি রমনে্র দ্বারা রচিত। এই গীতা উনার সবচেয়ে কাছের শীষ্যদের মধ্যে অন্যতম শ্রীগণপতি মুনি যিনি আরো শীষ্যদের সাহায্যে মোট ৩৭ খানা প্রশ্ন মহর্ষি রমনে্র সম্মুখে উত্থাপবন করেন। এই গীতা ভগবদগীতার শ্লোক সহ মোট ১৮টি অধ্যায় এবং ৩০০ মন্ত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত।
রিভু গীতাঃ
ইহা শিব রহস্য পুরাণের ষষ্ঠ খণ্ড থেকে নেয়া হয়েছে । মুনি রিভু এবং মুনি নিদঘ এর কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমিত্ব এবং ব্রহ্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যা দুই সহস্র পঙক্তি দিয়ে রচিত।
রুদ্র গীতাঃ
শ্রীমদ্ভাগবদ পুরাণের চতুর্থ স্কন্দের ২৪শ তম অধ্যায়ের ১৬-৭৯ শ্লোক এবং বরাহ পুরাণের ৭০-৭২ তম অধ্যায়কে রুদ্র গীতা বলে অবহিত করা হয়। পরমেশ্বর ভগবান শিব দ্বারা প্রচীতা(পবন দেব) যিনি তখনকার সময় দক্ষ ছিলেন তাঁকে বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এই গীতার মন্ত্রগুলোর মধ্যে শ্রীবিষ্ণুর বিভিন্ন প্রশংসা করা হয়েছে। এখানে পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণুর উপাসনা এবং শ্রীবিষ্ণুর দ্বার মোক্ষ প্রদান করার বিভিন্ন ধরনের উপাসনা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন । তাছাড়া এই গীতাতে আত্মোপলব্ধি এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শিক্ষা ও দর্শন সম্পর্কে বলা আছে।
সম্পক গীতাঃ
মহাভারতের শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে এই গীতার উৎপত্তি। এই গীতা ২১টি মন্ত্র দ্বারা তৈরী যা সম্পক একজন সৎ বাহ্মণের দ্বারা উপেদেশাবলি হিসেবে পেয়েছিলেন। এসকল উপদেশের মূল উদ্দেশ্য হল একজন মানুষ কিভাবে তার আমিত্ব ত্যাগ করে সমর্পণের মাধ্যমে সচ্চিদাননন্দে লীন হতে পারেন।
শিব গীতাঃ
পদ্মপুরাণের পাতাল কান্ডের ১৬ টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা রচিত। শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা দেবিকে যখন লঙ্কাধিপতি রাবণ হরণ করেন, তখন ঋষি অগ্যস্ত রামচন্দ্রকে মহাদেবের আরাধনা করার উপদেশ প্রদান করেন। পরমেশ্বর শিব তখন শ্রীরামচন্দ্রের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব গীতার মাধ্যমে জ্ঞ্যান প্রদান করেন। শৈবদের মাঝে এই গীতার উপযোগীতা অপরিসীম।শ্রীরামচন্দ্রই সর্বপ্রথম বিষ্ণুর অবতার যিনি প্রভু পরমেশ্বরের বিশ্বরূপের দর্শন পান। শিব উনার বিশ্বরূপ প্রদর্শনের মাধ্যমে মানব ভ্রূণ মনুষ্যজন্মরহস্য, কর্ম, শরণাগতি ইত্যাদি বহু বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে শ্রীরামচন্দ্রকে সমৃদ্ধ করেন।
শ্রুতি গীতাঃ
শ্রীমদভাগবদপুরাণের ১০ম স্কন্দের ৮৭ নং অধ্যায়কে শ্রুতিগীতা নামে অবহিত করা হয়। রাজা পরিক্ষীত শুকদেবের কাছে ব্রাহ্মণের অনাচার এবং ঈশ্বরাচার এই দুইয়ের সম্পর্কে উপদেশাবলি সংকলতিত হয়েছে।
সূর্য গীতাঃ
গুরজ্ঞ্যান বশিষ্ঠ যা তত্ত্ব স্মরণের অন্তর্গত সেখানে সূর্যগীতার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। ইহা তিনটি খন্ডে বিভক্ত যথা জ্ঞ্যান কান্ড, উপাসনাকান্ড ও কর্মকান্ড। অদ্বৈত বশিষ্ঠের তৃতীয় পঙক্তির প্রথম পাঁচ অধ্যায় সূর্য গীতা দিয়ে শুরু।
সূত গীতাঃ
ইহা মূলত স্কন্দ পুরানের ১৩শ অধ্যায়ের ২০তম যজ্ঞবৈভব খণ্ডের অন্তর্গত। ইহা প্রবলভাবে অদ্বৈতবাদের পক্ষে এবং মনোথিজম অর্থাৎ দ্বৈত সত্তার মাধ্যমে অদ্বৈতবাদের খোঁজ এর পক্ষে সমর্থন প্রদান করে। মূলত নিরাকার অদ্বৈত ব্রহ্মকে জানাই এই গীতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।অদ্বৈতবাদের ব্যাপারে এই গীতা মূলত ভগবদগীতা থেকে অনেকাংশে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট নিয়ম মেনে চলে। মহর্ষি সুত অদ্বৈতবাদের ধারণা এবং ঈশ্বরের দর্শন মার্গের ধারণা পান পরমেশ্বর ভগবান শিবের কাছ থেকে।
স্বামী নারায়ণ গীতা বা যোগী গীতাঃ
মূলত এটি বৈষ্ণবদের একটি গীতা। শ্রী যোগীমহারাজ ভগবান শ্রীস্বামী নারায়ণ এর দর্শন লাভ করেন। এবং, উনার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞ্যান, যেমনঃ কিভাবে মানব জীবনে আধাত্মিক সফলতা পাওয়া যায়, এর জন্য একজন ভক্তকে কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়, কি কি গুণ এবং কি কি প্রার্থনার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। মূলত দাক্ষিণাত্যে বৈষ্ণবদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় গীতা হল এই স্বামী নারায়ণ গীতা।
উত্তর গীতাঃ
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর অর্জুন যখন বয়সের ভারে নিমজ্জিত এবং রাজ্যসুখ জগতের মায়া দ্বারা প্রবলভাবে বেষ্টিত তখন অর্জুন এসব থেকে মুক্তি পেতে শ্রীকৃষ্ণের কাছে যান। শ্রীকৃষ্ণকে তিনি ব্রাহ্মণের জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ শ্রীকৃষ্ণের কাছে উত্থাপন করেন। শ্রীকৃষ্ণের উনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এবং অর্জুনের সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। উত্তর গীতা তিনটি অধ্যায় দ্বারা পরিপূর্ণ। এটি মহাভারতের উত্তরকাণ্ডে সংকলিত রয়েছে।
বল্লভ গীতাঃ
বল্লভ গীতাকে সদাসা গ্রন্থ হিসেবেও জানা যায়। শ্রীবল্লভ উনার শিষ্যদের জীবনের উদ্দেশ্য ও মুক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।এটি শ্রীবল্লভের ১৬টি কর্ম এবং প্রতিটি কর্মের মূল বিষয়ের উপরে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।
বশিষ্ঠ গীতা বা যোগী বশিষ্ঠ গীতাঃ
রাজপুত্র রামচন্দ্রকে বিষন্ন অবস্থায় দেখে ঋষি বশিষ্ঠদেব বিশদভাবে অদ্বৈত বেদান্ত এবং অদ্বৈতবাদ সম্পর্কে আলোকপাত করেন যা ৩২,০০০ সংখ্যক শ্লোকের সমন্বয়ে সংকলিত হয়েছে।
বিভীষণ গীতাঃ
এই গীতা রামায়ণ থেকে সংকলিত। রাজা শ্রীরামচন্দ্র বিভীষণকে ভক্তি, বিশ্বাস সৎকার্যের লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞ্যান দান করেন।
বিচক্ষু গীতাঃ
এই গীতা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে নেয়া হয়েছে। রাজা বিচক্ষু একটি যজ্ঞে উপস্থিত হন যেখানে প্রাণী আহুতি দেয়া হয়। তিনি সেখানে অহিংসার প্রতি আলোচনা করেন যা এগারোটি শ্লোক এর মাধ্যমে সংকলিত। পিতামহ ভীষ্ম রাজা যুধিষ্ঠিরকে এই জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
বিদুর গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। বিদুর এবং সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখানে বিদুর সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রকে রাজনীতির জ্ঞ্যান এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মূল্য ,ন্যায় এবং সত্যবাদীতা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করেন।
বৃত্র গীতাঃ
ইহাও মহাভারত থেকে গৃহীত। মোক্ষ পর্বের শান্তি পর্ব থেকে ইহা চয়িত। এই গীতায় মূল কথোপকথন হয় ভয়ঙ্কর দানব বৃত্রাসুর এবং দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের মধ্যে হয়ে থাকে যা দুই অধ্যায়ে ব্যাপ্ত।
ব্যাধ গীতাঃ
মহাভারতের বন পর্বের অন্তর্গত। এই গীতায় এক মাংস বিক্রেতা এক সাধুকে জ্ঞ্যান প্রাদান করেন যিনি সম্রাট যুধিষ্টিরের সঙ্গে পরিচিত হন মার্কণ্ডেয় মুনির দ্বারা।সেই সাধারণ মাংস বিক্রেতা অহঙ্কারী সাধুকে নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
ব্যাস গীতাঃ
এটি কূর্ম পুরাণের দ্বাদশ অধ্যায় থেকে শুরু করে উত্তর বিভাগ পর্যন্ত ব্যাস গীতার অন্তর্গত। এখানে ব্যাস মুনি আত্ম জ্ঞ্যান অর্জনের সর্বোচ্চ মার্গ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেছেন। এখানে একতার বিশ্বাস এবং অদ্বৈতবাদ দর্শনের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
যম গীতাঃ
ভজসর্বার ছেলে শ্রী নচিকেতার সাথে ধর্মরাজ যমের ধর্মবিষয়ে কথোপকথনকে যম গীতা হিসেবে জানা যায়। পিতৃ আদেশ পালনে যমের দ্বারে উপস্থিত হয় ও নিজ ধর্ম জ্ঞ্যান এবং প্রজ্ঞা দ্বারা যমকে তুষ্ট করেন এবং ধর্মরাজকে ধর্মজ্ঞ্যান দিতে বাধ্য করেন। যম গীতার সারাংশ তিনটি জায়গায় পাওয়া যায়। ১) বিষ্ণু পুরাণের ৩য় খন্ড ৭ম অধ্যায় পর্যন্ত ২) অগ্নি পুরাণের ৩য় খণ্ড অধ্যায় ৩৮১ এবং ৩) নৃসিংহ পুরাণের ৮ম অধ্যায়সমূহে।
গত ৩ বছর যাবত আমি আমার ধর্ম বিষয়ে অর্জিত ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানকে প্রসার এর জন্য সামাজিক মাধ্যম ফেবু ব্যাবহার করে যাচ্ছি।
ইতিমধ্যে নিরাকারবাদী আর্য সমাজ ছাড়াও সব থেকে বেশী বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি গৌড়ীয় মতবাদের অনুসারীদের কাছ থেকে। অধিকাংশ হিন্দুর ধারনা ভাগবত গীতা হল আমাদের শাস্ত্র আর একমাত্র গীতা যা একদম ভুল কথা। এই কথা বলার সাথে সাথে যে প্রশ্ন আসে তা হল "আপনি কিসের ভিত্তিতে এই কথা বলছেন? " স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেই সর্বমোট ৪২ ধরনের গীতা। যারা মুক্ত মনের এরা প্রমান চান আমি কিছু নির্ভরযগ্য ওয়েব এড্রেস এর নাম দিয়ে দেই। আর যারা গোঁয়ার গোবিন্দ এরা সব মিথ্যা মিথ্যা বলে বৃথা আশফালন করে নিজেদের গর্তে ঢুকে যায়। অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম এই ৪২ গীতার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন দিয়ে একটি পোষ্ট দিবো। এরি পরিপ্রেক্ষিতে আজকের এই পোষ্ট।
সনাতন হিন্দু ধর্মের ৪২ গীতা
গীতা বলতে সাধারণত বুঝায় কোন ধর্মীয় আধাত্মিক জ্ঞান যা গীত তথা সুরারোপ করে গুরু শিষ্যকে প্রদান করে। বাস্তবিক জীবনে সম্মুখীন বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পন্ডিত ব্যাক্তি বা স্রষ্টা স্বয়ং প্রকটিত হয়ে তাদের সমাধান দেন । এই সকল সমস্যার সমাধানের স্বরূপ হিসেবেই গীতার সৃষ্টি। বলা বাহুল্য ৪২ গীতার অধিকাংশ এসেছে হিন্দু ধর্মের ইতিহাস খ্যাত মহাভারত থেকে।
অনুগীতাঃ
অনুগীতার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বে ১৬তম অধ্যায়ে। মহাভারতের যুদ্ধের পর যুদ্ধিষ্ঠীরের রাজ্যাভিষেকের মুহূর্তে অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় সংকলিত হয়েছে। এখানেই কৃষ্ণ বলেছিলেন যে ভাগবত গীতার পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বর তিনি নিজে নন।
অষ্টবক্রগীতাঃ
রাজা জনক ও অষ্টবক্রের মধ্যে আত্মা, বন্ধন, জীবনের পরম সত্য নিয়ে কথোপকথন হয়। এই গীতায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সন্ন্যাস জীবন ও সংসার ত্যাগ তথা বৈরাগ্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
অবধ্যত্ত্ব গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল অদ্বৈত বেদান্ত এবং এই গীতার প্রবক্তা হলেন মুনি দত্ত্বাত্রেয়। যাঁর জন্ম হয়েছিল এই পৃথিবীতে আত্ম অহমিকাহীন এবং হিংসার ঊর্ধ্বে।
ভগবদ্গীতাঃ
ইহা ৭০০ শ্লোক এর একটি গ্রন্থ যা মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫তম অধ্যায় থেকে ৪২ তম অধ্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডব যুবরাজ অর্জুনের রথের সারথি হয়ে অর্জুনকে নির্দেশনা প্রদান করছিলেন।
ভীক্ষু গীতাঃ
ইহা শ্রীমদভাগবদ পুরাণের ৫ম অধ্যায় ১২শ স্কন্দের অন্তর্গত যেখানে রাজা পরিক্ষীত ও শুক মুনির মধ্যকার কথোপকথন মধ্য দিয়ে বেদান্ত দর্শন, ব্রাহ্মন ও আত্মার ওপর স্ংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
বোদ্ধগীতাঃ
ইহা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে গৃহীত, যেখানে ঋষি বোদ্ধের সাথে রাজা যজাতির কথোপকথন হয়ে থাকে।
ব্রহ্মগীতাঃ
ইহা স্কন্দ পুরাণের থেকে গৃহীত যা সুত সংহিতার ৪র্থ অধ্যায়, যজ্ঞ বৈভব খন্ডের প্রথম ১২টি অধ্যায় থেকে নেয়া। তার অপর একটি সংস্করণ পরবর্তীতে নির্বাণ খন্ডের ১৭৩ থেকে ১৮১ মধ্যেও পাওয়া যায় যা “যোগ বশিষ্ঠ” নামে পরিচিত।
ব্রাহ্মণ গীতাঃ
যা অনুগীতার একটি অংশ।
দেবী গীতাঃ
দেবীগীতা দেবী ভাগবতমের অন্তর্গত সপ্তম খন্ডের অধ্যায় ৩১ থকে ৪০ থেকে চয়ন করা হয়েছে, যাঁর রচয়িতা হলেন মহামুনি ব্যাস।এই গীতায় বিবৃত হয়েছে দেবীর আবির্ভাব ও তাঁর প্রকৃতি সম্পর্কে তাছাড়াও দেবীকে ধ্যান, যোগসাধনা ও পূজার মাধ্যমে কিরূপ আরাধনা করা হয় তা বিবৃত হয়েছে। এই গীতার আবার ২ অংশ যথা গনেশ আর গোপিকা গীতা।
গণেশ গীতাঃ
ইহা গণেশ পুরাণের ১৩৮-১৪৮ অধ্যায়ের অন্তর্গত যা কৃৎখন্ড থেকে নেয়া। যা অনেকটাই ভাগবদ গীতার আদলে রচিত যেখানে শ্রীগণেশকে পরমাত্মার স্বরূপ হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। রাজা বরেণ্যের সাথে গজাননরূপী শ্রীগণেশের কথোপকথন হয়ে থাকে।
গোপিকা গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয়বস্তু হল শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গোপীদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়। ইহা ভাগবদ পুরাণের অন্তর্গত যা রাজা জনমেজয়কে শুকদেব মুনি বলছিলেন।
গুরুগীতাঃ
মুনি ব্যাস দ্বারা রচিত এই গীতার শ্লোক সংখ্যা ৩৫২টি। এই গীতায় ভগবান শিবের কাছে দেবী পার্বতী গুরুতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা স্কন্ধ পুরাণের অন্তর্গত।
হংস গীতা/ উদ্ধব গীতাঃ
ইহা শ্রীমদ্ভাগবদ্পুরাণের ১১শ স্কন্দের ৪০ শ্লোক ৬ষ্ঠ খন্ড থেকে ২৯ খন্ডের মধ্যে প্রায় ১০০০ শ্লোকের সমন্বয়ে রচিত। যেখানে নশ্বর দেহ ত্যাগের পূর্বে শ্রীকৃষ্ণের সাথে উদ্ধবের কথোপকথন যোজন করা হয়েছে।
হনুমদ গীতাঃ
শ্রীরামচন্দ্রের রাজা হওয়ার পর সীতা দেবীর সহিত শ্রীহনুমানের কথোপকথন চয়িত হয়েছে হনুমদ গীতায়।
হরি গীতাঃ
ভাগবদ গীতাকে নারদ মুনি কর্তৃক এই নামকরণ করা হয়েছিল। শান্তিপর্ব, ৩৪৬তম অধ্যায়, ১০ম শ্লোক।
ঈশ্বর গীতাঃ
কুর্ম পুরানের উত্তর বিভাগের প্রথম ১১টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা। পরমেশ্বর ভগবান শিবের শিক্ষা ও উনাকে কিভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে আলচনা হয়েছে।বলা হয়ে থাকে ভাগবত গীতার শিক্ষা তো বটেই এছাড়াও এই গীতায় পাতঞ্জলির ৮টি যোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। এই গীতায় ভগবান শিব নিজেকে বার বার পরমেশ্বর বলেছেন।
কপিলা গীতাঃ
ভাগবত পুরানের ৩ নম্বর স্কন্দের ২৩-৩৩ অধ্যায় নিয়ে এই গীতা গঠিত। সাধু কপিল তাঁর মা দেবাদুতির আধ্যাত্মিক ক্ষুদা নিবারনের জন্য এই গীতা আলচনা করেন।
মানকি গীতাঃ
মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে এই গীতা গঠিত।মানকি মুনি তাঁর ২ ষাঁড়কে নিয়ে ৫০টি প্যারার একটি গল্প এইখানে বলা হয়েছে। এর মূল বিষয় বস্তু হল লোভ, কামনাকে ত্যাগ আর সকল নিষ্পাপ প্রানীর জন্য ভালবাসা জাগানো।
পান্ডব বা প্রপন্ন গীতাঃ
এই গীতার মূল বিষয় হল আত্মসমর্পন এর গান। মূলত পুরানিক বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ত্যের উক্তি নিয়ে এই গীতা উপদেশ দেয়। এই ব্যাক্তিদের মাঝে পঞ্চ পান্ডবও আছে।
পরাশর গীতাঃ
এই গীতাও মহাভারতের মোক্ষ পর্বের আর শান্তি পর্বের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। শান্তি পর্বের সবথেকে বড় গীতা বলা হয় এই গীতাকে। শান্তি পর্বের মোট ৯টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা আলোচনা করে থাকে। পরাশর মুনি ও তাঁর পিতা ব্যাস মুনির সাথে রাজা জনকের কথাবার্তা নিয়ে এই গীতার ভাস্য।
পিঙ্গলা গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে সংকলিত। এখানে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে পিঙ্গলা নামক এক পতিতার মোক্ষ লাভ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
রাম গীতাঃ
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণের অন্তর্গত আধাত্ম রামায়ণ যা উত্তর কাণ্ডের পঞ্চম স্বর্গ থেকে সংকলিত। এছাড়াও এই গীতার আরেকটি সংকলন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে পাওয়া যায়। এই সংকলন তত্ত্বস্মরণের গুরুজ্ঞ্যান বশিষ্ঠের অন্তর্গত। এই গীতায় তিনটি কাণ্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত যথা জ্ঞ্যানকাণ্ড, উপাসনাকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড। উপাসনা কাণ্ডের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের আঠারটি অধ্যায় নিয়ে রামগীতা গঠিত।
রমন্ গীতাঃ
এই গীতা মহর্ষি রমনে্র দ্বারা রচিত। এই গীতা উনার সবচেয়ে কাছের শীষ্যদের মধ্যে অন্যতম শ্রীগণপতি মুনি যিনি আরো শীষ্যদের সাহায্যে মোট ৩৭ খানা প্রশ্ন মহর্ষি রমনে্র সম্মুখে উত্থাপবন করেন। এই গীতা ভগবদগীতার শ্লোক সহ মোট ১৮টি অধ্যায় এবং ৩০০ মন্ত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত।
রিভু গীতাঃ
ইহা শিব রহস্য পুরাণের ষষ্ঠ খণ্ড থেকে নেয়া হয়েছে । মুনি রিভু এবং মুনি নিদঘ এর কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমিত্ব এবং ব্রহ্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যা দুই সহস্র পঙক্তি দিয়ে রচিত।
রুদ্র গীতাঃ
শ্রীমদ্ভাগবদ পুরাণের চতুর্থ স্কন্দের ২৪শ তম অধ্যায়ের ১৬-৭৯ শ্লোক এবং বরাহ পুরাণের ৭০-৭২ তম অধ্যায়কে রুদ্র গীতা বলে অবহিত করা হয়। পরমেশ্বর ভগবান শিব দ্বারা প্রচীতা(পবন দেব) যিনি তখনকার সময় দক্ষ ছিলেন তাঁকে বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এই গীতার মন্ত্রগুলোর মধ্যে শ্রীবিষ্ণুর বিভিন্ন প্রশংসা করা হয়েছে। এখানে পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণুর উপাসনা এবং শ্রীবিষ্ণুর দ্বার মোক্ষ প্রদান করার বিভিন্ন ধরনের উপাসনা পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন । তাছাড়া এই গীতাতে আত্মোপলব্ধি এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শিক্ষা ও দর্শন সম্পর্কে বলা আছে।
সম্পক গীতাঃ
মহাভারতের শান্তি পর্বের অন্তর্গত মোক্ষ পর্ব থেকে এই গীতার উৎপত্তি। এই গীতা ২১টি মন্ত্র দ্বারা তৈরী যা সম্পক একজন সৎ বাহ্মণের দ্বারা উপেদেশাবলি হিসেবে পেয়েছিলেন। এসকল উপদেশের মূল উদ্দেশ্য হল একজন মানুষ কিভাবে তার আমিত্ব ত্যাগ করে সমর্পণের মাধ্যমে সচ্চিদাননন্দে লীন হতে পারেন।
শিব গীতাঃ
পদ্মপুরাণের পাতাল কান্ডের ১৬ টি অধ্যায় নিয়ে এই গীতা রচিত। শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা দেবিকে যখন লঙ্কাধিপতি রাবণ হরণ করেন, তখন ঋষি অগ্যস্ত রামচন্দ্রকে মহাদেবের আরাধনা করার উপদেশ প্রদান করেন। পরমেশ্বর শিব তখন শ্রীরামচন্দ্রের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব গীতার মাধ্যমে জ্ঞ্যান প্রদান করেন। শৈবদের মাঝে এই গীতার উপযোগীতা অপরিসীম।শ্রীরামচন্দ্রই সর্বপ্রথম বিষ্ণুর অবতার যিনি প্রভু পরমেশ্বরের বিশ্বরূপের দর্শন পান। শিব উনার বিশ্বরূপ প্রদর্শনের মাধ্যমে মানব ভ্রূণ মনুষ্যজন্মরহস্য, কর্ম, শরণাগতি ইত্যাদি বহু বিষয় সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে শ্রীরামচন্দ্রকে সমৃদ্ধ করেন।
শ্রুতি গীতাঃ
শ্রীমদভাগবদপুরাণের ১০ম স্কন্দের ৮৭ নং অধ্যায়কে শ্রুতিগীতা নামে অবহিত করা হয়। রাজা পরিক্ষীত শুকদেবের কাছে ব্রাহ্মণের অনাচার এবং ঈশ্বরাচার এই দুইয়ের সম্পর্কে উপদেশাবলি সংকলতিত হয়েছে।
সূর্য গীতাঃ
গুরজ্ঞ্যান বশিষ্ঠ যা তত্ত্ব স্মরণের অন্তর্গত সেখানে সূর্যগীতার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়। ইহা তিনটি খন্ডে বিভক্ত যথা জ্ঞ্যান কান্ড, উপাসনাকান্ড ও কর্মকান্ড। অদ্বৈত বশিষ্ঠের তৃতীয় পঙক্তির প্রথম পাঁচ অধ্যায় সূর্য গীতা দিয়ে শুরু।
সূত গীতাঃ
ইহা মূলত স্কন্দ পুরানের ১৩শ অধ্যায়ের ২০তম যজ্ঞবৈভব খণ্ডের অন্তর্গত। ইহা প্রবলভাবে অদ্বৈতবাদের পক্ষে এবং মনোথিজম অর্থাৎ দ্বৈত সত্তার মাধ্যমে অদ্বৈতবাদের খোঁজ এর পক্ষে সমর্থন প্রদান করে। মূলত নিরাকার অদ্বৈত ব্রহ্মকে জানাই এই গীতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।অদ্বৈতবাদের ব্যাপারে এই গীতা মূলত ভগবদগীতা থেকে অনেকাংশে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট নিয়ম মেনে চলে। মহর্ষি সুত অদ্বৈতবাদের ধারণা এবং ঈশ্বরের দর্শন মার্গের ধারণা পান পরমেশ্বর ভগবান শিবের কাছ থেকে।
স্বামী নারায়ণ গীতা বা যোগী গীতাঃ
মূলত এটি বৈষ্ণবদের একটি গীতা। শ্রী যোগীমহারাজ ভগবান শ্রীস্বামী নারায়ণ এর দর্শন লাভ করেন। এবং, উনার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞ্যান, যেমনঃ কিভাবে মানব জীবনে আধাত্মিক সফলতা পাওয়া যায়, এর জন্য একজন ভক্তকে কি কি পদক্ষেপ নিতে হয়, কি কি গুণ এবং কি কি প্রার্থনার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। মূলত দাক্ষিণাত্যে বৈষ্ণবদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় গীতা হল এই স্বামী নারায়ণ গীতা।
উত্তর গীতাঃ
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর অর্জুন যখন বয়সের ভারে নিমজ্জিত এবং রাজ্যসুখ জগতের মায়া দ্বারা প্রবলভাবে বেষ্টিত তখন অর্জুন এসব থেকে মুক্তি পেতে শ্রীকৃষ্ণের কাছে যান। শ্রীকৃষ্ণকে তিনি ব্রাহ্মণের জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ শ্রীকৃষ্ণের কাছে উত্থাপন করেন। শ্রীকৃষ্ণের উনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন এবং অর্জুনের সকল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। উত্তর গীতা তিনটি অধ্যায় দ্বারা পরিপূর্ণ। এটি মহাভারতের উত্তরকাণ্ডে সংকলিত রয়েছে।
বল্লভ গীতাঃ
বল্লভ গীতাকে সদাসা গ্রন্থ হিসেবেও জানা যায়। শ্রীবল্লভ উনার শিষ্যদের জীবনের উদ্দেশ্য ও মুক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে গেছেন।এটি শ্রীবল্লভের ১৬টি কর্ম এবং প্রতিটি কর্মের মূল বিষয়ের উপরে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।
বশিষ্ঠ গীতা বা যোগী বশিষ্ঠ গীতাঃ
রাজপুত্র রামচন্দ্রকে বিষন্ন অবস্থায় দেখে ঋষি বশিষ্ঠদেব বিশদভাবে অদ্বৈত বেদান্ত এবং অদ্বৈতবাদ সম্পর্কে আলোকপাত করেন যা ৩২,০০০ সংখ্যক শ্লোকের সমন্বয়ে সংকলিত হয়েছে।
বিভীষণ গীতাঃ
এই গীতা রামায়ণ থেকে সংকলিত। রাজা শ্রীরামচন্দ্র বিভীষণকে ভক্তি, বিশ্বাস সৎকার্যের লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞ্যান দান করেন।
বিচক্ষু গীতাঃ
এই গীতা মহাভারতের মোক্ষ পর্বের অন্তর্গত শান্তি পর্ব থেকে নেয়া হয়েছে। রাজা বিচক্ষু একটি যজ্ঞে উপস্থিত হন যেখানে প্রাণী আহুতি দেয়া হয়। তিনি সেখানে অহিংসার প্রতি আলোচনা করেন যা এগারোটি শ্লোক এর মাধ্যমে সংকলিত। পিতামহ ভীষ্ম রাজা যুধিষ্ঠিরকে এই জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
বিদুর গীতাঃ
এই গীতাটিও মহাভারতের অন্তর্গত। বিদুর এবং সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রের মধ্যকার কথোপকথন এই গীতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখানে বিদুর সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রকে রাজনীতির জ্ঞ্যান এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মূল্য ,ন্যায় এবং সত্যবাদীতা সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করেন।
বৃত্র গীতাঃ
ইহাও মহাভারত থেকে গৃহীত। মোক্ষ পর্বের শান্তি পর্ব থেকে ইহা চয়িত। এই গীতায় মূল কথোপকথন হয় ভয়ঙ্কর দানব বৃত্রাসুর এবং দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের মধ্যে হয়ে থাকে যা দুই অধ্যায়ে ব্যাপ্ত।
ব্যাধ গীতাঃ
মহাভারতের বন পর্বের অন্তর্গত। এই গীতায় এক মাংস বিক্রেতা এক সাধুকে জ্ঞ্যান প্রাদান করেন যিনি সম্রাট যুধিষ্টিরের সঙ্গে পরিচিত হন মার্কণ্ডেয় মুনির দ্বারা।সেই সাধারণ মাংস বিক্রেতা অহঙ্কারী সাধুকে নিষ্কাম কর্ম সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেন।
ব্যাস গীতাঃ
এটি কূর্ম পুরাণের দ্বাদশ অধ্যায় থেকে শুরু করে উত্তর বিভাগ পর্যন্ত ব্যাস গীতার অন্তর্গত। এখানে ব্যাস মুনি আত্ম জ্ঞ্যান অর্জনের সর্বোচ্চ মার্গ সম্পর্কে জ্ঞ্যান প্রদান করেছেন। এখানে একতার বিশ্বাস এবং অদ্বৈতবাদ দর্শনের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
যম গীতাঃ
ভজসর্বার ছেলে শ্রী নচিকেতার সাথে ধর্মরাজ যমের ধর্মবিষয়ে কথোপকথনকে যম গীতা হিসেবে জানা যায়। পিতৃ আদেশ পালনে যমের দ্বারে উপস্থিত হয় ও নিজ ধর্ম জ্ঞ্যান এবং প্রজ্ঞা দ্বারা যমকে তুষ্ট করেন এবং ধর্মরাজকে ধর্মজ্ঞ্যান দিতে বাধ্য করেন। যম গীতার সারাংশ তিনটি জায়গায় পাওয়া যায়। ১) বিষ্ণু পুরাণের ৩য় খন্ড ৭ম অধ্যায় পর্যন্ত ২) অগ্নি পুরাণের ৩য় খণ্ড অধ্যায় ৩৮১ এবং ৩) নৃসিংহ পুরাণের ৮ম অধ্যায়সমূহে।
Thursday, December 14, 2017
রুদ্রাক্ষ
বিভিন্ন শাস্ত্রে এক থেকে চৌদ্দমুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষ ব্যবহারের যে নিয়ম, আচার ও অনুষ্ঠানের উল্লেখ আছে তা এখন বলা হচ্ছে।
-
একমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
রুদ্রাক্ষের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রেণীকে ‘শিব’ নামে অভিহিত করা হয়। রুদ্রাক্ষের যেসব গুণাগুণের কথা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে সে সমস্তই এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। খুবই দুর্লভ শ্রেণীর রুদ্রাক্ষ এবং অত্যন্ত মূল্যবানও বটে। বলা হয়, এই রুদ্রাক্ষ ধারণে মানুষ অপরাজেয় হয়। বিশেষ আধ্যাত্মিক উন্নতিও ঘটে। রুদ্রাক্ষের উজ্জীবন করতে হয়, 'ওঁ ঐং' মন্ত্র ১০৮ বার উচ্চারণ করে ডান বাহুতে বা কণ্ঠে এ রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে লোকপ্রভাবিনী শক্তির স্ফুরণ ঘটে। রাশিচক্রে রবিগ্রহ, পাপপীড়িত, পাপগ্রহদৃষ্ট, নীচস্থ পাপযুক্ত বা যে কোনোভাবে পীড়িত হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উপরোক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কারপূর্বক জপ করে ধারণ করলে রবিগ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট হয়।
-
দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ
=========
এ জাতীয় রুদ্রাক্ষকে ‘হরগৌরী’ নামে অভিহিত করা হয়। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে মনের একাগ্রতা জীবনে শান্তি এনে দেয়। অজ্ঞাতসারে গোহত্যাজনিত পাপের স্খলন হয়। কুলকুণ্ডলিনী শক্তি সম্পর্কে চেতনার সঞ্চার করে। মন্ত্র উচ্চারণসহযোগে এই রুদ্রাক্ষের উজ্জীবন হয়। মন্ত্র পাঠ করে ডান হাতে বা কণ্ঠে এ রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে ত্রিজন্ম সঞ্চিত পাপরাশি দূরীভূত হয়। রাশিচক্রে কেতুগ্রহ নীচস্থ, পাপপীড়িত বা যে কোনোভাবে অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক 'ওঁ শ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপ করে ধারণ করলে কেতুগ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট হয়।
-
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ জাতীয় রুদ্রাক্ষের নাম ‘অগ্নি’। অতীত পাপ বিনষ্ট করে, মানুষের সৃজনীশক্তির বিকাশ সাধন করে, চিরকর্মচঞ্চল জীবনীশক্তিকে উন্নীত করে, ম্যালেরিয়া রোগ নিবারণ করে। মন্ত্র পাঠ করে দু’বাহুতে ধারণ করলে অসাধারণ শক্তির সঞ্চার হয়। রাশিচক্রে মঙ্গল বা যে কোনোভাবে পীড়িত হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কারপূর্বক 'ওঁ ধ্রুং ধ্রুং' মন্ত্র ১০৮ বার জপ করে ধারণ করলে মঙ্গল গ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট হয়।
-
চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ
===========
জ্যোতিষক নাম ‘ব্রহ্মা’। মনের ক্রিয়াকলাপের উপরে এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষের প্রভাব চমৎকার। সে কারণে উন্মত্ততা, অনিদ্রা, বিষাদময়তা ইত্যাদি মানসিক রোগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করা হয়। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয়। তুচ্ছ বিষয়ে মানসিক অস্থিরতার উপশম হয়, মানসিক অবসাদ দূর হয়, উদ্বেগ, ভয়, খিটখিটে স্বভাব ও আত্মহনন-চিন্তা ইত্যাদির প্রকোপ হ্রাস করে, বক্তৃতা-ক্ষমতা, কর্মতত্পরতা ও বুদ্ধি বৃদ্ধির উন্মেষকারক এ রুদ্রাক্ষ মন্ত্র পাঠ করে কণ্ঠে ধারণ করতে হয়। রাশিচক্রে চন্দ্রগ্রহ নীচস্থ, পাপযুক্ত ও পাপপীড়িত হয়ে দ্বিতীয়ে, ষষ্ঠে, অষ্টমে দ্বাদশে অবস্থান করলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কার করে 'ওঁ হ্রীং হ্রং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ডান হাতে ধারণ করলে চন্দ্রগ্রহের সমস্ত কুফল নষ্ট করে বিভিন্ন শান্তি ও সুখ আনয়ন করে।
-
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
সর্বাধিক পরিচিত এবং সর্বত্রই এ রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায়। এ রুদ্রাক্ষ দুই শ্রেণির হয়ে থাকে। এর নাম ‘কালাগি রুদ্র’। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে নিষিদ্ধ খাদ্যগ্রহণ ও নিষিদ্ধ কর্ম সম্পাদনের পাপ অপনোদন হয়, মানসিক প্রশান্তি আসে। শিবের পঞ্চাক্ষরী মন্ত্র সহযোগে সন্ধ্যাকালে দেহের যে কোনো অংশে ধারণ করলে অখাদ্য ভোজনজনিত পাপ নষ্ট হয়। রাশিচক্রে শনিগ্রহ, রবিযুক্ত হলে লগ্নে, দ্বিতীয়ে, ষষ্ঠে, সপ্তমে, অষ্টমে, দ্বাদশে অবস্থান করলে বা যে কোনোভাবে শনিগ্রহ পাপপীড়িত, নীচস্থ ও অশুভ গ্রহযুক্ত হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক 'ওঁ হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করলে শনিগ্রহের সমস্ত অশুভ ফল নষ্ট হয়।
-
ষড়মুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ জাতীয় রুদ্রাক্ষের নাম ‘কার্তিকেয়’। ছাত্রদের পক্ষে ও যারা দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন তাদের পক্ষে এ রুদ্রাক্ষ বিশেষ উপকারী। জ্ঞানবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ রুদ্রাক্ষর চমত্কার কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়। মন্ত্রযোগে রুদ্রাক্ষ উজ্জীবন করা হয়। ভূত-প্রেতাদি দ্বারা অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে প্রতিকাররূপে ধারণীয়। মানসিক অবসাদ, স্বভাবের উগ্রতা ও নানা রোগের উপকারকারী এ রুদ্রাক্ষ। রাশিচক্রে শুক্র কন্যায় নীচস্থ, অশুভ গ্রহযুক্ত দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, দ্বাদশে অবস্থান করলে বা অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক 'ওঁ ঐং হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করলে শুক্রগ্রহের সমস্ত অশুভ ভাব নষ্ট হয়।
-
সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষের নাম অনন্ত মাতৃকা। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে সামাজিক প্রতিষ্ঠা, অর্থ মান, যশ ও প্রতিপত্তিলাভের পথ সুগম হয়ে থাকে। রাশিচক্রে রাহুগ্রহ রবি ও চন্দ্র যুক্ত হয়ে লগ্নে দ্বিতীয়ে, চতুর্থে, পঞ্চমে, ষষ্ঠে, সপ্তমে, অষ্টমে, নবমে, দশমে এবং দ্বাদশে অবস্থান করলে বা কোনোভাবে অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উক্ত রুদ্রাক্ষ উজ্জীবন করতে হয়। 'ওঁ হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর উক্ত রুদ্রাক্ষ কণ্ঠে ধারণ করলে রাহু গ্রহের সমস্ত কুফল বিনষ্ট হয়।
-
অষ্টমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এই রুদ্রাক্ষের দুটি নাম বিনায়ক ও বটুকভৈরব। শনিগ্রহ ও রাহুর অশুভ প্রভাব খর্ব করে। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে হঠাত্ আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দুষ্কৃতকারীদের হাতে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রাশিচক্রে শনি ও রাহু অশুভ থাকলে উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি সংস্কারপূর্বক পুরুষের ডান বাহুতে এবং স্ত্রীলোকের বাম বাহুতে ধারণীয়। 'ওঁ রুং রং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর উক্ত রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সমস্ত অশুভ প্রভাব দূরীভূত হয়।
-
নবমুখী রুদ্রাক্ষ
==========
এ রুদ্রাক্ষের নাম মহাকাল ভৈরব। ধারণে জীবনে উন্নতির সূচনা যায়, সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জয়লাভ করা হয়। দুর্ঘটনা ও হঠাত্ মৃত্যুর হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। ধারণের পূর্বে মন্ত্র উচ্চারণ করে এ রুদ্রাক্ষের উজ্জীবন বা প্রাণসঞ্চার করে নিতে হয়।
মন্ত্র পাঠের পর উচ্চারণ করতে হয়। বুদ্ধিবৃত্তিজনিত কাজকর্মের ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রচুর সুফল দান করে এ রুদ্রাক্ষ। রাশিচক্রে বৃহস্পতি গ্রহ মকরে নীচস্থ, মকরস্থানে অবস্থান করলে, বা মারকস্থ হলে এবং ষষ্ঠ, অষ্টম, দ্বাদশ স্থানে অবস্থান করলে কিংবা কোনোভাবে অশুভ হলে এ গ্রহের শান্তির নিমিত্ত উপরোক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধ সংস্কার পূর্বক 'ওঁ হ্রাং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর পুরুষের দক্ষিণ বাহুতে এবং স্ত্রীলোকের বামবাহুতে ধারণ করলে সকল অশুভ বিনাশ হয়।
-
দশমুখী রুদ্রাক্ষ
===========
এ শ্রেণির রুদ্রাক্ষ দুর্লভ। এর নাম মহাবিষ্ণু। মর্যাদা, প্রতিষ্ঠা, সুনাম, খ্যাতি, সন্মান, পার্থিব সমৃদ্ধি, কর্মদক্ষতা এবং ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জনে সহায়ক এ রুদ্রাক্ষ। প্রেতাদি কর্তৃক অনিষ্টকর প্রভাব থেকেও মুক্ত হওয়া যায়। রাশিচক্রে বুধ গ্রহ নীচস্থ শত্রুযুক্ত ও শত্রুক্ষেত্রগত, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, অষ্টম ও দ্বাদশ স্থানে অবস্থান করলে বা কোনোভাবে পীড়িত হলে উক্ত রুদ্রাক্ষ যথাবিধি মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক সংস্কার করে 'ওঁ হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করতে হয়। মন্ত্র পাঠ ও জপ করে জপের পর উক্ত রুদ্রাক্ষ কণ্ঠে ধারণ করলে সমস্ত অশুভ দূরীভূত হয়।
-
একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
==============
এটি একটি বিশেষ জাতের রুদ্রাক্ষ। এর নাম মহামৃত্যুঞ্জয়। মেয়েদের নানা অসুখের ক্ষেত্রে একান্তভাবেই সুফল প্রদানকারী, আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটলে, আত্মহনন চিন্তা এসে মনকে ও মেজাজ খিটখিটে স্বভাবের হয়ে উঠলে এ রুদ্রাক্ষ ধারণে তার উপশম হয়। মন্ত্র উচ্চারণযোগে রুদ্রাক্ষ উজ্জীবিত করে ধারণ করা প্রয়োজন। রাশিচক্রে শুক্র ও মঙ্গল অশুভ থাকলে মন্ত্রে যথাবিধি সংস্কার করে 'ওঁ শ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ডান হাতে ধারণ করলে সমস্ত অশুভ প্রভাব নাশ হয়।
-
দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ
============
এর নাম অর্ক বা আদিত্য। এ রুদ্রাক্ষ রবি ও রাহুর অশুভ প্রভাবকে প্রশমিত করে। রবি যখন মকরে বা কুম্ভরাশিতে অবস্থিত হয়ে অশুভদশা প্রাপ্ত হয় তখন এ রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সকল কুফল নষ্ট হয়। ব্যবসায়িক মন্দা বা অসাফল্য নিবারণ করতে মন্ত্র সহযোগে এ রুদ্রাক্ষকে উজ্জীবন করে ধারণ করতে হয়। 'ওঁ হ্রাং হ্রীং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর রুদ্রাক্ষটি কণ্ঠে ধারণ করলে সমস্ত অশুভ বিনষ্ট হয়।
-
ত্রয়োদশমুখী রুদ্রাক্ষ
==============
এর নাম কাম। এর ধারণে সর্বভাবেই কামনীয় বিষয়ের প্রাপ্তিযোগ ঘটে। এ রুদ্রাক্ষ ধারণে উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিপূরণ হয়। চিন্তামণি মন্ত্র সহযোগে এ রুদ্রাক্ষ উজ্জীবন করতে হবে। অতঃপর 'ওঁ ক্ষৌং নমঃ' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ডান হাতে ধারণ করলে সমস্ত পাপ দূর হয় ও সকল মনোরথ সিদ্ধি হয়। এর ধারণে চন্দ্র ও শুক্রের অশুভ প্রভাব নাশ হয়ে থাকে।
-
চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ
=============
এই রুদ্রাক্ষ শ্রীকণ্ঠ নামে পরিচিত। এই রুদ্রাক্ষ ইন্দ্রিয় সংযমে সাহায্য করে। পঞ্চমুখ হনুমানমন্ত্র সহযোগে একে উজ্জীবিত করতে হয়। মন্ত্র পাঠ করে বীজমন্ত্র জপ করে ধারণ করলে শুক্রগ্রহের সমস্ত অশুভ বিনষ্ট হয়। 'ওঁ তমাং' মন্ত্র ১০৮ বার জপের পর ধারণ করলে বৃহস্পতি ও রবির সমস্ত অশুভ প্রভাব নষ্ট হয়ে থাকে।
-
জ্যোতিষমতে ও স্কন্দপুরাণানুযায়ী রুদ্রাক্ষ ধারণের বিধি ও ফলাফল বর্ণনা করা হলো। শুদ্ধ চিত্তে সঠিক মন্ত্রোচ্চারণাদি করে রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে অবশ্যই ফল লাভ হবে। যেহেতু নকল রুদ্রাক্ষে প্রতারিত হবার আশঙ্কা আছে, তাই বিশেষজ্ঞের সহায্যে পরীক্ষা করিয়ে অনুষ্ঠানাদির জন্য যোগ্য পুরোহিতের সাহায্য নেওয়া বাঞ্ছনীয়। সংক্রান্তি, অষ্টমী তিথি, চতুর্দশী তিথি, গ্রহণ, পূর্ণিমা বা অমাবস্যা ইত্যাদি পুণ্য তিথিতেই রুদ্রাক্ষ ধারণ করা উচিত। তিথির সঙ্গে শুভ নক্ষত্র যোগ দেখে নিতে হবে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপদেশ মেনে চলা উচিত। বাহুতে বা কণ্ঠে স্বর্ণসূত্রে, রৌপ্যসূত্রে বা কার্পাসসূত্রে গ্রথিত করে পঞ্চগব্য, পঞ্চামৃত দ্বারা মহাস্নান করিয়ে উল্লিখিত মন্ত্রসহযোগে রুদ্রাক্ষকে উজ্জীবিত করে ভক্তিসহকারে ধারণের কথা শাস্ত্রে বলা হয়েছে।
Tuesday, December 12, 2017
হিন্দুশাস্ত্র: জ্ঞানকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড
বিপিনবিহারী ঘোষাল সংকলিত হিন্দুশাস্ত্র: জ্ঞানকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড (১৮৯৫) বই থেকে আধুনিক সরল বাংলা গদ্যে রূপান্তরিত।
আমাদের দেশের প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রগুলিতে ধর্ম ও সাধনা সম্পর্কে যে বিভিন্ন রকম মত দেখতে পাওয়া যায়, প্রাচীন আর্য শাস্ত্রকারেরা সেগুলিকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছিলেন এবং সেই সব বিভিন্ন রকম মত ও উপদেশগুলির মধ্যে যে একটা যোগ বা সম্বন্ধ আছে, তা-ও তাঁরা অনেক জায়গায় বলে গেছেন। যেমন—ভগবান শিব এক জায়গায় পার্বতীকে বলছেন,—
নানা তন্ত্রে পৃথক্ চেষ্টা ময়োক্তা গিরিনন্দিনি।
ঐক্যজ্ঞানং যদা দেবি তদা সিদ্ধিমবাপ্নুয়াৎ।।
মুণ্ডমালা তন্ত্র, ৬ পটল।
হে পার্বতী, আমি অধিকারী অনুসারে নানা তন্ত্রে নানা রকম সাধনা ও পূজা-উপাসনার বিধি দিয়েছি। সাধক যখন সেই সব নানা রকম ব্যবস্থার মধ্যেও ঐক্য দর্শন করে, তখন তার সিদ্ধিলাভ হয়।
প্রথমত, যাঁরা একটু বেশি জ্ঞান রাখেন ও চিন্তা করেন, যাঁদের বুদ্ধি সূক্ষ্ম তত্ত্বগুলি বুঝতে সক্ষম এবং যাগযজ্ঞ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের অনুষ্ঠানে যাঁদের পুরোপুরি শ্রদ্ধা বা তৃপ্তি জন্মায় না, তাঁদের জন্য শাস্ত্রকারেরা নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী তত্ত্বজ্ঞান-স্বরূপ মহাসত্যগুলির উপদেশ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, যাঁদের জ্ঞান তুলনামূলকভাবে অল্প বা যাঁরা এ সম্পর্কে ঠিকঠাক বিচার করতে পারেন না,[*] তাঁদেরও ধর্মপ্রবৃত্তি পরিতৃপ্ত করবার জন্য এবং ভবিষ্যতে তাদেরও তত্ত্বজ্ঞান লাভের উপযুক্ত করবার জন্য তাঁরা স্থূল ভাবের পূজা, উপাসনা বা অনুষ্ঠানপদ্ধতি লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
প্রথমোক্ত সবল অধিকারী ব্যক্তিদের জন্য যে শাস্ত্রের উপদেশ দেওয়া হয়েছে, তার নাম জ্ঞানকাণ্ড; আর শেষোক্ত দুর্বল অধিকারীদের জন্য যে শাস্ত্র লেখা হয়েছে, তার নাম কর্মকাণ্ড।
কর্মকাণ্ডোজ্ঞানকাণ্ড ইতি ভেদোদ্বিধামতঃ।
ভবতি দ্বিবিধোভেদাজ্ঞানকাণ্ডস্য কর্মণঃ।।
শিব সংহিতা ১।২০
পরমেশ্বর ভগবান শিব বললেন—
জ্ঞানকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড ভেদে শাস্ত্রে দুই রকম মত দেখা যায়। জ্ঞানকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড—এগুলি আবার দুটি দুটি করে ভাগে বিভক্ত।
বেদস্তাবৎ কাণ্ডদ্বয়াত্মকঃ।
তত্র পূর্বস্মিন্ কাণ্ডে নিত্যনৈমিত্তিককাম্যনিষিদ্ধরূপং
চতুর্বিধং কর্ম প্রতিপাদ্যং।
তৈত্তিরীয় সংহিতা ১৭১।১
সমগ্র বেদ দুই ভাগে বা দুই কাণ্ডে বিভক্ত। তার মধ্যে পূর্বকাণ্ডে নিত্য, নৈমিত্তিক, কাম্য ও নিষিদ্ধ এই চার রকমের কর্মের বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
অত উত্তরকাণ্ড আরব্ধব্যঃ। আত্যন্তিকপুরুষার্থসিদ্ধিশ্চ দ্বিবিধা। সদ্যোমুক্তিঃ ক্রমমুক্তিশ্চেতি। তস্মাদুত্তরকাণ্ডে ব্রহ্মোপদেশ-ব্রহ্মোপাস্তিশ্চেত্যুভয়ং প্রতিপাদ্যতে।
তৈত্তিরীয় সংহিতা, প্রথম কাণ্ড, প্রথম প্রপাঠক, প্রথম অনুবাক্।
তারপর উত্তরকাণ্ডে সদ্যোমুক্তি ও ক্রমমুক্তি নামে দুই রকম আত্যন্তিক পুরুষার্থসিদ্ধির বিষয় নির্ণয় করা হয়েছে। এজন্য উত্তরকাণ্ডে ব্রহ্মবিষয়ক উপদেশ ও ব্রহ্মোপাসনা এই দুইটি বিষয় আলোচনা করা হয়।
দ্বাবিমাবথ পন্থানৌ যত্র বেদাঃ প্রতিষ্ঠিতাঃ।
প্রবৃত্তিলক্ষণো ধর্মো নিবৃত্তৌ চ বিভাষিতঃ।।
বাজসনেয় সংহিতার ভাষ্যে শঙ্করাচার্যের বাণী
বেদে দুই রকম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত আছে। যথা—(১) প্রবৃত্তিলক্ষণ ধর্ম বা কর্মকাণ্ড, এবং (২) নিবৃত্তিলক্ষণ ধর্ম বা জ্ঞানকাণ্ড।
এই কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ডের মধ্যে কর্মকাণ্ড বিনাশী, অর্থাৎ অনিত্য ফল দান করে এবং জ্ঞানকাণ্ড অবিনাশী, অর্থাৎ অনন্ত ফলদায়ী। যেমন, ব্যাসদেব শুকদেবকে বলেছেন—
কর্মবিদ্যাময়াবেতৌ ব্যাখ্যাস্যামি ক্ষরাক্ষরৌ।
মহাভারত, মোক্ষধর্ম পর্বাধ্যায় ৬৭।৩
নশ্বর কর্ম এবং অবিনশ্বর জ্ঞান-এই দুইয়ের বিষয় আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি।
উন্নত ও গভীর বিষয়গুলি সর্বদা মনের মধ্যে বিচার করতে অভ্যাস করা বিশেষ প্রয়োজনীয়। মানুষের মধ্যে যাঁরা চিন্তাশীল নন, তাঁরা একরকম মানুষের মধ্যে গণ্যই নন, একথা আমাদের দেশের শাস্ত্রকারের বার বার বলে গিয়েছেন। যিনি চিন্তাশীল নন, তিনি হাজার রকম বিদ্যে শিখলেও জ্ঞানহীনদের মধ্যেই গণ্য হন।
টমাস কার্লাইল তাঁর এক চিঠিতে লিখেছেন—
“It is not books alone, or by books chiefly that a man becomes in all points a man.”
Treasury of Modern Biography, p. 293.
বিশিষ্ট আমেরিকান বুদ্ধিজীবী এমারসন বলেছেন—
“The man who thinks is the king; all else are journeymen.”
An Evening with Emerson.
by David Maerae, in The Americans at Home.
ঘড়ি কে তৈরী করেন?
কে কখন ঘড়ি আবিস্কার করেছিল তা ইতিহাসে পাতায় কোথাও লেখা নেই । তবে এর পিছনে আছে তিন হাজার বছরের ইতিহাস। ওই সময়ে মিশরীয়রা আবিস্কার করল জমি মাপজোক করার পদ্ধতি আর মাপজোক সন্মন্ধ্যে তাদের মধ্যে ধারনা জন্মে গেল সময়কেও তারা পরিমাপ করতে চাইল। আসল ‘সূর্য ঘড়ি’ বা ‘ছায়া ঘড়ি’।
‘সূর্যঘড়ি’ বানাতে তখন মানূষ একটা লাঠি পূতে রাখল খোলা জায়গায়। তারপর সেই লাঠিকে ঘিরে ছোট বড় নানা চক্র দিয়ে দেয়। চক্রর ওপর লিখে রাখে বিভিন্ন সংকেত যা দিয়ে নানা প্রহর বুজায়। লাঠির ওপর সূর্যের আলো পড়লে সেই আলো পড়তো মাটিতে সেখান থেকে সংকেত নির্দেশিত চক্রে আর সেখান থেকে সময় নির্ধারন হত। এমন একটি ঘড়ি আজো বার্লিন মিউজিয়ামে রক্ষিত।
দিনের বেলা না হয় সূর্যের আলো দেখে সময় পাওয়া গেল কিন্তু রাতের বেলা কিভাবে সময় পাওয়া যাবে ভাবিয়ে তুলল মানূষকে। চোখ গেল রাতের আকাশে। তারা রাতের আকাশে এমন এক নক্ষত্রের সন্ধান করতে লাগল যা সব সময় এক দিক থেকে অন্যদিকে যাবে। অবশেষে পাওয়া গেল। দেখতে খুব উজ্জল আর একটু লম্বা। এটা আকাশের উত্তর দিকে ওঠে আর ধীরে ধীরে দক্ষিন দিকে এগিয়ে যায়, শুধু তাই না তারা মেরু কে কেন্দ্র করে ঘড়ির কাটার মত ঘুরতে থাকে যা দিয়ে অনায়াসে সময় নির্ধারন করা যায়। এর নাম ‘ক্যাসিওপিয়া’। দেখতে অবিকল ইংরেজী W অক্ষরের মত। এই ‘তারাঘড়ি’ প্রথম আবিস্কার করে জার্মানরা।
তারা ঘড়ির পর আসে ‘পানিঘড়ি’। খ্রীষ্ট পূর্ব ১৪০০ সাল নাগাদ মিশরীয়রা প্রথম পানি ঘড়ি আবিস্কার করেন । একটি ফানেলের মধ্যে পানি ভরা হল, সেই ফানেলের নীচে লাগানো হল এক সরু পাইপ। ফানেলের পানি এক সরু পাইপ বেয়ে যেয়ে পড়ত একটি জারে। সেই জারের মধ্যে একটা হাল্কা কর্ক রেখে দিত তারা। পাত্রের অপর প্রান্তে লাগিয়ে দেয়া হত দাত যুক্ত একটা সময় নির্দেশক কাটা। ফানেল থেকে ধীরে ধীরে পানি চলে আসত জারে, জারে যত পানি পড়ত কর্ক ততই ভেসে উঠত। সেই সঙ্গে সময় নির্দেশক কাটা ঘুরতে আরম্ভ করত। যা বলে দিত সময়। গ্রীকরা একে বলত ‘ক্লিপসেড্রা’।
এরপর এল ‘বালুঘড়ি’। প্রায় বারোশ বছর আগে এর প্রচলন শুরু হয়। বালু ঘড়ি ছিল কিছুটা পানি ঘড়ির মত। তবে এ ঘড়ির জন্য প্রয়োজন হয় একটা ফানেল যার মাজখানটা চ্যাপ্টা। এবার ফানেলের ওপর দিয়ে কিছুটা বালি ফানেকের মধ্যে ঢেলে দিল, সেই বালি ফানেলের মাঝখানে যেয়ে বাধা পেল। অপেক্ষাকৃত সরু ও মিহি দানার বালি ফানেলের চ্যাপ্টা অংশ দিয়ে নিচে পড়া শুরু হল। ফানেলের নীচের অংশে আকা থাকত স্কেল। বালুর জমা হবার পরিমান নির্নয় করত নির্দিষ্ট সময়।
রাতের বেলা মানূষ ঘড়ির বিকল্প হিসাবে মানূষ আবিস্কার করে ফেলল ‘মোমঘড়ি’। চীন দেশেই প্র থম আবিস্কার হয় ‘মোম ঘড়ি’। সূর্য ঘড়ির পদ্ধতিতে এই ঘড়ি তারা ব্যাবহার করত। অন্ধকার ঘরে তারা একটা মোমবাতি জ্বালাত। সেই আলোর কাছাকাছি তারা রেখে দিত কোন মানদন্ড। মোমের আলো গিয়ে পড়ত সেই মানদন্ডে। মানদন্ডের সামনের অংশ আলোকিত হত আর পিছনের অংশে পড়ত তার ছায়া। মোম যত ছোট হত ছায়া তত দীর্ঘ হত। এই ছায়া পরিমাপ করে মানূষ সময় পরিমাপ করত।
যন্ত্র ঘড়ি কে আবিস্কার করেন তা অজানা, তবে অনেকে মনে করেন আর্কিমিডিসের হাতে প্রথম যন্ত্র ঘড়ি জীবন পায়। যেটুক তথ্য এই মুহুর্তে আছে তাতে জানা যায় ‘গ্রেটটম’ নামে ১২৮৮ সালে একটি ঘড়ি তৈরী হয়েছিল লন্ডনে। ফ্রান্সের রাজা চার্লস ডি র জন্য ১৩৬০ সালে একটি ঘড়ি তৈরী হয়েছিল যা আজো সচল। আমেরিকায় প্রথম ফিউজ স্পন্সর তৈরী করেন হাত ঘড়ি।
বর্তমানে পারমানবিক ঘড়ি আছে যে ঘড়ি সেকেন্ডের দশ কোটি ভাগের এক ভাগ ও সময় হের ফের করেনা। এ রকম দুটি ঘড়ি আছে ইউ এস এন বি এস ল্যাব্রেটরিতে।
Thursday, December 7, 2017
নারীবাদ বা ফিমিনিজমের ৭ কাহন
যা দেবী সর্বভূতেষু ফিমিনিজমরুপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ
পৃথিবীতে ২ ধরনের মানুষ পাওয়া যায়।
একদল নারী যারা মনে করেন হাজার বছর ধরে পুরুষ বা ছেলেরা মেয়েদের উপর জুলুম অত্যাচার করে আসছে। এরজন্য ফিমিনিজম বা নারীবাদ থাকাটা খুব দরকার।
কথা তো সত্য !
২য় হলো সেই পুরুষরা যারা বলে যাচ্ছেন ফিমিনিজমের কারনে পুরুষের উপর বা তাঁর পরিবারের উপর দিন দিন অত্যাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরজন্য এই তথাকথিত নারীবাদ নিপাত যাক।
কথা তো এটাও সত্য।
এবার আসি ৩য় ক্যাটাগরির মানুষের দিকে। ইনারা আসলে কনফিউসড এই ২ দলের মানুষের দাবীর মুখে। এরা আসলে কোন দলে যাবেন বা কোন দলে থাকবেন তা বুঝতে পারছেন না। তাই সবার মতন এরাও মধ্য পন্থা অবলম্বন করেন।
আসুন তাহলে ফিমিনিজমের এই জটিল সমিকরনে একটু চোখ বুলাই।
ফিমিনিজম মানে হল সমান অধিকার। অর্থাৎ লিঙ্গের কারনে সমাজে কোন নারী যাতে বৈষম্যের শীকার না হয়। পুরুষ নারী এক নয়। এটা যেমন সত্যি তেমনি অধিকার সকলের সমান। কেউ কম বেশী যাতে না পায় সেইদিকে সজাগ থাকা।
কিন্তু আমাদের আশে পাশের ইয় ইয় জেনারেশন যারা বর্তমানে ইন্টারনেট জগতে বাস করছেন তারা এই সম্পর্কে কি ভাবেন?
আমি নিজে আমার আশে পাশের কিছু ইউথকে (যারা টপস জিন্স পরে বা হাতে ট্যাটু আর হাল্কা দাড়ি রেখে ফেবুতে দিন-রাত ছবি আপলোড দেন) তাঁদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনাদের কাছে ফিমিনিজম কি? উত্তর কিছুটা নিম্নরুপ
১ম ব্যাক্তি- যিনি দিনরাত জিমে নিজের মাসল বিল্ড করেন তাঁর কাছে ফিমিনিজম মানে হল সেই ছেলেরা যারা জিমে নাকি ব্যায়াম করতে করতে উনাকে দেখেন, মানে ঐসব ছেলেরা যারা ছেলেদের দেখে আকর্ষন বোধ করেন। বলা বাহুল্য আমার সেই বন্ধুটি আমার মতই দেশের নামকরা বিজনেস স্কুল থেকে গ্রেজুয়েট।
২য় ললনা- উনারা আসলে ২ জন বান্ধবী খুব ফটর ফটর ইংরেজী ঝাড়া ঝিংকু মামনি। উনাদের সাথে কথা হয়েছে ফিমিনিজম নিয়ে। তা উত্তর হিসাবে আসছে ‘ according to me feminism is ……. !!!! এই তুই বল! না না তোকে বলেছে তুই বল। হা হা হা …. হি হি হি … হে হে হে !!
৩য় ব্যাক্তি- গ্রাম থেকে আসা একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। উনার সরল উত্তর। ফিমিনিজম হল মেস্কুলিনজম এর উল্টো !!!!
৪র্থ বালক- যিনি সদ্য স্কুল পাশ করেছেন। উনার কাছে ফিমিনিজম হলো যে ছেলে মেয়েদের মতন দেখতে তাকে ফিমিনিজম বলে।
৫ম ললনা- যিনি সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। উনার মতে ‘ যখন আমরা বাইরে ফেন্সি ড্রেস পড়ে বের হই, গাড়ীতে লাউড মিউজিক প্লে করি, চিল করি, একটু হাল্কা হার্ড ড্রিঙ্ক করি সেটাই ফিমিনিজম।
৬ষ্ঠ ললনা- মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্রী। উনার মতে ফিমিনিজম হল যদি কোন ছেলে কোন মেয়ের এডভান্টেজ নেয় আর কোন মেয়ে যদি সেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় আর সেই ছেলেকে মারধর করে সেটাই ফিমিনিজম।
Seriously!!! এই লেভেলের মিস্কন্সেপসন কই থেকে আসে এদের মাথায় কে জানে।
আলোচনা করবো তবে এর আগে এর ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেই আসুন।
নারীবাদ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দFeminism. Feminism শব্দটি এসেছে ফরাসী শব্দFemmenisme থেকে। Femme অর্থ নারী, isme অর্থ মতবাদ। ১৮৮০ এর দশকে ফ্রান্সে শব্দটি গৃহীত হয়। পরে ইংরেজি ভাষায় গৃহীত হয়।
নারীবাদ সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। নারীবাদী Christina Hoff Sommers এর মতে, নারীবাদ হচ্ছে, A concern for women and a determination to see them fairly treated.' বিশিষ্ট নারীবাদী চিন্তাবিদ ` Kamla Basin ও Nighat Said Khan তাদের Workshop on South Asian Womenএ নারীবাদ সম্পর্কে বলেন, '
An awareness of women's oppression and exploitation in society, at work and within the family, and conscious action by women and men to change this situation.'
Olive Banks তার Faces of Feminism গ্রন্থে উলেস্নখ করেছেন যে, গোষ্ঠী নারীর অবস্থান কিংবা নারী সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা পরিবর্তনে প্রয়াসী তাদের নারীবাদী বলে আখ্যা দেয়া হয়।
Rosemarie Putnam tong তার Feminist Thought গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
No doubt feminist thought will eventually shed these labels for others that better express its intellectual and political commitments to women.
নারীর অধ:সত্মন অবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টার ঘটনার সঙ্গে নারীবাদ সম্পর্কিত। নারীবাদ হল _ পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও সমাজে নারীর উপর শোষণ-নিপীড়ন সম্বন্ধে সচেতনতা এবং এই অবস্থা বদলের লক্ষ্যে নারী (পুরুষের) সচেতন প্রয়াস।
নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশঃ
পাশ্চাত্যে নারীর মূল্য নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন ফরাসী রাজসভার নারী সদস্য Christin de Pizan. ১৪০৫ সালে তিনি The book of the city of Ladies নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৬৬২ সালে ওলন্দাজ নারী মার্গারেট লুকাস রচিত 'নারী ভাষণ'(Famel orations) হলো বিশ্বের জ্ঞাত ইতিহাসের প্রথম নারীবাদী সাহিত্য যেখানে নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয়টি বিধৃত হয়েছে। নারীবাদের ইতিহাসে প্রথম নারীবাদীরূপে যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন সতের শতকের ফরাসি নারী পলেইন ডিলা ব্যারে। পশ্চিমে নারী মুক্তির লড়াই একটি সুসংগঠিত রূপ নেয় সাফ্রাজেট এন্দালনের মাধ্যমে। নারীবাদকে প্রথম সংগঠিত আকারে উপস্থিত করেন ইংল্যান্ডের মেরি ওফেস্টোনক্রাফট তাঁর বিখ্যাত সারা জাগানো নারীবাদী গ্রন্থ 'নারীর অধিকারের ন্যায্যতা' ((Vindication of reights of women)) গ্রন্থে ১৭৯২ সালে। ১৮৪০ সাল থেকে আমেরিকার দাস প্রথা ও মদ্যপান বিলোপ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীতে নারীবাদী চেতনা আরো বিকশিত হয়। ১৮৯১ সালে এলিজাবেথ কেডি স্ট্যান্টন আরো ২৩ জন নারীসহ মিলিতভাবে রচনা করেন 'THE WOMAN'S BIBLE'। ১৮৬৮ সালে নর-নারীর অভিন্ন অধিকার প্রচারের লক্ষ্যে নারীবাদী সাময়িকী 'দি রেভোলিউশন' প্রকাশ করেন।
ঊনবিংশ শতব্দীর শেষার্ধে সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীগণ বেশ কিছু মৌলিক তত্ত্ব প্রচার করেন। ব্রিটেনে উদারনৈতিক সংস্কারবাদী জন স্টুয়ার্ট মিল রচিত The Subjection of Women', জার্মানির অগাষ্ট বেবেল রচিত Woman and Socialism এবং ফ্রেডারিক এঙ্গেলস রচিত The Origin of the family, Private Property and the State শিরোনামের গ্রন্থাবলী উলেস্নখযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফ্রান্সে সিমন দ্যা বুভ্যেয়ার রচনা করেন The Second Sex' নামক গ্রন্থ।
১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লেখক কেট মিলেট 'Sexual Politics' নামে সাড়া জাগানো গ্রন্থ রচনা করেন। এর বহু পূর্বে ১৮২৫ সালে ইংল্যান্ডে নারীর অধিকারের পক্ষে প্রথম পুরুষ দার্শনিক উইলিয়াম টমসন এর বই 'The half portion of mankind women's appeal to the rest portion gainst male chauvinism' প্রকাশিত হয়। আধুনিক নারীবাদীদের মধ্যে ভার্জিনিয়া উল্ফ এর সাহিত্যকম, ১৯৬৬ সালে বেটি ফ্রাইডান রচিত 'The Feminine Mystic ১৯৭০ সালে জার্মেইন গ্রিয়ার এর 'The Female Eunac, গুলাস্মিথ ফায়ারস্টোন-এর 'ডায়ালেকটিকস অব সেঙ্', আলেকজান্দ্রা কোলনতাই এর 'Sexual Relation and Class Struggle, এরিকা ইয়ং রচিত 'Fear for Flying', কেটি বোইফে এর Beauty myth ও 'Fire with Fire' প্রভৃতি বিখ্যাত গ্রন্থ নারীবাদের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে।১৮৩৭ সালে আমেরিকায় প্রথম দাসপ্রথা বিরোধী নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমে মার্কিন নারীরা রাজনীতি করার অধিকার ও সুযোগ পায়। ১৮৪৮ সালের ১৯-২০ জুলাই নারীবাদীদের উদ্যোগে নিউইয়র্কের সেনেকো ফলস এ বিশ্বের প্রথম নারীর অধিকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা করে। ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়। ১৯১০ সালে জামর্ান কমিউনিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেডকিন নেত্রী কর্তৃক আনত্মর্জাতিক শ্রমজীবী নারী সম্মেলনে উত্থাপিত প্রসত্মাব অনুযায়ী ১৯১৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৮ মার্চ আনত্মর্জাতিক নারী দিবস পালনের সিদ্ধানত্ম গৃহীত হয়। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আনত্মর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
১৮৮৫ সালে মেরী কার্পেন্টারের নেতর্ৃত্বে নারীদের মানবিক অধিকারের জন্য সংগঠন তৈরি হয় এবং আন্দোলন অব্যাহত থাকে যা নারীবাদী আন্দোলনরূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৩ সাল নাগাদ এমিলিন প্যাঙ্কখাস্টের নেতর্ৃত্বে ইংল্যান্ডে নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক ইউনিয়ন গঠন এবং নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন তীব্র হয়। ফ্রান্সে নারীবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ৩০-এর দশকে। ১৮৪৮ সালে নিবয়েট এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'Women Voice' পত্রিকা। জার্মানিতে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী ও আনত্মর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চের ঘোষক ক্লারা জেটকিন মার্কসবাদ বা সমাজতন্ত্রের সঙ্গে নারীবাদের সেতুবন্ধন ঘটান। ১৮৬৬ সালে দার্শনিক ও আইনজ্ঞ স্টুয়ার্ট মিল ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্য হবার পর নারীর ভোটাধিকারের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন পার্লামেন্টে। ১৮৭৯ সালে বিখ্যাত নাট্যকার হেনরি ইবসেন এর কালজয়ী নাটক 'পুতুলের খেলাঘর' (The Dolls House) এর নায়িকা নোরা চরিত্রটির মাধ্যমে আধুনিক নারীবাদী চেতনা মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। অগাস্ট বেবেল এর 'নারী: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত' গ্রন্থটি নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম দিকদর্শনরূপে চিহ্নিত হয়েছে।
কারন ১ঃ মিসরিপ্রেজেন্টেশন! ফিমিনিজম নিয়ে গত ৩ বছর আগে বলিউডের প্রখ্যাত নায়িকা দীপিকা পাডুকন একটি এড ক্যাম্পেইন লিড করেন যার ট্যাগ লাইন ছিল ‘ মাই বডী , মাই চয়েস” । ঐ ভিডিওতে অনেক বিষয়বস্তু একজন স্বাধীন ইনডিপেন্ডেন্ট নারীর পয়েন্ট অফ ভিউ দিয়ে দেখেছেন আর কথা বলেছেন। উনি সেই ভিডিওতে এও বলেছেন যে ‘ বিবাহিত মহিলারা স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে সেক্স করলেও এটা দোষের কিছু না। এটা নাকি উনাদের অধিকার। কারন মাই বডি মাই চয়েস!!!!! আপনারা কি বলেন? এটা কি ফিমিনিজম? দীপিকা এটা কিভাবে ভুলে গেলেন যে প্রতিটা চয়েসের বিপরীতে একটি কন্সিকুয়েন্স বা রেজাল্টও আসে। একিভাবে বলিউডের আরেকটি ফিল্ম যার নাম জাব তাক হে জান সেখানে আরেক বলিউড নায়িকা ক্যাট্রিনা কাইফ একজন মডার্ন ইনডিপেন্ডেন্ট মহিলা। সেখানে উনি বলেছেন ‘ I want to sleep with every nationality before getting married’
আচ্ছা ! উনি যদি এরকম না করেন এর মানে কি উনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বা মডার্ন নন?
ক্যাট্রিনা বলেছেন এর মানে উনি মডার্ন ,স্মার্ট ইনডিপেন্ডেন্ট !!
একি কথা আমাদের গ্রমাএর লেবু চাচা বললে উনি চরিত্রহীন , লম্পট !
একি কথা আমি আমার ফেবুতে বললে আমি ‘ pervert, sex maniac , NYMPHO” !!!
কারন ২ঃ স্টেরিওটাইপ চিন্তা ! আমাদের ব্রেনে ফিমিনিজম নিয়ে একটি থট বা চিন্তার ছাপ যেন ছেপে গেছে। আমাদের মতে ফিমিনিষ্ট মহিলা মিডিল এজের হলে তিনি স্লীবলেস ব্লাউজ পড়বেন, কোন মহিলা ক্লাবের সদস্যা হবেন, কানে লম্বা দুল পড়বেন, চুল ববকাট করবেন, কপালে ৫ ইঞ্চি মোটা টিপ দিবেন, আর হাতে হুস্কির গ্লাস নিয়ে পার্টি করবেন।
ফিমিনিষ্ট যুবতী হলে মেয়ের সারা শরীরে ১০০+ ট্যাটু থাকবে , হাতে জলন্ত সিগারেট থাকবে , চুলে ৭ রঙের শেড থাকবে, শরীরে ছোটো কাপড় থাকবে…. ইত্যাদি ।
ছেলেরা ফিমিনিষ্ট হলে কেমন হবে? ঐ ব্যাক্তির শরীরে পিঙ্ক কালারের শার্ট থাকবে , শুধু ব্রিজার পান করবেন, আর হাতে সিগারেট থাকলেও তাঁর পেছনে লম্বা পাইপ থাকবে যাতে উনার ঠোঁট কালো হয়ে না যায়।
কিন্তু ভাইজান ! আসলে ফিমিনজমের কনো ড্রেস কোড নেই। ফিমিনজমের যারা ব্র্যান্ড আম্বেসেডর আছেন যেমন জাভেদ আখতার, শরা ভাসকর , রাজা রামমোহন রায়, জ্যতির্বাপউলে ইত্যাদি , ইনারা কেউ এরকম ছিলেন না বা নেই।
কিন্তু এসব কিভাবে শুরু হলো ? আমাদের সমাজে কি এসব পেট্রিয়ার্কি প্রথম থেকেই ছিল? না। যেকোনো সমাজে যান, এদের শুধু একটাই চাহিদা। টাকা, পয়সা, মাল…. ঠিক ধরেছেন। ইকনমিক্স বা অর্থ ব্যাবস্থা। আর সমাজ এই ইকনমিক্সের ধারাতেই বদলায়। ফিমিনিজম থাকবে না থাকবে না। থাকলেও কিভাবে থাকবে ইত্যাদি।
আসুন একেবারে পেছনে যাই। প্রস্তর যুগে যা হতো তা অনেকটা এরকম। পুরুষ বাইরে পাথর ভাঙত তখন মেয়েরা সেই পাথর জড়ো করার কাজ করতেন। পুরুষ মহিলা একসাথে কাজ করতেন। ঘরের মাঝেও একি ব্যাবস্থা ছিল। পুরুষ শিকার করতেন আর মহিলা তা রান্না করতেন। একে অন্যের পরিপূরক ছিলেন। তাই তখন ঝগড়া হতো না আর পুরুষের সোফাতেও ঘুমানো লাগত না। সমাজে ইকুয়ালিটি ছিল। কিন্তু যত সময় গেল সমাজ বিস্তার লাভ করলো। বর্ডার হলো। মানুষ এই বর্ডার রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করতে লাগলো। আর যুদ্ধ মানেই ফিজিকাল এক্টিভিটি। যা অধিকাংশ পুরুষরা করতেন। যার জন্য অনেক পুরুষের দরকার ছিল। সৈন্যের দরকার পড়লো। তা এই পুরুষ( সৈন্য) কই থেকে আসবে? প্রোডাকশন হিসাবে তখন নারীকে ব্যাবহার করা শুরু হলো।এর ফলশ্রুতিতে পুরুষ একাধিক নারীকে রাখা শুরু করলেন। মানে একাধিক বিবাহ। পুরুষ যখন যুদ্ধে বছর কে বছর পার করতেন তখন পরিবার কিভাবে আগাবে? যুদ্ধে তো সৈনিক দরকার!
রেজাল্টঃ সাম্রাজ্য বাড়ানোর জন্য যুদ্ধ! যুদ্ধের জন্য বেশী সৈনিক, বেশী সৈনিকের জন্য বেশী স্ত্রী। যুদ্ধে জয় তখনি সম্ভব যখন বেশী বেশী সৈনিক থাকবে। আর সাম্রাজ্য বাড়লে অর্থ বাড়বে । ইকোনমি বুষ্ট হবে। এখানে বোঝাই যাচ্ছে ইকোনমি সিদ্ধান্ত নেয় মেয়েদের কিভাবে সে ব্যাবহার করবে।
iDiva পেজের এই ২ জন তথাকথিত ফিমিনিষ্ট। যারা নিজেরাই জানে না এরা কি চায় |
ভাইজান এটা পুরুষ শাসন নয় বরং ক্যান্সারের প্রতীক। এটা কিভেব ভুলে গেলেন ??!!! এডয়ার্ড বার্নিসের সময় ভাগ্য ভালো নারীর অন্তর্বাস সেল বাড়ানোর দরকার পড়ে নাই। নাহলে উনি পুরুষকেও এটা পড়তে উৎসাহিত করতেন। আর এড এজেন্সি গুলো এইটা নিয়ে এমনসব বিজ্ঞাপন তৈরি করতো যা দেখলে আসলেই আমাদের(ছেলেদের) সাইকলজি বলতো ‘ আসলেই আমাদের ব্রা পরা উচিৎ!!” যেমনটা ইদানিং কিছু হিন্দি এড দেখি। যা দেখলে আসলে মাথা ব্যাথ্যা করে।কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের সমাজ??
যাইহোক,এর ফলে কি হলো? ঐ বছরে মানে ১৯২০ সালে নিউ ইয়র্ক ইষ্টার প্যারেডে অনেক নারী বোকার মতন মুখে সিগারেট খেয়ে রাস্তায় নামলো। আর মিডিয়া …. যারা পুঁজিবাদের সহায়ক হিসাবে সবসময় কাজ করে থাকে এরা এই ঘটনা এমনভাবে প্রেজেন্ট করতে লাগলো যে এই কাজটা অসাধারন হয়েছে। মেক্সিমাম পত্রিকার হেডলাইন ছিল ‘ মেয়েরা নিউ ইয়র্কের রাস্তায় স্বাধীনতার মশাল জ্বালিয়েছেন!! ”
সিগারেট = স্বাধীনতার মশাল !
ভারত কেন ১৯৪৭ এ এতো কষ্ট করলো? বাংলাদেশ কেন ১৯৭১ এ এতো রক্ত দিল। সোজা পাকিস্তানী বা ব্রিটিশএর সামনে সিগারে জ্বালালেই হতো??!!
Torch of freedom!!! |
এবার আসুন ২০ বছর পরের সিনে মানে অয়ার্ল্ড অয়ার ২এর সময়। সমস্ত পুরুষ আবার যুদ্ধে অংশ নিল। আর মহিলারা ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারতো না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে তো কাজ চলতে হবে নাহলে টাকা আসবে কোথা থেকে? পুরুষ তো নেই! তাহলে কে কাজ করবে?? তখন আবার সেই একি কাজ! ফিমিনিজম বা নারীবাদকে ব্যাবহার করা হলো।
মহিলারা ঘরে বসে থাকার জন্য জন্মে নাই ! এদের ঘর থেকে বের হতে হবে। কাজ করতে হবে পুরুষের মতন করে। মহিলার কম না!! ফলে যা হবার তাই হলো। সাধারন মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাদীদের উদ্দেশ্য সফল হতে লাগলো।
যুদ্ধ শেষ হলো। পৃথিবীতে শান্তি(!!) আসলো। এবার আসুন সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি রেভলুশন সময়ে। কেউ আর বাইরে কাজ করতে হয় না। অফিসে বসে কম্পিউটারে ঠক ঠক !
ফলে যা হল, একি জব এক্সিস্টেন্সি যেখানে পুরুষ মহিলা একি পজিসনে একি সেলারিতে কাজ করছে। এর ফলে পুরুষের ইগো সামনে আসলো। আমাদের পরিবার বা সমাজে এই কোথা প্রতিটা ছেলেই শুনে থাকবেন ‘ মেয়ে হয়েও কত কামায়??!!” মানে কি? মেয়ে হয়েও কথাটার মানে কি? সজা বললেই বললেই তো হয় মেয়েটা উপার্জন করছে। মেয়ে হয়েও মানে কি? এটা কি লিঙ্গ বৈষম্য আসে না?
ছেলেদের ক্ষেত্রেও কম লিঙ্গ বৈষম্য কম হয় না ভাইজান,
এইইইই ! ছেলে হয়ে কাঁদে কেন!!
ছেলেরা কাঁদে না!
কেন ভাই? ছেলেদের হৃদয় নেই? এদের ইমোশন নেই??
আর এইটা বেষ্ট ! বউয়ের পয়সায় কিভাবে খায়?? লজ্জা করে না?
কেন ভাই কেন খেতে পারবো না? বৌ যদি আমার পয়সায় খেতে পারে আমি কেন পারবো না?
ছেলে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে ….উনি যদি মেয়ে হয়ে আমার বাড়ীতে থাকতে পারে আমি কেন পারবো না?? ইকুয়ালিটি ভাইজান!!
মহিলারা ঘরে বসে থাকার জন্য জন্মে নাই ! এদের ঘর থেকে বের হতে হবে। কাজ করতে হবে পুরুষের মতন করে। মহিলার কম না!! ফলে যা হবার তাই হলো। সাধারন মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাদীদের উদ্দেশ্য সফল হতে লাগলো।
যুদ্ধ শেষ হলো। পৃথিবীতে শান্তি(!!) আসলো। এবার আসুন সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি রেভলুশন সময়ে। কেউ আর বাইরে কাজ করতে হয় না। অফিসে বসে কম্পিউটারে ঠক ঠক !
ফলে যা হল, একি জব এক্সিস্টেন্সি যেখানে পুরুষ মহিলা একি পজিসনে একি সেলারিতে কাজ করছে। এর ফলে পুরুষের ইগো সামনে আসলো। আমাদের পরিবার বা সমাজে এই কোথা প্রতিটা ছেলেই শুনে থাকবেন ‘ মেয়ে হয়েও কত কামায়??!!” মানে কি? মেয়ে হয়েও কথাটার মানে কি? সজা বললেই বললেই তো হয় মেয়েটা উপার্জন করছে। মেয়ে হয়েও মানে কি? এটা কি লিঙ্গ বৈষম্য আসে না?
ছেলেদের ক্ষেত্রেও কম লিঙ্গ বৈষম্য কম হয় না ভাইজান,
এইইইই ! ছেলে হয়ে কাঁদে কেন!!
ছেলেরা কাঁদে না!
কেন ভাই? ছেলেদের হৃদয় নেই? এদের ইমোশন নেই??
আর এইটা বেষ্ট ! বউয়ের পয়সায় কিভাবে খায়?? লজ্জা করে না?
কেন ভাই কেন খেতে পারবো না? বৌ যদি আমার পয়সায় খেতে পারে আমি কেন পারবো না?
ছেলে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে ….উনি যদি মেয়ে হয়ে আমার বাড়ীতে থাকতে পারে আমি কেন পারবো না?? ইকুয়ালিটি ভাইজান!!
সমাজ বা সোসাইটি যে কি পরিমান হিপক্রেসিতে ভুগছি তা একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বোঝা যায়। উদাহরন দিচ্ছিঃ আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ড। বুয়েট থেকে পাশ করা। আইটি ফার্মে ৫০ হাজার টাকার বেতনের চাকরী করে। প্রতি বছর থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, চীন, নেপাল ইত্যাদি এশিয়ান দেশে ভ্রমন করে। খুব মর্ডান। লিপষ্টিক মেকাপ ছাড়া বাসার বাইরে বের হোন না। টপ্স জিন্স, সানড্রেস, সিঙ্গেল সল্ডার ড্রেস ইত্যাদি আল্ট্রা মর্ডান আউটফিটে থাকে সব সময়। নারীবাদের জ্বালাময়ী ইকুয়ালিটির ভাষন ওর মুখে সবসময়। ‘আমি নিজের চেষ্টায় নিজের আইডেন্টিটি বানিয়েছি। আমি মর্ডান, ইনডিপেন্ডেন্ট। কনো পুরুষের মুখাপেক্ষী না।’ কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞ্যাসা করায় বলে “ আমার বর অবশ্যই আমার থেকে বেশী ইনকাম করতে হবে। নাহলে আমি কিভাবে ওকে রেস্পেক্ট করবো? অমা! নিজের বাড়ী না থাকলে হবে নাকি?? অবশ্যই আমার থেকে লম্বা হতে হবে নাহলে কেমন লাগে??’
আমার মুখটা ছিল তখন দেখার মতন। বিশাল প্রশ্নবোধক সাইন নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ‘ এখন তোর ফিমিনিজম কই গেল?? এটা কি ইকুয়ালিটী??’
উত্তরঃ তুই খুব বেশী বাজে বকিশ!!
এবার ২য় ঘটনায় আসি। আমার প্রথম ব্রেকাপ আমার প্রথম ডেটেই হয়ে যায়। কিভাবে? মেয়ে ভালো শিক্ষিত টাকাওলা পরিবারে জন্ম। নিজেও ২৫ হাজার টাকার জব করছে পার্টটাইম গ্রামীন ফোনে। ঢাকার একটা রেস্তরাতে দেখা করতে গেলাম। বিল আসার পর বললাম ‘আসুন ৫০০-৫০০ স্প্লিট করি।’ এরপর উনার চেহারা লাল, কান গরম , পাঁদার জন্য তৈরি!!! আমি মনে মনে বললাম কি এমন বলে ফেলছি ভাই? পরেরদিনই ফোন দিয়ে ব্রেকাপ !
এই হলো সমাজের অবস্থা। আসলে দোষ উনাদের নয়। দোষ ফিমিনিজমেরও নয়। দোষ হলো কিছু প্রিটেন্ডার মানুষদের। যারা আসলে কি চায় এরা নিজেরাও জানে না। উদাহরন স্বরূপ একটা ফিমিনিষ্ট(!!) পেজের নাম বলি আই ডীভা । এই পেজ থেকে যেসব ভিডিও আপলোড হয় তা দেখেলেই বোঝা যায় যে এরা কি পরিমান কনফিউসড মেসেজ দিয়ে থাকে।
আসলে পেট্রিয়ার্কি আসবে নাকি ফিমিনিজম আসবে সেটা ডিসাইড করে সমাজ আর পুঁজিবাদ। এই কারনে এই সমস্যা। তাইবলে সব ফিমিনিষ্ট যে খারাপ তা কিন্তু না। দেশে যারা অল্পবিস্তর ফিমিনিষ্ট আছেন তাঁদের উচিৎ সবার সাথে কথা বলা। যুদ্ধ নয়। বুঝিয়ে আসল নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা। রাস্তায় যাতে মেয়েরা ভালো করে স্বাধীনভাবে চলতে পারে,পুরুষ নারী সম অধিকার পায়, উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী যাতে নারীদের ব্যাবহার না করতে পারে, নারীকে কনো কালো মধ্য যুগীয় বস্তায় বন্দি করতে না পারে ইত্যাদি অগনিত ইস্যু নিয়ে কাজ করা। কিন্তু আজকাল ঠিক তাঁর উল্টো চিত্র। ফিমিনিজমের নামে বা নারী অধিকারের নামে যা হচ্ছে তা আমার চোখে পুরুষ বিরধীতা, পুরুষকে উত্যক্ত করা, প্রাচীন সুন্দর সমাজ ব্যাবস্থাকে সেকেলে বা চেঞ্জের নামে ব্যাঙ্গ করা। আর নারীবাদী সংঘটনগুলো নারী অধিকারের নামে অথবা আইনি সহায়তার নাম করে পুরুষ শোষণ করে যাচ্ছে। নারীদের জন্য সরকারের করা আইনকে অপ-ব্যাবহার করে যাচ্ছে প্রতিদিন। বিশ্বাস হয় না? একবার ডিষ্ট্রিক কোর্টের পারিবারিক আদালতে গিয়ে দেখে আসুন কি নোংরামি হয় সেখানে। আমি নিজে ভুক্তভোগী তাই জানি এসব তথাকথিত ফিমিনিষ্টরা কি পরিমান ভয়ংকর হয়। নিজের পেটের মেয়ের ভবিষ্যতকেও ১২টা বাজিয়ে দেয় শুধুমাত্র ইগোর কারনে।
কেউ আবার মনে করবেন না যে আমি ফিমিনিজমের বিরুদ্ধে।
ফিমিনিজমের পজিটিভ সাইড হলো দেশের জিডিপির মাঝে উন্নতি হয়। ইউ এন এর রিপোর্ট অনুযায়ী নারী অধিকারের ইকুয়ালিটি একটি বানিজ্য বান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করতে সহায়ক। উদাহরন স্বরূপঃ
ইটালী,মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ২১%
স্পেনে , যেখানে মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ১৯%
জাপান, যেখানে মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ১৬%
আমেরিকা, যেখানে মেয়েদের জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশন ৯%
ছেলেদের বোঝা উচিৎ। মহিলারা যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে, নিজেদের খরচ নিজেরাই চালাতে পারে তাহলে ছেলেদের উপর দায়িত্বও অনেক কমে যায়। স্ট্রেস লেভেল কমে যায়। তাই আসুন সকলে আসল ফিমিনিষ্ট হই।
এবার একটু আইন বিষয়ে কথা বলবো। যা যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩। এই ২টি আইনের মিসিউজের ফলে অনেক পুরুষ আর তাঁর পরিবারকে নিয়ে পথে বসেছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অনেক বাড়ির বৌ যাকে ঘরের লক্ষী হিসাবে ধরা হয় সেই লক্ষী মিথ্যা মামলার মাধ্যমে স্বামীর পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়ায়। আর এর ফলে পুরুষের আত্মহত্যার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। আর এটা ফ্যাক্ট বলছি। কোন বানানো কথা নয়। ভারতের সুম্প্রীম কোর্ট বলেছেন “ this section 498-A is used as a weapon for legal terrorism’
মজার ব্যাপার হলো এই ব্যাপারে আজ পর্জন্ত কনো নারীবাদিকে মুখ খুলতে দেখলাম না। এদের বোঝা উচিৎ। equal rights এর মাঝে equal প্রথমে আসে। rights পরে আসে। Feminism is not about being one thing on the other. Its about having a choice of being anything without any explanation.
তাহলে আসল ফিমিনিষ্ট কে? যেমন সকল সুট-বুট পরা লোক ভালো মানুষ না। তেমনি ফেবু বা টুইটারে ১ মিলিয়ন ফলয়ার হলেই কেউ ফিমিনিষ্ট হয় না।
আর হ্যা যেতে যেতে আমার সব পুরুষ ভাইদের বলছি। প্রথম ডেটে গেলে আপনার উনাকে অবশ্যই ৫০% বিল শেয়ার করতে বলবেন। যখনি দেখবেন উনার ফাটছে এই ৫০% বিল শেয়ার দিতে বুঝবেন আপনি কুলুর বলদ হতে চলেছেন। আর হ্যা আমি মজা করছি না। I am suggesting this! আপনি কি বলেন? কমেন্ট করে জানান।
সনাতন ধর্মে নিষিদ্ধ খাবার সমূহ
আজকাল অনেক হিন্দুকেই দেখি অনেক নিষিদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই এরা এই সম্পর্কে জানেন না। বা অবগত নন। কারন ধর্ম সম্পর্কে উদাসীনতা তথা পরিবার থেকে এই ব্যাপারে কনো চাপ এরা পান না। ফলে গরুর মাংস থেকে শুরু করে প্রায় সবই খান এসব আল্ট্রা মর্ডান যুবকের দল।
আসুন সনাতন ধর্মের নিষিদ্ধ খাবার গুলোর নাম জানি। আর যথা সম্ভব তা মেনে চলার চেষ্টা করি। এই লেখাটি বাঙালী হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য লিখা হয়েছে যারা হিন্দু সংস্কার (সম্প্রদায় ভিত্তিক নয়) কে অবলম্বন করে চলেন এবং জানতে ইচ্ছা রাখেন কোন কোন খাবার গুলো হিন্দু শাস্ত্রের সাপেক্ষে সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দু শাস্ত্র বলতে বেদ, পুরাণ ও তন্ত্রের মূল গ্রন্থ গুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই বৈধ-অবৈধ খাবারের সূচীটি বানানো হয়েছে।
প্রাণীজ
দুধ
✪ উট ও ভেড়ার দুধ পান করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২২-২৩, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১১-১২, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
✪ এক খুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – ঘোড়া) দুধ পান করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৩, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
✪ গরু, মোষ, ছাগলের বাচ্চা জন্মানোর পর থেকে ১০দিন যাবৎ তাদের দুধ পান নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৪, বসিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৫, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৯, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
✪ নিচুস্তরের পশু (যেমন – কুকুর, বেড়াল) ও মাংসাশী পশুর (যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল) দুধ পান নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৮৪
ডিম
✪ হাঁস, মুরগি, ময়ুরের ডিম খাওয়া সিদ্ধ। তথ্যসূত্র – মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪, ভেল সংহিতা – চিকিতসাস্থানম – ২৬৭, চরক সংহিতা ২৭.৬৩-৬৪
মাছ-মাংস
✪ সাপ, কুমীর, ঘড়িয়াল, শুশুক, সর্প আকৃতির মাছ, ব্যাঙ, অনিয়তকার মস্তক বিশিষ্ট মাছ (যেমন – ইল, কুঁচে মাছ, হাঙর, তিমি ইত্যাদি) ও জলজ শামুক, ঝিনুক, গুগলি ইত্যাদি খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪১, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৬, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৮-৩৯
✪ বন্য মোরগ/মুরগি খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত মোরগ/মুরগি খাওয়া সিদ্ধ।
✪ যে সমস্ত পাখী শুধু তাদের পা দিয়ে মাটিতে আঁচড়ে আঁচড়ে খাবারের সন্ধান করে এবং যেসব পাখীরা লিপ্তপদী (যেমন – হাঁস) তাদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭
✪ রাজহাঁস, সারস, পানকৌড়ি, বক, কাক, পায়রা, টিয়া, ঘুঘু, তিতির, বাজ, চিল, শকূন, বাদুড়, ময়ূর, স্টার্লিং, দোয়েল, চড়ুই, কাঠঠোঁকরা, মাছরাঙা এবং নিশাচর পাখীর মাংশ খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২-১৭৪
✪ মাংসাশী পাখির মাংশ আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৪, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২
✪ যেকোনো বিস্বাদ ও খাদ্য অনুপযোগী মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মনু স্মৃতি ৫.১১-১৭, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৪
✪ যে সমস্ত পশুর দুধের দাঁত ভাঙেনি তাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৫, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩০-৩১★ অর্থ্যাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক পশুর মাংস আহার নিষিদ্ধ।
✪ যে সমস্ত পশুর একটি মাত্র চোয়ালে দাঁত আছে (যেমন-ঘোড়া) তাদের মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪০, মনু স্মৃতি ৫.১৪, বিষ্ণু স্মৃতি LI.৩০
✪ যে সমস্ত প্রাণীর পা বহু অংশে বাঁকা। যেমন শজারু, কাঁটাচয়া, শশক, খরগোশ, কচ্ছপ, গোধা, গোধিকা ইত্যাদির মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৯, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.২৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫, মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪
✪ গণ্ডার ও বন্য শূকরের মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫
✪ নরমাংস বা নরাকার যন্তুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮
✪ গৃহপালিত পশু, ছাগল, ভেড়ে, শূকরের মাংশ খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১-৪★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত শূকরের মাংস বৈধ।
✪ গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
★ গ্রাম্য শূকর বলতে ফালতু শূকরের সেইসব প্রজাতি গুলোকে বোঝানো হয়, যারা আকারে ছোটো এবং পঙ্কিল নোংরা স্থানেই শুধু বাস করে। নোংরা স্থানে থাকার জন্য এদের মাংসে কৃমিজাতীয় পরজীবীর সিস্ট থাকে যা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে মানুষ সংক্রমিত হয়। উক্ত কারণের জন্য গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ কিন্তু গৃহপালিত শূকর নয়।
✪ যেকোনো মৃত প্রাণীর মাংস আহার করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.১৬
✪ বহু উপকারী গোজাতির মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, বিষ্ণু পুরাণ ৩.৩.১৫, ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ ১.৯.৯, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩-৪৫
✪ গৌর, ঘায়ল, সরাভ, ষাঁড় প্রভৃতি গো সম্প্রদায় ভুক্ত জীবের মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
✪ মাংসাশী প্রাণীর মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪
★ মূলত মাংসাশী প্রাণী বলতে উচ্চতর প্রাণীদের বোঝানো হয়েছে যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল, বন্য কুকুর ইত্যাদি। এদের শিকার করা কঠিন এবং মাংস নিরস, দুর্গন্ধ এবং কুরুচিকর স্বাদ যুক্ত হওয়ার জন্য পরিত্যাজ্য।
✪ একখুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – উটের) মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
✪ কৃষ্ণসার, নীলগাই, সাধারণ হরিণ, বন্য শূকরের মাংস খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৬
✪ স্বাদু ও লবণাক্ত জলের মাছ (যেমন- বিভিন্ন মেজর ও মাইনর কার্প, খাঁড়ির মাছ ইত্যাদি) আহার হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৮
অন্যান্য✪ যেকোনো আহারে উপযোগী বীজ, ফল, মূল, সব্জি খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১১.১২-২২
✪ সুস্বাদু আহারে উপযোগী রস (যেমন – খেঁজুরের রস, তালের রস, আখের রস, ডাবের জল, ফলের রস ইত্যাদি), দুগ্ধজাত পদার্থ (যেমন – দুধ, ঘি, মাখন, দই) মধু ইত্যাদি বৈধ।তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১৮.১২-১৩
✪ রসুন, পেঁয়াজ, পলাণ্ডু খাওয়ার উপর বিতর্কিত বিধান আছে, কাজেই ইহা খাওয়া যেতে পারে।
★আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৬, মনু স্মৃতি ৫.৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ১.১৭৬, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩ অনুসারে পেঁয়াজ রসুন খেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। অপরদিকে বৈদিক আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্র গুলিতে ভিন্ন চিকিৎসার কাজে পেঁয়াজ রসুনের ব্যাবহার উল্লেখ রয়েছে। কাজেই পেঁয়াজ রসুন খাওয়া কে নিষিদ্ধ বলা অযৌক্তিক।
✪ টকে যাওয়া (ব্যাতিক্রম – দই) বা পচে যাওয়া বা কোনো খাবারে উভয়ে মিশ্রিত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২০, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
✪ কুকুর, বিড়াল, বানর, মহিষ প্রভৃতি বন্য প্রাণীর মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৯৩, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩, মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪
✪ যে খাবারে কোনো পশু মুখ দিয়েছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.১০, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
✪ যে সব খাবারে পোকা জন্মছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.২৬, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
উক্ত নিষিদ্ধতার বাইরের খাদ্য বস্তু বা আহার সামগ্রী সমূহ বৈধ, কারণ সেইসব আহার সামগ্রীর উপরে নিষিদ্ধতা আরোপ হয়নি হিন্দুশাস্ত্র সমূহে।
আসুন সনাতন ধর্মের নিষিদ্ধ খাবার গুলোর নাম জানি। আর যথা সম্ভব তা মেনে চলার চেষ্টা করি। এই লেখাটি বাঙালী হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য লিখা হয়েছে যারা হিন্দু সংস্কার (সম্প্রদায় ভিত্তিক নয়) কে অবলম্বন করে চলেন এবং জানতে ইচ্ছা রাখেন কোন কোন খাবার গুলো হিন্দু শাস্ত্রের সাপেক্ষে সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দু শাস্ত্র বলতে বেদ, পুরাণ ও তন্ত্রের মূল গ্রন্থ গুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই বৈধ-অবৈধ খাবারের সূচীটি বানানো হয়েছে।
প্রাণীজ
দুধ
✪ উট ও ভেড়ার দুধ পান করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২২-২৩, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১১-১২, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
✪ এক খুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – ঘোড়া) দুধ পান করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৩, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
✪ গরু, মোষ, ছাগলের বাচ্চা জন্মানোর পর থেকে ১০দিন যাবৎ তাদের দুধ পান নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৪, বসিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৫, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৯, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭০
✪ নিচুস্তরের পশু (যেমন – কুকুর, বেড়াল) ও মাংসাশী পশুর (যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল) দুধ পান নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৮৪
ডিম
✪ হাঁস, মুরগি, ময়ুরের ডিম খাওয়া সিদ্ধ। তথ্যসূত্র – মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪, ভেল সংহিতা – চিকিতসাস্থানম – ২৬৭, চরক সংহিতা ২৭.৬৩-৬৪
মাছ-মাংস
✪ সাপ, কুমীর, ঘড়িয়াল, শুশুক, সর্প আকৃতির মাছ, ব্যাঙ, অনিয়তকার মস্তক বিশিষ্ট মাছ (যেমন – ইল, কুঁচে মাছ, হাঙর, তিমি ইত্যাদি) ও জলজ শামুক, ঝিনুক, গুগলি ইত্যাদি খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪১, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৬, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৮-৩৯
✪ বন্য মোরগ/মুরগি খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত মোরগ/মুরগি খাওয়া সিদ্ধ।
✪ যে সমস্ত পাখী শুধু তাদের পা দিয়ে মাটিতে আঁচড়ে আঁচড়ে খাবারের সন্ধান করে এবং যেসব পাখীরা লিপ্তপদী (যেমন – হাঁস) তাদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭
✪ রাজহাঁস, সারস, পানকৌড়ি, বক, কাক, পায়রা, টিয়া, ঘুঘু, তিতির, বাজ, চিল, শকূন, বাদুড়, ময়ূর, স্টার্লিং, দোয়েল, চড়ুই, কাঠঠোঁকরা, মাছরাঙা এবং নিশাচর পাখীর মাংশ খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪-৩৫, বিষ্ণু স্মৃতি LI.২৮-৩১, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৭, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২-১৭৪
✪ মাংসাশী পাখির মাংশ আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.৩৪, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৭২
✪ যেকোনো বিস্বাদ ও খাদ্য অনুপযোগী মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মনু স্মৃতি ৫.১১-১৭, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৪
✪ যে সমস্ত পশুর দুধের দাঁত ভাঙেনি তাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৫, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩০-৩১★ অর্থ্যাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক পশুর মাংস আহার নিষিদ্ধ।
✪ যে সমস্ত পশুর একটি মাত্র চোয়ালে দাঁত আছে (যেমন-ঘোড়া) তাদের মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪০, মনু স্মৃতি ৫.১৪, বিষ্ণু স্মৃতি LI.৩০
✪ যে সমস্ত প্রাণীর পা বহু অংশে বাঁকা। যেমন শজারু, কাঁটাচয়া, শশক, খরগোশ, কচ্ছপ, গোধা, গোধিকা ইত্যাদির মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৯, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.২৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫, মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪
✪ গণ্ডার ও বন্য শূকরের মাংশ খাওয়া সিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৭, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৫
✪ নরমাংস বা নরাকার যন্তুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮
✪ গৃহপালিত পশু, ছাগল, ভেড়ে, শূকরের মাংশ খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১-৪★ অর্থ্যাৎ গৃহপালিত শূকরের মাংস বৈধ।
✪ গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মার্কণ্ডেয় পুরাণ ৭.৬.৪, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
★ গ্রাম্য শূকর বলতে ফালতু শূকরের সেইসব প্রজাতি গুলোকে বোঝানো হয়, যারা আকারে ছোটো এবং পঙ্কিল নোংরা স্থানেই শুধু বাস করে। নোংরা স্থানে থাকার জন্য এদের মাংসে কৃমিজাতীয় পরজীবীর সিস্ট থাকে যা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে মানুষ সংক্রমিত হয়। উক্ত কারণের জন্য গ্রাম্য শূকরের মাংস নিষিদ্ধ কিন্তু গৃহপালিত শূকর নয়।
✪ যেকোনো মৃত প্রাণীর মাংস আহার করা নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.১৬
✪ বহু উপকারী গোজাতির মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, বিষ্ণু পুরাণ ৩.৩.১৫, ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ ১.৯.৯, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩-৪৫
✪ গৌর, ঘায়ল, সরাভ, ষাঁড় প্রভৃতি গো সম্প্রদায় ভুক্ত জীবের মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৪৩, আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
✪ মাংসাশী প্রাণীর মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – মহানির্ব্বাণ তন্ত্র ৮.১০৮, গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.৩৪
★ মূলত মাংসাশী প্রাণী বলতে উচ্চতর প্রাণীদের বোঝানো হয়েছে যেমন – বাঘ, সিংহ, শৃগাল, বন্য কুকুর ইত্যাদি। এদের শিকার করা কঠিন এবং মাংস নিরস, দুর্গন্ধ এবং কুরুচিকর স্বাদ যুক্ত হওয়ার জন্য পরিত্যাজ্য।
✪ একখুর বিশিষ্ট প্রাণীর (যেমন – উটের) মাংস নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৯
✪ কৃষ্ণসার, নীলগাই, সাধারণ হরিণ, বন্য শূকরের মাংস খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৬
✪ স্বাদু ও লবণাক্ত জলের মাছ (যেমন- বিভিন্ন মেজর ও মাইনর কার্প, খাঁড়ির মাছ ইত্যাদি) আহার হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ।তথ্যসূত্র – বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.৮
অন্যান্য✪ যেকোনো আহারে উপযোগী বীজ, ফল, মূল, সব্জি খাওয়া বৈধ।তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১১.১২-২২
✪ সুস্বাদু আহারে উপযোগী রস (যেমন – খেঁজুরের রস, তালের রস, আখের রস, ডাবের জল, ফলের রস ইত্যাদি), দুগ্ধজাত পদার্থ (যেমন – দুধ, ঘি, মাখন, দই) মধু ইত্যাদি বৈধ।তথ্যসূত্র – নারদ পুরাণ ১৮.১২-১৩
✪ রসুন, পেঁয়াজ, পলাণ্ডু খাওয়ার উপর বিতর্কিত বিধান আছে, কাজেই ইহা খাওয়া যেতে পারে।
★আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২৬, মনু স্মৃতি ৫.৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ১.১৭৬, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩ অনুসারে পেঁয়াজ রসুন খেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। অপরদিকে বৈদিক আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্র গুলিতে ভিন্ন চিকিৎসার কাজে পেঁয়াজ রসুনের ব্যাবহার উল্লেখ রয়েছে। কাজেই পেঁয়াজ রসুন খাওয়া কে নিষিদ্ধ বলা অযৌক্তিক।
✪ টকে যাওয়া (ব্যাতিক্রম – দই) বা পচে যাওয়া বা কোনো খাবারে উভয়ে মিশ্রিত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৭.২০, বৌধায়ন ধর্মসূত্র ১.৫.১২.১৫, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
✪ কুকুর, বিড়াল, বানর, মহিষ প্রভৃতি বন্য প্রাণীর মাংস আহার নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – লৌগাক্ষিগৃহ্ম সূত্রাণি ২.১৯৩, বশিষ্ট ধর্মসূত্র ১৪.৩৩, মানব গৃহসূত্র ১.৪.২-৪
✪ যে খাবারে কোনো পশু মুখ দিয়েছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – গৌতম ধর্মসূত্র ১৭.১০, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
✪ যে সব খাবারে পোকা জন্মছে তা খাওয়া নিষিদ্ধ।তথ্যসূত্র – আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১.৫.১৬.২৬, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি ৭.১৬৭
উক্ত নিষিদ্ধতার বাইরের খাদ্য বস্তু বা আহার সামগ্রী সমূহ বৈধ, কারণ সেইসব আহার সামগ্রীর উপরে নিষিদ্ধতা আরোপ হয়নি হিন্দুশাস্ত্র সমূহে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
সাকার উপাসনার কিছু রেফারেন্স
নিরাকারবাদী এবং একদল বিধর্মীদের দাবি বেদাদি শাস্ত্রে প্রতিমা পূজা এবং সাকার উপাসনার উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেদবিরুদ্ধ মূর্তিপূজা ক...
Popular Posts
-
(১) জটাটবীগলজ্জল প্রবাহ পাবিতস্থলে গলেহবলম্ব্য লম্বিতাং ভূজঙ্গতুঙ্গমালিকাম । ডমড্ডমড্ডমড্ডমন্নিনাদবড্ডমর্বয়ং চকার চন্ডতান্ডবং তনোতু...
-
আমরা অনেকেই জানি না যে, নারী-পুরুষেরও রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক বিবেচনা করে নারী ও পুরুষের এ শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছ...
-
পশূনাং পতিং পাপনাশং পরেশং গজেন্দ্রস্য কৃত্তিং বসানং বরেণ্যম্। জটাজূটমধ্যে স্ফূরদগাঙ্গ্যবারিং মহাদেবমেকং...